Categories
প্রবন্ধ

ভারতের অন্যতম সফল শিল্পপতি স্যার রতন টাটা।

রতন টাটা দেশের প্রিয় শিল্পপতিদের মধ্যে এমনই এক মুখ, যাকে সবাই চেনেন। তিনি একজন বিখ্যাত ভারতীয় শিল্পপতি এবং টাটা গ্রুপের অবসরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। রতন টাটা শুধু শিল্পপতিই নন , তিনি একজন সমাজসেবী , মানব দরদি ও দূরদর্শী মানুষ । তিনি ১৯৯১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ২৮ ডিসেম্বর ২০১২ -তে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন, কিন্তু টাটা গ্রুপের দাতব্য ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হিসেবে বহাল রয়েছেন।তার নেতৃত্বে, টাটা গ্রুপ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং গ্রুপের আয়ও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভারতের অন্যতম সফল শিল্পপতি স্যার রতন টাটা ১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর মুম্বইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি টাটা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জামশেদজি টাটার দত্তক পৌত্র এবং নেভাল টাটার পুত্র। তাঁর মায়ের নাম সুনি টাটা। রতন টাটার বাবা মা যখন পৃথক হয়ে যান যখন তাঁর দশ বছর বয়স ছিল।যদিও মা বাবার ডিভোর্স নিয়ে তাঁকে ও তাঁর দাদাকে অনেক টিটকারির সম্মুখীন হতে হয়েছিল।  রতন টাটা গুজরাটের অন্যতম ধনী পরিবারের ছেলে হলেও তার শৈশব খুব একটা ভালো কাটেনি। তার কারণ ছিল রতনের বাবা-মা, বিচ্ছেদের কারণে তাঁরা আলাদা থাকতেন। দাদির সঙ্গে বেড়ে ওঠার ফলে তাঁর দাদি তাঁকে জীবনের মূল্যবোধ শিখিয়েছিলেন।

রতন টাটা ছোট বেলা থেকেই বেশ মেধাবী ছিলেন।রতন টাটা কেম্পিয়ন স্কুলে (মুম্বাই) শিক্ষা জীবন শুরু করেন। পরে তিনি ক্যাথেড্রাল অ্যান্ড জন কনন স্কুল-এ তিনি স্কুল শিক্ষা শেষ করেন। স্কুল শিক্ষা শেষ করার পর তিনি ১৯৬২ সালে কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ারিং ও আর্কিটেচার বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়তে বাণিজ্য ও অ্যাডভেঞ্চেড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন।

বিশ্বের অন্যতম সফল ব্যবসায়ী রতন টাটার শুরুটা হয়েছিল ছোটখাট চাকরি দিয়ে। পড়াশুনা শেষ করে রতন টাটা (Ratan Tata) আমেরিকার জোনস এ্যান্ড ইমনস নামে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে কিছুদিন কাজ করেন। তারপর ১৯৬১ সালে তিনি টাটা গ্রুপে টাটা স্টিলের কর্মচারী হিসেবে রতন টাটার (Ratan Tata) ক্যারিয়ার শুরু করেন। যেখানে তাঁর প্রথম দায়িত্ব ছিল বিস্ফোরণ চুল্লি এবং চাউলের পাথর পরিচালনা করা। ১৯৯১ সালে জে আর ডি টাটা রতন টাটার মেধা পরিশ্রম ও মানসিকতার মূল্য দিতেই টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান পদে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৯১ সালে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান হয়ে তিনি টাটা গ্রুপের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনেছিলেন। ধীরে ধীরে কোম্পানীকে বিরাট এক আন্তর্জাতিক কোম্পানীতে পরিনত করেন। ২১ বছরের মিশনে পৃথিবীর ৬টি মহাদেশের ১০০ টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে দেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা। রতন টাটা আসলে মানবিক হৃদয় এবং ক্ষুরধার বৈষয়িক বুদ্ধির জীবন্ত প্রতীক। যে কারণে Tata Group-এর চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে অক্লান্তভাবে ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের পরিধি বাড়িয়েছেন। যার মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের একাধিক অধিগ্রহণ রয়েছে। যেমন Land Rover Jaguar-এর সঙ্গে Tata Motors, Tetly-র সঙ্গে Tata Tea এবং Corus-এর সঙ্গে Tata Steel। সবক’টি অধিগ্রহণই কোম্পানির মুনাফা কয়েকগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
রতন টাটাই এ দেশের একমাত্র শিল্পপতি যাঁর গ্যারাজে যেমন Ferrari California, Cadillac XLR, Land Rover Freelander, Chrysler Sebring, Honda Civic, Mercedes Benz S-Class, Maserati Quattroporte, Mercedes Benz 500 SL, Jaguar F-Type, Jaguar XF-R-সহ আরও অনেক বিলাসবহুল, আভিজাত্যে ভরা নিজস্ব গাড়ি রয়েছে, আবার যাবতীয় প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে যিনি ভারতকে উপহার দেন মাত্র এক লক্ষ টাকার ন্যানো।তিনি ২০০৭ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে F-16 Falcon-এর পাইলট হয়েছিলেন
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে, রতন টাটা মাত্র এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা গাড়ি “ন্যানো” চালু করেছিলেন। আসলে, রতন এই স্বপ্নটি দেখেছিলেন ১৯৯৭ সালে, যাতে একজন সাধারণ মানুষ মাত্র এক লক্ষ টাকায় একটি গাড়ি কেনার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন।

রতন টাটা শুধু শিল্পপতিই নন , তিনি একজন সমাজসেবী , মানব দরদি ও দূরদর্শী মানুষ । মানুষের পাশে থেকে মানব সমাজের কল্যাণের জন্য ব্যবসাকে প্রতিষ্ঠা করে এ যেন এক নতুন উদ্যম সৃষ্টি করেছেন , যা আগামীদিনে নতুন প্রজন্মকে পথ দেখতে পারবে। রতন টাটা (Ratan Tata) সারাজীবন ধরে প্রমান করেন দৃঢ় সংকল্প , জেদ আর মানুষের কল্যাণকামী মানসিকতা থাকলে বিশ্ব জয় করা সম্ভব।২০০৮ সালে মুম্বাই তাজ হোটেলে জঙ্গি হামলা হলে অনেক পরিবার স্বজন হারিয়ে , আহত হয়ে , কর্মচ্যুত বিপন্ন হয়ে পড়েছিলেন। উল্লেখযোগ্যভাবে রতন টাটা তখন সেই সব কর্মীদের পাশে থেকেছেন, আর্তের সহায় হয়েছেন। এমনকি কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজে উপিস্থিত থেকে সাহায্য করেছিলেন ।

রতন টাটা ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মভূষণ এবং পদ্মবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন।
এছাড়াও রতন টাটা (Ratan Tata) অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেয়েছেন।

 

।।তথ্য: সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট ।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

