Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী হিসেবে কলকাতার প্রতিষ্ঠা : একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ।।।

আগস্ট 1, 1774, ভারতীয় ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক চিহ্নিত করে, কারণ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনে কলকাতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ঘোষণা করা হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের সুদূরপ্রসারী পরিণতি হয়েছে, যা আগামী শতাব্দীর জন্য ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ল্যান্ডস্কেপের গতিপথকে রূপ দিয়েছে।

পটভূমি—-

18 শতকের গোড়ার দিকে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, একটি ব্রিটিশ ট্রেডিং কোম্পানি, ভারতে একটি শক্তিশালী পা স্থাপন করেছিল। কোম্পানির প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের সাথে বাণিজ্য করা, কিন্তু শীঘ্রই এর উচ্চাকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পায় এবং এটি রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। কোম্পানির সামরিক বিজয়, বিশেষ করে 1757 সালের পলাশীর যুদ্ধ, এর অবস্থানকে দৃঢ় করে এবং এটি ভারতের বড় অংশের প্রকৃত শাসক হয়ে ওঠে।
একটি মূলধন জন্য প্রয়োজন
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে একটি কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কোম্পানির প্রাথমিক ভিত্তি ছিল ফোর্ট উইলিয়াম, কলকাতা, কিন্তু শীঘ্রই এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে আরও আনুষ্ঠানিক মূলধনের প্রয়োজন ছিল। কলকাতার পছন্দ ছিল কৌশলগত, কারণ এটি হুগলি নদী এবং বঙ্গোপসাগরে প্রবেশের প্রস্তাব দিয়েছিল, ব্রিটেনের সাথে বাণিজ্য ও যোগাযোগের সুবিধা প্রদান করেছিল।

কলকাতাকে রাজধানী ঘোষণা
1774 সালের 1 আগস্ট, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আনুষ্ঠানিকভাবে কলকাতাকে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ঘোষণা করে। এই সিদ্ধান্তটি ব্রিটিশ সরকার অনুমোদন করে এবং কলকাতা কোম্পানির প্রশাসনের ক্ষমতার কেন্দ্রে পরিণত হয়। সরকারি ভবন, রাস্তা এবং অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে শহরটির নতুন অবস্থাকে সমর্থন করার জন্য উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
রাজধানী হিসেবে কলকাতার প্রভাব
রাজধানী হিসেবে কলকাতা প্রতিষ্ঠার সুদূরপ্রসারী ফলাফল ছিল:
1. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: কলকাতা একটি প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল, কোম্পানির শাসনামলে বাণিজ্যের উন্নতি ঘটে। শহরের অর্থনীতি বৃদ্ধি পায় এবং এটি শিল্প ও উদ্যোক্তাদের কেন্দ্রে পরিণত হয়।
2. রাজনৈতিক কেন্দ্রীকরণ: কলকাতা রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল, কোম্পানির প্রশাসন ভারতের বৃহৎ অংশের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করে। এটি একটি আরও কেন্দ্রীভূত শাসন কাঠামোর দিকে পরিচালিত করে, যেখানে কলকাতা ছিল স্নায়ু কেন্দ্র।
3. সাংস্কৃতিক বিনিময়: রাজধানী হিসেবে কলকাতার মর্যাদা ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়কে সহজতর করেছে। ব্রিটিশ এবং ভারতীয় সংস্কৃতি একে অপরকে প্রভাবিত করে শহরটি ধারণার একটি গলে যাওয়া পাত্রে পরিণত হয়েছিল।
4. নগরায়ন: কলকাতার বৃদ্ধি দ্রুত নগরায়নের দিকে পরিচালিত করে, যেখানে ভারত জুড়ে মানুষ অর্থনৈতিক সুযোগের জন্য শহরে চলে আসে। এটি শহরের জনসংখ্যা এবং সামাজিক ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তন করেছে।

উপসংহার—

1774 সালের 1 আগস্ট ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী হিসেবে কলকাতাকে ঘোষণা ভারতীয় ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়কে চিহ্নিত করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে শহরের বৃদ্ধি ও বিকাশের সুদূরপ্রসারী পরিণতি হয়েছে, যা ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক গতিপথকে রূপ দিয়েছে। আমরা যখন এই ঐতিহাসিক ঘটনার প্রতিফলন করি, তখন আমরা ভারতের অতীতের জটিল এবং বহুমুখী প্রকৃতি এবং শক্তি, সংস্কৃতি এবং বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসাবে কলকাতার স্থায়ী উত্তরাধিকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিই।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে কিংবদন্তি কৌতুক অভিনেতা জহর রায়।স্মরণে কিংবদন্তি কৌতুক অভিনেতা জহর রায়।।।।

জহর রায় (১৯ সেপ্টেম্বর ১৯১৯ – ১ আগস্ট ১৯৭৭) ছিলেন একজন ভারতীয় অভিনেতা এবং বাংলা সিনেমার কৌতুক অভিনেতা। বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে জহর রায় এক কিংবদন্তি শিল্পী। তিনি মূলত একজন কৌতুক অভিনেতা হিসাবেই বেশী পরিচিত। তাঁর অভিনীত প্রতিটি সিনেমাতে যেভাবে হাস্যরস পরিবেশিত হয়েছে তা এককথায় অসাধারন।

তিনি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে কমেডি চলচ্চিত্রের জন্য পরিচিত ছিলেন।

১৯শে সেপ্টেম্বর ১৯১৯ অবিভক্ত বাংলার বরিশালে তথা ব্রিটিশ শাসিত ভারত বর্ষে জহর রায় জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা সতু রায়ও রঙ্গমঞ্চ ও চিত্রজগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে জীবিকার সন্ধানে পাটনায় চলে আসেন। এখানেই জহর রায় তার পড়াশোনা শেষ করেন এবং প্রুফ রিডার, মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং অবশেষে একজন দর্জির মতো অদ্ভুত চাকরিতে কাজ শুরু করেন। তিনি এই সব ছেড়ে 1946 সালের দিকে কলকাতায় আসেন।

জহর রার ১৯৩৮ সালে নারকেলডাঙ্গা হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর তিনি পাটনা থেকে আই এ পাশ করেন এবং সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রুফ রিডিং এর কাজে নি্যুক্ত হন। এই সবকিছুর মধ্যেই তিনি তাঁর অভিনয় চালিয়ে যেতে থাকেন। রয় চরিত্রাভিনেতা হওয়া সত্বেও তার যথেষ্ট ফ্যান ফলোয়িং ছিল। রায়ের প্রথম প্রধান চলচ্চিত্রের ভূমিকা ছিল অর্ধেন্দু মুখার্জি পরিচালিত পূর্বরাগে এবং বিমল রায় পরিচালিত অঞ্জনগড় (১৯৪৮) ছবিতে। এরপর বিমল রায় পরিচালিত ‘অঞ্জনগড়’ সিনেমায় একটি গুরূত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর ১৯৫৩ সালে জহর রায় রংমহল নাট্যমঞ্চে যোগদান করেন এবং পরবর্তীকালে নাটক নির্দেশনা শুরু করেন।

জহররায়ের অভিনীত অগনিত সিনেমার মধ্যে ‘ধন্যিমেয়ে’ ‘ছদ্মবেশী’ ‘ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট’ বিশেষভাবে উল্লেখ্য। ‘পরশ পাথর’ সিনেমাটিতে তিনি তুলসী চক্রবর্তীর একজন চাকর এর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। যদিও চরিত্রটি খুবই ছোটো ছিল তবে তাঁর অভিনয়ের গুনে সেটিও মানুষের মনে যায়গা করে নিয়েছিল।তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ‘গুপী গাইন ও বাঘা বাইন’ সিনেমাটিতে কূট মন্ত্রনাদায়ী ষড়যন্ত্রী মন্ত্রীর ভূমিকাতেও অসাধারন অভিনয় করেছেন।গুপি গাইন বাঘা বাইন-এ একটি মায়াবী ভূমিকা ছিল যেখানে তিনি একজন নিরীহ এবং শান্তিপ্রিয় রাজার কুটিল যুদ্ধবাজ মন্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ‘ছদ্মবেশী’ সিনেমাটিতে তিনি একটি গানও গেয়েছেন। তার কর্মজীবনের শেষের দিকে, যখন তিনি অসুস্থ ছিলেন, তিনি ঋত্বিক ঘটকের আত্মজীবনীমূলক চলচ্চিত্র যুক্তি তক্কো আর গপ্পোতে একটি ক্যামিও করেছিলেন। তিনি প্রায় ৩৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
জহর রায় বাংলা থিয়েটারে অবদানের জন্যও পরিচিত ছিলেন। দুই দশকের ক্যারিয়ারে তিনি বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেছেন। তিনি কলকাতার রং মহল থিয়েটারের আজীবন সহযোগী ছিলেন। আদর্শ হিন্দু হোটেল, উলকা, সুবর্ণগোলক এবং অনর্থ নাটকে তার অভিনয় এখনও মনে আছে।তাঁর অভিনয় জীবনের শেষের দিকে তিনি ঋত্বিক ঘটকের সিনেমা ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ তে অতিথি শিল্পী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।

অভিনীত জনপ্রিয় চলচ্চিত্রসমূহ—
১৯৪৭ পুর্বরাগ, ১৯৪৮ অঞ্জনগড়, ১৯৫৫ ডাকিনির চর, ১৯৫৭ উল্কা, পরশ পাথর, ১৯৫৮ রাজলক্ষী ও শ্রীকান্ত , বাড়ি থেকে পালিয়ে; ১৯৬২ অতল জলের আহবান; ১৯৬৩ পলাতক, সূবর্ণরেখা; ১৯৬৫ অভয়া ও শ্রীকান্ত; ১৯৬৬ কাল তুমি আলেয়া; ১৯৬৭ নয়নিকা সংবাদ; ১৯৬৯ গুপী গাইন বাঘা বাইন; ১৯৭০ নীশিপদ্ম, ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট; ১৯৭১ ধন্যি মেয়ে; ১৯৭২ মর্জিনা আবদুল্লা; ১৯৭৪ যুক্তি তক্কো আর গপ্পো, যমালয়ে জীবন্ত মানুষ; ১৯৭৫ ছুটির ফান্দে।

মৃত্যু—

জহর রায় ১১ই আগষ্ট ১৯৭৭ সালে পরলোক গমন করেন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

বাল গঙ্গাধর তিলক : ভারতের জাতীয়তাব্দী ।নেতা, সমাজ সংস্কারক, আইনজীবী ও স্বাধীনতা কর্মী।।।।।

বাল গঙ্গাধর তিলক, ছিলেন একজন ভারতীয় জাতীয়তাবাদী, শিক্ষক এবং একজন স্বাধীনতা কর্মী। তিনি ছিলেন লাল বাল পাল ট্রাইউমভাইরেটের এক তৃতীয়াংশ। তিলক ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম নেতা। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষ তাকে “ভারতীয় অস্থিরতার জনক” বলে অভিহিত করেছিল। তাকে “লোকমান্য” উপাধিতেও ভূষিত করা হয়েছিল, যার অর্থ “জনগণ তাদের নেতা হিসাবে গ্রহণ করেছে”।

মহাত্মা গান্ধী তাকে “আধুনিক ভারতের নির্মাতা” বলে ডাকতেন। তিলক ছিলেন স্বরাজ (‘স্ব-শাসন’) এর প্রথম এবং শক্তিশালী উকিলদের একজন এবং ভারতীয় চেতনায় একজন শক্তিশালী উগ্রপন্থী। তিনি মারাঠি ভাষায় তাঁর উদ্ধৃতির জন্য পরিচিত: “স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার এবং আমি তা পাব!”। তিনি বিপিন চন্দ্র পাল, লালা লাজপত রায়, অরবিন্দ ঘোষ, ভি.ও. চিদাম্বরম পিল্লাই এবং মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ সহ অনেক ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস নেতাদের সাথে একটি ঘনিষ্ঠ জোট গঠন করেছিলেন।
কেশব গঙ্গাধর তিলক 23 জুলাই 1856-এ বর্তমান মহারাষ্ট্রের (তৎকালীন বোম্বে প্রেসিডেন্সি) রত্নাগিরি জেলার সদর দফতর রত্নগিরিতে একটি মারাঠি হিন্দু চিৎপাবন ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক গ্রাম ছিল চিখালী। তাঁর পিতা, গঙ্গাধর তিলক ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক এবং একজন সংস্কৃত পণ্ডিত যিনি তিলকের বয়স যখন ষোল বছর তখন মারা যান। 1871 সালে, তিলক তার বাবার মৃত্যুর কয়েক মাস আগে ষোল বছর বয়সে তাপিবাইকে (নি বল) বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের পর তার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় সত্যভামাবাই। তিনি 1877 সালে পুনের ডেকান কলেজ থেকে গণিতে প্রথম শ্রেণীতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরিবর্তে L.L.B কোর্সে যোগদানের জন্য তিনি তার M.A. কোর্সটি মাঝপথে ছেড়ে দেন এবং 1879 সালে তিনি সরকারি আইন কলেজ থেকে L.L.B ডিগ্রি অর্জন করেন। স্নাতক হওয়ার পর, তিলক পুনের একটি বেসরকারি স্কুলে গণিত পড়া শুরু করেন। পরবর্তীতে নতুন স্কুলে সহকর্মীদের সাথে আদর্শগত মতপার্থক্যের কারণে তিনি প্রত্যাহার করে সাংবাদিকতা করেন। তিলক সক্রিয়ভাবে জনসাধারণের কাজে অংশগ্রহণ করতেন। তিনি বলেছিলেন: “ধর্ম এবং ব্যবহারিক জীবন আলাদা নয়। প্রকৃত চেতনা হল শুধুমাত্র নিজের জন্য কাজ না করে দেশকে আপনার পরিবারে পরিণত করা। এর বাইরের ধাপটি হল মানবতার সেবা করা এবং পরবর্তী ধাপটি হল ঈশ্বরের সেবা করা।”
বিষ্ণুশাস্ত্রী চিপলুঙ্করের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, তিনি 1880 সালে গোপাল গণেশ আগরকার, মহাদেব বল্লাল নামজোশী এবং বিষ্ণুশাস্ত্রী চিপলুঙ্কর সহ তার কয়েকজন কলেজ বন্ধুর সাথে মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য নিউ ইংলিশ স্কুলের সহ-প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের লক্ষ্য ছিল ভারতের তরুণদের শিক্ষার মান উন্নত করা। স্কুলের সাফল্য তাদের নেতৃত্বে 1884 সালে ডেকান এডুকেশন সোসাইটি স্থাপন করে একটি নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে যা ভারতীয় সংস্কৃতির উপর জোর দেওয়ার মাধ্যমে তরুণ ভারতীয়দের জাতীয়তাবাদী ধারণা শেখায়। সোসাইটি 1885 সালে মাধ্যমিক-পরবর্তী অধ্যয়নের জন্য ফার্গুসন কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। তিলক ফার্গুসন কলেজে গণিত পড়াতেন। 1890 সালে, তিলক আরও খোলামেলা রাজনৈতিক কাজের জন্য ডেকান এডুকেশন সোসাইটি ত্যাগ করেন। তিনি একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবনের উপর জোর দিয়ে স্বাধীনতার দিকে একটি গণআন্দোলন শুরু করেছিলেন।
তিলক ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে ১৮৯০ সালে যোগদান করেন ১৮৯০ সালে। আত্মশাসনের লড়াইয়ে, তিনি মধ্যপন্থী মনোভাবের বিরোধিতা করতেন। তিনি ছিলেন সেই সময়ের অন্যতম বিশিষ্ট মৌলবাদী। প্রকৃতপক্ষে, এটি ছিল ১৯০৫-১৯০৭ এর স্বদেশী আন্দোলন যার ফলে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস মধ্যপন্থী এবং চরমপন্থীদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
১৮৯৬ সালের শেষের দিকে, একটি বুবোনিক প্লেগ বোম্বে থেকে পুনেতে ছড়িয়ে পড়ে এবং ১৮৯৭ সালের জানুয়ারিতে এটি মহামারী আকারে পৌঁছে। জরুরী অবস্থা মোকাবেলায় ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীকে আনা হয়েছিল এবং প্লেগ নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ব্যক্তিগত বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশের অনুমতি, বাড়ির অধিবাসীদের পরীক্ষা, হাসপাতাল ও কোয়ারেন্টাইন ক্যাম্পে স্থানান্তর, ব্যক্তিগত অপসারণ এবং ধ্বংস; সম্পদ, এবং রোগীদের শহরে প্রবেশ বা ছেড়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখা। মে মাসের শেষের দিকে, মহামারীটি নিয়ন্ত্রণে আনা গেছিল। মহামারী রোধে ব্যবহৃত পদক্ষেপগুলি ভারতীয় জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক বিরক্তি সৃষ্টি করেছিল। হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ভগবদ গীতার উদ্ধৃতি দিয়ে তিলক তাঁর কাগজ কেশরীতে (কেশরী মারাঠি ভাষায় লেখা হয়েছিল, এবং “মারাঠা” ইংরেজিতে লেখা হয়েছিল) তে প্রদাহজনক নিবন্ধ প্রকাশ করে এই সমস্যাটি তুলে ধরেছিলেন যে, কারও প্রতি কোন দোষ চাপানো যাবে না পুরস্কারের কোন চিন্তা ছাড়াই একজন অত্যাচারীকে হত্যা করেছে। এর পরে, ১৮৯৭ সালের ২২ জুন, কমিশনার রান্ড এবং আরেক ব্রিটিশ অফিসার লেফটেন আয়ারস্টকে চাপেকর ভাই এবং তাদের অন্যান্য সহযোগীরা গুলি করে হত্যা করে।বারবারা এবং থমাস আর মেটকাফের মতে, তিলক “নিশ্চয়ই অপরাধীদের পরিচয় গোপন করেছিলেন”। তিলকের বিরুদ্ধে হত্যার প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয় এবং ১৮ মাসের কারাদণ্ড হয়।যখন তিনি বর্তমান মুম্বাইয়ের কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন, তখন তিনি একজন শহীদ এবং একজন জাতীয় বীর হিসেবে শ্রদ্ধেয় ছিলেন। তিনি তার সহযোগী কাকা ব্যাপটিস্টার একটি নতুন স্লোগান গ্রহণ করেছিলেন: ” স্বরাজ (স্ব-শাসন) আমার জন্মগত অধিকার এবং এটি আমার থাকবে।”
বঙ্গভঙ্গের পর, যা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দুর্বল করার লর্ড কার্জন কর্তৃক নির্ধারিত একটি কৌশল ছিল , তিলক স্বদেশী আন্দোলন এবং বয়কট আন্দোলনকে উৎসাহিত করেছিলেন। এই আন্দোলনের মধ্যে ছিল বিদেশী পণ্য বর্জন এবং যে কোন ভারতীয় যারা বিদেশী পণ্য ব্যবহার করে তাদের সামাজিক বয়কট।স্বদেশী আন্দোলনের মধ্যে ছিল দেশীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার।একবার বিদেশী পণ্য বয়কট করা হলে, একটি শূন্যতা ছিল যা ভারতে সেই পণ্যগুলির উৎপাদন দ্বারা পূরণ করতে হয়েছিল।তিলক বলেছিলেন যে স্বদেশী এবং বয়কট আন্দোলন একই মুদ্রার দুটি দিক।
পাঞ্জাবের লালা লাজপত রায় , মহারাষ্ট্রের বাল গঙ্গাধর তিলক (মধ্যম) এবং বাংলার বিপিন চন্দ্র পাল, ট্রাইমুইরেট লাল বাল পাল নামে পরিচিত ছিলেন, ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের রাজনৈতিক বক্তৃতা বদলে দিয়েছিলেন।
তিলক ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারতীয় স্বায়ত্তশাসনের জন্য আন্দোলনের জন্য রাজনৈতিক ভাবে তাঁর কর্মজীবন ব্যয় করেছেন। গান্ধীর আগে তিনি ছিলেন ভারতের বহুল পরিচিত রাজনৈতিক নেতা। তার সহকর্মী মহারাষ্ট্রীয় সমসাময়িক, গোখলে থেকে ভিন্ন, তিলককে একজন উগ্র জাতীয়তাবাদী কিন্তু সামাজিক রক্ষণশীল হিসেবে বিবেচনা করা হত। তিনি বেশ কয়েকবার কারাবরণ করেছিলেন যার মধ্যে ম্যান্ডালয়ের দীর্ঘ সময়কাল ছিল।তার রাজনৈতিক জীবনের এক পর্যায়ে তাকে ব্রিটিশ লেখক স্যার ভ্যালেন্টাইন চিরোল “ভারতীয় অশান্তির জনক” বলে অভিহিত করেছিলেন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

স্কাউট স্কার্ফ দিবস : একতা এবং সাহসিকতার প্রতীক।।।।।

1লা আগস্ট সারা বিশ্বের স্কাউটদের জন্য একটি বিশেষ দিন – স্কাউট স্কার্ফ দিবস। এই দিনটি আইকনিক স্কার্ফকে উৎসর্গ করা হয় যা স্কাউটিং ইউনিফর্মের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এবং সেই মূল্যবোধ ও নীতির প্রতীক যা স্কাউটিং মূর্ত করে।

স্কাউট স্কার্ফ ইতিহাস—

স্কাউট স্কার্ফের শিকড় স্কাউটিংয়ের প্রাথমিক দিনগুলিতে রয়েছে, যখন স্কাউটিং আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা লর্ড রবার্ট ব্যাডেন-পাওয়েল বোয়ের যুদ্ধে ম্যাফেকিং অবরোধের সময় তার ইউনিফর্মের অংশ হিসাবে একটি স্কার্ফ পরতেন।

স্কার্ফটি মূলত শত্রু থেকে বন্ধু সনাক্ত করার একটি ব্যবহারিক মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল, কিন্তু শীঘ্রই এটি স্কাউটিং আন্দোলন এবং এর মূল্যবোধের প্রতীক হয়ে ওঠে।
প্রথম স্কাউট স্কার্ফগুলি সুতি বা সিল্কের তৈরি এবং একটি সাধারণ গিঁটের নকশা বৈশিষ্ট্যযুক্ত ছিল। সময়ের সাথে সাথে, স্কার্ফের নকশা বিকশিত হয় এবং বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থা তাদের নিজস্ব অনন্য ডিজাইন এবং রঙ গ্রহণ করতে শুরু করে। আজ, স্কাউট স্কার্ফ স্কাউটিং ইউনিফর্মের একটি অপরিহার্য অংশ এবং সারা বিশ্বে স্কাউটরা এটি পরিধান করে।
স্কাউট স্কার্ফের তাৎপর্য
স্কাউট স্কার্ফ শুধু এক টুকরো কাপড়ের চেয়ে বেশি; এটি স্কাউটিং আন্দোলনের মূল্যবোধ এবং নীতির প্রতিনিধিত্ব করে। স্কার্ফ একটি প্রতীক:
1. ঐক্য: স্কাউট স্কার্ফ বিশ্বজুড়ে স্কাউটদের ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্বের প্রতিনিধিত্ব করে। সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, স্কার্ফ একটি সাধারণ সুতো যা স্কাউটদের একত্রে আবদ্ধ করে।
2. অ্যাডভেঞ্চার: স্কার্ফ স্কাউটিং এর দুঃসাহসিক চেতনার প্রতীক। স্কাউটরা বাইরের প্রতি তাদের ভালবাসা এবং নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে তাদের ইচ্ছার জন্য পরিচিত।
3. পরিষেবা: স্কার্ফ স্কাউটদের তাদের সম্প্রদায়ের সেবা এবং বিশ্বে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে প্রতিশ্রুতির প্রতিনিধিত্ব করে।
4. নেতৃত্ব: স্কার্ফ নেতৃত্ব এবং দায়িত্বের প্রতীক। স্কাউটরা যারা স্কার্ফ পরিধান করে তারা উদাহরণ দিয়ে নেতৃত্ব দেবে এবং অন্যদেরও একই কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে বলে আশা করা হয়।
স্কাউট স্কার্ফ দিবস উদযাপন করা হচ্ছে
প্রতি বছর ১লা আগস্ট স্কাউট স্কার্ফ দিবস পালিত হয়। এই দিনে, সারা বিশ্বের স্কাউটদের গর্ব করে তাদের স্কার্ফ পরতে এবং #ScoutScarfDay হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়াতে তাদের স্কাউটিং অ্যাডভেঞ্চারের ছবি এবং গল্প শেয়ার করতে উৎসাহিত করা হয়।
স্কাউটিং সংস্থা এবং দলগুলি বিভিন্ন উপায়ে স্কাউট স্কার্ফ দিবস উদযাপন করতে পারে, যেমন:
1. আন্দোলনে নতুন স্কাউটদের স্বাগত জানাতে স্কার্ফ বাঁধার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।
2. স্কার্ফ-থিমযুক্ত গেম এবং ক্রিয়াকলাপ সংগঠিত করা, যেমন স্কার্ফ বাঁধা প্রতিযোগিতা এবং স্কার্ফ-থিমযুক্ত বাধা কোর্স।
3. স্কাউটিং অ্যাডভেঞ্চারের গল্প এবং ফটো শেয়ার করা এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের উপর স্কাউটিং এর প্রভাব।
4. স্কাউটদের স্কুলে স্কার্ফ পরতে বা স্কাউটিং আন্দোলনের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে উৎসাহিত করা।
উপসংহার
স্কাউট স্কার্ফ স্কাউটিং আন্দোলন এবং এর মূল্যবোধের একটি শক্তিশালী প্রতীক। স্কাউট স্কার্ফ দিবসে, সারা বিশ্বের স্কাউটরা তাদের ভাগ করা পরিচয় এবং বিশ্বে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে প্রতিশ্রুতি উদযাপন করতে একত্রিত হয়। আপনি একজন স্কাউট বা আন্দোলনের একজন সমর্থকই হোন না কেন, 1লা আগস্ট হল আপনার স্কার্ফ গর্বের সাথে পরিধান করার এবং স্কাউটিং মূর্ত হওয়া দুঃসাহসিক কাজ এবং সেবার মনোভাব উদযাপন করার একটি দিন।

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ রিভিউ

করম উৎসব – লোকসংস্কৃতির অঙ্গ কলমেঃ দিলীপ রায়

করম উৎসব – লোকসংস্কৃতির অঙ্গ
কলমেঃ দিলীপ রায় ( ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)
করম প্রধানত সৃষ্টির উৎসব, সৃজনের উৎসব । শরতের আগমনে শস্য ও সমৃদ্ধি কামনায় করম পরব বা করম উৎসব । ভাদ্র মাসের শুক্লা একাদশী বা পার্শ্ব একাদশীতে করম উৎসব পালিত হয় । এই বছর অনুষ্ঠিত হবে ৩রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ । এই পরবের মূল আকর্ষণ হলো জাওয়া গান (অনেকে ‘জাওয়া’ বানান ‘যাওয়া’ লিখে থাকেন) । বলা চলে, গানগুলো লোকসাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গ ।
এবার আসছি জাওয়া কি ? সেটা আমাদের জানা দরকার । “জাওয়া শব্দটা নাকি ‘জাত’ শব্দ থেকে এসেছে । বীজের অঙ্কুরোদ্‌গম বা চারার ‘জাত’ বা জন্ম থেকে এইরকম নামকরণ হয়ে থাকতে পারে । শব্দটি “জাওয়া” হবে, নাকি “যাওয়া” হবে , সেটা নিয়েও মতোভেদ রয়েছে । যাই হোক “জাওয়া” হচ্ছে একটি শস্য উৎসব । আবার শস্য বীজের অঙ্কুরোদ্‌গমেরও অনুষ্ঠান বলা চলে । একমাত্র কুমারী মেয়েরাই এই অনুষ্ঠান পালন করে থাকে । ভাদ্র মাসের পার্শ্ব একাদশীর এক সপ্তাহ আগে এই অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটে ।
এবার আসছি করম পরব প্রসঙ্গে ।
করম পরব ভারতের ঝাড়খণ্ড, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, আসাম, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং বাংলাদেশ ও নেপালে একটা ফসল কাটার উৎসব । এই উৎসবে করম দেবতার উপাসনা করা হয় । যিনি হচ্ছেন কিনা শক্তি, যুব ও যৌবনের দেবতা । করম পরব পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পুরুলিয়া জেলা, ঝাড়্গ্রাম জেলা, বাঁকুড়া জেলা, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কুড়মি, ভূমিজ, বৈবা, মুণ্ডা, রাজোয়াড়, সরাক, লোহার বাউরি, বীরহড়, বীরনিয়া, খেরওয়ার, হো, খেড়িয়া, শবর, কোড়া মাহালি, পাহাড়িয়া, হাড়ি, বাগদি, বেদে, ঘাসি, লোধা ও বৃহৎ জনগোষ্ঠী সাঁওতাল, মুন্ডা, ওঁরাও, প্রভূতি সম্প্রদায়ের জঙ্গলভিত্তিক ও কৃষিভিত্তিক লোক উৎসব । তবে কুড়মি সমাজে এর স্বীকৃতি, মান্যতা ও ব্যাপকতা উল্লেখযোগ্য ।
প্রকৃতির পুজা ও উর্বতার উৎসব । এই করম পরব প্রায় সাতদিন ধরে উদযাপন হয় । কুমারী কন্যারা নিষ্ঠার সঙ্গে সাতদিন ধরে ব্রত পালন করেন, করম গাছের ডাল পুজা করেন এবং বপন করা হয় ভুট্টার বীজ । অঙ্কুরিত ভুট্টার চারা বা ‘জাওয়া’কে উর্বতার প্রতীক হিসাবে দেখা হয় । মূলত এই করম উৎসবটি আদিবাসী ও সাঁওতাল জনজাতিদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় । করম পুজা ঝুমুর গান, “আজরে করম রাজা ঘরে দুয়ারে, কালরে করম রাজা কাশ নদীর পারে” ।
ভাই বোনের গভীর ভালবাসার কথা জাওয়া গান গুলোতে বারবার ফুটে উঠে । দাদা ও ভাইয়ের সঙ্গে কাটানো সুখের মিহূর্তগুলো বোনকে খুব পীড়া দেয় । তাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরী হলে, মিথ্যাই সাত্ত্বনা দিতে বধূটি বলে ওঠে – “আমারি জনম পরের ঘর ।“ ভাই তখন সান্ত্বনা দেয় । সেই গান মেয়েরা গেয়ে ওঠে —
“আমি কি লিখ্যেছি বহিন বিধাতা লিখ্যেছে রে
বিধাতা লিখেছে পরের ঘর ।
পরেরই ঘরে বহিন খাটি লুটি খাও রে
রাখি দিহ বাপের ভায়ের নাম ।“
মূলত গ্রামের অবিবাহিত কুমারী মেয়েরাই এই ‘করম’ ঠাকুরের উপাসক । শুক্লা একাদশীর সাতদিন আগে কুমারী মেয়েরা একত্রে বাঁশের বোনা ‘টুপা’ (ডালা) এবং বিভিন্ন ধরনের শস্যবীজ নিয়ে জড়ো হয় পার্শ্ববর্তী কোনো নদী, পুকুর বা জলাশয়ে । সেখানে প্রত্যেকে স্নান করে শুদ্ধ হয়ে সদ্যস্নাত ভিজে কাপড়ে নিজের নিজের টুপায় নদী খাতের বালি ভর্তি করে বাড়ি থেকে আনা সেই শস্যবীজগুলো বোনে । তারপর পরস্পরের হাত ধরে টুপা’কে কেন্দ্র করে গোল হয়ে বিভিন্ন ধরনের আদিবাসী গান গাইতে থাকে ।
এরপর শুরু হয় এই জাওয়া টুপাগুলোর পরিচর্যা । দিন দুয়েক পরেই বীজগুলির অঙ্কুরোদ্‌গম হয় । জাওয়া পাতানো কুমারী মেয়েরা, জাওয়ার শুদ্ধতা বজায় রাখার নিরিখে সারা সপ্তাহ ধরে পালন করে কিছু রীতি নীতি । যেমন – একদিন তারা শাক খায় না, খাটিয়ায় ঘুমোয় না, মাথায় তেল দেয় না, চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ায় না, । এছাড়াও প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায় মেয়েরা নিজ নিজ ডালাসহ গ্রামের এক জায়গায় জড়ো হয় । জাওয়াকে কেন্দ্র করে সারা সন্ধ্যা চলে করম গান ও নাচ ।
সন্ধ্যাবেলায় গ্রামের লায়া (পুরোহিত) এক জায়গায় করম ডাল পুঁতে করম ঠাকুরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন । তৈরি হয় পুজোর বেদী । গ্রামের ব্রতকারী কুমারী মেয়েরা “করম ডালায়” পুজোর অর্ঘ্যরূপে মাটির প্রদীপ, শাল পাতার তৈরি থালায় নদীর বালি, ঘি, গুড়, আতপ চাল, মধু, ধূপ, সিঁদুর, একগাছি ধান আর ‘কাঁকুড়’, ইত্যাদি নিয়ে সমবেত হয়ে পুজো করে পরম ঠাকুরের । কামনা করে সোহাগী স্বামী পাওয়ার ও সন্তানবতী হওয়ার ।
এবার আসছি করম পুজার প্রচলনের ইতিহাস প্রসঙ্গে । এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, করম পুজা প্রচলনের ইতিহাস নিয়ে মতভেদ রয়েছে । একটি মত সংক্ষেপে নিম্নরূপঃ
কথিত আছে, কর্ম ও ধর্ম দুই ভাই । দু’জনেই খুব পরিশ্রমী ও দয়ালু । কিছু দিন পর কর্মের বিয়ে হয়ে গেলো । তাঁর স্ত্রী ছিল অধার্মিক এবং অন্যদের বিরক্ত করার মানসিকতা । আর এতে রাগান্বিত হয়ে কর্ম বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন ।
তিনি চলে যেতেই সকলের কর্মফল ও ভাগ্যও চলে গেলো এবং মানুষের দুঃখ দুর্দশা বাড়তে লাগলো । মানুষের সমস্যা সহ্য করতে না পেরে ধর্ম ভাইয়ের খোঁজে বেরিয়ে গেলেন । কিছু দূর হাঁটার পর তাঁর জল তেষ্টা পেলো এবং দেখলেন, আশেপাশে কোথাও জল নেই । দূরে একটা নদী দেখতে পেলেন এবং সেখানে গিয়ে দেখলেন, জল নেই । নদী ধর্মকে বলল, তোমার ভাই এখান থেকে চলে যাওয়ার পর আমাদের কর্মফল নষ্ট হয়ে গিয়েছে । গাছের সব ফল নষ্ট ! তাঁকে খুঁজে পেলে বলো, তাঁর কাছে আমাদের এই সমস্যার সমাধান চাই । তারপর আরও একজন মহিলার সঙ্গে তাঁর দেখা এবং তিনি বললেন, কর্ম চলে যাওয়ার পর থেকে রান্নার পরে পাত্রগুলি হাতে লেগে যেতে শুরু করে, এর সমাধান কী ? আপনি কর্মকে জিজ্ঞাসা করুন এবং তাঁকে সমাধান বলতে বলুন । ধর্ম আরও এগিয়ে গেলেন । একটি মরুভূমিতে পৌঁছালেন । সেখানে তিনি দেখলেন, কর্ম গরমে অস্থির । তাঁর শরীরে ফোসকা পড়েছে এবং তিনি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন । তাঁর অবস্থা অসহনীয় । ধর্ম কর্মকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন । তখন উভয় ভাই বাড়ি ফিরে যেতে লাগলেন । ফেরার সময় সেই মহিলার সঙ্গে দেখা । কর্ম তাঁকে বললেন, ঐ মহিলা কখনও কোনও ক্ষুধার্ত মানুষকে খাওয়াননি, তাই তার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে । সুতরাং এটি তাঁর কর্মফল । একইভাবে সকলকে নিজের কর্মফলের কথা জানানোর পর কর্ম বাড়িতে ফিরে এসে পুজা করেন । তারপর সমগ্র এলাকার লোকেরা আবার সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলেন এবং সমৃদ্ধি ফিরে আসল । সেই স্মরণে করম পরব পালিত হয় ।
# আর একটি মত হচ্ছেঃ
এক সময় সাত ভাই ছিল যারা কৃষিকাজে কঠোর পরিশ্রমী । এমনকি তাঁদের দুপুরের খাওয়ারও সময় থাকতো না । তাই, স্ত্রীরা প্রতিদিন তাঁদের দুপুরের খাবার মাঠে নিয়ে যেতেন । একবার এমন হয়েছিল, তাঁদের স্ত্রীরা দুপুরের খাবার নিয়ে মাঠে যাননি । সাংঘাতিক ক্ষুধার্ত ছিলেন তাঁরা । সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দেখেন তাঁদের স্ত্রীরা বাড়ির উঠোনে করম গাছের ডালের পাশে নাচ-গান করছেন । এটা দেখে তাঁরা ক্রোধে অগ্নিশর্মা । এক ভাই তাঁর মেজাজ হারিয়ে ফেলে করমের ডাল ছিনিয়ে নিয়ে নদীতে ফেলে দিলেন । করম দেবতাকে অপমান করা হয়েছিল । ফলে তাঁদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে এবং অনাহারে তাঁদের দুর্দশা অবস্থা । একদিন একজন ব্রাহ্মণ (পুরোহিত) তাদের কাছে এলেন এবং সাত ভাই পুরো ঘটনাটা তাঁকে খুলে বললেন । এরপর সাত ভাই করম ঠাকুরের খোঁজে গ্রাম ছেড়ে চলে যান। তাঁরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে থাকেন এবং এইভাবে খোঁজার পর একদিন তাঁরা করম গাছের সন্ধান পান । পরবর্তীকালে, করম ঠাকুরের পুজো করেন । তারপর তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থার ক্রমশ উন্নতি ঘটতে থাকে । সুখ ও শান্তি ফিরে আসে ।
এলাকার মানুষ সহ কর্ম ও ধর্ম সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলেন এবং সমৃদ্ধি ফিরে আসল । সেই স্মরণে করম পরব পালিত হয় । বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে করম পার্বণ একটি অন্যতম । এটি গ্রাম বাংলার এক অজানা অথচ বিশেষ করে আদিবাসী জনগোষ্ঠী, কুড়মিদের চা-বাগানের মানুষদের সু-প্রচলিত করম উৎসব । এই বছরও করম পুজাকে গুরুত্ব দিয়ে রাজ্য সরকার ৩রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ছুটি ঘোষণা করেছেন ।
পরিশেষে বলা যায়, করম পরব আদিম জনগোষ্ঠীর ধারক ও বাহক । এর মধ্যে অন্যতম কুড়মি, সাঁওতাল, ভূমিজ, মুন্ডা, ওঁরাও, রাজোয়াড়, ডোম, ঘাসি প্রভৃতি জনগোষ্ঠী । যদিও উল্লেখিত, কুড়মি সমাজের মধ্যে এর স্বীকৃতি, মান্যতা ও ব্যাপকতা অবর্ণনীয় । আদিম জনগোষ্ঠী প্রায় সকলেই প্রকৃতির পুজারী । ভাল করে এই উৎসবের পুজানুষ্ঠান ও পালনবিধি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এটা একটা বৃক্ষ পুজার অনুষ্ঠান । বৃক্ষকে জীবন্ত আত্মার অধিকারী হিসাবে স্বীকার করে এবং তাকে কেন্দ্র করে বিশ্বাস-সংস্কার, আচার-অনুষ্ঠানের এক বিস্ময়কর সমাবেশ এবং শুদ্ধ ভক্তির পরম্পরা ! (তথ্যসূত্রঃ সংগৃহীত)
এ১০এক্স/৩৪, কল্যাণী (পিন-৭৪১২৩৫) / ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

মূল্যবান মনুষ্য জীবন ও শ্রাবণ মাসের মহিমা : স্বামী আত্মভোলানন্দ (পরিব্রাজক)।

ওঁ নমঃ শ্রীভগবতে প্রনবায়!

আমাদের এই সুন্দর মূল্যবান মনুষ্য জীবনে পবিত্র শ্রাবণ মাস সত্য সনাতন ধর্মে সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারা বছর শিবপুজো করা হলেও এই শ্রাবণ মাসে দেবাদিদেব মহাদেবকে নিষ্ঠাভরে ও নিয়ম মেনে পুজো করা হয়, বিশেষভাবে সোমবার। কারণ, এটি দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ও বর্ষার আগমনের সাথে যুক্ত। শ্রাবণ মাস পঞ্জিকার চতুর্থ মাস এবং এটি ভগবান শিবের মাস হিসেবে পরিচিত। এই মাসে শিবের পূজা ও উপাসনা করা হয় এবং এটি সত্য সনাতন ধর্মানুসারে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। শ্রাবণ মাসের প্রতিটি সোমবার ভক্তদের কাছে শিবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত এবং এই দিনে উপবাস ও পূজা করার বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। শ্রাবণ মাস দেবাদিদেব মহাদেবের প্রিয় মাস হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এই মাসে শিবের পূজা করলে বিশেষ ফল লাভ করা যায়।

পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী, শ্রাবণ মাসেই সমুদ্র মন্থনের ঘটনা ঘটেছিল। সমুদ্র উত্থিত হলাহল বিষ থেকে গোটা ধরিত্রীকে রক্ষা করার জন্য স্বয়ং মহাদেব নিজ কণ্ঠে হলাহল বিষ ধারণ করেছিলেন। বিষের প্রভাবে মহাদেবের কন্ঠ নীল হয়ে ওঠে। এই কারণেই মহাদেবের অপর নাম নীলকণ্ঠ। বিষের তীব্রতা হ্রাস করার জন্য স্বর্গের দেবতারা শিবের মাথায় গঙ্গাজল ঢালতে থাকেন। সেই কারণেই শ্রাবণ মাসে শিবের মাথায় গঙ্গাজল প্রদান করা হয়। আর তাতেই আদিদেব মহাদেবের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হন ভক্তরা। আরো উল্লেখ রয়েছে, সতীর দেহত্যাগের পর দেবী পার্বতী রূপে ফের একবার জন্ম নেন। শিবকে আবার স্বামীরূপে পাওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা করতে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে সাধনা করে শিবকে সন্তুষ্ট করলে পার্বতীকে বিবাহ করতে রাজি হন মহাদেব। আর সেই শুভমুহূর্ত ঘটে সোমবার শ্রাবণ মাসেই। তারপর শিবরাত্রির দিনেই শিব-পার্বতীর পুনর্মিলন ঘটেছিল। এই কারণেই শ্রাবণ মাসকে শিবের মাস বলা হয়। সনাতন ধর্ম অনুসারে শিব হলেন আদি দেবতা। সেই কারণে তাঁকে দেবাদিদেব মহাদেব বলা হয়।

অনেক শিবভক্ত এই মাসে প্রতিটি সোমবার শিবের উদ্দেশ্যে এবং প্রতি মঙ্গলবার দেবী পার্বতীর উদ্দেশ্যে উপবাস করেন। শ্রাবণ মাসে ভক্তিভরে শিবের পূজা করলে ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূরণ হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। শ্রাবণ মাসে বহু মানুষ বিভিন্ন শিব মন্দিরে তীর্থযাত্রা করেন এবং শিবের মাথায় জল ঢেলে পুণ্য অর্জন করেন। সনাতন ধর্মের মতে, শিবলিঙ্গের অর্থ হল অনন্ত। অর্থাৎ, যাঁর সূচনা বা অন্ত নেই। শিবলিঙ্গ আসলে শিব ও পার্বতীর আদি-অনাদি একক রূপ। শিবলিঙ্গ পুরুষ ও প্রকৃতির সাম্যের প্রতীক। স্ত্রী বা পুরুষ কেউই এই সমাজে একা প্রভাব বিস্তার করতে পারেন না, তা-ই জানিয়ে থাকে শিবলিঙ্গ। শাস্ত্র অনুযায়ী ভারতবর্ষ তথা সারা পৃথিবীতে অনেক শিবলিঙ্গ আছে মানব নির্মিত। কেবলমাত্র ১২ টি শিবলিঙ্গ জ্যোতির্লিঙ্গ ও স্বয়ম্ভূ।

আমার প্রাণদেবতা যুগাচার্য্য স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ সাক্ষাৎ শিবস্বরূপ, চলমান শিব। গৃহদেবতা নীলরুদ্রের আশির্বাদে শিব-অবতার রূপে শিবশিশুর, দেবশিশুর ধরাধামে আবির্ভাব। পরবর্তিকালে সাক্ষাৎ দেবাদিদেব মহাদেব রূপে আত্মপ্রকাশ হয়। সত্য সনাতন ধর্মে গুরুদেব ভগবান প্রাণদেবতা নিজ নিজ পিতামাতার মত প্রত্যেকের হৃদয় সিংহাসনে বিরাজ করেন। শুভ ও মঙ্গলময় আশির্বাদ আপনাদের সকলের শিরে বর্ষিত হোক… এই প্রার্থনা করি…ওঁ নমঃ শিবায়…
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ….!

Share This
Categories
প্রবন্ধ

উধাম সিং : ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের শহীদ মার্ক্সবাদী বিপ্লবী।।।

উধাম সিং (২৬ ডিসেম্বর ১৮৯৯ – ৩১ জুলাই ১৯৪০) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের শহীদ মার্ক্সবাদী বিপ্লবী। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের সময়ে যিনি পাঞ্জাব প্রদেশের বিলেতি গভর্নর ছিলেন, সেই মাইকেল ও’ডোয়াইয়ার-কে (Michael O’Dwyer) হত্যা করতে তিনি সংকল্পবদ্ধ হন।

এই উদ্দেশ্যে উধাম সিং ১৯৩৪ সালে বিলেত গমন করেন। এবং অবশেষে ১৯৪০ সালের মার্চ মাসে – জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের প্রায় ২১ বছর পরে – লন্ডনের এক সভাকক্ষে তিনি মাইকেল ও’ডোয়াইয়ার-কে গুলি করে হত্যা করেন।
উধম সিং ব্রিটিশ ভারতের লাহোর থেকে প্রায় 130 মাইল দক্ষিণে সুনামের পিলবাদ এলাকায় ২৬ ডিসেম্বর ১৮৯৯ সালে একটি শিখ পরিবারে ‘শের সিং’ জন্মগ্রহণ করেন, তেহাল সিং নামে একজন কম্বোজ, স্বল্প-দক্ষ স্বল্প বেতনের কায়িক শ্রমিক এবং তার স্ত্রী নারাইন কৌর। তিনি ছিলেন তাদের কনিষ্ঠ, তার এবং তার বড় ভাই সাধুর মধ্যে দুই বছরের পার্থক্য। যখন তাদের বয়স যথাক্রমে তিন এবং পাঁচের কাছাকাছি, তখন তাদের মা মারা যান। দুই ছেলে পরবর্তীকালে তাদের বাবার কাছাকাছি থেকে যায় যখন তিনি নিলোওয়াল গ্রামে পাঞ্জাব ক্যানেল কলোনির অংশ, একটি নবনির্মিত খাল থেকে কাদা তোলার কাজ করতেন। চাকরিচ্যুত হওয়ার পর তিনি উপলি গ্রামে রেলক্রসিং প্রহরী হিসেবে কাজ পান।
১৯০৭ সালের অক্টোবরে, ছেলেদের পায়ে হেঁটে অমৃতসরে নিয়ে যাওয়ার সময়, তাদের বাবা রামবাগ হাসপাতালে পড়ে মারা যান। দুই ভাইকে পরবর্তীতে একজন চাচার কাছে হস্তান্তর করা হয় যিনি তাদের রাখতে অক্ষম হয়ে তাদের সেন্ট্রাল খালসা এতিমখানায় দিয়েছিলেন, যেখানে এতিমখানার রেজিস্টার অনুসারে, ২৮ অক্টোবর তাদের দীক্ষা দেওয়া হয়েছিল। পুনর্বাসিত হয়ে, সাধু হয়ে ওঠেন “মুক্তা”, যার অর্থ “যে পুনরুত্থান থেকে পালিয়েছে”, এবং শের সিংকে “উধম সিং”, উধম যার অর্থ “উত্থান”। এতিমখানায় তাকে আদর করে “উদে” বলে অভিহিত করা হয়। ১৯১৭ সালে, মুক্তা এক অজানা আকস্মিক অসুস্থতায় মারা যান।
এর কিছুক্ষণ পরেই, নথিভুক্তির সরকারি বয়সের কম হওয়া সত্ত্বেও, উধম সিং কর্তৃপক্ষকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তাকে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সেবা করার অনুমতি দেওয়ার জন্য রাজি করান। পরবর্তীকালে উপকূল থেকে বসরা পর্যন্ত মাঠ রেলপথে পুনরুদ্ধারের কাজ করার জন্য ৩২ তম শিখ পাইওনিয়ারদের সাথে সর্বনিম্ন র্যাঙ্কিং শ্রম ইউনিটের সাথে সংযুক্ত হন। তার অল্প বয়স এবং কর্তৃত্বের সাথে দ্বন্দ্ব তাকে ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে পাঞ্জাবে ফিরে যেতে বাধ্য করে। ১৯১৮ সালে, তিনি সেনাবাহিনীতে পুনরায় যোগদান করেন এবং তাকে বসরা এবং তারপর বাগদাদে প্রেরণ করা হয়, যেখানে তিনি ছুতার কাজ এবং যন্ত্রপাতি এবং যানবাহনের সাধারণ রক্ষণাবেক্ষণ করেন, এক বছর পর ১৯১৯ সালের প্রথম দিকে অমৃতসরের অনাথ আশ্রমে ফিরে আসেন।
১০ এপ্রিল ১৯১৯-এ, সত্যপাল এবং সাইফুদ্দিন কিচলু সহ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাথে জোটবদ্ধ বেশ কয়েকজন স্থানীয় নেতাকে রাওলাট অ্যাক্টের শর্তে গ্রেফতার করা হয়। একটি সামরিক পিকেট বিক্ষোভকারী জনতার উপর গুলি চালায়, একটি দাঙ্গাকে প্ররোচিত করে যা দেখেছে অসংখ্য ইউরোপীয় মালিকানাধীন ব্যাংক আক্রমণ করেছে এবং বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় রাস্তায় আক্রমণ করেছে। ১৩ এপ্রিল, অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগে বিশ হাজারেরও বেশি নিরস্ত্র লোক জড়ো হয়েছিল বৈশাখীর গুরুত্বপূর্ণ শিখ উৎসব উদযাপন করতে এবং গ্রেফতারের প্রতিবাদ করতে। অনাথ আশ্রমের সিং এবং তার বন্ধুরা ভিড়কে জল পরিবেশন করছিলেন। কর্নেল রেজিনাল্ড ডায়ারের অধীনে সৈন্যরা ভিড়ের উপর গুলি চালায়, কয়েকশত লোককে হত্যা করে; এটি অমৃতসর গণহত্যা বা জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যা নামে বিভিন্নভাবে পরিচিতি লাভ করে।
সিং বিপ্লবী রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলেন এবং ভগত সিং ও তার বিপ্লবী গোষ্ঠীর দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। ১৯২৪ সালে, সিং ঔপনিবেশিক শাসন উৎখাত করার জন্য বিদেশী ভারতীয়দের সংগঠিত করে গদর পার্টির সাথে জড়িত হন। ১৯২৭ সালে, তিনি ভগৎ সিংয়ের আদেশে ভারতে ফিরে আসেন, ২৫ জন সহযোগীর পাশাপাশি রিভলবার এবং গোলাবারুদ নিয়ে আসেন। এরপরই লাইসেন্সবিহীন অস্ত্র রাখার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। রিভলবার, গোলাবারুদ এবং “গদর-দি-গুঞ্জ” (“বিদ্রোহের কণ্ঠস্বর”) নামে একটি নিষিদ্ধ গদর পার্টির কাগজের কপি বাজেয়াপ্ত করা হয়। তাকে বিচার করা হয় এবং পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
১৯৩১ সালে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর, সিং-এর গতিবিধি পাঞ্জাব পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে ছিল। তিনি কাশ্মীরে চলে যান, যেখানে তিনি পুলিশকে এড়িয়ে জার্মানিতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ১৯৩৪ সালে, তিনি লন্ডনে পৌঁছান, যেখানে তিনি চাকরি খুঁজে পান। ব্যক্তিগতভাবে, তিনি মাইকেল ও’ডোয়ায়ারকে হত্যার পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। ১৯৩৯ এবং ১৯৪০ সালের সিংয়ের ডায়েরিতে, তিনি মাঝে মাঝে ও’ডায়ারের উপাধি “ও’ডায়ার” হিসাবে ভুল বানান করেন, একটি সম্ভাবনা রেখে তিনি ও’ডায়ারকে জেনারেল ডায়ারের সাথে বিভ্রান্ত করতে পারেন। যদিও উধম সিং প্রতিশোধের পরিকল্পনা করার আগেই ১৯২৭ সালে জেনারেল ডায়ারের মৃত্যু হয়েছিল। ইংল্যান্ডে, সিং কভেন্ট্রিতে ইন্ডিয়ান ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং তাদের মিটিংয়ে যোগ দিতেন।
১৩ মার্চ ১৯৪০ তারিখে, মাইকেল ও’ডায়ার লন্ডনের ক্যাক্সটন হল-এ ইস্ট ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন এবং সেন্ট্রাল এশীয় সোসাইটি (এখন রয়্যাল সোসাইটি ফর এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স) এর যৌথ সভায় বক্তৃতা করার জন্য নির্ধারিত ছিল। সিং তার স্ত্রীর নামে টিকিট নিয়ে ইভেন্টে প্রবেশ করেছিলেন। সিং একটি বইয়ের ভিতরে একটি রিভলভার লুকিয়ে রেখেছিলেন, যার পৃষ্ঠাগুলি একটি রিভলভারের আকারে কাটা ছিল। এই রিভলভারটি তিনি একটি পাবের একজন সৈনিকের কাছ থেকে কিনেছিলেন। তারপর হলের ভিতরে ঢুকে একটা খোলা আসন পেল। সভা শেষ হওয়ার সাথে সাথে, সিং ও’ডায়ারকে দুবার গুলি করে যখন তিনি স্পিকিং প্ল্যাটফর্মের দিকে এগিয়ে যান। এই বুলেটগুলির মধ্যে একটি ও’ডায়ারের হৃৎপিণ্ড এবং ডান ফুসফুসের মধ্য দিয়ে চলে যায় এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাকে হত্যা করে। গুলিতে আহত অন্যদের মধ্যে স্যার লুই ডেন; লরেন্স ডান্ডাস, জেটল্যান্ডের দ্বিতীয় মার্কেস; এবং চার্লস কোচরান-বেলি, ২য় ব্যারন ল্যামিংটন। গুলি চালানোর পরপরই সিংকে গ্রেফতার করা হয় এবং প্রমাণ হিসেবে পিস্তল (এখন ক্রাইম মিউজিয়ামে) জব্দ করা হয়।
.
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে – ভারতের প্রখ্যাত জাদুকর প্রতুল চন্দ্র সরকার (পি সি সরকার) ।।।।।

P.C. সরকার ছিলেন একজন বিখ্যাত ভারতীয় জাদুকর। তাঁর পুরো নাম প্রতুল চন্দ্র সরকার। তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক জাদুকরদের মধ্যে একজন যিনি ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তার জাদু প্রদর্শন করেছিলেন। তার প্রদর্শনীগুলির মধ্যে একটি ছিল ইন্দ্রজাল প্রদর্শনী। তিনি প্রথমে মঞ্চে এবং তারপর টেলিভিশনে এই অনুষ্ঠানটি দেখান।

প্রতুল চন্দ্র সরকার ১৯১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার আশেকপুর গ্রামে একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিবনাথ হাইস্কুলে পড়াশোনা করেছেন। তিনি গণপতি চক্রবর্তীর কাছ থেকে জাদুর প্রাথমিক ধারণা পেয়েছিলেন। ১৯৩০ সালের দিকে তার জাদু জনপ্রিয় হতে শুরু করে। তিনি কলকাতা, জাপান এবং অন্যান্য অনেক দেশে জাদু প্রদর্শন করেছেন।
প্রতুলচন্দ্র সরকার কলকাতার বাসন্তী দেবীকে বিয়ে করেন। তার তিন ছেলে, মানিক সরকার, পিসি সরকার জুনিয়র এবং পিসি সরকার ইয়াং।
পুরস্কার——
১৯৬৪ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে, ভারত সরকার “জাদু সম্রাট পি.সি সরকার” নামে কলকাতাতে একটি সড়কের নামকরণ করেছে, ১৯৪৬ ও ১৯৫৪ সালে জাদুর অস্কার নামে পরিচিত “দ্য ফিনিক্স” (আমেরিকা) পুরস্কার লাভ করেন, জার্মান মেজিক সার্কেল থেকে “দ্য রয়াল মেডিলিয়ন” পুরস্কার পান, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সালে ভারতীয় সরকার তার প্রতি সম্মান জানিয়ে একটি ৫ টাকার স্ট্যাম্প চালু করে।
তিনি ৬ জানুয়ারী ১৯৭১ সালে প্রয়াত হন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

আওরঙ্গজেবের ক্ষমতায় উত্থান: উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং ষড়যন্ত্রের গল্প।।।।

আওরঙ্গজেব, যিনি আলমগীর নামেও পরিচিত, তিনি ছিলেন ভারতের ষষ্ঠ মুঘল সম্রাট এবং ভারতীয় ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী শাসক। তার পিতা শাহজাহানের পতন এবং তার ভাইদের পরাজয়ের দিকে পরিচালিত একাধিক যুদ্ধ এবং ষড়যন্ত্রের পর তাকে 31 জুলাই, 1658 সালে সম্রাট ঘোষণা করা হয়।

প্রারম্ভিক জীবন এবং উত্তরাধিকার সংগ্রাম—

আওরঙ্গজেব 4 নভেম্বর, 1618 সালে গুজরাটের দাহোদে শাহজাহান এবং তার স্ত্রী মুমতাজ মহলের কাছে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন সম্রাটের তৃতীয় পুত্র এবং সুলতান মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব বাহাদুর উপাধি পান। আওরঙ্গজেবের প্রাথমিক জীবন ইসলামী শিক্ষার প্রতি কঠোর আনুগত্য এবং সামরিক বিষয়ে গভীর আগ্রহের দ্বারা চিহ্নিত ছিল।
1657 সালে, শাহজাহান অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তার চার ছেলের মধ্যে উত্তরাধিকার সংগ্রাম শুরু হয়। আওরঙ্গজেব, যিনি তখন গুজরাটের গভর্নর ছিলেন, সিংহাসন দাবি করার জন্য রাজধানী আগ্রার দিকে অগ্রসর হন। তিনি তার ভাই দারা শিকোহ এবং মুরাদ বক্সকে পৃথক যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং অবশেষে শাহজাহানকে ক্ষমতাচ্যুত করেন, যাকে গৃহবন্দী করা হয়।
সম্রাট হিসেবে ঘোষণা
31 জুলাই, 1658-এ, আগ্রার লাল কেল্লায় একটি জমকালো অনুষ্ঠানে আওরঙ্গজেবকে ভারতের মুঘল সম্রাট ঘোষণা করা হয়। তিনি আলমগীর উপাধি গ্রহণ করেন, যার অর্থ “বিশ্বজয়ী”। আওরঙ্গজেবের সিংহাসনে আরোহণ মুঘল ইতিহাসে একটি নতুন যুগের সূচনা করে, যা শাসনের ক্ষেত্রে আরও কঠোর এবং গোঁড়া দৃষ্টিভঙ্গির বৈশিষ্ট্যযুক্ত।
রাজত্ব এবং নীতি
আওরঙ্গজেবের শাসনকাল প্রায় 49 বছর স্থায়ী হয়েছিল, এই সময়ে তিনি বেশ কয়েকটি নীতি বাস্তবায়ন করেছিলেন যার সুদূরপ্রসারী ফলাফল ছিল। তার উল্লেখযোগ্য কিছু নীতির মধ্যে রয়েছে:
1. ইসলামী আইন: আওরঙ্গজেব কঠোর ইসলামী আইন জারি করেছিলেন, যার ফলে হিন্দু, শিখ এবং অন্যান্য অমুসলিমদের উপর অত্যাচার চালানো হয়েছিল। তিনি বেশ কিছু হিন্দু মন্দিরও ধ্বংস করেন এবং অমুসলিমদের উপর জিজিয়া কর আরোপ করেন।
2. সামরিক অভিযান: আওরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্যের মালভূমি, রাজপুত রাজ্য এবং শিখ অঞ্চল জয় করে একাধিক সামরিক অভিযানের মাধ্যমে মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটান।
3. প্রশাসনিক সংস্কার: আওরঙ্গজেব তার কর্মকর্তাদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি কেন্দ্রীভূত রাজস্ব ব্যবস্থা এবং গুপ্তচরদের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি সহ বেশ কয়েকটি প্রশাসনিক সংস্কার প্রবর্তন করেন।
4. সাংস্কৃতিক নীতি: আওরঙ্গজেব অনৈসলামিক বিবেচনা করে সঙ্গীত, নৃত্য এবং বিনোদনের অন্যান্য রূপ নিষিদ্ধ করেছিলেন। তিনি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ও ফার্সি সাহিত্য অধ্যয়নকেও নিরুৎসাহিত করেছিলেন।
উত্তরাধিকার
আওরঙ্গজেবের উত্তরাধিকার জটিল এবং বিতর্কিত। তিনি যখন মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটান এবং বেশ কিছু প্রশাসনিক সংস্কার বাস্তবায়ন করেন, তার নীতিগুলিও ব্যাপক নিপীড়ন ও ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করে। তার রাজত্ব মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের সূচনা করে, যা শেষ পর্যন্ত 19 শতকের মাঝামাঝি পতন ঘটে।
ঐতিহাসিকরা আওরঙ্গজেবের উত্তরাধিকার নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ তাকে একজন নায়ক হিসেবে চিত্রিত করেছেন যিনি ইসলামকে রক্ষা করেছিলেন এবং অন্যরা একজন খলনায়ক হিসেবে যিনি ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধ্বংস করেছিলেন। যাইহোক, এটা অনস্বীকার্য যে আওরঙ্গজেব ভারতীয় ইতিহাস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং দেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি এবং সমাজে স্থায়ী প্রভাব রেখেছিলেন।
উপসংহার
1658 সালের 31শে জুলাই ভারতের মুঘল সম্রাট হিসেবে আওরঙ্গজেবের ঘোষণা ভারতীয় ইতিহাসে একটি নতুন যুগের সূচনা করে। তার শাসনকাল ইসলামী আইন, সামরিক অভিযান, প্রশাসনিক সংস্কার এবং সাংস্কৃতিক নীতির কঠোর আনুগত্য দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল যার সুদূরপ্রসারী ফলাফল ছিল। যদিও তার উত্তরাধিকার জটিল এবং বিতর্কিত, আওরঙ্গজেব ভারতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী শাসকদের একজন, এবং তার প্রভাব আজও অনুভূত হচ্ছে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

অ্যাপোলো 15 : চাঁদে একটি গ্রাউন্ডব্রেকিং মিশন।।।

31 জুলাই, 1971, মহাকাশ অনুসন্ধানের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল যখন অ্যাপোলো 15 মহাকাশযান চাঁদে যাত্রা শুরু করেছিল। এই মিশনটি ছিল চতুর্থ মানব চান্দ্র অবতরণ এবং লুনার রোভিং ভেহিকল (LRV) ব্যবহার করা প্রথম, যা নভোচারীদের অভূতপূর্ব গতিশীলতার সাথে চাঁদের পৃষ্ঠ অন্বেষণ করতে সক্ষম করেছিল।

ক্রু এবং মিশনের উদ্দেশ্য—–
Apollo 15 ক্রু তিনজন অভিজ্ঞ মহাকাশচারী নিয়ে গঠিত: ডেভিড স্কট (মিশন কমান্ডার), জেমস আরউইন (লুনার মডিউল পাইলট), এবং আলফ্রেড ওয়ার্ডেন (কমান্ড মডিউল পাইলট)। তাদের মিশনের উদ্দেশ্য ছিল:
1. হ্যাডলি রিলে অঞ্চলে একটি চন্দ্র অবতরণ সম্পাদন করুন।
2. বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান এবং নমুনা সংগ্রহ করুন
3. পৃষ্ঠ অনুসন্ধানের জন্য LRV স্থাপন করুন
4. Apollo Lunar Surface Experiments Package (ALSEP) পরিচালনা করুন
মহাকাশযান এবং লঞ্চ
অ্যাপোলো 15 মহাকাশযান দুটি প্রধান উপাদান নিয়ে গঠিত: এন্ডেভার নামক কমান্ড এবং সার্ভিস মডিউল (সিএসএম) এবং ফ্যালকন নামক লুনার মডিউল (এলএম)। মহাকাশযানটি কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ কমপ্লেক্স 39A থেকে একটি Saturn V রকেটের উপরে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।
চাঁদে যাত্রা—
পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করার পর, মহাকাশযান ট্রান্স-লুনার ইনজেক্ট করে এবং চন্দ্রের কক্ষপথে প্রবেশের আগে প্রায় 67 ঘন্টা মহাকাশে ভ্রমণ করে। ক্রুরা চন্দ্র অবতরণের প্রস্তুতির জন্য কক্ষপথের একটি সিরিজ পরিচালনা করেছিল।
চন্দ্র অবতরণ এবং সারফেস অপারেশন—–
2শে আগস্ট, স্কট এবং আরউইন তাদের স্পেসসুট পরে এবং কমান্ড মডিউল থেকে আলাদা হয়ে লুনার মডিউলে আরোহণ করেন। তারা চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করে, হ্যাডলি রিলে অঞ্চলে অবতরণ করে। ক্রু চাঁদের পৃষ্ঠে প্রায় 67 ঘন্টা কাটিয়েছে, তিনটি এক্সট্রাভেহিকুলার অ্যাক্টিভিটিস (ইভিএ) পরিচালনা করেছে।
LRV একটি গেম-চেঞ্জার হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে, যা মহাকাশচারীদের আরও বেশি দূরত্ব ভ্রমণ করতে এবং আগের মিশনের চেয়ে আরও বেশি ভূখণ্ড অন্বেষণ করতে দেয়। তারা নমুনা সংগ্রহ করেছে, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে।
ফিরতি যাত্রা—–
তাদের মুনওয়াক শেষ করার পর, স্কট এবং আরউইন লুনার মডিউলে ফিরে আসেন এবং কমান্ড মডিউলে ওয়ার্ডেনের সাথে মিলিত হয়ে চাঁদ থেকে উঠে যান। ক্রু কমান্ড মডিউলে ফেরত স্থানান্তরিত হয়, এবং লুনার মডিউলটি জেটিসন করা হয়।
মহাকাশযানটি 7 আগস্ট, 1971 সালে প্রশান্ত মহাসাগরে সফলভাবে স্প্ল্যাশ করে, একটি অত্যন্ত সফল মিশনের সমাপ্তি চিহ্নিত করে।
Apollo 15 এর উত্তরাধিকার—
Apollo 15 অসংখ্য মাইলফলক অর্জন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে:
1. LRV এর প্রথম ব্যবহার, যা বৃহত্তর পৃষ্ঠের গতিশীলতা সক্ষম করে
2. দীর্ঘতম চন্দ্র পৃষ্ঠ থাকার সময় (67 ঘন্টা)
3. চাঁদে পরিচালিত সর্বাধিক বিস্তৃত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা
4. ALSEP এর প্রথম স্থাপনা
মিশনটি অ্যাপোলো মহাকাশযানের ক্ষমতা প্রদর্শন করে এবং ভবিষ্যতের চন্দ্র ও গ্রহ অনুসন্ধানের পথ তৈরি করে।
উপসংহার—–
Apollo 15 ছিল একটি যুগান্তকারী মিশন যা মানুষের বুদ্ধিমত্তা, বৈজ্ঞানিক কৌতূহল এবং পৃথিবীর সীমানা ছাড়িয়ে অন্বেষণ করার সংকল্প প্রদর্শন করে। মিশনের সাফল্য চাঁদ এবং এর ভূতত্ত্ব সম্পর্কে আমাদের বোঝার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপকে চিহ্নিত করেছে এবং এর উত্তরাধিকার নতুন প্রজন্মের বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং অনুসন্ধানকারীদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে।

Share This