Categories
প্রবন্ধ

ইতিহাস, শিল্প আর উৎসব – বিষ্ণুপুরের পুজো এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।

বাঁকুড়া জেলার ছোট্ট শহর বিষ্ণুপুর পশ্চিমবঙ্গের এক ঐতিহাসিক রত্ন। মল্লভূমের প্রাচীন রাজধানী হিসেবে বিষ্ণুপুর আজও বয়ে বেড়াচ্ছে মল্ল রাজাদের ঐতিহ্য। টেরাকোটা মন্দির, বালুচরি শাড়ি, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত – সবকিছু মিলিয়ে বিষ্ণুপুর এক অনন্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। দুর্গাপুজোর সময় এ শহর পায় নতুন প্রাণ, মন্দিরের শহর যেন হয়ে ওঠে উৎসবের শহর।


🏺 টেরাকোটা মন্দির – শিল্প ও ইতিহাসের ধনভান্ডার

বিষ্ণুপুরে এলে সবার আগে চোখে পড়ে লাল মাটির টেরাকোটা মন্দির। দুর্গাপুজোর সময়ে মন্দিরগুলো আলোয় সাজানো হয়, পূজোর আয়োজনও হয় অনেক জায়গায়।

  • রাসমঞ্চ: বিষ্ণুপুরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। পূজোর সময় এখানে আলো ঝলমলে হয়ে ওঠে, মেলার আয়োজন হয়।
  • মদনমোহন, শ্যামরায়, জোরবাংলা মন্দির: টেরাকোটা খোদাই করা দেয়ালগুলো পূজোর সময় বিশেষভাবে সাজানো হয়।

🪔 ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো

বিষ্ণুপুরের দুর্গাপুজো এখনো বহন করছে মল্লরাজাদের যুগের ঐতিহ্য।

  • অনেক বাড়ির রাজবাড়ির পুজো আজও পুরনো নিয়মে হয় – ঢাকের শব্দ, ধুনুচি নাচ, শঙ্খধ্বনিতে এক অপূর্ব আবহ তৈরি হয়।
  • গ্রামের লোকজন থেকে পর্যটক – সবাই একসাথে অংশ নেয় এই আনন্দে।

🎶 সংস্কৃতির আসর

বিষ্ণুপুরের দুর্গাপুজো মানেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

  • বিষ্ণুপুর ঘরানার শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়।
  • বাউল গান, লোকনৃত্য, নাটক ও কবিগানের আসর বসে।

🛍️ হস্তশিল্প ও মেলা

পুজোর সময়ে বিষ্ণুপুরে বসে হস্তশিল্পের মেলা।

  • বালুচরি শাড়ি, ডোকরা শিল্প, টেরাকোটা ঘর সাজানোর সামগ্রী – সবই পাওয়া যায়।
  • স্থানীয় বাজারে পিঠে-পায়েস, মাটির খেলনা ও মিষ্টির দোকান ভিড়ে ঠাসা থাকে।

🌳 প্রকৃতির কোলে শান্ত পরিবেশ

বিষ্ণুপুর শহরের চারপাশে সবুজ ক্ষেত, পুকুর আর ছোট ছোট গ্রাম। পূজোর দিনে এখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্যান্ডেল হপিং করে ক্লান্ত হলে প্রকৃতির কোলে বসে আরাম করা যায়।


🛣️ কিভাবে পৌঁছাবেন

  • ট্রেন: হাওড়া থেকে বিষ্ণুপুরে সরাসরি ট্রেন পাওয়া যায় (রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস, অরন্যক এক্সপ্রেস ইত্যাদি)।
  • রাস্তায়: কলকাতা থেকে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টার ড্রাইভ।

🍲 খাওয়া-দাওয়া

পুজোর সময় বিষ্ণুপুরে খাওয়ার বিশেষ আয়োজন থাকে।

  • ছানা দিয়ে তৈরি মিষ্টি যেমন মকড়চুরি, গোপালভোগ – খুব বিখ্যাত।
  • হোটেল ও ঢাবায় ভাত-ডাল-সিদ্ধ, মাছের ঝোল ও মাটন কষার স্বাদ অন্যরকম লাগে।

উপসংহার–

বিষ্ণুপুরে দুর্গাপুজো মানেই একসাথে ইতিহাস, শিল্প, সংস্কৃতি আর উৎসবের আনন্দ। টেরাকোটা মন্দিরের সৌন্দর্য আর রাজবাড়ির পুজোর ঐতিহ্য মিলিয়ে বিষ্ণুপুর হয়ে ওঠে এক অনন্য গন্তব্য। যারা পুজোর সময় শান্ত কিন্তু ঐতিহ্যমণ্ডিত ভ্রমণ চান, তাদের জন্য বিষ্ণুপুর হতে পারে এক অসাধারণ পছন্দ।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *