Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

বাবা দিবস বৃদ্ধাশ্রম এবং চোখের জল : মীর আব্দুল আলীম।

বিশ্ব বাবা দিবস আজ। বিশেষ এই দিনটিতে বাংলাদেশের বাবা মায়েরা ভালো
আছেনতো? সন্তানের কষ্টে কারো চোখের জল ঝড়ছে নাতো? বিনা চিকিৎসায় আর
অনাহারে নেইতো কেউ? আপনারা কেউ বৃদ্ধাশ্রমে আছেন কি? মনের কোনে উঁকিঝোকি
মারে এইসব প্রশ্ন। প্রশ্ন জাগার কারন আছে। পত্রিকার শিরোনাম যদি এমন হয়-
‘ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার করা অসুস্থ বৃদ্ধ পিতাকে বৃদ্ধাশ্রমে প্রেরণ’;
অন্যটির শিরোনাম ’ ‘বাসস্ট্যান্ডে ফেলে রাখা বৃদ্ধ মায়ের ছেলের জন্য
অপেক্ষায় কাটলো একমাস’। তাহলেতো  প্রশ্ন জাগবেই। সংবাদ দুটি আমাদের
বিবেক, মূল্যবোধ, পারিবারিক বন্ধন এবং আত্মার সম্পর্ক বিষয়ক এতদিনকার
ধ্যান ধারণার ওপর প্রচন্ড আঘাত হানে। সংবাদ দু’টি সমাজের এক নগ্ন
বাস্তবতাকে উন্মোচন করে। হালযুগে বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানদের সন্তানদের দ্বায়ীত্ববোধ কমতে শুরু
করেছে। সবাই কেমন যেন ব্যস্থ হয়ে ওঠেছে। স্বার্থপরতো বটেই। তাই অনেক বাবা-মায়ের আশ্রয় হয় এখন বৃদ্ধাশ্রমে। আজকাল বৃদ্ধাশ্রমের সাথে বেশ
পরিচিত আমরা। এক দশক আগেও অধিকাংশ মানুষের মধ্যে বৃদ্ধাশ্রমের তেমন ধারণা ছিলো না। এখন দেশের অনেক জায়গায়ই বৃদ্ধাশ্রম গড়ে উঠেছে। আর নরক নামীয় এ বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় হচ্ছে অনেক বৃদ্ধ পিতা-মাতার। সেখানে যেতে তাদের বাধ্য করা হয়। অনেকে আবার জন্মদাতা পিতা-মাতার জন্য অতটুকুও ভদ্রতাও দেখান না। ওরা জন্মদাত্রীকে ফেলে আসেন রাস্তঘাটে, নর্দমায়। ঐপশুরা আমাদের অতি শ্রদ্ধেয় মুরব্বিদের কখনোবা ডাস্টবিনে ফেলে আসতেও দ্বিধা করেন না। এমন ঘটনা কতটা অমানবিক, কতটা বিবেকবর্জিত এবং আপত্তিকর, সেটা সহজেই বুঝা যায়।
এই অমানবিক বিষয়গুলোকে আমাদের সামনে আনা উচিৎ। সমাজ, রাষ্ট্র এবং পরিবারের অপরাপর লেখকদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। এ নিয়ে আন্দোলন হতে পারে। পরিবারের লোকজন এ আন্দোলনে শামিল হবেন,
প্রতিবেশীরা যোগ দেবেন। রাষ্ট্রেরও এ ব্যাপারে দায় আছে। রাষ্ট্র এমন অমানবিক বিষয়কে আইনের আওতায় আনতে পারে। নিয়োজিত ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন করে কু-সন্তান কিংবা কু-পুত্রবধুদের তাৎক্ষণিক ৬ মাস কিংবা ততোধিক সময়ের জন্য সাজা দিতে পারে না। বিষয়গুলো জনসমক্ষে নিয়ে আসা রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে আমাদেরও কর্তব্য আছে। পরিবারের অন্য সদস্য,
প্রতিবেশীরা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে তার কর্মস্থলে গিয়ে প্রতিবাদ জানাতে পারেন। লিখিত অভিযোগ দিতে পারেন। মোদ্দা কথা হলো, সকলকে
সকলের জায়গা থেকে ওদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে, প্রতিরোধ গড়তে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় নিজেরা নিজেদের থেকে ভালো হয়ে গেলে। ভাবনায় আনতে হবে, আমরা আমাদের পিতা-মাতার কারণেই পৃথিবীতে আসতে পেরেছি।
তাঁরাই আমাদের আলোর মুখ দেখিয়েছেন। তাঁরাই আমাদের আগুন, পানি, রোদ-বৃষ্টি
থেকে রক্ষা করেছেন। শিক্ষা দিয়েছেন, দিনদিন বড় করে তুলেছেন। মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন; যদিও আমরা অনেকে মানুষ না হয়ে
অমানুষই হয়েছি।
আমরা অমানুষ হয়ে যাচ্ছি বলেই আমাদের মা-বাবারা আমাদের সেবা থেকে বঞ্চিত
হচ্ছেন। ‘আপনের চেয়ে পর ভালো, পরের চেয়ে বৃদ্ধাশ্রম।’ কঠিন এক সত্য। আর এ
সত্যকে মেনেই অনেক বৃদ্ধ মা-বাবা আশ্রয় নেন বৃদ্ধাশ্রমে। সন্তানের কাছে
যাদের বেশি কিছু চাওয়ার নেই; শেষ বয়সে আদরের সন্তানের পাশে থেকে সুখ-দুঃখ
ভাগ করবার ইচ্ছা এতটুকুই যা চাওয়ার। আর এ নিয়েই প্রতিটি পিতা-মাতা প্রহর
গুনতে থাকেন দিবা-রজনী। কিন্তু অনেকেরই সেই সন্তানের কাছে আশ্রয় না হয়ে;
আশ্রয় হয় আপনজনহীন বৃদ্ধাশ্রমে। শেষ বয়সে ঘরের কোণেও জনমদুখী মা-বাবার
এতটুকুও জায়গা মিলে না। ওদের ছুঁড়ে দেয়া হয় প্রবীণ নিবাসনামীয় নরকে। তবুও
প্রতিবাদ দানা বাঁধে না; মন অভিশাপ দেয় না। নাড়ী ছেঁড়া ধন ওরা। তাই চুপ
থাকেন, একেবারে চুপ। তবে এ নিষ্ঠুরতা তাদের কেবলই কাঁদায়। এ কেমন নিয়তি?
ভাবি আমরা কতটাই না আধুনিক স্বার্থপর!
“বৃদ্ধাশ্রম থেকে সন্তানের কাছে মায়ের চিঠি” ফেসবুকে সেদিন এ শিরোনাম
একটি লেখার মন্তব্য আমি এভাবে লিখেছিলাম- “এই ছেলে তোকে কি বলে ডাকি
বলতো? কুকুর, বিড়াল, শুকর? না এ নামে তোকে ডাকলে পশুজাতীর যে আর মান
ইজ্জত রইবে না। ডাকা ডাকি বাদ দিই। বরং তোর মায়ের মতই তোর জন্য দোয়া করি-
“তুই বেঁচে থাক বছরের পর বছর অনন্তকাল”। খোদার কাছে প্রার্থনা এই যে,
তিনি যেন তোর অমানুষী মনে উপলব্ধি সৃষ্টি না করে তোর কাছে আজ্রাইল না
পাঠান। চিঠি পড়ে তোর মায়ে কষ্ট আমি পুরটা উপলব্ধি করতে পারছি না। এতো
বেশী কষ্ট উপলব্ধি করি কি করে? তোর জন্য ফরিয়াদ করি, খোদা যেন তোকে তোর
মায়ের মত সমকষ্ট দিয়ে পৃথিবী ত্যাগ করান। এর বেশী কষ্ট তোর জন্য বোধ করি
প্রয়োজন পড়বে না। তোর মা কষ্ট যেমনটা পেয়েছেন ঠিক তেমন কষ্টই তোকে দিক
খোদা। ভালো থাকিস.. ”। ফেসবুকে আমার এ মন্তব্যের পর এর সমর্থনে শতাধিক
মন্তব্য পেয়েছি যা পরলে অনেকেরই চোখে জল আসবে।
বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো ঐ মা তার ছেলেকে লিখেছেন-“খোকা তুই কেমন আছিসরে? বউমা
আর আমাদের ছোটো দাদুভাই সবাই ভালো আছে তো? জানি তোদের তিন জনের ছোট
সংসারে প্রত্যেকেরই খুব কাজ। তবুও তোদের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ। একদিন
একটু সময় করে এই বুড়ি মাকে দেখতে আয় না! কিরে, আসবি না? ওঃ বুঝতে পেরেছি!
এখনো আমার উপর থেকে অভিমান যায়নি বুঝি! আমাকে যেদিন বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর
ব্যবস্থা করেছিলি, সেদিন ঝগড়া করেছিলাম বৃদ্ধাশ্রম থেকে আমাকে নিতে আসা
লোকজনদের সঙ্গে। জানি শেষ দিনটাতে একটু বেশি রকমেরই বাড়াবাড়ি করে
ফেলেছিলাম, তাছাড়া আর কিইবা আমি করব বল, সময় মতো ওরা এসে আমার জিনিসপত্র
সব জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে নিল, তারপর বারবার তাগাদা দিতে লাগল। বাবা কারণ
আমি তোর সঙ্গে দেখা করে আসার জন্য তাদের কাছে সময় চেয়েছিলাম, তারা সময়
দিলেও শেষ পযর্ঞ্চন্ত তুই আসিসনি। তুই কাজে এত ব্যস্ত থাকিস তখন আমার মনে
ছিলনা। পরে মনে পড়েছিল, তাই তোর সঙ্গে দেখা না করেই চলে এসেছি। তুই রাগ
করিসনি তো? আর সেদিন আমার সেই জেদ দেখে বউমা তো রেগেই আগুন। তাছাড়া তার
তো রাগবারই কথা! আমাকে নিয়ে যেতে যারা এসেছিলো, অল কিছুক্ষণের মধ্যেই
তারা যা তড়িঘড়ি শুরু করে দিলৃতা দেখবার জন্য পাশের বাড়ি থেকে কেউ কেউ
উঁকি দিতে লাগলো। এতো বউমার একটু লজ্জাবোধ হবেই। সেদিন তোদের যে অপমান
করে এসেছি তোরা সেসব ভুলে যাস কেমন করে! আমার কথা ভাবিস না। আমি খুব ভালো
আছি! আর কেনই-বা ভালো থাকবনা বল? তোরা তো আমার ভালো থাকবারই বন্দোবস্ত
করে দিয়েছিস। তবে একটা কথা, আমার কথা যদি তোর কখনো-কোনোদিন মনে পড়ে; তখন
যেন নিজেকে তুই শেষ করে দিস না। তুই এখনো একশ বছর বেঁচে থাক।”
বৃদ্ধাশ্রম অবহেলিত বৃদ্ধদের জন্য শেষ আশ্রয়। তাঁদের সারা জীবনের অবদানের
যথার্থ স¡ীকৃতি, শেষ সময়ের সম্মান ও নিরাপত্তা দেয়া হয় এসব বৃদ্ধাশ্রমে।
এখানে তাঁরা নির্ভাবনায়, সম্মানের সঙ্গে, আনন্দের সঙ্গে বাকি দিনগুলো
কাটাতে পারেন। প্রয়োজনে অনেক বৃদ্ধাশ্রমে চিকিৎসারও সুন্দর ব্যবস্থা করা
আছে। কিন্তু সকল প্রাপ্তির মাঝেও এখানে যা পাওয়া যায় না তা হলো নিজের
পরিবারের সান্নিধ্য। বৃদ্ধ বয়সে মানুষ তার সনত্মান, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে
একত্রে থাকতে চান। তাদের সঙ্গে জীবনের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে চান।
সারাজীবনের কর্মব্যস্ত সময়ের পর অবসরে তাদের একমাত্র অবলম্বন এই
আনন্দটুকুই। বলা যায় এর জন্যই মানুষ সমগ্র জীবন অপেক্ষা করে থাকে।
বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় পাওয়া যায়, সঙ্গীসাথী পাওয়া যায়, বিনোদন পাওয়া যায়,
কিন্ত শেষ জীবনের এই পরম আরাধ্য আনন্দটুকু পাওয়া যায় না যাঁর জন্য তারা
এই সময়টাতে প্রবল মানসিক যন্ত্রণা আর ভারাক্রানত্ম হৃদয়ে আবেগাপস্নুত হয়ে
ওঠেন।নেহায়েত অনন্যপায় হয়ে, ইচ্ছার বাইরে যাঁরা বাবা- মাকে বৃদ্ধাশ্রমে
পাঠান, তাঁদের কথা ভিন্ন। কিন্তু যাঁরা নিজের পর্যাপ্ত সম্পদ ও সময় সুযোগ
থাকার পরও শুধু অবহেলা করে পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিয়ে ভুলে
যান, তাঁদের স্মরণ রাখা দরকার, এমন সময় তাঁদের জীবনেও আসতে পারে। যে
বাবা-মা একসময় নিজে না খেয়েও সনত্মানকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতেন, তাঁরা আজ
কোথায় কেমন আছেন সেই খবর নেয়ার সময় যাঁর নেই তাঁর নিজের সনত্মানও হয়ত
একদিন তাঁর সঙ্গে এমনই আচরণ করবে। বিভিন্ন উৎসবে, যেমন ঈদের দিনেও যখন
তারা তাদের সনত্মানদের কাছে পান না, সনত্মানের কাছ থেকে একটি ফোনও পান
না, তখন অনেকেই নীরবে অশ্রম্নপাত করেন আর দীর্ঘশ¡াস ছাড়েন। এমনকি সেই
সনত্মানকে অভিশাপ দিয়ে কামনা করেন, তাঁর সনত্মান তাঁর সঙ্গে যে আচরণ করল,
ভবিষ্যতে তাঁর ছেলের সনত্মানও যেন একই আচরণ করে।
একদিন যে সন্তানের জন্য বাবা-মা ছিলেন স্নেহময়, যে সন্তান একটু আঘাত
পেলেই বাবা হয়ে উঠতেন চিন্তিত। যে সন্তানকে নিজে হাত দিয়ে খাইয়ে দিয়েছেন,
কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছেন এবং কখনই নিজের অসুবিধার কথা সন্তানদের বুঝতে
দেননি। আজকাল সমাজে এমন কিছু সন্তান দেখা যায়, যারা কি না মা-বাবার এতোসব
আদর-যত্নের কথা ভুলে মা-বাবাকে ঠেলে দেয় অজানা গন্তব্যে। বৃদ্ধ ও অসহায় বলে তাদের ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রমে। ঘরের মধ্যে সবার থাকার জায়গা হলেও এখানে বৃদ্ধ মা-বাবার জায়গা হয় না। আসলে একজন মা-বাবা তার সন্তানদের জন্য যা করেন, তা তাদের পক্ষে সারা জীবনেও শোধ করা সম্ভব নয়। বুড়ো বয়সে এসে তারা চায় একটু শান্তি, ভালোবাসা ও স্নেহ। এ বয়সে একটু আদর-যত্ন পেলেই তারা খুশি হন। মা-বাবা চান সন্তানরা যেন তার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনে।
আমাদের মনে রাখা উচিত আজ যিনি সন্তান, তিনিই আগামী দিনের পিতা কিংবা মা। বৃদ্ধ বয়সে এসে মা-বাবারা যেহেতু শিশুদের মতো কোমলমতি হয়ে যায়, তাই তাদের জন্য সুন্দর জীবনযাত্রার পরিবেশ তৈরি করাই সন্তানের কর্তব্য। আর যেন কখনো কোনো পতা-মাতার ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। তাদের জন্য তৈরি করতে হবে একটা নিরাপদ ও সুন্দর পৃথিবী।
আসলে মা-বাবা তার সন্তানদের জন্য যা করেন, তা তাদের পক্ষে সারা জীবনেও
শোধ করা সম্ভব নয়। বুড়ো বয়সে এসে তারা চান একটু শান্তি, ভালোবাসা ও স্নেহ। এ বয়সে একটু আদর-যত্ন পেলেই তারা খুশি হন। মা-বাবা চান সন্তানরা যেন তার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনে। আমাদের মনে রাখা উচিত, আজ যিনি
সন্তান, তিনিই আগামী দিনের পিতা কিংবা মা। বৃদ্ধ বয়সে এসে মা-বাবারা যেহেতু শিশুদের মতো কোমলমতি হয়ে যায়, তাই তাদের জন্য সুন্দর জীবনযাত্রার
পরিবেশ তৈরি করাই সন্তানের কর্তব্য। আর যেন কখনো কোনো পিতা-মাতার ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। তাদের জন্য তৈরি করতে
হবে একটা নিরাপদ ও সুন্দর পৃথিবী।

 

লেখক :  মহা সচিব- “কলামিস্ট ফোরাম অফ বাংলাদেশ“। 

 

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ

বিশ্ব মরুময়তা ও অনাবৃষ্টি প্রতিরোধ দিবস কি, কেন পালিত হয় এবং পালনের গুরুত্ব সম্পর্কে জানুন।

আজ বিশ্ব মরুকরণ ও খরা প্রতিরোধ দিবস। দিবসটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্ববাসীর চোখের সামনে মরুকরণ সম্পর্কে তুলে ধরা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলা। মরুকরণ এবং খরা মোকাবেলা করার বিশ্ব দিবস হল একটি জাতিসংঘের পালন যা প্রতি বছর ১৭ জুন পালিত হয়।  এর উদ্দেশ্য হল মরুকরণ এবং খরার উপস্থিতি সম্বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, মরুকরণ প্রতিরোধের পদ্ধতিগুলি হাইলাইট করা এবং খরা থেকে পুনরুদ্ধার করা।  প্রতি বছরের বৈশ্বিক উদযাপনের একটি অনন্য, অভিনব জোর রয়েছে যা আগে গড়ে ওঠেনি।  ১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের পক্ষ থেকে খরা ও মরুকরণের প্রতি সোচ্চার হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। এরপর ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ঘোষণা অনুযায়ী ১৯৯৫ সাল থেকে ১৭ জুন বিশ্ব মরুকরণ ও খরা প্রতিরোধ দিবস পালন করা হচ্ছে। এই দিনটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রেজোলিউশন A/RES/৪৯/১১৫ দ্বারা ৩০ জানুয়ারী, ১৯৯৫ তারিখে ঘোষণা করা হয়েছিল, যেদিন মরুকরণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য জাতিসংঘ কনভেনশনের খসড়া তৈরি করা হয়েছিল।

টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডা ঘোষণা করে যে “আমরা গ্রহটিকে অবক্ষয় থেকে রক্ষা করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যার মধ্যে রয়েছে টেকসই ব্যবহার ও উৎপাদন, টেকসইভাবে এর প্রাকৃতিক সম্পদ পরিচালনা করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে এটি বর্তমানের চাহিদাগুলিকে সমর্থন করতে পারে এবং  ভবিষ্যত প্রজন্মের”.  বিশেষভাবে, SDG লক্ষ্য ১৫ : ল্যান্ড অন লাইফ ভূমির অবক্ষয় বন্ধ করতে এবং বিপরীত করার জন্য জাতিসংঘ এবং SDG স্বাক্ষরকারী দেশগুলির সংকল্পকে বলে।

 

 

মরুকরণ মোকাবেলায় জাতিসংঘের কনভেনশন (UNCCD)

 

মরুকরণ এবং খরার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য, ১৯৯৪ সালে ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন টু কমব্যাট মরুকরণ (UNCCD) স্থাপিত হয়েছিল। এটি একমাত্র আইনিভাবে বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তি যা পরিবেশ এবং উন্নয়নকে টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত করে।  ইউএনসিসিডির লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী কর্মকাণ্ডকে একত্রিত করা এবং মরুকরণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং খরার প্রভাব কমানোর জন্য জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা তৈরিতে দেশগুলিকে সহায়তা করে। তবে, জাতিসংঘ এ দিবসকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালনের আহ্বান জানালেও দুঃখজনকভাবে দেশে দিবসটি ততটা গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয় না। ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রেও নেই তেমন উদ্যোগ।

 

 

আজকের পৃথিবীতে পরিবেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মরুকরণ। জাতিসংঘের দেয়া তথ্যমতে, পৃথিবীর প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ বেঁচে থাকার জন্য ক্ষয়িষ্ণু ভূমির ওপর নির্ভরশীল। আর পৃথিবীর অতিদরিদ্রদের ৪২ ভাগই বাস করে ক্ষয়ে যাওয়া এলাকায়, যারা মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। পৃথিবী প্রতিনিয়ত তার রূপ পাল্টাচ্ছে। আর পৃথিবীবাসীর জন্য অশনি সংকেতস্বরূপ সিডর, সুনামি, ভূমিকম্প, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যাসহ বিভিন্ন রকমের রোগবালাই দেখা দিচ্ছে দুর্যোগ আকারে। এর ফলে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ, ক্ষতির মুখে পড়ছে মাঠ-ফসল; বাড়ছে জনসংখ্যা, বাড়ছে খাদ্যসংকট। তবে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে জলবায়ুর কুপ্রভাবে বিশ্বে মরুকরণ একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা যদি এভাবে বাড়তে থাকে, তাহলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে আমাদের। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দিন দিন আমাদের ফসলি জমি কমে যাচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য; একই সঙ্গে উজাড় হচ্ছে গাছপালা ও বন-জঙ্গল। তার চেয়েও বড় বিষয় হলো, আমাদের নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন যেমন আমাদের ফসলি জমি কমছে, তেমনি খরায় উর্বরতা হারাচ্ছে জমি। এ অবস্থায় পরিবেশের প্রতি মনোযোগী হওয়া আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।মরুকরণ সমস্যাটি বিশাল এক ক্ষতিকর ভৌগোলিক পরিবর্তনের নাম। এজন্য এখনই প্রয়োজন মরুকরণ বিস্তার রোধকল্পে সম্মিলিত প্রচেষ্টা।

 

 

জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা যদি এভাবে বেড়ে যায়, তাহলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে আমাদের। এতে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, সুপেয় জল ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি তাদের অধিকার, গৃহায়ন ও অন্যান্য অবকাঠামোগত সুবিধা হুমকির মুখে পড়বে। ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি উপসাহারীয় আফ্রিকায় খরার কারণে প্রায় ৩০ লক্ষ লোকের মৃত্যু ঘটে। সুতরাং মরুকরণ সমস্যাটি বিশাল এক ক্ষতিকর ভৌগোলিক পরিবর্তনের নাম। মরুময়তা ঠেকাতে অধিক পরিমাণে গাছ লাগানোর কথা বলা হয়। যদিও আদতে গাছ আপনারই উপকার করবে। গাছের ফল যেমন আপনি প্রজন্মান্তরে খেতে পারেন। আন্তর্জাতিকভাবে যত পরিকল্পনাই নেওয়া হোক ব্যক্তিগতভাবে তার বাস্তবায়ন না করলে তা পরিকল্পনায়ই থেকে যাবে। বিশেষ করে প্রত্যেকে পরিবেশের প্রতি সচেতন হয়ে প্রত্যেকটি কাজ পরিবেশসম্মতভাবে করলে তা যেমন ব্যক্তির লাভ, তেমনি পরিবেশেরই লাভ। মানুষ যখনই পরিবেশের সঙ্গে নির্দয় আচরণ করে তখনই পরিবেশ তার প্রতিশোধ নেয়। সিডর, আইলাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাক্ষী আমরা। নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার চিত্রও দেখা যায়। এমনকি নেপালের মতো ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প হওয়াও হয়তো অসম্ভব নয়।

 

 

কিন্তু যত দিন যাচ্ছে আমাদের যেনো কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।বিশ্ব মরুকরণ ও খরা প্রতিরোধের অঙ্গীকার না করে নির্বিচারে গাছপালা নিধন করে চলেছি। যার ফলসরুপ দেখা দিচ্ছে ভূমিক্ষয়, বৃষ্টি হীনতা, ও নানান প্রাকৃতিক বিপর্যয়। আর এর ফল ভুক্তে হচ্ছে অমদেরকেই।

বাড়ির পরিবেশ ঠিক রাখতে আমরা এসি লাগিয়ে আরাম করছি। কাজের গতি বাড়াচ্ছি। শান্তির ঘুমে স্বপ্ন সুন্দর হয়ে উঠছে। আমরা পৃথিবীর কথা ভাবছি না। শহর বৃদ্ধি পাচ্ছে। গড়ে উঠছে সভ্যতার বিশ্বায়ন আর ঠিক তখনই ধ্বংস হচ্ছে সবুজ। গাছের থেকে বড় বন্ধু এই পৃথিবীতে আর তেমন নেই।

 

 

জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দিন দিন আমাদের ফসলি জমি কমে যাচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য; একই সঙ্গে উজাড় হচ্ছে গাছপালা ও বন-জঙ্গল। তার চেয়েও বড় বিষয় হলো, আমাদের নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন যেমন আমাদের ফসলি জমি কমছে, তেমনি খরায় উর্বরতা হারাচ্ছে জমি। এ অবস্থায় পরিবেশের প্রতি মনোযোগী হওয়া আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এখন ই যদি সচেতন না হই আমরা তা হলে আগামী দিনে নেমে আসবে আরো প্রাকৃতিক বিপর্যয়। আগামী প্রজন্ম সম্মুখীন হবে অস্তিত্তের সংকটে। তাই আসুন এই বিশেষ দিনে আমরা সকলে শপথ নেই প্রকৃতিকে রক্ষার।

 

 

বার্ষিক থিম—-

 

২০২৩ – তার জমি।  তার অধিকার.

২০২২ – একসাথে খরা থেকে উঠে আসা

২০২১ – পুনরুদ্ধার, জমি এবং পুনরুদ্ধার।  আমরা সুস্থ জমি দিয়ে আরও ভালভাবে গড়ে তুলি

২০২০ – খাদ্য।  খাওয়ান।  ফাইবার – খরচ এবং জমির মধ্যে সংযোগ

২০১৯ – আসুন ভবিষ্যত টি ফার্টস বাড়াই)

২০১৮ – জমির প্রকৃত মূল্য আছে।  এতে বিনিয়োগ করুন

২০১৭ – ভূমি ক্ষয় এবং অভিবাসনের মধ্যে লিঙ্ক (সিরিয়ার কৃষি ব্যবস্থার পরিবেশগত কারণে ব্যর্থতার পর সিরিয়ার ব্যাপক দেশত্যাগের আলোকে) #2017WDCD

২০১৬ – পৃথিবী রক্ষা করুন।  জমি পুনরুদ্ধার করুন।  মানুষ জড়িত.

২০১৫ – টেকসই খাদ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন।  – “ফ্রি লাঞ্চ বলে কিছু নেই। সুস্থ মাটিতে বিনিয়োগ করুন”

২০০৯ – জমি এবং শক্তি সংরক্ষণ = আমাদের সাধারণ ভবিষ্যত সুরক্ষিত

২০০৮ – টেকসই কৃষির জন্য ভূমি ক্ষয় মোকাবিলা

২০০৭ – মরুকরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন – একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ

২০০৬ – মরুভূমির সৌন্দর্য – মরুকরণের চ্যালেঞ্জ

২০০৫ – নারী ও মরুকরণ

২০০৪ – মরুকরণের সামাজিক মাত্রা: মাইগ্রেশন এবং দারিদ্র

২০০৩ – মরুভূমি এবং মরুকরণের আন্তর্জাতিক বছর (IYDD)

২০০২ – জমির অবক্ষয়

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

 

 

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ভারতের রসায়ন শিল্পের প্রথম পথিকৃত আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় :: প্রশান্ত কুমার দাস।।।।

বাংলার মাটিতে যে কজন বিজ্ঞানী জন্ম গ্রহণ করে তাদের গবেষণা ও কর্মধারায় উজ্জ্বল ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র রায় । তিনি শুধু বিজ্ঞানী এবং রসায়নবিদ ছিলেন না, তিনি একাধারে ছিলেন শিক্ষক, দার্শনিক, শিল্পপতি, কবি, এবং লোকহিতৈষী।

তার জন্ম অবিভক্ত বাংলার যশোর জেলায় রারুলী নামক (বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্গত) স্থানে ১৮৬১ সালের ২রা আগস্ট । পিতা হরিশচন্দ্র রায় এবং মাতা ভুবনমোহন দেবী। বাবা স্থানীয় জমিদার ছিলেন। বনেদি পরিবারের সন্তান প্রফুল্ল চন্দ্রের ছোটবেলা থেকেই সব বিষয়ে তুখোড় বুদ্ধি ছিলো। ১৮৭২ সালে বাবা কলকাতায় এনে হেয়ার স্কুলে ভর্তি করান । কিন্তু রক্ত আমাশায় রোগে ভুগতে থাকেন, তাই আবার গ্রামে ফিরে যান । সেখানে বাবার নিজস্ব গ্রন্থাগারে বিভিন্ন বই পাঠ করতে থাকেন। এতে তার আলাদা জ্ঞান-চক্ষু খুলে যায়। এরপর ১৮৭৪সালে আবার কলকাতায় ফিরে আসেন। এবার তিনি অ্যালবাট স্কুলে ভর্তি হন। তিনি এই আলবার্ট স্কুল থেকেই প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাশ করেন। এরপরে মেট্রোপলিটন কলেজে ভর্তি হয়ে এফ এ পাশ করেন । এরপর প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হয়ে বি.এ পাশ করে গিলক্রিষ্ট বৃত্তি নিয়ে স্কটল্যন্ডে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে যান। এবং সেখান থেকেই B.Sc (1887) পাশ করেন। পরে সেখানে ডি.এস.সি ডিগ্রী লাভের জন্য গবেষণা শুরু করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল-কপার ম্যাগনিসিয়াম শ্রেণীর সম্মিলিত সংযুক্তি পর্যবেক্ষণ। দুই বছরের কঠোর সাধনায় তিনি গবেষনা সমাপ্ত করেন এবং পি.এইচ.ডি ও ডি.এস.সি ডিগ্রী একসাথে লাভ করেন। তার এই গবেষনাপত্রটি শ্রেষ্ঠ বিবেচিত হওয়ায় তাঁকে “হোপ” প্রাইজে ভূষিত করা হয়।ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে ১৮৮৮ সালে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরে প্রেসিডেন্সি কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন এবং প্রায় ২৪ বছর এই কলেজে অধ্যাপনা করেন। এখানে তিনি রসায়ন নিয়ে নতুন নতুন গবেষণা শুরু করেন। তাঁর উদ্দ্যোগে তাঁর নিজস্ব গবেষণা থেকেই বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানা তৈরী করেন ।পরবর্তীকালে ১৯০১ সালে কলকাতার মানিকতলায় ৪৫ একর জমিতে এই কারখানা স্থানান্তরিত করেন। এর নতুন নামকরণ হয় বেঙ্গল কেমিক্যালস এন্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড।
শুধু তাই নয়, প্রফুল্লচন্দ্র রায় নিজের বাসভবনে দেশীয় ভেষজ নিয়ে গবেষনার কর্ম শুরু করেন। এই গবেষণাস্থল থেকেই পরবর্তীকালে বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানা সৃষ্টি হয় যা ভারতের শিল্পায়নে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা গ্রহণ করে। তাই বলা যায় , বিংশ শতকের গোড়ায় ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পায়নে তাঁর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য । ১৮৯৫ সালে তিনি মারকিউরাস (HgNo2) নাইট্রেট আবিষ্কার করেন,
যা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। তিনি সারাজীবনে ১২ টি যৌগিক লবন ,৫টি থায়োএষ্টার আবিষ্কার করেন।
অন্যদিকে সমবায়ের পুরোধা প্রফুল্লচন্দ্র রায় ১৯০৯ সালে নিজ জন্মভূমিতে একটি কো-অপারেটিভ ব্যঙ্ক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৩ সালে তিনি পিতার নামে হরিশচন্দ্র বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ।এছাড়া বাগেরহাট জেলায় ১৯১৮ সালে পি.সি.কলেজ নামে একটি কলেজের প্রতিষ্ঠা করেন।
শিক্ষক হিসাবেও তিনি আচার্য নামে পরিচিত ছিলেন । তিনি ইংল্যণ্ড থেকে সি.আই.ই উপাধি লাভ করেন। ১৯১১ সালে ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডক্টরেট উপাধি দেয়। পরে মহীশূর ও বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট হন। তিনি ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নাইট উপাধি লাভ করেন।
তিনি লেখক হিসাবেও সুপরিচিত ছিলেন-
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল –
১। ভারতঃ-সিপাহী বিদ্রোহের আগে এবং পরে ।
২. সরল প্রাণীবিজ্ঞান,বাঙ্গালী মস্তিষ্ক ও তার অপব্যবহার।
৩. হিন্দু রসায়নী বিদ্যা ইত্যাদি ।মোট ১৪৫টি গবেষণাপত্র করেছিলেন।
তাঁর দেশের প্রতি এবং বাংলার ভাষার প্রতি অগাধ প্রেম ও ভক্তির পরিচয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাওয়া যায়। তিনি ক্লাসে পড়ানোর সময়ে বাংলায় লেকচার দিতেন। বাংলা ভাষা তাঁর অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে ছিল। তার বাচনভঙ্গি এতো অপূর্ব ও প্রাণচাঞ্চল্য ছিলো যে সকল ছাত্র মনোমুগ্ধ হয়ে শুনতো। তার দুই উল্লেখযোগ্য ছাত্র হলেন বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও মেঘনাদ সাহা। তিনি ছিলেন এক উদারপন্থী এবং অসাম্প্রদায়িক চিন্তাধারার আদর্শে বিশ্বাসী । ১৯৪৪সালে ১৬জুন কলকাতায় এই বিখ্যাত বিজ্ঞানী পরলোক গমন করেন। বাংলায় বিজ্ঞানের প্রসারে, শিল্পায়নে, শিক্ষাক্ষেত্রে যে সব মহান বিজ্ঞানী চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের মধ্যে প্রফুল্ল চন্দ্র রায় এক উল্লেখযোগ্য নক্ষত্র এবং ভবিষ্যতেও স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

বিশ্ব বায়ু দিবস কেন পালিত হয় এবং পালনের গুরুত্ব।

বিশ্ব বায়ু দিবস প্রতি বছর ১৫ জুন পালিত হয় বায়ু শক্তির তাৎপর্য এবং শক্তির একটি বিশুদ্ধতম রূপ হিসাবে এর গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করার জন্য।
বিশ্ব বায়ু দিবস উদযাপনের পিছনে অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হল বায়ু শক্তি সংগ্রহের সুবিধা সম্পর্কে মানুষকে শিক্ষিত করা।  ক্ষতিকারক গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমানো থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিস্থিতির উন্নতি।  বায়ু শক্তির ব্যবহার টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিত করার পাশাপাশি আমাদের অনেক উপায়ে সাহায্য করে।
বিশ্ব বায়ু দিবসে বায়ু শক্তির ইতিবাচক পরিবেশগত প্রভাব তুলে ধরতে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রম, কর্মশালা, সম্মেলন, সেমিনার এবং ইভেন্টের আয়োজন করা হয়।
বিশ্ব বায়ু দিবসের স্বীকৃতি শুধুমাত্র টেকসই শক্তি অনুশীলনকে উৎসাহিত করে না বরং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও সাহায্য করে।

গ্লোবাল উইন্ড ডে বা বিশ্ব বায়ু দিবস হল একটি বিশ্বব্যাপী ইভেন্ট। এটি উইন্ডইউরোপ এবং GWEC (গ্লোবাল উইন্ড এনার্জি কাউন্সিল) দ্বারা আয়োজিত হয়।  এটি এমন একটি দিন যখন বায়ু শক্তি উদযাপন করা হয়, তথ্যের আদান-প্রদান করা হয় এবং প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুরা বায়ু শক্তি, এর শক্তি এবং বিশ্বকে পরিবর্তন করার সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে পারে।  EWEA এবং GWEC এর সহযোগিতায়, জাতীয় বায়ু শক্তি সমিতি এবং বায়ু শক্তি উৎপাদনের সাথে জড়িত কোম্পানিগুলি বিশ্বের অনেক দেশে ইভেন্টের আয়োজন করে।  ২০১১ সালে, 4টি মহাদেশে 30টি দেশে ইভেন্ট সংগঠিত হয়েছিল।  ইভেন্টগুলির মধ্যে রয়েছে উপকূলীয় এবং উপকূলীয় বায়ু খামার পরিদর্শন, তথ্য প্রচার, শহরগুলিতে প্রদর্শনী টারবাইন স্থাপন, বায়ু কর্মশালা এবং একটি বায়ু কুচকাওয়াজ।  গ্লোবাল উইন্ড ডে (১৫ জুন) নিজেই অনেক ঘটনা ঘটেছে, তবে তার আগের দিন এবং সপ্তাহগুলিতেও ঘটনা ঘটেছে।  ২০১২ সালে বিশ্বজুড়ে ২৫০টি ইভেন্ট ছিল এবং একটি খুব জনপ্রিয় ফটো প্রতিযোগিতা ছিল।

বিশ্ব বায়ু দিবস পর্যবেক্ষণের ইতিহাস—

 

ইউরোপিয়ান উইন্ড এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন (EWEA) দ্বারা 2007 সালে প্রথম বায়ু দিবসের আয়োজন করা হয়েছিল কিন্তু এটি শুধুমাত্র 2009 সালে ছিল যে EWEA গ্লোবাল উইন্ড এনার্জি কাউন্সিল (GWEC) এর সাথে মিলিত হয়েছিল এবং এটিকে একটি বিশ্বব্যাপী ইভেন্টে পরিণত করেছিল।  উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বজুড়ে মানুষকে বায়ু শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা।

 

বিশ্ব বায়ু দিবস পালন—

 

ইউরোপিয়ান উইন্ড এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন এবং গ্লোবাল উইন্ড এনার্জি কাউন্সিল প্রতি বছর গ্লোবাল উইন্ড ডে উপলক্ষে বায়ু শক্তির প্রচারে বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করে।  অনেক জাতীয় বায়ু শক্তি সমিতি এবং বায়ু শক্তি উৎপাদনের সাথে জড়িত কোম্পানিগুলিও তাদের সমস্ত দেশে ইভেন্ট করে।  তথ্য প্রচার, উপকূলীয় এবং উপকূলীয় বায়ু খামার পরিদর্শন, শহরগুলিতে টারবাইন স্থাপনের প্রদর্শনী, বায়ু কর্মশালা এবং বায়ু প্যারেড এই দিনে বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত কিছু জনপ্রিয় অনুষ্ঠান।  অন্যান্য মজার ক্রিয়াকলাপ যেমন উইন্ড ফার্ম ওপেন ডে, ওয়ার্কশপ, রেগাটাস, ফটো প্রদর্শনী, অঙ্কন প্রতিযোগিতা, ঘুড়ি ওড়ানো প্রতিযোগিতা ইত্যাদিও বিশ্ব বায়ু দিবস উদযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ গঠন করে।

বিশ্ব বায়ু দিবসের তাৎপর্য—

বিশ্ব বায়ু দিবস হল বায়ু শক্তি, এর শক্তি এবং এটি ধারণ করতে পারে এমন সমস্ত বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা উদযাপন করার একটি দিন।  এটি মানুষকে, বিশেষ করে শিশুদের, বায়ু শক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষিত করার একটি দিন।  বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকট গভীর হওয়ার সাথে সাথে এবং জলবায়ুর প্রতি রাজনৈতিক মনোযোগ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে বৈশ্বিক বায়ু দিবস পালন করা আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।  বায়ু শক্তির সঠিক ব্যবহার অর্থনীতিকে ডিকার্বনাইজ করতে সাহায্য করতে পারে এবং চাকরি ও প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে এবং তাই এই দিনে আরও বেশি সংখ্যক কোম্পানিকে তাদের ব্যবসায়কে শক্তি দিতে পরিষ্কার, নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী বায়ু শক্তির দিকে যেতে উৎসাহিত করা হয়।

বায়ু শক্তি সম্পর্কে আকর্ষণীয় তথ্য—

বিশ্ব বায়ু দিবস ২০২৩ উপলক্ষ্যে, আসুন বায়ু শক্তি সম্পর্কে কিছু আকর্ষণীয় তথ্য জেনে নিই:

বায়ু শক্তি সবচেয়ে কার্যকরী এবং পরিবেশ বান্ধব শক্তির উত্সগুলির মধ্যে একটি।

২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে উইন্ডমিল ব্যবহার করা হচ্ছে।

এটি শুধুমাত্র ১৯৪০ এর দশকে প্রথম আধুনিক বায়ু টারবাইন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্টে নির্মিত হয়েছিল।

বায়ু শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১১ টি রাজ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ২০% এরও বেশি সরবরাহ করে।

সবচেয়ে বড় উইন্ড টারবাইন যা ২০ তলা লম্বা এবং একটি ফুটবল মাঠের দৈর্ঘ্যের ব্লেড যুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইতে অবস্থিত।

 

বায়ু শক্তির সবচেয়ে ইনস্টল ক্ষমতা জার্মানিতে।

জার্মান পদার্থবিদ, আলবার্ট বেটজ, বায়ু টারবাইন প্রযুক্তির প্রবর্তক।

উইন্ড টারবাইনগুলি দেখতে সহজ হতে পারে তবে বাস্তবে প্রায় ৮০০০ বিভিন্ন অংশ রয়েছে। যদি বাতাস প্রতি ঘন্টায় ১৩০ কিমি বেগে প্রবাহিত হয়, তাহলে নিরাপত্তা সতর্কতা হিসাবে ব্লেডগুলি বাঁকানো বন্ধ করে দেয়।

বায়ু শক্তি বিদ্যুৎ উৎপাদনের দ্রুততম বর্ধনশীল মোড।

তাই, প্রতি বছরের মতো আজ ১৫ জুন সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে বিশ্ব বায়ু দিবস। বায়ু শক্তিকে ব্যবহারে সবাইকে উৎসাহিত করতেই বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি পালিত হয়ে থাকে।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ বিশ্ব রক্তদাতা দিবস, জানুন কেন পালিত হয় এবং দিনটির গুরুত্ব।

স্বেচ্ছায় রক্তদান এক মহৎ কাজ। রক্তের অভাব একজন ব্যক্তির জীবনকে বিপদে ফেলতে পারে। রক্তের প্রয়োজনে সময়মতো রক্ত সরবরাহ করা না হলে একজনের জীবনও হারাতে পারে। রক্তের ঘাটতি পূরণ করে রক্তদানের মাধ্যমে জীবন বাঁচানো যায়।
এই কারণে মানুষকে রক্তদানের জন্য সচেতন করা হয়, যাতে একজন সুস্থ মানুষ প্রয়োজনে রক্ত দান করতে পারে এবং একটি জীবন বাঁচাতে পারে। হাসপাতালগুলোতে জীবন-মৃত্যুর যুদ্ধে লিপ্ত মানুষ যাতে নতুন জীবন পায় সেজন্য বেশি বেশি মানুষ রক্তদান করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। তাই বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের বিশেষ উপলক্ষ্য জীবন বাঁচাতে রক্তদানের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া। প্রতি বছর ১৪ জুন সারা বিশ্বে দিনটি উদযাপন করা হয়।এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে- ‘রক্ত দান করুন, দান করুন প্লাজমা, যতবার সম্ভব গ্রহণ করুন জীবন বাঁচানোর এ অনন্য সুযোগ’।

 

আন্তর্জাতিকভাবে এবছর বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজক দেশ আলজেরিয়া। ২০০৪ সালে দিবসটি প্রথম পালিত হয়। নিরাপদ রক্ত নিশ্চিতকরণ ও স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের উৎসাহ দিতেই বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয়ে আসছে দিবসটি।

১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস পালন এবং ২০০০ সালে ‘নিরাপদ রক্ত’-এই থিম নিয়ে পালিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৪ সালে প্রথম পালিত হয়েছিল বিশ্ব রক্তদান দিবস। ২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশনের পর থেকে প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ দিবস পালনের জন্য তাগিদ দিয়ে আসছে।
প্রতিবছর ৮ কোটি ইউনিট রক্ত স্বেচ্ছায় দান হয়, অথচ এর মাত্র ৩৮ শতাংশ সংগ্রহ হয় উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে, যেখানে বাস করে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়া এখনো বিশ্বের অনেক দেশে মানুষের রক্তের চাহিদা হলে নির্ভর করতে হয় নিজের পরিবারের সদস্য বা নিজের বন্ধুদের রক্তদানের ওপর, আর অনেক দেশে পেশাদারি রক্তদাতা অর্থের বিনিময়ে রক্ত দান করে আসছে রোগীদের।

 

আমাদের দেশে রক্তের চাহিদার একটা বড় অংশ প্রয়োজন হয় থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্যে।একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর প্রতি মাসে ১ থেকে ৩ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। থ্যালাসেমিয়া ছাড়াও রক্তস্বল্পতা, প্রসূতির রক্তক্ষরণ, অগ্নিদগ্ধ রোগী, বড় অপারেশন, দুর্ঘটনা, ইত্যাদি নানা কারণে রক্তের প্রয়োজন হয়। রক্তের এ চাহিদা পূরণে নতুন করে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার কোনও বিকল্প নেই। সাধারণত ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী যেকোনও শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ-সক্ষম ব্যক্তি প্রতি চার মাস পরপর রক্ত দিতে পারেন। তবে সব রক্ত ​​সবাইকে দেওয়া যায় না। যদি কারো A+ রক্তের গ্রুপ থাকে, তাহলে এই ধরনের রক্ত ​​A+ এবং AB+ কে দেওয়া যেতে পারে। A- ব্লাড গ্রুপের মানুষের রক্ত ​​AB-, A-, A+-তে স্থানান্তর করা যেতে পারে। B+ ব্যক্তি B+ এবং AB+ রক্ত ​​দিতে পারেন। যদি কারো রক্তের গ্রুপ O+ হয়, তাহলে সে তার রক্ত ​​A+, B+, AB+, O+ কে দিতে পারে। AB+ রক্তের গ্রুপের একজন ব্যক্তি AB+ কে রক্ত ​​দিতে পারেন।চিকিৎসকদের মতে, যে কোনো সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক, নারী-পুরুষ উভয়েই রক্ত ​​দিতে পারেন। পুরুষরা প্রতি তিন মাসে একবার নিরাপদে রক্ত ​​দান করতে পারে এবং মহিলারা প্রতি চার মাসে একবার রক্তদান করতে পারে। রক্তদাতার ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৮ বছর, ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা রক্ত ​​দিতে পারবেন। ওজন ৪৫ কেজির কম হওয়া উচিত নয়।

 

অথচ বিশ্বের নানা দেশ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে জানা যায়, ‘নিরাপদ রক্ত সরবরাহের’ মূল ভিত্তি হলো স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে দান করা রক্ত। কারণ তাদের রক্ত তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং এসব রক্তের মধ্য দিয়ে গ্রহীতার মধ্যে জীবনসংশয়ী সংক্রমণ, যেমন এইচআইভি ও হেপাটাইটিস সংক্রমণের আশঙ্কা খুবই কম।
স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদানকারী আড়ালে থাকা সেসব মানুষের উদ্দেশে, এসব অজানা বীরের উদ্দেশে, উৎসর্গীকৃত ১৪ জুনের বিশ্ব রক্তদান দিবস।

 

তবে ১৪ জুন এই দিনটি উদযাপনের একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার রক্তের গ্রুপ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।এই নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছিলেন রক্তের গ্রুপ ‘এ, বি, ও,এবি’। এই অবদানের জন্য, কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার ১৯৩০ সালে নোবেল পুরস্কার পান । রক্তদাতা দিবসটি বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টেইনারকে উৎসর্গ করা হয়েছে। তার জন্মদিন ১৪ জুন।

 

প্রতি বছর রক্তদাতা দিবসের একটি বিশেষ থিম থাকে। এ বছর বিশ্ব রক্তদাতা দিবস ২০২৩-এর থিম হল- (Give blood, give plasma, share life, share often.) যারা স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান করে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন তাদেরসহ সাধারণ জনগণকে রক্তদানে উৎসাহিত করাই এ দিবসের উদ্দেশ্য।রক্তদানকে উৎসাহিত করা এবং রক্তদাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের লক্ষ্যে প্রতি বছর রক্তদাতা দিবস উদযাপিত হয়। এই উপলক্ষে সারা বিশ্বে মানুষকে অনুপ্রাণিত করা হয়, যেন রক্তের অভাবে কোনো রোগীর মৃত্যু না হয়।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

জানুন , জগন্নাথের প্রসাদ আস্বাদন করার সময় মহাপ্রভুর কী হয়েছিল?——রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক।।।।

একদিন মহাপ্রভু গেছেন শ্রীজগন্নাথ দর্শন করতে, সিংহদ্বারে দ্বারপাল তাঁকে দেখেই এগিয়ে এসে চরণবন্দনা করলেন । অমনই মহাপ্রভু , “কোথায় আমার কৃষ্ণ ? আমার প্রাণনাথ কোথায় গো? তুমি আমার সখা ; আমায় দেখাও সখা ,আমার প্রাণনাথকে ।”—-বলে অনুনয় করার মত দ্বারপালের হাতখানা জড়িয়ে ধরলেন। দ্বারপাল বললেন, “আমি দর্শন করাচ্ছি আপনাকে , চলুন ।” শ্রীমন্‌ মহাপ্রভুর হাত ধরে মন্দিরের জগমোহনে নিয়ে গেলেন দ্বারপাল। আর তারপর , শ্রীপুরুষোত্তমকে দেখিয়ে বললেন, “ঐ যে তিনি ! আপনার প্রাণনাথ।”

গরুর স্তম্ভের পাশে দাঁড়িয়ে জগন্নাথ দর্শন করতেন মহাপ্রভু । তিনি কখনোই গর্ভমন্দিরে প্রবেশ করে জগন্নাথ দর্শন করতেন না । প্রতিদিনের মত আজও দ্বারপাল নিয়ে তাঁকে গরুর স্তম্ভের পিছনে বাঁ দিকটায়(গরুড়ের বাম দিক) দাঁড় করালেন এবং সেখান থেকেই মহাপ্রভু দু’নয়ন মেলে জগন্নাথকে দর্শন করলেন । জগন্নাথ আজ এখন মুরলীবদন শ্রীকৃষ্ণ হয়ে ধরা দিলেন মহাপ্রভুর নেত্রে । —-এই লীলার কথা রঘুনাথ দাস গোস্বামী তাঁর ‘শ্রীচৈতন্যস্তবকল্পবৃক্ষ’ গ্রন্থের সপ্তম শ্লোকে প্রকাশ করেছেন।

“ক্ক মে কান্তঃ কৃষ্ণস্ত্বরিতমিহ তং লোকয়
সখে ! ত্বমবেতি দ্বারাধিপমভিবদন্নুন্মদ ইব।।
দ্রুতং গচ্ছ দ্রস্টুং প্রিয়মিতি তদুক্তেন
ধৃততদ্ভুতজান্তর্গৌরাঙ্গো হৃদয় উদয়ন্মাং মদয়তি ।।”

এমন সময় গোপালবল্লভ ভোগ লাগলো জগন্নাথের । ভোগের পর শঙ্খ , ঘন্টা আদি সহ আরতি হল । ভোগ সরলে জগন্নাথের সেবকগণ প্রসাদ নিয়ে মহাপ্রভুর কাছে এলেন। তাঁকে প্রসাদী মালা পরিয়ে প্রসাদ হাতে দিলেন। সেই প্রসাদের আঘ্রাণ নিলেন মহাপ্রভু আর বললেন, “বহুমূল্য প্রসাদ ! এ যে সর্বোত্তম বস্তু !” এর অল্প নিয়ে তিনি জিহ্বায় দিলেন আর বাকিটা সেবক গোবিন্দ দাস আঁচলে বেঁধে নিলেন। সেই কণিকা মাত্র প্রসাদের অমৃতাস্বাদ করে প্রভুর মনে যেন চমৎকার হলো, সর্বাঙ্গে পুলক তাঁর । আর নেত্র থেকে অশ্রুধারা বইতে থাকলো। তিনি আপন মনে বিস্মিত হয়ে বললেন , “এই দ্রব্যে এত স্বাদ কোথা থেকে এলো ! ওহ্‌, এতে তো কৃষ্ণের অধরামৃত সঞ্চারিত হয়েছে ! তাই বুঝি এই বস্তু এত মধুময় হয়েছে স্বাদে !”—- এ কথা ভাবতে ভাবতেই তাঁর মধ্যে প্রেমাবেশ হলো । কিন্তু পরক্ষণেই তিনি নিজেকে সম্বরণ করে নিলেন জগন্নাথের সেবকরা তাঁর সামনে আসায় ।

মহাপ্রভু বারবার ‘সুকৃতিলভ্য ফেলামৃত’ বলতে থাকলেন। জগন্নাথের সেবক মহাপ্রভুর মুখে এই শব্দ শুনে জিজ্ঞাসা করলেন “প্রভু , সুকৃতিলভ্য ফেলামৃত মানে কি? অর্থ কি এর ?” তখন মহাপ্রভু বললেন , “এই যে তুমি আমায় কৃষ্ণের অধরামৃত দিলে ,এই বস্তু ব্রহ্মা আদি দেবতাদেরও দুর্লভ এবং অমৃতের স্বাদকেও নিন্দনীয় হতে হয় এর কাছে। শ্রীকৃষ্ণের ভুক্তাবশেষের নামই হল ফেলা । তিনি ভাগ্যবান যিনি ফেলামৃত লব মাত্র পান । সামান্য ভাগ্য যার সে এই বস্তু প্রাপ্ত হতে পারে না। যাঁর প্রতি শ্রীকৃষ্ণের পূর্ণ কৃপা তিনি তা পান। আর, তিনিই সুকৃতীবান যাঁর প্রতি শ্রীকৃষ্ণের কৃপা থাকে । অর্থাৎ সুকৃতিলভ্য ফেলামৃত মানে হল যাঁর সুকৃতি লাভ হয় অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের কৃপা লাভ হয় তিনিই ফেলা রূপ অমৃত লাভ করতে পারেন ; শ্রীকৃষ্ণের অধরামৃত আস্বাদনের অধিকারী হন।”— এই বলে মহাপ্রভু সকলকে বিদায় দিলেন । তারপর জগন্নাথের উপলভোগ দর্শন করে গম্ভীরায় ফিরে এলেন।

মধ্যাহ্নকালে ভিক্ষা নির্বাহণ করলেন মহাপ্রভু । কিন্তু অন্তরে কৃষ্ণ-অধরামৃতের স্বাদ সর্বদা স্মরণ হচ্ছে তাঁর। বাইরে কর্ম করছেন অথচ অন্তরে প্রেমে গরগর মন হয়ে আছে। সেই সঘন আবেশ অত্যন্ত কষ্ট করে সম্বরণ করছেন তিনি। সন্ধ্যা বেলায় যখন পুনরায় নিজের পার্ষদগণের সাথে বসে কৃষ্ণকথা রঙ্গে নিভৃতে কাল কাটাচ্ছেন , তখন সেবক গোবিন্দ দাসকে ইঙ্গিত দিলেন দুপুরের সেই আঁচলে বেঁধে রাখা প্রসাদ এখন আনার জন্য । পুরী-ভারতী তথা তাঁর গণের সন্ন্যাসীদের জন্য কিছুটা পাঠিয়ে দেওয়া হলো , আর সেখানে উপস্থিত রামানন্দ রায় , সার্বভৌম ভট্টাচার্য , স্বরূপ দামোদর ও অন্যান্যদের সেই প্রসাদ বিতরণ করা হলো। প্রসাদের সৌরভ-মাধুর্য আস্বাদন করেই সকলে বিস্মিত হলেন । যে প্রসাদ এমন দিব্য সৌরভ সম্পন্ন , সেই প্রসাদের স্বাদ না জানি কেমন অলৌকিক হবে ! তখন মহাপ্রভু বললেন , “দ্যাখো, প্রসাদে যা যা আছে যেমন ধরো আখের গুড় , কর্পূর, মরিচ, এলাচ , লবঙ্গ,কাবাবচিনি, দারুচিনি এইগুলো সব প্রাকৃত দ্রব্য। তোমরা সকলেই এই সব প্রাকৃত দ্রব্যগুলোর স্বাদ, সুগন্ধ কেমন জানো । কিন্তু এই প্রসাদে তাহলে এত আমোদ কোথা থেকে এলো? প্রসাদের এই সৌরভ —এতো লোকাতীত ! এর আস্বাদন তাহলে কত না দিব্য ! আস্বাদ করে দেখ সকলের মনে প্রতীত হবে তাহলে। আস্বাদন তো অনেক পরের কথা , কেবল গন্ধেই মন মাতিয়ে দেয়। তাই না ! প্রসাদের এমন মাধুর্য যে আস্বাদন সময়ে আস্বাদন ব্যতীত অন্য সকল কিছু বিস্মৃত করিয়ে দেয় । কেন? কারণ , শ্রীকৃষ্ণের অধর স্পর্শ করেছে এই প্রসাদ। তাঁর অধর রসের গুণ সব সঞ্চারিত হয়েছে প্রসাদে, তাইতো অলৌকিক সুগন্ধ মাধুর্য হয়েছে এমন ! মহাভক্তি করে সকলে প্রসাদ আস্বাদ করো।”
সকলে হরিধ্বনি দিয়ে প্রসাদ আস্বাদন করলেন এবং আস্বাদন মাত্রই সকলের মন প্রেমে মত্ত হল। মহাপ্রভুর মধ্যে প্রেমাবেশ সে সময় । তিনি আজ্ঞা দিলেন রামানন্দ রায় কে শ্লোক পাঠ করতে। রামানন্দ রায় শ্রীমদ্‌ ভাগবতের শ্লোক উচ্চারণ করলেন ।

“সুরতবর্দ্ধনং শোক নাশনং , স্বরিতবেণুনা সুষ্ঠচুম্বিতম্ ।
ইতররাগবিস্মারণং নৃণাং, বিতর বীর নস্তেহধরামৃতম্ ।।”
(শ্রীমদ্ ভাগবত, ১০, ৩১, ১৪ শ্লোক)

—– শ্রীকৃষ্ণ যখন রাসমন্ডল থেকে অকস্মাৎ অন্তর্ধান হয়ে যান, শোকাকুলা গোপীরা বিলাপ করে বলছেন তখন— হে বীর ! তোমার সেই সুরতবর্ধনকারী (সম্ভোগেচ্ছা ক্রমশঃ বর্ধনকারী) অধরের সুধা যা তোমার বিরহ জনিত শোক রাশিকে নাশ করে তা আমাদেরকে বিতরণ কর । তোমার অধরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে বেণু পঞ্চম সুরে নাদিত হয়ে মানবের সকল আসক্তি ভুলিয়ে দেয় ; সেই অধরের অমৃত আমাদের দাও।

সেই শ্লোক শ্রবণ করে রসরাজ-মহাভাবের মিলিত স্বরূপ মহাপ্রভু তখন ভাবাবিষ্ট হয়ে রাধার উৎকণ্ঠা জনিত একটি শ্লোক উচ্চারণ করলেন ।

“ব্রজাতুলকুলাঙ্গনেতর রসালি তৃষ্ণাহরঃ ,
প্রদীব্যদধরামৃতঃ সুকৃতিলভ্য ফেললাবঃ।
সুধাজিদহিবল্লিকাসুদলবীটিকাচর্বিতঃ,
স মে মদনমোহনঃ সখি তনোতি জিহ্বাস্পৃহাম্।।”
(গোবিন্দলীলামৃত, ৮, ৮শ্লোক)

—- শ্রীমতী রাধিকা তাঁর সখী বিশাখাকে বলছেন, হে সখি ! অনন্যা ব্রজকুলবতী ললনাদের যিনি অধরামৃত দ্বারা আনন্দ দান করে তাঁদের অন্য সকল রস-তৃষ্ণাকে হরণ করেন , যাঁর চর্বিত তাম্বুলে অমৃতাপেক্ষা অধিক স্বাদ—-সেই শ্রীমদনমোহন আমার জিহ্বার স্পৃহাকে বিস্তৃতি দান করেছেন।

তারপর মহাপ্রভু নিজেই দুই শ্লোকের অর্থ প্রলাপের মত উচ্চারণ করে গেলেন । সকলে শ্রবণ করে ভাবের ভিয়ানে বিহ্বল হলেন। গ্রন্থ– মহাপ্রভুর মধুময় কথা , লেখিকা —- রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক, প্রকাশক–তথাগত।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

অতীন্দ্রনাথ বসু : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকারী বাঙালি বিপ্লবী।

ভূমিকা—-

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এমন ই এক বাঙালি বিপ্লবী ছিলেন অতীন্দ্রনাথ বসু।

পরিবার—

অতীন্দ্রনাথ বসু ১৮৭৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতার জোড়াবাগানের বসু পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম অপূর্বকৃষ্ণ বসু।অতীন্দ্রনাথের পুত্র উত্তর কলকাতার নেতৃস্থানীয় অমর বসু পিতার সকল কাজে যুক্ত ছিলেন।

কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন—-

অতীন্দ্রনাথ নিজে একজন কুস্তিগীর ছিলেন। ময়মনসিংহের রাজা জগৎকিশোর আচার্য চৌধুরী ছিলেন তার শিক্ষাগুরু। সিমলা ব্যায়াম সমিতির প্রাঙ্গনে ভারতীয় প্রথায় কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন তিনিই প্রথম করেছিলেন।

স্বদেশী মেলার আয়োজন—-

অতীন্দ্রনাথ বসু যুবকদের দেহে ও মনে শক্তিমান করে তোলার উদ্দেশ্যে সিমলা ব্যায়াম সমিতি।

বিপ্লবী কর্মকান্ড—-

যুগান্তর বিপ্লবী দলের অন্যতম নেতৃস্থানীয় ছিলেন অতীন্দ্রনাথ বসু । তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে কয়েকবার কারাবরণ করেছিলেন, পাশাপাশি তাঁকে ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পরবর্তী পাঁচবছর ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী কেন্দ্র পরিচালনার অপরাধে নির্বাসনদণ্ড ভোগ করতে হয়।১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ সরকার সিমলা ব্যায়াম সমিতিকে শরীরচর্চার আড়ালে বিপ্লবী তৈরির আখড়া সন্দেহ করে এটিকে বেআইনি বলে ঘোষণা করে। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, ডাঃ জে. এম. দাশগুপ্ত প্রভৃতি নেতৃবর্গ সিমলা ব্যায়াম সমিতির কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

বিদ্যালয় স্থাপন—

তিনি রবীন্দ্রনাথের পরামর্শে ‘মহেশালয়’ নামের একটি বিদ্যালয় স্থাপনা করেছিলেন। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ‘ভারত ভান্ডার’ নামের একটি সংস্থা তৈরি করেন।

অতীন্দ্রনাথ যুবকদের দেহে ও মনে শক্তিমান করে তোলার উদ্দেশ্যে ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ২রা এপ্রিল সিমলা ব্যায়াম সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন।

দুর্গা পূজা ও স্বদেশী মেলার আয়োজন—

১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সার্বজনীন দুর্গা পূজার প্রচলন করেন যাতে দেশের মানুষ বিভেদ ভুলে একত্রে উৎসবে মেতে উঠতে পারে। এই পূজা প্রাঙ্গনে স্বদেশী মেলারও আয়োজন হত। অতীন্দ্রনাথ যুবকদের দেহে ও মনে শক্তিমান করে তোলার উদ্দেশ্যে ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ২রা এপ্রিল সিমলা ব্যায়াম সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন।

মৃত্যু—

মহান এই বিপ্লবী ১৯৬৫ সালের ১০ জুন মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু আজও তিনি স্মরনীয় হয়ে রয়েছেন তাঁর কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট।।

 

 

 

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ বিশ্ব শিশু শ্রমিক বিরোধী দিবস, জানুন পালনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য।

শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে বিশ্ব দিবস হল একটি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO)-এর অনুমোদিত ছুটির দিন যা ২০০২ সালে প্রথম চালু হয়েছিল যার লক্ষ্য শিশুশ্রম প্রতিরোধে সচেতনতা ও সক্রিয়তা বৃদ্ধি করা।  এটি কর্মসংস্থানের জন্য ন্যূনতম বয়সের উপর আইএলও কনভেনশন নং ১৩৮ এবং শিশু শ্রমের সবচেয়ে খারাপ ফর্মগুলির উপর আইএলও কনভেনশন নং ১৮২ এর অনুমোদনের দ্বারা উত্সাহিত হয়েছিল৷

শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে বিশ্ব দিবস, যা প্রতি বছর ১২ জুন অনুষ্ঠিত হয়, এর উদ্দেশ্য হল শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী আন্দোলনকে উৎসাহিত করা। দিনটির লক্ষ্য শিশু শ্রমিকদের (child labourers) শোষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

এ বছর দিবসটির বৈশ্বিক প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার: শিশু শ্রমের অবসান ঘটান’। দিনটি সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী শিশু ও শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে।

পটভূমি–

 

বছরের পর বছর ধরে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। গোটা বিশ্বজুড়ে এটি একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন অনেক শিশু রয়েছে যারা নিজের এবং পরিবারের জীবিকা নির্বাহের জন্য রেস্তোঁরা, ধাবা, বিভিন্ন দোকানে কাজ করে। অনেকে আবার কারুর বাড়িতেও কাজ করে। ফলে, কাজের লোভ দেখিয়ে কেউ কেউ তাদের মাদক চোরাচালান, পতিতাবৃত্তি ও পাচারের মতো কিছু অবৈধ কার্যকলাপে বাধ্য করে।

শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে বিশ্ব দিবসটি প্রথম ২০০২ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) দ্বারা শিশুশ্রমের ইস্যুতে ক্রমাগত মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য এবং শিশুশ্রম নির্মূল করার জন্য আমাদের কৌশলগুলিকে সংশোধন ও পুনর্বিবেচনা করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।  ২০০২ সাল থেকে এটি ১৯ বছর হয়ে গেছে, এবং প্রতি বছর ১২ জুন শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে বিশ্ব দিবস পালন করা হয়।  জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ শিশুশ্রমের মাত্রা স্বীকার করে সর্বসম্মতিক্রমে ২০২১ সালকে শিশু শ্রম নির্মূলের আন্তর্জাতিক বছর হিসেবে ঘোষণা করে একটি প্রস্তাব গৃহীত করেছে এবং আইএলওকে এর বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিতে বলেছে।  এই দিনটি সরকার, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, সুশীল সমাজ এবং আন্তর্জাতিক, শ্রমিক এবং নিয়োগকর্তা সংস্থাগুলিকে একত্রিত করে শিশু শ্রম সমস্যাটি নির্দেশ করে এবং শিশু শ্রমিকদের সহায়তা করার জন্য নির্দেশিকা সংজ্ঞায়িত করে।
আইএলও-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মেয়ে এবং ছেলেরা এমন কাজের সাথে জড়িত যা তাদের পর্যাপ্ত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাশ এবং মৌলিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করে, এইভাবে তাদের অধিকার লঙ্ঘন করে।  এই শিশুদের মধ্যে, অর্ধেকেরও বেশি শিশু শ্রমের সবচেয়ে খারাপ রূপের সংস্পর্শে এসেছে।  শিশুশ্রমের এই নিকৃষ্টতম রূপগুলির মধ্যে রয়েছে বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করা, দাসত্ব, বা অন্যান্য ধরনের জোরপূর্বক শ্রম, মাদক পাচার ও পতিতাবৃত্তির মতো অবৈধ কার্যকলাপ, সেইসাথে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িত থাকা।

তাৎপর্য—

 

কোনও শিশুকে শিশুশ্রমিকের পর্যায়ে তখনই ফেলা হয় যখন তাদের কাজ করার বয়স না হওয়া সত্ত্বেও কাজ করানো হয় বা কোনও অস্বাস্থ্যকর কাজে তাঁদের নিয়োগ করা হয় যা তাঁদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি করে এমনকী পড়াশোনা ও শিক্ষারও ক্ষতি করে। শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে বিশ্ব দিবসের তাৎপর্য হল শিশুশ্রমের সমস্যার প্রতি মনোযোগ দেওয়া এবং এটি নির্মূলের উপায় খুঁজে বের করা। বিশ্বজুড়ে নানা মনুষ্যসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় শিশুদের কায়িক শ্রমের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পাশাপাশি শিশুশ্রমের কুফল সম্পর্কে অসচেতনতায় দিনদিন শিশুশ্রম বাড়ছে। তাই সারা বিশ্বে শিশুশ্রমে বাধ্য করা শিশুদের ক্ষতিকারক মানসিক এবং শারীরিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দিবসটি ব্যবহার করা হয়। তাই শিশুশ্রমের খারাপ প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর ১২ জুন ‘বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস’ পালন করা হয়।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট ।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

শিশু শ্রমিক স্বাধীন ভারতে এক কলঙ্ক : প্রশান্ত কুমার দাস।

আমরা সবাই জানি শিশুই হচ্ছে যেকোনো জাতির ভবিষ্যৎ। আজকের শিশু আগামী দিনের নাগরিক, যার হাতে থাকবে দেশগড়ার কাজ। তাই শিশু গাছকে যেমন উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হয়, তেমনি মানবশিশুকেও উপযুক্ত ভাবে গড়ে তোলাই আমাদের অন্যতম কর্তব্য। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে তার উল্টো। অত্যন্ত দুঃখ ও অনুতাপের বিষয় যে –“কাঁদে কোটি মার কোলে অন্নহীন ভগবান।“ ১৩৫ কোটি মানুষের বাস ভারতে। প্রতি মুহূর্তে ভারতে শিশু জন্মাচ্ছে। কিন্তু সব শিশু কী বাঁচবার মতো খাদ্য,বস্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষা পাচ্ছে?
স্বাধীনতা প্রাপ্তির ৭৪ বছর পরেও অনেক নবজাতকের চোখের সামনে কোনো আলো নেই, আছে শুধু জমাট অন্ধকার-তাদের জীবন দুঃস্বপ্নে ঘেরা ,দুঃখবেদনায় ভরা। নবজাতকেরা অসহায় দৃষ্টি নিয়ে দেশের মানুষের কাছে একটু স্নেহ ভালোবাসা,মমতা অকাঙ্খা করে। সেই সঙ্গে তাদের একটু খানি চাওয়া –শুধু দুবেলা দু-মুঠো অন্ন, থাকবার মতো একটু বাসস্থান,আর পরিধান করার মতো বস্ত্র।
কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি ,শিশু একটু বড় হতে না হতেই তাকে মায়ের কোল ছেড়ে যেতে হচ্ছে কাজের সন্ধানে। যে বয়সে শিশুদের হাতে খেলনা,বইপত্র,কাগজকলম থাকবার কথা,সেই বয়সে শিশুর হাতে থাকছে হাতুড়ি কাস্তে আর কাজের বোঝা।কারণ তারা যে শিশুশ্রমিক।শ্রম দান করেই তাদের অন্ন বস্ত্রের ব্যবস্থা করতে হবে-এর চেয়ে কলঙ্কের জিনিস কি হতে পারে! ঐ অতি অল্প বয়সে কঠোর কাজের চাপে ভগ্নপ্রায় শরীর নিয়ে অল্প দিনের মধ্যেই অনেক শিশুর জীবন দীপ নিভে যাচ্ছে। যার খবর আমরা কেউ জানতে পারি না ।
আমরা প্রতি বছর আড়ম্বর করে “শিশু শ্রমিক বিরোধী দিবস ” পালন করি 12ই জুন তারিখে। আন্তর্জাতিক হিসাবে প্রতি বছর আমরা ঐ 12ই জুন দিনটিকে পালন করে শিশুদের কল্যানের জন্য নানাপ্রকারের গালভরা বক্তৃতা দিয়ে থাকি ।সেই দিন হয়তো বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা কিছু শিশুকে ভালো ভালো পোষাক ও খাবার দিয়ে সন্তুষ্ট করে। মনে হয় আমরা যেন শিশুদের কতই না ভালোবাসি!
শোনা যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (WHO) দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশের শিশুদের কল্যাণের জন্য প্রচুর টাকা বরাদ্দ করে। কিন্তু সেই টাকাগুলোই বা কোথায় যায়? সেই বরাদ্দ টাকা কতটুকু শিশুদের ভাগ্যে জোটে ? উত্তর হল না । দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে শিশু শ্রমিক নিয়োগের বিরুদ্ধে আইন তৈরী হয়েছে। আছে শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগ, শ্রম দফতর । কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ শিশু স্কুলে না গিয়ে চলে যাচ্ছে চায়ের দোকানে ,রেস্তোরায়,পাথর খাদানে,বাজির দোকানে ,মুদির দোকানে হোটেলে, ইটের ভাটিতে ,সিমেন্ট কারখানা, দেশলাই কারখানায় সেখানে তারা অল্প বেতনে সারাদিন কাজ করে চলেছে। নিষ্ঠুর হৃদয় মালিকেরা তাদের অল্প বেতন দিয়ে সারাদিন পরিশ্রম করাচ্ছে । এই শিশু শ্রমিক ঠিক মতো কাজ না করলে তাদের কাজ থেকে ছাটাই করছে। এদের কর্মে নিয়োগের সময় মালিকের কোনো দায়-দায়িত্ব থাকে না। কোনো শর্ত নাই, তাই কোনো কারনে এদের মৃত্যু হলে বা হাত-পা ভাঙ্গলে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো দায়বদ্ধতা নেই । এমনকি তাদের কোনো কৈফিয়েৎ দিতেও হয় না । তাই যতক্ষণ হাত-পা চলবে, ততক্ষণ কাজ না চললেই বাদ , তাড়িয়ে দাও । শহর এমনকি গ্রামাঞ্চলে খুব স্বাভাবিক দৃশ্য অনেক ছোট ছোট ছেলে মেয়ে গৃহস্ত বাড়িতে চাকর বা চাকরানীর কাজ করে অল্প বেতনে। অভাবের সংসারে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মাঠে কাজ করতে যেতে হয়, গরু চড়াতে হয়। আরও বেদনা দায়ক ঘটনা হচ্ছে যে,এই সব ছেলে মেয়েরা দুটো পয়সা রোজগারের আশায় আস্তাকুঁড় বা আবর্জনা ঘেঁটে বেড়ায়-দুটো প্লাস্টিক জিনিস বা বোতল,ছেঁড়া জুতো,লোহার টুকরো,ভাঙ্গা বালতি সংগ্রহ করে এবং দিন শেষে অল্প কিছু টাকা পয়সা রোজগার করে। কী সৌভাগ্য এই সমস্ত অল্পবয়স্ক ছেলে মেয়ের ! বর্তমান ভারতবর্ষে বিভিন্ন সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রে ৮/১০ কোটি শিশুশ্রমিক কর্মরত। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই সরকারি হিসাবে ৮/৯ লক্ষ শিশুশ্রমিক কাজ করছে। এই সমস্ত শিশুশ্রমিক বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কর্ম করে যাচ্ছে। বোমাবাজির কারখানায় কত শিশুর প্রাণ যাচ্ছে তার হিসাব নাই। কয়েক বছর আগে বাগনানে একটা বাজির কারখানায় বিস্ফোরন হয়েছিল এবং তাতে একাধিক শিশুশ্রমিকের প্রাণ যায়। এদের প্রাণের যেন কোনো মূল্য নাই।
ইতিপূর্বে ভারত সরকার ২০০০ সালের মধ্যে শিশুশ্রমিক প্রথা সম্পূর্ণ তুলে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু আজ ২০২১ সালেও শিশুশ্রমিক প্রথা যথারীতি একই চলছে । দেশের সরকার শিশুশ্রমিক নিয়োগ করা বেআইনি বলে ঘোষণা করেছিল। সুপ্রিমকোর্টে ১৯৮৬ সালে আদেশ দিয়েছিল যে, শিশুশ্রমিক সম্পর্কিত আইন লঙ্ঘিত হলে প্রতি শিশুশ্রমিকের জন্য মালিককে ২০ হাজার টাকা দিতে হবে।সেই টাকা “শিশুশ্রমিক পুনর্বাসন ও কল্যান তহবিলে “ জমা দিতে হবে। তাছাড়া এই সব অসহায় শিশুশ্রমিকের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে হবে রাজ্য সরকারগুলিকেই । সরকার শিশুশ্রমিকদের জন্য একটা Action Plan গ্রহণ করছে । এতে শিশুশ্রমিকদের ২ ঘণ্টা লেখা পড়া শিখানোর জন্য সরকারকে অর্থ ব্যয় করতে হবে। কিন্তু এই সব আইন থাকা সত্ত্বেও মালিকপক্ষ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শিশুদের নানাপ্রকার বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ কার্যে নিযুক্ত করছে। পুলিশ-প্রশাসন এর বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে বলে শোনা যায় না।
ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার শ্রমমন্ত্রির সভাপতিত্বে ‘The Nation Authority to the alimination of Child-labour’ নামে একটা সংস্থা গড়ে তুলেছে। এই সংস্থাটি হয়তো মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই গঠিত হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে –কোনো ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় শিশুশ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করার নীতি প্রণয়ন করা, শিশুশ্রমিকদের বৃত্তিমূলক ও অর্থকরী শিক্ষাদানের সঙ্গে উপযুক্ত আহারের সংস্থান করা ,শিশুদের দরিদ্র পিতা মাতাদের আর্থিক উপার্জনে সহায়তা দেওয়া ও নতুন করে শিশুশ্রমিক সৃষ্টির সম্ভাবনা দূর করা ইত্যাদি এই সংস্থার কাজ। এমনকি দেশের শিক্ষার অধিকার আইনে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সি শিশুদের বিনামূল্যে এবং আবশ্যিক ভাবে স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থাপনার কথা বলা আছে।
আবার এর সাথে নতুন আইন তৈরি হয়েছে যদি সেই সরকারি আদেশ না মানে বা অগ্রাহ্য করে তবে সেই মালিককে ১০ থেকে ২০হাজার টাকা জরিমানা এবং সেই সাথে তিন মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত কারাবাসের আইন করা হয়েছে।
এই সমস্ত সরকারি নির্দেশ ও কঠোর আইন কানুন থাকলেও মালিকশ্রেনী বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শিশুশ্রমিক নিয়োগ করে চলেছে, কারন তারা জানে এই সব শ্রমিককে অল্প বেতন দিয়ে বেশি কাজ করিয়ে অনেক বেশি লাভ ।সকলেই জানে যে এটা একটা অমানবিক কাজ কিন্তু এখনও শিশুশ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করা অলীক স্বপ্ন মাত্র।
আমার মনে হয় ,শিশুশ্রমিক প্রথা বন্ধ করতে হলে কয়েকটি বিষয়ের উপর নজর দিতে হবে। যে সব শিশু অর্থের জন্য চায়ের দোকানে বা কারখানায় যায় তাদের পিতামাতাকে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে, যাতে তারা তাদের সংসার চালাবার জন্য নিজের ছেলেমেয়েদের পরের বাড়িতে বা কারখানায় না পাঠায় ।দ্বিতীয়ত,দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা যাতে বিদ্যালয়ে পড়তে যেতে আগ্রহী হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সরকারকের সাথে সাথে সমস্ত শিক্ষিত সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। তৃতীয়তঃ শিশুশ্রমিক নিয়োগের বিরুদ্ধে যে সব আইন তৈরী হয়েছে সেগুলোকে কঠোর ভাবে প্রয়োগ করতে হবে। সর্বোপরি মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরী করতে হবে, মালিক শ্রেণীকে বোঝাতে হবে যে, এভাবে শিশুশ্রমিক নিয়োগ করে শিশুদের জীবন নষ্ট করবেন না। এটা একটা অমানবিক কাজ । আর ছেলে মেয়েদের পিতামাতাকে বুঝতে হবে যে, এভাবে অল্প কিছু টাকা আয় করার জন্য নিজেদের ছেলেমেয়েদের অন্য কোথাও কাজ করতে পাঠাবেন না। এই সমস্ত বিষয়ে নজর রাখলে আশা করা যায় ধীরে ধীরে শিশুশ্রম প্রথা দূর হবে এবং সমাজের একটা কলঙ্ক মোচন করা সম্ভব হবে।
একদা জাতির জনক মহাত্মাগান্ধী খুব দুঃখের সঙ্গে বলেছিলেন- “শিশুকে অর্থের বিনিময়ে শ্রম করানোর চেয়ে বড় আভিশাপ আর কিছুই হতে পারে না।“ চরম পরিতাপের বিষয় এটাই যে গান্ধীজীর জন্মের দেড়শত বছরে তাঁর জন্মজয়ন্তী আমরা সাড়ম্বরে গোটা দেশ জুড়ে পালন করছি, অথচ তার কথা মত কাজ করছি না।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

জানুন, বজ্রবিদ্যুৎ মাথায় নিয়েও কেমন করে প্রাণকৃষ্ণ বাবা ভাগবত কথা বলতে থাকলেন : রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক।

শ্রীপ্রাণকৃষ্ণ  দাস বাবাজী মহারাজ প্রভুপাদ প্রাণগোপাল গোস্বামীর শিষ্য। ত্রিপুরা জেলার ভবানীপুর গ্রামে দেবশর্মা বংশে জন্মগ্রহণ করেন প্রাণকৃষ্ণ দাস বাবাজী। পিতার নাম দীননাথ ও মাতা রেবতীদেবী। বৈশাখ মাসে শুভ পূর্ণিমা তিথিতে আবির্ভূত হন তিনি। বিদ‍্যাধ্যয়নেও গভীর মনোযোগী ছাত্র ছিলেন । অকস্মাৎ মাতৃবিয়োগ হয় কিশোর বয়সে। পিতার বাৎসল‍্যে বড় হতে থাকেন।
দৈবেচ্ছায় একদিন স্বপ্নে গিরীধারীর দর্শন পেলেন। আর তবে থেকেই মনের সুপ্ত ভজন সংস্কারের উদ্গম হল। মন সর্বক্ষণ উচাটন থাকে কতদিনে সাক্ষাৎভাবে সেই নয়নাভিরাম ব্রজেন্দ্রনন্দনের দর্শন পাবেন এই ভাবাবেগে। বিধি কৃপাময় হলেন। দর্শন পেলেন তিনি প্রভুপাদ প্রাণগোপাল গোস্বামীপাদের। দর্শন মাত্র আত্মসমর্পণ করে দিলেন প্রভুপাদের পদারবিন্দে। মনে হল এই তো সেই ঈপ্সিত ধন, যাঁর জন্য এত ব‍্যাকুলভাবে অপেক্ষা করছিলেন এতকাল। তাঁর অস্থির মন সুস্থির হল। মন বলতে থাকলো, এই তো সেই যোগ্য কান্ডারী, যিনি তাঁকে অনায়াসে ভবনদী পার করে গিরিধারীর নিত‍্যদেশে নিয়ে যাবেন।
সেসময় প্রভুপাদ প্রাণগোপাল গোস্বামী নদীতে স্নান করছিলেন। আর প্রাণকৃষ্ণ বাবা খেয়া-পারাপার করে এপারে আসছিলেন। তিনি নৌকা থেকেই দেখলেন স্নানরত প্রভুপাদকে। নৌকা থেকে নেমে অপেক্ষা করতে থাকলেন কতক্ষণে প্রভুপাদ স্নান করে নদী থেকে উঠে আসবেন। যে মুহুর্তে তিনি সিক্ত বদনে উঠে এসেছেন প্রাণকৃষ্ণ বাবা লুটিয়ে পড়লেন তাঁর চরণে। কিশোর প্রাণকৃষ্ণের লাবণ্যময় অঙ্গ, শান্ত ভাব, অপরূপ কান্তি, তেজোময় দীপ্তি দেখে মন ভরে গেল প্রভুপাদের। তিনি নাম, পরিচয়, দেশ, কী কারণে আগমন সব একে একে ধীরে ধীরে জানলেন। সঙ্গে করে নিয়ে এলেন নিজের আলয়ে। তাঁর মাতা তথা শ্রীগুরুদেবী সারদা সুন্দরী দেবীর কাছে অর্পণ করলেন। বড়মাতাও প্রাণকৃষ্ণের ভাব দেখে প্রসন্ন হলেন তাঁর প্রতি। প্রভুপাদের গৃহেতেই প্রাণকৃষ্ণ থাকতে লাগলেন। প্রাণকৃষ্ণ বাবা নিজের অভিলাষের কথা ইতিমধ্যেই ব্যক্ত করেছেন। অর্থাৎ, তিনি যে প্রাণগোপাল প্রভুর পদাশ্রয় করে ভজন পরায়ণ হতে চান তা জানিয়েছেন। নিবেদন করেছেন দীক্ষা প্রদানের জন্য। বড় মাতা সারদা সুন্দরী দেবীর সন্তান যেমন প্রভুপাদ, তেমন শিষ্যও আবার।তাই বড়মাতা সব শুনে হাসলেন।

 

