Categories
কবিতা

সৃষ্টির বায়োমেট্রিক সেন্সর : সৌগত রাণা কবিয়াল।।।

ভেজা হাত মুঠো করে শুধু ভরসাটাই চেয়েছিলাম…!
তুমি নিচুতলার মানুষদের মতোই দেয়ালের গায়ে একটা বিবর্ণ লেখা স্পর্শ করে ;
স্পষ্ট হতে চাইছিলে নিজের কাছে…!
বিদ্রোহী বৃষ্টি রাত-যৌবনের বেদনার মতন
শহর-বুক পাথরের শক্ত আস্তরণ চিরে
উন্মুখ দশ সেকেন্ডের জন্য অমরত্ব চাইছিলো…!
কথা ছিলো,
টেলিগ্রাম এলেই আমাদের জন্য ভাববো..
শুধুই এক ফালি আমাদের জন্য….!

প্রিয় সরীসৃপ,
এখন তো আর সে-ই–
রাবণ রাজার মহাকালের সাধন সময় নেই  ;
মধ্যম মানের জীবনের ভাবনাটাই এখন একমাত্র
বিবর্তিত ঈশ্বর মানুষের কাছে…!
তরঙ্গের চোখ দিয়ে প্রতিদিন
ভাঙছে-গড়ছে রক্ত মাংসের মনগুলো  ;
যেন, পৃথিবীটা ক্রমাগত হেসে কুটিকুটি হয়ে
নিজের নাম ভুলে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে..!

পাশের বাড়ির নতুন গৃহপ্রবেশ উৎসবে
কাল সারারাত শুধু কাঁচ-বন্দী কথাদের বলতে শুনেছি ;
ভোরবেলা হাঁটতে গেলে পার্কের বেঞ্চিটাতে
ভেজা প্লাস্টিকের নিরোধকের ভেতরের
কোটি বছর বয়ে চলা সৃষ্টির কোমল মৃত্যু দেখে..
নিমিষেই চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বারোয়ারী
উপসনালয়ের শক্ত পাটের উপর কব্জির শক্তিতে
তীব্র শ্লেষ নিয়ে ঘন্টা বাজিয়েছি মাত্র…
ঠিক তখনই,
পায়ের কাছে একটা লাল ফ্রকের বেড়াল চোখের পুতুলের হাত আমার ভেজা পায়ের পাতায়
কচি আঙুল গুঁজে অভিমানী…
আমিও আমার দুটো চোখ উজানে বেঁধে হাতের ভেতর
লুকিয়ে নিতে চাইলাম প্রাণপণে….!

ঘরে ফিরে দেখি..
চাইনিজ কামিনীর চারাগাছে দুটো নতুন ফুল
তাদের গন্ধহীন জন্মের রোদ মাখছে নরম গায়ে…!
খোয়াই লাল রুমালে পুতুলটার গায়ের ধুলো পরিস্কার করতে করতে হঠাৎ চোখে পড়লো,
শুভ্র সিলিং এর গায়ে দুটো বড় টিকটিকি
পরস্পরের সাথে মিশে যেতে প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে…!
আমি অদ্ভুত এক তৃপ্তিতে মাথা নিচু করে চুপ-মেয়েটার হাতের উপর হাত বুলিয়ে ওর কষ্ট মুছতে
আবার চোখের মায়ার চোখ রাখলাম…!

আজ সোমবার….
মহাকালের জন্য ফুল কিনতে
বড় সিঁদুর মুখের মাসির দোকানে নাম লেখানোর তাড়ায়
আমার হাতের রক্তকণাগুলো
দ্রুতগামী হয়ে কিনতে মরিয়া মহার্ঘ্য সময়ের আঁধার….!

Share This
Categories
কবিতা

একা বেদনা নিয়ে এক : রাণু সরকার।

একা একা দুজন দু’টি পাড়ে ছিলো-
একদিন তারা গভীর প্রেমরসে আবদ্ধ হলো!
একের গায়ে এক লেগে যখন হয়েছিলো দুই-
দু’টি হৃদয় মিলেমিশে একদিন এলো মধুকাল!
ভালোই চলছিলো প্রমোদবিহার,
আহ্লাদে বাহ্যজ্ঞানহীন,
এ’টাই প্রকৃতির নিয়ম-
চিরন্তন সত্য!

মন্থর গতিতে একদিন ধেয়ে এলো ব্যাধি, ঘটলো একের অবসান,
একের পাস থেকে চলে গেলো এক
নিঃস্ব কাঙাল করে,
হারিয়ে গেলো ভালোবাসা,
পড়ে রইল এক, একা- বেদনা নিয়ে।

Share This
Categories
কবিতা

এলে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে :::: রাণু সরকার।।।

চলে তো গিয়েছিলে,
আবার কেনো এলে-
কুড়ি বছর পর?
কষ্ট গুলোকে সংগ্রহ করতে গিয়ে আরো কষ্ট জন্ম নিলো।

দেখছোনা ওরা জ্বলছে–
দিলেতো সব ভণ্ডুল করে,

নমিত শরীর বারবার ওঠাবসা করতে পারি না যে–
কিছু কষ্ট কোথায় যে লুকিয়ে পড়লো কী জানি–
কিছুক্ষণ আগেও ওরা ছিলো।
ওদেরও ভয় আছে জ্বলার, যে কী জ্বালা একমাত্র আমিই জানি।
ভাবছিলাম বসে,
ওরা কোথায় থাকতে পারে।

তুমি এলে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে-
হয়তো তোমার ভয়ে তারা লুকিয়ে পড়েছে।
একটুও পালটাওনি তুমি, আগের মতই আছো।
এই বয়সে এসেও গর্হিত বস্ত্র পরিধান করেছো
যাগ্গে-আমার বলাটাই অপ্রয়োজনীয়,

কষ্ট গুলো ভালোই জ্বলছিলো-
প্রথমে তো আসতেই চাইছিলো না,
জোরপূর্বক জ্বালাতে হলো,
কেনো না এদের সান্নিধ্যে আর থাকতে
পারছি না।

কেনো এলে তুমি?

আমি তো অট্টালিকা ও মূল্যবান যাকিছু ছিলো সব তো দিয়ে এসেছি।
সাথে করে কিছুতো আনিনি,
তবে কেনো এলে আমার জীর্ণ কুটিরে?
এসেই আমার কষ্টের আগুনে দিলে জল ঢেলে।
এই ধোঁয়ায় কষ্ট গুলো ছটফট করছে-
একবারে পুড়ে গেলে এতো কষ্ট হতো না।

এ- তুমি কী করলে অর্ধমৃত করে রেখেদিলে !

Share This
Categories
কবিতা

প্রেমের বন্ধনে ::: রাণু সরকার।।

তুমি আকাশ পটের
বনগোলাপের ঝাড়।
আমাকে প্রেমের বন্ধনে
রেখেছো বেঁধে,
নিষ্প্রাণের মত
শৈত্য দৃষ্টিতে।

আমার কাব্য ক্ষুদ্র হয়ে নিজে হয় শাণিত,
তখন হৃদয়ে কাটে আঁচড়।
তুমি ধ্বনিশূন্য থেকে নিজেকে ঘায়েল
করতে পছন্দ কর,
তাইতো বলো কাব্য?

বিরল এক সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে।

আমিও তখন চলি নিজেকে ঘায়েল করতে,
অদৃষ্টক্রমে কেউ না কেউ দেখে,
তখন অ-দীক্ষত হই আমি।

919330728724

Share This
Categories
কবিতা

দুজনায় :: রাণু সরকার।।

এক শ্রাবণের সন্ধ্যায় বসে ছিলাম দু’জনে,
চিন্তান্বিত ছিলাম আপন সংলাপে!
ঝিরঝির পড়ছিলো বর্ষা,
কখন যে লুকিয়ে রেখেছিলো সে
আমার বুকের ভাঁজে একটি গোলাপ আমি স্পর্শদ্বারাও অনুভব করতে পারিনি, এতোটাই মগ্ন ছিলাম কাব্যে-কথায়!

এক রাশ আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফিরছি,
পোশাক খুলতেই সে যেনো পড়তেই চায় না,
জাপটে আছে বুকে!
আমি অবাক হয়ে ভাবছি কখন এ কাজ করলো একটুও বুঝতে পেলাম না-
এতোটাই ছিলাম পরিপ্লুত!
পুরনো স্মৃতি মৃত হলেও মাঝে মাঝে তারা জেগে ওঠে,
স্মৃতিরা অগোছালো হয়, ওদের কি গুছিয়ে রাখা যায়?

সুসংবদ্ধ আলাপচারিতার কোন নথীভুক্তি থাকে না,
আমার স্মৃতিগুলো খুব উচ্ছৃঙ্খল,
বোঝালেও বোঝে না,
মানে না দিনরাত,
যখন তখন যে কোন রাগে
গলা ছেড়ে গাইতে শুরু করে।

আকাঙ্ক্ষা ছিলো বুড়ো আগুনে পুড়ে হব ছাই-
কবে সদ্যজাত ঘাসের ডগায় জেগে উঠবে কে জানে।
এখন গোলাপ দিলে সেটা স্মৃতি হওয়া সময়সাপেক্ষ!

919330728724

Share This
Categories
কবিতা

আচমকা : রাণু সরকার।

হৃদয়টা রইলো পড়ে বৃষ্টিতে সিক্ত,
রোদ্দুরের তপ্ত আদ্রতা,
কিছু দূরে ছোট্ট এক জলাশয়,
প্রতিদিন জল নিতে আসতো লাজুক
এক মেয়ে!

দেখে মনে হয় দুর্ভিক্ষ আক্রমন করেছে তারে।
শরীরে বাসা বেধে চরম ব্যাধিতে
চোখের বিস্ময় থেকে আঙুলের প্রতিটি ডগায়
তার দুঃখ-কষ্ট !

জ্যোৎস্নার উৎসবে অকস্মাৎ বেজে উঠলো মাদল!
কী তার কারণ ?
বৃষ্টির দিনে জঙ্গলে জেগে ওঠে কামনা!
সুঠামদেহী সুদর্শন পুরুষ সাত রঙে-
চালিত করছে রূপ!

আর তার খুব কাছেই ছিলো।
আচমকা মধুলোভীর নিশ্বাস গায়ে আসে,
হিংস্রের মত দুর্গন্ধ!
গভীর স্তব্ধতা চেয়েছিল হলো না,
কোথা থেকে ছুটে এলো বিকট আওয়াজ
তারা বিপরীত দিকে চলে গেল।
জীবনে আর দেখা হবে না!

Share This
Categories
কবিতা

দুর্লভ প্রেম : রাণু সরকার।

দেখো, ভীষণ দুর্লভ
অনেক কষ্টে করে পেয়েছো-
ভালো করে মাখামাখি করে খেও!

অত্যন্ত দরিদ্র তো তাই বলা-
একবার দেখে নিও অন্যের
উচ্ছিষ্টান্ন কিনা?
না গো দরিদ্র হলেও ভুক্তবিশিষ্ট নয়!

ভালো করে চেটেপুটে আহার গ্রহণ
কোরো-
তৃপ্তির পূর্ণতা পাবে!

যখন প্রেমে বিতৃষ্ণা লাগবে-
তখন হিতাহিতজ্ঞানশূন্য না হয়ে-
সমস্ত বিষাদ গুলো নিক্ষেপ কোরো
অগ্নিতে দেখবে সব নিষ্পন্ন হবে।

যখন মহানুভবতা মনোভাব হবে-
তখন সাষ্টাঙ্গে প্রণত করো মানসিক শান্তি
আসবে!

কামনা,বাসনা,আরো যাকিছু আছে
সব নদীতে নিরঞ্জন দিয়ে ভুলেও
দৃষ্টিবিনিময় করবে না-
কেনোনা ওদের আকর্ষণ শক্তি ভীষণ
প্রখর,
তোমায় এ পথে আবার টেনে আনবে-
তখন তুমি দুর্বল হয়ে যাবে।

Share This
Categories
কবিতা

জানা নেই গন্তব্যস্থল :: রাণু সরকার।।।।

শরতের আকাশ দেখতে ভীষণ ভালো লাগে,
প্রতি শরতেই আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি
দল বেঁধে কারা যেন চলছে খড়ের আঁটি মাথায় নিয়ে।
অস্পষ্ট দৃষ্টিতে দেখি, অতোদূরে।
কষ্ট করে দৃষ্টিনিক্ষেপ করি,

ওদের গন্তব্যস্থল জানা নেই, চলছে তো চলছেই
দলের মধ্যে বৃদ্ধ বেশি,
কিশোর কম।
আবার কখন দেখি,
তুলোর পুঞ্জ মথায় নিয়ে ধীরগতিতে চলছে বৃদ্ধদের দল-
কিশোররা চলছে ক্ষিপ্রবেগে।

বৃদ্ধদের মুখ গম্ভীর দেখে মনে হচ্ছে অব্যক্ত
কত ভাষা অন্তরালে,
আমি ডেকেছিলাম-
একটু থমকে দাঁড়াল
কীজানি কী মনে হলো, আবার মন্থর গতিতে
চলতে লাগলো।

ওরা যাচ্ছে কোথায়?
আমায় ভাবনারা কুঁড়ে কুঁড়ে খায়!

Share This
Categories
কবিতা

তোমার কাছে চাওয়া :: রাণু সরকার।।।

পিপাসিত হয়ে যখন আসবো-
বাদল হয়ে তুমি এসো–
আমায় ভিঁজিয়ে দিও,হবো পরিতৃপ্ত!

মন যখন প্রদীপ্ত
দূরদৃষ্ট–অন্তরঙ্গ করে প্রতিচ্ছায়া দিও
দু’হাত বিস্তার করে—
উফ্! কী তুষারপাত শান্তি!

মন যখন বিষাদযুক্ত হবে–
গভীর সোহাগে কঠিন করে
রেখো বেঁধে,
বিষাদ ভাবনাগুলো যেন যায় চলে–
সবটা জুড়ে থাকবে তুমি- শুধুই তুমি!

Share This
Categories
কবিতা

একটি রাত : রাণু সরকার।।।

আমি ঋণগ্রস্ত,
কে দেবে দেনার দায় থেকে রেহাই?
বিলম্ব হবে না পরিশোধ করতে!
পাওনাদার প্রতিদিন দৈহিক নির্যাতন করছে-

একটি রাতের জন্য চাই,
দেবে কী?
ঋণের পরিমাণের উপর যে মূল্য-
তার বেশি আমি দেবো!

নেবো শুধু তোমার হাতে-
ঋণের দায় থেকে তবেই পাবো
নিষ্কৃতি!
শুধু একটি রাতের জন্য!

আমার একটু চাওয়া আছে-
যেভাবে অসত্য বলো-
সব শিখবো এক রাতে,
উড়ে বেড়াতে পটু-
প্রচরণশীল বিহগের মতো-
কখন অমতে ঐকাত্ম্য হতে চাওয়া!

Share This