ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম ও লড়াই, যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত সৃঙ্খল মুক্ত হতে পেরেছভাপেরেছিল। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে রাধারমণ মিত্র( ছিলেন একজন অন্যতম বীর ও নির্ভীক বিপ্লবী।রাধারমণ মিত্রভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।
রাধারমণ মিত্র একজন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী এবং সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার বিজয়ী লেখক।
১৯২৯ সালের মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার পথপ্রদর্শকদের একজন, দেশের মানুষের মধ্যে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের প্রচারে একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। তিনি একসময় মহাত্মা গান্ধীর ‘ডান হাতের মানুষ’ ছিলেন।
রাধারমণ মিত্র ১৮৯৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতার শ্যামবাজারে একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস ছিল বর্ধমান। ১৯১৩ সালে হিন্দু স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯১৫ সালে স্বর্ণপদক সহ I.A. সেন্ট পলস কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
এমএ পড়ার সময় অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন এবং সহ বিপ্লবী বঙ্কিম মুখোপাধ্যায়ের সাথে উত্তর প্রদেশে চলে যান। গান্ধীজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি উত্তরপ্রদেশের এটাওয়াতে সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। এ সময় তাকে গ্রেফতার করে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের নৈনি জেলে বন্দী করা হয়। এক বছর কারাগারে থাকার পর তিনি সবরমতী আশ্রমে যান এবং মহাত্মা গান্ধীর সাথে টানা তিন বছর কাজ করেন। গান্ধীবাদী আদর্শের অনুসারী হলেও তার সাথে মতপার্থক্যের কারণে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন এবং একটি কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি নেন। শিক্ষকতা ছাড়াও রাধারমণ মিত্র শ্রমিক আন্দোলন, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে বহুবার নেতা ছিলেন। মার্ক্সবাদী দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হলেও তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন না। ১৯২৯ সালে, তিনি আবার মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হন। এলাহাবাদ হাইকোর্ট মুক্তি দিয়েছে। ১৯৪৩-৪৪ সালের মধ্যে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। যদিও পরবর্তীতে মতপার্থক্যের কারণে তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে এসেছিলেন, তার পাণ্ডিত্য, প্রজ্ঞা এবং বামপন্থী রাজনীতি ও আদর্শের জ্ঞান তাকে সর্বজনীনভাবে সম্মানিত করেছিল। এছাড়াও তিনি ইন্দো-সোভিয়েত ফ্রেন্ডলি সোসাইটির সদস্য ছিলেন।
কলকাতার ইতিহাস নিয়ে তার প্রবল আগ্রহ ছিল। একসময় সে কারণে কলকাতা শহরের পথে পথে একা ঘুরে বেড়িয়ে তথ্য সংগ্রহ ও লেখালিখির কাজ করেছেন রাধারমণ। তার কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয় তন্মধ্যে কলিকাতা দর্পণ ১৯৮১ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেছিল। তার অন্যান্য বইগুলি হল: বাংলার তিন মনীষী, কলিকাতায় বিদ্যাসাগর, ডেভিড হেয়ার: হিজ লাইফ এন্ড ওয়ার্কস, রাধারমণ মিত্রের প্রবন্ধ।
৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২ সালে তিনি প্রয়াত হন।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।