বড় মাতা একদিন প্রাণগোপাল প্রভুপাদকে আদেশ করলেন দীক্ষা অর্পণ করতে প্রাণকৃষ্ণ বাবাকে। তিনি বললেন, “প্রাণগোপাল, তুমি প্রাণকৃষ্ণকে দীক্ষা দাও। আমি ওর মধ্যে মহাজনসুলভ চিহ্ন দেখতে পেরেছি। সদা অনুরাগী ভক্ত সে। সেবা অভিলাষী। ভোগে বিন্দুমাত্র আশা নেই। বৈরাগ্য ভাব ওর। আমার বিশ্বাস এ তোমার উপযুক্ত শিষ্য হবে। তোমার মুখোজ্জ্বল করবে একদিন। তুমি একে অঙ্গীকার করে নাও।”
মাতার আদেশ পেয়ে হৃষ্টমনে এক শুভদিনে যুগলমন্ত্রে দীক্ষা দিলেন প্রাণগোপাল প্রভু প্রাণকৃষ্ণ  বাবাকে। তিনি আত্মসাৎ করে নিলেন তাঁকে। আর প্রাণকৃষ্ণ বাবা তো প্রথম দিনই দর্শন মাত্র আত্মসমর্পণ করেছিলেন, এখন দীক্ষা মন্ত্র পাবার পর বাহ‍্যজ্ঞানশূন্য হয়ে কায়মনোবচনে সেবা শুরু করলেন সর্বভাবে দ্বিধাহীন চিত্তে। তাঁর নিষ্ঠাভক্তি দেখে বড় মাতা সারদা সুন্দরী দেবীও শক্তি সঞ্চার করে দিলেন আপন প্রশিষ্যকে। আর প্রভুপাদ প্রাণগোপালের তো কথাই নেই। তিনি সর্বশক্তি উজাড় করে দিলেন প্রিয় শিষ্য প্রাণকৃষ্ণকে। তাঁর কাছে থেকেই নিত্য, বাদ্য, গীত শিক্ষা করলেন প্রাণকৃষ্ণ বাবা। প্রভুপাদের কাছে ভক্তিগ্রন্থ অধ্যয়ন করে পাণ্ডিত্য অর্জন করলেন। মহানন্দে ভজন করতে থেকে ভজনানন্দী হলেন।
এমন করে বহুকাল কাটলো। তারপর একসময় প্রাণগোপাল প্রভুর থেকে আদেশ পেয়ে নবদ্বীপ ধাম ভ্রমণ করে তীর্থ পর্যটনে বের হলেন প্রাণকৃষ্ণ বাবা। নানা তীর্থ দর্শন করে, উপনীত হলেন বৃন্দাবনে রাধাকুণ্ডতটে। সেখানে তখন ভজন করতেন সিদ্ধ বাবা গৌরকিশোর মহারাজ। তিনি কোন শিষ্য করতেন না। সদা নিগূঢ় ভজনানন্দী মহাত্মা। তাঁর গুণগাথা ভক্ত মুখে শ্রবণ করে একদিন তাঁর চরণ দর্শন করতে এলেন প্রাণকৃষ্ণ বাবা। তাঁকে দর্শন করে, নিত্য সঙ্গ-সান্নিধ্য লাভ করে এত অনুপ্রাণিত হলেন যে, তিনি গৌরকিশোর বাবার কাছে বেশাশ্রয় ভিক্ষা করলেন। নিত্য তাঁর নিষ্ঠাভরা সেবায় গৌরকিশোর  বাবার চিত্ত ততদিনে করুণায় সম্পৃক্ত হয়ে গেছে তাঁর প্রতি। কিন্তু, তিনি যেহেতু শিষ্য করেন না তাই প্রথমে সম্মত হননি। অবশেষে প্রাণকৃষ্ণ বাবার নিষ্ঠা, কাকুতি-মিনতি, আর্তির কাছে বশীভূত হলেন।

 

প্রাণকৃষ্ণ বাবার দু’নয়ন দিয়ে অবিরাম প্রেমাশ্রু ঝড়তো। সুখ-দুঃখ বলে কোন ব্যাপার ছিল না। সদা-সর্বদা গৌরনাম নিতেন। অনন‍্য রতি তাঁর ছিল শ্রীগৌরাঙ্গের পদে। তাঁর অনুরাগ দেখে  ভেকপ্রদানে আর অরাজী থাকতে পারলেন না গৌরকিশোর বাবা। তিনি ভেকপ্রদান করলেন প্রাণকৃষ্ণ বাবাকে। ভেকাশ্রয়ী  হয়ে প্রাণকৃষ্ণ বাবার প্রেমানুরাগ আরও বহুলাংশে বৃদ্ধি পেল। গৌরকিশোর বাবার কৃপা শক্তিতে না জানি কী বল পেলেন ভজনে তিনি, কখনো হাসেন, কখনো কাঁদেন, অদ্ভুত প্রেম প্রকাশ পেল তাঁর মধ্যে। অনুক্ষণ বাবা মহারাজের সেবায় তিনি নিমজ্জিত থাকেন । বাবা মহারাজও মহা প্রসন্ন হন এহেন প্রেমানুরাগী, নিষ্ঠাবান, সেবাপরায়ণ শিষ্য পেয়ে।
অবশেষে একদিন গৌরকিশোর বাবার থেকে অনুমতি নিয়ে মহা উদাসীন প্রাণকৃষ্ণ বাবা তীর্থ পযর্টনে যাত্রা করলেন। করঙ্গ-কৌপীন, ছেড়া কাঁথা সঙ্গে নিয়ে, ছিন্নবাস পরিধান করে প্রাণকৃষ্ণ বাবা ভ্রমণ করতে থাকলেন। যেখানে সেখানে রাত কাটান, কখনো ভক্ষণ, কখনো উপবাসে থাকেন, কখনো নৃত‍্য-গীত করেন, কখনো বা হুঙ্কার পারেন, কভু দ্রুত পদচারণা,  তো কখনো অতি ধীরে যাত্রা। প্রেমেতে সদা তাঁর টলমল দশা, ভাবাবেশে বিহ্বল তিনি। এভাবে নানা তীর্থ ভ্রমণ করে এবার উদ্দেশ্য দ্বারকায় গমন। কত নদী, কত পাহাড় অতিক্রম করে, কত জনপদ পিছু রেখে অবশেষে শ্রীমতীর ইচ্ছায় তিনি পথভ্রষ্ট হলেন। দ্বারকার পরিবর্তে উপনীত হলেন মরুভূমির দেশে। তাঁর সঙ্গে আরও তিনজন ছিলেন। বহু পরিশ্রমে মরুভূমি অতিক্রম করে সিন্ধুর দর্শন পেলেন। দু’জন তো ক্লান্ত হয়ে ফিরে গেলেন। কিন্তু প্রাণকৃষ্ণ বাবা প্রেমাবেশে চলতে চলতে সেই দুর্লঙ্ঘ্য পথের যাত্রায় থেকে গেলেন। তৃষ্ণায় আকুল হয় প্রাণ। জলের দেখা কোথাও পাবার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু, রাধারাণীর কৃপায়, অবশেষে জলের সন্ধান পেলেন সেই মহা মরুভূমিতেও। বাবা এক খেজুর বৃক্ষের যৎসামান্য ছায়ায় বসে যখন ক্লান্ত-অবসন্ন দেহে ভাবছেন যে এবার বুঝি প্রাণ চলে যাবে জলতেষ্টায়, তখন দেখেন অদূরে কিছু ভাটপত্র পড়ে আছে। তিনি সেই ভাটপত্রের কাছে কী মনে হতে গেলেন। আর ভাটপত্রের কাছে যেতেই দেখেন সেটি আসলে এক জলকুন্ড। সুশীতল  বারিতে পরিপূর্ণ সেই কুন্ড। কুন্ডের বারিতে স্নান-পান করে তখন তাঁর জীবনরক্ষা হল শ্রীমতীর কৃপায়। দেহের ক্লান্তি দূরীভূত হলে আবার যাত্রা শুরু করলেন শ্রীগৌরচরণ স্মরণ করে। গৌরনাম করেন, গৌরপদ ধ্যান করেন আর পদব্রজে চলতে থাকেন।
চলতে চলতে তিন দিন অতিক্রান্ত হল আরও। উপবাসে অনাহারে আছেন। পেলেন এক মহাবন পথে। সেই দুর্গম বনপথে চলে চলেছেন। হঠাৎ দেখলেন সুবিশাল বৃক্ষের তলায় এক মহাযোগী বসে আছেন। অতি দীর্ঘ জটা তাঁর, অপরূপ অঙ্গকান্তি, বিপিন ঝলক বপু থেকে, দর্শনেই মন-প্রাণ হরণ হয়ে যায়। আশ্চর্য হলেন প্রাণকৃষ্ণ বাবা তাঁকে দেখে। অমন দুর্গম বনে একাসনে বসে সাধনা করে চলেছেন দিবারাত্র ! তিনি প্রণত হলেন, স্তব-স্তুতি করে সেখানে করজোড়ে দাঁড়িয়ে থেকে যোগী বাবার ধ্যান ভাঙ্গার অপেক্ষা করতে থাকলেন। এক সময় চোখ খুললেন যোগী বাবা। তিনি বললেন, “এই গভীর বনে তো কোন মানুষ আসে না, ঢোকে না।  তুমি কী ভাবে এলে?” প্রাণকৃষ্ণ বাবা বললেন আমি তীর্থ দর্শন করতে বেরিয়ে ভ্রমণ করতে করতে এখানে এসে পড়েছি। জানি না এ স্থান কোথায়, কী নাম! যোগীবর বললেন, “আমি এখানেই বারো বছর ধরে সাধনা করছি। এই প্রথম কোন মানুষের দেখা পেলাম। আচ্ছা, তুমি ক্ষিদেতে কষ্ট পাচ্ছ তো! যাও, ওখানে এক কূপ আছে , স্নান করে আসো।”
প্রাণকৃষ্ণ বাবা যোগীবরের  কথা মতন স্নান করে এলেন। যোগীবর ধ্যান করে এক কামধেনু আনালেন। কামধেনুর বাটের তলায় পাত্র পেতে দিতে আপনা থেকে সে পাত্র দুগ্ধপূর্ণ হয়ে গেল।যোগীবর সে পাত্র অর্পণ করলেন প্রাণকৃষ্ণ বাবাকে। বাবা পান করতেই দেহের সব ক্লান্তি দূর  হয়ে গিয়ে মহাবল ফিরে পেলেন যেন । তবে পানের আগে যোগীবরকেও সেধেছিলেন তিনি।তখন যোগীবর জানান যে তিনি সন্ধ্যার সময় পান করবেন, তার আগে পান করেন না। সেদিন সারারাত কৃষ্ণকথা রসে মজলেন তাঁরা দু’জন। পরদিন প্রভাতে যোগীবর পথ বলে দিলেন। সেই পথে যাত্রা শুরু করলেন আবার প্রাণকৃষ্ণ বাবা। তিনি মহানন্দে গমন করতে করতে যখন পিছন ফিরে আবার একবার যোগীবরকে দর্শন করে নিতে গেলেন শেষবারের মতন, দেখেন কোথায় কী! সব উধাও! যোগীবর আর নেই সেই স্থানে। এমনকি সেই মহা বিশাল বটবৃক্ষও  নেই। ক্ষণিকের মধ্যে অন্তর্দ্ধান করেছে সব‌। অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গেলেন প্রাণকৃষ্ণ বাবা  এ ঘটনায় ।
নানান ভাবনায় নিমজ্জিত হয়ে তিনি পথ দিয়ে যাচ্ছেন। যেতে যেতে হঠাৎ দেখেন বিশাল এক দীর্ঘ দেহের বাঘ বসে সামনে। হঠাৎ করে চোখে পড়ায় প্রথমে তিনি চমকে ওঠেন স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু পরমুহুর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে যেই না তিনি “জয় নিত্যানন্দ” বলে এক হুঙ্কার পেরেছেন, অমনি বাঘ লম্ফ দিয়ে সে স্থান ত‍্যাগ করে পালিয়েছে প্রাণভয়ে। নিতাই নামের ধ্বনির এমনই মাহাত্ম্য। নাম মহিমার প্রমাণ পেলেন প্রাণকৃষ্ণ বাবা। তিনি নামানন্দে মজে নিশ্চিন্তে আবার যাত্রা করতে থাকলেন। এবার নির্বিঘ্নে নিরাপদে এক লহমায় বনপথ অতিক্রম করে ফেললেন যেন তিনি। প্রেমভরে নাম নিতে নিতে কখন যে বনপথ পার করে ফেলেছেন বুঝতেই পারেন নি। দেখলেন অনতিদূরে এক জনবসতি।
গ্রামে পৌঁছে জানালেন, সেখানে নিকটে এক সাধু থাকেন। লোকমুখে প্রশংসা শুনে তাঁর কাছে গেলেন। তিনি সারাদিন গুহায় বসে ধ‍্যান করেন, আর সন্ধ‍্যের পর গুহা থেকে বেড়িয়ে এসে গভীর বনে প্রবেশ করে যান। সাধু কুটিয়া থেকে বেড়োতেই প্রাণকৃষ্ণ বাবা দন্ডবৎ প্রণাম করলেন। অনেক স্তব-স্তুতি করলেন। তারপর নিবেদন করলেন, “বাবা, আমাকে একটু কৃপা করুন, যাতে আমি ভজন পথে অগ্রসর হতে পারি।” সাধু বাবা বললেন, “কৃপা চাও! তবে যাও ঐ কুয়োতে ঝাঁপ দাও।” এই বলে অঙ্গুলি নির্দেশ করে পাশের একটি কুয়ো দেখিয়ে দিলেন। আর তার মুখের বাক্য শেষ হওয়া মাত্র প্রাণকৃষ্ণ বাবা গিয়ে কুয়োতে ঝাঁপ দিলেন। কুয়োর গভীর জলের মধ্যে পড়ে প্রভু যখন ছটফটাচ্ছেন, দেখলেন কুয়োর মধ্যে শূন‍্যপথে ভাসছেন সাধুবাবা। সাধুবাবা হাত বাড়িয়ে তুলে নিলেন প্রাণকৃষ্ণ বাবাকে। কুয়োর বাইরে এনে নিজের গুহার মধ্যে প্রবেশ করতে দিলেন বাবাকে। তারপর বন থেকে আনা কন্দ খেতে দিলেন। সে কন্দ খেয়ে এক অদ্ভুত ব‍্যাপার ঘটেছিল। টানা সাতদিন ক্ষুধা-তৃষ্ণা কিছু পেয়েছিল না প্রাণকৃষ্ণ বাবার। প্রেমে মত্ত ছিলেন। সেদিন সারারাত্রি কৃষ্ণকথা আলাপ করে কাটলো। প্রভাত হতে আবার বাবা যাত্রা শুরু করেন। সাধুবাবাই পথনির্দেশ করে দিয়েছিলেন এক মন্দিরের। সেই পথ ধরে যেতে যেতে একসময় দর্শন পেলেন এক বিপ্রের। প্রাণকৃষ্ণ বাবা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন আর কতদূর গেলে মন্দির দর্শন হবে। বিপ্র বললেন, “আর বেশী দূরে নেই। আপনি ধৈর্য ধরে আর কিছু পথ গেলেই দর্শন পাবেন। আমি তো ওই মন্দিরেরই পূজারী। পূজা দিয়ে ফিরছি। নিন্ প্রসাদ খান।” এই বলে প্রাণকৃষ্ণ বাবার হাতে ধরিয়ে দিলেন একটি লাড্ডু। ভগবানের প্রসাদ পেয়ে মহানন্দিত হলেন বাবা। দিব‍্য সে প্রসাদের সুগন্ধ এমন যে মন-প্রাণ হরণ করে নেয়। নানা ভাবের স্ফূরণ হল তাঁর প্রসাদ পেতে পেতে। এরপরই তিনি পিছনে ফিরে দেখেন বিপ্র নেই আর। বিস্মিত হলেন তিনি, ভাবলেন তবে কী পেয়েও হারালাম আমার ইষ্টদেবকে!” তিনি সত্বর মন্দিরের পথে পা বাড়ালেন। কিন্তু অনেক খোঁজ করেও বিপ্রের কোন সংবাদ পেলেন না। শ্রীমন্দিরে বিগ্রহ দর্শন করে আবার যাত্রা শুরু করলেন। এভাবে তাঁর চলার পথে  নানাভাবে দয়াময় শ্রীকৃষ্ণ কৃপা করেছেন কখনো অলক্ষ্যে কখনো বা অন্য রূপ ধরে এসে।

