অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায়, (জন্ম ১৩ অক্টোবর) বিহারের ভাগলপুর জেলায় জন্মগ্রহণকারী একজন বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা। জন্মের সময় তিনি কুমুদলাল গঙ্গোপাধ্যায় নামে পরিচিত ছিলেন এবং বাড়িতে মজা করে দাদামণি নামে ডাকা হতো। অশোক কুমার ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেকে একজন কিংবদন্তি করে তুলেছেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি চলচ্চিত্র শিল্পে অংশগ্রহণের স্বপ্ন দেখতেন।
তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমানে বিহার) ভাগলপুরে কুমুদলাল নামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা কুঞ্জলাল গঙ্গোপাধ্যায় পেশায় আইনজীবী এবং মা গৌরী দেবী ছিলেন গৃহিণী। চার ভাইবোনের মধ্যে কুমুদলাল ছিলেন সবার বড়। তাঁর একমাত্র বোন, সতী দেবী, তাঁর থেকে কয়েক বছরের ছোট, খুব অল্প বয়সে শশধর মুখোপাধ্যায়ের সাথে গাঁটছড়া বাঁধেন এবং একটি বৃহৎ চলচ্চিত্র পরিবারের সদস্য হন। অনুপ কুমার, প্রায় চৌদ্দ বছরের ছোট এবং আভাস (কিশোর কুমার), সর্বকনিষ্ঠ, ছিলেন হিন্দি চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সফল প্লেব্যাক গায়ক।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রেসিডেন্সি কলেজে আইনজীবী হওয়ার জন্য পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু তিনি আইনশাস্ত্র অধ্যয়ন করতে আগ্রহী ছিলেন না। তার মন ছিল চলচ্চিত্রে। টেকনিশিয়ান হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে তার স্বপ্ন পূরণ হলো।
১৯৩০-এর দশকে বোম্বেতে চলে আসেন তাঁর ভগ্নিপতি শশধর মুখোপাধ্যায়ের সাথে যোগ দিতে, যিনি বম্বে টকিজের একজন সিনিয়র ছিলেন। তিনি সেই সময়ের অন্যতম বড় ফিল্ম স্টুডিও বোম্বে টকিজে পরীক্ষাগার সহকারী হিসেবে কাজ করতেন।
দৈবক্রমে তার অভিনয় জীবন শুরু হয় ——–
অশোক কুমার স্বাভাবিকভাবে অভিনয় করে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে পথপ্রদর্শক হয়ে উঠেছেন। প্রথম সুপারস্টার হিসেবে তিনি খলনায়কের ভূমিকায়ও অভিনয় করেন। ভারতীয় চলচ্চিত্রে ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠায় বেশ কিছু তারকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে তাঁর অবদান কখনোই ভোলার নয়। তাঁর অভিনয়ের জন্য অনেক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ১৯৮৮ সালে ভারত সরকার কর্তৃক চলচ্চিত্র কলা-কুশলীদের জন্য প্রণীত সর্বোচ্চ জাতীয় সম্মাননা হিসেবে বিবেচিত দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও, ১৯৯৯ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদান রাখায় পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত হন তিনি। তাঁকে ভারতের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সেরা অভিনেতাদের একজনরূপে গণ্য করা হয়ে থাকে। এছাড়াও ১৯৯৪ সালে ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা, ২০০১ সালে উত্তরপ্রদেশ সরকারের বেসামরিক সম্মান ও ২০০৭ সালে স্টার স্ক্রিন বিশেষ পুরস্কার পান তিনি। শীর্ষ কিংবা খলনায়ক বা চরিত্রধর্মী অভিনয়ের সর্বত্রই সমানভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সচেষ্ট ছিলেন।
সবচেয়ে বড় হলেও অশোক কুমার সবচেয়ে বেশি দিন বেঁচে ছিলেন। তিনি চোখের সামনে তাঁর ছোট ভাই-বোনদের চলে যেতে দেখেছেন। দাদা মনি খুব আড়ম্বরে জন্মদিন পালন করতেন। যাইহোক, ১৯৮৭ সালে তার জন্মদিনে, তিনি তাঁর ছোট ভাইকে হারিয়েছিলেন। কিশোর কুমার খুব অল্প বয়সে এই দিনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এবং সেদিন তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি আর কখনও তার জন্মদিন পালন করবেন না।
১০ ডিসেম্বর, ২০০১ তারিখে ৯০ বছর বয়সে দেহাবসান ঘটে তাঁর। মুম্বইয়ের চেম্বার এলাকায় অবস্থিত নিজ বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী গভীর শোকপ্রকাশ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন যে, তিনি অনেক প্রজন্মের অভিনেতাদেরকে অণুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।