Categories
প্রবন্ধ

মূল্যবান মনুষ্য জীবনে শিবমহিমা ও শ্রাবণ মাস : স্বামী আত্মভোলানন্দ (পরিব্রাজক)।।।।

আমাদের মূল্যবান মনুষ্য জীবনে গুরুদেব ভগবান প্রাণদেবতা নিজ নিজ পিতামাতার মত প্রত্যেকের হৃদয় সিংহাসনে বিরাজ করেন। আমাদের প্রাণদেবতা যুগাচার্য্য স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ সাক্ষাৎ শিবস্বরূপ, চলমান শিব। গৃহদেবতা নীলরুদ্রের আশির্বাদে শিব-অবতার রূপে শিবশিশুর, দেবশিশুর ধরাধামে আবির্ভাব।

পরবর্তিকালে সাক্ষাৎ দেবাদিদেব মহাদেব রূপে আত্মপ্রকাশ হয়। আনুষ্ঠানিক সন্ন্যাস গ্রহণ পূর্বক তিনি স্বামী প্রণবানন্দ নামে পরিচিত হন। প্রনব (ওমঃ) হল পরমেশ্বরের প্রতীক। সৃষ্টির প্রথম শব্দ ওঁ। ওঁ এ আছে তিন অক্ষর- অ, উ, ম। তিন অক্ষরে আছে তিন দেবতাঃ- ব্রহ্মা, বিষ্ণু,মহেশ্বর (শিব)। শিব শব্দের অর্থ মঙ্গল। তাই প্রতিটি মঙ্গলময় জিনিস বা ব্যক্তিত্ব হলো শিবস্বরূপ। আর মঙ্গলকে আশ্রয় না করে কয়জন বাঁচতে পারে? তাই শিব সবারই আশ্রয়স্থল। তেমনি শিব ব্যক্তিত্বের ব্যক্তি মঙ্গলময় ও আশ্রয়দাতার প্রতীক। আমাদের প্রাণদেবতা গুরুমহারাজ সাক্ষাৎ ভগবান যুগাচার্য্য স্বামী প্রণবানন্দজী ও সবার আশ্রয়স্থল মঙ্গলময় ও আশ্রয় দাতার প্রতীক।
আমাদের হিন্দুদের অন্যতম প্রধান মন্ত্র – ওঁ নমঃ শিবায়।
বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টির আগে মহাশূণ্যে যে শব্দতরঙ্গ ছিল তাই “ওম ” । ন, ম, শি, বা, য় ,” এই মন্ত্রে আমরা মহাদেবের জপ করি । ন মানে মাটি , ম অর্থে জল , শি হলেন প্রতিভূ , বা মানে বায়ু বা বাতাস এবং য় হলেন সবকিছুর প্রতিনিধিস্বরূপ। তাহলে শিব লিঙ্গ শব্দের সম্মিলিত অর্থ – যা মঙ্গলময়ের প্রতীক, কল্যাণের প্রতীক প্রভৃতি। অতএব শিব লিঙ্গ পূজা, মঙ্গলময়ের পূজা, সুন্দরের পূজা, শুভ বা কল্যাণের পূজা। এই শ্রাবণ মাস সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সারা বছর শিবপুজো করা হলেও এই শ্রাবণ মাসে দেবাদিদেব মহাদেবকে নিষ্ঠাভরে ও নিয়ম মেনে পুজো করা হয়, বিশেষভাবে সোমবার। কারণ, এটি দক্ষিণ-পশ্চিম বর্ষার আগমনের সাথে যুক্ত। অনেকের কাছে শ্রাবণ মাস উপবাসের মাস। ভোলে বাবার উপবাস তো রাখেন, শ্রাবণ মাসেকেই কেন ‘শিবের মাস’ বলা হয়? সারাবছর শিবপুজো করা হলেও এই মাসে মহাদেবকে নিষ্ঠাভরে ও নিয়ম মেনে পুজো করা হয়। শিবের উপাসনা করার শ্রেষ্ঠ সময় হল প্রদোষ কাল। প্রত্যেক পক্ষের দ্বাদশীর শেষ ও ত্রয়োদশীর সূচনার অংশটিকে “প্রদোষ” বলা হয়। এইসময় শ্রাবণ মাসে শিবের ভক্তরা মহাদেবকে পুজো করলে মনের সব ইচ্ছে পূরণ হয়। ‘শ্রাবণ’ শব্দের উৎস হয়েছে ‘শ্রবণ’ থেকে। তাই এই সময়কাল শিবকথা, শুভকথা শোনার মাস।
শিবমন্দিরে তো বটেই, শ্রাবণ মাসে বাড়িতে বাড়িতেও শিবের উপাসনা করা হয়। সাধারণত গঙ্গাজল, দুধ দিয়ে রুদ্রাভিষেক করে মহাদেবের পায়ে ফুল, বেলপাতা অর্পণ করে শিবের পুজো করা হয়। আর এটাই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ উপায় বলে মনে করা হয়। শাস্ত্র অনুসারে, জলভিষেক করলেও মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়। শ্রাবণ মাসে শিবকে সন্তুষ্ট করতে শিবের ভক্তরা কোনও ত্রুটি রাখেন না। পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী, শ্রাবণ মাসেই সমুদ্র মন্থনের ঘটনা ঘটেছিল। সমুদ্র উত্থিত হলাহল বিষ থেকে গোটা ধরিত্রীকে রক্ষা করার জন্য স্বয়ং মহাদেব নিজ কণ্ঠে হলাহল বিষ ধারণ করেছিলেন। বিষের প্রভাবে মহাদেবের কন্ঠ নীল হয়ে ওঠে। এই কারণেই মহাদেবের অপর নাম নীলকণ্ঠ। বিষের তীব্রতা হ্রাস করার জন্য স্বর্গের দেবতারা শিবের মাথায় গঙ্গাজল ঢালতে থাকেন। সেই কারণেই শ্রাবণ মাসে শিবের মাথায় গঙ্গাজল প্রদান করা হয়। আর তাতেই আদিদেব মহাদেবের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হন ভক্তরা। আরেকটি ব্যাখ্যাতে উল্লেখ রয়েছে, সতীর দেহত্যাগের পর দেবী পার্বতী রূপে ফের একবার জন্ম নেন। শিবকে আবার স্বামীরূপে পাওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা করতে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে সাধনা করে শিবকে সন্তুষ্ট করলে পার্বতীকে বিবাহ করতে রাজি হন মহাদেব। আর সেই শুভমুহূর্ত ঘটে শ্রাবণ মাসেই। তারপর শিবরাত্রির দিনেই শিব-পার্বতীর পুনর্মিলন ঘটেছিল। এই কারণেই শ্রাবণ মাসকে শিবের মাস বলা হয়। সনাতন ধর্ম অনুসারে শিব হলেন আদি দেবতা। সেই কারণে তাঁকে দেবাদিদেব বলা হয়।
ভগবান শিবের সাতটি রহস্যঃ-১) সাপঃ সর্প হচ্ছে সদা জাগ্রত থাকার প্রতীক। ২) ভষ্মঃ এটা জীবনের অনিত্যতার প্রতীক। ৩) চন্দ্রঃ মনের উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার প্রতীক। ৪) ডমরুঃ উন্মুক্ত চিন্তা-চেতনার প্রতীক। ৫) ত্রিশুলঃ শিব প্রকৃতির তিনগুন নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, এটি তারই প্রতীক। ৬) নীলাভ শরীরঃ আকাশ অন্তহীন, অন্তহীনতা তথা অসীমতার প্রতীক। ৭) গঙ্গাঃ গঙ্গা নিষ্কলুষ জ্ঞানের প্রতীক। “ওঁ নমঃ শিবায়” উচ্চারণ করে জপ করলে সবরকম অশুভ প্রভাব দূরে থাকে। পাঁচ ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণে থাকে। শিব জন্মরহিত, শাশ্বত, সব কারণের কারণ। তিনি স্বরূপে বিদ্যমান। সব জ্যোতির জ্যোতি বা আলো । তিনি তুরীয়, অন্ধকারের অতীত। আদি ও অন্তহীন। সব শেষে শিবলিঙ্গ বা শিব মূর্তিকে প্রাণদেবতা সাক্ষাৎ চলমান শিব গুরুমহারাজকে প্রণাম করে বলুন:-
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে।
নিবেদয়ামি চাত্মানং গতিস্তং পরমেশ্বরম্।।
ওঁ নমঃ শিবায়..ওঁ নমঃ শিবায়..ওঁ নমঃ শিবায়..
জয় জয় প্রণবেশ্বর মহাদেব…
জয় জয় দেবাদিদেব মহাদেব….
জয় জয় শিব শম্ভু…
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ….!
স্বামী আত্মভোলানন্দ(পরিব্রাজক) l

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে- হাজার চুরাশির মা, মহাশ্বেতা দেবী।।।।।

মহাশ্বেতা দেবী ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক এবং একজন কর্মী। তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে হাজার চুরাশির মা , রুদালী এবং অরণ্যের অধিকার । তিনি একজন বামপন্থী ছিলেন যিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ , বিহার , মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড় রাজ্যের উপজাতিদের ( লোধা এবং শবর ) অধিকার ও ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করেছিলেন ।

তিনি বিভিন্ন সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন যেমনসাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার ( বাংলায় ), জ্ঞানপীঠ পুরস্কার এবং র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার সহ ভারতের বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী এবং পদ্মবিভূষণ ।

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা—————

মহাশ্বেতা দেবী একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ১৪ জানুয়ারি ১৯২৬ তারিখে ঢাকা , ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমানে ঢাকা , বাংলাদেশ )। তার বাবা মনীশ ঘটক ছিলেন কল্লোল আন্দোলনের একজন কবি এবং ঔপন্যাসিক , যিনি ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন যুবনাশ্ব ( বাংলা : আত্মনাশ্ব ) । ঘটকের ভাই ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটক । দেবীর মা, ধরিত্রী দেবীও একজন লেখক এবং একজন সমাজকর্মী ছিলেন যার ভাইদের মধ্যে রয়েছেন ভাস্কর শঙ্খ চৌধুরী এবং এর প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক।ভারতের ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি , শচীন চৌধুরী।
দেবীর প্রথম শিক্ষা ছিল ঢাকায়, ইডেন মন্টেসরি স্কুল । এরপর তিনি পশ্চিমবঙ্গে (বর্তমানে ভারতে) চলে যান। এরপর তিনি মেদিনীপুর মিশন গার্লস হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেন। এরপর তাকে শান্তিনিকেতনে ভর্তি করা হয় । এর পরে, তিনি বেলতলা গার্লস স্কুলে পড়াশোনা করেন যেখানে তিনি তার ম্যাট্রিকুলেশন শেষ করেন। তারপর ১৯৪৪ সালে তিনি আসুতোষ কলেজ থেকে আই.এ. তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং ইংরেজিতে বিএ (অনার্স) সম্পন্ন করেন এবং তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে এমএ সম্পন্ন করেন ।
মহাশ্বেতা দেবী বহুবার ভারতের উপজাতি মানুষদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। মহাশ্বেতা দেবীর বিশেষত্ব আদিবাসী, দলিত এবং প্রান্তিক নাগরিকদের অধ্যয়ন তাদের মহিলাদের উপর ফোকাস করে। তারা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা , মহাজন এবং উচ্চ শ্রেণীর দুর্নীতি ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হিসেবে যুক্ত ছিল । তিনি বছরের পর বছর পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগড়ের আদিবাসী গ্রামে বসবাস করতেন, তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতেন এবং তাদের কাছ থেকে শিখতেন। তিনি তার কথা ও চরিত্রে তাদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগকে মূর্ত করেছেন। তিনি দাবি করেছিলেন যে তার গল্পগুলি তার সৃষ্টি নয়, সেগুলি তার দেশের মানুষের গল্প। যেমন একটি উদাহরণ তার কাজ “ছোট্টি মুন্ডি এবং তার তির”।তিনি লোধা এবং শবর , পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী সম্প্রদায়, মহিলা এবং দলিতদের অধ্যয়ন করেছিলেন ।

তার বিস্তৃত বাংলা কথাসাহিত্যে, তিনি প্রায়শই শক্তিশালী কর্তৃত্ববাদী উচ্চ-বর্ণের জমিদার, অর্থ-ঋণদাতা এবং ভেনাল সরকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা উপজাতীয় জনগণ এবং অস্পৃশ্যদের উপর নির্মম নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেন।মহাশ্বেতা দেবী ভারতে উপজাতিদের দ্বারা ভোগা বৈষম্যের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার তার আওয়াজ তুলেছিলেন। দেবীর ১৯৭৭ সালের উপন্যাস অরণ্যের অধিকার (অরণ্যে অধিকার) ছিল বিরসা মুন্ডার জীবন নিয়ে । এবং ২০১৬ সালের জুন মাসে, দেবীর সক্রিয়তার ফলস্বরূপ, ঝাড়খণ্ড রাজ্য সরকার অবশেষে মুণ্ডার মূর্তি থেকে ম্যানাকলগুলি অপসারণ করতে দেখেছিল, যা উল্লেখযোগ্য তরুণ উপজাতীয় নেতার স্মারক ভাস্কর্যের অংশ ছিল। ব্রিটিশ শাসনের যুগের একটি ফটোগ্রাফের উপর ভিত্তি করে।
দেবী ১০০ টিরও বেশি উপন্যাস এবং ২০ টিরও বেশি ছোট গল্পের সংকলন লিখেছেন প্রাথমিকভাবে বাংলায় লেখা তবে প্রায়শই অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়। ঝাঁসির রাণীর জীবনী অবলম্বনে তার প্রথম উপন্যাস ঝাঁসির রানী, প্রকাশিত হয় ১৯৫৬ সালে ।

পুরস্কার এবং স্বীকৃতি—————–

সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৭৯), সমাজসেবায় পদ্মশ্রী (১৯৮৬), জ্ঞানপীঠ পুরস্কার (১৯৯৬), রামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার (১৯৯৭), অফিসার দেল’ অর্ডার দেস আর্টস এত দেস লেটার্স (২০০৩), পদ্মবিভূষণ – ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা (২০০৬), সার্ক সাহিত্য পুরস্কার (২০০৭), ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন (২০০৯), যশবন্তরাও চবন জাতীয় পুরস্কার (২০১০), বঙ্গবিভূষণ – পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা (২০১১)।

চলচ্চিত্রায়ন—————–

সংঘর্ষ, রুদালি, হাজার চৌরাসি কি মা, মাটি মায়,
গাঙ্গোর।

দেবীর প্রধান কাজগুলির মধ্যে রয়েছে——–

হাজর চুরাশির মা, অরণ্যের অধিকার, অগ্নিগর্ভ, মূর্তি, নীড়েতে মেঘ, স্তন্যদায়নী, চোট্টি মুন্ডা এবং তার তীর, বর্তিকা।

মৃত্যু———–

২৩ জুলাই ২০১৬ তারিখে, দেবী একটি বড় হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন এবং তাকে কলকাতার বেলে ভিউ ক্লিনিকে ভর্তি করা হয় । জুলাই ২৮ তারিখে ৯০ বছর বয়সে একাধিক অঙ্গ ব্যর্থতার কারণে দেবী মারা যান।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

প্রথম রেডিও কম্পাস : এভিয়েশন নেভিগেশনে একটি মাইলফলক।।।

27 জুলাই, 1920-এ, একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন বিমান চলাচলের ন্যাভিগেশনে বিপ্লব ঘটিয়েছে – প্রথম রেডিও কম্পাস। এই অগ্রগামী প্রযুক্তিটি বিমান ভ্রমণের নিরাপত্তা এবং দক্ষতাকে পরিবর্তন করে, আরও নির্ভুলতার সাথে তাদের দিকনির্দেশ এবং অবস্থান নির্ধারণ করতে পাইলটদের সক্ষম করে। এই প্রবন্ধে, আমরা প্রথম রেডিও কম্পাসের ইতিহাস, বিকাশ এবং প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব, যা বিমান চালনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

*উন্নত নেভিগেশনের প্রয়োজন*
বিমান চালনার প্রথম দিকে, পাইলটরা তাদের ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ল্যান্ডমার্ক, কম্পাস এবং আকাশী নেভিগেশনের মতো চাক্ষুষ রেফারেন্সের উপর নির্ভর করতেন। যাইহোক, এই পদ্ধতিগুলি প্রায়শই অবিশ্বস্ত ছিল, বিশেষ করে প্রতিকূল আবহাওয়া বা অপরিচিত অঞ্চলগুলিতে। বিমান ভ্রমণ সম্প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে আরও সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য ন্যাভিগেশন সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ চাপে পড়ে।
*রেডিও কম্পাসের বিকাশ*
20 শতকের প্রথম দিকে, রেডিও প্রযুক্তি নেভিগেশনের জন্য একটি সম্ভাব্য সমাধান হিসাবে আবির্ভূত হতে শুরু করে। প্রথম রেডিও কম্পাস, যা রেডিও ডিরেকশন ফাইন্ডার (RDF) নামেও পরিচিত, 1910 সালে তৈরি হয়েছিল। এই প্রাথমিক সিস্টেমটি একটি পরিচিত স্টেশন থেকে রেডিও সংকেতের দিক নির্ণয় করতে একটি ঘূর্ণায়মান অ্যান্টেনা ব্যবহার করেছিল। যাইহোক, এটি 1920 সাল পর্যন্ত ছিল না যে প্রথম ব্যবহারিক রেডিও কম্পাস তৈরি করা হয়েছিল এবং বিমান ব্যবহারের জন্য পরীক্ষা করা হয়েছিল।
*প্রথম ফ্লাইট*
27 জুলাই, 1920-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী এবং ন্যাশনাল ব্যুরো অফ স্ট্যান্ডার্ডের বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীদের একটি দল রেডিও কম্পাস ব্যবহার করে প্রথম ফ্লাইট পরিচালনা করে। পরীক্ষামূলক বিমান, একটি কার্টিস JN-4 “জেনি” বাইপ্লেন, একটি রেডিও কম্পাস সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত ছিল যা কাছাকাছি একটি স্টেশন থেকে রেডিও সংকেতের দিক সনাক্ত করতে একটি ঘূর্ণমান অ্যান্টেনা ব্যবহার করে। ফ্লাইটটি দিকনির্দেশ এবং অবস্থান নির্ধারণে রেডিও কম্পাসের কার্যকারিতা প্রদর্শন করেছিল, যা বিমান চালনায় এর গ্রহণের পথ প্রশস্ত করেছিল।
*কিভাবে কাজ করেছে*
রেডিও কম্পাস একটি সহজ কিন্তু বুদ্ধিমান নীতি ব্যবহার করেছিল। বিমানের একটি ঘূর্ণায়মান অ্যান্টেনা একটি পরিচিত স্টেশন থেকে রেডিও সংকেতের দিক সনাক্ত করে, যেমন একটি বাতিঘর বা একটি রেডিও বীকন। অ্যান্টেনাটি একটি রেডিও রিসিভারের সাথে সংযুক্ত ছিল, যা সংকেতকে প্রশস্ত করে এবং এটি একটি মিটারে প্রদর্শন করে। অ্যান্টেনা ঘোরানো এবং সংকেত শক্তি পর্যবেক্ষণ করে, পাইলট স্টেশনের দিকনির্দেশ এবং ফলস্বরূপ, তাদের নিজস্ব অবস্থান নির্ধারণ করতে পারে।
*বিমান চলাচলের উপর প্রভাব*
রেডিও কম্পাসের প্রবর্তন বিমান চলাচলে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এটি পাইলটদের আরও বেশি নির্ভুলতার সাথে নেভিগেট করতে সক্ষম করে, এমনকি প্রতিকূল আবহাওয়া বা অপরিচিত অঞ্চলেও। এটি নিরাপত্তা এবং দক্ষতা বাড়িয়েছে, যা দীর্ঘতর ফ্লাইট এবং আরও নির্ভরযোগ্য বিমান ভ্রমণের অনুমতি দেয়। রেডিও কম্পাস আরও উন্নত ন্যাভিগেশন সিস্টেম, যেমন GPS এর বিকাশের পথ তৈরি করেছে।
*উপসংহার*
প্রথম রেডিও কম্পাস, 27 জুলাই, 1920-এ ব্যবহৃত, বিমান চলাচলে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। এই অগ্রগামী প্রযুক্তি বিমান ভ্রমণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে, যা পাইলটদের আরও নির্ভুলতার সাথে তাদের দিকনির্দেশ এবং অবস্থান নির্ধারণ করতে সক্ষম করেছে। যেহেতু আমরা বিমান চালনা উদ্ভাবনের সীমানাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, আমরা যারা প্রথম রেডিও কম্পাস তৈরি করেছেন তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং অধ্যবসায়কে সম্মান জানাই, যা মানুষের বুদ্ধিমত্তা এবং অগ্রগতির সাধনার প্রমাণ।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ভারতের মিসাইল ম্যান, এপিজে আবদুল কালাম : প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।।।

আব্দুল কালাম ছিলেন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি যিনি একজন বিজ্ঞানীও ছিলেন। তিনি স্বাধীন ভারতের একাদশতম রাষ্ট্রপতি যিনি ধর্মনিপেক্ষভাবে নির্বাচিত হন। ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রামেশ্বরমে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। ভারতীয় বিজ্ঞান সংস্থা ইসরো তে তিনি একজন বিজ্ঞানী হিসাবে কাজ করেন। মহাকাশযানবাহী রকেট এবং বালিস্টিক মিসাইলের উপর অবদানের জন্য তাঁকে ভারতের Missile Man বলা হয়।

আব্দুল পাকির জয়নুলাবদিন আব্দুল কালাম ছিলেন একজন ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানী এবং রাষ্ট্রনায়ক যিনি ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারতের ১১ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের সাধারণ এক পরিবারে ১৯৩১ সালের ১৫ই অক্টোবর জন্ম হয় এপিজে আব্দুল কালামের। তখন রামেশ্বরম বৃটিশ ভারতের মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ছিল। তাঁর বাবার নাম জয়নুল আবেদীন এবং মায়ের নাম আশিয়াম্মা। তাঁর জীবনে তাঁর বড় বোন জোহরা এবং ভগ্নিপতি আহামাদ জালালুদ্দীনেরও অনেক প্রভাব ছিল। রামেশ্বরম এবং তাম্রেশ্বরম এবং রমেশ্বরম এবং স্টান্ট ইঞ্জিনে জন্ম ও বেড়ে ওঠেন।
তিনি পরবর্তী চার দশক একজন বিজ্ঞানী এবং বিজ্ঞান প্রশাসক হিসেবে কাটিয়েছেন, প্রধানত ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO) এবং ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ISRO) এ এবং ভারতের বেসামরিক মহাকাশ কর্মসূচি এবং সামরিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। এইভাবে তিনি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং উৎক্ষেপণ যান প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করার জন্য ভারতের মিসাইল ম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৯৮ সালে ভারতের পোখরান-II পারমাণবিক পরীক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক, প্রযুক্তিগত এবং রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেছিলেন, যা ১৯৭৪ সালে ভারতের মূল পারমাণবিক পরীক্ষার পর প্রথম।
ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি এবং তৎকালীন বিরোধী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস উভয়ের সমর্থনে কালাম ২০০২ সালে ভারতের ১১ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। ব্যাপকভাবে “জনগণের রাষ্ট্রপতি” হিসাবে উল্লেখ করা হয়, তিনি একটি একক মেয়াদের পরে তার শিক্ষা, লেখালেখি এবং জনসেবার নাগরিক জীবনে ফিরে আসেন। তিনি ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান, ভারতরত্ন সহ বেশ কয়েকটি মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের প্রাপক ছিলেন।
তিনি মানুষের মাঝে জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে পছন্দ করতেন। ভালবাসতেন নিজের জীবনের শিক্ষা তরুণ পজন্মের মাঝে পৌঁছে দিতে । তেমনই ২০১৫ সালে ২৭শে জুলাই মেঘালয়ের শিলং শহরে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট নামক প্রতিষ্ঠানে বসবাসযোগ্য পৃথিবী বিষয়ে বক্তব্য রাখছিলেন । ভারতীয় সময় ৬টা ৩০ মিনিটে বক্তব্য রাখা অবস্থায় তাঁর হার্ট এ্যটাক হয় এবং তাকে বেথানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ৭টা ৪৫ মিনিট নাগাদ তাঁর মৃত্যু ঘটে ।
৮৪ বছর বয়সে দেশের জন্য নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করে যাওয়া এ মহাপুরুষ পরলোক গমন করেন। ২৯শে জুলাই তাঁর জন্মস্থান রামেশ্বরমেই তাকে দাফন করা হয়।
কালামের লেখা—
এ পি জে আব্দুল কালাম এবং রোদ্দাম নরসিমহা দ্বারা তরল মেকানিক্স এবং স্পেস টেকনোলজির উন্নয়ন; ইন্ডিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেস, ১৯৮৮।
ভারত ২০২০: এ পি জে আবদুল কালাম, ওয়াই এস রাজন-এর নতুন সহস্রাব্দের জন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি; নিউ ইয়র্ক, ১৯৯৮।
উইংস অফ ফায়ার: এ পি জে আবদুল কালাম, অরুণ তিওয়ারির একটি আত্মজীবনী; বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস, ১৯৯৯।
ইগনিটেড মাইন্ডস: এ পি জে আবদুল কালামের দ্বারা ভারতের মধ্যে শক্তি উন্মোচন করা; ভাইকিং, ২০০২।
দ্য লাউমিনাস স্পার্কস এ পি জে আবদুল কালাম, দ্বারা; পুণ্য পাবলিশিং প্রাইভেট লিমিটেড, ২০০৪।
এ পি জে আবদুল কালামের মিশন ইন্ডিয়া, মানব গুপ্তের আঁকা ছবি; পেঙ্গুইন বই, ২০০৫।
এ পি জে আবদুল কালামের অনুপ্রেরণামূলক চিন্তা; রাজপাল অ্যান্ড সন্স, ২০০৭।
এ পি জে আবদুল কালামের অদম্য আত্মা; রাজপাল অ্যান্ড সন্স প্রকাশনা
শিবথানু পিল্লাইয়ের সাথে এ পি জে আব্দুল কালামের দ্বারা একটি ক্ষমতাপ্রাপ্ত জাতির কল্পনা করা; টাটা ম্যাকগ্রা-হিল, নয়াদিল্লি
ইউ আর বর্ন টু ব্লসম: টেক মাই জার্নি বিয়ন্ড এ পি জে আবদুল কালাম এবং অরুণ তিওয়ারি; ওশান বুকস, ২০১১।
টার্নিং পয়েন্টস: এ পি জে আব্দুল কালামের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে একটি যাত্রা; হার্পারকলিন্স ইন্ডিয়া, ২০১২।
এ পি জে আবদুল কালাম এবং সৃজন পাল সিং-এর লক্ষ্য ৩ বিলিয়ন; ডিসেম্বর ২০১১ (প্রকাশক: পেঙ্গুইন বই)।
মাই জার্নি: এ পি জে আবদুল কালাম দ্বারা স্বপ্নকে কর্মে রূপান্তর করা; রূপা পাবলিকেশন দ্বারা ২০১৪।
পরিবর্তনের জন্য একটি ইশতেহার: এ পি জে আব্দুল কালাম এবং ভি পোনরাজের ভারত ২০২০ এর সিক্যুয়েল; হার্পারকলিন্স দ্বারা জুলাই ২০১৪।
আপনার ভবিষ্যত তৈরি করুন: এ পি জে আবদুল কালামের দ্বারা স্পষ্ট, স্পষ্ট, অনুপ্রেরণামূলক; রাজপাল অ্যান্ড সন্স দ্বারা, ২৯ অক্টোবর ২০১৪।
পুনরুজ্জীবিত: এ পি জে আব্দুল কালাম এবং সৃজন পাল সিং দ্বারা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বৈজ্ঞানিক পথ; পেঙ্গুইন ইন্ডিয়া দ্বারা, ১৪ মে ২০১৫।
অরুণ তিওয়ারির সঙ্গে এ পি জে আবদুল কালামের প্রমুখ স্বামীজির সঙ্গে আমার আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা; হার্পারকলিন্স পাবলিশার্স, জুন ২০১৫।
অ্যাডভান্টেজ ইন্ডিয়া: ফ্রম চ্যালেঞ্জ টু অপারচুনিটি এ পি জে আবদুল কালাম এবং সৃজন পাল সিং দ্বারা; হার্পারকলিন্স পাবলিশার্স, ১৫ অক্টোবর ২০১৫।
তার জীবদ্দশায় ৮৪ বছরের দীর্ঘ ও সফল কর্মজীবনে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও দর্শন থেকে আমাদের জন্য রেখে গেছেন অসংখ্য মহামূল্যবান বাণী। তার মধ্যে কিছু সংকলন করা হলো-
(ক) স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে যাও। স্বপ্ন সেটা নয় যা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো, স্বপ্ন হলো সেটাই যা তোমাকে ঘুমোতে দেয় না।
(খ) মানুষ তার ভবিষ্যত পরিবর্তন করতে পারে না, কিন্তু অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারে। অভ্যাসই মানুষের ভবিষ্যত পরিবর্তন করে দেয়।
(গ) তুমি যদি সূর্যের মতো আলো ছড়াতে চাও, তাহলে আগে সূর্যের মতো পুড়তে শেখো।
(ঘ) একটি ভালো বই একশ ভালো বন্ধুর সমান, কিন্তু একজন ভালো বন্ধু একটি লাইব্রেরির সমান।
(ঙ) সফলতার গল্প পড়ো না, কারণ তা থেকে তুমি শুধু গল্পটাই পাবে। ব্যর্থতার গল্প পড়ো, তাহলে সফল হওয়ার কিছু উপায় পাবে।
(চ) উদার ব্যক্তিরা ধর্মকে ব্যবহার করে বন্ধুত্বের হাত বাড়ান। কিন্তু সংকীর্ণমনস্করা ধর্মকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।
(ছ) ছাত্রজীবনে আমি বিমানের পাইলট হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হয়েছি, হয়ে গেছি রকেট বিজ্ঞানী।
(জ) জীবন ও সময় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। জীবন শেখায় সময়কে ভালোভাবে ব্যবহার করতে আর সময় শেখায় জীবনের মূল্য দিতে।
(ঝ) যারা মন থেকে কাজ করে না, তারা আসলে কিছুই পায় না। আর পেলেও সেটা হয় অর্ধেক হৃদয়ের সফলতা। তাতে সব সময়ই একরকম তিক্ততা থেকে যায়।
(ঞ) কঠিন কাজে আনন্দ বেশি পাওয়া যায়। তাই সফলতার আনন্দ পাওয়ার জন্য মানুষের কাজ কঠিন হওয়া উচিত।
(ট) প্রথম সাফল্যের পর বসে থেকো না। কারণ দ্বিতীয়বার যখন তুমি ব্যর্থ হবে তখন অনেকেই বলবে প্রথমটিতে শুধু ভাগ্যের জোরে সফল হয়েছিলে।
(ঠ) বৃষ্টি শুরু হলে সব পাখিই কোথাও না কোথাও আশ্রয় খোঁজে। কিন্তু ঈগল মেঘের ওপর দিয়ে উড়ে বৃষ্টিকে এড়িয়ে যায়।
(ড) নেতা সমস্যায় ভয় পান না। বরং সমস্যার মোকাবিলা করতে জানবেন। তাকে কাজ করতে হবে সততার সঙ্গে।
(ঢ) জাতির সবচেয়ে ভালো মেধা ক্লাসরুমের শেষ বেঞ্চ থেকে পাওয়া যেতে পারে।(ণ) আমি সুপুরুষ নই। কিন্তু যখন কেউ বিপদে পড়েন আমি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই। সৌন্দর্য থাকে মানুষের মনে, চেহারায় নয়।
(ত) তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার বার্তা হলো- তাদের ভিন্নভাবে চিন্তা করবার সাহস থাকতে হবে। মনের ভেতর আবিষ্কারের তাড়না থাকতে হবে। নিজের সমস্যা নিজে মেটাবার মানসিকতা থাকতে হবে।
(থ) কাউকে হারিয়ে দেয়াটা খুব সহজ, কিন্তু কঠিন হলো কারো মন জয় করা।
(দ) জীবনে সমস্যার প্রয়োজন আছে। সমস্যা আছে বলেই সাফল্যে এতো আনন্দ।
(ধ) যে হৃদয় দিয়ে কাজ করে না, শূন্যতা ছাড়া সে কিছুই অর্জন করতে পারে না।
(ন) সেই ভালো শিক্ষার্থী যে প্রশ্ন করে। প্রশ্ন না করলে কেউ শিখতে পারে না। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে।
(প) সমাপ্তি মানেই শেষ নয়। ‘END’ শব্দটির মানে হচ্ছে ‘Effort Never Dies’ অর্থাৎ ‘প্রচেষ্টার মৃত্যু নেই’।
(ফ) উপরে তাকিয়ে আকাশটাকে দেখো। তুমি একা নও, এই মহাবিশ্ব তোমার বন্ধুর মতোই।
(ব) স্বপ্ন, স্বপ্ন, স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখে যেতে হবে। স্বপ্ন না দেখলে কাজ করা যায় না।
(ভ) ফেল করে হতাশ হয়ো না। ইংরেজি শব্দ ফেল ‘Fail’ মানে ‘First Attempt in Learning’ অর্থাৎ ‘শেখার প্রথম ধাপ’। বিফলতাই তোমাকে সফল হবার রাস্তা দেখিয়ে দেবে।
(ম) কোনো একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছো না! চিন্তিত করো না- ‘NO’ শব্দের মানে হচ্ছে ‘Next Opportunity’ অর্থাৎ ‘পরবর্তী সুযোগ’।
(য) আমরা শুধু সাফল্যের উপরেই গড়ি না, ব্যর্থতার উপরেও গড়ি।
(র) একজন খারাপ ছাত্র একজন দক্ষ শিক্ষকের কাছ থেকে যা শিখতে পারে তার চেয়ে একজন ভালো ছাত্র একজন খারাপ শিক্ষকের কাছ থেকে অনেক বেশি শিখতে পারে।
(ল) তুমি যদি তোমার কাজকে স্যালুট করো, দেখো তোমাকে আর কাউকে স্যালুট করতে হবে না। কিন্তু তুমি যদি তোমার কাজকে অসম্মান করো, অমর্যাদা কর, ফাঁকি দাও, তাহলে তোমার সবাইকে স্যালুট করতে হবে।
(ব) প্রতিদিন সকালে এই পাঁচটা লাইন বলো:
১) আমি সেরা
২) আমি করতে পারি
৩) সৃষ্টিকর্তা সব সময় আমার সঙ্গে আছে
৪) আমি জয়ী
৫) আজ দিনটা আমার
(শ) তিনজনই পারেন একটি দেশ বা জাতিকে বদলাতে। তাঁরা হলেন, বাবা, মা ও শিক্ষক।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

মাষ্টার দা সূর্য সেনের এক অকুতোভয় নারী যোদ্ধা : কল্পনা দত্ত ।।।

ভূমিকা — জাতির মুক্তি ও জাতীয়তাবাদের আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ছিল অসামান্য। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই প্রতিটি সংগ্রামে তারা ছিলেন সম্মুখ সমরে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অকুতোভয় যোদ্ধা এবং চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের অন্যতম সদস্য কল্পনা দত্ত। কল্পনা দত্ত ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব।

বিংশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলার যেসব নারী ব্রিটিশ – বিরোধী বিপ্লবী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বিপ্লবী কল্পনা দত্ত। তার বিপ্লবী মনভাবের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে ‘অগ্নিকন্যা’ বলেছেন।
জন্ম–
কল্পনা দত্তের জন্ম ১৯১৩ সালের ২৭ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার শ্রীপুর খরণদ্বীপ ইউনিয়নের শান্ত-সবুজ পাহাড়ঘেরা শ্রীপুরে। তার পিতা বিনোদবিহারী দত্ত ও মাতা শোভন বালা দত্ত। কল্পনা দত্তের ঠাকুরদা ডাক্তার দুর্গাদাস দত্ত ছিলেন চট্টগ্রামের একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি। ইংরেজ প্রশাসনও তাকে যথেষ্ট সম্মান দিতেন। ফলে তাদের বাড়িটা সবসময় পু‍‌লিশের নজরের বাইরে ছিল। তবে শৈশব থেকেই কল্পনা ছিলেন অন্য সব মেয়েদের থেকে আলাদা। মানসিক দিক থেকেও ছিলেন ব্যতিক্রমী, অত্যন্ত ভাবপ্রবণ এবং স্পর্শকাতর। দুঃখী মানুষের দুঃখের কাহিনী তাকে ব্যথিত করতো। শৈশব তাই সকলকে নিয়ে এক সুখী সমাজের স্বপ্ন দেখতেন।
শিক্ষা জীবন—
কল্পনা দত্তের প্রাথমিক লেখাপড়া শেষে তাকে ডা. খাস্তগীর স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন তার বাবা। বীরকন্যা প্রীতিলতাও এই স্কুলের ছাত্রী ছিলেন। কল্পনা দত্ত প্রীতিলতার এক ক্লাসের ছোট ছিলেন। এই স্কুলে প্রতিটি শ্রেণিতে প্রীতিলতা ও কল্পনা দত্ত প্রথম কিংবা দ্বিতীয় ছিলেন। যে কারণে তাদের মধ্যে একটা যোগাযোগ ছিল
চট্টগ্রাম থেকে ১৯২৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর কল্পনা দত্ত কলকাতা আসেন এবং বেথুন কলেজ-এ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। বেথুন কলেজে পড়তে পড়তে তিনি নানা ধরনের বিপ্লবী কর্মকান্ডে জরিয়ে পরেন। শহীদ ক্ষুদিরাম এবং বিপ্লবী কানাই লাল দত্তের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি বেথুন কলেজ-এ গড়ে ওঠা ছাত্রী সংঘ-এ যোগদান করেন।
প্রীতিলতার সাথে পরিচয়—
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখলের নেতা বীর শহীদ সূর্য সেন, পূর্ণেন্দু দস্তিদারের নামের সঙ্গে যে দু’জন নারীর নাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে তাদের একজন হলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, আর অন্যজন কল্পনা দত্ত। তিনি ছিলেন মাস্টারদার প্রিয় পাত্রী, রবীন্দ্রনাথের ‘অগ্নিকন্যা’ এবং চট্টগ্রামে সকলের ‘ভুলুদা’ নামে পরিচিত। নারীরাও যে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারেন, সেই সময়ে তা কল্পনা করা যেত না। নারীদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় চট্টগ্রামের যুব বিদ্রোহ ব্রিটিশদের ভিতকেই কাঁপিয়ে দিয়েছিল। বেথুন কলেজে ভর্তি হওয়ার কয়েক দিন পর প্রীতিলতার সাথে পরিচয় ঘটে। প্রীতিলতা আন্তরিকতা সাংগঠনিক দক্ষতা, ব্যবহারে মেয়েদের খুব আপন করে নিতে পারতেন। তখন প্রীতিলতা ওই একই কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে বি.এ. পড়ছেন। থাকেন ছাত্রীনিবাসে। এখানে মাষ্টারদার নির্দেশে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। গড়ে তুলেন এক বিপ্লবীচক্র। এই বিপ্লবীচক্রে অনেক মেয়ে সদস্য যোগ দেন। এই বিপ্লবীচক্রে কল্পনাও যুক্ত হলেন। এই চক্রের মূল কাজই ছিল বিপ্লবীকর্মী তৈরির পাশাপাশি অর্থ সংগ্রহ করা। অর্থ সংগ্রহ করে প্রীতিলতা চট্টগ্রামে পাঠাতেন।
চট্টগ্রামে সূর্য সেনের সাথে পরিচয়—
১৯৩০ সালে কল্পনা দত্ত আবার চট্টগ্রামে ফিরে যান। এই সময় পুর্নেন্দু দস্তিদারের মাধ্যমে তিনি মাস্টার দা সূর্য সেনের সাথে পরিচিত হন এবং মাস্টার দা প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি, চট্টগ্রাম শাখা-য় যোগদান করেন। তখন চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের নেতৃবৃন্দ গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিং, লোকনাথ বল প্রমুখ বিচারাধীন বন্দী। সেই সময় মহিলাদের বিপ্লবী দলে প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। কিন্তু মাস্টার দা এই সমস্ত নিয়ম নীতি শিথিল করে কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার-কে তার দলে গ্রহণ করেন।
বিপ্লবী জীবন—-
কলকাতা থেকে ফেরার সময় তিনি গোপনে কিছু বিষ্ফোরক নিয়ে আসেন, এছাড়াও গোপনে গান কটনও তৈরী করেছিলেন। এই সময় বিপ্লবী নেতৃবৃন্দের বিচার ও সাজা রুখতে তিনি বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি কোর্ট এবং জেলে ডিনামাইট দ্বারা বিষ্ফোরনের পরিকল্পনা করেছিলেন, যাতে বিপ্লবী নেতৃবৃন্দ পালাতে সক্ষম হন।
কিন্তু তার পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়। ফলে তার বিপ্লবী কর্মকান্ডের উপর কিছু প্রতিবন্ধকতা আসে। যাই হোক এই সময় তিনি প্রায়ই মাস্টার দার সাথে তার গ্রামে ঘুরে গ্রামের মানুষের সুখ দুঃখের খবর নিতেন। এরই সাথে সাথে তিনি ও তার সহযোদ্ধা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রত্যহ গুলি চালনার প্রশিক্ষন নিতেন।
ইউরোপীয় ক্লাবে আক্রমণ—
১৯৩১ সালে সূর্য সেন, কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে চট্টগ্রামের ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের দায়িত্ব দেন। নির্দিষ্ট দিনের এক সপ্তাহ আগে পুরূষের ছদ্মবেশে একটি সমীক্ষা করতে গিয়ে তিনি ধরা পরেন ও গ্রেফতার হন। জেলে বসে তিনি অপারেশন পাহারতলী এবং বীরাঙ্গনা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মহত্যার খবর শোনেন।
গ্রেফতার ও নির্বাসন—-
জামিনে মুক্তি পেয়ে মাস্টার দার নির্দেশে তিনি কিছু দিন আত্মগোপন করে থাকেন। ১৯৩৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশ তাদের গোপন ডেরা ঘিরে ফেলে। কল্পনা এবং মনিন্দ্র দত্ত পালাতে সক্ষম হলেও মাস্টার দা বন্দী হন। কিছুদিন পর কল্পনা এবং তার কিছু সহযোদ্ধা পুলিশের হাতে ধরা পরেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন মামলায় মাস্টার দা ও তারকেশ্বর দস্তিদারকে মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত করা হয়। কল্পনা দত্ত যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দণ্ডিত হন।
পরবর্তী জীবন—
১৯৩৯ সালে মুক্তি লাভের পর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কে সাম্মানিকসহ স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। তারপর তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যান। ১৯৪৩ সালে C.P.I নেতা পূরণচাঁদ যোশীর সাথে তার বিবাহ হয়। এর পর তিনি চট্টগ্রামে ফিরে যান এবং দলের মহিলা ও কৃষক সংগঠনকে চাঙ্গা করেন। ১৯৪৬ সালে C.P.I প্রার্থী হয়ে তিনি চট্টগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। কিন্তু জয়ী হতে পারেন নি। স্বাধীনতার পর তিনি ভারতে চলে আসেন। ১৯৫০ সালে ইণ্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে চাকরি নেন। পরে দিল্লী থাকতেন। সেখানে নারী আন্দোলনে মুখ্যভূমিকা নেন। ভারত ও তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার মৈত্রী সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার যথেষ্ট অবদান ছিল। ‘অল ইণ্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ রাশিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
নারী আন্দোলনে ভূমিকা—
দেশভাগের পরও অনেকদিন তিনি চট্টগ্রামেই থেকে যান। ১৯৫০ সালে ইন্ডিয়ান স্ট্যাস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে চাকুরি নেন এবং পরবর্তী সময়ে দিল্লিতে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি নানাবিধ কাজের সাথে যুক্ত হন। ভারতের নারী আন্দোলনে তিনি ভূমিকা রাখেন। কল্পনা দত্ত নারী সমিতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ভারতের মৈত্রী সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার যথেষ্ট অবদান ছিল।
তিনি অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব ন্যাশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ-এর সাধারণ সম্পাদিকাও ছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় কল্পনা দত্ত নানাভাবে সহযোগিতা করেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ ও খাবার সংগ্রহ করণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে অন্যান্য বিপ্লবী কমরেডদের সাথে কল্পনা দত্ত চট্টগ্রাম আসেন। সেখানে মিউনিসিপ্যাল স্কুল প্রাঙ্গণে বিপ্লবী দলকে সম্বর্ধনা দেয়া হয়। কল্পনা দত্তের লেখা বইয়ের নাম- ‘চট্টগ্রাম অভ্যুত্থান’।
মৃত্যু—
সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে কল্পনা দত্ত একটি চিরস্মরণীয় নাম। স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অসীম সাহস ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে চির জাগরুক হয়ে থাকবেন এক অকুতোভয় নারী যোদ্ধা- কল্পনা দত্ত।১৯৯১ সালে চট্টগ্রামে যুব আন্দোলনের ইতিহাস লিখতে শুরু করেছিলেন, শেষ করতে পারেননি। তার জীবনের স্মৃতিকথার তিন হাজার পৃষ্ঠার পাণ্ডুলিপি হারিয়ে ফেলেছিলেন সামান্য এক ভুলের কারণে। সেই মনোবেদনা নিয়ে ১৯৯৫ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি ৮২ বছর বয়সে নয়া দিল্লী তে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

কানাইলাল ভট্টাচার্য : ভারতের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের বিপ্লবী।।।।

স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী নামে খ্যাত শহীদ কানাইলাল ভট্টাচার্য। মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯৩১ সালে বিচারক গার্লিককে হত্যার অভিযোগে ব্রিটিশ শাসকদের গুলিতে শহিদ হন এই বিপ্লবী। তবে ইতিহাস বলে, মৃত্যু বরণের পর এই বিপ্লবীর পকেটে এক খন্ড কাগজ পাওয়া যায়।

যাতে লেখ ছিল ‘ধ্বংস হও, দীনেশ গুপ্তকে ফাঁসি দেওয়ার পুরস্কার লও’।
বর্তমান যুগে দেশের জন্য প্রাণত্যাগ করা এই শহীদরা প্রায় বিস্মৃতপ্রায়। কিন্তু বিস্মৃতির পলিতে ঢাকা পড়েছেন কানাইলাল | তিনিও অগ্নিযুগের এক বলিপ্রদত্ত বিপ্লবী | দেশের স্বার্থে, বিপ্লবের জন্য নাম-যশ-খ্যাতি কোনও কিছুর পরোয়া করতেন না কানাইলাল ভট্টাচার্যর মতো অগ্নিস্ফুলিঙ্গরা | তাঁর স্মৃতিতে আলিপুরের বেকার রোডের নামকরণ করা হয়েছে বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য রোড | জন্মস্থান মজিলপুরের একটি রাস্তাও তাঁর নামে নামাঙ্কিত | পৈতৃক বাড়ির সামনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্রোঞ্জ মূর্তি | অবশ্য, দেশমাতৃকার মুক্তি ছাড়া এসব নিয়ে ভাববার সময় ছিল না কানাইলালদের।
কানাইলাল ভট্টাচার্য (২৭ জুলাই ১৯০৯ – ২৭ জুলাই ১৯৩১) ছিলেন ভারতের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী।
প্রাথমিক জীবন—
কানাইলাল ভট্টাচার্যের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার মজিলপুরে। তার পিতার নাম নগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।মাতার নাম কাত্যায়নী দেবীI চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সেজো। দুই দাদা কলকাতায় সামান্য চাকরী করতেন। কানাইলাল সেখানে ইলেকট্রিকের কাজ শিখতেন এবং দাদার একটি মুদির দোকানেও বসতেন। দোকানে বসেই তিনি কয়েকটি স্বদেশী বই পড়েন। বালেশ্বরের যুদ্ধ, চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুন্ঠন প্রভৃতি ঘটনা তাঁকে আলোড়িত করে। ১৯৩১ সালের প্রথম দিকে জয়নগর মজিলপুর ব্যায়াম সমিতির প্রথম বাৎসরিক প্রতিষ্ঠা দিবসের উৎসবে সভাপতির পদ অলংকৃত করেন সুভাষ চন্দ্র বসু। তাঁকে স্বেচ্ছাসেবকরা বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এর মাধ্যমে অভিবাদন জানায়। ওই কুচকাওয়াজে প্ল্যাটুন কমান্ডার হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন কানাইলাল। ওই দিনই তিনি মন্মথ ঘোষ ও সুনীল চট্টোপাধ্যায় এর হাত ধরে স্বাধীনতা বিপ্লব আন্দোলনে যোগ দেন এবং পরের দিনই দীক্ষিত হন। তিনি বিপ্লবী সাতকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় এর মতো সুপরিচিত বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন। তিনি মজিলপুর জে এম ট্রেনিং স্কুলে পড়াশুনা করেন।
তিনি জয়নগর-মজিলপুর, বহড়ু, বিষ্ণুপুর ব্যায়াম সমিতির সভ্য ছিলেন। ছাত্রাবস্থায় আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, বাঘাযতীনের বুড়িবালামের যুদ্ধ, মাস্টারদার জালালাবাদ পাহাড়ে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি যুবক বয়সেই স্বাধীনতা বিপ্লব আন্দোলনে যোগ দেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স দলের সদস্য ছিলেন তিনি। বহড়ুর বিপ্লবী সুনীল চট্টোপাধ্যায়, বোড়ালের সাতকাড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সুপরিচিত বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন এবং একজন বিপ্লবী আন্দোলনের যোদ্ধায় পরিণত হন।
গার্লিক হত্যা—-
ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, ১৯৩১ সালের ২৭ জুলাই কানাইলাল ভট্টাচার্য ‘বিমল দাশগুপ্ত’ ছদ্মনামে বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত ও বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসির দণ্ডাদেশকারী বিচারক আর আর গার্লিককে হত্যা করেন এবং পটাশিয়াম সায়ানাইডের ক্যাপসুল খেয়ে নেন। সেই অবস্থায় উপস্থিত প্রহরী সার্জেন্টের গুলি তাঁর শরীর ঝাঁঝরা করে দেয়। সে সময় তাঁর পকেটে একখণ্ড কাগজ পাওয়া যায়। তাতে লেখা ছিল, “ধ্বংস হও; দীনেশ গুপ্তকে ফাঁসি দেওয়ার পুরস্কার লও”। তার পকেটে একখণ্ড কাগজ পাওয়া যায়। তাতে লেখা ছিলো “ধ্বংস হও; দীনেশ গুপ্তকে ফাঁসি দেওয়ার পুরস্কার লও” ইতি —– বিমল গুপ্ত। মাত্র ২২ বছর বয়সে নামহীন, পরিচয়হীন শহিদ হয়ে থেকে, অপর এক বিপ্লবীকে বাঁচিয়ে যাওয়ার এই চেষ্টা ইতিহাসে বিরল। মেদিনীপুরের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট পেডির হত্যার ব্যাপারে পুলিস বিমল দাশগুপ্তকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। তিনি ছদ্মনাম নিয়ে নিজ জীবনের বিনিময়ে বিমল দাশগুপ্তকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। পুলিস দীর্ঘদিন তার প্রকৃত পরিচয় উদ্ধার করতে পারেনি। এমনকি শনাক্তকরণের সময় কানাইলালের মহীয়সী মাতা কাত্যায়নী দেবীও তার দেহকে অস্বীকার করে বলেন “এ তার কানু নয়”। উল্লেখ্য এই ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ ২৬শে জুলাই ভোরে কসবা উত্তরপাড়ার বিল ধরে ডিঙ্গি চড়ে তপসিয়ায় ধাপার মাঠে এসে এক জঙ্গলে সুনীল চট্টোপাধ্যায়, জিতেন ঘোষ, প্রভাত ঘোষের উপস্থিতিতে টার্গেট প্র্যাকটিস করেন কানাইলাল। তার কিছুদিন আগেই তিনি টাইফয়েড থেকে উঠেছেন | নামহীন, পরিচয়হীন শহীদ হয়ে থেকে, অপর এক বিপ্লবীকে বাঁচিয়ে যাওয়ার এই চেষ্ঠা ইতিহাসে বিরল। কানাইলাল ভট্টাচার্য বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স দলের সদস্য ছিলেন।তিনি বিপ্লবী নেতা সাতকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মী। সাতকড়িবাবুই তাকে একাজে পাঠান।
সম্মাননা—-
এই দেশপ্রেমিকের স্মৃতিতে “আলীপুর বেকার রোড”-এর নাম পরিবর্তন করে “বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য সড়ক” নামকরণ করা হয়েছে। মজিলপুরের একটি রাস্তাও তার নামে নামকরণ করা হয়েছে। মজিলপুরের দত্ত বাজারে তার পূর্বপুরুষের বাড়ির কাছে তার একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি রয়েছে।
ছোটবেলা থেকেই দেশের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ ভালোবাসা। আর সেই ভালোবাসাই কাল হয়েছিল ব্রিটিশ শাসকদের জন্য। বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য আজও বাঙালিদের কাছে দেশপ্রেমের জ্বলন্ত উদাহরণ।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে মালতী চৌধুরী , ভারতীয় বিশিষ্ট সর্বোদয় নেত্রী ও সমাজকর্মী।।।।।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে মালতী চৌধুরী প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু শহীদ ভগৎ সিং-এর মতই নয় বরং শক্তিশালী নারীদের দ্বারা প্রশস্ত হয়েছিল যারা তাদের মাটিতে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিল।

মালতী চৌধুরী ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা ছিলেন তিনি। মালতী চৌধুরী ছিলেন মহাত্মা গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। বিশিষ্ট সর্বোদয় নেত্রী ও সমাজসেবী।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন————

মালতী চৌধুরী ১৯০৪ সালের ২৬ জুলাই ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায় একটি সচ্ছল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা কুমুদনাথ সেন ব্যারিস্টার ছিলেন। মাতা স্নেহলতা সেন। তাদের পৈতৃক নিবাস ছিল বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা বিক্রমপুরের কামারখাড়া। কিন্তু তাদের পরিবারের সবাই চলে যায় বিহারের শিমুলতলায়। মাত্র আড়াই বছর বয়সে তার বাবা মারা যান এবং তার মা তাকে বড় করেন। মালতী চৌধুরী ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ১৬ বছর বয়সে শান্তিনিকেতনে আসেন। সেখানে অধ্যয়নকালে তিনি সরাসরি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংস্পর্শে আসেন। তিনি শান্তিনিকেতনে ১৯২৭ সালে ওড়িশার এক সময়ের মুখ্যমন্ত্রী নবকৃষ্ণ চৌধুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

অহিংস আন্দোলন——

মহাত্মা গান্ধী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, তিনি ১৯৩০ সালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন এবং তাকে গ্রেফতার করে ভাগলপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে হাজারীবাগ কারাগারে ছিলেন। ৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি জেলে যান।

সামাজিক কাজ—–-

তিনি সর্বোদয় নেত্রী নামে পরিচিত ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি দরিদ্র, দলিত, আদিবাসী হরিজন শিশুদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি উৎকল কংগ্রেস শ্রমজীবী কর্মী সংঘ গঠন করেন। গ্রামের কৃষকদের উন্নতির জন্য সংস্কার ও জনকল্যাণমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করেন, সংগঠন গড়ে তোলেন। ওড়িশা রাজ্যে গান্ধীজির পদযাত্রায় সঙ্গী হন। ১৯৪৭ সালে, তিনি কিছু সময়ের জন্য ওড়িশা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হন। ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা জারি হলে তার বিরুদ্ধে পথে নামেন এবং ৭১ বছর বয়সে তাকে ছয় মাস কারাবরণ করতে হয়। তিনি আচার্য বিনোবা ভাবের ভূদান আন্দোলনেও সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন।

সম্মান——

(ক) উৎকল রত্ন সম্মান (উড়িষ্যা সরকার)।
(খ) জাতীয় পুরস্কার, ঠাকুর সাহিত্য পুরস্কার, দেশিকোত্তম, (শিশু কল্যাণমূলক কাজের জন্য)।
(গ) ১৯৮৮ সমাজসেবামূলক কাজের জন্যে তিনি সালে যমুনালাল বাজাজ পুরস্কারে সম্মানিত হলেও তা নিতে অস্বীকার করেছিলেন।

মৃত্যু——

১৫ মার্চ ১৯৯৮ সালে ৯৩ বছর বয়েসে তিনি প্রয়াত হন ।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

তিনি ‘থালাইভা’ রজনীকান্ত – যিনি ভারতীয় সিনেমায় “অভিনয় দেবতা” হিসেবে আজও জনপ্রিয়।।।।।

তিনি ‘থালাইভা’ রজনীকান্ত। রঙিন দুনিয়ার এই মানুষটির জনপ্রিয়তা আকাশ ছোঁয়া। শিবাজি রাও গায়কওয়াড়, যিনি তার মঞ্চ নাম রজনীকান্ত নামে পরিচিত, একজন অভিনেতা এবং তামিল চলচ্চিত্র শিল্পের একজন মেগাস্টার। তিনি একজন অভিনেতা, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার। তিনি এশিয়ার সর্বোচ্চ উপার্জনকারী অভিনেতাদের একজন।

তামিল সিনেমা ছাড়াও, তিনি হিন্দি, তেলেগু, কন্নড় এবং ইংরেজি সিনেমাতেও কাজ করেছেন। ব্যাঙ্গালোর ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসে বাস কন্ডাক্টর হিসেবে কাজ করার সময় তিনি নাটকে অভিনয় শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে, তিনি অভিনয়ে ডিপ্লোমা করার জন্য মাদ্রাজ ফিল্ম ইনস্টিটিউটে যোগ দেন। এখানেই তিনি কে. বালাচন্দরের নজরে পড়েন, যিনি তাঁকে ১৯৭৫ সালের চলচ্চিত্র অপূর্ব রাগাঙ্গালে তার প্রথম বিরতি দেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার হিসেবেও কাজ করেছেন। তাঁর চলচ্চিত্র কর্মজীবন ছাড়াও, তিনি একজন জনহিতৈষী, আধ্যাত্মবাদী এবং দ্রাবিড় রাজনীতিতে একটি প্রভাব হিসাবে কাজ করেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ভারত সরকার তাকে ২০০০ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০১৬ সালে পদ্মবিভূষণে ভূষিত করেছে। রজনীকান্তের ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং আবেদন মূলত তাঁর আচরণ এবং সংলাপের স্টাইলাইজড ডেলিভারি থেকে টানা হয়েছে।
রজনীকান্ত ১৯৫০ সালে ১২ ডিসেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন,তিনি জন্মগ্রহণ করেন ভারতের মিসোর রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে একটি মারাঠি পরিবারে, যা বর্তমানে কার্নাটকের একটি অংশ। তাঁর নাম রাখা হয় ছত্রপতি শিবাজীর নাম অনুসারে শিবাজী রাও গায়েকোয়াড ,একজন যোদ্ধা, এবং যিনি মারাঠি এবং কন্নড় ভাষার মানুষদের আনেন।
ছয় বছর বয়সে, রজনীকান্ত “গাভিপুরাম সরকারি কন্নড় মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে” ভর্তি হন এবং সেখানে তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। শিশু হিসেবে, তিনি ক্রিকেট, ফুটবল এবং বাস্কেটবল খেলতে অনেক আগ্রহী চিলেন এবং অনেক দুষ্ট ছিলেন। এই সময় তার ভাই তাকে রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃক স্থাপিত রামকৃষ্ণ মঠে নিয়ে যান। মঠে তিনি বেদ শিখতেন, ঐতিহ্যবাহী এবং ঐতিহাসিক গ্রন্থ, যা মনে প্রভাব ফেলে। আধ্মাতিক শিক্ষার সাথে, তিনি মঠে নাটকে অভিনয়ও করা শুরু করেন। মঠে অভিনয়ের পর থেকে অভিনয়ের প্রতি তার অদম্য স্পৃহা জাগে এবং তিনি হিন্দু মহাকাব্য মহাভারত-এ “একলব‌্য” এর বন্ধুর চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। তাঁর পরিবেশনা দর্শকের কাছ থেকে এবং কন্নড় কবি ডি.আর.বেন্দ্রের কাছ থেকে আলাদাভাবে প্রশংসা অর্জন করেন।
ভারতীয় শহর বেঙ্গালুরুতে বেড়ে উঠেন, রজনীকান্ত অসচ্ছল জীবনের সাথে লড়াই করে কাটিয়েছেন তাঁর শৈশব। রজনীকান্ত লাতা রাঙ্গাচড়িকে বিয়ে করেন। লতা এথিরাজ মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন, যিনি তাঁদের কলেজ ম্যাগাজিনের জন্য রজনীকান্তের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্যে গিয়েছিলেন। তাদের বিয়ে হয় ১৯৮১ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি, অন্ধ্র প্রদেশের ত্রিপাটিতে। তাঁদের দুই মেয়ে “ঐশ্বর্য্য রজনীকান্ত” এবং “সৌন্দর্য্য রজনীকান্ত”। তার স্ত্রী, লতা রজনীকান্ত, বর্তমানে একটি “আশ্রম” নামে একটি বিদ্যতালয় পরিচালনা করেন।
বেঙ্গালুরু মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের বাসের সহকারী হিসেবে কাজ করা অবস্থায় তিনি নাটকে অভিনয় করতেন। তিনি ১৯৭৩ সালে মাদ্রাজ আসেন “মাদ্রাজ ফিল্ম ইনিস্টিটিউট” থেকে অভিনয়ের উপর ডিপ্লোমা পড়ার জন্য। তামিল চলচ্চিত্রে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে করতে রজনীকান্ত একসময় অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর থেকে, ভারতীয় জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে তিনি ” অভিনয় দেবতা” হিসেবে জনপ্রিয় হন।রজনীকান্ত ১৯৮৩ সালে হিন্দি সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন, একটি চরিত্রেআন্ধা কানুন , একটি চলচ্চিত্র যা তাঁকে বলিউড মেগাস্টারের সাথে জুটিবদ্ধ করেছিলঅমিতাভ বচ্চন । তিনি মুকুল আনন্দের হাম (১৯৯১) সহ আরও দুটি হিন্দি ছবিতে বচ্চনের সাথে অভিনয় করেছিলেন । রজনীকান্ত ভারতের অনেক বড় ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন , যার মধ্যে রয়েছে মুন্ড্রু মুগাম (১৯৮২), থালাপাথি (১৯৯১), বাশা (১৯৯৫), পদয়াপ্পা (১৯৯৯), এবং সায়েন্স-ফিকশন থ্রিলার।Enthiran (২০১০) এবং এর সিক্যুয়াল,2.0 (২০১৮); পরবর্তী দুটি সিনেমায় তিনি রোবট চিট্টি বাবু এবং এর নির্মাতা ডক্টর ভাসিগারন উভয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন।ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্রসহ অন্যান্য দেশের সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন। তবে সম্প্রতি রজনীকান্তের দীর্ঘ কেরিয়ার জীবনে অন্যতম সফল ছবি হিসেবে থেকে গেল জেলার বক্সফিসে যা ইতিহাস সৃস্টি করেছে।
রজনীকান্ত তার অভিনীত অনেক সিনেমার জন্য অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন, বিশেষভাবে তামিল সিনেমার জন্যে। তিনি প্রথম “ফিল্মফেয়ার সেরা তামিল অভিনেতা পুরস্কার” অর্জন করেন ১৯৮৪ সালে “নাল্লাভানুকু নাল্লাভান” সিনেমার জন্যে।তিনি ২০১৯ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৩ সালে, তিনি ছয়টি “তামিলনাড়ু স্টেট চলচ্চিত্র পুরস্কার” অর্জন করেন। যার মধ্যে চারটি সেরা অভিনেতা এবং বাকি দুইটি সেরা অভিনেতা হিসেবে বিশেষ পুরস্কার এবং ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতা পুরস্কার – তামিল। তিনি ভারতের তৃতীয় বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ অর্জন করেন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

আজাদ আজাদ হিন্দ ফৌজের রানী ঝাঁসি রেজিমেন্টের সৈনিক ও প্রথম গুপ্তচর : নীরা আর্য।।।।।।

ভূমিকা:- তিনি ছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রথম মহিলা গুপ্তচর, আজাদ হিন্দ ফৌজের ঝাঁসি রেজিমেন্টের নেতৃত্বে ছিলেন লক্ষী সেহেগল। দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভুত মহিলা স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে ১৯৪৩ সালে গড়ে উঠেছিল এই রেজিমেন্ট। ট্রেনিং ক্যাম্প ছিল ব্যাংকক, রেঙ্গুন ও সিঙ্গাপুর।

নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন বাঁচাতে নিজের স্বামীকে হত্যা —
নীরা আর্য আজাদ হিন্দ ফৌজের রানি ঝাঁসি রেজিমেন্টের সৈনিক ছিলেন। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন বাঁচাতে তিনি নিজের স্বামীকে হত্যা করেন। নেতাজী তাঁকে নীরা নাগিনী বলে অভিহিত করলে তিনি নীরা নাগিনী নামে পরিচিতি লাভ করেন। বৃটিশ সরকার তাঁকে একজন গুপ্তচর হিসাবে গণ্য করেছিল। তার ভাই বসন্ত কুমারও আজাদ হিন্দ ফৌজে ছিলেন।
প্রখর বুদ্ধিমত্তা, সাহসী ও আত্মসম্মান বোধ–
অনেক লোকশিল্পী নীরা নাগিন ও তার ভাই বসন্ত কুমারের জীবন নিয়ে কবিতা ও ভজন রচনা করেছেন। নীরা নাগিনী নামে তার জীবনের একটি মহাকাব্যও রয়েছে। তার জীবন নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তিনি ছিলেন এক দুর্দান্ত দেশপ্রেমিক, সাহসী ও আত্মসম্মান বোধে গর্বিত মহিলা। তার শেষ জীবন কাটে হায়দ্রাবাদে। সেখানকার মহিলারা তাকে গর্বের সাথে ‘পদ্মমা’ বলে সম্বোধন করতেন।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন—-
নীরা আর্য ১৯০২ সালের ৫ মার্চ ভারতের তৎকালীন যুক্তপ্রদেশের অধুনা উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বাগপত জেলার খেকড়া শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা শেঠ ছজুমল ছিলেন সে সময়ের এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তার ব্যবসা-বাণিজ্য সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। তার পিতার ব্যবসায়ের মূল কেন্দ্র ছিল কলকাতা। তাই কলকাতাতে তার পড়াশোনা শুরু হয়েছিল। নীরা আর্য হিন্দি, ইংরেজি, বাংলার পাশাপাশি আরও অনেক ভাষায় দক্ষ ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ ভারতের সিআইডি ইন্সপেক্টর শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাসকে বিবাহ করেন। শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাস ছিলেন ইংরেজপ্রভু ভক্ত অফিসার। মূলতঃ শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাসকে গুপ্তচরবৃত্তি করে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে হত্যা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ—–
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন বাঁচাতে তিনি ইংরেজ সেনাবাহিনীর পদস্থ অফিসার শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাসকে হত্যা করেছিলেন। একসময় সুযোগ পেয়ে শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাস নেতাজিকে হত্যার জন্য গুলি চালিয়েছিলেন, কিন্তু সেই গুলি নেতাজির গাড়ীর চালককে বিদ্ধ করে । কিন্তু এরই মধ্যে নীরা আর্য শ্রীকান্ত জয়রঞ্জনের পেটে বেয়নেট চালিয়ে হত্যা করে। শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাস নীরা আর্যের স্বামী ছিলেন, তাই স্বামী হত্যার কারণে নেতাজি তাঁকে নাগিনী বলে অভিহিত করেছিলেন। আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণের পরে, সমস্ত বন্দী সৈন্যকে দিল্লির লাল কেল্লায় বিচারে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু নীরাকে স্বামী হত্যার কারণে দ্বীপান্তরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। জেলে বন্দীদশায় সেখানে তাঁকে কঠোর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল।
আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রথম গুপ্তচর—–
নীরা আর্য আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রথম গুপ্তচর হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। পবিত্র মোহন রায় আজাদ ভারতীয় সেনাবাহিনীর মহিলা এবং পুরুষ উভয় গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ছিলেন। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু নিজেই নীরাকে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তার সঙ্গী মনবতী আর্য, সরস্বতী রাজামণি এবং দুর্গা মল্লা গোর্খা এবং যুবক ড্যানিয়েল কালে তার সামরিক গোয়েন্দা শাখার সাথে যুক্ত ছিল। তারা নেতাজির জন্য গুপ্তচরবৃত্তির কাজ করত। তারা বিভিন্ন কাজের অছিলায় ব্রিটিশ অফিসারদের বাড়ি ও সেনাশিবিরে প্রবেশ করতেন তথ্য সংগ্রহের জন্য, তারপর তা নেতাজীর কাছে পাঠাতেন। এই কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়লে প্রথমে নথিগুলি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া ও পরে পিস্তল চালিয়ে আত্মহত্যা করতে হবে, এই নিয়ম তারা কঠোর ভাবে মেনে চলতেন।
রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে নীরাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড–
দক্ষিণ এশিয়ার অক্ষশক্তির পরাজয়ের পর ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছিল আজাদ হিন্দ ফৌজ। ধরা পড়েছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের হাজার হাজার সেনানী। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে লালকেল্লায় তাদের বিচার শুরু হয়, বেশির ভাগ সেনানী ছাড়া পেলেও নীরাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়, জাহাজে করে পাঠানো হয় আন্দামানের সেলুলার জেলে। সেখানে তার ওপর যে অমানুষিক অত্যাচার হয়েছিল তা সত্যিই ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
আন্দামানে নীরাকে রাখা হয়েছিল একটি ছোট কুঠরিতে, সেখানে বাকি বন্দিরা ছিল মুক্ত, কিন্তু নীরাকে বন্য জন্তুর মত প্রথমদিন বেঁধে রাখা হয়েছিল। গলায় বাঁধা ছিল চেন ও হাতে-পায়ে ছিল শেকল লাগানো বেড়ি। নীরাকে কিছু খেতে দেওয়া হয়নি প্রথম দিন। শোয়ার জন্য মাদুর কিংবা কম্বল কিছুই দেওয়া হয়নি প্রথমে। কুঠরির কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে ছিলেন পরিশ্রান্ত নীরা। মাঝরাতে এক প্রহরী কুঠরিতে ঢুকে গায়ের ওপর ছুঁড়ে দিয়েছিল দুটো কম্বল। সকাল বেলায় প্রথম জুটেছিল খাবার, খেতে দেওয়া হয়েছিল ফুটন্ত খিচুড়ি।
এরপরেও আরও অনেক পাশবিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে নীরাকে। সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। তবুও মনে মনে স্বপ্ন দেখতেন স্বাধীন ভারতে সূর্যোদয় দেখবেন। এই মহান ত্যাগের সম্মান দেয়নি দেশ। নীরা আন্দামানে আসার একবছর পর স্বাধীন হয়েছিল দেশ। মুক্তি পেয়েছিলেন নীরা। এই আত্মত্যাগের সম্মান দেয়নি দেশ। অভিমানে সাধারণের ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন অসাধারণ নীরা।
স্বাধীনতা পরবর্তী জীবন–
স্বাধীনতার পরে, তিনি ফুল বিক্রি করে জীবনযাপন করেছিলেন, তবে কোনও সরকারী সহায়তা বা পেনশন গ্রহণ করেননি। তার ভাই বসন্ত কুমারও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি স্বাধীনতার পর সন্ন্যাসী হয়েছিলেন। নীরা স্বাধীনতা সংগ্রামে তার ভূমিকা নিয়ে আত্মজীবনীও লিখেছেন। উর্দু লেখক ফারহানা তাজ’কে তিনি তার জীবনের অনেক ঘটনা শুনিয়েছিলেন। তিনি তার জীবন নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিতে একটি উপন্যাসও রচনা করেন।
সম্মাননা—
নীরা আর্য নামে একটি জাতীয় পুরষ্কারও চালু করা হয়েছে। ছত্তিশগড়ের অভিনেতা অখিলেশ পান্ডে প্রথম নীরা আর্য পুরষ্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবং তাঁকে নীরা আর্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
জীবনাবসান—
শেষ জীবনে তিনি তিনি দরিদ্র, অসহায়, নিঃস্ব হয়ে পরেছিলেন। হায়দরাবাদের ফালকনুমার একটি কুঁড়ে ঘরে বাস করতেন। নীরা আর্য জীবনের শেষ দিনগুলিতে ফুল বিক্রি করে কাটিয়েছেন এবং সরকারি জমিতে থাকার কারণে তার কুঁড়েঘরটিও শেষ মুহুর্তে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। সকলের অলক্ষ্যে ১৯৯৮ সালের ২৬শে জুলাই উসমানিয়া হাসপাতালে প্রয়াত হয়েছিলেন ৯৬ বছরের বীরাঙ্গনা এক অগ্নিকন্যা নীরা আর্য্য।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ভারতীয় বাঙালি মহিলা কবি বিজয়া মুখোপাধ্যায় – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।।।

বিজয়া মুখোপাধ্যায় ছিলেন সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপিকা এবং একজন প্রতিভাশালিনী কবি। প্রবন্ধকার ও অনুবাদক হিসাবেও পরিচিতি ছিল তার। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রবর্তিত “কৃত্তিবাস” কবিতা পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সংক্ষিপ্ত জীবনী——

বিজয়া মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ১১ই মার্চ বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের তৎকালীন ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে।

পড়াশোনা কলকাতায়। কলেজে পড়ার সময় থেকেই তিনি কবিতা রচনা শুরু করেন। তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় দেশ (পত্রিকা) পত্রিকায় ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে। সংস্কৃত ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং অসামান্য দখল ছিল তার। কবি বুদ্ধদেব বসু ‘মহাভারতের কথা’ লেখার সময়ে বিজয়ার কাছে সংস্কৃত শিখেছিলেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ সামনে অপর্ণা। তিনি ও তার স্বামী কবি শরৎকুমার মুখোপাধ্যায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রবর্তিত “কৃত্তিবাস” কবিতা পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার বহু কবিতা এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তার ছন্দময় কবিতা বিগত পুরানো দিনের স্মৃতি যেমন জাগ্রত করে, তেমনি সহজ, সরল, শান্ত ভঙ্গিমায় সামাজিক চেতনার বিকাশে প্রতিবাদ ব্যক্ত হয়েছে। তার “পুটিকে সাজে না” কবিতা নারীত্বের প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বেশ তাৎপর্যময়।

রচিত কাব্যগ্রন্থ——–

আমার প্রভুর জন্য (১৯৬৭), যদি শর্তহীন (১৯৭১), ভেঙে যায় অনন্ত বাদাম (১৯৭৭), উড়ন্ত নামাবলি (১৯৭৯), দাঁড়াও তর্জনী (১৯৮৮), ঝড়ের সঙ্গে যখন দেখা, অশ্লেষা তিথির কন্যা (১৯৯৩), ভাষায় যেটুকু বলা যায় (২০০৫), মাস্তুলের পাখি, আজন্ম হস্টেলে আছি (২০১৩), শ্রেষ্ঠ কবিতা।

পুরস্কার——

২০০৯ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি কর্তৃক প্রদত্ত রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন (পবিত্র মুখোপাধ্যায়, বিজয়া মুখোপাধ্যায়, অমিয়কুমার বাগচী, শ্যামল চক্রবর্তী, শঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথভাবে)।

সম্পাদিত পত্রিকা——

তিনি দীর্ঘদিন ‘বিভাষা’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন।

মৃত্যু——

কবি বিজয়া মুখোপাধ্যায় ২০২০ সালের ২৬ জুলাই ৮৩ বৎসর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This