Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

প্রতিভা পাতিল: ভারতীয় রাজনীতিতে একজন পথপ্রদর্শক।।।

25 জুলাই, 2007-এ, ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেওয়া প্রথম মহিলা হয়ে প্রতিভা পাটিল ইতিহাস তৈরি করেছিলেন। তার অভিষেক ভারতীয় রাজনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত, কাঁচের ছাদ ভেঙে দিয়েছে এবং নারী নেতাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পথ প্রশস্ত করেছে।

প্রারম্ভিক জীবন এবং শিক্ষা
প্রতিভা পাটিল 19 ডিসেম্বর, 1934 সালে মহারাষ্ট্রের একটি ছোট গ্রাম নাদগাঁওতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা-মা, নারায়ণ রাও পাতিল এবং শ্রীমতি ইন্দুবাই পাতিল, উভয়েই শিক্ষিত ছিলেন এবং তাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। প্রতিভার প্রথম জীবন সরলতা এবং কঠোর পরিশ্রম দ্বারা চিহ্নিত ছিল। তিনি তার গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন এবং পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য জলগাঁও চলে আসেন।
প্রতিভার একাডেমিক কৃতিত্ব ছিল অসাধারণ। তিনি পুনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। রাজনীতিতে তার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই প্রতীয়মান ছিল এবং তিনি কলেজের সময়কালে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।

রাজনৈতিক পেশা—

প্রতিভা পাটিলের রাজনীতিতে প্রবেশ দৈবক্রমে হয়নি। তার স্বামী দেবীসিংহ রণসিংহ শেখাওয়াত ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য। রাজনীতিতে প্রতিভার সম্পৃক্ততা 1960 এর দশকে শুরু হয়, যখন তিনি তার স্বামীর সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রচারে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন।
1962 সালে, প্রতিভা জলগাঁও কেন্দ্র থেকে মহারাষ্ট্র বিধানসভার সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন। তিনি লোকসভা এবং রাজ্যসভা উভয়েই সংসদ সদস্য হিসাবে কাজ করেছেন। তার রাজনৈতিক কর্মজীবন চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বিস্তৃত ছিল, এই সময়ে তিনি শিক্ষামন্ত্রী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এবং পর্যটন মন্ত্রী সহ বিভিন্ন পোর্টফোলিও অধিষ্ঠিত ছিলেন।
প্রেসিডেন্সি
রাষ্ট্রপতি পদের জন্য প্রতিভা পাটিলের মনোনয়ন জুন 2007 সালে ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) দ্বারা ঘোষণা করা হয়েছিল। তার প্রার্থিতা বামফ্রন্ট এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলি দ্বারা সমর্থিত হয়েছিল। 19 জুলাই, 2007-এ, প্রতিভা পাতিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ী হন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভৈরন সিং শেখাওয়াতকে পরাজিত করেন।

রাষ্ট্রপতি হিসাবে, প্রতিভা পাটিল নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা এবং গ্রামীণ উন্নয়ন সহ বিভিন্ন উদ্যোগের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন। তিনি নারী ও শিশুদের অধিকারের জন্য একজন বলিষ্ঠ উকিল ছিলেন। তার রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন, তিনি নারী ও শিশুদের জন্য শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রচারের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি প্রোগ্রাম চালু করেছিলেন।

উত্তরাধিকার—

প্রতিভা পাটিলের রাষ্ট্রপতিত্ব বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অর্জন দ্বারা চিহ্নিত ছিল। তিনিই প্রথম মহিলা যিনি অফিসে ছিলেন, এবং তাঁর উদ্বোধন ভারত জুড়ে লক্ষ লক্ষ মহিলাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। নারীর ক্ষমতায়ন এবং শিক্ষার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে তার স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
প্রতিভা পাটিলের উত্তরাধিকার তার রাষ্ট্রপতির মেয়াদের বাইরেও বিস্তৃত। তিনি একটি প্রজন্মের নারীদের রাজনীতিতে প্রবেশ করতে এবং নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে অনুপ্রাণিত করেছেন। ভারতীয় রাজনীতিতে তার অবদান বিভিন্ন পুরষ্কার এবং সম্মানের মাধ্যমে স্বীকৃত হয়েছে, যার মধ্যে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কারগুলির মধ্যে একটি পদ্মভূষণ রয়েছে।

উপসংহার—

প্রতিভা পাটিলের জীবন তার কঠোর পরিশ্রম, সংকল্প এবং জনসেবার প্রতি অঙ্গীকারের প্রমাণ। তার রাষ্ট্রপতিত্ব ভারতীয় রাজনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত, এবং তার উত্তরাধিকার ভারতজুড়ে মহিলাদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে। ভারতীয় রাজনীতিতে একজন ট্রেইলব্লেজার হিসাবে, প্রতিভা পাটিলকে সর্বদা একজন অগ্রগামী হিসেবে স্মরণ করা হবে যিনি নারী নেতাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পথ প্রশস্ত করেছিলেন।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

দ্য বার্থ অফ আ মিরাকল: লুইস ব্রাউন অ্যান্ড দ্য ফার্স্ট টেস্ট-টিউব বেবি।।।।

25 জুলাই, 1978, চিকিৎসা ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক চিহ্নিত যখন লুইস ব্রাউন, বিশ্বের প্রথম টেস্ট-টিউব শিশুর জন্ম হয়েছিল। এই যুগান্তকারী কৃতিত্ব প্রজনন ওষুধে বিপ্লব ঘটিয়েছে এবং বন্ধ্যাত্বের সাথে লড়াইরত লক্ষ লক্ষ দম্পতিদের জন্য নতুন আশার প্রস্তাব দিয়েছে।

পটভূমি—–

1970 এর দশকের গোড়ার দিকে, ডাঃ রবার্ট এডওয়ার্ডস, একজন ব্রিটিশ ফিজিওলজিস্ট এবং ডাঃ প্যাট্রিক স্টেপটো, একজন গাইনোকোলজিস্ট, শরীরের বাইরে মানুষের ডিম নিষিক্ত করার সম্ভাবনা অন্বেষণ শুরু করেন।

ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ)-এ তাদের অগ্রগামী কাজটি অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল, যার মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা সম্প্রদায়ের সংশয় এবং সীমিত অর্থায়ন।

যুগান্তকারী—–

10 নভেম্বর, 1977-এ, ইংল্যান্ডের ওল্ডহ্যামের 29 বছর বয়সী মহিলা লেসলি ব্রাউন প্রথম সফল আইভিএফ পদ্ধতির মধ্য দিয়েছিলেন। তার ডিম্বাণু সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং তার স্বামীর শুক্রাণু দিয়ে একটি পরীক্ষাগারের থালায় নিষিক্ত করা হয়েছিল। দুটি ভ্রূণ তার জরায়ুতে স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং একটি গর্ভাবস্থা নিশ্চিত হয়েছিল।

লুইস ব্রাউনের জন্ম—-

স্বাভাবিক গর্ভধারণের পর, লেসলি 25 জুলাই, 1978 তারিখে ওল্ডহাম জেনারেল হাসপাতালে রাত 11:47 মিনিটে লুইস জয় ব্রাউনের জন্ম দেন। শিশুটির ওজন 5 পাউন্ড 12 আউন্স এবং সুস্থ ছিল। টেস্টটিউব শিশুর আগমনের খবরটি মিডিয়ার ব্যাপক মনোযোগ ছড়িয়ে দেয় এবং লুইস রাতারাতি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।

প্রভাব—-

লুইস ব্রাউনের জন্ম প্রজনন ওষুধে একটি নতুন যুগের সূচনা করে। IVF প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতি হয়েছে, এবং প্রথম IVF ক্লিনিক বিশ্বব্যাপী খোলা হয়েছে। তারপর থেকে, 8 মিলিয়নেরও বেশি শিশু IVF এর মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেছে, এবং পদ্ধতিটি বন্ধ্যাত্বের জন্য একটি সাধারণ চিকিত্সা হয়ে উঠেছে।

উত্তরাধিকার—–

লুইস ব্রাউনের উত্তরাধিকার তার ঐতিহাসিক জন্মের বাইরেও প্রসারিত। তিনি বন্ধ্যাত্ব সচেতনতা এবং IVF গবেষণার জন্য একজন উকিল হয়ে উঠেছেন। তার গল্প অগণিত দম্পতিকে IVF চিকিত্সা অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করেছে, তাদের আশা এবং পিতৃত্বের সুযোগ প্রদান করেছে।

উপসংহার—-

প্রথম টেস্টটিউব শিশু লুইস ব্রাউনের জন্ম, চিকিৎসা ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত। এটি প্রজনন ওষুধে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে এবং বন্ধ্যাত্বের সাথে লড়াইরত লক্ষ লক্ষ দম্পতিদের আশার প্রস্তাব দিয়েছে। IVF প্রযুক্তির বিকাশ অব্যাহত থাকায়, লুইসের উত্তরাধিকার টিকে থাকবে, যা ভবিষ্যত প্রজন্মকে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় উদ্ভাবনী সমাধান অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করবে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অফ মির্জাফর।।।।

মিরজাফর, তিনি ছিলেন 18 শতকের বাংলার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি দুবার মুর্শিদাবাদের নবাব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, প্রথমে 1757 থেকে 1760 এবং তারপর আবার 1763 থেকে 1765 সাল পর্যন্ত। তার দ্বিতীয় শাসনকাল 25 জুলাই, 1763 সালে শুরু হয় এবং এই অঞ্চলের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় চিহ্নিত করে।

পটভূমি—–

মির্জাফরের প্রথম রাজত্ব ছিল অশান্তি ও সংঘাত দ্বারা চিহ্নিত। 1757 সালে পলাশীর যুদ্ধের পর তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন, যেখানে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তৎকালীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে পরাজিত করে। যাইহোক, শীঘ্রই ব্রিটিশদের সাথে মির্জাফরের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায় এবং 1760 সালে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন।
নির্বাসন এবং প্রত্যাবর্তন
তার ক্ষমতাচ্যুতির পর মির্জাফর আওধ রাজ্যে নির্বাসনে চলে যান। তবে তিনি ক্ষমতায় ফেরার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন। 1763 সালে, তিনি সিংহাসন পুনরুদ্ধার করার একটি সুযোগ দেখেছিলেন যখন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আওধের শাসকের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে।

দ্বিতীয় রাজত্ব——

25 জুলাই, 1763 তারিখে, মির্জাফর মুর্শিদাবাদে ফিরে আসেন এবং নবাব হিসাবে পুনর্বহাল হন। তার দ্বিতীয় শাসনকাল তার কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার এবং ব্রিটিশ প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করার প্রচেষ্টার একটি সিরিজ দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল। যাইহোক, তার প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল এবং 1765 সালে তাকে আবার পালাতে বাধ্য করা হয়েছিল।

উত্তরাধিকার—–

মির্জাফরের দ্বিতীয় রাজত্ব মুর্শিদাবাদের নবাবদের শেষের সূচনা করে। এই অঞ্চলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রভাব ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং নবাবরা ক্রমশ শক্তিহীন হয়ে পড়ে। মির্জাফরের উত্তরাধিকার জটিল, কেউ কেউ তাকে একজন নায়ক হিসেবে দেখেন যিনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতাকে প্রতিরোধ করেছিলেন এবং অন্যরা তাকে একজন ক্ষমতা-ক্ষুধার্ত নেতা হিসেবে দেখেন যিনি এই অঞ্চলের অস্থিতিশীলতায় অবদান রেখেছিলেন।

উপসংহার—-

মুর্শিদাবাদের নবাব হিসেবে মির্জাফরের দ্বিতীয় শাসনকাল ছিল এই অঞ্চলের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এটি নবাব এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ের একটি টার্নিং পয়েন্ট চিহ্নিত করে। যদিও তার কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করার তার প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল, তার উত্তরাধিকার আজও এই অঞ্চলে অনুভূত হচ্ছে।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে ভারতীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী – ছায়া দেবী।।।।।

ভূমিকা— বাংলা ছায়া ছবির জগতে ছায়া দেবী এক কিংবদন্তি অভিনেত্রীর নাম।ছায়া দেবী একজন প্রতিভাময়ী ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। স্বর্ণ যুগের এই অভিনেত্রী বহু সিনেমায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করে তাঁর অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন——

ছায়া দেবীর পিসিমা ছিলেন অভিনেতা অশোককুমার ও কিশোর কুমারের দিদিমা।ছায়া দেবীর জন্ম ৩ জুন ১৯১৯ সালে এই পিসিমার ( সতীশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী) ভাগলপুরের রাজবাড়ীতে। পিতা হারাধন গঙ্গোপাধ্যায়।

প্রাথমিক শিক্ষা ও অভিনয় জীবনে প্রবেশ—

তার প্রাথমিক শিক্ষা ভাগলপুরের মোক্ষদা গার্লস স্কুলে। ভাগলপুর থেকে বাবার সঙ্গে দিল্লি গিয়ে ইন্দ্রপ্রস্থ গার্লস স্কুলে ভর্তি হন এবং সঙ্গীত চর্চা করতে থাকেন। এগারো বৎসর বয়সে রাঁচির অধ্যাপক ভূদেব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাহ হয়। কিন্তু এ বিবাহ কার্যকর হয় না। দশম শ্রেণীর ছাত্রী তিনি বাবার সঙ্গে কলকাতায় এসে কৃষ্ণচন্দ্র দে ও পণ্ডিত দামোদর মিশ্রর কাছে সংগীত শিখতে থাকেন। সেই সঙ্গে বেলা অর্ণবের কাছে নাচের তালিম নিতে থাকেন। নাটক-পাগল দুই পিসতুতো দাদা শ্রীশচন্দ্র ও শৈলেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি অভিনয় জগতে আসেন।

অভিনয় জীবন——

১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দেই তিনি দেবকী বসুর ‘সোনার সংসার’ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন। তবে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কনক নামের কিশোরী ছায়া দেবী নাম নিয়ে ‘পথের শেষে’ ছবিতে অন্যতম নায়িকার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি রাঙা বৌ, ছিন্নহার, প্রভাসমিলন, হাল বাঙলা, বিদ্যাপতি (হিন্দি ও বাংলা), রিক্তা, জীবন মরণ প্রভৃতি। পথের শেষে – এই ছবিটি হিট হওয়ায় তিনি সোনার মেডেল পেয়েছিলেন।

গায়িকা হিসেবে—

অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি ছবিতে তিনি গানও গেয়েছেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘অভয়ের বিয়ে’ ছবিতে তিনি ৪/৫ খানা গান গেয়েছেন।

মুম্বই গমন—

এর পরে ছায়া দেবী প্রফুল্ল রায়ের আমন্ত্রণে তিনি মুম্বই গিয়ে সেখানে’মেরাগাঁও ‘ ছবিতে গানে ও অভিনয়ে বিশেষ পারদর্শিতা দেখান। ছায়া দেবী প্রায় পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলা, হিন্দী, তামিল ও তেলুগু ভাষায় শতাধিক ছায়াছবিতে প্রধানত পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ‘বিদ্যাপতি’ ছায়াছবির জন্য উনি প্রশংসিত হন ও ক্রমে প্রচুর উল্ল্যেখযোগ্য ছবিতে অভিনয় করেন, যেমন বাংলায় পরিচালক তপন সিংহর নির্জন সৈকতে, হাটে বাজারে এবং আপনজন, সপ্তপদী, মানিক, উত্তর ফাল্গুনী, বা হিন্দীতে অমিতাভ বচ্চনের সাথে আলাপ । বাংলা,হিন্দি ও তামিল তিন ভাষাতেই ‘রত্নদীপ’ ছবিতে তার অভিনয় স্মরণীয়। ছায়াছবিতে কাজ করার পাশাপাশি বেতার কেন্দ্রে নিয়মিত খেয়াল, ঠুংরি পরিবেশন করেছেন।

তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি সমূহ—

প্রায় দু-শোর বেশি ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। সাত পাকে বাঁধা, মুখার্জি পরিবার, অন্তরাল, আরোহী, কাঁচ কাটা হীরে, সূর্যতপা, থানা থেকে আসছি, মণিহার, গল্প হলেও সত্যি, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, হাটেবাজারে, আপনজন’ (রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত), বাঘিনী, কমললতা, চৌরঙ্গী, কুঁয়াশা, রাতভোর, সাহেব বিবি গোলাম, ত্রিযামা, মায়াবাজার, গলি থেকে রাজপথ, মাণিক, অটলজলের আহ্বান, দেয়ানেয়া, সপ্তপদী, নির্জন সৈকতে, পিতাপুত্র, হারমোনিয়াম, আরোগ্য নিকেতন, রাজা রামমোহন, বাবা তারকনাথ, আলাপ, ধনরাজ তামাং, অরুণ বরণ কিরণমালা, সূর্যসাক্ষী, রঙবেরঙ, প্রায়শ্চিত্ত, রাশিফল, লালগোলাপ, স্বর্ণমণির ঠিকানা, প্রতিকার, বোবা সানাই, প্রতিদান, কলঙ্কিত নায়ক, রাজকুমারী, মুক্তিস্নান, সমান্তরাল, কুহেলী, হার মানা হার, শেষ পর্ব, পদিপিসির বর্মি বাক্স, দেবীচৌধুরাণী।

মৃত্যু—–

কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী বহু সিনেমায় রেখে গিয়েছেন তাঁর অভিনয় দক্ষতার সাক্ষর। ২৫ এপ্রিল ২০০১ সালে তিনি প্রয়াত হন। কিন্তু আজও তিনি অমর হয়ে রয়েছেন মানষের হৃদয়ে।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

শিখদের আদর্শ ও দৈনন্দিন জীবনে গুরু গোবিন্দ সিংহের জীবন ও শিক্ষার প্রভাব সুদূরপ্রসারী।।।।

গুরু গোবিন্দ সিং : খালসা প্রবর্তন শিখ ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। গুরু গোবিন্দ সিং (২২ ডিসেম্বর ১৬৬৬ – ৭ অক্টোবর ১৭০৮) ছিলেন শিখ ধর্মের দশম গুরু। তিনি বর্তমান ভারতের বিহার রাজ্যের পাটনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। গুরু গোবিন্দ তাঁর পিতা গুরু তেগ বাহাদুরের স্থলাভিষিক্ত হন ১১ নভেম্বর ১৬৭৫ সালে নয় বছর বয়সে।

তিনি শিখ জাতির একজন নেতা, যোদ্ধা, কবি এবং দার্শনিক ছিলেন। শিখ সমাজে, গুরু গোবিন্দ আদর্শ পুরুষত্বের প্রতীক। তিনি তার উচ্চ শিক্ষা, দক্ষ ঘোড়সওয়ার, সশস্ত্র যুদ্ধে দক্ষতা এবং দক্ষিণের চরিত্রের জন্য বিখ্যাত। শিখ আদর্শ ও দৈনন্দিন জীবনে গুরু গোবিন্দ সিং-এর জীবন ও শিক্ষার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। তাঁর খালসা প্রবর্তন শিখ ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মুঘল ও শিবালিক পার্বত্য অঞ্চলের মুঘল ভাসালদের সাথে তিনিই শেষ মানব শিখ গুরু। ৭ অক্টোবর ১৭০৮-এ তিনি শিখ ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহেবকে শিখদের পরবর্তী এবং চিরন্তন গুরু হিসেবে ঘোষণা করেন। তার চার পুত্র ছিল: অজিত সিং, জুহর সিং, জোরওয়ার সিং, ফতেহ সিং।
গোবিন্দ সিং ছিলেন নবম শিখ গুরু গুরু তেগ বাহাদুর এবং মাতা গুজরির একমাত্র পুত্র। তিনি ২২ ডিসেম্বর ১৬৬৬ সালে পাটনা, বিহারে জন্মগ্রহণ করেন যখন তার পিতা বাংলা ও আসাম সফরে ছিলেন। গুরু গোবিন্দ সিং যখন জন্মগ্রহণ করেন, তখন তাঁর নাম ছিল গোবিন্দ রায় এবং তখত শ্রী পাটনা হরিমন্দর সাহিব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যেখানে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং জীবনের প্রথম চার বছর অতিবাহিত করেছিলেন। গুরু গোবিন্দ সিং জীবনের প্রথম ৫ বছর পাটনা শহরে কাটিয়েছিলেন।
একবার পাটনা শহরের রাজা ফতেহ চাঁদ এবং তার রানী, যারা নিঃসন্তান ছিলেন, শিব দত্তের কাছে গিয়ে তাকে একটি সন্তানের জন্য প্রার্থনা করতে বলেন। শিব দত্ত তাদের সন্তানকে গুরু গোবিন্দ সিংয়ের সাথে দেখা করতে এবং তার আশীর্বাদ নিতে বলেছিলেন। গুরু গোবিন্দ সিংয়ের সাথে দেখা করার পর, রানি তাকে একটি পুত্রের আশীর্বাদ করার জন্য অনুরোধ করেন, যার প্রতি গুরু গোবিন্দ সিং হেসে বলেন যে যদি তাদের একটি পুত্রের প্রয়োজন হয় তবে তিনিই তাকে পুত্র বলতে পারেন। এরপর রানী তাকে পুত্রের মর্যাদা দিয়ে পুত্র বলে ডাকেন। গুরু গোবিন্দ সিং তাদের প্রসাদে যেতেন এবং খেলতেন। রানী তার এবং তার খেলার সাথীদের জন্য পুরি এবং ছোলার ডাল রান্না করতেন। আজও সেই প্রসাদে পুরি ও ছোলার ডাল রান্না করে দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। প্রসাদটি এখন গুরুদ্বারে রূপান্তরিত হয়েছে। নবাব করিম বখশ এবং রহিম বখশ তাকে পছন্দ করেন এবং গুরু গোবিন্দ সিংকে একটি গ্রাম এবং একটি বাগান উপহার দেন।
গুরু তেগ বাহাদুর ১৬৬৫ সালে বিলাসপুরের (কাহলুর) শাসকের কাছ থেকে জমি কিনে আনন্দপুর শহর প্রতিষ্ঠা করেন। পূর্ব ভারত সফর শেষ হলে তিনি তার পরিবারকে আনন্দপুরে আসতে বলেন।
১৬৭০ সালে, তার পরিবার পাঞ্জাবে ফিরে আসে এবং ১৬৭২ সালের মার্চ মাসে তারা উত্তর ভারতের হিমালয়ের পাদদেশে চক নানকিতে চলে যায়, যাকে বলা হয় শিবালিক রেঞ্জ, যেখানে তিনি স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৬৭২ সালে গুরু গোবিন্দ সিং আনন্দপুরে পৌঁছান। তার প্রাথমিক শিক্ষায়, গুরু গোবিন্দ সিং পাঞ্জাবি, সংস্কৃত, ফার্সি, আরবি শিখেছিলেন এবং একজন সৈনিক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। তিনি পাটনা শহরে হিন্দি ও সংস্কৃত অধ্যয়ন করেন। আনন্দপুরে তিনি সাহেব চাঁদের কাছে পাঞ্জাবি এবং কাজী পীর মুহাম্মদের কাছে ফারসি শিখেছিলেন।
সিরহিন্দের মুসলিম সেনাপতি ও নবাব ওয়াজির খান, যার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গুরু বেশ কয়েকটি যুদ্ধ করেছিলেন, তিনি দুই আফগান, জামশেদ খান এবং ওয়াসিল বেগকে গুরুর সেনাবাহিনীকে অনুসরণ করার নির্দেশ দেন যখন তারা বাহাদুরের সাথে দেখা করতে অগ্রসর হন। দু’জন গোপনে গুরুকে অনুসরণ করেছিলেন যার সৈন্যরা ভারতের দাক্ষিণাত্য অঞ্চলে ছিল এবং শিবিরে প্রবেশ করেছিল যখন শিখরা কয়েক মাস ধরে গোদাবরী নদীর কাছে অবস্থান করেছিল। তারা গুরুর কাছে প্রবেশ করে এবং জামশেদ খান তাকে নান্দেদে মারাত্মক জখম করে। সেই আঘাতেই গুরুর মৃত্যু হয়।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

