Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ বিশ্ব এইডস দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয় এবং গুরুত্ব।

বিশ্ব এইডস দিবসটি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) দ্বারা চিহ্নিত, বিশ্ব জনস্বাস্থ্য সচেতনতার উদ্দেশ্যে ঘোষিত। বিশ্ব এইডস দিবস হল একটি আন্তর্জাতিক দিবস। প্রতি বছর ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস পালিত হয়। এই রোগের থাবা থেকে রক্ষা পেতে যে পদক্ষেপ করা হয়েছিল, তা তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই পালিত হয় এই দিনটি। পাশাপাশি যে সমস্ত ব্যক্তিরা এইচআইভি বা হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবিলা করছেন, তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়াও এই দিবস পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য। ১৯৮৮ সালে প্রথম বিশ্ব এইডস দিবস পালিত হয়। সারা বিশ্বের জনগণের জন্য এইচআইভি একটি বিপজ্জনক জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এই ভাইরাস ব্যক্তি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আক্রমণ করে এবং সমস্ত রোগের প্রতি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষমতাকে কমিয়ে আনে। এর ফলে রোগীর জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে।

 

এইডস  হচ্ছে এইচ.আই.ভি.  তথা “মানব প্রতিরক্ষা অভাবসৃষ্টিকারী ভাইরাস” নামক ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট একটি রোগলক্ষণসমষ্টি, যা মানুষের দেহে রোগ-প্রতিরোধের ক্ষমতা বা প্রতিরক্ষা তথা অনাক্রম্যতা হ্রাস করে। এর ফলে একজন এইডস রোগী খুব সহজেই যে কোনও সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু ঘটাতে পারে।

২০১৭-এর হিসাব অনুযায়ী, এইডসের জন্য বিশ্বজুড়ে ২৮.৯ মিলিয়ন থেকে ৪১.৫ মিলিয়ন মানুষ মারা গেছে, এবং আনুমানিক ৩৬.৭ মিলিয়ন মানুষ এইচআইভি সংক্রামিত হয়ে বেঁচে আছে, এর ফলে এটি নথিভুক্ত ইতিহাস অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ অন্যতম জনস্বাস্থ্য বিষয় হিসাবে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের অনেক অঞ্চলে সাম্প্রতিক উন্নত অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল চিকিৎসা পৌঁছোনোর ফলে, ২০০৫ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যায় মৃত্যুর পর এইডস মহামারী থেকে মৃত্যুর হার কমেছে (২০১৬ সালে ১ মিলিয়ন, যেখানে ২০০৫ সালে ছিল ১.৯ মিলিয়ন)।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় এইডস সম্পর্কিত বিশ্ব কর্মসূচির দুজন জনতথ্য কর্মকর্তা জেমস ডব্লু বুন এবং টমাস নেটটার দ্বারা ১৯৮৭ সালের আগস্টে প্রথম বিশ্ব এইডস দিবসের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এইডস সম্পর্কিত বিশ্ব কর্মসূচির (বর্তমানে আনএইডস নামে পরিচিত) পরিচালক ডঃ জোনাথন মানের কাছে বুন এবং নেটটার তাঁদের ধারণাটির কথা জানিয়েছিলেন। ডঃ মান এই ধারণাটি পছন্দ করে এটির অনুমোদন করেন এবং ১৯৮৮ সালের ১লা ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবসটি প্রথম পালন করা উচিত এমন পরামর্শের সাথে একমত হন। সান ফ্রান্সিসকোর প্রাক্তন টেলিভিশন সম্প্রচার সাংবাদিক বুন, ১লা ডিসেম্বর তারিখটির সুপারিশ করেছিলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল মার্কিন নির্বাচনের যথেষ্ট পরে কিন্তু বড়দিনের ছুটির আগে, পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমগুলি দ্বারা বিশ্ব এইডস দিবসের প্রচার সর্বাধিক হবে।
এর প্রথম দুই বছরে, বিশ্ব এইডস দিবসের প্রতিপাদ্য শিশু এবং তরুণদের লক্ষ্য করে তৈরি হয়েছিল। এই প্রতিপাদ্যটি বেছে নেওয়ার সময়, কিছু ঘটনা উপেক্ষা করার কারণে এর সমালোচনা করে বলা হয়েছিল যে সমস্ত বয়সের লোকেরা এইচআইভিতে আক্রান্ত হতে পারে, প্রতিপাদ্যটি রোগটিকে ঘিরে থাকা কিছু কালিমা মোচন করতে এবং পারিবারিক রোগ হিসাবে সমস্যাটির স্বীকৃতি বাড়াতে সহায়তা করেছিল।
১৯৯৬ সালে এইচআইভি / যৌথ জাতিসংঘের এইডস সম্পর্কিত কর্মসূচি (ইউএনএআইডিএস) চালু হয়েছিল, এবং এটি বিশ্ব এইডস দিবসের পরিকল্পনা ও প্রচারের দায়িত্ব অধিগ্রহণ করে। শুধু একটি দিনে মনোযোগ না দিয়ে, আনএইডস ১৯৯৭ সালে বছরব্যাপী যোগাযোগ, প্রতিরোধ ও শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বিশ্ব এইডস অভিযান তৈরি করেছিল। ২০০৪ সালে, বিশ্ব এইডস প্রচার, একটি স্বাধীন সংগঠনে পরিণত হয়েছিল।
প্রতি বছর, পোপ জন পল দ্বিতীয় এবং দ্বাদশ বেনেডিক্ট বিশ্ব এইডস দিবসে রোগী এবং চিকিৎসকদের জন্য একটি শুভেচ্ছা বার্তা প্রকাশ করেন।

 

জেনে রাখা দরকার।

 

এইচআইভি সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু এইডস হয় না। কিন্তু যে হেতু এক বার সংক্রামক এইচআইভি শরীরে ঢুকলে তাকে পুরোপুরি দূর করা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি, তাই এইচআইভি. সংক্রমণ হলে এইডস প্রায় অনিবার্য। তবে বিনা চিকিৎসায় এইডস পর্যায়ে পৌছতে যদি লাগে গড়ে দশ বছর তবে চিকিৎসার দ্বারা তাকে আরও কিছু বছর পিছিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু ‘হার্ট’ (এইচএএআরটি) নামে এইডস-এর যে কম্বিনেশন ওষুধ দিয়ে চিকিৎসাপদ্ধতি রয়েছে তা অত্যন্ত খরচ সাপেক্ষ। আসলে শরীর জাত অধিকাংশ তরল ক্ষরণে এইচআইভি নিষ্কৃত হয়। তবে স্নেহপদার্থের আবরণ থাকায় এইচআইভি অত্যন্ত ভঙ্গুর। তাই এইচআইভি শরীরের বাইরে বেশিক্ষণ বাঁচে না। এই কারণে সরাসরি রক্ত বা যৌন নিঃসরণ শরীরে প্রবেশ না করলে এইচআইভি সংক্রমণের সম্ভাবনা খুব কম। শুধুমাত্র স্পর্শ, এক সঙ্গে খাওয়া, এমনকী একই জামাকাপড় পরা, বা মশার কামড়ে কখনও এইচআইভি ছড়ায় না। তাই এইচআইভি সংক্রমণ ছোঁয়াচে নয়।

 

এইচআইভি কী ভাবে ছড়ায়।

 

ক) এইচআইভি-তে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে, বা তার ব্যবহৃত ইনজেকশনের সিরিঞ্জ বা সূঁচ ব্যবহার করলে।

খ ) এইচআইভি-তে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের শিশুরও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা গর্ভধারণের শেষ দিকে বা প্রসবের সময় হতে পারে। তবে জিডোভুডিন ওষুধ ব্যবহার করে এই সম্ভাবনা কিছুটা কম করা যায়, এবং তা করলে মায়ের দুধও বাচ্চাকে দেওয়া যেতে পারে (কারণ মার দুধ না পেলে গরিব ঘরে জন্মানো বাচ্চার মৃত্যুর সম্ভাবনা আরও বেশি)

গ) এইচআইভি-তে আক্রান্ত কারও সঙ্গে অসংরক্ষিত (কনডম ব্যবহার না করে) যৌন সম্পর্ক করলে।

 

পালনের উদ্দেশ্য 

 

বিশ্ব এইডস দিবসের মাধ্যমে এ কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, এইচআইভির প্রাদুর্ভাব এখনও বর্তমান এবং আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আবার এর প্রতি সচেতনতা গড়ে তোলার কথাও স্মরণ করিয়ে দেয় দিনটি। শুধু তাই নয়, এইচআইভি সংক্রান্ত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো ও এ বিষয় জনগণকে শিক্ষিত করে তোলার ওপরও জোর দেয় দিনটি।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট; উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

মেধা পাটকর, ভারতের প্রথম সারির খ্যাতনামা সমাজকর্মী।

ভারতবর্ষের একজন প্রথম সারির সমাজকর্মী মেধা পাটকর – নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনে পালন করা উল্লেখনীয় ভূমিকার জন্য বিখ্যাত। মেধা পাটকর  ভারতবর্ষের একজন প্রথম সারির সমাজকর্মী। নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনএ পালন করা উল্লেখনীয় ভূমিকার জন্য ইনি বিখ্যাত।

ব্যক্তিগত জীবন—

 

১৯৫৪ সালের ১ ডিসেম্বরে মহারাষ্ট্রএর মুম্বাইয়ে মেধা পাটকরের জন্ম হয়। টাটা সামাজিক বিজ্ঞান সংস্থানের থেকে সমাজ সেবা বিভাগে ইনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। মেধা পাটকর  হলেন একজন রাজনীতিবিদ এবং কর্মী যিনি ভারতে অবিচারের সম্মুখীন আদিবাসী, দলিত, কৃষক, শ্রমিক এবং মহিলাদের দ্বারা উত্থাপিত কিছু রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা নিয়ে কাজ করেন।  তিনি TISS-এর একজন প্রাক্তন ছাত্র, ভারতের সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণার একটি প্রধান প্রতিষ্ঠান।

 

পাটকার তিনটি রাজ্যে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন (NBA) নামক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য: মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাট।  এনবিএ সর্দার সরোবর বাঁধ প্রকল্পের সাথে সম্পর্কিত বাঁধ প্রকল্পগুলির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রামে নিযুক্ত রয়েছে, বিশেষ করে যাদের বাড়িগুলি ডুবে যাবে কিন্তু এখনও পুনর্বাসন করা হয়নি।  তিনি ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অফ পিপলস মুভমেন্টস (NAPM) এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, যা শত শত প্রগতিশীল জনগণের সংগঠনের জোট।  উপরোক্ত ছাড়াও, পাটকার ওয়ার্ল্ড কমিশন অন ড্যামস-এর একজন কমিশনার ছিলেন, যিনি পরিবেশগত, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক এবং বিশ্বব্যাপী বড় বাঁধের উন্নয়নের প্রভাব এবং তাদের বিকল্পগুলির উপর পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা করেছিলেন।  তিনি বহু বছর ধরে ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অফ পিপলস মুভমেন্টস-এর জাতীয় কো-অর্ডিনেটর এবং তারপর আহ্বায়ক ছিলেন এবং এখন এনএপিএম-এর উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন।  এনএপিএম-এর ব্যানারে, তিনি উন্নয়নের নামে বৈষম্য, অ-টেকসইতা, বাস্তুচ্যুতি এবং অবিচারের বিরুদ্ধে ভারত জুড়ে বিভিন্ন গণসংগ্রামে অংশ নিয়েছেন এবং সমর্থন করেছেন।  তার কাজ জাতপাত, সাম্প্রদায়িকতা এবং সব ধরনের বৈষম্যকে চ্যালেঞ্জ করে। তিনি অসংখ্য দল এবং প্যানেলের একটি অংশ ছিলেন যারা ভূমি অধিগ্রহণ, অসংগঠিত খাতের কর্মী, হকারদের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন জাতীয় নীতি ও আইন প্রণয়ন ও প্রণয়নে কাজ করে।  , বস্তি-বাসী এবং বন-বাসিনী আদিবাসী।  এনএপিএম আদর্শ সোসাইটি, লাভাসা মেগাসিটি, হিরানন্দানি (পাওয়াই) এবং সেইসাথে অন্যান্য নির্মাতাদের বিরুদ্ধে সহ বেশ কয়েকটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছে৷
২০০০ সালে, মেধা পাটকর টাইম দ্বারা ২০ শতকের ১০০ জন নায়কের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।  যাইহোক, প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ স্বামীনাথন মেধা পাটকরের সমালোচনা করেছেন, বলেছেন যে তিনি নর্মদা প্রকল্পে ভুল ছিলেন।  প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছিলেন যে মেধা পাটকর এবং তার “শহুরে নকশাল” বন্ধুরা নর্মদা প্রকল্পের বিরোধিতা করেছিলেন এবং বিলম্ব করেছিলেন যা গুজরাটকে ব্যাপকভাবে উপকৃত করেছিল।  পরবর্তী বছরগুলিতে প্রকল্পের সম্প্রসারণ বাঁধ থেকে আরও সুবিধা নিয়ে এসেছে, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র এবং রাজস্থান রাজ্যের কৃষকদের জন্য এখন সারা বছর ধরে সেচের জল পাওয়া যায়।

 

সম্মান ও পুরস্কার—-

 

রাইট লাইভ‌‌‌‍লিহুড এওয়ার্ড (Right Livelihood Award), ১৯৯১ সাল, সুইডেন।

গোল্ডম্যান পরিবেশ পুরস্কার টেমপ্লেট:Enwiki, ১৯৯২ সাল, সানফ্রান্সিস্কো, ক্যালিফোর্ণিয়া

গ্রীন রিবন এওয়ার্ড টেমপ্লেট:Enwiki

১৯৯৫: BBC, ইংল্যান্ড কর্তৃক সেরা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রচারকের জন্য গ্রিন রিবন পুরস্কার

১৯৯৯: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, জার্মানি থেকে মানবাধিকার রক্ষাকারী পুরস্কার

১৯৯৯: ভিজিল ইন্ডিয়া মুভমেন্ট থেকে M.A. থমাস জাতীয় মানবাধিকার পুরস্কার

১৯৯৯: পার্সন অফ দ্য ইয়ার বিবিসি

১৯৯৯: দীনা নাথ মঙ্গেশকর পুরস্কার

১৯৯৯: শান্তির জন্য কুন্দল লাল পুরস্কার

১৯৯৯: মহাত্মা ফুলে পুরস্কার

২০০১: বসবশ্রী পুরস্কার

২০১৩: মাতোশ্রী ভীমাবাই আম্বেদকর পুরস্কার

২০১৪: মাদার তেরেসা পুরস্কার সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This