Categories
গল্প

শেষ চিঠির অপেক্ষা।

একটি দীর্ঘ, আবেগঘন ও রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প লিখছি। গল্পে থাকবে সম্পর্কের গভীরতা, আবেগ, দ্বন্দ্ব, ভুল বোঝাবুঝি, বিচ্ছেদ এবং পুনর্মিলনের স্বাদ—যাতে এটি পাঠককে শেষ পর্যন্ত টেনে রাখে।


❤️ “শেষ চিঠির অপেক্ষা”

(একটি ৫০০০ শব্দের ভালোবাসার গল্প)


অধ্যায় ১: প্রথম দেখা

শীতের এক বিকেল। কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের ভিড় জমজমাট রাস্তা।
অর্পিতা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে ফিরছিল। বইয়ের গন্ধ, গলির চায়ের দোকান, আর পাশের বইয়ের দোকানের ডাকাডাকি—সব মিলে এক অন্যরকম পরিবেশ।

হঠাৎ করেই এক ধাক্কা। তার হাত থেকে বইগুলো মাটিতে ছড়িয়ে পড়ল।
“সরি, আমি দেখিনি!”—একটা কণ্ঠস্বর।

অর্পিতা তাকিয়ে দেখল, লম্বা, হাসিখুশি এক যুবক। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, গায়ে সোয়েটার।
সে তাড়াতাড়ি বইগুলো তুলে দিয়ে বলল—
“আমি সত্যিই খুব দুঃখিত। আমি সমীর।”

অর্পিতা কিছুটা রেগে ছিল, কিন্তু ছেলেটির আন্তরিক হাসি দেখে রাগ গলে গেল।

সেদিনের দেখা যেন তাদের জীবনের গল্পের প্রথম পৃষ্ঠা।


অধ্যায় ২: বন্ধুত্বের শুরু

সমীর ও অর্পিতার দেখা হতে লাগল বারবার। কখনও কলেজ স্ট্রিটে, কখনও কফি হাউসে।
তাদের আলোচনার বিষয় বই, সিনেমা, সঙ্গীত, স্বপ্ন।

একদিন সমীর হেসে বলল—
“তুমি জানো, তুমি একদম সত্যজিৎ রায়ের ছবির নায়িকা মতো।”
অর্পিতা লজ্জায় লাল হয়ে গেল।

ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব প্রেমে পরিণত হল। তারা একসাথে অনেক স্বপ্ন দেখতে শুরু করল—ছোট্ট একটা বাড়ি, অনেক বই, রবিবার সকালে একসাথে চা খাওয়া।


অধ্যায় ৩: প্রেমের প্রথম স্বাদ

ফেব্রুয়ারির এক বিকেলে গঙ্গার ধারে তারা দুজনে হাঁটছিল।
হাওয়া ঠাণ্ডা, সূর্যাস্তের আলো গঙ্গার জলে লেগে সোনালি রঙ ছড়িয়ে দিচ্ছে।

সমীর হঠাৎ অর্পিতার হাত ধরল।
“অর্পিতা, আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

অর্পিতার চোখে জল চলে এলো।
“আমিও সমীর। আমি অনেকদিন ধরে বলতে চেয়েছিলাম।”

সেই মুহূর্তে মনে হল, পৃথিবী থমকে গেছে। শুধু তারা দুজন, আর চারপাশে গঙ্গার ঢেউ।


অধ্যায় ৪: জীবনের বাস্তবতা

কিন্তু ভালোবাসা যত সুন্দর, জীবনের বাস্তবতা তত কঠিন।
সমীর মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অর্পিতার বাবা-মা চায় সে বিদেশে উচ্চশিক্ষা করুক।

অর্পিতা দ্বিধায় পড়ল—
সে কি প্রেম বেছে নেবে, নাকি স্বপ্ন?
সে কি সমীরকে অপেক্ষা করাবে, নাকি একসাথে ভবিষ্যত গড়বে?


অধ্যায় ৫: দূরত্বের সূচনা

অর্পিতা বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
এয়ারপোর্টে বিদায়ের সময় সমীর চিঠি দিয়ে বলল—
“যখন একা লাগবে, পড়বে। আমি অপেক্ষা করব।”

অর্পিতা কান্না আটকাতে পারল না।
বিমানের জানালা দিয়ে সমীরকে ছোট হতে হতে হারিয়ে যেতে দেখল।


অধ্যায় ৬: অপেক্ষার দিনগুলো

সমীর প্রতিদিন অর্পিতাকে চিঠি লিখত।
প্রথম কয়েক মাস অর্পিতা নিয়মিত উত্তর দিত।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে উত্তর কমতে লাগল।

অর্পিতা নতুন শহর, নতুন জীবন, নতুন বন্ধুদের মাঝে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
সমীর একা শহরে তার চিঠির অপেক্ষা করত।


অধ্যায় ৭: ভুল বোঝাবুঝি

একদিন সমীর শুনল অর্পিতা একজন সহপাঠীর সঙ্গে বেশি সময় কাটাচ্ছে।
তার মনে সন্দেহ দানা বাঁধল।

সে একটি রাগী চিঠি লিখে ফেলল—
“তুমি যদি আমাকে ভুলে গিয়ে থাকো, তাহলে বলো। আমি তোমাকে বিরক্ত করব না।”

অর্পিতা চিঠি পেয়ে কষ্ট পেল।
সে কিছুদিন চুপ করে রইল। এই নীরবতা তাদের দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দিল।


অধ্যায় ৮: বিচ্ছেদ

অবশেষে অর্পিতা লিখল—
“সমীর, হয়তো আমাদের সময় শেষ। আমি এখন পড়াশোনায় ব্যস্ত। তুমি তোমার জীবনে এগিয়ে যাও।”

সমীর ভেঙে পড়ল। তার পৃথিবী যেন থেমে গেল।
সে লেখা বন্ধ করে দিল।


অধ্যায় ৯: সময়ের নিরাময়

বছর কেটে গেল।
সমীর চাকরি পেল, শহর বদলাল।
অর্পিতা বিদেশে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরল।

একদিন কলেজ স্ট্রিটের সেই পুরোনো বইয়ের দোকানে তারা হঠাৎ মুখোমুখি হল।
চোখে চোখ পড়তেই যেন পুরোনো সব স্মৃতি ফিরে এল।


অধ্যায় ১০: শেষ চিঠির অপেক্ষা

অর্পিতা ধীরে ধীরে বলল—
“সমীর, আমি তোমার লেখা চিঠিগুলো সব রেখেছি।”
সমীর তাকাল—”তাহলে তুমি কখনও আমাকে ভুলোনি?”
অর্পিতা চোখের জল মুছল—
“না সমীর। আমি শুধু সময় চেয়েছিলাম। আজ আমি প্রস্তুত। তুমি কি এখনও আমার জন্য অপেক্ষা করছ?”

সমীর মুচকি হাসল—
“আমি আজও সেই শেষ চিঠির অপেক্ষায় ছিলাম।”

তারা আবার একসাথে হাঁটল।
গঙ্গার ধারে সূর্যাস্তের আলোতে যেন তাদের প্রেম আবার নতুন করে জন্ম নিল।


সমাপ্তি

গল্পটি আমাদের শেখায়—ভালোবাসা সময়ের পরীক্ষায় টিকে থাকতে পারে, যদি দুজনেই একে অপরকে সময় দেয় এবং অপেক্ষা করতে জানে।

 

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *