Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ ১৫ আগস্ট, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।

আজ ১৫ আগস্ট। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-
দিবস—–
(ক)  ভারতের স্বাধীনতা দিবস (১৯৪৭)।
(খ) বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস।
আজ যাদের জন্মদিন—-
১৯০০ – সন্তোষ কুমার মিত্র, ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন বিপ্লবী শহীদ।
১৯১২ – (ক) আমির খাঁ, ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী।
(খ) ওয়েন্ডি হিলার, ইংরেজ অভিনেত্রী, ডেম উপাধি প্রাপ্ত ও অস্কার বিজয়ী।
১৯১৫ – সত্যেন্দ্রনাথ মৈত্র সারা ভারতে আধুনিক রীতিতে সাক্ষরতা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ।
১৯১৭ – খোদেজা খাতুন, বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ, লেখক ও সমাজ কর্মী।
১৯২২ – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, একজন বাঙালি কথাশিল্পী।
১৯২৬ – (ক) সুকান্ত ভট্টাচার্য, বাংলা সাহিত্যের প্রগতিশীল চেতনার কিশোর কবি।
(খ) পণ্ডিত প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রখ্যাত বাঙালি উচ্চাঙ্গ কণ্ঠসঙ্গীত শিল্পী।
১৯৩১ – ভারতীয় বাঙালি কবি শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়।
১৯৩৭ – নয়ীম গহর, বাংলাদেশী গীতিকার।
১৯৪৫ – আল্যাঁ জুপে, ফ্রান্সের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
১৯৪৫ – খালেদা জিয়া, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
১৯৪৭ – রাখী গুলজার, ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।
১৯৫১ – লায়লা আরজুমান বানু, বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ।
১৯৬৮ – আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন, বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ।
১৯৭৩ – মারজুক রাসেল, বাংলাদেশী কবি, গীতিকার, মডেল এবং অভিনেতা।
১৯৮৯ – ঈশ্বর পাণ্ডে, ভারতীয় ক্রিকেটার।
১৮৭২ – অরবিন্দ ঘোষ, বাঙালি রাজনৈতিক নেতা, আধ্যাত্মিক সাধক এবং দার্শনিক।
১৮৭৩ – রমাপ্রসাদ চন্দ ,ভারতীয় বাঙালি ইতিহাসবিদ এবং পুরাতত্ত্ববিদ।
১৮৭৯ – ইথেল ব্যারিমোর, মার্কিন অভিনেত্রী, অস্কার বিজয়ী।
১৮৯২ – লুই দ্য ব্রোয়ি, ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী।
১৭৭১ – ওয়াল্টার স্কট, স্কটল্যান্ডীয় ঐতিহাসিক উপন্যাস রচয়িতা এবং কবি।
ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-
২০০৫ – ইহুদীবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনীদের প্রতিরোধের মুখে গাজা উপত্যকা থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়৷
২০০৬ – বাংলাদেশের কাছে পরপর দুইবার হোয়াইট ওয়াশ হয় কেনিয়া।
২০০৮ – ২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে মহিলাদের ১০০০০ মিটার দৌড়ের ফাইনালে তিরুনেশ দিবাবা ২৯:৫৪.৬৬ সময়ে নতুন অলিম্পিক রেকর্ড স্থাপন করেন। একই দিনে মহিলাদের ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতার প্রতিযোগিতা শেষ হবার সাথে সাথে মহিলাদের ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতার প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
২০২১ – তালেবান কর্তৃক কাবুল দখলকৃত হয়।
১৯৪১ – পানামা খালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।
১৯৪৭ – (২৯ শ্রাবণ, ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ,শুক্রবার) ব্রিটিশ শাসন হতে মুক্তি পেয়ে ভারত স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে জন্ম নেয়।
১৯৪৭ – পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ গভর্নর জেনারেল হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন।
১৯৪৮ – কোরীয় উপদ্বীপ বিভক্ত হয়ে দক্ষিণ কোরিয়া স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।
১৯৬০ – আফ্রিকার দেশ কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ফরাসী উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে৷
১৯৬৫ – ভারতে প্রথম দূরদর্শন প্রদর্শিত হয়।
১৯৭১ – অপারেশন জ্যাকপট সংগঠিত হয়।
১৯৭৫ – বাংলাদেশের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সামরিক অভ্যুত্থানে তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন।
১৯৭৫ – বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সৌদি আরব।
১৯৮২ – ভারতে প্রথম রঙিন টেলিভিশনে দূরদর্শনের সম্প্রচার শুরু হয়।
১৮৫৪ – বাংলায় প্রথম রেলপথ স্থাপন।
১৮৭২ – ইংল্যান্ডে প্রথম গোপন ব্যালটে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
১৮৭৫ – ব্রিটিশবিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন ইন্ডিয়ান লীগের জন্ম।
১৮৮৯ – মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাব কলকাতার প্রসিদ্ধ ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়।
১২৮১ – জাপান আক্রমণ করতে গিয়ে কুবলাই খানের নৌবহর ঝড়ে পতিত হয়ে ধ্বংস হয়। ইতিহাসে এ ঘটনা ডিভাইন উইন্ড বা দৈব বাতাস বলে পরিচিত।
এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-
২০২০ – প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর।
১৯১০ – গিরিশ চন্দ্র সেন, ইসলামবিষয়ক পণ্ডিত ও ব্রাহ্মধর্ম-প্রচারক।
১৯৪২ – মহাত্মা গান্ধীর ব্যক্তিগত সচিব মহাদেব দেসাই।
১৯৬০ – এরল হোমস, ইংরেজ ক্রিকেটার।
১৯৬৯ – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়নের ছাত্র আব্দুল মালেক শহিদ হন।
১৯৭৫ (ক) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও প্রথম রাষ্ট্রপতি।
(খ)বেগম ফজিলাতুন্নেসা, বাংলাদেশের প্রথম ফার্স্ট লেডি এবং প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী।
১৯৭৮ – বাণীকুমার নামে সুপরিচিত বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য, ভারতীয় বাঙালি বেতার সম্প্রচারক, গীতিকার, প্রযোজক ও নাট্য পরিচালক।
১৯৯৪ – কবি ও সাহিত্য সমালোচক হরপ্রসাদ মিত্র।
১৮৩৬ – ইতালীয় নোবেল বিজয়ী লেখক গারসিয়া ডেলেডা।
৭৬৭ – আবু হানিফা, ফিকহশাস্ত্রের একজন প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞ এবং হিজরী প্রথম শতাব্দীর একজন গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ব্যক্তিত্ব।
।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ ১৪ আগস্ট, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।।।

