Categories
প্রবন্ধ

ভারতীয় বাঙালি পদার্থবিদ ও গণিতজ্ঞ ভূপতিমোহন সেন।

ভূপতিমোহন সেন (২১ মে ১৮৮৮ – ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮) ছিলেন ভারতীয় বাঙালি পদার্থবিদ এবং গণিতজ্ঞ  তিনি কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং ফ্লুইড মেকানিক্সের ক্ষেত্রে  অসাধারণ অবদান রেখেছেন। তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের গণিত বিভাগে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগে পড়াতেন। তিনি বোস ইনস্টিটিউট তথা বসু বিজ্ঞান মন্দিরের গভর্নিং বডির সদস্যও ছিলেন। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ প্রদান করে।।

জন্ম ও পরিবার
ভূপতিমোহন সেনের জন্ম ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের ৩ জানুয়ারি বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের  রাজশাহীতে। তাঁর পিতা রাজমোহন সেন ছিলেন রাজশাহী সরকারি কলেজের গণিতের অধ্যাপক এবং উপাধ্যক্ষ। তাঁর মাতা নিশিতারা দেবী ছিলেন অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ও ধার্মিক মহিলা। তিনি স্যার ডা. নীলরতন সরকারের এক কন্যা শান্তাকে বিবাহ করেন। তাদের দুই পুত্র ও এক কন্যা ছিল। পুত্রেরা হলেন – মনীষীমোহন সেন এবং সুব্রতকুমার সেন।
শিক্ষা জীবন
ভূপতিমোহন সেনের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়  রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে এবং পরে রাজশাহী কলেজে। তিনি এন্ট্রান্স ও এফ এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীর বৃত্তি পান। বিদ্যালয় শিক্ষা  শেষ করে তিনি ভর্তি হন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে ট্রিপল অনার্সসহ বিএসসি পাস করেন। গণিতে প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয়, পদার্থবিদ্যায় দ্বিতীয় শ্রেণী এবং রসায়নে দ্বিতীয় শ্রেণী পান। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্নাতকোত্তরে  ফলিত গণিতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর কিংস কলেজের ফাউন্ডেশন স্কলার (১৯১১ – ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ সময়ের) হয়ে কেমব্রিজ যান। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংলার  হন এবং ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ভারতীয় হিসাবে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ “স্মিথস” পুরস্কার লাভ করেন।
কর্মজীবন—-
১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ফিরে আসার পর, তিনি ‘ইন্ডিয়ান এডুকেশন সার্ভিস’-এ যোগ দেন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ঢাকা সরকারি কলেজের গণিতের অধ্যাপক এবং ১৯২১ খ্রিস্টাব্দ হতে  ঢাকা ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক ছিলেন তিনি। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে  কলকাতায় ফিরে আসেন এবং প্রেসিডেন্সি কলেজে (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) গণিতের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই পদে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ হন এবং আট বৎসর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে ‘ইন্ডিয়ান এডুকেশন সার্ভিস’ হতে অবসরের পর, তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ প্রেসিডেন্সি কলেজের বিশুদ্ধ গণিতের খণ্ডকালীন অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং একই পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে অবসর নেন।
গবেষণা ক্ষেত্র—–
অধ্যাপক সেনের গবেষণার ক্ষেত্র ছিল নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর –
ডিফারেনশিয়াল জ্যামিতি
হাইড্রোডাইনামিকস
আধুনিক পদার্থবিদ্যা
১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞান পত্রিকা  নেচারে তার একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। তার টাইডাল অসিলেশন অন এ স্ফেরোয়েড  শিরোনামের গবেষণাপত্রটি কলকাতা গাণিতিক সমিতি তথা কলকাতা ম্যাথমেটিকাল সোসাইটির বুলেটিনে প্রকাশিত হয়েছিল। তার রচিত ও প্রকাশিত গ্রন্থ দুটি হল –
এ নিউ ক্লাসিক্যাল থিওরি অফ দ্য ফোটন এবং ইলেক্ট্রন এবং
লাইট অ্যান্ড ম্যাটার: এ নিউ ক্লাসিক্যাল থিওরি অফ লাইট অ্যান্ড ম্যাটার
গ্রন্থ দুটি ম্যাক্সওয়েল সমীকরণ এবং বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বের উপর বিদ্যমান তত্ত্বগুলির উপর সমালোচনা করেই রচিত হয়।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *