Categories
প্রবন্ধ

ফুটবল সম্রাট পেলে – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

পেলে সাও পাওলো রাজ্যের বাউরুতে দারিদ্রের মাঝে বেড়ে ওঠেন। চাকর হিসেবে তিনি চায়ের দোকানে কাজ করে বাড়তি অর্থ উপার্জন করতেন। তার বাবা তাকে ফুটবল খেলা শেখান, তবে তার একটি ফুটবল কেনার সামর্থ্য ছিল না, ফলে তিনি মোজার ভিতর সংবাদপত্র, দড়ি বা আঙ্গুর ঢুকিয়ে বল বানিয়ে খেলতেন। জানব সেই দারিদ্রতা থেকে কি ভাবে হয়ে উঠলেন ফুটবলের কিংবদন্তি।

তিনিই হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার। এমনটাই মনে করেন তাঁর ভক্তরা। তাকে ফুটবলের সম্রাট বলা হয়। ব্রাজিলের হয়ে তিনি ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬ ও ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তিনি ব্রাজিলের জাতীয় দলের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও তিনবার বিশ্বকাপজয়ী একমাত্র ফুটবলার।

পেলে (জন্মনাম – এদসোঁ আরাঁচ দু নাসিমেঁতু) ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের ত্রেস কোরাচয়, মিনাস জেরাইসে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার তাকে “জিকো” ডাকনামে ডাকত। বিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিনি “পেলে” ডাকনামটি পান। তার পিতার নাম দন্দিনহো এবং মাতার নাম সেলেস্তে আরাস। তার পিতাও একজন ফুটবলার ছিলেন ও ফ্লুমিনেস ফুটবল ক্লাবে খেলতেন। পেলে দুই ভাই-বোনের মধ্যে বড় ছিলেন।

পেলের অন্যতম সন্তান এডসন চলবি দো নাসিমেন্টো ‘এডিনহো’ একজন ফুটবলার ছিলেন। তিনি মূলত গোলরক্ষকের ভূমিকায় খেলতেন। ২০০৫ সালে মাদকদ্রব্য পাচারসংক্রান্ত অভিযোগে জড়িয়ে তিনি গ্রেফতার হন।

পেলে ১৯৫৭ সালের ৭ জুলাই মারাকানা স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন। ২-১ ব্যবধানে হারা সেই ম্যাচে ১৬ বছর ৯ মাস বয়সে ব্রাজিলের পক্ষে প্রথম গোল করে পেলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার স্থান দখল করেন।

সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে পেলে তার প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলেন। ১৯৫৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের সেই ম্যাচটা ছিল প্রতিযোগিতার তৃতীয় খেলা।ওয়েলসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে করা গোলটি ছিল প্রতিযোগিতায় পেলের প্রথম এবং সেই ম্যাচের একমাত্র গোল, যার সাহায্যে ব্রাজিল সেমিফাইনালে উত্তীর্ণ হয়। ম্যাচের সময় পেলের বয়স ছিল ১৭ বছর ২৩৯ দিন, বিশ্বকাপের গোলদাতাদের মধ্যে সবচেয়ে কম।

১৯৬৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্যায়ের ১ম খেলায় বুলগেরিয়ার বিরুদ্ধে জয়ী হলেও হাঙ্গেরীর বিরুদ্ধে ২য় খেলায় ব্রাজিল হেরে যায়। এর পূর্বে বুলগেরিয়ার বিরুদ্ধে জয়ী হলেও তিনি গুরুতর আঘাত পান। তারপরও কোচ ভিসেন্তে ফিওলা সকলকে আশ্চর্যান্বিত করে গ্রুপের শেষ খেলায় পর্তুগালের বিপক্ষে পেলেকে মাঠে নামান।

১৯৭০ সালের আগের বিশ্বকাপের ব্যর্থতা মুছে ফেলে আবারও শিরোপা জিতে নেয় ব্রাজিল। টানা চারটি টুর্নামেন্টের তিনটিরই ট্রফি ওঠে তাদেরই হাতে। পেলে খেলেন তার চতুর্থ বিশ্বকাপের শেষটি। প্রতিটা ম্যাচে গোল করেন জেয়ারজিনহো। ফাইনালে ইতালিকে ৪-১ গোলে গুঁড়িয়ে দেয় ‘ক্যাপ্টেন’ কার্লোস আলবার্তো। দল তিনবার শিরোপা জেতায় জুলে রিমে ট্রফিটা একেবারেই দিয়ে দেওয়া হয় ব্রাজিলকে। সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন পেলে। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপের পর নিজেকে সর্বকালের সেরা ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে প্রমাণ করেন পেলে।

পেলের রেকর্ড—

১) কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে ফুটবল বিশ্বকাপ জিতেছিলেন পেলে। ১৯৫৮ সালে সুইডেনকে হারিয়ে প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছিলেন ফুটবল সম্রাট।  সেইসময় তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর ২৪৯ দিন।

২) তিনবার বিশ্বকাপ জিতেছিলেন পেলে – ১৯৫৮ সাল, ১৯৬২ সাল এবং ১৯৭০ সাল। বিশ্বের আর কোনও খেলোয়াড়ের এমন রেকর্ড নেই।

৩) বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে গোল করার রেকর্ডও তৈরি করেছিলেন পেলে।

৪) বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে হ্যাটট্রিকেরও নজির গড়েছিলেন পেলে।

৫) ফিফার ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ১,৩৬৬ টি ম্যাচে ১,২৮১ টি গোল করেছিলেন পেলে।

২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর ফুটবলের রাজপুত্র হিসেবে পরিচিত দিয়েগো মারাদোনা প্রয়াত হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর দু’বছর পর ফের অভিভাবকহীন হয় ফুটবল।  সর্বকালের দুই সেরা আজ আকাশের তারা।ব্রাজিলের সাও পাওলোর একটি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ফুটবলের সম্রাট। বয়স হয়েছিল ৮২।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *