Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ বিশ্ব নারিকেল দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয় এবং দিনটি পালনের গুরুত্ব।

নারকেল একটি অর্থকারী ফসল। এর উপকার, গুণাগুণ হিসেবের বাহিরে। জীবন জীবিকায় এর ভূমিকা আনস্বীকার্য। যে কোন দেশের অর্থনীতিটে নারকেল এক গুরুত্বপূর্ণ আবদান রাখে। এ এমন এক গাছ যার শুরু থেকে শেষ প্রতিটি অঙ্গই কাজেলগে কোনোনা কোনো ক্ষেত্রে। তাই এর গুরুত্ব বোঝাতে প্রতি বছর ২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় বিশ্ব নারকেল দিবস। এই দিনটা পালন করার মূল উদ্দেশ্য হল নারকেলের গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা এবং এর উপকারিতা বোঝানো।

 

নারকেল নামটি পর্তুগিজ শব্দ কোকো থেকে এসেছে। যার অর্থ মাথা বা মাথার খুলি এবং বলা বয় যে এটি ইন্দো-মালয় অঞ্চলের কোথও উদ্ভুত হয়েছে। নারকেল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Cocos Nucifera। ৮২ ফুট বা ২৫ মিটার উচ্চতা হয়ে থাকে এই গাছের। বিশ্বব্যাপী নারকেল সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় তিনটি দেশে। যথা ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন। সংস্কৃত ভাষায় নারকেল গাছটিকে কল্পবৃক্ষ বা স্বর্গের গাছ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।

 

নারকেল হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম ভার্সেটাইল ফল, এর একাধিক উপকারিতা আছে। এটা যেমন খাওয়া যায়, তেমনই আবার এর তেল রান্না থেকে ত্বক পরিচর্চায় ব্যবহার করা যায়। এই দিনটি সাধারণত এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় রাষ্ট্রগুলিতে বিশেষ ভাবে পালিত হয়। কারণ এই অঞ্চলগুলিতে অধিক পরিমাণে নারকেল উৎপাদন হয়ে থাকে। নারকেলের স্বাস্থ্যোপযোগিতা ও বাণিজ্যিক লাভ সম্পর্কে জন সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য বিশ্ব নারকেল দিবস পালিত হয়। ২০০৯ সালে এই দিনটি প্রথম পালিত হয়। তার পর থেকে প্রতিবছর ২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নারকেল দিবস পালিত হয়ে আসছে।

এশিয়া প্যাসিফিক কোকোনাট কমিউনিটি (APCC) ২০০৯ সালে এই দিবসটি প্রথম উদযাপন করে। তারপর থেকে, প্রতি বছর UN-ESCAP (United nations economic and social commission for Asia Pacific) এবং APCC একত্রে এই দিবসটি উদযাপন করে। দিবসটি পালনের লক্ষ্য হল, এই ফলের প্রচার এবং এর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

আমরা জানি,  বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফলগুলির মধ্যে একটি হল নারকেল, পাশপাশি এই ফলের বহুমুখী প্রকৃতি এটিকে বাকি ফলের থেকে আলাদা করে তোলে। নারকেল বা ডাব আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। নারকেলের জল, দুধ এবং তেল আমাদের স্বাস্থ্য, ত্বক, চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারি। ডাব বা নারকেল দিয়ে বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারও তৈরি করা যায়। নারকেল দিবসে, নারকেল থেকে তৈরি বিভিন্ন প্রকার মিষ্টান্ন, নারকেল গাছ থেকে তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী এই প্রদর্শনী তে রাখা হয়।

সারা বিশ্বে প্রায় অনেকগুলো দেশেই নারকেলের চাষ হয়। তার মধ্যে, মইক্রোনেসিয়া, ফিজি,ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া,থাইল্যান্ড,ভারত,ব্রাজিল, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপিন্স অন্যতম। এর মধ্যে সর্বাধিক নারকেল উৎপাদন হয়, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, ফিলিপিন্স, শ্রীলঙ্কা, ও ব্রিজেলে।
এটা বিশ্বের একটি অন্যতম দরকারি গাছ এবং এটিকে প্রায়ই “জীবনের গাছ” হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এটি মানুষ খাদ্য, জ্বালানী, প্রসাধনী, ভেষজ ঔষধ সরবরাহ, দালান নির্মান সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করে এবং এর রয়েছে আরও নানাবিধ ব্যবহার।

নারকেল চাষের উপর ভারতের প্রায় কোটি মানুষের জীবিকা নির্ভর করে।  ভারতের কেরল,অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক এবং তামিলনাড়ু তে সর্বাধিক নারকেলের চাষ দেখা যায়। দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ নারকেল এখানেই চাষ হয়। সমুদ্রের পার্শবর্তী স্থানে,লবনাক্ত মাটিতেই নারকেলের চাষ ভালোভাবে হয়।
নারকেল এমন একটি ফল, যা পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এই গাছের কাঠ থেকে শুরু করে, পাতা, নারিকেলের ছোবড়া, জল, দুধ, মালা, সবটাই ব্যবহৃত হয় কোনও না কোনও কাজে। তাই অর্থনীতিতে নারিকেলের ভূমিকা যে অসীম তা কিন্তু অস্বীকার করা যায় না।

একটি নারকেল গাছে প্রত্যেক বছর ৭০-১০০ টি নারকেল উৎপন্ন হয়। ভারতবর্ষে প্রায় দেড় কোটি গাছ শুধুমাত্র কেরলেই আছে ,যার কারণে কেরল কে কোকোনাট ল্যান্ডও বলা হয়।

 

ডাব বা নারকেলের জল কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা যাক—

 

নারকেল একটি সুস্বাদু পুষ্টিকর ফল। এই ফল কাঁচাও খাওয়া যায়, এবং এর থেকে বিভিন্ন ধরনের খাবার ও তৈরি হয়,যেমন কেক, লাড্ডু, বরফি ইত্যাদি। তাছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, পুজো তে, এবং রান্নাতেও ব্যাবহার করা হয়।

নারকেলের পাতা জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা হয়,নারকেলের পাতা থেকে তৈরি হয় ঝাঁটা যা সর্বত্রই ব্যবহার করা হয়।
নারকেলের ছোবা থেকে তৈরি হয় দড়ি,সোফা, পাদানি এবং বিভিন্ন ব্যাবহারিক জিনিস।

নারকেল গাছ ও জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা হয় এবং নারকেল গাছ চেরাই করে ছোটখাটো আসবাবপত্র ও তৈরি করা হয়।

নারকেল থেকে তৈরি হয় নারকেল তেল যা আমাদের চুলের জন্য উপযোগী।  যার ব্যবহার ভারতে এবং অন্যান্য দেশেও রয়েছে।
নারকেলের জল আমাদের শরীরের পক্ষে প্রচুর মাত্রায় উপযোগী।

নারকেলের জলে রয়েছে গ্লুকোজ, ভিটামিন সি,পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের শরীরের ব্লাড প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণে সহায়তা প্রদান করে।

কোলেস্টল এবং ফ্যাট ফ্রী হবার দরুন এটি হৃদয়ের পক্ষেও লাভদায়ক। এর মধ্যে থাকা আন্টি-অক্সিডেন্টের গুন শরীরের রক্ত সঞ্চালন কে সক্রিয় রাখে। এবং এটি শরীরের ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও কার্যকর।

নারকেলের জল আমাদের শরীরের থাইরয়েড হরমোন কে নিয়ন্ত্রণে রাখে।

নারকেলের জল আমাদের কিডনির পক্ষেও উপযোগী, যদি প্রতিদিন নারকেলের জল খাওয়া যায় তাহলে কিডনিতে পাথর হবার সম্ভাবনা থাকে না।

তাছাড়া নারকেলের জল রূপচর্চার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়।

 

নারকেল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়—

 

নিয়মিত নারকেল খাওয়া ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ এতে অনেক ফাইবার থাকে।
ত্বকের প্রাকৃতিক ঔজ্জ্বল্য বজায় রাখে- নারকেল বা ডাবের জল এই জল পান করলে বলিরেখা ও ফাইন লাইন কমানো যায় এবং ত্বকের টানটান ভাব বজায় থাকে। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে নারকেল। নিয়মিত নারিকেল খেলে ত্বক কোমল ও সুন্দর হয়। এছাড়াও নারকেল খেলে ত্বকে বলিরেখা পড়ে না।

হাড় মজবুত করে- ডাবের জল হাড় মজবুত এবং ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এর ফলে অল্প বয়সে অস্টিওপোরোসিস, আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপেনিয়া ইত্যাদি হাড়ের রোগের সমস্যা রোধ করা যায়।
অ্যাসিডিটি প্রতিরোধ করে- ডাবের জল শরীরের পিএইচ স্তরে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি অ্যাসিডিটি ও বুক জ্বালার হাত থেকে স্বস্তি দেয়।
চুলের টনিকের কাজ করে- চুল ঝরার সমস্যা থাকলে ডাবের জল পান করা শুরু করে দিন।
হজম শক্তি উন্নত করে- ডাবের জল প্রাকৃতিক উপায়ে সতেজতা প্রদান করে। পাশাপাশি শরীরে ব্লটিং ও গ্যাসের জন্য দায়ী সোডিয়ামের পরিমাণও কম করে। ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি পাচনতন্ত্রকেও মজবুত করে।
ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে, হজম শক্তি উন্নত করার পাশাপাশি ডাবের জল শরীররে হাইড্রেট রাখে। এটি শরীরের হারিয়ে যাওয়া পুষ্টি উপাদানগুলিকে পুনঃস্থাপিত করে।
নিয়মিত নারকেল খেলে স্তন ক্যানসার, কোলন ক্যানসারসহ অন্যান্য ক্যানসারেরও ঝুঁকি কমে।
ডাবের জল পান করলে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা কমে ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে নারকেল।
নারকেলের দুধ  হেপাটাইটিস সি, জন্ডিস ও লিভারের বিভিন্ন অসুখ সারাতে নারকেল দুধ কার্যকরী।
নিয়মিত নারকেল খেলে মাথায় খুশকি ও শুষ্কতা দূর হয়। এছাড়াও নারকেল তেল ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হয়।
নারকেলে বেশি ক্যালোরি থাকায় তা দ্রুত শরীরে শক্তি যোগায়। তাই কাজের মাঝে ক্লান্তি আসলে বা হালকা খিদে পেলে নারকেল খেলে তাৎক্ষণিক অ্যানার্জি বাড়বে।
নারকেলে থাকে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। যা কোলেস্টেরল বাড়ায় না বরং আথেরোসক্লেরোসিসের ঝুঁকি কমিয়ে হার্ট ভালো রাখতে সহায়তা করে।হৃদযন্ত্র ভালো রাখে নারকেল। এটি রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে হৃদরোগের সমস্যা দূর করে।
নারকেল রক্তের ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীরাও পরিমিত নারকেল খেতে পারেন। এতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

নারকেল সম্পর্কে তথ্য—

(ক) ‘coconut’ শব্দটি ‘nut’ এবং পর্তুগিজ শব্দ ‘coco’ এর সমন্বয়ে উদ্ভূত।
(খ) বিশ্বে নারকেল উৎপাদনের ৯০ শতাংশই আসে এশিয়া থেকে।
(গ) ইন্দোনেশিয়া, Philippines, ব্রাজিল এবং শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি ভারত বিশ্বের অন্যতম বড় রপ্তানিকারক দেশ।

(ঘ) নারকেল পুরোপুরি পরিপক্ক হতে এক বছর সময় লাগে।

(ঙ) একটি নারকেল গাছ প্রতি বছর কমকরে প্রায় ১০০টি নারকেল দেয়।
তাই বর্তমানে স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিরা ডাবের জলকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। এই জল ত্বক, হৃদয়, চুল, রক্তচাপ এবং হজমের পক্ষে বিশেষ উপকারী। সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে, স্পোর্টস ড্রিঙ্কসের তুলনায় এটি অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর, কম ক্যালরি সম্পন্ন। তাই আজ এই বিশেষ দিনটিতে ডাব বা নারকেলের জল কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ।
ভারতসহ মোট ১৮টি দেশ নিয়ে এপিসিসি সংস্থাটি গঠিত। এ দিবসের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নারকেল শিল্পের উন্নতির মাধ্যমে একটি দেশের অর্থ ব্যবস্থাকে মজবুত করা। নারকেলের মূল্য ও উপকারিতা সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে পালিত হয় দিনটি। খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ, প্রসাধনী, নির্মাণ সামগ্রী ও অন্যান্য নানা কারণে ব্যবহৃত হয় নারকেল। এই নারকেল গাছকে প্রায়শই ‘Tree Of Life’ নামে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। এশিয়া প্যাসিফিক কোকোনাট কমিউনিটি (এপিসিসি) নারকেলের মূল্য ও সমাজে তাদের প্রভাবের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এই দিনটির প্রচার শুরু করে।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও  বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *