Categories
গল্প প্রবন্ধ

চার ধাম : এক মহাপবিত্র তীর্থযাত্রার ইতিহাস ও তাৎপর্য।

🔶 ভূমিকা

ভারতবর্ষের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক পরম্পরায় চার ধামের গুরুত্ব অপরিসীম। হিন্দু ধর্মে “চার ধাম” বলতে বোঝায় চারটি পবিত্র স্থান, যেখানে একবার তীর্থ করে আসা মানুষের পাপ মোচন হয় এবং মোক্ষ লাভের পথ প্রসারিত হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। এই চারটি তীর্থক্ষেত্র হল—বদ্রীনাথ (উত্তরে), দ্বারকা (পশ্চিমে), জগন্নাথ পুরী (পূর্বে) এবং রামেশ্বরম (দক্ষিণে)।
এই তীর্থযাত্রা শুধুমাত্র ভ্রমণ নয়, বরং আত্মশুদ্ধির এক অনন্য উপলক্ষও বটে।

🕉️ চার ধামের উৎপত্তি ও ধারণা

চার ধামের ধারণা প্রচলন করেন মহান আচার্য শংকরাচার্য। তিনি অষ্টম শতকে সারা ভারতে ধর্মীয় সংস্কার ও আধ্যাত্মিক জাগরণ আনতে চারটি প্রান্তে চারটি ধামের প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু ধর্মের মূল মন্ত্রকে দেশজুড়ে বিস্তার করা এবং মানুষের মধ্যে ধর্মীয় ঐক্য ও আত্মিক উত্তরণ ঘটানো।

📍 চার ধামের পরিচিতি

১. বদ্রীনাথ ধাম (উত্তর ভারত)

অবস্থান: উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় হিমালয়ের নরনারায়ণ পর্বতের কোলঘেঁষে অবস্থিত।

প্রধান দেবতা: ভগবান বিষ্ণু (বদ্রীনারায়ণ রূপে)।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: এখানে শংকরাচার্য আধ্যাত্মিক তপস্যার আশ্রম স্থাপন করেছিলেন। পুরাণ অনুযায়ী, বদ্রীনাথ হল সেই স্থান যেখানে নারায়ণ তপস্যা করেছিলেন এবং লক্ষ্মী দেবী বাদামের গাছ (বদ্রি) হয়ে তাঁকে রোদ থেকে রক্ষা করেছিলেন।

মুখ্য আর্কিটেকচার: পাহাড়ের মাঝে কাঠ ও পাথরের মিলিত রীতিতে তৈরি মন্দির।

তীর্থকাল: এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত, কারণ শীতকালে তুষারপাতের কারণে বন্ধ থাকে।

২. দ্বারকা ধাম (পশ্চিম ভারত)

অবস্থান: গুজরাটের সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে আরব সাগরের তীরে।

প্রধান দেবতা: শ্রীকৃষ্ণ (দ্বারকাধীশ রূপে)।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: কৃষ্ণ এখানে Mathura থেকে স্থানান্তর করে রাজ্য স্থাপন করেন। এটি তাঁর রাজ্যপাটের স্থান। মহাভারতের বহু কাহিনি এই শহরকে ঘিরে আবর্তিত।

দ্বারকাধীশ মন্দির: এটি চৌহান শাসকের দ্বারা নির্মিত, ৭-তলা বিশিষ্ট বিশাল মন্দির।

তীর্থকাল: সারা বছরই ভক্তদের আনাগোনা দেখা যায়, বিশেষ করে জন্মাষ্টমীতে।

৩. জগন্নাথ পুরী (পূর্ব ভারত)

অবস্থান: ওড়িশার পুরী শহরে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে।

প্রধান দেবতা: ভগবান জগন্নাথ (কৃষ্ণ রূপে), বলভদ্র ও সুভদ্রা।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: এটি কৃষ্ণের এক বিশেষ রূপ। এই মন্দিরে একমাত্র স্থানে কৃষ্ণের কাঠের মূর্তি বিরাজমান। এখানেই অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বখ্যাত ‘রথযাত্রা’ উৎসব।

জগন্নাথ মন্দির: ১২ শতকে নির্মিত এই মন্দিরটি হিন্দু স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন।

বিশেষত্ব: “মহাপ্রসাদ”, রাঁধার নিয়ম ও বিতরণ পদ্ধতি এক অলৌকিক ঘটনা।

৪. রামেশ্বরম ধাম (দক্ষিণ ভারত)

অবস্থান: তামিলনাড়ুর রামনাথপুরম জেলায়, পাক প্রণালীতে অবস্থিত।

প্রধান দেবতা: শিব (রামনাথস্বামী রূপে)।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: রামায়ণ অনুযায়ী, ভগবান রাম এখানে শিবলিঙ্গ স্থাপন করে পুজো করেন লঙ্কা যাত্রার পূর্বে। সেই কারণে এই স্থান অত্যন্ত পবিত্র।

রামনাথস্বামী মন্দির: বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ করিডোর বিশিষ্ট দক্ষিণী শৈলীতে নির্মিত মন্দির।

অন্য নাম: হিন্দু ধর্মে এটি “বেণারসের পরে সর্বোচ্চ পুণ্যক্ষেত্র” হিসেবেও ধরা হয়।

🙏 চার ধামের তীর্থযাত্রার গুরুত্ব

◾ মোক্ষ লাভের আশ্বাস

হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, জীবনে একবার চার ধাম দর্শন করলে মোক্ষ লাভ হয়, আর পুনর্জন্মের আবর্ত থেকে মুক্তি মেলে।

◾ পাপ মোচন

শাস্ত্রে বলা হয়েছে, এই ধামে পবিত্র স্নান, দান, পূজা ও জপ-তপ করলে মানুষের জন্মজন্মান্তরের পাপ ধুয়ে যায়।

◾ আত্মিক পরিশুদ্ধি

চার ধামের প্রত্যেকটির নিজস্ব পরিবেশ, অনুভব, ও আত্মিক প্রভাব আছে। পাহাড়, সমুদ্র, নদী ও উপকূলের মিশ্র পরিবেশ আত্মাকে শুদ্ধ করে।

🚩 আধুনিক যুগে চার ধাম যাত্রা

বর্তমানে সরকার চার ধাম যাত্রাকে অনেক সহজতর করে তুলেছে। “চার ধাম মহামার্গ” প্রকল্পের মাধ্যমে একাধিক হাইওয়ে নির্মাণ হয়েছে। পাশাপাশি হেলিকপ্টার পরিষেবা, ট্রেন, বাস, ও অনলাইন বুকিংয়ের সুযোগ বাড়ানো হয়েছে।

🔍 কিছু চমকপ্রদ তথ্য

বদ্রীনাথ ধামে একমাত্র ঠাণ্ডার মরসুম বাদে পূজা হয়।

রামেশ্বরমে রামের স্থাপন করা শিবলিঙ্গের পাশে অন্য এক শিবলিঙ্গ নেপাল থেকে আনা হয়েছিল।

জগন্নাথ মন্দিরে পতাকা প্রতিদিন উল্টো দিক থেকে ওড়ে।

দ্বারকায় এখনও সমুদ্রের নিচে ডুবে যাওয়া প্রাচীন শহরের নিদর্শন পাওয়া যায়।

🌿 উপসংহার

চার ধাম তীর্থ শুধু ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক এক সফর নয়, এটি আত্মিক উৎকর্ষের এক গভীর অনুশীলন। শংকরাচার্যের প্রতিষ্ঠিত এই তীর্থগুলি আজও হিন্দু ধর্মের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী হৃদয়ে এক গভীর ভক্তি ও বিশ্বাস নিয়ে এই যাত্রায় অংশগ্রহণ করে চলেছেন।
জীবনে অন্তত একবার চার ধামের দর্শন জীবনের উদ্দেশ্য, কৃতজ্ঞতা, আত্মবোধ ও ঈশ্বর ভাবনার নব দিগন্ত উন্মোচিত করে দেয়।
‐——————–
—‐‐-‐-‐————–‐-

Share This
Categories
গল্প

শেষ ট্রেনের যাত্রী।

পর্ব ১: রাতের ট্রেন

সেদিন রাত সাড়ে দশটা। কুয়াশায় ঢাকা শীতের রাত। তরুণ সাংবাদিক ঋষি সরকার কলকাতা থেকে বর্ধমান ফিরছিলেন।
অফিসের কাজ শেষ করতে করতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। কলকাতা স্টেশন থেকে শেষ লোকাল ট্রেন ধরা ছাড়া উপায় ছিল না।
ট্রেনটা যখন আসল, প্ল্যাটফর্ম প্রায় ফাঁকা। তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা লাল বাতির নিচে কাঁপছিল এক ছায়া। ঋষি খেয়াল করল—একজন মহিলা। খুব ধীরে ধীরে ট্রেনের দিকে এগোচ্ছেন। মুখ ঢাকা লাল পাড়ের সাদা শাড়িতে। বড্ড নিঃসঙ্গ দেখাচ্ছিল।
ঋষি নিজের কামরায় উঠল। সে ছাড়া পুরো কামরায় আর কেউ নেই। একটা জানলার পাশে বসে সে মোবাইলে হেডফোন গুঁজে সংবাদ সম্পাদনা শুরু করল।

পর্ব ২: ছায়ার সঙ্গী

ট্রেন ছেড়ে দিলো।
কুয়াশা গিলে ফেলছে রেললাইনের দুই দিক। ট্রেনের আলোতে মাঝে মাঝে জ্বলজ্বল করে উঠছে কোনও পুরনো সিগন্যাল পোস্ট বা গাছের ছায়া।
হঠাৎ ট্রেনের ভিতর একটা শব্দ হলো—টিক…টিক…টিক…
ঋষি প্রথমে ভাবল মোবাইলের শব্দ। কিন্তু না—এটা যেন কারও চুড়ির শব্দ। পাশের কামরায় কেউ কি উঠল?
ঋষি উঠে গিয়ে দেখতে পেল—সেই সাদা শাড়ির মহিলা। তিনি কামরার একেবারে কোণার আসনে বসে জানালার দিকে মুখ করে আছেন। আলোতে মুখটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না।
ঋষি একটু অস্বস্তি বোধ করল, কিন্তু কিছু বলল না।
তখনই মহিলা মুখ ঘুরিয়ে বললেন—
“এই কামরাটা কি শুধু আপনার?”
ঋষি অবাক হয়ে বলল, “না তো! ট্রেন তো পাবলিক…”
মহিলা ধীরে ধীরে হেসে বললেন,
“তাহলে আপনি জানেন না, রাত সাড়ে দশটার পর এই ট্রেন আমার একার হয়।”
ঋষির বুকের মধ্যে শীতল কিছু জমে উঠল।

পর্ব ৩: মুখহীন গল্প

ঋষি সেই মুহূর্তে বুঝে উঠতে পারছিল না, মজা করা হচ্ছে না কি…?
মহিলার মুখটা এখনও স্পষ্ট নয়। যেন কুয়াশায় আবৃত।
সে আবার বলল—
“এখানে কেউ বেশিক্ষণ থাকে না। যাঁরা থাকেন, তাঁদের আর কোথাও ফিরতে হয় না।”
ঋষি হাসল, “আপনি লেখিকা নাকি অভিনেত্রী? খুব অভিনয় করছেন মনে হচ্ছে।”
মহিলা হঠাৎ একটানা বললেন—
“১৯৭৮ সালের জানুয়ারির এক রাত ছিল। এই ট্রেনেই আমি ফিরছিলাম। ঠিক এই কামরায়, এই জানালার পাশে। একদল লোক এসে আমার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। কারণ আমি বিধবা হয়েও মঞ্চে গান গাইতাম। সমাজ মেনে নেয়নি।”
ঋষির হাসি মুখে জমে গেল। সে সামনে তাকিয়ে দেখল—মহিলার মুখে মাংস নেই। কেবল পুড়ে যাওয়া চামড়া আর একটা গলিত চোখ।
সে চিৎকার করে উঠতে গেল, কিন্তু শব্দ বের হলো না। গলা শুকিয়ে কাঠ।

পর্ব ৪: ছেঁড়া টিকিট

ঋষি জ্ঞান হারাল না, বরং হঠাৎই নিজেকে খুঁজে পেল সেই পুরনো দিনের ট্রেনে। যেন টাইম মেশিনে ঢুকে গেছে।
এখন কামরায় বেশ কিছু যাত্রী। সবাই পুরনো ধাঁচের পোশাক পরা। কেউ রেডিও শুনছে, কেউ বিড়ি টানছে।
ঋষি তাকিয়ে দেখে—সেই মহিলা মঞ্চে গান গাইছে, “আমারে ছাড়িয়া বন্ধু…”
কিন্তু তখনই হঠাৎ তিনজন লোক এসে ওর উপর চড়াও হলো। কেরোসিন ঢালা, চিৎকার…আর তার পর আগুন!
ঋষি চিৎকার করে উঠল—
“না! কেউ ওকে বাঁচাও! বাঁচাও!!”
চোখ মেলে দেখে সে ট্রেনের সিটে বসে। গলা ভিজে গেছে ঘামে। কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই।
শুধু তার পায়ের কাছে পড়ে আছে একটা ছেঁড়া টিকিট—১৯৭৮ সালের বর্ধমান লোকালের।

পর্ব ৫: শেষ স্টেশন

বর্ধমান স্টেশনে ট্রেন ঢুকতেই ঋষি নেমে পড়ল। রাত তখন প্রায় ১টা।
প্ল্যাটফর্মে একজন বৃদ্ধ হকার চা বিক্রি করছিল। ঋষি ছুটে গেল ওর কাছে।
“এই ট্রেনে একটা মহিলা ছিল, সাদা শাড়ি পরা, পুড়ে গেছিল নাকি… এমন কেউ কি ছিল?”
চাওয়ালা তাকিয়ে বলল,
“আপনি ওনার কামরায় ছিলেন? ভাগ্য ভালো, ফিরে এসেছেন। সবাই তো ফেরে না। উনি গান পছন্দ করতেন, কিন্তু ওর গান সমাজ মেনে নেয়নি।”
“কিন্তু আপনি জানলেন কী করে?”
চাওয়ালা বলল,
“কারণ আমি সেই রাতে ট্রেনেই ছিলাম। তখন আমি কেরোসিন নিয়ে এসেছিলাম…”
ঋষি হতভম্ব!
বৃদ্ধ হঠাৎ হেসে বলল,
“এখন আমিও মরেছি, আপনি বেঁচে থাকুন। এটাই অনেক।”
চাওয়ালা হঠাৎ মিলিয়ে গেল কুয়াশায়।
ঋষি মাথা ধরে স্টেশনের বেঞ্চে বসে পড়ল।

শেষ ভাগ: শিরোনাম ও পুনর্জন্ম

ঋষি বাড়ি ফিরে সেই কাহিনি লিখল।
নাম দিল—“শেষ ট্রেনের যাত্রী”
কোনও সম্পাদক সাহস পেল না ছাপাতে।
এক বছর পর, সেই স্টেশনের গায়ে একটা নামহীন কবরে সে একটা লাল পাড়ের সাদা শাড়ি রাখল। আর লিখল—
“তোমার গান আমি শুনেছি, এবার তুমি শান্তিতে ঘুমাও।”

Share This
Categories
গল্প

গল্পের নাম: শেষবার দেখা।

🌇 ১. পরিচয়

শ্রেয়া আর ঋষভ।
কলেজ লাইফের বন্ধুত্ব থেকে গড়ে ওঠা এক নিঃশব্দ ভালোবাসার গল্প।
শ্রেয়া – শান্ত, বইপ্রেমী, রবীন্দ্রসংগীতপসন্দ।
ঋষভ – চঞ্চল, ক্যামেরার পেছনে থাকা ছেলেটা, স্বপ্ন দেখত সিনেমা বানানোর।
প্রথম দেখা হয়েছিল কলেজ ফেস্টে, ক্যাম্পাসের পুরনো অডিটোরিয়ামে। শ্রেয়া রবীন্দ্রসংগীত গাইছিল আর ঋষভ ভিডিও করছিল। ক্যামেরার লেন্স越 যতই ফোকাস করছিল, ঋষভের হৃদয়ও যেন ততটাই জুম ইন করছিল তার গলার দিকে, চোখের দিকে।

🍂 ২. কাছে আসা

তাদের মধ্যে কোনোদিন ভালোবাসা বলে কিছু উচ্চারিত হয়নি।
তবু শ্রেয়ার প্রতিটি সকালে “সুপ্রভাত ঋষভ”, আর ঋষভের প্রতিটি রাত “ঘুমোও ভালো করে, শ্রেয়া”— এসব যেন বলেই দিত কিছু একটা আছে।
বৃষ্টির দিন তারা একসাথে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ভিজত,
চায়ের কাপে ভাগ বসাত,
বইয়ের পাতা টেনে বলত, “এই গল্পটা আমাদেরও হতে পারত।”

🕯️ ৩. ভুল বোঝাবুঝি

কিন্তু প্রেম যত গভীর হয়, Ego তত বড় হয়ে দাঁড়ায়।
ঋষভ একদিন বলল — “তুই তো আমায় কখনও ভালোবাসিস না। শুধু ব্যবহার করিস।”
শ্রেয়া কেঁদে ফেলেছিল। তাও ঋষভ ফিরল না।
তারা কথা বলা বন্ধ করল।
নীরবতা ছিন্ন করল তাদের সব স্মৃতি।

🌒 ৪. অনেক বছর পর…

৫ বছর কেটে গেছে।
শ্রেয়া এখন প্রকাশনা সংস্থায় চাকরি করে।
ঋষভ নামী ডকুমেন্টারি ফিল্মমেকার।
তাদের কেউ একে অপরের খোঁজ রাখত না, কিন্তু মনে ঠিকই করত।
একদিন, শ্রেয়া অফিস থেকে ফেরার পথে গাড়ির কাচের ওপারে এক চেনা মুখ। ঋষভ।
চোখাচোখি…
একটা হাসি…
এবং তারপর আবার ছুটে আসা দিনগুলোর স্মৃতি।

🍁 ৫. শেষবার দেখা

রবিবার, কলেজের পুরনো ক্যাম্পাসে তারা দেখা করল।
শ্রেয়ার চোখে জল, ঋষভ বলল — “ভুলগুলো আমার ছিল, ক্ষমা করিস।”
শ্রেয়া একবার ঋষভের কাঁধে মাথা রাখল। অনেকদিন পর…
“আমরা কি আবার শুরু করতে পারি?” — প্রশ্ন করল ঋষভ।
শ্রেয়া বলল, “তোমার ক্যামেরার লেন্সে আমায় আজও স্পষ্ট দেখা যায়?”
ঋষভ মুচকি হাসল —
“আজও, প্রথম দিনের মতোই, পরিষ্কার।”

🌸 শেষ কথা

ভালোবাসা কখনও মরে না।
কখনও কখনও শুধুই একটা দেখা, একটা হাসি — অনেক কিছু ফিরিয়ে আনে।
তাদের গল্পটা শেষ হয়নি, শুধু আবার শুরু হয়েছে… একটু দেরিতে।

ধরন: আবেগঘন প্রেমকাহিনি
সময়কাল: আধুনিক শহর কলকাতা
শব্দসংখ্যা: প্রায় ২০০০

Share This
Categories
উপন্যাস গল্প

চিঠিতে লেখা প্রেম।

🧩 গল্পের সারাংশ:

এই গল্প একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এক অসম্ভব প্রেমের, যেখানে দু’জন অচেনা মানুষ — ঋদ্ধি ও আকাশ — এক ভুল ঠিকানায় পৌঁছানো চিঠি থেকে শুরু করে, এক গভীর আত্মিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। সময়, দূরত্ব, পরিবার ও সমাজের বাস্তবতা তাদের পরীক্ষা নেয়, কিন্তু ভালোবাসা বারবার ফিরে আসে… কখনো চিঠিতে, কখনো নীরবতায়।

🎭 প্রধান চরিত্র:

ঋদ্ধি সরকার: কলকাতার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে, সাহিত্যে আগ্রহী, আবেগপ্রবণ, অন্তর্মুখী।

আকাশ দত্ত: এক গ্রাম্য ডাকঘরের কর্মচারী, শান্ত স্বভাবের, কবিতা ভালোবাসে, দায়িত্বশীল।

কাকলি (ঋদ্ধির বন্ধু), মিস্টার মুখার্জি (আকাশের ডাকঘরের বস), ঋদ্ধির বাবা-মা, আকাশের দিদি মালবিকা — সহায়ক চরিত্র।

🗂️ গল্পের কাঠামো (২৫ পর্ব):

ভুল ঠিকানায় পাঠানো চিঠি

আকাশের আগ্রহে প্রথম উত্তর

চিঠির উত্তর-পত্র চলতে থাকে

নামহীন পরিচয়ের টান

ঋদ্ধির কাকলির সন্দেহ

আকাশের ব্যক্তিজীবন প্রকাশ

ঋদ্ধির কলেজে নাটক, প্রথম কবিতা পাঠ

আকাশের ডাকঘরের গোলমাল

ঋদ্ধির অভিমান

এক দীর্ঘ চিঠিতে ক্ষমা

আকাশের দিদির দেখা মেলানো চেষ্টা

পুজোর সময় কলকাতায় দেখা হতে পারত

দেখা হয়নি, বেড়ে যায় দুরত্ব

ঋদ্ধির বাবা অন্যত্র বিয়ের প্রস্তাব দেন

আকাশের ভেতর যুদ্ধ

কাকলির সাহসী পদক্ষেপ

ঋদ্ধির বিদ্রোহ

প্রথম ফোনালাপ

একপাক্ষিক সিদ্ধান্তের বিপরীতে

আকাশ কলকাতা আসে

মুখোমুখি দেখা

পরিবার জানে সব

সম্পর্কের স্বীকৃতি চাওয়া

চিঠির শেষ পাতা

নতুন ঠিকানা — একই নামে

এখন নিচে এই কাহিনির জন্য একটি কল্পচিত্র তৈরি করছি, যাতে পুরো সিরিজটির অনুভব উঠে আসে।

