Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল : দ্যা লেডি উইথ দ্যা ল্যাম্প।

আজ আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফ বা ধাত্রী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় আজ ভারতেও পালন করা হচ্ছে দিবসটি। নার্সিং এমন একটি পেশা যা সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত। এ পেশার মাধ্যমে ব্যক্তিগত, পারিবারিক কিংবা সামাজিকভাবে কোন রোগী বা ব্যক্তির স্বাস্থ্য পুণরুদ্ধার এবং জীবনযাত্রার গুরুত্বতা তুলে ধরা হয়। এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত, দক্ষ কিংবা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি নার্স বা সেবিকা নামে পরিচিত। প্রধানতঃ নারীরাই নার্সিং পেশার সাথে জড়িত থাকেন। তবে এখন অনেক পুুুরুষেও এই পেশার সাথে যুুুুক্ত হচ্ছেন। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের জন্মদিন কে স্মরণীয় করে রাখতে আজকের দিনটি অর্থাৎ আন্তৰ্জাতিক ধাত্রী দিবস সমগ্র বিশ্বে প্ৰতিবছর ১২ মে তারিখে পালন করা হয়। ১৮২০ সালের এই তারিখে আধুনিক নার্সিং পরিষেবার মাৰ্গদৰ্শক ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্ম হয়েছিল। এই দিবস পালনের মাধ্যমে সম্মান জানানো হয় সেই নারীকে যিনি তার কর্মের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেছেন – নার্সিং একটি পেশা নয় সেবা। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের প্ৰতি শ্ৰদ্ধা জানাবার সাথে বিশ্বের ধাত্রীদের রোগীদের প্ৰতি দেওয়া স্বাস্থ্যসেবার জন্য কৃতজ্ঞতা প্ৰকাশ করা হয়।

ইতিহাস—

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল এর জন্মদিন কে আন্তৰ্জাতিক ধাত্রী দিবস হিসেবে পালিত হয়। তিনি ছিলেন আধুনিক নার্সিং সেবার অগ্রদূত, একজন লেখিকা এবং পরিসংখ্যানবিদ। যিনি দ্যা লেডি উইথ দ্যা ল্যাম্প নামে পরিচিত ছিলেন। ১৮২০ সালের ১২ মে মাসে ইতালির ফ্লোরেন্সে জন্মগ্রহণ করেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল।
ছোটবেলা থেকে তার স্বপ্ন ছিল নার্স হওয়া। কিন্তু তখনকার সময়ে নার্সিংকে সম্মানের চোখে দেখা হতো না। এছাড়া তার পিতা-মাতা চাননি ফ্লোরেন্স নার্স হোক। তাই ফ্লোরেন্সকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয়। কেননা তার নিজ বাড়িতে তার স্বপ্নটি পূরণ করা সম্ভব ছিলনা।
১৮৫৫ সালে তিনি নার্স প্রশিক্ষণের জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য কাজ শুরু করেন। নিরলস প্রচেষ্টায় ১৮৫৯ সালে তিনি নাইটিঙ্গেল ফান্ডের জন্য সংগ্রহ করেন প্রায় ৪৫ হাজার পাউন্ড। পরবর্তী সময়ে তিনি ভারতবর্ষের গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর গবেষণা চালান। যা ভারতবর্ষে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অবদান রাখে।লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে নার্সিংকে সম্পূর্ণ পেশারূপে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৮৬০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাইটিঙ্গেল ট্রেনিং স্কুল’ যার বর্তমান নাম ‘ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল স্কুল অব নার্সিং । ডা. এলিজাবেথ ব্ল্যাকওয়েলের সাথে যৌথভাবে ১৮৬৭ সালে নিউইয়র্কে চালু করেন ‘উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ’। এ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময় নার্সিংয়ের উপর বইও লিখেছেন। ১৮৮৩ সালে রাণী ভিক্টোরিয়া তাকে ‘রয়েল রেডক্রস’ পদক প্রদান করেন। প্রথম নারী হিসাবে ‘অর্ডার অব মেরিট’ খেতাব লাভ করেন ১৯০৭ সালে। ১৯০৮ সালে লাভ করেন লন্ডন নগরীর ‘অনারারি ফ্রিডম’ উপাধি। এ ছাড়াও ১৯৭৪ সাল থেকে তার জন্মদিন ১২ মে পালিত হয়ে আসছে ‘ইন্টারন্যাশনাল নার্সেস ডে’। যার মধ্যেমে সম্মান জানানো হয় এক নারীকে যিনি তার কর্মের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেছেন- নার্সিং একটি পেশা নয় সেবা। ১৯১০ সালের ১৩ আগস্ট ৯০ বছর বয়সে প্রয়াত হন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল।

 

ক্রিমিয়ার যুদ্ধে নার্সিং ইতিহাসে বৈপ্লবিক উন্নয়ন ও পরিবর্তন ঘটেছিল। এতে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল পেশাদারী পর্যায়ে নার্সিংয়ের পরিধি এবং নীতিমালা প্রণয়ন ও বিশ্লেষণপূর্বক তার প্রণীত নোটস অন নার্সিং গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
পেশাদারী পর্যায়ে এ পেশার মানোন্নয়নে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নার্স ব্যক্তিত্বরূপে ম্যারি সীকোল, এগনেস এলিজাবেথ জোন্স এবং লিন্ডা রিচার্ড ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছেন। ম্যারি সীকোল ক্রিমিয়ায় কাজ করেছেন; এগনেস এলিজাবেথ জোন্স ও লিন্ডা রিচার্ডস গুণগত মানসম্পন্ন নার্সিং বিদ্যালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে প্রতিষ্ঠা করেন। তন্মধ্যে – লিন্ডা রিচার্ডস আমেরিকার প্রথম পেশাদার ও প্রশিক্ষিত নার্সরূপে ১৮৭৩ সালে বোস্টনের নিউ ইংল্যান্ড হসপিটাল ফর উইম্যান এন্ড চিল্ড্রেন থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন।
বিশ্বের ১ম দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ডে জাতীয় পর্যায়ে নার্সদেরকে নিবন্ধিত করা হয়। ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯০১ সালে নার্সেস রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্ট প্রণীত হয়। এলেন ডাফার্টি ছিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রথম নিবন্ধিত নার্স। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম অঙ্গরাজ্যরূপে নর্থ ক্যারোলাইনায় নার্সিং লাইসেন্স ল ১৯০৩ সালে গৃহীত হয়। ১৯৯০-এর দশকে নার্সদেরকে ঔষধ দেয়া, ডায়াগনোস্টিক, প্যাথলজি পরীক্ষাসহ রোগীদেরকে প্রয়োজনে অন্য পেশাদারী স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসকের কাছে স্থানান্তরের অনুমতি দেয়া হয়।

 

আন্তর্জাতিক ধাত্রী পরিষদ বা ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ নার্সেস (আইসিএন) ১৯৬৫ সাল থেকে এই দিনটি উদযাপন করে আসছে। ১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কল্যাণ বিভাগের একজন কর্মকর্তা ডরোথি সাদারল্যান্ড প্রস্তাব করেন যে প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ার “ধাত্রী দিবস” ঘোষণা করবেন; তবে তিনি তা অনুমোদন করেননি।
১৯৭৪ সালের জানুয়ারি মাসে, ১২ মে দিনটি উদযাপনের জন্য নির্বাচিত হয় কারণ এটি আধুনিক নার্সিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মবার্ষিকী। প্রতি বছর, আইসিএন আন্তর্জাতিক নার্স দিবসের কিট প্রস্তুত এবং বিতরণ করে। কিটে সর্বত্র নার্সদের ব্যবহারের জন্য শিক্ষাগত এবং উন্মুক্ত তথ্য উপকরণ রয়েছে।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *