Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ আন্তর্জাতিক অসামরিক বিমান পরিবহণ দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয় এবং গুরুত্ব।

আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল দিবসটি বিশ্বের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিমান চলাচল এবং আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহনের ভূমিকা সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বাড়াতে পালিত হয়।  দিবসটি আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের দক্ষতা, নিরাপত্তা এবং সহযোগিতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (ICAO) এর বিশেষ অবদানকেও স্বীকৃতি দেয়।  বৈশ্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিমান চলাচলের মূল্য এবং এর ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর এটি পালন করা হয়।  এই দিনে, আন্তর্জাতিক বিমান চালনা এবং এটি কীভাবে বিশ্বকে সংযুক্ত করে সেদিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়।  এটি অসংখ্য ঘটনা, কার্যক্রম, প্রেস রিলিজ, সেমিনার এবং বিমান চালনার উপর বক্তৃতা দিয়ে উদযাপিত হয়।

 

আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল দিবস ২০২৩: তারিখ এবং থিম—

বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল দিবস পালিত হবে। এ বছর উদযাপনের মূল প্রতিপাদ্য “অ্যাডভান্সিং ইনোভেশন ফর গ্লোবাল এভিয়েশন ডেভেলপমেন্ট” “Advancing Innovation for Global Aviation Development.”।  এই থিমটি কীভাবে উদ্ভাবন ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী বেসামরিক বিমান চলাচলকে রূপ দেবে এবং উন্নত করবে তার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।  এটি এভিয়েশন সেক্টরকে অগ্রসর ও উন্নত করার জন্য উদ্ভাবনী ধারণা এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি অন্বেষণ এবং বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি বোঝায়।  উদ্ভাবনের উপর ফোকাস বিমান চলাচলের নিরাপত্তা, দক্ষতা এবং স্থায়িত্ব উন্নত করার চলমান প্রচেষ্টার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

 

আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল দিবসের ইতিহাস—

৭ ডিসেম্বর ১৯৯৬ তারিখে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল দিবস ঘোষণা করা হয়। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (ICAO) 7 ডিসেম্বর ১৯৯৪ সালে বেসামরিক বিমান চলাচলের বিষয়ে বৈশ্বিক সহযোগিতা এবং অভিন্নতা উন্নীত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।  একই বছরে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক পরিষেবা ট্রানজিট চুক্তি উভয়ই স্বাক্ষরিত হয়।  ৫০ তম বার্ষিকীর সম্মানে, ICAO ১৯৯৪ সালে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল দিবস প্রতিষ্ঠা করে।

 

আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল দিবসের তাৎপর্য—

আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল দিবসের তাৎপর্য হল বেসামরিক বিমান চলাচলের মূল্য এবং বিশ্বের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির উপর এর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।  এটি কার্যকর, নিরাপদ এবং দক্ষ বিমান পরিবহনের জন্য বৈশ্বিক মান প্রতিষ্ঠা ও বজায় রাখার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক বিমান চলাচল সংস্থাগুলির ভূমিকা, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (ICAO)-এর ভূমিকা তুলে ধরার একটি সুযোগ৷  এই দিনটি কীভাবে বিমান পরিবহন বিশ্বকে সংযুক্ত করে এবং পরিবেশগত স্থায়িত্ব, নিরাপত্তা এবং বিমান চলাচলে নিরাপত্তার মতো সাধারণ সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য একত্রে কাজ করার জন্য দেশগুলির গুরুত্বের অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে।  এটি বাণিজ্য, পর্যটন, বৈশ্বিক সংযোগ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বিমান চলাচলের সুবিধা স্বীকার করে।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

 

 

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ভারতবর্ষের  সংবিধান নির্মাতা, ভারতরত্ন, বাবা সাহেব ডঃ ভীমরাও রামজি আম্বেদকরের প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

একজন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কারক হিসেবে আধুনিক ভারতে আম্বেদকরের প্রভাব লক্ষণীয় ছিলো। স্বাধীনতাত্তোর ভারতে তাঁর সামাজিক রাজনৈতিক চিন্তাধারা সমগ্র রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সম্মান অর্জন করে। তার যুগান্তকারী পদক্ষেপগুলো অনেকের জীবনেই প্রভাব ফেলে এবং আজকের ভারতে দলিতদের আর্থসামাজিক অবস্থার উত্তরণে আইনি এবং অন্যান্য সাহায্য প্রদানে সাহায্য করে। ভীমরাও রামজি আম্বেদকর (১৪ই এপ্রিল ১৮৯১ – ৬ই ডিসেম্বর ১৯৫৬), যিনি বাবাসাহেব আম্বেদকর নামেও পরিচিত, তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় ব্যবহারশাস্ত্রজ্ঞ (জ্যুরিস্ট), রাজনৈতিক নেতা, বৌদ্ধ আন্দোলনকারী, দার্শনিক, চিন্তাবিদ, নৃতত্ত্ববিদ, ঐতিহাসিক, সুবক্তা, বিশিষ্ট লেখক, অর্থনীতিবিদ, পণ্ডিত, সম্পাদক, রাষ্ট্রবিপ্লবী ও বৌদ্ধ পুনর্জাগরণবাদী।

 

তিনি ভারতের সংবিধানেরবখসড়া কার্যনির্বাহক সমিতির সভাপতিও ছিলেন। তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদী এবং ভারতের দলিত আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা। ইনি ভারতের সংবিধানের মুখ্য রচয়িতা । ২০১২ সালে হিস্ট্রি টি. ভি.১৮ আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে ভারতীয়দের ভোটের দ্বারা তিনি “শ্রেষ্ঠ ভারতীয়”ও নির্বাচিত হন।

