Categories
রিভিউ

আজ ২৯ মে, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।।।

আজ ২৯ মে। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-
দিবস—–
(ক) আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস।
(খ) সেনাবাহিনী দিবস (আর্জেন্টিনা)।
আজ যাদের জন্মদিন—-
১৬৩০ – দ্বিতীয় চার্লস ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের রাজা।
১৮৬০ – স্যার মণীন্দ্র চন্দ্র নন্দী, কাশিমবাজারের মহারাজা ও মানবতাবাদী ব্যক্তিত্ব।  .
১৮৬৫ – রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, ঊনবিংশ শতকের বাঙালি সাহিত্যিক ও ‘প্রবাসী’ ও ‘মডার্ন রিভিউ’ এর সম্পাদক।  .
১৮৬৮ – দ্বিতীয় আবদুল মজিদ, সর্বশেষ উসমানীয় খলিফা।
১৮৯৪ – ইয়োজেফ ফন স্টার্নবের্গ, অস্ট্রীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক।
১৮৯৬ – স্টেলা ক্রামরিশ, অস্ট্রীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ইতিহাসবিদ ও কিউরেটর যিনি মূলত ভারতীয় শিল্পের ইতিহাস নিয়ে প্রসিদ্ধি লাভ করেন।
১৯০৩ – বব হোপ, মার্কিন কৌতুকাভিনেতা, অভিনেতা, গায়ক, নৃত্যশিল্পী, মল্লক্রীড়াবিদ ও লেখক।
১৯০৫ – হীরাবাঈ বরোদাকর, হিন্দুস্তানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী।
১৯১৪ – তেনজিং নোরগে, নেপালী শেরপা, এডমন্ড হিলারির সাথে যৌথভাবে এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেন।
১৯১৭ – জন এফ. কেনেডি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম রাষ্ট্রপতি।
১৯২১ – বিশিষ্ট বাঙালি শিল্প ব্যক্তিত্ব সাধন দত্ত।
১৯২৫ – অমলেন্দু বিশ্বাস, বাংলাদেশী যাত্রা অভিনেতা ও পরিচালক।
১৯২৯ – দ্বিজেন শর্মা, বাংলাদেশী প্রকৃতিবিদ।
১৯২৯ – পিটার হিগস, ব্রিটিশ তাত্ত্বিক পদার্থবিদ এবং এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যামিরেটাস অধ্যাপক।
১৯৪০ – ফারুক আহমদ খান লেগারি, পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ এবং অষ্টম প্রেসিডেন্ট।
১৯৪১ – অরুণাভ সরকার, বাংলাদেশী কবি, কলাম লেখক, সাহিত্য সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা।
১৯৫২ – হুমায়ুন ফরিদী, বাংলাদেশী অভিনেতা।
১৯৮৪ – নিয়া জ্যাক্স, মার্কিন পেশাদার কুস্তিগীর, মডেল এবং বডিবিল্ডার।
১৯৯৩ – মাইকা মনরো, মার্কিন অভিনেত্রী এবং পেশাদার কাইটবোর্ডার।
ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-
১৩২৮ – ফিলিপ-৫ ফ্রান্সের রাজমুকুট গ্রহণ করেন।
১৪৫৩ – কনস্টান্টিনোপল বিজয়: সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদের নেতৃত্বে উসমানীয় সেনারা ৫৩ দিন অবরোধের পর বাইজেন্টাইন রাজধানী কনস্টান্টিনোপল জয় করে এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সমাপ্তি ঘটে।
১৭২৭ – দ্বিতীয় পিটার রাশিয়ার জার হন।
১৮০৭ – মোস্তফা চতুর্থ কর্তৃক তুরস্কের সুলতান সেলিম তৃতীয় ক্ষমতাচ্যুত।
১৮৭৪ – সুইজারল্যান্ডে সংবিধান কার্যকর হয়।
১৯০৩ – সার্বিয়ার রাজা আলেকজান্ডার আর্বেনোভিচ সস্ত্রীক নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতে নিহত।
১৯৩৪ – তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোসফের স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি অনুযায়ী, কিউবারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বাতিল করা হয়।
১৯৩৫ – হেগ জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়।
১৯৩৭ – স্পেনে গৃহযুদ্ধ চলার সময় রিপাবলিকানদের জঙ্গী বিমান জার্মানীর একটি জাহাজে আঘাত হানে।
১৯৪৮ – আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধ বিরতির জন্য জাতিসংঘের পরিচালিত প্রথম শান্তিরক্ষা মিশন।
১৯৫৩ – তেনজিং নরগেএবং এডমন্ড হিলারী যৌথভাবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন। দু জনের মধ্যে তেনজিং নরগে প্রথমে শৃঙ্গে উঠেছিলেন।
১৯৫৪ – পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক এ.কে. ফজলুল হকের নেতৃত্বে গঠিত যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা বাতিল ঘোষণা করা হয়।
১৯৫৯ – শার্ল দ্য গোল ফ্রান্সে জাতীয় নিরাপত্তামূলক সরকার গঠন করেন।
১৯৬৩ – ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে ২২ হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে।
১৯৬৮- ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব ইউরোপিয়ান কাপ জয় করে।
১৯৭২ – তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিকসেন সৌভিয়েত ইউনিয়নে তার এক সপ্তাহব্যাপী সফর করেন।
১৯৯০ – বরিস ইয়েলৎসিন রুশ ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
১৯৯০ – কর্ণফুলি সেতু আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়।
১৯৯১ – ক্রোয়েশিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা।
১৯৯৩ – চতুর্থ এশিয়া-প্যাসিফিক রেড ক্রস সম্মেলন পেইচিংএ সমাপ্ত হয়।
১৯৯৬ – কায়রোতে ৭টি আরব দেশের পরিবেশ সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৯৬ – বেনজামিন নেতানিয়াহু ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত।
এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-
১২৫৯ – ডেনমার্কের রাজা দ্বিতীয় ক্রিস্টোফার।
১৪৫৩ – উলুবাতলি হাসান, অটোমান সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদের অধীনস্থ একজন তিমারলি সিপাহি।
১৮২৯ – হামফ্রে ডেভি, ব্রিটিশ আবিষ্কারক এবং প্রখ্যাত রসায়নবিদ।
১৮৯২ – বাহাউল্লাহ, বাহাই ধর্ম-এর প্রতিষ্ঠাতা।
১৯৪২ – জন ব্যারিমোর, আমেরিকান অভিনেতা।
১৯৭১ – পৃথ্বীরাজ কাপুর, ভারতের থিয়েটার ও চলচ্চিত্র অভিনেতা ও ভারতীয় গণনাট্য সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ।
১৯৭৭ – সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, বাঙালি, একজন ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিত, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ।
১৯৭৯ – ম্যারি পিকফোর্ড, কানাডীয়-মার্কিন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও প্রযোজক।
১৯৮১ – চীনের মহান বিপ্লবী পথিকৃৎ ড: সান ইয়াত সেনের বিধবা সন ছিং লিন।
১৯৮৭ – চৌধুরী চরণ সিং, ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং ভারতের ৬ষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী।
২০০৪ – আঞ্জুমান আরা বেগম, একুশে পদক বিজয়ী বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী।
২০১০ – ডেনিস হপার, মার্কিন অভিনেতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা, আলোকচিত্রী ও চিত্রশিল্পী।
২০১৭ – মানুয়েল নরিয়েগা, পানামার সাবেক রাজনীতিবিদ ও সৈনিক।
২০২১ – (ক) ‘টারজান’ খ্যাত হলিউড তারকা জো লারা।
(খ ) বিষ্ণুপুর ঘরানার কিংবদন্তি ধ্রুপদী সঙ্গীত শিল্পী ড.দেবব্রত সিংহ ঠাকুর।
।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ভারতে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর বিভিন্ন ধরনের আগ্রাসী নীতির (ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার) সংক্ষিপ্ত পরিচয়।।।

সূচনাঃ-
ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদ যে শুধুই ভারতীয় সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো ধ্বংস করে নিজেদের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ তৈরী করেছিল তাহা নয়, তাহাকে যথেষ্ঠ স্ফীত ও উর্বর করে তুলেছিল। এদেশে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এদেশের কৃষক সম্প্রদায়কে নানান আর্থিক বোঝা বহন করতে হয়েছিল। ইংরেজদের ব্যবসাপত্র চালু রাখা ও মুনাফা লাভের জন্য এবং কম্পানীর প্রসারের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল। আর সেই সময় অর্থের আগমনের প্রধান সূত্র ছিল ভূমি রাজস্ব। ফলে ইংরেজ ঐ পথেই অতিরিক্ত অর্থ উপায়ের ব্যবস্থা করেন। এছাড়াও আরো কিছু নীতি প্রনয়ণের মাধ্যমে তারা তাদের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করেছিল।
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতিঃ- .
তৎকালীন ভারতীয় নৃপতিগণ পরস্পরের সহিত যুদ্ধে লিপ্ত থাকতেন।

লর্ড ওয়েলেসলী এই সুযোগের সদব্যবহার করার জন্য সত্ব বিলোপনীতি চালু করেন। এই নীতির শর্ত ছিল সকল দেশীয় নৃপতি এই নীতিতে স্বাক্ষর করবে। কোম্পানী বহিঃশত্রুর আক্রমন হতে এদেরকে রক্ষা করবে বিনিময়ে রাজ্যের কিছু অংশ কোম্পানীকে ছেড়ে দিতে হবে। এই নীতিতে স্বাক্ষরকারী নৃপতিগণ কখনও ইংরেজ অনুমতি ব্যাতীত পরস্পরের সহিত যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারবেনা। এই নীতিতে যাঁরা স্বাক্ষর করতেন তাঁরা নিজেদের স্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবে হারাতেন। উল্টোদিকে ইংরেজরা দেশীয় নৃপতিদের অর্থে নিজেদের সামরিক বাহিনীর ব্যয় নির্বাহ করতেন।
দেওয়ানী লাভঃ-
১৭৬৫ খ্রীঃ লর্ড ক্লাইভ বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা দেবার বিনিময়ে বাংলা বিহার ও উড়িস্যার দেওয়ানী লাভ করে। এই দেওয়ানী ইংরেজদের কাছে খুব তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এই দেওয়ানী লাভের ফলে বাংলার ক্ষমতা কার্যত ইংরেজদের হাতে চলে যায়। নবাব কেবলমাত্র নামেই নবাব ছিলেন। তাঁর হাতে আর প্রকৃত কোন ক্ষমতা থাকল না। ফলে । ফলে বাংলার পরবর্তী কোন নবাবই আর ইংরেজদের অবাধ্য হইবার সাহস পেলনা। নবাবের কর্মচারীগণ কোম্পানী কতৃক নির্বাচিত হইতেন এবং কোম্পানির নির্দেশেই কাজ করিতেন। ফলে ভারতবর্ষের বুকে নবাবের ক্ষমতার হ্রাস হয়ে ইংরেজদের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। ইংরেজ বণিকরাও ক্রমে বণিকের মানদণ্ড ছেড়ে রাজদণ্ড হাতে নিতে শুরু করে।
দ্বৈতশাসনের অবসানঃ-
দ্বৈতশাসনের নীতি অনুসারে রাজ্যের রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা ছিল ইংরেজদের হাতে, আর প্রশাসনের ভার রইল নবাবের উপর। এর ফল হল মারাত্মক। কোম্পানী বা নবাব কেউই আর প্রজামঙ্গলের কথা না ভেবে দুর্নীতি ও অত্যাচারে রাজত্ব চালাতে লাগল। এর ফলে প্রজাদের জীবনে নেমে এল চরম দুরাবস্থা। ক্রমে ক্রমে ক্লাইভের ‘দ্বৈতশাসনের’ কুফল কোম্পানীর উপর পড়ায় হেস্টিংস এই শাসন ব্যবস্থা বাতিল করে কোম্পানীর হাতে রাজস্ব আদায়ের ভার অর্পণ করলেন।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তঃ-
কর্ণ ওয়ালিশ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবর্তন করেন। প্রথমে কোম্পানী পাঁচ বছরের জন্য, পরে এক বছরের জন্য জমি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু এই ব্যবস্থায় জমিদাররা উৎসাহ প্রকাশ না করায় কর্ণ ওয়ালিশ প্রথমে দশ বছরের জন্য জমি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। পরে তিনি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন। এই ব্যবস্থার ফলে জমিদার ও রাজস্ব সংগ্রাহকরা বংশানুক্রমিক ভাবে জমির মালিক হতে থাকে। আর কৃষকরা কেবলমাত্র খাজনাদানকারী ব্যক্তিতে পরিণত হয়। জমিদাররা কোম্পানীকে যে রাজস্ব দেবে তা চিরকালের জন্য বেঁধে দেওয়া হয়, কিন্তু কৃষকরা জমিদারদের কী পরিমাণ রাজস্ব দেবে তা বেঁধে না দেওয়ায় জমিদাররাই কৃষকদের উপর অত্যাচারী হয়ে ওঠে। এই বন্দোবস্তে কৃষকদের অস্তিত্ব রক্ষার কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। আবার সূর্যাস্ত আইন অনুসারে অনেক জমিদার সূর্যাস্তের আগে খাজনা না দিতে পারায় সর্বসান্ত হয়েছেন। তাছাড়া এই রাজস্ব ব্যবস্থায় জমির মূল্য বহুগুণ বেড়ে গেলেও রাজস্বের পরিমান স্থির থাকায় কোম্পানীর আয় সিমীত হয়ে পড়ে। তাই ইংরেজরা এই বন্দোবস্ত পরে তুলে দিতে বাধ্য হন। এর চুড়ান্ত ফলাফল সম্পর্কে বলা হয়-জমিদার, রাজা এই তিনের মধ্যে- Permanent settlement “amerio the of the first, somewhat postpond the claims of the second and sacrificed the interest of the third”.
উপসংহারঃ-
ডালহৌসী সত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে অরাজকতার অজুহাত দেখিয়ে এদেশীয় অনেক রাজ্যকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেছিলেন। আবার অনেক রাজা বা জমিদার মারা গেলে তাদের পুত্র বা উত্তরাধিকারী না থাকলে তাদের সাম্রাজ্য নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেছিলেন। এই নানা ধরনের নিত্যনূতন ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা প্রচলনের মাধ্যমে ইংরেজরা ভারতবাসীকে শোষন করে নিজেদের সাম্রাজ্যকে সু-প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

মূল্যবান মনুষ্য জীবন ও ঈশ্বর সর্বশক্তিমান : স্বামী আত্মভোলানন্দ (পরিব্রাজক)।।।

আমাদের মূল্যবান সুন্দর মনুষ্য জীবনে কোনো কিছু চিরস্থায়ী না। নতুন কিছু আসবে পুরাতন কিছু যাবে এটাই জীবন। দুনিয়ায় সুখ,দুঃখ,কষ্ট, প্রিয়মানুষ কিছুই চিরস্থায়ী না। টাকা-পয়সা, প্রভাব প্রতিপত্তি এগুলো কোনটাই অন্তরের শান্তি, তৃপ্তি, আনন্দ দিতে পারে না। জীবনে সুখ দুঃখ, হাসি কান্না, সম্মান অপমান, সুন্দর কুৎসিত, ন্যায় অন্যায়, সুগন্ধ দুর্গন্ধ, সুস্বাদ বিস্বাদ, ভালোবাসা ঘৃণা, শীত গ্রীষ্ম, সাদা কালো, শব্দ নৈঃশব্দ্য, সমস্তকিছুই প্রকৃতিজাত ক্ষণস্থায়ী।

এর কোনোটাই আমি/আপনি নই। পরিবর্তনশীল জগৎ, এগুলো প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। একমাত্র আত্ম উপলব্ধি হল মানুষের ব্যক্তিত্ব বোধের পূর্ণ বিকাশ।
যেমন, যিনি সদামিথ্যা কথা বলেন, প্রতারক, কথাই কথাই ছলচাতুরী করেন, নাটক করেন, কথার পর কথা ঘুরিয়ে দেন, দোষমুক্ত হওয়া চেষ্টা করেন, তিনি আর যাই হন, সৎ আদর্শের ব্যক্তি নন, সাধু নন, শুভ চিন্তক নন, যত বড় পদাধিকারী হননা কেন তিনি! আমাদের সমাজে অন্যায় কারী যদি থাকে অন্যায় কে পশ্রয় দেওয়ারও লোকও থাকে। অন্যায় কারী দের উকিল থাকে অন্যায় কারীদের উকিলের ক্ষমতা কখনো কখনো বেশই দেখেছি। সাধারণত স্বাভাবিক ভাবেই সত্য একা থাকে। সত্যের পাশে মানুষ জন তেমন ঘেঁষে না। সত্য সবসময় খোলা, অভদ্র, অসভ্য, উলঙ্গ, অপ্রিয় রূপে প্রকাশিত হয়ে থাকে। সত্য কোন পোশাক পরে না। মিথ্যা সবসময় সুন্দর সুসজ্জিত রূপে প্রকাশিত হয়ে থাকে।
আবার আমাদের জীবনে যখন সত্যের সাথে অসত্যের লড়াই হয়, তখন সত্য একা থাকে। মিথ্যার বাহিনী বিশাল হয়। কারণ, মিথ্যার পিছনে থাকে মূর্খ, লোভী, স্বার্থপর এবং বিশ্বাসঘাতক এর দল। বর্ণমালায় যেমন একাধিক ব্যঞ্জনবর্ণের সমষ্টির অধিক গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্বরবর্ণ, অনুরূপ আমাদের পরিবার ও সমাজে একাধিক অসৎ ব্যক্তির সান্নিধ্যের চাইতে একজন সৎ ব্যক্তির সান্নিধ্য অনেক বেশি সৌহার্দ্যপূর্ণ। জীবনে অর্থ সম্পদ পদমর্যাদা গুরুত্বপূর্ণ হলেও সর্বশক্তিমান নয়। তাই, ক্ষমতার দম্ভ এ অন্ধ হয়ো না, কারণ, ঈশ্বর একমাত্র সর্বশক্তিমান। আমাদের সমাজে এগুলো চরম সত্য। গুরু মহারাজের শুভ ও মঙ্গলময় আশির্বাদ আপনাদের সকলের শিরে বর্ষিত হোক… এই প্রার্থনা করি…!
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ …!

