Categories
প্রবন্ধ

সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল – শুধু একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী নন, বরং স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক একতা প্রতিষ্ঠার প্রধান স্থপতি।

ভূমিকা

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে কিছু নাম চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু, ভগৎ সিং – এই নামগুলোর সঙ্গে যিনি সমান মর্যাদা পান তিনি হলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। তাঁকে বলা হয় ভারতের লোহপুরুষ (Iron Man of India)। কারণ তিনি শুধু একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী নন, বরং স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক একতা প্রতিষ্ঠার প্রধান স্থপতি। তাঁর দৃঢ় নেতৃত্ব, প্রশাসনিক দক্ষতা ও আপসহীন চরিত্রের কারণে আজকের ভারতের মানচিত্র গঠিত হয়েছে।


শৈশব ও শিক্ষাজীবন

বল্লভভাই প্যাটেলের জন্ম ৩১ অক্টোবর ১৮৭৫ সালে গুজরাটের নাডিয়াদ গ্রামে। তাঁর পিতা ঝাভেরভাই একজন কৃষক ছিলেন এবং মাতা লাদবাই ছিলেন এক দৃঢ়চেতা গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই বল্লভভাই ছিলেন মেধাবী, সাহসী এবং পরিশ্রমী।

শৈশবে তিনি প্রথাগত শিক্ষা নেন গুজরাটের স্থানীয় বিদ্যালয়ে। আর্থিক অভাব থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজের প্রচেষ্টায় পড়াশোনা চালিয়ে যান। ২২ বছর বয়সে তিনি মেট্রিকুলেশন পাশ করেন – যা তখনকার সময়ে গ্রামাঞ্চলের জন্য বিরল ঘটনা।

পরে তিনি আইনজীবী হওয়ার জন্য লন্ডনে যান। লন্ডনের মিডল টেম্পল ইন থেকে তিনি ব্যারিস্টারি পাশ করেন। দেশে ফিরে তিনি সফল আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন এবং গুজরাটে তাঁর নাম ডাক ছড়িয়ে পড়ে।


পরিবার ও ব্যক্তিজীবন

বল্লভভাই প্যাটেলের বিয়ে হয়েছিল ঝাভেরবাবি প্যাটেলের সঙ্গে। তাঁদের দুটি সন্তান ছিল – কন্যা মনিবেন এবং পুত্র দাহ্যাভাই। কিন্তু স্ত্রী অল্প বয়সেই মারা যান। এরপর প্যাটেল সন্তানদের একা মানুষ করেন। তাঁর কন্যা মনিবেন পিতার ছায়াসঙ্গিনী হয়ে সারা জীবন ছিলেন এবং প্যাটেলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহযোদ্ধা হিসেবে পাশে থেকেছেন।


রাজনীতিতে প্রবেশ

বল্লভভাই প্রথমে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। তিনি একজন সফল আইনজীবী হিসেবে স্বচ্ছল জীবন যাপন করছিলেন। কিন্তু ১৯১৭ সালে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয় এবং সেখান থেকেই তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু। গান্ধীর আদর্শ – অহিংসা ও সত্যাগ্রহ তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

তিনি গুজরাটে খেলাফত আন্দোলন, অহমেদাবাদের মিল শ্রমিকদের ধর্মঘট ও পরে বারদোলি সত্যাগ্রহ (১৯২৮) নেতৃত্ব দেন। এই আন্দোলনের জন্যই তাঁকে “সর্দার” উপাধি দেওয়া হয়। বারদোলি সত্যাগ্রহ ছিল কৃষকদের উপর অন্যায় কর বৃদ্ধির বিরুদ্ধে এক ঐতিহাসিক অহিংস সংগ্রাম।


স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান

সর্দার প্যাটেল কংগ্রেস দলের এক অনন্য সংগঠক ছিলেন। তিনি

  • নাগরিক অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০–২২)
  • দ্বিতীয় অসহযোগ আন্দোলন ও দান্ডি অভিযান (১৯৩০)
  • ভারত ছাড়ো আন্দোলন (১৯৪২)
    – প্রতিটি আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

তিনি বহুবার ব্রিটিশ সরকারের হাতে কারাবন্দি হন। কিন্তু তাঁর মনোবল কখনও ভাঙেনি। তিনি গুজরাট ও পশ্চিম ভারতের জনগণকে রাজনীতিতে সক্রিয় করে তোলেন এবং গান্ধীর অন্যতম বিশ্বস্ত সহযোগী হয়ে ওঠেন।


অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও প্রধানমন্ত্রী পদ বিতর্ক

১৯৪৬ সালে ব্রিটিশ সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করলে সর্দার প্যাটেল স্বরাষ্ট্র ও তথ্য সম্প্রচার দপ্তরের দায়িত্ব পান। কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১৫টি প্রাদেশিক কমিটি তাঁকে মনোনীত করলেও মহাত্মা গান্ধীর ইচ্ছায় তিনি নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন এবং নেহেরুকে সুযোগ দেন।

ইতিহাসবিদরা বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন প্যাটেলের পক্ষে থাকলেও তিনি দলের ঐক্যের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেন। যদি তিনি প্রধানমন্ত্রী হতেন তবে ভারতের প্রশাসনিক কাঠামো হয়তো আরও দৃঢ় হাতে পরিচালিত হতো।


স্বাধীন ভারতের লোহপুরুষ

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর তিনি ভারতের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন। তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান হলো ভারতের ভূখণ্ডগত ঐক্য রক্ষা।

তখন ব্রিটিশ ভারতকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল – ভারত ও পাকিস্তান। ব্রিটিশ শাসনের বাইরে ছিল ৫৬২টি দেশীয় রাজ্য। সর্দার প্যাটেল দক্ষতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে এসব রাজ্যকে ভারতের সঙ্গে একীভূত করেন।

  • হায়দরাবাদ, জুনাগড় ও কাশ্মীর – এই তিনটি রাজ্যের একীকরণ ছিল সবচেয়ে জটিল।
  • হায়দরাবাদে “অপারেশন পোলো” চালিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে একীভূত করা হয়।
  • জুনাগড় পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে প্যাটেল গণভোটের মাধ্যমে সেটিকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করেন।

তাঁর এই অবদানের কারণেই তাঁকে বলা হয় “ভারতের একীকরণের স্থপতি”


অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক অবদান

প্যাটেল কেবল রাজ্য একীকরণেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি ভারতীয় প্রশাসনিক পরিষেবা (IAS) ও ভারতীয় পুলিশ পরিষেবা (IPS) বজায় রাখেন এবং নবগঠিত রাষ্ট্রের জন্য একটি দৃঢ় আমলাতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তোলেন।

তাঁর বিশ্বাস ছিল – শক্তিশালী কেন্দ্র ছাড়া দেশ টিকে থাকতে পারবে না। তাই তিনি সংবিধানে কেন্দ্রকে শক্তিশালী করার পক্ষে ছিলেন।


ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের ধরণ

সর্দার প্যাটেল ছিলেন দৃঢ়চেতা, বাস্তববাদী ও স্পষ্টভাষী নেতা। তিনি ত্যাগ ও শৃঙ্খলাকে জীবনের মূলমন্ত্র মনে করতেন। তাঁর সাহসী মনোভাবের জন্য তাঁকে “লোহপুরুষ” বলা হয়।

তিনি নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন। গান্ধীজির মৃত্যুর পর তিনি কয়েক মাস মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন, কারণ গান্ধী তাঁর রাজনৈতিক জীবনের পথপ্রদর্শক ছিলেন।


শেষ দিনগুলি

১৯৫০ সালের শেষ দিকে তাঁর স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটে। ১৫ ডিসেম্বর ১৯৫০ সালে মুম্বাইয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর পুরো দেশ শোকাহত হয়।

ভারত সরকার তাঁকে মরণোত্তর ভারতরত্ন (১৯৯১ সালে) প্রদান করে।


উত্তরাধিকার ও স্মৃতিচিহ্ন

সর্দার প্যাটেলের অবদানের স্মরণে গুজরাটের নর্মদা জেলায় ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করেন “স্ট্যাচু অফ ইউনিটি” – বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তি (উচ্চতা ১৮২ মিটার)। এটি তাঁর অবিস্মরণীয় ভূমিকার প্রতীক।


উপসংহার

সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ভারতের ইতিহাসে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন প্রশাসক, সংগঠক, স্বাধীনতা সংগ্রামী ও রাষ্ট্রনায়ক – সব মিলিয়ে এক পূর্ণাঙ্গ দেশনায়ক।

তাঁর জীবনের শিক্ষা আজও প্রাসঙ্গিক:

  • জাতীয় ঐক্যকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া
  • প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও দৃঢ় নেতৃত্ব
  • ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার চেয়ে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখা

সত্যিই, তিনি ভারতের “লোহপুরুষ” – যার দৃঢ়তা ছাড়া আজকের ভারতের মানচিত্র এ রকম হতো না।

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ

মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস শুধুমাত্র একজন কবি বা ঋষি ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক যুগস্রষ্টা।

ভূমিকা

ভারতের আধ্যাত্মিক ইতিহাসে যে কয়েকজন মহামুনি তাঁদের অনন্য অবদানের জন্য যুগে যুগে শ্রদ্ধার আসনে বিরাজমান, তাঁদের মধ্যে মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস সর্বাগ্রে। তিনি শুধু এক মহাকাব্যকার নন, তিনি ছিলেন ভারতীয় আধ্যাত্মিকতার স্থপতি। তাঁর রচিত মহাভারত বিশ্বের দীর্ঘতম মহাকাব্য, যার মধ্যে মানবজীবনের প্রায় সমস্ত দিক – ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ – এর শিক্ষা বিদ্যমান। তিনি বেদের বিভাজন করেছিলেন, পুরাণ রচনা করেছিলেন এবং হিন্দুধর্মকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজবোধ্য করে তুলেছিলেন। তাই তাঁকে “ব্যাসদেব”, “বেদব্যাস” এবং “হিন্দু সংস্কৃতির মহাগুরু” বলা হয়।

জন্ম ও বাল্যজীবন

মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়নের জন্ম ছিল অলৌকিক। তাঁর পিতা মহর্ষি পরাশর, যিনি একজন মহান ঋষি ও যোগী ছিলেন, গঙ্গার তীরে সত্যবতী নামে এক যুবতীর সঙ্গে মিলিত হন। সত্যবতী ছিলেন একজন মৎস্যজীবীর কন্যা, যিনি গঙ্গায় নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরাশর সত্যবতীর গুণে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে আশীর্বাদ করেন যে তাঁর গর্ভে এক মহাজ্ঞানী ঋষির জন্ম হবে।

কথিত আছে যে, সত্যবতী তখন এক ছোট দ্বীপে ছিলেন এবং সেখানেই বেদব্যাসের জন্ম হয়। তাঁর জন্মের সময়ই তিনি কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করেছিলেন, তাই তাঁর নাম হয় “কৃষ্ণ”। জন্মস্থান দ্বীপ হওয়ায় নাম হয় “দ্বৈপায়ন”। তিনি জন্মের পরেই বড় হয়ে গিয়ে মাকে আশীর্বাদ করে বনবাসে চলে যান। শাস্ত্র মতে তিনি জন্মগত মহাজ্ঞানী ছিলেন।

বেদের বিভাজন

বেদব্যাসের সবচেয়ে বড় অবদান হল বেদ বিভাজন। প্রাচীন যুগে একটিমাত্র “বেদ” ছিল, যা আকারে বিশাল এবং জটিল ছিল। সাধারণ মানুষ সেটি আয়ত্ত করতে পারছিল না। তাই বেদব্যাস এটিকে চারটি ভাগে ভাগ করেন –

1. ঋগ্বেদ – স্তোত্র ও দেবতাদের প্রশস্তি।

2. যজুর্বেদ – যজ্ঞের মন্ত্র ও আচারের বিধি।

3. সামবেদ – সুরেলা সঙ্গীত ও স্তোত্র।

4. অথর্ববেদ – চিকিৎসা, তন্ত্র, দৈনন্দিন জীবনযাত্রার জ্ঞান।

 

এই চারভাগ করার ফলে বেদের জ্ঞান সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য হয়। এই বিশাল কাজের জন্যই তিনি “বেদব্যাস” নামে পরিচিত হন।

মহাভারতের রচনা

মহাভারত বেদব্যাসের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। এটি ১,০০,০০০ শ্লোকের এক মহাকাব্য। এতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ, পাণ্ডব ও কৌরবদের কাহিনি, নীতিশিক্ষা, ধর্মসংকট, মানবজীবনের দার্শনিক ব্যাখ্যা সবই আছে।

ভাগবদ্গীতা – মহাভারতের অন্তর্গত একটি অংশ, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে ধর্ম ও কর্মের জ্ঞান দেন। এই গীতা আজও ভারতীয় দর্শনের মূল ভিত্তি।

নীতিশিক্ষা – মহাভারত শুধুমাত্র যুদ্ধের কাহিনি নয়, এটি এক জীবন্ত ধর্মশাস্ত্র। এতে রাজনীতি, ন্যায়নীতি, সমাজনীতি, মানবধর্ম সবই শিক্ষা দেয়।

 

পুরাণ রচনা

বেদব্যাসকে ১৮টি মহাপুরাণের রচয়িতা বলা হয়। এগুলি হল –
বিষ্ণু পুরাণ, শিব পুরাণ, ভাগবত পুরাণ, মার্কণ্ডেয় পুরাণ, ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ ইত্যাদি। এই পুরাণগুলিতে দেবদেবীর কাহিনি, ধর্মনীতি, সৃষ্টিতত্ত্ব এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞান বর্ণিত আছে।

পরিবার ও বংশ

বেদব্যাস নিজে মহাভারতের চরিত্র। তাঁর জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল নিয়োগ প্রথা। সত্যবতীর দুই পুত্র বিচিত্রবীর্য ও চিত্রাঙ্গদ অকালমৃত্যুবরণ করলে, কুরু বংশ নির্বংশ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তখন সত্যবতীর অনুরোধে বেদব্যাস নিয়োগ প্রথা অনুযায়ী দুই রাণীকে গর্ভবতী করেন। এর ফলে জন্ম নেন –

ধৃতরাষ্ট্র – কৌরবদের পিতা।

পাণ্ডু – পাণ্ডবদের পিতা।

বিদুর – মহাভারতের এক নীতিবাগীশ চরিত্র।

 

দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি

বেদব্যাসের দর্শন ছিল মানবজীবনের চারটি পুরুষার্থ – ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ – এর মধ্যে সুষমা স্থাপন করা। তিনি শিখিয়েছিলেন –

ধর্ম ছাড়া অর্থ ও কাম অর্থহীন।

সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকাই মুক্তির একমাত্র উপায়।

মানুষের কর্তব্য কর্ম করতে হবে, ফলের প্রতি আসক্ত না হয়ে।

 

গুরুপূর্ণিমা ও বেদব্যাস পূজা

প্রতিবছর আষাঢ় পূর্ণিমার দিনে গুরুপূর্ণিমা পালিত হয়। এই দিনটি ব্যাস পূর্ণিমা নামেও পরিচিত। সমস্ত শাস্ত্রাচার অনুযায়ী এই দিন গুরুকে সম্মান জানানোর দিন, কারণ বেদব্যাসকে সমগ্র মানবজাতির প্রথম গুরু হিসেবে ধরা হয়।

ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব

বেদব্যাস হিন্দু ধর্মের সংহতিসাধক। তাঁর কারণে ভারতীয় সংস্কৃতি এক সুসংহত আকার পেয়েছে। তাঁর রচনাই পরবর্তী যুগে দর্শন, সাহিত্য, সমাজনীতি, আধ্যাত্মিকতা – সব কিছুর ভিত্তি হয়েছে।

উপসংহার

মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস শুধুমাত্র একজন কবি বা ঋষি ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক যুগস্রষ্টা। তাঁর সৃষ্টি মহাভারত, তাঁর বেদের বিভাজন, তাঁর পুরাণ রচনা – সব মিলিয়ে তিনি ভারতীয় চেতনার শাশ্বত প্রতীক। আজও যখন ভারতীয় সমাজ ধর্ম, নীতি, আধ্যাত্মিকতা নিয়ে চিন্তা করে, তখন বেদব্যাসের নির্দেশনা ও শিক্ষা আলো দেখায়। তাই তাঁকে “অষ্টচিরঞ্জীবী”দের একজন হিসেবে মান্য করা হয় – যিনি যুগে যুগে বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে পুজোর সেরা গন্তব্য।।

পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র দর্শনের নাম এলেই সবার আগে মনে পড়ে দীঘা-র কথা। কলকাতা থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত এই সমুদ্রসৈকত শহর বছরের সবসময়ই জনপ্রিয়, তবে দুর্গাপুজোর ছুটিতে দীঘার আবহ থাকে একেবারে অন্যরকম।


🏖️ দীঘার সমুদ্রসৈকত – প্রকৃতির খোলা রূপ

দীঘার মূল আকর্ষণ হল তার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত।

  • ওল্ড দীঘা: এখানকার পাথরের বাঁধে বসে ঢেউয়ের শব্দ শোনা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
  • নিউ দীঘা: এখানে রয়েছে প্রশস্ত বালুকাবেলা, যা হাঁটাহাঁটির জন্য আদর্শ। সন্ধ্যায় পুরো সৈকত ভরে ওঠে আলো, দোকান ও মানুষের ভিড়ে।

🪔 পুজোর ছুটিতে দীঘা – উৎসবের বাড়তি রঙ

পুজোর সময় দীঘায় পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যায়।

  • অনেক হোটেল ও রিসর্ট বিশেষ আলোকসজ্জা করে।
  • সৈকতে প্যান্ডেলও তৈরি হয়, যেখানে ঢাকের বাজনা, ধুনুচি নাচ হয়।
  • পর্যটক ও স্থানীয় মানুষ মিলে একসাথে পুজোর আনন্দ উপভোগ করে।

🚶 কাছাকাছি দর্শনীয় স্থান

পুজোর ছুটিতে শুধুই সমুদ্র নয়, দীঘার আশেপাশের কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখা যায় –

  • উদয়পুর সৈকত: নিরিবিলি পরিবেশ ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য আদর্শ।
  • শঙ্করপুর: এখানে রয়েছে মৎস্যবন্দর ও নির্জন সৈকত।
  • তাজপুর ও মন্দারমণি: যারা আরও কিছুটা দূরে যেতে চান তাদের জন্য এই সৈকতগুলো দারুণ পছন্দ।
  • আমরাবতী পার্ক: শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় জায়গা।
  • সায়েন্স সেন্টার: বিজ্ঞানপ্রেমীদের জন্য ছোট কিন্তু ইন্টারেস্টিং প্রদর্শনী।

🍤 দীঘার খাবার

সমুদ্রতীরের শহরে এসে সি-ফুড না খেলে ভ্রমণ সম্পূর্ণ হয় না।

  • কাঁকড়া, প্রন, পোমফ্রেট – সবই তাজা ও সুস্বাদু।
  • রাস্তার ধারে ভাজা মাছ, পকোড়া ও আইসক্রিমও সমান জনপ্রিয়।

🛍️ কেনাকাটা

দীঘার সৈকতের পাশে ছোট দোকানগুলোতে পাওয়া যায় –

  • ঝিনুক ও শাঁখের তৈরি জিনিস
  • বাঁশ ও কাঠের হস্তশিল্প
  • শাড়ি, গামছা ও ছোট ছোট স্মারক

🚆 কিভাবে পৌঁছবেন

  • ট্রেন: হাওড়া থেকে সরাসরি দীঘার ট্রেন চলে।
  • রাস্তায়: কলকাতা থেকে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টার ড্রাইভ (NH-116B)।
  • পুজোর সময় আগে থেকে হোটেল বুক করে রাখা জরুরি, কারণ ভিড় অনেক বেড়ে যায়।

❤️ উপসংহার

দীঘা শুধুই সমুদ্র দেখার জায়গা নয় – এটি এক আবেগ, এক স্মৃতি। দুর্গাপুজোর ছুটিতে এখানে বেড়াতে গেলে পরিবার, বন্ধু বা প্রিয়জনের সঙ্গে এক অমলিন সময় কাটানো যায়। ঢেউয়ের শব্দ, ঠান্ডা হাওয়া, বালুকাবেলার হাঁটাহাঁটি আর সুস্বাদু সি-ফুড – সব মিলিয়ে দীঘা হল পুজোর ছুটির জন্য একদম পারফেক্ট গন্তব্য।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ইতিহাস, শিল্প আর উৎসব – বিষ্ণুপুরের পুজো এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।

বাঁকুড়া জেলার ছোট্ট শহর বিষ্ণুপুর পশ্চিমবঙ্গের এক ঐতিহাসিক রত্ন। মল্লভূমের প্রাচীন রাজধানী হিসেবে বিষ্ণুপুর আজও বয়ে বেড়াচ্ছে মল্ল রাজাদের ঐতিহ্য। টেরাকোটা মন্দির, বালুচরি শাড়ি, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত – সবকিছু মিলিয়ে বিষ্ণুপুর এক অনন্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। দুর্গাপুজোর সময় এ শহর পায় নতুন প্রাণ, মন্দিরের শহর যেন হয়ে ওঠে উৎসবের শহর।


🏺 টেরাকোটা মন্দির – শিল্প ও ইতিহাসের ধনভান্ডার

বিষ্ণুপুরে এলে সবার আগে চোখে পড়ে লাল মাটির টেরাকোটা মন্দির। দুর্গাপুজোর সময়ে মন্দিরগুলো আলোয় সাজানো হয়, পূজোর আয়োজনও হয় অনেক জায়গায়।

  • রাসমঞ্চ: বিষ্ণুপুরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। পূজোর সময় এখানে আলো ঝলমলে হয়ে ওঠে, মেলার আয়োজন হয়।
  • মদনমোহন, শ্যামরায়, জোরবাংলা মন্দির: টেরাকোটা খোদাই করা দেয়ালগুলো পূজোর সময় বিশেষভাবে সাজানো হয়।

🪔 ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো

বিষ্ণুপুরের দুর্গাপুজো এখনো বহন করছে মল্লরাজাদের যুগের ঐতিহ্য।

  • অনেক বাড়ির রাজবাড়ির পুজো আজও পুরনো নিয়মে হয় – ঢাকের শব্দ, ধুনুচি নাচ, শঙ্খধ্বনিতে এক অপূর্ব আবহ তৈরি হয়।
  • গ্রামের লোকজন থেকে পর্যটক – সবাই একসাথে অংশ নেয় এই আনন্দে।

🎶 সংস্কৃতির আসর

বিষ্ণুপুরের দুর্গাপুজো মানেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

  • বিষ্ণুপুর ঘরানার শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়।
  • বাউল গান, লোকনৃত্য, নাটক ও কবিগানের আসর বসে।

🛍️ হস্তশিল্প ও মেলা

পুজোর সময়ে বিষ্ণুপুরে বসে হস্তশিল্পের মেলা।

  • বালুচরি শাড়ি, ডোকরা শিল্প, টেরাকোটা ঘর সাজানোর সামগ্রী – সবই পাওয়া যায়।
  • স্থানীয় বাজারে পিঠে-পায়েস, মাটির খেলনা ও মিষ্টির দোকান ভিড়ে ঠাসা থাকে।

🌳 প্রকৃতির কোলে শান্ত পরিবেশ

বিষ্ণুপুর শহরের চারপাশে সবুজ ক্ষেত, পুকুর আর ছোট ছোট গ্রাম। পূজোর দিনে এখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্যান্ডেল হপিং করে ক্লান্ত হলে প্রকৃতির কোলে বসে আরাম করা যায়।


🛣️ কিভাবে পৌঁছাবেন

  • ট্রেন: হাওড়া থেকে বিষ্ণুপুরে সরাসরি ট্রেন পাওয়া যায় (রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস, অরন্যক এক্সপ্রেস ইত্যাদি)।
  • রাস্তায়: কলকাতা থেকে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টার ড্রাইভ।

🍲 খাওয়া-দাওয়া

পুজোর সময় বিষ্ণুপুরে খাওয়ার বিশেষ আয়োজন থাকে।

  • ছানা দিয়ে তৈরি মিষ্টি যেমন মকড়চুরি, গোপালভোগ – খুব বিখ্যাত।
  • হোটেল ও ঢাবায় ভাত-ডাল-সিদ্ধ, মাছের ঝোল ও মাটন কষার স্বাদ অন্যরকম লাগে।

উপসংহার–

বিষ্ণুপুরে দুর্গাপুজো মানেই একসাথে ইতিহাস, শিল্প, সংস্কৃতি আর উৎসবের আনন্দ। টেরাকোটা মন্দিরের সৌন্দর্য আর রাজবাড়ির পুজোর ঐতিহ্য মিলিয়ে বিষ্ণুপুর হয়ে ওঠে এক অনন্য গন্তব্য। যারা পুজোর সময় শান্ত কিন্তু ঐতিহ্যমণ্ডিত ভ্রমণ চান, তাদের জন্য বিষ্ণুপুর হতে পারে এক অসাধারণ পছন্দ।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

মূল্যবান মনুষ্য জীবন ও বিশ্বকর্মা পূজা : স্বামী আত্মভোলানন্দ (পরিব্রাজক)।

আমাদের মূল্যবান মনুষ্য জীবনে উৎসবমুখর ভারতবর্ষে, ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে দেবশিল্পী ভগবান বিশ্বকর্মা পূজা হয়। এই বছর 17 সেপ্টেম্বর, 2025-এ (বাংলা ৩১ভাদ্র বুধবার ১৪৩২) বিশ্বকর্মা পূজা পড়েছে। দেবশিল্পী ভগবান বিশ্বকর্মা, দেবতাদের ঐশ্বরিক স্থপতি এবং প্রকৌশলী হিসাবে পরিচিত, পুরাণে তাঁর অতুলনীয় কারুকাজ এবং দক্ষতার জন্য সম্মানিত। এই উৎসবটি কর্মক্ষেত্র এবং কারখানাগুলিতে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, যেখানে জীবিকা এবং সাফল্যের উপকরণ হিসাবে হাতিয়ার এবং যন্ত্রপাতি পূজা করা হয়। সত্য সনাতন ধর্মে স্থাপত্য দেবতা বিশ্বকর্মার সন্তুষ্টি লাভের আশায় এই পূজা করা হয়। তাকে স্বয়ম্ভু এবং বিশ্বের স্রষ্টা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আমাদের বিশ্বকর্মা পূজা বা বিশ্বকর্মা জয়ন্তী হচ্ছে একটি ধর্মীয় উৎসব।

তিনি ভগবান কৃষ্ণের রাজধানী দ্বারকা শহরটি ও পাণ্ডবদের মায়া সভা নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়াও তিনি রামায়ণে বর্ণিত লঙ্কা নগরী, রামায়ণে উল্লিখিত ব্রহ্মার পুষ্পক রথ, দেবতাদের বিভিন্ন গমনাগমনের জন্য বিভিন্ন বাহন, দেবপুরী এবং বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিব এর ত্রিশূল, কুবের এর অস্ত্র, ইন্দ্রের বজ্র, কার্তিকের শক্তি সহ দেবতাদের জন্য বহু কল্পিত অস্ত্রের স্রষ্টা। তিনি এই বিশ্বের সব কর্মের সম্পাদক। তিনি সব ধরনের শিল্পের প্রকাশক। শিল্পবিদ্যায় বিশ্বকর্মার রয়েছে একচ্ছত্র অধিকার। তিনি নিজেই চতুঃষষ্টিকলা, স্থাপত্যবেদ এবং উপবেদ এর প্রকাশক। কথিত আছে, পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথমূর্তিও তিনিই নির্মাণ করেন। তাকে স্বর্গীয় সূত্রধরও বলা হয়।

বিশ্বকর্মা পূজা শুধুমাত্র কারুশিল্প এবং দক্ষতাই উদযাপন করে না বরং শ্রমিক সম্প্রদায়ের মধ্যে একতা ও বন্ধুত্বের ধারনাও জাগিয়ে তোলে। এটি দৈনন্দিন জীবনে সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন এবং কঠোর পরিশ্রমের গুরুত্ব তুলে ধরে। বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে, কাজের সঙ্গে জড়িত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের পূজা করা হয়। তিনি সৃষ্টিশক্তির দেবতা এবং পরম সত্যের প্রতিরূপ। ঋগ্বেদ অনুযায়ী, তিনি সময়ের সূত্রপাতের আগে থেকেই অস্তিত্বমান ছিলেন। বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে, কাজের সাথে জড়িত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের ও পূজা করা হয়।
বিশ্বকর্মা পূজা ভারত জুড়ে অত্যন্ত উত্সাহের সাথে পালিত হয়। উন্নত ভবিষ্যৎ, নিরাপদ কাজের পরিস্থিতি এবং নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সর্বোপরি নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য প্রার্থনা করে, বিভিন্ন ধরনের পেশার মানুষ এদিন বিশ্বকর্মার পুজো করেন। ভাদ্র মাসের সংক্রান্তি তিথিকে ‘কন্যা সংক্রান্তি’ বলা হয়। পুরাণ মতে এই তিথিতেই বিশ্বকর্মার জন্ম হয়। আমাদের হিন্দু ধর্মে সব দেব -দেবীর পুজোর তিথি স্থির হয় চন্দ্রের গতি প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে। বিশ্বকর্মা পুজোর তিথি স্থির হয় সূর্যের গতির উপর নির্ভর করে।

সেইসাথে আজ ভাদু উৎসব। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমা এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্যের রাঁচি ও হাজারিবাগ জেলার লৌকিক উৎসব হল ভাদু উৎসব। আজ নাগদেবী মা মনসার পূজা ও অনেক জায়গায়। দেবশিল্পী ভগবান বিশ্বকর্মার নাগদেবী মা মনসার শুভ ও মঙ্গলময় আশির্বাদ আপনাদের সকলের শিরে বর্ষিত হোক, এই প্রার্থনা করি…!
স্বামী আত্মভোলানন্দ *পরিব্রাজক*

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

বিদেশ ভ্রমণ : প্রস্তুতি, অভিজ্ঞতা ও প্রেরণা।

✈️ ভূমিকা: কেন বিদেশ ভ্রমণ?

মানুষের মন স্বভাবতই অজানাকে জানতে চায়। নিজের দেশ ছাড়িয়ে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে যাওয়া শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং শেখার জন্য, নতুন সংস্কৃতি জানার জন্য, দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করার জন্য। বিদেশ ভ্রমণ আমাদের মনকে নতুন করে সাজায়, জীবনকে নতুনভাবে দেখতে শেখায়।


🧳 অধ্যায় ১: বিদেশ ভ্রমণের মানসিক প্রস্তুতি

বিদেশ যাওয়ার আগে প্রথমেই মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়।

  • ভাষার বাধা কাটানোর মানসিকতা
  • সংস্কৃতির পার্থক্যকে সম্মান করার অভ্যাস
  • নতুন মানুষের সাথে মিশতে শেখা
  • অচেনা জায়গায় খাপ খাওয়ানোর সাহস

অনেকেই প্রথমবার বিদেশ গেলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বিমানবন্দর, ইমিগ্রেশন, কাস্টমস—সবই নতুন অভিজ্ঞতা। মানসিক প্রস্তুতি নিলে ভ্রমণ অনেক সহজ হয়।


🛂 অধ্যায় ২: পাসপোর্ট ও ভিসা প্রক্রিয়া

বিদেশ ভ্রমণের প্রথম ধাপ হলো বৈধ পাসপোর্ট থাকা।

  • পাসপোর্ট: ভারতের পাসপোর্ট আবেদন এখন সহজ। অনলাইনে ফর্ম পূরণ, ডকুমেন্ট যাচাই, পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং কিছুদিনের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যায়।
  • ভিসা: গন্তব্য দেশের উপর নির্ভর করে ভিসার ধরন আলাদা হয়।
    • পর্যটক ভিসা
    • স্টুডেন্ট ভিসা
    • ব্যবসায়িক ভিসা
    • অন-অ্যারাইভাল ভিসা (যেমন থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ)
    • ভিসা-ফ্রি দেশ (যেমন নেপাল, ভুটান – ভারতীয়দের জন্য)

💰 অধ্যায় ৩: বাজেট ও আর্থিক পরিকল্পনা

বিদেশ ভ্রমণের খরচ প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায় –

  1. ফ্লাইট টিকিট – আগেভাগে বুকিং করলে খরচ কম হয়।
  2. আবাসন – হোটেল, হোস্টেল, এয়ারবিএনবি – বাজেট অনুসারে বেছে নেওয়া যায়।
  3. খাবার ও যাতায়াত – স্থানীয় স্ট্রিট ফুড, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করলে খরচ বাঁচে।

ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স করাও বুদ্ধিমানের কাজ। হঠাৎ অসুস্থতা বা লাগেজ হারালে এটি কাজে লাগে।


🗺️ অধ্যায় ৪: জনপ্রিয় গন্তব্য ও তাদের বিশেষত্ব

১. ইউরোপ

  • প্যারিস – আইফেল টাওয়ার, লুভর মিউজিয়াম
  • সুইজারল্যান্ড – পাহাড়, ট্রেন ভ্রমণ
  • ইতালি – রোমের কলোসিয়াম, ভেনিসের খাল

২. এশিয়া

  • সিঙ্গাপুর – আধুনিক শহর, সেন্তোসা
  • থাইল্যান্ড – সমুদ্র সৈকত, রাতের বাজার
  • জাপান – টোকিও, কিয়োটো, চেরি ব্লসম

৩. আমেরিকা

  • নিউইয়র্ক – টাইমস স্কোয়ার, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি
  • ক্যালিফোর্নিয়া – ডিজনিল্যান্ড, সিলিকন ভ্যালি
  • লাতিন আমেরিকা – মাচু পিচু, ব্রাজিলের রিও

৪. আফ্রিকা

  • মিশর – পিরামিড, নীল নদের ক্রুজ
  • কেনিয়া – সাফারি, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য

📱 অধ্যায় ৫: ভাষা ও যোগাযোগ

বিদেশে গেলে অনেক সময় ভাষার সমস্যায় পড়তে হয়।

  • গুগল ট্রান্সলেট, অফলাইন ডিকশনারি কাজে লাগে
  • কিছু সাধারণ বাক্য শিখে রাখা ভালো
  • শরীরী ভাষা অনেক সাহায্য করে

🍲 অধ্যায় ৬: বিদেশি খাবারের অভিজ্ঞতা

প্রতিটি দেশের খাবারের আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

  • ইতালিতে পাস্তা, পিৎজা
  • জাপানে সুশি
  • থাইল্যান্ডে টম ইয়াম স্যুপ
  • ফ্রান্সে ক্রোসঁ ও ওয়াইন

তবে নিজের দেশের খাবার মিস করলে ভারতীয় রেস্টুরেন্টও খুঁজে পাওয়া যায় প্রায় সব বড় শহরে।


🛡️ অধ্যায় ৭: নিরাপত্তা ও ভ্রমণ শিষ্টাচার

  • পাসপোর্ট ও গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টের ফটোকপি রাখুন
  • স্থানীয় আইন-কানুন মেনে চলুন
  • রাতে নির্জন জায়গায় একা ঘুরবেন না
  • স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন

📸 অধ্যায় ৮: স্মৃতি ধরে রাখা

বিদেশ ভ্রমণের সবচেয়ে বড় আনন্দ স্মৃতি ধরে রাখা।

  • ছবি ও ভিডিও তুলুন
  • ট্রাভেল ডায়েরি লিখুন
  • স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলুন
  • ছোটখাটো সুভেনির সংগ্রহ করুন

🌏 অধ্যায় ৯: ভ্রমণের প্রভাব ও শিক্ষা

বিদেশ ভ্রমণ আমাদের মনের পরিধি প্রসারিত করে।

  • সহনশীলতা বাড়ায়
  • নতুন বন্ধু তৈরি হয়
  • দৃষ্টিভঙ্গি বড় হয়
  • আত্মবিশ্বাস বাড়ে

🏠 অধ্যায় ১০: ফিরে এসে অভিজ্ঞতা শেয়ার

দেশে ফিরে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে ভ্রমণের গল্প শেয়ার করুন। ছবি দেখান, নতুন সংস্কৃতি সম্পর্কে বলুন। অনেক সময় এই অভিজ্ঞতা অন্যদেরও ভ্রমণে উৎসাহিত করে।


✨ উপসংহার

বিদেশ ভ্রমণ কেবল বিলাসিতা নয়, এটি একধরনের শিক্ষা। পৃথিবীর নানান মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি, ইতিহাস দেখতে পারা জীবনের বড় সৌভাগ্য। ভ্রমণ শেষে মানুষ আরও বিনম্র, আরও কৃতজ্ঞ হয়ে ওঠে।


 

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

একটি মোবাইল যখন সম্পর্কের মাঝে দেওয়াল হয়ে দাঁড়ায়।

 

ভূমিকা

২১শ শতাব্দীকে আমরা ডিজিটাল যুগ বলি। মোবাইল ফোন এখন শুধু একটি যোগাযোগের মাধ্যম নয়; এটি আমাদের ব্যক্তিগত সহচর, আমাদের বিনোদনের উৎস, আমাদের অফিস, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে আমাদের পরিচয়ের অংশ। কিন্তু যে যন্ত্র মানুষকে কাছাকাছি আনার জন্য তৈরি হয়েছিল, সেটাই কি আজ মানুষের মধ্যে অদৃশ্য দেওয়াল তৈরি করছে? দাম্পত্য সম্পর্ক, প্রেমের সম্পর্ক, পিতা-মাতা ও সন্তান সম্পর্ক—সব ক্ষেত্রেই মোবাইল কখনও কখনও এক নীরব তৃতীয় পক্ষ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।


মোবাইল ফোনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব

  • পরিসংখ্যান: ২০২৪ সালের একটি আন্তর্জাতিক জরিপ অনুসারে, একজন গড় মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৩-৫ ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করে। কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে এটি ৭ ঘণ্টা ছাড়িয়ে যায়।
  • সামাজিক বাস্তবতা: আগে পরিবারের সবাই একসাথে গল্প করত, খেলাধুলা করত, সিনেমা দেখত। এখন প্রত্যেকে নিজের স্ক্রিনে ডুবে থাকে।
  • যোগাযোগের নতুন রূপ: মোবাইল ফোনে WhatsApp, Messenger, Instagram, ইত্যাদি থাকায় যোগাযোগ অনেক বেড়েছে, কিন্তু ব্যক্তিগত সংলাপ (face-to-face communication) কমেছে।

সম্পর্কের মাঝে দেওয়াল: সমস্যার মূল

১. অতিরিক্ত ব্যবহার (Overuse)

যখন একজন সঙ্গী সারাক্ষণ মোবাইলে ব্যস্ত থাকে—গেম খেলে, সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করে, ভিডিও দেখে—অন্যজন নিজেকে উপেক্ষিত মনে করে।

২. মোবাইল আসক্তি (Nomophobia)

গবেষণা বলছে, যারা মোবাইল ছাড়া থাকতে পারে না, তাদের মধ্যে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং সম্পর্কের জটিলতা বেড়ে যায়।

৩. বিশ্বাসের সংকট

মোবাইলে ব্যক্তিগত চ্যাট, কল লিস্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ফ্রেন্ড লিস্ট নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি সম্পর্ক ভেঙে দেয়।

৪. প্রেমের উষ্ণতা হারিয়ে যাওয়া

দাম্পত্য সম্পর্কে শারীরিক ও মানসিক ঘনিষ্ঠতা কমে যায়। একে বলে “ফোন ফ্যাটিগ”—যেখানে সঙ্গীরা একসাথে থাকলেও মানসিকভাবে দূরে থাকে।


মনোবিজ্ঞানের বিশ্লেষণ

  • ডোপামিন এফেক্ট: সোশ্যাল মিডিয়ার লাইক, কমেন্ট আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন ক্ষরণ বাড়ায়, যা এক ধরনের আসক্তি তৈরি করে। ফলে সঙ্গীর সঙ্গে কথা বলার চেয়ে ফোন দেখা বেশি আকর্ষণীয় লাগে।
  • অ্যাটাচমেন্ট থিওরি: সম্পর্কের নিরাপত্তা বোধ নষ্ট হলে মানুষ সঙ্গীর বদলে ফোনে আশ্রয় খোঁজে।
  • ফোমো (FOMO): ফোন না দেখলে কিছু মিস হয়ে যাবে—এই ভয় মানুষকে সারাক্ষণ ফোনের দিকে টেনে নেয়।

বাস্তব উদাহরণ

উদাহরণ ১:

সুদীপ ও মেঘলা বিবাহিত দম্পতি। অফিস থেকে ফিরে দুজনেই ক্লান্ত। একসময় তারা একসাথে গল্প করত, হাঁটতে যেত। এখন দুজনেই সোফায় বসে ফোনে ডুবে থাকে। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে কথা বলা কমে যায়, ভুল বোঝাবুঝি বাড়ে।

উদাহরণ ২:

একটি পরিবারে খাওয়ার টেবিলে প্রত্যেকে ফোন ব্যবহার করছে। বাবা সংবাদ পড়ছে, মা অনলাইন শপিং করছে, ছেলে গেম খেলছে। ফলে পরিবারে একসাথে সময় কাটানোর ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে।


সমাজে প্রভাব

  • বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা বৃদ্ধি: বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে যে অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে বিবাহবিচ্ছেদ ও বিচ্ছেদের মামলা বেড়েছে।
  • শিশুদের উপর প্রভাব: যখন পিতা-মাতা ফোনে বেশি সময় দেয়, শিশুরা অবহেলিত বোধ করে। তাদের আবেগিক বিকাশে প্রভাব পড়ে।
  • বন্ধুত্ব ও সামাজিক সম্পর্ক ক্ষীণ হওয়া: অফলাইন সামাজিক মেলামেশা কমে যাচ্ছে।

সম্ভাব্য সমাধান

১. ডিজিটাল ডিটক্স: প্রতিদিন অন্তত ১-২ ঘণ্টা মোবাইল ছাড়া সময় কাটানো।
২. ফোন-মুক্ত সময়: খাওয়ার সময়, শোবার সময়, বা পরিবার একসাথে থাকলে ফোন দূরে রাখা।
৩. ওপেন কমিউনিকেশন: সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা যে অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার তাকে কষ্ট দিচ্ছে।
৪. রিয়েল-টাইম এক্টিভিটি: একসাথে হাঁটা, রান্না করা, ভ্রমণ করা—যাতে একে অপরের সান্নিধ্যে সময় কাটানো যায়।
৫. মাইন্ডফুলনেস: সচেতনভাবে ফোন ব্যবহার করা এবং সময়সীমা নির্ধারণ করা।


প্রযুক্তি বনাম মানবিক সম্পর্ক

প্রযুক্তি খারাপ নয়—এটি আমাদের জীবনের অংশ। কিন্তু প্রযুক্তিকে যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ না করি, তাহলে এটি আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে নেয়। মোবাইল ফোনকে এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে এটি সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটায়, বিনাশ নয়।


উপসংহার

মোবাইল ফোন আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, কিন্তু সম্পর্ককে জটিলও করেছে। এই অদৃশ্য দেওয়াল ভাঙার দায়িত্ব আমাদেরই। আমাদেরই ঠিক করতে হবে, আমরা কি চাই—ডিজিটাল জগতে হারিয়ে যাওয়া, নাকি বাস্তব জীবনের ভালোবাসা ও সম্পর্ককে ফিরিয়ে আনা।

প্রযুক্তি ব্যবহার হবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে, সম্পর্কের ক্ষতি না করে বরং সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার জন্য।


এই প্রবন্ধটি সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে এক বাস্তব সমস্যার বিশ্লেষণ।

 

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

একটি পরিবারে নারীর ভূমিকা।।

ভূমিকা

মানবসমাজের ইতিহাসে পরিবার একটি মৌলিক একক। পরিবার গড়ে ওঠে ভালোবাসা, বিশ্বাস ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে। আর এই পরিবারকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে, একে সুসংহত ও সমৃদ্ধ রাখতে নারীর ভূমিকা অপরিসীম।

নারী শুধু মা, বোন, কন্যা বা স্ত্রী হিসেবে পরিচিত নন, বরং তিনি একজন সংরক্ষক, সৃষ্টিশীল চিন্তক, সংস্কৃতির ধারক ও মানসিক শক্তির উৎস। ভারতীয় সমাজসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে নারী পরিবারকে শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিক ও নৈতিক দিক থেকেও ধরে রাখেন।


১. পরিবারে নারীর ঐতিহাসিক ভূমিকা

১.১ প্রাচীন সমাজে নারী

ভারতীয় সভ্যতায় নারীকে গৃহদেবীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

  • বেদের যুগে নারী ছিলেন শিক্ষিত, দর্শন ও শাস্ত্রচর্চায় পারদর্শী।
  • গার্হস্থ্য জীবনে তিনি ছিলেন পরিবারের কেন্দ্রবিন্দু – অন্নপূর্ণার প্রতীক।

১.২ মধ্যযুগে অবস্থার পরিবর্তন

মধ্যযুগে নানা সামাজিক কারণে নারী কিছুটা গৃহবন্দি হয়ে পড়েন।

  • পর্দা প্রথা, বাল্যবিবাহ, শিক্ষার অভাব – এসব কারণে নারীর স্বাধীনতা সীমিত ছিল।
  • তবু তিনি পরিবারের মূল ভরসা ছিলেন – রান্না, সন্তান লালনপালন, গৃহস্থালি সামলানো সবই তাঁর হাতে।

১.৩ আধুনিক যুগে পরিবর্তন

শিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনের ফলে আধুনিক কালে নারীর ভূমিকা বহুমাত্রিক হয়েছে।

  • আজ তিনি কর্মজীবী, শিক্ষিত, আর্থিকভাবে স্বনির্ভর।
  • পরিবারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অনেক বেড়েছে।

২. পরিবারে নারীর মানসিক ভূমিকা

২.১ আবেগীয় ভারসাম্য রক্ষা

নারী প্রায়শই পরিবারের মানসিক স্তম্ভ হিসেবে কাজ করেন।

  • সন্তানদের মানসিক বিকাশ, স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক, আত্মীয়তার জাল – সব কিছুতে তাঁর কূটনৈতিক ভূমিকা থাকে।
  • পারিবারিক দ্বন্দ্ব মেটাতে তিনি মধ্যস্থতাকারী।

২.২ ভালোবাসা ও সহানুভূতি

নারীর স্নেহ পরিবারকে একত্রে রাখে।

  • মায়ের ভালোবাসা শিশুর চরিত্র গঠনের ভিত্তি।
  • স্ত্রী হিসেবে তিনি স্বামীকে মানসিক সমর্থন দেন।

৩. পরিবারে নারীর সামাজিক ভূমিকা

৩.১ মূল্যবোধের সংরক্ষণ

নারী প্রজন্মের পর প্রজন্মকে নৈতিকতা ও সংস্কৃতির শিক্ষা দেন।

  • তিনি সন্তানদের মধ্যে শৃঙ্খলা, সহমর্মিতা, মানবিকতা গড়ে তোলেন।
  • পারিবারিক ঐতিহ্য ও উৎসবের ধারক।

৩.২ সামাজিক সম্পর্ক রক্ষা

পরিবারের সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় নারীর অবদান বড়।

  • আত্মীয়, প্রতিবেশী, পাড়া-প্রতিবেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন।
  • সমাজসেবামূলক কাজে অংশ নিয়ে পরিবারের সম্মান বাড়ান।

৪. অর্থনৈতিক ভূমিকা

৪.১ গৃহস্থালি পরিচালনা

নারী সংসারের আর্থিক পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ।

  • সংসারের খরচ, সঞ্চয়, বাজেট – সব কিছু তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন।
  • অনেক ক্ষেত্রেই সংসারের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা তিনি।

৪.২ কর্মজীবী নারী

আজ অনেক নারী কর্মক্ষেত্রে সফল।

  • চাকরি বা ব্যবসার মাধ্যমে পরিবারে আর্থিক অবদান রাখেন।
  • দ্বিগুণ দায়িত্ব সামলে পরিবারকে এগিয়ে নিয়ে যান।

৫. সন্তান লালনপালনে নারীর ভূমিকা

৫.১ প্রথম শিক্ষক

মা শিশুর প্রথম গুরু।

  • ভাষা, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ সবকিছু তিনি শেখান।
  • সন্তানের মনোবিজ্ঞান বোঝেন ও তার বিকাশে সাহায্য করেন।

৫.২ শিক্ষার পরিবেশ

নারী বাড়িতে পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি করেন।

  • তিনি সন্তানকে স্কুলে পাঠানো, পড়াশোনায় সাহায্য করা, স্বপ্ন দেখাতে উৎসাহ দেন।

৬. স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ভারসাম্য

পরিবারে নারীর ভূমিকা শুধু মায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।

  • তিনি স্বামীর সঙ্গী, বন্ধু ও পথপ্রদর্শক।
  • সংসারের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়া, পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রাখা – সংসারের স্থিতিশীলতার মূল।

৭. আধুনিক চ্যালেঞ্জ

৭.১ দ্বৈত ভূমিকা

কর্মজীবী নারীদের জন্য পরিবার ও অফিসের ভারসাম্য রাখা কঠিন।

  • মানসিক চাপ ও সময়ের অভাব দেখা দেয়।

৭.২ সামাজিক বাঁধাধরা ধারণা

আজও অনেক স্থানে নারীকে শুধুমাত্র গৃহিণীর ভূমিকায় সীমাবদ্ধ রাখতে চাওয়া হয়।

৭.৩ মানসিক স্বাস্থ্য

পারিবারিক দায়িত্ব, সন্তান, কর্মজীবন সামলে নারীর মানসিক চাপ বেড়ে যাচ্ছে।


৮. সমাধান ও অগ্রযাত্রা

৮.১ শিক্ষা ও সচেতনতা

নারীর শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।

  • শিক্ষিত নারী পরিবারের মান উন্নত করেন।

৮.২ পুরুষের সহায়তা

পরিবারে পুরুষকেও সমান দায়িত্ব নিতে হবে।

  • গৃহকর্ম ও সন্তান পালনে অংশগ্রহণ জরুরি।

৮.৩ মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা

নারীর জন্য কাউন্সেলিং ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বাড়ানো উচিত।


উপসংহার

নারী পরিবারে মেরুদণ্ডের মতো। তিনি শুধু একজন মা বা স্ত্রী নন, বরং একজন শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ, মনোবিদ, সামাজিক কর্মী ও ভবিষ্যত প্রজন্মের গড়নশিল্পী

আজকের দিনে যখন নারী ক্রমশ শিক্ষিত ও স্বনির্ভর হচ্ছেন, তখন সমাজেরও উচিত তাঁকে সমান মর্যাদা ও সহযোগিতা দেওয়া। পরিবারে নারীকে সম্মান দিলে পরিবার হয় শান্তিপূর্ণ, সুখী ও সমৃদ্ধ। আর সেই পরিবারই তৈরি করে একটি সুস্থ সমাজ ও শক্তিশালী দেশ।

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ

বর্তমান যুব সম্প্রদায়ের ওপর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব।

ভূমিকা

একবিংশ শতাব্দীতে ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া মানবজীবনের অন্যতম প্রধান অংশে পরিণত হয়েছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, টিকটক, এক্স (টুইটার) এবং নানা রকম প্ল্যাটফর্ম এখন আর শুধু বিনোদনের জায়গা নয়, বরং আমাদের চিন্তা, যোগাযোগ, তথ্য গ্রহণ, এমনকি রাজনৈতিক মতাদর্শ গঠনের ক্ষেত্রেও বিরাট ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে যুব সমাজ, অর্থাৎ ১৫ থেকে ৩০ বছরের মানুষরা, সোশ্যাল মিডিয়ার সবচেয়ে সক্রিয় ব্যবহারকারী।

কিন্তু এই ব্যবহার কতটা সুফল দিচ্ছে, আর কতটা কুফল বয়ে আনছে? এই প্রশ্ন আজ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।


১. সোশ্যাল মিডিয়ার উত্থান ও যুব সমাজ

গত এক দশকে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারকে তীব্রভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে।

  • ভারতে ২০২৫ সালের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান।
  • ভারতের মোট ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় ৬৫% এর বয়স ৩০-এর নিচে।

যুব সমাজ তথ্য, বিনোদন, শিক্ষা, সম্পর্ক, ক্যারিয়ার — সব কিছুই সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সংগ্রহ করছে। ফলে তাদের জীবনযাপন, মূল্যবোধ ও মানসিকতা আগের প্রজন্মের তুলনায় ভিন্ন।


২. ইতিবাচক প্রভাব

২.১ যোগাযোগ ও সংযোগ

  • পরিবার, বন্ধু, সহপাঠী ও বিদেশে থাকা পরিচিতদের সাথে সহজ যোগাযোগ।
  • দূরত্ব ও সময়ের সীমাবদ্ধতা অনেকটাই কমে গেছে।

২.২ তথ্যপ্রাপ্তি ও শিক্ষা

  • ইউটিউব ও এডুকেশনাল ব্লগ/পেজ থেকে নানা রকম শিক্ষামূলক কন্টেন্ট পাওয়া যায়।
  • প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, অনলাইন কোর্স, নতুন দক্ষতা শেখা – সবকিছু সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সহজ হয়েছে।

২.৩ ক্যারিয়ার ও ব্যবসায়িক সুযোগ

  • অনেক যুবক/যুবতী সোশ্যাল মিডিয়াকে পেশা বানিয়েছে – যেমন কনটেন্ট ক্রিয়েটর, ইনফ্লুয়েন্সার, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার।
  • ছোট ব্যবসা ও স্টার্টআপের জন্য ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম এখন গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম।

২.৪ সামাজিক সচেতনতা

  • যুব সমাজ নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে সোচ্চার।
  • জলবায়ু পরিবর্তন, নারী অধিকার, পরিবেশ রক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা – এসব বিষয়ে অনলাইন ক্যাম্পেইন শক্তিশালী আন্দোলনে পরিণত হচ্ছে।

৩. নেতিবাচক প্রভাব

৩.১ আসক্তি

  • প্রতিদিন গড়ে ৩-৪ ঘণ্টা সময় কাটে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
  • অতিরিক্ত ব্যবহার ডোপামিন আসক্তি তৈরি করে, যা মস্তিষ্ককে তাত্ক্ষণিক আনন্দের উপর নির্ভরশীল করে তোলে।

৩.২ মনোযোগে ব্যাঘাত

  • ক্রমাগত নোটিফিকেশন, স্ক্রল করার অভ্যাস মনোযোগ ভেঙে দেয়।
  • পড়াশোনা ও প্রোডাক্টিভিটির ক্ষতি হয়।

৩.৩ মানসিক স্বাস্থ্য

  • FOMO (Fear of Missing Out) – অন্যদের জীবনের ঝলমলে ছবি দেখে নিজেকে পিছিয়ে পড়া মনে হয়।
  • হতাশা, উদ্বেগ, একাকিত্ব বেড়ে যায়।
  • সাইবার বুলিং ও অনলাইন হ্যারাসমেন্টের শিকার হয় অনেক তরুণ।

৩.৪ ভুয়ো খবর ও বিভ্রান্তি

  • সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ভুয়ো খবর ছড়ায়।
  • যুব সমাজ রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।

৩.৫ বাস্তব সম্পর্কের ক্ষয়

  • মুখোমুখি কথোপকথন কমে যাচ্ছে।
  • পরিবারে সময় দেওয়া কমছে।

৪. যুব সমাজের আচরণে পরিবর্তন

সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে যুবকদের জীবনে নিম্নলিখিত পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে —

  • ভাষা ও যোগাযোগ: ইমোজি, শর্টকাট, মিম – নতুন এক ভাষা তৈরি হয়েছে।
  • সেলফ ইমেজ: লাইক ও ফলোয়ার সংখ্যা আত্মসম্মানকে প্রভাবিত করছে।
  • তাৎক্ষণিক সন্তুষ্টির অভ্যাস: দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বদলে দ্রুত ফলাফলের দিকে ঝোঁক বাড়ছে।

৫. মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মপরিচয়

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার —

  • ডিপ্রেশন ও অ্যাংজাইটি বাড়ায়।
  • ঘুমের সমস্যা তৈরি করে।
  • আত্মপরিচয় সংকট (Identity Crisis) তৈরি করে — কারণ অনেকে ভার্চুয়াল দুনিয়ার আদর্শ জীবনকে বাস্তব মনে করে।

৬. সমাধান ও করণীয়

৬.১ ডিজিটাল ডিটক্স

  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার।
  • “নোটিফিকেশন অফ” করে রাখা।

৬.২ সচেতন ব্যবহার

  • কোন তথ্য শেয়ার বা বিশ্বাস করার আগে যাচাই করা।
  • ইতিবাচক ও শিক্ষামূলক কন্টেন্টে সময় ব্যয় করা।

৬.৩ বাস্তব সম্পর্কের গুরুত্ব

  • পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো।
  • অফলাইন হবি বা খেলাধুলায় অংশগ্রহণ।

৬.৪ নীতিনির্ধারক ও শিক্ষাব্যবস্থার ভূমিকা

  • স্কুলে ডিজিটাল লিটারেসি শিক্ষা।
  • সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর উপর কঠোর নিয়ম, যাতে ভুয়ো খবর ও হেট স্পিচ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৭. ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ

সোশ্যাল মিডিয়া পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বরং এর সঠিক ব্যবহার শিখতে হবে।

  • ভবিষ্যতে AI ভিত্তিক কন্টেন্ট ফিল্টার ব্যবহার বাড়বে।
  • মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে আরও প্রচার হবে।
  • যুব সমাজ যদি সোশ্যাল মিডিয়াকে কেবল বিনোদনের জন্য নয়, শিক্ষার ও উন্নতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, তবে এটি আশীর্বাদ হতে পারে।

উপসংহার

সোশ্যাল মিডিয়া আজকের যুব সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি একদিকে যেমন তথ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক সংযোগ এনে দিচ্ছে, অন্যদিকে আসক্তি, মানসিক চাপ, বিভ্রান্তি ও একাকিত্বও বাড়াচ্ছে।

তাই প্রয়োজন সচেতনতা ও ভারসাম্য

  • যুব সমাজকে ডিজিটাল মিডিয়ার সুফল গ্রহণ করতে হবে, কিন্তু নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্য ও বাস্তব সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
  • পরিবার, শিক্ষক ও সরকারকে একসাথে কাজ করতে হবে যাতে সোশ্যাল মিডিয়া এক শক্তিশালী উন্নয়নমূলক মাধ্যম হয়ে ওঠে, ধ্বংসাত্মক নয়।
Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

তুংনাথের পথে – এক অবিস্মরণীয় যাত্রা।

১. যাত্রার শুরু

সকালবেলায় কলকাতার হাওড়া স্টেশন।
প্ল্যাটফর্ম ভরতি মানুষের কোলাহল, গরম চা আর খবরের কাগজের গন্ধ—যেন এক বিশেষ ভ্রমণের ডাক।
আমরা চারজন বন্ধু—আমি, অর্ক, স্নিগ্ধা আর রোহন—নিশ্চিন্ত মনে দাঁড়িয়ে আছি।
আজ থেকে শুরু হচ্ছে আমাদের বহু প্রতীক্ষিত উত্তরাখণ্ড ভ্রমণ।

গন্তব্য—তুংনাথ
বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু শিবমন্দির। পাহাড়ের কোলে বসে থাকা এক দেবালয়, যার পথও এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা।


২. প্রথম গন্তব্য – হরিদ্বার ও ঋষিকেশ

ট্রেনে রাত কাটিয়ে সকালে পৌঁছলাম হরিদ্বারে।
সকালবেলার গঙ্গার ঘাট যেন স্বর্গীয় দৃশ্য—হালকা কুয়াশা, ঘণ্টাধ্বনি, ধূপের গন্ধ।
আমরা সকলে মিলে গঙ্গাজলে হাত ডুবিয়ে প্রণাম করলাম। মনে হল, ভ্রমণের শুরুতেই আশীর্বাদ পেয়ে গেলাম।

তারপর ছোট্ট বাসযাত্রা করে পৌঁছলাম ঋষিকেশ।
লক্ষ্মণ ঝুলা পার হওয়ার সময় গঙ্গার গর্জন কানে আসছিল।
স্নিগ্ধা ছবি তুলতে ব্যস্ত, অর্ক বলল—
— “দেখো না, আমরা যেন অন্য দুনিয়ায় এসে পড়েছি!”

ঋষিকেশের নিরিবিলি ক্যাফেতে বসে গরম কফি খেলাম। পাহাড়ি বাতাসে ক্লান্তি উড়ে গেল।


৩. চন্দ্রশিলা ট্রেকের সূচনা

পরদিন সকালে আমরা গাড়িতে করে পৌঁছলাম চোপতা।
এখান থেকেই শুরু হবে তুংনাথ ট্রেক।
চোপতার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখলে মনে হয়, প্রকৃতি এখানে নিজের হাতে ছবি এঁকেছে—
সবুজ তৃণভূমি, বরফে ঢাকা দূরের শৃঙ্গ, আর পাখিদের গান।

ট্রেক শুরু করতেই প্রথমেই বোঝা গেল—এটা সহজ হবে না।
রাস্তা ঢালু, শ্বাস নিতে কষ্ট, কিন্তু দৃশ্য এত সুন্দর যে কষ্ট ভুলে যাচ্ছিলাম।
পথে দেখা পেলাম পাহাড়ি গ্রামের ছোট্ট বাচ্চাদের। তাদের হাসি যেন পাহাড়ের ঝর্ণার মতো স্বচ্ছ।


৪. তুংনাথ মন্দিরে পৌঁছানো

প্রায় তিন ঘণ্টার চড়াই পেরিয়ে অবশেষে আমরা পৌঁছলাম তুংনাথ মন্দিরে।
এখানে দাঁড়িয়ে মনে হল—মেঘের ওপরে দাঁড়িয়ে আছি।
নীচে সবুজ উপত্যকা, উপরে নীল আকাশ আর চারপাশে বরফে ঢাকা শৃঙ্গ।

মন্দির ছোট্ট, কিন্তু শান্তির অনুভূতি অসীম।
মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি, ঠান্ডা হাওয়া, আর পাহাড়ের নীরবতা—সব মিলে মনে হল যেন শিব স্বয়ং এখানে বিরাজমান।

আমরা চারজনই মন্দিরের সিঁড়িতে বসে চা খেলাম।
ক্লান্ত শরীরের মধ্যে এক অদ্ভুত শক্তি ফিরে এল।
এমন মুহূর্তে মনে হয়—এই কষ্টটাই তো আসল আনন্দের মূল্য।


৫. চন্দ্রশিলার শীর্ষে

মন্দির থেকে আরও এক ঘণ্টার ট্রেক করে আমরা পৌঁছলাম চন্দ্রশিলার শীর্ষে।
সেখান থেকে ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ—নন্দাদেবী, ত্রিশূল, চৌখাম্বা, কেদারনাথের শৃঙ্গ—সব একসঙ্গে দেখা যায়।

রোহন চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম—
— “কি ভাবছিস?”
সে হেসে বলল—
— “মনে হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিন আজ।”

আমি মনে মনে ভাবলাম, এ সত্যিই এমন এক জায়গা যেখানে মানুষ নিজেকে নতুন করে খুঁজে পায়।


৬. ফেরার পথে অনুভূতি

নামার সময় সূর্যাস্ত হচ্ছিল।
আকাশে কমলা-গোলাপি রঙের মেলা বসেছে।
মনে হচ্ছিল পাহাড় আমাদের বিদায় জানাচ্ছে।

চোপতায় ফিরে আমরা আগুন জ্বালিয়ে বসে গান গাইলাম, গল্প করলাম।
সেই রাতের তারা ভরা আকাশ আজও আমার মনে সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতি হয়ে আছে।


গল্পের সারমর্ম

তুংনাথ ভ্রমণ আমাদের শিখিয়েছে—
জীবনের সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যায় তখনই, যখন কষ্টকে জয় করে এগিয়ে যেতে পারো।
পাহাড়ের প্রতিটি বাঁকে, প্রতিটি নিঃশ্বাসে ছিল নতুন এক অনুভূতি।

এই ভ্রমণ কেবল একটি ট্রেক ছিল না—এটা ছিল এক আত্মঅন্বেষণ।
আজও যখন চোখ বন্ধ করি, মনে হয় আমি সেই তুংনাথের সিঁড়িতে বসে আছি, আর দূরে নীল আকাশে ভেসে যাচ্ছে মেঘের দল।

 

Share This