Categories
প্রবন্ধ

ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব সত্যরঞ্জন বকসি – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম ও লড়াই, যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত সৃঙ্খল মুক্ত হতে পেরেছভাপেরেছিল। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে সত্যরঞ্জন বকসি ছিলেন একজন অন্যতম বীর ও নির্ভীক বিপ্লবী। সত্যরঞ্জন বকসি ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে। সত্যরঞ্জন বকসি ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অক্লান্ত কর্মী। তাঁর আবাদান ভারতের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। আজ সেই বীর বিপ্লবীর প্রয়াণ দিবস। জানব তাঁর সেই আত্মত্যাগের কিছু কথা। সত্যরঞ্জন বকসি ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং সুভাষচন্দ্র বসুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও সাংবাদিক।

সত্যরঞ্জন বক্সী বর্তমান বাংলাদেশের বরিশালের গৌরনদী থানার বারথি গ্রামে ১৮৯৭ সালের ১৪ই জুলাই জন্মগ্রহণ করেন।  বাবা বসন্ত কুমার বক্সী ও মা মোক্ষদাসুন্দরী।  পড়াশোনা করেছেন ঢাকা ও কলকাতায়।  মাতুল হেমচন্দ্র ঘোষ ১৯১১ সালে ছাত্র অবস্থায় মাতুল হেমচন্দ্র ঘোষ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বিপ্লবী দল মুক্তি সংঘের (পরে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স নামে পরিচিত) সংস্পর্শে আসেন। ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম. পাস করেন এবং ১৯২০ সালে আইনে স্নাতক হন।  এবার তিনি ‘এশিয়াটিক ফেডারেশন’ শিরোনামে একটি বিখ্যাত প্রবন্ধ লিখে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের নজরে আসেন এবং তাঁর স্নেহভাজন হন।

১৯২৩ সালে, তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের ‘ফরওয়ার্ড’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক নিযুক্ত হন এবং তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয়।  দেশবন্ধুর মৃত্যুর পর তিনি ওই পত্রিকার সম্পাদক হন।  ১৯২৭ সালে, তিনি জরিমানা সহ রাষ্ট্রদ্রোহের জন্য কারাগারে বন্দী হন।  তিনি ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে কারারুদ্ধ হন।  ১৯৩০ সালে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি ‘লিবার্টি’ পত্রিকায় যোগ দেন।  লিবার্টি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি ‘অ্যাডভান্স’ এবং পরে শরৎচন্দ্র বসুর ‘নেশন’ পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সহায়তা করে গেছেন সুকৌশলে। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে, ঢাকায় লেম্যান, হাডসন, মেদিনীপুরে বার্জ, পেডি, ডগলাস, কুমিল্লায় জেলা ম্যাজিসেট্রটের উপর শান্তি-সুনীতির গুলি, অ্যান্ডারসনের উপর আক্রমণ বা রাইটার্স বিল্ডিং-এ অলিন্দ যুদ্ধের বিনয়-বাদল-দীনেশ এর আত্মাহুতি – এ সবের পিছনে কোন না কোন ভাবে তার যোগদান ছিল। কোথাও পরামর্শদাতা, কোথাও আশ্রয় দাতা আবার কোথাও বা সহযোগী হিসাবে। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী তিনি ছিলেনই। তিনি ও মেজর সত্য গুপ্ত নিরলস ভাবে অত্যন্ত সাবধানে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১৬/১৭ ই জানুয়ারির সুভাষের মহানিস্ক্রম্মণের পরিকল্পনার ছক তৈরি করেছিলেন।

তিনি মহানিষ্ক্রমণ পর্ব সম্পর্কে অনেক কিছু জানতেন।  ১৯৪২ সালে, সত্যরঞ্জন শান্তিময় গঙ্গোপাধ্যায়, বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের যতীশ গুহ প্রমুখ বিপ্লবীদের সাথে গ্রেফতার হন।  দিল্লির লাল কেল্লায় সামরিক বাহিনীর হেফাজতে ব্রিটিশ শাসকদের অকথ্য অত্যাচার।  বন্দী অবস্থায় নির্মম নির্যাতনের ফলে মৃত্যু হয় যতীশ গুহের।  কিন্তু সত্যরঞ্জন অবশেষে অনাহার, অর্ধাহার এবং ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে থেকে মুক্তি পান।  নেতাজিকে নিয়ে তাঁর অসামান্য কাজ হল- “জীবনে দুঃসাহসিক কাজ”।  লোকচক্ষু থেকে সত্যরঞ্জন দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন।

সত্যরঞ্জন বকসি ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ৮ই জানুয়ারি কলকাতায় প্রয়াত হন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে কিংবদন্তি ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী, কেলুচরণ মহাপাত্র।

কেলুচরণ মহাপাত্র ছিলেন একজন কিংবদন্তি ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী, গুরু এবং ওড়িশি নৃত্যের প্রবর্তক যার কৃতিত্ব বিংশ শতাব্দীতে এই শাস্ত্রীয় নৃত্যের পুনরুজ্জীবন এবং জনপ্রিয়তার দিকে পরিচালিত করেছিল।  তিনি ওডিশা থেকে প্রথম ব্যক্তি যিনি পদ্মবিভূষণ পুরস্কার পান।  তিনি ১৯২৬ সালের ৮ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।

