গুরু চাঁদ ঠাকুর একজন বাঙালি সমাজ সংস্কারক এবং শিক্ষাবিদ ছিলেন। তিনি মতুয়া সম্প্রদায়ের উন্নয়ন, দলিত হিন্দুদের শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের পথিকৃৎ। তৎকালীন ব্রাহ্মণদের দ্বারা চন্ডাল বা নিম্নবর্ণের শিক্ষার অধিকার থেকে অত্যাচার ও অস্বীকৃতি সহ সমস্ত বাধা দূর করে তিনি নিজের নাম রাখেন “নমশুদ্র”। চন্ডাল জাতি চন্ডাল বংশের উত্তরসূরি। ৮৩১ খ্রিস্টাব্দে নান্নুক দ্বারা প্রতিষ্ঠিত চন্ডাল রাজবংশ। চন্ডাল রাজবংশের রাজত্বকাল (৮৩১-১২১৫) খ্রি.।
চন্ডালদের রাজ্যসীমা বর্তমানে গুজরাত, উত্তর প্রদেশ ,মধ্যপ্রদেশ ,বাঙ্গাল (বাংলাদেশ ,পশ্চিমবঙ্গ)পুরোটাই তাদের শাসন স্থল । রাজশক্তি পতনের পর তাদেরকে নিম্নমানের কাজ কর্মে বাধ্য করা হয় এবং শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হয়।
বর্তমানে তারা নমঃশূদ্র নামে পরিচিত।
গুরু চাঁদ বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার সাফলিডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ১৩ মার্চ ১৮৪৬। পিতা ছিলেন মতুয়া আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হরিচাঁদ ঠাকুর। সামাজিক বৈষম্যের কারণে গুরু চাঁদ যখন স্কুলে ভর্তি হতে পারেননি, তখন তার বাবা হরিচাঁদ তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। তিনি ভবিষ্যতে শিক্ষার উন্নয়নের পরামর্শ দেন। পিতার মৃত্যুর পর গুরু চাঁদ এই সামাজিক আন্দোলনের দায়িত্ব নেন। চণ্ডাল জাত বা চণ্ডাল বংশকে গালি দেওয়া। চণ্ডাল অভিশাপ নয় চণ্ডাল বংশ। চন্ডাল রাজবংশ ৮৩১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, নান্নুক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। চন্ডাল রাজবংশ ৮৩১ থেকে ১২১৫ সাল পর্যন্ত শাসন করেছিল। বর্তমানে তাদের রাজধানী বুন্দেলখন্ড খাজুরাহ। তাদের স্থাপত্যটি সোমনাথ মন্দিরের জন্য উল্লেখযোগ্য, রাজ্যের সীমানা গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বাংলা, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ।
অনুন্নত শ্রেণির শিক্ষাবিস্তার ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়ননের ওপর বিশেষভাবে জোর দেন গুরুচাঁদ ঠাকুর। সামাজিক ও বর্ণহিন্দুর বাধা অতিক্রম করে ১৮৮০ সালে ওড়াকান্দিতে প্রথম বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তার উৎসাহে ১৮ বছরের মধ্যে এটি প্রাথমিক স্তর হতে উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নিত হয়। অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ ও শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে গণআন্দোলনের সূচনা করেছিলেন তিনি।
৯০ বছরের জীবনে তিনি বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় ৩৯৫২টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮১ সালে খুলনার দত্তডাঙ্গায় তাঁর উদ্যোগে ও সভাপতিত্বে প্রথম নমশূদ্র মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তিনি চন্ডাল জাতিকে নমশূদ্র জাতিতে রূপান্তরের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তাঁর প্রচেষ্টায়, একটি প্রতিনিধি দল ১৯০৭ সালে বাংলা ও আসামের গভর্নর জেনারেলের কাছে একটি রিপোর্ট পেশ করে। যার ফলস্বরূপ ১৯১১ সালের আদমশুমারিতে নমশূদ্র নামটি পরিচিত হয়।
তাঁর মৃত্যুর পর এই আন্দোলনের দায়িত্ব নেন রাজনীতিবিদ ও সাংসদ প্রমথরঞ্জন ঠাকুর। দেশভাগের পর বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ঠাকুরনগরে মতুয়া মহাসংঘের প্রধান কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি ধাম হিন্দু ধর্মে মহাতীর্থে পরিণত হয়েছে।
প্রতি বছর চৈত্র মাসে মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিনে লক্ষাধিক মতুয়া ভক্ত বারুণীস্নানে আসেন। একই তারিখে, লক্ষাধিক মতুয়া ভক্তরা পশ্চিমবঙ্গের ঠাকুরনগর মতুয়া মহামেলা এবং বারুণীস্নানে আসেন। ঠাকুরনগরের শ্রীধাম ঠাকুরনগর ঠাকুরনগর রেলওয়ে স্টেশন থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।