Categories
রিভিউ

আজ ১ মে, ইতিহাসের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নেব ইতিহাসের এই দিনে বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু, দিনসহ ঘটে যাওয়া ঘটনা।।।

আজ ০১ মে। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু দিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।
দিবস—–
(ক) আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস/মে দিবস।

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৮৫২ – সান্তিয়াগো রামোন ই কাহাল, স্পেনীয় রোগবিজ্ঞানী, কলাস্থানবিদ, স্নায়ুবিদ এবং চিকিৎসাশাস্ত্রে ১৯০৬ সালে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী।  .
১৮৮১ – পিয়ের তাঁয়ার দ্য শারদাঁ, ফরাসি দার্শনিক ও জীবাশ্মবিদ।

১৮৯৮ – মাহবুব-উল আলম, বাংলাদেশি কথাসাহিত্যিক, সৈনিক এবং ইতিহাসবিদ।
১৯০৯ – ইয়ানিস রিটস্‌, গ্রিক কবি ও নাট্যকার।
১৯১৩ – বলরাজ সাহনি, খ্যাতিমান ভারতীয় চলচ্চিত্র ও মঞ্চ অভিনেতা।

১৯১৬ – গ্লেন ফোর্ড, কানাডিয়ান-আমেরিকান অভিনেতা এবং প্রযোজক।
১৯১৯ – (ক) মোহাম্মাদ করিম লামরানি, মরক্কোর ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও ৭ম প্রধানমন্ত্রী।
(খ) ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সেরা সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার মান্না দে।
(গ) ড্যান ওহার্লিহি, আইরিশ-আমেরিকান অভিনেতা।
১৯২৩ – জোসেফ হেলার, মার্কিন ঔপন্যাসিক।
১৯২৫ – সরদার ফজলুল করিম, বাংলাদেশের বিশিষ্ট দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, প্রবন্ধকার।
১৯২৯ – সনি রামাদিন, ত্রিনিদাদিয়ান ক্রিকেটার।
১৯৩২ – তবিবর রহমান সরদার, বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ।
১৯৪৬ – জন ওয়, হংকং পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার।
১৯৫১ – গর্ডন গ্রীনিজ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটার।
১৯৫৪ – মোহাম্মদ কায়কোবাদ, বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ
১৯৫৭ – রিক ডার্লিং, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার।
১৯৬৮ – অলিভার বিয়েরহফ, জার্মান ফুটবল খেলোয়াড়।
১৯৬৯ – ওয়েস অ্যান্ডারসন, মার্কিন পরিচালক ও লেখক।
১৯৭২ – জুলি বেঞ্জ, আমেরিকান অভিনেত্রী।
১৯৭৩ – অলিভার নেউভিলে, জার্মান ফুটবলার।
১৯৭৫ – নিনা হোসেন, ইংরেজ সাংবাদিক।
১৯৮১ – আলেকজান্ডার হ্লেব, বেলারুশীয় ফুটবল খেলোয়াড়।
১৯৮৬ – শাহরিয়ার নাফীস আহমেদ, সাবেক বাংলাদেশী ক্রিকেটার।
১৯৮৭ – লিওনার্দো বনুচি, ইতালিয়ান ফুটবল খেলোয়াড়।

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

১৮৫১ – রানী ভিক্টোরিয়া লন্ডনে গ্রেট এক্সিবিশনের উদ্বোধন করেন।
১৮৫২ – ফিলিপাইনে ফিলিপিনো পেসো মুদ্রা হিসেবে বাজারে আসে।
১৮৬৩ – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধ: চ্যান্সেলরসভিলের যুদ্ধ শুরু হয়।
১৮৬৫ – ব্রাজিল সাম্রাজ্য, আর্জেন্টিনা, এবং উরুগুয়ে ট্রিপল অ্যালায়েন্স চুক্তি স্বাক্ষর করে।
১৮৬৮ – সালের এই দিনে হ্যাম্পটন ইনস্টিটিউট খুলে দেওয়া হয়।
১৮৬৯ – প্যারিসে মিউজিক হল ফলিয়েস বার্গে চালু হয়।
১৮৭৫ – ১৮৭৩ সালে আগুনে পুড়ে যাবার পর পুনরায় আলেক্সান্দ্রা প্যালেস খুলে দেওয়া হয়।
১৮৭৫ – কলকাতার আলীপুর চিড়িয়াখানা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
১৮৮৪ – আট ঘণ্টা কর্মদিবস আদায়ের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রচারণা শুরু হয়।
১৮৮৪ – মোসেস ফ্লিটউড ওয়াকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পেশাদার বেসবল খেলায় অংশগ্রহণ করেন।
১৮৮৫ – ব্যবসার জন্য মূল শিকাগো বোর্ড অফ ট্রেড বিল্ডিং খুলে দেওয়া হয়।
১৮৮৬ – যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে-মার্কেটে পুলিশ বিক্ষোভরত শ্রমিকদের উপর গুলি চালালে ব্যাপক প্রাণহানী হয়।
১৮৯০ – খ্রিস্টাব্দের এই দিন থেকে আন্তর্জাতিক মে দিবস পালন শুরু।
১৮৯১ – লন্ডন-প্যারিস টেলিফোন যোগাযোগ শুরু হয়।
১৮৯৩ – শিকাগোতে ওয়ার্ল্ড’স কলাম্বিয়ান এক্সপোজিশন শুরু হয়।
১৮৯৪ – কক্সে’স আর্মি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বড় ধরনের প্রতিবাদ মিছিল ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে পদার্পণ করে।
১৮৯৭ – স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন।
১৮৯৮ – স্প্যানিশ-আমেরিকান গৃহযুদ্ধ: ম্যানিলা বে’র যুদ্ধ: প্রথম যুদ্ধে ইউনাইটেড স্টেটস নেভি প্রশান্ত মহাসাগরে স্পেনের নৌবহর ধ্বংস করে দেয়।
১৯০০ – ইউটা’র স্কোফিল্ডে স্কোফিল্ড খনি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়, এবং ২০০-এর বেশি মানুষ মারা যায়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে পঞ্চম বৃহত্তম খনি দুর্ঘটনা।
১৯০১ – নিউ ইয়র্কের বাফেলোতে প্যান-আমেরিকান এক্সপোজিশন শুরু হয়।
১৯১৩ – বিখ্যাত শিশু পত্রিকা সন্দেশ প্রকাশিত হয়।
১৯৪০ – যুদ্ধের কারণে ১৯৪০ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৪১ – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ: জার্মান বাহিনী লিবিয়ার টুব্রাকে বড় ধরনের হামলা চালায়।
১৯৪৫ – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ: একজন জার্মান সংবাদপাঠক আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন যে, আডলফ হিটলার রাইখ চ্যান্সেলরি’র নিয়ন্ত্রণকর্তার ভূমিকায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন এবং জার্মানির জন্য তার শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত বোলহেশিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়েছেন।
১৯৪৫ – যুগোশ্লাভ সামরিক বাহিনী কর্তৃক ত্রিয়েস্ত দখলমুক্ত হয়।
১৯৪৬ – অস্ট্রেলীয় আদিবাসীদের ৩ বছর ব্যাপী পিলবারা ধর্মঘট শুরু হয়।
১৯৪৬ – প্যারিস পিস কনফারেন্স শেষ হয়, এবং সিদ্ধান্ত হয় যে, ইতালিকে ডোডিকানিজ দ্বীপপুঞ্জকে গ্রিসের কাছে
১৯৬১ – কিউবার প্রধানমন্ত্রী ফিদেল কাস্ত্রো কিউবাকে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন ও নির্বাচন বাতিল করেন।
১৯৬৫ – আরওসি ও পিআরসি’র মধ্যে ডোং-ইনের নৌযুদ্ধ শুরু হয়।
১৯৭০ – ভিয়েতনামে ইউনাইটেড স্টেটস এয়ার ফোর্স শত্রুবাহিনীকে নিরপেক্ষ রাষ্ট্র কম্বোডিয়ার দিকে ঠেলে দিবে—মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সনের এরকম ঘোষণার পর ওয়াশিংটনের সিয়াটলে বিক্ষোভ শুরু হয়।
১৯৭১ – যুক্তরাষ্ট্রে রেলযাত্রীদের সেবা দিতে এমট্র্যাক প্রতিষ্ঠান চালু হয়।
১৯৭২ – বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় কোস্টারিকা।
১৯৭৭ – শ্রমিক দিবস উদ্‌যাপনের সময় ইস্তানবুলের টাকসিম স্কয়ারে এক হামলায় ৩৬ জন মানুষ নিহত হন।

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

১৭০০ – জন ড্রাইডেন, সপ্তদশ শতাব্দীর ইংরেজ লেখক, কবি ও নাট্যকার।
১৮৫৯ – ড. জন ওয়াকার, দেশলাইয়ের উদ্ভাবক।
১৮৭৩ – ডেভিড লিভিংস্টোন, স্কটস বংশোদ্ভূত ইংরেজ মিশনারি ও পর্যটক।
১৯০৪ – আন্তনিন দ্ভরাক, চেক সুরকার।
১৯০৮ – প্রফুল্ল চাকী, ভারতীয় বিপ্লবীর আত্মবলিদান করেন।
১৯৪৫ – জোসেফ গোয়েবলস, নাৎসি প্রচারমন্ত্রী।
১৯৭৩ – আসগের জর্ন, ডেনিশ চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর।
১৯৭৮ – অরাম খাচাটুরিয়ান, জর্জিয়ান বংশোদ্ভূত আর্মেনিয় সুরকার ও কন্ডাকটর।
১৯৮০ – শোভা, ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।
১৯৯৩ – পিয়ের‌ বেরেগোভোয়া, ফরাসি প্রধানমন্ত্রী।
১৯৯৩ – রানাসিংহে প্রেমাদাসা, শ্রীলংকান রাজনীতিবিদ ও ৩য় প্রেসিডেন্ট।
১৯৯৪ – তৃতীয় বারের মতো ফর্মুলা ওয়ান জয়ী এয়ারটন সেনা, ইমোলাতে স্যান মারিনো গ্র্যান্ড প্রিক্সে দূর্ঘটনায় নিহত হন।
১৯৯৮ – কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত, বিশিষ্ট বাঙালি কবি।
২০০০ – স্টিভ রিভস, আমেরিকান বডি বিল্ডার এবং অভিনেতা।
২০০০ – বিদ্যুৎ গাঙ্গুলী, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী।
২০১১ – হেনরি কুপার, ইংরেজ মুষ্টিযোদ্ধা।
২০১৫ – অমিতাভ চৌধুরী, বিশিষ্ট বাঙালী সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
২০১৮ – অশোক মিত্র প্রখ্যাত ভারতীয় অর্থনীতিবিদ বামপন্থী লেখক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রফুল্ল চাকির অবদান : এক অমর বীরের গল্প।।।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়। এই অন্দোলনে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে প্রফুল্ল চাকী প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।

প্রফুল্ল চাকী ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।
প্রফুল্ল চাকী ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী। পূর্ব বাংলায় জন্মগ্রহণকারী এই বাঙালি বিপ্লবী তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং জীবন উৎসর্গ করেন।
প্রফুল্ল চাকী ১৮৮৮ সালের ১০ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অধীনে বগুড়া জেলার বিহার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তিনি বগুড়ার ‘নমুজা জ্ঞানদা প্রসাদ মধ্য বিদ্যালয়ে’ ভর্তি হন। পরে বগুড়ার মাইনর স্কুলে ভর্তি হন। ১৯০২ সালে তিনি রংপুর জেলা স্কুলে ভর্তি হন। পূর্ববঙ্গ সরকারের কার্লাইল সার্কুলারের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাকে রংপুর জিলা স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর ভর্তি হন রংপুরের কৈলাস রঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে অধ্যয়নকালে তিনি জিতেন্দ্র নারায়ণ রায়, অবিনাশ চক্রবর্তী, ঈশান চন্দ্র চক্রবর্তী সহ অন্যান্য বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন এবং বিপ্লবী আদর্শে অনুপ্রাণিত হন।
১৯০৬ সালে কলকাতার বিপ্লবী নেতা বারীন ঘোষ প্রফুল্ল চাকীকে কলকাতায় নিয়ে আসেন। যেখানে যুগান্তর দলে যোগ দেন প্রফুল্ল। তার প্রথম কাজ ছিল পূর্ববঙ্গ ও আসামের প্রথম লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার জোসেফ ব্যামফিল্ড ফুলার কে হত্যা করা। কিন্তু এই পরিকল্পনা সফল হয়নি। এর পরে, প্রফুল্ল চাকি ক্ষুদিরাম বোসের সাথে কলকাতা প্রেসিডেন্সির অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে এবং পরে বিহারের মুজাফফরপুরকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন।
ক্ষুদিরাম এবং প্রফুল্ল কিংসফোর্ডের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন এবং ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। ইউরোপিয়ান ক্লাবের প্রবেশপথে তারা কিংসফোর্ডের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিল। একটি গাড়ি আসতে দেখে বোমা ছুড়ে মারে। দুর্ভাগ্যবশত, কিংসফোর্ড সেই গাড়িতে ছিলেন না, কিন্তু দুই ব্রিটিশ মহিলা মারা যান, ভারতপ্রেমী ব্যারিস্টার কেনেডির স্ত্রী ও কন্যা। সঙ্গে সঙ্গে প্রফুল্ল ও ক্ষুদিরাম এলাকা ছেড়ে চলে যান।
প্রফুল্ল এবং ক্ষুদিরাম পৃথক উপায়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। প্রফুল্ল ছদ্মবেশে ট্রেনে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। ২ মে নন্দলাল ব্যানার্জী নামে এক পুলিশ কনস্টেবল একটি ট্রেনে ষষ্ঠিপুর রেলস্টেশনের কাছে প্রফুল্লকে সন্দেহ করেন। মোকামা স্টেশনে পুলিশের মুখোমুখি হয়ে প্রফুল্ল পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কোণঠাসা, ধরা না পড়ে আত্মত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। নিজের মাথায় পিস্তল দিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেন তিনি। পরে অনেক ইতিহাসবিদ অনুমান করেন যে প্রফুল্ল আত্মহত্যা করেননি, তাকে পুলিশ হত্যা করে শিরশ্ছেদ করেছে। পরে ক্ষুদিরামকে ধরা হয় এবং ফাঁসি দেওয়া হয়। অন্য দুই বাঙালি বিপ্লবী রণেন গাঙ্গুলী এবং শ্রীশচন্দ্র পাল ১৯০৮ সালের ৯ নভেম্বর ব্রিটিশ পুলিশ ইন্সপেক্টর নন্দলালকে হত্যা এবং প্রফুল্ল চাকীকে হস্তান্তরের প্রতিশোধ নেন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

শোভা : এক তারার উত্থান, কীর্তি এবং ট্র্যাজিক অবসান।।।

মহালক্ষ্মী মেনন, তার মঞ্চ নাম শোভা দ্বারা ব্যাপকভাবে স্বীকৃত, একজন বিখ্যাত ভারতীয় অভিনেত্রী ছিলেন যিনি তার ব্যতিক্রমী প্রতিভা দিয়ে ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে একটি অমোঘ চিহ্ন রেখে গেছেন। মাদ্রাজে ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৬২ সালে একটি মালয়ালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, শোভা পর্দার জন্য নির্ধারিত হয়েছিল।

তার মা, প্রেমা, ১৯৫০-এর দশকে মালায়ালম সিনেমার একজন অভিনেত্রী ছিলেন, যা নিঃসন্দেহে শোভাকে অভিনয়ের প্রথম দিকের আগ্রহকে প্রভাবিত করেছিল।
অভিনয়ে শোভার পথচলা শুরু হয়েছিল শিশুশিল্পী হিসেবে বেবি মহালক্ষ্মী নামে। ১৯৬৬ সালে জেপি চন্দ্রবাবু পরিচালিত তামিল ছবি “থাতুঙ্গাল থিরাক্কাপ্পাদুম” দিয়ে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই প্রাথমিক ভূমিকায় তাকে আরএস মনোহর এবং কে বিজয়ের মতো উল্লেখযোগ্য নামের পাশাপাশি অভিনয় করতে দেখা যায়। পরের বছর, তিনি পি. ভেনুর “উদ্যোগস্থা” তে তার মালায়ালম চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন, যেটি মালায়ালাম সিনেমার প্রথম মাল্টি-স্টারার হিসেবে পরিচিত ছিল।
শোভার প্রতিভা প্রথম দিকে স্বীকৃত হয়েছিল যখন তিনি ১৯৭১ সালে “যোগামুল্লাভাল” এবং “আভাল আলপাম ভাইকিপ্পোই”-তে তার ভূমিকার জন্য সেরা শিশু শিল্পীর জন্য কেরালা রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিলেন। তার কর্মজীবন উন্নতি লাভ করতে থাকে এবং ১৯৭৭ সাল নাগাদ, “ওরমাকাল মারিকুমো” চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর জন্য কেরালা রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। বালাচন্দ্র মেননের “উত্তরা রাত্রি”-তে নায়িকা হিসেবে অসাধারণ আত্মপ্রকাশ করে তিনি প্রধান চরিত্রে রূপান্তরিত হওয়ার খুব বেশি দিন হয়নি।
শোভার ব্যতিক্রমী অভিনয় দক্ষতা তার ক্যারিয়ার জুড়ে তার অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছে, যার মধ্যে তামিল চলচ্চিত্র “পাসি” এর জন্য ১৯৭৯ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার রয়েছে। উপরন্তু, তিনি ১৯৭৮ সালে “অপরিচিত” এর জন্য এবং আবার “পাসি” (তামিল) এর জন্য ১৯৭৯ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর (কন্নড়) জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছিলেন। তার প্রতিভা অনস্বীকার্য ছিল, দক্ষিণ ভারত জুড়ে তার সমালোচকদের প্রশংসা এবং একনিষ্ঠ ভক্ত বেস অর্জন করেছিল।
১৯৭৮ সালে, শোভা পরিচালক বালু মহেন্দ্রকে বিয়ে করেন, কিন্তু তার প্রতিশ্রুতিশীল কর্মজীবন এবং জীবনের একটি দুঃখজনক সমাপ্তি ঘটে যখন তিনি ১ মে ১৯৮০ তারিখে ১৭ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন। বালু মহেন্দ্রের সাথে তার জীবন এবং সম্পর্ক পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালের মালায়ালাম চলচ্চিত্রে চিত্রিত হয়। “লেখাযুদে মারানাম ওরু ফ্ল্যাশব্যাক।”
তার সংক্ষিপ্ত কেরিয়ার সত্ত্বেও, ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের অন্যতম প্রতিভাবান অভিনেত্রী হিসাবে শোভার উত্তরাধিকার রয়ে গেছে। তার স্বাভাবিক অভিনয় ক্ষমতা এবং তিনি তার ভূমিকায় যে গভীরতা এনেছেন তা অনুরাগী এবং সমালোচকদের দ্বারা একইভাবে উদযাপন করা হয়। শোভার জীবনের গল্প, অসাধারণ কৃতিত্ব এবং হৃদয়বিদারক উভয়েই ভরা, লাইমলাইটে থাকা ব্যক্তিরা যে চাপের মুখোমুখি হয়েছিল এবং সিনেমার জগতে তারা যে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল তা আমাদের মনে করিয়ে দেয়।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

বিশ্বের মঞ্চে মে দিবস : শ্রমিকদের কৃতিত্ব ও অধিকারের প্রতীক।।।।

কেন পয়লা মে শ্রমিক দিবস পালিত হয় জানুন। আজ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। প্রতি বছর মে মাসের ১ তারিখ পালিত হয় ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ বা ‘মে দিবস’। শুধুমাত্র আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বের বহু দেশে এই দিন জাতীয় ছুটি থাকে। এই দিনটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন।

দিনের পর দিন লড়াই এবং বহু সংগ্রাম পেরিয়ে এই দিনটি সারা বিশ্বের শ্রমিকদের কাছে এক গৌরবময় বা উজ্জ্বল দিন। এটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের উদযাপন দিবস। তাই এটি ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ হিসেবেও পরিচিত। সেই সময় সমস্ত শ্রমিকদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রতিদিন প্রায় ১৬ ঘণ্টা ধরে কাজ করতে হত। এই সমস্যা নিয়ে ১৮৮৬ সালের আজকের দিনেই দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাজার হাজার শ্রমিক দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকদের বিশাল জমায়েত ও বিক্ষোভ হয়েছিল। আন্দোলনরত শ্রমিকদের রুখতে পুলিশ সেখানে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক এবং আহত হয়েছিলেন অনেকে। এছাড়া, গ্রেপ্তারও করা হয় অনেককে এবং ফাঁসি দেওয়া হয় কিছুজনকে।তীব্র আন্দোলনের মুখে পড়ে শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় সরকার। এরপর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে-কে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।শ্রমিকদের দাবি মাত্র একদিনেই পূরণ হয়নি। বাস্তবে, এটি কয়েক বছর সময় নিয়েছিল এবং প্রতিবাদে প্রচুর রক্তক্ষয়ও হয়েছিল। এটি কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, পাশাপাশি জার্মানি, ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সেও হয়েছিল।
মে দিবসের তাৎপর্য কি–
১) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, প্রতি বছর ১ মে জাতীয় ছুটি থাকে। ভারতসহ অনেক দেশেই এই দিন জাতীয় ছুটি থাকে।
২) ১৯২৩ সালের ১ মে বা পয়লা মে ভারতে প্রথম চেন্নাইয়ে ‘মে দিবস’ পালন করা হয় লেবার কিষাণ পার্টি অব হিন্দুস্থানের উদ্যোগে। উদ্যোক্তা ছিলেন পার্টির বলিষ্ঠ নেতা সিঙ্গারা ভেলু চেট্টিয়ার। তাঁর ব্যবস্থাপনা অনুসারে তখনকার মাদ্রাজের দুটি ভিন্ন স্থানে উদযাপিত হয় শ্রমিক দিবস।
৩) ১৯৪৮ সাল থেকে সরকারি ভাবে ভারতে সারা বিশ্বের শ্রমজীবীদের মর্যাদা দিতে ১ মে বাধ্যতামূলক ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়।
৪) এই দিনে, দেশের প্রতিটি বিভাগের শ্রমিকরা সম্মানিত হয়। তাঁদের অবদান স্বীকার করা হয়।
মহান মে দিবস সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য–
(১) ভারত-সহ ৮০টির বেশি দেশে পালিত হয় মে দিবস। মে দিবস আবার মহারাষ্ট্র দিবস ও গুজরাত দিবস হিসেবেও পালিত হয়।
(২) ভারতে প্রথম মে দিবস পালিত হয়েছিল ১ মে, ১৯২৩। তৎকালীন মাদ্রাজে (বর্তমানে চেন্নাই)। হিন্দুস্তান লেবার কিষান পার্টি এর আয়োজনে করেছিল।
(৩) ১৮৮৪ সালে, আমেরিকান ফেডারেশন অফ অর্গানাইজড ট্রেডস অ্যান্ড লেবার ইউনিয়ন আট ঘণ্টা কর্মদিবসের জন্য আহ্বান জানায়।
