Categories
অনুগল্প কবিতা নারী কথা

যেতে হবে পরের ঘরে : রাণু সরকার।

প্রথম পর্ব

আমার এক পিসি বনগাঁ থাকে একটু ভেতরের দিকে গ্রামে। আমি সেখানে বছরে দু’একবার যাই। ঘুমিয়ে ছিলাম খুব ভোরে হঠাৎ কানে এলো উলুর ধ্বনি,আমি মনে মনে ভাবলাম-
এইরে- এবার না জানি কোন মেয়ের সর্বনাশ হতে চলেছে। আমার মনে আসার অনেক কারণ আছে।
আমার দেখা এরকম অনেক ঘটনা এখানে ঘটেছে।
এখানে আমার এক বন্ধবী সেও কত কষ্টে আছে। আমার বাড়ি কলকাতা আশে পাশেও দেখছি তাই খারাপ ভাবনা মনে আসাটাই স্বাভাবিক।

কোনো মেয়ের বিয়ের কথা শুনলে কিম্বা দেখলে
আমার ভীষণ ভয় লাগে কষ্টের পাশে রাগও থাকে।
আমি চলে গেলাম মেয়েটির বাড়ি আমার পিসির বাড়ির থেকে দশ পা- মেটিকে জিজ্ঞাসা করলাম-
এই মেয়ে, তোর নামটা কি যেন ভুলে গেছি সেই ছোটবেলায় তোকে এই ইছামতি নদীতে স্নান করতে দেখতাম আমি এখানে আসলেই।
গালে হলুদ মাখানো আজ তোর বিয়ে বুঝি?
মেয়েটি উত্তর দিলো তুমি এসব দেখে বুঝতে পারছো না, এটাও কি দিতে হবে বলে?

রাগ করে কথা বলছিস যে-জোর করে দিচ্ছে নাকি বিয়ে?
একটু বড় হলে বাপের ঘরে থাকতে নেই- এটাও কি বুঝিয়ে দিতে হবে?
তোর বাপ মা তোকে ছেড়ে থাকতে পারবে? তুই তো তাদের একটিই মেয়ে।
বাপ-মা যদি মায়া কাটিয়ে থাকতে পারে-
আমারও পারতে হবে।

আমি বোঝালাম-
শোন মেয়ে, বাবের ঘর ছেড়ে শ্বশুর ঘরে যেতে হয় সব মেয়েদের পাগলামী করিস না মেয়েদের যদি বিয়ে না হতো তাহলে কি করে ফুল ফুটতো ও ফল পেতো?

কষ্টের হাসি হেসে সে বললো- মেয়েদের বেলায় নিয়ম-নিষেধ যত- তাই না, তুমি বলো?
ধুর পাগলি, কাঁদিস কেন-বাপের ঘরের মায়া ত্যাগ করতে কষ্ট হচ্ছে বুঝেছি?
ত্যাগ না করলে শ্বশুর ঘর চিনবি কি করে
সেই জন্য সব মেয়েকে যেতে হয় শ্বশুরবাড়িতে
মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেলো।

____________________________

যেতে হবে পরের ঘরে
(দ্বিতীয় পর্ব)

কয়েক মাস পর আবার গিয়েছিলাম সেই পিসির বাড়ি,
গভীর রাতে কানে এলো চিৎকার ও কান্নার শব্দ।
মনে খুব কষ্ট হচ্ছিল-
কী জানি কার আবার কী হলো।

শুয়ে ভাবছি কখন ভোর হবে-
দেখতে যাবো কার কী হলো।

ভোর হতেই তাড়াতাড়ি উঠে
হাঁটা দিলাম সেই বাড়ির দিকে
গিয়ে দেখি, সেই বাড়ি সেই মেয়ে
ঘরে ঢুকে দেখি, মেয়েটি চুপ করে শুয়ে আছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম-
এই মেয়ে কী হলো রে তোর,
মরতে গেলি কেন?

কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো,
মরতে গিয়েছিলাম, পারলাম কই মরতে,
খেতে গিয়েছিলাম ইঁদুর মারা বিষ
যমের কাছেও আমি অরুচি।

তবে এসব নাটক করলি কেনো-
মরতে তো পারলিই না,
গ্রামের লোকের সুযোগ করেদিলি কানা-কানি, হাসা-হাসি করতে।
তোর মা-বাপের কি হুশ এলো?
তখনই বোঝা উচিত ছিলো যে- আমার কালো মেয়ে।

তখন বলেছিলি বিয়ে করবিনা-
জোর করে ঠেলে দিলো তাদের হাতে। পণ যা চেয়েছিলো ছেলের বাড়ি থেকে তা দিতে পারলো না তোর বাবা। কালো মেয়ের দিলো বিয়ে।
তখন তোর মানা শোনেনি।

কয়েক মাস আগে তোর বিয়ের দিন আমি এসেছিলাম। দেখ কি ভাগ্য আমার এবারো আমি এসেছি।
কিছু বলবো ভেবেছিলাম সেদিন পারিনি বলতে,
আমি জানতাম এরকম কিছু একটা ঘটবে-
ঠিক ঘটলো। যেহেতু তুই কালো আবার পণ দিলো কম।

তুই পালিয়ে গেলিনা কেনো?
কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারতিস,
বাপের ঘরে যখন এলি তখন মরতে গেলি কেনো?
তুই তো পড়াশুনা জানিস,রাগে তোকে অনেক কথা বলেছি রাগ করিস না। তোকে দেখে আমার রাগ ও কষ্ট হচ্ছে ।

জানিস মেয়ে,
এ পৃথিবীতে ভালবাসা দিয়ে যাবি আর ঝিয়ের মতো,
খাটবি, সংসারের মানুষের কাছে থেকে মন্দ কথা শুনবি তাও মুখ বুজে-
কিন্তু কোনো উত্তর করা যাবে না।
তাহলে তুই ভালো থাকলেও থাকতে পারিস।

কোনো নিশ্চয়তা নেই, এটাই নিয়ম-
এবার তুই ভেবে দেখ কী করবি, আমাকে জানাস।

আমি আসি রে মেয়ে,
এরকম আর করিস না,
বেঁচে থেকে লড়াই কর-
মরে জিতিয়ে দিস না ওদের।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *