Categories
রিভিউ

সাহিত্যে চরিত্র হয়ে উঠে আসা সাধারণ মানুষদের নিয়ে মহালয়ার শুভদিনে চোখ সাহিত্য পত্রিকার পূজো আড্ডা ও প্রকাশনা উৎসবের জমকালো আয়োজন কলকাতার বুকে….

গল্প নয় সত্যি হ’য়ে কিছু ইচ্ছে পরিপূর্ণতা পায় তার স্বভাবসুলভ স্বকীয়তায়… ভাষার প্রকাশের ঐশ্বরিক অনুলিখন ফুটে ওঠে ছাপার অক্ষরে পাতায় পাতায়…!

তেমনই এক সুন্দরতম শুদ্ধ সাহিত্যের আয়োজনে,
গত ২৫ শে সেপ্টেম্বর মহালয়ার পূণ্যদিনে কলকাতার কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট হলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো চোখ সাহিত্য পরিবার আয়োজিত কবি সম্মেলন এবং মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান…!
চোখ সাহিত্য পরিবার সাহিত্যের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্বের কথা মাথায় রেখে বরাবরের মতোই একই ধারায় নির্দিষ্ট ভাবনা ভিত্তিক অনুষ্ঠান করে এসেছে বিগত বছরগুলোতে, যা কিনা সাংস্কৃতিক একটি স্বকীয় উজ্জ্বতম নব ধারার সৃষ্টি করেছে এই সময়ের কলকাতার সাহিত্য অঙ্গনে..!

চোখ সাহিত্য পরিবারের কর্ণধার শ্রী রজত পুরকায়স্থ মহাশয়ের কথা ও ভাবনায়,
” নাচের অনুষ্ঠান কিংবা পূজো প্যান্ডেল হয় একটা থিম বা ভাবনাকে কেন্দ্র করে, একটা সাহিত্যের অনুষ্ঠানও ভাবনা বা থিম নির্ভর হতে পারে এবং হওয়া উচিতও বটে.. এটাই আমরা মনে করেছি এবং সেই ভাবনা থেকেই এবারের থীম বা বিষয় ছিলো সমাজের সাধারণ মানুষ থেকে উঠে আসা সফল কিছু মানুষদের নিয়ে “ওঁরা কাজ করে” শীর্ষক ভাবনার..! উল্লেখ্য যে বিগত বছরে আমাদের মঞ্চ ভাবনা ছিল, কবিপাঠকএবংকবিতারবিষয়.. এই ভাবনাকে সামনে রেখে আমরা মঞ্চে সম্মান জানিয়েছিলাম কবি এবং পাঠকদের…। কবিতার বিষয় বলতে, কবি/সাহিত্যিকরা যাদের নিয়ে মেতে ওঠে সৃষ্টির পরম আনন্দে..যেমন, বাজারের মাছওলা, সবজিওলা, রিক্সাচালক, শ্রমিক এবং ট্রান্সজেন্ডার….. আমরা সবাইকে সম্মান জানিয়েছিলাম প্রথম বর্ষে…। পরের দ্বিতীয় বছরে আমাদের ভাবনা ছিল, ‘তুমিওনারী’…। এই ভাবনায় আমরা মঞ্চে সম্মান জানিয়েছি আমাদের সমাজের মানবিক দিক থেকে অবহেলিত ট্রান্সজেন্ডার ও যৌনকর্মীদের…। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির সর্বভারতীয় সভাপতি শ্রীমতী ভারতী ঘোষ মহাশয়া..। তাই এবারের মহালয়ার দিন আমাদের মঞ্চ ভাবনা– ‘ওরাকাজকরে’…। এই ভাবনাকে সার্থক করতে এবার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, বাঁকুড়া থেকে অপরাজেয় এক নারী.. সুপ্রিয়া পাল বৃষ্টি…। যিনি ভূগোলে এম,এস সি ; বি, এড করেও বাস্তবতার নিরিখে চাকরী না পেয়ে ট্রেনে হকারি করেন..। তিনি কাজ করেন অবিরাম জীবনধারণের তাগিদে। আমার মতে, এই সমাজকে তিনি উপহার দিয়েছেন চরম এক লজ্জা। তিনি আগামী প্রজন্মের অনুপ্রেরণা, আমাদের চোখে এই সমাজের বীরাঙ্গনা…। এবার মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন কর্ণেল আবির ঘোষ। তিনি কাজ করেন দেশকে রক্ষা করার জন্য ভারতের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে সীমান্তে..। আবির বাবু বিগত কার্গিল যুদ্ধের অন্যতম নায়ক ছিলেন। তাঁকে সম্মান জানাতে পেরে আমরা সম্বৃদ্ধ হয়েছি…! চেষ্টা করেছি আমাদের মঞ্চ ভাবনা ‘ওরাকাজ_করে’ অনুযায়ী এবারের অনুষ্ঠানটিকে উপস্থাপন করতে…!”

