অনেক দিন আগের ঘটনা । পল্লব একদিন ঘোতনের হাতে বিশ্রীভাবে নিগৃহীত হয়েছিল । মারামারির ঘটনাটা ঘটেছিল সালারে । সেই থেকে ঘোতনের উপর পল্লবের রাগ জমা ! সেই ঘটনার বেশ কিছুদিন পর পল্লব রসুলপুরে তার মামার বাড়ি চলে আসে । মামা রসুলপুরের বড় চাষি । এখানে পল্লবের ব্যবসা করার ইচ্ছা । কিন্তু মামা ব্যবসার ব্যাপারে পল্লবকে কিছুই ব্যবস্থা করে দেননি । যার জন্য বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে যেখানে সেখানে পল্লবের আড্ডা । অর্জুন গাছ তলার আড্ডাটা দীর্ঘদিনের । অর্জুন গাছ তলায় আড্ডা দেওয়ার পুরানো লোকজন এখন আর কেউ নেই । রসুলপুরে আসার পর পল্লব অর্জুন গাছ তলার আড্ডাটা পুনরায় চালু করে । পল্লবের নজর পড়েছিল লতার উপর । মনে মনে লতাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখত । সেই লতার সঙ্গে ঘোতনকে দেখতে পেয়ে পল্লব নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে । রাগে গজরাতে থাকে । তার ভালবাসার মানুষকে নিয়ে ঘোতনের ফষ্টিনষ্টি, পল্লব সহ্য করতে পারে না । লতা ভালবাসুক বা না-ভালবাসুক, কিন্তু পল্লব তাকে ভালবাসে । লতার পাশে ঘোতনকে দেখে তার আরও রক্তচক্ষু ! সে জানে, ঘোতন এখানে নতুন । সুতরাং এই সুযোগ, পুরানো রাগের বদলা নেওয়ার । তাই কিছু দুষ্কৃতিদের নিয়ে আচমকা ঝাঁপিয়ে পড়লো লতা ও ঘোতনের উপর ।
রিক্সা থেকে রাস্তার পাশে পড়ে গেলো দুজনে । অন্যদিকে বাজারের ব্যাগ ছিটকে পড়লো পাকা রাস্তার উপর । বাজারের সবজি যেমন টমেটো, পিয়াঁজ, কাঁচা-লঙ্কা, ইত্যাদি রাস্তার উপর গড়াগড়ি । এমনকি মাছ, মাটন রাস্তায় গড়াগড়ি । লতা এমনভাবে রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ল ঘোতন যেখানে পড়েছে ঠিক তার পাশে । লতার শরীরে তেমন চোট লাগলো না । কিন্তু বা-হাতে প্রচণ্ড আঘাত পেলো ঘোতন । যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ! তার উপর চার-পাঁচ জন দুষ্কৃতি ঝাঁপিয়ে পড়েছে তার উপর । ঘোতনকে এলোপাথারি ঘুষি । হাতের যন্ত্রণার জন্য ঘোতন ঠিকভাবে পাল্টা আক্রমণ করতে পারছে না । নিমেষেই পল্লবদের কিল-ঘুষিতে ঘোতন কাহিল ।
মার খেয়ে ঘোতনের মর্মান্তিক অবস্থা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লতা সহ্য করতে পারলো না । একটু দূরে গোটা ইট দেখতে পেয়ে ছুটে ইটটা নিয়ে, তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে সোজা পল্লবের মাথায় আঘাত ! ইটের আঘাতে পল্লবের মাথা ফেটে রক্ত ! প্রচুর রক্তক্ষরণ ! ততক্ষণে বাজারের অনেক মানুষ ভিড় জমিয়েছেন । ইত্যবসরে পাড়ার সুনীল কাকা মারামারির স্পটে হাজির । তাঁর শক্ত-সামর্থ চেহারা । এতক্ষণ পল্লবদের মারপিটের ভিডিও করছিল । ঘোতনকে অন্যায়ভাবে কীভাবে দুষ্কৃতিরা মারছে তার পুরো ভিডিও সুনীল কাকা তৈরী করে রাখলো । এবার মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে তাঁর বা-হাতের মোটা বাঁশের লাঠি দিয়ে পল্লবের সাগরেদদের এলোপাথারি আঘাত । সুনীল কাকা লতাকে বাঁচাতে এগিয়ে যাওয়ায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষেরা নড়েচড়ে উঠলেন । তাঁরাও ঝাঁপিয়ে পড়লেন লতাদের বাঁচাতে । হঠাৎ জন-রোষ দেখে দুষ্কৃতিরা পালিয়ে বাঁচে ।
লতা ঘোতনকে নিয়ে ছুটলো হাসপাতালে । হাসপাতালে পৌঁছানো মাত্র প্রায় সঙ্গে সঙ্গে হাতের এক্স-রে করলো । এক্স-রে রিপোর্ট এবং শারীরিক স্থিতি দেখে হাসপাতালের ডাক্তারবাবু বললেন, “ভয়ের কারণ নেই । হাতে চোট পেয়েছে । মলম দিচ্ছি । গরম সেক ও মলম লাগালেই ঠিক হয়ে যাবে ।“ তারপর ঔষধ নিয়ে বাড়ি ফিরলো লতা ও ঘোতন ।
কঙ্কাবতীকে ঘোতন জানিয়ে দিলো, তার বাড়ি ফিরতে দুদিন দেরী হবে । শরীরের ঘটনাটা কঙ্কাবতীর কাছে গোপন রাখলো ।
অনেক ভেবেও ঘটনার প্রেক্ষাপট লতা বুঝে উঠতে পারছে না । তবে সে একটা জিনিস ভালভাবে বুঝেছে, ঘোতনের সঙ্গে পল্লবের সম্পর্ক মধুর নয় । লতা কয়েকদিন থেকে লক্ষ্য করছিল, কতকগুলি ছেলে-ছোকরা একত্রে অর্জুন গাছ তলায় বসে হাসি মশকরায় মত্ত থাকে । বিশেষ করে তাকে দেখলে তাদের হাসি, ঠাট্টা, তামাশার উচ্ছৃঙ্খলতা অনেক বাড়ে । তবে এগুলো লতা পাত্তা দেয় না । কেননা এইসব ঘটনা তার জীবনে আকছার ঘটে । সবগুলি পাত্তা দিলে অনর্থক ঝগড়া তার পিছু হটবে না ।
হাসপাতাল থেকে ফিরে বিছানায় শুয়ে আছে ঘোতন । ঠিকমতো মলম লাগানো ও গরমের সেক দেওয়ার পর অনেকটা সুস্থ । লতার ঘরে ঢোকার আওয়াজ পেয়ে ঘোতন বিছানায় উঠে বসলো । লতার দিকে তাকিয়ে ঘোতন বলল, “অহেতুক তোমাদের বিরক্ত করছি ।“
“এটা কোনো বিরক্তির ব্যাপার নয় ! আমি ভাবছি, পল্লব পুনরায় আক্রমণ করতে পারে । আপনার এখানে থাকাটা নিরাপদ হবে কিনা বুঝতে পারছি না ?” লতা তার উদ্বিগ্নতার কথা জানালো ।
আমি দুদিন বাদে বাড়ি ফিরব । বাড়িতে জানিয়ে দিয়েছি । দুদিনে মোটামুটি শারীরিক দিক দিয়ে নিশ্চয় চাঙ্গা হয়ে উঠব । তুমি অযথা চিন্তা করো না । ঐসব কাপুরুষের দল আমাকে কিচ্ছু করতে পারবে না !
“কিচ্ছু করতে পারবে না” এই কথাটা আর বলো না । সেদিন পল্লবের দল মিলে তোমাকে যেভাবে নাকানি-চোবানি খাওয়ালো তাতে আমি এখনও সন্দিহান, বেটা সুযোগ পেলেই আবার ছোবল মারবে । অথচ তুমি বলছো, পল্লব কিচ্ছু করতে পারবে না ।
সেদিন আচমকা আক্রমণ করায় ও তুমি সঙ্গে থাকায়, আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম । সেটা আর কোনোদিন হবে না ।
থাক ! বীর-পুরুষের মতো কথা এখন ছাড়ো । কী খাবে বলো ?
এখন একটু চা পেলেই খুশী ।
লতা চা তৈরী করতে ঘরে ঢুকলে, রাগে ঘোতনের চোখ লাল হয়ে উঠলো । বদলা না নিতে পারলে তার মাথা ঠিক রাখতে পারছে না । পল্লবের এত সাহস তাকে অতর্কিতে আক্রমণ করে ! এর যোগ্য শিক্ষা পল্লবকে না দিতে পারলে তার রসুলপুর ছাড়লে চলবে না । তাতে ভবিষ্যতে যা হয় হবে । ইতিমধ্যে এখানে চাউর হয়ে গেছে, ঘোতন দুর্বল । অতর্কিতে হানা দেওয়ার জন্য ঘাবড়ে গিয়েছিল ঘোতন । ঘোতন ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি পল্লব রসুলপুরে এসে ঘাপটি মেরে বসে আছে । উপরন্ত তার সঙ্গে লতা ছিল । লতাকে আগে বাঁচানো দরকার ! লতাকে বাঁচাতে গিয়ে ঘোতন বেকায়দায় পড়ে গেলো । নতুবা স্পটে পল্লব ও তার দলবলদের উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়তো । এই মুহুর্তে তার শরীর অনেক চাঙ্গা । তাই ঘোতন চাইছে, সুযোগ পেলেই পল্লবদের উপর যে কোনো সময় ঝাঁপিয়ে পড়বে । পল্লবদের এলোপাথারি উত্তম-মধ্যম দিতে পারলে যদি তার মনের জ্বালা কিছুটা মেটে !
“বাবু, এবার চা খেয়ে নড়েচড়ে বসেন ।“ মুচকি হেসে লতা ঠাট্টা করে কথাগুলি ঘোতনকে বলল ।
চায়ে চুমুক দিয়ে ঘোতন লতাকে আড়ষ্টতার সঙ্গে বলল, “চা খেয়ে একটু রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসি । অনেকক্ষণ থেকে ঘরে শোওয়া ! ঘোরাঘুরি করলে শরীরটা আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠবে ।“
যথা আজ্ঞা !
আর একটা কথা, দুপুরের খাবার এখনও খাওয়া হয়নি । তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে । তুমি ফিরে এলেই খেতে বসবো ।
যথা আজ্ঞা !
তবে ভাল করে শোনো, বাজারের দিকে যাওয়া চলবে না । বিশেষ করে এখন কিছুতেই যাবে না । কেননা বাজার যাওয়ার রাস্তার পাশে অর্জুন গাছ তলায় পল্লবদের আড্ডা ! তোমাকে দেখলে তারা পুনরায় তোমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে !
“মাথা খারাপ ! আমি ঐ রাস্তার দিকেই যাবো না, বরং উল্টোদিকে যাবো ।“
একদম ঠিক । উল্টোদিকে যাওয়াই তোমার শ্রেয় ! তবে তোমাকে একা ছাড়তে আমার ঠিক হচ্ছে কিনা বুঝতে পারছি না ? বেশীদূর যাওয়ার দরকার নেই । কেননা খাবার রেডি ।
মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বোঝাতে চাইলো, লতার কথা অক্ষরে অক্ষরে সে পালন করবে !
বেলা তখন প্রায় দু-টো । ঘোতন এদিক-ওদিক কোনোকিচ্ছু ভাবলো না । চা খেয়ে লতাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা অর্জুন গাছ তলায় । অর্জুন গাছ তলায় ঢোকার আগে ঘোতন লক্ষ্য করলো তিনটে বন্ধুর সঙ্গে পল্লবের তুমুল বাকবিতাণ্ডা !
চারজনের গতিবিধির অবস্থানের পরিস্থিতি অবলোকন করে ঘোতন মানসিকভাবে নিজেকে তৈরী করে নিলো । যেভাবে হোক আজ তাকে বদলা নিতে হবে । বদলা নেওয়ার এটাই মোক্ষম সময় । উপযুক্ত সময়টাকে ঘোতন কাজে লাগাতে চায় । যতক্ষণ বদলা না নিচ্ছে ততক্ষণ ঘোতনের মনের ভিতরের রাগের জ্বালা থামছে না । ভর দুপুরে রাস্তায় তেমন লোকজন নেই । সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো ঘোতন । অতর্কিতে আক্রমণ করে প্রথমেই পল্লবকে ঘায়েল করলো । তারপর পায়ের লাথি দিয়ে অন্য তিনজনকে কুপোকাত ! নিমেষের মধ্যে চারজনকে ভূপতিত করে ঘোতন পল্লবকে চেঁচিয়ে বলল, “আমার বিরুদ্ধে লাগা । ভবিষ্যতে লতার দিকে তাকিয়েছিস্ তো, সব কটাকে মেরে অজয় নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে তবেই আমার শান্তি ! ভেবেছিলি, সালার থেকে রসুলপুরে পালিয়ে এসে বেঁচে যাবি ? সেটা হবার নয় । আমি বেঁচে থাকতে তোর সেই আশায় বালি !”
ইতিমধ্যে অন্য তিনজন সেখান থেকে উধাও ।
পল্লব পিছু হটতে হটতে চিৎকার করে বলল, “আজ তোকে যদি থানার লক-আপে ঢোকাতে না পারি তবে আমার নাম পল্লব না !”
পল্লবের কথা শুনে ঘোতন ছুটে গিয়ে তাকে জোরে লাথি, “আমাকে লক-আপে ঢোকাবি ? আগে তুই বাঁচবি কিনা সেটা দ্যাখ্ ? তারপর আমাকে লক-আপে ঢোকাবার চিন্তা !” লাথি খেয়ে আবার রাস্তার উপর পড়ে গিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগলো । তার সোজা হয়ে দাঁড়াবার ক্ষমতা নেই ।
পথ চলতি মানুষের মধ্যে গুঞ্জন ! পুলিশ আসছে ।
পুলিশ দেখেই ঘোতন সেখান থেকে ছুটে বড় রাস্তায় । একটা খালি লরি মেমারির দিকে যাচ্ছিল । হাত দেখিয়ে লরিকে দাঁড় করালো ঘোতন । সেই লরিতে উঠে সে জানতে পারলো, লরিটা যাচ্ছে কাটোয়া । মেমারী, মন্তেশ্বর, দাঁইহাট হয়ে কাটোয়া যাবে । বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে । কাটোয়া পৌঁছাতে রাত্রি হয়ে যাবে । রাত্রি হলেও সমস্যা নেই । ঘোতন এই মুহূর্তে পুলিশের জেরা থেকে অন্তত বাঁচলো ।
ফোনে লতাকে ঘোতন জানিয়ে দিয়ে বলল, “এইমাত্র বাড়ি থেকে ফোন পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাড়ি ফিরছি । বাড়িতে মায়ের শরীর ভীষণ খারাপ । সুতরাং আমি বাড়ি ফিরতে বাধ্য হলাম ।“ “পল্লবদের মেরে শায়েস্তা করেছে” সেই কথা কিছুতেই লতাকে বলল না ।
ফোনে কথা শেষ হতেই লতাদের বাড়িতে পুলিশ এসে হাজির । সূর্য তখন পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়েছে । পুলিশের পেছনে পল্লব এবং তার কয়েকজন সাগরেদ । সব কটাকেই লতার চেনে ও জানে । পল্লবের সারা শরীরে রক্তের দাগ ! পল্লবের শরীরে রক্তের দাগ দেখে বুদ্ধিমতী লতা সহজেই বুঝতে পারলো, এটা বীরপুরুষ ঘোতনের কাজ । সঙ্গে সঙ্গে লতা পুলিশকে মোকাবিলা করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে নিলো !
লতাকে পুলিশ বললেন, “আপনাদের বাড়ির আত্মীয় ঘোতনকে ডেকে দিন ?”
“স্যার শুনুন ! ঘোতন আমাদের আত্মীয় নয় । আত্মীয়তা করতে তিনি এসেছিলেন । কিন্তু আপনাদের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা পল্লব এবং তার সাগরেদরা ঘোতনকে এমনভাবে মেরেছে, মার খেয়ে বেচারা হাসপাতাল থেকে সোজা বাড়ি । এতক্ষণ সম্ভবত বাড়ি পৌঁছে গেছে । আর সেই পল্লবদের নিয়ে আপনারা ঘোতনের খোঁজ করছেন । আমি ভাবছি, পল্লবদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত রিপোর্ট জমা দেবো । ঘোতনকে মারার অপরাধে পল্লবদের ধরে লক-আপে ঢোকাতে হবে !” বেশ জোরের সঙ্গে সওয়াল করলো লতা ।
লতার কথা শুনে থানার পুলিশ কিংকর্তব্যবিমূঢ় ! কী উত্তর দেবে বুঝতে তাঁরা রীতিমতো ধন্দে ?
পল্লব এবার এগিয়ে এসে লতার দিকে আঙ্গুল তুলে বলল, “তুমি পুলিশের কাছে এইসব আজেবাজে অভিযোগ করছো, তার কোনো প্রমাণ আছে ?”
বেশী ভাট বকো না । লতা বিনা প্রমাণে ভাট বকে না । নির্লজ্জ বেহায়ার মতো তড়পিয়ো না । ঘোতনকে অন্যায়ভাবে মেরে আবার বড় বড় কথা ! এবার পুলিশের দিকে তাকিয়ে লতা বলল, “স্যার, পল্লবকে অ্যারেস্ট করুন ?”
আপনার মুখের কথায় কাউকে অ্যারেস্ট করা যায় না । উপযুক্ত প্রমাণ চাই ।
প্রমাণ আমি দিচ্ছি । তার আগে বলুন, বিনা প্রমাণে কোন্ সাহসে একটা নিরপরাধ মানুষকে হাত-কড়া পড়াতে চলে এলেন ? পল্লব আপনাদের ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে । আমরা সম্ভ্রান্ত পরিবারের মানুষ । এভাবে কারো কথায় বিনা প্রমাণে বাড়িতে হানা দিয়ে সমাজের কাছে আমাদের অপদস্ত করবেন না, স্যার !
পুলিশ নীরব !
সুনীল কাকা সমস্ত মারপিটের ভিডিও পেন-ড্রাইভে তুলে সেটা একটু আগেই লতাকে দিয়ে গিয়েছিল । তাই বাঁচোয়া । ঘরের ভিতর ঢুকে পেন-ড্রাইভ এনে পুলিশের হাতে দিয়ে লতা বলল, “চালিয়ে দেখুন । এখানে থেকে সব প্রমাণ পেয়ে যাবেন ।“
ল্যাপটপ চালিয়ে পুলিশ স্পটে ঘটনাটা দেখতে শুরু করলেন । ভিডিও চলাকালীন পেছন থেকে পল্লব ও তার সাগরেদরা সেখান থেকে উধাও ।
পল্লবদের পালাতে দেখে লতা পুলিশকে বলল, “ধরুন স্যার, ওরা পালাচ্ছে !”
দুজন পুলিশ কন্সটেবল ও সাব-ইন্সপেক্টর পল্লবদের পেছনে ছুট্ ! তারপর কিছুক্ষণের মধ্যে লতাদের চোখের দৃষ্টি থেকে আড়াল হয়ে গেলো । লতা তারপর বেমালুম চেপে গেলো । পল্লবদের ব্যাপারে থানা-পুলিশ আর করলো না । লতা পরে জানতে পারলো, ঘোতন পল্লবদের উচিত শিক্ষা দিয়ে পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে গেছে । তখনও সে বাড়ি পৌঁছায়নি । সুতরাং লতা আর পুলিশ কেসে নিজেকে অহেতুক জড়াতে চাইলো না ।
তারপর বেশ কয়েক মাস কেটে গেলো । কঙ্কাবতী আর ছেলেকে রসুলপুর পাঠিয়ে বিপদ ডেকে আনতে চাইলো না । ব্রজেশ্বরবাবুকে প্রস্তাব দিলো, লতাকে সালারের মাসির বাড়ি রেখে বিয়ের পর্ব সারতে । সেই মোতাবেক বিয়ের কথাবার্তা এগোতে লাগলো ।
বৈশাখ মাসের ১৫তারিখে বিয়ের দিন পাকা ।
বাড়িতে ছোট ছেলের বিয়ে । তাই কঙ্কাবতীর ধুমধামের মাত্রা বেশী । শহর থেকে সানাইয়ের বাজনা । ব্যাণ্ড-পার্টির বাজনা এলো সালার থেকে । নিমন্ত্রিত লোকের সংখ্যা অনেক । মিঁয়া ও বাজারসৌ স্টেশন চত্বরের আমন্ত্রিত মানুষের সংখ্যা বেশী । কঙ্কাবতীর আবার লতাকে খুব পছন্দ । খবর নিয়ে জেনেছে, লতা খুব সাহসী মেয়ে । ঘোতনের জীবনে এমনই ডানপিটে একটা মেয়ে দরকার । কঙ্কাবতীদের বাড়িতে আনন্দের সীমা নেই । তার সব মেয়ে জামাই উঠে-পড়ে ঘোতনের বিয়ের কাজে ব্যতিব্যস্ত ।
বৈশাখ মাসে ঝড়-বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে প্যাণ্ডেল । প্যাণ্ডেলও সেভাবেই পোক্তভাবে তৈরী । ইলেক্ট্রিক লাইটের জমকালো আলোর রোশনাই । শহর থেকে রান্নার ঠাকুর । খাওয়া-দাওয়া নিয়ে কঙ্কাবতী কোনো আপোসে যেতে রাজি নয় । তাই সমস্ত ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে কঙ্কাবতী নিজে । মিঁয়ার মানুষ টের পাচ্ছেন, অনেকদিন পর গ্রামে জমজমাট বিয়ের আসর ।
ঘোতন ও লতার বিয়ে মহাধুমধামে সম্পূর্ণ হলো ।
(চলবে)
Categories