Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

গোয়ার কালাঙ্গুট বিচ – গোয়ার “কুইন অফ বিচেস”।

গোয়ার নাম শুনলেই প্রথমেই যেটির ছবি চোখে ভেসে ওঠে, তা হলো এর রোদমাখা সোনালি সৈকত। আর এই সৈকতগুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো কালাঙ্গুট বিচ (Calangute Beach)। এটি গোয়ার বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত, যাকে সবাই স্নেহ করে “কুইন অফ বিচেস” নামে চেনে। কালাঙ্গুট বিচ শুধু একটি ভ্রমণ গন্তব্য নয়, এটি গোয়ার প্রাণকেন্দ্র, যেখানে প্রকৃতি, আনন্দ আর অ্যাডভেঞ্চার মিলেমিশে একাকার।

🌊 সমুদ্রতীরের সৌন্দর্য

কালাঙ্গুট বিচের প্রসারিত বালুকাবেলা, নীল সমুদ্র আর ঢেউয়ের ছন্দ এক অনন্য সৌন্দর্য তৈরি করে। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় এই বিচ যেন রঙিন ক্যানভাসে রূপ নেয়। সকালের শান্ত নির্জনতায় সমুদ্রতীরে হাঁটলে এক অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভূত হয়।

🎉 রঙিন পরিবেশ ও নাইটলাইফ

কালাঙ্গুট বিচ দিনে যেমন ব্যস্ত থাকে, রাতে তেমনি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। সৈকতের ধারে সারি সারি বিচ শ্যাক ও ক্যাফে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এখানে লাইভ মিউজিক, ডিজে নাইট, আগুনের শো (Fire Show) আর বিচ পার্টি গোয়ার রাতের জীবনকে আরও রঙিন করে তোলে।

🚤 জলক্রীড়ার স্বর্গরাজ্য

কালাঙ্গুট বিচে রয়েছে নানা ধরণের ওয়াটার স্পোর্টস –

প্যারাসেইলিং

জেট স্কি

স্পিড বোট রাইড

বানানা বোট রাইড

উইন্ড সার্ফিং

অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য এটি আদর্শ গন্তব্য। এইসব খেলাধুলা সৈকতের আনন্দ দ্বিগুণ করে তোলে।

🍤 খাবারের আসর

কালাঙ্গুট বিচের শ্যাক ও রেস্তোরাঁগুলোতে আপনি পাবেন গোয়ান সি-ফুডের আসল স্বাদ – প্রন কারি, ক্র্যাব এক্সএসি, কিংফিশ ফ্রাই থেকে শুরু করে ফেনি (Feni) পর্যন্ত। এছাড়াও আন্তর্জাতিক কুইজিনের বৈচিত্র্যও এখানে পাওয়া যায়।

🛍️ কেনাকাটার মজা

কালাঙ্গুট বিচের আশেপাশে অনেক ফ্লি মার্কেট ও হস্তশিল্পের দোকান রয়েছে। এখানে আপনি কিনতে পারেন শাঁখের গয়না, বিচ ড্রেস, হ্যান্ডক্রাফট, উডেন সুভেনির আর গোয়ান স্পাইস।

🌤️ ভ্রমণের সেরা সময়

অক্টোবর থেকে মার্চ মাস কালাঙ্গুট বিচ ভ্রমণের জন্য সেরা সময়। তখন আবহাওয়া মনোরম থাকে এবং সমুদ্র থাকে শান্ত। ডিসেম্বর মাসে ক্রিসমাস ও নিউ ইয়ার পার্টির জন্য কালাঙ্গুট হয় সবচেয়ে জমজমাট।

🛣️ যাতায়াত

নিকটতম বিমানবন্দর: গোয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ডাবোলিম), প্রায় ৪০ কিমি দূরে।

নিকটতম রেলস্টেশন: থিভিম স্টেশন, প্রায় ২০ কিমি দূরে।

পথে: পানাজি থেকে প্রায় ১৫ কিমি, ট্যাক্সি, লোকাল বাস বা স্কুটি ভাড়া করে সহজেই পৌঁছানো যায়।

 

🏁 উপসংহার

কালাঙ্গুট বিচ এক কথায় প্রকৃতি, অ্যাডভেঞ্চার আর আনন্দের এক অনন্য মিশ্রণ। সকালে সূর্যোদয় দেখা, দিনে জলক্রীড়ার উত্তেজনা আর রাতে বিচ পার্টির উন্মাদনা – সবকিছু একসঙ্গে উপভোগ করা যায় এখানে। যদি গোয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে, তবে কালাঙ্গুট বিচকে অবশ্যই আপনার ভ্রমণ তালিকায় রাখুন।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

গোয়ার পালোলেম বিচ – শান্ত সমুদ্রের স্বর্গ।

গোয়া মানেই রঙিন রাত, ব্যস্ত বিচ আর অবিরাম পার্টি। কিন্তু যদি আপনি চান এক টুকরো নির্জন স্বর্গ, যেখানে প্রকৃতির নীরবতা, নরম ঢেউয়ের সুর আর সোনালি বালুর স্পর্শে মন শান্ত হয়ে যায়, তবে আপনার গন্তব্য হওয়া উচিত পালোলেম বিচ। দক্ষিণ গোয়ায় অবস্থিত এই বিচ তার শান্ত সৌন্দর্য আর স্বচ্ছন্দ পরিবেশের জন্য পরিচিত।

🌊 সমুদ্রের শান্ত সৌন্দর্য

পালোলেম বিচ একটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির উপসাগর। এর বিস্তৃত সোনালি বালুকাবেলা, নীলাভ সমুদ্র আর নারকেল গাছের সারি এক অপূর্ব দৃশ্য তৈরি করে। এখানে ঢেউ খুব বেশি জোরালো নয়, তাই পরিবারের ছোটদের সঙ্গেও নিরাপদে স্নান করা যায়।