মহা নায়ক উত্তম কুমার, বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি, প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।।।

উত্তম কুমার ভারতীয় চলচ্চিত্রের বাংলা সিনেমার একজন কিংবদন্তী এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মহানায়ক রূপে পূজিত। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলার প্রথম সুপারস্টার হলেন উত্তম কুমার। তার সময়ে তাকে ম্যাটিনি আইডল বলা হত।উত্তম কুমার, যিনি মহানায়ক নামে পরিচিত, ছিলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, সুরকার এবং গায়ক যিনি মূলত বাংলা সিনেমায় কাজ করতেন।

কুমার অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি (১৯৬৭), এবং চিরিয়াখানা (১৯৬৭) ছবিতে কাজের জন্য সেরা অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। কুমার ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম সফল এবং প্রভাবশালী অভিনেতা। কুমারের কর্মজীবন ১৯৪০-এর দশকের শেষ থেকে ১৯৮০ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিন দশক ধরে বিস্তৃত ছিল।
তিনি ২০০ টিরও বেশি চলচ্চিত্রে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন, এবং তার কিছু বিখ্যাত কাজ হল অগ্নি পরীক্ষা, হারানো সুর, বিচারক, সপ্তপদী, ঝিন্দর বান্দি, দেয়া নেয়া, লাল পাথর, জতুগৃহ, থানা থেকে আসছি।

জন্ম ও পরিবার—

অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায় ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর উত্তর কলকাতার আহিরীটোলায় মাতৃগৃহে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় এবং মা চপলা দেবী। তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার দুই ভাই ছিল, বরুণ কুমার ও তরুণ কুমার। তার ছোট ভাই তরুণ কুমারও একজন অভিনেতা ছিলেন। “উত্তম” ডাকনাম তাকে তার মাতামহ দিয়েছিলেন।

ছেলেবেলা—

উত্তম কুমারকে চক্রবেরিয়া হাই স্কুলে ভর্তি করা হয় এবং পরে সাউথ সাবারবান স্কুলে ভর্তি হন যেখানে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। স্কুলে পড়ার সময় তিনি “লুনার ক্লাব” নামে একটি নাট্যদলের নেতৃত্ব দেন। কুমারের প্রথম ভূমিকা ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মুকুটে। দশ বছর বয়সে, তিনি নাটকে তার ভূমিকার জন্য একটি ট্রফি জিতেছিলেন। তিনি তার উচ্চ শিক্ষার জন্য গোয়েঙ্কা কলেজ অফ কমার্স অ্যান্ড বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে যোগদান করেছিলেন, কিন্তু তার পরিবারের আর্থিক অসুবিধার কারণে এই শিক্ষাটি সম্পূর্ণ করতে পারেননি। তারপর তিনি কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট কে ক্লার্ক হিসেবে যোগদান করেন, যেখানে তিনি প্রতি মাসে ৭৫ টাকা বেতন পেতেন। নিদানবন্ধু ব্যানার্জির কাছে গান শেখেন। তিনি লাঠি খেলা শিখেছিলেন এবং কুস্তি অনুশীলন করতেন। তিনি পরপর তিন বছর ভবানীপুর সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনে সাঁতারে চ্যাম্পিয়ন হন। তার পরিবার সুহৃদ সমাজ নামে একটি অপেশাদার নাট্যদলে যুক্ত হন।

কর্মজীবন—

নিম্ন মধ‍্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হয়েছিলেন। তাই পারিবারিক আর্থিক অনটনের জন‍্য চলচ্চিত্র জগতে আসা সহজ ছিলো না। তাই এক সাধারণ পরিবারের বড়োছেলে হিসেবে সংসারের হাল ধরতে চাকরির খোঁজ শুরু করেন তিনি। অনেক খুঁজে ১৯৪৬ সালে কলকাতা বন্দরে কেরানির চাকরি নেন উত্তম কুমার। চাকরি করার জন‍্য কলেজ শেষ করতে পারেননি তিনি। যখন তিনি শেষ বর্ষের ছাত্র তখন তাঁকে কলেজ ছাড়তে হয় কাজের চাপে। পড়াশোনা খুব বেশি দূর করতে না পারার আক্ষেপ ছিলো তাঁর বরাবর। কলকাতা বন্দরে কেরানির চাকরিতে মাসিক ২৭৫ টাকা মাইনে দিয়ে কর্মজীবন শুরু হয় তাঁর। তবে চাকরি করলেও অভিনয় থেকে বিরত থাকতে পারেননি।

চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার—

শুরুতে অরুণ কুমার নামে কিছু বানিজ্যিক ভাবে অসফল সিনেমা দিয়ে নিজের কেরিয়ার শুরু করলেও কিছু সময় পর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি হয়ে ওঠেন বাংলার সব থেকে জনপ্রিয় নায়ক। কুমার ১৯৪৭ সালে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করেন, হিন্দি ফিল্ম মায়াডোরে অতিরিক্ত হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন, যেটি কখনও মুক্তি পায়নি। তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল ১৯৪৮ সালের চলচ্চিত্র দৃষ্টিদান, যা নিতিন বোস পরিচালিত এবং অসিত বারান অভিনীত। পরের বছর, তিনি কামোনা ছবিতে নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন, আবার তার নাম পরিবর্তন করে উত্তম চ্যাটার্জি রাখা হয়। পরে তিনি আবার নিজের নাম পরিবর্তন করে অরুণ কুমার রাখেন। পাহাড়ী সান্যালের পরামর্শে ১৯৫১ সালের ছবি সহযাত্রী প্রথম যেখানে তিনি উত্তম কুমার নামটি ব্যবহার করেছিলেন। কুমারের প্রথম দিকের অনেক ছবিই ফ্লপ ছিল এবং তাকে ডাকনাম দেওয়া হয়েছিল “ফ্লপ মাস্টার জেনারেল”।
১৯৫২ সালে, নির্মল দে পরিচালিত বাসু পরীবারে কুমারের একটি সহায়ক ভূমিকা ছিল, যেটি ছিল তার প্রথম ভূমিকা যা প্রশংসা লাভ করে। পরের বছর, তিনি একই স্টুডিও এবং পরিচালকের সাথে শেরে চুয়াত্তর চলচ্চিত্রে কাজ করেন, যেটি তার প্রথমবার সুচিত্রা সেনের সাথে জুটি বেঁধেছিল। তার প্রথম যুগান্তকারী ভূমিকা ছিল ১৯৫৪ সালে অগ্রদূতের চলচ্চিত্র অগ্নিপরীক্ষাতে।

উত্তম কুমার ১৯৬৬ সালে নায়ক ছবিতে প্রথমবার সত্যজিৎ-এর সাথে কাজ করেন। নায়ক-এ কুমারকে দেখার পর, অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলর তার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং কাজ করতে চেয়েছিলেন এবং তার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন।
১৯৬৭ সালে, উত্তম কুমার রায়ের সাথে চিরিয়াখানায় কাজ করেন। ভারত সরকার যখন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রবর্তন করে, তখন উত্তম কুমার ছিলেন প্রথম অভিনেতা যিনি চিরিয়াখানা এবং অ্যান্টনি ফিরিঙ্গিতে অভিনয়ের জন্য ১৯৬৮ সালে ১৫তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন।
উত্তম কুমার প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলা সিনেমায় কাজ করেছেন, ১৯৪৮ সালে তাঁর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি দৃষ্টিদান থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তাঁর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা মোট ২০২টি, যার মধ‍্যে ১৫টি হিন্দি ছবিও আছে। তাঁর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলির মধ‍্যে অগ্নিপরীক্ষা, হারানো সুর, সপ্তপদী, ঝিন্দের বন্দী, জতুগৃহ, লাল পাথর, থানা থেকে আসছি, রাজদ্রোহী, নায়ক, এন্টনী ফিরিঙ্গি, চৌরঙ্গী, এখানে পিঞ্জর, স্ত্রী, অমানুষ, অগ্নীশ্বর, সন্ন‍্যাসী রাজা ইত্যাদি অন‍্যতম। উত্তম কুমার ভারতের প্রথম অভিনেতা যিনি ১৯৬৮ সালে জাতীয় পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মান পান। ১৯৬৭ সালের চলচ্চিত্র চিড়িয়াখানা ও এন্টনী ফিরিঙ্গির জন‍্য, তাঁকে বাংলা চলচ্চিত্রের সবচাইতে জনপ্রিয় ও সফল অভিনেতা হিসেবে ধরা হয়।

উত্তম কুমারের সাথে জুটি—

উত্তম-সুচিত্রা—

সুচিত্রা সেন উত্তম কুমার – এই জুটি বাংলা সিনেমার অমর জুটি নামে খ্যাত। তারা দুজন এক সাথে প্রায় ৩০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন এবং সবক’টি ছবি চুড়ান্ত সাফল্যলাভ করেছে। তাদের অভিনীত কিছু উল্লেখযোগ্য ছবি হল – হারানো সুর, অগ্নী পরীক্ষা, প্রিয় বান্ধবী, শাপমোচন, ইন্দ্রাণী, সপ্তপদী ইত্যাদি।

উত্তম-সুপ্রিয়া—

সোনার হরিণ থেকে তাদের জুটির জয়যাত্রা শুরু। এরপর তারা একে একে উত্তরায়ণ, কাল তুমি আলেয়া, সন্যাসী রাজা, বন পলাশীর পদাবলী, বাঘ বন্দীর খেলা ইত্যাদি জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করেন।

উত্তম-সাবিত্রী—

শেষ দিকে উত্তম কুমারের সাথে সাবিত্রী চ্যাটার্জীর জুটি খুবই জনপ্রিয় হয়। তাদের করা উল্লেখ যোগ্য কিছু ছবি হল হাত বাড়ালেই বন্ধু, দুই ভাই, নিশি পদ্ম, মমের আলো ইত্যাদি। ধন্যি মেয়ে বা মৌচাকের মত কমেডি ছবিতে সাবিত্রীর সাথে জুটি বেঁধে উত্তম কুমারের হাসির অভিনয় আজও সকল দর্শকের মন জয় করে।

ব্যক্তিগত জীবন—

তিনি ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত গৌরী দেবীর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। এবং গৌতম চট্টোপাধ্যায় নামে এক সন্তান ছিল। তবে গৌতম চট্টোপাধ্যায় পরবর্তীকালে ক্যান্সারে মারা যান। ১৯৬৩ সালে তিনি পরিবার ছেড়ে চলে যান এবং জীবনের শেষ ১৭ বছর তিনি অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীর সাথেই ছিলেন। উত্তম কুমারের সঙ্গে সুপ্রিয়া দেবীর গভীর সম্পর্কে ছিল। শোনা যায় তিনি সুপ্রিয়া দেবীকে বিয়েও করেছিলেন।

পুরস্কার এবং স্বীকৃতি—

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার—

১৯৬১: বাংলায় দ্বিতীয় সেরা ফিচার ফিল্মের জন্য সার্টিফিকেট অফ মেরিট – সপ্তপদী (প্রযোজক হিসেবে)
১৯৬৩: বাংলায় সেরা ফিচার ফিল্মের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার – উত্তর ফাল্গুনী (প্রযোজক হিসেবে)

১৯৬৭: সেরা অভিনেতার জন্য জাতীয় পুরস্কার – অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, চিরিয়াখানা।

প্রয়াণ—

বাংলা সিনেমার মহানায়ক উত্তম কুমার টলিউডকে কার্যত খ্যাতির শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনিই। অথচ মাত্র ৫৪ বছর বয়সেই আচমকা কাউকে কিছু টের পেতে না দিয়েই খাতির মধ্য গগনে থাকতে থাকতেই প্রয়াত হন তিনি। সেই সময় ওগো বঁধু সুন্দরী সিনেমার শুটিং করছিলেন। শেষ দিনের শুটিং চলাকালীন হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়। তারকার মতই নিঃশব্দে মৃত্যু হয়েছিল তার। ১৯৮০ সালের ২৪শে জুলাই, তারিখটা টলিউডের এর জন্য একটা কালো দিন। কারণ এই দিনেই প্রয়াত উত্তম কুমার। তার মৃত্যু বাংলা সিনেমা জগতে নেমে আসে এক গভীর শোকের ছায়া। তার অন্তিম যাত্রায় সারা কলকাতা রাজ পথে বেরিয়ে আসে। তার অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতে কলকাতার বহু মানুষ শোক প্রকাশ করেন। বাংলা সিনেমা যতদিন থাকবে উত্তম কুমার মহানায়ক হয়েই রয়ে যাবেন সকল বাঙালীর মনে।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

শমিত ভঞ্জ : বাংলা সিনেমার প্রথম ‘আধুনিক নায়ক’; প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।।

শমিত ভঞ্জ একজন বাঙালি চলচ্চিত্র অভিনেতা। তাঁর পিতা প্রীতিময় ভঞ্জ এবং মা শীলা ভঞ্জ। তাদের তৃতীয় পুত্র শমিতের জন্ম হয় ১৯৪৪ এর জানুয়ারি মাসে মেদিনীপুরের তমলুকে। তাঁর উপরে দুই দাদা এবং এক ছোট বোন ছিল।

ছেলেবেলা—-

ছোটবেলা থেকেই খুব ডাকাবুকো স্বভাবের ছিলেন শমিত। শৈশবে একবার তাঁর ছোটবোন কৃষ্ণাকে এক সহপাঠী চড় মেরেছিল।

তাতে রেগে গিয়ে সেই সহপাঠীকে বালির মধ্যে পুঁতে দিয়েছিল ছোট্ট শমিত। তার বয়স তখন সাত। শেষে শিক্ষকরা এসে তাকে উদ্ধার করেন। খেলতে গিয়ে মাথা ফেটে গেছে… একমুঠো মাটি তুলে সেখানে ঘষে দিয়ে আবার খেলতে শুরু করেছে এমনই দুরন্তপনা ছিল তাঁর।

অভিনয়ের জন্য বড়ি ছাড়া— .

স্বভাব চিরকালই ডানপিটে ধরণের। এখনকার ভাষায়, একটু ‘দাদাগিরি টাইপের’। অভিনয় করবেন বলে বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়েছিলেন। নিজের বেকারত্বকে পাত্তা না দিয়ে কলেজ পড়ুয়া প্রেমিকাকে বিয়ে করেছিলেন জেদের বশে। অনুমতির তোয়াক্কা না করে, তপন সিংহের মতো নামী পরিচালকের ঘরে ধাক্কা দিয়ে ঢুকে বলেছিলেন, “অভিনয় করতে চাই।”

কর্মজগৎ—

অভিনেতা হিসেবে তিনি আজও প্রতিটি বাঙালি হৃদয়ে বেঁচে আছেন। কতটা দক্ষ অভিনেতা তিনি ছিলেন তা বুঝিয়েছেন অভিনয়ের মধ্যদিয়ে। তবে এতটা সহজ ছিলনা তাঁর পথচলা। কারন, তিনি যে সময়ে বাংলা ছবিতে অভিনয় করতে এসেছিলেন তখন বাংলা চলচ্চিত্র আকাশে সূর্য হয়ে বিরাজমান ছিলেন উত্তমকুমার। উত্তম আলোয় তখন ঢাকা পড়ে যাচ্ছিল সব। বাঙালির হৃদয় জুড়ে তখন উত্তম আর উত্তম। তার পাশাপাশি আবার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ও তখন বাঙালির মনে আলোড়ন তুলেছেন। তাঁদের অভিনয়ে, ক্যারিশমায় বাঙালি দর্শক থেকে পরিচালকরা পর্যন্ত বিভোর।

কিন্তু তার পরেও অভিনয় দক্ষতার দিয়ে উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অনিল চট্টোপাধ্যায়, স্বরূপ দত্তের পাশাপাশি শমিত ভঞ্জের নাম এবং খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তিনি সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিংহ, গৌতম ঘোষ প্রমুখ চলচ্চিত্র পরিচালকদের সাথে কাজ করেছেন। তপন সিংহের মতো পরিচালক ও তাঁর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে সুযোগ দেন “আপনজন” ছবিতে। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একে একে নতুন ছবিতে সুযোগ পেতে থাকেন। অভিনয় করেছেন সত্যজিৎ রায় (অরণ্যের দিনরাত্রি), তরুণ মজুমদার(ফুলেশ্বরী, দাদার কীর্তি, গণদেবতা), বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত (ফেরা) -এর মতো বিখ্যাত পরিচালকদের ছবিতে।

অভিনীত ছবি—–

বহু বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছিলেন শমিত ভঞ্জ।
তাঁর অভিনিত ছবি গুলি হলো হাটে বাজারে (১৯৬৭), আপনজন (১৯৬৮), পরিণীতা (১৯৬৯), নতুন পাতা (১৯৬৯), বনজ্যোৎস্না (১৯৬৯), অরণ্যের দিনরাত্রি (১৯৭০), গুড্ডি (১৯৭১), যবন (১৯৭২), আজকের নায়ক (১৯৭২), ফুলেশ্বরী (১৯৭৪), অসতী (১৯৭৪), মৃগয়া (১৯৭৬), দত্তা (১৯৭৬), কবিতা (১৯৭৭), স্ট্রাইকার (চলচ্চিত্র) (১৯৭৮), গণদেবতা (১৯৭৯), দাদার কীর্তি (১৯৮০), শহর থেকে দূরে (১৯৮১), আবার অরণ্যে (২০০৩)।
শুধু বাংলা নয়, হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত বিখ্যাত ছবি “গুড্ডি”-তে নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তিনি।

মৃত্যু–

অভিনেতা হিসেবে তাঁর জায়গা হওয়া উচিত ছিল হলিউডের ক্লিন্ট ইস্টউড, লি ভন ক্লিফ বা ডেনজেল ওয়াশিংটনের মতো অভিনেতাদের পাশেই। কিন্তু কপালদোষে বাংলা সিনেমার প্রথম ‘আধুনিক নায়ক’কে সে দিন চিনতে পারেননি কেউ। উত্তম মোহে তখনও বিভোর বাংলার পরিচালক থেকে দর্শককুল। তবু হতাশা তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সিনেমাকে। জীবনের শেষ সিনেমা “আবার অরণ্যে”-তে যখন অভিনয় করেছিলেন তখন তিনি ক্যানসারের শেষ স্টেজে। কিন্তু তাই নিয়েই কাজ সম্পূর্ণ করেছিলেন তিনি। এমনই ছিল তাঁর কাজের প্রতি নিষ্ঠা, অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা। ২০০৩ সালের ২৪ জুলাই ক্যানসারে তার মৃত্যু হয়।

।। তথ্য সংগৃহীত : উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েপেজ।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে প্রখ্যাত ভারতীয় ব্যালে নর্তকী – অমলা শংকর।।।।

অমলা শংকর একজন ভারতীয় ব্যালে নৃত্যশিল্পী। তিনি উদয় শঙ্করের স্ত্রী, আনন্দ শংকর এবং মমতা শঙ্করের মা এবং রবি শঙ্করের ভাইঝি। উদয় শংকর পরিচালিত কল্পনা সিনেমায় অভিনয় করেন অমলা শংকর।

জীবনী—————

অমলা শঙ্কর ১৯১৯ সালের ২৭ জুন মাগুরা জেলার বাটাজোর গ্রামে অমলা নন্দী নামে জন্মগ্রহণ করেন।

তার বাবা অক্ষয় কুমার নন্দী চেয়েছিলেন তার সন্তানরা প্রকৃতি এবং গ্রামাঞ্চলের প্রতি আগ্রহী হোক। ১৯৩১ সালে, যখন তিনি ১১ বছর বয়সে, তিনি প্যারিসে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে গিয়েছিলেন, যেখানে তিনি উদয় শঙ্কর এবং তার পরিবারের সাথে দেখা করেছিলেন। অমলা তখন ফ্রক পরিহিতা। উদয় শঙ্করের মা হেমাঙ্গিনী দেবী তাকে শাড়ি পরিয়ে দেন। অমলা উদয় শঙ্করের নাচের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন এবং সারা বিশ্বে পরিবেশন করেছিলেন।

অভিনয় জীবন——

অমলা শঙ্কর কল্পনা ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।অমলা, উমার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ছবিটি রচনা, সহ-প্রযোজনা, পরিচালনা করেছিলেন উদয় শঙ্কর, যিনি ছবিতেও উপস্থিত ছিলেন। অমলা শঙ্কর ২০১২ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন যেখানে ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছিল অমলা শঙ্কর একটি সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন- “২০১২ কান ফিল্ম ফেস্টিভাল … আমি কান ফিল্ম ফেস্টিভালের সর্বকনিষ্ঠ চলচ্চিত্র তারকা হিসাবে এসেছি… আমি ৮১ বছর পরে কানে আবার এলাম”।

পুরস্কার——–

২০১১ সালে বঙ্গবিভূষণ (নৃত্য এর জন্য) পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রদত্ত পুরস্কার। তিনি ভারত সরকারের পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত হন ( ১৯৯১ সালে )।

মৃত্যু———–

২০২০ সালের ২৪ জুলাই ১০১ বছর বয়েসে পশ্চিমবঙ্গে কলকাতায় তার মৃত্যু হয়।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজকের দিনে কলকাতায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পূর্বতন বেঙ্গল একাডেমি অব লিটারেচার স্থাপিত হয়।।।।

বেঙ্গল লিটারারি সোসাইটি, 23 জুলাই, 1823 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, একটি অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান যা বাংলা সাহিত্য ও ভাষার প্রচার ও বিকাশে নিবেদিত ছিল। বেঙ্গল একাডেমি অফ লিটারেচার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত, এটি ছিল বাংলা ও ভারতের সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক ঐতিহ্যের একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।

19 শতকের গোড়ার দিকে, বাংলা একটি সাংস্কৃতিক নবজাগরণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, এবং এই বৃদ্ধির জন্য সমাজ গঠিত হয়েছিল।

পণ্ডিত, লেখক এবং বুদ্ধিজীবী সহ একদল দূরদর্শী ব্যক্তি, সাহিত্যিক আলোচনা, বিতর্ক এবং অগ্রগতির জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে একত্রিত হয়েছিল।
সমাজের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল বাংলা সাহিত্যের প্রচার, মৌলিক লেখাকে উৎসাহিত করা এবং সাহিত্য সমালোচনা ও বিশ্লেষণের জন্য একটি ফোরাম প্রদান করা। এর লক্ষ্য ছিল বাংলা সাহিত্যের ভান্ডার তৈরি করা, দুর্লভ পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ ও প্রকাশ করা এবং জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায়, সমাজ তার যাত্রা শুরু করে, রাজা রামমোহন রায়, ডেভিড হেয়ার এবং উইলিয়াম কেরির মতো উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সোসাইটির প্রারম্ভিক সভাগুলি কলকাতা টাউন হলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে সদস্যরা সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা করতে, তাদের নিজস্ব লেখা শেয়ার করতে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্কে জড়িত হতেন।
বেঙ্গল লিটারারি সোসাইটির একটি উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রসার। যে সময়ে ইংরেজি প্রাধান্য লাভ করছিল, সমাজ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিল। তারা লেখকদের বাংলা ভাষায় মৌলিক রচনা তৈরি করতে উত্সাহিত করেছিল এবং তাদের প্রচেষ্টার ফলে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো বিশিষ্ট বাঙালি লেখকদের আবির্ভাব ঘটে।
বাংলা শিক্ষার বিকাশেও সমাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্তর্ভুক্তির পক্ষে কথা বলেছিল, যা অবশেষে স্কুল ও কলেজে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করে।
বছরের পর বছর ধরে, বেঙ্গল লিটারারি সোসাইটি বেশ কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে, কিন্তু বাংলা সাহিত্য ও ভাষাকে প্রসারে এর অঙ্গীকার অটুট রয়েছে। আজ, সমাজটি কলকাতার সাহিত্যিক ল্যান্ডস্কেপে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসাবে অব্যাহত রয়েছে, সাহিত্য অনুষ্ঠান, সম্মেলন এবং কর্মশালার আয়োজন করে।
উপসংহারে বলা যায়, 23শে জুলাই, 1823 সালে প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল লিটারারি সোসাইটি বাংলা ও ভারতে সাহিত্যের শ্রেষ্ঠত্বের বাতিঘর। বাংলা সাহিত্য ও ভাষার বিকাশে এর অবদান অপরিসীম, এবং এর উত্তরাধিকার প্রজন্মের লেখক, পণ্ডিত এবং বুদ্ধিজীবীদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

বাল গঙ্গাধর তিলক : ভারতের জাতীয়তাব্দী নেতা, সমাজ সংস্কারক, আইনজীবী ও স্বাধীনতা কর্মী।।।।।

বাল গঙ্গাধর তিলক, ছিলেন একজন ভারতীয় জাতীয়তাবাদী, শিক্ষক এবং একজন স্বাধীনতা কর্মী। তিনি ছিলেন লাল বাল পাল ট্রাইউমভাইরেটের এক তৃতীয়াংশ। তিলক ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম নেতা। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষ তাকে “ভারতীয় অস্থিরতার জনক” বলে অভিহিত করেছিল। তাকে “লোকমান্য” উপাধিতেও ভূষিত করা হয়েছিল, যার অর্থ “জনগণ তাদের নেতা হিসাবে গ্রহণ করেছে”।