বাংলা যাত্রাজগতের জনপ্রিয় যাত্রাপালার ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বাংলা ও বাঙালির কালচারের সঙ্গে যাত্রা শিল্প রক্তের সঙ্গে মিশে রয়েছে। এখন সেই যাত্রা শিল্পে কিছুটা ভাটা পড়লেও এমন এক সময় ছিল যখন যাত্রা ছিলো মানুষের বিনোদনের এক বিশাল বড় অঙ্গ। গ্রামীন অনুষ্ঠান কিংবা শীতের শেষের মরসুমে যাত্রার আসার বসত দিকে দিকে।  বহু দিকপাল যাত্রা শিল্পীর নাম তখন ছিল মানুষের মুখে মুখে। তাদের মধ্যে এমন ই একজন কিংবদন্তী যাত্রা শিল্পী ছিলেন ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়। ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় একজন বিশিষ্ট দরদী মনের মরমী যাত্রা পালাকার। তিনি যাত্রাপালার প্রযোজক-নির্দেশক, গীতিকার ও সুরকারও ছিলেন। আজ তাঁর প্রয়াণ দিবস। এমন দিনে জেনে নেবো তাঁর সম্পর্কে কিছু কথা।

 

সংক্ষিপ্ত জীবনী—

 

ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৩৪ সালের ২৫ নভেম্বর বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ, ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর থানার ‘মূল’ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।  অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন মূলগ্রামে।  তবে কৈশোর থেকে বাংলার গ্রামে গ্রামে অনুষ্ঠিত যাত্রার প্রতি তাঁর ভালবাসা ও ভক্তি তাঁকে যাত্রা শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট করে।  কলকাতার চিৎপুরের যাত্রা জগতে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রবেশ করে।  তাঁর রচিত প্রথম যাত্রাপালা “নচমহল” মঞ্চস্থ করে ‘সত্যম্বর অপেরা’।  প্রথম লিখিত যাত্রাপালায় তিনি দর্শকদের সম্মান অর্জন করেন। তিনি একজন সহানুভূতিশীল ব্যক্তি ছিলেন।  দরিদ্র সাধারণ মানুষের কথা, অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার উঠে এসেছে তাঁর লেখায়।  ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় যেমন একজন অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক ছিলেন, তেমনি ছিলেন একজন গীতিকার ও সুরকার।  যাত্রাপালার গানেও যথেষ্ট দক্ষতা ছিল। পালা রচনার পাশাপাশি তিনি পরিচালনায়ও কাজ করেছেন।  ১৯৮৯ সালে, তিনি তাঁর নিজস্ব গ্রুপ “ভৈরব অপেরা” গঠন করেন এবং এটি প্রযোজনা করেন।  এরপর একে একে অনেক যাত্রা লিখেছেন।  তাঁর রচিত যাত্রাপালের সংখ্যা প্রায় আড়াই।  তার জনপ্রিয় যাত্রাপালার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পালাগুলি হল –

দেবী সুলতানা, শ্রীচরণেষু মা, একটি পয়সা, পদধ্বনি,  ভীষ্ম জননী গঙ্গা, মা মাটি মানুষ, অচল পয়সা, গান্ধারী জননী, সাত টাকার সন্তান, পাগলা গারদ, রক্তে ধোয়া ধান, মাতৃঋণ, ঠিকানা পশ্চিমবঙ্গ, কুবেরের পাশা,  জীবন এক জংশন, শান্তি তুমি কোথায়, স্বর্গের পরের স্টেশন, সত্যযুগ আসছে, দু টুকরো মা, ভিখারি ঈশ্বর, ঘরে ঘরে দুর্গা।

 

সম্মাননা—

 

সারা জীবন যাত্রাশিল্পের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি। গ্রাম বাংলার সমাদর কুড়িয়েছেন আর অনেক পুরস্কার পেয়েছেন  ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় । তার গ্রামের বাড়িতে আবক্ষ মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে সরকারি উদ্যোগে।

 

জীবনাবসান—

 

বাংলা যাত্রাজগতের জনপ্রিয় যাত্রাপালাকার ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে ডিসেম্বর প্রয়াত হন। তাঁর প্রয়াণে যাত্রা শিল্প জগতে এক বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হয়। এই শিল্পে তাঁর অবদান আজও শ্রদ্ধারসাথে স্মরণ করে সকলে।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

খ‍্যাতনামা কবি ও সাহিত‍্যিক মণীশ ঘটক এর প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

‘কল্লোল’ যুগের প্রখ্যাত কবি-সাহিত্যিক ড.  আয়কর পরামর্শদাতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হলেও, মনীশ  ঘটক একজন ছোট গল্প লেখক হিসাবেও পরিচিত। তিনি ছিলেন একজন বাঙালি গল্পকার, কবি ও ঔপন্যাসিক।   পাবলো নেরুদার অনেক কবিতাও তিনি অনুবাদ করেছেন। তাঁর ছদ্মনাম যুবনাশ্ব।

 

জন্ম পারিবারিক জীবন ও শিক্ষা—-

 

মনীশ ঘটক ১৯০২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরের বাসিন্দা ছিলেন।  তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল নিউ ভারেঙ্গা, বর্তমান বাংলাদেশের পাবনায়।  তাঁর পিতার নাম সুরেশচন্দ্র।  সুরেশ চন্দ্র ডেপুটি এবং পরে ম্যাজিস্ট্রেট হন, তাই মনীশ ঘটককে তার পিতার কাজে পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে সময় কাটাতে হয়েছিল।  মণীশ ঘটক ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। তাঁর ভাই প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটক এবং লেখক মহাশ্বেতা দেবী তাঁর কন্যা।

 

কর্মজীবন—-

 

মনীশ ঘটক ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে গল্পকার হিসাবে তাঁর সাহিত্যিক জীবন শুরু করেন।  সে সময় কবি হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন।  তিনি কল্লোল যুগের লেখক ছিলেন।  তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ শিলালিপি।  তিনি যুবনাশ্ব ছদ্মনামে গল্প ও গদ্য লিখেছেন।  তার একটি গল্পের বই পটলডাঙ্গার পাঁচালী। কনখল  তাঁর লেখা একটি উপন্যাস।  মান্ধাতা বাবার আমল তাঁর লেখা একটি আত্মজীবনীমূলক বই।  তিনি পাবলো নেরুদার কবিতা অনুবাদ করেন।  তিনি আজীবন বহরমপুর থেকে বর্তিকা নামে একটি ছোট পত্রিকা সম্পাদনা করেন।  তিনি ১৯২৭ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত বুদ্ধদেব বসু এবং অজিতকুমার দত্ত সম্পাদিত প্রগতি পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন নিয়মিত । মনীশ ঘটক আয়কর উপদেষ্টা হিসেবে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেন।

 

তাঁর রচিত গ্রন্থ—-

 

তার কয়েকটি গ্রন্থ শিলালিপি, যদিও সন্ধ্যা, বিদুষী বাক্, কনখল, পটলডাঙ্গার পাঁচালী, মান্ধাতার বাবার আমল (আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ), একচক্রা (শেষ কাব্য সঙ্কলন) উল্লেখযোগ্য।

 

প্রয়াণ—-

 

২৭ ডিসেম্বর ১৯৭৯ সালে তিনি প্রয়াত হন।

 

।।তথ্য: সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য – শ্যামা সঙ্গীতে একজন অসামান্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য ছিলেন বাংলা গানের জগতে এক যুগান্তকারী কণ্ঠশিল্পী।  সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবেও তার খ্যাতি ছিল।  শ্যামা সঙ্গীতে একজন অসামান্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য ১০ ই সেপ্টেম্বর ১৯২২ সালে ব্রিটিশ ভারতের বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার বালির বারেন্দ্র পাড়ায় অত্যন্ত রক্ষণশীল শাক্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। মাতা অন্নপূর্ণা দেবী সুন্দর গান গাইতেন। ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য বিবাহ করেন রেখাদেবীকে। তাঁদের তিন সন্তানের মধ্যে দীপঙ্কর ভট্টাচার্যই পিতার সঙ্গীত-ধারার একমাত্র উত্তরাধিকারী। প্রবাদপ্রতিম শ্যামা সঙ্গীত শিল্পী অকালপ্রয়াত পান্নালাল ভট্টাচার্য ছিলেন তার সর্বকনিষ্ঠ ভ্রাতা।

পড়াশোনা করেছেন  বালির রিভার্স টম্পসন স্কুলে। আর  পারিবারিক ও ধর্মীয় ভাবেই তার সঙ্গীত শিক্ষা ও সাধনা শুরু হয়েছিল। সঙ্গীতের তালিম নেন গোকুল নাগ, পণ্ডিত সত্যেন ঘোষাল প্রমুখের কাছে।

আধুনিক  বাংলা ও হিন্দি গান দিয়ে সঙ্গীত জীবন শুরু করেন তিনি। হিন্দি ছবি ‘ মহাপ্রভু চৈতন্য’ তে তার গাওয়া গানগুলি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। দীর্ঘ পাঁচ দশকের সঙ্গীত জীবনে তিনি প্রায় ৫০০টি গানের রেকর্ড করেন। নিজে লিখেছেন প্রায় ৪০০ টি গান। গীতিকার হিসাবে তিনি “শ্রীপার্থ” ও “শ্রীআনন্দ” ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে প্রণব রায়ের কথায় ও সুবল দাশগুপ্তর সুরে পায়োনিয়ার  রেকর্ডে গাওয়া তার প্রথম গান “যদি ভুলে যাও মোরে, জানাবো না অভিমান” অসম্ভব জনপ্রিয়তা পায়। ‘শহর থেকে দূরে’ ছবিটিতে ‘রাধে ভুল করে তুই চিনলে না তোর প্রেমিক শ্যাম রায়’ গানটি গেয়ে তিনি পাদপ্রদীপের সামনে চলে আসেন। বাংলা গান থেকে শুরু করে নজরুলগীতি, শ্যামা সঙ্গীত, উচ্চাঙ্গ সংগীতের সব শাখাতেই তার সমান দক্ষতা ছিল। বহু জনপ্রিয় গানের তিনি সুরকার  ছিলেন। ‘মহাপ্রস্থানের পথে’ চলচ্চিত্রে তার দেওয়া সুর এক ইতিহাসের সৃষ্টি করেছিল।তিনি বহু বাংলা চলচ্চিত্রের প্লেব্যাক গায়ক ছিলেন।  তিনি ১৯৫৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সাধক রামপ্রসাদ’ ছবিতে ২৪ টির মধ্যে ২৩ টি গান গেয়েছিলেন।

‘পাশের বাড়ি’ ছবিতে সলিল চৌধুরীর কথায় ও সুরে “ঝির ঝির ঝির ঝিরঝিরি বরষায়” গানটি জনপ্রিয় হয়। সমানভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল  মাটিতে জন্ম নিলাম, এই ঝির ঝির বাতাসে, অন্তবিহীন এই অন্ধ রাতের, ঝনন ঝনন বাজে প্রভৃতি গান গুলি।

নেপথ্য গায়ক হিসাবে—

বাবলা, বাদশা, শহর থেকে দূরে, সাহেব বিবি গোলাম, সাড়ে ৭৪, সতী কঙ্কাবতী, শ্রীবৎস চিন্তা, স্বামীজি, তমসা, তানসেন, যত মত তত পথ, যাত্রিক, বন্ধন, বাঁকা লেখা, বড়দিদি, বেহুলা লখিন্দর, ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণ, আবীরে রাঙানো,  অদৃশ্য মানুষ, আদ্যাশক্তি মহামায়া, আলেয়া, অর্ধাঙ্গিনী, অসমাপ্ত, বালক গদাধর,  ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য, বীরেশ্বর বিবেকানন্দ, চৈতালি, চলাচল, চন্দ্রনাথ, দেবীতীর্থ-কামরূপ, দেবীতীর্থ কালীঘাট, ঢুলি, গোধূলি, জয় মা তারা, কালো, মহাপ্রস্থানের পথে, মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র, মীরাবাঈ, মেজদিদি, নববিধান, নষ্টনীড়, রানী রাসমণি, রূসসী, শচীমাতার সংসার, সাধক বামাক্ষেপা, সাধক রামপ্রসাদ।

অভিনেতা হিসাবে—

‘নববিধান’, ‘পাশের বাড়ি’, ‘লেডিজ সিট’ সহ পাঁচটি ছবিতে অভিনয় করেছেন।

সংগীত পরিচালক হিসাবে—

জয় মা তারা,  লেডিজ সিট।

২৭ ডিসেম্বর, ১৯৯২ সালে তিনি প্রয়াত হন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশিষ্ট বাঙালি কবি এবং কালজয়ী গীতিকার – জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাঙালি কবি এবং কালজয়ী গীতিকার।  বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে অসাধারণ গানের কথা সাজিয়ে বাংলা চলচ্চিত্র ও আধুনিক সঙ্গীত জগতে যাঁরা উপহার দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।

 

শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৩২ সালে খুলনা, ব্রিটিশ ভারতের, বর্তমানে বাংলাদেশ জন্মগ্রহণ করেন।  বাবা শচীগোপাল ব্যানার্জি ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার এবং মা রাধারানী দেবী ছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের যোদ্ধা।  তিনি স্থানীয় একটি স্কুলে তাঁর পড়াশোনা করেছেন।  দেশভাগের দাঙ্গার সময় তিনি বাড়ি ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে কলকাতায় আসেন  দিদি শিবানী চ্যাটার্জির বাড়িতে, যিনি দক্ষিণ কলকাতার একজন প্রতিষ্ঠিত প্রাবন্ধিক এবং চিত্রশিল্পী।  আশুতোষ কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন এবং স্নাতক হন।  কিছুদিনের মধ্যেই স্থানীয় খানপুর স্কুলে মাইনর মাইনেতে টিচারের চাকরি পান।  কিন্তু দিদি শিবানী চট্টোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয়, দেশ, বসুমতীসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন।  কেউ কেউ চল্লিশ ও ষাটের দশকের বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।

 

প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত শিল্পী অপরেশ লাহিড়ীর প্রেরণায় “ক্রান্তি শিল্পী সংঘ” এর জন্য গান লিখে খ্যাতি লাভ করেন। তার কবিতা তথা গানে সাধারণ মানুষের সমস্যা উঠে এসেছে। অপরেশ লাহিড়ী, ভূপেন হাজারিকা,ভি.বালসারা,ইলা বসু মান্না দে’র সঙ্গে তার কাজ প্রশংসনীয়। চলচ্চিত্রের জন্য গান ও আধুনিক বাংলা গান ছাড়াও চিত্রনাট্য ও নাটক রচনা করেছেন তিনি। ইলা বসু, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, রুণা লায়লা, রুমা গুহঠাকুরতা, কিশোরকুমার, অংশুমান রায়, মান্না দে,ভূপেন হাজারিকা লতা মঙ্গেশকর সহ বহুস্বনামধন্য শিল্পীদের সুললিত কণ্ঠ-মাধুর্যে কালজয়ী হয়েছে তার রচিত গানগুলি।

তাঁর রচিত কয়েকটি কালজয়ী গান—

 

সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ চেতনাতে নজরুল, বিস্তীর্ণ দুপারে, আমি এক যাযাবর, ভালো করে তুমি চেয়ে দেখো, ভারতবর্ষ সূর্যের এক নাম'(ক্যালকাটা ইয়ুথ কয়ার), তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা, এই তো বেশ আছি একেলা, আমার কবিতা ছবি আঁকে সঞ্চিত ব্যথা, বাজে না জীবনের এই বীণা, আমার ব্যাটার বিয়া দিব সময় হয়েছে, ময়লা কাগজ কুড়ানো ছেলে, এই কি পৃথিবী সেই, একখানা মেঘ ভেসে এলো আকাশে, সরস্বতী বিদ্যেবতী তোমায় দিলাম খোলা চিঠি,সেই রাতে রাত ছিল পূর্ণিমা, হাওয়া মেঘ সরায়ে ফুল ঝরায়ে, গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা, কত রাজপথ জনপথ ঘুরেছি, আকাশের সিঁড়ি বেয়ে, ভারত আমার ভারতবর্ষ,স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো, ওরে আমার ভালবাসার ইছামতী রে, মায়াবতী মেঘে এলো তন্দ্রা প্রভৃতি।

 

সম্মাননা—-

 

কালজয়ী গানের এই গীতিকারের সম্মানে কলকাতা পুরসভার সৌজন্যে ১১২ নম্বর ওয়ার্ডে একটি আবক্ষ তাম্রমৃর্তি স্থাপন করা হয়।

 

জীবনাবসান—

 

শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ৮ই আগস্ট কলকাতায় প্রয়াত হন।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

হরিনাভি বঙ্গনাট্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা, রামনারায়ণ তর্করত্ন – জন্মদিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

রামনারায়ণ তর্করত্ন ছিলেন একজন বাঙালি নাট্যকার।তিনি ১৮২২ সালের ২৬শে ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের ৪র্থ পরগনা জেলার হরিণাভি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।  তিনি ছিলেন বাংলার প্রথম মৌলিক নাট্যকার ও হরিনাভি বঙ্গনাট্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি গ্রামে শৈশবের শিক্ষা শেষ করার পর কলকাতার সংস্কৃত কলেজে দশ বছর ব্যাকরণ, কবিতা, স্মৃতি এবং আইনশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন।  পরবর্তীতে, তিনি হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজে দুই বছর অধ্যক্ষ পণ্ডিত হিসাবে কাজ করার পর প্রায় ২৭ বছর ধরে সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৮৮২ সালে এই কলেজ থেকে অবসর গ্রহণ করে, তিনি নিজগ্রাম হরিণাভীতে একটি চতুষ্পাঠী খোলেন এবং বাকি জীবন শিক্ষকতায় কাটিয়ে দেন।  রামনারায়ণের পিতা রামধন শিরোমণি ছিলেন সেই সময়ের একজন বিখ্যাত পণ্ডিত।  তাঁর পিতামহ প্রাণকৃষ্ণ বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক ছিলেন।

 

বাংলা মৌলিক নাটক রচয়িতা হিসেবেই রামনারায়ণের মুখ্য পরিচয়। বাংলা ভাষায় প্রথম বিধিবদ্ধ নাটক রচনার জন্য তিনি ‘নাটুকে রামনারায়ণ’ নামে পরিচিত ছিলেন। কুলীনকুলসবর্বস্ব (১৮৫৪) তাঁর প্রথম ও শ্রেষ্ঠ নাটক। এতে হিন্দুসমাজে বহুবিবাহ প্রথার কুফল সম্পর্কে বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়।  তাঁর অধিকাংশ নাটক ও প্রহসন বেলগাছিয়া রঙ্গমঞ্চ, কলকাতার অভিজাত ধনিকশ্রেণীর নিজস্ব মঞ্চ এবং জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি নাট্যশালায় বহুবার অভিনীত হয়। ‘দি বেঙ্গল ফিলহার্মোনিক আকাদেমি’ থেকে তিনি ‘কাব্যোপাধ্যায়’ উপাধি লাভ করেন।

 

তাঁর রচিত নাটক সমূহ—

অভিজ্ঞান শকুন্তল (১৮৬০), সম্বন্ধ সমাধি (১৮৬৭), কুলীন-কুল-সর্বস্ব (১৮৫৪), যেমন কর্ম তেমন ফল (১৮৭২), নব নাটক (১৮৬৬), চক্ষুদান (১৮৬৯), উভয়সঙ্কট (১৮৬৯), বেণী সংহার’ (১৮৫৬), কংসবধ (১৮৭৫), পতিব্রতোপাখ্যান (১৮৫৩), রত্নাবলী (১৮৫৮), রুক্মিণী হরণ (১৮৭১), মালতী মাধব(১৮৬৭), স্বপ্নধন (১৮৩৩), ধর্মবিজয়(১৮৭৫)।

 

১৮৮৬ সালের ১৯ জানুয়ারি স্বগ্রামে তাঁর মৃত্যু হয়।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

 

 

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্যার কৈলাসচন্দ্র বসু,ভারতের চিকিৎসাশাস্ত্রে সবচেয়ে সম্মানিত ও প্রথম স্যার উপাধিপ্রাপ্ত চিকিৎসক

স্যার কৈলাসচন্দ্র বসু,ভারতের চিকিৎসাশাস্ত্রে সবচেয়ে সম্মানিত ও প্রথম স্যার উপাধিপ্রাপ্ত চিকিৎসক । স্যার কৈলাসচন্দ্র বসু  ভারতের চিকিৎসাশাস্ত্রে পরম হিতকারী খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব ছিলেন। কৈলাশচন্দ্র ১৮৫০ সালের ২৬ ডিসেম্বর কলকাতার সিমলায় এক ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  তিনি ছিলেন বাবু মধুসূদন বসুর দ্বিতীয় সন্তান।  ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে পড়াশোনা শেষ করার পর, ১৮৭৪ সালে, তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে মেডিসিন পাস করেন এবং ক্যাম্পবেল হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার হন।

 

কিন্তু তাঁর ভাইয়ের পরামর্শে তিনি সরকারী চাকুরী ছেড়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেন এবং এমন সুনাম অর্জন করেন যে তিনি দ্রুত বাংলায় বিশেষ করে সচ্ছল মাড়োয়ারি সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রধান চিকিৎসক হিসেবে স্থান করে নেন।  চিকিৎসা ক্ষেত্রেও তিনি নিজের প্রচেষ্টায় ব্যাপক উন্নতি করেছেন।  তিনি তার উপার্জিত অর্থ বহু জনহিতকর কাজে ব্যয় করেছেন।  মূলত তাঁর প্রচেষ্টার মাধ্যমেই বাংলায় ভেটেরিনারি কলেজ ও হাসপাতাল এবং স্কুল অফ গ্রীষ্মমন্ডলীয় ওষুধের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছিল।  এছাড়াও, তিনি কলকাতা মেডিকেল স্কুল, সোদপুর, পিঞ্জরাপোল, কুস্থনিবাস ইত্যাদির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। কলকাতা মেডিকেল সোসাইটির সহ-সভাপতি, ইন্ডিয়ান মেডিকেল কংগ্রেস, কলকাতা পৌরসভার কমিশনার এবং অবৈতনিক প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন।

 

অবিভক্ত বাংলায় চিকিৎসা ক্ষেত্রে অসামান্য কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ কৈলাস চন্দ্র বসু বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন – রায়বাহাদুর খেতাব (১৮৯৫), সি.আই.ই সম্মান (১৯০০), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো (১৯০৪),  ‘কাইজার-ই-হিন্দ’ স্বর্ণপদক লাভ (১৯১০) ‘স্যার’ উপাধি (১৯১৬) দ্বারা সম্মানিত হন।

 

কৈলাশ চন্দ্র বসু ১৯ জানুয়ারী, ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে প্রয়াত হন ।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

 

 

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ইংরেজ গণিতবিদ এবং কম্পিউটারের জনক চার্লস ব্যাবেজ – একটি বিশেষ পর্যালোচনা।

চার্লস ব্যাবেজ ছিলেন একজন ইংরেজ যান্ত্রিক প্রকৌশলী, গণিতবিদ, উদ্ভাবক এবং দার্শনিক।  তাঁকে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়।  তিনি ডিফারেন্স ইঞ্জিন এবং অ্যানালাইটিক্যাল ইঞ্জিন নামে দুটি যান্ত্রিক কম্পিউটার তৈরি করেন।  তিনি যে বিশ্লেষণাত্মক ইঞ্জিন তৈরি করেছিলেন তা যান্ত্রিকভাবে গাণিতিক কাজ সম্পাদন করতে পারে এবং এই ইঞ্জিনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আজও কম্পিউটার ডিজাইনে গুরুত্বপূর্ণ।  অর্থের অভাবে ব্যাবেজ তার প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে পারেনি।

 

১৮১২ সালে ব্যাবেজ অ্যানালিটিকাল সোসাইটি খুঁজে পেতে সাহায্য করেছিলেন, যার উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপীয় মহাদেশ থেকে ইংরেজি গণিতের বিকাশের সাথে পরিচিত করা।  ১৮১৬ সালে তিনি লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির একজন ফেলো নির্বাচিত হন।  তিনি রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল (১৮২০) এবং পরিসংখ্যান (১৮৩৪) সোসাইটি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

 

১৮১২ বা ১৮১৩ সালে যান্ত্রিকভাবে গাণিতিক সারণী গণনা করার ধারণা ব্যাবেজের কাছে প্রথম আসে। পরে তিনি একটি ছোট ক্যালকুলেটর তৈরি করেন যা আট দশমিকের নির্দিষ্ট গাণিতিক গণনা করতে পারে।  তারপর ১৮২৩ সালে তিনি ২০-ডেসিমেল ক্ষমতা সহ একটি প্রজেক্টেড মেশিন, ডিফারেন্স ইঞ্জিনের ডিজাইনের জন্য সরকারী সহায়তা পান।  ডিফারেন্স ইঞ্জিন ছিল একটি ডিজিটাল ডিভাইস: এটি মসৃণ পরিমাণের পরিবর্তে বিচ্ছিন্ন ডিজিটে কাজ করত এবং সংখ্যাগুলি ছিল দশমিক (০-৯), বাইনারি সংখ্যার (“বিট”) পরিবর্তে দাঁতযুক্ত চাকার অবস্থান দ্বারা উপস্থাপিত।  যখন একটি দাঁতযুক্ত চাকা নয়টি থেকে শূন্যে পরিণত হয়, তখন এটি পরবর্তী চাকাটিকে একটি অবস্থানে অগ্রসর করে, অঙ্কটি বহন করে।  আধুনিক কম্পিউটারের মতো, ডিফারেন্স ইঞ্জিনের স্টোরেজ ছিল—অর্থাৎ, এমন একটি জায়গা যেখানে ডেটা অস্থায়ীভাবে পরবর্তী প্রক্রিয়াকরণের জন্য রাখা যেতে পারে।  এর নির্মাণের জন্য যান্ত্রিক প্রকৌশল প্রযুক্তির বিকাশের প্রয়োজন ছিল, যার জন্য ব্যাবেজ অব নেসেসিটি নিজেকে নিবেদিত করেছিল।  এর মধ্যে (১৮২৮-৩৯), তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের লুকাসিয়ান অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  যাইহোক, সম্পূর্ণ ইঞ্জিন, রুম-আকারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, অন্তত ব্যাবেজ দ্বারা নির্মিত হয়নি।  ১৮৩৩ সালে সমস্ত নকশা এবং নির্মাণ বন্ধ হয়ে যায়, যখন যন্ত্রটি তৈরির জন্য দায়ী জোসেফ ক্লিমেন্ট প্রিপেইড না হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যেতে অস্বীকার করেছিলেন।

 

১৮৩০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ব্যাবেজ বিশ্লেষণাত্মক ইঞ্জিনের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন, যা আধুনিক ডিজিটাল কম্পিউটারের অগ্রদূত।  সেই ডিভাইসে তিনি পাঞ্চড কার্ডের নির্দেশাবলীর ভিত্তিতে যেকোন গাণিতিক ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করার ক্ষমতা কল্পনা করেছিলেন, একটি মেমরি ইউনিট যেখানে সংখ্যা সংরক্ষণ করা হয়, অনুক্রমিক নিয়ন্ত্রণ এবং বর্তমান সময়ের কম্পিউটারের বেশিরভাগ অন্যান্য মৌলিক উপাদান।  ডিফারেন্স ইঞ্জিনের মতো, প্রকল্পটি এর আগে নির্মিত যেকোনো কিছুর চেয়ে অনেক বেশি জটিল ছিল।  মেমরি ইউনিট ১০০০ ৫০-সংখ্যার সংখ্যা ধারণ করার জন্য যথেষ্ট বড় ছিল;  এটি ১৯৬০ সালের আগে নির্মিত যেকোন কম্পিউটারের স্টোরেজ ক্ষমতার চেয়ে বড় ছিল। মেশিনটি বাষ্প চালিত এবং একজন পরিচারক দ্বারা চালিত হবে।
১৮৪৩ সালে ব্যাবেজের বন্ধু গণিতবিদ অ্যাডা লাভলেস অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন সম্পর্কে একটি ফরাসি কাগজ অনুবাদ করেছিলেন এবং তার নিজের টীকাতে প্রকাশ করেছিলেন যে এটি কীভাবে গণনার একটি ক্রম সম্পাদন করতে পারে, প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম।  বিশ্লেষণাত্মক ইঞ্জিন, যদিও, সম্পূর্ণ হয়নি.  ১৯৩৭ সালে তার অপ্রকাশিত নোটবুকগুলি আবিষ্কৃত না হওয়া পর্যন্ত ব্যাবেজের নকশাটি ভুলে গিয়েছিল। ১৯৯১ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা ব্যাবেজের স্পেসিফিকেশনের জন্য ডিফারেন্স ইঞ্জিন নং ২—৩১ ডিজিটের নির্ভুল — তৈরি করেছিলেন এবং ২০০০ সালে ডিফারেন্স ইঞ্জিনের জন্য প্রিন্টারও তৈরি করেছিলেন।

 

ব্যাবেজ অন্যান্য ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।  তিনি ইংল্যান্ডে আধুনিক ডাক ব্যবস্থা স্থাপনে সহায়তা করেছিলেন এবং প্রথম নির্ভরযোগ্য অ্যাকচুয়ারিয়াল টেবিল সংকলন করেছিলেন।  তিনি এক ধরণের স্পিডোমিটার এবং লোকোমোটিভ কাউক্যাচারও আবিষ্কার করেছিলেন।

 

১৮ অক্টোবর ১৮৭১ সালে,৭৯ বছর বয়সে চার্লস মারা যান।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্বাধীনতা সংগ্রামী, সমাজতান্ত্রিক এবং গবেষক ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল বহু মানুষের কঠোর পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। হিন্দু মুসলিম সকল শ্রেণীর মানুষ এই মুক্তির আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিলেন। আর তাঁদের সেই বলিদনের ইতিহাসে অনেকের কথাই অজানা। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়। এই অন্দোলনে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে  ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন। ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।

ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত (জন্ম: ৪ সেপ্টেম্বর ১৮৮০) একজন ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী, সমাজতান্ত্রিক এবং গবেষক।

 

প্রথম জীবন ও পরিবার—

ভূপেন্দ্রনাথ কলকাতার বাসিন্দা ছিলেন। তার পিতা ছিলেন অ্যাটর্নী বিশ্বনাথ দত্ত এবং মা ছিলেন ভুবনেশ্বরী দেবী। তার দুই দাদা ছিলেন নরেন্দ্রনাথ বা স্বামী বিবেকানন্দ এবং সাধক মহেন্দ্র। তার দুই ভ্রাতা এবং মাতা ভুবনেশ্বরী তাকে শিক্ষাক্ষেত্রে সহায়তা করেন। ভূপেন্দ্রনাথ কলকাতা মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউট থেকে এন্ট্রান্স পাস করে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাবার আগে তিনি ব্রাহ্মধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং শিবনাথ শাস্ত্রীর সাথে পরিচিত হয়ে হিন্দুসমাজের ভেদবুদ্ধির বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন।

 

বৈপ্লবিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড—

বৈপ্লবিক ধারায় ইংরেজকে ভারত থেকে তাড়ানোর জন্য তিনি ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে ব্যারিস্টার পি মিত্রের নিখিল বঙ্গ বৈপ্লবিক সমিতিতে যোগ দেন। এখানে তিনি যতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, ভগিনী নিবেদিতা, অরবিন্দ ঘোষ প্রমুখের সাহচর্য পান। মাৎসিনী এবং গ্যারিবল্ডির আদর্শ তার প্রাথমিক বৈপ্লবিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। তার দাদা বিবেকানন্দের রচনাও তাকে প্রভাবিত করেছিল।

অরবিন্দ ঘোষের সহায়তায় ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত বিপ্লবীদের পত্রিকা সাপ্তাহিক যুগান্তরের সম্পাদক হন। দেশের বৈপ্লবিক চেতনা বাড়ানোর জন্য এই পত্রিকাটি ছাড়াও সোনার বাঙলা নামে একটি বেআইনি ইস্তাহার প্রকাশের জন্য ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে তার এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। মুক্তির পর তিনি সহকর্মীদের পরামর্শে ছদ্মবেশে আমেরিকা যাত্রা করেন। সেখানে তিনি ইন্ডিয়া হাউসে আশ্রয় পান। এরপর তিনি ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হন এবং দুই বছর পর ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার গদর পার্টি এবং সোশ্যালিস্ট ক্লাবের সংস্পর্শে এসে সমাজতন্ত্রবাদে বিশেষ জ্ঞানলাভ করেন। আমেরিকায় থাকাকলে শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে তাকে অর্থকষ্টে দিন কাটাতে হয়েছিল।
১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার পর বিপ্লবী আন্দোলনকে জোরদার করতে তিনিও অন্যান্য ভারতীয় বিপ্লবীদের মত বার্লিনে আসেন।
১৯১৬ থেকে ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ঐতিহাসিক বার্লিন কমিটির সম্পাদক ছিলেন।
১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ছদ্মবেশে দক্ষিণ ইউরোপ পৌছান। বার্লিন কমিটির অনুরোধে জার্মান সরকার তাকে গ্রিস থেকে বার্লিনে আনেন। তার নেতৃত্বে বার্লিন কমিটি তাদের কর্মক্ষেত্র পশ্চিম এশিয়ায় বিস্তৃত করে। এই সমস্ত অঞ্চলে অত্যন্ত বিপদসঙ্কুল কাজে যেসব বীর ভারতবাসী প্রাণ দিয়েছেন বা লিপ্ত ছিলেন তাদের তথ্যাদির প্রামানিক চিত্র তিনি তার বইতে বর্ণনা করেছেন।

বৈপ্লবিক আন্দোলনের সাথে সাথে তিনি সমাজতত্ত্ব এবং নৃতত্বের গবেষণা চালিয়ে ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট উপাধি পান।
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান অ্যানথ্রোপলজিক্যাল সোসাইটি এবং ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য ছিলেন।
১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে তৃতীয় কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের আহ্বানে বীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে তিনি মস্কোতে আসেন। এই অধিবেশনে মানবেন্দ্রনাথ রায় এবং বীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত উপস্থিত ছিলেন।
তিনি সোভিয়েট নেতা লেনিনের কাছে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রদান করেন।

১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে ভারতের শ্রমিক কৃষক আন্দোলনের একটি কর্মসূচী পাঠান। ১৯২৭-২৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিটির এবং ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সদস্য হন। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে কংগ্রেসর করাচী অধিবেশনে শ্রমিক এবং কৃষকদের মৌলিক অধিকার নিয়ে একটি প্রস্তাব নেহেরুকে দিয়ে গ্রহণ করান। এছাড়াও তিনি বহু শ্রমিক এবং কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ভারতের কৃষক আন্দোলনে যুক্ত থেকে বঙ্গীয় কৃষক সভার অন্যতম সভাপতি এবং দুবার অখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের অধিবেশনে সভাপতি হন। আইন অমান্য আন্দোলনে কারাবরণ করেন।

সাহিত্য প্রতিভা—-

বৈষ্ণবশাস্ত্র, হিন্দু আর্যশাস্ত্র,  সমাজবিজ্ঞান, নৃতত্ব, ইতিহাস, সাহিত্য, মার্কসীয় দর্শন প্রভৃতি বিষয়ে তার পাণ্ডিত্য ছিল। বাংলা, ইংরেজি, জার্মান, হিন্দি, ইরানী প্রভৃতি ভাষায় তার অনেক রচনা প্রকাশিত হয়েছে।

 

তার রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ—

 

যৌবনের সাধনা, সাহিত্যে প্রগতি, অপ্রকাশিত রাজনীতিক ইতিহাস, যুগসমস্যা, তরুণের অভিযান, জাতিসংগঠন, বৈষ্ণব সাহিত্যে সমাজতন্ত্র, বাংলার ইতিহাস, ডায়ালেক্টস অফ হিন্দু রিচুয়ালিজম, ডায়ালেক্টস অফ ল্যান্ড ইকোনমিকস অফ ইন্ডিয়া? বিবেকানন্দ দ্য সোসালিস্ট, ভারতীয় সমাজপদ্ধতি (৩ খণ্ড), আমার আমেরিকার অভিজ্ঞতা (৩ খণ্ড)।

 

২৫ ডিসেম্বর ১৯৬১ সালে তিনি প্রয়াত হন।

– সংগৃহীত তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ

সন্ন্যাসী সেইন্ট নিকোলাসের বড়দিনের সান্টা হয়ে ওঠার গল্প : সৌগত রাণা কবিয়াল।।।

চোখের সামনে একটি রক্তাক্ত ক্রুশবিদ্ধ মানুষের নিথর শরীর এড়িয়ে এক পবিত্রময় আলোর প্রশান্তি, সেই দুঃখী মানুষটির মুখ জুড়ে! শান্ত স্থীর মোমবাতির আলোয় সমস্বরে প্রার্থনা সুর, অদ্ভুত এক মায়াজালের মতো সুখ ছড়াতো মনে!
চারিদিকে ঝকঝকে ব্যস্ত পথ- পথের মানুষ.. সব ঠেলেঠুলে পাড়ার স্কুল গীর্জায় চুপচাপ ঢুকে যেতাম প্রার্থনা গৃহে!
পুরোনো শহরের ৪৭ নম্বর বাড়িটিতে যখন আমার ছেলেবেলা, বলতে গেলে ষোলআনা বাঙালি পরিবারে বেড়ে  আমার উৎসুক শিশু চোখে তখন ‘বড়দিন’ মানে একটি বিশাল প্রশ্ন চিহ্ন! আমাদের পাশাপাশি কিছু খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী পরিবারের উৎসব উৎযাপনটা তখন আমার শিশুমনে বেশ আকর্ষণীয় ও লোভনীয় মনে হতো!  সারাবছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম, সকাল হলেই স্কুল ছুটির দিনে মজার মজার বাহারী কেক-মিষ্টি-চকলেট-কমলা লেবুর জন্য। মা বলতেন, “আজ থেকে বছরে দিন বড় আর রাত ছোট হতে শুরু হলো, বুঝলি”।
দিনের এই ছোট বড় হওয়া নিয়ে তখন আমার তেমন কোন মাথা ব্যথা ছিলো না, যতোটা ছিলো সন্ধ্যে হলে এক ঝাঁক তরুণ-তরুণীর সমস্বরে প্রার্থনা গান নিয়ে। বিশাল বাড়িটাতে আমরা সব শিশুরা মিলে বারান্দার গ্রিল ধরে ভিড় করে নিচের পাকা দূয়ারে মুগ্ধ হয়ে গান শুনতাম। সব মিলিয়ে “বড়দিন” ব্যাপারটাই ছিলো অসাধারণ এক আনন্দের। আমার কাছে কোথায় যেন “বড়দিন” কে মনে হতো পৃথিবীর সব মানুষের মন ভালোর দিন।

প্রায় দুহাজার বছর আগে রোমীয় সম্রাটের আদেশে নাসরত শহর থেকে পরিপূর্ণ বেথলেহেম শহরে গিয়ে আশ্রয়হীন হলেন এক দম্পতি, কাঠুরে যোসেফ আর তার স্ত্রী মেরি । যাত্রার মাঝপথেই এক গোয়ালঘরে মাতা মেরীর প্রথম সন্তান হিসেবে জন্ম নিলেন বিশ্বে শান্তির বাণী ছড়িয়ে দিতে
খ্রিষ্ট ধর্মের প্রবর্তক, ইতিহাসে ‘ঈশ্বরের পুত্র’ নামে খ্যাত ভগবান ‘যিশু খ্রিষ্ট’!
যাকে জন্মক্ষণে পান্থশালায় স্থান না পেয়ে যাবপাত্রে শুইয়ে রেখেছিলেন তার মাতা মেরি! ভগবান যিশুর জন্ম-সংক্রান্ত প্রথম দিকের চিত্রগুলিতে গবাদি পশু ও যাবপাত্র পরিবৃত একটি গুহায় যিশুর জন্মদৃশ্য বহুল প্রচলিত।
ধারণা অনুযায়ী, এটি বেথলেহেমের চার্চ অফ দ্য নেটিভিটির অভ্যন্তরে। কথিত যে এক স্বর্গদূত বেথলেহেমের চারিপার্শ্বস্থ মাঠের মেষপালকদের যিশুর জন্ম সম্বন্ধে অবহিত করেন, এই কারণে তাঁরাই সেই দিব্য শিশুকে প্রথম দর্শন করার সৌভাগ্য অর্জন করেন!
মথিলিখিত সুসমাচার অনুসারে,
‘বেথলেহেমের তারা’ নামে পরিচিত একটি রহস্যময় তারা কয়েকজন ম্যাজাইকে (জ্যোতিষী) পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেন শিশু যিশুর কাছে, যারা স্বর্ণ, গন্ধতৈল ও ধূপ নিয়ে ঈশ্বরের পুত্রকে দর্শন করতে যান।

ক্রিসমাস অলঙ্কারে ক্রিসমাস ট্রি (পাইন গাছ) বড়দিনের ঘর সাজানো বড়দিনের উৎসবকে পূর্ণতাএনে দেয়। পাশাপাশি
আলোর মোমবাতি যা কিনা মানুষের কাছে প্রেম, প্রার্থনা, আবেগের প্রতীক! বড়দিনের দিন খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীদের কাছে মোমবাতি  ‘খ্রীষ্টের আলো’ হিসাবে পবিত্র । আগের রাতে নানান রংচঙয়ে ছোট ছড়া বাতি দিয়ে সাজানো ক্রিস্টমাস ট্রি, ছোট ছোট ক্রিসমাস বেল দিয়ে সাজানো হয়,  এই ঘণ্টাটি আভাস দেয় “বড়দিন” এসে গেছে।
বড়দিনে সান্টার লাল টুপি আজকের শিশুদের খুব মন-প্রিয়।
আজকের আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বেও ‘বড়দিন’ প্রকৃতিগতভাবে একটি খ্রিষ্টীয় ধর্মানুষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও, একাধিক অ-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ও মহাসমারোহে উৎসবটি পালন করে থাকে! উপহার প্রদান, সংগীত, বড়দিনের কার্ড বিনিময়, গির্জায় ধর্মোপাসনা, ভোজ, এবং বড়দিনের বৃক্ষ, আলোকসজ্জা, মালা, মিসলটো, যিশুর জন্মদৃশ্য, এবং হলি সমন্বিত এক বিশেষ ধরনের সাজসজ্জার প্রদর্শনী আধুনিককালে আমাদের শহরে বড়দিন উৎসব উৎযাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশ যা কিনা বিগত কয়েকটি শতাব্দীতে বিশ্বে বিভিন্ন অঞ্চলে বড়দিনের অর্থনৈতিক প্রভাবটিকে ধীরে ধীরে প্রসারিত করেছে ।

ইতিহাস বিখ্যাত চিত্রশিল্পে যিশুর জন্মদৃশ্যটিতে মেরি, জোসেফ, শিশু যিশু, স্বর্গদূত, মেষপালক এবং যিশুর জন্মের পর বেথলেহেমের তারার সাহায্যে পথ চিনে তাঁকে দর্শন করতে আসা বালথাজার, মেলকোয়ার ও ক্যাসপার নামক তিন জ্ঞানী ব্যক্তির চরিত্র দেখা যায়।

পৃথিবীতে এসে মানুষের প্রতি এক অদ্ভুত ভালোবাসার দ্যুতি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই ভগবান যিশুর আগমন হয়েছিল !

আর বড়দিন বলতে ঈশ্বরের পুত্র ভগবান যিশুর পাশাপাশি আজকের পৃথিবীতে আরেকটি বহুল জনপ্রিয়  চরিত্র “সান্টা দাদু”!

ছোটোদের বড়দিন মানেই  সান্টাক্লজ(সান্টা দাদু), যার কাঁধে থাকে ঝোলা ভর্তি ব্যাগ, পরনে লাল রঙের পোশাকের পাশাপাশি মাথায় লাল টুপি, চোখে চশমা ও এক গাল সাদা দাঁড়ি । যিনি ছিলেন  তুরস্কের পাতারা নামক অঞ্চলে জন্ম নেয়া সেইন্ট নিকোলাস নামের একজন সন্ন্যাসী, শিশুদের প্রতি পবিত্রতা ও উদারতার জন্য তিনি খুবই জনপ্রিয় ছিলেন ।
২৪ শে ডিসেম্বর গভীর রাতে থলে ভর্তি করে উপহার নিয়ে ঘুরে বেড়ানো সান্টার দাদুর কাছ থেকে চকলেট ও উপহার যেন বাচ্চাদের জন্য দারুণ আনন্দের দিন…! আগের দিন রাতে বিছানায় ঘুমোতে যাওয়ার আগে দাদু সান্টার কাছে কি কি চাইবার চেয়ে টুপ করে ঘুমিয়ে পরে সকালে সেই গিফটের জন্য অপেক্ষা করা!
খ্রিষ্টীয় ধর্মের অন্তর্গত না হলেও সান্টা নামটি খুব গুরুত্বপূর্ণ “বড়দিন” এর উৎসবের সাথে!
২৪ শে ডিসেম্বর গভীর রাতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে নানা ধরনের উপহার দেওয়ার জন্য তিনি বিখ্যাত ছিলেন ।
সান্টাকে নিয়ে বাচ্চাদের মনে মাতামাতির শেষ নেই । সান্টার বসবাস বরফে ঢাকা উত্তর মেরুতে!
১৮৮১ সালে থামস নামে একজন আমেরিকান কার্টুনিস্টের আঁকা ছবিতে ক্রিসমাসের সন্ধ্যাবেলায় নর্থ পোল থেকে আটটি বলগা  হরিণ টানা স্লেজ গাড়িতে আকাশে চড়ে বাচ্চাদের বাড়ির চিমনি দিয়ে ঢুকে উপহার রেখে যেতেন সান্টা দাদু..!

পৃথিবীতে ভালোবাসার কথা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ইতিহাসের পাতায় কোন চরিত্রে সংখ্যার সীমাবদ্ধতা নেই।
একজন যীশু, যিনি তার যন্ত্রণাময় মৃত্যুতেও তার হত্যাকারীদের মানবিক ভালোবাসার কথা অকপটে বলে গেছেন রক্তাক্ত আহত ঠোঁটে…!
আরেকজন সাধারণ মানুষ সন্ন্যাসী
সেইন্ট নিকোলাস (সান্টা দাদু), মানুষের মাঝে পারস্পরিক ভালোবাসা ও শিশুদের পবিত্রতায় মানুষকে ভেদাভেদহীন ভালোবাসার বাঁধনের কথা রেখে গেছেন ইতিহাসের পাতায়।

আসলে সেইন্ট নিকোলাস (সান্টা দাদু) – কিংবা ঈশ্বর পুত্র যিশু…..

সব মিলিয়ে “বড়দিন” শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বীর উৎসব নয়, এটি একটি ভালোবাসার দিনের গল্প..একটি সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন দেখার গল্প।

সবাইকে বড়দিনে শুভেচ্ছা। ভালোবাসাই হোক পৃথিবীর একমাত্র অনুশাসন।

সৌগত রাণা কবিয়াল
(কবি সাহিত্যিক ও কলামিস্ট)

Share This