Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে, রামপ্রসাদ বিসমিল, মণিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় যুক্ত বৃটিশ বিরোধী বিপ্লবী।।।

রামপ্রসাদ বিসমিল ( ১১ জুন ১৮৯৭―১৯ ডিসেম্বর ১৯২৭) একজন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী। রামপ্রসাদ বিসমিল ছিলেন বিপ্লবী সংগঠন হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। শহীদ ভগৎ সিং তাকে এই বলে প্রশংসা করেছেন যে তিনি উর্দু ও হিন্দিতে একজন মহান কবি ও লেখক ছিলেন, যিনি ইংরেজি থেকে  ক্যাথেরিন এবং বাংলা থেকে বলশেভিক কী কার্তুত অনুবাদ করেছিলেন।

রামপ্রসাদ বিসমিল ভারতের স্বাধীনতার জন্য মাত্র ৩০ বছর বয়সে ফাঁসির মঞ্চে শহীদ হন। তার বিখ্যাত রণহুংকার ( “সারফারোশি কি তামান্না আব হামারে দিল মে হে দেখ না হে জোর কিতনা বাজো হে কাতিল মে হে” ) এই গান গেয়ে কত বিপ্লবী যে ফাঁসির মঞ্চে শহীদ হলেন তা জানা নেই। বিসমিল আজিমাবাদী রচিত সারফারোশি কি তামান্না গজলটি রামপ্রসাদ বিসমিলের মাধ্যমে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে রণহুংকার হিসেবে জনপ্রিয়তা পায়। রামপ্রসাদ বিসমিল “মৈনপুর কাণ্ড” আর “কাকোরী কাণ্ডে” নেতৃত্বে দিয়ে ব্রিটিশ শাসকের বুকে প্রচণ্ড আঘাত হেনেছিল। ১১ বছরের বিপ্লবী জীবনে রামপ্রসাদ অনেক বই লিখেছিলেন এবং তা তিনি স্বয়ং প্রকাশিত করেন। রাম প্রসাদের জীবনকালেই প্রায় সমস্ত বই প্রকাশিত হয়, কিন্তু ইংরেজ সরকার তার সমস্ত বই নিষিদ্ধ করে দেন। বিপ্লবী রামপ্রসাদ বিসমিল-এর জন্ম ১১ জুন ১৮৯৭ সালে হয়। রামপ্রসাদ-এর জন্মস্থান উত্তরপ্রেশের শাহজানপুর জেলা। তার পিতার নাম ছিল মুরলিধর ও মার নাম মুলমতি দেবী। মুরলিধর বাড়িতে বসেই রাম প্রসাদ কে হিন্দি অক্ষর শেখাতেন, সে সময় উর্দু ভাষাও খুব প্রচলিত ছিল যার কারনে রামপ্রসাদ কে এক মৌলবী সাহেবের কাছে পাঠানো হত। পণ্ডিত মুরলিধর রামপ্রসাদের পড়াশোনায় বিশেষ লক্ষ্য দিতেন, একটু শয়তানি করলেই রামপ্রসাদ কে মার খেতে হত। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত রামপ্রসাদ সবসময় ফাস্ট হয়েছিল। বাল্যকালে থেকেই আর্যসমাজ এর সম্পর্কে যোগ দেন। শাহজানপুরে আর্যকুমার সভা স্থাপিত করেন। শাহজানপুরে আর্যসমাজ মন্দিরে স্বামী সোমদেবের সংস্পর্শে আসেন এবং তার জীবনে পরিবর্তন আসে। রামপ্রসাদ বিপ্লবী দলে যোগ দিয়ে হিন্দুস্তান রিপাবলিকান এসোসিয়েশনের সদস্য হন। তাদের এই বিপ্লবের কাজে অর্থ সংগ্রহ করার দরকার অস্ত্রসস্ত্র আনার জন্য। তিনি একদিন শাহজাহানপুর থেকে লখনৌতে ট্রেন ভ্রমণের সময় খেয়াল করলেন যে প্রত্যেক স্টেশন মাস্টার তার কেবিনে গার্ডের মাধ্যমে টাকার ব্যাগ আনছেন। সেই টাকার ব্যাগটি লখনৌ জংশনের সুপারেন্টেন্ডেন্টের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিসমিল সিদ্ধান্ত নিলেন সরকারি অর্থ লুট করার। এটির মাধ্যমে শুরু হল কাকোরী ট্রেন ডাকাতি।
বিপ্লবীরা তাদের কার্যক্রম চালানোর জন্য এবং অস্ত্রশস্ত্র কেনার উদ্দেশ্যে, বিপ্লবীরা ৮ আগস্ট ১৯২৫ তারিখে শাহজাহানপুরে একটি সভায় বসেন। অনেক কথাবার্তার পর এটি সিদ্ধান্ত হয় যে তারা সরণপুর লখনৌ চলাচলকারী ৮-ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেন বহনকারী সরকারি কোষাগার লুট করবেন।
৯ আগস্ট ১৯২৫ তারিখে আসফাকউল্লা খান এবং অন্য আটজন বিসমিলের নেতৃত্বে ট্রেন লুট করেন। অন্যরা হলেন বারাণসীবাসি বাংলা থেকে রাজেন্দ্র লাহিড়ী,এবং শচীন্দ্রনাথ বক্সী, উন্নাও থেকে চন্দ্রশেখর আজাদ, কলকাতা থেকে কেশব চক্রবর্তী, রাইবেরেলি থেকে বনওয়ারী লাল, ইটাওয়া থেকে মুকুন্দি লাল, বেনারস থেকে মন্মথ নাথ গুপ্ত এবং শাহজাহানপুর থেকে মুরারি লাল।
১৯২৬ সালে কাকোরি বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং এটির বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকার কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা শুরু করে। এই মামলার বিচারে পণ্ডিত রামপ্রসাদ বিসমিল,  রাজেন্দ্র লাহিড়ী, ঠাকুর রৌশন সিং, আসফাকউল্লা খানের ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়। ১৯ ডিসেম্বর ১৯২৭ সালে গোরখপুর জেলে  ফাঁসি দেওয়া হয়।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *