Categories
প্রবন্ধ

বাংলার নক্সীকাঁথা..শিল্পের গায়ে মমতার স্পর্শ : বানীব্রত।

“আজও এই গাঁও অঝরে চাহিয়া ওই গাঁওটির পানে
নিরবে বসিয়া কোন কথা যেন কহিতেছে কানেকানে।”
কবি জসিমউদ্দীনের “নক্সীকাথার মাঠ” কবিতার দুটো লাইন দিয়ে শুরু করলাম। এখানে কবি রুপাই আর সাজুর প্রেমগাঁথাকে ফুটিয়ে তুলেছেন। আর এই প্রেম কাহিনির নেপথ্যে ছিলো নক্সীকাঁথা। রুপাই তার প্রেমিক সাজুর জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় তার মনের অবস্থাকে ফুটিয়ে তুলেছিল নক্সীকাঁথায়। যার শেষ পরিনিতিতে কবরের উপরে বিছানো ছিলো ওই নক্সীকাঁথাটা। আর এই নক্সীকাঁথার ইতিহাস অনেকেরই অজানা।
পুরাতন পাতলা সুতির কাপড়ের উপর বিভিন্ন রঙের সুতোয় ছোট ছোট ফোঁড়ের সেলাইয়ের ছোঁয়ায় তৈরী করা হতো কাঁথা। কাঁথাশিল্পীদের হাতের সুঁচসুতোর ছোঁয়ায় বিভিন্ন নক্সায় সেজে উঠেছিল সেই নক্সীকাঁথা। পাখি,  ফুল, গাছপালার চিত্রও দেখা দিত এই কাঁথায়। শিল্পীরা মনের মাধুরি মিশিয়ে নিজের মনের ভাবকে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলতো কাঁথার উপর। এই নক্সীকাঁথা ভারত ও বাংলাদেশের বাজারে সমাদৃত ছিলো।  এই নক্সীকাঁথা ছিল দুইদেশের লোকশিল্পের অন্তর্গত। শতশত বছর পুর্বে এই কাঁথার বুৎপত্তি হয়েছিল। শোনা যায় পাঁচশবছর আগে কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত শ্রী শ্রী চৈতন্য চরিতামৃত বইয়ে সর্বপ্রথম কাঁথার কথা পাওয়া যায়।
পুরোনো বা  ছেঁড়া কাপড়ের পাড় থেকে লাল নীল সবুজ হলুদ নানা রঙের সুতো বের করতেন এই শিল্পীরা। পায়ের বৃধাঙ্গুলিতে পাড়কে জড়িয়ে  নিয়ে আলাদা আলাদা রঙের সুতো বের করে কাগজের গোলা বা কাঠের টুকরোর মধ্যে সেই সুতো গুলোকে এক জায়গায় রাখা হতো। পরবর্তীতে সেই সুতোতেই সেজে উঠতো নকশি কাঁথা।
বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, রাজশাহী, ফরিদপুর, যশোর জেলায় ছিল নকশী কাঁথার জন্য বিখ্যাত। তাছাড়া সমস্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এই কাঁথা তৈরি হতো। ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ ২০০৮ সালে নকশি কাঁথার জন্য ভৌগোলিক স্বীকৃতি পায়।
কাঁথা শব্দটির উৎস সঠিকভাবে জানা না গেলেও মনে করা হয় এই শব্দটি “খেতা” থেকে এসেছে। নিয়াজ জামানের মতে সংস্কৃতি শব্দ “কথা” হতে কাঁথা শব্দের উৎপত্তি হয়েছে, “কথা” শব্দটির বাংলা শব্দ তেনা বা কাপড়ের টুকরো আর এই তেনা বা কাপড়ের টুকরোর উপরে অলস দুপুরে বাড়ির দাওয়ায় বা গাছের তলার ছাওয়াতে বসে মহিলারা তাদের মনের ভাবকে তুলে ধরতেন। সূক্ষাতিসূক্ষ কাজের এই কাঁথা বানাতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগে যেত। এই কাঁথার বৈশিষ্ট হলো, এতে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে কোন নকশা করা হয় না। যিনি এই কাঁথাটি তৈরি করেন তিনি তার মত করে মনের মাধুরী মিশিয়ে নকশা আঁকেন। এই কাঁথার মধ্যে চলমান সেলাই দিয়ে মূলত দেশীয় কাঁথা বানানো হলেও নকশি বা পায়ের তোলা এই দুই নামের সেলাই ও ব্যবহৃত হয় এই কাঁথাতে। তাছাড়া ঢেউ খেলানো সেলাইয়ে তৈরি কাঁথাকে লহরী কাঁথা বলা হয়। যা রাজশাহীতে খুবই জনপ্রিয়। বর্তমানে জামালপুরের সদর শহর পুরো জেলায় প্রায় ২৫ হাজার দরিদ্র নারী ও ৫০ হাজার পুরুষ এই পেশার সঙ্গে জড়িত আছেন। এই শিল্পে স্বাবলম্বি হয়েছেন অনেক দরিদ্র নারী। সংসারের অন্যান্য কাজের সাথে এই নারীরা নকশি কাঁথা সহ নক্সি সামগ্রী বানান শুরু করেন। জামালপুরের নকশি কাঁথা দেশে বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে। সমস্যা উজির অভাবে ন্যায্য শ্রমের মূল্য থেকে বঞ্চিত এই শিল্পীরা। এখানকার শিল্পীদের খুব সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। এখানকার সহনীয় উদ্যোগতারা যারা এই শিল্পের সাথে ওতপ্রত ভাবে জড়িয়ে আছেন তাদের থেকে জানা যায় একটি নকশি কাঁথা তৈরি করতে খরচ হয় ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা। পাইকারি ব্যবসায়ীরা এগুলো কিনে নেন ২ হাজার টাকায়। বড় বড় বিপনিতে এইগুলো বিক্রি হয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায়। এই ব্যাবসার সাথে যারা যুক্ত আছেন এর থেকেই বোঝা যায় তারা একটি কাঁথা বিক্রি করে কত টাকা মুনাফা পান। ভাবলে কষ্ট লাগে যারা তাদের শ্রম দিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে এই সুক্ষাতিসূক্ষ কাজ গুলি করছেন তারা হচ্ছেন বঞ্চিত। শিল্পীরা তাদের দাম পাচ্ছেন না আর তাদের নিষ্ঠার সৃস্টি দিকে দিকে কত সন্মানের সাথে শ্রেষ্ঠত্বের আসন লাভ করছে।

কলমে – বানীব্রত।

তথ্যসূত্র – গুগল

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

নারী নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ মুক্তা সালভে ::: সৌরভকুমার ভূঞ্যা।।।

অনেক বিশ্বাস মতে ঈশ্বর স্রষ্টা। তিনি এই জগত সৃষ্টি করেছেন। সেই হিসেবে নারী পুরুষ উভয়ে তার সৃষ্টি। তাই যদি সত্য হয় তাহলে নারী পুরুষ উভয়ে সমান। সমান অধিকার তাদের প্রাপ্য। কিন্তু একটা দীর্ঘ সময় জুড়ে রয়েছে নারী বঞ্চনার ইতিহাস। “সমাজে পুরুষেরা কেন নারীদের দুর্বল ভাবে? কেন তাদের সমান অধিকার দেয় না?” আজ থেকে প্রায় দেড়শো বছর আগে নিজের লেখা বই “স্ত্রী-পুরুষ তুলনা”-তে এমন জোরালো প্রশ্ন রেখেছিলেন নারী নবজাগরনের অন্যতম পথিকৃৎ তারাবাই সিন্ধে। মনে করা হয় তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি নারীবাদী বই লিখেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, “যে পুরুষ নারীদের শিক্ষার আলো দিতে পারে না, তাদের অধিকার দিতে পারে না, বিধবাদের দুর্দশা থেকে মুক্তি দিতে পারে না, সে পুরুষ নিজেকে শ্রেষ্ঠ কিংবা বলবান ভাবে কী করে?” গোটা বই জুড়ে এভাবে শানিত কলমে প্রতিবাদ করেছেন তিনি। এককথায় তার প্রতিবাদ ছিল পুরুষদের বিরুদ্ধে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে।

তারাবাই সিন্ধের মতো এরকমই প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন আরও এক নারী। তবে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে নয়, তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন একটা সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। আরও পরিস্কার করে বললে, একজন দলিত নারী হয়েও বর্ণশ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, “যদি বেদ কেবলমাত্র ব্রাহ্মণদের হয় (এমনটা দাবি করত ব্রাহ্মণেরা), তাহলে আমরা বেদ অনুসারে চলতে বাধ্য নই।” ব্রাহ্মণরা বলতেন শুদ্রদের বেদ পড়া দূরে থাক, বেদের দিকে তাকানোটাও ছিল পাপ। সে কথা উল্লেখ করে মুক্তা বলেছিলেন, “বেদ-এর দিকে তাকালেই যদি আমাদের পাপ হয়, তাহলে বেদ-এর নীতি নিয়ম মান্য করা আমাদের বোকামি নয় কি?” ব্রাহ্মণ আধিপত্য সমাজ ব্যবস্থার দিকে এরকম কঠোর প্রশ্ন ছুঁরে দিয়েছিলেন সতেরো বছরের দলিত কিশোরী মুক্তা সালভে। মনে করা হয়ে থাকে তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা দলিত লেখিকা। মহারাষ্ট্রের খ্যাতনামা বিপ্লবী ক্রান্তিবীর লাহুজির নাতনি তিনি।

উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ। মহারাষ্ট্রে তখন পেশোয়ার শাসন। জাতপাত ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায়, সমাজের মাথা ছিলেন বর্ণশ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণেরা। আর সবচেয়ে নিচে ছিল শূদ্র। মুক্তা সালভে ছিলে মাং সম্প্রদায়ের মহিলা। মাং এবং মাহার সম্প্রদায় ছিল দলিত (শূদ্র)। সমাজে দলিতদের স্থান ছিল অবর্ণনীয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ধর্মাচরণ প্রভৃতি কোনোকিছুর অধিকার ছিল না তাদের। মন্দির, স্কুল প্রভৃতির দরজা ছিল তাদের জন্য বন্ধ। তারা ছিল অস্পৃশ্য, অচ্ছুৎ। তাদের স্পর্শ দূরে থাক, উচ্চ বর্ণের লোকেরা তাদের ছায়াও মাড়াত না একসময়। ব্রাহ্মণরা তাদের মানুষ বলে গন্য করত না। গরু-মহিষের থেকেও তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করত। নির্ধারিত কয়েকটি নিম্ন পেশা ছাড়া অন্য কোনো কাজ করার অধিকার ছিল না তাদের। ফলে দারিদ্র্য ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী। এককথায়, নিদারুন অপমান আর বঞ্চনার জীবন কাটাতে বাধ্য হত তারা। কেউ পড়াশোনা করতে চাইলে তার জীবনে নেমে আসত চরম বিপর্যয়। সামান্য সামান্য অপরাধে (হয়তো তা সে অর্থে অপরাধও নয়)তাদের চরম শাস্তি দেওয়া হত। অস্পৃশ্য, অচ্ছুৎ হয়ে অপমান আর অবমাননার জীবন কাটাতে বাধ্য হত তারা। একটা দীর্ঘ সময় অন্ধকারে ডুবেছিল তাদের জীবন। এই অন্ধকারের প্রধান কারণ ছিল শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকা।

দলিতদের নিয়ে যারা আন্দোলন করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মহাত্মা জ্যোতিবারাও ফুলে এবং বি-আর আম্বেদকর। সমাজ সংস্কারক জ্যোতিবারাও বুঝেছিলেন শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে না পারলে দলিতদের এই অবস্থার উন্নতি হওয়া সম্ভব নয়। বিশেষত তিনি জোর দিয়েছিলেন নারীশিক্ষার ওপর। নিজের স্ত্রী সাবিত্রীবাই ফুলেকে তিনি পড়াশোনা করিয়েছিলেন। স্বামীর অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় সাবিত্রীবাই কেবল নিজে শিক্ষিত হননি, নারী সমাজকে শিক্ষার আলোকে আলোকিত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। স্বামী-স্ত্রী মিলে মেয়েদের জন্য স্কুল স্থাপন করেছিলেন। সাবিত্রীবাই হলেন প্রথম ভারতীয় মহিলা শিক্ষক। শুধু তাই নয় প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে তিনি কোনো স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেছেন।

সকল সম্প্রদায়ের মহিলাদের শিক্ষিত করার জন্য ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি জ্যোতিবারাও এবং সাবিত্রীবাই একটি স্কুল স্থাপন করেন। মাত্র ৮ জন মহিলা নিয়ে এই স্কুল শুরু হয়। এই ৮ জন মহিলার মধ্যে ১৪ বছরের মুক্তা সালভে ছিলেন একজন। এখানে তিনি তিন বছর পড়াশোনা করেছেন। বাবা-মায়ের কাছ থেকে মুক্তা জানতে পেরেছিলেন দলিত মানুষদের পূর্বেকার অবর্ণনীয় দুর্দশার কথা। নিজের সময়েও তিনি দেখেছেন দলিতদের বঞ্চনা, অপমান। শিক্ষার আলো তার চোখ খুলে দেয়। মনের অন্ধকার দূর করে। তাকে সাহসী করে তোলে। তৎকালীন সময়ে দাঁড়িয়ে ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস যেখানে মানুষের ছিল না, সেখানে সতেরো বছরের কিশোরী মুক্তা সালভে একেবারে কলম তুলে নেন লিখে ফেলেন একটি প্রবন্ধ, “Mang Maharanchya Dukhavisatha (About the Grief of Mahar and Mangs)” ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ‘Dnyanodaya’ নামক পাক্ষিক পত্রিকায় দুই কিস্তিতে এই প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। প্রথম কিস্তি প্রকাশিত হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় কিস্তি প্রকাশিত হয় ১ মার্চ সংখ্যায়।

পুরো প্রবন্ধে তিনি জোরালো প্রতিবাদ করেছেন সমাজের জাত-পাত, ধর্ম বিভাজন নিয়ে। ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ তোলেন। তাদের জমি দখল করে ব্রাহ্মণরা নিজেদের বসতি স্থাপন করে তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে, এমন জোরালো অভিযোগ জানান। ধর্মের নিষ্ঠুরতা নিয়ে ঈশ্বরের কাছে আবেদন করেছেন, “হে ভগবান, দয়া করে বল আমাদের ধর্ম কী। হে ভগবান, আমাকে তোমার সত্যকার ধর্ম শেখাও। যাতে করে সেই মতো আমরা চলতে পারি।”

ধর্ম বলতে তিনি সেই ধর্মের কথা বলেছেন যা সংকীর্ণতা মুক্ত। যেখানে সমানাধিকার থাকবে। মানুষে-মানুষে ভেদাভেদ থাকবে না। তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছেন, ” এমন ধর্ম, যেখানে এক ব্যক্তি সুবিধা পায়, অন্যরা বঞ্চিত হয়, তাকে এই পৃথিবী থেকে লুপ্ত করে দাও। এমন ধর্ম যেন আমাদের মধ্যে আর কখনও প্রবেশ করতে না পারে।”

এ-কথা বলা কতখানি দুঃসাহসিক, কতখানি স্পর্ধার তা সেই সময়ের সমাজ ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কল্পনা করলে আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি। সেই সঙ্গে এটাও বুঝতে পারি, কতখানি দুঃসাহস ছিল তার মধ্যে। একটি দীর্ঘ প্রতিষ্ঠিত চরম শক্তিধর সমাজ ব্যবস্থার বুকে তিনি ঘা মেরেছিলেন। সেটা পেরেছিলেন, কেননা শিক্ষার আলো তিনি পেয়েছিলেন। এটাও বুঝেছিলেন শুধু তিনি বললে হবে না। বাকিদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তার জন্য চাই শিক্ষার আলো। তাই তিনি তার প্রবন্ধের শেষে বলেছেন, “ওহে মাং ও মাহাররা, তোমরা গরিব, অসুস্থ। কেবল জ্ঞানের ঔষধই পারে তোমাদের সারিয়ে তুলতে। শিক্ষাই পারে তোমাদের কুসংস্কারের জঘন্য বিশ্বাস থেকে দূরে সরাতে। শিক্ষা তোমাদের ন্যায় পরায়ণ ও নীতিবান করে তুলবে তোমাদের ওপর যে অত্যাচার তা রোধ করতে পারবে। যে সব লোকেরা তোমাদের সঙ্গে পশুর মতো ব্যবহার করে, তা করতে আর তারা সাহস পাবে না।”

শিক্ষার শক্তি কতখানি তা তিনি তার তিন বছরের শিক্ষাজীবনে অনুভব করতে পেরেছিলেন। কিন্তু গতানুগতিক ধারার প্রভাবে দলিত সম্প্রদায়ের সমস্ত মানুষের শিক্ষার প্রতি তেমন উৎসাহ ছিল না। শিক্ষা যে তাদের প্রয়োজন, এটা তারা অনুভব করতে পারত না। তাদের সেই ঘুম থেকে জাগাতে চেয়েছেন তিনি। বলেছেন, “পড়াশোনা কর। কঠোর পরিশ্রম কর। শিক্ষিত হও এবং একজন ভালো মানুষ হয়ে ওঠো।”

মুক্তা সালভের আর কোনো লেখার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এই একটিমাত্র লেখার মাধ্যমে তিনি নিজেকে একটি আলাদা জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নারীমুক্তি তথা দলিত সমাজের অধিকারের দাবিতে তার এই লেখা এক শানিত হাতিয়ার। একটি সমাজ ব্যবস্থাকে একটু হলেও তিনি ধাক্কা দিতে পেরেছিলেন।

বর্তমান সময়ে আমাদের আলোচনায় উঠে আসে বহু উজ্জ্বল নারীদের নাম। মুক্তা সালভের মতো মহিলারা হারিয়ে গেছেন বিস্মৃতির অন্তরালে। কিন্তু, সলতে পাকানোর কাজটা তারা করেছিলেন। নারী নবজাগরণে এদের ভূমিকা কোনো অংশেই কম নয়। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে এদেরকে বেশি বেশি করে স্মরণ করা অবশ্যই প্রয়োজন।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর — একটি পর্যালোচনা ।।।।

এটা অনস্বীকার্য যে, বাঙালী সমাজে আজও বিদ্যাসাগরের প্রদীপ্ত উপস্থিতি ‘বর্ণপরিচয়’ দিয়ে । প্রাথমিক শিক্ষায় ‘বর্ণপরিচয়’ এর মাহাত্ম্য সকলের জানা । মুর্শিদাবাদ জেলার শক্তিপুর হাই স্কুলের বাংলার দিদিমণি আমার রচনা লেখার গঠন অবলোকন করে হঠাৎ তাঁর সম্মুখে ডাকলেন, “তুই বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’ নাম শুনেছিস ? তারপর চুপি চুপি বললেন, রোজ রাতে শোওয়ার আগে বিদ্যাসাগরের বইখানা পড়বি । রচনা লেখার সময়ে তোর বানানের জড়তা কেটে যাবে” । সুতরাং শৈশব থেকে বাংলা ভাষা শিক্ষার প্রেক্ষাপটে বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় আজও অমলিন । সেই বিদ্যাসাগরের জন্মের দুশো বছর । তাই দুশো বছর ধরে শিক্ষা জীবনের বাস্তবতায় বিদ্যাসাগর আজও প্রাসঙ্গিক ।
বিদ্যাসাগর যখন জন্মগ্রহন করেছিলেন সেই সময়টা ছিল রামমোহনের যুগ, যিনি একজন শিক্ষিত ও অগ্রণী পুরুষ ছিলেন এবং সমাজ সংস্কারের অন্যতম কারিগর । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঈশ্বরচন্দ্রের পিতামহ রামজয় তর্কভূষণ ছিলেন সুপণ্ডিত ও বলিষ্ঠ দৃঢ়চেতা পুরুষ। তিনিই ঈশ্বরচন্দ্রের নামকরণ করেছিলেন। বিদ্যাসাগরের বাবা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধায় কলকাতায় স্বল্প বেতনের চাকরিতে খুব কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করতেন । পরিবার নিয়ে শহরে বাস করা তাঁর সাধ্যের অতীত ছিল। সেই কারণে বালক ঈশ্বরচন্দ্র গ্রামেই মা ভগবতী দেবী’র সঙ্গে বাস করতেন।
পাঁচ বছর বয়সে ঈশ্বরচন্দ্রকে গ্রামের পাঠশালায় পাঠানো হয়। ১৮২৮ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁকে কলকাতার একটি পাঠশালায় এবং ১৮২৯ সালের জুন মাসে সংস্কৃত কলেজে ভর্তি করানো হয়। ভর্তির ছ’মাসের মধ্যেই পাঁচ টাকা বৃত্তি পান । তাঁর প্রতিভার অসাধারণ ক্ষমতা দেখে শিক্ষকেরা সকলে স্তম্ভিত । তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রতিভাবান ছাত্র এবং ১৮৩৯ সালের মধ্যেই বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। পরে তিনি দু-বছর ওই কলেজে ব্যাকরণ, সাহিত্য, অলঙ্কার, বেদান্ত, ন্যায়, তর্ক, জ্যোতির্বিজ্ঞান, হিন্দু আইন এবং ইংরেজি বিষয়ে অধ্যয়ন করেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্মজীবন শুরু করেন ফোর্ট উইলিয়াম (১৮৪১) কলেজের প্রধান পন্ডিত হিসাবে । ঐসময়েই তাঁর ইংরেজি শিক্ষার যথাযথ শিক্ষালাভ । কেননা বিদ্যাসাগরকে সকলে জানতেন সংস্কৃতের পন্ডিত হিসাবে । ইংরেজি হাতের লেখাও ছিল নজরকাড়া । ১৮৫০ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি সংস্কৃত কলেজের সাহিত্যের অধ্যাপক পদ লাভ করেন এবং পরের মাসে ওই কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি কলেজের অনেক সংস্কার করেন। সংস্কৃত কলেজের সংস্কার ও আধুনিকীকরণ এবং বাংলা ও বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন ছাড়া, শিক্ষা প্রসারে তাঁর আরও অবদান সর্বজনবিদিত । এর আগে এ কলেজে পড়ার অধিকার ছিল কেবল ব্রাহ্মণ এবং বৈদ্য ছাত্রদের, কিন্তু তিনি সব শ্রেণির হিন্দুদের জন্যে কলেজের দ্বার উন্মুক্ত করেন। ১৮৫৪ সালে চার্লস উডের শিক্ষা সনদ গৃহীত হওয়ার পর সরকার গ্রামীণ এলাকায় শিক্ষা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেয়। এ উদ্দেশে ১৮৫৫ সালের মে মাসে বিদ্যাসাগরকে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ পদের অতিরিক্ত সহকারী স্কুল পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তিনি নদিয়া, বর্ধমান, হুগলি এবং মেদিনীপুর জেলায় স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে বাংলা ভাষাকে সহজবোধ্য করে তুলতে চেয়েছিলেন । ১৮৫৫ সালে বাংলা নববর্ষের দিনে প্রথম বর্ণপরিচয় প্রকাশ করে তিনি বাঙালীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন ।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এশিয়াটিক সোসাইটি (কলকাতা) ও বেথুন সোসাইটিসহ আরও কিছু সংগঠনের সম্মানিত সভ্য ছিলেন। ১৮৫৮ সালে যাঁরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ফেলো নির্বাচিত হন, তিনি ছিলেন তাঁদের অন্যতম। ১৮৫৯ সালে তিনি “ক্যালকাটা ট্রেনিং স্কুল” স্থাপনে বিশেষ ভুমিকা পালন করেন। ১৮৬৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানের নাম রাখা হয় “হিন্দু মেট্রেপলিটন ইসস্টিটিউট”। বিদ্যাসাগর হন এর সেক্রেটারী। ১৮৭২ সালে এটিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর এবং ১৮৭৯ সালে প্রথম শ্রেণীর কলেজে পরিণত করা হয়। বর্তমানে এর নাম “বিদ্যাসাগর কলেজ”। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান থেকে শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন লাভ করেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ, বিধবা বিবাহ আইন প্রণয়ন । সেদিনের সমাজে প্রচলিত প্রথার নির্মম পরিণতির জন্য নারীদের ভাগ্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন আপামর জনতা অবলোকন করেছিলেন । শোনা যায়, একসময় রাজা রাজবল্লভ নিজের বালবিধবা কন্যাকে পুনর্বিবাহ দেওয়ার অনুমতি সমাজের পন্ডিতদের কাছ থেকে পেয়েও সেই বিবাহ কারও কারও বাধায় দিতে পারেন নি । যাই হোক ১৮৫৫ জানুয়ারি মাসে বিদ্যাসাগরের “বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা” বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর দেশ ও সমাজ চমকে উঠেছিল । শেষ পর্য্যন্ত ১৮৫৫ সালের ২৬শে জুলাই বিধবা বিবাহ আইন পাশ হয় । বিদ্যাসাগরের দরদী হৃদয় কেঁদেছিল সেকালের সমগ্র হিন্দু নারী সমাজের দুর্গতি দুর্দশায় । বিধবা বিবাহ আইন নামে পরিচিত ১৮৫৬ সালের আইনটি কেবলমাত্র বিধবা নারীর দ্বিতীয় বিবাহের স্বীকৃতি দেয়নি, আইনটি যেমন বিবাহকে আইনসিদ্ধ করে তেমনই মৃত স্বামীর এবং দ্বিতীয় বিবাহের এবং পৈত্রিক বিষয় সম্পত্তিতে অধিকার সুনিদ্দিষ্ট করে । বিভিন্নভাবে জানা যায়, ১৮৫৬ থেকে ১৮৬৭ পর্য্যন্ত মোট ৬০টি বিধবা বিবাহ সংঘটিত হয় । আরও জানা যায়, বিদ্যাসাগর ও তাঁর বন্ধুরা মিলে ১৮৫৬ সালের ডিসেম্বর মাসে রক্ষণশীল সমাজের বিক্ষোভ এবং প্রচন্ড বাধার মুখে ঘটা করে এক বিধবার বিবাহ দেন। পাত্র ছিল সংস্কৃত কলেজে বিদ্যাসাগরের একজন সহকর্মী। তাছাড়া নিজের একমাত্র পুত্রের সঙ্গে বিধবার বিবাহ দিতে তিনি কুণ্ঠিত হননি। এতে একটা জিনিস পরিস্কার, বিধবাবিবাহ আইন প্রণয়নে বিদ্যাসাগরের শতভাগ সাফল্য সর্বজনবিদিত ।
তিনি হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় তৈরি করেন, যাকে পরবর্তীতে বেথুন কলেজ নামকরণ করা হয়। নারীদের শিক্ষার দিকে আনার জন্য তিনি একটি অর্থায়নের ব্যবস্থা করেন, যা নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠা ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত ছিল। এখান থেকে মেয়েদের শিক্ষার জন্য যাবতীয় অর্থের ব্যবস্থা করা হতো। ১৮৫৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে ১৮৫৮ সালের মে মাস অবধি সমগ্র দক্ষিণবঙ্গে বিদ্যাসাগর ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন।
বিদ্যাসাগরের দয়া এবং মানবিকতার জন্যে তিনি করুণাসাগর নামে পরিচিত (তাঁকে এ বিশেষণ প্রথমে দিয়েছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত) । তিনি তাঁর দান এবং দয়ার জন্যে বিখ্যাত হয়েছিলেন। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন একটি ঐতিহ্যিক এবং রক্ষণশীল পরিবারে এবং সমাজ সংস্কারের জন্যে তিনি যুক্তিও দিতেন হিন্দু শাস্ত্র থেকে কিন্তু তিনি ছিলেন ধর্ম ও ঈশ্বর সম্পর্কে সন্দিহান মনের। তাঁর বোধোদয় গ্রন্থ যেমন তিনি শুরু করেছেন পদার্থের সংজ্ঞা দিয়ে। পরে সংজ্ঞা দিয়েছেন ঈশ্বরের, যাঁকে তিনি বলেছেন সর্বশক্তিমান, সর্বত্র বিরাজমান চৈতন্যস্বরূপ।
বিরাট ব্যক্তিত্বের মানুষ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। অথচ চালচলনে তিনি ছিলেন নিতান্তই সাদাসিধে । খুব বিনয়ী ছিলেন এবং জীবনে দৃঢ় সংকল্প এবং উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে কাটিয়ে দিলেন। তিনি একাধারে মহান সমাজ সংস্কারক অন্যদিকে এক জন শিক্ষাবিদ ছিলেন এবং সমাজ পরিবর্তনের জন্য কাজ করে গেছেন অবিরাম । ভারতে শিক্ষার প্রতি তার অবদান এবং নারীর অবস্থার পরিবর্তন জন্য তিনি চিরস্বরণীয়। তাঁর অবর্ণনীয় মাতৃ ভক্তি একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত । তাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে আজও চর্চিত ।
——————————-০———————————————–
মো – ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