ভারতের একজন প্রসিদ্ধ সংস্কৃত কবি এই গুরু সম্বন্ধে লিখেছেন – ‘তাঁর নৃত্যে দেহের প্রতিটি অঙ্গ সঞ্চালন অলৌকিক ভঙ্গি ও অঙ্গবিন্যাসের পরম মাধুর্য সৃষ্টি করে। প্রকৃতপক্ষে গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র নৃত্যশৈলীর সাগর পার করেছিলেন।

কেলুচরণ মহাপাত্র তাঁর যৌবনে গাতিপোয়া পরিবেশন করতেন, যা উড়িষ্যার একটি ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, যেখানে অল্পবয়সী ছেলেরা ভগবান জগন্নাথ দেবের প্রশংসা করার জন্য মহিলাদের পোশাক পরে।  পরবর্তী জীবনে তিনি গতিপোয়া এবং মাহারি নৃত্য নিয়ে গভীর গবেষণা করেন, যা তাঁকে ওড়িশি নৃত্যের পুনর্গঠনে সাহায্য করেছিল।  গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র মৃদঙ্গ, পাখওয়াজ এবং তবলায় পারকাশন যন্ত্রের একজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন, যা তাঁর নৃত্য রচনায় সরাসরি অবদান রেখেছিল।  ঐতিহ্যবাহী পটচিত্র অঙ্কনেও তিনি পারদর্শী ছিলেন। গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের স্ত্রীর নাম লক্ষ্মীপ্রিয়া মহাপাত্র। লক্ষ্মীপ্রিয়া নিজেও একজন নৃত্যশিল্পী।

তিনি বলেছিলেন, “নৃত্য আমার জীবনে শুধু অভীষ্টসাধনই করেনি, এটাই ছিল আমার সম্পূর্ণ জীবন। আজকে আমি যা-ই হই-না-কেন সেটা পুরোপুরি আমার গুরুর আশীর্বাদেই।” তিনি আরো বলেন, “প্রকৃত নৃত্য নিশ্চিতভাবে অবিভক্ত অস্তিত্বের অনুভূতি প্রকাশ করে, যাতে একটি দর্শকের অনুভূতি হয় যে, সে উপলব্ধি করা বিষয় থেকে ভিন্ন নয়”।

“জনগণকে প্রমোদ প্রদানের জন্যে ওডিশি শুধুমাত্র একটা নৃত্যশৈলীই নয় আসলে অনুপ্রেরণা এবং উন্নয়নের উৎস। আমি আদতে নৃত্য প্রদর্শন করিনা বরং সমবেদনার সঙ্গে প্রার্থনা করি এবং দর্শকদের ভাষায় যেন এই ‘শৈলী’ নৃত্যরত ।”

পুরস্কারসমূহ—–

তিনি সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার (১৯৬৬),  পদ্মশ্রী (১৯৭৪), পদ্মভূষণ (১৯৮৮), সংগীত নাটক আকাদেমি ফেলোশিপ (১৯৯১), পদ্ম বিভূষণ(২০০০), মধ্য প্রদেশ রাজ্য সরকার থেকে কালিদাস সম্মান লাভ করেন।

মৃত্যু—

কেলুচরণ মহাপাত্র ৭ এপ্রিল ২০০৪ সালে প্রয়াত হন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে স্বর্ণযুগের অন্যতম দাপুটে অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবী।

সুপ্রিয়া দেবী (৮ জানুয়ারী, ১৯৩৩), একজন বাঙালী অভিনেত্রী, যিনি বাংলা চলচ্চিত্রে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অভিনয় করেন। তার আসল নাম কৃষ্ণা এবং ডাকনাম বেনু। উত্তম কুমারের সঙ্গে ‘বসু পরিবার’ ছবিতেই বড় পর্দায় তাঁর আত্মপ্রকাশ। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ছবিতে তাঁর অনবদ্য অভিনয় এখনও সবার হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে ৷ মোট ৪৫টি ছবিতে তিনি অভিনয় করেন

 

সুপ্রিয়া দেবী মায়ানমারের মিয়িত্‌কিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা বিখ্যাত আইনজীবী গোপাল চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, বার্মায় বসবাসরত অনেক ভারতীয় ভারতে চলে আসেন। সুপ্রিয়া দেবীর পরিবার শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ কলকাতায় বসবাস শুরু করেন।

 

 

সুপ্রিয়া দেবী তার বাবার নির্দেশিত দুটি নাটকে অভিনয় করে সাত বছর বয়সে তার অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেন।  তিনি ছোটবেলা থেকেই নাচের প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন, এমনকি তিনি থাকিন নু থেকে একটি পুরস্কার জিতেছিলেন।  শৈশবকাল থেকেই তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন নীহার দত্ত, যিনি গুহ ঠাকুরতা পরিবারের একজন সদস্যকে বিয়ে করেছিলেন এবং মিসেস নীহার গুহ ঠাকুরতা নামে পরিচিত ছিলেন, যিনি সেই সময়ে বার্মার একজন বিশিষ্ট সমাজসেবী ছিলেন।
১৯৪৮ সালে, ব্যানার্জি পরিবার ভালোর জন্য কলকাতায় পুনর্বাসিত হয়।  তারা ১৯৪২ সালে শরণার্থী শিবিরে বসবাস করত, যখন জাপান জোরপূর্বক বার্মা দখল করে।  যুবতী সুপ্রিয়া ও তার পরিবার জোর করে পায়ে হেঁটে কলকাতায় ফিরতে বাধ্য হয়।
কলকাতায়, তিনি তার নাচের প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখেন এবং গুরু মুরুথাপ্পান এবং পরে গুরু প্রহ্লাদ দাসের কাছ থেকে নৃত্যের প্রশিক্ষণ নেন।  সুপ্রিয়া দেবী এবং তার পরিবারের সাথে বিখ্যাত অভিনেত্রী চন্দ্রাবতী দেবীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।

 

 

১৯৫৪ সালে, সুপ্রিয়া দেবী বিশ্বনাথ চৌধুরীকে বিয়ে করেন এবং পরে তাদের একমাত্র কন্যা সোমা জন্মগ্রহণ করেন।  ১৯৫০ এর দশকের শেষের দিকে একটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র দিয়ে ফিরে আসার আগে তিনি কিছু সময়ের জন্য চলচ্চিত্র থেকে অবসর নিয়েছিলেন।

 

নানা চরিত্র, সে সব চরিত্রের বৈচিত্রময়তা সুপ্রিয়া দেবীকে বসিয়েছে এক ভিন্ন আসনে। এর মধ্যে বহু ছবিতেই তাঁর বিপরীতে ছিলেন বাংলা ছায়াছবির আর এক কিংবদন্তি অভিনেতা উত্তম কুমার। তাঁর সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করাটা বড় সহজ কথা নয়। কিন্তু সুনিপুণ দক্ষতায় দু’জনের এক আশ্চর্য রসায়ন তৈরি হয়েছিল পর্দায়। এএর পর তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে।  তারপর থেকে তারা বহু বছর ধরে একসাথে থাকতেন।

 

 

তাঁর চলচ্চিত্র সমূহ —–

 

দেবদাস, দুই পুরুষ, সন্ধ্যা রাগ, সন্ন্যাসী রাজা, যদি জানতেম, বাঘবন্দী খেলা, বনপলাশীর পদাবলী, চিরদিনের, দ্য নেমসেক, একটী নদীর নাম, শেষ ঠিকানা, মন নিয়ে, চৌরঙ্গি, তিন অধ্যায়, কাল তুমি আলেয়া, শুধু একটি বছর, হানিমুন, ইমান কল্যাণ, কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী, আপ কি পরিছাঁইয়া, দূর গগন কি ছাঁও মে, লাল পাত্থর, বেগানা, নতুন ফসল, শুন বর নারী, বসু পরিবার, সূর্য শিখা, কোমল গান্ধার, মধ্য রাতের তারা, মেঘে ঢাকা তারা। এত অজস্র চরিত্রের মধ্যেও সুপ্রিয়া চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন ঋত্বিক ঘটকের ছবি ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ও ‘কোমলগান্ধার’-এ তাঁর কাজের জন্য। বাঙালির বড় আপন এই অভিনেত্রী বেঁচে থাকবেন তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলির মধ্যেই।

 

 

তিনি ২০১১ সালে বঙ্গভূষণ পুরস্কার অর্জন করেন, যা পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ বেসামরিক উপাধি। ২০১৪ সালে বাংলা চলচ্চিত্রে তার অবদানের জন্য ভারত সরকার সুপ্রিয়া দেবীকে, ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার “পদ্মশ্রী” তে ভূষিত করেন।

 

 

২০১৮ সালের ২৬ জানুয়ারি এই মহান অভিনেত্রী কলকাতায় ৮৫ বছর বয়সে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। টলিউড ইন্ডাষ্ট্রির কাছে তিনি সকলের প্রিয় ‘বেনু দি’। কিংবদন্তি অভিনেত্রীর অভিনয় ক্যারিশ্মা নিয়ে আলোচনা নেহাতই বাতুলতা। তিনি চলে গিয়েছেন ছয় বছর হল৷ তবে সিনেপ্রেমী বাঙালির মননে তিনি থেকে যাবেন আজীবন।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

কথাসাহিত্য লেখিকা নিরুপমা দেবী’র প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা।

কথাসাহিত্য লেখিকা নিরুপমা দেবী ৭ মে, ১৮৮৩ সালে পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে জন্মগ্রহণ করেন  । তাঁর সাহিত্যিক ছদ্মনাম ছিল শ্রীমতী দেবী। নিরুপমা দেবীর পিতা নফর চন্দ্র ভট্ট, বিচার বিভাগীয় কর্মচারী ছিলেন। তিনি বাড়িতে শিক্ষিত হয়েছিলেন।

 

সাহিত্যকর্ম——–

 

নিরুপমার অকাল বৈধব্যের পর, তিনি বড় ভাই বিভূতিভূষণ ভট্ট এবং কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় সাহিত্য সাধনা শুরু করেন।  বিভূতিভূষণ ও শরৎচন্দ্র সম্পাদিত হাতেলেখা পত্রিকায় তাঁর সাহিত্যকর্মের পাণ্ডুলিপি প্রকাশিত হয়।  শরৎচন্দ্র তাঁকে গদ্য রচনায় অনুপ্রাণিত করেন এবং অনুরূপা দেবী গল্প রচনায় অনুপ্রাণিত করেন।  তাঁর প্রথম উপন্যাস ”উচ্ছৃঙ্খল”।  স্বদেশী যুগে তাঁর রচিত অনেক গান ও কবিতা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। দাম্পত্য জীবনের অন্তর্দ্বন্দ্ব  তাঁর উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু।  ১৯১৯-২০ খ্রিস্টাব্দে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘দিদি’ তার শ্রেষ্ঠ উপন্যাস বলে স্বীকৃত।নিরুপমা দেবীর একাধিক উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িত ও মঞ্চে অভিনীত হয়েছে। অন্যান্য রচনার মধ্য রয়েছে:—যুগান্তরের কথা, অনুকর্ষ, দেবত্র, পরের ছেলে, অন্নপূর্ণার মন্দির , দিদি , আলেয়া, বিধিলিপি, শ্যামলী, বন্ধু, আমার ডায়েরি, ।

 

 

 

পুরস্কার———-

 

সাহিত্যে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩৮ সালে ‘ ভুবনমোহিনী দাসী স্বর্ণপদক’ এবং ১৯৪৩ সালে ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ লাভ করেন নিরুপমা দেবী।

 

মৃত্যু—

 

৭ জানুয়ারী, ১৯৫১ সালে তিনি প্রয়াত হন।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে বৈষ্ণব সাহিত্যের অন্যতম লেখক ও কবি বিমানবিহারী মজুমদার।

বৈষ্ণব সাহিত্যের এক অন্যতম লেখক ও কবি ভাগবতরত্ন বিমানবিহারী মজুমদার  ছিলেন বিংশ শতকের প্রথমার্ধে একাধারে ইতিহাস ও অর্থনীতির পণ্ডিত ।

 

জন্ম ও শিক্ষাজীবন———‐—-

 

বিমান বিহারী মজুমদার ১৯০০ সালের ৭ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের নদীয়া জেলার কুমারখালীতে জন্মগ্রহণ করেন।  পিতার নাম শ্রীশচন্দ্র মজুমদার।  বিমান বিহারীর স্কুল পড়াশুনা নবদ্বীপে।  ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে নবদ্বীপ হিন্দু স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজে ভর্তি হন।  এখান থেকে তিনি ইতিহাসে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন এবং বিএ পাস করেন।  ১৯২৩ সালে, তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে M.A. পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় হন এবং পরে অর্থনীতিতে M.A. পাশ করেন।

 

কর্মজীবন—————-

 

বিমান বিহারী তখন পাটনার বি.এন. কলেজে ইতিহাস ও অর্থনীতি পড়ানোর মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন।  এখানে অধ্যাপনার সময় তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাজা রামমোহন রায়ের আমল থেকে দয়ানন্দের সময়কাল পর্যন্ত রাজনৈতিক চিন্তার ইতিহাস এবং এর সহায়ক বই লেখেন এবং ১৯৩২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি লাভ করেন।  ১৯৩৭ সালে তিনি বাংলায় ‘চৈতন্যচরিতের উপাদান’ গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেন এবং পিএইচডি হন।  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।  বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বাংলায় লেখা তাঁর গবেষণাপত্রই প্রথম এই সম্মান লাভ করে।  তার কর্মজীবনে, বিমানবিহারী ইতিহাস ও অর্থনীতিতে পাণ্ডিত্য এবং প্রতিষ্ঠা অর্জন করেছিলেন, তবে বৈষ্ণব সাহিত্যের উপর মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছিলেন এবং সময়ের সাথে সাথে বৈষ্ণব সমাজের সর্বোচ্চ সম্মানিত ব্যক্তিত্বের অবস্থান অর্জন করেছিলেন এবং ‘ভাগবতরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত হন।

 

কর্ম জীবন—

 

জীবনের বেশিরভাগ সময় পাটনায় কাটিয়েছেন।  ১৯৪৫ সালে, হরপ্রসাদ দাস বিহারের আরাতে অবস্থিত জৈন কলেজের অধ্যক্ষ হন।  ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ-পরিদর্শক নিযুক্ত হন এবং ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন।  তিনি ১৯৬৪ সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে UGC গবেষণা অধ্যাপক ছিলেন।  বিমানবিহারী বৈষ্ণব সাহিত্য ব্যতীত অন্যান্য বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেন।

 

রচনাবলি——-

 

History of Political Thought: From Rammohun to Dayananda: 1821–84,, History of Religious Reformatinion in India in the Nineteenth century,  ভারতের শাসন পদ্ধতি, শ্ৰীশ্ৰীক্ষণদাগীতচিন্তামণি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, চৈতন্যচরিতের উপাদান, চণ্ডীদাসের পদাবলী, ষোড়শ শতাব্দীর পদাবলী সাহিত্য, পাঁচশত বৎসরের পদাবলী, জ্ঞানদাস ও তাঁহার পদাবলী, রবীন্দ্রসাহিত্যে পদাবলীর স্থান, গোবিন্দদাসের পদাবলী ও তাঁহার যুগ।

 

১৮ নভেম্বর, ১৯৬৯ সালে তিনি প্রয়াত হন।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে – ভারতের প্রখ্যাত জাদুকর প্রতুল চন্দ্র সরকার (পি সি সরকার) ।

P. C. সরকার  ছিলেন একজন বিখ্যাত ভারতীয় জাদুকর।  তাঁর পুরো নাম প্রতুল চন্দ্র সরকার। তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক জাদুকরদের মধ্যে একজন যিনি ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তার জাদু প্রদর্শন করেছিলেন। তার প্রদর্শনীগুলির মধ্যে একটি ছিল ইন্দ্রজাল প্রদর্শনী।  তিনি প্রথমে মঞ্চে এবং তারপর টেলিভিশনে এই অনুষ্ঠানটি দেখান।

 

প্রতুল চন্দ্র সরকার ১৯১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার আশেকপুর গ্রামে একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  শিবনাথ হাইস্কুলে পড়াশোনা করেছেন।  তিনি গণপতি চক্রবর্তীর কাছ থেকে জাদুর প্রাথমিক ধারণা পেয়েছিলেন।  ১৯৩০ সালের দিকে তার জাদু জনপ্রিয় হতে শুরু করে। তিনি কলকাতা, জাপান এবং অন্যান্য অনেক দেশে জাদু প্রদর্শন করেছেন।

 

প্রতুলচন্দ্র সরকার কলকাতার বাসন্তী দেবীকে বিয়ে করেন।  তার তিন ছেলে, মানিক সরকার, পিসি সরকার জুনিয়র এবং পিসি সরকার ইয়াং।

 

পুরস্কার——

 

১৯৬৪ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে, ভারত সরকার “জাদু সম্রাট পি.সি সরকার” নামে কলকাতাতে একটি সড়কের নামকরণ করেছে, ১৯৪৬ ও ১৯৫৪ সালে জাদুর অস্কার নামে পরিচিত “দ্য ফিনিক্স” (আমেরিকা) পুরস্কার লাভ করেন, জার্মান মেজিক সার্কেল থেকে “দ্য রয়াল মেডিলিয়ন” পুরস্কার পান, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সালে ভারতীয় সরকার তার প্রতি সম্মান জানিয়ে একটি ৫ টাকার স্ট্যাম্প চালু করে।

 

তিনি ৬ জানুয়ারী ১৯৭১ সালে প্রয়াত হন।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

প্রখ্যাত বাঙালি সংগীতজ্ঞ, সংগীতালোচক, গীতরচয়িতা, সুরকার ও গায়ক, দিলীপকুমার রায় – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

দিলীপকুমার রায় ২২ জানুয়ারি, ১৮৯৭ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বিখ্যাত বাঙালি সঙ্গীতজ্ঞ, সঙ্গীতালোচক, গীতরচয়িতা, সুরকার ও গায়ক। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্যও বিখ্যাত।  তাঁর পিতা ছিলেন বিখ্যাত নাট্যকার ও গীতিকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়।

সঙ্গীতশিক্ষা———

তিনি সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার, রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামী এবং অচ্চন  বাঈ-এরকাছ থেকে উন্নত সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করেন।  পাশ্চাত্য সঙ্গীতেও তার বিশেষ অধিকার ছিল।

 

সঙ্গীতে অবদান——–

তিনি রচনা এবং গান উভয় ক্ষেত্রেই একটি অনন্য এবং স্বতন্ত্র শৈলী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।  সবাই একে দিলীপী ঢং বলে ডাকত।  সঙ্গীতের উপর বহু গ্রন্থ রচনা করে তিনি বাংলা সঙ্গীত সমালোচনা সাহিত্যে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেন।  সঙ্গীত বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর আদান-প্রদান ঐতিহাসিক খ্যাতি লাভ করে।  দিলীপ কুমার রায়ের প্রতি অতুল প্রসাদ সেন ও কাজী নজরুল ইসলামের বিশেষ স্নেহ ছিল।  তিনি কলকাতার সুধীমহলে নজরুলের প্রথম দিকের সঙ্গীত রচনাগুলিকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।  নজরুল সম্পর্কে তাঁর স্মৃতিকথা নজরুল সঙ্গীত সমালোচনার ভিত্তি তৈরি করে।  নজরুলের গানের স্বরলিপি প্রকাশেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।

 

সন্ন্যাসজীবন——

তিনি ১৯২৮ সালে একজন সন্ন্যাসী হন এবং সঙ্গীত ও সাহিত্য সাধনায় নিযুক্ত হয়ে তার সমগ্র জীবন অতিবাহিত করেন।

মৃত্যু——-

১৯৮০ সালের ৬ই জানুয়ারি তাঁর দেহাবসান ঘটে।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

জোন অফ আর্ক : পরাধীন ফ্রান্সের মুক্তিদাত্রী বীরকন্যা এবং রূপকথাতুল্য এক নেত্রী ।

জোয়ান অফ আর্ক একজন পরাধীন ফ্রান্সের মুক্তিদাত্রী বীরকন্যা এবং রূপকথার নেতা, নিপীড়িত ফ্রান্সের ত্রাণকর্তা।   জান্ দার্ক, যিনি ইংরেজিতে Joan Of Arc নামে পরিচিত।  তিনি ইংরেজদের সাথে শত বছরের যুদ্ধে (1337-1453) ফরাসি সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেন।  ফ্রান্সে তার স্মরণে অনেক স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।  তার বন্ধু ছিল আর্ক গুইন।  জোয়ান অফ আর্ককে ৩০ মে, ১৪৩১ খ্রিস্টাব্দে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল।

 

তিনি ১৪১২ সালের ৬ জানুয়ারি মিউজ নদীর তীরে দঁরেমি গ্রামে একটি সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  ফ্রান্স তখন ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল।  ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম হেনরি এর পুত্র হেনরি VI যখন ফরাসি সিংহাসনে আরোহণ করেন, তখন ফ্রান্সের চার্লস সপ্তম পালিয়ে যান।

 

জন ছিলেন অশিক্ষিত।  কথিত আছে যে তেরো বছর বয়সে, একটি মাঠে ভেড়ার পাল চরানোর সময়, তিনি ভবিষ্যদ্বাণী পেয়েছিলেন যে তিনি মাতৃভূমির স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার এবং ফ্রান্সের সঠিক রাজাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।  এই প্রকাশ তার জীবনকে আমূল বদলে দেয়।  এর পরে, জন ফ্রান্সের পলাতক রাজা সপ্তম চার্লসের সাথে দেখা করার জন্য প্রচুর প্রচেষ্টা করেন এবং তাকে দেশের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করার জন্য সৈন্য চেয়েছিলেন।  প্রথমে রাজা অপমানিত ছিলেন, কিন্তু পুরোহিত সম্প্রদায়ের পরামর্শে তিনি জোয়ানকে সামরিক সাহায্য দিতে রাজি হন।

 

জন ২৮ এপ্রিল, ১৪২৯ তারিখে ৪০০০ সৈন্য নিয়ে, সাদা পোশাক পরা, একটি সাদা ঘোড়ায় চড়ে এবং একটি পঞ্চক্রুশধারী তলোয়ার নিয়ে অবরুদ্ধ শহর অরলেয়াঁয় প্রবেশ করেন।  তারা প্রথম আক্রমণে জয়লাভ করে এবং এরপর একের পর এক সাফল্য পায় তারা।  কিছুদিনের মধ্যেই তারা ব্রিটিশ সৈন্যদের হাত থেকে তুরেলবুরোজ শহর উদ্ধার করে।  এরপর পাতের যুদ্ধে ব্রিটিশরা পরাজিত হয়।  জুন মাসে, জন এবং তার বাহিনী শত্রুদের ভেদ করে এবং রিমস শহর দখল করে।  তারপর ১৬ জুলাই, চার্লস সপ্তম ফ্রান্সের রাজা হিসাবে পুনরায় সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন এবং জন এইভাবে ফ্রান্সকে স্বাধীনতার পথে নিয়ে যান।  জোন ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে শত বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটায়।

 

ফ্রান্সের স্বাধীনতার পর ব্রিটিশরা  জোনকে জব্দ করার ফন্দি আঁটতে থাকে। ।  ফরাসি রাজনৈতিক দল, বারগুন্ডিয়ানদের বিশ্বাসঘাতকতার সুযোগ নিয়ে, ইংরেজরা কঁপিঞ্যান্ এর বাইরে শত্রু বাহিনীর উপর আক্রমণ করার সময় জোনকে বন্দী করতে সক্ষম হয়।  তারপর একজন ইংরেজ পাদ্রীর অধীনে তার বিচার হয়।  বিচার তাকে ‘ডাইনি’ ঘোষণা করে, তার কার্যকলাপকে প্রচলিত ধর্মের বিরুদ্ধে বলে।  আইনে শাস্তি জীবন্ত পোড়ানো হচ্ছিল।  এই রায় অনুসারে জনকে ৩০ মে, ১৪৩১ খ্রিস্টাব্দে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল।  তার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর, ফরাসিরা ফ্রান্সে ইংরেজদের অধিকারের সমস্ত চিহ্ন চিরতরে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি বিপ্লবী, সাহিত্যিক এবং শ্রমিক-সংগঠক সত্যেন সেন।

সত্যেন সেন প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘ উদীচী সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি বিপ্লবী, সাহিত্যিক ও শ্রমিক-সংগঠক।

সত্যেন সেন ১৯০৭ সালের ২৮ মার্চ বিক্রমপুরের (বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলা) টঙ্গীবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামের সেন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  তাঁর ছোটবেলার ডাক নাম ছিল লস্কর।  তাঁর পিতার নাম ধরনিমোহন সেন এবং মায়ের নাম মৃণালিনী সেন। চার সন্তানের মধ্যে সত্যেন ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।
কলেজে পড়ার সময় বিপ্লবী দল যুগান্তরে যোগ দেন।  ১৯৩১ সালে একজন ছাত্র হিসাবে, তিনি একটি ষড়যন্ত্রের শিকার হন এবং প্রথমবারের মতো কারাবরণ করতে বাধ্য হন।  বহরমপুর জেল ক্যাম্প থেকে তার বন্দিজীবন শুরু হয়।  এ সময় তিনি তিন মাস কারাগারে ছিলেন।  ১৯৩৩ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে জড়িত থাকার জন্য তিনি দ্বিতীয়বার গ্রেফতার হন।  এ সময় তার ৬ বছরের জেল হয়।  ১৯৩৮ সালে সত্যেন সেন জেল থেকে মুক্তি পান। সেই বছর তাকে শান্তিনিকেতন থেকে ‘গবেষণা বৃত্তি’ দেওয়া হয়।  ১৯৪২ সালের ৮ মার্চ ফ্যাসিবাদবিরোধী বিপ্লবী কবি সোমেন চাঁদ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে এক সমাবেশে শহীদ হন।  সে সময় সত্যেন সেন ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।  ‘কৃষক সমিতি’র মাধ্যমে ১৯৪৩ সালের মহাদুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য।  দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় কৃষক সমিতির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কাজ করেছেন।  ১৯৪৬ সালে, কমিউনিস্ট নেতা ব্রজেন দাস ঢাকা থেকে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন।  সত্যেন সেন ব্রজেন দাসের পক্ষে প্রচারণা চালান।  তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে ১৯৪৭ সালে স্বাধীন ভারত সৃষ্টি পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করা হয়।  ১৯৪৯ সালে, তিনি বিপ্লবী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক গ্রেফতার হন।  আবার দীর্ঘ কারাবাস।  সে সময় কমিউনিস্টদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা ছিল অনেক বেশি।

১৯৬৯ সালে বিপ্লবী কথাশিল্পী সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, শহীদুল্লা কায়সারসহ একঝাঁক তরুণ উদীচী গঠন করেন। জন্মলগ্ন থেকে উদীচী অধিকার, স্বাধীনতা ও সাম্যের সমাজ নির্মাণের সংগ্রাম করে আসছে। উদীচী ’৬৮, ’৬৯, ’৭০, ’৭১, সালে বাঙালির সার্বিক মুক্তির চেতনাকে ধারণ করে গড়ে তোলে সাংস্কৃতিক সংগ্রাম। এ সংগ্রাম গ্রামবাংলার পথেঘাটে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় উদীচীর কর্মীরা প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।
উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী এদেশে সুস্থ সাংস্কৃতিক ধারার সংস্কৃতি নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সত্যেন সেনের সৃষ্টিকর্ম ও সাহিত্য হলো সমাজ বাস্তবতার স্পষ্ট প্রকৃতি-স্বরূপের প্রতিচ্ছবি।

 

ছোটদের জন্য লিখিত গল্প— পাতাবাহার (১৯৬৮) অন্যতম।

 

উপন্যাস—–

 

ভোরের বিহঙ্গী (১৯৫৯), রুদ্ধদ্বার মুক্ত প্রাণ (১৯৬৩), অভিশপ্ত নগরী(১৯৬৯), পাপের সন্তান (১৯৬৯), সেয়ান (১৯৬৯), পদচিহ্ন (১৯৬৯), পুরুষমেধ(১৯৬৯), আলবেরুনী(১৯৭০), সাত নম্বর ওয়ার্ড(১৯৭০), বিদ্রোহী কৈর্বত(১৯৭০), কুমারজীব(১৯৭০), অপারেজয়(১৯৭০), মা(১৯৭০), উত্তরণ(১৯৭০), একুল ভাঙ্গে ওকুল গড়ে (১৯৭১)।

 

ইতিহাস আশ্রিত গল্প-উপন্যাস-সাহিত্য——–

 

গ্রামবাংলার পথে পথে (১৯৬৬), আমাদের পৃথিবী (১৯৬৮), মসলার যুদ্ধ (১৯৬৯), এটোমের কথা(১৯৭০), অভিযাত্রী (১৯৭০), মানবসভ্যতার উষালগ্ন (১৯৭১), মনোরমা মাসিমা (১৯৭১), প্রতিরোধ সংগ্রামে বাংলাদেশ (১৯৭১), বিপ্লবী রহমান মাষ্টার (১৯৭৩), সীমান্ত সূর্য আবদুল গাফফার (১৯৭২), জীববিজ্ঞানের নানা কথা (১৯৭৭) ইত্যাদি।

 

পুরস্কার—–

 

১৯৬৯ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৮৬ সালে সাহিত্য মরণোত্তর একুশে পদক।

 

শান্তি নিকেতনের গুরুপল্লীতে ১৯৮১ সালে ৫ জানুয়ারি তিনি মারা যান।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

বিশ্ব ব্রেইল দিবস দিনটি কেন পালিত হয় এবং দিনটির গুরুত্ব।

বিশ্ব ব্রেইল দিবস ৪ জানুয়ারী পালিত হয় যা স্বীকার করে যে যারা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তারা অন্য সকলের মতো মানবাধিকারের একই মানের প্রাপ্য।

বিশ্ব ব্রেইল দিবস ২০২৪: ব্রেইলের উদ্ভাবক লুই ব্রেইলের জন্মের স্মরণে, ৪ জানুয়ারিকে বিশ্ব ব্রেইল দিবস হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।  দিবসটি আরও স্বীকৃতি দেয় যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মানবাধিকারে অন্য সবার মতো একই অ্যাক্সেস থাকা উচিত।

ব্রেইল সিস্টেম কি?

ব্রেইল নামে পরিচিত স্পর্শকাতর লিখন পদ্ধতিতে বর্ণমালার প্রতিটি অক্ষর এবং প্রতিটি সংখ্যা ছয়টি বিন্দু দ্বারা উপস্থাপিত হয়।  উপরন্তু, বিন্দুগুলি গাণিতিক, বৈজ্ঞানিক এবং বাদ্যযন্ত্রের প্রতীকগুলির জন্য দাঁড়ায়।  অন্ধ বা আংশিক দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন লোকেরা এই সিস্টেমটি ব্যবহার করে পড়তে এবং লিখতে পারে।  তারা ব্রেইল ব্যবহার করে ভিজ্যুয়াল ফন্ট সহ বই পড়তে সক্ষম।

বিশ্ব ব্রেইল দিবস ২০২৪: ইতিহাস—

৪ জানুয়ারী, ২০২৪, বিশ্ব ব্রেইল দিবস হিসাবে মনোনীত করা হয়েছে যোগাযোগের একটি ফর্ম হিসাবে ব্রেইলের গুরুত্ব বোঝার জন্য এবং যারা আংশিকভাবে দৃষ্টিহীন বা অন্ধ তাদের জন্য মানবাধিকারের পূর্ণ উপলব্ধি প্রচার করতে।  জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ নভেম্বর 2018-এ ৪ জানুয়ারীকে বিশ্ব ব্রেইল দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। পরের বছর, প্রথমবারের মতো বিশ্ব ব্রেইল দিবসকে বিশ্বব্যাপী ছুটির দিন হিসেবে স্মরণ করা হয় এবং স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

UN উল্লেখ করেছে: “নভেম্বর ২০১৮ (রেজোলিউশন A/RES/73/161), সাধারণ পরিষদ ৪ জানুয়ারীকে বিশ্ব ব্রেইল দিবস হিসাবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই স্বীকৃতি দিয়ে যে মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার সম্পূর্ণ উপলব্ধি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক লিখিত প্রচারের উপর নির্ভর করে৷  ”
UNGA একটি ঘোষণায় উদযাপনের জন্য দিনটিকে বেছে নিয়েছে, যেটি লুই ব্রেইলের জন্মদিনও।  লুই ব্রেইল যখন একটি ছোট শিশু ছিলেন, তিনি ঘটনাক্রমে তার বাবার আউল দিয়ে নিজের চোখে ছুরিকাঘাত করেছিলেন, যার কারণে তিনি তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন।  তিনি ১০ বছর বয়সে ফ্রান্সের রয়্যাল ইনস্টিটিউট ফর ব্লাইন্ড ইয়ুথ-এ সময় কাটিয়েছেন, যেখানে তিনি উত্থাপিত-ডট সিস্টেমের বিকাশ ও নিখুঁত করেছেন যা অবশেষে ব্রেইল নামে পরিচিতি লাভ করে।  দুর্ভাগ্যবশত, ব্রেইল তার সৃষ্টির উপযোগিতা প্রত্যক্ষ করতে পারেনি।  রয়্যাল ইনস্টিটিউট ব্রেইল শিক্ষা শুরু করার দুই বছর আগে, ১৮৫২ সালে, তিনি মারা যান।

 

বিশ্ব ব্রেইল দিবস ২০২৪: তাৎপর্য—

 

ব্রেইল ধীরে ধীরে বিশ্বজুড়ে অন্ধদের জন্য প্রাথমিক লিখিত তথ্য বিন্যাস হিসাবে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে।  দিবসটির উদ্দেশ্য হল যোগাযোগের হাতিয়ার হিসাবে ব্রেইলের মূল্য বোঝা এবং যারা অন্ধ বা আংশিকভাবে দৃষ্টিশক্তিহীন তাদের জন্য মানবাধিকারের পূর্ণ উপলব্ধি প্রচার করা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের দারিদ্র্যের হার বেশি এবং আজীবন অসমতা সহ্য করে।  খবরে বলা হয়েছে, মহামারীর পর থেকে বিষয়টি আরও গুরুতর হয়ে উঠেছে।
বিশ্ব ব্রেইল দিবস প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার আইন, এবং চোখের রোগ প্রতিরোধ, সনাক্তকরণ এবং চিকিত্সা সম্পর্কে কথোপকথন প্রচার করার সুযোগ দেয়।  অন্ধ এবং আংশিক দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরা প্রতিদিন যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হয় তাও বিশ্ব ব্রেইল দিবসের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।  ব্রেইল দিবস কর্তৃপক্ষের দ্বারা অন্ধদের প্রতি অবহেলার দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
আজ, বিশ্ব ব্রেইল দিবস শুধুমাত্র লুই ব্রেইলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনই নয়, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জীবনে ব্রেইল যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সে সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও কাজ করে৷  ব্রেইল সাক্ষরতা এবং অন্তর্ভুক্তি প্রচারের জন্য বিশ্বজুড়ে ইভেন্ট, কর্মশালা এবং শিক্ষামূলক উদ্যোগ অনুষ্ঠিত হয়।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This