(৪) মার্কসবাদী আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক কংগ্রেস ১৮৮৯ সালে একটি রেজোলিউশন গ্রহণ করে। তাতে ঠিক হয়, কর্মীদের দিনে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করতে বাধ্য করা যাবে না। এর পরে এটি একটি বার্ষিক অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে।
(৫) এই দিনটি পালনের প্রধান লক্ষ্য, শ্রমিক-শ্রেণির কঠোর পরিশ্রমকে স্বীকৃতি দেওয়া, তাঁদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা এবং শোষণের হাত থেকে তাঁদের সুরক্ষিত করা।
(৬) শুধু ভারতেই নয়, কিউবা-চিনের মতো দেশেও আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত হয়।
(৭) ফি বছর পয়লা মে পালিত হয় মে দিবস। শ্রমিকদের কৃতিত্ব ও অবদানকে সম্মান জানিয়ে এই দিনটি উদযাপন করা হয়। দিনটি শ্রমিক-শ্রেণির জন্য উৎসর্গ করা হয় এবং তাঁদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে উৎসাহিত করা হয়। এটি শ্রম দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস নামেও পরিচিত।
মে দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে জানুন—
১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের ম্যাসাকার শহিদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে পালিত হয়। সেদিন দৈনিক আটঘণ্টার কাজের দাবিতে শ্রমিকরা হে মার্কেটে জমায়েত হয়েছিল। তাদেরকে ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাতনামার বোমা নিক্ষেপের পর পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। ফলে প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হয়। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব করেন রেমন্ড লাভিনে। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। এর পরপরই ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে মে দিবসের দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। পরে, ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে আমস্টারডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই উপলক্ষ্যে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে দৈনিক আটঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায়ের জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে পয়লা মে তারিখে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজন করতে সকল সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং শ্রমিক সংঘের (ট্রেড ইউনিয়ন) প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সেই সম্মেলনে “শ্রমিকদের হতাহতের সম্ভাবনা না থাকলে বিশ্বজুড়ে সকল শ্রমিক সংগঠন মে মাসের ১ তারিখে ‘বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না-করার’ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অনেক দেশে শ্রমজীবী জনতা মে মাসের ১ তারিখকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালনের দাবি জানায় এবং অনেক দেশেই এটা কার্যকর হয়। দীর্ঘদিন ধরে সমাজতান্ত্রিক, কমিউনিস্ট এবং কিছু কট্টর সংগঠন তাদের দাবি জানানোর জন্য মে দিবসকে মুখ্য দিন হিসাবে বেছে নেয়। কোনো কোনো স্থানে শিকাগোর হে মার্কেটের আত্মত্যাগী শ্রমিকদের স্মরণে আগুনও জ্বালানো হয়ে থাকে। পূর্বতন সোভিয়েত রাষ্ট্র, চীন, কিউবাসহ বিশ্বের অনেক দেশেই মে দিবস একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। সেসব দেশে এমনকি এ উপলক্ষ্যে সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়।

।। তত্থ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া।।

Share This