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি বিপ্লবী, সাহিত্যিক এবং শ্রমিক-সংগঠক সত্যেন সেন।।।।

সত্যেন সেন প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘ উদীচী সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি বিপ্লবী, সাহিত্যিক ও শ্রমিক-সংগঠক।

সত্যেন সেন ১৯০৭ সালের ২৮ মে বিক্রমপুরের (বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলা) টঙ্গীবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামের সেন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ছোটবেলার ডাক নাম ছিল লস্কর।

তাঁর পিতার নাম ধরনিমোহন সেন এবং মায়ের নাম মৃণালিনী সেন। চার সন্তানের মধ্যে সত্যেন ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।
কলেজে পড়ার সময় বিপ্লবী দল যুগান্তরে যোগ দেন। ১৯৩১ সালে একজন ছাত্র হিসাবে, তিনি একটি ষড়যন্ত্রের শিকার হন এবং প্রথমবারের মতো কারাবরণ করতে বাধ্য হন। বহরমপুর জেল ক্যাম্প থেকে তার বন্দিজীবন শুরু হয়। এ সময় তিনি তিন মাস কারাগারে ছিলেন। ১৯৩৩ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে জড়িত থাকার জন্য তিনি দ্বিতীয়বার গ্রেফতার হন। এ সময় তার ৬ বছরের জেল হয়। ১৯৩৮ সালে সত্যেন সেন জেল থেকে মুক্তি পান। সেই বছর তাকে শান্তিনিকেতন থেকে ‘গবেষণা বৃত্তি’ দেওয়া হয়। ১৯৪২ সালের ৮ মার্চ ফ্যাসিবাদবিরোধী বিপ্লবী কবি সোমেন চাঁদ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে এক সমাবেশে শহীদ হন। সে সময় সত্যেন সেন ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ‘কৃষক সমিতি’র মাধ্যমে ১৯৪৩ সালের মহাদুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় কৃষক সমিতির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কাজ করেছেন। ১৯৪৬ সালে, কমিউনিস্ট নেতা ব্রজেন দাস ঢাকা থেকে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। সত্যেন সেন ব্রজেন দাসের পক্ষে প্রচারণা চালান। তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে ১৯৪৭ সালে স্বাধীন ভারত সৃষ্টি পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করা হয়। ১৯৪৯ সালে, তিনি বিপ্লবী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক গ্রেফতার হন। আবার দীর্ঘ কারাবাস। সে সময় কমিউনিস্টদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা ছিল অনেক বেশি।
১৯৬৯ সালে বিপ্লবী কথাশিল্পী সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, শহীদুল্লা কায়সারসহ একঝাঁক তরুণ উদীচী গঠন করেন। জন্মলগ্ন থেকে উদীচী অধিকার, স্বাধীনতা ও সাম্যের সমাজ নির্মাণের সংগ্রাম করে আসছে। উদীচী ‘৬৮, ‘৬৯, ‘৭০, ‘৭১, সালে বাঙালির সার্বিক মুক্তির চেতনাকে ধারণ করে গড়ে তোলে সাংস্কৃতিক সংগ্রাম। এ সংগ্রাম গ্রামবাংলার পথেঘাটে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় উদীচীর কর্মীরা প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।
উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী এদেশে সুস্থ সাংস্কৃতিক ধারার সংস্কৃতি নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সত্যেন সেনের সৃষ্টিকর্ম ও সাহিত্য হলো সমাজ বাস্তবতার স্পষ্ট প্রকৃতি-স্বরূপের প্রতিচ্ছবি।
ছোটদের জন্য লিখিত গল্প- পাতাবাহার (১৯৬৮) অন্যতম।
উপন্যাস–
ভোরের বিহঙ্গী (১৯৫৯), রুদ্ধদ্বার মুক্ত প্রাণ (১৯৬৩), অভিশপ্ত নগরী(১৯৬৯), পাপের সন্তান (১৯৬৯), সেয়ান (১৯৬৯), পদচিহ্ন (১৯৬৯), পুরুষমেধ(১৯৬৯), আলবেরুনী(১৯৭০), সাত নম্বর ওয়ার্ড(১৯৭০), বিদ্রোহী কৈর্বত(১৯৭০), কুমারজীব(১৯৭০), অপারেজয়(১৯৭০), মা(১৯৭০), উত্তরণ(১৯৭০), একুল ভাঙ্গে ওকুল গড়ে (১৯৭১)।
ইতিহাস আশ্রিত গল্প-উপন্যাস-সাহিত্য—
গ্রামবাংলার পথে পথে (১৯৬৬), আমাদের পৃথিবী (১৯৬৮), মসলার যুদ্ধ (১৯৬৯), এটোমের কথা(১৯৭০), অভিযাত্রী (১৯৭০), মানবসভ্যতার উষালগ্ন (১৯৭১), মনোরমা মাসিমা (১৯৭১), প্রতিরোধ সংগ্রামে বাংলাদেশ (১৯৭১), বিপ্লবী রহমান মাষ্টার (১৯৭৩), সীমান্ত সূর্য আবদুল গাফফার (১৯৭২), জীববিজ্ঞানের নানা কথা (১৯৭৭) ইত্যাদি।
পুরস্কার–
১৯৬৯ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৮৬ সালে সাহিত্য মরণোত্তর একুশে পদক।
শান্তি নিকেতনের গুরুপল্লীতে ১৯৮১ সালে ৫ জানুয়ারি তিনি মারা যান।

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ রিভিউ

হারিয়ে যেতে বসা সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার মরিয়া প্রচেষ্টায় একদল নারী শক্তি।।।।

হারিয়ে যেতে বসা সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার মরিয়া প্রচেষ্টায় একদল নারী শক্তি। প্রকৃতপক্ষে লোক সংস্কৃতি বাঙালি সংস্কৃতির মূলধারা, এর মর্ম মূলেই আবহমান বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য- সভ্যতার প্রকৃত পরিচয়। কানু ছাড়া যেমন গীত নেই তেমনি লোকসংস্কৃতির অস্তিত্ব ভিন্ন বাঙালির জীবন- সমাজ ঐতিহ্য- ইতিহাসের মর্মদ্ধার অসাধ্য ও অর্থহীন। বাংলার লোকসংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ হল যাত্রাপালা। আমরা সকলেই অবগত আছি একটা সময় ছিল যখন গ্রামের দুর্গাপুজো, কালীপুজো, গাজন উপলক্ষে গ্রামের শিল্পীদের নিয়ে যাত্রা পালা অনুষ্ঠিত হতো। বর্তমানে সেই চিত্র আর দেখা যায়না বলাই চলে, লুপ্ত হতে বসেছে যাত্রা শিল্প।

তবে এখনো অনেকেই আছেন তারা যাত্রা প্রেমী মানুষজন, আর তাঁদের কথা মাথায় রেখেই লোকসংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ যাত্রাশিল্পকে আঁকড়ে ধরে লুপ্ত হতে না দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ ব্লকের পুনশুর গ্রামের বিনোদিনী নাট্য সংস্থা।

