Categories
প্রবন্ধ

সুবিনয় রায়, রবীন্দ্রনাথের গানের এক অনন্য শিল্পী : একটি বিশেষ পর্যালোচনা।

সুবিনয় রায় ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী, যিনি কলকাতার ব্রাহ্ম পরিবারের আজন্ম ব্রহ্ম সঙ্গীত বর্ণে বেড়ে ওঠেন।

 

সুবিনয় রায় ৮ নভেম্বর, ১৯২১ সালে কলকাতা, ব্রিটিশ ভারতের জন্মগ্রহণ করেন।  পিতা বিমলাংশুপ্রকাশ রায় পেশায় রসায়নবিদ ও সাহিত্যিক ছিলেন।  বার্ড কোম্পানিতে চাকরি করেন।  মা সুখময়ী ছিলেন মেডিক্যাল কলেজের মেয়েদের হোস্টেলের সুপারিনটেনডেন্ট, পরে শান্তিনিকেতনের মেয়েদের হোস্টেল ‘শ্রীভান’-এর সুপার হন।  তিনি সুকুমার রায়ের “ননসেন্স ক্লাব” এর সদস্য ছিলেন।  মা সুখময়ী দেবী নিয়মিত সঙ্গীত চর্চা করতেন।  সুবিনয় রায় কলকাতার মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে সিটি কলেজে ভর্তি হন।  বিএসসি পাস করার পর, সঙ্গীতের প্রতি অদম্য আকর্ষণের কারণে তিনি ১৯৩৭-৩৮ সালের দিকে শান্তিনিকেতনে চলে আসেন।

 

 

 

কর্মজীবন—-

 

বিএসসি পাস করার পর তিনি কিছুকাল শান্তিনিকেতনের সঙ্গীত ভবনে শিক্ষকতা করেন।  তিনি কলকাতার “দক্ষিণী” সঙ্গীত একাডেমীতে শুরু থেকেই শিক্ষক ছিলেন।  এর মধ্যে তিনি শান্তিনিকেতন ছেড়ে লন্ডনে গিয়েছিলেন চার্টার্ড লাইব্রেরিয়ানশিপে ডিপ্লোমা নিতে।  দেশে ফিরে পিতৃবন্ধু প্রশান্ত চন্দ্র মহলনবীশ প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে দীর্ঘদিন কাজ করেন।  এর মধ্যে তিনি অনাদিকুমার দস্তিদারের কাছে নিয়মিত রবীন্দ্রসংগীত শিখেছিলেন এবং নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘গীতাভিথি’।  কিছুদিন তিনি ‘গান্ধবী’ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।  তাঁর ছাত্রদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক।  মাসিক পঞ্চাশ টাকা বেতনে দীর্ঘকাল তাঁর কাছে রবীন্দ্রসংগীত শিখে তাঁকে ‘গুরুদেব’ বলে সম্বোধন করতেন।  সুবিনয় রায় চল্লিশের দশকে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গান গাইতে শুরু করলেও দশ বছর সেখানে যাননি।  পরে, শুভ, গুঠাকুর্তার প্রচেষ্টায় রেডিওতে অডিশন না নিয়েই উচ্চ গ্রেডের শিল্পী হিসেবে গান গাইতে শুরু করেন।  ১৯৪৫ সালে, কলম্বিয়া রেকর্ডস তার প্রথম গানের রেকর্ড প্রকাশ করে – “এই করেছ ভালো নিথুর হে” এবং “তুম ডাক দিয়েছ কোন সভা”।  সুবিনয় রায় খুব হাসিখুশি মানুষ ছিলেন এবং আড্ডা দিতে পছন্দ করতেন।  ‘বুধবার’-এও তিনি ছিলেন সভ্য।
এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

রবীন্দ্র সংগীতের উপর সুবিনয় রায়ের লেখা গ্রন্থ “রবীন্দ্রসংগীত সাধনা” ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থে তিনি প্রাঞ্জলভাবে রবীন্দ্রসঙ্গীতের গায়কি, স্বরলিপি, স্বরসাধনা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

 

পারিবারিক জীবন—-

 

সুবিনয় রায় শিশুসাহিত্যিক অমরেন্দ্রনাথ দত্তের কন্যা ইন্দিরাকে বিবাহ করেন। তাদের দুই পুত্র- সুরজিৎ ও সুরঞ্জন। সুরঞ্জন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী।

 

সম্মাননা—

 

সুবিনয় রায় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশিকোত্তম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমি র আলাউদ্দিন পুরস্কারসহ বহু পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাঁকে “রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য” উপাধিতে ভূষিত করে।

 

জীবনাবসান—

 

সুবিনয় রায় ৯ জানুয়ারী, ২০০৪ তারিখে কলকাতার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

 

 

 

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *