Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে মালতী চৌধুরী , ভারতীয় বিশিষ্ট সর্বোদয় নেত্রী ও সমাজকর্মী।।।।।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে মালতী চৌধুরী প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু শহীদ ভগৎ সিং-এর মতই নয় বরং শক্তিশালী নারীদের দ্বারা প্রশস্ত হয়েছিল যারা তাদের মাটিতে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিল।

মালতী চৌধুরী ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা ছিলেন তিনি। মালতী চৌধুরী ছিলেন মহাত্মা গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। বিশিষ্ট সর্বোদয় নেত্রী ও সমাজসেবী।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন————

মালতী চৌধুরী ১৯০৪ সালের ২৬ জুলাই ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায় একটি সচ্ছল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা কুমুদনাথ সেন ব্যারিস্টার ছিলেন। মাতা স্নেহলতা সেন। তাদের পৈতৃক নিবাস ছিল বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা বিক্রমপুরের কামারখাড়া। কিন্তু তাদের পরিবারের সবাই চলে যায় বিহারের শিমুলতলায়। মাত্র আড়াই বছর বয়সে তার বাবা মারা যান এবং তার মা তাকে বড় করেন। মালতী চৌধুরী ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ১৬ বছর বয়সে শান্তিনিকেতনে আসেন। সেখানে অধ্যয়নকালে তিনি সরাসরি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংস্পর্শে আসেন। তিনি শান্তিনিকেতনে ১৯২৭ সালে ওড়িশার এক সময়ের মুখ্যমন্ত্রী নবকৃষ্ণ চৌধুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

অহিংস আন্দোলন——

মহাত্মা গান্ধী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, তিনি ১৯৩০ সালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন এবং তাকে গ্রেফতার করে ভাগলপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে হাজারীবাগ কারাগারে ছিলেন। ৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি জেলে যান।

সামাজিক কাজ—–-

তিনি সর্বোদয় নেত্রী নামে পরিচিত ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি দরিদ্র, দলিত, আদিবাসী হরিজন শিশুদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি উৎকল কংগ্রেস শ্রমজীবী কর্মী সংঘ গঠন করেন। গ্রামের কৃষকদের উন্নতির জন্য সংস্কার ও জনকল্যাণমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করেন, সংগঠন গড়ে তোলেন। ওড়িশা রাজ্যে গান্ধীজির পদযাত্রায় সঙ্গী হন। ১৯৪৭ সালে, তিনি কিছু সময়ের জন্য ওড়িশা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হন। ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা জারি হলে তার বিরুদ্ধে পথে নামেন এবং ৭১ বছর বয়সে তাকে ছয় মাস কারাবরণ করতে হয়। তিনি আচার্য বিনোবা ভাবের ভূদান আন্দোলনেও সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন।

সম্মান——

(ক) উৎকল রত্ন সম্মান (উড়িষ্যা সরকার)।
(খ) জাতীয় পুরস্কার, ঠাকুর সাহিত্য পুরস্কার, দেশিকোত্তম, (শিশু কল্যাণমূলক কাজের জন্য)।
(গ) ১৯৮৮ সমাজসেবামূলক কাজের জন্যে তিনি সালে যমুনালাল বাজাজ পুরস্কারে সম্মানিত হলেও তা নিতে অস্বীকার করেছিলেন।

মৃত্যু——

১৫ মার্চ ১৯৯৮ সালে ৯৩ বছর বয়েসে তিনি প্রয়াত হন ।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

তিনি ‘থালাইভা’ রজনীকান্ত – যিনি ভারতীয় সিনেমায় “অভিনয় দেবতা” হিসেবে আজও জনপ্রিয়।।।।।

তিনি ‘থালাইভা’ রজনীকান্ত। রঙিন দুনিয়ার এই মানুষটির জনপ্রিয়তা আকাশ ছোঁয়া। শিবাজি রাও গায়কওয়াড়, যিনি তার মঞ্চ নাম রজনীকান্ত নামে পরিচিত, একজন অভিনেতা এবং তামিল চলচ্চিত্র শিল্পের একজন মেগাস্টার। তিনি একজন অভিনেতা, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার। তিনি এশিয়ার সর্বোচ্চ উপার্জনকারী অভিনেতাদের একজন।

তামিল সিনেমা ছাড়াও, তিনি হিন্দি, তেলেগু, কন্নড় এবং ইংরেজি সিনেমাতেও কাজ করেছেন। ব্যাঙ্গালোর ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসে বাস কন্ডাক্টর হিসেবে কাজ করার সময় তিনি নাটকে অভিনয় শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে, তিনি অভিনয়ে ডিপ্লোমা করার জন্য মাদ্রাজ ফিল্ম ইনস্টিটিউটে যোগ দেন। এখানেই তিনি কে. বালাচন্দরের নজরে পড়েন, যিনি তাঁকে ১৯৭৫ সালের চলচ্চিত্র অপূর্ব রাগাঙ্গালে তার প্রথম বিরতি দেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার হিসেবেও কাজ করেছেন। তাঁর চলচ্চিত্র কর্মজীবন ছাড়াও, তিনি একজন জনহিতৈষী, আধ্যাত্মবাদী এবং দ্রাবিড় রাজনীতিতে একটি প্রভাব হিসাবে কাজ করেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ভারত সরকার তাকে ২০০০ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০১৬ সালে পদ্মবিভূষণে ভূষিত করেছে। রজনীকান্তের ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং আবেদন মূলত তাঁর আচরণ এবং সংলাপের স্টাইলাইজড ডেলিভারি থেকে টানা হয়েছে।
রজনীকান্ত ১৯৫০ সালে ১২ ডিসেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন,তিনি জন্মগ্রহণ করেন ভারতের মিসোর রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে একটি মারাঠি পরিবারে, যা বর্তমানে কার্নাটকের একটি অংশ। তাঁর নাম রাখা হয় ছত্রপতি শিবাজীর নাম অনুসারে শিবাজী রাও গায়েকোয়াড ,একজন যোদ্ধা, এবং যিনি মারাঠি এবং কন্নড় ভাষার মানুষদের আনেন।
ছয় বছর বয়সে, রজনীকান্ত “গাভিপুরাম সরকারি কন্নড় মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে” ভর্তি হন এবং সেখানে তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। শিশু হিসেবে, তিনি ক্রিকেট, ফুটবল এবং বাস্কেটবল খেলতে অনেক আগ্রহী চিলেন এবং অনেক দুষ্ট ছিলেন। এই সময় তার ভাই তাকে রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃক স্থাপিত রামকৃষ্ণ মঠে নিয়ে যান। মঠে তিনি বেদ শিখতেন, ঐতিহ্যবাহী এবং ঐতিহাসিক গ্রন্থ, যা মনে প্রভাব ফেলে। আধ্মাতিক শিক্ষার সাথে, তিনি মঠে নাটকে অভিনয়ও করা শুরু করেন। মঠে অভিনয়ের পর থেকে অভিনয়ের প্রতি তার অদম্য স্পৃহা জাগে এবং তিনি হিন্দু মহাকাব্য মহাভারত-এ “একলব‌্য” এর বন্ধুর চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। তাঁর পরিবেশনা দর্শকের কাছ থেকে এবং কন্নড় কবি ডি.আর.বেন্দ্রের কাছ থেকে আলাদাভাবে প্রশংসা অর্জন করেন।
ভারতীয় শহর বেঙ্গালুরুতে বেড়ে উঠেন, রজনীকান্ত অসচ্ছল জীবনের সাথে লড়াই করে কাটিয়েছেন তাঁর শৈশব। রজনীকান্ত লাতা রাঙ্গাচড়িকে বিয়ে করেন। লতা এথিরাজ মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন, যিনি তাঁদের কলেজ ম্যাগাজিনের জন্য রজনীকান্তের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্যে গিয়েছিলেন। তাদের বিয়ে হয় ১৯৮১ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি, অন্ধ্র প্রদেশের ত্রিপাটিতে। তাঁদের দুই মেয়ে “ঐশ্বর্য্য রজনীকান্ত” এবং “সৌন্দর্য্য রজনীকান্ত”। তার স্ত্রী, লতা রজনীকান্ত, বর্তমানে একটি “আশ্রম” নামে একটি বিদ্যতালয় পরিচালনা করেন।
বেঙ্গালুরু মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের বাসের সহকারী হিসেবে কাজ করা অবস্থায় তিনি নাটকে অভিনয় করতেন। তিনি ১৯৭৩ সালে মাদ্রাজ আসেন “মাদ্রাজ ফিল্ম ইনিস্টিটিউট” থেকে অভিনয়ের উপর ডিপ্লোমা পড়ার জন্য। তামিল চলচ্চিত্রে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে করতে রজনীকান্ত একসময় অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর থেকে, ভারতীয় জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে তিনি ” অভিনয় দেবতা” হিসেবে জনপ্রিয় হন।রজনীকান্ত ১৯৮৩ সালে হিন্দি সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন, একটি চরিত্রেআন্ধা কানুন , একটি চলচ্চিত্র যা তাঁকে বলিউড মেগাস্টারের সাথে জুটিবদ্ধ করেছিলঅমিতাভ বচ্চন । তিনি মুকুল আনন্দের হাম (১৯৯১) সহ আরও দুটি হিন্দি ছবিতে বচ্চনের সাথে অভিনয় করেছিলেন । রজনীকান্ত ভারতের অনেক বড় ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন , যার মধ্যে রয়েছে মুন্ড্রু মুগাম (১৯৮২), থালাপাথি (১৯৯১), বাশা (১৯৯৫), পদয়াপ্পা (১৯৯৯), এবং সায়েন্স-ফিকশন থ্রিলার।Enthiran (২০১০) এবং এর সিক্যুয়াল,2.0 (২০১৮); পরবর্তী দুটি সিনেমায় তিনি রোবট চিট্টি বাবু এবং এর নির্মাতা ডক্টর ভাসিগারন উভয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন।ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্রসহ অন্যান্য দেশের সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন। তবে সম্প্রতি রজনীকান্তের দীর্ঘ কেরিয়ার জীবনে অন্যতম সফল ছবি হিসেবে থেকে গেল জেলার বক্সফিসে যা ইতিহাস সৃস্টি করেছে।
রজনীকান্ত তার অভিনীত অনেক সিনেমার জন্য অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন, বিশেষভাবে তামিল সিনেমার জন্যে। তিনি প্রথম “ফিল্মফেয়ার সেরা তামিল অভিনেতা পুরস্কার” অর্জন করেন ১৯৮৪ সালে “নাল্লাভানুকু নাল্লাভান” সিনেমার জন্যে।তিনি ২০১৯ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৩ সালে, তিনি ছয়টি “তামিলনাড়ু স্টেট চলচ্চিত্র পুরস্কার” অর্জন করেন। যার মধ্যে চারটি সেরা অভিনেতা এবং বাকি দুইটি সেরা অভিনেতা হিসেবে বিশেষ পুরস্কার এবং ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতা পুরস্কার – তামিল। তিনি ভারতের তৃতীয় বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ অর্জন করেন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

আজাদ আজাদ হিন্দ ফৌজের রানী ঝাঁসি রেজিমেন্টের সৈনিক ও প্রথম গুপ্তচর : নীরা আর্য।।।।।।

ভূমিকা:- তিনি ছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রথম মহিলা গুপ্তচর, আজাদ হিন্দ ফৌজের ঝাঁসি রেজিমেন্টের নেতৃত্বে ছিলেন লক্ষী সেহেগল। দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভুত মহিলা স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে ১৯৪৩ সালে গড়ে উঠেছিল এই রেজিমেন্ট। ট্রেনিং ক্যাম্প ছিল ব্যাংকক, রেঙ্গুন ও সিঙ্গাপুর।

নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন বাঁচাতে নিজের স্বামীকে হত্যা —
নীরা আর্য আজাদ হিন্দ ফৌজের রানি ঝাঁসি রেজিমেন্টের সৈনিক ছিলেন। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন বাঁচাতে তিনি নিজের স্বামীকে হত্যা করেন। নেতাজী তাঁকে নীরা নাগিনী বলে অভিহিত করলে তিনি নীরা নাগিনী নামে পরিচিতি লাভ করেন। বৃটিশ সরকার তাঁকে একজন গুপ্তচর হিসাবে গণ্য করেছিল। তার ভাই বসন্ত কুমারও আজাদ হিন্দ ফৌজে ছিলেন।
প্রখর বুদ্ধিমত্তা, সাহসী ও আত্মসম্মান বোধ–
অনেক লোকশিল্পী নীরা নাগিন ও তার ভাই বসন্ত কুমারের জীবন নিয়ে কবিতা ও ভজন রচনা করেছেন। নীরা নাগিনী নামে তার জীবনের একটি মহাকাব্যও রয়েছে। তার জীবন নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তিনি ছিলেন এক দুর্দান্ত দেশপ্রেমিক, সাহসী ও আত্মসম্মান বোধে গর্বিত মহিলা। তার শেষ জীবন কাটে হায়দ্রাবাদে। সেখানকার মহিলারা তাকে গর্বের সাথে ‘পদ্মমা’ বলে সম্বোধন করতেন।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন—-
নীরা আর্য ১৯০২ সালের ৫ মার্চ ভারতের তৎকালীন যুক্তপ্রদেশের অধুনা উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বাগপত জেলার খেকড়া শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা শেঠ ছজুমল ছিলেন সে সময়ের এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তার ব্যবসা-বাণিজ্য সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। তার পিতার ব্যবসায়ের মূল কেন্দ্র ছিল কলকাতা। তাই কলকাতাতে তার পড়াশোনা শুরু হয়েছিল। নীরা আর্য হিন্দি, ইংরেজি, বাংলার পাশাপাশি আরও অনেক ভাষায় দক্ষ ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ ভারতের সিআইডি ইন্সপেক্টর শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাসকে বিবাহ করেন। শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাস ছিলেন ইংরেজপ্রভু ভক্ত অফিসার। মূলতঃ শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাসকে গুপ্তচরবৃত্তি করে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে হত্যা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ—–
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন বাঁচাতে তিনি ইংরেজ সেনাবাহিনীর পদস্থ অফিসার শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাসকে হত্যা করেছিলেন। একসময় সুযোগ পেয়ে শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাস নেতাজিকে হত্যার জন্য গুলি চালিয়েছিলেন, কিন্তু সেই গুলি নেতাজির গাড়ীর চালককে বিদ্ধ করে । কিন্তু এরই মধ্যে নীরা আর্য শ্রীকান্ত জয়রঞ্জনের পেটে বেয়নেট চালিয়ে হত্যা করে। শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাস নীরা আর্যের স্বামী ছিলেন, তাই স্বামী হত্যার কারণে নেতাজি তাঁকে নাগিনী বলে অভিহিত করেছিলেন। আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণের পরে, সমস্ত বন্দী সৈন্যকে দিল্লির লাল কেল্লায় বিচারে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু নীরাকে স্বামী হত্যার কারণে দ্বীপান্তরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। জেলে বন্দীদশায় সেখানে তাঁকে কঠোর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল।
আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রথম গুপ্তচর—–
নীরা আর্য আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রথম গুপ্তচর হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। পবিত্র মোহন রায় আজাদ ভারতীয় সেনাবাহিনীর মহিলা এবং পুরুষ উভয় গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ছিলেন। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু নিজেই নীরাকে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তার সঙ্গী মনবতী আর্য, সরস্বতী রাজামণি এবং দুর্গা মল্লা গোর্খা এবং যুবক ড্যানিয়েল কালে তার সামরিক গোয়েন্দা শাখার সাথে যুক্ত ছিল। তারা নেতাজির জন্য গুপ্তচরবৃত্তির কাজ করত। তারা বিভিন্ন কাজের অছিলায় ব্রিটিশ অফিসারদের বাড়ি ও সেনাশিবিরে প্রবেশ করতেন তথ্য সংগ্রহের জন্য, তারপর তা নেতাজীর কাছে পাঠাতেন। এই কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়লে প্রথমে নথিগুলি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া ও পরে পিস্তল চালিয়ে আত্মহত্যা করতে হবে, এই নিয়ম তারা কঠোর ভাবে মেনে চলতেন।
রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে নীরাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড–
দক্ষিণ এশিয়ার অক্ষশক্তির পরাজয়ের পর ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছিল আজাদ হিন্দ ফৌজ। ধরা পড়েছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের হাজার হাজার সেনানী। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে লালকেল্লায় তাদের বিচার শুরু হয়, বেশির ভাগ সেনানী ছাড়া পেলেও নীরাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়, জাহাজে করে পাঠানো হয় আন্দামানের সেলুলার জেলে। সেখানে তার ওপর যে অমানুষিক অত্যাচার হয়েছিল তা সত্যিই ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
আন্দামানে নীরাকে রাখা হয়েছিল একটি ছোট কুঠরিতে, সেখানে বাকি বন্দিরা ছিল মুক্ত, কিন্তু নীরাকে বন্য জন্তুর মত প্রথমদিন বেঁধে রাখা হয়েছিল। গলায় বাঁধা ছিল চেন ও হাতে-পায়ে ছিল শেকল লাগানো বেড়ি। নীরাকে কিছু খেতে দেওয়া হয়নি প্রথম দিন। শোয়ার জন্য মাদুর কিংবা কম্বল কিছুই দেওয়া হয়নি প্রথমে। কুঠরির কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে ছিলেন পরিশ্রান্ত নীরা। মাঝরাতে এক প্রহরী কুঠরিতে ঢুকে গায়ের ওপর ছুঁড়ে দিয়েছিল দুটো কম্বল। সকাল বেলায় প্রথম জুটেছিল খাবার, খেতে দেওয়া হয়েছিল ফুটন্ত খিচুড়ি।
এরপরেও আরও অনেক পাশবিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে নীরাকে। সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। তবুও মনে মনে স্বপ্ন দেখতেন স্বাধীন ভারতে সূর্যোদয় দেখবেন। এই মহান ত্যাগের সম্মান দেয়নি দেশ। নীরা আন্দামানে আসার একবছর পর স্বাধীন হয়েছিল দেশ। মুক্তি পেয়েছিলেন নীরা। এই আত্মত্যাগের সম্মান দেয়নি দেশ। অভিমানে সাধারণের ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন অসাধারণ নীরা।
স্বাধীনতা পরবর্তী জীবন–
স্বাধীনতার পরে, তিনি ফুল বিক্রি করে জীবনযাপন করেছিলেন, তবে কোনও সরকারী সহায়তা বা পেনশন গ্রহণ করেননি। তার ভাই বসন্ত কুমারও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি স্বাধীনতার পর সন্ন্যাসী হয়েছিলেন। নীরা স্বাধীনতা সংগ্রামে তার ভূমিকা নিয়ে আত্মজীবনীও লিখেছেন। উর্দু লেখক ফারহানা তাজ’কে তিনি তার জীবনের অনেক ঘটনা শুনিয়েছিলেন। তিনি তার জীবন নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিতে একটি উপন্যাসও রচনা করেন।
সম্মাননা—
নীরা আর্য নামে একটি জাতীয় পুরষ্কারও চালু করা হয়েছে। ছত্তিশগড়ের অভিনেতা অখিলেশ পান্ডে প্রথম নীরা আর্য পুরষ্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবং তাঁকে নীরা আর্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
জীবনাবসান—
শেষ জীবনে তিনি তিনি দরিদ্র, অসহায়, নিঃস্ব হয়ে পরেছিলেন। হায়দরাবাদের ফালকনুমার একটি কুঁড়ে ঘরে বাস করতেন। নীরা আর্য জীবনের শেষ দিনগুলিতে ফুল বিক্রি করে কাটিয়েছেন এবং সরকারি জমিতে থাকার কারণে তার কুঁড়েঘরটিও শেষ মুহুর্তে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। সকলের অলক্ষ্যে ১৯৯৮ সালের ২৬শে জুলাই উসমানিয়া হাসপাতালে প্রয়াত হয়েছিলেন ৯৬ বছরের বীরাঙ্গনা এক অগ্নিকন্যা নীরা আর্য্য।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ভারতীয় বাঙালি মহিলা কবি বিজয়া মুখোপাধ্যায় – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।।।

বিজয়া মুখোপাধ্যায় ছিলেন সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপিকা এবং একজন প্রতিভাশালিনী কবি। প্রবন্ধকার ও অনুবাদক হিসাবেও পরিচিতি ছিল তার। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রবর্তিত “কৃত্তিবাস” কবিতা পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সংক্ষিপ্ত জীবনী——

বিজয়া মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ১১ই মার্চ বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের তৎকালীন ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে।

পড়াশোনা কলকাতায়। কলেজে পড়ার সময় থেকেই তিনি কবিতা রচনা শুরু করেন। তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় দেশ (পত্রিকা) পত্রিকায় ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে। সংস্কৃত ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং অসামান্য দখল ছিল তার। কবি বুদ্ধদেব বসু ‘মহাভারতের কথা’ লেখার সময়ে বিজয়ার কাছে সংস্কৃত শিখেছিলেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ সামনে অপর্ণা। তিনি ও তার স্বামী কবি শরৎকুমার মুখোপাধ্যায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রবর্তিত “কৃত্তিবাস” কবিতা পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার বহু কবিতা এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তার ছন্দময় কবিতা বিগত পুরানো দিনের স্মৃতি যেমন জাগ্রত করে, তেমনি সহজ, সরল, শান্ত ভঙ্গিমায় সামাজিক চেতনার বিকাশে প্রতিবাদ ব্যক্ত হয়েছে। তার “পুটিকে সাজে না” কবিতা নারীত্বের প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বেশ তাৎপর্যময়।

রচিত কাব্যগ্রন্থ——–

আমার প্রভুর জন্য (১৯৬৭), যদি শর্তহীন (১৯৭১), ভেঙে যায় অনন্ত বাদাম (১৯৭৭), উড়ন্ত নামাবলি (১৯৭৯), দাঁড়াও তর্জনী (১৯৮৮), ঝড়ের সঙ্গে যখন দেখা, অশ্লেষা তিথির কন্যা (১৯৯৩), ভাষায় যেটুকু বলা যায় (২০০৫), মাস্তুলের পাখি, আজন্ম হস্টেলে আছি (২০১৩), শ্রেষ্ঠ কবিতা।

পুরস্কার——

২০০৯ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি কর্তৃক প্রদত্ত রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন (পবিত্র মুখোপাধ্যায়, বিজয়া মুখোপাধ্যায়, অমিয়কুমার বাগচী, শ্যামল চক্রবর্তী, শঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথভাবে)।

সম্পাদিত পত্রিকা——

তিনি দীর্ঘদিন ‘বিভাষা’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন।

মৃত্যু——

কবি বিজয়া মুখোপাধ্যায় ২০২০ সালের ২৬ জুলাই ৮৩ বৎসর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

প্রতিভা পাতিল: ভারতীয় রাজনীতিতে একজন পথপ্রদর্শক।।।

25 জুলাই, 2007-এ, ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেওয়া প্রথম মহিলা হয়ে প্রতিভা পাটিল ইতিহাস তৈরি করেছিলেন। তার অভিষেক ভারতীয় রাজনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত, কাঁচের ছাদ ভেঙে দিয়েছে এবং নারী নেতাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পথ প্রশস্ত করেছে।

প্রারম্ভিক জীবন এবং শিক্ষা
প্রতিভা পাটিল 19 ডিসেম্বর, 1934 সালে মহারাষ্ট্রের একটি ছোট গ্রাম নাদগাঁওতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা-মা, নারায়ণ রাও পাতিল এবং শ্রীমতি ইন্দুবাই পাতিল, উভয়েই শিক্ষিত ছিলেন এবং তাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। প্রতিভার প্রথম জীবন সরলতা এবং কঠোর পরিশ্রম দ্বারা চিহ্নিত ছিল। তিনি তার গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন এবং পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য জলগাঁও চলে আসেন।
প্রতিভার একাডেমিক কৃতিত্ব ছিল অসাধারণ। তিনি পুনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। রাজনীতিতে তার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই প্রতীয়মান ছিল এবং তিনি কলেজের সময়কালে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।

রাজনৈতিক পেশা—

প্রতিভা পাটিলের রাজনীতিতে প্রবেশ দৈবক্রমে হয়নি। তার স্বামী দেবীসিংহ রণসিংহ শেখাওয়াত ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য। রাজনীতিতে প্রতিভার সম্পৃক্ততা 1960 এর দশকে শুরু হয়, যখন তিনি তার স্বামীর সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রচারে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন।
1962 সালে, প্রতিভা জলগাঁও কেন্দ্র থেকে মহারাষ্ট্র বিধানসভার সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন। তিনি লোকসভা এবং রাজ্যসভা উভয়েই সংসদ সদস্য হিসাবে কাজ করেছেন। তার রাজনৈতিক কর্মজীবন চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বিস্তৃত ছিল, এই সময়ে তিনি শিক্ষামন্ত্রী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এবং পর্যটন মন্ত্রী সহ বিভিন্ন পোর্টফোলিও অধিষ্ঠিত ছিলেন।
প্রেসিডেন্সি
রাষ্ট্রপতি পদের জন্য প্রতিভা পাটিলের মনোনয়ন জুন 2007 সালে ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) দ্বারা ঘোষণা করা হয়েছিল। তার প্রার্থিতা বামফ্রন্ট এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলি দ্বারা সমর্থিত হয়েছিল। 19 জুলাই, 2007-এ, প্রতিভা পাতিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ী হন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভৈরন সিং শেখাওয়াতকে পরাজিত করেন।

রাষ্ট্রপতি হিসাবে, প্রতিভা পাটিল নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা এবং গ্রামীণ উন্নয়ন সহ বিভিন্ন উদ্যোগের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন। তিনি নারী ও শিশুদের অধিকারের জন্য একজন বলিষ্ঠ উকিল ছিলেন। তার রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন, তিনি নারী ও শিশুদের জন্য শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রচারের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি প্রোগ্রাম চালু করেছিলেন।

উত্তরাধিকার—

প্রতিভা পাটিলের রাষ্ট্রপতিত্ব বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অর্জন দ্বারা চিহ্নিত ছিল। তিনিই প্রথম মহিলা যিনি অফিসে ছিলেন, এবং তাঁর উদ্বোধন ভারত জুড়ে লক্ষ লক্ষ মহিলাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। নারীর ক্ষমতায়ন এবং শিক্ষার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে তার স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
প্রতিভা পাটিলের উত্তরাধিকার তার রাষ্ট্রপতির মেয়াদের বাইরেও বিস্তৃত। তিনি একটি প্রজন্মের নারীদের রাজনীতিতে প্রবেশ করতে এবং নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে অনুপ্রাণিত করেছেন। ভারতীয় রাজনীতিতে তার অবদান বিভিন্ন পুরষ্কার এবং সম্মানের মাধ্যমে স্বীকৃত হয়েছে, যার মধ্যে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কারগুলির মধ্যে একটি পদ্মভূষণ রয়েছে।

উপসংহার—

প্রতিভা পাটিলের জীবন তার কঠোর পরিশ্রম, সংকল্প এবং জনসেবার প্রতি অঙ্গীকারের প্রমাণ। তার রাষ্ট্রপতিত্ব ভারতীয় রাজনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত, এবং তার উত্তরাধিকার ভারতজুড়ে মহিলাদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে। ভারতীয় রাজনীতিতে একজন ট্রেইলব্লেজার হিসাবে, প্রতিভা পাটিলকে সর্বদা একজন অগ্রগামী হিসেবে স্মরণ করা হবে যিনি নারী নেতাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পথ প্রশস্ত করেছিলেন।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

দ্য বার্থ অফ আ মিরাকল: লুইস ব্রাউন অ্যান্ড দ্য ফার্স্ট টেস্ট-টিউব বেবি।।।।

25 জুলাই, 1978, চিকিৎসা ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক চিহ্নিত যখন লুইস ব্রাউন, বিশ্বের প্রথম টেস্ট-টিউব শিশুর জন্ম হয়েছিল। এই যুগান্তকারী কৃতিত্ব প্রজনন ওষুধে বিপ্লব ঘটিয়েছে এবং বন্ধ্যাত্বের সাথে লড়াইরত লক্ষ লক্ষ দম্পতিদের জন্য নতুন আশার প্রস্তাব দিয়েছে।

পটভূমি—–

1970 এর দশকের গোড়ার দিকে, ডাঃ রবার্ট এডওয়ার্ডস, একজন ব্রিটিশ ফিজিওলজিস্ট এবং ডাঃ প্যাট্রিক স্টেপটো, একজন গাইনোকোলজিস্ট, শরীরের বাইরে মানুষের ডিম নিষিক্ত করার সম্ভাবনা অন্বেষণ শুরু করেন।

ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ)-এ তাদের অগ্রগামী কাজটি অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল, যার মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা সম্প্রদায়ের সংশয় এবং সীমিত অর্থায়ন।

যুগান্তকারী—–

10 নভেম্বর, 1977-এ, ইংল্যান্ডের ওল্ডহ্যামের 29 বছর বয়সী মহিলা লেসলি ব্রাউন প্রথম সফল আইভিএফ পদ্ধতির মধ্য দিয়েছিলেন। তার ডিম্বাণু সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং তার স্বামীর শুক্রাণু দিয়ে একটি পরীক্ষাগারের থালায় নিষিক্ত করা হয়েছিল। দুটি ভ্রূণ তার জরায়ুতে স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং একটি গর্ভাবস্থা নিশ্চিত হয়েছিল।

লুইস ব্রাউনের জন্ম—-

স্বাভাবিক গর্ভধারণের পর, লেসলি 25 জুলাই, 1978 তারিখে ওল্ডহাম জেনারেল হাসপাতালে রাত 11:47 মিনিটে লুইস জয় ব্রাউনের জন্ম দেন। শিশুটির ওজন 5 পাউন্ড 12 আউন্স এবং সুস্থ ছিল। টেস্টটিউব শিশুর আগমনের খবরটি মিডিয়ার ব্যাপক মনোযোগ ছড়িয়ে দেয় এবং লুইস রাতারাতি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।

প্রভাব—-

লুইস ব্রাউনের জন্ম প্রজনন ওষুধে একটি নতুন যুগের সূচনা করে। IVF প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতি হয়েছে, এবং প্রথম IVF ক্লিনিক বিশ্বব্যাপী খোলা হয়েছে। তারপর থেকে, 8 মিলিয়নেরও বেশি শিশু IVF এর মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেছে, এবং পদ্ধতিটি বন্ধ্যাত্বের জন্য একটি সাধারণ চিকিত্সা হয়ে উঠেছে।

উত্তরাধিকার—–

লুইস ব্রাউনের উত্তরাধিকার তার ঐতিহাসিক জন্মের বাইরেও প্রসারিত। তিনি বন্ধ্যাত্ব সচেতনতা এবং IVF গবেষণার জন্য একজন উকিল হয়ে উঠেছেন। তার গল্প অগণিত দম্পতিকে IVF চিকিত্সা অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করেছে, তাদের আশা এবং পিতৃত্বের সুযোগ প্রদান করেছে।

উপসংহার—-

প্রথম টেস্টটিউব শিশু লুইস ব্রাউনের জন্ম, চিকিৎসা ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত। এটি প্রজনন ওষুধে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে এবং বন্ধ্যাত্বের সাথে লড়াইরত লক্ষ লক্ষ দম্পতিদের আশার প্রস্তাব দিয়েছে। IVF প্রযুক্তির বিকাশ অব্যাহত থাকায়, লুইসের উত্তরাধিকার টিকে থাকবে, যা ভবিষ্যত প্রজন্মকে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় উদ্ভাবনী সমাধান অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করবে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অফ মির্জাফর।।।।

মিরজাফর, তিনি ছিলেন 18 শতকের বাংলার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি দুবার মুর্শিদাবাদের নবাব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, প্রথমে 1757 থেকে 1760 এবং তারপর আবার 1763 থেকে 1765 সাল পর্যন্ত। তার দ্বিতীয় শাসনকাল 25 জুলাই, 1763 সালে শুরু হয় এবং এই অঞ্চলের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় চিহ্নিত করে।

পটভূমি—–

মির্জাফরের প্রথম রাজত্ব ছিল অশান্তি ও সংঘাত দ্বারা চিহ্নিত। 1757 সালে পলাশীর যুদ্ধের পর তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন, যেখানে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তৎকালীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে পরাজিত করে। যাইহোক, শীঘ্রই ব্রিটিশদের সাথে মির্জাফরের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায় এবং 1760 সালে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন।
নির্বাসন এবং প্রত্যাবর্তন
তার ক্ষমতাচ্যুতির পর মির্জাফর আওধ রাজ্যে নির্বাসনে চলে যান। তবে তিনি ক্ষমতায় ফেরার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন। 1763 সালে, তিনি সিংহাসন পুনরুদ্ধার করার একটি সুযোগ দেখেছিলেন যখন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আওধের শাসকের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে।

দ্বিতীয় রাজত্ব——

25 জুলাই, 1763 তারিখে, মির্জাফর মুর্শিদাবাদে ফিরে আসেন এবং নবাব হিসাবে পুনর্বহাল হন। তার দ্বিতীয় শাসনকাল তার কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার এবং ব্রিটিশ প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করার প্রচেষ্টার একটি সিরিজ দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল। যাইহোক, তার প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল এবং 1765 সালে তাকে আবার পালাতে বাধ্য করা হয়েছিল।

উত্তরাধিকার—–

মির্জাফরের দ্বিতীয় রাজত্ব মুর্শিদাবাদের নবাবদের শেষের সূচনা করে। এই অঞ্চলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রভাব ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং নবাবরা ক্রমশ শক্তিহীন হয়ে পড়ে। মির্জাফরের উত্তরাধিকার জটিল, কেউ কেউ তাকে একজন নায়ক হিসেবে দেখেন যিনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতাকে প্রতিরোধ করেছিলেন এবং অন্যরা তাকে একজন ক্ষমতা-ক্ষুধার্ত নেতা হিসেবে দেখেন যিনি এই অঞ্চলের অস্থিতিশীলতায় অবদান রেখেছিলেন।

উপসংহার—-

মুর্শিদাবাদের নবাব হিসেবে মির্জাফরের দ্বিতীয় শাসনকাল ছিল এই অঞ্চলের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এটি নবাব এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ের একটি টার্নিং পয়েন্ট চিহ্নিত করে। যদিও তার কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করার তার প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল, তার উত্তরাধিকার আজও এই অঞ্চলে অনুভূত হচ্ছে।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে ভারতীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী – ছায়া দেবী।।।।।

ভূমিকা— বাংলা ছায়া ছবির জগতে ছায়া দেবী এক কিংবদন্তি অভিনেত্রীর নাম।ছায়া দেবী একজন প্রতিভাময়ী ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। স্বর্ণ যুগের এই অভিনেত্রী বহু সিনেমায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করে তাঁর অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন——

ছায়া দেবীর পিসিমা ছিলেন অভিনেতা অশোককুমার ও কিশোর কুমারের দিদিমা।ছায়া দেবীর জন্ম ৩ জুন ১৯১৯ সালে এই পিসিমার ( সতীশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী) ভাগলপুরের রাজবাড়ীতে। পিতা হারাধন গঙ্গোপাধ্যায়।

প্রাথমিক শিক্ষা ও অভিনয় জীবনে প্রবেশ—

তার প্রাথমিক শিক্ষা ভাগলপুরের মোক্ষদা গার্লস স্কুলে। ভাগলপুর থেকে বাবার সঙ্গে দিল্লি গিয়ে ইন্দ্রপ্রস্থ গার্লস স্কুলে ভর্তি হন এবং সঙ্গীত চর্চা করতে থাকেন। এগারো বৎসর বয়সে রাঁচির অধ্যাপক ভূদেব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাহ হয়। কিন্তু এ বিবাহ কার্যকর হয় না। দশম শ্রেণীর ছাত্রী তিনি বাবার সঙ্গে কলকাতায় এসে কৃষ্ণচন্দ্র দে ও পণ্ডিত দামোদর মিশ্রর কাছে সংগীত শিখতে থাকেন। সেই সঙ্গে বেলা অর্ণবের কাছে নাচের তালিম নিতে থাকেন। নাটক-পাগল দুই পিসতুতো দাদা শ্রীশচন্দ্র ও শৈলেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি অভিনয় জগতে আসেন।

অভিনয় জীবন——

১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দেই তিনি দেবকী বসুর ‘সোনার সংসার’ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন। তবে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কনক নামের কিশোরী ছায়া দেবী নাম নিয়ে ‘পথের শেষে’ ছবিতে অন্যতম নায়িকার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি রাঙা বৌ, ছিন্নহার, প্রভাসমিলন, হাল বাঙলা, বিদ্যাপতি (হিন্দি ও বাংলা), রিক্তা, জীবন মরণ প্রভৃতি। পথের শেষে – এই ছবিটি হিট হওয়ায় তিনি সোনার মেডেল পেয়েছিলেন।

গায়িকা হিসেবে—

অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি ছবিতে তিনি গানও গেয়েছেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘অভয়ের বিয়ে’ ছবিতে তিনি ৪/৫ খানা গান গেয়েছেন।

মুম্বই গমন—

এর পরে ছায়া দেবী প্রফুল্ল রায়ের আমন্ত্রণে তিনি মুম্বই গিয়ে সেখানে’মেরাগাঁও ‘ ছবিতে গানে ও অভিনয়ে বিশেষ পারদর্শিতা দেখান। ছায়া দেবী প্রায় পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলা, হিন্দী, তামিল ও তেলুগু ভাষায় শতাধিক ছায়াছবিতে প্রধানত পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ‘বিদ্যাপতি’ ছায়াছবির জন্য উনি প্রশংসিত হন ও ক্রমে প্রচুর উল্ল্যেখযোগ্য ছবিতে অভিনয় করেন, যেমন বাংলায় পরিচালক তপন সিংহর নির্জন সৈকতে, হাটে বাজারে এবং আপনজন, সপ্তপদী, মানিক, উত্তর ফাল্গুনী, বা হিন্দীতে অমিতাভ বচ্চনের সাথে আলাপ । বাংলা,হিন্দি ও তামিল তিন ভাষাতেই ‘রত্নদীপ’ ছবিতে তার অভিনয় স্মরণীয়। ছায়াছবিতে কাজ করার পাশাপাশি বেতার কেন্দ্রে নিয়মিত খেয়াল, ঠুংরি পরিবেশন করেছেন।

তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি সমূহ—

প্রায় দু-শোর বেশি ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। সাত পাকে বাঁধা, মুখার্জি পরিবার, অন্তরাল, আরোহী, কাঁচ কাটা হীরে, সূর্যতপা, থানা থেকে আসছি, মণিহার, গল্প হলেও সত্যি, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, হাটেবাজারে, আপনজন’ (রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত), বাঘিনী, কমললতা, চৌরঙ্গী, কুঁয়াশা, রাতভোর, সাহেব বিবি গোলাম, ত্রিযামা, মায়াবাজার, গলি থেকে রাজপথ, মাণিক, অটলজলের আহ্বান, দেয়ানেয়া, সপ্তপদী, নির্জন সৈকতে, পিতাপুত্র, হারমোনিয়াম, আরোগ্য নিকেতন, রাজা রামমোহন, বাবা তারকনাথ, আলাপ, ধনরাজ তামাং, অরুণ বরণ কিরণমালা, সূর্যসাক্ষী, রঙবেরঙ, প্রায়শ্চিত্ত, রাশিফল, লালগোলাপ, স্বর্ণমণির ঠিকানা, প্রতিকার, বোবা সানাই, প্রতিদান, কলঙ্কিত নায়ক, রাজকুমারী, মুক্তিস্নান, সমান্তরাল, কুহেলী, হার মানা হার, শেষ পর্ব, পদিপিসির বর্মি বাক্স, দেবীচৌধুরাণী।

মৃত্যু—–

কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী বহু সিনেমায় রেখে গিয়েছেন তাঁর অভিনয় দক্ষতার সাক্ষর। ২৫ এপ্রিল ২০০১ সালে তিনি প্রয়াত হন। কিন্তু আজও তিনি অমর হয়ে রয়েছেন মানষের হৃদয়ে।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

শিখদের আদর্শ ও দৈনন্দিন জীবনে গুরু গোবিন্দ সিংহের জীবন ও শিক্ষার প্রভাব সুদূরপ্রসারী।।।।

গুরু গোবিন্দ সিং : খালসা প্রবর্তন শিখ ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। গুরু গোবিন্দ সিং (২২ ডিসেম্বর ১৬৬৬ – ৭ অক্টোবর ১৭০৮) ছিলেন শিখ ধর্মের দশম গুরু। তিনি বর্তমান ভারতের বিহার রাজ্যের পাটনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। গুরু গোবিন্দ তাঁর পিতা গুরু তেগ বাহাদুরের স্থলাভিষিক্ত হন ১১ নভেম্বর ১৬৭৫ সালে নয় বছর বয়সে।

তিনি শিখ জাতির একজন নেতা, যোদ্ধা, কবি এবং দার্শনিক ছিলেন। শিখ সমাজে, গুরু গোবিন্দ আদর্শ পুরুষত্বের প্রতীক। তিনি তার উচ্চ শিক্ষা, দক্ষ ঘোড়সওয়ার, সশস্ত্র যুদ্ধে দক্ষতা এবং দক্ষিণের চরিত্রের জন্য বিখ্যাত। শিখ আদর্শ ও দৈনন্দিন জীবনে গুরু গোবিন্দ সিং-এর জীবন ও শিক্ষার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। তাঁর খালসা প্রবর্তন শিখ ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মুঘল ও শিবালিক পার্বত্য অঞ্চলের মুঘল ভাসালদের সাথে তিনিই শেষ মানব শিখ গুরু। ৭ অক্টোবর ১৭০৮-এ তিনি শিখ ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহেবকে শিখদের পরবর্তী এবং চিরন্তন গুরু হিসেবে ঘোষণা করেন। তার চার পুত্র ছিল: অজিত সিং, জুহর সিং, জোরওয়ার সিং, ফতেহ সিং।
গোবিন্দ সিং ছিলেন নবম শিখ গুরু গুরু তেগ বাহাদুর এবং মাতা গুজরির একমাত্র পুত্র। তিনি ২২ ডিসেম্বর ১৬৬৬ সালে পাটনা, বিহারে জন্মগ্রহণ করেন যখন তার পিতা বাংলা ও আসাম সফরে ছিলেন। গুরু গোবিন্দ সিং যখন জন্মগ্রহণ করেন, তখন তাঁর নাম ছিল গোবিন্দ রায় এবং তখত শ্রী পাটনা হরিমন্দর সাহিব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যেখানে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং জীবনের প্রথম চার বছর অতিবাহিত করেছিলেন। গুরু গোবিন্দ সিং জীবনের প্রথম ৫ বছর পাটনা শহরে কাটিয়েছিলেন।
একবার পাটনা শহরের রাজা ফতেহ চাঁদ এবং তার রানী, যারা নিঃসন্তান ছিলেন, শিব দত্তের কাছে গিয়ে তাকে একটি সন্তানের জন্য প্রার্থনা করতে বলেন। শিব দত্ত তাদের সন্তানকে গুরু গোবিন্দ সিংয়ের সাথে দেখা করতে এবং তার আশীর্বাদ নিতে বলেছিলেন। গুরু গোবিন্দ সিংয়ের সাথে দেখা করার পর, রানি তাকে একটি পুত্রের আশীর্বাদ করার জন্য অনুরোধ করেন, যার প্রতি গুরু গোবিন্দ সিং হেসে বলেন যে যদি তাদের একটি পুত্রের প্রয়োজন হয় তবে তিনিই তাকে পুত্র বলতে পারেন। এরপর রানী তাকে পুত্রের মর্যাদা দিয়ে পুত্র বলে ডাকেন। গুরু গোবিন্দ সিং তাদের প্রসাদে যেতেন এবং খেলতেন। রানী তার এবং তার খেলার সাথীদের জন্য পুরি এবং ছোলার ডাল রান্না করতেন। আজও সেই প্রসাদে পুরি ও ছোলার ডাল রান্না করে দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। প্রসাদটি এখন গুরুদ্বারে রূপান্তরিত হয়েছে। নবাব করিম বখশ এবং রহিম বখশ তাকে পছন্দ করেন এবং গুরু গোবিন্দ সিংকে একটি গ্রাম এবং একটি বাগান উপহার দেন।
গুরু তেগ বাহাদুর ১৬৬৫ সালে বিলাসপুরের (কাহলুর) শাসকের কাছ থেকে জমি কিনে আনন্দপুর শহর প্রতিষ্ঠা করেন। পূর্ব ভারত সফর শেষ হলে তিনি তার পরিবারকে আনন্দপুরে আসতে বলেন।
১৬৭০ সালে, তার পরিবার পাঞ্জাবে ফিরে আসে এবং ১৬৭২ সালের মার্চ মাসে তারা উত্তর ভারতের হিমালয়ের পাদদেশে চক নানকিতে চলে যায়, যাকে বলা হয় শিবালিক রেঞ্জ, যেখানে তিনি স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৬৭২ সালে গুরু গোবিন্দ সিং আনন্দপুরে পৌঁছান। তার প্রাথমিক শিক্ষায়, গুরু গোবিন্দ সিং পাঞ্জাবি, সংস্কৃত, ফার্সি, আরবি শিখেছিলেন এবং একজন সৈনিক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। তিনি পাটনা শহরে হিন্দি ও সংস্কৃত অধ্যয়ন করেন। আনন্দপুরে তিনি সাহেব চাঁদের কাছে পাঞ্জাবি এবং কাজী পীর মুহাম্মদের কাছে ফারসি শিখেছিলেন।
সিরহিন্দের মুসলিম সেনাপতি ও নবাব ওয়াজির খান, যার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গুরু বেশ কয়েকটি যুদ্ধ করেছিলেন, তিনি দুই আফগান, জামশেদ খান এবং ওয়াসিল বেগকে গুরুর সেনাবাহিনীকে অনুসরণ করার নির্দেশ দেন যখন তারা বাহাদুরের সাথে দেখা করতে অগ্রসর হন। দু’জন গোপনে গুরুকে অনুসরণ করেছিলেন যার সৈন্যরা ভারতের দাক্ষিণাত্য অঞ্চলে ছিল এবং শিবিরে প্রবেশ করেছিল যখন শিখরা কয়েক মাস ধরে গোদাবরী নদীর কাছে অবস্থান করেছিল। তারা গুরুর কাছে প্রবেশ করে এবং জামশেদ খান তাকে নান্দেদে মারাত্মক জখম করে। সেই আঘাতেই গুরুর মৃত্যু হয়।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

মহা নায়ক উত্তম কুমার, বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি, প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।।।

উত্তম কুমার ভারতীয় চলচ্চিত্রের বাংলা সিনেমার একজন কিংবদন্তী এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মহানায়ক রূপে পূজিত। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলার প্রথম সুপারস্টার হলেন উত্তম কুমার। তার সময়ে তাকে ম্যাটিনি আইডল বলা হত।উত্তম কুমার, যিনি মহানায়ক নামে পরিচিত, ছিলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, সুরকার এবং গায়ক যিনি মূলত বাংলা সিনেমায় কাজ করতেন।

কুমার অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি (১৯৬৭), এবং চিরিয়াখানা (১৯৬৭) ছবিতে কাজের জন্য সেরা অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। কুমার ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম সফল এবং প্রভাবশালী অভিনেতা। কুমারের কর্মজীবন ১৯৪০-এর দশকের শেষ থেকে ১৯৮০ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিন দশক ধরে বিস্তৃত ছিল।
তিনি ২০০ টিরও বেশি চলচ্চিত্রে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন, এবং তার কিছু বিখ্যাত কাজ হল অগ্নি পরীক্ষা, হারানো সুর, বিচারক, সপ্তপদী, ঝিন্দর বান্দি, দেয়া নেয়া, লাল পাথর, জতুগৃহ, থানা থেকে আসছি।

জন্ম ও পরিবার—

অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায় ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর উত্তর কলকাতার আহিরীটোলায় মাতৃগৃহে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় এবং মা চপলা দেবী। তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার দুই ভাই ছিল, বরুণ কুমার ও তরুণ কুমার। তার ছোট ভাই তরুণ কুমারও একজন অভিনেতা ছিলেন। “উত্তম” ডাকনাম তাকে তার মাতামহ দিয়েছিলেন।

ছেলেবেলা—

উত্তম কুমারকে চক্রবেরিয়া হাই স্কুলে ভর্তি করা হয় এবং পরে সাউথ সাবারবান স্কুলে ভর্তি হন যেখানে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। স্কুলে পড়ার সময় তিনি “লুনার ক্লাব” নামে একটি নাট্যদলের নেতৃত্ব দেন। কুমারের প্রথম ভূমিকা ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মুকুটে। দশ বছর বয়সে, তিনি নাটকে তার ভূমিকার জন্য একটি ট্রফি জিতেছিলেন। তিনি তার উচ্চ শিক্ষার জন্য গোয়েঙ্কা কলেজ অফ কমার্স অ্যান্ড বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে যোগদান করেছিলেন, কিন্তু তার পরিবারের আর্থিক অসুবিধার কারণে এই শিক্ষাটি সম্পূর্ণ করতে পারেননি। তারপর তিনি কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট কে ক্লার্ক হিসেবে যোগদান করেন, যেখানে তিনি প্রতি মাসে ৭৫ টাকা বেতন পেতেন। নিদানবন্ধু ব্যানার্জির কাছে গান শেখেন। তিনি লাঠি খেলা শিখেছিলেন এবং কুস্তি অনুশীলন করতেন। তিনি পরপর তিন বছর ভবানীপুর সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনে সাঁতারে চ্যাম্পিয়ন হন। তার পরিবার সুহৃদ সমাজ নামে একটি অপেশাদার নাট্যদলে যুক্ত হন।

কর্মজীবন—

নিম্ন মধ‍্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হয়েছিলেন। তাই পারিবারিক আর্থিক অনটনের জন‍্য চলচ্চিত্র জগতে আসা সহজ ছিলো না। তাই এক সাধারণ পরিবারের বড়োছেলে হিসেবে সংসারের হাল ধরতে চাকরির খোঁজ শুরু করেন তিনি। অনেক খুঁজে ১৯৪৬ সালে কলকাতা বন্দরে কেরানির চাকরি নেন উত্তম কুমার। চাকরি করার জন‍্য কলেজ শেষ করতে পারেননি তিনি। যখন তিনি শেষ বর্ষের ছাত্র তখন তাঁকে কলেজ ছাড়তে হয় কাজের চাপে। পড়াশোনা খুব বেশি দূর করতে না পারার আক্ষেপ ছিলো তাঁর বরাবর। কলকাতা বন্দরে কেরানির চাকরিতে মাসিক ২৭৫ টাকা মাইনে দিয়ে কর্মজীবন শুরু হয় তাঁর। তবে চাকরি করলেও অভিনয় থেকে বিরত থাকতে পারেননি।

চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার—

শুরুতে অরুণ কুমার নামে কিছু বানিজ্যিক ভাবে অসফল সিনেমা দিয়ে নিজের কেরিয়ার শুরু করলেও কিছু সময় পর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি হয়ে ওঠেন বাংলার সব থেকে জনপ্রিয় নায়ক। কুমার ১৯৪৭ সালে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করেন, হিন্দি ফিল্ম মায়াডোরে অতিরিক্ত হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন, যেটি কখনও মুক্তি পায়নি। তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল ১৯৪৮ সালের চলচ্চিত্র দৃষ্টিদান, যা নিতিন বোস পরিচালিত এবং অসিত বারান অভিনীত। পরের বছর, তিনি কামোনা ছবিতে নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন, আবার তার নাম পরিবর্তন করে উত্তম চ্যাটার্জি রাখা হয়। পরে তিনি আবার নিজের নাম পরিবর্তন করে অরুণ কুমার রাখেন। পাহাড়ী সান্যালের পরামর্শে ১৯৫১ সালের ছবি সহযাত্রী প্রথম যেখানে তিনি উত্তম কুমার নামটি ব্যবহার করেছিলেন। কুমারের প্রথম দিকের অনেক ছবিই ফ্লপ ছিল এবং তাকে ডাকনাম দেওয়া হয়েছিল “ফ্লপ মাস্টার জেনারেল”।
১৯৫২ সালে, নির্মল দে পরিচালিত বাসু পরীবারে কুমারের একটি সহায়ক ভূমিকা ছিল, যেটি ছিল তার প্রথম ভূমিকা যা প্রশংসা লাভ করে। পরের বছর, তিনি একই স্টুডিও এবং পরিচালকের সাথে শেরে চুয়াত্তর চলচ্চিত্রে কাজ করেন, যেটি তার প্রথমবার সুচিত্রা সেনের সাথে জুটি বেঁধেছিল। তার প্রথম যুগান্তকারী ভূমিকা ছিল ১৯৫৪ সালে অগ্রদূতের চলচ্চিত্র অগ্নিপরীক্ষাতে।

উত্তম কুমার ১৯৬৬ সালে নায়ক ছবিতে প্রথমবার সত্যজিৎ-এর সাথে কাজ করেন। নায়ক-এ কুমারকে দেখার পর, অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলর তার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং কাজ করতে চেয়েছিলেন এবং তার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন।
১৯৬৭ সালে, উত্তম কুমার রায়ের সাথে চিরিয়াখানায় কাজ করেন। ভারত সরকার যখন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রবর্তন করে, তখন উত্তম কুমার ছিলেন প্রথম অভিনেতা যিনি চিরিয়াখানা এবং অ্যান্টনি ফিরিঙ্গিতে অভিনয়ের জন্য ১৯৬৮ সালে ১৫তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন।
উত্তম কুমার প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলা সিনেমায় কাজ করেছেন, ১৯৪৮ সালে তাঁর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি দৃষ্টিদান থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তাঁর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা মোট ২০২টি, যার মধ‍্যে ১৫টি হিন্দি ছবিও আছে। তাঁর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলির মধ‍্যে অগ্নিপরীক্ষা, হারানো সুর, সপ্তপদী, ঝিন্দের বন্দী, জতুগৃহ, লাল পাথর, থানা থেকে আসছি, রাজদ্রোহী, নায়ক, এন্টনী ফিরিঙ্গি, চৌরঙ্গী, এখানে পিঞ্জর, স্ত্রী, অমানুষ, অগ্নীশ্বর, সন্ন‍্যাসী রাজা ইত্যাদি অন‍্যতম। উত্তম কুমার ভারতের প্রথম অভিনেতা যিনি ১৯৬৮ সালে জাতীয় পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মান পান। ১৯৬৭ সালের চলচ্চিত্র চিড়িয়াখানা ও এন্টনী ফিরিঙ্গির জন‍্য, তাঁকে বাংলা চলচ্চিত্রের সবচাইতে জনপ্রিয় ও সফল অভিনেতা হিসেবে ধরা হয়।

উত্তম কুমারের সাথে জুটি—

উত্তম-সুচিত্রা—

সুচিত্রা সেন উত্তম কুমার – এই জুটি বাংলা সিনেমার অমর জুটি নামে খ্যাত। তারা দুজন এক সাথে প্রায় ৩০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন এবং সবক’টি ছবি চুড়ান্ত সাফল্যলাভ করেছে। তাদের অভিনীত কিছু উল্লেখযোগ্য ছবি হল – হারানো সুর, অগ্নী পরীক্ষা, প্রিয় বান্ধবী, শাপমোচন, ইন্দ্রাণী, সপ্তপদী ইত্যাদি।

উত্তম-সুপ্রিয়া—

সোনার হরিণ থেকে তাদের জুটির জয়যাত্রা শুরু। এরপর তারা একে একে উত্তরায়ণ, কাল তুমি আলেয়া, সন্যাসী রাজা, বন পলাশীর পদাবলী, বাঘ বন্দীর খেলা ইত্যাদি জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করেন।

উত্তম-সাবিত্রী—

শেষ দিকে উত্তম কুমারের সাথে সাবিত্রী চ্যাটার্জীর জুটি খুবই জনপ্রিয় হয়। তাদের করা উল্লেখ যোগ্য কিছু ছবি হল হাত বাড়ালেই বন্ধু, দুই ভাই, নিশি পদ্ম, মমের আলো ইত্যাদি। ধন্যি মেয়ে বা মৌচাকের মত কমেডি ছবিতে সাবিত্রীর সাথে জুটি বেঁধে উত্তম কুমারের হাসির অভিনয় আজও সকল দর্শকের মন জয় করে।

ব্যক্তিগত জীবন—

তিনি ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত গৌরী দেবীর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। এবং গৌতম চট্টোপাধ্যায় নামে এক সন্তান ছিল। তবে গৌতম চট্টোপাধ্যায় পরবর্তীকালে ক্যান্সারে মারা যান। ১৯৬৩ সালে তিনি পরিবার ছেড়ে চলে যান এবং জীবনের শেষ ১৭ বছর তিনি অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীর সাথেই ছিলেন। উত্তম কুমারের সঙ্গে সুপ্রিয়া দেবীর গভীর সম্পর্কে ছিল। শোনা যায় তিনি সুপ্রিয়া দেবীকে বিয়েও করেছিলেন।

পুরস্কার এবং স্বীকৃতি—

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার—

১৯৬১: বাংলায় দ্বিতীয় সেরা ফিচার ফিল্মের জন্য সার্টিফিকেট অফ মেরিট – সপ্তপদী (প্রযোজক হিসেবে)
১৯৬৩: বাংলায় সেরা ফিচার ফিল্মের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার – উত্তর ফাল্গুনী (প্রযোজক হিসেবে)

১৯৬৭: সেরা অভিনেতার জন্য জাতীয় পুরস্কার – অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, চিরিয়াখানা।

প্রয়াণ—

বাংলা সিনেমার মহানায়ক উত্তম কুমার টলিউডকে কার্যত খ্যাতির শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনিই। অথচ মাত্র ৫৪ বছর বয়সেই আচমকা কাউকে কিছু টের পেতে না দিয়েই খাতির মধ্য গগনে থাকতে থাকতেই প্রয়াত হন তিনি। সেই সময় ওগো বঁধু সুন্দরী সিনেমার শুটিং করছিলেন। শেষ দিনের শুটিং চলাকালীন হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়। তারকার মতই নিঃশব্দে মৃত্যু হয়েছিল তার। ১৯৮০ সালের ২৪শে জুলাই, তারিখটা টলিউডের এর জন্য একটা কালো দিন। কারণ এই দিনেই প্রয়াত উত্তম কুমার। তার মৃত্যু বাংলা সিনেমা জগতে নেমে আসে এক গভীর শোকের ছায়া। তার অন্তিম যাত্রায় সারা কলকাতা রাজ পথে বেরিয়ে আসে। তার অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতে কলকাতার বহু মানুষ শোক প্রকাশ করেন। বাংলা সিনেমা যতদিন থাকবে উত্তম কুমার মহানায়ক হয়েই রয়ে যাবেন সকল বাঙালীর মনে।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This