 

চলতে চলতে প্রাণকৃষ্ণ বাবা পুনরায় ফিরে এলেন বৃন্দাবনের কুণ্ডতটে। শ্রীরাধাকুণ্ডতটে গভীর সাধনায় মগ্ন হলেন তিনি টানা পাঁচ বছর। কেবলমাত্র বৃক্ষের পত্র ভক্ষণ করে কাটিয়ে অষ্টকালীন লীলা স্মরণ করে ভজন করেছেন। পাঁচ বছর পর বৃন্দাবনের সকল মহিমাময় স্থানে কুঞ্জে-কুঞ্জে বিহার করেছেন। সকল লীলাস্থলী দর্শন করেছেন একে একে। প্রতিটি গ্রামে গেছেন যেখানে যেখানে যুগল লীলা করেছেন, আর দৈন্য ভরে প্রার্থনা করেছেন যাতে তাঁরা প্রকট হয়ে দর্শন দেন তাঁকে।
বৃন্দাবনের বন ভ্রমণ করতে করতে একসময় মিলন হল পরম রসিক কৃপাসিন্ধু মহারাজের সঙ্গে। রসিক রসিককে পেয়ে মহারসের পারাবার উথলিত হল। উভয়ে ইষ্টগোষ্ঠী করে দারুণ সুখে দিন কাটাতে থাকলেন। এদিকে প্রভুপাদ প্রাণগোপাল গোস্বামী জানতে পারলেন যে তাঁর প্রিয় শিষ্য বৃন্দাবনে ফিরে এসেছে। তিনি অবিলম্বে নিজে গিয়ে কৃপা করে দেখা দিলেন শিষ্যকে। বললেন, “প্রাণকৃষ্ণ, আর মনে দ্বিধা না রেখে আমার আজ্ঞা শিরে নিয়ে এবার তুমি বঙ্গদেশে গমন কর। জানোতো, ধন অনেক উপার্জন করার পর যদি ধনবান তাঁর ধন দীনজনকে না বিতরণ করে, তবে তা কৃপণের কর্ম হয়। তুমি প্রেমধনে ধনী হয়ে গেছো অনেক। এবার তো তোমার বিতরণ করার পালা। নিত‍্য একা একা প্রেমফল খাবে, অপরকে দেবে না, তা তো উচিৎ কর্ম হবে না ! সুধীজনেরা অন্যকে ভোজন করিয়ে নিজে সুখী হয়। কেউ আচার করে, কেউ বা প্রচার করে। তুমি আচার-প্রচার দুটোই কর এবার একসাথে। স্বয়ং শ্রীগৌরাঙ্গ আদেশ দিয়েছেন যে, নিজে খাও, অপরকে প্রেমফল বিলাও। এবার তো মহাপ্রভুর আদেশ পালন করতে হবে তোমায়।”
প্রাণকৃষ্ণ বাবা তখন বললেন, “আমি কী পারবো!”
প্রভু প্রাণগোপাল গোস্বামীপাদ বললেন, “কেন পারবে না! আমি তোমায় কৃপাশীষ করছি তুমি অতি সহজেই সকলকে প্রেমে ডোবাতে পারবে।”
শ্রীগুরুআজ্ঞা মেনে প্রাণকৃষ্ণ বাবা বঙ্গদেশে ফিরে এলেন। তিনি প্রভুপাদের সঙ্গেই নানা স্থানে বিহার করে নাম-প্রেম প্রচার করতে থাকলেন। কত পাষন্ডী, কত তার্কিক উদ্ধার হল। গৌরগুণগানে মত্ত হল লোকে। মায়া-মোহে আচ্ছন্ন কত লোক ভক্তিপথের সন্ধান পেল বাবার ভাগবত ব‍্যাখ‍্যা শ্রবণ করে, তাঁর সঙ্গে নামে মজে। বাবা নিজে কেঁদে অপরকে কাঁদালেন। নিজের শক্তিবলে বিশুদ্ধ ভক্তির সন্ধান দিয়ে ধন‍্য করলেন কত মানুষের ভজন জীবন।
অনেক বৎসর পর আবার এলেন বৃন্দাবন ধাম। শ্রীল লোকনাথ গোস্বামীর চরণ সমীপে থাকলেন। শ্রীরাধাবিনোদ দর্শন করে বশীভূত হলেন বিগ্রহের প্রেমে। এরপর গেলেন গোকুলানন্দ ঘেরায়। সেখানে ভেটনামায় ঘর নিয়ে নীলু ভক্ত ও অন‍্যান‍্য ভক্তদের সঙ্গে একসাথে বিহার করলেন। কিছুদিন কাটালেন সেখানে। এরপর এলেন গোপেশ্বর মহল্লায়। সেখানে ভক্তিকুঞ্জের প্রকাশ করলেন। সদা নাম-পাঠ-গানে ব‍্যস্ত থাকেন। অযাচিত ভাবে প্রেম প্রদান করেন স্ত্রী-পুরুষ, শূদ্র-ব্রাহ্মণ নির্বিশেষে সকলকে। তিনি পূর্ববঙ্গের যশোহর, খুলনা, নোয়াখালি, ত্রিপুরায়, পশ্চিমে নানা স্থানে প্রেমপ্রদান করেছেন। গৌরপ্রেম প্রচার করেছেন। শ্রীগুরু বলে বলীয়ান প্রাণকৃষ্ণ বাবা পুনরায় বৃন্দাবনে আসেন। পাথর পুরায় এসে ভক্তি মন্দির প্রকাশ করলেন। শ্রীমদনগোপাল বিগ্রহের সেবার প্রারম্ভ করলেন। প্রতিবছর সেখানে মহা মহোৎসব করতেন, ঝুলন যাত্রা ও অন‍্যান‍্য তিথি পালিত হত। চৌষট্টি মোহান্তের ভোগ লাগতো। কতশত বৈষ্ণবরা উপস্থিত হতেন সেসকল মহোৎসবে। পরম যত্নে বৈষ্ণব সেবা করে কৃতকৃতার্থ  হতেন প্রাণকৃষ্ণ বাবা।

 

অনেককাল পরে এলেন বঙ্গদেশের কুমারহট্টে শ্রীগৌরাঙ্গের শ্রীগুরুদেব শ্রীঈশ্বরপুরী পাদের জন্মভিটায়। সেই স্থানে তখন শ্রীমন্ মহাপ্রভুর শ্রীহস্তে খোদিত চৈতন‍্যডোবা। ‘মম জীবন প্রাণ’ বলে পুরীজীর জন্মভিটাকে স্তুতি করেছিলেন মহাপ্রভু —–একথা জেনে ব্যাকুল প্রাণে চৈতন্যডোবা দর্শন করতে এসেছিলেন প্রাণকৃষ্ণ বাবা। সেস্থানে এসে দেখেন অরণ্যে আবৃত্ত চারিপাশ, লুপ্ততীর্থ প্রায়। কীভাবে জন্মভিটার সন্ধান পাবেন! শুরু করলেন সংকীর্তন। যে স্থানে চৈতন্যডোবাটি ছিল সেই স্থানে কীর্তন কালে অন্তরে মহাপ্রভুর নির্দেশ পেলেন। প্রাণকৃষ্ণ বাবা অনুভব করলেন যে, ওই স্থানেই ছিল পুরীজীর জন্মভিটা। সেই স্থান তিনি ক্রয় করে নিলেন। আপ্রাণ চেষ্টা করে নিজ হাতে জঙ্গলাদি পরিষ্কার করে জমি সংস্কার করলেন। তারপর মন্দির স্থাপন করলেন। মন্দিরে শ্রীরাধাবিনোদসহ নিতাই-গৌর বিগ্রহ স্থাপন করলেন। প্রেম সেবার সূচনা করে শিষ্য-ভক্তদের নিয়ে উৎসব করলেন। সেবার পরিপাটি দেখে আঁখি জুড়িয়ে যায়। প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণা তৃতীয়া দিবসে গৌর আগমন স্মরণোৎসবের আয়োজন করতেন। অত্যাদ্ভুত কীর্তন লীলা, নৃত্য-গীত যাঁরা দেখতেন, শুনতেন, অংশগ্রহণ করতেন ধন্য হয়ে যেতেন। সারা বৎসরের সকল ব্রত, তিথি মহোৎসব পালন হত শ্রীমন্দিরে নিষ্ঠা ও প্রেমসহ।
ইতিমধ্যে প্রভুপাদ প্রাণগোপাল গোস্বামী গুরুতর অসুস্থ হলেন। শিষ্য প্রাণকৃষ্ণ বাবা সবিনয়ে সে রোগ গ্রহণ করতে চাইলেন। তিনি বললেন, “প্রভু আপনি রোগে কষ্ট পাবেন, আর আমি এই রোগহীন হয়ে সুখে ঘুরে বেড়াব এ কখনোই হতে পারে না। আমি আপনার শিষ্য, তাই আপনার বোঝা বহন করার দায়িত্ব আমার। আপনি কৃপা করে অধিকার দিন।” এরপরই প্রাণগোপাল প্রভু সুস্থ হয়ে যান আর প্রাণকৃষ্ণ বাবা সেই রোগে অসুস্থ হন। তিনি সেই রোগচিহ্ন নিয়েই নাম-সংকীর্তন , পাঠ-প্রবচন, নর্তন করতেন। আর আশ্চর্যের বিষয়, যখন তিনি এসব করতেন, তখন সেই রোগের প্রকোপ তাঁর দেহে থাকতো না।
প্রাণগোপাল বাবা নোয়াখালিতে হাজিপুরের কাছে বিশ বিঘা জমিতে এক উৎসবের আয়োজন করেছিলেন। সেই মহা মহোৎসবে অগণিত লোক অংশ নিয়েছিলেন, অসংখ্য কীর্তনের দল এসেছিলেন। প্রায় ৬০০ জন লোক কেবল রন্ধনের কার্য‍্যেই ব‍্যস্ত ছিলেন। অতএব, কত জনসমাগম যে হয়েছিল তা সহজেই অনুভূত হয়। টানা সাত দিন বাবার ক্ষিদে-তেষ্টা বলে কিছু ছিল না। কখনো তিনি তদারকি করছেন সবের, কখনো বা নৃত‍্য-গীতে ব‍্যস্ত, আবার কখনো সমাধি মগ্ন। সে এক পরম অদ্ভুত আবেশ তাঁর ভিতর।
আর একবার তো এক অলৌকিক কান্ড ঘটালেন। ফেনীর উত্তর দিকে পাঠাঙ্গর গ্রামে, যখন তিনি ব‍্যাসাসনে বসে প্রবচন দিচ্ছেন তখন হঠাৎ করে বজ্রবিদ্যুৎ পতন শুরু হয় ভয়ানক ভাবে। ভক্তরা প্রাণভয়ে ভীত হচ্ছে দেখে তিনি সকলকে আশ্বস্ত করলেন এই বলে যে, “তোমরা চিন্তা করো না। যে ইন্দ্রদেব এই ঘটনা ঘটাচ্ছেন, তিনিও ভক্তদেরকে মান্য করেন। তোমরা স্থিরভাবে বসে পাঠে মন দাও। দেখবে সকল বিপদ দূরে সরে যাবে।” বাস্তবিক তাই হল। সেই স্থান বাদ দিয়ে সকল স্থানে ভারী বর্ষণ হল, কিন্তু, উৎসবের স্থানে এক ফোটাও বৃষ্টি হল না। বাবার নির্দেশমত সকলে স্থির চিত্তে গভীর মনোযোগ দিয়ে পাঠে মনোনিবেশ করে বসেছিলেন। পাঠাঙ্গর গ্রামের সেই মহোৎসব শেষে সকল গ্রামবাসী প্রেমপ্রাপ্ত হয়ে ধুলায় গড়াগড়ি দিয়েছিলেন। চতুর্দিক ধন্য ধন্য করেছিল তাঁর লীলা দেখে।
প্রাণকৃষ্ণ বাবার বৈরাগ্য ছিল অপরিসীম। তিনি ধাতুপাত্র বর্জন করে, মৃৎপাত্রে প্রসাদ পেতেন, ভূমিতলে শয়ন করতেন, দিবানিশি নামে মজে থাকতেন।
যেদিন বাবা লীলাসঙ্গোপন করলেন সেদিন মহোৎসব শেষে সকল ভক্তদের প্রসাদ পাবার পর তিনি শয়নে গেলেন। বললেন যে, তাঁর দেহ অবশ, আর তিনি উঠবেন না, সেই তাঁর শেষ শয‍্যা। তাই শেষ পূজা দিয়ে নিতে চান। তাঁর আজ্ঞামত তাঁর বক্ষের ওপর রেশমী আসন পাতা হল। তারপর, তাঁর গুরুদেবের চিত্রপট বসানো হল সেই আসনের ওপর। তিনি পূজা করলেন। তাঁর নির্দেশমত পঞ্চতত্ত্ব চিত্রপটও বসানো হল তাঁর বক্ষের ওপর। তিনি পূজা করলেন। এরপর, রাধাবিনোদ বিগ্রহ বসানো হল তিনি পূজা দিলেন। বিগ্রহ নামানো হল বক্ষ থেকে। তিনি ধ‍্যানমগ্ন হলেন শয়ন অবস্থাতেই। লীলা সম্বরণ করলেন বাবা। তখন ছিল আষাঢ় মাসের শেষে শুক্লা চতুর্দশীর রাত্রে চতুর্থ প্রহর। সকল  শিষ্য-ভক্তরা চতুর্দিক অন্ধকার দেখলেন তাঁর অদর্শনে।
প্রসঙ্গত, লিখছি, প্রাণকৃষ্ণ বাবা এ অধমার পরাৎপর গুরুদেব। আমার পরমগুরু শ্রীগুরুপদ দাস বাবা প্রাণকৃষ্ণ বাবার জীবনীকথা বলেছিলেন আমার গুরুদেব শ্রীকিশোরীদাস বাবাকে। গুরুপদ দাস বাবার আজ্ঞায় কিশোরীবাবা প্রকাশ করেছিলেন তাঁর লেখনীতে। আর এখন আমি কিশোরীদাস বাবার আজ্ঞায় লেখার ক্ষুদ্র প্রয়াস করলাম। দোষ-ত্রুটি তাঁদের ক্ষমাসুন্দর নয়নে দেখবেন এই প্রার্থনা জানালাম তাঁদের পদ-পঙ্কজে।

Share This