Categories
কবিতা

হারিয়ে গেছে বিশ্বাস : রাণু সরকার।

ঘুণ ধরেছে সংসারাশ্রমে
শৃংখলায় রাখবে বেঁধে পরিশ্রমে

একা কি পারে কিছু-করতে নারী!
রসাতলে গেছে বোধ যার-
দোষ তো তারি।

মাতব্বরেরা বলে-
একা নারী কিছু করতে পারে-
নানা জন নানা কথা বলে-
নারী বেরুলে পথের ধারে।

দর্পভরে স্বামী-
দেখায় স্ত্রীকে তার ক্ষমতা,
ভরে আছে চরাচর
শুধুই দ্বিচারিতা।

কেন দেখাও নানা অজুহাত,
মনেতে রেখেছো বাড়িয়ে লালসার হাত।

জ্বলছে নারী নিপীড়নে,
করছে হাহাকার,
রক্ত-মাংসের নারী-
হৃদয় কি নেই তার?

কোন দিকে যাবে নারী, সবেতে দামিনী দক্ষিণা,
খাদকের স্বর্গভূমি সব দিক,
নারীর চেনা।

পুরুষের হাতেই ফাঁদ পাতা বোনা,
নারীর ভাগ্য করবে কে রচনা!

Share This
Categories
কবিতা

আত্মদর্প : রাণু সরকার।

সংসার করছি তাই জানি সংসারের সার
মনে কি পরে অলক্ষ্যে নির্দেশ করছেন ঈশ্বর-

সব ফেলে চলে যাব একদিন এটাও
সর্বসাধারণের জানা
সময় যে দ্রুত ফুরায় সেও নয় আমাদের অজানা।

তবে থাকবে কেনো এতো আত্ম অহংকারের ঘোর,
দরিদ্র মানুষ কিছু চাইলে কেনো করি হাতজোড়
রক্তের তেজ যতদিন আছে ততদিন বুঝি দেখাবে ক্ষমতার জোর।

মানুষকে কেন ভাবিনা ঈশ্বর- কেন করিনা নিবেদন নর-নারায়ন?
দেখ আমরা আসন পেতে কত রকমের করি
পূজন-

আমাদের বিশ্বাস প্রাণের প্রবাহ,
ঈশ্বরের ছোঁয়াতে কাটবে বুঝি হৃদয়ের দাহ।

আমাদের আবার কিসের বাড়ি কিসের ঘর
আমার আমিকে চিনতে কেটে যায় কত প্রহর।

কেনো ভাবতে পারি না ভালো ভালো কথা,
আমার আমিকে সরিয়ে দিলেই হবেনা মাথা ব্যথা।

Share This
Categories
অনুগল্প কবিতা

অকবি : রাণু সরকার।

আমি কবি নই,
বুঝিনা কিছুই,
আমার মনের ভাবনাকে ধরে রাখার চেষ্টা করি মাত্র-
সেটা কবিতা হয় কিনা তাই নিয়ে মাথার ঘাম ঝরাই না।
কিছু ভাবনাকে রূপ, রস দিয়ে সাজাই বটে আরকি,
একরকম নেশা বলতে পারি বা ভাবনাবিলাস!
টুকরো টুকরো ভাবনারা উড়ে বেড়ায় মনের মণিকোঠায় ছবির মতো,
কখনও তারা নৃত্যও করে আবার চপল কিশোর কিশোরীর মত ভ্রু কুঁচকে হাতপা নেড়ে মনকে দেয় নাড়িয়ে তখন চুপ থাকতে পারিনা।
আমি চুপ থাকার চেষ্টা করি বটে- কিন্তু সে দেয় না চুপ থাকতে, নিজেই বসে পড়ে মহানন্দে ডায়েরির পাতায়। তখন হৃদয় আমার তোলপাড় করে ঝড় তোলে,বাধ্য হয়ে তাকে নিয়ে বসি নানারূপে চিত্রিত করি ভাষা দিয়ে,সে তখন ভীষণ খুশি,হবেই বা না কেন-সেতো সাজতেই বেশি ভালোবাসে।

Share This
Categories
কবিতা

নতুন বৌ : রাণু সরকার।

নতুন বৌ, ও নতুন বৌ, বাবাহ্- একটা ফোন করতে পারোনিকো? তোমাদের বলিহারি বাপু এই বয়সে এতো ধকল কি নিতে পারে শরীর, বলো দেকি বাপু? কোথায় একটু এগিয়ে আসবে- তা না-
কোথায় গেলো গো সব- সেই আবলা ছোকরাটাই বা কোথায়?
ধর ধর, আমার হাতটা ভেঙি গেলো যে-
বিস্তর ভারি ব্যাগডা, কি করতিছো ডাল বসয়েছো বুঝি?
আরে আরে তোমার ডাল তো হাসতেছে গো, একটু দেরি করলেই লুটায়ে পড়তো হাসতে হাসতে, হায় রে-
কেমন বৌ গা তুমি, খেয়াল রাখবেনে!

কী কাটতেছো নতুন বৌ? তোমার শাশুড়িকে তো দেখতেছি না, সে কোথায় বাতাস লাগাইতে গেছে গায়ে? তার বুদ্ধিশূন্য হইলো কবে থেকেইকে-
এই নতুন বৌ আসতে না আসতেই পাকের ঘরে ঢুকাই দিলো। সেই স্বভাবডা গেলো না। তোমার শ্বশুড় বাঁইচা থাইকে কতনা অশান্তি কইরতো তখন একসাথে ছিলাম চোপাও কম না- তোর শাউড়ির কিছু বইলে সাত পাঁচ কথা শোনাইতো। যাগ্গে বাবা, আমিতো বেইচে গেছি।
আমার ছেলেরা তো চাকরি করে শুনেছো না?
ফ্ল্যাট কিনিছে দুই ছেলেই। আমার যার কাছে ইচ্ছা হয় তখনই তার কাছে থাকি, বৌ দুইজন একেবার ভালো তা বলইনা তবে মন্দও না। আইচকালকার বৌ তো- তবে বাপু তুমি কেমন বুঝইতে সময় লাগবে। যাগ্গে- শাউড়ি কখন আইবে?

আমি এতো কথা বইলাম তুমি মুচকি মুচকি হাসতাছো, উত্তর করছো না- তোমার রাগ হইছে না?

না গো জেঠিমা- কেনো রাগ করবো আপনি গুরুজন, আপনার কথায় রাগ করা যায়।
আপনি বেশ বলতে পারেন-

কী বলতে পারি গা, নতুন বৌ?

এতো কষ্ট করে এলেন- কোথায়ও এতোটুকুও
ক্লান্তি নেই- আর ব্যাগটা ধরবার জন্য ছোট দেওরকে ডাকছেন, এসে থেকেই বকবক করেই চলছেন তাই বলছি আপনার ক্লান্তি নেই।

বাবা আমি তো ভাইবছিলুম তুমি কথাই বলইতে পারো না।

ও– আপনি ভেবেছিলেন আমি বোবা-
আপনারা তো দেখেই এনেছেন-বোবা হলে কি আনতেন, বলুন জেঠিমা?
তবে আপনার একটি কথা আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।

কোনডা রে, নতুন বৌ?

ঐ যে– বললেন আরে আরে তোমার ডাল তো হাসছে গো- একটু দেরি করলেই লুটায়ে পড়তো হাসতে হাসতে–
তুমি কেমন বৌ গা খেয়াল রাখবেনে?

Share This
Categories
কবিতা

ভোরের শ্রাবণ : শীলা পাল।

উতলা মনের মত এলে অন্ধকারে ঢেকে
দিশা হারা আমি খুঁজি
তোমাকে দিকে দিকে।
বৃষ্টির ধারা ঝরঝর হয়ে
ঝরে পড়ে মনের মাঝে
ভেজা শরীরে কদম্বের
নীচে একাকী বনমাঝে।
অনেক টা বছর পেরিয়ে
এসে তোমায় পেয়ে ভাবি
সবই কি থাকে সঞ্চিত হয়ে
হঠাৎই পেয়ে গেলাম চাবি?
ঝরঝর ঝরে শ্রাবণ বেলা
হৃদয়ের সাথে কেবলই তার খেলা
অকূলের মাঝে যেতে যেতে কেবলই ভাবে
শ্রাবণ শেষে কোথায় সে হারাবে?

বনমাঝে???

Share This
Categories
কবিতা

যাপন কথা : শীলা পাল।

কতো কথাই তো জমে থাকে মনের ভিতর
বলা হয় না বলি বলি করেও।
ঠিক মুহূর্ত টা বুঝতে পারি না
যখন বললে তুমি শুনবে।
এরকম করেই দিনগুলো কেটে যায় ।
কথাগুলো কিছুটা সবুজ শ্যাওলা ধরা জবুথবু বৃদ্ধার অস্পষ্ট কন্ঠের মতো
রিনরিনে সুর টি চাপা পড়ে গেছে
বৃদ্ধ কদমগাছের ডালে ।
সে তখন যুবক ছিল অনেক শুনেছে যেমন দোয়েলের গানে বুলবুলের শীসে, মন ভাসানদীর মতো টলটলে ছলছলে তার যৌবন।
এখন কে শুনবে বল তোমার কথা
আর কী সময় আছে? ভুল করেও পরে বলব
একথা মনেও এনো না ।এই যে সময় সেতো
চলে যাবার তাড়ায় অস্থির
যেটুকু সাধ যেটুকু আহ্লাদ ওকে ধরে বেঁধে
করে নাও নাহলে যা হল না তা আর কোনও দিন হবে না।
যে হাসি ঠোঁটের কোনে জাগে তা রেখে যেতে পারাটাই সুখের ,এই কৌশল জানতে
যাপনের যে আর্ট আছে সেইটুকু রপ্ত করতে হবে মাত্র ।

Share This
Categories
কবিতা

সাধ : শীলা পাল।

প্রকাশ্যে আসতে তোমার অনেক বাধা জানি
তাই সরে সরে রহি নিজ নিকেতনে ,
বৈরাগ্য বাস করে অবচেতনে।
শুধু সমাপন করে সাঙ্গ করি খেলা
সেখানেও হারানোর ভয় ,
আছ অগোচরে এই ভালো মনে তাই মানি
শুধু থেকো কাছাকাছি অনুভবে পাই যেন
ডাকি যখনই।

Share This
Categories
কবিতা

বৃদ্ধ বয়স : শীলা পাল।

কত সোনার মত দিন কেটে গেল হেলাফেলায়
বুঝি নি কখনও এত ছোট্ট
আমাদের জীবন !
কত কিছুই রয়ে গেল বাকি
ভাল করে ছুঁয়ে দেখার আগেই মনে হল এতটুকু মোটে সময়!
জীবন এত দ্রুত চলে যায়
কেউ বোঝে না কত কী করার ছিল কত কী বলার ছিল
কিছুই হল না ।
মনে হত অনেক বাকি আছে পথ চলা চলতে চলতে কখন যে এসে গেছি নদীতীরে জানি না।
অস্পষ্ট অচেনা ধূসর এক জগত হাতছানি দেয়
জানি না কেমন সে।
বড় মন কেমন করে কেন এত দ্রুত চলে গেল দিনগুলি!

Share This
Categories
কবিতা

কূয়াশা ছেড়া রোদ : লাজু চৌধুরী।

যদি একবারও মনে হয়
আমি ভুল করেছি –
তাহলে ভেবে নিবো নীঃসঙ্গাও আমার সাথে প্রতারণা করেছে।
সকালে শিশির বিন্দু গুলিও কি আমার চোখে ধোকা
দিয়েছে।
ভীষন কষ্ট হয় তোমাকে বুঝতে-
পৃথিবীর সব সুন্দর তোমাকে দিয়েছি মাঝে মাঝে
কুয়াশার চাদর তোমার শরীর মুড়ে দিয়েছি।

বাতাসে পাখির শিষের শব্দে তোমার ঘুম ভেঙ্গেছে।
সাগরের সব নীল আমি তোমার দুচোখে দিয়েছি।
প্রকৃতির গাঢ় লাল অথবা সবুজ তোমার শরীর ছুঁয়ে গেছে…….
তারপরেও যদি বলো আমি ভুল করেছি
তাহলে আজ এই বিকেলের বিদায়ের আলোতে
আমার মৃত্যু দেখো।

পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে ডাস্টবিনে সামনে পড়ে
থাকা আমার মৃত দেহ।
দিগন্ত প্রসারিত আষাঢ় বেলায় কত হাজার বার
উচ্চারণ করেছি
অনেক ভালোবাসি তোমাকে।
কিন্তু চিনা বাদামের খোসা হাতের তালুতে নিয়ে ফু
দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছ তুমি ।
সাগরের সব নীল ধূসর হয়ে যাবে
যখন আমার মৃত্যুর খবর শুনবে

Share This
Categories
কবিতা

মায়ের ঘর : শুভ্রাশ্রী মাইতি।।।

অক্ষর সাধনার আলো পথে পা রেখেছি
শুধু দিনের শেষে নিজের ঘরে ফিরব বলে।
কঠিন,বন্ধুর পথের রোদজ্বলা আকাশ আড়াল করে
মাথায় বিছানো মায়ের বাহান্ন বর্ণের স্নেহ আঁচল।
আমার চেতনা আর অস্তিত্ব জুড়ে দিনরাত
মাতৃস্তন্যসুধার অবিশ্রান্ত ঢেউয়ের ওঠাপড়া।
আমি পথ হাঁটি,হাঁটতেই থাকি হৃদয়ের অকৃত্রিম আবেগে।
নবান্নের ধান,লক্ষ্মীর পা আর ঘুঘু,শ্যামার ডাক পেরিয়ে—
পৌষের পিঠে পুলির মিষ্টি গন্ধ মাখা অলিতে গলিতে—
শুধু নিজের ভাষায়,নিজের সুরে মায়ের ঘরে ফিরব বলে।
যেখানে নিকানো উঠোন জুড়ে আমার সবটুকু ক্ষিদে মেটাবে বলে
মা অপেক্ষায় আছে আঁচলের তলায় পরমান্নের পাত্র সাজিয়ে ।

Share This