Categories
কবিতা

অবসর : শীলা পাল।

তুমি যখন আমার অভ্যাস আমি তোমায় ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না
কখনও ভেবে দেখি নি তুমি না থাকলে আমার কী হবে
একটা বয়সের পর প্রেম অনেক গভীরে চলে যায় নিত্য দিনের চলার মধ্যে তার সুর টুকু বাজে সারাক্ষণ
বাহির থেকে মনে হয় এই যে পাশাপাশি থাকা
কাছাকাছি থাকা একটুও না ছেড়ে দুজনে
শুধু মুখোমুখি বসে থাকা সব কথা এখনই
যেন হল শুরু
কালের নিয়মে কেউ আগে কেউ পরে ছাড়াছাড়ি হয়েই যায়
যে থেকে যায় তাকে আবার নতুন করে বাঁচতে হয় অথবা বাঁচার অভ্যাস তৈরী করতে হয়
সে বড় কষ্টের তবু জীবন তো থেমে থাকে না
যুদ্ধটা চালিয়ে নিতে শিখতে হয় এ আরেক লড়াই
নিজের সঙ্গে নিজের
ভালোবাসার মানুষটিকে বুকের মধ্যে ধরে রাখি সবসময়ই এটুকুই সুখ এখন।

Share This
Categories
কবিতা

যেতে যেতে : শীলা পাল।

অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেও কেবলই মনে হয় আর কিছুদিন থাকি
কত কিছুই রয়ে গেল বাকী
হোক খেলাঘর তবু কত স্বপ্ন দিয়ে বোনা
সুখ দুঃখের হাসি ছিল কান্না ছিল জীবনজুড়ে
কত স্মৃতি কত গান কত মায়াময় রঙীন
সময় এখনও ঘুরে ফিরে আসে চোখের সমুখে
সামনে যেতে থমকে দাঁড়াই পথে
মনে পড়ে যায় অনেক শেষ না হওয়া কাজ
এমন করে চলে গেলে রয়েই যাবে বাকী
আরও কিছু সময় না হয় থাকি
যেতে যেতে ভাবি একটু নাহয় হল পথে দেরী।

Share This
Categories
কবিতা

অবশেষে : শীলা পল।

সারাজীবন সবাই কে ভালোবেসে এলাম
এখন দেখছি একতরফা
আমিই বেসে গেছি
আমি তো কিছুই চাই নি
বড় কষ্ট হয় শেষ জীবনে
এসে যখন দেখি আমার ভালোবাসার ঝুলিটি শূন্য
কারুর প্রতি আমার অভিমান নেই আমারই মস্ত বড় একটা ত্রুটি যে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই জানি না।

Share This
Categories
কবিতা

স্বপ্নে পাওয়া প্রেম : রাণু সরকার।

তুমি আমার স্বপ্নে থেকে ছিলে
চিরদিনের জন্য না বলে গেলে হারিয়ে,
তোমার এভাবে হারিয়ে যাওয়াটা আর পারছিনা নিতে মানিয়ে।

পেয়েছিলাম স্বপ্নে মুক্তো,হারিয়ে গেলো, পারলাম না বাস্তবে করতে সৃষ্টি,
গোপনে সবে শুরু করেছিলাম রাখা
যদি কারো পড়ে কুদৃষ্টি।

ভুলতে পারছি না
ক্ষণে ক্ষণে চোখে ভাসে তোমার মুখখান,
হৃদয় আমার মায়াময় তাই তো বিঁধলো পুষ্পবাণ।

স্বপ্নে তোমায় চুম্বন করি,মনে হয় পান করি মদিরা,
হয়ে যাই অবশ,
তোমার ঠোঁটে কি আছে গো,
পাগল হোলাম নেশা লাগা ঠোঁটের পরশ।

স্বপ্নেও ভাবিনি ক্ষণিকের জন্য এসে তুমি কাঁদিয়ে যাবে চলে,
আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেলো সকাল সন্ধ্যা সব উৎসবের আলো,
তুমি তো জানতে চলে যাবার সময় নিকটে
তবে কেনো এসেছিলে।।

Share This
Categories
কবিতা রিভিউ

উপেক্ষিত ভাষাশহীদ : শুভঙ্কর দাস।

২১ শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস।আন্তর্জাতিক ও আন্তরিক আলোর।
এই সূর্যস্মরণীয় দিনটির জন্য এ-ই মানুষটির অবদান অতুলনীয়। অথচ ভাষাদিবসের প্রেক্ষাপটে তাঁর কথা খুবই কম শোনা যায়,কম উচ্চারিত হতে দেখা যায় এবং কোনো সৃজনকর্ম তাঁকে নিয়ে রচিত হয় না!
কেন?
১৯ মার্চ প্রবল শক্তিশালী ও সর্বপ্রধান মহম্মদ আলি জিন্না ঢাকায় এসে চেঁচিয়ে উঠলেন,উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।তাঁর মুখের ওপর যাঁরা প্রতিবাদ করতে দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন,তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত।
ধীরেন্দ্রনাথের যুক্তি ছিল,দেশের ছয় কোটি নব্বই লক্ষ নাগরিকের মধ্যে চার কোটি চল্লিশ লক্ষ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,অতএব বাংলাই হোক রাষ্ট্রভাষা।
কিন্তু মুসলিম লিগ তা খারিজ করে দেয়,তার কারণ সহজেই অনুমেয়।
সেই মহান ভাষাসৈনিককে এর জন্য মারাত্মক মূল্য চোকাতে হয়েছিল।১৯৭১ সালে পাকসেনারা অশীতিপর সমাজকর্মী ধীরেন্দ্রনাথকে কুমিল্লার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ময়নামতী ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
বাহান্নর ভাষা আন্দোলন শুধু মাতৃভাষার রক্ষা করেনি,একটা দেশের জন্ম দিয়েছল,সেই দেশের জন্মপরতে ধীরেন্দ্রনাথের নাম অবিচ্ছেদ্য।তাঁকে বিস্মৃত হওয়া মানে একটা ভাষাকে,একটা দেশকে অস্বীকার করা।
তাঁকে জানিয়ে অক্ষরের শ্রদ্ধা।

চার কোটি চল্লিশ লক্ষের সিংহাসন

শুভঙ্কর দাস

অক্ষরের কোনো ধর্ম হয়?
মায়ের মুখের ভাষায় কোনো কাঁটা,কোনো উদ্ধত আঙুল,কোনো স্বেচ্ছাচারীর মুর্খামি
কালো কালো রেখায় মাথা তুলতে পারে?

কোনোদিন পারে না,যে মুহূর্তে অর্ধমের অন্ধকার বাংলা বর্ণে মিশিয়ে দেবে,যে মুহূর্তে রক্তচক্ষু মিশিয়ে দেবে আদুরে অক্ষরে,যে মুহূর্তে বন্দুকে বিচার করবে বিবেকের বাণী,সেই মুহূর্তে ধীরেন্দ্রনাথ শুধু উচ্চারণ করবেন,চার কোটি চল্লিশ লক্ষের মুখের ভাষা…

বাংলা,বাংলা এবং শেষ রক্তবিন্দুর সত্য, বাংলা

২১ ফেব্রুয়ারি একটা এমন দেশের নাম,যেখানে মায়ের আঁচলে সত্যিকারের ভুবন আঁকতে নিজের প্রাণ পর্যন্ত তুলে দিতে পারে
তেমন দেশের মাটিতে যদি সিংহাসন গড়ে ওঠে

তাতে হাসিমুখে বসে থাকবেন ধীরেন্দ্রনাথ।

—————-//———————-
২৯ মার্চ,২০২৩

Share This
Categories
কবিতা

অহংকার : রাণু সরকার।

এমন কিছু সম্মানিত ও গুণসম্পন্ন নারী বা পুরুষ আছেন
নামটা উজ্জ্বল বলে তাদের মনে ভীষণ দাম্ভিকতা চলে আসে।

কথাই বলা যায় না তাদের সাথে, বন্ধুত্ব তো দুরস্থ।
আমার ভাগ্যে যখন এমনটা জুটেছে, তখন আমি ভীষণই কষ্ট পেয়েছি-
হয়তো তারা ভাবেন মনে মনে ধুত্ এদের সাথে কী কথা বলবো, আমার মতো তো আর এতো গুণী বা নাম যশ নেই, তাই একটু অবহেলার চোখেই দেখেন।

অনেক বিষয়ের ওপর তাদের নাম যশ থাকতেই পারে, সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
কিন্তু অহংকার কিছুটা শিশুসুলভ মনোভাবের মতো।
অনেক সময় দেখা যায় একটা পরিণত মানুষের মধ্যে অহংকার অসহ্য লাগে।
পতনের মূল কারণ এরা বুঝতে পারেন না বা বুঝতে চান না যে মানুষ্যত্বের অভাব যা জীবনে চলার পথে সমস্যার দিকে পরিচালিত করে সেটাও ভাবনাতে আসে না, নাম যশে ভুলে থাকে।

তবে কেউ যদি আত্মসম্মান বোধে দূরত্ব বজায় রাখে তবে হয়তোবা সে শান্তি অনুভব করলেও করতে পারে।

Share This
Categories
কবিতা

পুরুষ কথা : রাণু সরকার।

পুরুষদের কি কাঁদতে নেই?
হ্যাঁ, আছে তো।
পুরুষদেরও কষ্ট আছে অনেক–

অব্যক্ত কষ্ট সাথে করে চলতে হয় সবসময়-
লোহার বর্মে তো পুরুষ আচ্ছাদিত নয় যে কাঁদবে না-
হ্যাঁ, পুরুষরাও কাঁদে।

তবে পুরুষের কাঁদা দিনের আলোর আড়ালে থাকে, অনেক কষ্টের বাসনা-
কষ্টের নানান প্রকাশভঙ্গি।

বৃষ্টি ভেজা দিনে অনেক পুরুষ কাঁদে
যাতে অশ্রুধারা মিশে যায় বৃষ্টিধারায় অন্যের অসাক্ষাতে।

রুটি-রুজির কথা ভাবতে ভাবতে ভাবতে কাঁদা তাদের ফুরিয়ে যায়-
রুজিরোজগার ভাবনা দেয় না তাদের কাঁদতে।

ভোরের আলো ফোটার আগেই শুরু হয় তাদের অভিযান রুজির সন্ধান।
রাতের অন্ধকারে তাদের ঘরে ফেরা
শুধু পরের দিনের আলো ফোটার অপেক্ষায়।

কাঁদতে গেলেই কে যেন টেনে ধরে তাদের,
এ বলে আমার এটা নেই,
ও বলে আমার ওটা নেই।
পরিবারের বায়না মেটাতে মেটাতেই ভুলে যায় নিজের জন্য একটু কেঁদে হালকা হওয়া।
এই নেইগুলো আনতে আনতেই ভুলে যায় তার নিজের কথা-
অর্ধেক কাঁদা যে রেখে এসেছিলো ওটা আর পরে খুঁজে পায় না-
তাই আর হয় না তাদের কাঁদা সারা।

সহ্য করতে যখন আর পারে না তখন ছিটকে বেরিয়ে এসে ডুকরে ডুকরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে-
আবার কখনো বুকে হাত রেখে বোবা চিৎকার করে-
কেউ যেন না দেখে।
কেউ না দেখুক একজন কিন্তু দেখে- সে হলো অন্তর্যামী।

সময়-রুটি-রুজি কাঁদতে দেয় না-
তাই পুরুষের কাঁদা কেউ দেখতে পায় না-
বুকে থেকে যায় কষ্টগুলো।
হয়তো খুঁজলে দেখা য়াবে বুকে কত পলির স্তর জমে আছে।

কিছু নারী স্তর দেখতে পায়-
শুধু দেখতে পেলে হবে না
হৃদয়ঙ্গম করতে ও তো হবে-
তা না হলে বোঝা যাবে না
তার কতটা কষ্ট।

পুরুষের পলির স্তর কত দূর পর্যন্ত
সেটা সব নারী দেখতে পায় না বা দেখতে চায় না-
এই স্তর দেখতে হলে দিব্যজ্ঞানী হতে হবে নচেৎ দেখতে পাবে না।
কিন্তু তাহলে নারীকে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হবে।
হ্যাঁ কিছু নারী আছেন ত্যাগী তারা দেখতে পায়-
আবার কিছু নারী আছেন দেখতে পায় না।
আমার দেখা অনেক আছে বলিও তাদের মাথা নিচু করে রাখে কোন উত্তর করে না, এই গুণটা আছে ভালো- হয়তো বুঝেতে পারে তাই চুপ থাকে,
অনেকে সুধরেও গেছেন আমার বলাতে।

Share This
Categories
কবিতা

বাবা-মেয়ে : রাণু সরকার।

বাবা বলেন, জানিস মা, মেয়েদের হাসি ছেলেদের হাসির থেকেও সুদৃশ্য।

এটাও জানিস না তুই! জেনে নে- ছেলেদের কান্না কত কষ্টদায়ক। জানিস, ছেলেরা সহজে কাঁদে না, কাঁদতে পারে না।

ছেলেদের সবকিছু অনুপূরণ করতে গিয়ে তারা কাঁদার কথা ভুলে যায় বা সময় পায় না।
যখন কান্না ধরে রাখতে পারেনা তখনই আড়ালে ফুপিয়ে কাঁদে বা বৃষ্টির সাথে বন্ধুত্ব করে, বৃষ্টি নিজের হাতে দু’চোখ ধুয়ে দিয়ে যায় যেন কেউ বুঝতে না পারে যে সে কেঁদে ছিলো।

তাই বলি কি মা সামনের দিন গুলো একটু ভেবে চিন্তে চলিস।

Share This
Categories
কবিতা রিভিউ

কবিতার পবিত্রতার ছুঁয়ে : শু ভ ঙ্ক র দা স।

বরিশালে জন্ম হলেও বালকটি বড় হওয়া কলকাতায়…
ইস্কুলের গণ্ডী পেরানোর অনেক আগেই কবিতায় নিমজ্জন। সেইভাব জাগ্রত হল,বরিশালে এক জমিদারের বৈঠকখানায় রবি বর্মার রামায়ণ-মহাভারতের ছবি দেখে,ভাবলেন চিত্রচিল্পী হবেন,কিন্তু ছবি আঁকা শুরু করলেন অক্ষরে…
সহসা মা মারা গেলেন।
বালকটি অসহায়,নিঃসঙ্গ এবং উদাস।
লিখলেন প্রথম কবিতা,মাকে নিয়ে,লিখে টাঙিয়ে রাখলেন দরজার পাশেই…
বরিশাল থেকে মাসির হাত ধরে মহানগরের পথে..
প্রচন্ড দারিদ্র্য এবং অসংখ্যবার বাসাবদল।
এর মধ্যে সেই বালক বড় হতে লাগলেন এবং মনেপ্রাণে এই বিশ্বাস প্রোথিত হল,কবিতার জন্য তাঁর জন্মগ্রহণ।
টিউশনির টাকায় পত্রিকা প্রকাশ।
নাম, কবিপত্র।
যেটি পরে সাহিত্যপত্রের ইতিহাস সৃষ্টি করে।
বাষট্টির বছর ধরে প্রকাশ হয়ে আসছিল। এক বিরাট বিস্ময়!
দেখা হল,বিষ্ণু দে,সুভাষ মুখোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রাম বসু,নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, আলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে..
আলাপ হল,প্রেরণা ও উৎসাহে পেলেন এক নতুন শক্তি।
তারপর মনে হল, কবিতার বই বের করতে হবে।
পান্ডুলিপি তৈরি হল,নাম দিলেন,’দর্পণে অনেক মুখ’।
কিন্তু ছাপতে কে? টাকা কোথায়?
কবির কী অবস্থা!
নিজে ভালো করে কবি খেতেই পান না!অন্য লোকের কাছে আশ্রিত।
অথচ তাঁর ধ্যানজ্ঞান,কবিতার বই বের করবেন।
এক বন্ধু কবিতা পড়ে বলল,আমি টাকা দেবো।
কবিযুবক ছুটলেন সিগনেটের কর্ণধার দিলীপ গুপ্তের কাছে।
প্রচ্ছদ আঁকলেন,পূর্ণেন্দু পত্রী।
সেই শুরু, আবির্ভাব হল এক নতুন কবিপুরুষের…
তিনি পবিত্র মুখোপাধ্যায়।
তিনি তো লিখতে পারেন—

“অনন্তকাল কেউ বেঁচে থাকবে না
খড়কুটোর রহস্য বেরিয়ে পড়বার আগেই
আমি
খুলে ফেললাম আনুগত্যের দস্তানা
হেলমেটের সবুজ ঢালুপথের ওপর দাঁড়িয়ে পড়লো সূর্য
আমি রেকাবে পা রাখলাম রেকাবে রাখলাম পা
রেকাবে”

কী আশ্চর্য!
কবি পবিত্র মুখোপাধ্যায় সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে পা রাখার ভুলে পড়ে যান,তারপর হাসপাতালে..
তারপর অশেষ কবিতার যাত্রায়..

অলংকরণ। ভগীরথ সর্দার।।

Share This
Categories
কবিতা রিভিউ

ঈশ্বরী পাটনির সন্ধানে; দুই : শুভঙ্কর দাস।

ঈশ্বরী পাটনির সন্ধানে। দুই

প্রতিটি পদক্ষেপে ব্যর্থতা।
ছাত্রজীবনে প্রবেশিকা পরীক্ষায় ফেল।
আবার চেষ্টা, আবার ফেল।
ক্রমাগত কয়েকবারের চেষ্টায় উত্তীর্ণ।
বি.এ. পরীক্ষা দেন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে,কিন্তু পরীক্ষা ভালো দেননি বলে,অনার্স টিকল না।
বিলেত গেলেন আইসিএস হবেন বলে,সেখানেও ব্যর্থ।
নিজের ব্যর্থতা নিয়ে রসিকতা করে বলতেন,I came out first in the unsuccessful list’
বিলেতে গেছিলেন আইসিএস হতে কিন্তু ফিরে এলেন ব্যারিস্টার হয়ে।
কলকাতায় ফিরলেন ১৮৯৩ সালে,আবার ব্যর্থ।পসার জমাতে।
এদিকে মারাত্মক বিপদ।পিতার মৃত্যু। এবং বিপুল ঋণের বোঝা পুত্রের কাঁধে।
আদালত তাঁদের পরিবারকে দেউলিয়া ঘোষণা করলেন।
কী করবেন?
শুরু করলেন পড়াশোনা। নানা ধরণের বই পড়তে লাগলেন।বেশি পড়লেন কবিতা।
লিখে ফেললেন কাব্যগ্রন্থ ‘মালঞ্চ’। পাঠকসমাজ পেল নতুন কবি।
সেই সঙ্গে সম্পাদনা করছেন সাহিত্যের পত্রিকা।
তারপর সহসা অলৌকিকভাবে হাতে আসে আলিপুর বোমার মামলা।জয়লাভ করলেন।রক্ষা করলেন ঋষি অরবিন্দকে।
ব্যাস,সেই শুরু, একজন মহামানবের পথচলা।
তারপর এমন বিখ্যাত ও প্রভাবশালী আইনজীবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাণপুরুষ হয়ে উঠলেন,লোকে তাঁর চোখে দেশ দেখতে শুরু করলেন।
শুধু বিরাট পিতৃঋণ শোধ করেননি,দানে-ধ্যানে-চরিত্রে-কর্মে হয়ে ওঠেন প্রবাদপ্রতিম।
মহাত্মা গান্ধি পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে লড়াই নেমে চোখের জল ফেলে বলে ওঠেন,হমে হারা দিয়া।
সেই যোদ্ধা, কবি, দানসাগর যখন পরলোকগমণ করলেন সারা দেশ মহাশূন্যতায় ডুবে গেছিল।
ডক্টর বিধানচন্দ্র রায় সেই মহামানবের ছবি নিয়ে ছোটেন রবীন্দ্রনাথের কাছে।
আবেদন, এই ছবির ওপর একটা কবিতা লিখে দিতে।
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,ডাক্তার, এ তো প্রেসক্রিপশন করা নয় যে,কাগজ ধরলে আর চটপট লেখা হয়ে গেল।
বিধানচন্দ্র জানালেন,তিনি অপেক্ষা করবেন।
অবশ্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি।
রবীন্দ্রনাথ লিখে দিলেন,

” এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ
মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান।”

আশা করি বুঝতে পারছেন,কার কথা বলছি,দেশবন্ধু।
চিত্তরঞ্জন দাশ।

তাই পড়াশোনা,সত্যিকারের পড়াশোনা, কার জীবন কীভাবে বদলে দেবে,সেটা কেউ জানেন না!
একমাত্র মা সরস্বতী ছাড়া!

শুভঙ্কর দাস। ০৬/০৭/২০২২

Share This