Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

তমলুকের বর্গভীমা মন্দিরে ফলহারিনী কালীপুজোর ইতিহাস।।।।।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অধিষ্ঠাত্রী দেবী বর্গভীমা। তমলুক শহরে দেবীবর্গভীমা মায়ের মন্দির। এটি একটি একান্ন সতী পিঠের মন্দির। সারা বছরই এই মন্দিরে চলে পুজোপাঠ। প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে ভক্তরা এসে পূজা দেন মায়ের মন্দিরে। সারা বছর প্রতিদিন পুজো পাঠের পাশাপাশি এই মন্দিরে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিশেষ বিশেষ তিথিতে বিশেষ পুজোপাঠ হয়।

তাদের মধ্যে অন্যতম হল ফলহারিনী কালীপুজো। এই মন্দিরে প্রতিবছর ফলহারিনী কালীপুজোয় হয় বিশেষ পুজোপাঠ। দূর দূরান্ত থেকে ভক্তরা এসে বর্গভীমা মন্দিরে ফলহারিনী কালীপুজো উপলক্ষে পুজো দেন।
সতীর একান্ন পীঠের এক পীঠ তমলুকের দেবী বর্গভীমা, বর্তমানেও নিষ্ঠার সাথে পুজিত হয় মা, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সদর ঐতিহাসিক তাম্রলিপ্ত বা তমলুকের আজও মধ্যমণি মা বর্গভীমা। কয়েক হাজার বছর ধরে শক্তি স্বরূপিণী আদ্যাশক্তি মহামায়া রূপে দেবী বর্গভীমার আরাধনা চলে আসছে। মতান্তরে তিনি ভীমরূপা বা ভৈরব কপালী নামেও পরিচিত। অতীতের প্রায় সব কিছুই ধ্বংসের মুখে চলে গেলেও স্বমহিমায় আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে এই সুবিশাল মন্দির। ওড়িশি স্থাপত্যের আদলে এই দেউলের উচ্চতা প্রায় ৬০ ফুট। মন্দিরের দেওয়ালে টেরাকোটার অজস্র কাজ। তার মধ্যেই মন্দিরের গর্ভগৃহে কালো পাথরে তৈরি মায়ের মূর্তি বিরাজ করছে দেবী উগ্রতারা রূপে।
পুরাণ বলে, দক্ষযজ্ঞে সতীর দেহত্যাগের পর মন্দিরের সেবায়েতের কথায় ধর্ম-অর্থ-কাম ও মোক্ষ। এই চারটি বর্গ দান করেন বলেই মায়ের নাম দেবী বর্গভীমা। নীলতন্ত্র মতে মায়ের আরাধনা করা হয় এখানে। ফলহারিনী কালীপুজোর দিন রাজবেশে মাকে সাজিয়ে মহা ধুমধামে পুজো হয়। পুজোর পাশাপাশি এই দিন হোম যজ্ঞ হয় মন্দিরে। ভক্তরা তাদের সারা বছরের কর্মফল মায়ের প্রায় অর্পণ করে পুজো দেন। মন্দিরের পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী জানান, ‘সারা বছরই পূজো পাঠের পাশাপাশি মন্দিরে বিশেষ বিশেষ তিথিতে বিশেষ বিশেষ পুজোপাঠ হয়। ৫ জুন বুধবার ফলহারিনী কালীপুজো। মন্দিরে হোম যজ্ঞ পুজোপাঠের মাধ্যমে পূজিতা হন মা বর্গভীমা। ভক্তরা এই দিন মায়ের চরণে তাদের কর্মফল নিবেদন করে পুজো দেন।’
৫ জুন বুধবার ফলহারিনী কালীপূজা উপলক্ষে সকাল থেকেই বর্গভীমা মন্দিরে ভক্তদের সমাগম শুরু হয়েছে। মন্দির কর্তৃপক্ষের থেকে জানা যায় সন্ধ্যের পর আরও বেশি ভক্তের সমাগম হবে। মন্দিরে আর পাঁচটা তিথির মত এই তিথিতেও মায়ের কাছে পুজো দিতে দূর দূরান্ত থেকে বহু ভক্তের সমাগম হয়।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে প্রতিভাময়ী ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী – ছায়া দেবী।

ভূমিকা:- বাংলা ছায়া ছবির জগতে ছায়া দেবী এক কিংবদন্তি অভিনেত্রীর নাম।ছায়া দেবী একজন প্রতিভাময়ী ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। স্বর্ণ যুগের এই অভিনেত্রী বহু সিনেমায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করে তাঁর অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন——-

ছায়া দেবীর পিসিমা ছিলেন অভিনেতা অশোককুমার ও কিশোর কুমারের দিদিমা।ছায়া দেবীর জন্ম ৩ জুন ১৯১৯ সালে এই পিসিমার ( সতীশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী) ভাগলপুরের রাজবাড়ীতে। পিতা হারাধন গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রাথমিক শিক্ষা ও অভিনয় জীবনে প্রবেশ—-
তার প্রাথমিক শিক্ষা ভাগলপুরের মোক্ষদা গার্লস স্কুলে। ভাগলপুর থেকে বাবার সঙ্গে দিল্লি গিয়ে ইন্দ্রপ্রস্থ গার্লস স্কুলে ভর্তি হন এবং সঙ্গীত চর্চা করতে থাকেন। এগারো বৎসর বয়সে রাঁচির অধ্যাপক ভূদেব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাহ হয়। কিন্তু এ বিবাহ কার্যকর হয় না। দশম শ্রেণীর ছাত্রী তিনি বাবার সঙ্গে কলকাতায় এসে কৃষ্ণচন্দ্র দে ও পণ্ডিত দামোদর মিশ্রর কাছে সংগীত শিখতে থাকেন। সেই সঙ্গে বেলা অর্ণবের কাছে নাচের তালিম নিতে থাকেন। নাটক-পাগল দুই পিসতুতো দাদা শ্রীশচন্দ্র ও শৈলেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি অভিনয় জগতে আসেন।
অভিনয় জীবন——-
১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দেই তিনি দেবকী বসুর ‘সোনার সংসার’ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন। তবে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কনক নামের কিশোরী ছায়া দেবী নাম নিয়ে ‘পথের শেষে’ ছবিতে অন্যতম নায়িকার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি রাঙা বৌ, ছিন্নহার, প্রভাসমিলন, হাল বাঙলা, বিদ্যাপতি (হিন্দি ও বাংলা), রিক্তা, জীবন মরণ প্রভৃতি। পথের শেষে – এই ছবিটি হিট হওয়ায় তিনি সোনার মেডেল পেয়েছিলেন।
গায়িকা হিসেবে—-
অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি ছবিতে তিনি গানও গেয়েছেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘অভয়ের বিয়ে’ ছবিতে তিনি ৪-৫ টি গান গেয়েছেন।
মুম্বাই গমন—
এর পরে ছায়া দেবী প্রফুল্ল রায়ের আমন্ত্রণে তিনি মুম্বই গিয়ে সেখানে’মেরাগাঁও ‘ ছবিতে গানে ও অভিনয়ে বিশেষ পারদর্শিতা দেখান। ছায়া দেবী প্রায় পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলা, হিন্দী, তামিল ও তেলুগু ভাষায় শতাধিক ছায়াছবিতে প্রধানত পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ‘বিদ্যাপতি’ ছায়াছবির জন্য উনি প্রশংসিত হন ও ক্রমে প্রচুর উল্ল্যেখযোগ্য ছবিতে অভিনয় করেন, যেমন বাংলায় পরিচালক তপন সিংহর নির্জন সৈকতে, হাটে বাজারে এবং আপনজন, সপ্তপদী, মানিক, উত্তর ফাল্গুনী, বা হিন্দীতে অমিতাভ বচ্চনের সাথে আলাপ । বাংলা,হিন্দি ও তামিল তিন ভাষাতেই ‘রত্নদীপ’ ছবিতে তার অভিনয় স্মরণীয়। ছায়াছবিতে কাজ করার পাশাপাশি বেতার কেন্দ্রে নিয়মিত খেয়াল, ঠুংরি পরিবেশন করেছেন।
তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি সমূহ—
প্রায় দু-শোর বেশি ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। সাত পাকে বাঁধা, মুখার্জি পরিবার, অন্তরাল, আরোহী, কাঁচ কাটা হীরে, সূর্যতপা, থানা থেকে আসছি, মণিহার, গল্প হলেও সত্যি, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, হাটেবাজারে, আপনজন’ (রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত), বাঘিনী, কমললতা, চৌরঙ্গী, কুঁয়াশা, রাতভোর, সাহেব বিবি গোলাম, ত্রিযামা, মায়াবাজার, গলি থেকে রাজপথ, মাণিক, অটলজলের আহ্বান, দেয়ানেয়া, সপ্তপদী, নির্জন সৈকতে, পিতাপুত্র, হারমোনিয়াম, আরোগ্য নিকেতন, রাজা রামমোহন, বাবা তারকনাথ, আলাপ, ধনরাজ তামাং, অরুণ বরণ কিরণমালা, সূর্যসাক্ষী, রঙবেরঙ, প্রায়শ্চিত্ত, রাশিফল, লালগোলাপ, স্বর্ণমণির ঠিকানা, প্রতিকার, বোবা সানাই, প্রতিদান, কলঙ্কিত নায়ক, রাজকুমারী, মুক্তিস্নান, সমান্তরাল, কুহেলী, হার মানা হার, শেষ পর্ব, পদিপিসির বর্মি বাক্স, দেবীচৌধুরাণী।
মৃত্যু—-
কিংবদন্তী এই অভিনেত্রী বহু সিনেমায় রেখে গিয়েছেন তাঁর অভিনয় দক্ষতার সাক্ষর। ২৫ এপ্রিল ২০০১ সালে তিনি প্রয়াত হন। কিন্তু আজও তিনি অমর হয়ে রয়েছেন মানষের হৃদয়ে।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।।

Share This
Categories
গল্প নারী কথা প্রবন্ধ

জানুন শতবর্ষ প্রাচীন নন্দিনী পুজোর ইতিহাস।।।।

দেবী নন্দিনী পূজোর কথা শুনেছেন! স্নান সেরে বসুন্ধরার মাটির ঢেলা মাথায় করে বয়ে নিয়ে এসে পুজো দেন ভক্তরা, বর্তমানে মাটির পাহাড় তৈরি হয়েছে সেখানে, অন্যদিকে মাটি নিতে নিতে একসময়ের ছাড়া গঙ্গা পুনরায় জলপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা। নদীয়ার শান্তিপুর ব্লকের পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সগুনা এলাকায় শতবর্ষ প্রাচীন নন্দিনী পুজো অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে বৈশাখী পূর্ণিমায় এলাকার মানুষের বিশ্বাস অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রামের সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি সন্তানহীনতা এবং ব্যথা সংক্রান্ত নানান রোগ ভালো হয়েছে এখানে পুজো দিয়ে।

সন্তানাদির জন্ম এবং তাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য মায়েরা এখানকার মাটি মেখে থাকেন।

এলাকার প্রবীনরা জানালেন, চাষ করতে আসা ট্রলার ট্রাক্টর জমিতে পুঁতে গেলে তা উদ্ধার হয় পুজোদিলে। আর এই সকল কারণে শুধুমাত্র এই গ্রাম নয় আশেপাশের বিভিন্ন গ্রাম সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও পর্যন্ত আজকের দিনে নন্দিনী দেবীর পুজোতে মাটি দিতে উপস্থিত হন ভক্তরা। শুধু হিন্দু ধর্মেই নয় পার্শ্ববর্তী মুসলমান সম্প্রদায়ের অনেকেই মানত করতে মাটি দিয়ে থাকেন।
তবে এলাকার প্রবীণরা আজও উদ্ধার করতে পারেননি প্রতিবছর এই দিনে প্রথম কে মাটি দেয়, যত ভোরেই পৌঁছাক না কেনো, যে প্রথম পৌঁছায় তিনিও গিয়ে দেখেন তার আগে কেউ একজন মাটি দিয়ে রেখেছে।
একসময় পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গা এখন পলি পড়েছে তবে সে সময় জল থাকতো, সেখান থেকে স্নান করে এবং চাষের জমি থেকে মাটি মাথায় নিয়ে, পাহাড়সম চুড়ায় নিম গাছের গোড়ায় পুজো দিয়ে থাকেন পূর্ণর্থীরা। তবে কোন মূর্তি নয়, জাগ্রত সুউচ্চ ঢিলা ভূমি এবং গাছের গোড়াই এখানে দেবতা।

মনস্কামনা পূর্ণ হওয়া ভক্তবৃন্দরা খিচুড়ি এবং বিভিন্ন তরকারি ভোগের প্রসাদ হিসেবে আগত হাজার হাজার ভক্ত বৃন্দকে বিতরণ করেন বিভিন্নজন। এই উপলক্ষে প্রত্যেক বাড়িতে আজ রান্না বন্ধ। মহিলারা সকলে এসে হাতে হাত লাগিয়ে রান্নার কাজ করে থাকেন। বর্তমানে এই পুজো ঐতিহ্য এবং পরম্পরায় পরিণত হয়েছে। তবে প্রত্যেকের মুখেই বিষাদের সুর। হাজার হাজার পুর্নার্থীদের স্নান করার জলের অভাব, মহিলাদের শৌচাগার এবং স্নানের পর ভিজে কাপড় জামা পরিবর্তনের ঘর, বিপদজনক উচ্চতায় উঠতে সিঁড়ি, উচ্চ বাতিস্তম্ভ , পানীয় জলের কল এ সবই প্রয়োজন। পঞ্চায়েত সদস্য হোক বা সমিতি কিংবা জেলা পরিষদ কেউ কখনোই খোঁজ নিয়ে , তৎপর হননি। তবে সামনে গতবার বিধায়ক ড : ব্রজকিশোর গোস্বামী এসে কথা দিয়েছিলেন সিঁড়ি করার, এ বছরের নির্বাচন পড়ার কারণে তা এখনো শুরু হয়নি তবে আগামীতে তা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বাকি কাজগুলির জন্য অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের প্রতীক্ষায় এলাকাবাসী।

উদ্যোক্তারা জানালেন পুজো আজ হলেও পাঁচ দিন যাবত চলে মেলা এবং বিভিন্ন ধর্মীয় ও সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
নানান অলৌকিক কথা শোনা গেল এই পুজো সম্পর্কে, ভক্তরা জানালেন উঁচু ওই মাটির ঢিবিতে কখনো বাজি পটকা ফাটেনা নিম গাছগুলিতে মাইক লাগালে তা কিছুক্ষণ পরে বন্ধ হয়ে যায়, চাষের জমিতে ট্রাক্টর কিংবা অন্যান্য গাড়ি ফেসে গেলে পুজো না দেওয়া পর্যন্ত কারোর সাধ্য নেই সেই গাড়ি তোলে. তবে এসব ই ভক্তবৃন্দদের বিশ্বাস।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম দুই নারী বিপ্লবী, অগ্নিকন্যা শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরী ।।।

বিং শ শতাব্দীতে ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে ভারতের স্বাধীনতার যুদ্ধটি ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে বীরত্বের সাথে লড়াই করা শক্তিশালী মহিলা সহ অনেকের সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগ দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল। এই মহিলাদের মধ্যে, সুনীতি চৌধুরী ঘোষ ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিত্ব হিসাবে দাঁড়িয়ে আছেন।

কারণ এর প্রতি তার প্রতিশ্রুতি গভীর ছিল, উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিল যা ভারতের চূড়ান্ত স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত করতে সাহায্য করেছিল। সুনীতি চৌধুরী ঘোষ ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী বিপ্লবী। অপরদিকে শান্তি ঘোষ ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী। শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরীকে তাদের সহপাঠী প্রফুল্লনলিনী ব্রহ্ম প্রথম বিপ্লবের পথ দেখান।

জন্ম——

শান্তি ঘোষের জন্ম ২২ নভেম্বর, ১৯১৬ সালে ও সুনীতি চৌধুরীর জন্ম ২২ মে, ১৯১৭ সালে। দুজনেই কুমিল্লার ফয়জুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। তাদের জন্ম ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলায়। শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরী
স্টিভেন্স হত্যা কান্ড——
তাদের সহপাঠী প্রফুল্লনলিনী ব্রহ্ম র দ্বারা শান্তি ঘোষ এবং সুনীতি চৌধুরী প্রথম বিপ্লবের পথে পরিচালিত হয়েছিল। কুমিল্লার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ স্টিভেনসকে ১৯৩১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিপ্লবী সুনীতি চৌধুরী এবং শান্তি ঘোষ কর্তৃক হত্যা করা হয়। নাবালিকা এই দাবির বিচারে শান্তি ও সুনীতি চৌধুরীকে নির্বাসনে সাজা দেওয়া হয়। তারা হাসিমুখে বন্দী হন। যদিও তাদের মেদিনীপুর জেলে তৃতীয় শ্রেণীর বন্দি হিসেবে রাখা হয়েছিল। সুনীতি চৌধুরী ঘোষের বাবার সরকারি পেনশন বন্ধ হয়ে যায়। তার পরিবারকে এক অবর্ণনীয় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়। তার দুই দাদাকে জেলে পাঠানো হয়। ছোট ভাই না খেয়ে মারা মায়। পরে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত গোপাল দেব দুটি রিভলবারসহ ধরা পড়েন। বিচারে, গোপাল দেবকে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে স্থানান্তরের শাস্তি দেওয়া হয়।

পরবর্তী জীবন——-

সুনীতি চৌধুরী ঘোষ হিজলী বন্দী নিবাসে তিনি বন্দী ছিলেন। ১৯৩৯ সালে শান্তি ঘোষের সাথে গান্ধীর চেষ্টায় সেখান থেকে মুক্তি পান। তিনি অধ্যয়ন করেন এবং এমবি পাস করেন এবং ডাক্তার হিসাবে জনহিতকর কাজে নিযুক্ত হন। তাঁর ব্রত ছিল নিঃস্বার্থভাবে দরিদ্র ও দরিদ্র মানুষের সেবা করা। ১৯৪৭ সালে, তিনি শ্রমিক নেতা প্রদ্যোত কুমার ঘোষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

মৃত্যু——–

সুনীতি চৌধুরী মারা যান ১২ জানুয়ারি, ১৯৮৮ সালে এবং ২৭ মার্চ, ১৯৮৯ সালে মারা যান শান্তি ঘোষ।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

কিংবদন্তি বাঙালি অভিনেত্রী সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়, প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।।

বাংলা সিনেমার জগতে সুমিত্রা মুখোপাধ্যায় এক অতি পরিচিত নাম। সুমিত্রা মুখোপাধ্যায় একজন খ্যাতনামা ভারতীয় বাঙালি অভিনেত্রী যিনি বাংলা সিনেমায় তাঁর কাজের জন্য পরিচিত ছিলেন। বহু অভিনেতার সঙ্গে তিনি অভিনয় করে তাঁর দক্ষতার পরিচয় রেখে গিয়েছেন। রঞ্জিত মল্লিক, উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সন্তু মুখোপাধ্যায় এবং দীপঙ্কর দে-র মতো অভিনেতাদের সাথে তাঁর অন-স্ক্রিন জুটি খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যা মানুষের হৃদয়ে আজও দাগ কেটে রয়েছে।

কর্মজীবন—–

সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ৩০ মার্চ ১৯৪৯ সালে।অভিনয়ের প্রতি ছিলো তাঁর অমোঘ টান। ১৯৭২ সালে
শ্রীমতি সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়ের প্রথম চলচ্চিত্র “আজকের নায়ক” মুক্তি পেয়েছিল। তাঁর অভিনয় দক্ষতা দর্শক-প্রশংসা পেয়েছে । অনাবিল অভিনয়র মধ্য দিয়ে তিনি প্রতিটি বাঙালীর হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। তাঁর অভিনীত কয়েকটি উল্লেখ্যযোগ্য বই হলো –

অগ্নিশ্বর, শ্রীকান্তের উইল, দেবদাস, ওগো বধূ সুন্দরী, দেবী চৌধুরাণী, বসন্ত বিলাপ – যা আজও অমর হয়ে রয়েছে। তিনি প্রায় ৪০০ টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। নীচে আমরা দেখে নেবো তাঁর অভিনিত ছবি গুলির নাম—

অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকা—-

আমি ও মা, নটি বিনোদিনী, তপস্যা, ৩ভ্রান্ত পথিক, ক্রান্তিকাল, পেন্নাম কলকাতা, অহংকার, গড়মিল, ব্যবধান, মহাপীঠ তারাপীঠ, অভিসার, অপরাহৃ-এর আলো, বিদায়, প্রতীক, আগমন, আগুন, ওরা চারজন, অবৈধ, সাথী, পারমিতার এক দিন, সপ্তমী, প্রতিরোধ, মেজ বৌ, মোহিনী, কলঙ্কিনী নায়িকা, অমর কন্টক, দাবার চাল, স্বর্ণময়ীর ঠিকানা, মহামিলন, ডাক্তার বৌ, পরিনতি, স্বর্গ সুখ, আমার পৃথিবী, ভালোবাসা ভালোবাসা, তিল থেকে তাল, মিলন তিথী, বৈকুন্ঠের উইল, সোনার সংসার, দিদি, অগ্নি শুদ্ধি, মোহনার দিকে, দাদামণি, সম্পত্তি, ইন্দিরা, জীবন মরণ, অর্পিতা, অভিনয় নয়, সংসারের ইতিকথা, প্রায়শ্চিত্ত, অমৃত কুম্ভের সন্ধানে, প্রফুল্ল, মায়ের আশীর্বাদ, বদনাম, কপাল কুন্ডলা, ন্যায়ের অন্যায়, দেবদাস, মান অভিমান, তিলোত্তমা, তুশি, ডাক দিয়ে যাই, ময়না, বনসারি, সন্ধ্যার রাগ, এই পৃথিবী পান্থ নিয়াস, মন্ত্রমুগ্ধ, এক যে ছিলো দেশ, দত্তা, রাগ অনুরাগ, অগ্নিশ্বর, ছেড়া তামসুখ, বিকেলে ভোরের ফুল, দেবী চৌধুরাণী, সঙ্গিনী, বসন্ত বিলাপ, আজকের নায়ক, ওগো বধূ সুন্দরী, স্বামী স্ত্রী, বৈশাখী মেঘ, প্রিয়তমা, সমাধান, শ্রীকান্তের উইল, নৌকাডুবি, চিরন্তন, গণদেবতা প্রভৃতি ।

পুরস্কার——-

অভিনয়ের জন্য তিনি বেশকিছু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন–
বিজয়ী – বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন – দেবী চৌধুরানীর পক্ষে সেরা সহায়ক অভিনেত্রীর পুরস্কার (১৯৭৫); বিজয়ী – বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন – অন্বেষণ – এর জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার (১৯৮৬); বিজয়ী – ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পূর্ব – বৈশাখী মেঘ – সেরা অভিনেত্রী।

২১ মে ২০০৩ সালে কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী প্রয়াত হন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ রিভিউ

কঠিন সময়ে আজও আমাদের সঠিক পথ দেখায় মা সারদার এই বাণী গুলো।।।।

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সহধর্মিনী তিনি সারদা দেবী মহাসমাধির আগের মুহূর্ত পর্যন্ত নিজের সন্তানদের দুঃখ লাঘবের চেষ্টা করে গিয়েছেন। অত্যন্ত সহজ ভাবে জীবনের কঠিন সমস্যার সমাধানের পথ দেখিয়ে গিয়েছেন। আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ একজন গ্রাম্য মহিলা প্রথাগত শিক্ষা ছাড়া যে ভাবে গভীর দর্শনের কথা বলে গিয়েছেন, তা সত্যিই বিষ্ময়ের উদ্রেক করে।

কত সৌভাগ্য, মা এই জন্ম, খুব করে ভগবানকে ডেকে যাও। খাটতে হয়, না-খাটলে কি কিছু হয়? সংসারে কাজকর্মের মধ্যেও একটি সময় করে নিতে হয়।
কর্মফল ভুগতে হবেই। তবে ঈশ্বরের নাম করলে যেখানে ফাল সেঁধুত, সেখানে সুঁচ ফুটবে। জপ তপ করলে কর্ম অনেকটা খণ্ডণ হয়। যেমন সুরথ রাজা লক্ষ বলি দিয়ে দেবীর আরাধনা করেছিল বলে লক্ষ পাঁঠায় মিলে তাঁকে এক কোপে কাটলে। তার আর পৃথক লক্ষ বার জন্ম নিতে হল না। দেবীর আরাধনা করেছিল কিনা। ভগবানের নামে কমে যায়।’
‘কাজ করা চাই বইকি, কর্ম করতে করতে কর্মের বন্ধন কেটে যায়, তবে নিষ্কাম ভাব আসে। একদণ্ডও কাজ ছেড়ে থাকা উচিত নয়।’
‘ভাঙতে সবাই পারে, গড়তে পারে ক’জনে? নিন্দা ঠাট্টা করতে পারে সব্বাই, কিন্তু কী করে যে তাকে ভালো করতে হবে, তা বলতে পারে ক’জনে?’
‘একশো জনকে খাওয়াতে হবে না, কিন্তু চোখের সামনে একজন ক্ষুধার্তকে দেখলে তাঁকে একটু খেতে দিও।’
‘মনটাকে বসিয়ে আলগা না দিয়ে কাজ করা ঢের ভাল। মন আলগা হলেই যত গোল বাধায়।’
‘দয়া যার শরীরে নাই, সে কি মানুষ? সে তো পশু। আমি কখনও কখনও দয়ায় আত্মহারা হয়ে যাই, ভুলে যাই যে আমি কে।’
‘যেমন ফুল নাড়তে নাড়তে ঘ্রাণ বের হয়, চন্দন ঘষতে ঘষতে সুগদ্ধ বের হয়, তেমনই ভগবত্‍ তত্ত্বের আলোচনা করতে করতে তত্ত্বজ্ঞানের উদয় হয়।’
‘যদি শান্তি চাও মা, কারও দোষ দেখো না। দোষ দেখবে নিজের। জগৎকে আপনার করে নিতে শেখ। কেউ পর নয়, মা জগৎ তোমার।’ ভক্তদের প্রতি এই ছিল শ্রী শ্রী সারদা মায়ের শেষ বাণী।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

9000+ ম্যাগাজিনস্ এক্সপ্লোর করুন

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

এক সংগ্রামী মায়ের সংগ্রামের কাহিনী।।।।

এমন মায়ের সংগ্রাম আপনারা আগে শোনেননি। নিজের নয় বছরের মেয়েকে ঝকঝকে একটা ভবিষ্যৎ উপহার দিতে পেট্রোল পাম্পে কাজ করছেন ২৭ বছরের মা। উপলক্ষ একটাই, মেয়ের শিক্ষা। বাঁকুড়ার তীব্র দাবদাহ, গনগনে আগুন ছুটেছে বেশ কিছুদিন। এবার পালা বৃষ্টির। তবে গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে প্রতিদিন বাসে করে বাঁকুড়া শহরের গোবিন্দনগর পেট্রোল পাম্পে কাজ করতে আসছেন টুম্পা সিংহ।

মাঝে মাঝে এই পেট্রোল পাম্পেই মেয়েকে নিয়ে আসেন টুম্পা। এখানেই বসে পড়াশোনা করে টুম্পার কন্যা আয়ুশী সিংহ। কেন এই কাজ করছেন টুম্পা? একজন নারী হয়েও পেট্রোল পাম্পের চাকরি করছেন বলে কি সমাজের কাছে কোনও কথা শুনতে হয়েছে তাঁকে? উত্তরে টুম্পা বলেন, “বাড়িতে বাবা মা রয়েছেন, আয়ুশীকে বড় করে তোলাই আমার লক্ষ। কষ্ট হলেও আমাকে কাজ করতে হবে। সবাই মোটামুটি মুখ চেনা হয়ে গেছে, মানুষ আমার কাজকে ছোট না করে বরঞ্চ উৎসাহ যোগায়।”
পেট্রোল পাম্প এর ওনার নিবেদিতা বিশ্বাস জানান, টুম্পার বাড়িতে তার বাবার দোকান থেকে যা আয় হয় তাতে খাবার খরচই ভাল ভাবে যোগান দেওয়া সম্ভব নয়। সেই কারণেই মেয়েকে পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষ করার জন্য টুম্পা কাজের সন্ধানে আসেন এই পেট্রোল পাম্পে। তার পর থেকেই কাজ শুরু করেছেন টুম্পা। পেট্রোল পাম্পের ওনার নিবেদিতা বিশ্বাস আরও বলেন যে, “আমি এই ফাইটিং স্পিরিটটাকে কুর্নিশ জানাই।”
একজন মা পেট্রোল পাম্পে কাজ করছেন। সেই ছবি যেন আরও বেশি করে অনুপ্রেরণা যোগায় মহিলাদের। প্রায় নিয়মিত গোবিন্দনগর এলাকার এই পেট্রোল পাম্পে তেল নিতে আসেন বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজের নার্সিং স্টাফ নিবেদিতা খাঁ। তিনি বলেন, “এত প্রতিকূলতার মধ্যেও জীবন যুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন এই দিদি। এই লড়াই সত্যিই অপ্রিসিয়েবেল।” এছাড়াও পেট্রোল পাম্পে তেল নিতে আসা আরও এক স্থানীয় বাসিন্দা ভানু বিশ্বাস বলেন, “পৃথিবীতে এর উদাহরণ বিরল। একজন মা তার সন্তানকে শিক্ষিত করতে যে কাজ করছে এরকম আর কোথাও হয়নি।”
বাঁকুড়ার টুম্পা সিংহ যেন সেই সব মেয়েরই জলন্ত উদাহরণ।

।।আবদুল হাই, বাঁকুড়া।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে, বিংশ শতাব্দী বাংলা গানের কিংবদন্তি গায়িকা – উৎপলা সেন।।।।

উৎপলা সেন ১২ মার্চ, ১৯২৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দী বাংলা গানের একজন প্রধান জনপ্রিয় গায়িকা। বাংলা গানের স্বর্ণযুগে প্রেম ও বিরহের গানে তিনি আলাদা বিষণ্ণ সুর তুলে ধরেছেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, স্বামী সতীনাথ মুখোপাধ্যায় এবং অন্যান্য গায়কদের সাথে অনেক জনপ্রিয় দ্বৈত গানও গেয়েছেন।

তিনি প্রথমে মা হিরণবালা দেবীর কাছে প্রশিক্ষণ নেন, তারপর ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খানের কাছে। তিনি ১৯৩৫ সালে ১৯১৩ বছর বয়সে ঢাকা বেতারে প্রথম জনসম্মুখে উপস্থিত হন। প্রথম রেকর্ড ১৯৩৯ সালে। ১৯৪১ সালে, সুরকার সুধীরলাল চক্রবর্তীর সুর করা এক হাতে মোর পূজা থালি গানটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। মহিষাসুরবমর্দিনীর – শান্তি দিল ভরি গানে আরও জনপ্রিয়তা পান, যা আজও শোনা যায়। এর পর তিনি
চল্লিশের দশকের গোড়ার দিকে কলকাতায় চলে আসেন এবং তখন থেকেই আকাশবাণীর সঙ্গে যুক্ত হন। বাংলা চলচ্চিত্রেও গান গেয়েছেন আনেক। বেনু সেনের সাথে প্রথম বিয়ে হয় তাঁ। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি সঙ্গীত সহকর্মী সতীনাথ মুখোপাধ্যায় কে ১৯৬৮ সালে বিয়ে করেন। একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।
তাঁর ৬০০০ এর বেশি সিনেমা এবং রেকর্ডের গানের অধিকাংশই আজ বিস্মৃতপ্রায়। ইদানীং কালে দুই বাঙলাতেই পুরানো দিনের গানের চর্চা বাড়ছে – কিছু গান ‘পুনঃনির্মাণ’ মাধ্যমে আবার শোনা যাচ্ছে – এবং উৎপলা সেনের নাম আবার জনসমক্ষে শোনা যাচ্ছে। তাঁর কিছু জনপ্রিয় গান হলো যেমন, এত মেঘ এত যে আলো, ময়ুরপঙ্ক্ষী ভেসে যায়, পাখি আজ কোন সুরে গায় বা ঝিকমিক জোনাকির দ্বীপ জ্বলে শিয়রে।
দীর্ঘ কয়েক বছর ক্যান্সারাক্রান্ত উৎপলা সেন ১৩ মে, ২০০৫ সালে মারা যান কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

মা ​​দিবসের তাৎপর্য: আমাদের পরিবারের স্তম্ভগুলিকে সম্মান করা।

প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারে পালিত মা দিবস, একটি বিশেষ উপলক্ষ যা মা এবং মাতৃত্বের ব্যক্তিত্বদের তাদের অটল ভালোবাসা, ত্যাগ এবং পরিবার ও সমাজে অবদানের জন্য সম্মান জানাতে নিবেদিত। এই দিনটি আমাদের জীবন গঠনে মায়েদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্মারক হিসেবে কাজ করে এবং এটি আমাদের জন্য তাদের নিঃস্বার্থ নিষ্ঠার প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার একটি সুযোগ।

*মা দিবসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস*

মা দিবসের উৎপত্তি বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে, যখন একজন আমেরিকান কর্মী আনা জার্ভিস মায়েদের সম্মানে একটি ছুটি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচারণা চালান। ১৯১৪ সালে আন্নার প্রচেষ্টা সফল হয় যখন রাষ্ট্রপতি উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস হিসেবে মনোনীত করেন এবং এটিকে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। সময়ের সাথে সাথে, মা দিবস একটি বিশ্বব্যাপী ঘটনায় পরিণত হয়েছে, দেশগুলি মায়েদের সম্মান জানাতে অনন্য ঐতিহ্য গ্রহণ করেছে ¹ ²।

*মা ​​দিবস উদযাপনের গুরুত্ব*

মা দিবস উদযাপনের প্রচুর মানসিক উপকারিতা রয়েছে, কারণ এটি পারিবারিক বন্ধনকে শক্তিশালী করে এবং মাতৃত্বের সুস্থতা বৃদ্ধি করে। এই দিনটি আমাদের জীবনে মায়েদের ভূমিকা নিয়ে চিন্তা করতে এবং তাদের মানসিক শ্রম এবং লালন-পালনের স্বীকৃতি জানাতে উৎসাহিত করে। মায়েদের সম্মান করে আমরা ³:

– *কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন*: মায়েদের ভালোবাসা, যত্ন এবং ত্যাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি
– *পারিবারিক বন্ধনকে শক্তিশালী করি*: প্রজন্মের মধ্যে সংযোগ তৈরি করি এবং ঐক্যের অনুভূতি গড়ে তুলি
– *মাতৃত্বের সুস্থতা প্রচার করি*: মায়েদের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলি স্বীকৃতি দেই এবং তাদের সুস্থতাকে সমর্থন করি

*বিশ্বজুড়ে মা দিবস উদযাপন*

স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটিয়ে বিভিন্ন দেশে মা দিবস ভিন্নভাবে পালিত হয়। কিছু উদাহরণের মধ্যে রয়েছে ⁴:
– *ভারত*: মা দিবস ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, মানুষ তাদের মায়ের প্রতি ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে।
– *মেক্সিকো*: ১০ মে পালিত হয়, মা দিবস সেরেনাড, ঐতিহ্যবাহী গান এবং পারিবারিক সমাবেশের মাধ্যমে পালিত হয়।
– *থাইল্যান্ড*: ১২ আগস্ট মা দিবস পালিত হয়, জাতির মা রাণী সিরিকিত এবং সাধারণভাবে মায়েদের সম্মানে।
– *যুক্তরাজ্য*: মা দিবস পালিত হয় মাতৃত্বকালীন রবিবারে, সাধারণত মার্চ মাসে, পরিবারগুলি কার্ড, ফুল এবং উপহার প্রদান করে।

*মা দিবস উদযাপনের উপায়*

আপনার পছন্দ এবং বাজেটের উপর নির্ভর করে মা দিবস উদযাপনের অনেক উপায় রয়েছে। কিছু ধারণার মধ্যে রয়েছে ² ⁵:
– *মানসম্মত সময় কাটান*: আপনার মায়ের সাথে একটি বিশেষ ভ্রমণ বা কার্যকলাপের পরিকল্পনা করুন
– *উপহার-দান*: আপনার মাকে ফুল, চকলেট বা ব্যক্তিগতকৃত জিনিসপত্রের মতো চিন্তাশীল উপহার দিন
– *কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন*: কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য একটি হৃদয়গ্রাহী বার্তা লিখুন বা হাতে তৈরি কার্ড তৈরি করুন
– *স্বেচ্ছাসেবক*: অভাবী মা এবং পরিবারগুলিকে সাহায্য করে এমন সংস্থাগুলিকে সহায়তা করুন

*উপসংহার*

মা দিবস একটি বিশেষ উপলক্ষ যা আমাদের জীবনে মা এবং মাতৃত্বের ব্যক্তিত্বের গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়। এই দিনটি উদযাপনের মাধ্যমে, আমরা পারিবারিক বন্ধনকে শক্তিশালী করতে পারি, মাতৃত্বের মঙ্গলকে উৎসাহিত করতে পারি এবং মায়েদের দেওয়া ভালোবাসা এবং যত্নের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি। আপনি কোনও মহৎ অঙ্গভঙ্গি বা দয়ার ছোট কাজ করে উদযাপন করুন না কেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনার মাকে ভালোবাসা এবং প্রশংসা বোধ করা। তাই, এই সুযোগটি গ্রহণ করুন আপনার মা যা কিছু করেন তার জন্য ধন্যবাদ জানাতে এবং এই মা দিবসে তাকে বিশেষ বোধ করাতে।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

সাহস ও সংগ্রামের প্রতীক – বাসন্তী দেবীর অবদান।।।।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য নাম বাসন্তী দেবী। বাসন্তী দেবী ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ কারাগারে কারারুদ্ধ প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী নারী। বাসন্তী দেবী মন ও মানসিকতায় পৌরাণিক সতীনারীদের চারিত্রিক মহত্বটি যেমন অনুকরণীয় মনে করতেন; তেমনি গার্গী, মৈত্রেয়ীদের মতো চারিত্রিক দৃঢ়তায় বুদ্ধি দিয়ে আপন যুক্তি তুলে ধরার ক্ষমতাও রাখতেন।

এ-দুইয়ের মেলবন্ধনে তিনি অনন্যা।তিনি একাধারে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের পত্নী ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সক্রিয় সংগ্রামী। সংগ্রামের জন্য কারাবরণ করেছেন। অন্দর ছেড়ে অবগুন্ঠণ ছেড়ে উপনিষদের বিদুষীদের মতো পুরুষের সমকক্ষ হয়ে সহকর্মী হয়ে দেশমুক্তির সাধনা করে গেছেন।
বাসন্তী দেবী ২৩ মার্চ ১৮৮০ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বরদানাথ হালদার ও মাতার নাম হরিসুন্দরী দেবী। তার পিতা ছিলেন আসামের বিজনি ও অভয়াপুরী এস্টেটের দেওয়ান। দশ বছর বয়েসে তিনি দার্জিলিংয়ের লরেটে কনভেন্টে শিক্ষার জন্যে ভর্তি হন। ১৮৯৬ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সাথে বিবাহ হয়।
১৮৯৪ থেকে ১৯০১ সালের মধ্যে দুজনের তিনটি সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল। দেশবন্ধু ও তার তিন সন্তান- দুই কন্যা, অপর্ণা ও কল্যাণী ও একপুত্র চিররঞ্জন।

তার স্বামীর অনুসরণে, বাসন্তী দেবী আইন অমান্য আন্দোলন এবং খিলাফত আন্দোলনের মতো বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন এবং ১৯২০ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। পরের বছর, তিনি দাসের বোন ঊর্মিলা দেবী এবং সুনিতা দেবীর সাথে যোগ দেন। নারী কর্মীদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র “নারী কর্ম মন্দির” প্রতিষ্ঠা করুন। ১৯২০-২১ সালে, তিনি জলপাইগুড়ি থেকে তিলক স্বরাজ ফান্ডের জন্য স্বর্ণের অলঙ্কার এবং ২০০০ টি স্বর্ণমুদ্রা সংগ্রহে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন।
১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময়, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ধর্মঘট এবং বিদেশী পণ্য নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানায়। কলকাতায়, পাঁচজন স্বেচ্ছাসেবকের ছোট দলকে কলকাতার রাস্তায় খাদি, হাতে কাটা কাপড় বিক্রি করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল। দাস, যিনি স্থানীয় আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন তার স্ত্রী বাসন্তী দেবীকে এমন একটি দলের নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সুভাষ চন্দ্র বসুর সতর্কতা সত্ত্বেও দেবী রাস্তায় নেমেছিলেন যে এটি তাকে গ্রেফতার করতে ব্রিটিশদের উস্কে দেবে। যদিও তাকে মধ্যরাতে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তার গ্রেপ্তার ব্যাপক আন্দোলনের প্রেরণা জুগিয়েছিল। কলকাতার দুটি কারাগার বিপ্লবী স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা পূর্ণ ছিল এবং আরও সন্দেহভাজনদের আটক করার জন্য দ্রুত আটক শিবির তৈরি করা হয়েছিল। ১৯২১ সালের ১০ ডিসেম্বর পুলিশ দাস ও বসুকে গ্রেপ্তার করে।

দাসের গ্রেপ্তারের পর, বাসন্তী দেবী তার সাপ্তাহিক প্রকাশনা বাঙ্গালার কথা (বাংলার গল্প) এর দায়িত্ব নেন। তিনি ১৯২১-২২ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। ১৯২২ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রাম সম্মেলনে তার বক্তৃতার মাধ্যমে, তিনি তৃণমূল আন্দোলনকে উৎসাহিত করেছিলেন। ভারতের চারপাশে ভ্রমণ, তিনি ঔপনিবেশিকতার বিরোধিতা করার জন্য শিল্পের সাংস্কৃতিক বিকাশকে সমর্থন করেছিলেন।
দাস যেহেতু সুভাষ চন্দ্র বসুর রাজনৈতিক পরামর্শদাতা ছিলেন, বসন্তী দেবীর প্রতি বসন্তের খুব শ্রদ্ধা ছিল। ১৯২৫ সালে দাসের মৃত্যুর পর, বসু দেবীর সাথে তার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সন্দেহ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন বলে জানা যায়। সুভাষ চন্দ্র বসুর ভ্রাতৃপ্রতিম ভাতিজি কৃষ্ণ বোস বাসন্তী দেবীকে তাঁর “দত্তক মা” এবং তাঁর জীবনের চারটি গুরুত্বপূর্ণ মহিলার একজন হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন, বাকি তিনজন হলেন তাঁর মা প্রভাবতী, তাঁর ভগ্নিপতি বিভাবতী (শেরতের স্ত্রী) চন্দ্র বসু) এবং তার স্ত্রী এমিলি শেঙ্কল।
তার স্বামীর মতো, বাসন্তী দেবীও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী কর্মীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। ১৯২৮ সালে, ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী লালা লাজপত রায় তার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলের বিরুদ্ধে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হওয়ার কয়েকদিন পর মারা যান। এর পর বাসন্তী দেবী লাজপত রায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ভারতীয় যুবকদের উদ্বুদ্ধ করেন।
১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর, বাসন্তী দেবী সামাজিক কাজ চালিয়ে যান। বাসন্তী দেবী কলেজ, কলকাতার প্রথম মহিলা কলেজ যা সরকারের অর্থায়নে ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং তার নামে নামকরণ করা হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে, তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণে সম্মানিত হন।

বাসন্তী দেবী ৭ মে ১৯৭৪ মৃত্যুবরণ করেন।

।।তথ্য ঋণ : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবপেজ।

Share This