Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

কিংবদন্তী অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন স্মরণে।

জন্ম পরিচয়–

 

সুচিত্রা সেন একজন ভারতীয় অভিনেত্রী ছিলেন। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই এপ্রিল ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির (অধুনা বাংলাদেশের  অন্তর্গত) পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মায়ের নাম ইন্দিরা দেবী গৃহবধূ। সুচিত্রা ছিলেন পরিবারের পঞ্চম সন্তান ও তৃতীয় কন্যা। ডাক নাম রমা। তবে বাবা ডাকতেন কৃষ্ণা নামে। পাবনা শহরেই তিনি পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি ছিলেন কবি রজনীকান্ত সেনের নাতনী।

 

তিনি মূলত বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তম কুমারের বিপরীতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।

 

 

শিক্ষা জীবন—

 

পাবনা শহরের মহাখালী পাঠশালার পাঠ শেষ করে, তিনি পাবনা গার্লস স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুলে তিনি দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পাক-ভারত বিভাজনের সময় এঁদের পুরো পরিবার কলকাতায় চলে যান।

 

বৈবাহিক জীবন—

 

১৯৪৭ সালে বিশিষ্ট শিল্পপতি আদিনাথ সেনের পুত্র দিবানাথ সেনের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের বিয়ে হয়। তাদের একমাত্র কন্যা মুনমুন সেনও একজন খ্যাতনামা অভিনেত্রী।তার  নাতনী রিয়া সেন ও রাইমা সেন ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

 

অভিনয় জীবন—

১৯৫২ সালে সুচিত্রা সেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৫২ সালে শেষ কোথায় ছবির মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয় কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি। সুচিত্রা সেনই বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম অভিনেত্রী, যিনি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬৩ সালে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব থেকে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান তিনি। ১৯৫৫ সালের দেবদাস ছবির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেন, যা ছিল তার প্রথম হিন্দি ছবি। উত্তম কুমারের সাথে বাংলা ছবিতে রোমান্টিকতা সৃষ্টি করার জন্য তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বিখ্যাত অভিনেত্রী। ১৯৬০ ও ১৯৭০ দশকে তার অভিনীত ছবি মুক্তি পেয়েছে। স্বামী মারা যাওয়ার পরও তিনি অভিনয় চালিয়ে গেছেন, যেমন হিন্দি ছবি আন্ধি। এই চলচ্চিত্রে তিনি একজন নেত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। বলা হয় যে চরিত্রটির প্রেরণা এসেছে ইন্দিরা গান্ধী থেকে। এই ছবির জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন এবং তার স্বামী চরিত্রে অভিনয় করা সঞ্জীব কুমার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জিতেছিলেন। হিন্দি চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবছর দাদাসাহেব সম্মাননা প্রদান করে ভারত সরকার। চলচ্চিত্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ এ সম্মাননা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। ২০০৫ সালে দাদাসাহেব সম্মাননা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি। সম্মাননা নিতে কলকাতা থেকে দিল্লি যেতে চাননি বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।

 

উত্তম-সুচিত্রা জুটি—-

 

বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে উত্তম-সুচিত্রা জুটিকে এখনো শ্রেষ্ঠ জুটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একসময় কলকাতার চলচ্চিত্র পাড়ায় উত্তম-সুচিত্রা জুটি ছাড়া সে সময় কোনো ছবি ‘হিট’ হবে, এটা ভাবা নির্মাতারা ভাবতে পারতেন না। এক পর্যায়ে সাধারণ মানুষ ভাবতে শুরু করে, চলচ্চিত্রের মতো বাস্তবেও হয়তো তারা একই সম্পর্ক ধারণ করেন।দীর্ঘ ২৬ বৎসর অভিনয় জীবনে তিনি মোট ৬১টি ছবিতে অভিনয় করেন। এর ভিতরে ৩১টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমারের বিপরীতে।

 

চলচ্চিত্রের তালিকা (বাংলা)

 

দীপ জ্বেলে যাই (১৯৫৯), চাওয়া পাওয়া (১৯৫৯), হসপিটাল (১৯৬০), স্মৃতিটুকু থাক (১৯৬০)], সপ্তপদী (১৯৬১), সাথীহারা (১৯৬১), বিপাশা (১৯৬২), সাত-পাকে বাঁধা (১৯৬৩), উত্তর ফাল্গুনী(১৯৬৩) ( ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দিতে পুনঃনির্মিত হয়েছে মমতা নামে), সন্ধ্যাদীপের শিখা(১৯৬৪), গৃহদাহ (১৯৬৭), কমললতা (১৯৬৯), মেঘকালো (১৯৭০), ফরিয়াদ (১৯৭১), নবরাগ (১৯৭১), আলো আমার আলো (১৯৭২), হারমানা হার (১৯৭২), দেবী চৌধুরানী (১৯৭৪), শ্রাবণ সন্ধ্যায় (১৯৭৪), প্রিয় বান্ধবী (১৯৭৫), আঁধি (১৯৭৫), দত্তা (১৯৭৬), প্রণয় পাশা (১৯৭৮)।

 

হিন্দি—

 

বোম্বাই কা বাবু (১৯৬০),  সারহাত (১৯৬০)।

 

 

পুরস্কার ও সম্মাননা—

তৃতীয় মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী। চলচ্চিত্র সপ্তপদী ( ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দ)।
ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কার মনোনীত, মমতা (১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দ)।
পদ্মশ্রী চলচ্চিত্র শিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য (১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দ)।
ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কার মনোনীত, আঁধি। (১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ)।
বঙ্গবিভূষণ চলচ্চিত্রে সারা জীবনের অবদানের জন্য। (২০১২ খ্রিষ্টাব্দ)।

 

১৯৭৮ সালে সুদীর্ঘ ২৫ বছর অভিনয়ের পর তিনি চলচ্চিত্র থেকে অবসরগ্রহণ করেন। এর পর তিনি লোকচক্ষু থেকে আত্মগোপন করেন এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায় ব্রতী হন।সুচিত্রা শেষ জনসম্মুখে আসেন ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে, তাঁর গুরু ভরত মহারাজের মৃত্যুর পর। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ২৫ মিনিট নাগাদ কলকাতার বেল ভিউ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮২ বছর বয়সে সুচিত্রা সেনের মৃত্যু হয়।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবপেজ।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

