Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

🌿 “সুন্দরবন ভ্রমণ: পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমির রহস্যময় অভিযাত্রা” 🌿

ভূমিকা

প্রকৃতির এক বিস্ময়, বিপদের মাঝেও এক স্বর্গীয় নৈসর্গিক সৌন্দর্যের নাম— সুন্দরবন। বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ অঞ্চল এবং গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার সঙ্গমস্থলে বিস্তৃত এক অতুলনীয় বনাঞ্চল। যেখানে নদী, খাড়ি ও ম্যানগ্রোভ গাছের মাঝে গর্জে ওঠে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সেখানে ভ্রমণ মানেই রোমাঞ্চ, ভয়, সৌন্দর্য আর শিক্ষা—সব মিলিয়ে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

১. সুন্দরবনের ভৌগোলিক পরিচিতি

🌍 অবস্থান

সুন্দরবন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের এক বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। ভারতের অংশটি দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ছড়িয়ে আছে।

📐 আয়তন

ভারতের সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ১০,০০০ বর্গকিমি, যার মধ্যে প্রায় ৪,২৬০ বর্গকিমি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবেও স্বীকৃত (১৯৮৭ সালে)।

🌊 জলপথ

সুন্দরবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য এর অসংখ্য খাড়ি ও নদী, যেমন—মাতলা, হুগলি, রায়মঙ্গল, বিদ্যাধরী, গোসাবা ইত্যাদি। এরা বনাঞ্চলের মধ্যে প্রবাহিত হয়ে এক অভূতপূর্ব জলভূমি সৃষ্টি করেছে।

২. সুন্দরবনের ইতিহাস ও নামকরণ

📜 ইতিহাস

সুন্দরবনের ইতিহাস বহু প্রাচীন। একসময় এই অঞ্চল ছিল “চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের” অংশ। পরবর্তীকালে মুঘল ও ব্রিটিশ শাসনের অধীনে এলেও, এটি মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধীনে গড়ে উঠেছে।

📝 নামকরণের উৎস

‘সুন্দরবন’ শব্দটি এসেছে “সুন্দরী গাছ” থেকে, যা ম্যানগ্রোভ প্রজাতির একটি উদ্ভিদ। আবার অনেকে বলেন, “সুন্দর” বন বলেই এর এমন নামকরণ।

৩. কীভাবে যাবেন সুন্দরবন

🚉 রেলপথে

কলকাতা থেকে ক্যানিং পর্যন্ত ট্রেনে যেতে পারেন (প্রায় ২ ঘণ্টা)। ক্যানিং থেকে বাস বা টোটো করে গদখালি পর্যন্ত যেতে হবে।

🛥️ জলপথে

গদখালি থেকে লঞ্চে করে গোসাবা, সাতজেলিয়া, পকিরাল, সজনেখালি ইত্যাদি দ্বীপে পৌঁছনো যায়। পর্যটনের মূল আকর্ষণ এখান থেকেই শুরু।

৪. সুন্দরবনের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র

🌲 ১. সজনেখালি ব্যাঘ্র প্রকল্প কেন্দ্র

রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুমির, হরিণ ও পাখির জন্য বিখ্যাত।

একটি ছোট্ট জাদুঘর ও ওয়াচ টাওয়ার আছে।

বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের এক অপূর্ব স্থান।

🦌 ২. সুজনখালি অভয়ারণ্য

হরিণ, বন্য শূকর, পাখি, বানর ইত্যাদির অবাধ বিচরণক্ষেত্র।

🌿 ৩. জটখালি

ভ্রমণের এক নতুন গন্তব্য যেখানে সাইকেল চালিয়ে গ্রামের ভিতর দিয়ে ঘোরা যায়।

স্থানীয় হোমস্টেতে থাকার সুযোগ।

🛕 ৪. বনবিবির মন্দির

সুন্দরবনের মানুষ বনবিবিকে দেবীরূপে পূজা করে থাকেন, বাঘ থেকে রক্ষা পাওয়ার আশায়।

⛵ ৫. দুক্ষিণরায় ও বানবিবির কাহিনী ঘিরে স্থানীয় নাটক

‘বনবিবির পালা’ নামক এক ধরনের লোকগাথা, যা এখানে প্রতি বছর আয়োজন করা হয়।

৫. সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য

🐅 রয়েল বেঙ্গল টাইগার

বিশ্বখ্যাত বাঘের এক প্রজাতি যা জলে সাঁতার কাটতেও পারদর্শী। এখানে প্রায় ৯৬টি বাঘ রয়েছে (২০২৩ সালের হিসেব অনুযায়ী ভারতের অংশে)।

🐊 কুমির, ডলফিন ও অন্যান্য প্রাণী

খাড়িতে দেখা যায় লবণজলের কুমির, ইরাবতী ডলফিন।

আছে হরিণ, বন্য শূকর, ঊল্লুক, সাপ ইত্যাদি।

🐦 পাখির রাজত্ব

সুন্দরবন নানা ধরনের পাখির আবাসস্থল, যেমন—কিংফিশার, ফিশ ঈগল, বক, সারস ইত্যাদি।

🌱 উদ্ভিদ জগৎ

ম্যানগ্রোভ গাছের প্রাধান্য: সুন্দরী, গেওয়া, গরান, পশুর।

এই গাছগুলিই ভূমিকে ভাঙন থেকে রক্ষা করে।

৬. সুন্দরবনে ভ্রমণের সময় ও সাবধানতা

📅 ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস: শীতকাল সবথেকে আরামদায়ক ও নিরাপদ।

⚠️ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাবধানতা

গাইড ছাড়া কখনো একা প্রবেশ করবেন না।

বন্যপ্রাণীদের কাছে যাওয়া নিষিদ্ধ।

প্লাস্টিক, ধূমপান ও আগুন জ্বালানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

লাইফ জ্যাকেট বাধ্যতামূলক।

৭. আবাসন ও খাবার

🛏️ থাকার জায়গা

সজনেখালি পর্যটন লজ (WBTDC)

স্থানীয় হোমস্টে (জটখালি, গোসাবা, পকিরাল ইত্যাদিতে)

🍲 খাবার

স্থানীয়ভাবে তৈরি মাছভাত, চিংড়ি মালাইকারি, গলদা চিংড়ি, নারকেল দিয়ে রান্না করা মুরগির ঝোল ইত্যাদি।

কিছু হোটেলে কন্টিনেন্টাল খাবারও মেলে।

৮. সুন্দরবনের সমস্যা ও পরিবেশ সুরক্ষা

🔥 পরিবেশগত বিপদ

ঘূর্ণিঝড়: যেমন আইলা (২০০৯), আমফান (২০২০)।

লবণাক্ততা বৃদ্ধি: কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি।

🌳 সংরক্ষণ প্রচেষ্টা

প্রাণী সংরক্ষণ আইন ১৯৭২, ইকো-ট্যুরিজম নীতি।

স্থানীয়দের জীবিকা বিকাশে সমবায় ও সেলফ হেল্প গ্রুপের ভূমিকা।

৯. কেন যাবেন সুন্দরবন?

প্রকৃতির একদম কোল ঘেঁষে বাঁচার অনুভূতি।

বন্যপ্রাণী দেখার উত্তেজনা ও অভিজ্ঞতা।

দারিদ্র্যের মাঝেও সাহসিকতার জীবন্ত উদাহরণ স্থানীয় মানুষ।

ইতিহাস, লোককাহিনী, প্রকৃতি ও ভয়—all in one!

উপসংহার

সুন্দরবন শুধুই একটা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য নয়—এ এক অনুভব, এক গল্প, এক শিক্ষা। প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন যারা দেখে, সুন্দরবন তাদের কাছে এক প্রার্থনার স্থান। এখানে প্রতিটি ঢেউয়ের আওয়াজে লুকিয়ে থাকে গল্প, প্রতিটি পাতার ফাঁকে দেখা মেলে জীবনের নতুন রূপ। একবার ঘুরে এলে আপনি ফিরে যাবেন ঠিকই, কিন্তু সুন্দরবনের একটা অংশ আপনার ভেতর রয়ে যাবে চিরকাল।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

শান্তির শহর শান্তিনিকেতন: কবিগুরুর ছায়ায় শিক্ষার আলো আর সংস্কৃতির নিঃশব্দ গতি।

🔸 ভূমিকা

শান্তিনিকেতন—শব্দটিই যেন এক নির্জন, নিস্তব্ধ অথচ প্রাণবন্ত অনুভবের প্রতিচ্ছবি। এটি কেবল একটি ভ্রমণস্থান নয়, এটি বাংলার সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি ও শিক্ষার এক অনন্য তীর্থভূমি। শান্তিনিকেতনের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর কল্পনাশক্তি, শিক্ষা দর্শন এবং নান্দনিক মনোভাব এই স্থানটিকে করে তুলেছে বিশ্বখ্যাত।
এই প্রবন্ধে শান্তিনিকেতনের ইতিহাস, দর্শনীয় স্থান, উৎসব, লোকশিল্প, স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিশদভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

🔸 শান্তিনিকেতনের ইতিহাস

শান্তিনিকেতনের সূচনা হয় ১৮৬৩ সালে, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে, যিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা। তিনি এখানকার মনোরম পরিবেশে এক আধ্যাত্মিক আশ্রম গড়ে তোলেন, যার নাম দেন “শান্তিনিকেতন” অর্থাৎ “শান্তির নিবাস”।
তবে শান্তিনিকেতনের প্রকৃত রূপান্তর ঘটে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে। ১৯০১ সালে তিনি এখানে ব্রহ্মচর্যাশ্রম নামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন, যা পরবর্তীতে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত হয়। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন প্রাকৃতিক পরিবেশে মুক্ত চিন্তার শিক্ষা দেওয়া উচিত। তাঁর এই আধুনিক শিক্ষা দৃষ্টিভঙ্গি শান্তিনিকেতনকে করে তোলে বিশ্বদরবারে অন্যতম এক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

🔸 বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্বভারতী আজও শান্তিনিকেতনের হৃদয়। “Where the world makes a home in a single nest”— এই মন্ত্রে গঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার ক্ষেত্রে এক ভিন্নধর্মী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক।
বিশ্বভারতীতে বিভিন্ন পাঠক্রম চালু আছে — সংগীত, চারুকলা, ভাষা, সংস্কৃতির উপর উচ্চতর শিক্ষা, গবেষণা ও আন্তর্জাতিক আদানপ্রদানের সুযোগ।
এখানে শিক্ষা দেওয়া হয় খোলা আকাশের নিচে, প্রকৃতির সান্নিধ্যে। ছাতার নিচে না পড়ে গাছতলায় বসে শিক্ষার এই যে আয়োজন, তা এখনও রবীন্দ্র-দর্শনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

🔸 দর্শনীয় স্থানসমূহ

১. উপাসনা গৃহ

একটি শান্তিপূর্ণ, প্রার্থনার স্থান। রঙিন কাঁচে সজ্জিত এই ভবনটি সূর্যের আলো পড়লে অপূর্ব দীপ্তি ছড়ায়।

২. চতুরঙ্গ / পাঠভবন

খোলা পরিবেশে ক্লাস হয় এখানে। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন প্রকৃতি শিক্ষার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।

৩. শ্রীনিকেতন

গ্রামীণ উন্নয়ন ও সমাজসেবার কেন্দ্র। এখানে হস্তশিল্প, বুনন শিল্প ও লোক সংস্কৃতি শেখানো হয়।

৪. রবীন্দ্রভবন মিউজিয়াম

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহার করা জিনিস, হাতে লেখা চিঠি, পাণ্ডুলিপি, চিত্রকলা ও বিভিন্ন স্মারক এখানে সংরক্ষিত।

৫. আম্রকুঞ্জ ও ছাতিমতলা

বিশ্বভারতীর কেন্দ্রস্থল। এখানে গাছতলায় বসে পড়ানো হয়। ছাতিমতলা দেবেন্দ্রনাথের ধ্যানের স্থান ছিল।

🔸 উৎসব ও অনুষ্ঠান

📌 পৌষ মেলা

ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত এই মেলাটি শান্তিনিকেতনের সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎসব। এখানে বাউল গান, হস্তশিল্প মেলা, পিঠে-পুলি, কাঁসার বাসন, পোড়ামাটির শিল্পকর্ম— সব মিলিয়ে এক অপরূপ বাঙালিয়ানা।

📌 বসন্ত উৎসব

হোলির এক অনন্য সংস্করণ, যেখানে ছাত্র-শিক্ষক ও দর্শনার্থীরা হলুদ পোশাকে বসন্তকে স্বাগত জানান গানে, নাচে ও আবিরে।

📌 রবীন্দ্রজয়ন্তী

২৫শে বৈশাখে গুরুদেবের জন্মদিন উপলক্ষ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, যেখানে তাঁর কবিতা, গান ও নাটক পরিবেশিত হয়।

🔸 লোকশিল্প ও হস্তশিল্প

শান্তিনিকেতনের আশপাশের এলাকাগুলি আদিবাসী ও স্থানীয় শিল্পীদের দ্বারা সমৃদ্ধ। বিশেষ করে সোনাঝুরি হাট, যেখানে সপ্তাহান্তে (বিশেষ করে শনিবার) বসে হস্তশিল্পের মেলা। এখানে পাওয়া যায়:

কাঁথার কাজ

পোড়ামাটির জিনিস

কাঁসার পাত্র

হাতে তৈরি অলঙ্কার

চামড়ার নকশাদার ব্যাগ (শান্তিনিকেতনী ব্যাগ)

এই স্থানীয় শিল্পীরা অনেকেই বিশ্বভারতীর ছাত্র বা প্রাক্তনী।

🔸 কীভাবে যাবেন

🚆 ট্রেনে:

বোলপুর শান্তিনিকেতন স্টেশন হাওড়া থেকে মাত্র ২.৫–৩ ঘণ্টার ট্রেন যাত্রা। জনপ্রিয় ট্রেন: শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস, বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার।

🚌 বাসে:

কলকাতা থেকে বোলপুরগামী সরকারি ও বেসরকারি বাস চলে। সময় লাগে প্রায় ৪ ঘণ্টা।

🚗 প্রাইভেট গাড়ি:

নিজস্ব গাড়িতে NH2 বা NH114 ধরে যাওয়া যায়। খুবই সুন্দর রাস্তাঘাট।

🔸 থাকার ব্যবস্থা

বোলপুরে ও শান্তিনিকেতনে প্রচুর হোটেল, লজ ও হোমস্টে আছে।
বিশ্বভারতীর অতিথিশালা বা সরকার অনুমোদিত পর্যটন আবাসিক কেন্দ্রেও থাকা যায়। জনপ্রিয় কিছু:

Hotel Camellia

Mark & Meadows

Rangabitan Lodge

Visva Bharati Guest House (আগে থেকে বুকিং প্রয়োজন)

🔸 খাওয়ার ব্যবস্থা

স্থানীয় হোটেলগুলোতে বাঙালি খাবারের পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতীয় ও উত্তর ভারতীয় খাবারও পাওয়া যায়। শান্তিনিকেতনের বিখ্যাত কিছু খাবার:

খিচুড়ি ও লাবড়া

পাঁপড় ভাজা

দই ও মিষ্টি (বিশেষ করে মিহিদানা ও প্যাড়া)

পিঠে-পুলি (উৎসবকালে)

🔸 শান্তিনিকেতনে কী করবেন?

বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস ঘুরে দেখুন।

স্থানীয় হাট থেকে হস্তশিল্প কিনুন।

আদিবাসী নৃত্য ও বাউল গান উপভোগ করুন।

রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত স্থাপনাগুলি দর্শন করুন।

স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিন।

🔸 কিছু প্রয়োজনীয় টিপস

গরমের সময় (এপ্রিল–জুন) এড়িয়ে চলা ভালো।

ডিসেম্বর–ফেব্রুয়ারি সবচেয়ে ভালো সময় ভ্রমণের জন্য।

উৎসবকালে (পৌষ মেলা বা বসন্ত উৎসব) গেলে আগে থেকে হোটেল বুক করে রাখা দরকার।

ক্যাম্পাসে ফটোগ্রাফির জন্য অনুমতি লাগতে পারে।

🔸 উপসংহার

শান্তিনিকেতন শুধুমাত্র ভ্রমণের স্থান নয়, এটি হৃদয়কে ছুঁয়ে যাওয়ার এক অনুভূতির নাম। যেখানে রবীন্দ্র-ভাবনার ছায়া পড়ে প্রকৃতির প্রতিটি পাতায়, পাখির কণ্ঠে, ছাত্রদের গানে, শিল্পের রেখায়। শান্তিনিকেতন এমন এক স্থান, যা আপনাকে শুধু ঘুরে দেখাবে না, আপনাকে চিন্তায়, অনুভবে ও চেতনায় সমৃদ্ধ করবে।

📚 তথ্যসূত্র

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় অফিসিয়াল সাইট

পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন বিভাগ

শান্তিনিকেতন হেরিটেজ ট্রাস্ট

স্থানীয় ভ্রমণ গাইড ও পর্যটকদের অভিজ্ঞতা

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

বাসক পাতার গোপন শক্তি ও আধুনিক বৈজ্ঞানিক স্বীকৃতি।

ভূমিকা

ভারতের আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত একটি মূল্যবান ওষুধি গাছ হল বাসক (বৈজ্ঞানিক নাম: Justicia adhatoda)। বাংলায় একে বাসক, বসক, বা বাসকপাতা বলে ডাকা হয়। সংস্কৃতে এর নাম “বাসিকা”, হিন্দিতে “अडूसा (Adusa)”, আর ইংরেজিতে একে Malabar Nut নামে ডাকা হয়। এটি একটি বহু বর্ষজীবী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ, যার মূল গুণ হল শ্বাসতন্ত্র ও সর্দি-কাশি সংক্রান্ত রোগের নিরাময়।
এই প্রবন্ধে আমরা বাসক পাতার গঠন, রাসায়নিক উপাদান, আয়ুর্বেদিক গুণ, ব্যবহার, ঔষধি প্রয়োগ, আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি সবই বিশ্লেষণ করব।

১. উদ্ভিদের পরিচিতি ও বিস্তার

বাসক গাছের বৈশিষ্ট্য
বাসক একটি সিমেন্টি বা ঝোপজাতীয় গুল্ম। এটি প্রায় ১ থেকে ২.৫ মিটার উচ্চতায় বাড়ে। গাছটির পাতাগুলি সবুজ, লম্বাটে ও কিছুটা আঙুলের মতো আকৃতির। গ্রীষ্মকালে ফুল ফোটে, সেগুলি হালকা বেগুনি বা সাদা রঙের হয়। ফল সাধারণত ক্যাপসুল ধরনের এবং বীজের মাধ্যমে গাছটি বংশবৃদ্ধি করে।
বিস্তৃতি
ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বহু দেশে এটি প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়। শুকনো, ছায়াযুক্ত ও আর্দ্র পরিবেশে বাসক ভালভাবে জন্মে।

২. রাসায়নিক উপাদানসমূহ

বাসক পাতায় বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যেগুলি একে ঔষধি গুণে পরিপূর্ণ করে তোলে। এর প্রধান উপাদানগুলি হলো:

ভাসিসিন (Vasicine) – এটি একটি কুইনাজোলিন অ্যালকালয়েড, যা শ্লেষ্মা সরাতে সহায়ক।

ভাসিকোনিন (Vasicinone) – অ্যান্টি-অ্যাজমাটিক ও ব্রঙ্কোডাইলেটর গুণে সমৃদ্ধ।

Essential oils

Phenolics ও Flavonoids – অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।

Tannins এবং Saponins – অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান।

এই উপাদানগুলির সম্মিলিত প্রভাবে বাসক একাধিক রোগে কার্যকরী।

৩. বাসক পাতার প্রধান ঔষধিগুণ

৩.১. কাশি ও শ্বাসকষ্টে উপকারী

বাসকপাতা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় কাশি, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টে। এর মূল রাসায়নিক ভাসিসিন ব্রঙ্কিয়াল টিউবের শ্লেষ্মা পাতলা করে বাইরে বার করে দেয় এবং শ্বাসনালিকে প্রশস্ত করে।
প্রয়োগ:

বাসক পাতার রস ও মধু মিশিয়ে খেলে কাশি উপশম হয়।

শুকনো পাতার গুঁড়ো গরম জলে ফুটিয়ে খেলে শ্বাসকষ্ট কমে।

৩.২. অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল গুণ

বাসকপাতা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। ফ্লু, ঠান্ডা, সাইনাস ইনফেকশন ইত্যাদিতে এটি কার্যকর।

৩.৩. রক্ত বিশুদ্ধকারী

বাসকপাতা শরীরের ভেতরে জমে থাকা বিষাক্ত উপাদান পরিষ্কার করে। চর্মরোগ, ব্রণ, ফোঁড়া ইত্যাদিতে উপকারী।

৩.৪. মাসিক অনিয়ম ও ঋতুকষ্টে উপকারী

নারীদের ঋতুস্রাবজনিত সমস্যা বা অনিয়ম থাকলে বাসকপাতার ক্বাথ খেলে উপকার মেলে।

৩.৫. ম্যালেরিয়া ও টাইফয়েডে সহায়ক

আয়ুর্বেদ অনুযায়ী বাসকপাতা জ্বর কমাতে সহায়তা করে। বিশেষত টাইফয়েড বা ম্যালেরিয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে উপকারী বলে বলা হয়।

৪. বাসক পাতার বিভিন্ন ব্যবহার

৪.১. আয়ুর্বেদিক ঔষধ প্রস্তুতিতে

আরিষ্ঠ: বাসকপাতা দিয়ে তৈরি “বাসকরিষ্ট” কাশি ও হজমে কার্যকর।

ক্বাথ (decoction): পাতার ক্বাথ পানের মাধ্যমে ফুসফুস পরিষ্কার হয়।

তেল: বাসকপাতা ও তিলের তেল মিশিয়ে তৈরি তেল বাত বা গাঁটের ব্যথায় মালিশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৪.২. গার্গল ও মুখ ধোয়ার জল

বাসকপাতা সিদ্ধ করে সেই জলে গার্গল করলে গলা ব্যথা ও মুখের ইনফেকশন উপশম হয়।

৪.৩. চর্মরোগে প্রয়োগ

বাসকপাতার পেস্ট ত্বকের উপর লাগালে একজিমা, ফোঁড়া, চুলকানি দূর হয়।

৫. আধুনিক চিকিৎসা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বাসকপাতা

বর্তমানে বাসকপাতার ওপর অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়েছে যা এর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে:

Indian Journal of Pharmacology-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, ভাসিসিন ব্রঙ্কোডাইলেটর হিসেবে স্যালবিউটামল-এর বিকল্প হতে পারে।

Journal of Ethnopharmacology-তে প্রকাশিত গবেষণায় দেখানো হয়েছে, বাসকপাতার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব লিভারের জন্য উপকারী।

International Journal of Pharmacy and Pharmaceutical Sciences অনুসারে, বাসকপাতা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি থামাতে পারে বলে কিছু প্রাথমিক গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

৬. শিশু ও বয়স্কদের জন্য বাসকের ব্যবহার

শিশুদের জন্য:
– কাশি বা ঠান্ডা হলে বাসকপাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে দিনে ২-৩ ফোঁটা করে খাওয়ানো যেতে পারে।
বয়স্কদের জন্য:
– হাঁপানি, জ্বর, সাইনাসের সমস্যা, জয়েন্টের ব্যথায় বাসকের ক্বাথ বা বাসক তেল ব্যবহার খুবই কার্যকর।

৭. পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সাবধানতা

বাসকপাতা একটি প্রাকৃতিক ওষুধ হলেও কিছু সতর্কতা অবশ্যই মানা উচিত।

গর্ভবতী নারীরা এটি এড়িয়ে চলুন কারণ এটি জরায়ু সংকোচনে সাহায্য করতে পারে।

অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া বমি বা পাতলা পায়খানা ঘটাতে পারে।

যাদের রক্তচাপ কম, তাদের সাবধানে ব্যবহার করা উচিত।

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত ও দীর্ঘদিন ব্যবহার বাঞ্ছনীয় নয়।

৮. বাসকপাতার ব্যবহারবিধি ও প্রস্তুতির নিয়ম

বাসকপাতার ক্বাথ তৈরি (ডিকোশন):

উপকরণ:

বাসকপাতা – ১০-১২টি

জল – ২ কাপ

পদ্ধতি:
১. বাসকপাতা ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।
২. ২ কাপ জলে ভালোভাবে সিদ্ধ করুন যতক্ষণ না তা অর্ধেক হয়ে যায়।
৩. ছেঁকে সকালে ও রাতে ১ কাপ করে খাওয়া যায়।

বাসকপাতার চা প্রস্তুত:

উপকরণ:

বাসকপাতা – ৫-৬টি

তুলসীপাতা – ৩টি

আদা – এক টুকরো

মধু – স্বাদমতো

সব উপকরণ জলে ফুটিয়ে এক কাপ চায়ের মতো পান করা যায়।

৯. সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও লোকবিশ্বাস

ভারতীয় গ্রামীণ সমাজে বাসক পাতাকে “ঘরের ওষুধ” বলা হয়। অনেক অঞ্চলে ঠাকুর ঘরে বাসকপাতা রাখা হয় ঋতুকালীন সময়ে নারীর কষ্ট দূর করতে। আবার যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত রোগীর ঘরে বাসকপাতার ধোঁয়া দেওয়ারও প্রচলন ছিল।

১০. উপসংহার

বাসকপাতা প্রকৃতির একটি অমূল্য উপহার। এটি শুধুমাত্র এক ধরনের গাছ নয়, বরং একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসার ভান্ডার। কাশি, ঠান্ডা, হাঁপানি থেকে শুরু করে চর্মরোগ, জ্বর, হজমের সমস্যা পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার বহু যুগ ধরে হয়ে আসছে। আধুনিক গবেষণাও এর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। তবে যেকোনো ওষুধের মতো বাসকেরও নিয়ম মেনে ব্যবহার জরুরি। প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করেও যদি আমরা যথাযথ জ্ঞান ও পরামর্শ নিয়ে এগোই, তাহলে তার থেকে সর্বোচ্চ উপকার পাওয়া সম্ভব।

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ

সমুদ্র মন্থনের বিষ ও নীলকণ্ঠ মহাদেব : শ্রাবণের পুরাণকথা ও তাৎপর্য।

প্রস্তাবনা

ভারতীয় সংস্কৃতি ও ধর্মচর্চায় প্রতিটি ঋতু, মাস, দিন, এমনকি মুহূর্তেরও বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। সেই পরম্পরায় শ্রাবণ মাস (জুলাই-আগস্ট) হল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র ও মাহাত্ম্যপূর্ণ এক মাস। এটি চন্দ্রপঞ্জিকা অনুযায়ী হিন্দু বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস, এবং বর্ষার পূর্ণ মৌসুমি রূপে আবির্ভাব ঘটে এই সময়। শ্রাবণ শব্দটি এসেছে ‘শ্রবণ’ নক্ষত্র থেকে, যা এই মাসের পূর্ণিমার দিনটিকে নির্দেশ করে। এই মাস মূলত ভক্তি, তপস্যা ও আত্মশুদ্ধির মাস। এই সময়টা দেবাদিদেব মহাদেবের পূজা-অর্চনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে করা হয়।

শ্রাবণ মাস ও দেবাদিদেব মহাদেবের সম্পর্ক

শ্রাবণ মাস প্রধানত শিব ভক্তদের জন্য এক বিশেষ পূণ্যকাল। পুরাণ অনুসারে, সমুদ্র মন্থনের সময় যখন হলাহল বিষ উৎপন্ন হয়, তখন সমস্ত দেবতাদের প্রাণনাশের আশঙ্কা দেখা দেয়। সেইসময় ভগবান শিব তা নিজের কণ্ঠে ধারণ করেন যাতে সৃষ্টির কোনো ক্ষতি না হয়। এই ঘটনার পর থেকেই শিবকে নীলকণ্ঠ বলা হয়।
বিশ্বাস করা হয়, সেই সময় ছিল শ্রাবণ মাস। ভগবান শিবের গলায় ধারণ করা বিষের তাপ প্রশমনের জন্য দেবতারা তাঁকে গঙ্গাজল, বেলপাতা ও দুধ নিবেদন করেন। সেই থেকেই শুরু হয় শ্রাবণ মাসে শিবের আরাধনা এবং শিবলিঙ্গে জল ও দুধ নিবেদন করার প্রথা।

শ্রাবণ মাসে উপবাস ও ব্রত

শ্রাবণ মাসে উপবাস রাখার প্রচলন অত্যন্ত প্রাচীন। এই মাসে প্রতি সোমবার ‘শ্রাবণ সোমব্রত’ পালন করা হয়। সাধারণত অবিবাহিতা কন্যারা উপযুক্ত বর প্রাপ্তির আশায় এই ব্রত পালন করেন, আর বিবাহিত নারীরা স্বামীর দীর্ঘ জীবন কামনায় এই ব্রত নেন।
সোমবার ব্রত পালনের নিয়ম:

ব্রাহ্মমুহূর্তে উঠে স্নান করে পবিত্র বস্ত্র পরিধান করা।

শিবলিঙ্গে জল, দুধ, ঘৃত, মধু, চন্দন, বেলপাতা, ধুতুরা, আকাশবেল ইত্যাদি নিবেদন।

“ওঁ নমঃ শিবায়” মন্ত্র জপ করে আরতি এবং প্রার্থনা।

সারাদিন উপবাস রাখা বা ফলাহার গ্রহণ করা।

বিশেষ ব্রত ও পূজার ধরন:

মঙ্গলা গৌরী ব্রত: মহিলারা মঙ্গল কামনায় প্রতি মঙ্গলবার পালন করেন।

নাগ পঞ্চমী: নাগদের পূজার দিন; শিবের গলায় বাস করা বাসুকি নাগকে স্মরণ করে।

রক্ষাবন্ধন ও শ্রাবণী পূর্ণিমা: ভাই-বোনের পবিত্র সম্পর্ক উদযাপন।

শ্রাবণ মাসে পবিত্র তীর্থযাত্রা ও কাওয়ার যাত্রা

শ্রাবণ মাসে ভারতজুড়ে লক্ষ লক্ষ শিবভক্ত “কাঁওয়ারিয়া” হন। তাঁরা গঙ্গার পবিত্র জল সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট শিবমন্দিরে তা নিবেদন করেন। বিশেষ করে উত্তর ভারতের হরিদ্বার, গোমুখ, গঙ্গোত্রী, বারাণসী, বৈদ্যনাথধাম, কেদারনাথ প্রভৃতি স্থান থেকে জল সংগ্রহ করে দীর্ঘ পথ হেঁটে ভোলেনাথকে অর্ঘ্য দেন। এটি একটি কঠোর ব্রত; কাঁওয়ারিয়ার দল নিরামিষ আহার করেন, অনেকে নিদিষ্ট দিনে উপবাস পালন করেন এবং কঠোর নিয়ম পালন করেন।

পৌরাণিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব

শ্রাবণ মাসে দেবতা, ঋষি ও অন্যান্য মহাপুরুষের অনেক ঘটনাও এই মাসের সঙ্গে যুক্ত।

সমুদ্র মন্থন ও নীলকণ্ঠ রূপ
বিষ পান করে শিব পৃথিবীকে রক্ষা করেন। শ্রাবণ মাস সেই আত্মত্যাগের স্মৃতি বহন করে।

শিব ও পার্বতীর পুনর্মিলন
শ্রাবণ মাসেই দেবী পার্বতী দীর্ঘ ব্রতের পর মহাদেবকে লাভ করেন।

শ্রীবিষ্ণুর যোগনিদ্রা থেকে জাগরণ
দেবশয়ন একাদশীতে শ্রীবিষ্ণু যোগনিদ্রায় যান এবং শ্রাবণ মাসে উত্থান একাদশীতে জেগে ওঠেন।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম মাস
শ্রাবণ মাসেই কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী পালিত হয়।

আয়ুর্বেদ ও প্রাকৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রাবণ মাস

আয়ুর্বেদ অনুসারে, শ্রাবণ মাসে শরীর ও মন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে, কারণ বর্ষার কারণে পরিপাক শক্তি দুর্বল হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই এই সময় উপবাস ও সাদামাটা খাদ্যাভ্যাস শরীরকে বিশ্রাম দেয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
এছাড়াও জলবাহিত রোগ, সর্দি-কাশি, ত্বকের সমস্যা ইত্যাদি এই সময়ে বেশি দেখা যায়। তাই ফলাহার, নিরামিষ ভোজন, নিয়মিত যোগাভ্যাস এবং প্রার্থনা শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক।

মানসিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব

শ্রাবণ মাস শুধু বাহ্যিক পূজা-অর্চনার জন্য নয়, এটি introspection বা আত্মসমীক্ষণের জন্যও উপযুক্ত সময়। এই মাসে তপস্যা, জপ, ধ্যান ও উপবাসের মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের মধ্যে শুদ্ধতা আনতে পারে।
শাস্ত্রে বলা হয়েছে—

“যঃ শ্রাবণমাসে শিবং ভজেত্, তস্য পাপানি নাশ্যন্তি ইহলোক পারত্র চ।”
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি শ্রাবণ মাসে ভগবান শিবের উপাসনা করেন, তার সব পাপ নাশ হয় – এই লোকেও, পরলোকেও।

শ্রাবণ মাসে পালনীয় কিছু নিয়ম

ব্রহ্মচর্য পালন করা।

নিষিদ্ধ দ্রব্য যেমন পেঁয়াজ, রসুন, মাংস-মদ ইত্যাদি পরিহার করা।

প্রত্যেক সোমবার উপবাস ও শিবপূজা।

কাঁওয়ার যাত্রায় অংশগ্রহণ করা অথবা অন্ততপক্ষে গৃহস্থ পর্যায়ে গঙ্গাজল নিবেদন।

দান-ধ্যান ও গরিবদের সাহায্য করা।

আধুনিক সমাজে শ্রাবণ মাসের তাৎপর্য

আজকের ব্যস্ত জীবনে শ্রাবণ মাস আধ্যাত্মিক প্রশান্তি ও পরিবেশ সচেতনতার বার্তা নিয়ে আসে। শিবের আরাধনা মানে কেবল পূজা নয়, বরং আত্মশুদ্ধি ও জীবনের ভারসাম্য খোঁজাও। বর্তমান সময়ে পরিবেশ দূষণ, মানসিক চাপ, মূল্যবোধের অবক্ষয় যখন মানুষের জীবনে নৈমিত্তিক সমস্যা হয়ে উঠেছে, তখন শ্রাবণ মাসের ব্রত ও অনুশাসন ব্যক্তিগত ও সামাজিক স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে পারে।

উপসংহার

শ্রাবণ মাস সনাতন ধর্মের এক অমূল্য রত্ন। এটি শুধুমাত্র এক মাস নয় – এটি আত্মবিশ্লেষণ, আত্মত্যাগ, পরোপকার, সংযম, এবং ভক্তির এক দীর্ঘ সাধনার সময়। এই মাসে শিব ভক্তরা যেমন শারীরিক ও মানসিক তপস্যা করেন, তেমনি সমাজের কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগও পান।
ভক্তি, শুদ্ধতা ও ধার্মিক চেতনার এই অনন্য উৎসবমুখর মাস নতুন করে মনে করিয়ে দেয় – “শিবেই সর্বস্ব”, “শিবই অনন্ত”, আর তাঁর চরণেই লুকিয়ে আছে মোক্ষের দ্বার।
শেষ কথা: শ্রাবণ মাসে অন্তত কিছু সময় ভগবান শিবের নাম জপ, নিঃস্বার্থ সেবা, এবং আত্মিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলা – এটাই এই মাসের প্রকৃত পালন।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

বাংলা চলচ্চিত্র, থিয়েটার এবং বাঙালি লোকনাট্যের কিংবদন্তি অভিনেত্রী গীতা দে – জন্ম দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।।।।

গীতা দে ৫ আগস্ট ১৯৩১ সালে জন্ম গ্রহন করেন তিনি ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্র, থিয়েটার এবং বাংলা লোক নাটকের একজন ভারতীয় অভিনেত্রী। ছয় বছর বয়সে তিনি মঞ্চ শিল্পী হিসেবে আবির্ভূত হন। ১৯৩৮ সালে, তিনি কলকাতার টালিগঞ্জে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে একজন অভিনেত্রী হিসেবে শুরু করেন। ধীরেন গাঙ্গুলি-পরিচালিত আহুতিতে ছয় বছর বয়সে শিশু শিল্পী হিসেবে তার অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেন।

বাবা অনাদিবন্ধু মিত্র মেয়ের গান ও অভিনয়ে প্রবল ঝোঁক দেখে তাকে প্রতিবেশী গায়িকা রাধারানী দেবীর কাছে তালিম নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। তাঁর কাছেই গীতা দের প্রথম জীবনের নাচ, গান, অভিনয় শিক্ষা।
১৯৩৭ সালে মাত্র ছ’বছর বয়সে তিনি ‘আহুতি’ নামে একটি বাংলা ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান। ছবিটির পরিচালক ছিলেন ধীরেন গাঙ্গুলি। এরপরের ছবি ‘দম্পতি’ এবং ‘নন্দিতা’। পরিচালকরা যথাক্রমে ছিলেন নীরেন লাহিড়ী এবং সুকুমার দাশগুপ্ত।
তিনি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন ১৯৪৪ সালে। তিনি দুই শতাধিক বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র এবং দুই হাজারের বেশি মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন। গ্রুপ থিয়েটারে তিনি অভিনয় করেছেন বেশ কিছু বিখ্যাত পরিচালকের সঙ্গে। যেমন তুলসী লাহিড়ী, শম্ভু মিত্র, তুলসী চক্রবর্তী, জ্ঞানেশ মুখার্জি, কালী সরকার, কানু ব্যানার্জি, দিলীপ রায় প্রমুখের সঙ্গে।
তিনি সত্যজিৎ রায় এবং ঋত্বিক ঘটকের মেঘে ঢাকা তারা, সুবর্ণরেখা, কোমল গান্ধার, কত আজনারে, তিন কন্যার মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন।১৯৫৬ ছিল তাঁর কাছে একটি যুগান্তকারী বছর। সে বছর প্রখ্যাত পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের স‍‌ঙ্গে তাঁর আলাপ করিয়ে দেন অভিনেতা কালী ব্যানার্জি। ঋত্বিক ঘটক সম্পর্কে তিনি বলেছেন- ‘ক্যামেরার ব্যবহার এবং শট গ্রহণের ব্যাপারে এত বড় মাপের পরিচালক তিনি আর দেখেননি। তিনি আমার জন্য বেশ কিছু ফিল্মের কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত ‍‌সেগুলি আর বাস্তবায়িত হয়নি।’৬০ বছরের অভিনয় জীবনে উল্লেখ করার মত তাঁর অভিনীত অজয় করের সাত পাকে বাঁধা, নৌকাডুবি, মাল্যদান, অরবিন্দ মুখার্জির নিশিপদ্ম, দুই ভাই, বর্ণচোরা, মৌচাক ইত্যাদি ছবির নাম। বিভিন্ন ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন সাবলীলভাবে। চরিত্রগুলির মধ্যে সহজে ঢুকে যেতে পারতেন বলে দর্শকরা আনন্দ পেতেন।
তিনি ১৯৫৪ সাল থেকে অল ইন্ডিয়া রেডিওর সাথে যুক্ত ছিলেন এবং রেডিও নাটকে বেশ কয়েকটি সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন। তবে তার শেষ নাটক ছিল বাদশাহী চল।১৯৯৬ সালে উত্তর কলকাতার রঙ্গনা মঞ্চে এই নাটকটি পরিচালনা করেছিলেন গণেশ মুখোপাধ্যায়। তিনি বিভিন্ন চলচ্চিত্রে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি এই চলচ্চিত্রগুলিতে তার বহুমুখী পদ্ধতির জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তার অভিনয় এমনকি কিংবদন্তি লরেন্স অলিভিয়ারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তিনি নেতিবাচক এবং কৌতুক উভয় ভূমিকাতেই পারদর্শী ছিলেন।

তিনি বেশ কয়েকটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন; যার মধ্যে ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বিদ্যা বালান এবং সঞ্জয় দত্ত অভিনীতপরিণীতা উল্লেখযোগ্য।
তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকা———–
ইন্দ্রাণী, মেঘে ঢাকা তারা, কোমল গান্ধার, ডাইনী, কাঠিন মায়া, কাঞ্চন মূল্য, সাথী হারা, দুই ভাই, তিন কন্যা, কাঁচের স্বর্গ, শুভ দৃষ্টি, বন্ধন, বর্ণচোরা, সাত পাকে বাঁধা, দুই বাড়ী, ছায়া সূর্য, অভয়া ও শ্রীকান্ত, শেষ পর্যন্ত, পিতা পুত্র, নিশিপদ্মা, ময়দান, মৌচাক, বাঘ বন্দী খেলা, দম্পতি, দত্তা, সূর্য সখি, হিরের শিকল, মহাপৃথিবী, সন্তান, কথবশেশান, পরিণীতা, টলি লাইটস, চিরদিনি তুমি যে আমার, নৌকা ডুবি, আহবান (চলচ্চিত্র)।

পুরস্কার ও সম্মাননা—

তিনি বাংলা চলচ্চিত্র জগতে আজীবন অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন গভর্নর সৈয়দ নুরুল হাসানের কাছ থেকে একটি তারকা পদক পেয়েছিলেন (১৯৮৮)। রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও (বাংলা চলচ্চিত্র ও নাট্যশালায় আজীবন অবদানের জন্য)।

মৃত্যু——-

গীতা দে ১৭ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে ৭৯ বছর বয়সে কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

বাংলাদেশের প্রথম নারী পাইলট : সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানা।।।।।

বাংলাদেশের প্রথম নারী পাইলট : সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানাআজকের দিনেই বিমান দুর্ঘটনায় প্রয়াত হন।১৯৭৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম নারী পাইলট হিসেবে নিয়োগপত্র পান রোকসানা। তবে আকাশে উড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি তাঁর। নিয়োগের পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৮৪ সালের ৫ আগস্ট বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান রোকসানা।

বাংলাদেশের ইতিহাসে যে কয়টি ভয়ংকর বিমান দুর্ঘটনা রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এটি ছিল অন্যতম।
পুরো নাম সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানা। ডাক নাম তিতলী আর প্রিয়জনদের কাছে ‘লিটল আপা’। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর প্রথম নারী বৈমানিক। তিনি ক্যাপ্টেন পদাধিকারী ছিলেন। ১৯৭৭ সালে তিনি বাণিজ্যিক বিমান পরিচালনার সনদ লাভ করেন।
তার জন্ম ১৯৫৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরে। তার ডাক নাম ছিলো ‘তিতলী’, যার অর্থ ‘প্রজাপতি’। নামের প্রভাব যেন তার উপর ষোলো আনা পড়েছিল। তখনকার সমাজব্যবস্থা নারীর জন্য ছিল খুবই রক্ষণশীল। কিন্তু সেই রক্ষণশীল সমাজে থেকেও প্রজাপতির মতো ডানা মেলে ওড়ার স্বপ্ন দেখেছেন তিনি। শুধু স্বপ্ন দেখেই থেমে থাকেননি, স্বপ্ন সত্যি করে নাম লিখিয়েছেন ইতিহাসের পাতায়। হয়েছেন দেশের প্রথম নারী পাইলট। তবে চিরাচরিত নিয়ম ভেঙে হুঁট করেই ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাতে পারেননি তিনি। এর জন্য সমাজ ও নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে লড়াই চালাতে হয়েছে তাকে।
রোকসানা ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী এবং নানান গুণে পারদর্শী একজন নারী। ছিলেন রেডিও-টেলিভিশনের নামকরা একজন সংগীতশিল্পীও। তৎকালীন সময়ে জার্মান ভাষার ডিপ্লোমাধারী। যা মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। হাতের সামনে ছিল জার্মানির মেডিক্যালের স্কলারশিপ। চোখের সামনে উঁকি দিচ্ছিল উজ্জ্বল এক ভবিষ্যৎ। তবে তিনি অন্য দশজন সাধারণ মানুষের মতো নিচে থেকে নয়, জীবনকে উপভোগ করতে চেয়েছেন নীল আকাশে উড়তে উড়তে। তাইতো অনায়াসে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন জার্মানির মেডিক্যালের স্কলারশিপ। তারপর বিএসসিতে ভর্তি হন ঢাকার অন্যতম প্রসিদ্ধ উচ্চ শিক্ষালয় ইডেন কলেজে। কিন্তু অন্তরে তার অন্য বাসনা।
পাইলট হওয়ার স্বপ্ন কখনোই তার পিছু ছাড়েনি। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাব খুঁজে বের করে সেখানে যোগ দেন। এর ঠিক দুই বছরের মাথায় ১৯৭৮ সালে পেয়ে যান কমার্শিয়াল বিমান চালানোর লাইসেন্স। শুধু তাই নয়, সঙ্গে পেয়ে যান সহ-প্রশিক্ষকের লাইসেন্স। যার মাধ্যমে বহু শিক্ষানবীশকে ‘সেসনা’ ও ‘উইজিয়ন’ প্লেন চালানো শেখালেন। আর এভাবেই সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে স্বপ্ন-পূরণের লক্ষ্যে তার এগিয়ে চলা শুরু।
তাকে দমিয়ে দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয় সব মহল থেকে। কিন্তু কোনোভাবেই থেমে থাকেননি এই নারী। সমস্ত বাধা পেরিয়ে এরপর ১৯৭৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও মুসলিম বিশ্বের প্রথম মহিলা পাইলট হিসেবে নিয়োগপত্র পান এই নারী। দেশের সামরিক ইতিহাসে প্রশিক্ষণকালে সার্বিক বিষয়ে শ্রেষ্ঠ কৃতিত্বের জন্য ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করা তিনিই প্রথম নারী পাইলট। এরপরের ইতিহাস কেবলই গৌরবের। পরবর্তী বছরগুলোতে প্রায় ৬ হাজার ঘণ্টা বিমান পরিচালনার কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি।
তবে তার আকাশে ডানা মেলে ওড়ার পালা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। নিয়োগের পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৮৪ সালের ৪ আগস্ট এক মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় অকাল মৃত্যু বরণ করেন তিনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে যে কয়টা ভয়ঙ্কর বিমান দুর্ঘটনা রয়েছে, তার মধ্যে এটি অন্যতম। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে ফকার এফ-২৭ বিমানে করে ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বৃষ্টিবিঘ্নিত আবহাওয়ার দরুন বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়ে নিহত হন। প্রচণ্ড বৃষ্টি ছিল সেদিন। একই বিমান দুর্ঘটনায় ৪৫ জন যাত্রীসহ ৪জন ক্রু সদস্য নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন ব্রিটিশ নাগরিক, একজন জাপানী এবং ৩৩জন মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত বাংলাদেশী ছিলেন।কেউ বাঁচেনি অভিশপ্ত বিমানের।চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আগত অভ্যন্তরীণ এই ফ্লাইটটি অত্যধিক বৃষ্টিপাতের কারণে দুইবার অবতরণের চেষ্টা করেও রানওয়ে খুজে পেতে ব্যার্থ হয়, তৃতীয়বার অবতরণের চেষ্টার সময় বিমানটি রানওয়ে থেকে ৫০০ মিটার আগেই এক জলাভূমিতে পতিত হয়ে বিধ্বস্ত হয়।
পরে তদন্তে প্রমাণ মেলে ওই বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল।
সৈয়দা কানিজ ফাতেমার আয়ূষ্কাল মাত্র সাড়ে আটাশ বছরের হলেও তিনি সেই অল্প সময়টাতেই রচনা করেছেন নতুন ইতিহাস, যা তাকে বাঁচিয়ে রাখবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। ‘লিটল আপা’ উড়তে শিখিয়ে গেছেন পরের প্রজন্মের নারীদের। তার স্মৃতি রক্ষার্থে ‘রোকসানা ফাউন্ডেশন’ এর উদ্যোগে ১৯৮৫ সালের জুলাই থেকে ‘মাসিক রোকসানা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হতে শুরু করে।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

অতুল সেন : ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের শহীদ বিপ্লবী।।।।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে অতুল সেন প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।

অতুল সেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।
অতুল সেন, ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের শহীদ বিপ্লবী। অতুল সেন ছিলেন একজন বাঙালি ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী কর্মী যা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে। তিনি প্রায়ই সাম্ভু এবং কুট্টি উপনাম ব্যবহার করতেন।
জীবনের প্রথমার্ধ—
অতুল সেন ব্রিটিশ ভারতের খুলনা জেলার সেনাহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম অশ্বিনী কুমার সেন। ছাত্র থাকাকালীনই তিনি বিপ্লবী দলে যোগ দেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি গ্রামের বিখ্যাত বিপ্লবী রসিকলাল দাস, অনুজাচরণ সেন, রতিকান্ত দত্ত এবং কিরণ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সংস্পর্শে আসেন এবং বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত হন।
বিপ্লবী কার্যক্রম—
যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ার সময় তিনি যুগান্তর পার্টির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় স্টেটসম্যান বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে এমনভাবে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন যে বিপ্লবীরা প্রতিশোধ নিতে এবং প্রতিরোধ করার জন্য পত্রিকার সম্পাদক ওয়াটসনকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। এই গুরুদায়িত্ব পালনের ভার পড়ে যাদবপুর ইঞ্জিয়ারিং কলেজের ছাত্র এবং যুগান্তর দলের নিষ্ঠাবান কর্মী অতুল সেনের উপর। ওয়াটসন সাহেবকে এককভাবে আক্রমণ করতে গিয়ে তিনি ব্যর্থ হন। ১৯৩২ সালের ৫ আগস্ট, তিনি স্যার আলফ্রেড ওয়াটসনকে গুলি করেন, কিন্তু তিনি মিঃ ওয়াটসনকে হত্যা করতে ব্যর্থ হন এবং অবিলম্বে গ্রেফতার হন। তিনি পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন।” এর কিছুদিন পরে আরেক বিপ্লবী মণি লাহিড়ীও ওয়াটসনকে আবার গুলি করেন, কিন্তু পুলিশের হাত থেকে পলায়নরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় মারা যান।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

মহারাজা নন্দকুমার : তিনিই প্রথম ভারতীয় যাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।।।।

মহারাজা নন্দকুমার (নুনকোমার নামেও পরিচিত) (1705 – মৃত্যু 5 আগস্ট 1775) ছিলেন একজন ভারতীয় কর সংগ্রাহক যিনি আধুনিক পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে। নন্দ কুমারের জন্ম ভদ্রপুরে, যেটি এখন বীরভূমে। তিনিই প্রথম ভারতীয় যাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। ওয়ারেন হেস্টিংসকে পদ থেকে অপসারণের পর ১৭৬৪ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বর্ধমান, নদীয়া ও হুগলির দেওয়ান (কর সংগ্রাহক) হিসেবে নন্দকুমারকে নিযুক্ত করেছিলেন।

1773 সালে, যখন হেস্টিংস বাংলার গভর্নর-জেনারেল হিসাবে পুনর্বহাল হন, নন্দকুমার তার বিরুদ্ধে স্যার ফিলিপ ফ্রান্সিস এবং বাংলার সুপ্রিম কাউন্সিলের অন্যান্য সদস্যদের দ্বারা ঘুষ গ্রহণ বা দেওয়ার অভিযোগ আনেন। যাইহোক, হেস্টিংস কাউন্সিলের অভিযোগ বাতিল করেছিলেন। তারপরে, 1775 সালে, তিনি নন্দকুমারের বিরুদ্ধে নথি জালিয়াতির অভিযোগ আনেন। ভারতের প্রথম প্রধান বিচারপতি এবং ওয়ারেন হেস্টিংসের বন্ধু এলিজা ইম্পে-এর অধীনে মহারাজার বিচার করা হয়েছিল, তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং 1775 সালের 5 আগস্ট কলকাতায় ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।
পরে হেস্টিংস, প্রধান বিচারপতি স্যার এলিজা ইম্পির সাথে, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক অভিশংসিত হয়। বার্ক (এবং পরে ম্যাকোলে) বিচারিক হত্যাকাণ্ডের জন্য তাদের অভিযুক্ত করেছিলেন।
জীবনের প্রথমার্ধ—
নন্দকুমার ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলার নবাবের অধীনে পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। পলাশীর যুদ্ধের পর, বর্ধমান, নদীয়া ও হুগলির রাজস্ব সংগ্রহের জন্য তাদের
এজেন্ট হিসেবে নিয়োগের জন্য তাকে রবার্ট ক্লাইভের কাছে সুপারিশ করা হয়েছিল। ১৭৬৪ সালে শাহ আলম দ্বিতীয় দ্বারা নন্দকুমারকে “মহারাজা” উপাধি প্রদান করা হয়। তিনি ওয়ারেন হেস্টিংসের জায়গায় ১৭৬৪ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক বর্ধমান, নদীয়া এবং হুগলির কালেক্টর নিযুক্ত হন। তিনি রাধামোহন ঠাকুরের কাছ থেকে বৈষ্ণবধর্ম শিখেছিলেন।
হেস্টিংসের বিরুদ্ধে অভিযোগ—
মহারাজা নন্দকুমার হেস্টিংসের বিরুদ্ধে তাকে এক মিলিয়ন টাকার এক-তৃতীয়াংশের বেশি ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ করেন এবং দাবি করেন যে হেস্টিংসের বিরুদ্ধে একটি চিঠির আকারে তার কাছে প্রমাণ রয়েছে।
ওয়ারেন হেস্টিংস তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে ছিলেন এবং স্যার এলিজা ইম্পির স্কুল বন্ধু ছিলেন। কিছু ঐতিহাসিকের অভিমত যে মহারাজা নন্দকুমারের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং কলকাতার সুপ্রিম কোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি স্যার এলিজা ইম্পি নন্দকুমারকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য একটি মিথ্যা রায় দিয়েছিলেন। নন্দকুমারের ফাঁসিকে কিছু ইতিহাসবিদরা বিচারিক হত্যা বলে অভিহিত করেছেন। বিচারিক হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের জন্য ম্যাকওলে উভয়কেই অভিযুক্ত করেছেন। 1775 সালের 5 আগস্ট বর্তমান বিদ্যাসাগর সেতুর কাছে, কলকাতায় মহারাজা নন্দকুমারকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়কালে জালিয়াতির শাস্তি ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছিল (ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক পাসকৃত জালিয়াতি আইন 1728 দ্বারা বাধ্যতামূলক), যদিও কিছু আইনী পণ্ডিত বলেছেন যে আইনটি শুধুমাত্র ব্রিটেনে প্রযোজ্য ছিল, ভারতে ব্রিটিশ অঞ্চল নয়।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে রামকৃষ্ণ বিশ্বাস : বাঙালি, ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী।।।।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম ও লড়াই, যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত সৃঙ্খল মুক্ত হতে পেরেছভাপেরেছিল। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে রামকৃষ্ণ বিশ্বাস ছিলেন একজন অন্যতম বীর ও নির্ভীক বিপ্লবী।

রামকৃষ্ণ বিশ্বাস ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।
রামকৃষ্ণ বিশ্বাস ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব। তিনি গোপন বিপ্লবী দলের সদস্য ছিলেন। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল, সূর্য সেনের বিপ্লবী দলের একজন বেসামরিক ব্যক্তি হিসাবে ১৯৩০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বোমা প্রস্তুত করার সময় চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণে নেতা মারাত্মকভাবে আহত হন। ১৯৩০ সালের ১২ জানুয়ারি, মাস্টারদারের নির্দেশে চাঁদপুর স্টেশনে ইন্সপেক্টর জেনারেল ক্রেগকে হত্যা করার সময় তিনি এবং কালী চক্রবর্তী তারিণী মুখার্জীকে হত্যা করেন। তাকে ২২ মাইল দূরে ধরা পড়ে।

জন্ম—–
রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের জন্ম ১৬ জানুয়ারি, ১৯১০ সালে চট্টগ্রামের সারোয়াতলীতে। তার পিতার নাম দুর্গাকৃপা বিশ্বাস।

রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সান্নিধ্যে প্রীতিলতা—-

১৯৩০ সালে, টিজে ক্রেগ বাংলার পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসাবে নতুন দায়িত্ব নিয়ে চট্টগ্রাম সফর করেন। মাস্টার রামকৃষ্ণ বিশ্বাস ও কালীপদ চক্রবর্তীকে হত্যার জন্য মনোনীত করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, তারা ২ রা ডিসেম্বর ১৯৩০ তারিখে চাঁদপুর রেলস্টেশনে রিভলবার নিয়ে আক্রমণ করে কিন্তু ভুলবশত তারা মিস্টার ক্রেগের পরিবর্তে চাঁদপুরের এসডি ও তারিণী মুখার্জিকে হত্যা করে। ওই দিনই পুলিশ বোমা ও রিভলবারসহ রামকৃষ্ণ বিশ্বাস ও কালীপদ চক্রবর্তীকে গ্রেপ্তার করে। মনোরঞ্জন রায় এই বোমাগুলো কলকাতা থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন। তারিণী মুখোপাধ্যায় হত্যা মামলায় রামকৃষ্ণ বিশ্বাসকে মৃত্যুদণ্ড এবং কালীপদ চক্রবর্তীকে নির্বাসনে দেওয়া হয়েছিল। আলিপুর জেলের ডেথ সেলে মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকা রামকৃষ্ণকে দেখতে চট্টগ্রাম থেকে আসা স্বজনদের কারো পক্ষেই বেশি খরচ হওয়া সম্ভব হয়নি। এই খবর শোনার পর মনোরঞ্জন রায় প্রীতিলতাকে চিঠি লিখে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করার জন্য অনুরোধ করেন। মনোরঞ্জন রায়ের মা হিজলী জেলে ছেলের সাথে দেখা করতে গেলে গোপনে প্রীতিলতার হাতে লেখা চিঠি তুলে দেন।
গুনু পিসির পরামর্শে, প্রীতিলতা আলিপুর সেন্ট্রাল জেল কর্তৃপক্ষের কাছে “অমিতা দাস” ছদ্মনামে “চাচাতো ভাই” হিসাবে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে দেখা করার জন্য আবেদন করেছিলেন। জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তিনি প্রায় চল্লিশ বার রামকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করেন। এই সাক্ষাত সম্পর্কে তিনি লিখেছেন “তাঁর (রামকৃষ্ণ বিশ্বাস) গম্ভীর চেহারা, খোলামেলা কথা, মৃত্যুকে অদম্য আলিঙ্গন, ঈশ্বরের প্রতি অটল ভক্তি, শিশুসুলভ সরলতা, মমতা এবং কৃতিত্বের তীব্র অনুভূতি আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। আমি আগের চেয়ে দশগুণ বেশি সক্রিয় হয়েছি। এই আত্মত্যাগী তরুণ দেশপ্রেমের সাথে যোগাযোগ আমার জীবনের পরিপূর্ণতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।” ১৯৩১ সালের ৪ আগস্ট রামকৃষ্ণ বিশ্বাসকে ফাঁসি দেওয়া হয়। এই ঘটনাটি প্রীতিলতার জীবনে এক আমূল পরিবর্তন আনে।
মৃত্যু—-
১৯৩১ সালের ৪ আগস্ট রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসী হয়।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি বেতার সম্প্রচারক, নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্য পরিচালক – শ্রদ্ধাঞ্জলি।।।।

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র (৪ অগস্ট, ১৯০৫ – ৩ নভেম্বর, ১৯৯১) ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি বেতার সম্প্রচারক, নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্য পরিচালক। তিনি কলকাতার বাসিন্দা ছিলেন। পঙ্কজকুমার মল্লিক ও কাজী নজরুল ইসলামের সমসাময়িক বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ১৯৩০-এর দশক থেকে সুদীর্ঘকাল অল ইন্ডিয়া রেডিওয় বেতার সম্প্রচারকের কাজ করেছেন।

এই সময় তিনি একাধিক নাটক রচনা ও প্রযোজনাও করেন।
বীরেন্দ্রকৃষ্ণের সর্বাধিক পরিচিতি তার মহিষাসুরমর্দিনী নামক বেতার সঙ্গীতালেখ্যটির জন্য। ১৯৩১ সাল থেকে অদ্যাবধি মহালয়ার দিন ভোর চারটের সময় কলকাতার আকাশবাণী থেকে এই অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হয়। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ এই অনুষ্ঠানের ভাষ্য ও শ্লোকপাঠ করেছেন। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ একাধিক নাটকে অভিনয় ও পরিচালনার কাজও করেন। ১৯৫৫ সালে নিষিদ্ধ ফল নামে একটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও রচনা করেছিলেন তিনি।
প্রথম জীবন ও শিক্ষা—-
১৯০৫ সালের ৪ আগস্ট উত্তর কলকাতায় মাতুলালয়ে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের জন্ম হয়। তার ডাকনাম ছিল বুশী। পিতা ছিলেন রায়বাহাদুর কালীকৃষ্ণ ভদ্র ও মা ছিলেন সরলাবালা দেবী। পরবর্তীকালে ঠাকুমা যোগমায়া দেবীর কেনা ৭, রামধন মিত্র লেনে উঠে আসেন তার পরিবারবর্গ। কালীকৃষ্ণ ভদ্র ছিলেন বহুভাষাবিদ। তিনি ১৪টি ভাষা জানতেন। নিম্ন আদালতে দোভাষীর কাজ করতেন তিনি। পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যের জগতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক পরিচিত ব্যক্তিত্ব। কালীকৃষ্ণ পুলিশ কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী কালীচরণ ঘোষের দ্বিতীয় সন্তান সরলাবালা দেবীকে বিবাহ করেন। ১৯২৭ সালে তিনি “রায়বাহাদুর” খেতাব পান। কালীকৃষ্ণের দুই পুত্র জন্মায় – ভূপেন্দ্রকৃষ্ণ ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ।
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ১৯২৬ সালে ইন্টারমিডিয়েট ও ১৯২৮ সালে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক হন।
কর্মজীবন—-
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ একাধিক ধ্রুপদি কাহিনিকে বেতার নাট্যের রূপ দেন। ১৯৩০-এর দশকে তিনি যোগ দেন অল ইন্ডিয়া রেডিওয়। এই সময় থেকেই দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেবী দুর্গার পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে দুই ঘণ্টার সঙ্গীতালেখ্য মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। এই অনুষ্ঠানটির গ্রন্থনা করেছিলেন বাণীকুমার ভট্টাচার্য এবং সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক।বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভাষ্য ও শ্লোকপাঠ করেন। আজও দুর্গাপূজা শুরু হয় এই অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে। তিনি সাতটি ছদ্মনামে রেডিওতে প্রচুর অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন। তিনি অনেক রম্যরচনা ও নাটক লিখেছেন।
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ মেস নং ৪৯ সহ একাধিক নাটক রচনা করেন। বিমল মিত্রের সাহেব বিবি গোলাম উপন্যাসটিকে তিনি মঞ্চায়িত করেছিলেন। ১৯৫২ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সুবর্ণ গোলক গল্পটিকে তিনি নাট্যায়িত করেন।
উত্তরাধিকার—-
আজও দুর্গাপূজার সূচনায় মহালয়ার দিন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানটির রেকর্ড আকাশবাণী, কলকাতা থেকে সম্প্রচারিত হয়। এই অনুষ্ঠানটি এতটাই জনপ্রিয় যে, ১৯৭৬ সালে আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ বীরেন্দ্রকৃষ্ণের পরিবর্তে জনপ্রিয় অভিনেতা উত্তম কুমারকে দিয়ে অন্য একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করলে, তা জনমানসে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। আকাশবাণী কর্তৃপক্ষকে সেই অনুষ্ঠানের পরিবর্তে মূল মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানটিই সম্প্রচারিত করতে হয়।
এই ঘটনার উপর ২০১৯ সালে চিত্রপরিচালক সৌমিক সেন মহালয়া নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চরিত্রে রূপদান করেন শুভাশীষ মুখোপাধ্যায়। অন্যদিকে উত্তম কুমারের চরিত্রে অভিনয় করেন যীশু সেনগুপ্ত।
২০০৬ সালের মহালয়ার দিন বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কন্যা সুজাতা ভদ্র সারেগামা ইন্ডিয়া লিমিটেডের তরফ থেকে তার পিতার এই মহান কীর্তির রয়্যালটি স্বরূপ ৫০,৯১৭ টাকার একটি চেক পান।
রচনাবলি—-
হিতোপদেশ, ১৯৪৮; বিশ্বরূপ-দর্শন, ১৯৬৩; রানা-বেরানা, ১৯৬৫; ব্রতকথা সমগ্র, ১৯৮৫; শ্রীমদ্ভাগবত: সম্পূর্ণ দ্বাদশ স্কন্দ, উপেন্দ্রচন্দ্র শাস্ত্রীর সঙ্গে, ১৯৯০।
নাটক—
ব্ল্যাকআউট, সাত তুলসী, ১৯৪০।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This