Categories
গল্প প্রবন্ধ রিভিউ

করম উৎসব – লোকসংস্কৃতির অঙ্গ কলমেঃ দিলীপ রায়

করম উৎসব – লোকসংস্কৃতির অঙ্গ
কলমেঃ দিলীপ রায় ( ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)
করম প্রধানত সৃষ্টির উৎসব, সৃজনের উৎসব । শরতের আগমনে শস্য ও সমৃদ্ধি কামনায় করম পরব বা করম উৎসব । ভাদ্র মাসের শুক্লা একাদশী বা পার্শ্ব একাদশীতে করম উৎসব পালিত হয় । এই বছর অনুষ্ঠিত হবে ৩রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ । এই পরবের মূল আকর্ষণ হলো জাওয়া গান (অনেকে ‘জাওয়া’ বানান ‘যাওয়া’ লিখে থাকেন) । বলা চলে, গানগুলো লোকসাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গ ।
এবার আসছি জাওয়া কি ? সেটা আমাদের জানা দরকার । “জাওয়া শব্দটা নাকি ‘জাত’ শব্দ থেকে এসেছে । বীজের অঙ্কুরোদ্‌গম বা চারার ‘জাত’ বা জন্ম থেকে এইরকম নামকরণ হয়ে থাকতে পারে । শব্দটি “জাওয়া” হবে, নাকি “যাওয়া” হবে , সেটা নিয়েও মতোভেদ রয়েছে । যাই হোক “জাওয়া” হচ্ছে একটি শস্য উৎসব । আবার শস্য বীজের অঙ্কুরোদ্‌গমেরও অনুষ্ঠান বলা চলে । একমাত্র কুমারী মেয়েরাই এই অনুষ্ঠান পালন করে থাকে । ভাদ্র মাসের পার্শ্ব একাদশীর এক সপ্তাহ আগে এই অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটে ।
এবার আসছি করম পরব প্রসঙ্গে ।
করম পরব ভারতের ঝাড়খণ্ড, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, আসাম, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং বাংলাদেশ ও নেপালে একটা ফসল কাটার উৎসব । এই উৎসবে করম দেবতার উপাসনা করা হয় । যিনি হচ্ছেন কিনা শক্তি, যুব ও যৌবনের দেবতা । করম পরব পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পুরুলিয়া জেলা, ঝাড়্গ্রাম জেলা, বাঁকুড়া জেলা, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কুড়মি, ভূমিজ, বৈবা, মুণ্ডা, রাজোয়াড়, সরাক, লোহার বাউরি, বীরহড়, বীরনিয়া, খেরওয়ার, হো, খেড়িয়া, শবর, কোড়া মাহালি, পাহাড়িয়া, হাড়ি, বাগদি, বেদে, ঘাসি, লোধা ও বৃহৎ জনগোষ্ঠী সাঁওতাল, মুন্ডা, ওঁরাও, প্রভূতি সম্প্রদায়ের জঙ্গলভিত্তিক ও কৃষিভিত্তিক লোক উৎসব । তবে কুড়মি সমাজে এর স্বীকৃতি, মান্যতা ও ব্যাপকতা উল্লেখযোগ্য ।
প্রকৃতির পুজা ও উর্বতার উৎসব । এই করম পরব প্রায় সাতদিন ধরে উদযাপন হয় । কুমারী কন্যারা নিষ্ঠার সঙ্গে সাতদিন ধরে ব্রত পালন করেন, করম গাছের ডাল পুজা করেন এবং বপন করা হয় ভুট্টার বীজ । অঙ্কুরিত ভুট্টার চারা বা ‘জাওয়া’কে উর্বতার প্রতীক হিসাবে দেখা হয় । মূলত এই করম উৎসবটি আদিবাসী ও সাঁওতাল জনজাতিদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় । করম পুজা ঝুমুর গান, “আজরে করম রাজা ঘরে দুয়ারে, কালরে করম রাজা কাশ নদীর পারে” ।
ভাই বোনের গভীর ভালবাসার কথা জাওয়া গান গুলোতে বারবার ফুটে উঠে । দাদা ও ভাইয়ের সঙ্গে কাটানো সুখের মিহূর্তগুলো বোনকে খুব পীড়া দেয় । তাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরী হলে, মিথ্যাই সাত্ত্বনা দিতে বধূটি বলে ওঠে – “আমারি জনম পরের ঘর ।“ ভাই তখন সান্ত্বনা দেয় । সেই গান মেয়েরা গেয়ে ওঠে —
“আমি কি লিখ্যেছি বহিন বিধাতা লিখ্যেছে রে
বিধাতা লিখেছে পরের ঘর ।
পরেরই ঘরে বহিন খাটি লুটি খাও রে
রাখি দিহ বাপের ভায়ের নাম ।“
মূলত গ্রামের অবিবাহিত কুমারী মেয়েরাই এই ‘করম’ ঠাকুরের উপাসক । শুক্লা একাদশীর সাতদিন আগে কুমারী মেয়েরা একত্রে বাঁশের বোনা ‘টুপা’ (ডালা) এবং বিভিন্ন ধরনের শস্যবীজ নিয়ে জড়ো হয় পার্শ্ববর্তী কোনো নদী, পুকুর বা জলাশয়ে । সেখানে প্রত্যেকে স্নান করে শুদ্ধ হয়ে সদ্যস্নাত ভিজে কাপড়ে নিজের নিজের টুপায় নদী খাতের বালি ভর্তি করে বাড়ি থেকে আনা সেই শস্যবীজগুলো বোনে । তারপর পরস্পরের হাত ধরে টুপা’কে কেন্দ্র করে গোল হয়ে বিভিন্ন ধরনের আদিবাসী গান গাইতে থাকে ।
এরপর শুরু হয় এই জাওয়া টুপাগুলোর পরিচর্যা । দিন দুয়েক পরেই বীজগুলির অঙ্কুরোদ্‌গম হয় । জাওয়া পাতানো কুমারী মেয়েরা, জাওয়ার শুদ্ধতা বজায় রাখার নিরিখে সারা সপ্তাহ ধরে পালন করে কিছু রীতি নীতি । যেমন – একদিন তারা শাক খায় না, খাটিয়ায় ঘুমোয় না, মাথায় তেল দেয় না, চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ায় না, । এছাড়াও প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায় মেয়েরা নিজ নিজ ডালাসহ গ্রামের এক জায়গায় জড়ো হয় । জাওয়াকে কেন্দ্র করে সারা সন্ধ্যা চলে করম গান ও নাচ ।
সন্ধ্যাবেলায় গ্রামের লায়া (পুরোহিত) এক জায়গায় করম ডাল পুঁতে করম ঠাকুরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন । তৈরি হয় পুজোর বেদী । গ্রামের ব্রতকারী কুমারী মেয়েরা “করম ডালায়” পুজোর অর্ঘ্যরূপে মাটির প্রদীপ, শাল পাতার তৈরি থালায় নদীর বালি, ঘি, গুড়, আতপ চাল, মধু, ধূপ, সিঁদুর, একগাছি ধান আর ‘কাঁকুড়’, ইত্যাদি নিয়ে সমবেত হয়ে পুজো করে পরম ঠাকুরের । কামনা করে সোহাগী স্বামী পাওয়ার ও সন্তানবতী হওয়ার ।
এবার আসছি করম পুজার প্রচলনের ইতিহাস প্রসঙ্গে । এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, করম পুজা প্রচলনের ইতিহাস নিয়ে মতভেদ রয়েছে । একটি মত সংক্ষেপে নিম্নরূপঃ
কথিত আছে, কর্ম ও ধর্ম দুই ভাই । দু’জনেই খুব পরিশ্রমী ও দয়ালু । কিছু দিন পর কর্মের বিয়ে হয়ে গেলো । তাঁর স্ত্রী ছিল অধার্মিক এবং অন্যদের বিরক্ত করার মানসিকতা । আর এতে রাগান্বিত হয়ে কর্ম বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন ।
তিনি চলে যেতেই সকলের কর্মফল ও ভাগ্যও চলে গেলো এবং মানুষের দুঃখ দুর্দশা বাড়তে লাগলো । মানুষের সমস্যা সহ্য করতে না পেরে ধর্ম ভাইয়ের খোঁজে বেরিয়ে গেলেন । কিছু দূর হাঁটার পর তাঁর জল তেষ্টা পেলো এবং দেখলেন, আশেপাশে কোথাও জল নেই । দূরে একটা নদী দেখতে পেলেন এবং সেখানে গিয়ে দেখলেন, জল নেই । নদী ধর্মকে বলল, তোমার ভাই এখান থেকে চলে যাওয়ার পর আমাদের কর্মফল নষ্ট হয়ে গিয়েছে । গাছের সব ফল নষ্ট ! তাঁকে খুঁজে পেলে বলো, তাঁর কাছে আমাদের এই সমস্যার সমাধান চাই । তারপর আরও একজন মহিলার সঙ্গে তাঁর দেখা এবং তিনি বললেন, কর্ম চলে যাওয়ার পর থেকে রান্নার পরে পাত্রগুলি হাতে লেগে যেতে শুরু করে, এর সমাধান কী ? আপনি কর্মকে জিজ্ঞাসা করুন এবং তাঁকে সমাধান বলতে বলুন । ধর্ম আরও এগিয়ে গেলেন । একটি মরুভূমিতে পৌঁছালেন । সেখানে তিনি দেখলেন, কর্ম গরমে অস্থির । তাঁর শরীরে ফোসকা পড়েছে এবং তিনি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন । তাঁর অবস্থা অসহনীয় । ধর্ম কর্মকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন । তখন উভয় ভাই বাড়ি ফিরে যেতে লাগলেন । ফেরার সময় সেই মহিলার সঙ্গে দেখা । কর্ম তাঁকে বললেন, ঐ মহিলা কখনও কোনও ক্ষুধার্ত মানুষকে খাওয়াননি, তাই তার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে । সুতরাং এটি তাঁর কর্মফল । একইভাবে সকলকে নিজের কর্মফলের কথা জানানোর পর কর্ম বাড়িতে ফিরে এসে পুজা করেন । তারপর সমগ্র এলাকার লোকেরা আবার সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলেন এবং সমৃদ্ধি ফিরে আসল । সেই স্মরণে করম পরব পালিত হয় ।
# আর একটি মত হচ্ছেঃ
এক সময় সাত ভাই ছিল যারা কৃষিকাজে কঠোর পরিশ্রমী । এমনকি তাঁদের দুপুরের খাওয়ারও সময় থাকতো না । তাই, স্ত্রীরা প্রতিদিন তাঁদের দুপুরের খাবার মাঠে নিয়ে যেতেন । একবার এমন হয়েছিল, তাঁদের স্ত্রীরা দুপুরের খাবার নিয়ে মাঠে যাননি । সাংঘাতিক ক্ষুধার্ত ছিলেন তাঁরা । সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দেখেন তাঁদের স্ত্রীরা বাড়ির উঠোনে করম গাছের ডালের পাশে নাচ-গান করছেন । এটা দেখে তাঁরা ক্রোধে অগ্নিশর্মা । এক ভাই তাঁর মেজাজ হারিয়ে ফেলে করমের ডাল ছিনিয়ে নিয়ে নদীতে ফেলে দিলেন । করম দেবতাকে অপমান করা হয়েছিল । ফলে তাঁদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে এবং অনাহারে তাঁদের দুর্দশা অবস্থা । একদিন একজন ব্রাহ্মণ (পুরোহিত) তাদের কাছে এলেন এবং সাত ভাই পুরো ঘটনাটা তাঁকে খুলে বললেন । এরপর সাত ভাই করম ঠাকুরের খোঁজে গ্রাম ছেড়ে চলে যান। তাঁরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে থাকেন এবং এইভাবে খোঁজার পর একদিন তাঁরা করম গাছের সন্ধান পান । পরবর্তীকালে, করম ঠাকুরের পুজো করেন । তারপর তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থার ক্রমশ উন্নতি ঘটতে থাকে । সুখ ও শান্তি ফিরে আসে ।
এলাকার মানুষ সহ কর্ম ও ধর্ম সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলেন এবং সমৃদ্ধি ফিরে আসল । সেই স্মরণে করম পরব পালিত হয় । বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে করম পার্বণ একটি অন্যতম । এটি গ্রাম বাংলার এক অজানা অথচ বিশেষ করে আদিবাসী জনগোষ্ঠী, কুড়মিদের চা-বাগানের মানুষদের সু-প্রচলিত করম উৎসব । এই বছরও করম পুজাকে গুরুত্ব দিয়ে রাজ্য সরকার ৩রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ছুটি ঘোষণা করেছেন ।
পরিশেষে বলা যায়, করম পরব আদিম জনগোষ্ঠীর ধারক ও বাহক । এর মধ্যে অন্যতম কুড়মি, সাঁওতাল, ভূমিজ, মুন্ডা, ওঁরাও, রাজোয়াড়, ডোম, ঘাসি প্রভৃতি জনগোষ্ঠী । যদিও উল্লেখিত, কুড়মি সমাজের মধ্যে এর স্বীকৃতি, মান্যতা ও ব্যাপকতা অবর্ণনীয় । আদিম জনগোষ্ঠী প্রায় সকলেই প্রকৃতির পুজারী । ভাল করে এই উৎসবের পুজানুষ্ঠান ও পালনবিধি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এটা একটা বৃক্ষ পুজার অনুষ্ঠান । বৃক্ষকে জীবন্ত আত্মার অধিকারী হিসাবে স্বীকার করে এবং তাকে কেন্দ্র করে বিশ্বাস-সংস্কার, আচার-অনুষ্ঠানের এক বিস্ময়কর সমাবেশ এবং শুদ্ধ ভক্তির পরম্পরা ! (তথ্যসূত্রঃ সংগৃহীত)
এ১০এক্স/৩৪, কল্যাণী (পিন-৭৪১২৩৫) / ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

মূল্যবান মনুষ্য জীবন ও শ্রাবণ মাসের মহিমা : স্বামী আত্মভোলানন্দ (পরিব্রাজক)।

ওঁ নমঃ শ্রীভগবতে প্রনবায়!

আমাদের এই সুন্দর মূল্যবান মনুষ্য জীবনে পবিত্র শ্রাবণ মাস সত্য সনাতন ধর্মে সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারা বছর শিবপুজো করা হলেও এই শ্রাবণ মাসে দেবাদিদেব মহাদেবকে নিষ্ঠাভরে ও নিয়ম মেনে পুজো করা হয়, বিশেষভাবে সোমবার। কারণ, এটি দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ও বর্ষার আগমনের সাথে যুক্ত। শ্রাবণ মাস পঞ্জিকার চতুর্থ মাস এবং এটি ভগবান শিবের মাস হিসেবে পরিচিত। এই মাসে শিবের পূজা ও উপাসনা করা হয় এবং এটি সত্য সনাতন ধর্মানুসারে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। শ্রাবণ মাসের প্রতিটি সোমবার ভক্তদের কাছে শিবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত এবং এই দিনে উপবাস ও পূজা করার বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। শ্রাবণ মাস দেবাদিদেব মহাদেবের প্রিয় মাস হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এই মাসে শিবের পূজা করলে বিশেষ ফল লাভ করা যায়।

পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী, শ্রাবণ মাসেই সমুদ্র মন্থনের ঘটনা ঘটেছিল। সমুদ্র উত্থিত হলাহল বিষ থেকে গোটা ধরিত্রীকে রক্ষা করার জন্য স্বয়ং মহাদেব নিজ কণ্ঠে হলাহল বিষ ধারণ করেছিলেন। বিষের প্রভাবে মহাদেবের কন্ঠ নীল হয়ে ওঠে। এই কারণেই মহাদেবের অপর নাম নীলকণ্ঠ। বিষের তীব্রতা হ্রাস করার জন্য স্বর্গের দেবতারা শিবের মাথায় গঙ্গাজল ঢালতে থাকেন। সেই কারণেই শ্রাবণ মাসে শিবের মাথায় গঙ্গাজল প্রদান করা হয়। আর তাতেই আদিদেব মহাদেবের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হন ভক্তরা। আরো উল্লেখ রয়েছে, সতীর দেহত্যাগের পর দেবী পার্বতী রূপে ফের একবার জন্ম নেন। শিবকে আবার স্বামীরূপে পাওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা করতে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে সাধনা করে শিবকে সন্তুষ্ট করলে পার্বতীকে বিবাহ করতে রাজি হন মহাদেব। আর সেই শুভমুহূর্ত ঘটে সোমবার শ্রাবণ মাসেই। তারপর শিবরাত্রির দিনেই শিব-পার্বতীর পুনর্মিলন ঘটেছিল। এই কারণেই শ্রাবণ মাসকে শিবের মাস বলা হয়। সনাতন ধর্ম অনুসারে শিব হলেন আদি দেবতা। সেই কারণে তাঁকে দেবাদিদেব মহাদেব বলা হয়।