ভীমরাও রামজি আম্বেদকর ভারতের গরীব “মহর”  পরিবারে (তখন অস্পৃশ্য জাতি হিসেবে গণ্য হত) জন্ম গ্রহণ করেন। আম্বেদকর সারাটা জীবন সামাজিক বৈষম্যতার , “চতুর্বর্ণ পদ্ধতি”-হিন্দু সমাজের চারটি বর্ণ এবং ভারতবর্ষের অস্পৃশ্য  প্রথার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গেছেন। তিনি বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিত হন এবং হাজারো অস্পৃশ্যদের থেরবাদী বৌদ্ধ ধর্ম  স্ফুলিঙ্গের মতো রূপান্তরিত করে সম্মানিত হয়েছিলেন। আম্বেদকরকে ১৯৯০ সালে মরণোত্তর  “ভারতরত্ন” – ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় উপাধি’তে ভূষিত করা হয়। বহু সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে, ভারতের মহাবিদ্যালয় শিক্ষা অর্জনে আম্বেদকর প্রথম “সমাজচ্যুত ব্যক্তি”  হিসেবে পরিণত হয়েছিলেন। অবশেষে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডন অর্থনীতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে ডিগ্রি (বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ উপাধি) লাভ করার পর, আম্বেদকর বিদ্বান ব্যক্তি হিসেবে সুনাম অর্জন করেন এবং কিছু বছর তিনি আইন চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন, পরে তিনি ভারতের অস্পৃশ্যদের সামাজিক অধিকার ও সামাজিক স্বাধীনতার উপর ওকালতির সময় সমসাময়িক সংবাদপত্র প্রকাশ করেছিলেন। কিছু ভারতীয় বৌদ্ধালম্বীদের দ্বারা তিনি “বোধিসত্ত্ব” (গৌতম বুদ্ধের পূর্ব জন্ম) উপাধিতে সম্মানিত হয়েছিলেন ,যদিও তিনি নিজেকে “বোধিসত্ত্ব” হিসেবে কখনো দাবি করেননি।

১৫ই আগস্ট ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার দিন, নব্য গঠিত কংগ্রেসশাসিত সরকার আম্বেদকরকে জাতির প্রথম আইন মন্ত্রী পদ অর্পণ করেন, যা তিনি সানন্দে গ্রহণ করেছিলেন। ২৯ই আগস্ট, আম্বেদকরকে সংবিধান খসড়া সমিতির সভাপতি করা হয়, যা স্বাধীন ভারতের নতুন সংবিধান রচনার উদ্দেশ্যে বিধানসভা কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়। আম্বেদকর তাঁর সহকর্মী ও সমসাময়িক পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে প্রচুর প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। এই কাজে আম্বেদকর প্রাচীন বৌদ্ধ ধর্মে সঙ্ঘের-চর্চা নিয়ে বৌদ্ধ ধর্মীয় গ্রন্থে অধিক পড়াশোনাই অনেক সহায়ক হিসেবে কাজ করেছিলো। ব্যালটের দ্বারা ভোট প্রদান, তর্ক-বিতর্কের ও অগ্রবর্তী নীতিমালা, করণীয় বিষয়সূচী, সভা-সমিতি ও ব্যবসায় সংক্রান্ত প্রস্তাবনা সমূহের ব্যবহার ইত্যাদি সংঘ চর্চা দ্বারা সমন্বয় সাধিত হয়। সংঘ চর্চা প্রাচীন ভারতের কিছু রাষ্ট্রীয় প্রজাতান্ত্রিক উপজাতিগোষ্ঠী যেমন শাক্যবংশ (Shakyas) ও লিচ্ছবিররা (Lichchavis) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। অতঃপর আম্বেদকর যদিও তার সাংবিধানিক অবয়ব তৈরিতে পশ্চিমা প্রণালীর ব্যবহার করেন, বস্তুত এর অনুপ্রেরণা ছিলো ভারতীয়, বাস্তবিকপক্ষে উপজাতীয়।
গ্রানভিলে অস্টিন আম্বেদকর কর্তৃক প্রণীত ভারতীয় সংবিধান খসড়াকে বর্ণনা দেন এভাবে “একনিষ্ঠ ও সর্বোত্তম সামাজিক নথি পত্র।”… ‘অধিকাংশ ভারতের সংবিধানের অধিকাংশ অনুচ্ছেদ স সামাজিক বিপ্লব এবং সামাজিক বিপ্লব পরিপোষণের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে। ” আম্বেদকর কর্তৃক প্রণীত ভারতীয় সংবিধানে সর্বাধিক অধিকারসুরক্ষা জনসাধারণের প্রতি প্রদান করা হয়েছে -যেমন ধর্মীয় স্বাধীনতা, অস্পৃশ্যতা বিলোপ এবং সব ধরনের বৈষম্য বিধিবহির্ভূতকরণ। আম্বেদকর নারীদের অধিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারের জন্য যুক্তি প্রদর্শন করেন। তিনি এতে বিধানসভার সমর্থন অর্জন করে সিডিউল কাস্টেসভুক্ত নারী সদস্যদের বা সিডিউল উপজাতীয়দের জন্য বেসরকারি খাতে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় কর্মক্ষেত্রে চাকরির নিশ্চয়তা প্রদান করে কোটার ব্যবস্থা করেন। ভারতের আইন প্রণেতারা আশা করেন এর মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক বিভাজন দূর হবে ও ভারতীয় অস্পৃশ্যরা অধিক সুযোগ-সুবিধা পাবে।
১৯৪৯ সালের ২৬ই নভেম্বর গণ-পরিষদ কর্তৃক সংবিধানটি গৃহীত হয়। আম্বেদকর ১৯৫১ সালে হিন্দু কোড বিল খসড়াটি সংসদে পড়ে থাকার কারণে।(stalling in parliament) রাখার কারণে মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। হিন্দু কোড পৈতৃক সম্পত্তি, বিবাহ ও অর্থনীতি আইনের আওতায় লিঙ্গসমতার নীতি প্রতিষ্ঠা করে। প্রধানমন্ত্রী নেহেরু, মন্ত্রিসভা ও অনেক কংগ্রেস নেতারা একে সমর্থন জানালেও বেশিরভাগ সাংসদ এর সমালোচনা করেন। আম্বেদকর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১৯৫২’র নির্বাচনে লোকসভায় (lower house of parliament) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, কিন্তু হেরে যান। তাকে পরে রাজ্যসভার সাংসদ পদে সমাসীন করা হয়। ১৯৫২ সালের মার্চ মাসে এবং মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি এই সদস্যপদে বহাল ছিলেন।

আম্বেদকরের জন্য তাঁর দিল্লীসভা ২৬ আলীপুর রাস্তায় একটি স্মারক স্থাপিত হয়। তাঁর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করে আম্বেদকর জয়ন্তী বা ভীম জয়ন্তী হিসেবে পালিত হয়। তাঁকে মরণোত্তর ১৯৯০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ উপাধি “ভারত রত্ন” দেয়া হয়েছিল। তাঁর সম্মানে বহু সরকারি প্রতিষ্টানের নামকরণ করা হয়।

১৯৪৮ সাল থেকে আম্বেদকর ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন। শারীরিক অবনতির জন্য ১৯৫৪ সালে জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন ও একপর্যায়ে তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন ।রাজনৈতিক কারণে তিনি ক্রমশ অনেক তিক্তবিরক্ত হয়ে উঠেন, যা তাঁর স্বাস্থ্যের কাল হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৫৫ সালের পুরোটা জুড়ে তিনি প্রচুর কাজ করার ফলে তাঁর শারীরিক অবস্থার অধিকতর অবনতি হয়। টানা তিন দিন “বুদ্ধ ও তাঁর ধর্ম” বইটির সর্বশেষ পাণ্ডুলিপি তৈরির পর তিনি ৬ই ডিসেম্বর ১৯৫৬ সালে তার দিল্লীর নিজ বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় চির নিদ্রায় শায়িত হন।

 

।।তথ্য সুত্রঃ উইকিপিডিয়া  ও ইন্টারনেট থেকে সংকলিত ।।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

বিপ্লবী দীনেশচন্দ্র গুপ্ত – জন্ম দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়। এই অন্দোলনে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে দীনেশচন্দ্র গুপ্ত   প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।  দীনেশচন্দ্র গুপ্ত  ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।

 

দীনেশচন্দ্র গুপ্ত ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী একজন স্বনামধন্য বাঙালি বিপ্লবী। তিনি দীনেশ গুপ্ত নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি ঢাকা ও মেদিনীপুরে বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। মেদিনীপুরে তাঁর সংগঠন পরপর তিন জন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে হত্যা করেছিল।

 

বিপ্লবী দীনেশ গুপ্তের জন্ম হয় ১৯১১ সালের ৬ ডিসেম্বর (বাংলা ১৩১৮ সালের ২০ অগ্রহায়ণ) তদনীন্তন ঢাকা জেলার (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মুন্সীগঞ্জ জেলা) যশোলঙে। তাঁর পিতার নাম সতীশচন্দ্র গুপ্ত ও মায়ের নাম বিনোদিনী দেবী। দীনেশ গুপ্তের ডাকনাম ছিল নসু।চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে দীনেশ ছিলেন পিতামাতার তৃতীয় সন্তান। সতীশচন্দ্র ছিলেন ডাক বিভাগের কর্মচারী। চাকরির সূত্রে তিনি কিছুকাল গৌরীপুরে অবস্থান করেন। গৌরীপুরের পাঠশালাতেই দীনেশের শিক্ষারম্ভ। পরে নয় বছর বয়সে ভর্তি হন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে। প্রথম দিকে দীনেশ ঢাকার গ্যান্ডারিয়া অঞ্চলে দাদুর বাড়িতে বাস করতেন, পরে উয়াড়িতে পৈত্রিক বাসভবনে চলে আসেন। বাল্যকাল থেকেই দীনেশ ছিলেন নির্ভীক, বেপরোয়া ও বাগ্মী। এই সময় থেকেই তাঁর মনে স্বদেশ চেতনা ও ব্রিটিশ বিরোধিতার আদর্শ সঞ্চারিত হয়েছিল।

 

এলাকায় তিনি ‘নসু’ নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন। দীনেশচন্দ্র ঢাকা কলেজে অধ্যয়ন করেন।
সাহসিকতাপূর্ণ কর্মতৎপরতার জন্য দীনেশচন্দ্র বিপ্লবী সংগঠন বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স (বিভি) বাহিনীর সাধারণ সদস্য থেকে ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন। ঢাকা জেলায় এবং পরে মেদিনীপুরে বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেন। এ সংগঠনের প্রভাবেই বিপ্লবী দল মেদিনীপুরে একে একে তিন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সমর্থ হয়।

১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর, বিনয় বোসের নেতৃত্বে বাদল গুপ্ত এবং দীনেশ চন্দ্র কলকাতা রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করে, কারা বিভাগের অত্যাচারী ইন্সপেক্টর-জেনারেল সিম্পসনকে হত্যা করে এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ ইউরোপীয় কর্মচারীকে গুরুতরভাবে আহত করে।  এ ঘটনায় গ্রেফতার এড়াতে এই বিপ্লবী বিষ পান করে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।  বিনয় ও বাদল মারা যায় এবং দীনেশ গুরুতর আহত হয় এবং তাকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টার পর হাসপাতালে আনা হয়।  কিন্তু দীনেশের দেশপ্রেম এতটাই গভীর ছিল যে অনেক চেষ্টা করেও সরকার তার কাছ থেকে কোনো স্বীকারোক্তি আদায় করতে পারেনি।
সরকার বিরোধী কার্যকলাপ ও হত্যার অভিযোগে অবশেষে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।  মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায়, নির্ভীক দীনেশ জেলে বসে কিছু মূল্যবান চিঠি লিখেছিলেন, যাতে বিপ্লবীদের বীরত্বগাথা, আত্মত্যাগের গৌরব এবং গভীর দেশপ্রেম প্রকাশ করা হয়েছিল।  চিঠিগুলো সমাজে শ্রেষ্ঠ সাহিত্য হিসেবে স্বীকৃত ও সমাদৃত।

 

 

 

১৯৩১ সালের ৭ জুলাই মাত্র ১৯ বছর বয়সে আলিপুর জেলে তাঁর ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

 

বাংলাসহ ভারতের অন্যান্য অংশে বিনয়, বাদল এবং দিনেশকে শহীদ হিসেবে সম্মান করা হয়। পরবর্তীকালে কলকাতার প্রসিদ্ধ লালদীঘি ময়দান বিনয়-বাদল-দীনেশ এ তিন নবীন বীরের স্মরণে উৎসর্গ করা হয়, যা সংক্ষেপে ‘বিবাদী বাগ’ নামে পরিচিত।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

কালজয়ী গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার-এর জন্ম দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি ।

গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার বাংলা আধুনিক ও চলচ্চিত্র সঙ্গীতের একজন বিশিষ্ট গীতিকার ও সুরকার।  বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা চলচ্চিত্র ও আধুনিক সঙ্গীতের জগতকে যারা উষ্ণ রেখেছেন তাদের মধ্যে তিনি একজন।  গান রচনায় তাঁর বিশেষত্ব শব্দ চয়ন।  মান্না দের ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ গানটি 2004 সালের বিবিসি জরিপে সর্বকালের সেরা 20টি বাংলা গানের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

 

জন্ম —

 

গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ১৯২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বর্তমান পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার গোপালনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।  বাচ্চু ছিল তার ডাকনাম।  তাঁর পিতা গিরিজাপ্রসন্ন মজুমদার ছিলেন একজন বিখ্যাত উদ্ভিদবিদ।

 

তাঁর জনপ্রিয় কিছু গান—

 

তাঁর কিছু গান আজও মানুষের মুখে মুখে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। যেমন – অলির কথা শুনে বকুল হাসে, এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে, গানে মোর ইন্দ্রধনু, মাগো, ভাবনা কেন, আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে, ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে, এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়, এ কী বন্ধনে জড়ালে গো বন্ধু, এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে না তো মন, কেন দূরে থাকো শুধু আড়াল রাখো কে তুমি কে তুমি  আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা, কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আমায় ডাকো, এই পথ যদি না শেষ হয়, প্রেম একবার এসেছিল নীরবে, এমন দিন আসতে পারে, আমি যামিনী তুমি শশী হে, কী আশায় বাঁধি খেলাঘর, তোমার সমাধি ফুলে ফুলে ঢাকা, ও মালিক সারাজীবন কাঁদালে, শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রণি… বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ, নীড় ছোট আকাশ তো বড়, পথের ক্লান্তি ভুলে, তুমি না হয় রহিতে কাছে, আমার গানের স্বরলিপি প্রভৃতি।

 

পুরস্কার ও সম্মাননা—-

 

মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ, ২০১২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে “মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা” প্রদান করে।

 

মৃত্যু—

 

গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ১৯৮৬ সালের ২০ আগস্ট কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

 

 

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

প্রথিতযশা রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী, পূরবী মুখোপাধ্যায় – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

পূরবী মুখোপাধ্যায় ওরফে পূরবী মুখোপাধ্যায় একজন ভারতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত গায়ক। পূরবী ছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীতের অন্যতম প্রবক্তা।  কিংবদন্তি দেবব্রত বিশ্বাসের একজন আধিকারিক, পূরবী পরে বিশ্বভারতীতে সঙ্গীত শিখিয়েছিলেন।

 

পূরবী মুখার্জি একজন ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় বাঙালি রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন।  তিনি পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর কৃতিত্বের জন্য তাঁর বেশ কয়েকটি অ্যালবাম ছিল এবং অল ইন্ডিয়া রেডিওর কলকাতা স্টেশনে সবচেয়ে বেশি শোনা গায়কদের একজন ছিলেন।  রবীন্দ্রসঙ্গীত, যা ঠাকুরের গান নামেও পরিচিত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ও সুর করা গান।  ঠাকুর প্রায় ২২৩০টি গানের সাথে তাঁর কৃতিত্বের জন্য একজন দুর্দান্ত সুরকার ছিলেন।  ভারত ও বাংলাদেশে জনপ্রিয় বাংলার সঙ্গীতে গানগুলোর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে।  এটি গান করার সময় এর স্বতন্ত্র পরিবেশন দ্বারা চিহ্নিত করা হয় যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অলংকরণ যেমন মেন্দ, মুড়কি ইত্যাদি রয়েছে এবং এটি রোমান্টিকতার অভিব্যক্তিতে পূর্ণ।  সঙ্গীতটি বেশিরভাগই হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং বাংলার লোক সঙ্গীতের উপর ভিত্তি করে।

 

 

রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়াও তিনি অন্যান্য সঙ্গীতজ্ঞদের লেখা গানও গেয়েছেন। তাঁর সঙ্গীত গুরু ছিলেন শান্তিনিকেতনের কিংবদন্তি শিল্পী দেবব্রত বিশ্বাস।  কলকাতায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গুরুর সঙ্গে দ্বৈত সঙ্গীত পরিবেশন করে খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি।  পরে তিনি বিশ্বভারতীর একজন পরীক্ষক হিসেবেও দক্ষতার সাথে কাজ করেন।  তিনি আকাশবাণী ও দূরদর্শনে নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন।  অসংখ্য গান গেয়েছেন তিনি।  তার অনেক রেকর্ড (অ্যালবাম) দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করেছে।

 

 

পূরবী মুখোপাধ্যায় -এর অন্যান্য কিছু নিবেদন–

 

আজি মেঘ কেটে,

আমার মন বলে,

আমি তোমারি মাটির,

একলা ব’সে একে,

ঝড়ে যায় উড়ে,

বড়ো বেদনার মতো,

সখী, প্রতিদিন হায়——।

 

 

৪ ডিসেম্বর, ২০১৭-এ ৮৩ বছর বয়সে নিজের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রথিতযশা এই রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।  তাঁর মৃত্যুতে রবীন্দ্রসঙ্গীত জগতে আরও এক যুগাবসান ঘটে। কিংবদন্তী এই সঙ্গীত শিলপীর প্রয়াণ দিবসে জানাই শ্রদ্ধঞ্জলি।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস কি, কেন এই দিনটি বেছে নেওয়া হয়েছে।

প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বরকে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে পালন করা হয়।১৯৯২ সাল থেকে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে।
আজ ৩ ডিসেম্বর। শারীরিকভাবে অসুস্থ মানুষদের জন্য এই দিনটি উৎসর্গ করা হয়। এই দিনটিতে সেই সকল মানুষকে সম্মাননা জানান হয়, যারা শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কাছে হার না মেনে লড়াই করে চলেছেন। মনের জোরে জয় করেছেন একাধিক লড়াই। আজ সেই সকল সাহসী ব্যক্তিদের সম্মান জানানোর পালা। শারীরিকভাবে অসম্পূর্ন মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগীতা প্রদর্শন ও তাদের কর্মকান্ডের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যেই এই দিবসটির সূচনা।

ইতিহাস—

 

বিশ্বজুড়ে প্রতিবন্ধী দিবসের অনুগামিতার পিছনে আছে এক ঘটনাবহুল জীবনস্মৃতি। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে বেলজিয়ামে এক সাংঘাতিক খনি দুর্ঘটনায় বহু মানুষ মারা যান। আহত পাঁচ সহস্রাধিক ব্যক্তি চিরজীবনের মতো প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন। তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। তাদের প্রতি সহমর্মিতায় ও পরহিতপরায়ণতায় বেশ কিছু সামাজিক সংস্থা চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের কাজে স্বতঃপ্রবৃত্ত ভাবে এগিয়ে আসে। এর ঠিক পরের বছর জুরিখে বিশ্বের বহু সংগঠন সম্মিলিত ভাবে আন্তর্দেশীয় স্তরে এক বিশাল সম্মেলন করেন। সেখান থেকেই প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে বিস্তারিত সব তথ্যের হদিশ মেলে। সেখানে সর্বসম্মতভাবে প্রতিবন্ধী কল্যাণে বেশকিছু প্রস্তাব ও কর্মসূচি গৃহীত হয়। খনি দুর্ঘটনায় আহত বিপন্ন প্রতিবন্ধীদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস পালন করতে আহ্বান জানানো হয়। সেই থেকেই কালক্রমে সারা পৃথিবীর প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর দিন হয়ে উঠেছে।

অনেক সময় সব পেয়েও তুচ্ছ কিছু না পাওয়ার জন্য অনেকেই দুঃখ করতে থাকেন। পরিশ্রমের পর পরীক্ষায় ফল খারাপ হলে, উচ্চ শিক্ষায় সুযোগ না পেলে, চাকরি পেতে সমস্যা হলে কিংবা পরিবারের কোনও অশান্তি আমাদের কাছে সব না পাওয়ার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সামান্য জিনিসের জন্য অনেকেই ভেঙে পড়ি। আবার, বহুজন তো না পাওয়ার জন্য আত্মহত্যাপ পথ বেছে নেন। প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতায় এমন বহু আত্মহত্যার খবর মেনে। কিন্তু, সত্যিই যারা কিছু পায়নি, জন্মেছেন অম্পূর্ণ হয়ে, তাদের কথা ভেবে দেখেছেন। প্রতি শহরে এমন শয় শয় মানুষ আছেন, যারা শারীরিক অসম্পূর্ণতা নিয়ে জন্ম নিয়েছেন। এমন কিছু প্রতিবন্ধকতা তাদের শরীরে আছে, যা কোনও দিনই ঠিক করা সম্ভব নয়। সব জেনেও সেই মানুষগুলো মনের জোরে লড়ে চলেছেন। আসুন তাদের সম্মান জানাই। তাদের লড়াইকে কুর্নিশ করি।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও বিভিন্ন ওয়েবপেজ।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

দেবানন্দ : ভারতের চিরসবুজ যুব অভিনেতা – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।

দেব আনন্দ, বলিউডের চিরসবুজ অভিনেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।  তাঁর পুরো নাম ধরম দেবদত্ত পিশোরিমল আনন্দ। জন্মঃ ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯২৩। তিনি ছিলেন একজন তুখোড় নায়ক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চলচ্চিত্র পরিচালক।  ১৯৫ এবং ১৯৬০ এর দশকে, দেব আনন্দ হিন্দিভাষী তরুণীদের কাছে খুব জনপ্রিয় ছিলেন।  তাঁকে ভারতের গ্রেগরি পেক বলা হতো।  দেব আনন্দ ১৯৪৬ সালে ‘হাম এক হ্যায়’ সিনেমা দিয়ে বলিউড জগতে প্রবেশ করেন।  ১৯৪৯ সালে, তিনি নবকেতন ফিল্মস নামে একটি ফিল্ম স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন।  তার বন্ধু গুরু দত্ত পরিচালিত জিদ্দি ছিল তাঁর প্রথম বড় সাফল্য।

 

দেব আনন্দের সময়ে কোনও ভিএফএক্স প্রযুক্তি ছিল না বা দেব আনন্দ কখনও জিমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘামতেন না এবং তখনকার ক্যামেরার মান আজকের মতো উন্নত ছিল না, তবুও সময়ের পরিবর্তন তার ভাঁজ চিরসবুজ রাখতে পারেনি। দেব আনন্দ।।

‘জানি মেরা নাম’ ছবির সময় দেব সাহেবের বয়স ছিল ৪৭ বছর এবং সেই সময় হেমা মালিনীর বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর।’ফির ভি পাল ভর কে লিয়ে’ গানটি দেখার সময় এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয় না যে। নায়ক আর নায়িকার মধ্যে ২৫ বছরের ব্যবধান আছে।

হীরা পান্না ছবির সময় দেব সাহেবের বয়স ছিল ৫০ বছর, সেই ছবির সময় জিনাত আমানের বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর, তবুও দেব সাহেব আমাদের অনুভব করতে দেননি যে নায়ক-নায়িকার মধ্যে ২৮ বছরের ব্যবধান রয়েছে। …এই চিরসবুজ যুবক।এর কারণে দেবানন্দকে ভারতে চিরসবুজ যুব অভিনেতা বলা হয়।

দেব সাহেবের আরেকটি বিশেষ কথা আছে, তিনি যখন হাঁটতেন তখন এত দ্রুত হাঁটতেন যে তাঁর সঙ্গে থাকা ব্যক্তিকে তাঁর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য দৌড়াতে হতো… প্রতিদিন সকালে হাঁটতেন… খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতেন, যোগাসন ও প্রাণায়াম করা, সর্বদা ক্ষুধার চেয়ে কম খাওয়া, অ্যালকোহল ও সিগারেট থেকে দূরে থাকা… এইসব অভ্যাসের কারণে তিনি দীর্ঘকাল তরুণ ছিলেন।

তাঁর কিছু স্মরণীয় চলচ্চিত্র—
কালাপানি, লাভ ম্যারেজ, কালা বাজার, হাম দোনো, তেরে ঘর কে সামনে, গাইড, জুয়েল থিফ, প্রেম পূজারী, জনি মেরা নাম, গ্যাম্বলার, হরে রাম হরে কৃষ্ণ, হীরা পান্না, দেশ পরদেশ , আওয়াল নাম্বার, জিদ্দি, বাজি, সানাম, ট্যাক্সি ড্রাইভার, মুনিমজী, সিআইডি, পেয়িং গেস্ট, সোলভা সাল, পণ ইত্যাদি।

 

দেব আনন্দ ৮৮ বছর বয়সে মারা যান। তিনি ৩ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে লন্ডনের একটি হোটেলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। যখন তিনি মারা যান, তখনও তার চুলের স্টাইল ২০ বছর বয়সী ছেলের মতো ছিল… আজ যদি তিনি বেঁচে থাকতেন, এখনও তরুণ থাকার চেষ্টা করতেন।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ক্ষুদিরাম বসু , ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক অগ্নি পুরুষ।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে ক্ষুদিরাম বসু  প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন। ক্ষুদিরাম বসু ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।

 

 

ক্ষুদিরাম বসু, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অমর নাম। দেশের স্বাধীনতার জন্য ফাঁসির মঞ্চে যারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে প্রথম বিপ্লবী ছিলেন তিনি। ভারতবর্ষকে স্বাধীন করতে ক্ষুদিরাম বসুর এই আত্মত্যাগ আজও অনুপ্রেরণা যোগায় এবং উৎসাহিত করে দেশপ্রেমের অগ্নিমন্ত্রে শপথ নিতে। এখন জেনে নেব ক্ষুদিরাম বসু সম্পর্কে কিছু কথা।

ক্ষুদিরাম বসু ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত মেদিনীপুর শহরের কাছাকাছি (বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) কেশপুর থানার অন্তর্গত মৌবনী (হাবিবপুর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ত্রৈলোক্যনাথ বসু ছিলেন নাড়াজোলের তহসিলদার। তার মার নাম লক্ষ্মীপ্রিয় দেবী। তিন কন্যার পর তিনি তার মায়ের চতুর্থ সন্তান। তার দুই পুত্র অকালে মৃত্যুবরণ করেন। অপর পুত্রের মৃত্যুর আশঙ্কায় তিনি তখনকার সমাজের নিয়ম অনুযায়ী তার পুত্রকে তার বড়ো দিদির কাছে তিন মুঠো খুদের (চালের খুদ) বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। খুদের বিনিময়ে কেনা হয়েছিল বলে শিশুটির নাম পরবর্তীকালে ক্ষুদিরাম রাখা হয়।ক্ষুদিরামের বয়স যখন মাত্র পাঁচ বছর তখন তিনি তার মাকে হারান।45

এক বছর পর তার পিতার মৃত্যু হয়। তখন তার বড়ো দিদি অপরূপা তাকে দাসপুর থানার এক গ্রামে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। অপরূপার স্বামী অমৃতলাল রায় ক্ষুদিরামকে তমলুকের হ্যামিল্টন হাই স্কুলএ ভর্তি করে দেন।
১৯০২ এবং ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে শ্রী অরবিন্দ এবং সিস্টার-নিবেদিতা মেদিনীপুর ভ্রমণ করেন। তারা স্বাধীনতার জন্যে জনসমক্ষে ধারাবাহিক বক্তব্য রাখেন এবং বিপ্লবী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে গোপন অধিবেশন করেন, তখন কিশোর ছাত্র ক্ষুদিরাম এই সমস্ত বিপ্লবী আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। স্পষ্টভাবেই তিনি অনুশীলন সমিতিতে যোগদান করেন এবং কলকাতায় বারীন্দ্র কুমার ঘোষের কর্মতৎপরতার সংস্পর্শে আসেন। তিনি ১৫ বছর বয়সেই অনুশীলন সমিতির একজন স্বেচ্ছাসেবী হয়ে ওঠেন এবং ভারতে ব্রিটিশ শাসন বিরোধী পুস্তিকা বিতরণের অপরাধে গ্রেপ্তার হন। ১৬ বছর বয়সে ক্ষুদিরাম থানার কাছে বোমা মজুত করতে থাকেন এবং সরকারি আধিকারিকদেরকে আক্রমণের লক্ষ্য স্থির করেন।
১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে ক্ষুদিরাম তার বোন অপরূপার স্বামী অমৃতলাল রায়ের সঙ্গে তমলুক শহর থেকে মেদিনীপুরে চলে আসেন।ক্ষুদিরাম বসু তমলুকের হ্যামিল্টন স্কুল এবং মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষালাভ করেন।
মেদিনীপুরে তার বিপ্লবী জীবনের অভিষেক। তিনি বিপ্লবীদের একটি নবগঠিত আখড়ায় যোগ দেন। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু এবং রাজনারায়ণ বসুর প্রভাবে মেদিনীপুরে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠেছিল। সেই সংগঠনের নেতা ছিলেন হেমচন্দ্র দাস কানুনগো এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন হেমচন্দ্র দাসের সহকারী। এটি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ব্রিটিশবিরোধীদের দ্বারা পরিচালিত হতো। অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই ক্ষুদিরাম তার গুণাবলীর জন্য সবার চোখে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন। ক্ষুদিরাম সত্যেন্দ্রনাথের সাহায্যে বিপ্লবী দলভুক্ত হয়ে এখানে আশ্রয় পান। ক্ষুদিরাম তারই নির্দেশে ‘সোনার বাংলা’ শীর্ষক বিপ্লবাত্মক ইশতেহার বিলি করে গ্রেপ্তার হন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে কাঁসাই নদীর বন্যার সময়ে রণপার সাহায্যে ত্রাণকাজ চালান। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে বারীন্দ্র কুমার ঘোষ তার সহযোগী হেমচন্দ্র কানুনগোকে প্যারিসে নির্বাসনে থাকা একজন রাশিয়ান নিকোলাস সাফ্রানস্কি-এর কাছ থেকে বোমা তৈরির কায়দা শেখার জন্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
কিংসফোর্ডকে গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টা
অনুশীলন সমিতি কিংসফোর্ডকে হত্যা করার প্রচেষ্টা জারি রেখেছিল। এপ্রিলে দুই সদস্যের একটা পরিদর্শক দল মুজাফফরপুর সফর করে, যাতে যুক্ত ছিলেন প্রফুল্ল চাকী। তাদের ফিরে আসায় বোমা দিয়েছিলেন হেমচন্দ্র, যেগুলো বানানো হয়ছিল ৬ আউন্স ডিনামাইট, একটা বিস্ফোরক এবং কালো পাউডার ফিউজ। প্রফুল্ল চাকি মুজাফফরপুরে ফিরেছিলেন একটা নতুন ছেলেকে নিয়ে, যার নাম ক্ষুদিরাম বসু।
অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্র ঘোষ এবং তাদের সহযোগীদের কাজকর্মে পুলিশের সন্দেহ হতে থাকে।কলকাতা পুলিশ কিংসফোর্ডের জীবন বাঁচানোর জন্যে সচেতন হয়ে ওঠে। কমিশনার এফ এল হলিডে মুজাফফরপুর পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্টের উপেক্ষার বদলে সতর্ক হয়েছিলেন। যাইহোক, চারজন লোককে ম্যাজিস্ট্রেটের বাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্যে ব্যবস্থা করা হয়।ইতিমধ্যে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি নতুন নাম ধারণ করে যথাক্রমে হরেণ সরকার ও দীনেশ চন্দ্র রায় হয়েছেন, এবং কিশোরীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত এক দাতব্য সরাইখানায় (ধর্মশালা) তারা বাসা নেন। তাদের অজ্ঞাতবাসের দিনগুলোতে ওই বিপ্লবীদ্বয় তাদের লক্ষ্যের কার্যকলাপ এবং দৈনন্দিন রুটিনের ওপর নজরদারি করতেন। দুই বিপ্লবী সফলভাবে তিন সপ্তাহের ওপর তাদের পরিচয় গোপন রাখতে পেরেছিল। মুজাফফরপুরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট আর্মস্ট্রঙের কাছ থেকে একটা চিঠি নিয়ে সিআইডি অফিসার কলকাতায় ফিরে এসেছিল, যাতে বলা হয়েছিল যে, বিপ্লবীদ্বয় ওখানে পৌঁছায়নি।[১৫] ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় ক্ষুদিরাম এবং প্রফুল্ল তাদের পরিকল্পনা কার্যকর করার জন্যে জায়গামতো হাজির হয়েছিল। স্কুল ছাত্রের ভান করে মুজাফফরপুর পার্কে তারা সমীক্ষা করেছিলেন যে, এটা ব্রিটিশ ক্লাবের উলটো দিকে, যেখানে কিংসফোর্ড ঘনঘন আসেন। একজন কনস্টেবল তাদের দেখেছিল।
মুজাফফরপুরে কিংসফোর্ডকে গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টা
ভাগ্য ভালোর দিনে, প্রিঙ্গল কেনেডি নামে একজন ব্রিটিশ ব্যারিস্টারের মেয়ে এবং স্ত্রীর সঙ্গে কিংসফোর্ড এবং তার স্ত্রী ব্রিজ খেলছিলেন। তারা রাত ৮.৩০ নাগাদ বাড়ি ফিরতে মনস্থ করেন। কিংসফোর্ড এবং তার স্ত্রী একটা গাড়িতে ছিলেন যেটা কেনেডি এবং তার পরিবারের গাড়ির মতোই দেখতে ছিল। কেনেডি মহিলাগণ কিংসফোর্ডের বাড়ির চত্বর থেকেই যাচ্ছিলেন। যখন তাদের গাড়ি ওই চত্বরের পূর্ব ফটকে পৌঁছায়, ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল গাড়িটার দিকে দৌড়ে যান এবং গাড়িতে বোমাগুলো ছোড়েন। একট প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে এবং গাড়িটা সঙ্গে সঙ্গে কিংসফোর্ডের বাড়িতে আনা হয়। গাড়িটা ভেঙে গিয়েছিল এবং কেনেডি মহিলাগণ ভীষণভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। মিস কেনেডি এক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যান এবং মিসেস কেনেডি গুরুতর আঘাতের ফলে ২ মে তারিখে প্রয়াত হন।
ক্ষুদিরাম এবং প্রফুল্ল নিজেদের রাস্তায় পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন। মধ্যরাতের মধ্যে সারা শহর ঘটনাটা জেনে গিয়েছিল, এবং খুব সকাল থেকেই সমস্ত রেলস্টেশনে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল যাতে প্রত্যেক যাত্রীর ওপর নজর রাখা যায়। শিমুরিঘাট রেল স্টেশনে প্রফুল্ল যখন জল খাওয়ার জন্যে ট্রেন থেকে নামেন, তখন মিস্টার ব্যানার্জি মুজফফরপুর থানায় একটা টেলিগ্রাম পাঠান। মোকামাঘাট রেল স্টেশনে প্রফুল্লকে পাকড়াও করার চেষ্টা করেন মিস্টার ব্যানার্জি। প্রফুল্ল তার কাছে থাকা রিভলভার দিয়ে নিজের মতো লড়াই করার চেষ্টা করেন, কিন্তু শেষে যখন দেখেন যে, রিভলভারে একটামাত্র গুলি আছে, তখন তিনি নিজের মুখের মধ্যে গুলি করেন।
হাতে হাতকড়ি লাগানো ক্ষুদিরামকে পয়লা মে মুজফফরপুর থেকে আনা হয়। পুরো শহর থানায় ভিড় করেছিল একদল সশস্ত্র পুলিশকর্মীর ঘিরে থাকা একটা কিশোর ছেলেকে শুধু একপলক দেখার জন্যে।
দুজন মহিলাকে হত্যা করার জন্যে তার বিচার হয় এবং চূড়ান্তভাবে তার ফাঁসির আদেশ হয়।
ফাঁসি হওয়ার সময় ক্ষুদিরামের বয়স ছিল ১৮ বছর, ৭ মাস এবং ১১ দিন, যেটা তাকে ভারতের কনিষ্ঠতম ভারতের বিপ্লবী অভিধায় অভিষিক্ত করেছিল।

তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ইন্দ্রলাল রায়, প্রথম ভারতীয় বাঙালি বিমান চালক যিনি ১৭০ ঘণ্টা বিমান চালানোর রেকর্ড করেছিলেন।।

ইন্দ্রলাল রায় – প্রথম ভারতীয় বাঙালি বৈমানিক এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একমাত্র ভারতীয় বৈমানিক।  তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রদের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন এবং মারা গিয়েছিলেন। তিনি ফ্রান্সের পাশে জার্মানির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সামরিক অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন এবং যুদ্ধবিমান ওড়ানোর দক্ষতা দেখিয়েছিলেন।

 

 

ইন্দ্রলাল রায় ১৮৯৮ সালের ২ ডিসেম্বর ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।  তাঁর পিতা পিয়ারিলাল রায় ছিলেন বরিশাল জেলার লাকুটিয়া এলাকার জমিদার ও আইনজীবী এবং মা ললিতা রায় ছিলেন একজন নারী ভোটাধিকার কর্মী।  ভাই পরেশলাল রায় একজন বক্সার ছিলেন।  শিক্ষাজীবনে তিনি বেশ কিছু বৃত্তি লাভ করেন।  বিমানচালক হিসেবে যোগদানের আগে তিনি সর্বশেষ ব্যালিওল স্কলারশিপ পেয়েছিলেন।  এই বৃত্তি নিয়ে তিনি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান।  তিনি ১৯১১ সাল পর্যন্ত কেনিংস্টনের সেন্ট পলস স্কুলে পড়াশোনা করেন। তাঁর প্রায় সমস্ত প্রাথমিক শিক্ষা ইংল্যান্ডে ছিল।
এপ্রিল ১৯১৭ সালে তিনি রয়্যাল ফ্লাইং কর্পসে যোগ দেন।  তিনি এই ফ্লাইং কর্পস থেকে ১৯১৭ সালের ৫ জুলাই সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসাবে কমিশন লাভ করেন।  এক সপ্তাহের মধ্যে, ভেন্ড্রোম প্রশিক্ষণ শুরু করে।  তারপর তিনি টার্নবারিতে গানারি অধ্যয়ন করেন।  অক্টোবরের শেষে বিমান বাহিনীর ৫৬ স্কোয়াড্রনে যোগ দেন।

 

কমিশনের পরপরই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।  ১৯১৭ সালের ডিসেম্বরে, ইন্দ্রলাল ফ্রান্সের পক্ষে জার্মানির বিরুদ্ধে সামরিক বিমান অভিযানে অংশ নেন।  এই অপারেশন চলাকালীন জার্মান বিমান দ্বারা নো ম্যানস ল্যান্ডে তার বিমানটি গুলি করে নামিয়ে দেওয়া হয়।  তিন দিন পর ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একটি দল তাঁকে উদ্ধার করে ফ্রান্সের একটি ব্রিটিশ সামরিক হাসপাতালে পাঠায়।  সামরিক হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে মর্গে পাঠান।  পরে তাঁর জ্ঞান ফিরে আসে।  সুস্থ হওয়ার পর তিনি আবার বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেন এবং নিয়মিত উড়তে শুরু করেন।

 

রেকর্ড–

 

তিনিই প্রথম ভারতীয় বিমান চালক, যিনি ১৭০ ঘণ্টা বিমান চালানোর রেকর্ড করেছিলেন।

 

সম্মাননা—

 

কলকাতার ভবানীপুরে ‘ইন্দ্র রায় রোড’ রাস্তাটির নাম তাঁর নামানুসারে করা হয়।

ইংল্যান্ড সরকার তাকে মরণোত্তর বিশিষ্ট উড্ডীয় ক্রস (Distinguished Flying Cross – ডিএফসি) সম্মানে ভূষিত করে।

 

মৃত্যু–

 

৬ জুলাই ১৯১৮ থেকে তিনি বিমান হামলা শুরু করেন এবং ৯ টি জার্মান বিমান ধ্বংস করে নিজেকে আলাদা করেন।  ১৮ জুলাই ১৯১৮, তারিখে তাঁর বিমান আবার গুলি করে নামানো হয় এবং তিনি মারা যান।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

মূল্যবান মনুষ্য জীবন ও বৈরাগ্য, ত্যাগ : স্বামী আত্মভোলানন্দ।

ওঁ নমঃ শ্রী ভগবতে প্রণবায়—

***বৈরাগ্য হল সংস্কৃত (সংস্কৃত: वैराग्य) শব্দ, বিশেষ্য পদ, যা হিন্দু  দর্শনে ব্যবহৃত হয় যা মোটামুটিভাবে বৈরাগ্য, বিচ্ছিন্নতা বা ত্যাগ, বিশেষ করে অস্থায়ী বস্তু জগতের বেদনা এবং আনন্দ থেকে ত্যাগ। বৈরাগ্য  হল সংসারে বা বিষয়ভোগে অনাসক্তি, ঔদাসীন্য, বাসনা রহিত। ত্যাগ কি ? ত্যাগ হল সংস্কৃত শব্দ (সংস্কৃত: त्याग) যার অর্থ উদারতায় ত্যাগ করা, পরিত্যাগ করা, ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী ত্যাগ হল বর্জন, পরিহার, বিসর্জন,  নিক্ষেপ, বৈরাগ্য ও নিরাসক্তি। এটি মোক্ষ অর্জনের একটি উপায়।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জুনকে বৈরাগ্যের জ্ঞানও দেন । সেখানে তিনি অর্জুনকে বলেন,  যদি এই মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাও, তাহলে  অভ্যাস ও বৈরাগ্য— এই দুই তলোয়ার দিয়ে মনকে প্রহার করতে হবে। জ্ঞানই মানুষের হৃদয়ে বৈরাগ্যের জন্ম দেয়। সেই সত্যিকারের জ্ঞানই আমি তোমাকে প্রদান করছি অর্জুন।
সমস্ত জগৎ বাস্তবে মিথ্যা, নশ্বর।  মায়ার প্রভাবে তা সত্য মনে হয়। এই পরম  সত্য-জ্ঞান বিশ্বাস হয়ে গেলেই বৈরাগ্য সম্ভব। যে মানুষের মধ্যে ত্যাগের প্রাবল্য যত বেশী, তিনি ততই ব্যক্তিত্ববান। যে মানুষ যত বেশি ত্যাগী, তিনি ততই ব্যক্তিত্ববান। ত্যাগীর সাথে পেরে ওঠা খুব মুশকিল। ত্যাগীকে বশে আনা খুব মুশকিল। ত্যাগীর ত্যাগ ষড়যন্ত্রকারীর সব ষড়যন্ত্রকে মুহূর্তে নস্যাৎ করে দিতে পারে। মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের  চাবিকাঠি ত্যাগ।তাই, নিজের মনকে সন্যাসী বানাও, মোহের বন্ধন ত্যাগ কর। নিজের কর্তব্যের ওপর মনোনিবেশ কর। তোমার ধর্ম অনুযায়ী কর্ম কর।
জগৎ গুরু ভগবান স্বামী প্রণবানন্দ জী মহারাজ ও বলছেন *বৈরাগ্যই সর্বপ্রকার বাসনাকে নাশ করিয়া মানুষকে প্রকৃত মুক্তির পথে লইয়া যায়।*
তিনি আরও বলছেন:- ধর্ম কি ?
ধর্ম হল:- ত্যাগ, সংযম, সত্য ও ব্রহ্মচর্য। অর্থাৎ ধর্মের চারটি ধাপের মধ্যে প্রথম ধাপই হচ্ছে ত্যাগ। তিনি ধর্মের প্রথম ধাপই বলছেন ত্যাগ।
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ …..।

Share This