অনন্য ভাবনার চোখ সাহিত্য পরিবারের এই প্রাক পূজো মিলনমেলা ও প্রকাশ উৎসব অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বনামধন্য সাহিত্যিক শ্রী নলিনী বেরা মহাশয়, প্রধান অতিথি ছিলেন আনন্দ প্রকাশনির কর্ণধার শ্রী আনন্দ মণ্ডল মহাশয়, ছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক শ্রী পৃথ্বীরাজ সেন মহাশয়, আরও ছিলেন তরুণ কবি সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক শ্রী সৌগত রাণা কবিয়াল মহাশয় প্রমুখ বিজ্ঞ মানুষেরা…।

সময় শ্রদ্ধা জানায় সেই কর্মকেই, যে কর্মে মানুষের কথা লেখা থাকে…! রজত পুরোকায়স্থ মহাশয়ের ভাবনায় অসাধারণ ভাবে উজ্জীবিত এক মঞ্চ হয়ে ওঠে গত ২৫ সে সেপ্টেম্বরে কলকাতার বুকে কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট হলের চোখ সাহিত্য মঞ্চ.. যেখানে নবীন প্রবীণ লেখকগন নিজেদের ভাবনা নিয়ে কথা বলেন, আর চোখ পরিবারের ভাবনায় তাদের মুখোমুখি ছাপায় বোনা সেই চরিত্রগুলো ভেসে ওঠে চোখ সাহিত্য পরিবারের উৎসব বারান্দায়…! অনুষ্ঠান মঞ্চের আলোয় শিশু সাহিত্যিক হিসেবে জ্বলে উঠে দশ বছর বয়সের দেভাংশ চ্যাটার্জি.. মঞ্চে দেবী দুর্গার প্রতিরুপ হয়ে ওঠেন বাঁকুড়ার ট্রেনে নিজের জীবিকার তাগিদে একজন সাধারণ মানুষ থেকে কর্ম-শিল্পী হয়ে ওঠা আমাদের সমাজের চোখের অনাহুত বিবেক গ্লানি নিয়ে ভূগোলের এম এসসি, বি এড সুপ্রিয়া পাল বৃষ্টি…! মঞ্চে উপবিষ্ট সকল মানুষ অহংকারে তাদের দেশের এক কৃতি মানুষ কর্ণেল আবীর ঘোষকে অভিবাদন করে অবচেতন ভাবেই স্যালুট করে জানিয়ে দেয় যে যথাযোগ্য সন্মানে কখনই বাংলার সাহিত্য কর্মীরা কৃপণ নয়… নব ধারায় আগামী ভারতকে তুলে ধরতে কণ্যা স্নেহে মাতৃ দৃষ্টিতে ভালোবাসা আর আশির্বাদের ছবিতে ফুটে ওঠে ন্যাশানাল গেমসে চারটি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত সায়ন্তনী সাহা মণ্ডল’…!

কলকাতার কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট হলের সভাগৃহে চোখ সাহিত্য পত্রিকার এই অনুষ্ঠানে অসাধারণ সঞ্চালনা করেন প্রবীণ শিক্ষক শ্রী দেবাশিস পাল মহাশয় এবং শ্রীমতী স্বাগতাপাল মহাশয়া…।
“চোখ সাহিত্য পরিবার” এর এডমিল শ্রীমতী মৌমিতা চ্যাটার্জী মহাশয়া এবং শ্রী পঙ্কজ দত্ত মহাশয়ের আন্তরিক পরিচালনায়, পত্রিকার সম্পাদক শ্রী রজত পুরকায়স্থ মহাশয়ের অসাধারণ আথিতেয়তায় মঞ্চে
সম্মান জানানো হয় এই সময়ের প্রতিভাবান একঝাঁক কবি সাহিত্যিককে..প্রদান করা হয় সম্মাননা স্বারক ও সনদ পত্র… ।
মঞ্চে সম্মান জানানো হয় ন্যাশানাল গেমসে চারটি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত সায়ন্তনী সাহা মণ্ডল কে…! নাট্যকার বিশ্বজিৎ পুরকায়স্থ স্মৃতি সাহিত্য সম্মান প্রদান করা হয় কবি শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল মহাশয়, কবি মধুছন্দা গাঙ্গুলী মহাশয়া, কবি সজল পোদ্দার মহাশয়কে। চোখ সাহিত্য সম্মান -২০২২ প্রদান করা হয় কবি বৃন্দাবন দাস মহাশয়, কবি অসীমবদাস মহাশয়, কবি মহাদেব নস্কর মহাশয়কে…। সেরা পাঠক-২০২২ প্রদান করা হয় অশোক রায় মহাশয়কে…। বীরাঙ্গনা সম্মান -২০২২ প্রদান করা হয় সুপ্রিয়া পাল বৃষ্টি মহাশয়াকে.. ।
অনুষ্ঠানে আরও যে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে, প্রাত্যহিক কবিতা পাঠের আসর এর শিল্পী কবি সুনীল বণিক মহাশয়, শ্রদ্ধেয়া মাধুরী শর্মা মাহাশয়া এবং বর্ণালী মিস্ত্রী মাহাশয়াকে..।

বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে মোড়ক উন্মোচন করা হয় কবি রজত পুরকায়স্থ সম্পাদিত চোখ সাহিত্য পত্রিকার পূজো সংখ্যা ও চোখ কাব্য সংকলনের..। এছাড়াও প্রকাশ করা হয় সাতটি একক গ্রন্থ..যথাক্রমে, কবি কৃষ্ণা গুহ’র “নির্বাচিত কবিতা”, কবি বিকাশ গুঁইয়ের “প্রেম ও প্রকৃতি”, কবি সিদ্ধার্থ সেন এবং ডাক্তার লিপিকা সেনের “রং ও তুলি”, কবি কৃষ্ণগোপাল ঘোষের “প্রথম প্রেম”, কবি ড: শিপ্রা মুখোপাধ্যায় হালদারের “পূর্বরাগের প্রণয়লিপি”, বিষ্ময় বালক দেভাংশ চ্যাটার্জির “A Tide Of Tales” এবং রজত পুরকায়স্থের “রাজার কলম হোক ক্রীতদাস”…।

মেধা মননশীলতায় বাংলা সাহিত্য সবসময় দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রধান পঙক্তির সমার্থক..সেই অর্থে আধুনিক সাহিত্যে সত্য এবং সুন্দরকে পাশাপাশি হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যেতে চোখ সাহিত্য পরিবারের মতন এমন ফেরিওয়ালা চাই যাদের হাত ধরে বাংলা সাহিত্য এগিয়ে যাবে তার সঠিক ভবিষ্যতের দিকে…!
জয় হোক শুদ্ধ সাহিত্যের..জয় হোক মানুষের…!

সৌগত রাণা কবিয়াল—
— কবি সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক

Share This
Categories
রিভিউ

চার দেয়ালের ঘেরাটোপের বাইরে উন্মুক্ত আকাশের সন্ধ্যা আলোয় বৃষ্টিস্নাত হয়ে লীনা প্রকাশনীর এক ভিন্নমাত্রার আয়োজনে সুরে-স্বরে মুখরিত হয়ে উঠলো কলকাতার মোহর কুঞ্জের সবুজবীথি।।।।

আলো এসে ভরিয়ে দিচ্ছে কাশ ভোরের সকাল..মাতৃ পক্ষের আগমনী সুরে প্রকৃতি হয়ে কথা বলছে তরুণ কিশোরের মনের ভাষা..বাংলার সাহিত্য পাড়ায়ও তার ছোঁয়া অদ্ভুত এক উজ্জ্বল সুখের কথা হয়ে ফুটে উঠছে আবীর রাঙা সব উৎসবে…!

লীনা প্রকাশনীর আয়োজনে এমনই এক অসাধারণ ভালোবাসা ও বন্ধনে সাহিত্যের মিলনমেলার প্রাণময় এক উৎসবে পরিনত হলো কলকাতার মোহর কুঞ্জ প্রাঙ্গণে গত ২৪ শে সেপ্টেম্বরের সুন্দর বিকেলের রোদ- বৃষ্টির সন্ধিক্ষণে…!

প্রকাশনীর সম্পাদক কবি বাণীব্রত সরকারের মোহরকুঞ্জে লীনা পাবলিকেশনের প্রাক শারদ আড্ডায় মিলিত হলেন এই সময়ের নবীন প্রবীণ কবি সাহিত্যিকগন.. উন্মুক্ত মঞ্চে আড্ডা কবিতায় সুর হয়ে ফুটে উঠলো বাংলার চীরচেনা শরৎ উৎসবের আলো…!

লীনা পাবলিকেশন ও কবিতা নীড় সৃজন বাংলা সাহিত্য পরিবারের যৌথ উদ্যোগের খোলা মনের এই পূজোর আড্ডায় কবি সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক শ্রী সৌগত রাণা কবিয়ালের হাত ধরে উন্মোচিত হলো কবি পলাশ দাসের ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ , প্রবীণ সাহিত্যিক কনককান্তি মজুমদারের যে’দিন আমি থাকবো না’, কবি পঞ্চু নস্করের ‘বিচ্ছুরণ’…! অনুষ্ঠানের রোদ মেঘ বৃষ্টির অসাধারণ এই সান্ধ্য আলোয় কবি সাহিত্যিকদের সন্মানিত করতে তাদের হাতে শারদ সন্মাননা তুলে দেন নীনা প্রকাশনীর কর্ণধার কবি বাণীব্রত সরকার ও বাচিক শিল্পী সেঁজুতি বসু….!

অনুষ্ঠানের প্রারম্ভিক ক্ষণ থেকেই আকাশের মেঘ ছায়ার খেলায় বৃষ্টি ভেজা হয়ে প্রাকৃতিক স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে জমে ওঠে প্রাক শারদীয়া এই আড্ডা… চার দেয়ালের ঘেরাটোপের বাইরে ভিন্নমাত্রার এই আয়োজন সুরে-স্বরে মুখরিত হয়ে ওঠে সাহিত্যের প্রেমময় বন্ধনে…রচিত হয় এক স্মৃতি মাধুকরী ক্ষণের…! স্বতস্ফূর্তভাবে আগত সাহিত্যপ্রেমীরা মজলেন সন্ধ্যার সিক্ত সাহিত্য আড্ডায়..সকলের মন শিশুতোষ ভালোবাসাময় হয়ে উঠলো আগত তরুণ প্রবীণের দৃষ্টি দৃশ্য…!

উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে ৭ই অগাস্ট লীনা প্রকাশনীর বই প্রকাশের জমকালো আয়োজনে কলকাতার কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল হলের সভাগৃহে এক হয়েছিলেন বাংলার বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সাহিত্য প্রেমী গন..!

মহালয়ার প্রাক সন্ধ্যায় কলকাতার মোহর কুঞ্জের সবুজবীথিতে লীনা প্রকাশনীর আনন্দময় আগমনীর এই মিলনমেলায় কবিতা গানের সাথে প্রকাশ উৎসবের মাধ্যমে প্রকাশ পেলো বাংলা সাহিত্যের চিরকালীন সৌহার্দপূর্ণ সৃষ্টি উল্লাসের..! এভাবেই এগিয়ে যাক বাংলার সাহিত্যের বৈতরণী, সসম্বৃদ্ধ হোক আগামী প্রজন্মের জন্য মূল্যবান ইতিহাস..!

সৌগত রাণা কবিয়াল…
— কবি সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক

Share This
Categories
রিভিউ

ঐশ্বরিক ভাবনাতে মানবিক প্রতিমা গড়ে কলকাতার বুকে চোখ সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট হলে।।।

গল্প নয় সত্যি হ’য়ে কিছু ইচ্ছে পরিপূর্ণতা পায় তার স্বভাবসুলভ স্বকীয়তায়… ভাষার প্রকাশের ঐশ্বরিক অনুলিখন ফুটে ওঠে ছাপার অক্ষরে পাতায় পাতায়…!

তেমনই এক সুন্দরতম শুদ্ধ সাহিত্যের আয়োজনে,
গত ২৫ শে সেপ্টেম্বর মহালয়ার পূণ্যদিনে কলকাতার কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট হলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো চোখ সাহিত্য পরিবার আয়োজিত কবি সম্মেলন এবং মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান…!
চোখ সাহিত্য পরিবার সাহিত্যের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্বের কথা মাথায় রেখে বরাবরের মতোই একই ধারায় নির্দিষ্ট ভাবনা ভিত্তিক অনুষ্ঠান করে এসেছে বিগত বছরগুলোতে, যা কিনা সাংস্কৃতিক একটি স্বকীয় উজ্জ্বতম নব ধারার সৃষ্টি করেছে এই সময়ের কলকাতার সাহিত্য অঙ্গনে..!

চোখ সাহিত্য পরিবারের কর্ণধার শ্রী রজত পুরকায়স্থ মহাশয়ের কথা ও ভাবনায়,
” নাচের অনুষ্ঠান কিংবা পূজো প্যান্ডেল হয় একটা থিম বা ভাবনাকে কেন্দ্র করে, একটা সাহিত্যের অনুষ্ঠানও ভাবনা বা থিম নির্ভর হতে পারে এবং হওয়া উচিতও বটে.. এটাই আমরা মনে করেছি এবং সেই ভাবনা থেকেই এবারের থীম বা বিষয় ছিলো সমাজের সাধারণ মানুষ থেকে উঠে আসা সফল কিছু মানুষদের নিয়ে “ওঁরা কাজ করে” শীর্ষক ভাবনার..! উল্লেখ্য যে বিগত বছরে আমাদের মঞ্চ ভাবনা ছিল, কবিপাঠকএবংকবিতারবিষয়.. এই ভাবনাকে সামনে রেখে আমরা মঞ্চে সম্মান জানিয়েছিলাম কবি এবং পাঠকদের…। কবিতার বিষয় বলতে, কবি/সাহিত্যিকরা যাদের নিয়ে মেতে ওঠে সৃষ্টির পরম আনন্দে..যেমন, বাজারের মাছওলা, সবজিওলা, রিক্সাচালক, শ্রমিক এবং ট্রান্সজেন্ডার….. আমরা সবাইকে সম্মান জানিয়েছিলাম প্রথম বর্ষে…। পরের দ্বিতীয় বছরে আমাদের ভাবনা ছিল, ‘তুমিওনারী’…। এই ভাবনায় আমরা মঞ্চে সম্মান জানিয়েছি আমাদের সমাজের মানবিক দিক থেকে অবহেলিত ট্রান্সজেন্ডার ও যৌনকর্মীদের…। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির সর্বভারতীয় সভাপতি শ্রীমতী ভারতী ঘোষ মহাশয়া..। তাই এবারের মহালয়ার দিন আমাদের মঞ্চ ভাবনা– ‘ওরাকাজকরে’…। এই ভাবনাকে সার্থক করতে এবার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, বাঁকুড়া থেকে অপরাজেয় এক নারী.. সুপ্রিয়া পাল বৃষ্টি…। যিনি ভূগোলে এম,এস সি ; বি, এড করেও বাস্তবতার নিরিখে চাকরী না পেয়ে ট্রেনে হকারি করেন..। তিনি কাজ করেন অবিরাম জীবনধারণের তাগিদে। আমার মতে, এই সমাজকে তিনি উপহার দিয়েছেন চরম এক লজ্জা। তিনি আগামী প্রজন্মের অনুপ্রেরণা, আমাদের চোখে এই সমাজের বীরাঙ্গনা…। এবার মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন কর্ণেল আবির ঘোষ। তিনি কাজ করেন দেশকে রক্ষা করার জন্য ভারতের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে সীমান্তে..। আবির বাবু বিগত কার্গিল যুদ্ধের অন্যতম নায়ক ছিলেন। তাঁকে সম্মান জানাতে পেরে আমরা সম্বৃদ্ধ হয়েছি…! চেষ্টা করেছি আমাদের মঞ্চ ভাবনা ‘ওরাকাজ_করে’ অনুযায়ী এবারের অনুষ্ঠানটিকে উপস্থাপন করতে…!”

অনন্য ভাবনার চোখ সাহিত্য পরিবারের এই প্রাক পূজো মিলনমেলা ও প্রকাশ উৎসব অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বনামধন্য সাহিত্যিক শ্রী নলিনী বেরা মহাশয়, প্রধান অতিথি ছিলেন আনন্দ প্রকাশনির কর্ণধার শ্রী আনন্দ মণ্ডল মহাশয়, ছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক শ্রী পৃথ্বীরাজ সেন মহাশয়, আরও ছিলেন তরুণ কবি সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক শ্রী সৌগত রাণা কবিয়াল মহাশয় প্রমুখ বিজ্ঞ মানুষেরা…।

সময় শ্রদ্ধা জানায় সেই কর্মকেই, যে কর্মে মানুষের কথা লেখা থাকে…! রজত পুরোকায়স্থ মহাশয়ের ভাবনায় অসাধারণ ভাবে উজ্জীবিত এক মঞ্চ হয়ে ওঠে গত ২৫ সে সেপ্টেম্বরে কলকাতার বুকে কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট হলের চোখ সাহিত্য মঞ্চ.. যেখানে নবীন প্রবীণ লেখকগন নিজেদের ভাবনা নিয়ে কথা বলেন, আর চোখ পরিবারের ভাবনায় তাদের মুখোমুখি ছাপায় বোনা সেই চরিত্রগুলো ভেসে ওঠে চোখ সাহিত্য পরিবারের উৎসব বারান্দায়…! অনুষ্ঠান মঞ্চের আলোয় শিশু সাহিত্যিক হিসেবে জ্বলে উঠে দশ বছর বয়সের দেভাংশ চ্যাটার্জি.. মঞ্চে দেবী দুর্গার প্রতিরুপ হয়ে ওঠেন বাঁকুড়ার ট্রেনে নিজের জীবিকার তাগিদে একজন সাধারণ মানুষ থেকে কর্ম-শিল্পী হয়ে ওঠা আমাদের সমাজের চোখের অনাহুত বিবেক গ্লানি নিয়ে ভূগোলের এম এসসি, বি এড সুপ্রিয়া পাল বৃষ্টি…! মঞ্চে উপবিষ্ট সকল মানুষ অহংকারে তাদের দেশের এক কৃতি মানুষ কর্ণেল আবীর ঘোষকে অভিবাদন করে অবচেতন ভাবেই স্যালুট করে জানিয়ে দেয় যে যথাযোগ্য সন্মানে কখনই বাংলার সাহিত্য কর্মীরা কৃপণ নয়… নব ধারায় আগামী ভারতকে তুলে ধরতে কণ্যা স্নেহে মাতৃ দৃষ্টিতে ভালোবাসা আর আশির্বাদের ছবিতে ফুটে ওঠে ন্যাশানাল গেমসে চারটি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত সায়ন্তনী সাহা মণ্ডল’…!

কলকাতার কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট হলের সভাগৃহে চোখ সাহিত্য পত্রিকার এই অনুষ্ঠানে অসাধারণ সঞ্চালনা করেন প্রবীণ শিক্ষক শ্রী দেবাশিস পাল মহাশয় এবং শ্রীমতী স্বাগতাপাল মহাশয়া…।
“চোখ সাহিত্য পরিবার” এর এডমিল শ্রীমতী মৌমিতা চ্যাটার্জী মহাশয়া এবং শ্রী পঙ্কজ দত্ত মহাশয়ের আন্তরিক পরিচালনায়, পত্রিকার সম্পাদক শ্রী রজত পুরকায়স্থ মহাশয়ের অসাধারণ আথিতেয়তায় মঞ্চে
সম্মান জানানো হয় এই সময়ের প্রতিভাবান একঝাঁক কবি সাহিত্যিককে..প্রদান করা হয় সম্মাননা স্বারক ও সনদ পত্র… ।
মঞ্চে সম্মান জানানো হয় ন্যাশানাল গেমসে চারটি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত সায়ন্তনী সাহা মণ্ডল কে…! নাট্যকার বিশ্বজিৎ পুরকায়স্থ স্মৃতি সাহিত্য সম্মান প্রদান করা হয় কবি শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল মহাশয়, কবি মধুছন্দা গাঙ্গুলী মহাশয়া, কবি সজল পোদ্দার মহাশয়কে। চোখ সাহিত্য সম্মান -২০২২ প্রদান করা হয় কবি বৃন্দাবন দাস মহাশয়, কবি অসীমবদাস মহাশয়, কবি মহাদেব নস্কর মহাশয়কে…। সেরা পাঠক-২০২২ প্রদান করা হয় অশোক রায় মহাশয়কে…। বীরাঙ্গনা সম্মান -২০২২ প্রদান করা হয় সুপ্রিয়া পাল বৃষ্টি মহাশয়াকে.. ।
অনুষ্ঠানে আরও যে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে, প্রাত্যহিক কবিতা পাঠের আসর এর শিল্পী কবি সুনীল বণিক মহাশয়, শ্রদ্ধেয়া মাধুরী শর্মা মাহাশয়া এবং বর্ণালী মিস্ত্রী মাহাশয়াকে..।

বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে মোড়ক উন্মোচন করা হয় কবি রজত পুরকায়স্থ সম্পাদিত চোখ সাহিত্য পত্রিকার পূজো সংখ্যা ও চোখ কাব্য সংকলনের..। এছাড়াও প্রকাশ করা হয় সাতটি একক গ্রন্থ..যথাক্রমে, কবি কৃষ্ণা গুহ’র “নির্বাচিত কবিতা”, কবি বিকাশ গুঁইয়ের “প্রেম ও প্রকৃতি”, কবি সিদ্ধার্থ সেন এবং ডাক্তার লিপিকা সেনের “রং ও তুলি”, কবি কৃষ্ণগোপাল ঘোষের “প্রথম প্রেম”, কবি ড: শিপ্রা মুখোপাধ্যায় হালদারের “পূর্বরাগের প্রণয়লিপি”, বিষ্ময় বালক দেভাংশ চ্যাটার্জির “A Tide Of Tales” এবং রজত পুরকায়স্থের “রাজার কলম হোক ক্রীতদাস”…।

মেধা মননশীলতায় বাংলা সাহিত্য সবসময় দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রধান পঙক্তির সমার্থক..সেই অর্থে আধুনিক সাহিত্যে সত্য এবং সুন্দরকে পাশাপাশি হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যেতে চোখ সাহিত্য পরিবারের মতন এমন ফেরিওয়ালা চাই যাদের হাত ধরে বাংলা সাহিত্য এগিয়ে যাবে তার সঠিক ভবিষ্যতের দিকে…!
জয় হোক শুদ্ধ সাহিত্যের..জয় হোক মানুষের…!

সৌগত রাণা কবিয়াল—
— কবি সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক

Share This