অনেক শিবভক্ত এই মাসে প্রতিটি সোমবার শিবের উদ্দেশ্যে এবং প্রতি মঙ্গলবার দেবী পার্বতীর উদ্দেশ্যে উপবাস করেন। শ্রাবণ মাসে ভক্তিভরে শিবের পূজা করলে ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূরণ হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। শ্রাবণ মাসে বহু মানুষ বিভিন্ন শিব মন্দিরে তীর্থযাত্রা করেন এবং শিবের মাথায় জল ঢেলে পুণ্য অর্জন করেন। সনাতন ধর্মের মতে, শিবলিঙ্গের অর্থ হল অনন্ত। অর্থাৎ, যাঁর সূচনা বা অন্ত নেই। শিবলিঙ্গ আসলে শিব ও পার্বতীর আদি-অনাদি একক রূপ। শিবলিঙ্গ পুরুষ ও প্রকৃতির সাম্যের প্রতীক। স্ত্রী বা পুরুষ কেউই এই সমাজে একা প্রভাব বিস্তার করতে পারেন না, তা-ই জানিয়ে থাকে শিবলিঙ্গ। শাস্ত্র অনুযায়ী ভারতবর্ষ তথা সারা পৃথিবীতে অনেক শিবলিঙ্গ আছে মানব নির্মিত। কেবলমাত্র ১২ টি শিবলিঙ্গ জ্যোতির্লিঙ্গ ও স্বয়ম্ভূ।

আমার প্রাণদেবতা যুগাচার্য্য স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ সাক্ষাৎ শিবস্বরূপ, চলমান শিব। গৃহদেবতা নীলরুদ্রের আশির্বাদে শিব-অবতার রূপে শিবশিশুর, দেবশিশুর ধরাধামে আবির্ভাব। পরবর্তিকালে সাক্ষাৎ দেবাদিদেব মহাদেব রূপে আত্মপ্রকাশ হয়। সত্য সনাতন ধর্মে গুরুদেব ভগবান প্রাণদেবতা নিজ নিজ পিতামাতার মত প্রত্যেকের হৃদয় সিংহাসনে বিরাজ করেন। শুভ ও মঙ্গলময় আশির্বাদ আপনাদের সকলের শিরে বর্ষিত হোক… এই প্রার্থনা করি…ওঁ নমঃ শিবায়…
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ….!

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

অ্যাপোলো 15 : চাঁদে একটি গ্রাউন্ডব্রেকিং মিশন।।।

31 জুলাই, 1971, মহাকাশ অনুসন্ধানের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল যখন অ্যাপোলো 15 মহাকাশযান চাঁদে যাত্রা শুরু করেছিল। এই মিশনটি ছিল চতুর্থ মানব চান্দ্র অবতরণ এবং লুনার রোভিং ভেহিকল (LRV) ব্যবহার করা প্রথম, যা নভোচারীদের অভূতপূর্ব গতিশীলতার সাথে চাঁদের পৃষ্ঠ অন্বেষণ করতে সক্ষম করেছিল।

ক্রু এবং মিশনের উদ্দেশ্য—–
Apollo 15 ক্রু তিনজন অভিজ্ঞ মহাকাশচারী নিয়ে গঠিত: ডেভিড স্কট (মিশন কমান্ডার), জেমস আরউইন (লুনার মডিউল পাইলট), এবং আলফ্রেড ওয়ার্ডেন (কমান্ড মডিউল পাইলট)। তাদের মিশনের উদ্দেশ্য ছিল:
1. হ্যাডলি রিলে অঞ্চলে একটি চন্দ্র অবতরণ সম্পাদন করুন।
2. বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান এবং নমুনা সংগ্রহ করুন
3. পৃষ্ঠ অনুসন্ধানের জন্য LRV স্থাপন করুন
4. Apollo Lunar Surface Experiments Package (ALSEP) পরিচালনা করুন
মহাকাশযান এবং লঞ্চ
অ্যাপোলো 15 মহাকাশযান দুটি প্রধান উপাদান নিয়ে গঠিত: এন্ডেভার নামক কমান্ড এবং সার্ভিস মডিউল (সিএসএম) এবং ফ্যালকন নামক লুনার মডিউল (এলএম)। মহাকাশযানটি কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ কমপ্লেক্স 39A থেকে একটি Saturn V রকেটের উপরে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।
চাঁদে যাত্রা—
পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করার পর, মহাকাশযান ট্রান্স-লুনার ইনজেক্ট করে এবং চন্দ্রের কক্ষপথে প্রবেশের আগে প্রায় 67 ঘন্টা মহাকাশে ভ্রমণ করে। ক্রুরা চন্দ্র অবতরণের প্রস্তুতির জন্য কক্ষপথের একটি সিরিজ পরিচালনা করেছিল।
চন্দ্র অবতরণ এবং সারফেস অপারেশন—–
2শে আগস্ট, স্কট এবং আরউইন তাদের স্পেসসুট পরে এবং কমান্ড মডিউল থেকে আলাদা হয়ে লুনার মডিউলে আরোহণ করেন। তারা চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করে, হ্যাডলি রিলে অঞ্চলে অবতরণ করে। ক্রু চাঁদের পৃষ্ঠে প্রায় 67 ঘন্টা কাটিয়েছে, তিনটি এক্সট্রাভেহিকুলার অ্যাক্টিভিটিস (ইভিএ) পরিচালনা করেছে।
LRV একটি গেম-চেঞ্জার হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে, যা মহাকাশচারীদের আরও বেশি দূরত্ব ভ্রমণ করতে এবং আগের মিশনের চেয়ে আরও বেশি ভূখণ্ড অন্বেষণ করতে দেয়। তারা নমুনা সংগ্রহ করেছে, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে।
ফিরতি যাত্রা—–
তাদের মুনওয়াক শেষ করার পর, স্কট এবং আরউইন লুনার মডিউলে ফিরে আসেন এবং কমান্ড মডিউলে ওয়ার্ডেনের সাথে মিলিত হয়ে চাঁদ থেকে উঠে যান। ক্রু কমান্ড মডিউলে ফেরত স্থানান্তরিত হয়, এবং লুনার মডিউলটি জেটিসন করা হয়।
মহাকাশযানটি 7 আগস্ট, 1971 সালে প্রশান্ত মহাসাগরে সফলভাবে স্প্ল্যাশ করে, একটি অত্যন্ত সফল মিশনের সমাপ্তি চিহ্নিত করে।
Apollo 15 এর উত্তরাধিকার—
Apollo 15 অসংখ্য মাইলফলক অর্জন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে:
1. LRV এর প্রথম ব্যবহার, যা বৃহত্তর পৃষ্ঠের গতিশীলতা সক্ষম করে
2. দীর্ঘতম চন্দ্র পৃষ্ঠ থাকার সময় (67 ঘন্টা)
3. চাঁদে পরিচালিত সর্বাধিক বিস্তৃত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা
4. ALSEP এর প্রথম স্থাপনা
মিশনটি অ্যাপোলো মহাকাশযানের ক্ষমতা প্রদর্শন করে এবং ভবিষ্যতের চন্দ্র ও গ্রহ অনুসন্ধানের পথ তৈরি করে।
উপসংহার—–
Apollo 15 ছিল একটি যুগান্তকারী মিশন যা মানুষের বুদ্ধিমত্তা, বৈজ্ঞানিক কৌতূহল এবং পৃথিবীর সীমানা ছাড়িয়ে অন্বেষণ করার সংকল্প প্রদর্শন করে। মিশনের সাফল্য চাঁদ এবং এর ভূতত্ত্ব সম্পর্কে আমাদের বোঝার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপকে চিহ্নিত করেছে এবং এর উত্তরাধিকার নতুন প্রজন্মের বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং অনুসন্ধানকারীদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

জুলাই ৩০, ১৯১৪, আধুনিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত চিহ্নিত করে।।।।

