Categories
প্রবন্ধ

জন্মদিনে স্মরণে, আরামবাগের গান্ধী নামে খ্যাত ,ভারতীয় বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামী -বিভূতিভূষণ সরকার ।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়। এই অন্দোলনে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে  বিভূতিভূষণ সরকার প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।  বিভূতিভূষণ সরকার ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।

 

বিভূতিভূষণ সরকার ছিলেন একজন ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সমাজসেবী।  তিনি পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় মুখ্যমন্ত্রী, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতা, আরামবাগের গান্ধী নামে পরিচিত প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের বিশ্বস্ত জেনারেলদের একজন ছিলেন।

বিভূতিভূষণ সরকার ১১ ডিসেম্বর, ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ ভারতের হুগলি জেলার পশ্চিমবঙ্গের পুরশুরার ভূয়েরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।  তিনি ছিলেন যতীন্দ্রনাথ সরকার ও শৈলবালা দেবীর জ্যেষ্ঠ সন্তান।  বিভূতিভূষণ সরকার প্রমীলা দেবীকে বিয়ে করেন।  নবকুমার সরকার ওরফে স্বামী অসীমানন্দ তাদের সাত সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়।

ছোটবেলায় স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন।  যে কারণে স্কুলের পর তাঁর লেখাপড়ার অগ্রগতি হয়নি।  এক পর্যায়ে তিনি জাতীয় কংগ্রেসের গান্ধীবাদী নেতা প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের কাছাকাছি আসেন।  তাঁর সঙ্গে ‘সত্যাগ্রহ’ ও ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।  কিন্তু তিনি ছিলেন চরমপন্থী।  ১৯৩০-এর দশকে ঘাটাল থানার কনস্টেবল ব্রিটিশ শাসকদের অনুগত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছিলেন।  ভার পড়ল বিভূতিভূষণের উপর তাঁকে শাস্তি দেওয়ার।  বিভূতিভূষণ তাকে ঘাটাল বাজারে কঠিন শাস্তি দেন।  তিনি দীর্ঘদিন ধরে কারাবরণ করেন।  এসময় তাঁর হাতের প্রতিটি আঙুলে সূঁচ পেঁচিয়ে নির্যাতন করা হয়।  ফলে শেষ জীবনে তাঁর সমস্ত আঙ্গুল অকেজো হয়ে পড়ে।  ১৯৪০-৪১ সালে, সুভাষ চন্দ্র বসু দলীয় কর্মসূচিতে একবার পুরশুরা এসেছিলেন।  সেখান থেকে তিনি বিভূতিভূষণের সঙ্গে একটি হাতিতে চড়ে চন্দ্রকোনার কালিকাপুরে যান।  স্বাধীনতা আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিভূতিভূষণকে অনেক দিন আরামবাগ ও চুঁচুড়া জেলে কাটাতে হয়েছে।  যদিও প্রফুল্ল চন্দ্র সেন বড়ডোঙ্গালে ‘সাগরকুঠি’ নির্মাণ করে একদিকে সমাজসেবা হিসেবে স্বাধীনতা আন্দোলনের কাজ চালিয়ে গেলেও, সেই সময় স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল ঘাঁটি ছিল শ্রীমন্তপুরে বিভূতিভূষণের দ্বিতীয় তলায়।  ভগ্নিপতির গোয়ালঘর।  সেখান থেকে প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের সংগ্রামের বিশ্বস্ত সেনাপতি ছিলেন বিভূতিভূষণ।
স্বাধীনতার পর, বিভূতিভূষণ স্বদেশমন্ত্রে দীক্ষিত অনেক ব্যক্তিত্বের সাথে রাজনীতি থেকে সরে আসেন এবং পুরোপুরি সমাজসেবায় নিযুক্ত হন।  জীবনের শেষ অধ্যায়টা কাটাও তোমার কামারপুকুর বাড়িতে।  পরে তিনি দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।

 

সমাজসেবামূলক কাজে তিনি স্থানীয় মানুষের কল্যাণে যে কাজ শুরু করেছিলেন তা তাঁর উত্তরসূরিরা তাঁর নামে গঠিত ট্রাস্ট- ‘বিভূতিভূষণ সরকার সেবা সংস্থা’র মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছেন। ভুঁয়েড়া গ্রামে তার নামে একটি দাতব্য হাসপাতাল, একটি বিনা বেতন শিক্ষা কেন্দ্র এবং একটি এতিমখানা রয়েছে।

 

স্বাধীনতার পঁচিশ বৎসর পূর্তিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট তাকে ‘তাম্রপত্র স্বাধীনতা সংগ্রামী পুরস্কার’ দিয়ে সম্মানিত করেন।

 

বিভূতিভূষণ সরকার ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জুলাই কামারপুকুরে প্রয়াত হন।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

মূল্যবান মনুষ্য জীবন ও সত্যমেব জয়তে : স্বামী আত্মভোলানন্দ।

ওঁ নমঃ শ্রী ভগবতে প্রণবায় ।

 

আমাদের মানুষের এই  বৈচিত্র্যময়  জীবনে ঘটে অসংখ্য  ঘটনা, সত্য মিথ্যা, সুখ দুঃখ, হাসি কান্না, আনন্দ  বেদনা,  সব মিলিয়ে চলে জীবন। পৃথিবীর  সবচেয়ে জটিল  অঙ্কের  নামই  জীবন। আমরা সবাই জানি *সত্যমেব জয়তে* সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী, সত্য সবসময় সুন্দর,  কিন্তু *সবসময় সত্যের জয় হয় না, এটি ও একটি অপ্রিয় সত্য।*  সত্যমেব জয়তে (সংস্কৃত: सत्यमेव जयते) আমাদের এই সুন্দর তপোভূমি, পুণ্যভূমি ভারতের রাষ্ট্রীয় নীতিবাক্য। এর অর্থ “সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী।” সত্যমেব জয়তে মুন্ডক উপনিষদের একটি মন্ত্র। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে মহাত্মা পণ্ডিত মদন মোহন মালব্য ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি থাকার সময় এই মন্ত্রটিকে জাতীয় রাজনীতিতে নিয়ে এসে খুব জনপ্রিয় করেন।
*सत्यमेव जयते नानृतं सत्येन पंथा विततो देवयानः।
येनाक्रमंतयषयो दृत्कामा यत्र सत्यस्य परमं निधानभ।।*
(মুন্ডক উপনিষদ)
অর্থ :— সত্যেরই জয় হয়, মিথ্যার নয়। সত্যের দ্বারা ঐশ্বরিক পথ পরিপূর্ণ হয়, যারা ইচ্ছা থেকে মুক্ত, সত্যের সর্বোচ্চ আবাসে পৌঁছায়।
*सत्यमेव जयते*এই সুন্দর মন্ত্রটি দেবনাগরী হরফে আমাদের তপোভূমি, পুণ্যভূমি ভারতের জাতীয় প্রতীকের নিচের অংশে এবং সমস্ত ভারতীয় মুদ্রায় লেখা আছে ।

আমরা যদি  পৌরাণিক ভারতের  দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি, মহাভারতের মহানযোদ্ধা মহাবীর কর্ণের  দিকে। কি দেখি? প্রথমত, সে ছিলো একজন যোগ্য সন্তান। দ্বিতীয়ত, সে ছিল একজন দানবীর রাজা। তৃতীয়ত, সে ছিল একজন মহাবীর যোদ্ধা। চতুর্থত, সে ছিল একজন মিত্রপ্রেমী মানুষ। পঞ্চমত, সে ছিল একনিষ্ঠ ও ধার্মিক চরিত্রের অধিকারী। কিন্তু কর্ণের জন্ম ইতিহাস গোপনীয় ছিল। জন্মদাত্রী মায়ের অবহেলার জন‍্য ক্ষত্রিয় পরিচয় থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। অন্যদিকে পালিত মায়ের থেকে প্রাপ্ত নৈতিক শিক্ষা ও আদর্শ তাকে নিজের অধিকারের দাবিতে লড়াই করতে শিখিয়ে ছিল। যার জন্য কর্ণের জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি সংগ্রামের সাথে অবহেলিত, লাঞ্চিত জীবন কেটেছে। সত্যের জয় (প্রকাশ) যখন হলো, মৃত্যুর সময়ে, কর্ণের জীবন তখন শেষ। এটি একটি অপ্রিয় সত্য। *সত্যমেব জয়তে* সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী, সত্য সবসময় সুন্দর, কিন্তু *সবসময় সত্যের জয় হয় না, এটিও একটি অপ্রিয় সত্য।* সত্যের  সুফল কর্ণের জীবনে, জীবদ্দশায় কোনো কাজেই লাগলো না।

শ্রীকৃষ্ণ বললেন- দেখো পার্থ, তুমি জানো না , কর্ণ কৌরবপক্ষের সেনাপতি হওয়ার পর আমি তার শিবিরে গিয়েছিলাম কর্ণকে পাণ্ডবপক্ষে আসার নিমন্ত্রণ দিতে, ধর্মপক্ষে আসার সুযোগ দিতে। কিন্তু কর্ণ বলেছিল যতই দুর্যোধন অধর্মের পথে থাকুক, কিন্তু বিপদের দিনে সে আমাকে আশ্রয় দিয়েছে। অতএব সেই মিত্রতার ঋণ শোধ করাই হবে তার প্রথম ধর্ম। কর্ণ এও বলেছিল এই যুদ্ধে জয় পাণ্ডবদেরই হবে। কিন্তু তাই বলে সে দুর্যোধনকে ধোঁকা দিতে পারবে না। সে প্রাণ দিয়ে দেবে তবু কৌরবপক্ষ ছাড়বে না। আর কর্ণ তাই করলো। একদিকে প্রাণ দিয়ে দুর্যোধনের মিত্রতার ঋণ শোধও করলো অন্যদিকে ধর্মের বিজয়ের পথও প্রশস্ত করে দিল। হে পার্থ! যদি কোনোদিন কর্ণের জীবনের পূর্ণ কথা জানার সুযোগ পাও সেদিন তুমি মাটিতে শুয়ে ওকে প্রণাম করবে। তাহলে এবার ভাবো শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর যোদ্ধা আসলে কে? অর্জুন না কর্ণ!
শ্রীকৃষ্ণ বললেন তাছাড়া তুমি কর্ণকে হারাওনি অর্জুন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন- দেখো পার্থ পিতামহ ভীষ্ম তোমার সামনে যুদ্ধে নিষ্ক্রিয় হয়েছিলেন, তার মানে কি তুমি পিতামহ ভীষ্মের চেয়েও বড় ধনুর্ধর হয়ে গেলে?
মহাভারতে শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর আসলে কে??? তাই, সবসময় সত্যের জয় হয় না, এটিও একটি অপ্রিয় সত্য।

আমরা যদি সুন্দর তপোভূমি,পুণ্যভূমি ভারতের স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি।  ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির ৭৬ বৎসরপূর্তি, অমৃত মহোৎসব এরপর ও মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু রহস্য উদ্‌ঘাটন হলো না। তাই, সবসময় সত্যের জয় হয় না, এটিও একটি অপ্রিয় সত্যের  উজ্জ্বল উদাহরণ।*সত্যমেব জয়তে* সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী, সত্য সবসময় সুন্দর, কিন্তু *সবসময় সত্যের জয় হয় না, এটিও একটি অপ্রিয় সত্য।*

আমরা যদি স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। পণ্ডিত লালবাহাদুর শাস্ত্রী  ভারতের মতো, মহান গণতান্ত্রিক দেশের  দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী। ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির ৭৬ বৎসরপূর্তির পর ও পণ্ডিত লালবাহাদুর শাস্ত্রীজী মৃত্যু-রহস্য উদ্‌ঘাটন হলো না। তাই, সবসময় সত্যের জয় হয় না, এটিও একটি অপ্রিয় সত্যের  উজ্জ্বল উদাহরণ।*সত্যমেব জয়তে* সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী, সত্য সবসময় সুন্দর, কিন্তু *সবসময় সত্যের জয় হয় না, এটিও একটি অপ্রিয় সত্য।*

আমরা যদি স্বাধীন ভারতের শত শত আদালত গুলির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। দৈনিক শত শত নিষ্পাপ জনগণ নৈতিক ন্যায়বিচার এর আশায়, সত্যের জয়এর আশায়, বছরের পর বছর, প্রজন্ম পর প্রজন্ম ঘূরপাক খায় ন্যায়বিচার এর আশায় সত্যের জয়এর জন্য। এটি ও একটি অপ্রিয় সত্যের  উজ্জ্বল উদাহরণ।*সত্যমেব জয়তে* সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী, সত্য সবসময় সুন্দর, *কিন্তু সবসময় সত্যের জয় হয় না, এটিও একটি অপ্রিয় সত্য।*
আমরা যদি  বর্তমান আধুনিক ভারতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। উদাহরণ স্বরূপ আদালত এর ন্যায়বিচার পুরুলিয়ার দরিদ্র ধনঞ্জয়! *ধনঞ্জয় এর ফাঁসি* যাত্রাপালা ধনঞ্জয় কি ন্যায়বিচার পেয়েছে? আসলে কে দোষী? ধনঞ্জয় কি আসল দোষী? না, আসল দোষী কোনো ধনীর দুলাল টাকার বলে মেঘএর আড়ালে উঁকি দিচ্ছে হাসতে হাসতে। তাই, *সত্যমেব জয়তে* সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী, সত্য সবসময় সুন্দর, কিন্তু সবসময় সত্যের জয় হয় না, এটিও একটি অপ্রিয় সত্য।

আমাদের  এই পবিত্র  তপোভূমি, জন্মভূমিতে এই ধরনের  অপ্রিয় সত্য ঘটনা, বাস্তব ঘটনা, আমাদের জীবনে, অনেক ব্যক্তির জীবনে, অনেক প্রতিষ্ঠানে এই পবিত্র  ভূমিতে প্রতিদিন প্রতি-নিয়ত ঘটছে। এই রকম কত শত শত সত্যের উদ্‌ঘাটন হয় না। তাই, সবসময় সত্যের জয় হয় না, এটিও একটি অপ্রিয় সত্য। তাই, আমরা মানি বা না মানি, *সবসময় সত্যের জয় হয় না, এটিও একটি অপ্রিয় সত্য।* তাই, বিশ্বকবি  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলছেন ‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে’।

শ্রী শ্রী জগৎ গুরু ভগবান স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজের  শুভ ও মঙ্গলময় আশির্বাদ আপনাদের সকলের শিরে বর্ষিত হোক… এই প্রার্থনা করি…!***
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ।
স্বামী আত্মভোলানন্দ

তথ্যসূত্র: ১) মহাভারত ও অন্যান্য বই।
২) ইন্টারনেট এবং ফেসবুক ইত্যাদি।

NB:-এই লেখাটি বর্তমান, ইতিহাস ও পৌরাণিক কাহিনীর অনন্য মিলন ও সুন্দর সংগ্রহ। মানুষ মরতে পারে কিন্তু ইতিহাস চিরকাল থেকে যায়।এটি কোনো ব্যক্তি বিশেষ বা প্রতিষ্ঠান এর উদ্দেশ্য করে লেখা নয়। মূল্যবান মনুষ্য জীবনের জন্য এই বিশ্লেষণী তথ্যাবলী। সুতরাং, কোন ত্রুটি হয়ে থাকলে তা উদ্দেশ্য মূলক বা ইচ্ছা কৃত নয়।
~~ স্বামী আত্মভোলানন্দ

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা -প্রফুল্ল চাকী ।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়। এই অন্দোলনে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে প্রফুল্ল চাকী   প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।   প্রফুল্ল চাকী ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।

 

প্রফুল্ল চাকী ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী।  পূর্ব বাংলায় জন্মগ্রহণকারী এই বাঙালি বিপ্লবী তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং জীবন উৎসর্গ করেন।

 

প্রফুল্ল চাকী ১৮৮৮ সালের ১০ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অধীনে বগুড়া জেলার বিহার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।  শৈশবে তিনি বগুড়ার ‘নমুজা জ্ঞানদা প্রসাদ মধ্য বিদ্যালয়ে’ ভর্তি হন।  পরে বগুড়ার মাইনর স্কুলে ভর্তি হন।  ১৯০২ সালে তিনি রংপুর জেলা স্কুলে ভর্তি হন।  পূর্ববঙ্গ সরকারের কার্লাইল সার্কুলারের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাকে রংপুর জিলা স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়।  এরপর ভর্তি হন রংপুরের কৈলাস রঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয়ে।  সেখানে অধ্যয়নকালে তিনি জিতেন্দ্র নারায়ণ রায়, অবিনাশ চক্রবর্তী, ঈশান চন্দ্র চক্রবর্তী সহ অন্যান্য বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন এবং বিপ্লবী আদর্শে অনুপ্রাণিত হন।

 

১৯০৬ সালে কলকাতার বিপ্লবী নেতা বারীন ঘোষ প্রফুল্ল চাকীকে কলকাতায় নিয়ে আসেন।  যেখানে যুগান্তর দলে যোগ দেন প্রফুল্ল।  তার প্রথম কাজ ছিল পূর্ববঙ্গ ও আসামের প্রথম লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার জোসেফ ব্যামফিল্ড ফুলার কে হত্যা করা।  কিন্তু এই পরিকল্পনা সফল হয়নি।  এর পরে, প্রফুল্ল চাকি ক্ষুদিরাম বোসের সাথে কলকাতা প্রেসিডেন্সির অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে এবং পরে বিহারের মুজাফফরপুরকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন।

 

ক্ষুদিরাম এবং প্রফুল্ল কিংসফোর্ডের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন এবং ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন।  ইউরোপিয়ান ক্লাবের প্রবেশপথে তারা কিংসফোর্ডের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিল।  একটি গাড়ি আসতে দেখে বোমা ছুড়ে মারে।  দুর্ভাগ্যবশত, কিংসফোর্ড সেই গাড়িতে ছিলেন না, কিন্তু দুই ব্রিটিশ মহিলা মারা যান, ভারতপ্রেমী ব্যারিস্টার কেনেডির স্ত্রী ও কন্যা।  সঙ্গে সঙ্গে প্রফুল্ল ও ক্ষুদিরাম এলাকা ছেড়ে চলে যান।

 

প্রফুল্ল এবং ক্ষুদিরাম পৃথক উপায়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয়।  প্রফুল্ল ছদ্মবেশে ট্রেনে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।  ২ মে নন্দলাল ব্যানার্জী নামে এক পুলিশ কনস্টেবল একটি ট্রেনে ষষ্ঠিপুর রেলস্টেশনের কাছে প্রফুল্লকে সন্দেহ করেন।  মোকামা স্টেশনে পুলিশের মুখোমুখি হয়ে প্রফুল্ল পালানোর চেষ্টা করে।  কিন্তু কোণঠাসা, ধরা না পড়ে আত্মত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন।  নিজের মাথায় পিস্তল দিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেন তিনি।  পরে অনেক ইতিহাসবিদ অনুমান করেন যে প্রফুল্ল আত্মহত্যা করেননি, তাকে পুলিশ হত্যা করে শিরশ্ছেদ করেছে।  পরে ক্ষুদিরামকে ধরা হয় এবং ফাঁসি দেওয়া হয়।  অন্য দুই বাঙালি বিপ্লবী রণেন গাঙ্গুলী এবং শ্রীশচন্দ্র পাল ১৯০৮ সালের ৯ নভেম্বর ব্রিটিশ পুলিশ ইন্সপেক্টর নন্দলালকে হত্যা এবং প্রফুল্ল চাকীকে হস্তান্তরের প্রতিশোধ নেন।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ভারতীয় চলচ্চিত্র কিংবদন্তি অভিনেতা- অশোক কুমার।

অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায়, (জন্ম ১৩ অক্টোবর) বিহারের ভাগলপুর জেলায় জন্মগ্রহণকারী একজন বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা।  জন্মের সময় তিনি কুমুদলাল গঙ্গোপাধ্যায় নামে পরিচিত ছিলেন এবং বাড়িতে মজা করে দাদামণি নামে ডাকা হতো।  অশোক কুমার ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেকে একজন কিংবদন্তি করে তুলেছেন।  ছোটবেলা থেকেই তিনি চলচ্চিত্র শিল্পে অংশগ্রহণের স্বপ্ন দেখতেন।

 

তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমানে বিহার) ভাগলপুরে কুমুদলাল নামে জন্মগ্রহণ করেন।  বাবা কুঞ্জলাল গঙ্গোপাধ্যায় পেশায় আইনজীবী এবং মা গৌরী দেবী ছিলেন গৃহিণী।  চার ভাইবোনের মধ্যে কুমুদলাল ছিলেন সবার বড়।  তাঁর একমাত্র বোন, সতী দেবী, তাঁর থেকে কয়েক বছরের ছোট, খুব অল্প বয়সে শশধর মুখোপাধ্যায়ের সাথে গাঁটছড়া বাঁধেন এবং একটি বৃহৎ চলচ্চিত্র পরিবারের সদস্য হন।  অনুপ কুমার, প্রায় চৌদ্দ বছরের ছোট এবং আভাস (কিশোর কুমার), সর্বকনিষ্ঠ, ছিলেন হিন্দি চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সফল প্লেব্যাক গায়ক।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রেসিডেন্সি কলেজে আইনজীবী হওয়ার জন্য পড়াশোনা করেছেন।  কিন্তু তিনি আইনশাস্ত্র অধ্যয়ন করতে আগ্রহী ছিলেন না।  তার মন ছিল চলচ্চিত্রে।  টেকনিশিয়ান হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে তার স্বপ্ন পূরণ হলো।
১৯৩০-এর দশকে বোম্বেতে চলে আসেন তাঁর ভগ্নিপতি শশধর মুখোপাধ্যায়ের সাথে যোগ দিতে, যিনি বম্বে টকিজের একজন সিনিয়র ছিলেন।  তিনি সেই সময়ের অন্যতম বড় ফিল্ম স্টুডিও বোম্বে টকিজে পরীক্ষাগার সহকারী হিসেবে কাজ করতেন।
দৈবক্রমে তার অভিনয় জীবন শুরু হয় ——–
অশোক কুমার স্বাভাবিকভাবে অভিনয় করে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে পথপ্রদর্শক হয়ে উঠেছেন।  প্রথম সুপারস্টার হিসেবে তিনি খলনায়কের ভূমিকায়ও অভিনয় করেন।  ভারতীয় চলচ্চিত্রে ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠায় বেশ কিছু তারকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

 

 

ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে তাঁর অবদান কখনোই ভোলার নয়। তাঁর অভিনয়ের জন্য অনেক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ১৯৮৮ সালে ভারত সরকার কর্তৃক চলচ্চিত্র কলা-কুশলীদের জন্য প্রণীত সর্বোচ্চ জাতীয় সম্মাননা হিসেবে বিবেচিত দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও, ১৯৯৯ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদান রাখায় পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত হন তিনি। তাঁকে ভারতের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সেরা অভিনেতাদের একজনরূপে গণ্য করা হয়ে থাকে। এছাড়াও ১৯৯৪ সালে ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা, ২০০১ সালে উত্তরপ্রদেশ সরকারের বেসামরিক সম্মান ও ২০০৭ সালে স্টার স্ক্রিন বিশেষ পুরস্কার পান তিনি। শীর্ষ কিংবা খলনায়ক বা চরিত্রধর্মী অভিনয়ের সর্বত্রই সমানভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সচেষ্ট ছিলেন।

 

সবচেয়ে বড় হলেও অশোক কুমার সবচেয়ে বেশি দিন বেঁচে ছিলেন।  তিনি চোখের সামনে তাঁর ছোট ভাই-বোনদের চলে যেতে দেখেছেন।  দাদা মনি খুব আড়ম্বরে জন্মদিন পালন করতেন।  যাইহোক, ১৯৮৭ সালে তার জন্মদিনে, তিনি তাঁর ছোট ভাইকে হারিয়েছিলেন।  কিশোর কুমার খুব অল্প বয়সে এই দিনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।  এবং সেদিন তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি আর কখনও তার জন্মদিন পালন করবেন না।

১০ ডিসেম্বর, ২০০১ তারিখে ৯০ বছর বয়সে দেহাবসান ঘটে তাঁর। মুম্বইয়ের চেম্বার এলাকায় অবস্থিত নিজ বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী গভীর শোকপ্রকাশ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন যে, তিনি অনেক প্রজন্মের অভিনেতাদেরকে অণুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস, জানুন দিনটি কি এবং কেন পালিত হয়।

প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস।  এটি জাতিসংঘ কর্তৃক মনোনীত একটি দিবস।  এই দিনটি দুর্নীতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এটি মোকাবেলা এবং প্রতিরোধ করার জন্য বিশ্বব্যাপী উদ্যোগের জন্য নিবেদিত।  এটি সরকারী এবং বেসরকারী উভয় ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সততা বজায় রাখার তাৎপর্যের উপর জোর দেয়।  আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং নৈতিক অনুশীলনের প্রচারে চলমান বিশ্বব্যাপী প্রতিশ্রুতির একটি মর্মস্পর্শী অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে।

 

দুর্নীতি একটি জটিল সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ঘটনা যা সমস্ত দেশকে প্রভাবিত করে।  দুর্নীতি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করে, অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ধীর করে দেয় এবং সরকারী অস্থিতিশীলতায় অবদান রাখে।
দুর্নীতি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বিকৃত করে, আইনের শাসনকে বিকৃত করে এবং আমলাতান্ত্রিক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিকে আক্রমণ করে, যার বিদ্যমান একমাত্র কারণ ঘুষ চাওয়া।  অর্থনৈতিক উন্নয়ন স্তব্ধ, কারণ বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করা হয় এবং দেশের অভ্যন্তরে ছোট ব্যবসাগুলি প্রায়ই দুর্নীতির কারণে প্রয়োজনীয় “স্টার্ট-আপ খরচ” অতিক্রম করা অসম্ভব বলে মনে করে।
৩১ অক্টোবর ২০০৩-এ, সাধারণ পরিষদ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কনভেনশন গৃহীত হয় এবং সেক্রেটারি-জেনারেল রাষ্ট্রপক্ষের কনভেনশনের কনফারেন্স অফ স্টেটস পার্টিস (রেজোলিউশন 58/4) এর জন্য সচিবালয় হিসাবে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ সংক্রান্ত অফিস (UNODC) মনোনীত করার অনুরোধ জানায়।  .  তারপর থেকে, 190টি দল কনভেনশনের দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্বের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে, সুশাসন, জবাবদিহিতা এবং রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির গুরুত্বের কাছাকাছি-সর্বজনীন স্বীকৃতি দেখাচ্ছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই ও প্রতিরোধে কনভেনশনের ভূমিকার জন্য বিধানসভা ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস হিসেবেও মনোনীত করেছে।  কনভেনশনটি ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে কার্যকর হয়।
এর বিংশতম বার্ষিকীতে এবং তার পরে, এই কনভেনশন এবং এটি যে মূল্যবোধগুলি প্রচার করে তা আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যার জন্য প্রত্যেককে এই অপরাধ মোকাবেলা করার প্রচেষ্টায় যোগদান করতে হবে। সারা বিশ্বকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যেই ইউনাইটেড ন্যাশনস কনভেনশন অ্যাগেইনেস্ট করাপশনের (আনকাক) মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংস্থাটি।দিবসটিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও নানা কর্মসূচিতে পালন করা হয়। তাই প্রতিবছরের মতো এবারও সরকারি-বেসরকারিভাবে জাতিসংঘ ঘোষিত এই দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ কোটি মার্কিন ডলার সমপরিমাণের ঘুষ আদান-প্রদান হয়ে থাকে। অন্যদিকে দুর্নীতির মাধ্যমে ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার চুরি করা হয় সারা বিশ্বে। এই দুইয়ের যোগফল বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশেরও বেশি।জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির হিসেবে দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত তহবিলের পরিমাণ সরকারি উন্নয়ন সহায়তার ১০ গুণ। দুর্নীতির কালো হাত থেকে মুক্তি পেতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করা হয় এ দিবস।

 

 

।।ছবি ও তথ্য: সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস কি, কেন পালিত হয় এবং গুরুত্ব।

গণহত্যার অপরাধ এবং এই অপরাধ প্রতিরোধের শিকারদের স্মরণ ও মর্যাদার আন্তর্জাতিক দিবস প্রতি বছরের ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়।  আমরা এই বছরের অনুষ্ঠানটি সংযম ও সচেতনতার সাথে পালন করতে পেরে আনন্দিত।  মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য গণহত্যা একটি অপরাধ।  এই অপশক্তির অবসান ঘটাতে জাতিসংঘের যৌথ প্রচেষ্টা রয়েছে।

 

মানবতার ইতিহাসে, গণহত্যা মানুষের বিরুদ্ধে মানুষের দ্বারা সংঘটিত সবচেয়ে বড় অপরাধ এবং মন্দ হিসাবে দাঁড়িয়েছে।  এটি একটি জাতি, গোষ্ঠী, জাতিগত একক, উপজাতি, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক ইউনিটকে ধ্বংস বা নিশ্চিহ্ন করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা এবং পঙ্গুত্ব গঠন করে, যার মধ্যে এই জাতীয় অনুষঙ্গের নারী ও শিশু রয়েছে।
ঐতিহাসিকভাবে, গণহত্যা এবং গণহত্যার গল্পগুলি মানুষের দল, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ইউনিটের বেশ কয়েকটি ইতিহাসের বই এবং বাইবেলের মতো ধর্মীয় গ্রন্থে বিদ্যমান, যা ইসরায়েল দ্বারা মিদিয়ানদের ধ্বংসকে লিপিবদ্ধ করে।  কিন্তু গণহত্যার প্রথম সরকারী রেকর্ড খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে পুনিক যুদ্ধে পাওয়া যায়।  কার্থেজ এবং রোমের মধ্যে যার ফলশ্রুতিতে কার্থেজ শহরগুলি ধ্বংস হয়েছিল, লক্ষাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছিল এবং অল্প বেঁচে থাকাদের দাসত্বে নিন্দা হয়েছিল।

 

পিউনিক জনগণের হত্যাকাণ্ডের পর, সারা বিশ্বে গণহত্যার বেশ কয়েকটি ঘটনা অব্যাহত থাকে।  চীনে ২০০০০০ টিরও বেশি উ হু এবং জি জনগণকে গণহত্যা করেছে, বেলজিয়ামের দ্বিতীয় লিওপোল্ডের অধীনে কঙ্গো তার নিপীড়নের অধীনে দুই থেকে ১৫ মিলিয়ন কঙ্গোলিকে মারা যেতে দেখেছিল, ইথিওপিয়া, রাশিয়া এবং জার্মানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় উচ্চ শিখরে পৌঁছেছিল, বিশেষ ভয়াবহতার সাথে  হলোকাস্ট যা নাৎসি-জার্মান শাসনের অধীনে প্রায় ৬ মিলিয়ন ইহুদিদের সংগঠিত মৃত্যু দেখেছিল।
ঘৃণা এবং অপছন্দ থেকে জন্ম নেওয়া, গণহত্যার কুফল এবং প্রচার অনেক ক্ষেত্রে পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত চলতে থাকে।  গণহত্যার অপরাধের শিকারদের স্মরণ ও মর্যাদার আন্তর্জাতিক দিবস এবং এই অপরাধ প্রতিরোধের দিনটি আমাদের সমস্ত মানবতাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার, গণহত্যার কারণে যারা মারা গেছে তাদের স্মরণ করার এবং প্রত্যেকে আমাদের ধার দেয়।  যেখানে এটি এখনও ঘটছে সেখানে মন্দ কাজের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর এবং ভবিষ্যতের ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে।

 

 

 

তাই প্রতি ৯ ডিসেম্বর, গণহত্যা প্রতিরোধের বিশেষ উপদেষ্টার কার্যালয় গণহত্যার অপরাধের প্রতিরোধ এবং শাস্তি সংক্রান্ত কনভেনশন গ্রহণকে চিহ্নিত করে – একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ব প্রতিশ্রুতি যা জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠার সময় করা হয়েছিল, এর ঠিক আগে।  মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা.  ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫-এর সাধারণ পরিষদের রেজোলিউশন A/RES/69/323 দ্বারা, সেই দিনটি গণহত্যা এবং এই অপরাধের প্রতিরোধের অপরাধের শিকারদের স্মরণ ও মর্যাদার আন্তর্জাতিক দিবসও হয়ে ওঠে।
এই বছর এর ৭৫তম বার্ষিকীতে, গণহত্যা কনভেনশন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক রয়ে গেছে।  ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশন প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক আইনে গণহত্যার অপরাধকে কোডিফাই করে।  এর প্রস্তাবনা স্বীকার করে যে “ইতিহাসের সব সময়ে গণহত্যা মানবতার জন্য ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে” এবং “মানবজাতিকে এমন একটি ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করতে” আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।  আজ অবধি, ১৫৩টি রাজ্য কনভেনশনটি অনুমোদন করেছে।  কনভেনশনের সার্বজনীন অনুসমর্থন অর্জনের পাশাপাশি এর পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, গণহত্যা প্রতিরোধকে কার্যকরভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য অপরিহার্য।  জেনোসাইড কনভেনশনে শুধুমাত্র গণহত্যার অপরাধের শাস্তি দেওয়ার বাধ্যবাধকতাই অন্তর্ভুক্ত নয়, গুরুত্বপূর্ণভাবে, এটি প্রতিরোধ করা।  গৃহীত হওয়ার ৭৫ বছরে, জেনোসাইড কনভেনশন আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আইনের বিকাশে, এই অপরাধের অপরাধীদেরকে জবাবদিহি করতে, প্রতিরোধের প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করতে এবং গণহত্যার শিকারদের কাছে কণ্ঠস্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

 

কেন আন্তর্জাতিক গণহত্যা এবং এই অপরাধ প্রতিরোধের অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণ ও মর্যাদা দিবস গুরুত্বপূর্ণ—

 

 

এই দিনটি আমাদের সকল নিরপরাধদের স্মরণ করিয়ে দেয় যারা গণহত্যার মন্দ কাজের ফলে মারা গেছে।  এটি তাদের স্মরণ করার এবং বেঁচে থাকা এবং তাদের পরিবারকে সহায়তার হাত ধার দেওয়ার সময়। গণহত্যার ভবিষ্যৎ সংঘটন প্রতিরোধ এই দিনটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে কাজ করে।  এটি সারা বিশ্বের সম্প্রদায়ের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং অপ্রয়োজনীয় হত্যা প্রতিরোধের প্রতি অঙ্গীকার।

এটি শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে

এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে কেন শান্তি গুরুত্বপূর্ণ এবং লালন করা উচিত।  এটি প্রতিবেশীর প্রতি ভালবাসা, ঐক্য এবং সহযোগিতাকে অন্য কিছুর উপরে প্রচার করে।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

জন্মদিনে স্মরণে বাংলা সিনেমার অন্যতম কিংবদন্তী অভিনেতা কমল মিত্র।

কমল মিত্র, স্বনামধন্য বিশিষ্ট এই বাঙালি অভিনেতা যিনি চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ৯০ টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শক ও বোদ্ধা মহলে প্রচুর প্রশংসিত ও সমাদৃত হয়েছেন। তিনি পিচার বিশ্বাস এবং পাহাড়ি সান্যাল সহ ৫০ এবং ৬০ এর দশকে বেশিরভাগ মধ্যবয়সী চরিত্রে বাংলা কালো-সাদা পর্দায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন।  প্রকৃতপক্ষে, তার সাফল্য ৭০-এর দশকেও সমানভাবে অক্ষত ছিল।  যদিও তিনি উত্তম কুমার এবং তনুজা অভিনীত ১৯৬৩ সালের জনপ্রিয় বাংলা চলচ্চিত্র দে নিয়ায় উপস্থিত ছিলেন, বি.কে.আর.  তার ভূমিকার জন্য স্মরণীয়, কমল মিত্র বিশিষ্ট পৌরাণিক ও সামাজিক নাটকে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন।   নিঃস্বার্থ, নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমের উদাহরণ হিসেবে তিনি স্মরণ ও সম্মানিত।  আয়রন কাপ ‘বদর মুন্সী’-তে তার পারফরম্যান্সের মাধ্যমে;  বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নিজের জন্য একটি স্থায়ী জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন।

 

কমল মিত্র ১৯১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বর্ধমানে জন্মগ্রহণ করেন।  কমল মিত্র অনেক থিয়েটার ও যাত্রায় অভিনয় করেছেন (প্রায় ত্রিশটি)।  মঞ্চ এবং পর্দায় তার অনেক শক্তিশালী অভিনয় গুণ তার শৃঙ্খলা থেকে এসেছিল, যা তিনি স্নাতকের পর প্রথম দিকে সামরিক বাহিনীতে চাকরি করার মাধ্যমে অর্জন করেছিলেন।

 

তিনি বর্ধমান শহরের বিখ্যাত মিত্র পরিবারের একজন প্রখর ক্রীড়াবিদ ছিলেন এবং অল্প বয়সে একজন ভাল ফুটবলার ছিলেন।  তার চলচ্চিত্র জীবন শুরু করার আগে, তিনি বর্ধমানের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং কালেক্টর অফিসে কাজ করেছিলেন।  তিনি একজন আগ্রহী পাঠক এবং দুর্লভ বইয়ের সংগ্রাহক ছিলেন।  নন্দন তার বিশাল সংগ্রহ কলকাতার ফিল্ম সেন্টার, ফিল্ম স্টাডিজ এবং ফিল্ম আর্কাইভকে দান করেন।  বেতার-নাটকেও অভিনয় করেছেন।  তার বিরল কণ্ঠস্বর এবং উচ্চতা উভয়ই তার দক্ষতায় অতিরিক্ত ফ্লেয়ার যোগ করে এবং অন-স্ক্রিন চরিত্র নির্বিশেষে দর্শকদের উপর প্রভাব তৈরি করে।  একজন অভিনেতা হিসেবে তার উচ্চারণ এবং স্বরভঙ্গিতে দক্ষতা তাকে একজন অভিনেতা হিসেবে সাফল্যের শীর্ষে নিয়ে যায়।

 

তাঁর অভিনীত ছবি সমূহ—

 

 

 

আনন্দ মঠ, জিজ্ঞাসা, অগ্নিপরীক্ষা, শিল্পী, শাপমোচন, কংস, সাত নম্বর বাড়ি, নীলাঙ্গুরীয়, মহিষাসুর বধ, সব্যসাচী, বিদ্যাসাগর, পথের দাবী, লৌহ কপাট, সাগরিকা, সবার ওপরে, হাসপাতাল, যমলায়ে জীবন্ত মানুষ, সূর্যতোরন, বন্ধু, পরশপাথর, একটি রাত, নব বিধান, শেষ অঙ্ক, চিরদিনের, বর্ণালী, পরিনীতা, কাল তুমি আলেয়া, মনিহার, আসিতে আসিও না, বিভাষ, ভানু পেলো লটারি, দেয়া নেয়া, থানা থেকে আসছি, হারমোনিয়াম, ফুলু ঠাকুরমা, রৌদ্রচ্ছায়া, আরো একজন, অসাধারন, দক্ষ যজ্ঞ, জীবন মৃত্যু, সবরমতি, পিতাপুত্র, তিন ভুবনের পারে।

 

তার আত্মজীবনী “ফ্ল্যাশব্যাক” নামে পরিচিত, সেটি তার অভিনয়ের সাক্ষীর দশকগুলির বাংলা সিনেমার জগতের একটি অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেন। এবং সমসাময়িক সমাজের উপর প্রভাব ফেলে এমন একটি মাধ্যম হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্রের ধীরে ধীরে আধুনিকীকরণ এবং ক্রমবিকাশের একটি ভাষ্য। তিনি এক সময় অভিনয় ছেড়ে দেন, যে সময় প্রযোজক এবং পরিচালক, তার সহকর্মী এবং সাধারণ দর্শকদের কাছে তার অনেক অনেক বেশি চাহিদা ছিল।কমল মিত্র ২রা আগস্ট ১৯৯৩ সালে ৮০ বছর বয়সে প্রয়াত হন।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

 

 

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ

বোধি দিবস, জানুন দিনটি সম্পর্কে কিছু কথা।

প্রতি বছর ৮ ডিসেম্বর জাপানে বোধি দিবস পালিত হয়।  এটি সাধারণত লুনিসোলার ক্যালেন্ডারের ১৮ তম মাসের অষ্টম দিনে পড়ে।  জাপানে, দিনটি রোহাতসু নামে পরিচিত এবং সম্রাট মেইজি যখন জাপানের পশ্চিমীকরণ শুরু করেন এবং গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন তখন এটি বর্তমান তারিখে স্থানান্তরিত হয়।  এটি একটি আধ্যাত্মিকভাবে উদ্দীপক দিন যা অনেকের জন্য উপকারী।

 

বোধি দিবস কি—-

 

বোধি দিবস সেই দিনটিকে উদযাপন করে যেদিন “ঐতিহাসিক বুদ্ধ”, ওরফে সিদ্ধার্থ গৌতম, শাক্যমুনি বুদ্ধ, জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।
বোধি দিবসের অনেকগুলি বিবরণ রয়েছে, প্রায় যতগুলি বৌদ্ধ সম্প্রদায় রয়েছে।  তাই আমি সারাংশ নিচে পাতন করা হবে.  ঐতিহাসিক বুদ্ধ, সিদ্ধার্থ গৌতম, একজন কড্ড যুবরাজ, পৃথিবীর বাস্তবতার অপ্রীতিকর দিক থেকে রক্ষা করেছিলেন;  অসুস্থতা, দারিদ্র্য, মৃত্যু।  একদিন অবধি, তিনি রাজ্যের বাইরে গিয়েছিলেন এবং এই ভুক্তভোগী লোকদের, অসুস্থ, দরিদ্র, শোকাহত বা এমনকি মৃত দেখেছিলেন।
এটি যুবরাজ সিদ্ধার্থকে হতবাক করেছিল।  “WTF?!  জীবনের আনন্দ সবার জন্য সর্বত্র থাকে না, সব সময়?!”  তিনি একটি ভাল শব্দের অভাবের জন্য, এর প্রকৃত অর্থ খুঁজে পেতে তার কোমল জীবন থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন।  রিঙ্গো যেমন বলেছিলেন, “আমি জানি না আমি কী চাই, তবে আমি সুমথিন চাই।”
বছরের পর বছর তিনি এক মাস্টারের অধীনে অন্য মাস্টারের অধীনে পড়াশোনা করেছেন।  তিনি যা খুঁজছিলেন তা তিনি খুঁজে পাননি।  এটি উত্সর্গের অভাবের জন্য ছিল না।  তিনি অল-ইন ছিলেন।  এক পর্যায়ে তিনি মৃত্যুর সন্নিকটে, তপস্বী জীবনধারা থেকে ক্ষতবিক্ষত, বস্তুগতভাবে দেউলিয়া, মানসিকভাবে দেউলিয়া।  তিনি একটি বড় গাছের নীচে বিশ্রাম নেন, যা “বোধি গাছ” নামে পরিচিত হবে।

 

সেই মুহুর্তে, মূলত তিনি গন্টলেটটি ফেলে দেন এবং প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে “আমি যা খুঁজছি তা না পাওয়া পর্যন্ত এই #&*!@ গাছের নীচে বসে থাকবেন।”
তিনি সেখানে কয়েক দিন ধরে ধ্যানে বসেছিলেন, আমি যা পড়েছি তা থেকে সাত দিন থেকে ৪৯ বছর পর্যন্ত (ফিশনু বলেছে এটি সাত দিন ছিল)।  তবে এটি একটি প্রশান্ত ওম-গুঞ্জন ধ্যান ছিল না।  তিনি অনুভব করেছিলেন যে তিনি কিছুতে আছেন কারণ তার মন খারাপ আক্রমণের মধ্যে ছিল।  আমাদের চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বাসের নিজস্ব একটি জীবন আছে এবং অন্য যেকোন জীবিতের মতো, এটি বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করবে যখন এটির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
বছরের ১২ তম চাঁদের ৮ তম দিনে সকালে, সিদ্ধার্থ গৌতম তার ধ্যান থেকে জেগে ওঠেন, উদীয়মান মর্নিং স্টার, শুক্রের দিকে তাকিয়ে।  আলোকিত।  অর্থাৎ, তার মাথার বিশৃঙ্খল গিয়ারগুলি তার বেশিরভাগ লাগেজ ফেলে দেয় এবং শূন্যতা সুন্দর ক্রমে একত্রিত হয়।  এবং তিনি “দেখতে” পারতেন।  আমরা কষ্ট পাই কারণ আমরা জিনিসগুলিকে আঁকড়ে থাকি, যা এই ক্রমাগত পরিবর্তিত বিশ্বে অস্থায়ী।  যদি আমরা আঁকড়ে না থাকি, আমরা কষ্ট পাই না।

 

এই উপলব্ধিগুলি চারটি মহৎ সত্য হয়ে উঠেছে।  সিদ্ধার্থ গৌতম এখন সম্পূর্ণ জাগ্রত।  তিনি এখন বুদ্ধ, শিক্ষক ছিলেন।
যে গ্রামের একটি মেয়ে তাকে ভাত এবং দুধ খাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল, যেটি সে কৃতজ্ঞতার সাথে গ্রহণ করেছিল।  ৪০ বছরের অধ্যাপনা তাকে দেখেই জ্বালানি।  এই নম্র খাবারের মুহূর্ত পর্যন্ত কয়েক মাস ধরে, তিনি এবং সহকর্মী তপস্বীদের দল প্রতিদিন কয়েক দানার চেয়ে বেশি খাননি, যদি তা বেশি হয়।
সিদ্ধার্থ সেই খাবার খেয়ে তার বন্ধুরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।  তারা তাকে তিরস্কার করল, “তুমি বদলে গেছ মানুষ!  আপনি কঠোরতা সম্পর্কে সব হতে ব্যবহৃত!”  উত্তরে সিদ্ধার্থ বলেন, “অবশ্যই বদলে গেছি।  কি হয় না?”
এই দিনটিকে আমরা বোধি দিবস বলি।  বিশ্বের কিছু অংশ 8 ডিসেম্বর, বছরের ১২ তম মাসের ৮ তম দিনে একটি প্রমিত তারিখে উদযাপন করে।  যাইহোক, বোধি দিবস আসলে চান্দ্র বছরের ১২ তম চাঁদের ৮ তম দিন।  ইস্টারের মতো, সেই দিনটি বছরের পর বছর পরিবর্তিত হয়।

 

বোধি দিবসের ইতিহাস—–

 

বোধি দিবসটি ২৫০০ বছর আগে ঘটেছিল সেই মুহূর্তটিকে চিহ্নিত করার জন্য পালন করা হয় যখন সিদ্ধার্থ গৌতম জ্ঞান অর্জন করেছিলেন এবং বুদ্ধ বা ‘জাগ্রত’ হয়েছিলেন।  গল্পটি বলে যে, একজন রাজকুমারের বিলাসবহুল জীবনযাত্রাকে প্রত্যাখ্যান করে, সিদ্ধার্থ ২৯ বছর বয়সে প্রাসাদের আরাম ত্যাগ করেছিলেন এবং জীবনের অর্থ সন্ধানের জন্য গভীর আত্মদর্শনের যাত্রা করেছিলেন।
তিনি উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি শহর বোধগয়াতে একটি পিপল গাছের (বট ডুমুরের একটি প্রজাতি) নীচে ধ্যান করেছিলেন, যা এখন বোধি গাছ নামে পরিচিত, এবং তিনি ‘বোধি’ (‘আলোকিত’) অর্জন না করা পর্যন্ত ধ্যান চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প করেছিলেন।  তিনি 49 দিন একটানা ধ্যানের পর 35 বছর বয়সে বোধি লাভ করেন।  তিনি এখন দেখতে সক্ষম হয়েছিলেন যে কীভাবে প্রত্যেকে এবং সবকিছু সংযুক্ত ছিল, এবং সেইজন্য জ্ঞানার্জনের একটি অবস্থায় পৌঁছেছিলেন যা তাকে চারটি নোবেল সত্য তৈরি করতে পরিচালিত করবে: দুখ (অসন্তোষজনক), সমুদয় (উত্থান), নিরোধ (বন্ধ) এবং মাগা (পথ)  ) যার মধ্যে আটগুণ পথ সেট করা হয়েছে।
বৌদ্ধরা এই দিনটিকে ধ্যান করে, ‘ধর্ম’ (‘সর্বজনীন সত্য বা আইন’) অধ্যয়ন করে, সূত্র (বৌদ্ধ গ্রন্থ) জপ করে এবং অন্যান্য প্রাণীর প্রতি সদয় আচরণ করে স্মরণ করে।  কিছু লোক চা এবং কেকের খাবার রান্না করে আরও ঐতিহ্যগত অর্থে দিনটিকে চিহ্নিত করে।  বোধি বৃক্ষ রোপণ সারা মাস জুড়ে অনুষ্ঠিত হয় এবং সাধারণত চা অনুষ্ঠানের সাথে থাকে, যখন ধূপ এবং বহু রঙের আলো পরের মাসে রাজধানী টোকিওতে এবং সারা দেশের শহর ও গ্রামে প্রদর্শিত হয়।
যাইহোক, বোধি দিবস জাপানে সরকারি ছুটি নয় – শুধুমাত্র বৌদ্ধরা, যারা দেশের জনসংখ্যার প্রায় 34%, দিনটি পালন করে।

 

বোধি দিবস কিভাবে পালন করবেন—

 

কিছু সাজসজ্জা করুন–

 

তার জেগে ওঠার দিনটিকে মনে রাখার জন্য একটি ডুমুর গাছের নীচে বুদ্ধের ছবি বা ছোট মূর্তি দিয়ে ঘরটি সাজান।  আপনি আলোকিতকরণের প্রতীক হিসাবে মোমবাতি এবং অন্যান্য আলো জ্বালাতে পারেন।

 

প্রার্থনায় যোগ দিন

 

বৌদ্ধরা একত্রিত হয় এবং রাতে প্রার্থনায় থাকে।  এই প্রার্থনাগুলির একটি অংশ হওয়া নিশ্চিত করবে যে আপনার আধ্যাত্মিকভাবে পুনর্নবীকরণের সময় আছে।

 

জ্ঞানার্জনের বার্তা শেয়ার করুন—

 

বোধির পাঠ সম্পর্কে অন্যদের বলার জন্য এটি একটি উপযুক্ত দিন।  কে জানে আপনি কতজনকে নিজেদের ভালো সংস্করণ হতে সাহায্য করবেন।

 

বোধি গাছ সম্পর্কে ৫টি তথ্য যা আপনাকে অবাক করবে—

 

এটি প্রাচীন-

 

এটি Ficus religiosa পরিবারের অন্তর্গত একটি খুব পুরানো পবিত্র ডুমুর গাছ।

 

এটি যে কোনও জায়গায় বাড়তে পারে-

 

এটি বোধগয়া থেকে উদ্ভূত হয়েছে এবং এখন বিশ্বের অন্যান্য অংশেও বৃদ্ধি পায়।

 

এটি ধর্মীয়ভাবে প্রতীকী-

 

ধর্মীয় মূর্তিবিদ্যায়, এর পাতাগুলি প্রায় সবসময় হৃদয় আকৃতির হিসাবে উপস্থাপন করা হয়।

 

অবিরাম জল দ্বারা পুষ্ট-

 

এটি ভারতের গয়াতে ফাল্গু নদীর তীরে জন্মে

এটি একটি তীর্থস্থান এর বংশধর, মহাবোধি গাছটি তীর্থযাত্রীদের জন্য একটি ঘন ঘন গন্তব্য এবং চারটি প্রধান বৌদ্ধ তীর্থস্থানের মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

 

কেন বোধি দিবস গুরুত্বপূর্ণ–

 

এটি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ পাঠ মনে রাখতে সাহায্য করে

বোধি দিবসের পাঠগুলি কেবল অমূল্য – এটি আমাদের জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে এবং নিজেদের সেরা অংশগুলিকে বাঁচতে শেখায়।

 

এটা আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে গভীর করে

অর্থপূর্ণ এবং উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবন যাপন করতে সক্ষম হওয়ার জন্য প্রত্যেকেরই আধ্যাত্মিক জাগরণ এবং গভীরতা প্রয়োজন।  এই দিনটি সেই গভীরতার একটি মহান চুক্তি পেতে একটি প্ল্যাটফর্ম অফার করে।

 

এটা সাধারণ ভালোর জন্য আমাদের একত্রিত করে

বোধি দিবসের অন্যতম হাইলাইট হল অন্য প্রাণীদের জন্য সদয় আচরণ করা।  এটি বিভিন্ন লোকেদেরকে একত্রিত করে ভালো কিছু করার জন্য।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

 

 

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে দীর্ঘ ৪৩ বছর, জেনে নিন বিপিন রাওয়াত সম্পর্কিত কিছু তথ্য – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

জেনারেল রাওয়াতের চার দশকেরও বেশি সময়ের কেরিয়ার। যা তাঁকে প্রতিরক্ষায় তিন ধরনের পরিষেবায় প্রথম জয়েন্ট চিফ নিযুক্ত হতে সাহায্য করেছে। সিডিএস এক অর্থে সরকারের সামরিক-সম্পর্কিত উপদেষ্টা এবং সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বায়ুসেনাকে একছত্রে নিয়ে আসা যার প্রধান লক্ষ্য।  জেনারেল বিপিন রাওয়াত, পিভিএভিএসএম, ইউওয়াইএসএম, এভিএসএম, ওয়াইএসএম, এসএম, ভিএসএম ভারতীয় সামরিক বাহিনীর প্রথম প্রতিরক্ষা প্রধান ও ভারতীয় সেনার সেনাপ্রধান ছিলেন। ২৬তম সেনাপ্রধান হিসেবে তিনি ২০১৬ এর ৩১ ডিসেম্বর জেনারেল দলবীর সিং সোহাগের কাছ থেকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।২০১৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নরবণে তাঁর স্থলে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেন। তিনি সেনাপ্রধান হওয়ার পূর্বে ভারতীয় সেনার সেনা উপপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ভারতীয় সেনার পূর্ব কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ এর দায়িত্ব পালন করেছেন।

 

 জীবন এবং শিক্ষা—

 

বিপিন রাওয়াত ১৬ মার্চ ১৯৫৮ সালে উত্তরাখণ্ডের পাউরিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা লক্ষ্মণ সিং লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে অবসর গ্রহণ করেছিলেন। তিনি মিরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিলিটারি-মিডিয়া স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে পিএইচডিও করেছেন। জেনারেল বিপিন রাওয়াত ন্যাশনাল ডিফেন্স একাডেমি, ওয়েলিংটনের ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ এবং হাইকমান্ড ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের প্রাক্তন ছাত্র। তিনি ফোর্ট লিভেনওয়ার্থ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কমান্ড এবং জেনারেল স্টাফ অধ্যয়ন করেন।

রাওয়াত লেখাপড়া করেন ক্যামব্রিয়ান হল (দেহরাদুন), সিমলার সেন্ট এডওয়ার্ড স্কুল এবং অবশেষে ‘ভারতীয় সামরিক একাডেমী’তে, যেখান থেকে ভালো ফলাফল করে ‘সম্মানের তরবারী’ লাভ করেছিলেন। তিনি তামিলনাড়ুর ‘প্রতিরক্ষা সেবা স্টাফ কলেজ’ থেকে স্টাফ কোর্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ট লেভেনওয়ার্থ থেকে ‘উচ্চতর আদেশ প্রশিক্ষণ’ লাভ করেন। এছাড়া তিনি তামিলনাড়ুর মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিরক্ষাবিদ্যায় এমফিল করেন।

 

ব্যক্তিগত জীবন–

 

১৯৮৫ সালে, রাওয়াত মধুলিকা রাওয়াতকে (née রাজে সিং) বিয়ে করেন।  একটি পূর্ববর্তী রাজকীয় পরিবারের বংশধর, তিনি ছিলেন কুনওয়ার মৃগেন্দ্র সিং-এর কন্যা, কোন এক সময় শাহদোল জেলার সোহাগপুর রিয়াসাতের পরগনার রিয়াসতদার এবং ১৯৬৭ এবং ১৯৭২ সালে কানাডায় জেলা থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন।  গোয়ালিয়র এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক।  এই দম্পতির কৃত্তিকা ও তারিণী নামে দুই কন্যা ছিল।
মধুলিকা রাওয়াত সেনাপ্রধান হিসেবে বিপিন রাওয়াতের মেয়াদকালে আর্মি ওয়াইভস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (AWWA) এর সভাপতি ছিলেন।  তিনি ডিফেন্স ওয়াইভস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (ডিডব্লিউএ) এর সভাপতি হয়েছিলেন, পদটি তৈরি করার পরে এবং জেনারেল বিপিন রাওয়াতকে প্রথম সিডিএস হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল।  তিনি প্রতিরক্ষা কর্মীদের স্ত্রীদের আর্থিকভাবে স্বাধীন করার জন্য কাজ করেছিলেন।  তিনি এনজিও এবং কল্যাণ সমিতির সাথেও জড়িত ছিলেন যেমন বীর নারিস যা সামরিক কর্মীদের বিধবা, ভিন্নভাবে প্রতিবন্ধী শিশু এবং ক্যান্সার রোগীদের সহায়তা করে।

 

সেনাজীবন—

 

বিপিন কমিশন পান ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখে, তার পিতার ইউনিট ৫/১১ গোর্খা রাইফেলসে। তার সব ধরনের যুদ্ধ পরিচালনার অভিজ্ঞতা ছিলো এবং তিনি ১০ বছর জঙ্গীবিরোধী অভিযানে নিয়োজিত থেকেছিলেন। তিনি জম্মু-কাশ্মীর-এর উরিতে একটি কম্পানির অধিনায়কত্ব, পূর্বাঞ্চলীয় সেক্টরের একটি পদাতিক ব্যাটেলিয়ন অধিনায়ক, রাষ্ট্রীয় রাইফেলসে (আধা-সামরিক বাহিনী) একজন ব্রিগেড অধিনায়ক, ১৯তম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি (সাউদার্ন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং-ইন-চীফ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেনাবাহিনী প্রধান হওয়ার পূর্বে তিনি ‘ভাইস চীফ অব আর্মি স্টাফ’ (উপসেনাবাহিনীপ্রধান) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন যে পদে তিনি ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ছিলেন। সেনাপ্রধান হওয়ার ক্ষেত্রে তার নাম আসে তার চেয়ে দুজন ঊর্ধ্বতন জেনারেলকে টপকিয়ে, তারা হলেন প্রবীণ বকশী এবং পি এম হারিয।

 

প্রতিরক্ষা প্রধান—

বিপিন রাওয়াতকে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান পদে নিয়োগ দেয়া হয় ২০২০ সালের ১ জানুয়ারীতে। এই পদে তিনি নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা তাঁকে কাজের ব্যাপারে রিপোর্ট করে থাকেন। তিনি সিডিএস হওয়ার আগ পর্যন্ত চিফ অফ স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান পদেও কাজ করেছেন।

 

ডোকলামে চীনা সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষ

 

২০১৭ সালে, ডোকলামে ভুটান, চীন এবং ভারতের মধ্যে একটি ত্রিসংযোগ সীমান্ত এলাকার কাছে ডোকলামে একটি রাস্তা চীনা নির্মাণকে কেন্দ্র করে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এবং চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির মধ্যে একটি ৭৩-দিনের সামরিক সীমান্ত স্থবিরতা ঘটে।  অচলাবস্থা শেষ হওয়ার পরে রাওয়াত বলেছিলেন যে চীন ‘তার পেশীগুলিকে নমনীয় করা’ শুরু করেছে এবং প্রান্তিকতার সীমা পরীক্ষা করার জন্য ধীরে ধীরে ভারতের দখলকৃত অঞ্চলকে ‘নিবল করার’ চেষ্টা করছে।  তিনি বলেছিলেন, ভারতকে “চীন” সম্পর্কে “সতর্ক” থাকতে হবে এবং সংঘাতে পরিণত হতে পারে এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

 

পাকিস্তান প্রসঙ্গে–

 

রাওয়াত বলেছিলেন যে ভারত “পাকিস্তানের সাথে সমঝোতার কোনও সুযোগ দেখেনি কারণ তার সামরিক, রাজনীতি এবং জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ভারত তাদের দেশকে টুকরো টুকরো করতে চায়”।  রাওয়াত সন্দেহ করেছিলেন যে পাকিস্তান “চীনের সাথে ভারতের ব্যস্ততার সুযোগ নিতে পদক্ষেপ নিতে পারে”।  রাওয়াত এইভাবে কোনো সমাধান বা প্রতিকার না দিয়েই দুই ফ্রন্টের যুদ্ধ পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

 

দুই সম্মুখ যুদ্ধ–

 

২০১৯ সাল পর্যন্ত, রাওয়াত বিবৃতি দিয়েছিলেন যে ভারতকে চীন এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুটি ফ্রন্টে একযোগে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে সতর্ক করে দিয়েছিল।  ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে, দিল্লিতে একটি সেমিনার চলাকালীন, রাওয়াত বলেছিলেন যে তিনটি দেশেরই পারমাণবিক অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও চীন এবং পাকিস্তানের সাথে ভারত সীমান্তে “যুদ্ধ বাস্তবতার রাজ্যের মধ্যে রয়েছে”।  সমালোচকদের মতে, রাওয়াত এই ধরনের ফলাফলের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না বা এটিকে ব্যর্থ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

 

সেনাবাহিনীর আধিপত্য নিয়ে মন্তব্য—

 

রাওয়াত যুদ্ধে যুদ্ধে বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনীর উপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘আধিপত্য এবং প্রাধান্য’-এর উপর জোর দেন।  রাওয়াত বলেছিলেন, “যুদ্ধগুলি স্থলভাগে লড়াই করা হবে, এবং তাই বায়ুসেনা এবং নৌবাহিনীর উপর সেনাবাহিনীর প্রাধান্য বজায় রাখতে হবে৷ বিবৃতিটি বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনীকে বিরোধিতা করেছিল৷
২০২১ সালের গোড়ার দিকে, রাওয়াত ভারতীয় বিমান বাহিনীকে ভারতের প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক এবং অবকাঠামোর একটি “সমর্থক হাত” বলে অভিহিত করেছিলেন।  এয়ার চিফ মার্শাল আর কে এস ভাদৌরিয়া প্রতিক্রিয়ায় একটি জনসাধারণের বিবৃতি দিয়েছেন যে আইএএফ একটি সহায়ক সেনাবাহিনীর চেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে৷

 

সম্মাননা

 

প্রায় ৪৩ বছরের কর্মজীবনে, তিনি বীরত্ব এবং বিশিষ্ট সেবার জন্য বহুবার ভূষিত হন।  তিনি ২০০১ সালে বিশেষ সেবা পদক, ২০০৫ সালে সেনা পদক, ২০০৯ সালে যুধ সেবা পদক, ২০১৩ সালে অতি বিশেষ সেবা পদক, ২০১৬ সালে উত্তম যুধ সেবা পদক এবং ২০১০ সালে তিনি ৯টি বিশেষ দলে ভূষিত হন।  দুইবার সিওএএস কম্যান্ডেশন এবং আর্মি কমান্ডারের প্রশংসায় ভূষিত।  জাতিসংঘে দায়িত্ব পালনকালে তিনি দুইবার ফোর্স কমান্ডারের প্রশংসায় ভূষিত হন।  ২০২২ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের সম্মাননা তালিকায় তাকে মরণোত্তর পদ্মবিভূষণ দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছিল।

 

মৃত্যু—–

২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর তামিলনাড়ুর কুন্নুরে বিপিন রাওয়াতসহ ১৪ জনকে নিয়ে উড়েছিল হেলিকপ্টার। ওড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তা বিধ্বস্ত হয় বান্দিশোলায়। এর পর তাঁকে এবং তাঁর স্ত্রীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। বিপিন রাওয়াত ও তাঁর স্ত্রী এবং তার স্টাফরা এই হেলিকপ্টারে ছিলেন।  এ দূর্ঘটনায় চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত ও তাঁর স্ত্রী মধুলিকা রাওয়াত হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন। এর সাথে সাথে পরিসমাপ্তি ঘটে এক দুর্ধর্ষ কেরিয়ারের।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

কিংবদন্তি ভারতের খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী, নৃত্যপরিকল্পক ও অভিনেতা উদয়শঙ্কর এর জন্মদিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

উদয় শঙ্কর ১৯০০ সালের ৮ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় নৃত্যশিল্পী, কোরিওগ্রাফার, অভিনেতা।  তিনি ভারতীয় নৃত্য শৈলী, ভারতীয় জাতীয় নৃত্যকে ইউরোপীয় থিয়েটারে অভিযোজিত করার জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত।  তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় এবং উপজাতীয় নৃত্যের উপাদানগুলিকে একত্রিত করেছিলেন, যা তিনি পরবর্তীতে ১৯২০ এবং ১৯৩০ এর দশকে ভারত, ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় করেছিলেন।  তিনি ছিলেন ভারতে আধুনিক নৃত্যের পথিকৃৎ।

 

 

উদয় শঙ্কর রাজস্থানের উদয়পুরে এক বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  তার পুরো নাম উদয়শঙ্কর চৌধুরী।  তাঁর পিতা পন্ডিত শ্যামশঙ্কর চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশের যশোর জেলার নড়াইল মহকুমার কালিয়া গ্রামের বাসিন্দা।  উদয় শঙ্করের জন্ম হয় যখন পণ্ডিত শ্যামশঙ্কর ঝালাওয়ার মহারাজার ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে কাজ করছিলেন।  উদয় শৈশবের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন মা ও ভাইবোনদের সঙ্গে নুসরাতপুরে মায়ের বাড়িতে।  তার বাবার কাজ তাঁকে নিয়মিত শহরে যেতে বাধ্য করে।  ফলস্বরূপ, উসারকে বিভিন্ন স্কুল যেমন নসরতপুর, গাজীপুর, বারাণসী এবং ঝালওয়াতে স্থানান্তর করা হয়েছিল।  উদয়কে অল্প বয়সে নাচতে দেখা না গেলেও গাজীপুরে তার স্কুলে গান ও ফটোগ্রাফির মতো অন্যান্য শিল্পীদের সঙ্গে তাঁর মেলামেশা।

 

 

তাঁর পিতা পণ্ডিত শ্যাম শঙ্কর ছিলেন একজন বুদ্ধিজীবী ঋষি।  তাঁর কাছে নৃত্যই ছিল শিল্প এবং পূজা-অর্চনা।  উদয় স্বভাবতই ছবি আঁকা এবং নাচের খুব পছন্দ করতেন।  ১৯১৮ সালে, উদয়কে মুম্বাইয়ের জেজে স্কুল অফ আর্টসে এবং পরে গন্ধর্ব মহাবিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়।  এরপর উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অব আর্টসে যান।  এখানে তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য চিত্রকলা ও নৃত্যের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করেন।  রয়্যাল কলেজ অফ আর্টস থেকে বৃত্তি নিয়ে উদয় চিত্রকলায় উচ্চশিক্ষার জন্য রোমে যান।

 

 

উদয় শঙ্কর তাঁর নৃত্য সঙ্গী অমলাকে বিয়ে করেছিলেন।  ১৯৪২ সালে তাঁর প্রথম সন্তান আনন্দ শঙ্কর জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৫৫ সালে তাঁর কন্যা মমতা শঙ্কর জন্মগ্রহণ করেন।  তার ছেলে আনন্দ শঙ্কর খুব অল্প বয়সে গান গাইতে শুরু করেন এবং একজন সঙ্গীতজ্ঞ ও সুরকার হয়ে ওঠেন।  অন্যদিকে তাঁর মেয়ে মমতা শঙ্কর নাচ শিখে বিখ্যাত অভিনেত্রী হয়েছেন।  ১৯৪৮ সালে, উদয় লিখেছিলেন ‘কল্পনা’, তাঁর দ্বারা প্রযোজিত ও পরিচালিত, ভারতের প্রথম চলচ্চিত্র যার মধ্যে প্রধানত একজন শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী ছিলেন প্রধান ভূমিকায়।  প্রধান চরিত্রে তার স্ত্রী।  যদিও ছবিটি বক্স অফিসে ভালো ব্যবসা করতে পারেনি, এটি পরে অনেক সমালোচক এবং চলচ্চিত্র প্রেমীদের দ্বারা স্বীকৃত এবং প্রশংসিত হয়েছিল, যা ২০০৯ সালে একটি ডিজিটাল রিমাস্টারের দিকে পরিচালিত করে। মজার বিষয় হল, এই চলচ্চিত্রটি পদ্মিনীর পর্দায় আত্মপ্রকাশও করেছিল, যিনি পরবর্তীতে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।  দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত অভিনেত্রী।

 

 

১৯৮৩ সালে, উদয়ের ছোট ভাই ও কিংবদন্তি সিতার পণ্ডিত রবি শংকর নতুন দিল্লিতে একটি বড় উৎসব পালন করেন যা চার দিন ধরে চলে। অনুষ্ঠানটি “উদয়-ইয়উথ উৎসব” নামে পরিচিত।

পুরস্কার ও সম্মান—

 

১৯৬০ সালে, “সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার”, তিনি ‘ক্রিয়েটিভ ডানস’ সৃষ্টির জন্য।

১৯৬২ সালে, “সঙ্গীত নাটক একাডেমী ফেলোশিপ”,এটি ন্যাশনাল একাডেমী অব মিউজিক, নাচ ও ড্রামা কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ সম্মান। এই পুরস্কারটি তার জীবদ্দশায় কৃতিত্বের জন্য উদয়শঙ্করকে দেওয়া হয়।

১৯৭১ সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার, পদ্মবিভূষণ,  লাভ করেন।

১৯৭৫ সালে,  বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ “দেশিকোত্তম সম্মাননা”- সম্মানে সম্মানিত হন।

 

২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭ সালে তিনি প্রয়াত হন।

 

।।তথ্য: সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This