📖 চিঠিতে লেখা প্রেম

পর্ব ১: ভুল ঠিকানায় পাঠানো চিঠি
কলকাতার একটি মেঘলা বিকেল। ঋদ্ধি তার জানালার ধারে বসে ছিল, এক হাতে চায়ের কাপ, আরেক হাতে একটি সাদা খাম। চোখে চিন্তা — চিঠিটা লিখেছে সে, কিন্তু পাঠাবে কি পাঠাবে না, তা বুঝে উঠতে পারছে না।
চিঠিটা সে লিখেছে একজনকে, যার নাম অনিরুদ্ধ — তার কলেজের সিনিয়র, যাকে সে অনেক দিন ধরে পছন্দ করে। কিন্তু সাহস হয়নি মুখোমুখি বলার। সে ভেবেছিল, একটা চিঠি পাঠালে হয়তো মনের কথা কিছু বলা যাবে।
অবশেষে, খানিক সাহস করে সে পিন কোড, এলাকা সব লিখে দিয়ে পোস্টবক্সে ফেলে দেয় চিঠিটা।
তবে ভুলটা সেখানেই ঘটে।
ঋদ্ধি ভুল করে পিন কোডে দুটি সংখ্যা উল্টে লিখে ফেলে। চিঠিটা পৌঁছে যায় ৭০০০১৬ নয়, ৭০০০৬১-তে — দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার এক ছোট ডাকঘরে।
অন্যদিকে —
সেই ছোট্ট ডাকঘরের ভিতরে এক তরুণ কর্মচারী — আকাশ দত্ত। ছুটির শেষে একটা অদ্ভুত চিঠি তার হাতে এসে পড়ে। প্রাপক যাকে লেখা, সেই ঠিকানায় এমন কেউ নেই।
কিন্তু চিঠির কাগজে এমন শব্দ, এমন আন্তরিকতা — যেন সেটা কারোর ব্যক্তিগত কবিতা।
“তুমি জানো না আমি কে, কিন্তু আমি তো তোমায় প্রতিদিন দেখি…” — এমন এক চিঠির পংক্তি পড়ে আকাশ অবাক হয়।
সে ভাবে: “এই চিঠির উত্তর যদি দিই? যদি তার লেখার মতো করে লিখি কিছু? সে কি উত্তর দেবে?”
সেই সন্ধ্যায়, আকাশ লেখে তার জীবনের প্রথম চিঠি — যা ঠিক প্রেরকের নামে নয়, বরং এক অচেনা হৃদয়ের খামে।

 

📖 চিঠিতে লেখা প্রেম

পর্ব ২: (আকাশের আগ্রহে প্রথম উত্তর)

আকাশ দত্তর জীবন ছিল একরকম ছন্দে বাঁধা — সকালে অফিস, দুপুরে চা, বিকেলে কাগজপত্রের ঝাঁপি গুছিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরা।
কিন্তু সেই একটি ভুল ঠিকানায় পৌঁছনো চিঠি যেন তার ছন্দে এক নতুন সুর এনে দিল।
চিঠিটা সে অন্তত দশবার পড়েছে।
লেখা ছিল —
“তুমি জানো না আমি কে, তবু প্রতিদিন তোমার চোখে কিছু দেখার ইচ্ছে হয় আমার। যদি জানত তুমি, কীভাবে আমি তোমায় অনুভব করি — হয়তো হাসতে, হয়তো কাঁদতে।”
চিঠির লেখার ভঙ্গি আকাশকে অভিভূত করেছিল। এই যে কেউ একজন, এই শহরের কোথাও, এমন নিঃশব্দে কারো দিকে তাকিয়ে প্রেম করছে — একরকম সাহস আর নরম আবেগের সংমিশ্রণ ছিল তাতে।
সেই রাতে আকাশের ঘরে ছিল কেরোসিনের আলো।
সে টেবিলে বসে প্রথমবার কাগজে কলম রাখে, অনেক ভেবে লিখে ফেলে:

“প্রিয় অচেনা তুমি,
তোমার লেখা পড়ে আমি ভীষণ চমকে গেছি। চিঠিটা কাকতালীয়ভাবে আমার হাতে পড়েছে।
জানি, তুমি যাকে চিঠি লিখেছো, আমি সে নই। তবু তুমি যা লিখেছো, তা এতটা সত্য আর আন্তরিক, যে আমি নিজেকে আটকাতে পারিনি।
আমি জানি না, তুমি আমাকে উত্তর দেবে কিনা, কিংবা আদৌ পড়বে কিনা আমার চিঠি।
তবু যদি উত্তর দাও, তবে আমি খুশি হব।
— আকাশ”

চিঠিটা শেষ করে সে লিখে দেয় খামের গায়ে প্রেরকের ঠিকানা — ঋদ্ধি সরকার।
তারপর পোস্ট করে দেয় পরদিন সকালে।
কলকাতার অন্যপ্রান্তে, দুদিন পরে, ঋদ্ধি ডাকঘর থেকে ফেরার পথে চিঠি হাতে পায়। প্রথমে অবাক হয়ে ভাবে — “আকাশ? কে?”
চিঠি খুলে পড়ে সে অবাক হয়ে যায় —
“তার মানে… আমার চিঠি… সে পেয়েছে? কিন্তু সে তো অনিরুদ্ধ না!”
তবু, চিঠির একেকটা বাক্য তার মনে নরম স্পর্শ ছুঁয়ে যায়।
একটা অচেনা নাম, এক অচেনা ভাষা — কিন্তু তাতে এক অদ্ভুত টান।
চোখে যেন ধরা পড়ে এক স্বীকারোক্তি —
“ভুল ঠিকানায় পাঠানো ভালোবাসা যদি উত্তর পায়, তবে সেটা কি সত্যিই ভুল থাকে?”

 

পর্ব ৩: (চিঠির উত্তর-পত্র চলতে থাকে)

ঋদ্ধি চিঠিটা পড়ার পর বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে ছিল। জানালার কাঁচে ধেয়ে আসা হালকা বৃষ্টি আর দূরের কাকের ডাক যেন চুপচাপ সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার ভেতরের আলোড়নের।
চিঠিটা সে বারবার পড়ে। কে এই আকাশ? ডাকঘরের কর্মচারী, কিন্তু কী সুন্দরভাবে লিখেছে! কোনো অভিযোগ নেই, কৌতূহলও কম — তবু কোথাও যেন একটা ভদ্রতা মেশানো আন্তরিকতা।
তারপর হঠাৎ যেন একটা কিশোরীর হাসি ঝরে পড়ে ওর ঠোঁটে।
“চলো, এই খেলাটা দেখি কতদূর যায়। চিঠিতে চিঠির জবাব দেওয়া — এটাও তো একরকম প্রেম নয় কি?”
সেই রাতে সে লিখে ফেলে তার উত্তর।

প্রিয় আকাশ,
তোমার চিঠি পেয়ে বিস্ময় আর আনন্দ একসাথে কাজ করেছে।
হ্যাঁ, এই চিঠি আমি অনিরুদ্ধ নামে একজনকে লিখেছিলাম, যে হয়তো কোনোদিনই পড়বে না। তুমি পড়েছো, তাতে খারাপ লাগেনি। বরং ভালোই লেগেছে।
তুমি যদি লেখো, আমিও লিখব।
নাহ, আমরা কোনোদিন দেখব না হয়তো, তবু কয়েকটা পৃষ্ঠা থাক আমাদের মাঝে।
তুমি জানতে চেয়েছিলে আমি কে — আমার নাম ঋদ্ধি, সাহিত্যে স্নাতক করছি। কবিতা পড়ি, সিনেমা দেখি, আর মাঝে মাঝে এমন চিঠি লিখি…
তুমি লিখতে পারো, আকাশ। ঠিকানাটা তো এখন জানো।
— ঋদ্ধি

চিঠিটা পাঠিয়ে দিয়ে সে একরকম অপেক্ষা করতে থাকে।
প্রথমে ১ দিন, তারপর ২ দিন, ৩ দিন…
৪র্থ দিনে এক বিকেলে আবার এক খাম আসে।
আকাশের লেখা — নীল কালিতে।
এবার লিখেছে নিজের পছন্দ-অপছন্দ, ছোটবেলার গল্প, কীভাবে সে প্রতি সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে কবিতা পড়ে…
আর শেষে লিখেছে:

*”তুমি বলেছিলে, আমরা দেখা করবো না।
আমি বলছি, চিঠিতে যদি একদিন চোখে দেখা পাওয়া যায় — তবে আর বাইরে দেখা না হলেও চলবে।”*

ঋদ্ধির মুখে এক শান্ত হাসি।
এইভাবে শুরু হয় চিঠির যাত্রা —
সপ্তাহে একবার করে।
কখনো কবিতা, কখনো গল্প, কখনো নিঃশব্দ যন্ত্রণার কথা — তারা সব বলে, শুধু লিখে।

 

পর্ব ৪: (নামহীন পরিচয়ের টান)

চিঠির খামে কখনো নাম থাকত না — শুধু “প্রিয় তুমি” আর “তোমার আকাশ”।
সপ্তাহের সেই নির্দিষ্ট দিনে ঋদ্ধি ডান হাতের কড়ে আঙুলে মেহেদির মতো অপেক্ষা বয়ে বেড়াত — আজ চিঠি আসবে।
আর আকাশ? সে প্রতিদিন ডাকঘরের ব্যাগ থেকে একটা খালি জায়গা রেখে দিত — ওখানে থাকত ঋদ্ধির চিঠির জন্য আলাদা জায়গা।
তাদের মধ্যে কোনো মোবাইল নম্বর নেই, ছবি নেই, সোশ্যাল মিডিয়াও না।
তবু এই অদ্ভুত অদৃশ্য যোগাযোগ — একটা অদেখা মানুষের জন্য এমন করে অপেক্ষা?
প্রথমে কাকলি — ঋদ্ধির ঘনিষ্ঠ বান্ধবী — কিছু না বুঝে জিজ্ঞেস করেছিল,
— “তোকে কি সত্যিই চিঠিতে ভালো লাগা শুরু হয়েছে? নাম জানিস, পেশা জানিস, ছবি জানিস না। তার মানে কি?”
ঋদ্ধি শুধু হেসে বলেছিল,
— “কিছু কিছু সম্পর্ক জানার নয়, অনুভব করার। ওর নাম তো আকাশ — সীমাহীন, অথচ ধরা যায় না।”
অন্যদিকে আকাশও এক সন্ধ্যায় লিখে ফেলে:

“প্রিয় তুমি,
আজ সকাল থেকে অফিসে খুব চাপ, কিন্তু মাথার ভিতরে শুধু একটা কথাই ঘুরছে —
তোমার চোখ কেমন? তুমি বৃষ্টিতে ভেজো? চায়ের কাপ ধরে গাল ভিজে যায় তোমার?
কেমন অদ্ভুত না, আমি এসব জানি না, তবু মনে হয় জানি।
তুমি কি আমায় দেখতে চাও?
নাকি এই না-দেখা, না-জানা ভালোবাসাটাই আমাদের গল্প?”
— তোমার আকাশ

ঋদ্ধি উত্তর দেয় না সোজাসুজি। পরের চিঠিতে সে শুধু লিখে —

“বৃষ্টিতে ভেজা চোখের ছবি ভালোবাসি। দেখা নয়, অনুভব — সেটাই সবচেয়ে সত্যি।”

তারা নিজেরা যেন এক ছায়ায় ছায়া খুঁজছিল। এক অচেনা টান, এক নামহীন গভীরতা তাদের টেনে নিয়ে যাচ্ছিল এক এমন জগতে, যেখানে পরিচয় মুখ নয়, আত্মা।
এইভাবে কেটে যায় কয়েকটি মাস।
শহরের মাঝে, ছেলেমেয়ের গলার সুরে, বইমেলার ভিড়ে, তারা আলাদা আলাদা থেকেও যেন একসাথে হাঁটছিল।
তাদের নাম ছিল না একে অপরের ঠোঁটে, কিন্তু হৃদয়ের পৃষ্ঠায় একেকটা চিঠি হয়ে লিখে যাচ্ছিল —
ভালোবাসার অপরিচিত গল্প।

অসাধারণ! নিচে আমি তোমার জন্য পর্ব ৫ থেকে ১০ পর্যন্ত গল্পটি পরপর সাজিয়ে দিচ্ছি। প্রতিটি পর্ব ছোট ছোট করে হলেও আবেগ, টান ও নাটকীয়তা ধরে রাখার চেষ্টা করেছি।

পর্ব ৫: (কাকলির সন্দেহ)।

কাকলি এখন আর চুপ করে নেই।
একদিন চিঠিগুলো দেখে বলে বসলো,
— “দেখ, ঋদ্ধি, অচেনা কারও সঙ্গে এমন আবেগ দিয়ে জড়িয়ে পড়া ঠিক নয়। হয়তো ও বিবাহিত, কিংবা…”
— “তুমি ওকে চেনো না, কাকলি,” বলে ঋদ্ধি শান্তভাবে চিঠিগুলো গুছিয়ে রাখে।
— “তুইও কি চাস না, একবার ওকে দেখতে?”
— “না কাকলি। আমি চাই চিঠিগুলো থাকুক… ওকে না দেখেই এই অনুভবটা সত্যি।”
কিন্তু কাকলির মনে একটা অস্থির সন্দেহ বাসা বাঁধে — আর সে চুপচাপ কিছু খোঁজ নিতে শুরু করে…

পর্ব ৬: (আকাশের ব্যক্তিজীবন প্রকাশ)।

ঋদ্ধির চিঠির উত্তরে আকাশ এবার নিজের কিছু ব্যক্তিগত কথা জানায়।

“তুমি জেনো, আমি ছোটবেলা থেকে বইয়ের মধ্যে থাকতাম। মা মারা যান যখন আমি দশ বছরের, বাবা এরপর আর নতুন সংসার করেননি। এখন আমি আর দিদি — আমাদের দুইজনের ছোট সংসার।
আমি চিঠিগুলোর মধ্যে যেন একটা বন্ধ দরজার ওপাশে আলো দেখি — সেই আলো তুমি।
তুমি কেমন? তোমার মা-বাবা? কাউকে বলেছো আমার কথা?”

ঋদ্ধির চোখে জল আসে। সে ভাবে, একজন ছেলে, এতটা ভেতর খুলে দেয় কাউকে — শুধু চিঠিতে?
এই গভীর আত্মার ছোঁয়া যে খুব কম পাওয়া যায়।

পর্ব ৭: (ঋদ্ধির কলেজে নাটক, প্রথম কবিতা পাঠ)।

ঋদ্ধির কলেজে বসন্তোৎসব। সে এবার নিজের লেখা কবিতা পাঠ করবে।
মঞ্চে দাঁড়িয়ে তার চোখ বারবার খোঁজে সেই একজনকে, যে আসবে না, তবু তার সব কবিতার উৎস।
সে পড়ে তার নিজের লেখা কবিতা:

“চিঠির কাগজে আঁকা নামহীন মুখ,
প্রতিটি অক্ষরে তুমি ছিলে, তবু চেনা হলে না।
তুমি এসোনি কোনো সন্ধ্যায়,
কিন্তু আমার প্রতিটি সকাল, তোমায় দিয়েই শুরু।”

বন্ধুরা প্রশংসা করে, কিন্তু সে জানে কবিতার মূল শ্রোতা আজ নেই।
পরদিন সে চিঠির সঙ্গে কবিতার কপি পাঠিয়ে দেয় আকাশকে।

পর্ব ৮: (আকাশের ডাকঘরের গোলমাল)।

ডাকঘরে হঠাৎ চিঠি হারানোর অভিযোগে একটা তদন্ত হয়।
আকাশকে প্রশ্ন করা হয় — সে কি ব্যক্তিগত চিঠি খুলে পড়ে?
কিন্তু সে নিজেকে সামলে নেয়। ঋদ্ধির চিঠির কথা কাউকে না বলে কেবল নিজের সততা প্রমাণ করে।
বস, মিস্টার মুখার্জি, পরে বলে,
— “তোকে জানি বেটা, কিন্তু সাবধান। আজকের দিনে কেউ কাউকে চিঠি লেখে?”
আকাশ একভাবে হেসে ফেলে।
সে জানে, আজও কেউ কেউ হৃদয়ের খামে ভালোবাসা ভরে পাঠায়…

পর্ব ৯: (ঋদ্ধির অভিমান)।

এক সপ্তাহ চিঠি আসে না।
ঋদ্ধি ঘুমাতে পারে না, চোখে কালি পড়ে যায়।
সে ভাবে —
“তাহলে কি আকাশও চলে গেল? সেও কি এখন বাস্তবের দিকে ফিরে গেল?”
চিঠির প্রতীক্ষায় দিন কেটে যায়।
অবশেষে চতুর্থ সপ্তাহে চিঠি আসে, কিন্তু অল্প কথায় লেখা:

“কিছুদিন ডাকঘরের ঝামেলায় মন ছিল না, দুঃখ দিয়েছি।
তবে বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে লেখা বন্ধ করিনি — শুধু একটু হারিয়ে গিয়েছিলাম।
তুমি রাগ করো?
তুমি কি এই চিঠির উত্তর দেবে, নাকি আমায় ক্ষমা করবে না আর?”
— তোমার আকাশ

ঋদ্ধি ভেতরে কেঁপে ওঠে।
তার চোখে জল গড়িয়ে পড়ে — সে রাগ করতে পারেনি, শুধু মন খারাপ করেছিল।
সে উত্তর লেখে —

“আমি চিঠি পাওয়ার অপেক্ষা করি, রাগ করি না। আমি আজকাল তোমার শব্দেই বাঁচি আকাশ…”

পর্ব ১০: (এক দীর্ঘ চিঠিতে ক্ষমা)।

এই পর্বে আকাশ নিজের সমস্ত অনুশোচনা এক চিঠিতে লেখে।

“ঋদ্ধি, তুমি জানো, চিঠি না পাঠিয়ে আমি নিজেকেই যেন ভুলে গিয়েছিলাম।
আমি এখন বুঝি, এই চিঠিগুলো শুধু লেখা নয় — এটা আমাদের অস্তিত্ব।
আমি তোমায় না দেখে ভালোবেসে ফেলেছি, হয়তো অযৌক্তিক, কিন্তু এর চেয়ে সত্য আর কিছুই নেই।
যদি পারো, আমাকে ক্ষমা কোরো।
আমি আর কখনো হারিয়ে যাবো না।”

চিঠির শেষে ছিল একটা প্রশ্ন —
“তুমি কি আমাকে ঠিকঠাক ভালোবাসো, ঋদ্ধি?”
ঋদ্ধি উত্তর দেয় না সাথে সাথে।
সে জানে, এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া মানে… তার ভিতরটাও মেলে ধরা।
তার চোখে তখন মেঘ জমে —
“ভালোবাসা কি সত্যিই হয় চিঠিতে?
না কি… এটাও একটা গল্প মাত্র?”

অসাধারণ! নিচে আমি তোমার জন্য পর্ব ৫ থেকে ১০ পর্যন্ত গল্পটি পরপর সাজিয়ে দিচ্ছি। প্রতিটি পর্ব ছোট ছোট করে হলেও আবেগ, টান ও নাটকীয়তা ধরে রাখার চেষ্টা করেছি।

📖 চিঠিতে লেখা প্রেম

পর্ব ৫–১০

পর্ব ৫: কাকলির সন্দেহ

কাকলি এখন আর চুপ করে নেই।
একদিন চিঠিগুলো দেখে বলে বসলো,
— “দেখ, ঋদ্ধি, অচেনা কারও সঙ্গে এমন আবেগ দিয়ে জড়িয়ে পড়া ঠিক নয়। হয়তো ও বিবাহিত, কিংবা…”
— “তুমি ওকে চেনো না, কাকলি,” বলে ঋদ্ধি শান্তভাবে চিঠিগুলো গুছিয়ে রাখে।
— “তুইও কি চাস না, একবার ওকে দেখতে?”
— “না কাকলি। আমি চাই চিঠিগুলো থাকুক… ওকে না দেখেই এই অনুভবটা সত্যি।”
কিন্তু কাকলির মনে একটা অস্থির সন্দেহ বাসা বাঁধে — আর সে চুপচাপ কিছু খোঁজ নিতে শুরু করে…

পর্ব ৬: আকাশের ব্যক্তিজীবন প্রকাশ

ঋদ্ধির চিঠির উত্তরে আকাশ এবার নিজের কিছু ব্যক্তিগত কথা জানায়।

“তুমি জেনো, আমি ছোটবেলা থেকে বইয়ের মধ্যে থাকতাম। মা মারা যান যখন আমি দশ বছরের, বাবা এরপর আর নতুন সংসার করেননি। এখন আমি আর দিদি — আমাদের দুইজনের ছোট সংসার।
আমি চিঠিগুলোর মধ্যে যেন একটা বন্ধ দরজার ওপাশে আলো দেখি — সেই আলো তুমি।
তুমি কেমন? তোমার মা-বাবা? কাউকে বলেছো আমার কথা?”

ঋদ্ধির চোখে জল আসে। সে ভাবে, একজন ছেলে, এতটা ভেতর খুলে দেয় কাউকে — শুধু চিঠিতে?
এই গভীর আত্মার ছোঁয়া যে খুব কম পাওয়া যায়।

পর্ব ৭: ঋদ্ধির কলেজে নাটক, প্রথম কবিতা পাঠ

ঋদ্ধির কলেজে বসন্তোৎসব। সে এবার নিজের লেখা কবিতা পাঠ করবে।
মঞ্চে দাঁড়িয়ে তার চোখ বারবার খোঁজে সেই একজনকে, যে আসবে না, তবু তার সব কবিতার উৎস।
সে পড়ে তার নিজের লেখা কবিতা:

“চিঠির কাগজে আঁকা নামহীন মুখ,
প্রতিটি অক্ষরে তুমি ছিলে, তবু চেনা হলে না।
তুমি এসোনি কোনো সন্ধ্যায়,
কিন্তু আমার প্রতিটি সকাল, তোমায় দিয়েই শুরু।”

বন্ধুরা প্রশংসা করে, কিন্তু সে জানে কবিতার মূল শ্রোতা আজ নেই।
পরদিন সে চিঠির সঙ্গে কবিতার কপি পাঠিয়ে দেয় আকাশকে।

পর্ব ৮: আকাশের ডাকঘরের গোলমাল

ডাকঘরে হঠাৎ চিঠি হারানোর অভিযোগে একটা তদন্ত হয়।
আকাশকে প্রশ্ন করা হয় — সে কি ব্যক্তিগত চিঠি খুলে পড়ে?
কিন্তু সে নিজেকে সামলে নেয়। ঋদ্ধির চিঠির কথা কাউকে না বলে কেবল নিজের সততা প্রমাণ করে।
বস, মিস্টার মুখার্জি, পরে বলে,
— “তোকে জানি বেটা, কিন্তু সাবধান। আজকের দিনে কেউ কাউকে চিঠি লেখে?”
আকাশ একভাবে হেসে ফেলে।
সে জানে, আজও কেউ কেউ হৃদয়ের খামে ভালোবাসা ভরে পাঠায়…

পর্ব ৯: ঋদ্ধির অভিমান

এক সপ্তাহ চিঠি আসে না।
ঋদ্ধি ঘুমাতে পারে না, চোখে কালি পড়ে যায়।
সে ভাবে —
“তাহলে কি আকাশও চলে গেল? সেও কি এখন বাস্তবের দিকে ফিরে গেল?”
চিঠির প্রতীক্ষায় দিন কেটে যায়।
অবশেষে চতুর্থ সপ্তাহে চিঠি আসে, কিন্তু অল্প কথায় লেখা:

“কিছুদিন ডাকঘরের ঝামেলায় মন ছিল না, দুঃখ দিয়েছি।
তবে বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে লেখা বন্ধ করিনি — শুধু একটু হারিয়ে গিয়েছিলাম।
তুমি রাগ করো?
তুমি কি এই চিঠির উত্তর দেবে, নাকি আমায় ক্ষমা করবে না আর?”
— তোমার আকাশ

ঋদ্ধি ভেতরে কেঁপে ওঠে।
তার চোখে জল গড়িয়ে পড়ে — সে রাগ করতে পারেনি, শুধু মন খারাপ করেছিল।
সে উত্তর লেখে —

“আমি চিঠি পাওয়ার অপেক্ষা করি, রাগ করি না। আমি আজকাল তোমার শব্দেই বাঁচি আকাশ…”

পর্ব ১০: এক দীর্ঘ চিঠিতে ক্ষমা

এই পর্বে আকাশ নিজের সমস্ত অনুশোচনা এক চিঠিতে লেখে।

“ঋদ্ধি, তুমি জানো, চিঠি না পাঠিয়ে আমি নিজেকেই যেন ভুলে গিয়েছিলাম।
আমি এখন বুঝি, এই চিঠিগুলো শুধু লেখা নয় — এটা আমাদের অস্তিত্ব।
আমি তোমায় না দেখে ভালোবেসে ফেলেছি, হয়তো অযৌক্তিক, কিন্তু এর চেয়ে সত্য আর কিছুই নেই।
যদি পারো, আমাকে ক্ষমা কোরো।
আমি আর কখনো হারিয়ে যাবো না।”

চিঠির শেষে ছিল একটা প্রশ্ন —
“তুমি কি আমাকে ঠিকঠাক ভালোবাসো, ঋদ্ধি?”
ঋদ্ধি উত্তর দেয় না সাথে সাথে।
সে জানে, এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া মানে… তার ভিতরটাও মেলে ধরা।
তার চোখে তখন মেঘ জমে —
“ভালোবাসা কি সত্যিই হয় চিঠিতে?
না কি… এটাও একটা গল্প মাত্র?”

 

পর্ব ১১: (আকাশের দিদির দেখা মেলানোর চেষ্টা)।

আকাশের দিদি মালবিকা অনেক দিন ধরেই ছোট ভাইয়ের এই “চিঠি প্রেম” নিয়ে চিন্তিত।
একদিন রাতে আকাশ যখন রান্নাঘরে, তখন মালবিকা ওর ড্রয়ার থেকে কয়েকটা চিঠি দেখে ফেলে।
চোখে পড়ে —

“ঋদ্ধি সরকার, কলেজ স্কোয়ার, কলকাতা…”

মালবিকা ঠিক করে, ছেলেটাকে বাঁচাতে হলে, মেয়েটার বাস্তব অস্তিত্ব জানা দরকার।
সে নিজের একজন পরিচিতের মাধ্যমে কলেজ স্কোয়ার এলাকায় খোঁজ শুরু করে…
পায় একটা সূত্র —
“ঋদ্ধি, কলকাতার সিটি কলেজে পড়ে, সাহিত্যের ছাত্রী।”
মালবিকা আর আকাশকে কিছু না বলে চুপচাপ একদিন কলকাতা রওনা দেয়…

পর্ব ১২: (পুজোর সময় কলকাতায় দেখা হতে পারত)।

এদিকে শরৎ এসেছে। দুর্গাপূজার ঢাকে শহর ভরে গেছে।
ঋদ্ধি আকাশকে চিঠিতে লিখে —

“পুজোর সময় যদি তুমি কলকাতায় আসো, আমি কলেজ ফেস্টিভ্যালে কবিতা পাঠ করব।
দেখা না হলেও, crowd-এর মধ্যে একটা অচেনা চোখ যদি আমার দিকে তাকিয়ে থাকে… জানব, তুমি এসেছো।”

আকাশ খুব করে চায় যাওয়া, কিন্তু অফিস থেকে ছুটি মেলে না।
তার দিদি তখনো শহরে… এবং সে গিয়ে দেখে ঋদ্ধিকে ফেস্টিভ্যালে পারফর্ম করতে।
এক মুহূর্ত, মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকা সেই সাদা-শাড়ি-পরা মেয়েটার চোখে একরাশ গভীরতা দেখে মালবিকা থমকে যায়।
সে ভাবে,
“এই মেয়েটাই কি আমার ভাইয়ের চিঠির নায়িকা?”
কিন্তু সে সামনে গিয়ে কিছু বলে না। শুধু দূর থেকে দেখে যায়।

পর্ব ১৩: (দেখা হয়নি, বেড়ে যায় দূরত্ব)।

পূজোর পর চিঠিতে ঋদ্ধি লেখে:

“তুমি এলে না কেন? আমি ওইদিন একটু একটু করে তোমাকে খুঁজছিলাম।
crowd-এ অনেক চোখ, কিন্তু কোনোটাই ছিল না আমার আকাশ…”

আকাশ কেবল লিখে:

“তুমি বলেছিলে দেখা না হলেও চলবে… এখন তুমি কাঁদছো কেন?”

ঋদ্ধি অভিমান করে চিঠির উত্তর দেয় না।
একটা সপ্তাহ, তারপর আরেকটা…
আকাশও কিছু লেখে না।
এক নীরবতা জমতে থাকে তাদের মাঝখানে —
যেন প্রতিটা না-পাওয়া শব্দ এক একটা শূন্য খাম হয়ে ফেরত যাচ্ছে…

পর্ব ১৪: (ঋদ্ধির বাবা অন্যত্র বিয়ের প্রস্তাব দেন)।

এক সন্ধ্যায় ঋদ্ধির বাবা বলেন,
— “একটা ভালো পরিবার থেকে প্রস্তাব এসেছে, ঋদ্ধি। ছেলে কলকাতায় চাকরি করে। দেখা করবি একবার?”
ঋদ্ধি চমকে ওঠে।
সে বলে না কিছু, শুধু নিজের ঘরে গিয়ে একটার পর একটা চিঠি বের করে বিছানায় ছড়িয়ে দেয়।
প্রত্যেকটা কাগজে যেন আকাশের ছোঁয়া —
তার না দেখা ভালোবাসা।
সে রাতটা ঘুমায় না। শুধু লেখে ডায়েরিতে —
“আমি যদি হেরে যাই, তাহলে কাগজের ভালোবাসা কি জিতবে কখনও?”

পর্ব ১৫: (আকাশের ভেতর যুদ্ধ)।

অন্যদিকে আকাশ মালবিকার মুখোমুখি।
মালবিকা বলে,
— “আমি ওকে দেখেছি। মেয়েটা খুব ভালো। কিন্তু ও তো জানে না তুমি কে। এক অদ্ভুত মোহ তৈরি হয়েছে তোমাদের মধ্যে।
এটা যদি একদিন ভেঙে পড়ে? ও কি সামলাতে পারবে?”
আকাশ চুপ করে থাকে।
তার মাথার ভিতর চলছে এক যুদ্ধ —
“আমি কি নিজে থেকেই দূরে সরে যাই?
নাকি ওকে জানাই আমি কে?
আমার ছবি পাঠাবো?
ও যদি আমাকে দেখে পছন্দ না করে? যদি…”
কিন্তু সেই রাতে, আকাশ একটা ছোট্ট খামে নিজের একটা পুরনো ছবি রেখে চিঠির সঙ্গে পাঠায়।
চিঠির শেষ লাইনে লেখে —

“ঋদ্ধি, আজ আমি তোমায় আমার মুখটা দিলাম।
দেখো, তুমি যদি ভালোবাসো আমাকে — চিঠির মতোই।”

পর্ব ১৬: (কাকলির সাহসী পদক্ষেপ)।

ঋদ্ধি আকাশের ছবি হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে থাকে।
না সে কাঁদে, না হাসে। কেবল দেখে। আর ভাবে –
“এই মানুষটাই? এই সেই আকাশ, যে আমার প্রতিটি দুঃখের ওষুধ হয়ে উঠেছিল?”
কিন্তু চিঠিতে সে কোনো উত্তর দেয় না।
দুদিন, চারদিন… এক সপ্তাহ কেটে যায়।
এদিকে কাকলি চুপচাপ সব লক্ষ্য করছিল।
একদিন সে বলে,
— “দেখ, তোদের গল্পটা কাগজে আঁকা, কিন্তু তাতে রং আছে। যদি তুই কিছু না বলিস, সব মুছে যাবে।
তোর যদি ভয় লাগে, আমি তোকে নিয়ে ওর সঙ্গে দেখা করব।”
ঋদ্ধি চমকে যায়।
— “তুই জানিস কোথায়?”
— “না, কিন্তু আমরা বের করব। পিওনের খামে মোহর দেওয়া নাম আর এলাকা তো রয়েছেই।”
সেই শুরু —
কাকলি ঠিক করে, সে নিজেই একদিন চিঠি লেখবে আকাশকে।

পর্ব ১৭: (ঋদ্ধির বিদ্রোহ)।

ঋদ্ধির বাবা আবার বিয়ের ব্যাপারে চাপ দেন।
তিনি বলেন,
— “এই বয়সে কবিতা দিয়ে পেট চলে না। ভালো ছেলে, ভালো চাকরি — জীবন সহজ হবে।”
ঋদ্ধি শান্ত গলায় বলে,
— “বাবা, তুমি কি জানো, আমি কোনোদিন কারো সঙ্গে এতখানি মন খুলে কথা বলিনি?
তুমি যাকে পছন্দ করছো, সে আমাকে বুঝবে তো?”
রাগে-অভিমানে সেই রাতে সে নিজের ঘরে বসে চিঠি লেখে আকাশকে:

“আমি জানি না আমাদের শেষ কোথায়, কিন্তু আমি চাই না এটা চিঠির মাঝখানে আটকে থাকুক।
আমি তোমাকে ছুঁতে চাই না, আমি তোমার সত্যটা জানতে চাই।
তুমি যদি পারো, এসো দেখা করতে।
আমি থাকব কলেজের সামনে, আগামী শনিবার, দুপুর ৩টায়।
যদি না আসো, বুঝব — গল্পটা শেষ।”

পর্ব ১৮: (প্রথম ফোনালাপ)।

আকাশ এই চিঠি পড়ে কাঁপতে থাকে।
সেই মুহূর্তে প্রথমবার সে নিজের মনের ভয় ভেঙে দিদিকে বলে,
— “আমাকে ওর সঙ্গে দেখা করতেই হবে। এখনই। কিন্তু একটা কথা বলতেই হবে আগে…”
দিদি একটা ফোন নম্বর জোগাড় করে দেয়। কাকলির মাধ‍্যমে।
রাতে, বহুদিনের পর, চিঠির শব্দ কণ্ঠে রূপ নেয়।
ঋদ্ধি ফোনটা তোলে:
— “হ্যালো?”
— “আমি… আকাশ।”
এক মুহূর্ত নীরবতা। তারপর দু’পাশেই নিঃশ্বাস।
আরো কিছু না বলেও তারা সব বলে ফেলে।
শব্দের মাঝখানে শুধু কান্না আর হাসির সুর।
ঋদ্ধি শুধু ফিসফিসিয়ে বলে,
— “তুমি আসবে তো?”
— “আসব। এবার সত্যিই আসব।”

পর্ব ১৯: (একপাক্ষিক সিদ্ধান্তের বিপরীতে)।

শনিবার সকাল।
আকাশ ট্রেন ধরে কলকাতা আসছে। তার ব্যাগে কয়েকটি চিঠি, একটা পুরনো বই, আর একটা ছোট্ট উপহার।
কিন্তু সেই মুহূর্তে, মালবিকা রাস্তায় দুর্ঘটনায় পড়ে। হাসপাতালে ভর্তি।
আকাশ দ্বিধায় পড়ে যায় — সে কি যাবে দেখা করতে, নাকি থাকবে দিদির পাশে?
সে ফোন করে কাকলিকে —
— “ঋদ্ধিকে বলো, আমি কথা রেখেও রাখতে পারলাম না। আমি আসতে পারছি না…”
কাকলি ফোন রাখার পর ঋদ্ধিকে কিছু বলে না।
ঋদ্ধি বিকেলে কলেজ স্কোয়ারে দাঁড়িয়ে থাকে।
ঘড়ির কাঁটা চলে যায় ৩টা, ৪টা, ৫টা…
সে জানে, হয়তো আকাশ আর আসবে না।
কিন্তু মন বলে —
“ভালোবাসা চলে যেতে পারে, কিন্তু প্রতীক্ষা কখনও মরে না…”

পর্ব ২০: (আকাশ কলকাতা আসে)।

তিনদিন পর মালবিকার অবস্থার উন্নতি হয়।
আকাশ সেই রাতেই একটি ট্রেন ধরে কলকাতা আসে।
সকাল ৬টা, সিটি কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে…
সে দেখে — একজন মেয়ে মাধবীলতা ফুলের নিচে দাঁড়িয়ে আছে, চোখে ক্লান্তি, মুখে আলো।
ঋদ্ধি।
তারা চুপ করে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
নজর এড়িয়ে থাকা সেইসব চিঠির শব্দ যেন এবার হাওয়ায় ভাসে।
আকাশ ফিসফিস করে বলে —
— “তুমি চিঠিতে যেমন ছিলে, চোখেও ঠিক তেমনই…”
ঋদ্ধি শুধু বলে —
— “তুমি আসবে বলেছিলে। তুমি এসেছো। বাকিটা আমি মানি…”
এক মুহূর্ত, সময় থেমে যায়।
আর, একটা পুরনো প্রেম… কাগজের গন্ধ থেকে সত্যিকারের শ্বাসে রূপ নেয়।

পর্ব ২১: (মুখোমুখি দেখা)।

সিটি কলেজের সামনের সেই বেঞ্চ — যেখানে একসময় ঋদ্ধি একা বসে চিঠি লিখত, আজ সেখানেই বসে আকাশ।
দু’জনে একসাথে।
তারা অনেকক্ষণ চুপ করে থাকে।
পরে আকাশ বলে,
— “তুমি জানো? আমি ভেবেছিলাম দেখা হলে সবকিছু বদলে যাবে।
কিন্তু না… চিঠির ঋদ্ধি আর এই ঋদ্ধি — একদম এক!”
ঋদ্ধি হেসে বলে,
— “তুমি ঠিক বলেছো… চিঠিতে আমরা একে অপরের মধ্যে যা খুঁজেছি, চোখে সেটা হারাবে না। কারণ চিঠি তো শুধু কাগজ নয়, ওটা তো আত্মা।”
ওই বিকেলে, তারা আর কিছু চায় না — শুধু একটু পাশে থাকা, একটু চুপচাপ থাকাই যেন বহুদিনের পূর্ণতা।

পর্ব ২২: (পরিবার জানে সব)

ঋদ্ধি নিজের পরিবারকে সব বলে দেয়।
প্রথমে বাবা রেগে যান।
— “তুমি একজন সাধারণ ডাকঘরের কর্মচারীর সঙ্গে জীবন কাটাবে?”
মা বোঝাতে চেষ্টা করেন:
— “ওকে এতদিন তুমি জানো না, আর মেয়েটা তাকে ভালোবাসে… এতটাই গভীরভাবে।”
কিন্তু বাবা সহজে মানতে চান না।
তবু, আকাশের চিঠিগুলো পড়ে তাঁর মুখে একরকম নরমতা আসে।
তিনি বলেন,
— “ছেলেটার কলমে যা আছে, সেটা যদি তার হৃদয়ে থাকে — তাহলে আমি কিছু বলব না। কিন্তু জীবনটা কঠিন, ও পারবে তো?”
ঋদ্ধি জবাব দেয়,
— “যে মানুষ কথা না রেখেও ক্ষমা চাইতে জানে, সে কষ্ট এলেও পাশে থাকবে।”

পর্ব ২৩: (সম্পর্কের স্বীকৃতি চাওয়া)।

আকাশ এবার নিজের দিদিকে সব জানায়।
মালবিকা প্রথমে একটু চিন্তিত ছিল, কিন্তু তারপর বলে,
— “যদি ও তোমার সেই ঋদ্ধি হয়, তাহলে আর ভয় কিসে? এগিয়ে যা, ভাই।”
আকাশ এবং ঋদ্ধি এবার একসাথে দুই পরিবারের সামনে দাঁড়ায়।
আকাশ বলে,
— “আমি বড় কিছু দিতে পারব না, কিন্তু ওর প্রতিটি চিঠির মতোই প্রতিদিন ওর পাশে থাকব। ভুল করলেও চিঠির মতো ক্ষমা চাইব।”
বাবা একটু চুপ করে, তারপর বলেন,
— “আচ্ছা, এবার যদি আমার মেয়ের চোখের জল ফেলে রাখো — তখন কিন্তু আমি চিঠিতে নয়, সামনে দাঁড়িয়ে আসব!”
ঘরজুড়ে হাসি।
প্রেম এবার সত্যিকারের নাম পায় — “একটি সম্পর্ক”।

পর্ব ২৪: (চিঠির শেষ পাতা)।

বিয়ের ঠিক আগের রাতে আকাশ ও ঋদ্ধি আবার চিঠি লেখে —
একটি শেষ চিঠি, যেটা তারা একে অপরকে দেবে বিয়ের দিন সকালে।
চিঠিতে ছিল…
আকাশের চিঠি:

“আমার প্রিয় চিঠির মেয়ে,
আগামীকাল থেকে আমাদের আর কাগজে কাগজে দেখা হবে না।
তুমি আমার পাশে থাকবে, আমার হাতে হাত রাখবে, আর প্রতিটি কথা — সরাসরি হৃদয় থেকে কানে পৌঁছাবে।
তবুও এই শেষ চিঠি রাখো — যেন কোনোদিন ঝড় এলে, তুমি পড়ে নিতে পারো আমাদের শুরুটা।”

ঋদ্ধির চিঠি:

“আকাশ,
তুমি শুধু একজন চিঠির মানুষ ছিলে না, তুমি আমার নীরবতা ছিলে।
আমি জানি, একদিন আমাদের কথা কমে যাবে — দায়িত্বে, বাস্তবতায় হারিয়ে যাবে।
কিন্তু আমি প্রতিদিন অন্তত একবার তোমার নামের আগে ‘আমার’ শব্দটা বসিয়ে ভাবব — আর মনে করব, ‘আমার আকাশ’ তখনও আছে।”

পর্ব ২৫: (নতুন ঠিকানা — একই নামে)।

বিয়ের দিন।
ঋদ্ধি লাল বেনারসি পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।
আকাশ আশীর্বাদের ভিড়ে দাঁড়িয়ে, চোখে জল।
পান্ডেল জুড়ে সবাই জানে — এই বিয়ে শুধু দুটি মানুষ নয়,
দুইটি আত্মা — যারা চিঠির অক্ষরে ভালোবেসেছিল।
বিয়ের পর প্রথম রাত।
আকাশ ঋদ্ধির হাতে একটা খাম দেয়।
ঋদ্ধি অবাক হয়ে বলে,
— “আবার চিঠি?”
আকাশ হাসে,
— “এটাই শেষ নয়।
এখন থেকে প্রতি বছর আমাদের বিবাহবার্ষিকীতে আমি তোমায় একটা চিঠি লিখব…
ঠিক যেমন আমাদের শুরু হয়েছিল।”
ঋদ্ধি খামটা খোলে।
সেখানে লেখা ছিল —

“আমার নতুন ঠিকানা:
ঋদ্ধির হৃদয়ের ভেতরে,
চিরকাল আকাশ।”

✅ সমাপ্তি

চিঠিতে লেখা প্রেম —
একটি কাগজে আঁকা ভালোবাসা, যা কালজয়ী।

Share This
Categories
গল্প

গল্পের নাম – তুমি ফিরে এসো না।

১.
দীপ্ত আর অনন্যার গল্প শুরু হয়েছিল এক বসন্ত সন্ধ্যায়। কলেজ ফেস্টিভ্যালে, এক ক্লান্ত বিকেলে দীপ্ত গিটার হাতে মঞ্চে গাইছিল —
“তুমি আসবে বলে, আজো আমি পথ চেয়ে থাকি…”
সেই সুর যেন অনন্যার হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছিল। গানের শেষে করতালির মাঝে, এক পলকের চাহনিতে তারা বুঝেছিল — এই গল্পের শুরুটা সুন্দর হবে।
দুই বছর ধরে তারা একই পথের যাত্রী ছিল। তারা হাঁটত শিয়ালদহ থেকে কলেজস্ট্রিট, ভাগ করত এক কাপ কড়া লেবু চা, আর ভিজত হঠাৎ নেমে আসা বৃষ্টিতে।
২.
কিন্তু প্রতিটা প্রেমে যেমন এক রকম রঙিন অধ্যায় থাকে, তেমনই আসে ধূসর এক পর্ব। দীপ্ত পড়ালেখায় খুব ভালো ছিল। সে চাইছিল উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে। অনন্যা চাইছিল কিছুদিন পরে বিয়েটা হোক।
দুই জনের চাওয়া ভিন্ন হচ্ছিল, অথচ ভালোবাসাটা ছিল একদম খাঁটি। অনন্যা বলেছিল,
— “তুমি যাও, আমি অপেক্ষা করব।”
দীপ্ত বলেছিল,
— “আমি চাই না তুমি একা থাকো। আমি চিঠি লিখব, ফোন করব, কিন্তু জানি না সময় কেমন বদলাবে।”
৩.
বিদেশ থেকে দীপ্তের প্রথম কয়েকটা মেইল এসেছিল, কিছু চিঠিও। অনন্যা প্রতিদিন পোস্টবক্সের দিকে তাকিয়ে থাকত।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ কমে এলো। ব্যস্ততা, পড়ালেখা, চাকরির চাপ — দীপ্ত আর নিয়মিত লিখত না। অনন্যা তবু প্রতিদিন ডায়েরিতে লিখে রাখত তার কথা, তার পুরোনো মেসেজ, মেইলের শেষ লাইনগুলো।
একদিন শেষ চিঠিটা এলো —
“আমার এক সহপাঠীর সঙ্গে বিয়ের কথা চলছে। আমি জানি তুমি কষ্ট পাবে, কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে আজও ভালোবাসি। কিন্তু বাস্তব আর ভালোবাসা সবসময় মেলে না।”
৪.
অনন্যার সেই দিনের ডায়েরির পৃষ্ঠা ভিজে ছিল অশ্রুজলে। সে চিৎকার করে কাঁদতে চায়নি, শুধু চুপচাপ জানালার ধারে বসেছিল, মাথায় ঘুরছিল একটাই কথা —
“ভালোবাসলেও কেউ কাউকে এভাবে ছেড়ে যেতে পারে?”
এরপর কেটে গেছে তিন বছর। এখন অনন্যা শহরের এক স্কুলে বাংলা পড়ায়। সাদা শাড়ি, লাল পাড়, মাটি রঙের বালা, চোখে ঘুমহীনতা — সে আজও দীপ্তের চিঠিগুলো নিজের বুকের ড্রয়ারে রেখে দেয়।
সে বিয়ে করেনি। কেউ পছন্দ হলে বলে,
— “ভালোবাসা একবারই হয়। দ্বিতীয়বার হলে সেটা বোঝাপড়া হয়, প্রেম নয়।”
৫.
একদিন স্কুল শেষে রাস্তায় হঠাৎ এক গানের সুর ভেসে এলো —
“তুমি আসবে বলে, আজো আমি পথ চেয়ে থাকি…”
পেছন ফিরে অনন্যা দেখল — রাস্তার এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে দীপ্ত, চোখে পুরোনো দৃষ্টিটা, মুখে অপরাধবোধ।
সে বলল না “চলো”, বলল না “ফিরে এসো”, শুধু বলল —
“তুমি ভালো থেকো।
আমার হৃদয়ের এক কোণে তুমি থাকো, কিন্তু আমার জীবনে নয়।”
দীপ্ত চলে গেল।
আর অনন্যা জানে, এই বিরহও ভালোবাসারই আরেক রূপ। প্রতীক্ষা করা মানেই ফিরে পাওয়ার আশা নয়, বরং এক রকম সম্মান জানানো অতীতকে — যা ছিল, যা আর নেই।

📌 গল্পের বার্তা:

ভালোবাসা কখনো-কখনো পাওয়া নয়, হারিয়েও থাকে। কিন্তু সেটাই হয়তো মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় সত্য — যে ভালোবাসা একসময় ছিল, আর তার স্মৃতি হয়ে থাকে চিরকাল।

Share This
Categories
গল্প

গল্পের নাম: বৃষ্টি ভেজা প্রতীক্ষা।

শহরের অলস সন্ধ্যায় ধীরে ধীরে নেমে এসেছিলো মেঘ। টিনের চালে টুপটাপ শব্দে বৃষ্টির সুর বাজছিলো। রিকশার চাকায় ছিটকে পড়া জলের ছোঁয়ায় শহর যেনো ভিজে উঠেছিলো স্মৃতির মতো।

রানু আজও অপেক্ষায় — ঠিক সেই টং দোকানের সামনে, যেখানে প্রথম দেখা হয়েছিলো তাদের। সাত বছর আগের এক বর্ষার রাতেও এমনই বৃষ্টি ছিলো। ছাতা ছিলো না কারোরই। ভিজতে ভিজতে, চায়ের কাপ হাতেই কথা শুরু হয়েছিলো তাদের।

তখন সোহম বলেছিলো,
“বৃষ্টি যদি থামে না, তবে মনে হয় আমাদের গল্পও থামবে না।”

সেই গল্প আর শেষ হয়নি ঠিকই, কিন্তু মাঝপথে একদিন সোহম হারিয়ে যায় — পড়াশোনার জন্য বিদেশ, তারপর চাকরি, তারপর যোগাযোগহীনতা।

কিন্তু রানু থেমে যায়নি অপেক্ষা করা থেকে। বৃষ্টি হলেই সে চলে আসে এখানে — যেদিন প্রথম ভালোবাসা স্পর্শ করেছিলো।

আজও ঠিক তেমনই বৃষ্টি। চায়ের কাপে ধোঁয়া উঠছে, মাটির গন্ধে হৃদয় নরম হয়ে যাচ্ছে।

হঠাৎ পেছন থেকে এক চেনা কণ্ঠ —
“এক কাপ কম চিনি, তাই তো?”

রানু ধীরে ফিরে তাকায়। দাঁড়িয়ে সোহম, পুরো ভিজে, চোখে অনুশোচনা আর ভালোবাসার মিশেল।

রানুর চোখে জল, মুখে হাসি —
“তুমি আবার এসেছো?”

সোহম কাঁপা গলায় বলে,
“তুমি যে অপেক্ষা করছো এখনো… বৃষ্টির মতো ধুয়ে দিলো সব ভুল।”

আর শহরজুড়ে তখনো বৃষ্টি পড়ছে — কিন্তু ভেতরে, রানু আর সোহমের মনে তখন এক রকম শান্ত রোদ উঠে গেছে।

 

Share This
Categories
গল্প

স্মরণে ভারতের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনাট্যকার, চলচিত্র পরিচালক – সৈয়দ আখতার মির্জা।।।

সাইদ আখতার মির্জা (জন্ম 30 জুন 1943) একজন ভারতীয় চিত্রনাট্যকার এবং হিন্দি চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশনের পরিচালক । তিনি মোহন জোশী হাজির হো- এর মতো উল্লেখযোগ্য সমান্তরাল চলচ্চিত্রের নির্মাতা ! (1984), আলবার্ট পিন্টো কো গুসা কিয়ুন আতা হ্যায় (1980), সেলিম ল্যাংদে পে মাত রো (1989) এবং নাসিম (1995), যেটি 1996 সালে দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিল।

সাইদ মির্জা আজীবন সম্মাননা পেয়েছিলেন। ICA-তে কৃতিত্ব পুরস্কার – 2020 সালে আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক আর্টিফ্যাক্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল।তিনি জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল নুক্কাদ (রাস্তার কোণ) (1986) এবং ইন্তেজার (অপেক্ষা করুন) (1988) এর পরিচালক এবং সামাজিক কল্যাণ এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উপর বিভিন্ন তথ্যচিত্রের পরিচালক।
প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা——-
সাইদ 1943 সালে মুম্বাই , মহারাষ্ট্রে আখতার মির্জার কাছে জন্মগ্রহণ করেন , যিনি 1960 এর দশকে স্বয়ং বিখ্যাত চিত্রনাট্যকার।
কিছুকাল বিজ্ঞাপনে কাজ করার পর, মির্জা ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (এফটিআইআই), পুনে, ভারতে যোগ দেন, যেখান থেকে তিনি 1976 সালে স্নাতক হন। পরবর্তীকালে, পরবর্তীতে তার কর্মজীবনে, তিনি ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতাও করেন, যা পরবর্তীকালে হয়ে ওঠে। প্রিমিয়ার ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান।

ব্যক্তিগত জীবন—–

তার বাবা আখতার মির্জা ছিলেন একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র স্ক্রিপ্ট লেখক, যার কৃতিত্ব ছিল নয়া দৌর এবং ওয়াক্তের মতো । তার ভাই হলেন আজিজ মির্জা , 1989 সালের টেলিভিশন সিরিয়াল সার্কাস পরিচালনার পর শাহরুখ খানকে চালু করার জন্য দায়ী বলিউড পরিচালক ।
তিনি তার স্ত্রী জেনিফারের সাথে মুম্বাই এবং গোয়াতে থাকেন। তার ছেলে সফদার ও জহির যথাক্রমে নিউইয়র্ক ও দুবাইতে থাকেন।

কর্মজীবন—–

সাঈদ আখতার মির্জা 1976 সালে একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম মেকার হিসাবে তার কর্মজীবন শুরু করেন, প্রশংসিত অরবিন্দ দেশাই কি আজীব দাস্তান (1978) এর সাথে চলচ্চিত্রে স্নাতক হন, সামন্ততান্ত্রিক অর্থ সংস্কৃতির ফাঁদে আটকে পড়া আদর্শবাদী যুবকের হতাশা সম্পর্কে। এটি বছরের সেরা চলচ্চিত্রের জন্য ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার জিতেছে । বহু কাজ তিনি করেছেন। সাঈদ আখতার মির্জা এশিয়ান একাডেমি অফ ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশনের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ক্লাবের আজীবন সদস্য ।

ফিল্মগ্রাফি——-

বস্তি উচ্ছেদ (1976), হত্যা (1976), ঘাশিরাম কোতোয়াল (1976), একজন অভিনেতা প্রস্তুত (1976), শহুরে হাউজিং (1977), অরবিন্দ দেশাই কি আজিব দাস্তান (1978), আলবার্ট পিন্টো কো গুসা কিয়ুন আতা হ্যায় (1980), পিপারসোদ (1982), মোহন জোশী হাজির হো! (1984), জবলপুরের রিকশা চালক (1984), নুক্কাদ (1986) টিভি সিরিজ, কেউ কি শুনছেন? (1987), আমরা কাবু করব (1988), ইন্তেজার (1988) টিভি সিরিজ, সেলিম ল্যাংদে পে মাত রো (1989), অজন্তা এবং ইলোরা (1992), নাসিম (1995), এক থো চান্স (2009)।

লেখক——

অরবিন্দ দেশাই কি আজিব দাস্তান (1978) (গল্প), আলবার্ট পিন্টো কো গুসা কিয়ুন আতা হ্যায় (1980), মোহন জোশী হাজির হো! (1984) (চিত্রনাট্য এবং গল্প), সেলিম ল্যাংদে পে মাত রো (1989) (চিত্রনাট্য ও গল্প), নাসিম (1995), চু লেঙ্গে আকাশ (2001), কর্ম ক্যাফে (সংক্ষিপ্ত) (2018)।

পুরস্কার——-

শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য 1979 ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার : অরবিন্দ দেশাই কি আজীব দাস্তান (1978), শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য 1981 ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার : আলবার্ট পিন্টো কো গুসা কিয়ুন আতা হ্যায় (1980) , 1984 পরিবার কল্যাণের জন্য শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার : মোহন জোশী হাজির হো! (1984), 1990 হিন্দিতে শ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্মের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার : সেলিম ল্যাংদে পে মাত রো (1989), 1996 শ্রেষ্ঠ পরিচালনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার : নাসিম, 1996 শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র, পুরস্কার : নাসিম (1995)।

উপন্যাস——–

আম্মি: একটি গণতান্ত্রিক মায়ের চিঠি (2008), দ্য মঙ্ক, দ্য মুর এবং মোসেস বেন জালোন (2012)।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার শতাব্দী প্রাচীন বিনশিরার রথ স্থাপনের ইতিহাস।।।।

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি ব্লকের তিওর বিনশিরা রথের মেলা উত্তরবংগের অন্যতম প্রাচীন মেলা।প্রায় ২০০ বছর আগে এই রথ যাত্রার সুচনা করেন বিনশিরার জমিদার সর্বেশ্বর লাহা। যদিও আজ কালের নিয়মে জমিদার প্রথা ঘুচে যাওয়ায় বর্তমানে বাৎসরিক রথ যাত্রা পালিত হয় পরিবারের একেক বছর একেক শরিকি মালিকানায়।

যদিও পুর্বে এই জগঅন্নাথ দেবের নামে নিজস্ব জমি ছিল প্রায় ২৫০ বিঘা। পরে সরকার বেশির ভাগ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নিলেও বর্তমানে ৬৭ বিঘা জমি এই দেবত্তর জগন্নাথের নামে রয়েছে। সেই জমি থেকে উপার্জিত টাকা দিয়েই সারা বছর দু বেলা নিত্য পুজো ভোগ আরতি চলে বিনশিরার এই প্রাচীন জগন্নাথ সুভদ্রা আর বলরাম দেবের মন্দিরে।
প্রত্যেক বছর রথযাত্রার দিনে প্রাচীন রীতি মেনে বিনশিরা জমিদার বাড়িতে পুজো হয় জগন্নাথ সুভদ্রা বলরামের। মন্দির প্রাঙ্গণে হরিনাম সংকীর্তনের বসে আসর। রথযাত্রা ঘিরে বিশাল মেলার আয়োজন করা হয়। নামে ভক্তের ঢল। শুধু জেলা থেকেই নয় জেলার পার্শ্ববর্তী জেলা মালদা, রায়গঞ্জ, শিলিগুড়ি থেকেও ভক্তরা ছুটে আসেন এই মেলায় এসে জগন্নাথ সুভদ্রা আর বলরামদেবের দর্শন পেতে।পা ছুয়ে প্রনাম করতে।বিকেলে রথের দড়ি টেনে জগন্নাথ সুভদ্রা বলরামকে মাসীর বাড়িতে নিয়ে যান ভক্তরা। এই রীতি যুগ যুগ ধরে আজও চলে আসছে।
পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার শতাব্দী প্রাচীন বিনশিরার রথ স্থাপনের ইতিহাস। জমিদার সর্বেশ্বর লাহার জ্যেষ্ঠ পুত্র অসুস্থ হওয়ায় তিনি জগন্নাথ দেবের কাছে পুত্রের আরোগ্য কামনা করে মানত করেছিলেন। মনস্কামনা পূরণ হওয়ার পরে ওড়িশার পুরী থেকে একটি নিম গাছ কেটে পাণ্ডাদের দিয়ে জগন্নাথ, সুভদ্রা, বলরামের মূর্তি তৈরি করে বিনশিরায় নিয়ে এসেছিলেন। সেখানে জগন্নাথ, সুভদ্রা, বলরামের মূর্তি স্থাপন করে রীতি মেনে পুজা শুরু করেন।

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ

নদীয়ার কৃষ্ণচন্দ্র রাজা নির্মিত যুগল কিশোর মন্দিরের অজানা কাহিনী।।।

যুগল কিশোর মন্দিরটি নদীয়ার কৃষ্ণচন্দ্র রাজা, নির্মাণ করেছিলেন। এই মন্দিরের পিছনে রয়েছে অজানা কাহিনী বর্তমান এই মন্দিরের দায়িত্বের যিনি রয়েছেন তিনি জানান মহর্ষি গঙ্গারাম দাস বৃন্দাবন থেকে গোবিন্দ কে এখানে নিয়ে এসেছিলেন, তখন সেখানে ছিল বকুল গাছ এই বকুল গাছের নিচেই তিনি বসবাস করতে থাকেন।

এরপর বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর তিনি স্বপ্নদ্রষ্টা হন একা থাকতে তার আর ভালো লাগছে না, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে রাধারানী রয়েছে সেখান থেকে নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর দেওয়ালের ফাঁকে লুকানো ছিল রাধারানী।

মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র নদীপথে মন্দিরে এসে কোন এক বৈশাখী সংক্রান্তির দিনে এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার থেকেই এই মন্দিরের নাম হয় যুগল কিশোর মন্দির। তারপরের দিনই ছিল পয়লা জ্যৈষ্ঠ অর্থাৎ জামাইষষ্ঠী সেই দিনটিকে স্মরণ রাখার জন্য আজও এই মেলা হয়ে আসছে, কেউ কেউ আবার বলে থাকেন জামাইষষ্ঠীর মেলা। প্রাচীন এই লোকো কথাকে মান্যতা দিয়ে জামাইষষ্ঠীর দিনে ভিড় জমান শাশুড়ি থেকে শুরু করে জামাই মেয়ে সকলেই। নাই নাই করে এই মেলার বয়স ৩০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন। প্রাচীন এই লোক কথার উপরে ভিড় করে বহুদূরান্ত থেকে যুগল মন্দিরে পুজো দিতে আসেন সকলেই।

আড়ংঘাটা স্টেশন থেকে হাঁটা পথে চূর্ণী নদীর ধারে এই যুগল মন্দির অবস্থিত। প্রাচীন সেই বকুল গাছ আজও বর্তমান। জামাই মেয়ের মঙ্গল কামনায় শাশুড়িরা প্রথমে যুগল কিশোরকে বরণ করবার পর মেয়ে জামাই বরণ করা হয় এমনটাই রেওয়াজ এখানকার মানুষদের। নতুন হোক বা পুরনো ধর্মের টানে ভিড় করেন সকলেই। জ্যৈষ্ঠ মাস এক মাস ব্যাপী চলে এই মেলা। প্রাচীন এই মেলা জৌলুস হারালেও সাড়ম্বরে পালিত হয় এই মেলা।

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ রিভিউ

হারিয়ে যেতে বসা সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার মরিয়া প্রচেষ্টায় একদল নারী শক্তি।।।।

হারিয়ে যেতে বসা সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার মরিয়া প্রচেষ্টায় একদল নারী শক্তি। প্রকৃতপক্ষে লোক সংস্কৃতি বাঙালি সংস্কৃতির মূলধারা, এর মর্ম মূলেই আবহমান বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য- সভ্যতার প্রকৃত পরিচয়। কানু ছাড়া যেমন গীত নেই তেমনি লোকসংস্কৃতির অস্তিত্ব ভিন্ন বাঙালির জীবন- সমাজ ঐতিহ্য- ইতিহাসের মর্মদ্ধার অসাধ্য ও অর্থহীন। বাংলার লোকসংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ হল যাত্রাপালা। আমরা সকলেই অবগত আছি একটা সময় ছিল যখন গ্রামের দুর্গাপুজো, কালীপুজো, গাজন উপলক্ষে গ্রামের শিল্পীদের নিয়ে যাত্রা পালা অনুষ্ঠিত হতো। বর্তমানে সেই চিত্র আর দেখা যায়না বলাই চলে, লুপ্ত হতে বসেছে যাত্রা শিল্প।

তবে এখনো অনেকেই আছেন তারা যাত্রা প্রেমী মানুষজন, আর তাঁদের কথা মাথায় রেখেই লোকসংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ যাত্রাশিল্পকে আঁকড়ে ধরে লুপ্ত হতে না দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ ব্লকের পুনশুর গ্রামের বিনোদিনী নাট্য সংস্থা।

গ্রামের ১৮ জন মহিলা দারা যাত্রা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বিনোদিনী নাট্য সংস্থা। রীতিমতো মঞ্চ বেঁধে নিত্যদিন চলছে যাত্রার মহড়া। পুজো উপলক্ষে বিনোদিনী নাট্য সংস্থার দুটি নিবেদন, একটি হল নটী বিনোদিনী অপরটি সোনাই দীঘি। দুটি যাত্রাপালা তেই অভিনয় করছে গ্রামের ১৮ জন মহিলা। শিশু থেকে গৃহবধূ সকলেই অভিনয় করছে যাত্রা পালাতে। শুধু তাই নয়, অভিনয়ে আছে স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও। পুরুষদের চরিত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ফুটিয়ে তুলতে দিনরাত মহড়ায় অংশগ্রহণ করছে পুনশুর গ্রামের ১৮ জন মহিলা। নিজেদের গ্রাম ছেড়ে দূর-দুরান্তে গিয়ে যাত্রাপালা করে তাদের প্রতিভা সকলের সামনে মেলেও ধরেছে তারা। “আমি ভাবি একা, দাও হে দেখা, প্রানো সখা রাখো পায়ে” নটী বিনোদিনীর সেই অসাধারণ গান নিজের কন্ঠ স্বরের মাধ্যমে মহড়া মাতাচ্ছে কলেজ পড়ুয়া মহিলা।

নটী বিনোদিনী নাট্য সংস্থার এক মহিলা শিল্পী মৈত্রী ঘোষাল বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি আমার অভিনয় করতে ভালো লাগে। আমার বাবা ঠাকুরদাও খুব ভালো অভিনয় করত, আমি তাদের থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছি। মানুষের মনের অভিব্যক্তি সমস্ত আর্টেই প্রকাশ করা যায়, কিন্তু অভিনয় এমন একটা মাধ্যম যেখানে অতি সহজেই অভিব্যক্তি প্রকাশ করা সম্ভব। অভিনয়ের মাধ্যমে অচিরেই মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। অভিনয় করতে গিয়ে আমাকে পাড়া প্রতিবেশিদের কাছে কিছু কেমন কথা ও শুনতে হয়েছে, কিন্তু সেই সব কথা কর্ণপাত না করেই যাত্রাশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।

নিজেদের গ্রামের মহিলা, নিজেদের সুর পার্টি, নিজেদের লাইট দ্বারা পরিচালিত নটী বিনোদিনী নাট্য সংস্থা। ইতিমধ্যেই শক্তিগড়, দুর্গাপুর,কোতুলপুর ইন্দাস, গুইর,সরঙ্গার যাত্রাপালা পরিবেশন করেছে আঠারো জন নারী শক্তি। পড়াশোনার ফাঁকে হারিয়ে যেতে বসে যাত্রাশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে মহুয়া ঘোষাল, মৈত্রী ঘোষাল, তিতলি চট্টোপাধ্যায়, স্নেহা ব্যানার্জি, প্রিয়া দাস,মধুমিতা দাস সহ বাকি সকলে।

সর্বযুগে তথা সর্বকালে এবং  পৌরাণিক, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার হিসাবে মানুষের মনে  নারীশক্তি একটি স্থায়ী  স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে ।রূপ ,গুণ , কর্মদক্ষতা ও সহনশীলতায় সবেতেই অদ্বিতীয়া নারী  হল সকল শক্তির আধার ; মানবজাতির স্রষ্টা। কথায় আছে, ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’। ঘরে -বাইরে সব জায়গায় একাহাতেই নারী  সুষ্ঠুভাবে সামলাতে পারে কারও সাহায্য না নিয়েই। আধুনিক সমাজে নারী আজ আর পিছিয়ে নেই। শিক্ষা, কর্তৃত্বে ,গুণে, মানে সব ক্ষেত্রেই পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলে মহুয়া, মৈত্রী, স্নেহারা যাত্রা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে পুরুষদের চরিত্রে ধারালো অভিনয় করে আজ প্রমাণ করে দিয়েছে যে তারাও কোনো অংশে কম নয়।

।।কলমে : রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী,  পূর্ব বর্ধমান।।

Share This