জুলাই 30, 1914, আধুনিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত চিহ্নিত করে, কারণ জোট, জাতীয়তাবাদী উত্তেজনা এবং সামরিকবাদের জটিল জাল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাদুর্ভাবের পরিণতিতে পরিণত হয়েছিল। এই বৈশ্বিক সংঘাত চার বছরের জন্য বিশ্বকে ধ্বংস করবে, লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন দাবি করবে, আন্তর্জাতিক ল্যান্ডস্কেপকে নতুন আকার দেবে এবং চিরকালের জন্য মানব ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করবে।

*আর্কডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দের হত্যা*

যে স্ফুলিঙ্গটি যুদ্ধকে প্রজ্বলিত করেছিল তা হল বসনিয়ার সারাজেভোতে 28 জুন, 1914-এ অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সিংহাসনের উত্তরাধিকারী আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্ডিনান্ডের হত্যা। গাভরিলো প্রিন্সিপ, একজন বসনিয়ান সার্ব জাতীয়তাবাদী, আক্রমণটি পরিচালনা করেছিলেন, যা ব্ল্যাক হ্যান্ড সিক্রেট সোসাইটি দ্বারা সাজানো হয়েছিল। এই ঘটনাটি কূটনৈতিক সঙ্কট এবং সামরিক সংহতির একটি চেইন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে যা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায়।

*মৈত্রীর জটিল ব্যবস্থা*

20 শতকের গোড়ার দিকে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী জোটের উত্থান দেখা যায়: ট্রিপল এন্টেন্তে (ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং রাশিয়া) এবং কেন্দ্রীয় শক্তি (জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি এবং ইতালি)। এই জোটগুলি একটি অস্থির পরিবেশ তৈরি করেছিল, যেখানে দুটি জাতির মধ্যে একটি ছোট দ্বন্দ্ব দ্রুত একটি বৃহত্তর, বৈশ্বিক যুদ্ধে পরিণত হতে পারে।

*অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির আল্টিমেটাম*

হত্যার প্রতিক্রিয়ায়, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সার্বিয়াকে একটি আল্টিমেটাম জারি করে, যা সার্বিয়া মেনে চলতে অস্বীকার করে। এর ফলে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি 28শে জুলাই, 1914 সালে সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সার্বিয়ার সাথে তার মিত্রতার সাথে আবদ্ধ রাশিয়া প্রতিক্রিয়ায় তার সামরিক বাহিনীকে একত্রিত করতে শুরু করে।

*জার্মানির যুদ্ধ ঘোষণা*

জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির সাথে মিত্র, 1 আগস্ট, 1914-এ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং পরবর্তীতে 3 আগস্ট, 1914-এ ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ব্রিটেন, বেলজিয়ামের নিরপেক্ষতা রক্ষা করতে বাধ্য, 4 আগস্ট, 1914-এ জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। বেলজিয়াম আক্রমণ।
*যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে*
পরবর্তী চার বছরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং অটোমান সাম্রাজ্য সহ আরও দেশগুলিকে জড়িত করার জন্য সংঘাতের প্রসার ঘটে। যুদ্ধটি নতুন প্রযুক্তির প্রবর্তন দেখেছিল, যেমন ট্যাঙ্ক, বিমান এবং বিষাক্ত গ্যাস, যা অভূতপূর্ব ধ্বংস ও হতাহতের ঘটনা ঘটায়।

*যুদ্ধের পরিণতি*

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে:
– 17 মিলিয়ন মৃত্যু সহ 37 মিলিয়নেরও বেশি হতাহতের ঘটনা
– অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান, জার্মান এবং রাশিয়ান সাম্রাজ্য সহ সাম্রাজ্যের পতন
– বিশ্বব্যাপী পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের উত্থান
– জাতীয় সীমানা পুনর্নির্মাণ, যা মধ্যপ্রাচ্য এবং পূর্ব ইউরোপে চলমান সংঘাতের দিকে পরিচালিত করে
– রুশ বিপ্লব এবং সাম্যবাদের উত্থান

*উপসংহার*

1914 সালের 30 জুলাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাদুর্ভাব একটি বিশ্বব্যাপী বিপর্যয়ের সূচনা করে যা মানব ইতিহাসের গতিপথ চিরতরে পরিবর্তন করবে। জোটের জটিল ব্যবস্থা, জাতীয়তাবাদী উত্তেজনা এবং সামরিকবাদ একটি অস্থির পরিবেশ তৈরি করেছিল যা শেষ পর্যন্ত ধ্বংসাত্মক সংঘাতের দিকে নিয়ে যায়। আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তটি প্রতিফলিত করার সাথে সাথে আমাদের কূটনীতি, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং শান্তির অন্বেষণের গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয় এবং পালনের গুরুত্ব।।।।।

সমগ্র বিশ্বে বাঘের সংরক্ষণের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ২৯ জুলাই তারিখে আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবস বা বিশ্ব বাঘ দিবস পালন করা হয়।২০১০ সালে সেণ্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত ব্যাঘ্র অভিবর্তনে এই দিবসের সূচনা হয়। এই দিবস পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য হল বাঘের প্রাকৃতিক আবাস রক্ষা করা এবং বাঘের সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে এর সম্পর্কে থাকা ভুল ধারণা ও ভয় দূর করা।

প্রতি বছর বিভিন্ন কার্যসূচীর মাধ্যমে এই দিবস পালন করা হয়। বাঘ ভারতের জাতীয় পশু হওয়ার কারণে এই দিবসের মহত্ব এখানে বেশি ধরা হয়।
২০১০ সালে নভেম্বরে প্রথম বাঘ দিবস উদযাপিত হয়। বিংশ শতকের গোড়া থেকেই বন্য বাঘের সংখ্যা ৯৫ শতাংশ কমে যায়। এই বিষয়টি উপলব্ধি করার পরেই বাঘ দিবস পালনের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়। রাশিয়ায় সেন্ট পিটার্সবার্গ টাইগাই সামিটে প্রথম বাঘ দিবস পালিত হয়। বাঘেদের স্বাভাবিক বাসস্থান রক্ষা করাই ছিল এই সামিটের মূল উদ্দেশ্য।
সামিটে যে ১৩টি দেশ অংশগ্রহণ করে, সেগুলি হল – ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, চিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং রাশিয়া। এই সামিটে ২০২২-এর মধ্যে বন্য বাঘের সংখ্যা ৬০০০-এর বেশি বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়।
সপ্তম বিশ্ব বাঘ দিবস গোটা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ভাবে পালন করা হয়। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল প্রভৃতি বাঘের বেশি ঘনত্ব থাকা দেশের সাথে ইংল্যান্ড ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রেও বিভিন্ন স্থানীয় কার্যসূচীর মাধ্যমে এই দিবস পালন করা হয়। কিছু জনপ্রিয় তারকা তাদের সোসাল মিডিয়ায় নিজেদের প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করে এতে অংশগ্রহণ করেন। বিশ্ব বন্যপ্রাণী সংস্থা (WWF) এর রেঞ্জারসমূহে বিনিয়োগ করে “দ্বিগুণ বাঘ” অভিযান চালায়। কয়েকটি কোম্পানী বিশ্ব বন্যপ্রাণী সংস্থার সঙ্গে মিলিতভাবে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।
তথ্য অনুযায়ী বিংশ শতকের গোড়া থেকেই বন্য বাঘের সংখ্যা ৯৫ শতাংশ কমে যায়। বিষয়টি উপলব্ধি করার পরেই বাঘ দিবস পালনের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়।প্রতি বছর বিভিন্ন কার্যসূচীর মাধ্যমে এই দিবস পালন করা হয়। বাঘ ভারতের জাতীয় পশু হওয়ার কারণে এই দিবস আমাদের দেশের একটু বেশিমাত্রায় উপযোগী। গোটা বিশ্বে নগরায়নের কারণে বাঘেরা তাদের স্বাভাবিক বাসস্থানের ৯০ শতাংশই হারিয়ে ফেলেছে। বর্তামানে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা ৪০০০-এরও কম।
আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবস বা বিশ্ব বাঘ দিবস সমগ্র বিশ্বে বাঘের সংরক্ষণের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ২৯ জুলাই তারিখে পালন করা হয়। ২০১০ সালে সেণ্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত ব্যাঘ্র অভিবর্তনে এই দিবসের সূচনা হয়। বিশ্ব বাঘ দিবস পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য হল বাঘের প্রাকৃতিক আবাস রক্ষা করা এবং বাঘের সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। এছাড়াও বাঘের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে গেঁথে থাকা ভুল ধারণা ও ভয় দূর করাও আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস পালনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্যে।
ভারতের জাতীয় পশু বাঘ হওয়ায় ভারতে এই দিনটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বাঘেদের স্বাভাবিক বাসস্থান বৃদ্ধি ও বাঘের সংখ্যা বাড়ানো এই বাঘ দিবসের মূল উদ্দেশ্য।
।। তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস: ইতিহাস, তাৎপর্য ও জনসচেতনতায় এর গুরুত্ব।