মাতৃভাষা ও সত্যিকারের মা ::: শুভঙ্কর দাস।।।

“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে?
কথায় না বড় হয়ে, কাজে বড় হবে,”

আমি জানি এই দুটি চরণ পড়া মাত্র পাঠক পরের দুটি চরণ অনায়াস আনন্দে উচ্চারণ করে ফেলবেন।
এবং কবির নামও হয়তো বলতে পারবেন।
অবশ্য এই কবির পুত্রের নাম জীবনানন্দ দাশ,এক ডাকে সকলেই জানেন।কবিতা পড়েন।এখনও পর্যন্ত বাংলা কবিতার জগতে তাঁর প্রভাব রবীন্দ্রনাথের পরেই…
কীভাবে লিখতেন কবি জীবনানন্দের মা,
সংসারের কাজকর্মে ফাঁকে ফাঁকে অবলীলায় কবিতা রচনা করতে পারতেন।হয়তো খুব ব্যস্ত হয়ে কিছু করছেন,’ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকার সম্পাদক আচার্য মনোমোহন চক্রবর্তী এসে বললেন, এখুনি কবিতা চাই,প্রেসে পাঠাতে হবে,লোক দাঁড়িয়ে আছে।
শুনে কবি-মাতা খাতা কলম নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে একটা হাতে খুন্তি, অপর হাতে কলম নাড়ছেন,যেমন চিঠি লিখছেন।বড়ো একটা ঠেকছে না কোথাও! এবং সম্পাদক মহাশয় একটু পরে হাতে পেতেন একটি মৌলিক কবিতা।
এবং এই দৃশ্য রান্নাশালের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দেখতেন বালক জীবনানন্দ, খুবই অবাক হতেন!
এবং জেনে রাখুন,মায়ের কবিত্ব ও বই পড়ার আগ্রহই জীবনানন্দকে কবিতার প্রতি,বইপাঠের প্রতি আকৃষ্ট করেছিল।মা তাঁকে বই পড়তে ও কবিতা লিখতে প্রাণিত করতেন।
এবং পড়াতেন মহাপুরুষের জীবনী,যাতে জীবনানন্দ তাঁদের জীবনের ওপর কবিতা রচনা করতে পারে,আসল অর্থ ছিল,সেই জীবনের কথা জেনে নিজের জীবনের পথ তৈরি করা।
এইভাবে ‘বঙ্গবাণী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় জীবনানন্দের কবিতা,দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে নিয়ে।
নাম ছিল,’দেশবন্ধু প্রয়াণে’।
কবিতাটি কেমন হয়েছে জানার জন্য মায়ের কাছে নিয়ে যায় পত্রিকাটি।
তাতে মায়ের মতামত হল,চিত্তরঞ্জন সম্বন্ধে লিখেছো, ভালোই করেছ,কিন্তু রামমোহন ওপর লিখতে বলেছি তোমাকে,মহর্ষির ওপরেও”
এইরকমভাবে পুত্র জীবনানন্দকে মাতা একটা মহাপুরুষের তালিকা করে দিয়েছিলেন।
কারণ তাতেই হবে—

” মুখে হাসি,বুকে বল,তেজে ভরা মন
মানুষ হইতে হবে,এই তার পণ”

সেই পণে ও মায়ের ঐকান্তিক আলোর পথে গিয়ে আমরা পেলাম বাংলা কবিতার এক মহা-অনুভবী কবিকে,যাঁকে পাঠ ছাড়া আধুনিক কবিতার গতি ও গর্ব নেই!
মায়ের নাম নিশ্চিত জানেন?
এটি কমেন্টে লিখুন,কারণ এই ধরণের মায়ের বড় অভাব বর্তমান সময়ে,বই পড়া তো দূরের কথা,মহাপুরুষের জীবনীপাঠ তো পরের কথা,সন্তানকে মোবাইল আসক্তি থেকে সরাতে গিয়ে নিজেই একটি অ্যাপে পরিণত হয়ে যাচ্ছেন!এখনকার মিনি মাতাগণ
নিজেই বই পড়েন না!মহাপুরুষের জীবনী পড়েন না! ফলে যেমন বৃক্ষ, তেমনই ফল…
তাই এই মাতা-কবির নাম কমেন্ট-ঘরে লিখুন এবং অন্তর সঠিক পথে চালিত হোক।কারণ

“আমাদের দেশে হবে সেই মা কবে?
মোবাইল ছাড়িয়ে বই ধরিয়ে দেবে
মুখে বাংলা, বুকে বাংলা, বই-ভরা মন
পাঠক হতেই হবে এই সত্য আমরণ”

একান্ত ক্ষমাপ্রার্থী শুভঙ্কর দাস।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

সাক্ষী দগ্ধ পলাশ :::: শুভঙ্কর দাস।।।।

“এইমাত্র নদী নেমে গেল মনের
শেষ ধাপে,শুকনো পাতার মতো রৌদ্র কাঁপে
মানুষের জন্ম! এ কি কোনো দৈব অভিশাপে!
জানে না জীবন অথবা মৃত্যু!
তার মাঝে এই তো অক্ষরের সন্তান-সন্ততি
সঙ্গে আরও একটু শ্বাসের হাতটি বাড়াস…

নৌকাজন্ম যখন,একটু স্রোতের দিকটা ঘুরে যাস…

জেগে উঠে দেখি,মানুষে বুকে-চোখে ভরে আছে

শুধু মুখোশের লাশ,সাক্ষী দগ্ধ পলাশ! “( পলাশ।শুভঙ্কর দাস)

একটি মানুষ আপাদমস্তক সাহিত্যের সঙ্গী,সাহিত্যের সহযোগী এবং সাহিত্যিকের পরমবন্ধু। এবার আপনার মনে হল,তাহলে একটি দেখা করাই যেতে পারে।আপনি পূর্বেই ভেবে রেখেছেন, সাহিত্য-অন্তপ্রাণ মানে গিয়ে দেখব,রাশি রাশি বই খুলে পড়ছেন অথবা কোনো শ্বেতপাথরের টেবিলে উদাস বাউলের মতো কলমটি ধরে মানুষের জীবনকে ফুটিয়ে তুলছেন সাদা পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠায়,বা ভাবলেন,গিয়েই কথা বলা শুরু করলেই তিনি সাহিত্যের অতীত গৌরব, বর্তমান দুরবস্থা এবং ভবিষ্যৎ ভয়াবহতা নিয়ে সুদীর্ঘ বক্তব্য বা উপদেশ দেবেন!
না,তা কিছুই হবে না।
একটি বর্ণময় আন্তরিক সাহিত্যসভা চলছে..
সেই মানুষটি এই সভার প্রাণপুরুষ এবং সর্বময়কর্তা,তিনি কোথায়?
আপনি গিয়েই বুঝলেন,এখানে সাহিত্যের একটি যাগযজ্ঞ হচ্ছে।
নিশ্চিত মঞ্চের ওপর বসে থাকা কোনো একজন ব্যক্তি তিনি হবেন,কিন্তু কাকে জিজ্ঞেস করি?
অথবা যিনি মাইক্রোফোন ধরে সারা সভাকে শব্দশাসনে রেখেছেন,তিনিও হতে পারেন!
অথবা এই তো এতগুলো বইপ্রকাশ হল,এঁদের মধ্যে তিনি একজন হবেন নিশ্চিত।
এইভাবে খুঁজতে খুঁজতে আপনি দেখবেন এবং বিস্মিত হয়ে উঠবেন,ও হরি!
সাহিত্যবাগানে ঢোকার মুখে একটি সাধারণ মানের জামা-প্যান্ট ও খালি পায়ে অভ্যর্থণা করছিলেন এবং আপনি পা ধোবেন বলে,যিনি পুকুর থেকে জল তুলে দিলেন,তারপর আপনার পথক্লান্তি দূর করার জন্য নিজের হাতে ডাব কেটে আপনাকে খাওয়ালেন, আবার আপনার প্রাতরাশের জন্য ঠোঙাভর্তি মুড়ি-চানাচুর-নারকেল দিলেন এবং আপনাকে হাসিমুখে সভাস্থলের চেয়ার পর্যন্ত বসিয়ে আন্তরিকভাবে বলে উঠলেন,এখানে সাহিত্য নিয়ে আনন্দ করুন এবং বাড়ি যাওয়ার কোনো চিন্তা করবেন না,এখানেই থাকুন এবং সব রকমের সাহিত্য-সেবা এখান থেকেই গ্রহণ করুন।
এবং তা শুধু কথার কথা নয়, একেবারে সত্য ও সুন্দর।

তিনি ভূতনাথ পাণিগ্রাহী।

সাহিত্য-প্রাণ সকল মানুষের জন্য প্রাণপাত করতে রাজি আছেন।
তাহলে প্রশ্ন,কী পড়েন?
—কেন মানুষ পড়ি।এর থেকে ভালো বই আজ পর্যন্ত ছাপা হয়নি
কখন লেখেন?
—ঐ যে ঘুমোনোর আগে জেগে থাকতে লিখি,এখন তো জেগে থাকাটাই আসল কাজ
এই পথে কোনো পথপ্রদর্শক আছে?
— আছেন,আসুন দেখাচ্ছি,বলেই আপনাকে নিয়ে যাবেন,তাঁর তৈরি সাহিত্যবাগান,যার নাম সংলাপ।
সেই সংলাপের আদি এবং একমাত্র সভাপতি দর্শনে।
যিনি ভূতনাথের নাথ।
গিয়ে দেখবেন, শ্বেতপাথরের মর্মরমূর্তি। সেই সদাহাস্যজ্বল আনন্দময় পাগলা ঠাকুর।যিনি বলতেন,তোমাদের চৈতন্য হোক..
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ।
এরপর দেখবেন,ভূতনাথ পাণিগ্রাহী কোনো ভূমিকা ছাড়াই সেই মূর্তির পাদতলে বসে, আপনাকে ইঙ্গিত করে বলবেন,ইনিই সব।
এবার আপনি বুঝে যাবেন,কেন এই সাহিত্যপুরুষ অন্যের থেকে আলাদা।
সেই অক্ষর মাটির চাষা শান্ত-সৌম্য মনে একের পর গ্রন্থ রচনা করে চলেছেন।তার সংখ্যা প্রায় কুড়িটি।
এবার যে গ্রন্থটি হাতে এলেনা,তার নাম দগ্ধ পলাশ।

এ হল ভূতনাথের আশ্চর্য স্বগোতক্তির স্বতঃস্ফূর্ত ধারা।

যে সাহিত্যিক বই নয়, মানুষ পড়েন।যিনি মঞ্চ নয়,মাটিতে বসে বক্তব্য দেন,যিনি মনে করেন,গাঁয়ের চটে-ঘেরা চা-দোকানের আলোচনায় যে দর্শন উঠে আসে,তা বড় বড় দার্শনিকের বইয়েও নেই!
সেই মানুষটি যেন নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলে চলেছেন,এই বইটিতে।
বইটির কোনো শুরু নেই,শেষ নেই,একেবারে আমাদের কথা বলার মতো।কোনো সূচিপাতা নেই!
এই বইতে তিনি একটি আশ্চর্য আয়না নির্মাণ করে একের পর এক ছবি অক্ষরে খোদিত করছেন।সেইসঙ্গে যিনি পড়বেন, তাঁকেও অন্তর্গত আয়না করে দিচ্ছেন।
কয়েকটি দৃষ্টান্ত না দিলে ভূতনাথ-দর্পণ বোঝা যাবে না!

এক

লেখাপড়া

লেখাপড়া করা যদি খাওয়া, সঙ্গম আর শুধু বেঁচে থাকাই উদ্দেশ্য হয়, তাহলে ওটা না করাই ভালো! কারণ বাবুর কুকুরেও তো লেখাপড়া না করে,অক্লেশে বরং আরামের বেঁচে থাকে!

কবিতা

আমি জন্ম হলাম।যন্ত্রণা শুধু শুধু দিলাম স্রষ্টাকে।স্পর্শ করলোই না কেউ! দেখলোই না কেউ মুখে তুলে!
কারণ আমি হেমু মুর্মুর মেয়ে যে,নাম? কবিতা।

আত্মমর্যাদা

অর্ধশোয়া জামরুলের পাশে দাঁড়ালাম।কাজ হয়ে যুবতী লাল ফল শয্যায়!হাত বাড়াতেই!
বলল,নির্ভরতা লজ্জার।এভাবেও বাঁচা যায়।মুখ্য বিষয় আত্মমর্যাদা।

ফুল

যে ফুল ফুটুক, ভেতরে ওগুলো ওর শিশির নয়! কান্না! পোকা থেকে দেবতা সবারই চাই! ফুলের,বলি তার আবার চাওয়া কী? রক্ত করলেও সর্বমঙ্গল্যে!
সে যে ফুল ফুটুক। ভেতরে ওগুলো ওর শিরশির নয়! কান্না।

প্রেম
হৃদয় তপ্ত দগ্ধ না হলে,প্রেমের পরশ কি সহজে মেলে?

বৃদ্ধ

বৃদ্ধ কাঁপা হাতটি দিয়ে ঝাকালো হঠাৎ
বলল,বেঁচে আছি
শব্দহীন আমার মুখ!
আকাশে দেখি দলছুট একটি পাখি উড়ে যাচ্ছে, কেবল আজ একা!

এইরকম জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে মানুষের মনের অসংখ্য সিঁড়ি, সহবাস এবং সাধনাকে ভূতনাথ আপন অভিজ্ঞতা ও আলোক মিশিয়ে তুলে ধরেছেন।
এ যে সেই ঠাকুরের রসে-বশে থাকা।
ঠাকুর বার বার বলতেন,কলিযুগে নারদীয় ভক্তি।
জীবিকার সন্ধানে ছুটে চলা মানুষের হাতে যে সময়ের বড় অভাব।তাই শাস্ত্রে যে সকল কর্মের কথা আছে,তার সময় কই?
তাই ঠাকুরের নিদান,ঈশ্বর ও সংসার দুইহাতে ধরে এগিয়ে যেতে হবে,আর তাতে একটাই জিনিস দরকার,তা হল,মন ও মুখ এক করতে হবে।

মন ও মুখের এক করার সেই অমোঘ আয়না নির্মাণের চেষ্টা করেছেন সাহিত্যসাহসী ভূতনাথ পাণিগ্রাহী।
তাঁকে প্রণাম।
————————–//——————

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

নারী : অর্ধেক আকাশ ছাড়িয়ে।

“বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্দ্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্দ্ধেক তার নর।”
কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই বিখ্যাত লাইন দুটি উচ্চারণ করতে করতে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে, আমাদের সমাজে নারীরা কি তাদের সমান অধিকার পেয়েছে? সাম্প্রতিক সময় থেকে অতীত, ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে আমরা দেখতে পাই সমান অধিকার দূরে থাক নারীরা তাদের যোগ্য সম্মান পায়নি, এখনও হয়তো সেভাবে পায় না। একথা ঠিক বর্তমানে তাদের সামাজিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে কিন্তু অবমাননা, বঞ্চনা, লাঞ্ছনা প্রভৃতি ব্যাপারগুলো আজও থেকে গেছে। আমাদের সমাজে একটা সময় ছিল যখন মেয়েদের শিক্ষার অধিকার ছিল না। তারা শিক্ষিত হলে তাদের জীবনে অকাল বৈধব্য নেমে আসবে, সমাজ-সংসার রসাতলে যাবে এরকম ভাবনা মানুষের মনে ছিল। নানাবিধ কুসংস্কার, আচার, প্রথার জালে জড়িয়ে তাদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। সেই দমিয়ে রাখার প্রয়াস আজও চলছে। হয়তো পূর্বের থেকে পদ্ধতিগুলো কিছুটা বদলে গেছে। নারীরাও এসব মেনে নেয় কিংবা মেনে নিতে বাধ্য হয় কেননা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সর্বদাই দুর্বল বলে ভাবা হয়েছে, শারীরিক এবং মানসিক উভয় দিক থেকেই। নারীদের একটা বিরাট অংশও মনে মনে নিজেদের সেরকমই মনে করে। এতে তাদের কোনো দোষ নেই। কেননা যুগের পর যুগ ধরে এমন ধরনা যদি তাদের মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তাহলে এই ভাবনা ভাবাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভাবনাটি কি আদৌ ঠিক? শারীরিক দিক দিয়ে নারীরা হয়তো পুরুষদের থেকে কিছুটা দুর্বল কিন্তু অন্যান্য বিষয়েও কি তাই? তাছাড়া শারীরিক দিক দিয়েও বা তাদের দুর্বল বলি কী করে? সৃষ্টির ধারক কি দুর্বল হতে পারে? যে নারী গর্ভে সন্তান ধারণ করে, দশ মাস দশ দিন সেখানে লালন পালন করে, তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করে তাকে পৃথিবীর আলো দেখায় তাকে শারীরিকভাবে দুর্বল ভাবা বোকামি। আর বর্তমান সময়ে নারীরা সমস্ত কাজে পুরুষদের সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিচ্ছে। বৃহৎ ক্ষেত্র বাদ দিয়ে একেবারে সাধারণ কথাই ধরা যাক। একজন সাধারণ গৃহবধূকে নিত্যদিন সংসারে যে কাজ করতে হয় তা তাদের শারীরিক দুর্বলতা নয়, সক্ষমতাই প্রমাণ করে। এসব সাংসারিক কাজগুলো আমাদের বিচার বিবেচনায় স্থান পায় না বলে নারীদের শক্তি, সামর্থ কিংবা দক্ষতা আমাদের চোখে পড়ে না। সে যাই হোক, তর্কের খাতিরে না হয় ধরে নিলাম নারীরা শারীরিকভাবে দুর্বল কিন্তু মানসিক এবং বৌদ্ধিক দিক দিয়ে? আমার মনে হয় এক্ষেত্রে নারীরা দুর্বল তো নয়ই বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা পুরুষদের থেকে অনেক এগিয়ে। বর্তমান ছেড়ে একেবারে অতীত থেকে কিছু দৃষ্টান্ত দিলে আমার মনে হয় ব্যাপারটা পরিস্কার হবে।

যে কৃষিকাজ আদিম মানুষকে যাযাবর জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে তাকে স্থিতিশীল ও তুলনামূলক উন্নত জীবন দিয়েছিল সেই কৃষিকাজের পরিকল্পনা প্রথম মাথায় এসেছিল নারীদের। সাহিত্যের দিকে চোখ বোলালে দেখা যাবে সেখানেও তাদের উজ্জ্বল উপস্থিতি। বিশ্বের প্রথম লেখক হলেন মেসোপোটিয়ান রাজা প্রথম সারগনের কন্যা এনহেদুয়ান্না। তাঁর লেখার নিদর্শন পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব ২৩০০ অব্দে। বিশ্বের প্রথম পেশাদার পুস্তক সমালোচক হলেন আমেরিকার মার্গারেট ফুলার। তাঁর রচিত বই ‘ওম্যান ইন দা নাইনটিন সেঞ্চুরি’। বিশ্বের প্রথম ঔপন্যাসিক হলেন লেডি মুরাসাকি নামে এক জাপানী মহিলা। যিনি ১০০০ থেকে ১০০৮ অব্দের মধ্যে লিখেছিলেন ‘দ্য টেল অব গেঞ্জি’। আমাদের বাংলা ভাষায় প্রথম আত্মজীবনী লেখেন একজন মহিলা, রাসসুন্দরী দেবী। পঞ্চম শতাব্দীর বিখ্যাত গনিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ ছিলেন হাইপেশিয়া যাকে নৃশংসভাবে প্রাণ দিতে হয়েছিল ধর্মীয় উন্মাদদের হাতে। যাঁর মৃত্যুতে মানব সভ্যতার ইতিহাসে সৃষ্টি হয়েছিল এক কৃষ্ণ অধ্যায়। যে অন্ধকার সময় চলেছিল প্রায় এক হাজার বছর।

আমাদের দেশের অতীত ইতিহাস ঘাঁটলে আমরা অসংখ্য মহীয়সী নারীর কথা জানতে পারি। বৈদিক যুগের আদি পর্বে নারীরা পুরুষদের সঙ্গে সমান অধিকার ভোগ করার সুযোগ পেত। ঘোষ, অপালা, বিশ্ববারা, গার্গী, মৈত্রেয়ীর মতো বহু মহিয়সী নারীর উল্লেখ আছে বেদ, উপনিষদের আদি গ্রন্থে। এমনকি মধ্যযুগে যখন সমাজে নারীদের অবস্থানের অনেক অবনতি ঘটেছিল তখনও আমরা খনা কিংবা লীলাবতীর মতো বিদূষী নারীকে পেয়েছি। তাহলে কী করে বলি মেধা ও মননের দিক থেকে নারীরা পিছিয়ে? তাছাড়া পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের হয়তো একটা গন্ডীর মধ্যে আটকে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে কিন্তু তাদের মেধা কিংবা বুদ্ধিকে পুরুষরা কাজে লাগায়নি একথা কী করে বলা যায়? কাজী নজরুল বলেছেন—“কোন কালে একা হয়নি কো জয়ী/পুরুষের তরবারি/শক্তি দিয়েছে প্রেরণা দিয়েছে/ বিজয়লক্ষ্মী নারী।”

একটি সংসারকে সুন্দর করে চালনা করা, তাকে নান্দনিকতায় সাজিয়ে তোলা প্রভৃতিতে পুরুষদের তুলনায় নারীরা অনেক বেশি দক্ষ। আর বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাই সমাজের সমস্ত ক্ষেত্রে নারীদের গর্বিত পদচারনা। যুগ যুগ ধরে তাদের নানাভাবে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে হয়তো তাদের মধ্যেকার শক্তিশালী সত্তাটি যাতে না প্রকট হয়ে পড়ে সে জন্য। দুর্বলকে তো দমিয়ে রাখার প্রয়োজন হয় না। এই দমিয়ে রাখার প্রয়াস প্রমাণ করে তারা সবদিক দিয়ে পিছিয়ে নয় বরং এগিয়ে। এই দমিয়ে রাখার প্রয়াসটাই আসল দুর্বলতা, ভাবনা ও মানসিকতার। যদি তা না করা হত তাহলে যুগের পর যুগ ধরে সমাজে নারীদের যে দুর্দশার জীবনধারা আমরা দেখে এসেছি বা বর্তমানেও দেখছি, সেটা হত না। তাতে লাভ হত আমাদের সমাজ-সংসার সবকিছুর। একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, হাতে হাত রেখে চলার মধ্যে কোনো দুর্বলতা বা হীনতা নেই, থাকে বন্ধুত্ব আর বিশ্বাস যা যে কোনো ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার পথকে অনেক মসৃণ করে।

আমার মনে হয় নারীদের মধ্যে যে অফুরন্ত শক্তি আছে তাকে দমিয়ে না রেখে, স্ফূরণের সুযোগ দিতে হবে। তাতে আমাদের সকলেরই লাভ। সেই সঙ্গে সঙ্গে নারীদেরও বুঝতে হবে নিজেকে, নিজের মধ্যেকার শক্তিকে। আমরা যদি পুরাণে চোখ রাখি তাহলে দেখতে পাই দেবী মহামায়া একদিকে যেমন জননী অন্যদিকে তেমনি রনসংহারকারী, অসুর নিধনকারী। আজকের সময়েও নারীদের তাদের মধ্যেকার এই দ্বৈত সত্তাকে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলে সমাজে তাদের স্থান মজবুত হবে।

সবশেষে বলি, নারীদের অবমাননা নয়, বঞ্চনা কিংবা লাঞ্ছনা নয়, তাদের দমিয়ে রাখার প্রয়াসও নয়—ভালোবাসা আর যথাযথ মর্যাদায় যদি তাকে সমাজে স্থান দেওয়া হয় তাহলে সভ্যতার সঠিক বিকাশ সম্ভব, যা আজকের সময় কিছুটা হলেও বুঝেছে। আগামী সময়েও সেই ধারার অগ্রগমন শুধু নারী সমাজ নয়, আমাদের পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে একটা সুদৃঢ় অবস্থানে স্থাপিত করবে।

কলমে : সৌরভকুমার ভূঞ্যা।

Share This
Categories
অনুগল্প প্রবন্ধ

স্বামীজি ও বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলন : তন্ময় সিংহ রায়।

জাহাজ ও দু-দুটো ট্রেন পাল্টে অবশেষে ৩০ শে জুলাই রাত ১১ টায় তিনি উপস্থিত হলেন শিকাগোয়।
ক্লান্ত, অবসন্ন শরীরটা সম্পূর্ণ অপরিচিত পরিবেশে তাকে ফেলেছে এক চরম অস্বস্তিজনক পরিস্থিতিতে, এমনটাই মনে হচ্ছিল। পরিস্থিতি ধারণ করলো আরো জটিল আকার যখন তিনি জানতে পারলেন যে, ধর্মমহাসভায় পরিচয় পত্র আবশ্যক ও যোগদানের তারিখ-ও পেরিয়ে গেছে।
মুহুর্তের মধ্যেই মনে হতে লাগলো অতি যত্নে সাজানো সমস্ত রঙীন স্বপ্নগুলো তাঁর চোখের সামনেই হয়ে যাচ্ছে টুকরো টুকরো!
এদিকে শিকাগোর মতন বড়লোকি শহরে থাকার খরচ।
সামান্য পুঁজি ফুরিয়ে আসার মুহুর্তে তিনি আবিষ্কার করলেন বস্টন নামক একটি শহর যেখানে থাকা-খাওয়ার খরচ অনেকাংশে কম। অবশেষে বস্টন অভিমুখে রওনাকালীন ট্রেনে পরিচয় হয় ক্যাথেরিন স্যানবর্ন নামক এক ধনী ও প্রভাবশালী মহিলার সাথে।
প্রতিভাদীপ্ত সুদর্শন এক পুরুষের সাথে তিনি নিজেই এসে পরিচয় করে দু-এক কথায় মুগ্ধ হয়ে স্বামীজি-কে তার বাড়িতে থাকার জন্যে জানালেন হার্দিক আমন্ত্রণ!
এ অবস্থায় স্বামীজি সাদরে গ্রহণ করলেন সে আমন্ত্রণ। ক্যাথেরিন স্যানবর্নের বাড়িতে থাকাকালীন স্বামীজি তাঁর এক শিষ্যকে চিঠিতে জানালেন, ‘এখানে থাকায় আমার প্রতিদিনের এক পাউন্ড করে বেঁচে যাচ্ছে আর তাঁর(ক্যাথেরিন স্যানবর্ন) প্রাপ্তি হল, তিনি তাঁর বন্ধুদের আমন্ত্রণ করে দেখাচ্ছেন ভারতের এক বিচিত্র জীবকে!’
বস্টনে থাকাকালীন ক্যাথেরিন স্যানবর্নের সূত্রে সেখানকার শিক্ষিত সমাজে স্বামীজি হয়ে উঠেছিলেন ভীষণভাবে পরিচিত। অকস্মাৎ ক্যাথেরিনের মাধ্যমে স্বামীজির পরিচয় হয় হাভার্ড ইউনিভার্সিটির এমন একজন সুবিখ্যাত প্রফেসার জন হেনরি রাইটের সাথে যাকে বলা হত বিশ্বকোষতুল্য জ্ঞানভান্ডারের অধিকারী। কিন্তু স্বামীজির তেজোদীপ্ত প্রতিভার আলোক ছটায় বিষ্ময়ে হতবাক হলেন তিনিও। পরিচয়পত্র না থাকায় তিনি (স্বামীজি) মহাধর্মসম্মেলনে যোগ না দিতে পারার সংক্ষিপ্ত কারণ বিশ্লেষণে প্রফেসার প্রত্যুত্তর করলেন, ‘মহাশয়, আপনার কাছে পরিচয়-পত্র চাওয়ার অর্থ এমন যে সূর্যকে প্রশ্ন করা যে তার কিরণ দেওয়ার অধিকার আছে কিনা।’ অতঃপর মহাধর্মসম্মেলনের এক কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে প্রফেসার রাইট লিখলেন :
‘ইনি (স্বামীজি) এমন একজন ব্যক্তি যে, আমেরিকার সমস্ত প্রফেসারের পান্ডিত্য এক করলেও এঁর পান্ডিত্যের সমান হবে না।’ অবশেষে স্বামীজী’র মনে হতে লাগলো তাঁর রঙীন স্বপ্নগুলো জোড়া লাগতে শুরু হল আবার ধীরে ধীরে।
বস্টনে সপ্তা তিনেক থাকার পর শেষে তিনি রওনা হলেন শিকাগো অভিমুখে।

১১ সেপ্টেম্বর ১৮৯৩, শিকাগোর কলম্বাস হলে সকাল দশটায় বিশ্ব ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা ভূমিষ্ঠ হয়েছিল যে আধিদৈবিক সিংহপুরুষের দ্বিতীয় অধিবেশনের ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে তিনি-ই হলেন স্বামী বিবেকানন্দ।
“সিস্টার্স এন্ড ব্রাদার্স অফ অ্যামেরিকা”…… হাজার হাজার দর্শকমণ্ডলীর হর্ষধ্বনি ও করতালিতে ফেটে পড়েছিলো মঞ্চ।
মনে হচ্ছিল এক সংক্ষিপ্ত শক্তিশালী আঁধি সেই মুহুর্তে, সেই স্থানের উপস্থিতজনেদের উপর দিয়ে বয়ে গেলো। কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের জয়ঢাক তিনি বাজাননি। মহা ধর্মসম্মেলনে যেখানে সবাই নিজ নিজ ধর্ম সম্বন্ধেই বক্তৃতা দিয়েছিলেন সেখানে স্বামীজি দেখিয়েছিলেন, সব ধর্মই সত্য কারণ প্রতিটি ধর্মই মানুষকে পৌঁছে দেয় একই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে।

১৯৯২ সালে স্বামীজির শিকাগো বক্তৃতার একশত বছর পূর্তির আগে এলেনর স্টার্ক নামক এক আমেরিকান মহিলা স্বামীজিকে নিয়ে ‘দ্য গিফট আন-ওপেন্ড.. এ নিউ আমেরিকান রেভলিউশন’ নামক একটি বই লিখেছিলেন যাতে লেখিকা স্বামীজির বাণীকে বর্ণনা করেছেন ‘উপহার’ বলে অর্থাৎ, ভারতবর্ষ থেকে আমেরিকাকে দেওয়া উপহার।
তিনি বলেছেন, সেই উপহারের প্যাকেট আমেরিকা খুলে দেখেনি, স্বামীজির বাণীকে তারা জীবনে ব্যবহার করেনি। যদি তারা তা করত, একটা নতুন ধরণের বিপ্লব ঘটে যেত আমেরিকাবাসীদের জীবনে।’ ঐ বইতেই তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘কলম্বাস আবিষ্কার করেছিলেন আমেরিকা মহাদেশের ভূখন্ডটা কিন্তু বিবেকানন্দ আবিষ্কার করেছিলেন আমেরিকার আত্মাকে!’

‘আমি মুসলমানের মসজিদে যাব, খৃষ্টানদের গির্জায় প্রবেশ করে ক্রুশবিদ্ধ যীশুর সামনে নতজানু হব, বৌদ্ধদের বিহারে প্রবেশ করে আমি বুদ্ধের শরণাপন্ন হব আবার অরণ্যে প্রবেশ করে হিন্দুদের পাশে বসে ধ্যানমগ্ন হব…. শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে যে সব ধর্ম আসতে পারে, তাদের জন্যেও আমার হৃদয় আমি উন্মুক্ত রাখবো।’ (স্বামীজির বাণী) ।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আজ একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও আমরা স্বল্প শিক্ষিত ও সীমিত জ্ঞানীরা চুড়ান্ত সাম্প্রদায়িক, আত্মকেন্দ্রিক ও চরম ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বইছে আমাদের রক্তে। তাঁর আদর্শের পরমানুটুকুও ক্রমশঃ আমাদের শরীর থেকে হতে চলেছে নিশ্চিহ্ন!
শরীরের লজ্জা আমরা সহজেই ঢাকতে পারি পোষাক দিয়ে কিন্তু মনুষ্যত্বের এ লজ্জা আমরা ঢাকবো কোন পোষাকে??

 

( তথ্য সংগৃহীত)

Share This
Categories
প্রবন্ধ

সিন্ধু সভ্যতার ভারতের আকাশে-বাতাসে আজ রাজনীতির গন্ধ! : তন্ময় সিংহ রায়।

বর্তমান প্রজন্ম তো দিলাম ছেড়েই ,
আমরা যতটা চিনি গ্যালিলিও , নিউটন , টেসলা কিংবা আইনস্টাইনকে ,
সুশ্রুত , ব্রম্ভগুপ্ত , চরক বা বরাহমিহিরকে ঠিক
ততটাই কি?
যতটা গর্বিত , উৎসাহিত , উত্তেজিত এনাদেরকে নিয়ে , ঠিক ততটাই আমাদের ভারতীয় কোহিনূরদের নিয়ে কি?
উত্তর বোধহয় হবে ‘না।’
আর হবেটাই বা কিভাবে?
অবহেলা , উদাসীনতা , সর্বোপরি
উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনীতি , বছরের পর বছর যদি গোড়াতেই ইংরেজদের মতন ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকে গলদ হয়ে , তো আমি-আপনি সাধারণ মানুষ আর করবোটাই বা কি?
গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় এ তো আজ পরিণত এক শক্তিশালী সিস্টেমে?
আর অন্ধ , বোবা , কালা হয়ে এই সিস্টেমের চাকায় পিষে বেঁচে থাকাটা আজ পরিণত হয়েছে বা করানো হয়েছে আমাদের অভ্যেসে , এরপর আদর্শ আর মনুষ্যত্ব বিক্রির সংখ্যাটা পৃথিবী উত্তপ্ত হওয়ার মতন বেড়ে চলেছে দিনের পর দিন ,
পাশাপাশি বহু বছর আর জন্মায়ও না রাজা রামমোহন রায় অথবা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু।
অতএব আমার-আপনার বৃহত্তর সমাজটা না হয়
যাক ভবিষ্যতে কোমায় , আমি-আপনি সুখে
থাকলেই হল।
কিন্তু পরিণত হওয়া এ অভ্যেস আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মে একদিন সৃষ্টি করবেনা তো সুনামি?

যদি বলি চীনের উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজি
থেকেই করোনা ভাইরাস মহাসংক্রমিত হয়ে প্রায় সমগ্র বিশ্বকে তছনছ করে ছেড়েছে?
ভেঙে টুকরো টুকরো করে ছেড়েছে পৃথিবীর বেশ কয়েকটা দেশের আর্থিক মেরুদণ্ড?
রাষ্ট্রের পর রাষ্ট্রকে বানিয়ে ছেড়েছে মৃত্যু উপত্যকা?
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ বিষয়টা বর্তমানে সিংহভাগ সাধারণ মানুষের কাছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আজ হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন যে , ও এক প্রকৃতিগত বিপর্যয় ছাড়া তেমন কিছুই ছিলনা , ওটা হতেই পারে।
সাথে আপনিসহ হাজার জন অন্তত আমায় পাল্টা
প্রশ্ন করবেন যে ,
নির্দিষ্ট বা উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ ছাড়া আপনি এ কথা এত আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেন বা লেখেন কিভাবে?
প্রতিবেশী একটা রাষ্ট্রের সরকারের নামে এভাবে বদনাম দেন কিসের ভিত্তিতে?
সেক্ষেত্রে আপনাদের প্রশ্নদেরকে সম্মান জানিয়েই
আমি প্রত্যুত্তর করবো ,
দুর্ঘটনাবশতঃ কোনো কোনো সময়ে কিছু গোপনীয়
ঘটনার রহস্য ফাঁস হয়ে পড়ে কোনোভাবে ,
যেটা অনুসন্ধিৎসু লেখক-মন চিরুনী তল্লাশি করে খুঁজে নেয় ঠিকই।
আর কবর দেওয়া এরকম বহু কিছু আজ ইন্টারনেটের বাড়বাড়ন্তে বেরিয়ে এসে সাধারণ মানুষের কাছে বাধ্য হয়েছে ধরা দিতে।

ধরা যাক আমি ডাহা মিথ্যে বলছি , বা লেখায়
প্রয়োগ করতে চাইছি রাজনৈতিক কৌশল ,
তো জানাই , জাতিসংঘ স্বীকৃত এ বিশ্বের সব দেশকে ছাড়িয়ে চীন যে সবার মাথার উপরে উঠে আসতে চাইছে যেনতেন প্রকারেণ , এ বিষয়টা নিশ্চই কম-বেশি জানেন অনেকেই , আর বর্তমানে চীন যে ভারতের ঠিক কত বড় শত্রু , তা আর নিশ্চই যুক্তি , প্রমাণ দিয়ে কাউকে বোঝাতে হবেনা?
এরপরেও জানিয়ে রাখি , যদি সময় পান ,
গুগুলে গিয়ে সার্চ করে পড়বেন , ‘চক্রব্যূহে ভারত তথা বিশ্ববাসী।’
এছাড়াও রয়ে গেছে বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণ , খোঁজার মতন খুঁজলে পাবেন আপনিও।

আচ্ছা কখনও কখনও আপনাদের মনে আমার
মতন প্রশ্ন নিশ্চই জাগে যে ,
Research and Analysis Wing , Mossad , Central Intelligence Agency , Australian Secret Intelligence Service ইত্যাদি বিশ্বের তাবড়-তাবড় সব গোয়েন্দা সংস্থা , জাতিসংঘ ,
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বর্তমানে সব চুপ কেন?
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উৎসটা
ঠিক কোথায় , তা শুধুমাত্র খুঁজে বের করাটা কি
অবৈধ কিংবা ঘোরতর অন্যায় কিছু ছিল?
এটা কি সত্যিই ছিল না সাধারণ মানুষের জানার একটা অধিকার?
লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের বিশ্বাস , জীবন , আস্থা , আর্থিক পরিস্থিতি প্রভৃতির চেয়ে রাজনীতিটা কি এক্ষেত্রেও বড়?
তবে কি বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্টের চাপ?
না কি ভয়-ভীতি , না আন্তর্জাতিক সম্পর্ক খারাপ হওয়ার দুশ্চিন্তা?
কিভাবে এত বিপুল সংখ্যক জনগণ আজ বাধ্য হয়ে হলেও মেনে নিল এই অমানুষিক হত্যাযজ্ঞকে?

যদি বলি মানুষ ছাড়াও এ অনন্ত বিশ্বব্রম্ভাণ্ডে মানুষেরই মতই আছে একধরণের প্রাণীর অস্তিত্ব?
আর হতে পারে মুষ্টিমেয় কিছু জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের
অতিরিক্ত আগ্রহ থেকে জন্ম নেওয়া দিবারাত্রির নিরলস এক্সপেরিমেন্ট , তা থেকে রেডিও সিগনাল পাঠানো , এর ভয়াবহ পরিণাম হিসেবে অতিরিক্ত মাশুল গুণতে হতে পারে গোটা পৃথিবীবাসীকেই?
হতে পারে ভবিষ্যতে এ গ্রহ থেকে সমগ্র মানব সভ্যতার অস্তিত্বই নিশ্চিহ্ন?
বলাবাহুল্য স্টিফেন হকিং তো আগেই এ বিষয়ে সচেতন করে দিয়ে গেছেন বিজ্ঞানীদের।
সময় করে কিছুটা হলেও ঘুরে আসতে পারেন গুগুল থেকে , টাইপ করবেন , ‘গহীন ও দুর্ভেদ্য রহস্যে আবৃত
Area-51!’
এছাড়াও লুকিয়ে আছে বেশ কিছু উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ , যা অনেকেই আজ গেছেন জেনে , কিন্তু ওই , চুপ?
ভারতের মাটিতেই চাপা দিয়ে রাখা আছে এমন কিছু ইতিহাস , যা সশরীরে ভূমি ফুঁড়ে জনসমক্ষে বেরিয়ে আসলে বোধহয় সৃষ্টি হবে দাবানল।
তো যাইহোক , ফিরে আসি সেই আগের টপিকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের ডেভিড ফ্রলি , বর্তমানের পদ্মভূষণ প্রাপ্ত , বেদাচার্য , আয়ুর্বেদিক শিক্ষক , বৈদিক জ্যোতিষ , গবেষক ও লেখক
বামদেব এক বিখ্যাত উক্তি করেছিলেন যে ,
“যখন পুরো বিশ্ব লেখাপড়া জানতো না , তখন ভারতের হিন্দুরা বেদ লিখেছিলেন।
যখন পুরো বিশ্বে শিক্ষা চালু ছিল না , তখন ভারতের হিন্দুদের শিক্ষা দেওয়া হত গুরুকুলের মাধ্যমে।”

ভারতের মহান পরমাণু বিজ্ঞানী ও একাদশ রাষ্ট্রপতি ডঃ এ পি জে আব্দুল কালাম এ প্রসঙ্গে উক্তি করেছেন , “বেদ মানবসভ্যতার প্রাচীনতম ক্ল্যাসিক , ভারতবর্ষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।
সমগ্র ভারতের আত্মা এই বেদেই প্রোথিত।”

ভলতেয়ার বলেছেন ,
“বেদ হল মানবসভ্যতার সবচেয়ে মূল্যবান উপহার , যার জন্য পাশ্চাত্য সবসময় প্রাচ্যের নিকট কৃতজ্ঞ থাকবে।”

বেদে সংখ্যাতত্ত্বের সর্বপ্রথম উল্লেখ প্রসঙ্গে আইনস্টাইন মন্তব্য করেছিলেন ,
“আমরা আর্যদের কাছে কৃতজ্ঞ , কেননা তাঁরাই সর্বপ্রথম সংখ্যা আবিস্কার করেছে যা ছাড়া বিজ্ঞানের কোনো আবিষ্কারই সম্ভবপর হত না।”

দার্শনিক , ধর্ম এবং সমাজতত্ত্ববিদ , অধ্যাপক , ভারতবিশারদ , সংস্কৃত ভাষায় সুপ্রসিদ্ধ জার্মান পণ্ডিত ও অনুবাদক ম্যাক্স মুলার বলেছেন ,
“পৃথিবীতে বেদ-উপনিষদের মত প্রণোদনাপূর্ণ ও
এত অতিমানবীয় বই আর নেই।”

জাতি , ধর্ম , বর্ণ নির্বিশেষে সর্বধর্মসমন্বয়ের দেশ আমাদের ভারতবর্ষ , যা বিশ্ব ইতিহাসে দখল করে আছে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান , কিন্তু আজ ক্রমশ
যেন আত্মপ্রকাশ করছে তা কেমন ম্লান হয়ে।
তো যাইহোক , বিশ্ববন্দিত , মহান মানুষদের এই অমূল্য মন্তব্যসমূহ এখানে তুলে ধরার উদ্দেশ্য কোনো ধর্মের জয়গান গাওয়া বা প্রচার নয় ,
বরং অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানানো এই যে ,
এই সমস্ত কিংবদন্তি , ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের অমূল্য সৃষ্টি ও এর পিছনে লুকিয়ে থাকা অক্লান্ত ও নিরলস পরিশ্রম , সংগ্রামের সেইসব কাহিনী , আত্মত্যাগ আজও ভারতীয় ইতিহাসের পাতায় পেয়ে ওঠেনি সেভাবে বিশেষ কোনো জায়গাই , এমনকি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র , চন্দ্র শেখর আজাদ বা রাসবিহারী বসুকে নিয়েও নয়।
থেকে গেছে অবহেলা , উদাসীনতা , বঞ্চনা , সর্বোপরি
রাজনীতির স্বীকার হয়ে , আর এভাবেই ধীরে ধীরে হয়তো ডাইনোসরের মতন এনারা হয়ে যাবেন ভারতের ভূখণ্ড থেকে আগামীতে বিলুপ্ত।

এ প্রজন্মকে যদি প্রশ্ন করা হয় , ‘পৃথিবীর প্রথম সার্জন
কে ছিলেন , যিনি আনুমানিক খ্রীস্টপূর্ব পঞ্চম শতকেই
ব্যবহার করতেন প্রায় ১১৬-২০ রকমের ছুরি-কাঁচি?’
কিংবা ‘Father of Surgery কাকে বলা হয়?’
নতুন প্রজন্ম কেন , আমরাই অনেকেই ঠিক জানিনা এর সঠিক উত্তর , এ আমাদের চরম লজ্জা!
আমরা হয়তো এও জানিনা বা স্মৃতিতে নেই আজ আর বেঁচে যে , সম্পূর্ণ পৃথিবীতে যখন প্রথাগত শিক্ষার কোনো অস্তিত্বই ছিল না , তখন ভারতে ছিল ১৬ টা বিশ্ববিদ্যালয় ও ৭২৫ টা কলেজ।
দেশীয় সেই সমস্ত মহামানবকে আমরা যথাযথ মর্যাদা দিতে পারিনি ঠিকই , কিন্তু রতনে ঠিকই চিনে নিয়েছে রতন।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবর্নের Royal Australia College of Surgeons – এর ঠিক সামনেই সগৌরবে আজও বসে আছেন মহর্ষি বিশ্বামিত্রের পুত্র এবং ধন্বন্তরির শিষ্য সুশ্রুত এর শ্বেত পাথর মূর্তি।
রাজনীতি , বিনোদন , অপরাধ , খেলাধুলা , প্রতিদিনের পেপার , নিউজ চ্যানেলে এসব
দেখে-শুনে যেন অস্থির ও তিক্ত হয়ে গেছে মন ,
পরিণত হয়ে গেছে বা পরিণত করানো হয়েছে এ আমাদের এক অভ্যেসে।
তাই প্রকৃত গণতন্ত্র , শিক্ষা-সংস্কৃতি তথা ভারতীয় অতীত ইতিহাসের সেই গৌরবময় , ভাস্বর এবং সুবৃহৎ অধ্যায় আবার ভারতবাসীর কাছে ফিরে আসুক স্বমহিমায় , এই আশায় বুক বেঁধে আজ নয় আপাতত এখানেই শেষ হোক এই প্রবন্ধ।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

Area-51 কি আদৌ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর এক Operation ঘাঁটি? : তন্ময় সিংহ রায়।

প্রায় সমগ্র বিশ্ববাসীকে দুর্ভেদ্য অন্ধকারে রেখে , Area 51- এ কর্মরত উচ্চপদস্থ অফিসার , সরকার কিংবা বিজ্ঞানীরা কি তবে দীর্ঘ ২৫ থেকে ৩০ বছর যাবৎ এলিয়েন নামক ভীনগ্রহের উন্নত প্রাণীর
সাথে অত্যন্ত গোপনে ও কৌশলে রেখে চলেছে ক্রমাগত যোগাযোগ?

চিনের হুবেই প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানী উহান শহরের চিয়াংশিয়া পৌর জেলায় অবস্থিত ‘ Wuhan institute of virology ‘ নামক গবেষণাগারটিতে দীর্ঘদিন যাবৎ অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে গবেষণা করা হয়ে আসছে বৈচিত্রময় প্রজাতির ভাইরাস নিয়ে।
বিগত বছরে সমগ্র বিশ্বব্যাপী করোনা নামক এক অপরিচিত ও মারণ ভাইরাসের মহাসংক্রমণের ফলে , হঠাৎই যেন রহস্যজনকভাবে এই গবেষণাগারটি ব্যাপকভাবে উঠে আসে প্রচারের মাধ্যমে তীব্র সমালোচনার সাম্রাজ্যে , কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ করোনা অতিমারির সেই উৎস পৃথিবীবাসির কাছে আজও হয়ে আছে এক রহস্য হয়েই।

অনুরূপভাবে , Mariana trench  ও Vatican
secret archive এর মতন High secured ও
Strictly restricted zone হিসেবে ‘Area -51’ এর জন্মলগ্ন থেকেই চরম গোপনীয়তার দুর্ভেদ্য অন্ধকারে আবৃত বলেই কিন্তু এ নিয়ে জনমানসে গহীন রহস্য ক্রমশই ঘনীভূত হয়ে আসছে দিনের পর দিন ধরে , আর জমাট বাঁধা এ সকল রহস্যকে কেন্দ্র করেই কালক্রমে জন্ম নিয়েছে বেশ কিছু Conspiracy theory. 

আসলে সত্যিকে কোনও দিনও রাখা যায়নি কবর দিয়ে , আর বিশ্ব ইতিহাসে এর উদাহরণও আছে ভুরি ভুরি।
আর ঠিক এ কারণেই হয়তো এক্ষেত্রেও ঘটে গেছে
বা চলেছে এর চুড়ান্ত সব বহিঃপ্রকাশ।

Area 51-এ কুখ্যাতি অর্জন করা একজন আমেরিকান ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিক Robert Scott Lazar
বা Bob Lazar, ১৯৮৯ সালের মে মাসে Las Vegas Television Station ‘KLAS’ -এ তদন্তকারী সাংবাদিক George Knapp- এর সাথে একটি সাক্ষাৎকারে হঠাৎই দাবী করে বসেন যে ,
ভিনগ্রহের প্রাণীদের নাকি Area 51-এ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় জেলখানার আসামীর মতই। 
আমেরিকার সামরিক বাহিনীর হাতে গুলি খাওয়া এক বহির্জাগতিক Pilot- এর সাথে Telepathy- এর মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছেন Area 51-এর একজন Officer,
এমনও এক অস্পষ্ট Video footage ধারণ করেছিলেন Area 51-এ কর্মরত ভিক্টর নামক এক ব্যক্তি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এবং সরকার বিশ্ববাসীর সামনে রহস্যজনক সেই ব্যাপারটাকে সম্পূর্ণরূপে ধামা চাপা দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও ,
৮ জুলাই ১৯৪৭ সালে দুর্ঘটনাবশতঃ হঠাৎই বিকট শব্দে মরুভূমিতে আছড়ে পড়া UFO -এর ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের পর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব নিউ
মেক্সিকোর Roswell শহর তো প্রায় গোটা বিশ্বে
এখন তুমুল জনপ্রিয়।

To watch the video click the link below :
https://youtu.be/o1RS7D_szJo

১৯৭৮ সালে Nuclear Physicist ও লেখক Stanton T. Friedman একটি Interview নেন Major Jesse A. Marcel-এর , যিনি সাহায্য করেছিলেন Flying Saucer- এর ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ এবং নিকটবর্তী Air Force Base-এ সেগুলিকে পৌঁছে দিতে।
Interview- তে Marcel স্বীকার করেন যে , Roswell-এর ধ্বংসাবশেষগুলি ছিল UFO-এর ,
ও সেই স্থান থেকে পাওয়া বিভিন্ন বস্তুসামগ্রীর কোনটাই পৃথিবীর বলে মনে হয়না।
পরবর্তীতে লেখক Stanton T. Friedman দ্বারা প্রকাশিত হয় ‘TOP SECRET/MAJIC’ ,  ‘CAPTURED'(The True Story of The World’s First Documented Alien Abduction.),  ‘FACT, FICTION, AND FLYING SAUCERS’ প্রভৃতির মতন চাঞ্চল্যকর , তথ্যসমৃদ্ধ ও জনপ্রিয় সব বই।
প্রকৃত এই ঘটনার ৪৮ বছর পর ১৯৯৫ সালে Ray Santilli (British) নামক এক Television, Film & Record Producer-এর মাধ্যমে ‘Alien Autopsy’ নামক ১৭ মিনিটের এক সাদা-কালো Video footage
প্রকাশিত হয় , যেখানে দেখা যায় Roswell Incident-এর UFO থেকে উদ্ধারকৃত Alien-এর মৃতদেহ নিয়ে ডাক্তাররা কাটা-ছেঁড়ার মাধ্যমে চালাচ্ছেন অবাধে ময়নাতদন্ত।
আর Video- টা প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই প্রায় সারা বিশ্বব্যাপী শুরু হয় তুমুল উত্তেজনার রেনেসাঁস।
কিন্তু পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এটাকে
Weather Balloon নামে Hoax (ধাপ্পাবাজি) বলে ফুৎকারে দেয় উড়িয়ে।

To watch the video click the link below :
https://youtu.be/m9lTaQMvDvs

এছাড়া , Alien from Area 51: The Alien Autopsy Footage Revealed.
Amazon এ গিয়েও পারেন দেখতে।

সাল ২০১৬-এর May মাসে রাষ্ট্রপতি হওয়ার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক মনোনয়নের জন্য সম্ভাব্য মনোনীত প্রার্থী Hillary Clinton, Jimmy Kimmel Live -এ গিয়ে বলেছিলেন , যে যদি তিনি President নির্বাচিত হন তাহলে Roswell-এর ঘটনার সত্যতা তুলে ধরবেন পৃথিবীর জনসাধারণের কাছে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ ওনার পরাজিত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেই রহস্য থেকে যায় রহস্যেই।

কিছু Conspiracy theorist-এর মতে , area-51-এ আসলে American সরকার এবং ভিনগ্রহের প্রাণীরা যৌথ প্রচেষ্টায় মানুষ ও এলিয়েনের সংকর প্রজাতি সৃষ্টির কাজে বেশ গতিশীল।
বিশ্বখ্যাত ইংরেজ তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞ Stephen William Hawking তাঁর ‘Stephen Hawking’s Favorite Places’ নামক এক Original documentary series-এ উল্লেখ করেছেন যে ,
‘One day, we might receive a signal from a planet like this….
But we should be wary of answering back. Meeting an advanced civilization could be like Native Americans encountering Columbus. That didn’t turn out so well? ‘

কিন্তু সে কথায় আজ কোনো কর্ণপাত করা বা
গুরুত্ব তো দিচ্ছেই না আমেরিকার সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা , বিজ্ঞানী থেকে সরকার ,
উপরন্তু প্রত্যুত্তরের নিদারুণ আশায় বুক বেঁধে Deep space -এ তাঁরা ক্রমাগত পাঠিয়ে চলেছেন রেডিও সিগনাল।

সম্প্রতি মার্কিন নৌবাহিনীর ফুটেজে ধরা
পড়ার রেকর্ড অনুযায়ী বিগত ২০ বছরে আকাশে UFO – এর সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে শীর্ষ মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্তা এ কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।
পাশাপাশি মার্কিন গোয়েন্দারা এ কথাও স্বীকার করেছেন যে , হতেও পারে এগুলো চিন বা রাশিয়ার মতন অন্যান্য শক্তি দ্বারা সম্পাদিত সামরিক সরঞ্জাম বা প্রযুক্তির পরীক্ষা থেকে তা মার্কিন আকাশে উদ্ভূত , যা ষড়যন্ত্রের এক অংশ মাত্র।
বলাবাহুল্য আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এ বিষয়ে বেশ অবগত।

২০ শতাব্দীর এক প্রখ্যাত বিজ্ঞানী Carl Sagan-এর ধারণানুযায়ী প্রস্তুত করা হয়েছিল ‘Voyager Golden Record’ যেটি আজ থেকে প্রায় ৪০-৪২ বছর আগে সংযোজন করা হয়েছিল Voyager Spacecraft-এর সাথে।
এতে Record-টা চালাবার নির্দেশিকা-সহ ছিল পৃথিবীর ৫৫ টা ভাষা , ১১৫ টা ছবি ও ভারতীয়
রাগ-ভৈরবী সমেত বিভিন্ন দেশের সঙ্গীত।
Golden Record -টা তৈরীর উদ্দ্যেশ্য ছিল এটাই
যে , দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে দিতে কখনও , কোনো একদিন অসীম মহাবিশ্বের কোনো এক গ্রহের এলিয়েন অথবা আমাদের মতই উন্নত কোনো প্রাণীর কাছে গিয়ে যদি এটা পৌঁছায় , তবে তাঁরা সেই Disc অনুধাবন করে জানতে পারবে যে আমরা মানুষ ,
এই Universe-এ উপস্থিত আছি বা ছিলাম কোনো একসময়ে।
NASA -এর উল্লেখযোগ্য ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী সেই মন্তব্য অনুযায়ী তাই হয়তো সর্বশেষ বলা যেতেই পারে , ‘We are not alone!’

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

বৃক্ষমাতা থিম্মাক্কা : সৌরভকুমার ভূঞ্যা।

বিষাদের মধ্যে জড়িয়ে থাকে ধূসর অন্ধকার। যন্ত্রণার মধ্যে লুকিয়ে থাকে গভীর কান্না। বিষাদ আর যন্ত্রণার বিষাক্ত ছোবলে ভয়ংকর শূন্যতায় হারিয়ে যায়অনেক জীবন। কিন্তু প্রতিটি জীবন আলোর স্বপ্ন দেখে। সেই স্বপ্ন তখনই সফল হয় যদি যন্ত্রণা আর বিষাদের অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়া যায় আলোর পথে। তার জন্য চাই আলোক-স্পর্শ, ভালোবাসার ছোঁওয়া।বাস্তবে যদি তা সম্ভব হয় তখন অন্ধকারের গর্ভে জন্ম নেয় আশ্চর্য আলো। পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা নিজেদের দুঃখ যন্ত্রণাকে আলোর পথে চালিত করে ইতিহাসের পাতায় রচনা করে গেছেন সোনালী অধ্যায়। তেমনই এক আশ্চর্যময়ী নারী হলেন পরিবেশবিদ‘বৃক্ষমাতা’ থিম্মাক্কা। যিনি বিশেষভাবে পরিচিত ‘সালুমারাদা’ থিম্মাক্কা নামে।
কর্নাটকের টুমাকুরু জেলার গুব্বি তালুকে এক অতি সাধারণ দরিদ্র পরিবারে থিম্মাক্কার জন্ম। বাবা চিক্কারাঙ্গিয়া ও মা বিজয়াম্মা, দুজনেই ছিলেন শ্রমিক। অভাবের সংসারে স্কুলে যাওয়া কিংবা পড়াশোনার করার সুযোগ হয়নি থিম্মাক্কার। অভাবের সংসারে ছোটোবেলা থেকেই বাবা-মায়ের কাজে তাঁকে সাহায্য করতে হত। বাড়ির পাশের একটি খাদানে তিনি শ্রমিকের কাজ করতেন।
১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে থিম্মাক্কার বিয়ে হয় বিক্কালু চিক্কাইয়ার সঙ্গে। তিনি ছিলেন রামনগর জেলার মাগদি তালুকের হুলিকাল গ্রামের বাসিন্দা। বিক্কালুও শ্রমিকের কাজ করতেন। সংসারে অভাব ছিল কিন্তু বেশ সুখেই কাটছিল তাদের জীবন। সেই সুখের সংসারে একসময় নেমে আসে বিষাদের অন্ধকার।
বিয়ের পঁচিশ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও তাদের কোনো সন্তান হয় না। বন্ধ্যা রমনীদের সমাজে নানান অপ্রীতিকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হত। নানাবিধ অপবাদের শিকার হতে হত। থিম্মাক্কার জীবনেও তার ব্যতিক্রম ঘটে না। লোকে তাঁকে নানান কথা শোনাত। এমনকি একসময় সমাজ তাদের একপ্রকার একঘরে করে দেয়। এসব কারণে মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েন থিম্মাক্কা। এর থেকে মুক্তি পেতে তিনি আত্মহত্যারও চেষ্টা করেন। এইসময় তাঁর পাশে দাঁড়ান চিক্কাইয়া। সন্তানের দুঃখ ভোলার জন্য তিনি বিকল্প পথের সন্ধান দেন। বলেন তাঁরা দুজনে মিলে গাছ লাগাবেন আর সেই গাছকে নিজেদের সন্তানের মতো করে বড়ো করবেন। এই অভিনব ভাবনা মনে ধরে থিম্মাক্কার।
থিম্মাক্কাদের গ্রামে প্রচুর বট গাছ। তাঁরা স্থির করেন তাঁদের গ্রাম হুলিকাল থেকে পাশের গ্রাম কুদুর পর্যন্ত বিস্তৃত চার কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে গাছ লাগাবেন। প্রথম বছর তাঁরা দশটি গাছ লাগান। পরের বছর পনেরো। তারপরের বছর কুড়ি। এইভাবে প্রত্যেক বছর গাছ লাগানোর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি গাছের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। শুধু গাছ লাগিয়ে ক্ষান্ত থাকেন না, তাদের চারিদিকে বেড়া দেন। প্রতিদিন গাছে জল দেন। এলাকায় খুব জলের সমস্যা। দীর্ঘ্য রাস্তা জল বয়ে নিয়ে যেতে হত তাঁদের। কাজটা ছিল বেশ কষ্টকর।সেই কারণে পরবর্তী সময়ে তাঁরা বর্ষাকালে গাছ লাগানো শুরু করেন।এইভাবে তাঁরা প্রায় ৩৮৫ টি বটগাছ লাগান এবং অন্যান্য গাছের সংখ্যাও প্রায় আট হাজার। সন্তানহীনা থিম্মাক্কা একটু একটু করে হয়ে ওঠেন অসংখ্য বৃক্ষের জননী।
থিম্মাক্কার কাজ মানুষের মনে ধরে। যে সমাজ তাঁকে বন্ধ্যা অপবাদ দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল, তারাই তাঁকে আপন করে নেয়। ভালোবেসে তাঁকে ডাকতে থাকেন ‘সালুমারাদা’থিম্মাক্কা নামে। কন্নড় ভাষায় ‘সালুমারাদা’ কথার অর্থ হল বৃক্ষের সারি। সন্তানহীনা থিম্মাক্কা হয়ে ওঠেন ‘বৃক্ষমাতা’ থিম্মাক্কা।
১৯৯১ সালে স্বামীকে হারান তিনি। এটা তাঁর জীবনের বড়ো আঘাত। স্বামী মারা যাওয়ার পর বিধবা ভাতার সমান্য টাকায় কোনোরকমে দিন চলতে থাকে তাঁর। তবে গাছ লাগানো আর তাদের পরিচর্যায় কোনো ছেদ পড়ে না। সেসব চলতে থাকে আগের মতো।একটু একটু করে তাঁর কার্যকলাপ আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে। পরিবেশ নিয়ে এই কাজের জন্য ১৯৯৬ সালে তিনি ‘জাতীয় নাগরিক সম্মান’ পান।ক্রমশ তাঁর কার্যকলাপ রাজ্য ছাড়িয়ে দেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কিছু কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাঁকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। কর্নাটক সরকার তাঁর লাগানো গাছের দায়িত্ব নেন।
২০১৯ সালে বাগেপল্লি ও হালাগুরু রাস্তা তৈরি করার সময় থিম্মাক্কার লাগানো গাছের কিছু কাটার প্রস্তাব হয়। ব্যাপারটা জানতে পেরে শিউরে ওঠেন থিম্মাক্কা। এরা তো কেবল গাছ নয়, তাঁর সন্তান। চোখের সামনে নিজের সন্তানদের হত্যা দেখবেন কী করে! থিম্মাক্কা কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী ও উপ-মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন গাছগুলো না কাটার জন্য। সরকার তাঁর অনুরোধকে সম্মান জানিয়ে বিকল্প রাস্তার কথা ভাবেন।
পরিবেশের প্রতি তাঁর এই অসামান্য ও নিঃস্বার্থ অবদানের জন্য ভারত সরকার ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান দেন। রাষ্ট্রপতি রমানাথ কোবিন্দ তাঁর হাতে এই সম্মান তুলে দেন। সম্মাননা প্রদানের সময় প্রোটোকল ভেঙে তিনি রাষ্ট্রপতির মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেন। এক স্নেহময়ী মায়ের এমন মধুর স্পর্শ নাড়িয়ে দেয় রাষ্ট্রপতিকেও। যা নিয়ে তিনি বলেছেন, “সালুমারাদা থিম্মাক্কার হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার মুহূর্তটি আমার কাছে খুবই হৃদয়স্পর্শী।”
১৯৯৯ সালে তাঁর জীবন নিয়ে ‘থিম্মাক্কা মাথু ২৮৪ মাক্কালু’ নামে একটি ডকুমেন্টারি হয়েছে। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে তা প্রদর্শিত হয়। তাঁর নামানুসারে একটি মার্কিন পরিবেশ সংস্থা তাদের নামকরণ করেছে থিম্মাক্কা রিসোর্সেস ফর এনভায়রনমেন্টাল এডুকেশন। এছাড়া তিনি পেয়েছন থাম্পি বিশ্ব বিদ্যালয়ের নাদোজা পুরস্কার, ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী বৃক্ষমাতা পুরস্কার, বীরচক্র প্রশস্তি পুরস্কার, কর্নাটক কল্পবল্লী পুরস্কার, সবুজ চ্যাম্পিয়ান পুরস্কার প্রভৃতি। ২০২০ সালেকর্নাটক সরকার তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি দেন।
যে মহিলাকে একদিন সমাজ একপ্রকার স্থান দেয়নি, একঘরে করে রেখেছিল, সেই মহিলাকে দেশের নানা প্রান্তে আমন্ত্রণ জানানো হয়, বিশেষ করে পরিবেশ সংক্রান্ত ব্যাপারে। শুধুমাত্র বৃক্ষরোপণ নয়, পাশাপাশি আরও বেশকিছু পরিবেশমূলক সামাজিক কর্মকাণ্ডেও তিনি জড়িয়ে রয়েছেন।
একথা অনস্বীকার্য, স্বামী পাশে না থাকলে তিনি আজ এই জায়গায় পৌঁছোতে পারতেন না। হয়তো হারিয়ে যেতেন কোনো রাক্ষুসী অন্ধকারে। স্বামী তাঁর জীবনে নতুন আলো দেখিয়েছেন। অন্ধকার থেকে তাঁকে টেনে এনেছেন জীবনের পথে। সেই স্বামীর স্মৃতিতে তিনি তাঁর গ্রামে একটি হাসপাতাল করতে চান। তাঁর জন্য একটি ট্রাস্টও গঠন করেছেন তিনি।
জীবনের চলার পথে একটি দরজা যদি বন্ধ হয়ে যায় তখন আরও একটি দরজা কোথাও না কোথাও খোলা থাকে। আমাদের শুধু সেই পথটা খুঁজে বার করতে হয় ঠিকঠাক ভাবে। যারা পারেন, তাদের জীবনের পথচলা কখনও রুদ্ধ হয় না। সেই কাজটা করে দেখিয়েছেন সালুমারাদা থিম্মাক্কা। জীবনের দুঃখ, কষ্ট, অপ্রাপ্তিগুলোকে চালিত করেছেন আলোর পথে।সংকীর্ণ গণ্ডী থেকে মুক্ত হয়ে, বৃহত্তর ও মহত্তর ভাবধারায় নিজেকে মেলে ধরেছেন উন্মুক্ত বিশ্বে। তথাকতিত পুঁথিগত শিক্ষা এবং অর্থবল না থাকলেও যে জীবনে মহৎ কাজ করতে পারা যায় তা তিনি করে দেখিয়েছেন। তার থেকে বড়ো কথা, যে প্রকৃতিকে আমরা প্রতিনিয়ত ধ্বংস করছি, তাকে তিনি ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তার চেনা রূপ। তিনি শুধু একজন পরিবেশবিদ নন, তিনি আসলে এক আলো, যে আলো আমাদের অন্ধকার পেরিয়ে এক আলোকিত জীবনপথে চালিত করে। কেবল বৃক্ষমাতা নয়, তিনি হলেন চিরন্তনী জননী।

Share This