🛶 শান্তিপূর্ণ জলভ্রমণ

পালোলেম বিচে সবচেয়ে জনপ্রিয় আকর্ষণ হলো ডলফিন-ওয়াচিং বোট রাইড। ভোরবেলা বা বিকেলের দিকে নৌকা নিয়ে সমুদ্রে বেরিয়ে পড়লেই দেখা মেলে লাফিয়ে ওঠা ডলফিনের। এছাড়াও কায়াকিং, সাঁতার কাটা, প্যাডেল বোটিং ইত্যাদি শান্ত জলক্রীড়ার আনন্দও নেওয়া যায়।

🛏️ বিচ শ্যাক ও হাট

পালোলেম বিচে সারি সারি কাঠের শ্যাক, রঙিন ছাতা আর বিচ-সাইড ক্যাফে রয়েছে। এখানে বসে আপনি উপভোগ করতে পারেন তাজা সি-ফুড, গোয়ান কারি, কিংবা এক কাপ ঠান্ডা নারকেল জল। স্থানীয় ফ্লি মার্কেটে পাওয়া যায় হস্তশিল্প, কাপড়, শাঁখের অলংকার – যা স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে বাড়ি নিয়ে আসতে পারেন।

🧘‍♀️ যোগা ও রিলাক্সেশনের স্বর্গ

পালোলেম বিচে রয়েছে নানা যোগা সেন্টার ও ওয়েলনেস রিট্রিট। এখানে সকালের শান্ত বাতাসে যোগাসন করা বা সমুদ্রতীরে ধ্যান করা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

🌅 সূর্যাস্তের জাদু

পালোলেম বিচের সূর্যাস্ত একেবারেই বিশেষ। যখন সূর্য ধীরে ধীরে দিগন্তের ওপারে ঢলে পড়ে, সমুদ্রের রঙ সোনালি থেকে কমলা, তারপর গাঢ় লাল হয়ে যায় – তখন পুরো বিচ এক স্বপ্নিল আবহ তৈরি করে।

🌤️ ভ্রমণের সেরা সময়

অক্টোবর থেকে মার্চ হলো পালোলেম বিচ ভ্রমণের আদর্শ সময়। তখন আবহাওয়া আরামদায়ক থাকে এবং পর্যটকদের ভিড়ও বেশি থাকে। বর্ষার সময় সমুদ্র উত্তাল থাকায় ভ্রমণ কম নিরাপদ।

🛣️ যাতায়াত

নিকটতম বিমানবন্দর: গোয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ডাবোলিম), প্রায় ৬০ কিমি দূরে।

নিকটতম রেলস্টেশন: ক্যানাকোনা স্টেশন, প্রায় ৩ কিমি দূরে।

পথে: পানাজি থেকে ট্যাক্সি, লোকাল বাস বা বাইক ভাড়া করে সহজেই পৌঁছানো যায়।

 

🏁 উপসংহার

পালোলেম বিচ হলো শান্তির খোঁজে থাকা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য। এখানে নেই ব্যস্ত পার্টির কোলাহল, আছে কেবল সমুদ্রের ঢেউ, ডলফিনের খেলা আর প্রকৃতির স্নিগ্ধ সৌন্দর্য। গোয়ায় যদি আপনি একটু শান্ত সময় কাটাতে চান, তবে পালোলেম বিচ হবে আপনার জন্য একেবারে সেরা পছন্দ।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

গোয়ার বাসিলিকা অফ বোম জেসাস – খ্রিস্টীয় ঐতিহ্যের ।

গোয়া মানেই বিচ, রঙিন রাত ও সি-ফুডের স্বর্গ। কিন্তু গোয়ার প্রকৃত সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে এর সমৃদ্ধ ইতিহাস আর সংস্কৃতিতে। সেই ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হলো বাসিলিকা অফ বোম জেসাস। এই চার্চ কেবল গোয়ার নয়, পুরো ভারতের খ্রিস্টীয় ঐতিহ্যের এক মহামূল্যবান রত্ন।

🏛️ ইতিহাস ও গুরুত্ব

বাসিলিকা অফ বোম জেসাস ১৬০৫ সালে পর্তুগিজদের দ্বারা নির্মিত। এটি ভারতের প্রাচীনতম চার্চগুলির মধ্যে একটি এবং ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত। চার্চটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এখানে সংরক্ষিত আছে সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ারের মৃতদেহ। তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত মিশনারি এবং খ্রিস্টধর্ম প্রচারের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব।

🏰 স্থাপত্যশৈলী

চার্চটির স্থাপত্য নিখুঁত বারোক (Baroque) স্টাইলে নির্মিত। লাল ল্যাটেরাইট পাথরের তৈরি এই চার্চের সম্মুখভাগ গম্ভীর অথচ আকর্ষণীয়। ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যায় সোনালী রঙে অলংকৃত বেদি, সুন্দর কাঠের খোদাই, এবং বাইবেলের নানা দৃশ্য অঙ্কিত শিল্পকর্ম।

🕯️ আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা

চার্চে প্রবেশ করলেই মন এক অদ্ভুত শান্তি পায়। এখানে নিয়মিত প্রার্থনা ও মাস অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে স্থানীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের পর্যটকরা অংশ নেন। বিশেষ করে ডিসেম্বর মাসে সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ারের স্মরণোৎসব পালিত হয়, তখন হাজার হাজার তীর্থযাত্রী এখানে ভিড় জমান।

🎨 মিউজিয়াম ও নিদর্শন

বাসিলিকা অফ বোম জেসাসের একাংশে একটি ছোট মিউজিয়াম রয়েছে, যেখানে ধর্মীয় চিত্রকলা, প্রাচীন দলিলপত্র ও ভাস্কর্য সংরক্ষিত আছে। এই সংগ্রহশালা গোয়ার পর্তুগিজ যুগের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ইতিহাসকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।

🛣️ যাতায়াত ও অবস্থান

অবস্থান: ওল্ড গোয়া, পানাজি থেকে প্রায় ১০ কিমি দূরে।

যাতায়াত: পানাজি থেকে বাস, ট্যাক্সি বা বাইক ভাড়া করে সহজেই পৌঁছানো যায়।

সময়: সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে (সোমবার বন্ধ)।

 

🏁 উপসংহার

বাসিলিকা অফ বোম জেসাস কেবল একটি চার্চ নয়, এটি ভারতের খ্রিস্টীয় ঐতিহ্যের এক জীবন্ত প্রতীক। এর স্থাপত্য, ইতিহাস এবং আধ্যাত্মিক আবহ মনকে গভীরভাবে স্পর্শ করে। গোয়া ভ্রমণে যদি আপনি বিচ পার্টির বাইরে কিছু ভিন্ন স্বাদ খুঁজে থাকেন, তবে এই চার্চে একবার অবশ্যই ঘুরে আসুন।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

রাজস্থানের জয়সলমের নিয়ে একটি সুন্দর ও তথ্যবহুল ভ্রমণ কাহিনী।

🏜️ রাজস্থানের জয়সলমের – মরুর সোনার শহর

রাজস্থানের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত জয়সলমের (Jaisalmer) ভারতীয় মরুভূমির এক অদ্বিতীয় রত্ন। সোনালি বালির পাহাড়, রজত-সুন্দর স্থাপত্য, রাজকীয় দুর্গ এবং মরুভূমির বিস্ময়কর পরিবেশের জন্য জয়সলমেরকে বলা হয় “গোল্ডেন সিটি”


🏯 ইতিহাস ও পরিচিতি

জয়সলমের শহর প্রতিষ্ঠা করেন রাও জয়সল ১ম 1156 সালে। এটি প্রাচীন সময়ে কারওয়ান সারাই ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত ছিল। সিল্ক রোডের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে এটি বিভিন্ন সভ্যতা ও সংস্কৃতির মিলনস্থল ছিল। জয়সলমেরের স্থাপত্য ও দুর্গ আজও তার ঐতিহাসিক গৌরবকে প্রতিফলিত করে।


🌟 প্রধান দর্শনীয় স্থান

1️⃣ জয়সলমের ফোর্ট (Sonar Qila / Golden Fort)

পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়ানো এই দুর্গ সোনালি বেলেপাথরের তৈরি। এটি এক জীবন্ত শহর, কারণ এখনও এখানে বহু মানুষ বসবাস করেন।

  • পাটওয়ারী প্যালেস এবং মেহরানগড়ের মতো ছোট প্রাসাদ দুর্গের ভেতরে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।
  • সূর্যাস্তের সময় দুর্গের সোনালি আভা সত্যিই চোখ জুড়ে রাখে।

2️⃣ পাটওয়ানি হাভেলিস (Patwon Ki Haveli)

পাঁচটি সংযুক্ত হাভেলি যা প্রাচীন ধনীদের গৌরবের নিদর্শন। সূক্ষ্ম খোদাই, দৃষ্টিনন্দন বারান্দা ও বড় উঠোন পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

3️⃣ সালিম সিং হাভেলি (Salim Singh Haveli)

অদ্বিতীয় স্থাপত্য এবং বাঁকা চিমনির জন্য বিখ্যাত।

4️⃣ সমধিয়া হ্রদ ও বালুকার সৈকত (Sam Sand Dunes)

মরুভূমির বেলাভূমি যেখানে ঘোড়া বা উটের পিঠে সূর্যাস্তের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা উপভোগ করা যায়।

5️⃣ ফিসার ঝরণা ও ট্র্যাডিশনাল বাজার

স্থানীয় হস্তশিল্প, জুয়েলারি, রঙিন কাপড় এবং মাটির সামগ্রী কেনার জন্য সমৃদ্ধ বাজার।


🐪 মরুভূমির অভিজ্ঞতা

জয়সলমের ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ হল মরুভূমির সাহারা অভিযান। উটের পিঠে ভ্রমণ, মরুভূমিতে স্যান্ড বর্ডিং এবং রাতের সময় ক্যাম্প ফায়ার ও রাজস্থানির লোকসংগীত এই অভিজ্ঞতাকে স্মরণীয় করে তোলে।


🍲 রাজস্থানি খাবার

জয়সলমেরের স্বাদ-ভ্রমণও সমান রোমাঞ্চকর।

  • দাল-বাটি-চুরমা
  • গট্টে-কি-সবজি
  • কচৌরি, ঘেভর ও মালপুয়া
    এখানকার রাস্তার ধারের ছোট ছোট রেস্তোরাঁ ভ্রমণকারীদের মন জয় করে।

🛍️ কেনাকাটা

  • স্থানীয় হস্তশিল্প, লেদার ব্যাগ, নকশা করা কাপড়, পট্রি (Pottery) ও রাজস্থানি পাগড়ি কেনার জন্য বিখ্যাত।
  • সোনার কাসবাহ বাজারবাজারে হ্যান্ডিক্রাফট শপ পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয়।

🚌 কীভাবে পৌঁছাবেন

  • ✈️ বিমানপথে: জয়সলমের বিমানবন্দর থেকে দিল্লি, মুম্বাই ও জয়পুরের সঙ্গে সংযোগ।
  • 🚉 রেলপথে: জয়সলমের জংশন ভারতের বিভিন্ন শহরের সঙ্গে যুক্ত।
  • 🚗 সড়কপথে: জয়পুর, পুণ্ডুয়া ও বীকানের থেকে সহজ ড্রাইভে পৌঁছানো যায়।

🌄 উপসংহার

জয়সলমের শুধু একটি শহর নয়, এটি মরুভূমির স্বর্ণালী রূপকথা। সোনালি বেলেপাথরের দুর্গ, বালুকার বেলাভূমি, রাজকীয় হাভেলি, রাজস্থানি খাবার ও সংস্কৃতি মিলিয়ে এই শহর ভ্রমণকারীদের এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে। যারা মরুর জাদু এবং রাজপুত ঐতিহ্যের স্বাদ নিতে চান, তাদের জন্য জয়সলমের এক অপরিহার্য গন্তব্য।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

রাজস্থানের আম্বের ফোর্ট নিয়ে একটি সুন্দর ও তথ্যবহুল ভ্রমণ কাহিনী।

🏰 রাজস্থানের আম্বের ফোর্ট – রাজকীয় ইতিহাসের সোনালি অধ্যায়

ভারতের রাজস্থান রাজ্যের জয়পুর শহরের প্রায় ১১ কিমি দূরে অবস্থিত আম্বের ফোর্ট (Amber Fort) রাজপুত স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন। পাহাড়ের গা ঘেঁষে তৈরি এই দুর্গের সৌন্দর্য, ইতিহাস ও কারুকাজ প্রত্যেক ভ্রমণপ্রেমীর মনে এক স্থায়ী ছাপ ফেলে। জয়পুর ভ্রমণে যারা যান, তাদের জন্য আম্বের ফোর্ট এক অবশ্যই দেখার মতো স্থান।


🏯 ইতিহাসের পাতায় আম্বের ফোর্ট

আম্বের ফোর্টের ইতিহাস শুরু হয় ১৬শ শতকে। রাজপুত রাজা মান সিং প্রথম (Raja Man Singh I) ১৫৯২ সালে এই দুর্গ নির্মাণ শুরু করেন এবং পরবর্তী শাসকরা এর সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন। এই দুর্গ ছিল কচ্ছওয়া রাজপুত রাজাদের প্রধান আবাসস্থল এবং এখান থেকেই জয়পুরের রাজারা শাসন করতেন।


🎨 স্থাপত্যের বৈভব

আম্বের ফোর্টের স্থাপত্যে রাজপুত ও মুঘল স্টাইলের মিশ্রণ দেখা যায়। এখানে রয়েছে সাদা মার্বেল, লাল বেলেপাথর এবং জটিল জালি কাজের এক অপূর্ব সমাহার।

🔸 প্রধান অংশগুলো

  • দিল-ই-আরাম বাগান: দুর্গের প্রবেশমুখেই রয়েছে এই সুন্দর উদ্যান।
  • দেওয়ান-ই-আম: যেখানে রাজা সাধারণ প্রজাদের অভিযোগ শুনতেন।
  • শীশ মহল (Mirror Palace): দুর্গের সবচেয়ে বিখ্যাত অংশ। দেয়াল ও ছাদে ছোট ছোট আয়না বসানো, যার ফলে একটি ছোট আলোও হাজার গুণ প্রতিফলিত হয়।
  • গণেশ পোল: সূক্ষ্ম চিত্রকলায় সজ্জিত প্রবেশদ্বার, যা দুর্গের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
  • সুখ নিভাস: যেখানে শীতলীকরণ ব্যবস্থার জন্য পানির ধারা ব্যবহার করা হতো।

🐘 হাতি চড়ে দুর্গে ওঠা

আম্বের ফোর্টে ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ হল হাতি চড়ে দুর্গে ওঠা। যদিও এখন প্রাণী কল্যাণের কারণে অনেকেই এই রাইড এড়িয়ে যান, তবুও এটি একসময় রাজকীয় যাতায়াতের অংশ ছিল।


🌅 লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো

সন্ধ্যাবেলা আম্বের ফোর্টে অনুষ্ঠিত লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো ইতিহাসকে জীবন্ত করে তোলে। রাজপুত বীরদের কাহিনি, যুদ্ধের গল্প এবং দুর্গের নির্মাণ ইতিহাস আলো ও শব্দের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়।


🛍️ আশেপাশের বাজার

দুর্গের বাইরে ছোট ছোট দোকানে হস্তশিল্প, রাজস্থানি গয়না, কাঁচের কাজ, ব্লক প্রিন্টেড কাপড় ও রাজস্থানি পাগড়ি পাওয়া যায়।


🍲 স্থানীয় খাবারের স্বাদ

আম্বের ভ্রমণে এসে রাজস্থানি খাবারের স্বাদ নিতে ভুলবেন না। দাল-বাটি-চুরমা, গট্টে কি সবজি, মির্চি বড়া, লাল মাংস এখানে বিশেষ জনপ্রিয়।


🚌 কীভাবে পৌঁছাবেন

  • ✈️ বিমান পথে: জয়পুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সি বা গাড়িতে প্রায় ৪৫ মিনিটে পৌঁছানো যায়।
  • 🚉 রেল পথে: জয়পুর রেলস্টেশন থেকে সহজেই ট্যাক্সি বা অটোতে যাওয়া যায়।
  • 🚗 সড়ক পথে: NH48 ধরে দিল্লি থেকে প্রায় ৫ ঘণ্টার ড্রাইভ।

🌄 উপসংহার

আম্বের ফোর্ট শুধু একটি দুর্গ নয়, এটি এক রাজকীয় ইতিহাসের জ্যান্ত সাক্ষী। এর প্রতিটি করিডর, প্রতিটি আঙিনা যেন অতীতের বীরত্বগাথা ও রাজকীয় জাঁকজমকের গল্প বলে। স্থাপত্যের সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক কাহিনি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ মিলিয়ে আম্বের ফোর্ট ভ্রমণ প্রতিটি পর্যটকের জন্য এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

বিদেশে পুজোর আনন্দ।

ভূমিকা:-

দুর্গা পুজো বাঙালির জীবনের সবচেয়ে বড় উৎসব। একসময় কেবল কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, আসাম কিংবা বাংলাদেশের বাঙালিরাই এই উৎসব ঘিরে মাতোয়ারা থাকত। কিন্তু আজ প্রবাসী বাঙালির সংখ্যা কয়েক মিলিয়নে পৌঁছেছে। ফলে নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, টরন্টো, দুবাই, সিডনি, টোকিও কিংবা সিঙ্গাপুর—বিশ্বের নানা প্রান্তে আজ দুর্গা পুজো পালিত হয় মহাধুমধামে। বিদেশে এই পুজো শুধুই ধর্মীয় আচার নয়, এটি প্রবাসী বাঙালির পরিচয়, মিলনমেলা ও শিকড়ের সঙ্গে যোগসূত্র রক্ষার এক অনন্য মাধ্যম।


বিদেশে দুর্গা পুজোর সূচনা

প্রবাসে দুর্গা পুজোর ইতিহাস প্রায় শতবর্ষ পুরনো।

  • প্রথম উদ্যোগ: ১৯০৯ সালে লন্ডনে প্রথম দুর্গা পুজোর আয়োজন হয় কিছু ভারতীয় ছাত্রছাত্রী ও ব্যবসায়ীর উদ্যোগে।
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে: ভারত থেকে প্রচুর মানুষ পড়াশোনা ও চাকরির জন্য বিদেশে যান, তখন থেকে ইউরোপ ও আমেরিকায় পুজোর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
  • বর্তমান সময়ে: আজ যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় ২০০টির বেশি দুর্গা পুজো অনুষ্ঠিত হয় প্রতি বছর। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও বহু বড় ক্লাব পুজো আয়োজন করে।

বিদেশে পুজোর প্রস্তুতি

বিদেশে পুজোর আয়োজন করা একেবারে সহজ নয়।

  • প্রতিমা: অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা অর্ডার দিয়ে পাঠানো হয়, কখনো কখনো স্থানীয় শিল্পীরাও মাটির প্রতিমা বানান।
  • স্থান নির্বাচন: কমিউনিটি সেন্টার, স্কুল অডিটোরিয়াম, এমনকি বড় কনভেনশন হল ভাড়া করা হয়।
  • আর্থিক দিক: সব খরচ চলে সদস্যদের সাবস্ক্রিপশন, স্পনসরশিপ এবং ডোনেশন দিয়ে।
  • খাবার ও ভোগ: ভারতীয় রেস্টুরেন্ট থেকে খিচুড়ি, লাবড়া, বেগুন ভাজা, চাটনি ইত্যাদি প্রস্তুত করা হয়, যাতে ভোগের স্বাদ বাঙালির মতোই থাকে।

বিদেশে দুর্গা পুজোর সামাজিক গুরুত্ব

প্রবাসে এই পুজো কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির বার্ষিক উৎসব।

  • সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: রবীন্দ্রসঙ্গীত, নাটক, ধুনুচি নাচ, ফ্যাশন শো, এমনকি কুইজ প্রতিযোগিতাও হয়।
  • নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করানো: যারা বিদেশে জন্মেছে, তাদের জন্য এটি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার দুর্দান্ত সুযোগ।
  • মিলনমেলা: পড়াশোনা বা চাকরির চাপে একে অপরের সঙ্গে দেখা না হলেও পুজোর সময় সবাই মিলে একত্র হন।

কিছু উল্লেখযোগ্য বিদেশি দুর্গা পুজো

  • নিউ ইয়র্কের সার্বজনীন দুর্গা পুজো: যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় পুজো, যেখানে হাজার হাজার বাঙালি একত্রিত হন।
  • লন্ডনের ক্যামডেন টাউন পুজো: ঐতিহ্যবাহী ইউরোপীয় দুর্গা পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম।
  • টরন্টোর বেঙ্গলি কালচারাল সোসাইটি পুজো: কানাডায় অন্যতম জনপ্রিয় অনুষ্ঠান।
  • সিঙ্গাপুর ও কুয়ালালামপুরের পুজো: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম জমজমাট পুজো, যেখানে ভারতীয় ও স্থানীয় জনগণ অংশ নেন।
  • দুবাই ও আবুধাবির পুজো: মধ্যপ্রাচ্যের বাঙালিরা সীমিত পরিসরে হলেও যথাযথভাবে উৎসব পালন করেন।

বিদেশে পুজোর চ্যালেঞ্জ

  • লজিস্টিক সমস্যা: প্রতিমা আনা, পুজোর সামগ্রী জোগাড় করা, বড় হল বুকিং—সবই সময়সাপেক্ষ।
  • ভিসা ও ছুটি: পুজোর তারিখ অনুযায়ী অনেককে ছুটি নিতে হয়, যা সবসময় সহজ নয়।
  • সংস্কৃতির পার্থক্য: স্থানীয় আইন মেনে শব্দদূষণ, আগুন বা ধূপ-ধুনো ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।

বিদেশে পুজোর আনন্দ

সব কষ্ট সত্ত্বেও বিদেশে দুর্গা পুজোর আবেগ আলাদা।

  • প্যান্ডেল ছোট হলেও উৎসাহ বিশাল।
  • সবার অংশগ্রহণ: রান্না থেকে শুরু করে সজ্জা, পূজা, গান—সব কাজ মিলেমিশে করা হয়।
  • নস্টালজিয়া: অনেকে কলকাতার পুজো মিস করলেও এখানে নতুন বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, মনে হয় যেন ছোট্ট কলকাতা তৈরি হয়েছে বিদেশের মাটিতে।

উপসংহার

বিদেশে দুর্গা পুজো আজ কেবল উৎসব নয়, এটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের এক মহা প্রচেষ্টা। বাঙালি যেখানেই থাকুক না কেন, মহালয়ার ভোর থেকে শুরু করে বিজয়া দশমীর সিঁদুর খেলা পর্যন্ত তার হৃদয়ে দেবীর আবাহন একইভাবে বেজে ওঠে। বিদেশে পুজো বাঙালিকে তার শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত রাখে, নতুন প্রজন্মকে তার পরিচয়ের গর্ব শেখায় এবং বিশ্বমঞ্চে বাঙালি সংস্কৃতির এক অনন্য পরিচয় তুলে ধরে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

উত্তরাখণ্ডের রহস্যময় ভ্রমণ কাহিনী।

এই উত্তরাখণ্ডের ভ্রমণ স্থানগুলোকে একত্র করে একটি সুন্দর ভ্রমণ কাহিনী তৈরি করছি। এখানে আপনি পাবেন আধ্যাত্মিকতা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অ্যাডভেঞ্চারের এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

সন্ধ্যা নামতে নামতেই অরুণ তাঁর ব্যাগে শেষ কয়েকটি জিনিস ঢুকিয়ে দিল। আজ তিনি শুরু করতে যাচ্ছিলেন উত্তরাখণ্ডের এক অনন্য ভ্রমণ, যা তাঁকে নিয়ে যাবে হিমালয়ের সৌন্দর্য, পবিত্র নদী, হিল স্টেশন এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষিত স্থানগুলোতে।


১️⃣ হরিদ্বার – গঙ্গার তীরে প্রথম পদক্ষেপ

হরিদ্বার পৌঁছেই অরুণের চোখ পড়ল ঘাটে জ্বলতে থাকা দীপাবলি আলোতে। গঙ্গার তীরে দাঁড়িয়ে সারা শহরের কীর্তন এবং আরতিগুলো মনকে শান্তি দিচ্ছিল। হার-কি-পৌরি থেকে পায়ে পায়ে হাঁটতে হাঁটতে তিনি অনুভব করলেন আধ্যাত্মিকতার গভীরতা।


২️⃣ ঋষিকেশ – অ্যাডভেঞ্চার ও ধ্যানের মিলন

পরের দিন তিনি রওনা দিলেন ঋষিকেশের পথে। নদীর তীরে হোয়াইট ওয়াটার রাফটিং করলেন। এরপর লক্ষ্মণ ঝুলন্ত সেতু পার হয়ে যোগ আশ্রমে ধ্যান করলেন। নদীর ঝর্ণার শব্দ এবং পাহাড়ের শীতল বাতাস এক অদ্ভুত প্রশান্তি দিচ্ছিল।


৩️⃣ কেদারনাথ – আধ্যাত্মিকতার উচ্চশিখরে

কেদারনাথের পবিত্র মন্দিরে পৌঁছালে অরুণ অনুভব করলেন নিঃশব্দ ভক্তির আবহ। বরফে ঢাকা পাহাড় এবং মন্দিরের ভিড়, সব মিলিয়ে মনে করিয়ে দিচ্ছিল প্রকৃতির সৌন্দর্য ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের এক অনন্য মেলবন্ধন।


৪️⃣ বদ্রিনাথ – ভগবান বিষ্ণুর ধাম

কেদারনাথ থেকে এগিয়ে তিনি পৌঁছালেন বদ্রিনাথ। গঙ্গা এবং আলকানন্দা নদীর সংযোগস্থলে স্থাপিত এই মন্দিরে ভক্তদের প্রার্থনা এবং আরতি তাঁকে আলাদা এক আনন্দ দিল। পাহাড়ের শীতল বাতাস ও নদীর শব্দ ভ্রমণকে আরও স্মরণীয় করে তুলল।


৫️⃣ গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রী – হিমালয়ের উত্স

ভ্রমণ আরও এগোতেই অরুণ পৌঁছালেন গঙ্গোত্রী। হিমালয়ের কোলাহলময় নদীর উত্সস্থান তাকে প্রকৃতির রহস্যময় সৌন্দর্যের সঙ্গে পরিচয় করাল। এরপর যমুনোত্রী যাওয়া এক আলাদা অনুভূতি দিল – বরফে ঢাকা পাহাড় এবং শান্ত নদীর মিলন সত্যিই হৃদয়স্পর্শী।


৬️⃣ নৈনিতাল ও মুসৌরি – হিল স্টেশন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

নৈনিতালে নয়নাভিরাম হ্রদ এবং পার্শ্ববর্তী পাহাড়ের সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করল। এরপর মুসৌরির ক্যান্টনমেন্ট এলাকা ও ট্রম লাইন দিয়ে পাহাড়ের পথ ঘুরে তিনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করলেন।


৭️⃣ আলমোড়া – ঐতিহ্য ও সবুজের মিলন

আলমোড়ায় পৌঁছালে তিনি দেখলেন পাহাড়ের উপত্যকা, সবুজ বন এবং ঐতিহ্যবাহী পাথরের বাড়ি। ছোট ছোট চায়ের দোকান এবং স্থানীয় হস্তশিল্প তাকে স্থানীয় জীবনধারার সঙ্গে পরিচয় করাল।


৮️⃣ জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক – বন্যপ্রাণীর অভিজ্ঞতা

শেষদিনে অরুণ গেলেন জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কে। বাঘ, হরিণ, হাতি এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। সাফারি চলাকালীন পাহাড়ের রোদের ছায়া এবং সবুজ বন তাকে প্রকৃতির সঙ্গে আরও গভীরভাবে সংযুক্ত করল।


🌄 ভ্রমণের সমাপ্তি

ভ্রমণ শেষে অরুণ হোটেলের বারান্দায় বসে ভাবলেন – হরিদ্বারের আধ্যাত্মিকতা, ঋষিকেশের অ্যাডভেঞ্চার, কেদার-বদ্রিনাথের পবিত্রতা, হ্রদ ও হিল স্টেশন, বনভূমি সব মিলিয়ে এই ভ্রমণ ছিল এক অসাধারণ জীবনদর্শন। প্রতিটি স্থান তার মনে ছাপ ফেলেছে, যা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে স্মৃতির মতো থাকবে।

Share This
Categories
রিভিউ

টলিউড তারকা দর্শনা বণিক পাপাকাতের পুজো প্রতিযোগিতার মুখ।

এই দুর্গাপুজোয়, শহরের উৎসবমুখর পরিবেশে পাপাকাত তাদের আকর্ষণীয় ট্যাগলাইন “ফুচকা খাও, ফুকেট যাও” সহ পুজো ফুচকা অফারটি উন্মোচন করেছে। এই উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিযোগিতা খাদ্যপ্রেমীদের তাদের প্রিয় ফুচকা উপভোগ করার এবং থাইল্যান্ডের ফুকেটের বিদেশী সমুদ্র সৈকতে একটি অবিস্মরণীয় ছুটি জেতার সুযোগ দেয়।

এই উৎসব উদযাপনটি গ্ল্যামারাস হয়ে উঠেছে জনপ্রিয় টলিউড অভিনেত্রী দর্শনা বণিককে প্রতিযোগিতার দূত হিসেবে ঘোষণা করায়। তাঁর প্রাণবন্ত উপস্থিতি এবং স্টাইলিশ ব্যক্তিত্বের জন্য পরিচিত দর্শনা এই অনন্য প্রচারণায় আকর্ষণ এনেছেন যা কলকাতার প্রিয় স্ট্রিট ফুডকে স্বপ্নের ছুটি কাটানোর সুযোগের সাথে মিলিয়ে দিয়েছে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ফুলের ময়দান – জম্মু ও কাশ্মীরের গুলমার্গ নিয়ে একটি সুন্দর ভ্রমণ কাহিনী।

যখন কেউ “কাশ্মীর” শব্দটি শোনে, মনের মধ্যে যে ছবিটি প্রথম আঁকা হয় তা হলো তুষারে মোড়া পাহাড়, সবুজ মেদিনী এবং নীরব সৌন্দর্য। সেই ছবির বাস্তব রূপ হলো গুলমার্গ। জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুলা জেলায় অবস্থিত এই মনোরম হিল স্টেশনটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শীতকালীন খেলাধুলা এবং রোমাঞ্চের এক অনন্য মিলন। গুলমার্গকে বলা হয় “Meadow of Flowers” – অর্থাৎ ফুলের ময়দান, কারণ গ্রীষ্মে এখানে ফুটে ওঠে অসংখ্য বুনো ফুল, আর শীতে এটি রূপ নেয় বরফের রাজ্যে।


🏞 অবস্থান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

গুলমার্গ প্রায় ২,৬৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। চারদিকে পির পাঞ্জাল পর্বতমালার তুষারাবৃত চূড়া একে সত্যিই স্বর্গীয় সৌন্দর্য দেয়। গ্রীষ্মকালে সবুজ ঘাস, রঙিন ফুল এবং হিমালয়ের শীতল বাতাস পর্যটকদের মন জয় করে। আর শীতে গুলমার্গ রূপ নেয় আন্তর্জাতিক মানের স্কি রিসোর্টে


🚡 গন্ডোলা রাইড – আকাশে ভেসে ওঠার অনুভূতি

গুলমার্গের সবচেয়ে বিখ্যাত আকর্ষণ হলো গুলমার্গ গন্ডোলা, যা বিশ্বের অন্যতম উচ্চতম কেবল কার।

  • প্রথম ধাপ পর্যটকদের নিয়ে যায় কংদোর বেস স্টেশনে (প্রায় ৩,০৮০ মিটার)।
  • দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে যায় আফারওয়াত শিখরের কাছে (প্রায় ৩,৯৭৯ মিটার) – যেখানে চারপাশের তুষারাবৃত পাহাড় চোখ ধাঁধিয়ে দেয়।
    এই রাইডে দাঁড়িয়ে মনে হয় যেন আপনি আকাশ ছুঁয়ে ফেলছেন।

🎿 শীতকালীন খেলাধুলা

গুলমার্গকে বলা হয় ভারতের স্কি রাজধানী

  • এখানে স্কি, স্নোবোর্ডিং, স্নো ট্রেকিং, স্লেজ রাইড, স্নোম্যান বানানো ইত্যাদি অসাধারণ অভিজ্ঞতা নেওয়া যায়।
  • প্রতি বছর আন্তর্জাতিক পর্যটকরা গুলমার্গে এসে স্কি করার আনন্দ উপভোগ করেন।

🌸 গ্রীষ্মকালীন সৌন্দর্য

শুধু শীতেই নয়, গুলমার্গ গ্রীষ্মকালেও স্বর্গের মতো সুন্দর।

  • পাহাড়ি পথ ধরে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে দেখা যায় খিলানমার্গ, আলপাথর লেক ইত্যাদি।
  • গ্রীষ্মকালে এখানে অসংখ্য বুনো ফুল ফোটে – পপি, ব্লুবেল, ডেইজি, বাটারকাপ – যা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক রঙিন অভিজ্ঞতা।

🕌 আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

  • শ্রাইন অব বাবা রেশি – ১৫শ শতকের সুফি সন্তের সমাধি।
  • খিলানমার্গ – ঘোড়ায় চেপে বা ট্রেক করে যাওয়া যায়, এখান থেকে পুরো গুলমার্গ ভ্যালি দেখা যায়।
  • আলপাথর লেক – বরফে ঢাকা সুন্দর হ্রদ, গ্রীষ্মেও যার জল বরফশীতল।

🏨 আবাসন ও আতিথেয়তা

গুলমার্গে রয়েছে নানা ধরনের হোটেল, কটেজ ও রিসোর্ট – বিলাসবহুল থেকে বাজেট ফ্রেন্ডলি সব ধরনের। শীতকালে গরম কাঠের কটেজে বসে বাইরে বরফঝড় দেখা এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। স্থানীয় কাশ্মীরি কাহওয়া চা ও গুসতাবা, রোগানজোশের মতো খাবার স্বাদে এনে দেয় বাড়তি আনন্দ।


📸 ফটোগ্রাফির স্বর্গ

গুলমার্গে গেলে ক্যামেরা না থাকাটা অপরাধ! বরফের মধ্যে স্কি করা মানুষ, গন্ডোলার আকাশযাত্রা, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য, পাহাড়ের মাঝে ছোট ছোট গ্রাম – সব কিছুই পোস্টকার্ডের মতো সুন্দর।


🛡 সংরক্ষণ ও দায়িত্বশীল ভ্রমণ

গুলমার্গের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য পর্যটকদের সচেতন থাকা জরুরি। প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা থেকে বিরত থাকা, প্রকৃতি নষ্ট না করা – এই জায়গার ভবিষ্যৎ সৌন্দর্য রক্ষায় সবার দায়িত্ব।


🏁 উপসংহার

গুলমার্গ এমন এক জায়গা, যেখানে একসঙ্গে শান্তি, রোমাঞ্চ ও সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তুষারে ঢাকা ঢাল, আকাশছোঁয়া গন্ডোলা রাইড, গ্রীষ্মে ফুলের মেলা – সব মিলিয়ে এটি যেন এক রূপকথার দেশ। কাশ্মীর ভ্রমণ যদি করেন, তবে গুলমার্গ না গেলে আপনার যাত্রা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

মহালয়া মানেই আবেগ, স্মৃতি ও বাঙালির চিরন্তন উৎসবের ডাক।

ভূমিকা:-  ভোর রাত পেরিয়ে অন্ধকার যখন ফিকে হতে থাকে, আকাশে তখনও একফোঁটা চাঁদের আলো। ঠিক তখনই বাজতে শুরু করে সেই চেনা কণ্ঠস্বর—
“যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা…”

এ এক এমন মুহূর্ত যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাঙালির হৃদয়ে আবেগের জোয়ার বইয়ে দেয়। এ হলো মহালয়ার সকাল, এ হলো বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী। বাঙালি জীবনে মহালয়া মানে শুধু পিতৃপক্ষের অবসান নয়, এটি দুর্গাপুজোর সূচনা এবং এক অনন্য সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতার নাম। আর এই অভিজ্ঞতার কেন্দ্রবিন্দু হলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।

মহালয়া: এক ঐতিহ্যের নাম

হিন্দু শাস্ত্রমতে, মহালয়া হল ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা থেকে শুরু হওয়া পিতৃপক্ষের শেষ দিন। এই দিনে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করলে তাঁদের আত্মা শান্তি পায় বলে বিশ্বাস করা হয়। কিন্তু বাংলার মানুষের কাছে মহালয়ার আরও এক তাৎপর্য রয়েছে — দেবীপক্ষের সূচনা। এই দিন থেকেই শুরু হয় দুর্গাপুজোর কাউন্টডাউন।

মহিষাসুরমর্দিনীর জন্মকথা

১৯৩১ সালে আকাশবাণী কলকাতা প্রথম সম্প্রচার করে মহিষাসুরমর্দিনী নামের এক অনন্য সঙ্গীতনাট্য। স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন বাণী কুমার (বাণীশরণ চট্টোপাধ্যায়) এবং সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক।
এটি মূলত চণ্ডীপাঠ, শাস্ত্রোক্ত স্তোত্র, গান ও সংগীতের মিশ্রণে তৈরি একটি আধুনিক শ্রবণনাট্য, যা ভোরবেলা আকাশবাণী থেকে সম্প্রচারিত হয়।

প্রথম দিন থেকেই এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং বাঙালির দুর্গোৎসবের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র: কণ্ঠযাদুকরের আবির্ভাব

মহিষাসুরমর্দিনীর প্রাণ হলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।

জন্ম: ১৯০৫ সালে কলকাতায়।

শিক্ষা: সংস্কৃত ভাষা ও শাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন।

আকাশবাণীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি মহিষাসুরমর্দিনীর আবৃত্তিকার হিসেবে নির্বাচিত হন।

তাঁর কণ্ঠে চণ্ডীপাঠের যে গভীরতা ও ভক্তিভাব প্রতিফলিত হয়েছে, তা আজও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাঁর উচ্চারণে ছিল প্রাঞ্জলতা, ছন্দে ছিল অনন্য গাম্ভীর্য, আর স্বরে ছিল এমন এক শক্তি যা শুনলেই শ্রোতা দেবীর রূপ কল্পনা করতে পারেন।

“যা দেবী সর্বভূতেষু”: এক চিরন্তন ধ্বনি

মহিষাসুরমর্দিনীর প্রথম শব্দ থেকেই যে ভক্তিময় পরিবেশ তৈরি হয়, তা অনন্য।
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের আবৃত্তি শুরু হয়—
“যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা…”

এই মন্ত্রোচ্চারণ যেন পুরো মহালয়ার আবহকে ভরিয়ে তোলে এক আধ্যাত্মিক শক্তিতে। সেই সঙ্গে গান—

“শুনো শুনো শুনো শোভন…”

“জাগো দুর্গা…”

“বাজলো তোমার আলোর বেণু…”

সব মিলিয়ে ভোরবেলার কলকাতার আকাশে এক অন্যরকম আবহ তৈরি হয়।

বাঙালির আবেগ ও স্মৃতি

মহালয়া শুনতে মানুষ ভোরবেলায় ঘুম থেকে ওঠে, রেডিও বা এখন টিভি/মোবাইলে অনুষ্ঠান শোনে। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী বাঙালির কাছে এক স্মৃতি, আবেগ ও নস্টালজিয়ার উৎস।

বহু মানুষ বলেন, মহিষাসুরমর্দিনী শুনলেই দুর্গাপুজোর গন্ধ পাওয়া যায়।

পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে শোনেন, ছোটদের বোঝানো হয় দেবীর আগমনের কাহিনি।

এমনকি বিদেশে থাকা বাঙালিরাও অনলাইনে মহালয়ার দিন এই অনুষ্ঠান শোনেন।

 

বিরাট বিতর্ক: কণ্ঠ বদলের চেষ্টা

১৯৭৬ সালে আকাশবাণী প্রথমবার বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠ বাদ দিয়ে নতুন সংস্করণ সম্প্রচার করেছিল, যেখানে আবৃত্তি করেছিলেন উত্তমকুমার। কিন্তু শ্রোতারা এই পরিবর্তন মেনে নেননি। প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়ে পরের বছরই আকাশবাণী আবার পুরনো সংস্করণ ফিরিয়ে আনে।
এটি প্রমাণ করে যে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠ শুধু আবৃত্তি নয়, এটি বাঙালির আবেগের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

মহালয়া আজকের দিনে

আজ মহালয়া শুধু রেডিওতে সীমাবদ্ধ নয়, টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান, লাইভ শো, এবং অনলাইনে স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে মানুষ মহিষাসুরমর্দিনী শোনেন। কিন্তু বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের রেকর্ডিং এখনও সবচেয়ে বেশি শোনা হয়।

এটি প্রমাণ করে—

প্রযুক্তি বদলেছে, কিন্তু আবেগ একই রয়ে গেছে।

প্রজন্ম পাল্টেছে, কিন্তু মহালয়ার সকাল এখনও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠ ছাড়া অসম্পূর্ণ।

 

উপসংহার

মহালয়া ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র একে অপরের সমার্থক। মহালয়ার আসল আবহ তৈরি হয় তাঁর কণ্ঠেই। তিনি শুধু একটি অনুষ্ঠানকে জনপ্রিয় করেননি, বাঙালির আবেগকে এক অমর রূপ দিয়েছেন। যতদিন বাঙালি থাকবে, দুর্গাপুজো থাকবে, ততদিন মহালয়ার সকাল শুরু হবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী দিয়ে।

Share This