 

🔶 ভূমিকা

প্রতিবছর ২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালিত হয়। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃত এক গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য বিষয়ক দিবস, যা জনসাধারণকে হেপাটাইটিস রোগ সম্পর্কে সচেতন করতে পালন করা হয়। হেপাটাইটিস এমন একটি নীরব ঘাতক রোগ যা প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে, অথচ সচেতনতা ও সঠিক প্রতিরোধে এটি প্রতিরোধযোগ্য ও অনেক ক্ষেত্রেই নিরাময়যোগ্য।

এই প্রবন্ধে আমরা জানব—

  • হেপাটাইটিস কি এবং এর প্রকারভেদ
  • এই দিবস পালনের ইতিহাস
  • প্রতি বছরের থিম
  • হেপাটাইটিস প্রতিরোধ ও প্রতিকার
  • দিবসটির গুরুত্ব ও সমাজে এর প্রভাব

🔶 হেপাটাইটিস: এক সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

“হেপাটাইটিস” শব্দটি এসেছে গ্রিক ভাষা থেকে, যার “হেপার” অর্থ যকৃত এবং “ইটিস” অর্থ প্রদাহ। অর্থাৎ, হেপাটাইটিস হল যকৃতের প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন।

হেপাটাইটিস সাধারণত পাঁচটি প্রধান ভাইরাসের মাধ্যমে হয়:

  1. হেপাটাইটিস এ (HAV)
  2. হেপাটাইটিস বি (HBV)
  3. হেপাটাইটিস সি (HCV)
  4. হেপাটাইটিস ডি (HDV)
  5. হেপাটাইটিস ই (HEV)

এই ভাইরাসগুলি যকৃতের উপর বিভিন্ন মাত্রায় আক্রমণ করে এবং দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার জন্ম দিতে পারে, যেমন— সিরোসিস, লিভার ফেইলিওর বা লিভার ক্যান্সার।


🔶 হেপাটাইটিস-এর প্রকারভেদ

✅ হেপাটাইটিস A (HAV):

  • প্রধানত দূষিত খাদ্য ও পানি থেকে ছড়ায়
  • স্বল্পমেয়াদি কিন্তু সংক্রামক
  • বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ আরোগ্য সম্ভব

✅ হেপাটাইটিস B (HBV):

  • রক্ত, শুক্রাণু, মাতৃদুগ্ধ ও শরীরবিজড়িত তরলের মাধ্যমে ছড়ায়
  • যৌন সম্পর্ক, অসুরক্ষিত সূচ বা রক্তদান থেকে সংক্রমণ ঘটে
  • নবজাতকেরা মায়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে
  • দীর্ঘমেয়াদী এবং লিভারের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে
  • প্রতিরোধের জন্য টিকা রয়েছে

✅ হেপাটাইটিস C (HCV):

  • মূলত সংক্রামিত রক্তের সংস্পর্শে এসে সংক্রমণ ঘটে
  • যৌন সম্পর্ক বা রক্ত সংক্রমণে ছড়ায়
  • বহু বছর ধরে নীরবে যকৃতে ক্ষতি করে
  • প্রতিকারযোগ্য হলেও টিকা নেই

✅ হেপাটাইটিস D (HDV):

  • শুধুমাত্র হেপাটাইটিস বি-র সংক্রামিত রোগীদের মধ্যেই এই ভাইরাস কাজ করে
  • সংক্রমণ বেশি মারাত্মক
  • টিকা সরাসরি না থাকলেও HBV-এর টিকা প্রতিরোধে সহায়ক

✅ হেপাটাইটিস E (HEV):

  • দূষিত পানি থেকে সংক্রমিত
  • গর্ভবতী নারীদের মধ্যে মারাত্মক হতে পারে
  • উন্নয়নশীল দেশে সাধারণ

🔶 বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস: ইতিহাস

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ২০১০ সাল থেকে ২৮ জুলাই তারিখটিকে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এটি হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আবিষ্কর্তা ও নোবেলজয়ী বৈজ্ঞানিক ডঃ বারুচ সামুয়েল ব্লুমবার্গ-এর জন্মদিন।

WHO-এর লক্ষ্য ছিল:

  • বিশ্বের সামনে হেপাটাইটিস জনিত বিপদের পরিমাণ তুলে ধরা
  • রোগ প্রতিরোধ, টিকাদান ও চিকিৎসার বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা

এর আগে এই দিবসটি ১ অক্টোবর পালন করা হতো, কিন্তু পরে ব্লুমবার্গের সম্মানে এটি ২৮ জুলাই নির্ধারিত হয়।


🔶 বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস ২০২৫: থিম

প্রতি বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি নির্দিষ্ট থিমের মাধ্যমে এই দিবস উদযাপন করে।

👉 ২০২৫ সালের থিম এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি (আপডেট হলে যুক্ত করা যাবে)। তবে পূর্ববর্তী বছরগুলোতে ছিল:

  • ২০২4: “We’re not waiting” — প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি দেশ যেন সময় নষ্ট না করে হেপাটাইটিস নির্মূলে একসঙ্গে কাজ করে
  • ২০২3: “One life, One liver”
  • ২০২2: “Bringing hepatitis care closer to you”

🔶 হেপাটাইটিস প্রতিরোধের উপায়

✅ প্রতিরোধমূলক টিকা:

  • হেপাটাইটিস A ও B-এর জন্য কার্যকর টিকা রয়েছে
  • শিশুদের জন্মের পরপরই HBV টিকা দেওয়া শুরু হয়
  • HAV টিকাও বর্তমানে অনেক দেশে দেওয়া হয়

✅ ব্যক্তিগত সচেতনতা:

  • বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ
  • যৌন সম্পর্কের সময় সুরক্ষা ব্যবহার
  • অপ্রয়োজনীয় রক্ত গ্রহণ এড়িয়ে চলা
  • ট্যাটু বা পিয়ার্সিং করার সময় জীবাণুমুক্ত সরঞ্জাম ব্যবহার

✅ সঠিক চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণ:

  • হেপাটাইটিস C এর কার্যকর ওষুধ রয়েছে (DAA: Direct Acting Antiviral)
  • সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে লিভারের ক্ষয়রোগ ঠেকানো সম্ভব

🔶 বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসের গুরুত্ব

১. বিশ্বজুড়ে সচেতনতা সৃষ্টি:
এই দিনটি রোগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে তথ্য ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।

  1. নতুন টিকা ও ওষুধ প্রসঙ্গে তথ্য প্রদান:
    চিকিৎসা ক্ষেত্রে অগ্রগতির খবর প্রচারে সহায়তা করে।
  2. ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা:
    মাতৃগর্ভ থেকে নবজাতকের সংক্রমণ প্রতিরোধে উদ্যোগ জোরদার করা হয়।
  3. সরকারি পদক্ষেপ:
    স্বাস্থ্য নীতিতে হেপাটাইটিস সংক্রান্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চাপ বাড়ে।
  4. UN Sustainable Development Goals (SDG):
    ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূলের লক্ষ্যে কাজ করার অঙ্গীকারকে জোরালো করা হয়।

🔶 ভারতের প্রেক্ষিতে হেপাটাইটিস

ভারত হেপাটাইটিসে আক্রান্ত দেশের তালিকায় অন্যতম। বিশেষ করে গ্রামীণ ও দরিদ্র অঞ্চলে এখনও বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব, অজ্ঞতা, চিকিৎসার অপ্রতুলতা হেপাটাইটিস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

ভারতে প্রতি বছর প্রায় ৪০ মিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হন। হেপাটাইটিস সি-র ক্ষেত্রেও সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য। সরকার ‘ন্যাশনাল ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম’-এর মাধ্যমে শিশুদের জন্য হেপাটাইটিস বি টিকাকরণ চালু করেছে।


🔶 পালন পদ্ধতি ও জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি

প্রতিবছর এই দিনটিতে বিভিন্ন সংগঠন ও সরকার:

  • রক্তপরীক্ষার শিবির
  • টিকাদান ক্যাম্প
  • সচেতনতামূলক র‍্যালি
  • পোস্টার, লিফলেট, টিভি বিজ্ঞাপন প্রচার করে
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ কর্মসূচি চালু করে

🔶 আমরা কী করতে পারি?

  1. নিজের ও পরিবারের সদস্যদের টিকা দেওয়া
  2. সুরক্ষিত জীবনযাপন
  3. যে কোনও অসুস্থতার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
  4. আশেপাশের মানুষকে সচেতন করা
  5. ভুল ধারণা দূর করে সামাজিকভাবে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করা

🔶 উপসংহার

বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস শুধুমাত্র একটি দিন নয়, এটি একটি বার্তা— সচেতন হোন, নিজের ও সমাজের জীবন রক্ষা করুন। সময় থাকতে ব্যবস্থা নিন। “এক জীবন, এক যকৃত”— যকৃতকে ভালো রাখলেই জীবন সুস্থ থাকবে।

এই দিনে আমরা যেন প্রতিজ্ঞা করি—

  • আমরা হেপাটাইটিস সম্পর্কে জানব
  • সময়মতো চিকিৎসা নেব
  • হেপাটাইটিসমুক্ত পৃথিবী গড়ব

📚 তথ্যসূত্র:

  • World Health Organization (WHO)
  • CDC – Hepatitis Overview
  • Indian Journal of Medical Research
  • Ministry of Health and Family Welfare, Govt. of India
Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

প্রথম রেডিও কম্পাস : এভিয়েশন নেভিগেশনে একটি মাইলফলক।।।

27 জুলাই, 1920-এ, একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন বিমান চলাচলের ন্যাভিগেশনে বিপ্লব ঘটিয়েছে – প্রথম রেডিও কম্পাস। এই অগ্রগামী প্রযুক্তিটি বিমান ভ্রমণের নিরাপত্তা এবং দক্ষতাকে পরিবর্তন করে, আরও নির্ভুলতার সাথে তাদের দিকনির্দেশ এবং অবস্থান নির্ধারণ করতে পাইলটদের সক্ষম করে। এই প্রবন্ধে, আমরা প্রথম রেডিও কম্পাসের ইতিহাস, বিকাশ এবং প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব, যা বিমান চালনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

*উন্নত নেভিগেশনের প্রয়োজন*
বিমান চালনার প্রথম দিকে, পাইলটরা তাদের ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ল্যান্ডমার্ক, কম্পাস এবং আকাশী নেভিগেশনের মতো চাক্ষুষ রেফারেন্সের উপর নির্ভর করতেন। যাইহোক, এই পদ্ধতিগুলি প্রায়শই অবিশ্বস্ত ছিল, বিশেষ করে প্রতিকূল আবহাওয়া বা অপরিচিত অঞ্চলগুলিতে। বিমান ভ্রমণ সম্প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে আরও সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য ন্যাভিগেশন সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ চাপে পড়ে।
*রেডিও কম্পাসের বিকাশ*
20 শতকের প্রথম দিকে, রেডিও প্রযুক্তি নেভিগেশনের জন্য একটি সম্ভাব্য সমাধান হিসাবে আবির্ভূত হতে শুরু করে। প্রথম রেডিও কম্পাস, যা রেডিও ডিরেকশন ফাইন্ডার (RDF) নামেও পরিচিত, 1910 সালে তৈরি হয়েছিল। এই প্রাথমিক সিস্টেমটি একটি পরিচিত স্টেশন থেকে রেডিও সংকেতের দিক নির্ণয় করতে একটি ঘূর্ণায়মান অ্যান্টেনা ব্যবহার করেছিল। যাইহোক, এটি 1920 সাল পর্যন্ত ছিল না যে প্রথম ব্যবহারিক রেডিও কম্পাস তৈরি করা হয়েছিল এবং বিমান ব্যবহারের জন্য পরীক্ষা করা হয়েছিল।
*প্রথম ফ্লাইট*
27 জুলাই, 1920-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী এবং ন্যাশনাল ব্যুরো অফ স্ট্যান্ডার্ডের বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীদের একটি দল রেডিও কম্পাস ব্যবহার করে প্রথম ফ্লাইট পরিচালনা করে। পরীক্ষামূলক বিমান, একটি কার্টিস JN-4 “জেনি” বাইপ্লেন, একটি রেডিও কম্পাস সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত ছিল যা কাছাকাছি একটি স্টেশন থেকে রেডিও সংকেতের দিক সনাক্ত করতে একটি ঘূর্ণমান অ্যান্টেনা ব্যবহার করে। ফ্লাইটটি দিকনির্দেশ এবং অবস্থান নির্ধারণে রেডিও কম্পাসের কার্যকারিতা প্রদর্শন করেছিল, যা বিমান চালনায় এর গ্রহণের পথ প্রশস্ত করেছিল।
*কিভাবে কাজ করেছে*
রেডিও কম্পাস একটি সহজ কিন্তু বুদ্ধিমান নীতি ব্যবহার করেছিল। বিমানের একটি ঘূর্ণায়মান অ্যান্টেনা একটি পরিচিত স্টেশন থেকে রেডিও সংকেতের দিক সনাক্ত করে, যেমন একটি বাতিঘর বা একটি রেডিও বীকন। অ্যান্টেনাটি একটি রেডিও রিসিভারের সাথে সংযুক্ত ছিল, যা সংকেতকে প্রশস্ত করে এবং এটি একটি মিটারে প্রদর্শন করে। অ্যান্টেনা ঘোরানো এবং সংকেত শক্তি পর্যবেক্ষণ করে, পাইলট স্টেশনের দিকনির্দেশ এবং ফলস্বরূপ, তাদের নিজস্ব অবস্থান নির্ধারণ করতে পারে।
*বিমান চলাচলের উপর প্রভাব*
রেডিও কম্পাসের প্রবর্তন বিমান চলাচলে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এটি পাইলটদের আরও বেশি নির্ভুলতার সাথে নেভিগেট করতে সক্ষম করে, এমনকি প্রতিকূল আবহাওয়া বা অপরিচিত অঞ্চলেও। এটি নিরাপত্তা এবং দক্ষতা বাড়িয়েছে, যা দীর্ঘতর ফ্লাইট এবং আরও নির্ভরযোগ্য বিমান ভ্রমণের অনুমতি দেয়। রেডিও কম্পাস আরও উন্নত ন্যাভিগেশন সিস্টেম, যেমন GPS এর বিকাশের পথ তৈরি করেছে।
*উপসংহার*
প্রথম রেডিও কম্পাস, 27 জুলাই, 1920-এ ব্যবহৃত, বিমান চলাচলে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। এই অগ্রগামী প্রযুক্তি বিমান ভ্রমণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে, যা পাইলটদের আরও নির্ভুলতার সাথে তাদের দিকনির্দেশ এবং অবস্থান নির্ধারণ করতে সক্ষম করেছে। যেহেতু আমরা বিমান চালনা উদ্ভাবনের সীমানাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, আমরা যারা প্রথম রেডিও কম্পাস তৈরি করেছেন তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং অধ্যবসায়কে সম্মান জানাই, যা মানুষের বুদ্ধিমত্তা এবং অগ্রগতির সাধনার প্রমাণ।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

দ্য বার্থ অফ আ মিরাকল: লুইস ব্রাউন অ্যান্ড দ্য ফার্স্ট টেস্ট-টিউব বেবি।।।।

25 জুলাই, 1978, চিকিৎসা ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক চিহ্নিত যখন লুইস ব্রাউন, বিশ্বের প্রথম টেস্ট-টিউব শিশুর জন্ম হয়েছিল। এই যুগান্তকারী কৃতিত্ব প্রজনন ওষুধে বিপ্লব ঘটিয়েছে এবং বন্ধ্যাত্বের সাথে লড়াইরত লক্ষ লক্ষ দম্পতিদের জন্য নতুন আশার প্রস্তাব দিয়েছে।

পটভূমি—–

1970 এর দশকের গোড়ার দিকে, ডাঃ রবার্ট এডওয়ার্ডস, একজন ব্রিটিশ ফিজিওলজিস্ট এবং ডাঃ প্যাট্রিক স্টেপটো, একজন গাইনোকোলজিস্ট, শরীরের বাইরে মানুষের ডিম নিষিক্ত করার সম্ভাবনা অন্বেষণ শুরু করেন।

ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ)-এ তাদের অগ্রগামী কাজটি অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল, যার মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা সম্প্রদায়ের সংশয় এবং সীমিত অর্থায়ন।

যুগান্তকারী—–

10 নভেম্বর, 1977-এ, ইংল্যান্ডের ওল্ডহ্যামের 29 বছর বয়সী মহিলা লেসলি ব্রাউন প্রথম সফল আইভিএফ পদ্ধতির মধ্য দিয়েছিলেন। তার ডিম্বাণু সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং তার স্বামীর শুক্রাণু দিয়ে একটি পরীক্ষাগারের থালায় নিষিক্ত করা হয়েছিল। দুটি ভ্রূণ তার জরায়ুতে স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং একটি গর্ভাবস্থা নিশ্চিত হয়েছিল।

লুইস ব্রাউনের জন্ম—-

স্বাভাবিক গর্ভধারণের পর, লেসলি 25 জুলাই, 1978 তারিখে ওল্ডহাম জেনারেল হাসপাতালে রাত 11:47 মিনিটে লুইস জয় ব্রাউনের জন্ম দেন। শিশুটির ওজন 5 পাউন্ড 12 আউন্স এবং সুস্থ ছিল। টেস্টটিউব শিশুর আগমনের খবরটি মিডিয়ার ব্যাপক মনোযোগ ছড়িয়ে দেয় এবং লুইস রাতারাতি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।

প্রভাব—-

লুইস ব্রাউনের জন্ম প্রজনন ওষুধে একটি নতুন যুগের সূচনা করে। IVF প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতি হয়েছে, এবং প্রথম IVF ক্লিনিক বিশ্বব্যাপী খোলা হয়েছে। তারপর থেকে, 8 মিলিয়নেরও বেশি শিশু IVF এর মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেছে, এবং পদ্ধতিটি বন্ধ্যাত্বের জন্য একটি সাধারণ চিকিত্সা হয়ে উঠেছে।

উত্তরাধিকার—–

লুইস ব্রাউনের উত্তরাধিকার তার ঐতিহাসিক জন্মের বাইরেও প্রসারিত। তিনি বন্ধ্যাত্ব সচেতনতা এবং IVF গবেষণার জন্য একজন উকিল হয়ে উঠেছেন। তার গল্প অগণিত দম্পতিকে IVF চিকিত্সা অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করেছে, তাদের আশা এবং পিতৃত্বের সুযোগ প্রদান করেছে।

উপসংহার—-

প্রথম টেস্টটিউব শিশু লুইস ব্রাউনের জন্ম, চিকিৎসা ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত। এটি প্রজনন ওষুধে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে এবং বন্ধ্যাত্বের সাথে লড়াইরত লক্ষ লক্ষ দম্পতিদের আশার প্রস্তাব দিয়েছে। IVF প্রযুক্তির বিকাশ অব্যাহত থাকায়, লুইসের উত্তরাধিকার টিকে থাকবে, যা ভবিষ্যত প্রজন্মকে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় উদ্ভাবনী সমাধান অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করবে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজকের দিনে কলকাতায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পূর্বতন বেঙ্গল একাডেমি অব লিটারেচার স্থাপিত হয়।।।।

বেঙ্গল লিটারারি সোসাইটি, 23 জুলাই, 1823 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, একটি অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান যা বাংলা সাহিত্য ও ভাষার প্রচার ও বিকাশে নিবেদিত ছিল। বেঙ্গল একাডেমি অফ লিটারেচার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত, এটি ছিল বাংলা ও ভারতের সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক ঐতিহ্যের একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।

19 শতকের গোড়ার দিকে, বাংলা একটি সাংস্কৃতিক নবজাগরণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, এবং এই বৃদ্ধির জন্য সমাজ গঠিত হয়েছিল।

পণ্ডিত, লেখক এবং বুদ্ধিজীবী সহ একদল দূরদর্শী ব্যক্তি, সাহিত্যিক আলোচনা, বিতর্ক এবং অগ্রগতির জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে একত্রিত হয়েছিল।
সমাজের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল বাংলা সাহিত্যের প্রচার, মৌলিক লেখাকে উৎসাহিত করা এবং সাহিত্য সমালোচনা ও বিশ্লেষণের জন্য একটি ফোরাম প্রদান করা। এর লক্ষ্য ছিল বাংলা সাহিত্যের ভান্ডার তৈরি করা, দুর্লভ পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ ও প্রকাশ করা এবং জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায়, সমাজ তার যাত্রা শুরু করে, রাজা রামমোহন রায়, ডেভিড হেয়ার এবং উইলিয়াম কেরির মতো উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সোসাইটির প্রারম্ভিক সভাগুলি কলকাতা টাউন হলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে সদস্যরা সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা করতে, তাদের নিজস্ব লেখা শেয়ার করতে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্কে জড়িত হতেন।
বেঙ্গল লিটারারি সোসাইটির একটি উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রসার। যে সময়ে ইংরেজি প্রাধান্য লাভ করছিল, সমাজ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিল। তারা লেখকদের বাংলা ভাষায় মৌলিক রচনা তৈরি করতে উত্সাহিত করেছিল এবং তাদের প্রচেষ্টার ফলে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো বিশিষ্ট বাঙালি লেখকদের আবির্ভাব ঘটে।
বাংলা শিক্ষার বিকাশেও সমাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্তর্ভুক্তির পক্ষে কথা বলেছিল, যা অবশেষে স্কুল ও কলেজে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করে।
বছরের পর বছর ধরে, বেঙ্গল লিটারারি সোসাইটি বেশ কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে, কিন্তু বাংলা সাহিত্য ও ভাষাকে প্রসারে এর অঙ্গীকার অটুট রয়েছে। আজ, সমাজটি কলকাতার সাহিত্যিক ল্যান্ডস্কেপে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসাবে অব্যাহত রয়েছে, সাহিত্য অনুষ্ঠান, সম্মেলন এবং কর্মশালার আয়োজন করে।
উপসংহারে বলা যায়, 23শে জুলাই, 1823 সালে প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল লিটারারি সোসাইটি বাংলা ও ভারতে সাহিত্যের শ্রেষ্ঠত্বের বাতিঘর। বাংলা সাহিত্য ও ভাষার বিকাশে এর অবদান অপরিসীম, এবং এর উত্তরাধিকার প্রজন্মের লেখক, পণ্ডিত এবং বুদ্ধিজীবীদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

নির্ভীকতার আরেক নাম চন্দ্রশেখর আজাদ!!!

সাল ১৯১৪, সমগ্র বিশ্ব জুড়ে বেজে উঠলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা! ভারতের জাতীয়তাবাদী রাজনীতি তখন আংশিক নয়, বরং প্রায় সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হতাশা’র গহীন অন্ধকারে!