মহাত্মা গান্ধী তাকে “আধুনিক ভারতের নির্মাতা” বলে ডাকতেন। তিলক ছিলেন স্বরাজ (‘স্ব-শাসন’) এর প্রথম এবং শক্তিশালী উকিলদের একজন এবং ভারতীয় চেতনায় একজন শক্তিশালী উগ্রপন্থী। তিনি মারাঠি ভাষায় তাঁর উদ্ধৃতির জন্য পরিচিত: “স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার এবং আমি তা পাব!”। তিনি বিপিন চন্দ্র পাল, লালা লাজপত রায়, অরবিন্দ ঘোষ, ভি.ও. চিদাম্বরম পিল্লাই এবং মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ সহ অনেক ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস নেতাদের সাথে একটি ঘনিষ্ঠ জোট গঠন করেছিলেন।
কেশব গঙ্গাধর তিলক 23 জুলাই 1856-এ বর্তমান মহারাষ্ট্রের (তৎকালীন বোম্বে প্রেসিডেন্সি) রত্নাগিরি জেলার সদর দফতর রত্নগিরিতে একটি মারাঠি হিন্দু চিৎপাবন ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক গ্রাম ছিল চিখালী। তাঁর পিতা, গঙ্গাধর তিলক ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক এবং একজন সংস্কৃত পণ্ডিত যিনি তিলকের বয়স যখন ষোল বছর তখন মারা যান। 1871 সালে, তিলক তার বাবার মৃত্যুর কয়েক মাস আগে ষোল বছর বয়সে তাপিবাইকে (নি বল) বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের পর তার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় সত্যভামাবাই। তিনি 1877 সালে পুনের ডেকান কলেজ থেকে গণিতে প্রথম শ্রেণীতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরিবর্তে L.L.B কোর্সে যোগদানের জন্য তিনি তার M.A. কোর্সটি মাঝপথে ছেড়ে দেন এবং 1879 সালে তিনি সরকারি আইন কলেজ থেকে L.L.B ডিগ্রি অর্জন করেন। স্নাতক হওয়ার পর, তিলক পুনের একটি বেসরকারি স্কুলে গণিত পড়া শুরু করেন। পরবর্তীতে নতুন স্কুলে সহকর্মীদের সাথে আদর্শগত মতপার্থক্যের কারণে তিনি প্রত্যাহার করে সাংবাদিকতা করেন। তিলক সক্রিয়ভাবে জনসাধারণের কাজে অংশগ্রহণ করতেন। তিনি বলেছিলেন: “ধর্ম এবং ব্যবহারিক জীবন আলাদা নয়। প্রকৃত চেতনা হল শুধুমাত্র নিজের জন্য কাজ না করে দেশকে আপনার পরিবারে পরিণত করা। এর বাইরের ধাপটি হল মানবতার সেবা করা এবং পরবর্তী ধাপটি হল ঈশ্বরের সেবা করা।”
বিষ্ণুশাস্ত্রী চিপলুঙ্করের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, তিনি 1880 সালে গোপাল গণেশ আগরকার, মহাদেব বল্লাল নামজোশী এবং বিষ্ণুশাস্ত্রী চিপলুঙ্কর সহ তার কয়েকজন কলেজ বন্ধুর সাথে মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য নিউ ইংলিশ স্কুলের সহ-প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের লক্ষ্য ছিল ভারতের তরুণদের শিক্ষার মান উন্নত করা। স্কুলের সাফল্য তাদের নেতৃত্বে 1884 সালে ডেকান এডুকেশন সোসাইটি স্থাপন করে একটি নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে যা ভারতীয় সংস্কৃতির উপর জোর দেওয়ার মাধ্যমে তরুণ ভারতীয়দের জাতীয়তাবাদী ধারণা শেখায়। সোসাইটি 1885 সালে মাধ্যমিক-পরবর্তী অধ্যয়নের জন্য ফার্গুসন কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। তিলক ফার্গুসন কলেজে গণিত পড়াতেন। 1890 সালে, তিলক আরও খোলামেলা রাজনৈতিক কাজের জন্য ডেকান এডুকেশন সোসাইটি ত্যাগ করেন। তিনি একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবনের উপর জোর দিয়ে স্বাধীনতার দিকে একটি গণআন্দোলন শুরু করেছিলেন।
তিলক ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে ১৮৯০ সালে যোগদান করেন ১৮৯০ সালে। আত্মশাসনের লড়াইয়ে, তিনি মধ্যপন্থী মনোভাবের বিরোধিতা করতেন। তিনি ছিলেন সেই সময়ের অন্যতম বিশিষ্ট মৌলবাদী। প্রকৃতপক্ষে, এটি ছিল ১৯০৫-১৯০৭ এর স্বদেশী আন্দোলন যার ফলে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস মধ্যপন্থী এবং চরমপন্থীদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
১৮৯৬ সালের শেষের দিকে, একটি বুবোনিক প্লেগ বোম্বে থেকে পুনেতে ছড়িয়ে পড়ে এবং ১৮৯৭ সালের জানুয়ারিতে এটি মহামারী আকারে পৌঁছে। জরুরী অবস্থা মোকাবেলায় ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীকে আনা হয়েছিল এবং প্লেগ নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ব্যক্তিগত বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশের অনুমতি, বাড়ির অধিবাসীদের পরীক্ষা, হাসপাতাল ও কোয়ারেন্টাইন ক্যাম্পে স্থানান্তর, ব্যক্তিগত অপসারণ এবং ধ্বংস; সম্পদ, এবং রোগীদের শহরে প্রবেশ বা ছেড়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখা। মে মাসের শেষের দিকে, মহামারীটি নিয়ন্ত্রণে আনা গেছিল। মহামারী রোধে ব্যবহৃত পদক্ষেপগুলি ভারতীয় জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক বিরক্তি সৃষ্টি করেছিল। হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ভগবদ গীতার উদ্ধৃতি দিয়ে তিলক তাঁর কাগজ কেশরীতে (কেশরী মারাঠি ভাষায় লেখা হয়েছিল, এবং “মারাঠা” ইংরেজিতে লেখা হয়েছিল) তে প্রদাহজনক নিবন্ধ প্রকাশ করে এই সমস্যাটি তুলে ধরেছিলেন যে, কারও প্রতি কোন দোষ চাপানো যাবে না পুরস্কারের কোন চিন্তা ছাড়াই একজন অত্যাচারীকে হত্যা করেছে। এর পরে, ১৮৯৭ সালের ২২ জুন, কমিশনার রান্ড এবং আরেক ব্রিটিশ অফিসার লেফটেন আয়ারস্টকে চাপেকর ভাই এবং তাদের অন্যান্য সহযোগীরা গুলি করে হত্যা করে।বারবারা এবং থমাস আর মেটকাফের মতে, তিলক “নিশ্চয়ই অপরাধীদের পরিচয় গোপন করেছিলেন”। তিলকের বিরুদ্ধে হত্যার প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয় এবং ১৮ মাসের কারাদণ্ড হয়।যখন তিনি বর্তমান মুম্বাইয়ের কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন, তখন তিনি একজন শহীদ এবং একজন জাতীয় বীর হিসেবে শ্রদ্ধেয় ছিলেন। তিনি তার সহযোগী কাকা ব্যাপটিস্টার একটি নতুন স্লোগান গ্রহণ করেছিলেন: ” স্বরাজ (স্ব-শাসন) আমার জন্মগত অধিকার এবং এটি আমার থাকবে।”
বঙ্গভঙ্গের পর, যা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দুর্বল করার লর্ড কার্জন কর্তৃক নির্ধারিত একটি কৌশল ছিল , তিলক স্বদেশী আন্দোলন এবং বয়কট আন্দোলনকে উৎসাহিত করেছিলেন। এই আন্দোলনের মধ্যে ছিল বিদেশী পণ্য বর্জন এবং যে কোন ভারতীয় যারা বিদেশী পণ্য ব্যবহার করে তাদের সামাজিক বয়কট।স্বদেশী আন্দোলনের মধ্যে ছিল দেশীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার।একবার বিদেশী পণ্য বয়কট করা হলে, একটি শূন্যতা ছিল যা ভারতে সেই পণ্যগুলির উৎপাদন দ্বারা পূরণ করতে হয়েছিল।তিলক বলেছিলেন যে স্বদেশী এবং বয়কট আন্দোলন একই মুদ্রার দুটি দিক।
পাঞ্জাবের লালা লাজপত রায় , মহারাষ্ট্রের বাল গঙ্গাধর তিলক (মধ্যম) এবং বাংলার বিপিন চন্দ্র পাল, ট্রাইমুইরেট লাল বাল পাল নামে পরিচিত ছিলেন, ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের রাজনৈতিক বক্তৃতা বদলে দিয়েছিলেন।
তিলক ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারতীয় স্বায়ত্তশাসনের জন্য আন্দোলনের জন্য রাজনৈতিক ভাবে তাঁর কর্মজীবন ব্যয় করেছেন। গান্ধীর আগে তিনি ছিলেন ভারতের বহুল পরিচিত রাজনৈতিক নেতা। তার সহকর্মী মহারাষ্ট্রীয় সমসাময়িক, গোখলে থেকে ভিন্ন, তিলককে একজন উগ্র জাতীয়তাবাদী কিন্তু সামাজিক রক্ষণশীল হিসেবে বিবেচনা করা হত। তিনি বেশ কয়েকবার কারাবরণ করেছিলেন যার মধ্যে ম্যান্ডালয়ের দীর্ঘ সময়কাল ছিল।তার রাজনৈতিক জীবনের এক পর্যায়ে তাকে ব্রিটিশ লেখক স্যার ভ্যালেন্টাইন চিরোল “ভারতীয় অশান্তির জনক” বলে অভিহিত করেছিলেন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This