Categories
কবিতা

চঞ্চল প্রাণ :::: রাণু সরকার।।।।

দোষ কীর্তন গাইবে সবাই জানি–
তবু প্রিয়া তোমার কাছেই বাজাবো আমার প্রিয় তানপুরা খানি।
হাত আমার শাসনে নেই, তাল হারিয়েছে তারে,
ধৈর্য্যহীন চিত্তচাঞ্চল্য প্রহার করে পাঁজরের দ্বারে,
প্রিয়া তুমি মান কোর না,বাঁধ তার বুঝে নিয়ে
চেষ্টা যেন সফল হয়, তোমার ভাবের উদ্রেক বিহ্বলতা দিয়ে।
বেজে উঠুক সে তার অন্তরে আছে কথা যত
গুঞ্জরণ রবে হৃদয়ের গোপন ব্যথা আছে যত,
করে করুক কানাঘুষা লোকে, লুটোপুটি হবে হেসে–
তোমার চোখের উজ্জ্বল জ্যোতি যেন মন্ত্র দিলো শেষে।

ভয় পেওনা প্রিয়া–
একান্তে যে কুটির আছে- ক্ষুদ্র জনপদের গায়,
উদাহৃদয় নদীর ধারের পথ আকাঁ বাঁকা,
চারিধারে বনজাত ঝাউ তমালের শাখা।
খুব একটা মানুষের সমাগম নেই বলা যায়-
কি জানি কে এই সময়ে সঙ্গীতের সুর বাজায়!
পথের পথিক পারবে বলতে লাগালো সুর;
কে দিলো তারে এ ব্যথার সুর তালে ছন্দে যে ভরপুর;
এ সুরের প্রধান নাই, নাই কোন অট্টালিকা বাদ্যযন্ত্র কি আছে,
আছে একটি ভক্তিমান থাকে দেবীর কাছে!

ওই নদীটির তীর–
বনজাত তমালের শাখে ঘনিয়ে আসে রাত গভীর;
মুক্ত থাকুক দ্বার, তুমি কি পাবে ভয়!
ভয় করোনা প্রিয়া আমার- পাহাড়া দেয় যে বেতনের বিনিময়!
দখিনের বাতাস ঢুকছে কুটিরে থরথর কাঁপছে প্রদীপ খানি,
ধৈর্য্যধরো এবেলায় সুর টানি!
হাতটি আমার অবস কেনো, বুকও কাঁপছে সাথে,
অশ্রুবর্ষণ কেনো, তবে উৎকণ্ঠিত বেদনাতে।
সজ্ঞা হারিয়ে নীরবে কখন রাত বেড়ে যায়
জোনাকির আলোতে ঝিঁঝি নৃত্য করে ,তানপুরা সজ্ঞা হারায়।
পাগল পবন যদি না থামে–
সহসা বিহানে যদি বর্ষা নামে;
এবার কুটিরের ফাঁকে পবন এলে প্রদীপ যাবে নিবে!
কেউ কি আছে দুয়ার খানি টেনে দেবে!

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে – বাসু চ্যাটার্জী, ভারতের বলিউডের কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক।।।

বাসু চ্যাটার্জি ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক এবং চিত্রনাট্যকার। যদিও তিনি 1970 এবং 1980-এর দশকে মধ্যম সিনেমা বা মধ্যম রাস্তা সিনেমায় হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় এবং বাসু ভট্টাচার্যের সহকারী হিসাবে কাজ করেছিলেন। তাদের জনপ্রিয় ছবি ছিল তিসরি কসম (1966)।  বাসু চ্যাটার্জী ১৯৩০ সালে ভারতের রাজস্থান প্রদেশের অজমের শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

পেশাগত জীবন———–

বাসু চ্যাটার্জি মুম্বাই থেকে প্রকাশিত একটি সাপ্তাহিক ট্যাবলয়েড ব্লিটজে একজন চিত্রকর এবং কার্টুনিস্ট হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন।  চলচ্চিত্র পরিচালনা শুরু করার আগে, তিনি রাজ কাপুর এবং ওয়াহিদা রহমান অভিনীত তিসরি কসম ছবিতে বাসু ভট্টাচার্যের সহকারী হিসাবে কাজ করেছিলেন।  চলচ্চিত্রটি ১৯৬৬ সালে জাতীয় পুরস্কার লাভ করে। বাসু চ্যাটার্জির প্রথম পরিচালনা চলচ্চিত্র ছিল সারা আকাশ (১৯৬৯)।  এই ছবির জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান।

চলচ্চিত্রের তালিকা———
সংলাপ লেখক——
Lakhon Ki Baat, Hamari Bahu Alka, Dillagi (১৯৭৮), Khatta Meetha (১৯৭৭), রজনীগন্ধা (১৯৭৪), Piya Ka Ghar (১৯৭২)।

পরিচালক——–

Trishanku (2 December 2011), Hochheta Ki (2008),  Kuch Khatta Kuch Meetha (2007), Prateeksha (2007), Hothat Brishti (1998), Gudgudee (4 April 1997), Triyacharittar (1997), Kamla Ki Maut (1990), Sheesha (3 October 1986), Chameli Ki Shaadi (21 February 1986), Ek Ruka Hua Faisla (1986), Kirayedar (1986), Lakhon Ki Baat (1984), Pasand Apni Apni (1983), Shaukeen (1982), Hamari Bahu Alka (1982), Jeena Yahan (1981), Apne Paraye (8 August 1980), Man Pasand (1980), Ratan Deep (21 December 1979), Prem Vivah (14 September 1979), Chakravyuha (29 June 1979), Manzil (14 May 1979), বাতোঁ বাতোঁ মেঁ (13 April 1979), Do Ladke Dono Kadke (1979), Dillagi, Tumhare Liye (1978), Swami, Safed, Jhooth (1977), Priyatma (1977), Khatta Meetha (1977), Chhoti Si Baat (1976), Chitchor (1976), রজনীগন্ধা (১৯৭৪), Us Paar (1974), Piya Ka Ghar (1972), Sara Akash (1969)।

চিত্রনাট্য——-

Lakhon Ki Baat (1984),  Hamari Bahu Alka (1982), Dillagi, Khatta Meetha (1977), Rajnigandha (1974), Sara Akash (1969)।

প্রযোজক——–

Ek Ruka Hua Faisla (1986), Lakhon Ki Baat (1984), Pasand Apni Apni (1983), বাতোঁ বাতোঁ মেঁ (13 April 1979)।

বাংলা চলচ্চিত্র———

Trishanku,  হচ্ছেটা কি?, টক ঝাল মিষ্টি, চুপি চুপি
হঠাৎ বৃষ্টি।

পরিচালক (টিভি সিরিজ)——–

Rajani (1985), Darpan (1985), Ek Ruka Hua Faisla (1986), Kakkaji Kahin (1988), Byomkesh Bakshi (1993)।

সহকারী পরিচালক—–

Saraswatichandra (1968),  Teesri Kasam (1966)।

পুরস্কার——–

IIFA Lifetime Achievement Award(২০০৭),  Filmfare Best Screenplay Award – Kamla Ki Maut (১৯৯১), Filmfare Critics Award for Best Movie – Jeena Yahan ( ১৯৮০),  Filmfare Best Director Award – Swami (1977 film), Filmfare Best Screenplay Award – Chhoti Si Baat (১৯৭৬),  Filmfare Critics Award for Best Movie – Rajnigandha (১৯৭৫),  Filmfare Best Screenplay Award – Sara Akash (১৯৭২)।

মৃত্যু—–

০৪ জুন ২০২০সালে।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে, নবনাট্য যুগের বিশিষ্ট অভিনেতা ও গায়ক, সবিতাব্রত দত্ত।

সবিতাব্রত দত্ত একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি অভিনেতা এবং গায়ক ছিলেন।  তিনি বাংলা স্বদেশী গানের একটি নতুন ধারার প্রবর্তক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন—-
সবিতাব্রত দত্তের জন্ম ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জানুয়ারি বৃটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার ভবানীপুর-বকুলতলায়। পিতা সুরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন একজন ভালো বেহালাবাদক। প্রথাগতভাবে সঙ্গীতে তালিম না থাকলেও, পারিবারিক সাঙ্গীতিক পরিবেশে গানের সহজাত ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তিনি। ভবানীপুরের সাউথ সাবার্বণ স্কুল থেকে প্রবেশিকা, আশুতোষ কলেজ থেকে আই.এ এবং সিটি কলেজ অব কমার্স থেকে বি.কম পাশ করেন। স্কুল-কলেজ ও পাড়ার বাড়িতে গান ও অভিনয় নিয়ে মেতে থাকতেন। ছাত্রাবস্থায় রাজনীতিতে হাতেখড়ি হলেও, কোন রাজনৈতিক দলে সরাসরি যুক্ত হন নি। ১৯৩৮-৩৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার শিল্পীকলাকুশলীদের সংগঠন আর্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ধর্মঘট করলে তিনি ওই আন্দোলনের ভলান্টিয়ার-ইন-চার্জ ছিলেন। চারের দশকের প্রথমদিকে কলকাতার গণনাট্য সংঘের সঙ্গে যুক্ত হন। পরে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে শম্ভু মিত্র গণনাট্য সংঘ ছেড়ে বহুরূপী দল গঠন করলে সবিতাব্রতও ওই দলে যোগ দেন।
অভিনয় জীবন——-
এই নাট্যদলে নিয়মিত অভিনয়ের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। প্রথম দিকের নাটকগুলি ছিল- তুলসী লাহিড়ীর ‘পথিক’, ‘উলুখাগড়া’, ‘ছেঁড়া তার’, ‘স্বর্গীয় প্রহসন’ প্রভৃতি। ‘চার অধ্যায়’ নাটকের প্রথম দিকে তিনিই ছিলেন নায়ক ‘অতীন্দ্র’-এর ভূমিকায়। পঞ্চাশের দশকে তিনি বহুরূপী ছেড়ে তৈরি করেন ‘আনন্দম’ ও তারপর ‘রূপকার’ নাট্যদল। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে নাট্যমঞ্চের জন্য বেশ কিছু নাট্যসংস্থার মিলিত অভিনয় ‘রক্তকরবী’ নাটকে বিশু পাগলের ভূমিকায় তার চরিত্র চিত্রণ উচ্চ প্রশংসিত হয়েছিল। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে ‘রূপকার’ প্রযোজিত লালন ফকির নাটকে নামভূমিকায় ছিলেন তিনি। তার হিন্দু স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেন নিজের গায়িকা-স্ত্রী গীতা দত্ত এবং মুসলমান স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেন তৃপ্তি মিত্র, যিনি ব্যক্তি জীবনে ছিলেন শ্যালিকা ‘মণিদি’। ‘চলচ্চিত্তচঞ্চরী’ ও ‘ব্যাপিকা বিদায়’ পরিবেশেন তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল বাংলা নাট্যজগতে প্রভূত আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এছাড়াও ‘কালের যাত্রা’, ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে ‘নিধুবাবুর টপ্পা’, ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে ‘বিদ্রোহী নজরুল’ নাট্য প্রযোজনা ছিল তার রূপকার গোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য উপস্থাপনা। নাটকের সঙ্গে তিনি যাত্রাপালাতে অভিনয় করেছেন। রাহুমুক্ত নামের এক যাত্রাপালায় তার অভিনয় এবং গাওয়া গান সেসময় তার বিশেষ খ্যাতি এনে দেয়। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ হতে তিনি পেশাদার রঙ্গমঞ্চ অভিনয় শুরু করেন এবং অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন।
পেশাদার মঞ্চের নাটকগুলি ছিল—-
স্বীকৃতি
নামবিভ্রাট
অ্যান্টনী কবিয়াল
বেগম মেরী বিশ্বাস
কাশী বিশ্বনাথ মঞ্চে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে অক্টোবর শুরু হওয়া অ্যান্টনী কবিয়াল নাটকটি টানা প্রায় দুবছর চলেছিল। এই নাটকে নামভূমিকায় ছিলেন তিনি। অভিনেত্রী কেতকী দত্ত ছিলেন সৌদামিনীর ভূমিকায় আর ভোলা ময়রার চরিত্রে অভিনয় করেন জহর গাঙ্গুলী। চারণকবি মুকুন্দ দাস চলচ্চিত্রে নামভূমিকায় সবিতাব্রত দত্তের অভিনয় ও গান খুবই উল্লেখযোগ্য। অভিনয়ের পাশাপাশি মুকুন্দ দাসের গানকে জনপ্রিয় করার কৃতিত্ব তার। একসময় তিনি অভিনয় ছেড়ে পুরোপুরি গানের জগতে চলে আসেন। তার গান ছিল প্রথম থেকে অন্য ধরনের – অন্য জীবনের, এমনকি প্রচলিত গণসঙ্গীতের ধারা থেকেও মুক্ত। তিনি মূলত স্বদেশী গানে এক নতুন ধারার প্রবর্তন করেন। সংহতির প্রসারে, দেশপ্রেমের প্রচারে যেখানেই তাকে পাওয়া যেত তিনি স্বদেশি গান গাইতেন। তিনি ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার প্রাপ্ত এই সঙ্গীত শিল্পী “স্বদেশি গান গাইয়ে” হয়ে উঠেছিলেন। অবস্থাবিশেষে মাইকের তোয়াক্কা না করে মুক্ত দৃপ্ত কণ্ঠে গেয়ে চলতেন অসামান্য গান —
ভয় কী মরণে
চল চল ভারত সন্তান, মাতৃভূমি করে আহ্বান
দশ হাজার প্রাণ আমি যদি পেতাম
গঙ্গা সিন্ধু নর্মদা
লখনউ এর মরিস কলেজে অবশ্য কিছুদিন সঙ্গীতের শিক্ষা নিয়েছিলেন। শেষজীবনে মৃত্যুর কিছুকাল আগে পর্যন্ত দেশাত্মবোধক গানের নিয়মিত অনুষ্ঠান করতেন।
জীবনাবসান——
বাংলা থিয়েটার জগতের অন্যতম ব্যক্তিত্ব সবিতাব্রত দত্ত ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ২১শে নভেম্বর ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ায় ভুগে পরলোক গমন করেন।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

গোয়ায় অভূতপূর্ব পর্যটক আগমন : তথ্য সত্য প্রকাশের ফলে চীনের প্রচার ব্যর্থ হয়েছে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে, গোয়ার পর্যটন শিল্প সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর আখ্যান সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে, দাবি করেছে যে উৎসবের মরসুমে লোক সমাগম কমে গেছে। যাইহোক, বাস্তবতা একটি খুব ভিন্ন এবং আশাবাদী ছবি আঁকা. গোয়া অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় দর্শনার্থীদের জন্য সর্বাধিক চাওয়া-পাওয়া গন্তব্যগুলির মধ্যে একটি, পর্যটনের বিকাশ আগে কখনও হয়নি। এই ভিত্তিহীন দাবির একটি সত্য-ভিত্তিক সংশোধন এখানে।

রেকর্ড ভঙ্গকারী পর্যটকের আগমন——

গোয়া পর্যটকদের আগমনে যথেষ্ট পরিমাণে উত্থান প্রত্যক্ষ করেছে, হোটেলগুলি প্রায় পূর্ণ দখল এবং সৈকত কার্যকলাপের সাথে ব্যস্ত থাকার রিপোর্ট করেছে। প্রাণবন্ত নাইটলাইফ, সাংস্কৃতিক উত্সব এবং আদিম সৈকত দর্শকদের দলে দলে আকর্ষণ করে চলেছে৷ নির্জন অবস্থানের দাবির বিপরীতে, পর্যটকরা এখন উত্তরে কেরি এবং দক্ষিণে কানাকোনার মতো কম পরিচিত রত্নগুলি অন্বেষণ করছে, অঞ্জুনা এবং ক্যালাঙ্গুটের মতো জনপ্রিয় স্থানগুলির বাইরে প্রসারিত হচ্ছে৷


সোশ্যাল মিডিয়ার ভুল তথ্য——

ভিত্তিহীন গুজবগুলি চিনা ইকোনমিক ইনফরমেশন সেন্টারের একটি সন্দেহজনক জরিপে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে, যা সোশ্যাল মিডিয়া প্রভাবশালীদের দ্বারা পরিবর্ধিত হয়েছে। এই প্রভাবশালীরা, পছন্দ এবং মতামতের অনুসরণে, পরস্পরবিরোধী দাবি প্রচার করে। একদিকে, তারা উচ্চ ফ্লাইট এবং হোটেল খরচ পর্যটকদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছে; অন্যদিকে, তারা অভিযোগ করেছে যে গোয়ার সমুদ্র সৈকত এবং রাস্তাগুলি ফাঁকা ছিল। উভয় দাবিই ভুল এবং ডেটা দ্বারা অসমর্থিত।

অর্থনৈতিক সূচকগুলি একটি ইতিবাচক গল্প বলে–

গোয়ার সমৃদ্ধিশীল পর্যটন শিল্প তার চিত্তাকর্ষক রাজস্ব বৃদ্ধিতে প্রতিফলিত হয়। শুধুমাত্র ডিসেম্বর 2024 সালে, রাজ্য অতিরিক্ত টাকা রেকর্ড করেছে। 2023 সালের একই মাসের তুলনায় 75.51 কোটি। এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর 2024 সালের মধ্যে, মোট রাজস্ব রুপি পৌঁছেছে। 4614.77 কোটি টাকা, উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি চিহ্নিত করে আগের বছরের থেকে 365.43 কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে 9.62% GST রাজস্ব বৃদ্ধি এবং VAT সংগ্রহে 6.41% বৃদ্ধি, যা পর্যটন দ্বারা চালিত শক্তিশালী অর্থনৈতিক কার্যকলাপের ইঙ্গিত দেয়।


দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আবেদন——

গোয়া ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় ভ্রমণকারীদের জন্য একটি পছন্দসই গন্তব্য হিসাবে অব্যাহত রয়েছে। অভ্যন্তরীণ পর্যটকদের জন্য, এর সৈকত, ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং প্রাণবন্ত বাজারের অনন্য সংমিশ্রণ এটিকে অবশ্যই দেখার মতো করে তোলে। আন্তর্জাতিক দর্শনার্থীরা গোয়ার মনোমুগ্ধকর, নির্মল পরিবেশ এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতার প্রতি আকৃষ্ট হয়, প্রায়শই এটিকে ভারতের শীর্ষ গন্তব্যগুলির মধ্যে স্থান দেয়।
অতিরিক্তভাবে, রাজ্যের বিভিন্ন অফার – অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস থেকে শুরু করে সুস্থতা রিট্রিটস – নিশ্চিত করে যে গোয়া প্রতিটি ধরণের ভ্রমণকারীদের কাছে আবেদন করে, বিশ্বব্যাপী পর্যটন হটস্পট হিসাবে তার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে।

কেন ভুল তথ্য কষ্ট দেয়——

এই ধরনের বিভ্রান্তিকর আখ্যানের প্রচার রাজ্যের পর্যটন খাত এবং এর স্টেকহোল্ডারদের কঠোর পরিশ্রমকে ক্ষুন্ন করে। অযাচাইকৃত দাবির উপর ভিত্তি করে নেতিবাচক চিত্রায়ন গোয়ার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে এবং সম্ভাব্য পর্যটকদের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় সন্দেহ তৈরি করতে পারে।

উপসংহার —-

গোয়ায় পর্যটন কমে যাওয়ার ধারণা একটি মিথ ছাড়া আর কিছুই নয়। রেকর্ড-ব্রেকিং রাজস্ব, জমজমাট পর্যটন স্পট, এবং অফবিট গন্তব্যে ক্রমবর্ধমান আগ্রহের সাথে, গোয়ার পর্যটন শিল্প কেবল সমৃদ্ধ নয় বরং বিকশিত হচ্ছে। ভ্রমণকারীরা এই উপকূলীয় স্বর্গ অফার করে প্রাণবন্ত এবং বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতার অন্বেষণ এবং উপভোগ করা চালিয়ে যেতে পারে, এর স্থায়ী আবেদনে আত্মবিশ্বাসী।

 

গোয়া ভারতের পর্যটন ল্যান্ডস্কেপে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসাবে রয়ে গেছে, প্রমাণ করে যে ভিত্তিহীন দাবিগুলি এর আসল আকর্ষণ এবং সাফল্যকে ছাপিয়ে যেতে পারে না।

গোয়ায় অভূতপূর্ব পর্যটক আগমন: চীনের প্রচার ব্যর্থ হয়েছে যেহেতু তথ্য সত্য প্রকাশ করেছে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে, গোয়ার পর্যটন শিল্প সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর বর্ণনা সামাজিক মিডিয়ায় ঘুরছে, উৎসবের মরসুমে।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্বর্ণযুগের অন্যতম দাপুটে অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবী, বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক বর্ণময় চরিত্র।।।

সুপ্রিয়া দেবী (৮ জানুয়ারী, ১৯৩৩), একজন বাঙালী অভিনেত্রী, যিনি বাংলা চলচ্চিত্রে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অভিনয় করেন। তার আসল নাম কৃষ্ণা এবং ডাকনাম বেনু। উত্তম কুমারের সঙ্গে ‘বসু পরিবার’ ছবিতেই বড় পর্দায় তাঁর আত্মপ্রকাশ। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ছবিতে তাঁর অনবদ্য অভিনয় এখনও সবার হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে ৷ মোট ৪৫টি ছবিতে তিনি অভিনয় করেন
সুপ্রিয়া দেবী মায়ানমারের মিয়িত্‌কিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা বিখ্যাত আইনজীবী গোপাল চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, বার্মায় বসবাসরত অনেক ভারতীয় ভারতে চলে আসেন। সুপ্রিয়া দেবীর পরিবার শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ কলকাতায় বসবাস শুরু করেন।

সুপ্রিয়া দেবী তার বাবার নির্দেশিত দুটি নাটকে অভিনয় করে সাত বছর বয়সে তার অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেন।  তিনি ছোটবেলা থেকেই নাচের প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন, এমনকি তিনি থাকিন নু থেকে একটি পুরস্কার জিতেছিলেন।  শৈশবকাল থেকেই তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন নীহার দত্ত, যিনি গুহ ঠাকুরতা পরিবারের একজন সদস্যকে বিয়ে করেছিলেন এবং মিসেস নীহার গুহ ঠাকুরতা নামে পরিচিত ছিলেন, যিনি সেই সময়ে বার্মার একজন বিশিষ্ট সমাজসেবী ছিলেন।
১৯৪৮ সালে, ব্যানার্জি পরিবার ভালোর জন্য কলকাতায় পুনর্বাসিত হয়।  তারা ১৯৪২ সালে শরণার্থী শিবিরে বসবাস করত, যখন জাপান জোরপূর্বক বার্মা দখল করে।  যুবতী সুপ্রিয়া ও তার পরিবার জোর করে পায়ে হেঁটে কলকাতায় ফিরতে বাধ্য হয়।
কলকাতায়, তিনি তার নাচের প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখেন এবং গুরু মুরুথাপ্পান এবং পরে গুরু প্রহ্লাদ দাসের কাছ থেকে নৃত্যের প্রশিক্ষণ নেন।  সুপ্রিয়া দেবী এবং তার পরিবারের সাথে বিখ্যাত অভিনেত্রী চন্দ্রাবতী দেবীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।

১৯৫৪ সালে, সুপ্রিয়া দেবী বিশ্বনাথ চৌধুরীকে বিয়ে করেন এবং পরে তাদের একমাত্র কন্যা সোমা জন্মগ্রহণ করেন।  ১৯৫০ এর দশকের শেষের দিকে একটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র দিয়ে ফিরে আসার আগে তিনি কিছু সময়ের জন্য চলচ্চিত্র থেকে অবসর নিয়েছিলেন।
নানা চরিত্র, সে সব চরিত্রের বৈচিত্রময়তা সুপ্রিয়া দেবীকে বসিয়েছে এক ভিন্ন আসনে। এর মধ্যে বহু ছবিতেই তাঁর বিপরীতে ছিলেন বাংলা ছায়াছবির আর এক কিংবদন্তি অভিনেতা উত্তম কুমার। তাঁর সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করাটা বড় সহজ কথা নয়। কিন্তু সুনিপুণ দক্ষতায় দু’জনের এক আশ্চর্য রসায়ন তৈরি হয়েছিল পর্দায়। এএর পর তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে।  তারপর থেকে তারা বহু বছর ধরে একসাথে থাকতেন।

তাঁর চলচ্চিত্র সমূহ —–

দেবদাস, দুই পুরুষ, সন্ধ্যা রাগ, সন্ন্যাসী রাজা, যদি জানতেম, বাঘবন্দী খেলা, বনপলাশীর পদাবলী, চিরদিনের, দ্য নেমসেক, একটী নদীর নাম, শেষ ঠিকানা, মন নিয়ে, চৌরঙ্গি, তিন অধ্যায়, কাল তুমি আলেয়া, শুধু একটি বছর, হানিমুন, ইমান কল্যাণ, কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী, আপ কি পরিছাঁইয়া, দূর গগন কি ছাঁও মে, লাল পাত্থর, বেগানা, নতুন ফসল, শুন বর নারী, বসু পরিবার, সূর্য শিখা, কোমল গান্ধার, মধ্য রাতের তারা, মেঘে ঢাকা তারা। এত অজস্র চরিত্রের মধ্যেও সুপ্রিয়া চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন ঋত্বিক ঘটকের ছবি ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ও ‘কোমলগান্ধার’-এ তাঁর কাজের জন্য। বাঙালির বড় আপন এই অভিনেত্রী বেঁচে থাকবেন তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলির মধ্যেই।

তিনি ২০১১ সালে বঙ্গভূষণ পুরস্কার অর্জন করেন, যা পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ বেসামরিক উপাধি। ২০১৪ সালে বাংলা চলচ্চিত্রে তার অবদানের জন্য ভারত সরকার সুপ্রিয়া দেবীকে, ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার “পদ্মশ্রী” তে ভূষিত করেন।

২০১৮ সালের ২৬ জানুয়ারি এই মহান অভিনেত্রী কলকাতায় ৮৫ বছর বয়সে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। টলিউড ইন্ডাষ্ট্রির কাছে তিনি সকলের প্রিয় ‘বেনু দি’। কিংবদন্তি অভিনেত্রীর অভিনয় ক্যারিশ্মা নিয়ে আলোচনা নেহাতই বাতুলতা। তিনি চলে গিয়েছেন ছয় বছর হল৷ তবে সিনেপ্রেমী বাঙালির মননে তিনি থেকে যাবেন আজীবন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

হাইড্রোজেন বোমা: পারমাণবিক যুদ্ধের একটি নতুন যুগ।

7 জানুয়ারী, 1952, আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা করেছিলেন যা মানব ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করবে। জাতির উদ্দেশ্যে একটি টেলিভিশন ভাষণে, ট্রুম্যান প্রকাশ করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফলভাবে হাইড্রোজেন বোমা তৈরি করেছে, অভূতপূর্ব ধ্বংসাত্মক শক্তির একটি পারমাণবিক অস্ত্র।

পটভূমি
হাইড্রোজেন বোমা, যা থার্মোনিউক্লিয়ার বোমা নামেও পরিচিত, এটি ছিল পদার্থবিজ্ঞানী এডওয়ার্ড টেলার এবং গণিতবিদ স্ট্যানিস্লাউ উলামের মস্তিষ্কপ্রসূত। দুই বিজ্ঞানী 1940 এর দশকের শেষের দিক থেকে এই প্রকল্পে কাজ করছিলেন এবং তাদের নকশাটি ছিল পারমাণবিক সংমিশ্রণের নীতির উপর ভিত্তি করে।

একটি পারমাণবিক সংমিশ্রণ বিক্রিয়ায়, পারমাণবিক নিউক্লিয়াস একত্রিত হয়ে একটি ভারী নিউক্লিয়াস তৈরি করে, প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে শক্তি মুক্ত করে। হাইড্রোজেন বোমা হাইড্রোজেনের আইসোটোপের মধ্যে একটি ফিউশন বিক্রিয়া ব্যবহার করেছিল, যা 1945 সালে হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে ফেলা পারমাণবিক বোমার চেয়ে অনেক গুণ বেশি শক্তি নির্গত করেছিল।

হাইড্রোজেন বোমার বিকাশ
হাইড্রোজেন বোমার বিকাশ একটি জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং প্রক্রিয়া ছিল। প্রকল্পটির জন্য শত শত বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীর সহযোগিতা প্রয়োজন, যারা জড়িত প্রযুক্তিগত অসুবিধাগুলি কাটিয়ে উঠতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিল।

প্রধান চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটি ছিল একটি উপযুক্ত ফিউশন জ্বালানীর বিকাশ। বিজ্ঞানীরা অবশেষে ডিউটেরিয়াম এবং ট্রিটিয়ামের মিশ্রণে স্থির হয়েছিলেন, যা প্রতিক্রিয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত আইসোটোপ হিসাবে পাওয়া গেছে।

আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এমন একটি ডিভাইসের বিকাশ যা ফিউশন প্রতিক্রিয়া ধারণ করতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বিজ্ঞানীরা শেষ পর্যন্ত “টেলার-উলাম কনফিগারেশন” নামে পরিচিত একটি যন্ত্র তৈরি করেছিলেন, যা ফিউশন জ্বালানীকে সংকুচিত এবং গরম করতে একটি ফিশন বোমা ব্যবহার করেছিল।

ঘোষণা
7 জানুয়ারী, 1952-এ, রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান জাতির উদ্দেশ্যে একটি টেলিভিশন ভাষণে হাইড্রোজেন বোমার সফল বিকাশের ঘোষণা দেন। ঘোষণাটি বিস্ময় এবং ভয়ের মিশ্রণের সাথে দেখা হয়েছিল, কারণ আমেরিকানরা তাদের দেশ এখন যে ধ্বংসাত্মক শক্তির অধিকারী তা বুঝতে পেরেছিল।

প্রভাব এবং পরিণতি
হাইড্রোজেন বোমার বিকাশের সুদূরপ্রসারী প্রভাব এবং ফলাফল ছিল। এটি পারমাণবিক যুদ্ধের একটি নতুন যুগের সূচনা হিসাবে চিহ্নিত করেছে, যেখানে দাগ আগের চেয়ে বেশি ছিল।

হাইড্রোজেন বোমা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন, যেটি তার নিজস্ব হাইড্রোজেন বোমা প্রকল্পে কাজ করছিল, আমেরিকান ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় তাদের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করেছিল।

হাইড্রোজেন বোমার বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক ও নৈতিক প্রশ্নও উত্থাপন করেছে। অনেক আমেরিকান এই ধরনের ধ্বংসাত্মক অস্ত্র তৈরির নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে বিতর্ক গতি পেতে শুরু করে।

উপসংহার
1952 সালের 7 জানুয়ারী হাইড্রোজেন বোমার ঘোষণা মানব ইতিহাসের একটি বাঁক পয়েন্ট হিসাবে চিহ্নিত। এটি পারমাণবিক যুদ্ধের একটি নতুন যুগের সূচনা হিসাবে চিহ্নিত করেছে এবং এই ধরনের ধ্বংসাত্মক অস্ত্র তৈরির নৈতিকতা ও নৈতিকতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।

আজ, হাইড্রোজেন বোমাটি পারমাণবিক যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক শক্তির একটি শক্তিশালী প্রতীক। যেহেতু বিশ্ব পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং অপ্রসারণের চ্যালেঞ্জগুলির সাথে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, হাইড্রোজেন বোমার উত্তরাধিকার আরও শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ বিশ্বের দিকে কাজ করার গুরুত্বের অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে।

টাইমলাইন
– 1940-এর দশক: পদার্থবিদ এডওয়ার্ড টেলার এবং গণিতবিদ স্ট্যানিসলা উলাম হাইড্রোজেন বোমা প্রকল্পে কাজ শুরু করেন।
– 1950: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার হাইড্রোজেন বোমার বিকাশের অনুমোদন দেয়।
– 7 জানুয়ারী, 1952: রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান হাইড্রোজেন বোমার সফল বিকাশের ঘোষণা দেন।
– 1952: আমেরিকান ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন তার নিজস্ব হাইড্রোজেন বোমা প্রকল্পকে ত্বরান্বিত করে।
– 1960: পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে বিতর্ক গতি পেতে শুরু করে।
– বর্তমান দিন: হাইড্রোজেন বোমাটি পারমাণবিক যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক শক্তির একটি শক্তিশালী প্রতীক হিসাবে রয়ে গেছে।

মূল পরিসংখ্যান
– এডওয়ার্ড টেলার: পদার্থবিদ যিনি হাইড্রোজেন বোমার বিকাশে মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন।
– স্ট্যানিসলা উলাম: গণিতবিদ যিনি এডওয়ার্ড টেলারের সাথে হাইড্রোজেন বোমা প্রকল্পে কাজ করেছিলেন।
– হ্যারি ট্রুম্যান: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি যিনি 7 জানুয়ারী, 1952 সালে হাইড্রোজেন বোমার সফল বিকাশের ঘোষণা করেছিলেন।
– জোসেফ স্ট্যালিন: সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা যিনি আমেরিকান ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় তার দেশের হাইড্রোজেন বোমা প্রকল্পকে ত্বরান্বিত করেছিলেন।

সূত্র-

সূত্র
– স্ট্যানলি এ ব্লুমবার্গ এবং গুইন ওয়েন্সের “দ্য হাইড্রোজেন বোমা”
– রিচার্ড রোডসের “দ্য মেকিং অফ দ্য অ্যাটমিক বোমা”
– জন লুইস গ্যাডিসের “দ্য কোল্ড ওয়ার: এ নিউ হিস্ট্রি”

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

গ্যালাঙ্গো বিশ্ববিদ্যালয়: 1450 সাল থেকে জ্ঞানের আলোকবর্তিকা।।

7 জানুয়ারী, 1450 সালে প্রতিষ্ঠিত গ্যালাঙ্গো বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বের উচ্চতর শিক্ষার প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি হওয়ার গৌরব ধারণ করে। ইতালির প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত, এই শ্রদ্ধেয় বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানের আলোকবর্তিকা, বহু শতাব্দী ধরে দূর-দূরান্ত থেকে পণ্ডিত এবং ছাত্রদের আকর্ষণ করে।

*প্রাথমিক বছর*
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রারম্ভিক বছরগুলি শাস্ত্রীয় অধ্যয়ন, দর্শন এবং ধর্মতত্ত্বের উপর ফোকাস সহ মানবিকতার উপর একটি শক্তিশালী জোর দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, একদল দূরদর্শী পণ্ডিত, শিক্ষার একটি কেন্দ্র তৈরি করতে চেয়েছিলেন যা ইউরোপের মহান বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রতিদ্বন্দ্বী হবে। সময়ের সাথে সাথে, গ্যালাঙ্গো ইউনিভার্সিটি আইন, চিকিৎসা এবং বিজ্ঞান সহ বিস্তৃত শাখার অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিবর্তিত হয়েছে।

*একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্ব*
তার দীর্ঘ ইতিহাস জুড়ে, গ্যালাঙ্গো বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্বের সমার্থক হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের অনুষদ তাদের সময়ের সবচেয়ে বিশিষ্ট পণ্ডিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছে, এবং এর প্রাক্তন ছাত্ররা তাদের নির্বাচিত ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক প্রোগ্রামগুলি সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, সৃজনশীলতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক কৌতূহলকে উত্সাহিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং এর গবেষণা উদ্যোগগুলি অসংখ্য অগ্রগতি এবং উদ্ভাবনের দিকে পরিচালিত করেছে।

*ক্যাম্পাস এবং স্থাপত্য*
গ্যালাঙ্গো ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস স্থাপত্য ও শৈল্পিক সম্পদের ভান্ডার। প্রতিষ্ঠানের ঐতিহাসিক ভবন, যার মধ্যে অনেকগুলি রেনেসাঁর সময়কার, জটিল পাথরের খোদাই, অলঙ্কৃত ফ্রেস্কো এবং অত্যাশ্চর্য দাগযুক্ত কাঁচের জানালা দিয়ে সজ্জিত। ক্যাম্পাসটি অত্যাধুনিক গবেষণাগার, গ্রন্থাগার এবং বিনোদন কেন্দ্র সহ বেশ কয়েকটি আধুনিক সুবিধার আবাসস্থল।

*ছাত্র জীবন*
গ্যালাঙ্গো ইউনিভার্সিটি উচ্চ শিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়েও বেশি কিছু – এটি একটি সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় ছাত্রজীবন সহ পণ্ডিতদের একটি প্রাণবন্ত সম্প্রদায়। বিশ্ববিদ্যালয়টি ক্রীড়া দল, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং স্বেচ্ছাসেবক গোষ্ঠী সহ পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যকলাপের বিস্তৃত পরিসর অফার করে। শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপ, বিদেশে অধ্যয়ন প্রোগ্রাম এবং গবেষণা প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে পারে, তাদের মূল্যবান অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা প্রদান করে।

*উত্তরাধিকার এবং প্রভাব*
বিশ্বের উপর গ্যালাঙ্গো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাব বাড়াবাড়ি করা যাবে না। প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ছাত্ররা চিকিৎসা, আইন, রাজনীতি এবং শিল্পকলার মতো ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা উদ্যোগ বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনকে উন্নত করে অসংখ্য অগ্রগতি এবং উদ্ভাবনের দিকে পরিচালিত করেছে। একাডেমিক উৎকর্ষ, বুদ্ধিবৃত্তিক কৌতূহল এবং সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততার প্রতি গ্যালাঙ্গো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিশ্রুতি এটিকে বিশ্বজুড়ে উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য একটি মডেল করে তুলেছে।

*উপসংহার*
গ্যালাঙ্গো ইউনিভার্সিটির সমৃদ্ধ ইতিহাস, একাডেমিক উৎকর্ষতা, এবং সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততার প্রতিশ্রুতি এটিকে সত্যিই একটি অনন্য এবং বিশেষ প্রতিষ্ঠান করে তুলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি বিকশিত এবং বৃদ্ধির সাথে সাথে, এটি তার প্রতিষ্ঠাতা নীতির প্রতি সত্য রয়ে গেছে, শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের শিক্ষা প্রদান করে এবং বিশ্বে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে তাদের প্রস্তুত করে। আপনি একজন সম্ভাব্য ছাত্র, একজন পণ্ডিত, বা সাধারণভাবে জ্ঞানের মূল্যের প্রশংসা করেন এমন কেউ, গ্যালাঙ্গো বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি জায়গা যা আপনার জীবনকে অনুপ্রাণিত করবে এবং সমৃদ্ধ করবে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

বিংশ শতকের প্রথমার্ধে একাধারে ইতিহাস ও অর্থনীতির পণ্ডিত অন্যদিকে বৈষ্ণব সাহিত্যের এক অন্যতম লেখক ও কবি বিমানবিহারী মজুমদার।।।

বৈষ্ণব সাহিত্যের এক অন্যতম লেখক ও কবি ভাগবতরত্ন বিমানবিহারী মজুমদার  ছিলেন বিংশ শতকের প্রথমার্ধে একাধারে ইতিহাস ও অর্থনীতির পণ্ডিত ।

 

জন্ম ও শিক্ষাজীবন———‐—-

 

বিমান বিহারী মজুমদার ১৯০০ সালের ৭ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের নদীয়া জেলার কুমারখালীতে জন্মগ্রহণ করেন।  পিতার নাম শ্রীশচন্দ্র মজুমদার।  বিমান বিহারীর স্কুল পড়াশুনা নবদ্বীপে।  ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে নবদ্বীপ হিন্দু স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজে ভর্তি হন।  এখান থেকে তিনি ইতিহাসে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন এবং বিএ পাস করেন।  ১৯২৩ সালে, তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে M.A. পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় হন এবং পরে অর্থনীতিতে M.A. পাশ করেন।

 

কর্মজীবন—————-

 

বিমান বিহারী তখন পাটনার বি.এন. কলেজে ইতিহাস ও অর্থনীতি পড়ানোর মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন।  এখানে অধ্যাপনার সময় তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাজা রামমোহন রায়ের আমল থেকে দয়ানন্দের সময়কাল পর্যন্ত রাজনৈতিক চিন্তার ইতিহাস এবং এর সহায়ক বই লেখেন এবং ১৯৩২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি লাভ করেন।  ১৯৩৭ সালে তিনি বাংলায় ‘চৈতন্যচরিতের উপাদান’ গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেন এবং পিএইচডি হন।  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।  বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বাংলায় লেখা তাঁর গবেষণাপত্রই প্রথম এই সম্মান লাভ করে।  তার কর্মজীবনে, বিমানবিহারী ইতিহাস ও অর্থনীতিতে পাণ্ডিত্য এবং প্রতিষ্ঠা অর্জন করেছিলেন, তবে বৈষ্ণব সাহিত্যের উপর মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছিলেন এবং সময়ের সাথে সাথে বৈষ্ণব সমাজের সর্বোচ্চ সম্মানিত ব্যক্তিত্বের অবস্থান অর্জন করেছিলেন এবং ‘ভাগবতরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত হন।

 

কর্ম জীবন—

 

জীবনের বেশিরভাগ সময় পাটনায় কাটিয়েছেন।  ১৯৪৫ সালে, হরপ্রসাদ দাস বিহারের আরাতে অবস্থিত জৈন কলেজের অধ্যক্ষ হন।  ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ-পরিদর্শক নিযুক্ত হন এবং ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন।  তিনি ১৯৬৪ সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে UGC গবেষণা অধ্যাপক ছিলেন।  বিমানবিহারী বৈষ্ণব সাহিত্য ব্যতীত অন্যান্য বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেন।

 

রচনাবলি——-

 

History of Political Thought: From Rammohun to Dayananda: 1821–84,, History of Religious Reformatinion in India in the Nineteenth century,  ভারতের শাসন পদ্ধতি, শ্ৰীশ্ৰীক্ষণদাগীতচিন্তামণি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, চৈতন্যচরিতের উপাদান, চণ্ডীদাসের পদাবলী, ষোড়শ শতাব্দীর পদাবলী সাহিত্য, পাঁচশত বৎসরের পদাবলী, জ্ঞানদাস ও তাঁহার পদাবলী, রবীন্দ্রসাহিত্যে পদাবলীর স্থান, গোবিন্দদাসের পদাবলী ও তাঁহার যুগ।

 

১৮ নভেম্বর, ১৯৬৯ সালে তিনি প্রয়াত হন।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

কিংবদন্তি প্রশান্ত ভট্টাচার্য যাত্রা দুনিয়ার বিখ্যাত সুরকার ও গায়ক – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

প্রশান্ত ভট্টাচার্য যাত্রা দুনিয়ার বিখ্যাত সুরকার ও গায়ক। একসময় শান্তিগোপালের বহু যাত্রাপালার গান তৈরি করেছিলেন। ৬০ ও ৭০-এর দশকে শান্তিগোপালের কিছু বিখ্যাত যাত্রাপালা, যেমন লেনিন, হিটলার, নেতাজি সুভাষচন্দ্র’-এর জন্য গান তৈরি করেছিলেন।

 

গতমাস থেকেই বারবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে তাঁর। মাঝে সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরেছিলেন। কিন্তু আবারও রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। ধরা পড়েছিল ইন্টারটিশিয়াল লাং ডিজিজ বা আইএলডি-র মতো রোগ। ফুসফুসেও ছড়িয়ে পড়েছিল সংক্রমণ। ভেন্টিলেশনে ভর্তি হতে হয়েছিল তাঁকে। শেষরক্ষা হল না আর। আজ সকালেই মৃত্যু হল সঙ্গীতশিল্পী (Music Artist) প্রশান্ত ভট্টাচার্যের (Prasanta Bhattacharya)। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। একরকম লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকেই বিদায় নিলেন তিনি। অথচ একসময় তাঁর কণ্ঠ ছড়িয়ে পড়েছিল সীমান্ত পেরিয়ে দুই বাংলাতেই। অসমের বাঙালিদের কাছেও পৌঁছে গিয়েছিলেন যাত্রাদলের সুবাদে। আর রেডিওয় তাঁর গান শোনার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতেন শ্রোতারা। তবু মৃত্যুর আগে যোগ্য সম্মান পেলেন না প্রশান্ত ভট্টাচার্য।
সময়টা ছিল সত্তরের দশক। বাংলাজুড়ে তখন উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি। একদিকে নকশাল আন্দোলন, অন্যদিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। আগুন ঝরানো সেই দিনগুলোতে নিজের সৃষ্টিকে সঙ্গী করেই লড়াইয়ের মাঠে নেমে পড়েছিলেন প্রশান্ত। বাংলার গ্রামেগঞ্জে পৌঁছে গিয়েছেন যাত্রার দল নিয়ে। সিনেমা বা নাটক মানুষ দেখতেন, আজও দেখেন। কিন্তু যাত্রা ছিল সবসময়ই শোনার বস্তু। সেখানে গানের ভূমিকাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে নতুন ধারার যে যাত্রাপালার জন্ম হয়েছিল, তাতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিল গণসঙ্গীত। সরাসরি রাজনৈতিক বক্তব্যকে পৌঁছে দেওয়াই ছিল সেইসব যাত্রার উদ্দেশ্য।

এমনই এক কিংবদন্তি যাত্রাপালা ছিল তরুণ অপেরার ‘লেনিন’। ২ হাজার রাত চলেছিল সেই যাত্রার অভিনয়। শুরুতে সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন স্বয়ং হেমাঙ্গ বিশ্বাস। তারপর সেই দায়িত্ব এসে পড়ে প্রশান্ত ভট্টাচার্যের কাঁধে। কাজটা সহজ ছিল না। কিন্তু প্রশান্ত সেই দায়িত্ব পালন করেছেন গুরুপ্রণামের মতো করেই। আর হেমাঙ্গ বিশ্বাসও প্রশংসা করেছিলেন তাঁর কাজের। অবশ্য শুধু যে যাত্রার আসর মাতিয়ে রাখতেন, তা তো নয়। অল ইন্ডিয়া রেডিওর অন্যতম কণ্ঠ ছিলেন প্রশান্ত। ‘অনুরোধের আসর’ অনুষ্ঠান তাঁকে বাড়তি জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল।

রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে শুরু করে লোকগান, কোথাও একটুও থমকাতে হত না তাঁকে। গানের শিক্ষার শুরুটা অবশ্য হয়েছিল বাড়ি থেকেই। পরে নানা কিংবদন্তি শিক্ষকের সংস্পর্শে এসেছেন। পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, সুচিত্রা মিত্রের কাছে সঙ্গীতের পাঠ নিয়েছিলেন দীর্ঘদিন। পরবর্তীকালে খোদ রবীন্দ্রনাথের ভাইপো সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে গান শিখেছেন। শুধুই রবীন্দ্রনাথের ভাইপো নন, সৌমেন্দ্রনাথ ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিপ্রাপ্ত মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক। তাঁর রাজনৈতিক মতের ছাপও তাই পড়েছিল প্রশান্তর মধ্যে।

এভাবে একটু একটু করে সঙ্গীতকেই পেশা হিসাবে বেছে নিচ্ছিলেন প্রশান্ত। এর মধ্যে জামশেদপুরে অল ইন্ডিয়া রেডিওর শাখা খোলা হলে সেখানে প্রথম অনুষ্ঠানও করেন প্রশান্ত ভট্টাচার্য। আর এসবের মধ্যেই এসে পড়ে সত্তরের দশক। গ্রামে গ্রামে ঘুরে বামপন্থী আদর্শের কথা যেমন প্রচার করেছেন, তেমনই যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামেও। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের শিল্পী আব্দুল জব্বর, আপ্পেল মাহমুদের সঙ্গে মিলে কনসার্টের আয়োজন করেন তিনি। আর সেই কনসার্ট থেকে উপার্জিত সমস্ত অর্থ পাঠিয়ে দেন বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে।

 

সময়ের নিয়মেই যেন এরপর হঠাৎ হারিয়ে গেলেন প্রশান্ত। ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছিল তাঁর শিল্পধারাও। যাত্রাপালার জনপ্রিয়তাকে গ্রাস করল টেলিভিশন। আর রেডিওয় একই শিল্পীর গলায় পরপর নানা ধরনের গান শোনার অভ্যাসও হারালেন শ্রোতারা। বরং দফায় দফায় রেকর্ড বদলে দেওয়াই দস্তুর হয়ে উঠল। আর এখন তো গান শোনার জন্য রেডিওর অপেক্ষাও করতে হয় না। তবে সংস্কৃতি জগতের ইতিহাসে সেই সময় সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ সেই সময়ে সংস্কৃতি জগতের সঙ্গে মানুষের প্রত্যক্ষ আদানপ্রদানের সম্পর্কটিও। প্রশান্ত ভট্টাচার্য ছিলেন সেই হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসেরই প্রতিনিধি। বর্তমান সংস্কৃতি জগত হয়তো তাঁর প্রয়াণে খুব বেশি শোকপ্রকাশ করবে না। কিন্তু ইতিহাস যে অনেকটাই রিক্ত হল, সে-কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

।। সংগৃহীত।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

আঙুরবালা, বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী ও মঞ্চাভিনেত্রী – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

আঙুরবালা (১৯ অগস্ট, ১৯০০ – ৭ জানুয়ারি, ১৯৮৪) ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কণ্ঠশিল্পী ও মঞ্চাভিনেত্রী। নজরুলগীতিতেও তার সমধিক প্রসিদ্ধি ছিল।

 

জন্ম ও পরিবার—–

 

তার পিতৃদত্ত নাম ছিল প্রভাবতী দেবী। তার জন্ম কলকাতার কাশিপুরে। পিতার নাম বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের নিবাস ছিল বর্ধমানের ইন্দাসে।

 

শিক্ষাজীবন—–

 

মেধাবী ছাত্রী হিসেবে স্কুলে ছাত্রিবৃত্তি পরীক্ষায় জলপানি লাভ। সঙ্গীত প্রতিভা তার সহজাত। সুকণ্ঠের অধিকারী হওয়ায় শৈশবেই সঙ্গীত সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। সাত বৎসর বয়সে পিতৃবন্ধু অমূল্য মজুমদারের কাছে গানে দীক্ষা। খেয়াল, ঠুংরি, দাদরা ও গজলে একাধিক গুণী ওস্তাদের কাছে তামিল গ্রহণ। কিশোরী বয়সেই গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে গানের রেকর্ড প্রকাশ। তার প্রথম গানের রেকর্ড- ‘ বাঁধ না তরীখানি আমার এ নদীকূলে’। তার সঙ্গীত জীবনের উপর উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন জিৎপ্রসাদ, রামপ্রসাদ মিত্র, ঈষাণ ঠাকুর, জমীরুদ্দিন খাঁ এবং কাজী নজরুল ইসলাম। ঈষাণ ঠাকুরের কাছে কীর্তন, জমীরুদ্দিন খাঁর কাছে গজল ও দাদরা এবং কাজী নজরুল ইসলামের কাছে নজরুল গীতি শিখেন। অজস্র বাংলা, হিন্দি ও উর্দু গানে কণ্ঠদান করেন। তার গাওয়া রেকর্ডের সংখ্যা আনুমানিক পাঁচশত। তার রবীন্দ্র সংগীতের রেকর্ডও আছে। অভিনেত্রী হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন। মিনার্ভা থিয়েটারের সংগে জড়িত থেকে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেন। তার অভিনীত একটি ছবির পরিচালক ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। সংগীত শিল্পী হিসাবে বহু রাজা-মহারাজার দ্বারা আমন্ত্রিত হয়েছেন।

 

সম্মাননা——

 

১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিলিট এবং ভারত সরকারের সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেছিলেন।

 

মৃত্যু—–

 

তিনি ৭ জানুয়ারি ১৯৮৪ সালে মারা যান।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This