গীতিকার গোবিন্দ হালদার এর প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

গোবিন্দ হালদার পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁয় ১৯৩০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।  তিনি একজন বাঙালি গীতিকার।  তাঁর লেখা প্রথম কবিতার নাম ‘আর কতদিন’।  তিনি লিখেছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার কবিতা ও গান।  তার প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ দূর দিগন্ত।

 

মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রচারিত তাঁর লেখা গান মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছিল।  আয়কর বিভাগে কর্মরত থাকাকালীন বন্ধু কামাল আহমেদের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর গান রচনা করেন।  কামাল আহমেদ তাকে স্বাধীন বাংলা বেতারের প্রধান কামাল লোহানীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এবং তাকে ১৫টি গানের ক্যাটালগ দেন।  এই গানগুলোর মধ্যে সমর দাসের সুর্য দিগন্তে সূর্য উঠেছে গানটি প্রথম স্বাধীন বেতারে প্রচারিত হয়।  মুক্তিযুদ্ধের সময় তার কিছু গান স্বাধীন রেডিওতে প্রচারিত হয়।  “এক সাগর রক্তের বিনিময়ে” গানটি ১৬ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় প্রচারিত হয়, পাক বাহিনীর খবরের পরপরই, যেটির সুর করেছেন বিখ্যাত বাংলাদেশী সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী আপেল মাহমুদ এবং মূল কণ্ঠ দিয়েছেন স্বপ্না রায়।  অতিরিক্ত কণ্ঠ দিয়েছেন আপেল মাহমুদ ও সহশিল্পীরা।

 

মুক্তিযুদ্ধের সময় তার রচিত উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, লেফট রাইট লেফট রাইট, হুঁশিয়ার হুঁশিয়ার, পদ্মা মেঘনা যমুনা, চলো বীর সৈনিক, হুঁশিয়ার, হুঁশিয়ার বাংলার মাটি অন্যতম।তিনি ভারতের আকাশবাণী বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার ছিলেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনে ভূমিকা জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ২০১২ সালে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রদান করা হয়।

 

গোবিন্দ হালদার কলকাতায় ২০১৫ সালের ১৭ই জানুয়ারি  প্রয়াত হন।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে বাংলা চলচ্চিত্র, থিয়েটার এবং বাংলা লোক নাটকের অভিনেত্রী গীতা দে।

গীতা দে ৫ আগস্ট ১৯৩১ সালে জন্ম গ্রহন করেন

তিনি ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্র, থিয়েটার এবং বাংলা লোক নাটকের একজন ভারতীয় অভিনেত্রী। ছয় বছর বয়সে তিনি মঞ্চ শিল্পী হিসেবে আবির্ভূত হন।   ১৯৩৮ সালে, তিনি কলকাতার টালিগঞ্জে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে একজন অভিনেত্রী হিসেবে শুরু করেন।  ধীরেন গাঙ্গুলি-পরিচালিত আহুতিতে ছয় বছর বয়সে শিশু শিল্পী হিসেবে তার অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেন।

 

বাবা অনাদিবন্ধু মিত্র মেয়ের গান ও অভিনয়ে প্রবল ঝোঁক দেখে তাকে প্রতিবেশী গায়িকা রাধারানী দেবীর কাছে তালিম নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। তাঁর কাছেই গীতা দের প্রথম জীবনের নাচ, গান, অভিনয় শিক্ষা।
১৯৩৭ সালে মাত্র ছ’বছর বয়সে তিনি ‘আহুতি’ নামে একটি বাংলা ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান। ছবিটির পরিচালক ছিলেন ধীরেন গাঙ্গুলি। এরপরের ছবি ‘দম্পতি’ এবং ‘নন্দিতা’। পরিচালকরা যথাক্রমে ছিলেন নীরেন লাহিড়ী এবং সুকুমার দাশগুপ্ত।

 

 

তিনি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন ১৯৪৪ সালে।   তিনি দুই শতাধিক বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র এবং দুই হাজারের বেশি মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন। গ্রুপ থিয়েটারে তিনি অভিনয় করেছেন বেশ কিছু বিখ্যাত পরিচালকের সঙ্গে। যেমন তুলসী লাহিড়ী, শম্ভু মিত্র, তুলসী চক্রবর্তী, জ্ঞানেশ মুখার্জি, কালী সরকার, কানু ব্যানার্জি, দিলীপ রায় প্রমুখের সঙ্গে।

 

তিনি সত্যজিৎ রায় এবং ঋত্বিক ঘটকের মেঘে ঢাকা তারা, সুবর্ণরেখা, কোমল গান্ধার, কত আজনারে, তিন কন্যার মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন।১৯৫৬ ছিল তাঁর কাছে একটি যুগান্তকারী বছর। সে বছর প্রখ্যাত পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের স‍‌ঙ্গে তাঁর আলাপ করিয়ে দেন অভিনেতা কালী ব্যানার্জি।  ঋত্বিক ঘটক সম্পর্কে তিনি বলেছেন— ‘ক্যামেরার ব্যবহার এবং শট গ্রহণের ব্যাপারে এত বড় মাপের পরিচালক তিনি আর দেখেননি। তিনি আমার জন্য বেশ কিছু ফিল্মের কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত ‍‌সেগুলি আর বাস্তবায়িত হয়নি।’৬০ বছরের অভিনয় জীবনে উল্লেখ করার মত তাঁর অভিনীত অজয় করের সাত পাকে বাঁধা, নৌকাডুবি, মাল্যদান, অরবিন্দ মুখার্জির নিশিপদ্ম, দুই ভাই, বর্ণচোরা, মৌচাক ইত্যাদি ছবির নাম। বিভিন্ন ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন সাবলীলভাবে। চরিত্রগুলির মধ্যে সহজে ঢুকে যেতে পারতেন বলে দর্শকরা আনন্দ পেতেন।

 

 

তিনি ১৯৫৪ সাল থেকে অল ইন্ডিয়া রেডিওর সাথে যুক্ত ছিলেন এবং রেডিও নাটকে বেশ কয়েকটি সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন।  তবে তার শেষ নাটক ছিল বাদশাহী চল।১৯৯৬ সালে উত্তর কলকাতার রঙ্গনা মঞ্চে এই নাটকটি পরিচালনা করেছিলেন গণেশ মুখোপাধ্যায়।  তিনি বিভিন্ন চলচ্চিত্রে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন।  তিনি এই চলচ্চিত্রগুলিতে তার বহুমুখী পদ্ধতির জন্য সর্বাধিক পরিচিত।  তার অভিনয় এমনকি কিংবদন্তি লরেন্স অলিভিয়ারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।  তিনি নেতিবাচক এবং কৌতুক উভয় ভূমিকাতেই পারদর্শী ছিলেন।

 

 

তিনি বেশ কয়েকটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন; যার মধ্যে ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বিদ্যা বালান এবং সঞ্জয় দত্ত অভিনীতপরিণীতা উল্লেখযোগ্য।

তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকা———–

ইন্দ্রাণী, মেঘে ঢাকা তারা, কোমল গান্ধার, ডাইনী, কাঠিন মায়া, কাঞ্চন মূল্য, সাথী হারা, দুই ভাই, তিন কন্যা, কাঁচের স্বর্গ, শুভ দৃষ্টি, বন্ধন, বর্ণচোরা, সাত পাকে বাঁধা, দুই বাড়ী, ছায়া সূর্য, অভয়া ও শ্রীকান্ত, শেষ পর্যন্ত, পিতা পুত্র, নিশিপদ্মা, ময়দান, মৌচাক, বাঘ বন্দী খেলা, দম্পতি, দত্তা, সূর্য সখি, হিরের শিকল, মহাপৃথিবী, সন্তান, কথবশেশান, পরিণীতা, টলি লাইটস, চিরদিনি তুমি যে আমার, নৌকা ডুবি, আহবান (চলচ্চিত্র)।

 

 

পুরস্কার ও সম্মাননা—

 

তিনি বাংলা চলচ্চিত্র জগতে আজীবন অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন গভর্নর সৈয়দ নুরুল হাসানের কাছ থেকে একটি তারকা পদক পেয়েছিলেন (১৯৮৮)।  রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও (বাংলা চলচ্চিত্র ও নাট্যশালায় আজীবন অবদানের জন্য)।

 

মৃত্যু——-

 

গীতা দে ১৭ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে ৭৯ বছর বয়সে কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ

রামকৃষ্ণ বিশ্বাস ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম ও লড়াই, যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত সৃঙ্খল মুক্ত হতে পেরেছভাপেরেছিল। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে রামকৃষ্ণ বিশ্বাস ছিলেন একজন অন্যতম বীর ও নির্ভীক বিপ্লবী। রামকৃষ্ণ বিশ্বাস ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।

রামকৃষ্ণ বিশ্বাস ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব।  তিনি গোপন বিপ্লবী দলের সদস্য ছিলেন।  ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল, সূর্য সেনের বিপ্লবী দলের একজন বেসামরিক ব্যক্তি হিসাবে ১৯৩০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বোমা প্রস্তুত করার সময় চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণে নেতা মারাত্মকভাবে আহত হন।  ১৯৩০ সালের ১২ জানুয়ারি, মাস্টারদারের নির্দেশে চাঁদপুর স্টেশনে ইন্সপেক্টর জেনারেল ক্রেগকে হত্যা করার সময় তিনি এবং কালী চক্রবর্তী তারিণী মুখার্জীকে হত্যা করেন।  তাকে ২২ মাইল দূরে ধরা পড়ে।

জন্ম—–

রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের জন্ম ১৬ জানুয়ারি, ১৯১০ সালে চট্টগ্রামের সারোয়াতলীতে। তার পিতার নাম দুর্গাকৃপা বিশ্বাস।

রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সান্নিধ্যে প্রীতিলতা—-

১৯৩০ সালে, টিজে ক্রেগ বাংলার পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসাবে নতুন দায়িত্ব নিয়ে চট্টগ্রাম সফর করেন।  মাস্টার রামকৃষ্ণ বিশ্বাস ও কালীপদ চক্রবর্তীকে হত্যার জন্য মনোনীত করেন।  পরিকল্পনা অনুযায়ী, তারা ২ রা ডিসেম্বর ১৯৩০ তারিখে চাঁদপুর রেলস্টেশনে রিভলবার নিয়ে আক্রমণ করে কিন্তু ভুলবশত তারা মিস্টার ক্রেগের পরিবর্তে চাঁদপুরের এসডি ও তারিণী মুখার্জিকে হত্যা করে।  ওই দিনই পুলিশ বোমা ও রিভলবারসহ রামকৃষ্ণ বিশ্বাস ও কালীপদ চক্রবর্তীকে গ্রেপ্তার করে।  মনোরঞ্জন রায় এই বোমাগুলো কলকাতা থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন।  তারিণী মুখোপাধ্যায় হত্যা মামলায় রামকৃষ্ণ বিশ্বাসকে মৃত্যুদণ্ড এবং কালীপদ চক্রবর্তীকে নির্বাসনে দেওয়া হয়েছিল।  আলিপুর জেলের ডেথ সেলে মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকা রামকৃষ্ণকে দেখতে চট্টগ্রাম থেকে আসা স্বজনদের কারো পক্ষেই বেশি খরচ হওয়া সম্ভব হয়নি।  এই খবর শোনার পর মনোরঞ্জন রায় প্রীতিলতাকে চিঠি লিখে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করার জন্য অনুরোধ করেন।  মনোরঞ্জন রায়ের মা হিজলী জেলে ছেলের সাথে দেখা করতে গেলে গোপনে প্রীতিলতার হাতে লেখা চিঠি তুলে দেন।

গুনু পিসির পরামর্শে, প্রীতিলতা আলিপুর সেন্ট্রাল জেল কর্তৃপক্ষের কাছে “অমিতা দাস” ছদ্মনামে “চাচাতো ভাই” হিসাবে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে দেখা করার জন্য আবেদন করেছিলেন।  জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তিনি প্রায় চল্লিশ বার রামকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করেন।  এই সাক্ষাত সম্পর্কে তিনি লিখেছেন “তাঁর (রামকৃষ্ণ বিশ্বাস) গম্ভীর চেহারা, খোলামেলা কথা, মৃত্যুকে অদম্য আলিঙ্গন, ঈশ্বরের প্রতি অটল ভক্তি, শিশুসুলভ সরলতা, মমতা এবং কৃতিত্বের তীব্র অনুভূতি আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।  আমি আগের চেয়ে দশগুণ বেশি সক্রিয় হয়েছি।  এই আত্মত্যাগী তরুণ দেশপ্রেমের সাথে যোগাযোগ আমার জীবনের পরিপূর্ণতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।”  ১৯৩১ সালের ৪ আগস্ট রামকৃষ্ণ বিশ্বাসকে ফাঁসি দেওয়া হয়। এই ঘটনাটি প্রীতিলতার জীবনে এক আমূল পরিবর্তন আনে।

মৃত্যু—-

১৯৩১ সালের ৪ আগস্ট রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসী হয়।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

চিন্ময় রায় : সিনেমা প্রেমী মানুষের কছে তিনি আজও স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।

চিন্ময় রায় একজন বাঙালী অভিনেতা। বাংলা সিনেমায় চিন্ময় রায় এক অতি পরিচিত নাম। সিনেমা প্রেমী মানুষদের কছে তিনি আজও স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। স্বর্ণ যুগের এই কিংবদন্তি অভিনেতা তাঁর অভিনয় দক্ষতা দিয়ে মানুষের মনে জায়গা করে রেখেছেন আলাদা ভাবে। তাঁর সাবলীল অভিনয় মুগ্ধ করেছে সকলকে।

 

১৯৪০ সালের ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশের কুমিল্লায় জন্মগ্রহণকারী এই কৌতুক অভিনেতা প্রথমাশা কলকাতার থিয়েটার মঞ্চ থেকে তার অভিনয় জীবন শুরু করেন।  একবার সিনেমায় অভিনয় করেছেন।  তিনি মূলত কমেডি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন।

তপন সিংহের ‘গল্প হলেও সত্যি’ দিয়ে শুরু করে সবার নজর কাড়েন চিন্ময় রায়। এরপর ‘মৌচাক’, ‘হাটেবাজারে’, ‘ওগো বধূ সুন্দরী’, ‘বসন্ত বিলাপ’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন-এর মতো অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন।টেনিদা চরিত্রে চারমূর্তি চলচ্চিত্রে তার অভিনয় তাকে বাংলা চলচ্চিত্র দর্শকদের মধ্যে আরও জনপ্রিয় করে তোলে।  ভারতের বাংলা সিনেমা নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।

 

তথাকথিত সাদামাটা চেহারা সত্ত্বেও নিজের অভিনয় প্রতিভায় রুপোলি পর্দায় নায়কদের পাশে রীতিমতো নজর কেড়েছেন। নবদ্বীপ হালদার, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় বা তুলসী চক্রবর্তীর মতো কিংবদন্তি অভিনেতাদের পর বাংলা ছবিতে কমেডিয়ানের ভূমিকায় রবি ঘোষ বা অনুপকুমারের সঙ্গে পাল্লাও দিয়েছেন সমানে সমানে।

 

চিন্ময় রায় ৭৯ বছর বয়সে ১৭ মার্চ ২০১৯ তারিখে রাত ১০:১০ টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় মারা যান।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

সুকুমার সেন : ভাষাবিদ ও সাহিত্যিক পণ্ডিত

সুকুমার সেন ছিলেন একজন ভাষাবিদ ও সাহিত্যিক পণ্ডিত।  বৈদিক ও ধ্রুপদী সংস্কৃত, পালি, প্রাকৃত, বাংলা, আবেস্তা এবং প্রাচীন ফার্সি ভাষায় এর বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল।  তিনি তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব এবং  পুরাণতত্ত্ব আলোচনাতেও তার দক্ষতা দেখিয়েছিলেন।

জীবনী—————

সুকুমার সেন ১৯০০ সালের ১৬ জানুয়ারি কলকাতার গোয়াবাগানের মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন।  বাবা হরেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন বর্ধমান আদালতের আইনজীবী এবং মা নলিনী দেবী।  তাদের পৈতৃক নিবাস ছিল বর্ধমান জেলার গোতান গ্রামে।  এখান থেকেই সুকুমার সেনের পড়াশোনা শুরু।  1917 সালে বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল ​​হাই স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় এবং 1919 সালে বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে I.A.  বাংলা, সংস্কৃত, যুক্তিবিদ্যা এবং গণিতে অক্ষর সহ প্রথম বিভাগে।  পরীক্ষায় পাস.  1921 সালে কলকাতার সংস্কৃত কলেজ থেকে বি.এ.  পরীক্ষায় পাস.
1923 সালে, তিনি তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানে প্রথম স্থানের সাথে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে M.A.  পরীক্ষায় পাস.  1925 সালে, তিনি “সিনট্যাক্স অফ বৈদিক প্রোজ” শিরোনামে একটি থিসিস লেখেন এবং প্রেমচাঁদ-রাইচাঁদ বৃত্তি লাভ করেন।  1926 সালে তার প্রথম গবেষণাপত্র “নোটস অফ দি ইউজ অফ কেসেস ইন দ্য কথক সংহিতা” এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত হয়।  এরপর তিনি মধ্য ও আধুনিক (বাংলা) আর্য ভাষার ঐতিহাসিক উৎপত্তি নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি করেন।

গ্রন্থসমূহ————–

মিথ-ভিত্তিক ভাষাতত্ত্ব বা পৌরাণিক কাহিনীর পরিবর্তে সুকুমার সেন আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলেন।  তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, এশিয়াটিক সোসাইটি এবং বর্ধমান সাহিত্য সভার প্রায় বারো হাজার পাণ্ডুলিপি পরীক্ষা করেন।  তাঁর আবিস্কার হল জয়দেবের গীতগোবিন্দম কাব্যের প্রাচীন মূর্তি।  তিনি সেকশুভোদয়া পুঁথিও সম্পাদনা করেন।  ভাষাতত্ত্ব ও পুরাণ ছাড়াও রবীন্দ্র সাহিত্যেও সুকুমার সেনের বিশেষ জ্ঞান ছিল।  তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যিক ও রসায়নবিদ।

তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল—-

বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস (৫টি খণ্ডে, সুকুমার সেনের সবচেয়ে বিখ্যাত বই, বাংলা সাহিত্যের একটি পূর্ণাঙ্গ ও সামগ্রিক ইতিহাস) , বঙ্গভূমিকা (বাংলার আদি-ইতিহাস সংক্রান্ত গ্রন্থ), বাংলা স্থাননাম (বাংলা স্থাননাম নিয়ে ভাষাতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ), রামকথার প্রাক-ইতিহাস (রামায়ণ-সংক্রান্ত তুলনামূলক পুরাণতাত্ত্বিক আলোচনা), ভারত-কথার গ্রন্থিমোচন (মহাভারত-সংক্রান্ত তুলনামূলক পুরাণতাত্ত্বিক আলোচনা), A History of Brajabuli Literature (ব্রজবুলি সাহিত্যের ইতিহাস), ইসলামি বাংলা সাহিত্য, কলিকাতার কাহিনী, ক্রাইম কাহিনীর কালক্রান্তি, বাঙ্গালা সাহিত্যের কথা, বাঙ্গালা সাহিত্যে গদ্য , দিনের পরে দিন যে গেল ( আত্মজীবনীমূলক রচনা )

ভাষার ইতিবৃত্ত (বাংলা ভাষাতত্ত্বের একটি পূর্ণাঙ্গ আলোচনা)

Women’s Dialect in Bengali (বাংলা মেয়েলি ভাষা নিয়ে গবেষণামূলক রচনা)।

সম্মাননা—-‐-

রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৬৪ সালে ভারতীয় আর্য সাহিত্যের ইতিহাস বইটির জন্য), এশিয়াটিক সোসাইটি তাকে ‘যদুনাথ সরকার পদক’ প্রদান করে। রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র থেকে পান ‘রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য’ উপাধি,  দুবার আনন্দ পুরস্কার(১৯৬৬ ও ১৯৮৪ সালে), ১৯৯০ সালে ভারত সরকার তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মভূষণ প্রদান করে ( সাহিত্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য )।

১৯৯২ সালের ৩ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

শুধু ফুটবল নয়, ক্লাবের হয়ে হকি স্টিক হাতেও মাঠে নেমেছেন চুনী গোস্বামী।

জন্ম:   বর্তমান বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জে (১৫ জানুয়ারি, ১৯৩৮) চুনী গোস্বামী জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম সুবিমল গোস্বামী। চুনী গোস্বামী একজন বিখ্যাত বাঙালি ফুটবল খেলোয়াড়। তিনি ভারতের জাতীয় দলেও খেলেছেন। ক্রিকেটার হিসেবেও তিনি সফল ছিলেন। বাংলা দলের হয়ে রনজি ট্রফি তে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি। একই সঙ্গে ফুটবল ও ক্রিকেটে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন সুবিমল ওরফে চুনী।

 

ফুটবলে প্রবেশ: ফুটবল-কে ভালবেসে ১৯৪৬ সালে মোহনবাগান জুনিয়ার দলে যোগ দেন। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত জুনিয়র দলে খেলেন। ভারতীয় ফুটবলার বলাইদাস চট্টোপাধ্যায় ও বাঘা সোমকে কোচ হিসেবে পান তিনি।

 

 

ফুটবল জীবন: এরপর ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৮ অবধি মোহনবাগানের মূল দলে খেলেন। তিনি মূলত স্ট্রাইকার পজিসনে খেলতেন। তিনি ১৯৬০ থেকে ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দ অবধি মোহনবাগানের অধিনায়ক ছিলেন। এই সময়ে মোহনবাগান ডুরান্ড কাপ সহ বহু প্রতিযোগিতায় ভাল ফল করেছিল।আজীবন মোহনবাগানকে ভালোবেসেই খেলে গেছেন তিনি, অন্য ক্লাব থেকে ডাক এলেও পা বাড়াননি।

 

১৯৫৬ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত ভারতীয় দলে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। চিনা অলিম্পিক দলের বিরুদ্ধে জাতীয় দলে অভিষেক হয় চুনীর। তার ফুটবল জীবনের সবথকে বড় কৃতিত্ব ভারতের অধিনায়ক হিসাবে ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে জাকার্তায় এশিয়ান গেমসের সোনা জয়। ফাইনালে ভারত দক্ষিণ কোরিয়াকে ২-১ গোলে পরাস্ত করেছিল।

 

 

এছাড়া তিনি অধিনায়ক হিসাবে তেল আভিভে এশিয়া কাপের রৌপ্য পদক জয় করেছিলেন। ৫০টি ম্যাচ খেলেন দেশের জার্সিতে। দেশের হয়ে অলিম্পিক, এশিয়ান গেমস, এশিয়া কাপ ও মারডেকা কাপে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। দুটি এশিয়া কাপ ও মারডেকা কাপে চুনী দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।

 

কোচিং কেরিয়ার: ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমির ডিরেক্টর ছিলেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত ভারতীয় ফুটবল দলের কোচ ছিলেন চুনী।

 

 

সফল ক্রিকেটার: ফুটবল খেলা থেকে অবসর নেওয়ার পরে তিনি ক্রিকেট খেলায় মনোনিবেশ করেন এবং রঞ্জি ট্রফিতে তিনি বাংলার অধিনায়কত্ব করেন। ১৯৬২-৬৩ মরশুম থেকে ১৯৭২-৭৩ পর্যন্ত বাংলা ক্রিকেট দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। মূলত অল-রাউন্ডার ছিলেন। তিনি দুবার রঞ্জি ট্রফির ফাইনাল খেলেছিলেন। তিনি ডানহাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন এবং ডানহাতে মিডিয়াম পেস বল করতেন। তিনি ৪৬টি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট ম্যাচ খেলে একটি সেঞ্চুরি সহ ১৫৯২ রান করেছিলেন। তিনি বল করে ৪৭টি উইকেটও নিয়েছিলেন।

 

অন্যান্য খেলা: শুধু ফুটবল নয়, ক্লাবের হয়ে হকি স্টিক হাতেও মাঠে নেমেছেন চুনী। সাউথ ক্লাবে টেনিস খেলতেন নিয়মিত। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন তিনি। সব খেলায় তিনি সমান দক্ষ ছিলেন।

 

 

পুরস্কার ও সম্মান: ১৯৬২ সালে এশিয়ার সেরা স্ট্রাইকারের পুরস্কার জেতেন।১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে চুনী গোস্বামী অর্জুন পুরস্কার এবং ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছিলেন। ২০০৫ সালে তিনি মোহনবাগান রত্ন পান। বাংলার ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন তাঁকে জীবনকৃতি সম্মানে ভূষিত করে। ২০০৫ সালে কলকাতারা শেরিফ নিযুক্ত হন।

 

মৃত্যু: ৩০ এপ্রিল, ২০২০ সালে ৮২ বছর বয়েসে হৃদরোগাক্রান্ত হয়ে কলকাতায় মারা যান চুনী গোস্বামী।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

শুভ উত্তরায়ণ সংক্রান্তিঃ বা মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তি কী ? কেন পালন করা হয়?

ওঁ নমঃ শ্রী ভগবতে প্রণবায়…!

শুভ উত্তরায়ণ সংক্রান্তিঃ বা মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তি কী ? কেন পালন করা হয়?

আগামী ২৯ শে পৌষ, ১৫ই জানুয়ারি সোমবার, শুভ উত্তরায়ণ সংক্রান্তিঃ বা মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তি।(15.01.2024) প্রতি মাসের শেষ দিন অর্থাৎ যে দিন মাস পূর্ণ হবে সে দিনকে সংক্রান্তি বলা হয়। সংক্রান্তি অর্থ সঞ্চার বা গমন করা। সূর্যাদির এক রাশি হতে অন্য রাশিতে সঞ্চার বা গমন করাকেও সংক্রান্তি বলা যায়। মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ আষাঢ় এই ছয় মাস উত্তরায়ন কাল এবং শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ ও পৌষ এই ছয় মাস দক্ষিণায়ন কাল। পৌষ মাসের শেষ দিনে সূর্য উত্তরায়ণের দিকে যাত্রা শুরু করে বলে এই সংক্রান্তিকে উত্তরায়ণ সংক্রান্তিও বলা হয়। শাস্ত্রমতে মানুষের এক বছর দেবতাদের একটি দিন-রাতের সমান অর্থাৎ মানুষের উত্তরায়ণের ছয়মাস দেবতাদের একটি দিন ও দক্ষিণায়নের ছয়মাস দেবতাদের একটি রাত। হিন্দু সনাতন বৈদিক শাস্ত্রে এই পবিত্র তিথিকে সূর্য ধনু রাশি থেকে মকর রাশিতে প্রবেশ করাকে উত্তরায়ণ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি বলা হয়েছে ৷ এদিন থেকে দেবতাদের দিন শুরু হয় ৷

রাত্রে মানুষ যেমন সকল দরজা-জানালা, প্রধান ফটক ইত্যাদি বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন, তেমনি দেবতাগণও রাত্রে অর্থাৎ দক্ষিণায়ণে সবকিছু বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন। এসময় বাহির থেকে প্রবেশ করার সুযোগ নেই, অর্থাৎ দক্ষিণায়ণে দেবলোক পুরোপুরি বন্ধ থাকে। আবার দেবগণের রাত পৌষ সংক্রান্তির দিন শেষ হয় বলে পরবর্তী উদয়ের ব্রাহ্মমুহূর্ত থেকে দেবগণের দিবা শুরু হয়। উক্ত সময়ে স্বর্গবাসী ও দেবলোকের সকলেই নিদ্রা ভঙ্গ হয় এবং নিত্য ভগবৎ সেবা মূলক ক্রিয়াদি শুরু হতে থাকে। এই জন্য হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ ব্রহ্মমুহূর্তে স্নান,নামযজ্ঞ, গীতাপাঠ, শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনি ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটিকে আনন্দময় করে তোলেন।

অন্যদিকে, গঙ্গা পুত্র ভীষ্ম তার পিতা শান্তনু থেকে বর পেয়েছিলেন যে তিনি যখন ইচ্ছা মৃত্যুবরণ করতে পারবেন। অর্থাৎ তাঁর নিজের ইচ্ছা ছাড়া কখনো মৃত্যু তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের বিশ্ববিখ্যাত বীর, মহাপ্রাজ্ঞ, সর্বত্যাগী ও জিতেন্দ্রিয় মহাপুরুষ ভীষ্মের মহাপ্রয়াণের স্মৃতির জন্য উত্তরায়ণ সংক্রান্তি আরও মর্যাদাপূর্ণ হয়েছে। উল্লেখ্য, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে কৌরব পক্ষের চারজন সেনাপতির মধ্যে তিনিই প্রধান সেনাপতি। উভয় পক্ষের আঠারদিন যুদ্ধের দশম দিবসে সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পূর্বে পাণ্ডব পক্ষের সেনাপতি অর্জুনের শরাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে ভীষ্মদেব রথ থেকে মাটিতে পড়ে যান। কিন্তু তিনি মাটি স্পর্শ না করে আটান্ন দিন তীক্ষ্ম শরশয্যায় শুয়ে উত্তরায়ণের অপেক্ষা করে পৌষ সংক্রান্তির দিনে যোগবলে দেহত্যাগ করেছেন।

গ্রাম বাংলা সহ ভারতের বিভীন্ন জায়গায় ভোর বেলা আগুন লাগানো হয় খড় ও বাঁশ দিয়ে বা্নানো স্তুপে, এটি মূলত পিতামহ ভীষ্মের চিতার স্বরুপ। পৌষ সংক্রান্তির দিন সূর্য উত্তর মেরুতে হেলে পরতে থাকে যার জন্যে একে মকর সংক্রান্তি বা উত্তরায়ণ সংক্রান্তি বলে। শাস্ত্রমতে ভীষ্মদেব মৃত্যুর পরে ভগবদ্ ধামে যাননি। তিনি ছিলেন ‘দৌ’ মতান্তরে দ্যু নামক অষ্টবসু, যিনি মহর্ষি বশিষ্ঠের অভিশাপগ্রস্ত হয়ে ইহলোকে মনুষ্য হিসাবে কৃতকর্ম ভোগের জন্য জন্ম নিয়েছিলেন। তাই তাঁর পুনরায় দেবলোকেই যাবার কথা। কারণ তিনি
সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা দক্ষিণায়নের সময় দেবলোকে রাত্রি, সেই সময় সেখানকার সবকিছু বন্ধ থাকে। ভীষ্ম যদি দক্ষিণায়নে দেহত্যাগ করতেন, তবে তাঁকে তাঁর লোকে প্রবেশ করার জন্য বাইরে প্রতীক্ষা
করতে হত। তিনি ইচ্ছামৃত্যু বরণ করেছিলেন বলে ভেবে দেখলেন, দক্ষিণায়নে মহাপ্রয়াণ করলে দেবলোকে গিয়ে বাইরে প্রতীক্ষা করার চেয়ে এখানে থেকে উত্তরায়ণের প্রতীক্ষা করাই ভালো। কারণ এখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দর্শন লাভ হবে এবং সৎসঙ্গ হতে থাকবে, যার ফলে সকলেরই মঙ্গল হবে। দেবলোকে একলা প্রতীক্ষা করে কী হবে ? এইভেবে তিনি দক্ষিণায়নে শরীর ত্যাগ না করে উত্তরায়ণে শরীর ত্যাগ করেছিলেন।

দীর্ঘ ৫৬ দিন শরশয্যায় অবস্তানের পর অবশেষে উত্তরায়ণ বা পৌষ সংক্রান্তির নিশান্তে পিতামহ ভীষ্মদেব যোগবলে দেহত্যাগ করে দেবলোকে গমন করেন।
প্রায় ৫১৫৯ বছর পুর্ব হইতে আমরা প্রতিবৎসর উত্তরায়ণ বা পৌষ সংক্রান্তিতে প্রাতকালে খড়-কুটা জড়ো করে পিতামহ ভীষ্মদেবের প্রতীকি শবদাহ করে থাকি। অনেকে এই শবদাহকে মেড়ামেড়ির ঘর জ্বালানো বলে থাকেন এবং এই দিন *মাছ-মাংস আহার করে থাকেন, যাহা সম্পূর্ণ অনুচিত।* কারণ উত্তরায়ণ বা পৌষ সংক্রান্তি অন্তেষ্টিক্রিয়া ও শ্রাদ্ধ সংক্রান্ত অনুষ্ঠান। অন্যদিকে এই দিবসটি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, এই দিন প্রাতকালে দেবলোকের সকল দেবতাগন ও স্বর্গবাসী পিতৃপুরুষগন নিদ্রা থেকে জাগ্রত হন। ভীষ্মদেবের এই মহাপ্রয়াণের স্মৃতির জন্য হিন্দু সনাতণ ধর্মাবলম্বীগণের নিকট উত্তরায়ণ সংক্রান্তি বেশী গুরুত্ব পেয়েছে।

এই জন্য হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীগন ব্রাহ্ম মুহুর্থে স্নান, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, গ্রামে, নগরে সংকীর্ত্তন, গীতাপাঠ,
সাধু মহারাজকে দান, অন্নদান, বস্ত্রদান বা আর্থিক অনুদান দেওয়া সহ মঙ্গলজনক কাজ করে থাকেন। সবাই কে মহা-সংক্রান্তির প্রণাম, প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।
(উত্তরায়ন) শুভ মকরসংক্রান্তি উপলক্ষে জগৎ গুরু ভগবান স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজের শুভ ও মঙ্গলময় আশির্বাদ আপনাদের সকলের শিরে বর্ষিত হোক… এই প্রার্থনা করি…!***
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ ভারতীয় সেনা দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয় ও গুরুত্ব।

ভারতীয় সেনাবাহিনী হল ফ্রন্ট লাইন ফাইটিং ফোর্স যা বিদেশী আক্রমণের বিরুদ্ধে দেশকে রক্ষা করার সময় নিজের জীবনকে বিপদে ফেলে।  প্রতি বছর ১৫ জানুয়ারী, ভারতীয় সেনা দিবস পালন করা হয় ১৯৪৯ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রথম ভারতীয় দলে কমিশনিং করার জন্য।
দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাহসিকতা, নিঃস্বার্থতা এবং অটল উত্সর্গ উদযাপন করার দিনটি।  ভারতীয় সেনাবাহিনী ১৫ জানুয়ারীতে তার বার্ষিক আর্মি ডে প্যারেড পরিচালনা করে। এটি দিল্লি এবং বেঙ্গালুরুতে তার প্রথাগত অবস্থানের পরিবর্তে এই বছর লখনউতে অনুষ্ঠিত হবে।
নাগরিকদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টা এই পরিবর্তনের অন্তর্ভুক্ত।  সেনাবাহিনীর ছয়টি অপারেটিং কমান্ডেরই সামগ্রিক নাগাল বাড়ানোর ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টায় প্যারেড আয়োজন করার সুযোগ থাকবে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী ধীরে ধীরে একটি আধুনিক বাহিনীতে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করছে যা পদাতিক, আর্টিলারি এবং সাঁজোয়া ব্যাটালিয়নে ড্রোন এবং কাউন্টার-ড্রোন সিস্টেম প্রবর্তনের জন্য একটি নতুন অপারেশনাল দর্শন পাবে।
অন্যান্য প্রচলিত অসামঞ্জস্যতা দূর করার পাশাপাশি, সেনাবাহিনী ২০২৪ কে “প্রযুক্তি শোষণের বছর” হিসাবে পালন করবে এবং কমান্ড সাইবার অপারেশন সাপোর্ট উইংস (CCOSWs) প্রতিষ্ঠা করবে।

 

২০২৪ সালের ভারতীয় সেনা দিবসের থিম—–

 

২০২৪ সালে ভারতীয় সেনা দিবসের থিম হবে “জাতির সেবায়”। অটল আবেগ, উত্সর্গ এবং পেশাদারিত্বের সাথে দেশের সেবা করার ভারতীয় সেনাবাহিনীর মিশন এই থিমের মধ্যে নিহিত।  এটি তাদের দেশের নিরাপত্তা এবং আদর্শ রক্ষার জন্য ভারতীয় সেনা সৈন্যদের নিঃস্বার্থ ত্যাগের উপর জোর দেয়।
বিষয়টি ভারতীয় সেনাবাহিনীর নীতির সাথে সারিবদ্ধ, “নিজের আগে সেবা” যা ব্যক্তিগত সাধনার চেয়ে জাতীয় সেবাকে অগ্রাধিকার দেয়।  এটি দেশের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং জনসংখ্যার মঙ্গল রক্ষায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর অটল প্রতিশ্রুতির উপর জোর দেয়।

 

ভারতীয় সেনা দিবস ২০২৪ উদযাপনের তাৎপর্য—-

 

ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠাকে সম্মান জানিয়ে, ভারতীয় সেনা দিবসের স্মরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  এই দিনটি ১৯৪৯ সালে জেনারেল স্যার ফ্রান্সিস বুচার থেকে জেনারেল কে. ক্যারিয়াপ্পা, প্রথম ভারতীয় কমান্ডার-ইন-চিফ হয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের পরিবর্তনকে স্মরণ করে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ভারতীয়করণের প্রক্রিয়ায়, এটি ছিল একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।  বিশ্ব একাই দেখতে পাবে যে ভারত এখন অন্য দেশের আক্রমণের বিরুদ্ধে তার সীমানা রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট আত্মনিশ্চিত।  চীন, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে, ভারতীয় সেনাবাহিনী বিশ্বের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে।
যেহেতু অনেক বংশোদ্ভূত সেনা সদস্যরা ইভেন্টে যোগ দিয়েছিল এবং একটি ইউনিট হিসাবে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একটি একক বাহিনী প্রতিষ্ঠার জন্য একত্রিত হয়েছিল, দিবসটি জাতীয় সংহতিকেও সম্মানিত করেছিল।  এই দিনে, ভারতীয় সামরিক বাহিনী তার ঔপনিবেশিক যুগের শাসনের অবসান ঘটায় এবং দেশটিকে একটি নতুন সার্বভৌম রাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

মহাশ্বেতা দেবী  ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক এবং একজন কর্মী।

মহাশ্বেতা দেবী  ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক এবং একজন কর্মী। তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে হাজার চুরাশির মা , রুদালী এবং অরণ্যের অধিকার । তিনি একজন বামপন্থী ছিলেন যিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ , বিহার , মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড় রাজ্যের উপজাতিদের ( লোধা এবং শবর ) অধিকার ও ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করেছিলেন । তিনি বিভিন্ন সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন যেমনসাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার ( বাংলায় ), জ্ঞানপীঠ পুরস্কার এবং র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার সহ ভারতের বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী এবং পদ্মবিভূষণ ।

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা—————

মহাশ্বেতা দেবী একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ১৪ জানুয়ারি ১৯২৬ তারিখে ঢাকা , ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমানে ঢাকা , বাংলাদেশ )। তার বাবা মনীশ ঘটক ছিলেন কল্লোল আন্দোলনের একজন কবি এবং ঔপন্যাসিক  , যিনি ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন যুবনাশ্ব ( বাংলা : আত্মনাশ্ব ) । ঘটকের ভাই ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটক । দেবীর মা, ধরিত্রী দেবীও একজন লেখক এবং একজন সমাজকর্মী ছিলেন  যার ভাইদের মধ্যে রয়েছেন ভাস্কর শঙ্খ চৌধুরী এবং এর প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক।ভারতের ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি , শচীন চৌধুরী।

দেবীর প্রথম শিক্ষা ছিল ঢাকায়,  ইডেন মন্টেসরি স্কুল । এরপর তিনি পশ্চিমবঙ্গে (বর্তমানে ভারতে) চলে যান। এরপর তিনি মেদিনীপুর মিশন গার্লস হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেন। এরপর তাকে শান্তিনিকেতনে ভর্তি করা হয় । এর পরে, তিনি বেলতলা গার্লস স্কুলে পড়াশোনা করেন যেখানে তিনি তার ম্যাট্রিকুলেশন শেষ করেন। তারপর ১৯৪৪ সালে তিনি আসুতোষ কলেজ থেকে আই.এ. তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং ইংরেজিতে বিএ (অনার্স) সম্পন্ন করেন এবং তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে এমএ সম্পন্ন করেন ।

মহাশ্বেতা দেবী বহুবার ভারতের উপজাতি মানুষদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। মহাশ্বেতা দেবীর বিশেষত্ব আদিবাসী, দলিত এবং প্রান্তিক নাগরিকদের অধ্যয়ন তাদের মহিলাদের উপর ফোকাস করে। তারা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা , মহাজন এবং উচ্চ শ্রেণীর দুর্নীতি ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হিসেবে যুক্ত ছিল । তিনি বছরের পর বছর পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগড়ের আদিবাসী গ্রামে বসবাস করতেন, তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতেন এবং তাদের কাছ থেকে শিখতেন। তিনি তার কথা ও চরিত্রে তাদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগকে মূর্ত করেছেন।  তিনি দাবি করেছিলেন যে তার গল্পগুলি তার সৃষ্টি নয়, সেগুলি তার দেশের মানুষের গল্প। যেমন একটি উদাহরণ তার কাজ “ছোট্টি মুন্ডি এবং তার তির”।তিনি লোধা এবং শবর , পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী সম্প্রদায়, মহিলা এবং দলিতদের অধ্যয়ন করেছিলেন ।

তার বিস্তৃত বাংলা কথাসাহিত্যে, তিনি প্রায়শই শক্তিশালী কর্তৃত্ববাদী উচ্চ-বর্ণের জমিদার, অর্থ-ঋণদাতা এবং ভেনাল সরকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা উপজাতীয় জনগণ এবং অস্পৃশ্যদের উপর নির্মম নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেন।মহাশ্বেতা দেবী ভারতে উপজাতিদের দ্বারা ভোগা বৈষম্যের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার তার আওয়াজ তুলেছিলেন। দেবীর ১৯৭৭ সালের উপন্যাস অরণ্যের অধিকার (অরণ্যে অধিকার) ছিল বিরসা মুন্ডার জীবন নিয়ে । এবং ২০১৬ সালের জুন মাসে, দেবীর সক্রিয়তার ফলস্বরূপ, ঝাড়খণ্ড রাজ্য সরকার অবশেষে মুণ্ডার মূর্তি থেকে ম্যানাকলগুলি অপসারণ করতে দেখেছিল, যা উল্লেখযোগ্য তরুণ উপজাতীয় নেতার স্মারক ভাস্কর্যের অংশ ছিল। ব্রিটিশ শাসনের যুগের একটি ফটোগ্রাফের উপর ভিত্তি করে।

দেবী ১০০ টিরও বেশি উপন্যাস এবং ২০ টিরও বেশি ছোট গল্পের সংকলন লিখেছেন প্রাথমিকভাবে বাংলায় লেখা তবে প্রায়শই অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়। ঝাঁসির রাণীর জীবনী অবলম্বনে তার প্রথম উপন্যাস ঝাঁসির রানী, প্রকাশিত হয় ১৯৫৬ সালে ।

পুরস্কার এবং স্বীকৃতি—————–

সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৭৯),  সমাজসেবায় পদ্মশ্রী (১৯৮৬), জ্ঞানপীঠ পুরস্কার (১৯৯৬), রামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার (১৯৯৭),  অফিসার দেল’ অর্ডার দেস আর্টস এত দেস লেটার্স (২০০৩), পদ্মবিভূষণ – ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা (২০০৬), সার্ক সাহিত্য পুরস্কার (২০০৭), ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন (২০০৯), যশবন্তরাও চবন জাতীয় পুরস্কার (২০১০), বঙ্গবিভূষণ – পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা (২০১১)।

চলচ্চিত্রায়ন—————–

সংঘর্ষ,  রুদালি, হাজার চৌরাসি কি মা,  মাটি মায়,

গাঙ্গোর।

দেবীর প্রধান কাজগুলির মধ্যে রয়েছে——–

হাজর চুরাশির মা,  অরণ্যের অধিকার, অগ্নিগর্ভ, মূর্তি, নীড়েতে মেঘ,  স্তন্যদায়নী, চোট্টি মুন্ডা এবং তার তীর, বর্তিকা।

মৃত্যু———–

২৩ জুলাই ২০১৬ তারিখে, দেবী একটি বড় হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন এবং তাকে কলকাতার বেলে ভিউ ক্লিনিকে ভর্তি করা হয় । জুলাই ২৮ তারিখে ৯০ বছর বয়সে একাধিক অঙ্গ ব্যর্থতার কারণে দেবী মারা যান।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This