Categories
প্রবন্ধ

বাংলা সাহিত্যের বনফুল বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় –

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় একজন বাঙালি কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার এবং কবি।  তিনি বনফুল ছদ্মনামেই বেশি পরিচিত।  তিনি ১৯ জুলাই ১৮৯৯ সালে অবিভক্ত ভারতের বিহার রাজ্যের মনিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন।  তাদের আদি নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার শিয়াখালা গ্রাম।  তাদের পরিবার “কাঁটাবুনে মুখুজ্জী” নামে পরিচিত ছিল।  তিনি মূলত পেশায় একজন চিকিৎসক ছিলেন

 

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের পিতার নাম সত্যচরণ মুখোপাধ্যায় এবং মাতার নাম মৃণালিনী দেবী।  তার বাবা একজন ডাক্তার এবং মা ছিলেন একজন গৃহিণী।  তাদের আদি নিবাস শিয়াখালা হলেও বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় বর্তমান বিহারের পূর্ণিয়া জেলার মনিহারি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

 

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় ছোট থেকেই লেখালেখি শুরু করেন।  শিক্ষকদের কাছ থেকে নিজের নাম আড়াল করতে তিনি ‘বনফুল’ ছদ্মনাম অবলম্বন করেন।  ১৯১৫ সালে সাহেবগঞ্জ স্কুলে অধ্যয়নকালে মালঞ্চ পত্রিকায় একটি কবিতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে তাঁর সাহিত্যজীবন শুরু হয়।  লেখক হিসেবে কবি বনফুল এক হাজারেরও বেশি কবিতা, ৫৮৬ টি ছোটগল্প, ৬০ টি উপন্যাস, ৫ টি নাটক, জীবনী এবং অসংখ্য প্রবন্ধ লিখেছেন।  তাঁর রচনাবলীসমগ্র ২২ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে।

কাব্যগ্রন্থ———

 

বনফুলের কবিতা, ব্যঙ্গ কবিতা, অঙ্গারপণী, চতুর্দশী, করকমলেষু।

 

উপন্যাস——–

 

ভুবন সোম-১৯৫৭, মহারাণী-১৯৫৮, অগ্নীশ্বর-১৯৫৯, মানসপুর-১৯৬৬, এরাও আছে-১৯৭২, তৃণখণ্ড- ১৯৩৫, বৈতরণীর তীরে-১৯৩৬, নিরঞ্জনা-১৯৫৫, নবীন দত্ত-১৯৭৪, হরিশ্চন্দ্র-১৯৭৯, কিছুক্ষণ-১৯৩৭, সে ও আমি-১৯৪২, সপ্তর্ষি-১৯৪৫, উদয় অস্ত-১৯৭৪, গন্ধরাজ, পীতাম্বরের পুনর্জন্ম-১৯৬৩, নঞ তৎপুরুষ, কৃষ্ণপক্ষ, সন্ধিপূজা, হাটেবাজারে, কন্যাসু, অধিকলাল, গোপালদেবের স্বপ্ন, স্বপ্নসম্ভব, কষ্টিপাথর, প্রচ্ছন্ন মহিমা, দুই পথিক, রাত্রি, পিতামহ, পক্ষীমিথুন, তীর্থের কাক, রৌরব, জলতরঙ্গ, রূপকথা এবং তারপর, প্রথম গরল, রঙ্গতুরঙ্গ, আশাবারি, ঌ, সাত সমুদ্র তেরো নদী, আকাশবাসী, তুমি, অসংলগ্ন, সীমারেখা, ত্রিবর্ণ, অলংকারপুরী, জঙ্গম, অগ্নি, দ্বৈরথ, মৃগয়া, নির্মোক, ভীমপলশ্রী, পঞ্চপর্ব, লক্ষ্মীর আগমন, ডানা, হাটে বাজারে, মানদন্ড, নবদিগন্ত, কষ্টিপাথর, স্থাবর।

 

ছোট গল্প সঙ্কলন——-

 

বনফুলের গল্প, বনফুলের আরো গল্প, বাহুল্য, বিন্দু বিসর্গ, অনুগামিনী, বনফুলের শ্রেষ্ঠ গল্প, মানুষের মন, বনফুলের গল্প সংগ্রহ – ১, বনফুলের গল্প সংগ্রহ – ২।

 

নাটক——–

 

বনফুল ছিলেন জীবনী-নাটকের পথিকৃৎ।

শ্রীমধুসূদন, বিদ্যাসাগর।

 

সম্মাননা——

 

তার সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি পদ্মভূষণ (১৯৭৫) উপাধি লাভ করেন। এছাড়াও তিনি শরৎস্মৃতি পুরস্কার (১৯৫১), রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৬২), বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদক (১৯৬৭)পান। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিলিট উপাধি প্রদান করে ১৯৭৩ সালে।

 

মৃত্যু—–

 

কলকাতায়, ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ তিনি প্রয়াত হন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

চকলেট ডে কি, কেন পালিত হয় – তার সম্পর্কে কিছু কথা।

শুধু ৯ ফেব্রুয়ারি নয়, চকলেট ডে আসে বছরে ১১ বার
‘ভালোবাসা হলো আর্চিস গ্যালারি, ভালোবাসা হলো গোপন খেলা, ভালোবাসা হলো চোখের জল, ভালোবাসা হলো নীল খামের ভেলা’ আর সেই নীল খামে চকলেট ভরা।  নইলে ভালোবাসা ঠিকমতো জমে না।  পকেট বান্ধব বাজেটে আপনার প্রিয়জনকে চকলেট দেওয়ার চেয়ে ভাল উপহার আর কিছু হতে পারে না।
ভালোবাসার সপ্তাহে শুভ মহরতের দিন পরিণত হয়েছে।  এবং এই সপ্তাহে শত শত মন অবরুদ্ধ হতে চলেছে।  চকলেট হল ফুল দিয়ে ভালোবাসা প্রকাশের সবচেয়ে ভালো উপায়।  এই মিষ্টি স্বাদের খাবারটি সেই বিশেষ ব্যক্তির মুখে হাসি আনতে বাধ্য।

কেন চকলেট নিয়ে এমন উৎসবে মেতেছে বিশ্বের মানুষ?  তবে এই প্রশ্নের কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর দেওয়া যাবে না।  আপনি যদি এই দিনে চকলেট দিতে মিস করেন, চিন্তা করবেন না, চকোলেট ডে বছরে অনেকবার আসে।

হ্যাঁ, ৯ ফেব্রুয়ারি ‘চকলেট’ দিবস হিসেবে পালিত হয়, কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ক্যালেন্ডার অন্য কথা বলে।  কোলেট ডের ক্যালেন্ডার অনুসারে, শুধুমাত্র ৯ ফেব্রুয়ারি নয়, ৭ জুলাই ‘বিশ্ব চকোলেট দিবস’।  আবারও যুক্তরাষ্ট্র ১৩ সেপ্টেম্বরকে ‘আন্তর্জাতিক চকলেট দিবসের’ মর্যাদা দিয়েছে। ব্রিটেনে ২৮ অক্টোবর দেশটির বাসিন্দারা ‘জাতীয় চকলেট দিবস’ পালন করে।
শুধু তাই নয়, লাইট বিটারসুইট চকলেট ডে – ১০ জানুয়ারী, মিল্ক ফ্লেভারড চকলেট ডে – ২৮ জুলাই, হোয়াইট চকলেট ডে – ২০ সেপ্টেম্বর, চাঙ্কি চকোলেট ডে – ১৫ মে, আইসক্রিম চকোলেট ডে – ৭ জুন, চকলেট মিল্কশেক ডে – ১২ সেপ্টেম্বর, চকলেট  কোন উপাদান দিয়ে সজ্জিত দিন – ১৬ ডিসেম্বর।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ ০৯ ফেব্রুয়ারী, ইতিহাসের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নেব ইতিহাসের এই দিনে বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু, দিনসহ ঘটে যাওয়া ঘটনা।

আজ ০৯ ফেব্রুয়ারী । এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু দিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।

 

দিবস—–

 

(ক) চকলেট ডে।

 

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৭৩৭ – টমাস পেইন, ইংরেজ-মার্কিন দার্শনিক, লেখক এবং কর্মী।

 

১৭৭৩ – উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবম রাষ্ট্রপতি।

 

১৮৪৭ – কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রখ্যাত বাঙালি আইনজ্ঞ অধ্যাপক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বাঙালি রেজিস্ট্রার ।

 

১৮৭৯ – সুবোধ চন্দ্র বসু মল্লিক বা রাজা সুবোধ মল্লিক বাংলার গুপ্ত সমিতির বিপ্লবী নেতা ও স্বাধীনতা সংগ্রামী।

 

১৯০২ – মণীশ ঘটক, বাঙালি গল্পকার, কবি এবং ঔপন্যাসিক।

 

১৯০৯ – বিশিষ্ট কার্টুনিস্ট ও চিত্রশিল্পী শৈল চক্রবর্তী।

 

১৯২২ – জিম লেকার, ইংরেজ ক্রিকেটার এবং ধারাভাষ্যকার

১৯২৩ – কবীর চৌধুরী, বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক এবং অনুবাদক।

 

১৯৩০ – সুভাষ দত্ত, বাংলাদেশী চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং অভিনেতা

১৯৩৫ – শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৪০ – জন ম্যাক্সওয়েল কুতসি, দক্ষিণ আফ্রিকান-অস্ট্রেলিয়ান ঔপন্যাসিক, প্রবন্ধকার এবং ভাষাবিৎ, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী

১৪৪১ – উজবেক কবি ও চিন্তানায়ক নিজামুদ্দিন মির আলিশের নভোইয়ে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৪২ – এম এ জলিল, বাংলাদেশের একজন মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ এবং সামরিক কর্মকর্তা

১৯৪৩ – জোসেফ স্টিগ্‌লিয্‌, মার্কিন অর্থনীতিবিদ এবং অধিবিদ্যাবিৎ, অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী

১৯৪৪ – অ্যালিস ওয়াকার, মার্কিন ঔপন্যাসিক, ছোট গল্প লেখক এবং কবি

১৯৪৫ – ইয়োশিনোরি ওসুমি, জাপানিজ কোষ জীবতত্ত্ববিদ, চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী

১৯৫৪ – ক্রিস গার্ডনার, মার্কিন ব্যবসায়ী এবং জনহিতৈষী

১৯৫৭ – গর্ডন স্ট্র্যাচান, স্কটিশ ফুটবলার এবং ম্যানেজার

১৯৬৪ – এর্নেস্তো ভালভেরদে, স্প্যানীয় ফুটবলার এবং ম্যানেজার

১৯৭০ – গ্লেন ম্যাকগ্রা, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার এবং ধারাভাষ্যকার

১৯৮০ – মার্গারিটা লেভিয়েভা, রাশিয়ান-মার্কিন অভিনেত্রী

১৯৮১ – টম হিডেলস্টোন, ইংরেজ অভিনেতা, প্রযোজক এবং সঙ্গীত পরিবেশক

 

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

১৬৩৯ – অলিভার ক্রোমওয়েলের নেতৃত্বে ইংল্যান্ড প্রজাতন্ত্রের শাসনের শুরু হয়।

১৭৫৭ – ইষ্ট ইন্ডিয়া কোন্পানীর লর্ড ক্লাইভ ও বাংলার নবাব সিরাজদৌল্লার মধ্যে আলিনগর সন্ধি হয় এবং বৃটিশরা কলকাতার দখল নিয়ে নেয়।

১৮৪৩ – মাইকেল মধুসূদন দত্ত খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন।

১৮৯৫ – উইলিয়াম জি. মরগ্যান ভলিবল খেলার প্রচলন করেন।

১৯০০ – ডেভিস কাপ টেনিস টুর্নামেন্ট শুরু হয়।

১৯৫৭ -মাওলানা ভাসানীর ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলন।

১৯৬৯ – প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক উড্ডয়নে যায় বোয়িং ৭৪৭ বিমান।

১৯৭২ – বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় কিউবা।

১৯৭৯ – ইরানের স্বৈরাচারী শাসক শাহের জেনারেলরা তেহরানে সামরিক শাসনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেন।

১৯৯১ – লিথুনিয়া সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পক্ষে ভোট দেয়।

১৯৯২ – নির্বাচনে ইসলামী স্যালভেশন ফ্রন্ট বা এফআইএস ব্যাপক সাফল্য দেখে দেশটির ক্ষমতাসীন সেনা কর্মকর্তারা নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে দেয়।

১৯৯৪ – গাজা ও জেরিকো থেকে ইসরাইলি অপসারণ ও সেখানে ফিলিস্তিনি স্বায়ত্তশাসন প্রদানে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থার মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

১৯৯৪ – নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

২০০১ – যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ডুবোজাহাজ ইউএসএস গ্রীনভিল হাওয়াই দ্বীপের কাছে পার্ল হারবার সাগরে জাপানের একটি মাছ ধরার জাহাজকে ধাক্কা দেয়।

 

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

১৮৮১ – ফিওদোর দস্তয়েভ্‌স্কি, বিখ্যাত রুশ সাহিত্যিক।

 

১৮৯৪ – নবগোপাল মিত্র , ঊনবিংশ শতকের জাতীয়তাবাদের মহান কর্মী ও ‘হিন্দুমেলা’ র মূল সংগঠক।

 

১৯৬৫ – (ক) খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ এর মৃত্যু।

(খ) ডা রফিউদ্দিন আহমেদ ভারতে প্রথম ডেন্টাল কলেজ ও হসপিটালের প্রতিষ্ঠাতা।

 

১৯৭৪ – অর্ধেন্দুকুমার গঙ্গোপাধ্যায়, বাঙালি শিল্প সমালোচক এবং অধ্যাপক।

 

১৯৭৫ – প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি চিত্রশিল্পী ক্ষিতীন্দ্রনাথ মজুমদার।

 

১৯৭৯ – বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, বাঙালি সাহিত্যিক।

১৯৭৯ –   কমলকুমার মজুমদার বিংশ শতাব্দীর একজন ভারতের বাঙালি ঔপন্যাসিক।

২০১৪ – ফজল শাহাবুদ্দীন, বাংলাদেশের প্রখ্যাত কবি।

২০২২ – জিয়াদ আল-জাজা, ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অকুতোভয় যোদ্ধা এবং চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের অন্যতম সদস্য কল্পনা দত্ত – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ভুমিকা —

 

জাতির মুক্তি ও জাতীয়তাবাদের আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ছিল অসামান্য। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই প্রতিটি সংগ্রামে তারা ছিলেন সম্মুখ সমরে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অকুতোভয় যোদ্ধা এবং চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের অন্যতম সদস্য কল্পনা দত্ত। কল্পনা দত্ত ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। বিংশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলার যেসব নারী ব্রিটিশ – বিরোধী বিপ্লবী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বিপ্লবী কল্পনা দত্ত। তার বিপ্লবী মনভাবের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে ‘অগ্নিকন্যা’ বলেছেন।

 

জন্ম–

 

কল্পনা দত্তের জন্ম ১৯১৩ সালের ২৭ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার শ্রীপুর খরণদ্বীপ ইউনিয়নের শান্ত-সবুজ পাহাড়ঘেরা শ্রীপুরে। তার পিতা বিনোদবিহারী দত্ত ও মাতা শোভন বালা দত্ত। কল্পনা দত্তের ঠাকুরদা ডাক্তার দুর্গাদাস দত্ত ছিলেন চট্টগ্রামের একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি। ইংরেজ প্রশাসনও তাকে যথেষ্ট সম্মান দিতেন। ফলে তাদের বাড়িটা সবসময় পু‍‌লিশের নজরের বাইরে ছিল। তবে শৈশব থেকেই কল্পনা ছিলেন অন্য সব মেয়েদের থেকে আলাদা। মানসিক দিক থেকেও ছিলেন ব্যতিক্রমী, অত্যন্ত ভাবপ্রবণ এবং স্পর্শকাতর। দুঃখী মানুষের দুঃখের কাহিনী তাকে ব্যথিত করতো। শৈশব তাই সকলকে নিয়ে এক সুখী সমাজের স্বপ্ন দেখতেন।

 

শিক্ষা জীবন—

কল্পনা দত্তের প্রাথমিক লেখাপড়া শেষে তাকে ডা. খাস্তগীর স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন তার বাবা। বীরকন্যা প্রীতিলতাও এই স্কুলের ছাত্রী ছিলেন। কল্পনা দত্ত প্রীতিলতার এক ক্লাসের ছোট ছিলেন। এই স্কুলে প্রতিটি শ্রেণিতে প্রীতিলতা ও কল্পনা দত্ত প্রথম কিংবা দ্বিতীয় ছিলেন। যে কারণে তাদের মধ্যে একটা যোগাযোগ ছিল

চট্টগ্রাম থেকে ১৯২৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর কল্পনা দত্ত কলকাতা আসেন এবং বেথুন কলেজ-এ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। বেথুন কলেজে পড়তে পড়তে তিনি নানা ধরনের বিপ্লবী কর্মকান্ডে জরিয়ে পরেন। শহীদ ক্ষুদিরাম এবং বিপ্লবী কানাই লাল দত্তের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি বেথুন কলেজ-এ গড়ে ওঠা ছাত্রী সংঘ-এ যোগদান করেন।

 

প্রীতিলতার সাথে পরিচয়—

 

চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখলের নেতা বীর শহীদ সূর্য সেন, পূর্ণেন্দু দস্তিদারের নামের সঙ্গে যে দু’জন নারীর নাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে তাদের একজন হলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, আর অন্যজন কল্পনা দত্ত। তিনি ছিলেন মাস্টারদার প্রিয় পাত্রী, রবীন্দ্রনাথের ‘অগ্নিকন্যা’ এবং চট্টগ্রামে সকলের ‘ভুলুদা’ নামে পরিচিত। নারীরাও যে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারেন, সেই সময়ে তা কল্পনা করা যেত না। নারীদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় চট্টগ্রামের যুব বিদ্রোহ ব্রিটিশদের ভিতকেই কাঁপিয়ে দিয়েছিল। বেথুন কলেজে ভর্তি হওয়ার কয়েক দিন পর প্রীতিলতার সাথে পরিচয় ঘটে। প্রীতিলতা আন্তরিকতা সাংগঠনিক দক্ষতা, ব্যবহারে মেয়েদের খুব আপন করে নিতে পারতেন। তখন প্রীতিলতা ওই একই কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে বি.এ. পড়ছেন। থাকেন ছাত্রীনিবাসে। এখানে মাষ্টারদার নির্দেশে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। গড়ে তুলেন এক বিপ্লবীচক্র। এই বিপ্লবীচক্রে অনেক মেয়ে সদস্য যোগ দেন। এই বিপ্লবীচক্রে কল্পনাও যুক্ত হলেন। এই চক্রের মূল কাজই ছিল বিপ্লবীকর্মী তৈরির পাশাপাশি অর্থ সংগ্রহ করা। অর্থ সংগ্রহ করে প্রীতিলতা চট্টগ্রামে পাঠাতেন।

 

চট্টগ্রামে সূর্য সেনের সাথে পরিচয়—

১৯৩০ সালে কল্পনা দত্ত আবার চট্টগ্রামে ফিরে যান। এই সময় পুর্নেন্দু দস্তিদারের মাধ্যমে তিনি মাস্টার দা সূর্য সেনের সাথে পরিচিত হন এবং মাস্টার দা প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি, চট্টগ্রাম শাখা-য় যোগদান করেন। তখন চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের নেতৃবৃন্দ গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিং, লোকনাথ বল প্রমুখ বিচারাধীন বন্দী। সেই সময় মহিলাদের বিপ্লবী দলে প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। কিন্তু মাস্টার দা এই সমস্ত নিয়ম নীতি শিথিল করে কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার-কে তার দলে গ্রহণ করেন।

 

বিপ্লবী জীবন—-

কলকাতা থেকে ফেরার সময় তিনি গোপনে কিছু বিষ্ফোরক নিয়ে আসেন, এছাড়াও গোপনে গান কটনও তৈরী করেছিলেন। এই সময় বিপ্লবী নেতৃবৃন্দের বিচার ও সাজা রুখতে তিনি বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি কোর্ট এবং জেলে ডিনামাইট দ্বারা বিষ্ফোরনের পরিকল্পনা করেছিলেন, যাতে বিপ্লবী নেতৃবৃন্দ পালাতে সক্ষম হন।
কিন্তু তার পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়। ফলে তার বিপ্লবী কর্মকান্ডের উপর কিছু প্রতিবন্ধকতা আসে। যাই হোক এই সময় তিনি প্রায়ই মাস্টার দার সাথে তার গ্রামে ঘুরে গ্রামের মানুষের সুখ দুঃখের খবর নিতেন। এরই সাথে সাথে তিনি ও তার সহযোদ্ধা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রত্যহ গুলি চালনার প্রশিক্ষন নিতেন।

 

ইউরোপীয় ক্লাবে আক্রমণ—

১৯৩১ সালে সূর্য সেন, কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে চট্টগ্রামের ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের দায়িত্ব দেন। নির্দিষ্ট দিনের এক সপ্তাহ আগে পুরূষের ছদ্মবেশে একটি সমীক্ষা করতে গিয়ে তিনি ধরা পরেন ও গ্রেফতার হন। জেলে বসে তিনি অপারেশন পাহারতলী এবং বীরাঙ্গনা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মহত্যার খবর শোনেন।

 

গ্রেফতার ও নির্বাসন—-

জামিনে মুক্তি পেয়ে মাস্টার দার নির্দেশে তিনি কিছু দিন আত্মগোপন করে থাকেন। ১৯৩৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশ তাদের গোপন ডেরা ঘিরে ফেলে। কল্পনা এবং মনিন্দ্র দত্ত পালাতে সক্ষম হলেও মাস্টার দা বন্দী হন। কিছুদিন পর কল্পনা এবং তার কিছু সহযোদ্ধা পুলিশের হাতে ধরা পরেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন মামলায় মাস্টার দা ও তারকেশ্বর দস্তিদারকে মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত করা হয়। কল্পনা দত্ত যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দণ্ডিত হন।

 

পরবর্তী জীবন—

১৯৩৯ সালে মুক্তি লাভের পর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কে সাম্মানিকসহ স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। তারপর তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যান। ১৯৪৩ সালে C.P.I নেতা পূরণচাঁদ যোশীর সাথে তার বিবাহ হয়। এর পর তিনি চট্টগ্রামে ফিরে যান এবং দলের মহিলা ও কৃষক সংগঠনকে চাঙ্গা করেন। ১৯৪৬ সালে C.P.I প্রার্থী হয়ে তিনি চট্টগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। কিন্তু জয়ী হতে পারেন নি। স্বাধীনতার পর তিনি ভারতে চলে আসেন। ১৯৫০ সালে ইণ্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে চাকরি নেন। পরে দিল্লী থাকতেন। সেখানে নারী আন্দোলনে মুখ্যভূমিকা নেন। ভারত ও তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার মৈত্রী সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার যথেষ্ট অবদান ছিল। ‘অল ইণ্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ রাশিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

 

নারী আন্দোলনে ভূমিকা—

 

দেশভাগের পরও অনেকদিন তিনি চট্টগ্রামেই থেকে যান। ১৯৫০ সালে ইন্ডিয়ান স্ট্যাস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে চাকুরি নেন এবং পরবর্তী সময়ে দিল্লিতে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি নানাবিধ কাজের সাথে যুক্ত হন। ভারতের নারী আন্দোলনে তিনি ভূমিকা রাখেন। কল্পনা দত্ত নারী সমিতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ভারতের মৈত্রী সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার যথেষ্ট অবদান ছিল।
তিনি অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব ন্যাশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ-এর সাধারণ সম্পাদিকাও ছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় কল্পনা দত্ত নানাভাবে সহযোগিতা করেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ ও খাবার সংগ্রহ করণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে অন্যান্য বিপ্লবী কমরেডদের সাথে কল্পনা দত্ত চট্টগ্রাম আসেন। সেখানে মিউনিসিপ্যাল স্কুল প্রাঙ্গণে বিপ্লবী দলকে সম্বর্ধনা দেয়া হয়। কল্পনা দত্তের লেখা বইয়ের নাম- ‘চট্টগ্রাম অভ্যুত্থান’।

 

মৃত্যু—

 

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে কল্পনা দত্ত একটি চিরস্মরণীয় নাম। স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অসীম সাহস ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে চির জাগরুক হয়ে থাকবেন এক অকুতোভয় নারী যোদ্ধা- কল্পনা দত্ত।১৯৯১ সালে চট্টগ্রামে যুব আন্দোলনের ইতিহাস লিখতে শুরু করেছিলেন, শেষ করতে পারেননি। তার জীবনের স্মৃতিকথার তিন হাজার পৃষ্ঠার পাণ্ডুলিপি হারিয়ে ফেলেছিলেন সামান্য এক ভুলের কারণে। সেই মনোবেদনা নিয়ে ১৯৯৫ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি ৮২ বছর বয়সে নয়া দিল্লী তে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবণ বদলে দেওয়া কিছু বিখ্যাত উক্তি।

১. ” মানুষের দেবতা মানুষের মনের মানুষ , জ্ঞানে কর্মে ভাবে যে পরিমাণে সত্য হই সেই পরিমাণেই সেই মনের মানুষকে পাই –অন্তরে বিকার ঘটলে সেই আমার আপন মনের মানুষকে মনের মধ্যে দেখতে পাই নে । মানুষের যত-কিছু দুর্গতি আছে সেই আপন মনের মানুষকে হারিয়ে, তাকে বাইরের উপকরণে খুঁজতে গিয়ে , অর্থাৎ আপনাকেই পর করে দিয়েছে । ” ——- মানুষের ধর্ম ১/১১

২. ” মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ , সে বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত রক্ষা করব । আশা করব, মহাপ্রলয়ের পরে বৈরাগ্যের মেঘমুক্ত আকাশে ইতিহাসের একটি নির্মল আত্মপ্রকাশ হয়তো আরম্ভ হবে এই পূর্বাচলের সূর্যোদয়ের দিগন্ত থেকে । আর-একদিন অপরাজিত মানুষ নিজের জয়যাত্রার অভিযানে সকল বাধা অতিক্রম করে অগ্রসর হবে তার মহৎ মর্যাদা ফিরে পাবার পথে । মনুষ্যত্বের অন্তহীন প্রতিকারহীন পরাভবকে চরম বলে বিশ্বাস করাকে আমি অপমান মনে করি । ” ——- সভ্যতার সংকট

৩. ” যে পাখির ডানা সুন্দর ও কণ্ঠস্বর মধুর তাকে খাঁচায় বন্দী করে মানুষ গর্ব অনুভব করে; তার সৌন্দর্য সমস্ত অরণ্যভূমির , এ কথা সম্পত্তিলোলুপরা ভুলে যায় । মেয়েদের হৃদয়মাধুর্য ও সেবানৈপুণ্যকে পুরুষ সুদীর্ঘকাল আপন ব্যক্তিগত অধিকারের মধ্যে কড়া পাহারায় বেড়া দিয়ে রেখেছে। মেয়েদের নিজের স্বভাবেই বাঁধন-মানা প্রবণতা আছে , সেইজন্যে এটা সর্বত্রই এত সহজ হয়েছে । ” ——– নারী-২

৪. ” শুধু বিধাতার সৃষ্টি নহ তুমি নারী—
পুরুষ গড়েছে তোরে সৌন্দর্য সঞ্চারি
আপন অন্তর হতে বসি কবিগণ
সোনার উপমাসূত্রে বুনিছে বসন ।
সঁপিয়া তোমার ’পরে নূতন মহিমা
অমর করিছে শিল্পী তোমার প্রতিমা ।
 ” —– মানসী

৫. ” প্রেম শান্তিরূপেও আসবে অশান্তিরূপেও আসবে, সুখ হয়েও আসবে দুঃখ হয়েও আসবে–সে যে-কোনো বেশেই আসুক তার মুখের দিকে চেয়ে যেন বলতে পারি তোমাকে চিনেছি , বন্ধু তোমাকে চিনেছি । ” ——- শান্তিনিকেতন -১

৬. ” সোনার চেয়ে আনন্দের দাম বেশি ; ….. প্রতাপের মধ্যে পূর্ণতা নেই , প্রেমের মধ্যেই পূর্ণতা । সেখানে মানুষকে দাস করে রাখবার প্রকাণ্ড আয়োজনে মানুষ নিজেকেই নিজে বন্দী করেছে । ” —— পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি

৭. ” সহজ মানুষের সত্যটি সামাজিক মানুষের কুয়াশায় ঢেকে রেখে দেয় । অর্থাৎ আমরা নানা অবান্তর তথ্যের অস্বচ্ছতার মধ্যে বাস করি । শিশুর জীবনের যে সত্য তার সঙ্গে অবান্তরের মিশেল নেই । তাই, তার দিকে যখন চেয়ে দেখবার অবকাশ পাই তখন প্রাণলীলার প্রত্যক্ষ স্বরূপটি দেখি ; তাতে সংস্কারভারে পীড়িত চিন্তাক্লিষ্ট মন গভীর তৃপ্তি পায় ।” —— পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি

৮. ” সুন্দর আপনি সুন্দর এবং অন্যকে সুন্দর করে । কারণ , সৌন্দর্য্য হৃদয়ে প্রেম জাগ্রত করিয়া দেয় এবং প্রেমই মানুষকে সুন্দর করিয়া তোলে । ” —– সৌন্দর্য্য ও প্রেম

৯. ” কবিদিগকে আর কিছুই করিতে হইবে না , তাঁহারা কেবল সৌন্দর্য্য ফুটাইতে থাকুন —জগতের সর্ব্ত্র যে সৌন্দর্য্য আছে তাহা তাঁহাদের হৃদয়ের আলোকে পরিস্ফুট ও উজ্জ্বল হইয়া আমাদের চোখে পড়িতে থাকুক , তবেই আমাদের প্রেম জাগিয়া উঠিবে, প্রেম বিশ্বব্যাপী হইয়া পড়িবে । ” —- কবিতা ও তত্ত্ব

১০. ” জ্ঞানে প্রেমে অনেক প্রভেদ । জ্ঞানে আমাদের ক্ষমতা বাড়ে , প্রেমে আমাদের অধিকার বাড়ে । জ্ঞান শরীরের মত , প্রেম মনের মত । জ্ঞান কুস্তি করিয়া জয়ী হয় , প্রেম সৌন্দর্য্যের দ্বারা জয়ী হয় । জ্ঞানের দ্বারা জানা যায় মাত্র , প্রেমের দ্বারা পাওয়া যায় । জ্ঞানেতেই বৃদ্ধ করিয়া দেয় , প্রেমেতেই যৌবন জিয়াইয়া রাখে । জ্ঞানের অধিকার যাহার উপরে তাহা চঞ্চল , প্রেমের অধিকার যাহার উপরে তাহা ধ্রুব । জ্ঞানীর সুখ আত্মগৌরব-নামক ক্ষমতার সুখ , প্রেমিকের সুখ আত্মবিসর্জ্জন-নামক স্বাধীনতার সুখ । ” ——- জ্ঞান ও প্রেম

১১. ” পৃথিবীর চারি দিকে দেয়াল , সৌন্দর্য্য তাহার বাতায়ন । পৃথিবীর আর সকলই তাহাদের নিজ নিজ দেহ লইয়া আমাদের চোখের সম্মুখে আড়াল করিয়া দাঁড়ায় , সৌন্দর্য্য তাহা করে না —সৌন্দর্য্যের ভিতর দিয়া আমরা অনন্ত রঙ্গভূমি দেখিতে পাই । ” —— মর্ত্যের বাতায়ন

১২. ” ছেলে যদি মানুষ করিতে চাই , তবে ছেলেবেলা হইতেই তাহাকে মানুষ করিতে আরম্ভ করিতে হইবে , নতুবা সে ছেলেই থাকিবে , মানুষ হইবে না । শিশুকাল হইতেই কেবল স্মরণশক্তির উপর সমস্ত ভর না দিয়া সঙ্গে সঙ্গে যথা পরিমাণে চিন্তাশক্তি ও কল্পনাশক্তির স্বাধীন পরিচালনার অবসর দিতে হইবে । ” —— শিক্ষার হেরফের

১৩. ” তোর আপন জনে ছাড়বে তোরে ,
তা ব’লে ভাবনা করা চলবে না ।
ও তোর আশালতা পড়বে ছিঁড়ে ,
হয়তো রে ফল ফলবে না ।
আসবে পথে আঁধার নেমে , তাই ব’লেই কি রইবি থেমে–
ও তুই বারে বারে জ্বালবি বাতি ,
হয়তো বাতি জ্বলবে না ।
 ” —– গান

১৪. ” আগুনকে যে ভয় করে সে আগুনকে ব্যবহার করতে পারে না । ” —— চার অধ্যায়

১৫. ” পৃথিবীতে সকলের চেয়ে বড়ো জিনিস আমরা যাহা কিছু পাই তাহা বিনামূল্যেই পাইয়া থাকি , তাহার জন্য দরদস্তুর করিতে হয় না । মূল্য চুকাইতে হয় না বলিয়াই জিনিসটা যে কত বড়ো তাহা আমরা সম্পূর্ণ বুঝিতেই পারি না ।” ———- পরিচয়/ ভগিনী নিবেদিতা

Share This
Categories
প্রবন্ধ

আজ বিশ্ব ক্যান্সার দিবস : আশঙ্কার বদলে সচেতনতা প্রসার বেশি জরুরি।

প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে অনেক মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন। যেমন অনেকেই শেষ পর্যন্ত ক্যানসারকে জয় করে ফেলতে পারেন, তেমনই অনেকেই দীর্ঘ লড়াইয়ের পর হার মানতে বাধ্য হন। ২০২০ সালে প্রায় ১ কোটি মানুষ মারা গিয়েছেন ক্যানসার। পরিসংখ্যান বলছে, গোটা পৃথিবী যত মানুষ মারা যান, তার প্রতি ছয় জনের মধ্যে এক জনের মৃত্যুর কারণ ক্যানসার। তবে ক্যানসারের চিকিৎসা গত কয়েক বছরে অনেক এগিয়ে গিয়েছে। এবং সেই ভাবনা থেকেই উঠে এসেছে বিশ্ব ক্যানসার দিবস পালনের কথা।

 

উন্নত-আধুনিক দেশ থেকে পিছিয়ে পড়া কোনও দেশ, ক্যান্সার এবং তার জেরে মৃত্যুর খবর শোনা যায় সবজায়গাতেই। তথ্য বলছে বিশ্বে মৃত্যুর কারণ হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ক্যান্সার। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, সচেতনতা  এবং সুষ্ঠু জীবনযাত্রা এই দুই অস্ত্রেই একটি বড় অংশের ক্ষেত্রে ঠেকিয়ে রাখা যায় এ মারণরোগ।সারা বিশ্বে ক্যান্সার মারণরোগ হিসেবে পরিচিত। কোনও কোনও সময়ে অনেকটা পরে ধরা পড়ে এই রোগ। যখন চিকিৎসার আর তেমন কোনও সুযোগ থাকে না। ফলে ক্যান্সার রুখতে গেলে Early Detection-এর কথা বলে থাকেন চিকিৎসকরা। এখানেই আসে সচেতনতার বিষয়টি। অর্থাৎ কী কী দেখে আগেভাগে সতর্ক হতে হবে, দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে তা নিয়ে সচেতনতার প্রসারের জন্য়ই এমন দিনের প্রয়োজন
ক্যান্সার নিয়ে আশঙ্কার বদলে সচেতনতা প্রসার বেশি জরুরি। ঠিক সেই কারণেই, প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হয় বিশ্ব ক্যান্সার দিবস ।

২০০০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্যারিসে বিশ্ব ক্যানসার সামিট আয়োজিত হয়। সেখানেই ঠিক হয়, এই দিনটি বিশ্ব ক্যানসার দিবস বা বিশ্ব ক্যানসার সচেতনতা দিবস বা বিশ্ব ক্যানসার প্রতিরোধ দিবস হিসাবে পালন করা হবে।এই দিনটিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO) ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং ক্যান্সার রোগীদের জীবন ধারার মান উন্নয়নে ইন্টারন্যাশানাল ইউনিয়ন এগেনষ্ট ক্যান্সার (International Union Against Cancer)-কে সহায়তা করে থাকে।
ওই দিনে ইউনেস্কোর তৎকালীন জেনারেল ডিরেক্টর কৈচিরো মাতসুরা ফরাসি প্রেসিডেন্ট জাক শিরাকের সঙ্গে তৎকালীন নিয়ে লড়াইয়ের অঙ্গীকার করেন। এই ভাবনার মূল লক্ষ্যই হল যাতে বিশ্বব্যাপী গবেষণা, তৎকালীন প্রতিরোধ, রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে উন্নতি।

২০২২, ২০২৩ এবং ২০২৪- এই তিন বছরের জন্য একই থিম রাখা হয়েছে। ‘Close The Care Gap’। ক্যান্সার রোগীদের মানসিক ও শারীরিক ভাবে দেখভালের সমস্যা দূর করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ক্যান্সারের নানা উপসর্গের বিষয়ে সচেতন করেন। কী কী সমস্যা হলে দেরি না করে দ্রত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত তা নিয়েও নিয়ম করে সচেতন করা হয়ে থাকে। তবে একটি বিশেষ দিন থাকলে তাকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বে একসঙ্গে সামগ্রিক ভাবে সচেতনতা ও সতর্কতার প্রসার করা যায়। ক্যান্সার এবং তার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত সবস্তরের লোকজন, রোগী-রোগীর পরিবার, চিকিৎসক, সাপোর্ট গ্রুপ, প্রশাসন- সবাইকে নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এই দিনটি পালিত হয়।

যেসব কারণে ক্যান্সার হয় তার ঝুঁকিগুলোর মধ্যে- ধূমপান, পান-জর্দা-তামাকপাতা খাওয়া, সবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া, শারীরিক ব্যায়াম না করা, শারীরিক স্থূলতা বা বেশি ওজন, আলট্রাভায়োলেট রশ্মি, এক্স-রে রেডিয়েশন, কিছু রাসায়নিক পদার্থ, কিছু ভাইরাস বা অন্যান্য জীবাণু অন্যতম।

যদিও ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু সেই সাথে ক্যান্সার থেকে আরোগ্য পাওয়া লোকদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে ক্যান্সার সনাক্তকরণে পারদর্শীতা বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন চিকিৎসার আবির্ভাব যা পূর্বে ছিল না। বর্তমান সময়ে শুরুতেই যদি ক্যান্সার সনাক্ত করা যায় তাহলে সেটি খুব সহজেই সফলভাবে চিকিৎসা করা যায়।

বর্তমানে মানুষের মধ্যে পাওয়া ক্যান্সারের ৪০% এরও বেশি নিরাময়যোগ্য এবং আক্রান্ত রোগীর বেঁচে যাওয়ার সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিগত দশক ধরে ক্যান্সার নিয়ে পড়াশোনা এবং একে বোঝার ফলস্বরূপ সম্ভবত এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন সম্ভাবনারও জন্ম দিয়েছে। ক্যান্সার নির্ণয়, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি দেখা যায় তা রোগীদের ক্যান্সারের সুষ্ঠু চিকিৎসার ব্যাপারে সর্বোচ্চ আস্থা দেয়।

ঠিক কোন কারণে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সকলে তা বোঝা কঠিন। খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম, পর্যান্ত ঘুমের অভাব এই সবের সঙ্গে অধিক পরিমাণ রেস্তোরাঁর খাবার- এই সবে অভ্যস্ত বর্তমান প্রজন্ম। এখন প্রায় কেউই শরীর চর্চার জন্য সময় বের করতে পারেন না। তেমনই বাড়ির রান্নার বদলে দোকানে খাবারে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এর সঙ্গে ধূমপান ও মদ্যপান তো আছেই। আর এই সব খারাপ অভ্যেসের প্রভাব পড়ছে আমাদের শরীরে। সে কারণেই বয়স ৩০-র কোটায় পা দিলেই শরীরে বাঁধছে একের পর এক রোগ। ডায়বেটিস, প্রেসার, কোলেস্টেরল, ফ্যাটি লিভারের সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। তেমনই দেখা দিচ্ছে ক্যান্সার। এই রোগ থেকে বাঁচতে চাইলে সবার আগে সুস্থ জীবনযাপন করুন। সঙ্গে সর্বদা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশেষ পরীক্ষা দ্বারাই রোগ নির্নয় করা সম্ভব। তাই সঠিক সময় রোগ ধরা পড়লে তার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

তাই ক্যান্সার প্রতিরোধে সর্বপ্রথম সচেতন থাকাটা খুব জরুরি। নিয়মিত সুস্থ জীবনযাপন  ক্যান্সার প্রতিরিধে অন্যতম হাতিয়ার।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ

হারিয়ে যাওয়া নব্বইয়ের শৈশব ও ডিসেম্বরের দিনগুলো : বব চৌধুরী।

শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলো আমাদের জীবনের সবচেয়ে মধুর সময়। শৈশবকালে মাথায় চেপে বসে থাকে না কোনো চিন্তাভাবনা; শুধু খুশি, আনন্দ আর হুল্লোড়ের মধ্য দিয়ে সমগ্র ছোটবেলা কখন অতিবাহিত হয়ে কৈশোর পেরিয়ে আমরা যৌবনে প্রবেশ করি, তা বুঝতে পারি না। বুঝতে যখন পারি, তখন সেই সারল্যমাখা দিনগুলো হারিয়ে গেছে মহাকালের গভীরে।
শৈশবের একেকটা দিন আমাদের জীবনে একেকটা জাদুঘর হয়ে থাকে যে জাদুঘরে জমে থাকে হাজারো স্মৃতি।
সন্ধ্যা হতেই ঘরে ফিরে পড়তে বসা, হারিকেনের আলোতে অথবা কুপি জ্বালিয়ে রাতে একসঙ্গে মেঝে বসে খাবার খাওয়া। শৈশবের সেই নানুবাড়ির দিনগুলো; সেই ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সা, এক টাকা ও দুই টাকার গল্প; সেই শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে খেজুরের রস খাওয়া সেই লুকোচুরি খেলা।🧡 দরজার পেছনে লুকিয়ে থাকতাম কেউ এলে চমকে দেব বলে। সে আসতে দেরি করছে বলে অধৈর্য হয়ে বেরিয়ে আসতাম পূর্ণিমার রাতে চাঁদের সঙ্গে হাঁটতাম আর বলতাম, চাঁদও আমাদের সঙ্গে হাঁটছে। স্কুলে যাওয়ার সময় সবাই একসঙ্গে দৌড়ে যেতাম। ক্লাসে কলম–কলম খেলা, খাতায় ক্রিকেট খেলা, চোর-ডাকাত-বাবু-পুলিশ খেলা। এক টাকার রঙিন বা নারকেলি আইসক্রিম, চার পিস চকলেট, হাওয়াই মিঠাই খেতে না পারলে মন খারাপ হয়ে যেত। হঠাৎ আকাশপথে হেলিকপ্টার গেলে সবাই ঘর থেকে বের হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। শুক্রবার সন্ধ্যার পর আলিফ লায়লা, সিন্দবাদ, রবিনহুড ও ম্যাকগাইভার দেখার জন্য পুরো সপ্তাহ অপেক্ষা করা। ফলের বিচি খেয়ে ফেললে দুশ্চিন্তা করতাম, পেটের ভেতর গাছ হবে কি না; মাথায় মাথায় ধাক্কা লাগলে শিং গজানোর ভয়ে আবার নিজের ইচ্ছায় ধাক্কা দিতাম; আমাদের কারও দাঁত পড়লে ইঁদুরের গর্তে দাঁতটা দিয়ে আসতাম, নাহলে আমাদের দাঁত গজাবে না। কেউ বসে থাকলে তার মাথার ওপর দিয়ে ঝাঁপ দিতাম, যাতে সে আর লম্বা হতে না পারে। বিকেলে কুতকুত, কানামাছি ও গোল্লাছুট না খেললে বিকেলটা যেন মাটি হয়ে যেত।মারবেল, লুডু না খেললে কি হয়!রাতে ঘরের কোণে বাঁশবাগানে অথবা আমগাছের ডালে বসে থাকা হুতোম প্যাঁচার ডাক যেন এখনো কানে ভেসে ওঠে। আহা, ডাক শুনে ভয়ে কতই–না মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে যেতাম॥ কি করে ভুলে যাই সেই ডিসেম্বর মাসের কথা॥ এ ছাড়া সঙ্গে ছিল আমাদের কালার ফুল ডিসেম্বর যে ডিসেম্বর পাওয়ার আশায় আমাদের অপেক্ষা করতে হতো দীর্ঘ ১১ মাস। বার্ষিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হতো আমাদের ডিসেম্বর। বার্ষিক পরীক্ষার শেষ দিন আমরা ছিলাম পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ ছিল না কোনো জীবনের চাওয়া, না পাওয়ার হিসাব ছিল না কোনো পিছুটান। দুরন্তপনায় ছুটতাম ডিসেম্বরের শেষের দিনগুলো; হিসাব ছিল শুধু একটাই, বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট আর জানুয়ারির ১ তারিখে নতুন বইয়ের ছোঁয়া পাওয়ার।
পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরতেই দৌড় দিতাম খেলার মাঠে; কোদাল, পিঁড়ি, কাঠি নিয়ে উইকেট বানাতাম। সবার কাছ থেকে টাকা তুলে বল আর স্কচটেপ কিনতাম। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যা, খেলার মধ্যেই ডুবে থাকতাম। কখনো ভাত খেতে দুপুরে বাড়িতে যাওয়া হতো, কখনো যাওয়া হতো না।সন্ধ্যার পর আবার আমরা বেরিয়ে পড়তাম। তীব্র শীতে রাত জেগে আগুনের পাশে বসে মা-চাচিদের ধান সেদ্ধ করা দেখা এক অন্যরকম অনুভূতি। চারদিকে খড়ের স্তূপ আর তার মধ্যে লুকোচুরি খেলা ছিল অন্যতম। কখনো কখনো কম্বলের নিচে লুকিয়ে গল্পের বই পড়া হতো। আবার কখনো খড় জ্বালিয়ে আগুন পোহাতাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যাডমিন্টন, গোল্লাছুট, বউচি খেলে ঘরে ফিরতে হতো। একটু দেরি হলে বকা শুনতাম।আমাদের সেই ডিসেম্বরের দিনগুলো এখন হারিয়ে গেছে। এখন ডিসেম্বরেও ক্লাস থাকে, পরীক্ষা থাকে, থাকে অ্যাসাইনমেন্ট ও প্রেজেন্টেশনের ডেডলাইন, থাকে অফিস। জীবনের প্রয়োজনে ব্যস্ত হয়েছে সবাই। এখন আমাদের ডিসেম্বরের সকালগুলো কাটে ঘুমে, ক্লাসে অথবা অফিসে। এখন আর ঘুম থেকে উঠে আমরা আম্মুর হাতের শীতকালীন পিঠা খেতে পারি না এমনকি এখন সকালে উঠে আম্মুকে দেখি না। বিকেলগুলোতে আমরা আগের মতো মাঠে যেতে পারি না, যেতে হয় প্রাইভেটে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত আমরা চার দেয়ালে কাটিয়ে দিই। সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা, ছুটছি তো ছুটছি।
সময়ের পরিক্রমায় পার হয়ে গেছে আমাদের শৈশব। ব্যস্ততা বেড়েছে গ্রাম এখন নগরায়ণ হয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে হারিয়ে গেছে সেই আলোবিহীন শৈশব, হারিয়ে গেছে সেই ডিসেম্বরের দিনগুলো! এখনকার প্রজন্মের কাছে নব্বইয়ের শৈশব হয়তো রূপকথার গল্প মনে হবে। সেই দিনগুলি আমাদের পাড়ার বন্ধু গুলো এক সঙ্গে অনেক সবাই কাটিয়েছে কিন্তু এখন আর সেই সুযোগ নেই তাদের সাথে কোন যোগাযোগ নেই কোথায় কে হারিয়ে গেছে কেউ জানে না॥ হয়তো কেউ কোনো একদিন কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে ডিসেম্বরের কোনো এক বিকেলে অফিসের বারান্দায় বসে কফির চুমুতে লেখাটি পড়তে পড়তে হারিয়ে যাবে তার সেই ছেলেবেলায়, সেই হারিয়ে যাওয়া।শৈশবে সে মুহূর্তে নস্টালজিক হয়ে হয়তো দীর্ঘশ্বাস ফেলে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের দুটি লাইন আক্ষেপে বলে উঠব দিন গুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি। আমরা প্রায় সকলেই একমত যে ছাত্রজীবন বা স্কুল লাইফ হল জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। সাংসারিক জটিলতাও জীবনের বাস্তবিক খুঁটিনাটি থেকে চিন্তামুক্ত চিত্ত এই ছাত্রজীবন । স্নিগ্ধ বাতাসের মতোই নির্মল এই ছাত্রর জীবন।স্কুল লাইফ বা ছাত্রজীবনে কাটানো সময়গুলো তাই প্রায় অধিকাংশ মানুষের কাছেই সবথেকে আনন্দঘন মুহূর্ত সময় সাথে সাথেচাস্ত ভাই মামাতো ফুপাতো ভাই সবাই যার যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সবাইকে যার যার নিজ নিজ সাংসারিক জীবন নিয়ে অনেক ব্যস্ত হয়ে তবে এখনকার জীবনটা অনেক ভিন্ন রকম কিছু স্কুলের বন্ধু এখনো বন্ধুত্ব বজায় রেখেছে তার মধ্যে দুজনের নাম স্মরণ করতে পারি একজন হল আবুল হোসেন এর জন্য শহিদুল ইসলাম এখনো আমার সাথে তাদের যোগাযোগ আছে প্রতিনিয়ত কথা হয় আবুলের সাথে বছর কয়েকের মধ্যে কয়েকবার দেখা হয়েছে কিন্তু ছোট শহিদুল ইসলামের সাথে দেখা হয়নি। লেখাটি শেষ করব হেমন্ত দার গানের দুটো লাইন দিয়ে ভাবছিলাম শুধু ভাবছিলাম ভাবনার হাতে ভর দিয়ে ভাবনা গুলো কাছে নিয়ে আমি ভাবছিলাম শুধু ভাবছিলাম॥

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকারী বাঙালি বিপ্লবী – অতীন্দ্রনাথ বসু।

ভূমিকা—-

 

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এমন ই এক বাঙালি বিপ্লবী ছিলেন অতীন্দ্রনাথ বসু।

 

পরিবার—

 

অতীন্দ্রনাথ বসু ১৮৭৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতার জোড়াবাগানের বসু পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম অপূর্বকৃষ্ণ বসু।অতীন্দ্রনাথের পুত্র উত্তর কলকাতার নেতৃস্থানীয় অমর বসু পিতার সকল কাজে যুক্ত ছিলেন।

 

কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন—-

 

অতীন্দ্রনাথ নিজে একজন কুস্তিগীর ছিলেন। ময়মনসিংহের রাজা জগৎকিশোর আচার্য চৌধুরী ছিলেন তার শিক্ষাগুরু। সিমলা ব্যায়াম সমিতির প্রাঙ্গনে ভারতীয় প্রথায় কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন তিনিই প্রথম করেছিলেন।

 

স্বদেশী মেলার আয়োজন—-

 

অতীন্দ্রনাথ বসু যুবকদের দেহে ও মনে শক্তিমান করে তোলার উদ্দেশ্যে সিমলা ব্যায়াম সমিতি।

 

বিপ্লবী কর্মকান্ড—-

 

যুগান্তর বিপ্লবী দলের অন্যতম নেতৃস্থানীয় ছিলেন অতীন্দ্রনাথ বসু । তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে কয়েকবার কারাবরণ করেছিলেন, পাশাপাশি তাঁকে ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পরবর্তী পাঁচবছর ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী কেন্দ্র পরিচালনার অপরাধে নির্বাসনদণ্ড ভোগ করতে হয়।১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ সরকার সিমলা ব্যায়াম সমিতিকে শরীরচর্চার আড়ালে বিপ্লবী তৈরির আখড়া সন্দেহ করে এটিকে বেআইনি বলে ঘোষণা করে। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, ডাঃ জে. এম. দাশগুপ্ত প্রভৃতি নেতৃবর্গ সিমলা ব্যায়াম সমিতির কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

 

বিদ্যালয় স্থাপন—

 

তিনি রবীন্দ্রনাথের পরামর্শে ‘মহেশালয়’ নামের একটি বিদ্যালয় স্থাপনা করেছিলেন। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ‘ভারত ভান্ডার’ নামের একটি সংস্থা তৈরি করেন।

অতীন্দ্রনাথ যুবকদের দেহে ও মনে শক্তিমান করে তোলার উদ্দেশ্যে ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ২রা এপ্রিল সিমলা ব্যায়াম সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন।

 

দুর্গা পূজা ও স্বদেশী মেলার আয়োজন—

 

১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সার্বজনীন দুর্গা পূজার প্রচলন করেন যাতে দেশের মানুষ বিভেদ ভুলে একত্রে উৎসবে মেতে উঠতে পারে। এই পূজা প্রাঙ্গনে স্বদেশী মেলারও আয়োজন হত। অতীন্দ্রনাথ যুবকদের দেহে ও মনে শক্তিমান করে তোলার উদ্দেশ্যে ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ২রা এপ্রিল সিমলা ব্যায়াম সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন।

 

মৃত্যু—

মহান এই বিপ্লবী ১৯৬৫ সালের ১০ জুন মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু আজও তিনি স্মরনীয় হয়ে রয়েছেন তাঁর কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়, বাংলা সাহিত্যের একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী কথাসাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক।

প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় ছিলেন বাংলা সাহিত্যের একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী কথাসাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক।

প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার ধাত্রীগ্রামের মাতুলালয়ে ১৮৭৩ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।  তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার গুরাপ গ্রামে।  ১৮৮৮ সালে, প্রভাতকুমার জামালপুর হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং পাটনা কলেজ থেকে F.A এবং B.A পাস করেন ১৮৯৫ সালে। তিনি ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে আইন পড়ার জন্য বিদেশে যান এবং ব্যারিস্টারি পাস করে ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে আসেন।

উল্লেখযোগ্য রচনাকর্ম——

 

গল্প সংকলন :—

 

১) ‘নবকথা’ (১৮৯৯)

২) ‘ষোড়শী’ (১৯০৬)

৩) ‘দেশী ও বিলাতী'(১৯০৯)

৪) ‘গল্পাঞ্জলি’ (১৯১৩)

৫) ‘গল্পবীথি’ (১৯১৬)

৬) ‘পত্রপুষ্প'(১৯১৭)

৭) ‘গহনার বাক্স ও অন্যান্য গল্প'(১৯২১)

৮) ‘হতাশ প্রেমিক ও অন্যান্য গল্প’ (১৯২৪)

৯) ‘বিলাসিনী ও অন্যান্য গল্প'(১৯২৬)

১০) ‘যুবকের প্রেম ও অন্যান্য গল্প'(১৯২৮)

১১) ‘নতুন বউ ও অন্যান্য গল্প'(১৯২৯)

১২) ‘জামাতা বাবাজী ও অন্যান্য গল্প'(১৯৩১)

 

উপন্যাস সমূহ :—

 

১) ‘রমাসুন্দরী'(১৯০৮)

২) ‘নবীন সন্ন্যাসী'(১৯১২)

৩) ‘রত্নদীপ’ (১৯১৫)

৪)’ জীবনের মূল্য'(১৯১৭)

৫)’সিন্দুর কৌটা'(১৯১৯)

৬) ‘মনের মানুষ'(১৯২২)

৭) ‘আরতি’ (১৯২৪)

৮) ‘সত্যবালা ‘(১৯২৫)

৯) ‘সুখের মিলন'(১৯২৭)

১০)’সতীর পতি'(১৯২৮)

১১)’প্রতিমা'(১৯২৯)

১২) ‘বিদায় বাণী'(১৯৩৩)

১৩)’গরীব স্বামী'(১৯৩৮)

১৪) ‘নবদুর্গা'(১৯৩৮)

 

অন্যান্য গ্রন্থ :—

 

‘অভিশাপ'(ব্যঙ্গকাব্য)

 

মৃত্যু——-

 

কথাসাহিত্যিক প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় ৫ই এপ্রিল ১৯৩২ সালে ৫৯ বছর বয়সে মারা যান।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ঊর্মিলা দেবী, ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের নারী বিপ্লবী।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে ঊর্মিলা দেবী  প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু শহীদ ভগৎ সিং-এর মতই নয় বরং শক্তিশালী নারীদের দ্বারা প্রশস্ত হয়েছিল যারা তাদের মাটিতে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিল।  ঊর্মিলা দেবী ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা ছিলেন তিনি। ঊর্মিলা দেবী ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের নারী বিপ্লবী।

 

জন্ম ও পরিবার—-

 

১৮৮৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের তেলিরবাগ গ্রামে উর্মিলা দেবী জন্মগ্রহণ করেন।  তাঁর পিতার নাম ভুবনমোহন দাস এবং মাতার নাম নিস্তারিণী দেবী।  স্বামীর নাম অনন্তনারায়ণ সেন। উর্মিলা দেবী ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের বোন।  পিতামহের আদর্শে প্রভাবিত হয়ে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন।

 

রাজনৈতিক জীবন—–

 

দেশবন্ধুর অনুপ্রেরণায় তিনি নারীদের মধ্যে কাজের বিকাশ ঘটান।  ১৯২১ সালে, তিনি ‘নারী-কর্মমন্দির’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, যার লক্ষ্য ছিল চরকা ও খদ্দরকে জনপ্রিয় করা এবং দেশপ্রেম জাগানো।  ঊর্মিলা দেবী ১৯৩২ সালের অসহযোগ আন্দোলনে আইন অমান্যকারী প্রথম তিনজন মহিলার একজন। তিনি কলকাতা ‘নারী সত্যাগ্রহ সমিতি’র সভাপতি ছিলেন।

 

সাহিত্যকর্ম——

 

সে সময় নারায়ণ পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করতেন। তার প্রকাশিত সাহিত্যগ্রন্থ পুষ্পহার। মহাত্মা গান্ধী, সরোজিনী নাইডু প্রমুখের স্মৃতিকথাও রচনা করেছেন ।

 

মৃত্যু——

 

ঊর্মিলা দেবী মে ১৯৫৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This