ব্রিটিশ অধীনতা’র দাসত্ব শৃঙ্খল ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার একান্ত উদ্দ্যেশ্যে এমত পরিস্থিতিতে, বিশ্বযুদ্ধের এই সুযোগকে উপযুক্তভাবে কাজে লাগিয়ে ভারতীয় বিপ্লবীরা নিরন্তর ও নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, কিভাবে ভারতে একটি সুসংবদ্ধ ও জোরালো বিপ্লব করা সম্ভবপর হয়।

১৯০৭ সালে সুরাট অধিবেশনে জাতীয় কংগ্রেসের মতাদর্শ নরমপন্থী ও চরমপন্থী নাম ধারণ করে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পৌঁছে যায় যথাক্রমে সুমেরু ও কুমেরু বিন্দুতে।
যেহেতু জাতীয় কংগ্রেস নামক সু-বৃহৎ বৃক্ষটির বীজ নিহিত ছিল নরমপন্থীতে, তাই চরমপন্থীরা কংগ্রেস থেকে হয়ে যান বিতাড়িত!
ফলস্বরূপ, রীতিমতন দুর্বল হয়ে পড়ে নরমপন্থী পরিচালিত জাতীয় কংগ্রেস।
এদিকে বিপিনচন্দ্র পাল, লালা লাজপৎ রায়, অরবিন্দ ঘোষ, কৃষ্ণকুমার মিত্র ও অশ্বিনীকুমার দত্ত প্রমুখ নেতৃবৃন্দের অভাবজনিত কারণে চরমপন্থীরাও নেতৃত্বহীনতার অভাবে হয়ে পড়েন দুর্বল ও হতাশাগ্রস্থ!
একদিকে সরকারের দমননীতি, অপরদিকে নেতৃত্বাভাব ও বার্ধক্যজনিত কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া, সব মিলিয়ে চরমপন্থী আন্দোলন যেন অসহায়ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে ধূলিধূসর রাজপথে!
পরবর্তীকালে, সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ, লক্ষ্মৌ চুক্তি, হোমরুল লীগ ও রাওলাট আইন বিরোধী আন্দোলনের হাত ধরে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের রাজনৈতিক ইতিহাস এসে পৌঁছায় ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত, ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে অন্যতম কুখ্যাত এক গণনিধন ‘জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড’-এর
দোড়গোড়ায়!
এখানে বলে রাখা ভালো, রাওলাট আইনের প্রতিবাদের উপরে ভিত্তি করে যে আন্দোলন সূচিত হয়, তারই চরম পরিণতি’র জীবন্ত দৃষ্টান্ত কিন্তু এই জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড!
লেফটেন্যান্ট গভর্নর মাইকেল ও’ ডায়ার এর স্বৈরাচারী শাসনের ফলস্বরূপ পাঞ্জাবের অমৃতসর সেসময় যথার্থই পরিণত হয় জ্বলন্ত এক অগ্নিকুন্ডে!
শুধু অমৃতসরেই তা কিন্তু থাকেনি সীমাবদ্ধ, এরপর পাঞ্জাবের আরো পাঁচ-পাঁচটি জেলাকে বন্দী করা হয় সামরিক আইন বলের ঘেরাটোপে।
এ পরিস্থিতিতে, খিলাফৎ আন্দোলন চিত্রে মহাত্মা গান্ধী’র রেটিনায় গঠিত হয় হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের সম্ভাবনার এক স্বচ্ছ
প্রতিবিম্ব, যা তিনি আগামী ১০০ বছরেও আর আসবেনা মনে করে, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ইংরেজ সরকারের বিরূদ্ধে কর্মসূচি গ্রহণ করেন অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের।
সে বছরেই অর্থাৎ ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রতিষ্ঠিত হন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে।
একদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নির্মম আঘাতে দেশবাসীর বিশেষত অর্থনৈতিক সংকট চরমে!
ওষুধ, চাল, ডাল, চিনি, কাপড় প্রভৃতি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যের সূচক চুড়ান্ত ঊর্ধ্বমুখী। কৃষিজাত দ্রব্যও অতি স্বল্প মূল্যে মহাজনদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হয় কৃষকরা। বৃদ্ধি পায় শিল্পদ্রব্যের মূল্য কিন্তু শ্রমিকের মজুরী সেখানেই হয়ে থাকে স্ট্যাচু!
অন্যথায়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে ভারতে ব্রিটিশদের বিভিন্ন পণ্যের আমদানী বন্ধ হওয়ায় সরকার ভারতীয়দের শিল্পবিস্তারের ক্ষেত্রে উৎসাহী হলেও, যুদ্ধ শেষে নানান বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে, সেগুলির উপরে এবং নতুন শিল্প স্থাপনে সৃষ্টি করা হয় যথাসাধ্য বাধা’র! ফলতঃ, জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে ঘৃতাহুতি চিত্তে ভারতীবাসী হয়ে ওঠেন আরো বেশি ক্ষুব্ধ!
সব মিলিয়ে, সমকালীন আন্তর্জাতিক এ হেন পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি যেন হয়েই যায় তৈরি।
এমনই এক ক্রান্তিকালীন মুহুর্তে, মধ্যপ্রদেশের আলিরাজপুর জেলার ভাওরা গ্রামের এক ১৫ বছরের এক অকুতোভয় তরুণ বিপ্লবী জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়ে অংশগ্রহণ করেন অসহযোগ আন্দোলনে।
সংস্কৃত ভাষায় গভীর জ্ঞান অর্জনের উদ্দ্যেশ্যে তাঁকে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হলে, সেই বছরই অর্থাৎ ১৯২১ সালে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এই আন্দোলনে।
স্বাধীনতা সংগ্রামের আত্মবিসর্জনকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে যুদ্ধে দক্ষতা বৃদ্ধি’র প্রশিক্ষণের জন্যে তিনি বেছে নিয়েছিলেন ঝাঁসি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের একটি গোপন ও নিরাপদ স্থানকে। ঝাঁসিতে থাকাকালীন পণ্ডিত হরিশঙ্কর ব্রহ্মচারী ছদ্মনাম গ্রহণ করে গোপনে প্রশিক্ষণ চালানোর মধ্যে দিয়ে তিনি তাঁর গোষ্ঠীর সদস্যদের এ প্রকারেই বৃদ্ধি করেছিলেন রণকৌশল।
ব্রিটিশ রাজত্বকালে তিনি কখনই পুলিশ কর্মকর্তাদের হাতে জীবিত ধরা পড়বেন না, এমন দৃঢ়সংকল্পের দুর্ভেদ্য পোশাক পরিহিত এই সিংহপুরুষকে গ্রেপ্তার করে একবার এক ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে আনা হলে ম্যাজিস্ট্রেট চন্দ্রশেখরকে প্রশ্ন করে বসেন, ‘কি তোমার পরিচয়?’
সগর্বে ‘আজাদ’ হিসেবে তিনি নিজেকে
পরিচয় দেন, যার অর্থ ‘মুক্ত’ আর সেইদিন থেকেই তিনি পরিচিতি অর্জন করেন ‘চন্দ্রশেখর আজাদ’ নামে।
অবশেষে, এলাহাবাদের আলফ্রেড পার্কে পুলিশবাহিনী’র চক্রব্যূহকে মূল্যহীন ও তুচ্ছ প্রমাণিত এবং আত্মসম্মানকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেই ১৯৩১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, বিপ্লবী ভগৎ সিংয়ের আদর্শ গুরু হিসেবে পরিচিত এই বীর স্বাধীনতা সৈনিক নিজের শেষ বুলেটটি দিয়ে নিজেকে উৎসর্গ করে লুটিয়ে পড়েন অবিভক্ত ভারত মায়ের বুকে।
ফ্লিপ কার্ড অথবা অ্যামাজন-এ অর্ডারের মাধ্যমে স্বাধীনতা আসেনি, এসেছে দীর্ঘ এক কঠিন সংগ্রাম ও রক্তবন্যায় ভেসে, এ আমরা সবাই কম-বেশি জানি কিন্তু ওইটুকুই ব্যাস!
এরপর জানা’র অ্যাপ্লিকেশন’টা অক্সিজেনের অভাবে ধুঁকে ধুঁকে এক সময় স্থান পায় শশ্মান কিংবা কবরে!
রাজমিস্ত্রি আজও গেঁথে চলেছে দেওয়াল কিন্তু, বোধকরি সিংহভাগ অভিভাবকই তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দেওয়ালে এনাদের আদর্শ আজ আর গাঁথেন না, আজ শুধুই মুখস্থ করা হয় এনাদের, ফলে ঘরে ঘরে জন্ম নিচ্ছে আত্মকেন্দ্রিক ও শান্তিপ্রিয় সন্তান!
বিস্মৃতি’র অতল গহ্বরে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছেন এ সমস্ত গর্বিত বঙ্গ মায়ের বীর সন্তানরা! ইতিহাসও যেন আজ আর চাইছে না এনাদের সাথে কোনপ্রকার সম্পর্ক রাখতে!
কেমন যেন লন্ড-ভন্ড ও অগোছালো এ সময়!
মাঝে মধ্যেই মনে হয় মনুষ্যত্ব’টা তর্জনী উঁচিয়ে প্রশ্ন করে বসে, এ হেন হোমোস্যাপিয়েন্স-এর চেয়ে আমার ইজিপ্টোপিথেকাস ছিল অনেক ভালো!

কলমে : তন্ময় সিংহ রায়।

Share This