আজ ১৪ আগস্ট। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-
দিবস—–
(ক) পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস (১৯৪৭)
আজ যাদের জন্মদিন—-
১৯২৩ – প্রথিতযশা প্রবীণ ভারতীয় সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার।
১৯২৬ – রনে গোসিনি, ফরাসি কমিকস সম্পাদক এবং পোলিশ বংশোদ্ভূত লেখক।
১৯৪২ – আমজাদ হোসেন, বাংলাদেশের অভিনেতা, লেখক এবং চলচ্চিত্রকার।
১৯৪২ – শহীদ কাদরী, বাংলাদেশি কবি ও সাহিত্যিক।
১৯৪৫ – স্টিভ মার্টিন, মার্কিন অভিনেতা, কৌতুকাভিনেতা, লেখক, প্রযোজক, নাট্যকার ও সঙ্গীতজ্ঞ।
১৯৪৫ – ভিম ভেন্ডার্স, জার্মান চলচ্চিত্র নির্মাতা, নাট্যকার, লেখক, আলোকচিত্রী।
১৯৫৯ – মার্সিয়া গে হার্ডেন, আমেরিকান অভিনেত্রী।
১৯৬২ – রমিজ রাজা, সাবেক পাকিস্তানি ডান-হাতি ব্যাটসম্যান ক্রিকেটার।
১৯৬৬ – হ্যালি বেরি, মার্কিন মডেল, অভিনেত্রী, ও প্রযোজক এবং বিশ্ব সুন্দরী যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮৬।
১৯৬৮ – প্রবীণ আম্রে, সাবেক ভারতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।
১৯৭১ – প্রমোদ্যা বিক্রমাসিংহে, সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।
১৯৮১ – কফি কিংস্টন, ঘানা-মার্কিন পেশাদার কুস্তিগীর।
১৯৮৩ – মিলা কুনিস, ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন অভিনেত্রী।
১৯৮৩ – সুনিধি চৌহান, ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় একজন সঙ্গীতশিল্পী।
১৮৬৭ – নোবেলজয়ী ইংরেজ ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার জন গলসওয়ার্দ।
১৮৯৭ – লাবণ্য প্রভা ঘোষ, ভারতের একজন গান্ধীবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং মানভূম জেলায় অনুষ্ঠিত বাংলা ভাষা আন্দোলনের একজন নেত্রী ছিলেন।
১৭৭৭ – হান্স ক্রিশ্চিয়ান ওরস্টেড, ড্যানিশ পদার্থবিজ্ঞানী এবং রসায়নবিদ।
১২৫৭ – জাপান সম্রাট হানাজোনো।
ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-
২০০৮ – গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে পুরুষদের ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতার প্রতিযোগিতা শেষ হয়। একই দিনে মহিলাদের ৮০০ মিটার, ১০০ মিটার ও পুরুষদের ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। মহিলাদের ৮০০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতার প্রতিযোগিতা চলাকালীন, রেবেকা অ্যাডলিংটন ২০০০ সালের অলিম্পিকে সৃষ্ট ব্রুক বেনেটের অলিম্পিক রেকর্ড প্রাথমিক পর্যায়ের ৪নং হিটেই ৮:১৮.০৬ সময়ে ভাঙেন।
১৯০০ – ২০০ মার্কিন নৌ-সেনা অবতরণ করে পিকিং দখল করে নিলে বক্সার বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটে।
১৯১২ – মার্কিন মেরিন সেনা নিকারাগুয়া দখল করে।
১৯৩১ – ইলা সেন ও মীরা দেবী নামে কুমিল্লার অষ্টম শ্রেণীর দুই ছাত্রী ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী তৎপরতার অংশ হিসেবে কুমিল্লার ম্যাজিস্ট্রেট সিজি স্টিভেন্সকে গুলি করে হত্যা করে।
১৯৪১ – রুজভেল্ট ও চার্চিল আটলান্টিক চার্টার নামক শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
১৯৪৫ – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তিম পর্যায়ে জাপান রাশিয়ার কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে।
১৯৪৭ – ব্রিটিশ শাসন হতে পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভ।
১৮২৫ – বৃটিশ পদার্থ বিজ্ঞানী ও রসায়নবিদ মাইকেল ফ্যারাড অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার পর অপরিশোধিত তেল থেকে পেট্রোল আবিষ্কার করতে সক্ষম হন৷
১৮৪৮ – গঠিত হয় ওরেগন এলাকা।
১৮৮৫ – জাপান জং প্রতিরোধক রং প্যাটেন্ট করে।
১৭৬২ – ইংল্যান্ডের নৌবাহিনী হাভানা দখল করে।
১৭৯০ – সুইডেন ও রাশিয়া শান্তিচুক্তি করে
১৫৫১ – তুরস্কের নৌবাহিনী ত্রিপোলি দখল করে।
১৫৮৫ – রানি প্রথম এলিজাবেথ নেদারল্যান্ডসের সার্বভৌমত্ব খারিজ করে দেন।
১৪৩৭ – মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কার।
এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-
২০০৪ – চেসোয়াফ মিওশ, পোলীয়-মার্কিনী কবি, লেখক, শিক্ষাবিদ এবং অনুবাদক।
২০১১ – শাম্মী কাপুর, ভারতের মুম্বইয়ের চলচ্চিত্র জগতের জনপ্রিয় চিত্রতারকা শিল্পী ও পরিচালক।
১৯৩৫ – নোবেলজয়ী ফরাসি পদার্থবিদ ফ্রেদেরিক জোলিও-ক্যুরি।
১৯৩৮ – হিউ ট্রাম্বল, বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও অধিনায়ক।
১৯৪১ – নোবেলজয়ী ফরাসি রসায়নবিদ পল সাবাতিয়।
১৯৫৬ – বের্টল্ট ব্রেখট, একজন জার্মান নাট্যকর্মী, নাট্যকার ও কবি।
১৯৬৬ – টিপ স্নুক, দক্ষিণ আফ্রিকান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও অধিনায়ক।
১৯৭২ – ফরাসি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও কবি ঝুল রম্যাঁ।
১৯৮১ – ডাডলি নোর্স, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার।
১৯৮৫ – গেল সন্ডারগার্ড, একজন মার্কিন অভিনেত্রী।
১৭৭৪ – জোহান জ্যাকব রেইস্ক, জার্মান চিকিৎসক ও পণ্ডিত।
১৪৩৩ – পর্তুগালের রাজা প্রথম জোহান।
।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ভারতের স্বাধীনতা  ও  স্বাধীনতার পরবর্তী সময়।।।

আমরা ভারতবাসীরা  ভুলতে পারিনি পরাধীনতার জ্বালা  ।  ব্রিটিশ সরকারের তিক্ত দুশো বছরের শৃঙ্খলাবদ্ধের  ইতিহাস । ইংরেজদের বিভৎস দমন নীতি । ইংরেজ সরকারের শাসন ও শোষন ।  ভারতীয়দের উপরে  অমানবিক অত্যাচার । ব্রিটিশদের পৈশাচিক দমন নীতির জন্য ভারতীয় সমাজের মধ্যে বিশৃঙ্খলা । দীনবন্ধু মিত্রের “নীল দর্পণ” নাটকটি থকে আরও  জানতে পারি নীল চাষের করুণ কাহিনী ও সাঁওতাল সমাজের উপর ইংরেজদের অমানবিক অত্যাচারের ঘটনা  । ইংরেজ সরকারের শোষনের মাত্রা ছিলো লাগামছাড়া । নিরীহ ভারতবাসীর উপর কারণে ও অকারণে চলতো অকথ্য নীপিড়ন ।  দেশবাসীদের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে  নির্মম শোষন আজও ভারতীয়দের হৃদমাঝারে উজ্জীবিত । .
ব্রিটিশ সরকারের দমননীতির বিরুদ্ধে সারা দেশ গর্জে উঠে ।
দেশবাসী সোচ্চার হয় । সারা দেশে বিদ্রোহ শুরু হয় । দেশ মাতার শৃঙ্খলমোচনে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে দেশের আনাচে কানাচে । ব্রিটিশদের অত্যাচারের আগুনে দগ্ধ হয়ে  আত্নবলিদান ঘটে অনেক দেশপ্রেমী ভারতীয়ের । ইংরেজদের শোষনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে, ফলে অনেক রক্তক্ষরণ ঘটে । অনেক বীর শহিদ হন । ইংরেজদের উৎখাতের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গর্জে উঠেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতাজী সুভাষ । দেশকে শৃঙ্খলামুক্ত করতে অকালে প্রাণ হারান বিনয়-বাদল-দীনেশ । শহিদ হন ক্ষুদিরাম বসু । দেশের পরাধীনতার গ্লানি ঝেড়ে ফেলার তাগিদে ভারতবাসীর ত্যাগ অবর্ণনীয় । দেশ স্বাধীনের মূলমন্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন মহাত্না গাঁধী, বিপিন চন্দ্র পাল, সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল, বাল গঙ্গাধর তিলক, আরও অনেকে । অনেক ত্যাগ, অনেক রক্তক্ষরণ, অনেক বলিদান, অনেক শহিদের পরে আমাদের দেশ ভারতবর্ষ ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা লাভ করে । ইংরেজদের অপশাসন দূর করে দেশবাসী আনন্দে মেতে উঠে । ভারতে উদয় হয় নতুন সূর্যের ।
স্বাধীনতা লাভ করার পর ভারত ভাগ হয়ে যায়, ভারত ও পাকিস্তান । পাকিস্তান আবার দুটো ভাগে ভাগ হয়, পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান । পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান ভারতের সহযোগীতায় স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে “বাংলাদেশ” গঠন করে  । পাকিস্তান ও বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্র হলেও ভারত একটি “সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক” রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বমাঝারে আবির্ভূত হয় । বাবা সাহেব ভীম রাও আম্বদকরের অক্লান্ত পরিশ্রমে সংবিধানের বাস্তবরূপ ঘটে । ১৯৫০ সালের ২৬শে জানিয়ারি দেশে সংবিধান লাগু হয় । ১৯৩৫ সালের ভারত সরকার আইনের পরিবর্তে ভারতীয় সংবিধান কার্যকরী হয় । এটি ভারতের একটি জাতীয় দিবস। ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি ভারতীয় গণপরিষদে  সংবিধান কার্যকরী হলে ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে পরিণত হয় ।
৭৬ তম স্বাধীনতা দিবস । প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও সারা দেশে মহাধুমধামে পালিত হচ্ছে । এবারের স্বাধীনতা উদযাপন একটা মাত্রা বহন করছে । কেননা দেশে এবছর ৭৫ত্ম স্বাধীনতা দিবস । যার জন্য স্বাধীনতা দিবসে গুরুত্ব অপরিসীম ।  উল্লেখ থাকে যে, স্বাধীনতা দিবসে দিল্লির লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন দেশের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী । তা ছাড়া দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে ।
স্বাধীনতার পরেও আমাদের দেশ অনেক সমস্যায় জর্জরিত । বেকার সমস্যা ও দারিদ্রতা জ্বলন্ত উদাহরণ । তবুও স্বাধীন দেশের একজন দেশবাসী হিসাবে আমরা গর্বিত । তাই বিনম্র চিত্তে কুর্ণিশ জানাই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের । যাদের আত্নত্যাগের উৎকৃষ্ট নিদর্শন আমাদের দেশের স্বাধীনতা ।
।।কলমে : দিলীপ  রায়।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্বাধীনতা দিবসের মর্যাদা : তন্ময় সিংহ রায়।।।

বৈচিত্র্যময় কর্মব্যস্ততার হিমবাহের নিচে চাপা পড়ে পিষ্টে থাকা দেশাত্মবোধটা পনের’ই আগষ্টের দু’দিন আগে জেগে উঠেই,গলার গীটারের তারের সুরঝঙ্কারে আকাশ বাতাসকে আন্দোলিত করবে…..
“সারে জহাঁ সে অচ্ছা হিন্দোসিতাঁ হমারা,
হম বুলবুলেঁ হ্যাঁয় ইসকী, ইয়ে গুলসিতাঁ হমারা”…
পনের’ই আগষ্ট শেষ,
দু’দিনের অতিমাত্রার জেগে ওঠা আদর্শের সুপ্ত আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ স্তব্ধ!
আবার বিভিন্ন কর্মব্যস্ততায় দেশাত্মবোধটা প্রায় সারাবছর শীতঘুমে আচ্ছন্ন!!….
প্রশ্ন করলেই স্মার্ট উত্তর, ‘আদর্শটা(দেশাত্মবোধের) কি দেখানোর জিনিস?…না চিৎকার করে বলার জিনিস?….যা আছে তা মনেই থাকে।’ .

বহিঃপ্রকাশ  -৫ ডিগ্রী থেকে ০ ডিগ্রীর মধ্যে ওঠা নামা করে।
‘প্রফুল্ল চাকী’ নামটা আজ শোনা শোনা লাগে, বিশেষতঃ বর্তমান প্রজন্মের কাছে, হয়তো কোনো জনপ্রিয় গায়ক/ফুটবলার হবেন!!
হানি সিং(ভুল মার্জনীয়),ন্যারো জিন্স আর স্লিভলেস না চিনলেই আজ চরম লজ্জা, ব্যাকডেটেড্!
রাজমিস্ত্রির ভূমিকায় আমরাই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মে,চেতন/অবচেতন মনেই নানাভাবে আত্মকেন্দ্রিকতার দেওয়াল গাঁথছি অত্যন্ত যত্নসহকারে, বিপ্লবী আদর্শ না!
মুখ্য মন্ত্র… ‘তোরা লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হ, নিজের পায়ে দাঁড়া, অনেক পয়সা উপার্জন কর ইত্যাদি।’
ওসব বিপ্লবী মনোভাবাপন্ন জীবন ঝুঁকিপূর্ণ,   লাভ নেই/বোকারা নেয়।
পুঁথিগত শিক্ষায় বিদগ্ধজন /আর্থিক  সমৃদ্ধশালী আজও খুঁজলে মিলবে কিন্তু মানসিক সমৃদ্ধশালী ও সামাজিক শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিতদের আজ হাতছানি দেয় ডাইনোসর।
অভিভাবক আমরা সবাই কিন্তু ‘যথার্ত’ শব্দটা ত্যাগ করেছে আজ অধিকাংশের সান্নিধ্য, যার  ভবিষ্যত পরিণাম মাঠে-ঘাটে, সমাজের বিভিন্ন জায়গায় আত্মকেন্দ্রিকতার কালো কালো ছোপ!
হিংসা,লোভ, ঈর্ষ্বা, লালসা, স্বার্থপরতায় ভারতের আকাশটা আজ গহীন জমকালো অন্ধকার মেঘে ঢাকা!
বঞ্চিত ফোটন কণাগুলো দুর্ভেদ্য মেঘের স্তরকে উপেক্ষা করে এ দেশকে আলোকিত করতে চেয়েও বারে বারে ব্যর্থ!!
একজন শিক্ষিত অর্থবান/ অর্থবান /শিক্ষিত মানুষের চেয়ে একজন শিক্ষিত মানসিকতার মানুষের প্রয়োজন আজ অত্যাধিক বেশি। দেশমায়ের স্বার্থের সিকিউরিটি গার্ড অপেক্ষা নিজের ও নিজের পরিবারের সিকিউরিটি গার্ড সংখ্যায় আজ অতিক্রম করেছে তার মাত্রাকে!  ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকী ও ভগৎ সিংহ, রাজগুরু’র দেখা আজও মেলে মাঝে মধ্যে তবে এশিয়ান পেইন্টস বা বার্জারের প্রলেপযুক্ত একটা সম্পূর্ণ দেহে।

বলাবাহুল্য, সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত! ঐতিহাসিক সিন্ধু সভ্যতার জন্ম এই অঞ্চলেই।  হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ—বিশ্বের এই চার ধর্মের উৎসভূমি ভারত।
খ্রিষ্টীয় প্রথম সহস্রাব্দে জরথুষ্ট্রীয় ধর্ম (পারসি ধর্ম), ইহুদি ধর্ম, খ্রিষ্ট ও ইসলাম ধর্ম এদেশে প্রবেশ করে, ও ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে ভারতীয় ভূখণ্ডের অধিকাংশ অঞ্চল নিজেদের শাসনাধীনে আনতে সক্ষম হয় ক্রমে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই দেশ পুরোদস্তুর এক ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়।
মানুষ জন্মগতভাবেই স্বাধীন, তার এই জন্মগত অধিকার যখন অন্যের দ্বারা লুণ্ঠিত হয়, তখনই সে প্রতিবাদ করে ওঠে ও সর্বস্বের বিনিময়ে সচেষ্ট হয় নিজের স্ব-অধীনতা প্রতিষ্ঠায় এবং তার-ই জ্বলন্ত নিদর্শন ছিলো প্রধানত অহিংস, অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলন এবং বিভিন্ন চরমপন্থী গুপ্ত রাজনৈতিক সমিতির সহিংস আন্দোলন। এই আন্দোলনের পথে পরিচালিত এক দীর্ঘ রক্তাক্ত সংগ্রামের নির্মম ও করুণ ইতিহাসের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে অবশেষে ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট বর্বর ব্রিটিশ রাজশক্তির শাসনকর্তৃত্ব থেকে শৃঙ্খলমুক্ত হয়ে ভারত অর্জন করেছিল স্বাধীনতা!! সে স্বাধীনতা ছিলো হিন্দুর, সে স্বাধীনতা ছিলো মুসলমানের, সে স্বাধীনতা ছিলো খৃষ্টান, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ-এর কিন্তু আজ….??                                              একবিংশ শতাব্দীর পোষাকি ভদ্রের স্বাধীন আমরা আত্মকেন্দ্রিকতায় নিমজ্জিত হয়ে পরিনত হয়েছি পূর্ণ বর্বরে! রক্তশূন্য শিরা-উপশিরায় আজ-ও আমাদের বইছে চরম ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, অর্থলালসা, হিংসা ও ঈর্ষ্বা ! জাতিতে-জাতিতে, মানুষে-মানুষে সম্পর্কের মাঝে আজ পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্প!
অনুজীবের ভূমিকায় সম্পর্কের ‘সু’-টা ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের তলায় অসহায়ভাবে শুয়ে ছটফট করছে! এদিকে রাতের অন্ধকার থেকে মুক্তি লাভ করেই ধর্ষকটা আজ চিৎকার করে বলে ওঠে ‘সারে যাঁহা সে আচ্ছা, হিন্দুস্থাঁ হমারা,’ আবার  বিশিষ্ট কোনো জন সাধারণ জনগণের টাকাকে ড্রাইফুড করে স্বাস্থ্যবান পাকস্থলী নিয়ে স্বাধীনতা দিবসে, ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকার দড়িতে হাত রেখে আদর্শে মালভূমি করেন তাঁর বুক। সারা দেশ জুড়ে চলছে দুর্নীতির তান্ডব নৃত্য! পরম তৃপ্তিসহকারে আজ ব্যাকটেরিয়াগুলো শোষণ করছে  ‘সারে যাঁহা সে আচ্ছা, হিন্দুস্থাঁ হমারা’র পুষ্টিরস!   অশুভকে ধ্বংস ও শুভ-কে প্রতিষ্ঠার জন্যে যে প্রধান অস্ত্র একতা-কে হাতিয়ার করে এসেছিলো মূলত স্বাধীনতা সে একতার অবস্থান আজ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের ঠিক পাশে। স্বাধীনতা দিবসে আজ কর্ণকুহরে প্রবেশ করে ‘প্যায়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া’ও বোধ করি স্বাধীন হওয়ার আনন্দে একটু আধটু বিপিন বাবু’র কারণ সুধা!
নেতাজী সুভাষ, ক্ষুদিরাম ও বিনয়, বাদল, দিনেশ কিংবা ভগৎ সিং-এর আত্মবলিদান প্রকৃতভাবে আজও ছটফট করে নানা রঙের মাকড়সার জালে! এনাদের বোধ করি শুধুই মুখস্থ করা হয় ডিগ্রী বাড়াবার স্বার্থে।
প্রকৃত সত্য ছুঁড়ে মারা, একবিংশে বিপদের সংকেত বহন করে অর্থাৎ বাক্ স্বাধীনতা এ যুগে প্রতিবন্ধীর ভূমিকায়! একবিংশের এ স্বাধীনতা দিবসের আনন্দে/এ হেন বিচিত্র দেশপ্রেম-এ সত্যিই বিস্ময় জাগে!
তিরঙ্গাটায় আজও পাওয়া যায় টাটকা লাল রক্তের গন্ধ!!
প্রশ্ন এখানেই যে সত্যিই সেই  ‘সর্বশ্রেষ্ঠ জীব’ হিসাবে ‘স্বাধীনতা দিবস’-এর প্রকৃত মর্যাদা বজায় রাখার যোগ্যতা আজ-ও আমরা তৈরি করতে পেরেছি/পারছি কি?
সত্যিই কি আমরা প্রকৃত দেশপ্রেমী??
(ব্যতিক্রম অবশ্যই স্বীকার্য ও ভূল-ত্রুটি মার্জনীয়।)

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিকন্যা, মোহিনী দেবী।

সূচনা—
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে মোহিনী দেবী  প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু শহীদ ভগৎ সিং-এর মতই নয় বরং শক্তিশালী নারীদের দ্বারা প্রশস্ত হয়েছিল যারা তাদের মাটিতে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিল। মোহিনী দেবী  ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।
ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা ছিলেন তিনি।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক স্মরণীয় নাম
মোহিনী দেবী। তিনি ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা। এছাড়া তার পরিবার বাংলাদেশের প্রগতিমুলক শিক্ষা ও সংস্কৃতির সাথে জড়িত ছিল। ইতিহাসে তাঁর নাম আজও স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। জেনে নেবো তাঁর সংগ্রামী জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
জন্ম ও পরিবার—-
মোহিনী দেবী ১৮৬৩ সালে ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জে এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রামশঙ্কর সেন ও মাতার নাম উমাসুন্দরী দেবী। ১২ বছর বয়সে তারকচন্দ্ৰ দাশগুপ্তের সঙ্গে বিবাহ হয়। শ্রমিক আন্দোলনের নেত্রী প্রভাবতী দাশগুপ্ত।
শিক্ষাজীবন—-
মোহিনী দেবী ভিক্টোরিয়া স্কুলের প্রথম হিন্দু ছাত্রী, কলকাতার অভিজাত অ্যাংলিকান প্রতিষ্ঠান, মোহিনী দেবী (১৮৬৩ – ১৯৫৫) তার মূলে একজন জাতীয়তাবাদী ছিলেন।  ঢাকার বেউথার রামশঙ্কর সেনের কন্যা, বারো বছর বয়সে তারকচন্দ্র দাশগুপ্তের সাথে তার বিয়ে হয়।  তা সত্ত্বেও, তিনি পন্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী এবং রামতনু লাহিড়ীর অধীনে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছিলেন, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগের কলকাতার অধ্যবসায়ী।  তিনি ইউনাইটেড মিশনের একজন মহিলা শিক্ষকের কাছে ইংরেজি শিখেছিলেন।  এইভাবে তিনি ভারতের সমসাময়িক উন্নয়ন সম্পর্কে সচেতন হন এবং শুরু থেকেই বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হন।
রাজনৈতিক জীবন—-
১৯২১-২২ সালে তিনি গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে কারাবরণ করেন। ১৯৩০-৩১ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে নেতৃত দেন। এজন্য তাকে ছয় মাসের জেল খাটতে হয়েছিল। ‘নিখিল ভারত মহিলা সমিতির’ সভানেত্রী হিসেবে তার ভাষন উচ্চ প্রশংসিত হয়। ১৯৪৬ সালের দাঙ্গায় মুসলিম প্রধান অঞ্চল এন্টালি বাগানে নিজের বাড়িতে থেকে হিন্দু মুসলিম ঐক্যের প্রচার চালিয়েছিলেন। সে সময় তার বন্ধু-বান্ধব আত্নীয় পরিজন তাকে তিরস্কার করে কিন্তু তাতে তিনি সংকল্প হারান নি। মোহিনী দেবী একদিকে স্বাধীনতা আন্দোলন এর পক্ষে কাজ করেছিলেন অন্যদিকে নারী শিক্ষা, নারী স্বাধীনতা, সমাজসংস্কারমূলক কাজ।
স্বাধীনতা আন্দোলনে—
১৯২০-১৯২২ সালে, ব্রিটিশদের সাথে অসহযোগের জন্য গান্ধীর আহ্বানের উচ্চতায়, তিনি নিজেকে আন্দোলনে উত্সর্গ করেছিলেন।  ১৯৩০-১৯৩১ সালের আইন অমান্য আন্দোলনের সময়, তিনি আইন ও পুলিশি বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে এবং পথে কারাভোগ করে একজন উল্লেখযোগ্য নেতা আন্দোলন হিসাবে আবির্ভূত হন।  গান্ধীবাদী আদর্শে তার সম্পূর্ণ সাবস্ক্রিপশন এবং তার আন্দোলন কৌশলের প্রতি অটল জমা দেওয়ার কারণে, তিনি দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভাপতি হন;  তার বাকপটু বক্তৃতা গান্ধী সহ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।  নিজের এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা উপেক্ষা করে, তিনি কলকাতার রাস্তায় নেমে আসেন এবং ১৯৪৬ সালের ভয়াবহ কলকাতা দাঙ্গার অন্ধকার দিনগুলিতে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।
গান্ধীজীর আদর্শে অবিচলিত নিষ্ঠা ছিল। ১৯৪৬ খ্রী. কলিকাতায় দাঙ্গার সময় দাঙ্গা-আধুষিত মুসলমান-প্রধান অঞ্চল এন্টনিবাগানে নিজের বাড়িতে থেকে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যের বাণী প্রচার করেন। ‘দি স্কাভেঞ্জার্স ইউনিয়ন অব বেঙ্গল’ এবং ‘জুটি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নে’র প্রেসিডেন্ট তাঁর কন্যা প্ৰভাবতী দাশগুপ্ত ১৯২৭-২৮ থেকে ১৯৩০ – ৩১ খ্রী. পর্যন্ত শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।
মৃত্যু—-
মহান এই  সংগ্রামী মোহিনী দেবী ২৫ মার্চ ১৯৫৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ ১১ আগস্ট, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।

আজ ১১ আগস্ট। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-
আজ যাদের জন্মদিন—-
১৯০৮ – পুলিনবিহারী সেন খ্যাতনামা বাঙালি রবীন্দ্র-বিশারদ।
১৯১১ – প্রেম ভাটিয়া, সাংবাদিক।
১৯২৯ – মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় ভারতীয় বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার।
১৯৩৭ – সালমা সোবহান, বাংলাদেশের প্রখ্যাত ব্যারিস্টার, শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মী।
১৯৩৮ – চঞ্চল কুমার মজুমদার, শান্তিস্বরূপ ভটনাগর পুরস্কারে সম্মানিত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় পদার্থবিজ্ঞানী ।
১৯৬৫ – ভায়োলা ডেভিস, মার্কিন অভিনেত্রী ও প্রযোজক।
১৯৭০ – জিয়ানলুকা পেসোত্তো, ইতালীয় ফুটবলার।
১৯৮৩ – ক্রিস হেমসওর্থ, অস্ট্রেলীয় অভিনেতা।
১৮৭০ – টম রিচার্ডসন, ইংরেজ ক্রিকেটার।
১৭৩৭ – ইংরেজ ভাস্কর জোসেফ নোলেকেনস।
১৮৫৮ – নোবেলজয়ী [১৯২৯] ওলন্দাজ চিকিৎসক ক্রিস্টিয়ান আইকমান।
ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-
২০০৪ – পাকিস্তান পরমাণু বিস্তার রোধ না করলে দেশটির ওপর মার্কিন কংগ্রেসের নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব গ্রহণের আহবান করা হয়।
২০০৮ – গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে মহিলাদের ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইল শেষ হয়। একই দিনে মহিলাদের ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতার প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
২০১২ – বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাফাত জামিল বীর বিক্রমের মৃত্যু।
১৯০৮ – বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি কার্যকর হয়।
১৯০৯ – রেডিওর বিপদবার্তা বা এসওএসের ব্যবহার শুরু হয়।
১৯১৪ – জন রে অ্যানিমেশন পেটেন্ট করেন।
১৯২২ – কাজী নজরুল ইসলামের ধুমকেতু পত্রিকা প্রকাশিত হয়।
১৯২৯ – ইরাক ও পারস্য শান্তিচুক্তি করে।
১৯২৯ – রাশিয়া ও চীনের সীমান্তে যুদ্ধ শুরু হয়।
১৯৫২ – মানসিক অসুস্থতার জন্য জর্দানের বাদশাহ তালাল সিংহাসনচ্যুত হন।
১৯৬১ – ভারতে পূর্বে পর্তুগিজ শাসিত অঞ্চল দাদরা ও নগর হাভেলিকে ভারতের সাথে যুক্ত ও একত্রিত করে নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দাদরা ও নগর হাভেলি গঠন করা হয়।
১৯৮৬ – এশিয়ার জনসংখ্যা ৩০০ কোটি পূর্ণ হয়।
১৮১০ – আজোরে ভয়াবহ ভূমিকম্পে সাও মিগুয়েল গ্রাম তলিয়ে যায়।
১৮৮৪ – টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেন অস্ট্রেলিয়ার ম্যাকডোনেল।
১৮৮৮ – বন্ধ হয়ে যায় ক্যালিফোর্নিয়া থিয়েটার।
১৭৮০ – বার্বাডোজে হারিকেন শুরু হয়।
৬৮৩ – মুসলমানরা সমরখন্দ বিজয় লাভ করে।
এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-
২০০৪ – হুমায়ুন আজাদ, বাংলাদেশী লেখক ও ভাষাবিদ।
২০১২ – শাফায়াত জামিল বীর বিক্রম, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
২০১৮ – বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপল, ভারতীয়-নেপালীয় বংশোদ্ভূত ত্রিনিদাদীয় সাহিত্যিক।
১৯০৮ – ক্ষুদিরাম বসু ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের বাঙালি বিপ্লবীর ফাঁসির মঞ্চে আত্মবলিদান।
১৯৩৫ – স্যার দেবপ্রসাদ সর্বাধিকারী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বেসরকারি ( ১৯১৪-১৯১৮) উপাচার্য।
১৯৫৫ – অমলেন্দু দাশগুপ্ত, বাঙালি সাহিত্যিক।
১৯৭০ – ইরাবতী কার্বে ভারতের মহারাষ্ট্রের একজন নৃবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ এবং লেখক।
১৯৭২ – নোবেজয়ী [১৯৫১] আফ্রিকান-মার্কিন অণুজীব বিজ্ঞানী ম্যাক্স থিলাব।
১৯৯০ – ননীগোপাল চক্রবর্তী বাঙালি শিশু সাহিত্যিক।
১৯৯৫ – আলোন্‌জো চার্চ, মার্কিন গণিতবিদ এবং যুক্তিবিদ।
।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

বিজয়া সেন: এক অনন্য নারী স্বাধীনতা সংগ্রামী

ভূমিকা

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অসংখ্য নারী তাঁদের জীবন, স্বপ্ন, পরিবার ও নিরাপত্তা বিসর্জন দিয়েছেন। তাঁদের অনেকের নাম ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা থাকলেও, অনেকের অবদান অজানা রয়ে গেছে। বিজয়া সেন তেমনই একজন সংগ্রামী, যিনি বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনের এক উজ্জ্বল কিন্তু তুলনামূলকভাবে কম আলোচিত নাম। তাঁর রাজনৈতিক সচেতনতা, সামাজিক কর্মকাণ্ড, নারীর অধিকার রক্ষায় অবদান এবং বিপ্লবী কর্মকাণ্ড তাঁকে স্বাধীনতার ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান দিয়েছে।

শৈশব ও শিক্ষাজীবন

বিজয়া সেন ১৯১০ সালের দিকে পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) এক সাংস্কৃতিক ও শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক এবং মা ছিলেন গৃহবধূ হলেও সাহিত্য ও সংগীতপ্রেমী। ছোটবেলা থেকেই বিজয়ার মনে দেশপ্রেমের বীজ রোপিত হয়েছিল, কারণ তাঁর পরিবার ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাবাপন্ন ছিল এবং বাড়িতে প্রায়ই স্বদেশী নেতাদের আলোচনা হত।
শিক্ষাজীবনে বিজয়া ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তিনি কলকাতার বেথুন কলেজে ভর্তি হন, যা তখন নারীদের জন্য উচ্চশিক্ষার অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান ছিল। এখানেই তিনি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠেন এবং ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ শুরু করেন।

রাজনৈতিক প্রেরণা

১৯২৮ সালের সাইমন কমিশন বয়কট আন্দোলন এবং লালা লাজপত রায়ের মৃত্যুর ঘটনায় বিজয়া গভীরভাবে প্রভাবিত হন। বেথুন কলেজে পড়াকালীন তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং ছাত্র সংঘের সভায় অংশ নিতে শুরু করেন।
তবে কেবল কংগ্রেসের অহিংস আন্দোলনে সীমাবদ্ধ না থেকে, তিনি বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর এবং বঙ্গীয় যুব সংঘ-এর সঙ্গেও গোপনে যুক্ত হন। তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ ছিল একদিকে গান্ধীবাদের অহিংস প্রতিরোধ, অন্যদিকে সশস্ত্র বিপ্লবের প্রস্তুতি—পরিস্থিতি অনুযায়ী কোন পথ গ্রহণ করা হবে, তা তিনি বাস্তবতার ভিত্তিতে বিবেচনা করতেন।

বিপ্লবী কর্মকাণ্ড

বিজয়া সেন কলকাতা ও চট্টগ্রামে বিপ্লবীদের সংবাদ ও অস্ত্র সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে ১৯৩০ সালের চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন-এর সময় তিনি সূর্য সেনের বিপ্লবী দলের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষার জন্য মহিলা কুরিয়ার হিসেবে কাজ করেছিলেন।
তিনি একাধিকবার বিপ্লবীদের আশ্রয় দিয়েছেন, পুলিশের চোখ এড়িয়ে অস্ত্র পরিবহন করেছেন, এবং নারীর পরিচয়ের আড়ালে গোপন বার্তা বহন করেছেন। তাঁর সাহসিকতার কারণে তাঁকে সমসাময়িকরা “বেঙ্গল’স ব্রেভহার্ট” বলে ডাকতেন।

কারাবাস ও নির্যাতন

১৯৩২ সালে ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে, অভিযোগ ছিল রাষ্ট্রদ্রোহ, অবৈধ অস্ত্র রাখা এবং বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য হওয়া। কারাগারে বিজয়া সেনকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
কারাগারে থেকেও তিনি অন্য বন্দিনী নারীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা ছড়িয়ে দেন। তিনি কারাগারে গান্ধীজীর বই পড়াতেন, নারীদের সংগঠিত করতেন এবং ব্রিটিশ শাসনের অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চালিয়ে যেতেন।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সমাজসেবা

১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর বিজয়া সেন সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নেননি, তবে সামাজিক কাজে নিজেকে সম্পূর্ণ উৎসর্গ করেন। তিনি কলকাতায় বস্তিবাসী শিশুদের জন্য একটি বিনামূল্যের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং নারীদের স্বনির্ভর করতে হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেন।
তিনি নারী শিক্ষার প্রসারে একাধিক প্রচারাভিযান চালান এবং একাধিক নারী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর কাছে স্বাধীনতা কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়—সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা ছিল প্রকৃত স্বাধীনতা।

ব্যক্তিত্ব ও আদর্শ

বিজয়া সেনের ব্যক্তিত্ব ছিল দৃঢ়, স্নেহশীল এবং ন্যায়পরায়ণ। তিনি নারীর ক্ষমতায়ন, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করতেন। তাঁর জীবনদর্শন ছিল—

“স্বাধীনতা কেবল মাটির নয়, মন ও মনের স্বপ্নেরও স্বাধীনতা।”

সমসাময়িকদের প্রশংসা

বিজয়া সেনের জীবদ্দশায় অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী তাঁর অবদান স্বীকার করেছেন। প্রখ্যাত বিপ্লবী অনন্ত সিং একবার বলেছিলেন—

“বিজয়া আমাদের জন্য শুধু অস্ত্র বহন করতেন না, সাহসও বহন করতেন।”

উত্তরাধিকার

আজকের দিনে বিজয়া সেনের নাম ইতিহাসের মূলধারায় খুব বেশি উচ্চারিত হয় না, কিন্তু তাঁর জীবন সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। তাঁর কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে যে, স্বাধীনতার আন্দোলনে নারী কেবল সহযাত্রী নয়, বরং নেতা ও পথপ্রদর্শকও হতে পারে।

উপসংহার

বিজয়া সেনের জীবন কাহিনী ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। তিনি ছিলেন সাহসী, আদর্শবাদী, এবং মানবিক চেতনার প্রতীক। তাঁর জীবন আমাদের শেখায়—সত্যিকারের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য কেবল শাসক বদল নয়, সমাজ বদল জরুরি।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীর অবদান নিয়ে যখনই কথা হবে, বিজয়া সেনের নাম সেখানে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করবে।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

গার্গী দেবী: বাংলার সাহসী কন্যা ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রদূত।

ভূমিকা:-  ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে পুরুষদের পাশাপাশি অসংখ্য নারীর নাম রয়েছে, যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন দেশের মুক্তির জন্য। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে গেছেন, আবার অনেকের নাম কিছুটা হলেও মানুষের মনে রয়ে গেছে। গার্গী দেবী সেইসব সাহসী নারীদের একজন, যিনি জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য, নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।
তাঁর সংগ্রাম কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্যই ছিল না, বরং নারীশিক্ষা, নারীর স্বাবলম্বন ও সামাজিক সমতার জন্যও তিনি কাজ করে গেছেন। এই প্রবন্ধে আমরা গার্গী দেবীর জীবন ও কর্মযাত্রার বিস্তারিত আলোচনায় যাব।

শৈশব ও পারিবারিক প্রেক্ষাপট

গার্গী দেবীর জন্ম ১৯১২ সালে অবিভক্ত বাংলার নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে, এক শিক্ষিত ও সাংস্কৃতিক পরিবেশে সমৃদ্ধ পরিবারে। তাঁর বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক এবং মা ছিলেন গৃহবধূ, যিনি ধর্মীয় হলেও প্রগতিশীল চিন্তাধারায় বিশ্বাস করতেন। ছোটবেলা থেকেই গার্গী দেবী সাহিত্য, সংগীত ও দেশপ্রেমমূলক আলোচনায় বড় হয়েছেন।
বাড়িতে স্বামী বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনার বই ছিল সর্বদা। এগুলোর প্রভাবেই তাঁর মনে দেশপ্রেম ও মানবতার বীজ অঙ্কুরিত হয়।

শিক্ষাজীবন

গার্গী দেবী প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন কৃষ্ণনগর গার্লস স্কুলে। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতার বেথুন কলেজে ভর্তি হন। বেথুন কলেজ সে সময় নারীদের উচ্চশিক্ষার একমাত্র বড় কেন্দ্র ছিল এবং এখানেই তিনি রাজনৈতিক সচেতনতার প্রথম পাঠ পান।
কলেজ জীবনে তিনি ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং ব্রিটিশবিরোধী বক্তৃতা, সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে থাকেন। এখানেই তাঁর পরিচয় হয় সমসাময়িক নারী সংগ্রামী যেমন প্রীতি লতা ও বিনোদিনী দাসের সঙ্গে।

রাজনৈতিক জীবনের সূচনা

গার্গী দেবীর রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয় ১৯২৮ সালে সাইমন কমিশন বয়কট আন্দোলনের মাধ্যমে। বেথুন কলেজের ছাত্রীরা তখন বিক্ষোভ মিছিল ও সভা সংগঠিত করেছিল, এবং গার্গী দেবী তার অন্যতম মুখ্য সংগঠক ছিলেন।
১৯৩০ সালের অসহযোগ আন্দোলনের সময় তিনি গান্ধীবাদী কর্মসূচিতে অংশ নেন, পাশাপাশি গোপনে বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর ও বঙ্গীয় যুব সংঘ-এর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন।

বিপ্লবী কর্মকাণ্ড

গার্গী দেবী চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সময় সূর্য সেনের বিপ্লবী দলের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখতেন। তিনি নারীর পোশাকের আড়ালে বিপ্লবীদের কাছে গোপন বার্তা পৌঁছে দিতেন, অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন, এমনকি আহত বিপ্লবীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন।
১৯৩২ সালে কলকাতায় এক ব্রিটিশ পুলিশের গোপন নথি চুরি করার অভিযানে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। এই নথি বিপ্লবীদের হাতে পৌঁছালে বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্রিটিশ পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়।

গ্রেফতার ও কারাবাস

১৯৩৩ সালে ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে রাষ্ট্রদ্রোহ, ষড়যন্ত্র এবং অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ না থাকলেও, তাঁকে ১৮ মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কারাগারে গার্গী দেবী নারীবন্দীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা ছড়িয়ে দেন।
তিনি কারাগারে গান্ধীজীর “হিন্দ স্বরাজ” পড়াতেন, বিপ্লবীদের গান গাইতেন এবং কারা কর্তৃপক্ষের অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন। এই সময় তিনি অনশনও করেন, যা ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

স্বাধীনতার পর সমাজসেবা

১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর গার্গী দেবী রাজনীতিতে সক্রিয় না থেকে সামাজিক কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেন। তিনি নারীদের জন্য শিক্ষা ও কর্মসংস্থানমূলক প্রকল্প চালু করেন। কলকাতার কালীঘাটে তিনি একটি মেয়েদের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে অবহেলিত পরিবারের শিশুদের বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হত।
তিনি একাধিক নারী সংগঠনের সভাপতি ছিলেন এবং নারী অধিকার রক্ষায় আইনি লড়াই চালিয়েছেন।

ব্যক্তিত্ব ও আদর্শ

গার্গী দেবী ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সৎ ও সাহসী। তিনি বিশ্বাস করতেন—

“স্বাধীনতা শুধু রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিকও হতে হবে।”

তিনি সর্বদা সরল জীবনযাপন করতেন এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতেন।

সমসাময়িকদের স্মৃতিচারণ

বিপ্লবী অনন্ত সিং একবার বলেছিলেন—

“গার্গী শুধু একজন নারী সংগ্রামী ছিলেন না, তিনি ছিলেন পুরুষদের সাহস জোগানো এক অদম্য প্রেরণা।”

উত্তরাধিকার

গার্গী দেবীর নাম আজ মূলধারার ইতিহাসে খুব বেশি উচ্চারিত হয় না, কিন্তু তাঁর অবদান অমূল্য। তিনি প্রমাণ করেছেন যে নারীর সাহস, বুদ্ধি ও দৃঢ়তা জাতির মুক্তি সংগ্রামে অপরিহার্য।
তাঁর জীবনী আজকের তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে পারে—বিশেষ করে সেইসব মেয়েদের, যারা বড় স্বপ্ন দেখে এবং দেশের জন্য কিছু করতে চায়।

উপসংহার

গার্গী দেবীর জীবন কাহিনী কেবল স্বাধীনতার আন্দোলনের অংশ নয়, বরং নারীর মুক্তি ও সমাজ পরিবর্তনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর সংগ্রাম, ত্যাগ ও কর্মযজ্ঞ আমাদের শেখায় যে—সত্যিকারের দেশপ্রেম কেবল কথায় নয়, কাজে প্রকাশ পায়।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

মাতঙ্গিনী হাজরা: ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অমর নারী যোদ্ধা

প্রস্তাবনা

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে অসংখ্য পুরুষ বিপ্লবীর নাম আমরা জানি, কিন্তু নারীদের অবদানও ততটাই অনন্য ও অনুপ্রেরণামূলক। মাতঙ্গিনী হাজরা সেইসব নারীদের একজন, যিনি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। তিনি শুধুমাত্র বীরাঙ্গনা নন, বরং তাঁর জীবন আমাদের শেখায় যে দেশপ্রেম বয়সের সীমা মানে না। ব্রিটিশ শাসকের গুলি বুকে নিয়েও তিনি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত “বন্দে মাতরম” ধ্বনি তুলেছিলেন।


শৈশব ও পারিবারিক জীবন

মাতঙ্গিনী হাজরার জন্ম ১৯ শতকের শেষভাগে, ১৯ শতকের ৬০-এর দশকে (আনুমানিক ১৮৬৯ সালে) তামলুক মহকুমার এক ছোট গ্রামে। গ্রামের সাধারণ এক কৃষক পরিবারে জন্মানো মাতঙ্গিনী ছোটবেলা থেকেই ছিলেন শান্ত, কিন্তু দৃঢ়চেতা। আর্থিক কষ্টের কারণে তিনি বিদ্যালয়ে যেতে পারেননি, তাই আনুষ্ঠানিক শিক্ষা তাঁর হয়নি। তবে গ্রামীণ পরিবেশ, লোকসংস্কৃতি এবং চারপাশের মানুষের জীবনযুদ্ধ তাঁকে জীবনের প্রথম পাঠ শিখিয়েছে— অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ও অন্যের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা।

মাত্র ১২ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয় তমলুকেরই এক মধ্যবয়সী ব্যক্তির সঙ্গে। কিন্তু বিবাহিত জীবন বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। স্বামী মারা যাওয়ার পর মাতঙ্গিনী তরুণ বয়সেই বিধবা হয়ে পড়েন। সমাজ তখন বিধবাদের জন্য কঠোর নিয়ম বেঁধে দিয়েছিল, কিন্তু মাতঙ্গিনী সেই শৃঙ্খলকে নিজের ইচ্ছাশক্তি দিয়ে ভাঙতে শুরু করেন।


স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদানের প্রেরণা

তৎকালীন তমলুক মহকুমা ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের এক উর্বর ক্ষেত্র। গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলন, স্বদেশী ভাবধারা ও বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের ঢেউ গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছিল। মাতঙ্গিনী ক্রমশ এই আন্দোলনের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি বুঝতে পারেন, ব্রিটিশ শাসনের শোষণ থেকে মুক্ত না হলে দেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ঘুচবে না।

১৯৩২ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় তিনি প্রথমবার সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। স্থানীয় কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গে মিলিত হয়ে তিনি মিছিল, সভা ও সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে যোগ দেন। পুলিশের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মিছিল করার জন্য তাঁকে প্রথমবার গ্রেপ্তার করা হয়।


কারাবরণ ও সংগ্রামী জীবন

মাতঙ্গিনী হাজরার জীবনে কারাবাস ছিল একাধিকবারের ঘটনা। প্রথমবার গ্রেপ্তারের সময় তাঁর বয়স প্রায় ৬৩ বছর। তমলুক শহরে ব্রিটিশ বিরোধী মিছিলে যোগ দেওয়ার অপরাধে তাঁকে গ্রেপ্তার করে কোর্টে আনা হয়। কিন্তু বয়স ও স্বাস্থ্যের কারণে তাঁকে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তবে সতর্কবার্তা তাঁর মনোবল ভাঙাতে পারেনি। তিনি গান্ধীজির ‘সত্যাগ্রহ’ নীতিকে জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন। খদ্দরের পোশাক পরা, চুল সাদা, মুখে শান্ত হাসি— এমন চেহারার এক বৃদ্ধা হলেও তাঁর অন্তরে ছিল অদম্য সাহস।


১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলন

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৪২ সালের “ভারত ছাড়ো আন্দোলন” (Quit India Movement) ছিল এক ঐতিহাসিক অধ্যায়। মাতঙ্গিনী হাজরা তখন প্রায় ৭৩ বছরের বৃদ্ধা, কিন্তু তাঁর উদ্যম ও দেশপ্রেম তখনও অটুট।

৬ সেপ্টেম্বর ১৯৪২ সালে তমলুক মহকুমার কটালীপাড়ায় কংগ্রেসের আহ্বানে একটি বিশাল মিছিলের আয়োজন করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল— তমলুক থানা দখল করে জাতীয় সরকারের পতাকা ওড়ানো। মাতঙ্গিনী সেই মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে।


শেষ লড়াই ও শহিদি বরণ

ব্রিটিশ পুলিশ মিছিলে বাধা দেয় এবং ছত্রভঙ্গ করার জন্য গুলি চালায়। কিন্তু মাতঙ্গিনী পিছু হটেননি। তিনি সামনে এগিয়ে গিয়ে পুলিশদের উদ্দেশে বলেছিলেন—
“আপনারা গুলি চালান, আমি এগোবই।”

গুলি তাঁর শরীর ভেদ করলেও তিনি পতাকা উঁচিয়ে “বন্দে মাতরম” ধ্বনি তুলতে থাকেন। একে একে তিনটি গুলি তাঁর শরীরে লাগে— একটি হাতে, একটি বুকে, একটি কপালে। তবুও পতাকা মাটিতে ফেলেননি। পতাকা হাতে নিয়েই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।


মৃত্যুর পর প্রতিক্রিয়া ও সম্মাননা

মাতঙ্গিনী হাজরার আত্মবলিদান সমগ্র তমলুক তথা বাংলায় গভীর প্রভাব ফেলে। তাঁর মৃত্যু সংবাদ মানুষের মনে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তমলুক জাতীয় সরকার গঠনের ক্ষেত্রে তাঁর আত্মত্যাগ বিশেষ প্রেরণা হয়ে ওঠে।

স্বাধীনতার পরে মাতঙ্গিনী হাজরাকে নানা ভাবে স্মরণ করা হয়—

  • কলকাতার রেড রোডে তাঁর একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে, যা আজও শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে পরিচিত।
  • তমলুক ও তার আশপাশে বহু রাস্তা, বিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে।
  • পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রতি বছর তাঁর শহিদ দিবস পালন করে।

ব্যক্তিত্ব ও আদর্শ

মাতঙ্গিনী হাজরার জীবনদর্শনের মূল ভিত্তি ছিল—

  1. ত্যাগ — ব্যক্তিগত কষ্ট ও সামাজিক অপমানকে উপেক্ষা করে দেশের জন্য আত্মদান।
  2. অহিংসা — গান্ধীজির নীতি অনুসরণ করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন করা।
  3. অদম্য সাহস — বারবার পুলিশের গুলি ও গ্রেপ্তারি সত্ত্বেও পিছিয়ে না যাওয়া।

উত্তরাধিকার

আজকের প্রজন্মের কাছে মাতঙ্গিনী হাজরা কেবল ইতিহাসের একটি নাম নন, বরং সাহস ও দেশপ্রেমের জীবন্ত প্রতীক। তাঁর জীবন শেখায়—

  • স্বাধীনতা কখনো বিনা মূল্যে আসে না।
  • বয়স বা শারীরিক সীমাবদ্ধতা দেশসেবার পথে বাধা নয়।
  • সত্য ও ন্যায়ের পথে চললে মৃত্যু পর্যন্তও ভয় পাওয়া উচিত নয়।

উপসংহার

মাতঙ্গিনী হাজরা ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অদম্য সৈনিক, যিনি বৃদ্ধ বয়সেও নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন মাতৃভূমির জন্য। তাঁর আত্মত্যাগ আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয়— স্বাধীনতা রক্ষার জন্য দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব আছে।

আজ আমরা স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছি, কিন্তু এই স্বাধীনতার পিছনে থাকা শহিদদের কথা স্মরণ রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। মাতঙ্গিনী হাজরার জীবন আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়— যে কোনো যুগে, যে কোনো পরিস্থিতিতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই প্রকৃত দেশপ্রেম।

 

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ফুলন দেবী (১৯৬৩–২০০১): দস্যু রানী থেকে সংসদ সদস্য হয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতীক।

ভারতের আধুনিক ইতিহাসে কয়েকজন ব্যক্তি এমনভাবে আলোচিত হয়েছেন যেভাবে ফুলন দেবীর নামে পরিচয় পেয়েছিলেন—‘দস্যু রানী’। তিনি ছিলেন মানুষের নীচু বর্ণ থেকে উঠে আসা এক নারীবাদী প্রতীক। নিঃস্ব, নির্যাতিত এক কন্যা থেকে দস্যু-নেত্রী, কারাগারে বন্দী, সংসদ সদস্য, এবং শেষপর্যন্ত রাজনৈতিক হত্যার শিকার—ফুলন দেবীর জীবন ছিল এক প্রেম, প্রতিশোধ, রাজনীতি ও সামাজিক পরিবর্তনের জটিল ছায়ালিপি।


1. প্রারম্ভিক জীবন ও পটভূমি

  • ফুলন দেবী জন্মেছিলেন ১৯৬৩ সালের ১০ আগস্ট উত্তরপ্রদেশের জালৌন জেলার ঘোড়া কা পুরওয়া গ্রামে, একটি ‘মাল্লা’ সম্প্রদায়ে—যা সমাজে ‘নিম্নবর্ণ’ হিসেবে গণ্য।
  • তার গ্রাম ও পরিবারের অভাব-দারিদ্র্য ও বৈষম্যের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।

2. নির্যাতন, স্বামীর অত্যাচার ও বাধ্যতামূলক বিবাহ

  • মাত্র ১১ বছর বয়সে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়, এবং পরবর্তীতে তিনি শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হন।
  • শারীরে ও মানসিকভাবে ভোজ্য তিনি পরিবারের ভয় ও সামাজিক অবজ্ঞার ঝাঁঝ వరারে বন্দী হলেন।

3. নির্যাতন ও প্রতিশোধের পথ: ডাকাত দলের আত্মগঠন

  • চিন্তিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি ডাকাত দলের সঙ্গে যুক্ত হন। পরবর্তীতে দলনেতা বিক্রম মাল্লা হয়ে ওঠেন, যিনি তাকে সম্মান ও ক্ষমতা প্রদান করেন।
  • ১৯৮১ সালে, বেহমাই গ্রামে গণধর্ষণ এবং তার পরবর্তী প্রতিশোধ ঘটায় নেতৃত্ব দেন—এতে ঠাকুর সম্প্রদায়ের ২২ জন পুরুষকে দাঁড়িয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
  • এই ঘটনা ভারতের রাজনীতিতে উত্তালতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে এবং প্রায় মুখ্যমন্ত্রী ওয়াল্টার পদত্যাগের কারণও হয়ে দাঁড়ায়।

4. আত্মসমর্পণ, কারাগার জীবন ও মুক্তি

  • ১৯৮৩ সালে, নির্দিষ্ট শর্তসহ তিনি মধ্যপ্রদেশে আত্মসমর্পণ করেন।
  • তাঁকে কারাভোগ শেষে ১৯৯৪ সালে মুক্তি দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।

5. রাজনিতিতে ফেরা এবং সংসদ সদস্য নির্বাচন

  • মুক্তির পর তিনি সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৯৬ সালে মির্জাপুর থেকে লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেন, সংসদ সদস্য হন।
  • পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে পুনরায় সংসদ সদস্য হন।
  • রাজনীতি ও কর্মী হিসেবে তিনি জনসাধারণের উন্নয়ন, নারী ও দলিত অধিকার নিয়ে কাজ করতে উদ্যত ছিলেন।

6. গণমাধ্যম ও আত্মজীবনী: বহুমাত্রিক বর্ণনা

  • ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘Bandit Queen’ (ব্যাণ্ডিট কুইন) চলচ্চিত্র তাঁর জীবনকে রহস্যময়ভাবে তুলে ধরে, যা নিয়ে তিনি আপত্তি জানিয়ে আদালতে মামলা করেন, পরে £৪০,০০০ ক্ষতিপূরণ পান।
  • তাঁর আত্মজীবনী ‘I, Phoolan Devi’ লেখেন ফরাসিতে, পরে ইংরেজি সহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়।
  • এই গ্রন্থ ও ছবি তাঁকে দারিদ্র্য ও অবহেলিত নারীদের জন্য বিশেষ প্রতীকী করে তোলে।

7. হত্যাকাণ্ড এবং পরিণতি

  • ২৫ জুলাই ২০০১, দিল্লির নিজের বাড়ির বাইরে তিনি গুলিবিদ্ধ হন এবং মৃত্যুবরণ করেন।
  • হত্যাকারী ছিলেন শের সিং রানা, যিনি প্রতিশোধমূলকভাবে এই অপরাধ করে—বেহমাই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেই এই ঘটনা ঘটায়।

8. স্মৃতযজ্ঞ ও ধারা

  • ফুলন দেবী হয়ে উঠেছেন দলিত, নিপীড়িত, নারী ও নিম্নবর্গীয় শ্রেণির মানুষদের এক প্রতীকী প্রতিভূ।
  • তাঁর উপর লেখা বই, চলচ্চিত্র, অনলাইন প্রচার ও আলেপ আলোচনা তাঁকে ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য চরিত্রে পরিণত করেছে।
  • কিছু রাজনীতিক তাঁর উপর ভাস্কর্য স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন—তার ক্ষমতা ও জনপ্রিয়তা আজও সমানভাবে আলোচিত।

উপসংহার

ফুলন দেবীর জীবনের কাহিনি জাতিগত, লিঙ্গ ও শ্রেণি নির্ভর বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক মানবিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক লড়াই। নির্যাতনের পর প্রতিশোধের মাধ্যমে দুঃখের মানচিত্র রচনা করে, তিনি একটি প্রতিবাদের পুরুষোচিত প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। তার জীবন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় এক নারী কীভাবে অত্যাচার থেকে উঠে আসতে পারে—রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তর হয়ে—তখনকার সমাজে অভ্যুত্থানের এক অনন্য নমুনা।


বিস্তারিত রেফারেন্স সমূহ:

  • ফুলন দেবীর জীবন ও রাজনৈতিক কর্মজীবন: উইকিপিডিয়া
  • বেহমাই হত্যাকাণ্ড ও প্রতিশোধের প্রতিচ্ছবি: বাংলা উইকিপিডিয়া ও গণমাধ্যম
  • চলচ্চিত্র ‘Bandit Queen’ ও আত্মজীবনী:
Share This