গ্রামের ১৮ জন মহিলা দারা যাত্রা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বিনোদিনী নাট্য সংস্থা। রীতিমতো মঞ্চ বেঁধে নিত্যদিন চলছে যাত্রার মহড়া। পুজো উপলক্ষে বিনোদিনী নাট্য সংস্থার দুটি নিবেদন, একটি হল নটী বিনোদিনী অপরটি সোনাই দীঘি। দুটি যাত্রাপালা তেই অভিনয় করছে গ্রামের ১৮ জন মহিলা। শিশু থেকে গৃহবধূ সকলেই অভিনয় করছে যাত্রা পালাতে। শুধু তাই নয়, অভিনয়ে আছে স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও। পুরুষদের চরিত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ফুটিয়ে তুলতে দিনরাত মহড়ায় অংশগ্রহণ করছে পুনশুর গ্রামের ১৮ জন মহিলা। নিজেদের গ্রাম ছেড়ে দূর-দুরান্তে গিয়ে যাত্রাপালা করে তাদের প্রতিভা সকলের সামনে মেলেও ধরেছে তারা। “আমি ভাবি একা, দাও হে দেখা, প্রানো সখা রাখো পায়ে” নটী বিনোদিনীর সেই অসাধারণ গান নিজের কন্ঠ স্বরের মাধ্যমে মহড়া মাতাচ্ছে কলেজ পড়ুয়া মহিলা।

নটী বিনোদিনী নাট্য সংস্থার এক মহিলা শিল্পী মৈত্রী ঘোষাল বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি আমার অভিনয় করতে ভালো লাগে। আমার বাবা ঠাকুরদাও খুব ভালো অভিনয় করত, আমি তাদের থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছি। মানুষের মনের অভিব্যক্তি সমস্ত আর্টেই প্রকাশ করা যায়, কিন্তু অভিনয় এমন একটা মাধ্যম যেখানে অতি সহজেই অভিব্যক্তি প্রকাশ করা সম্ভব। অভিনয়ের মাধ্যমে অচিরেই মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। অভিনয় করতে গিয়ে আমাকে পাড়া প্রতিবেশিদের কাছে কিছু কেমন কথা ও শুনতে হয়েছে, কিন্তু সেই সব কথা কর্ণপাত না করেই যাত্রাশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।

নিজেদের গ্রামের মহিলা, নিজেদের সুর পার্টি, নিজেদের লাইট দ্বারা পরিচালিত নটী বিনোদিনী নাট্য সংস্থা। ইতিমধ্যেই শক্তিগড়, দুর্গাপুর,কোতুলপুর ইন্দাস, গুইর,সরঙ্গার যাত্রাপালা পরিবেশন করেছে আঠারো জন নারী শক্তি। পড়াশোনার ফাঁকে হারিয়ে যেতে বসে যাত্রাশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে মহুয়া ঘোষাল, মৈত্রী ঘোষাল, তিতলি চট্টোপাধ্যায়, স্নেহা ব্যানার্জি, প্রিয়া দাস,মধুমিতা দাস সহ বাকি সকলে।

সর্বযুগে তথা সর্বকালে এবং  পৌরাণিক, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার হিসাবে মানুষের মনে  নারীশক্তি একটি স্থায়ী  স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে ।রূপ ,গুণ , কর্মদক্ষতা ও সহনশীলতায় সবেতেই অদ্বিতীয়া নারী  হল সকল শক্তির আধার ; মানবজাতির স্রষ্টা। কথায় আছে, ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’। ঘরে -বাইরে সব জায়গায় একাহাতেই নারী  সুষ্ঠুভাবে সামলাতে পারে কারও সাহায্য না নিয়েই। আধুনিক সমাজে নারী আজ আর পিছিয়ে নেই। শিক্ষা, কর্তৃত্বে ,গুণে, মানে সব ক্ষেত্রেই পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলে মহুয়া, মৈত্রী, স্নেহারা যাত্রা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে পুরুষদের চরিত্রে ধারালো অভিনয় করে আজ প্রমাণ করে দিয়েছে যে তারাও কোনো অংশে কম নয়।

।।কলমে : রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী,  পূর্ব বর্ধমান।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ ২৮ মে, ইতিহাসের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নেব ইতিহাসের এই দিনে বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু, দিনসহ ঘটে যাওয়া ঘটনা।।।।

আজ ২৮ মে। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু দিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।

দিবস—–

(ক) নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। (বাংলাদেশ)।

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৫২৪ – দ্বিতীয় সেলিম, অটোমান সুলতান।

১৭৭৯ – আইরিশ কবি টমাস মুর।

১৮৮৩ – বিনায়ক দামোদর সাভারকর, বিপ্লবী ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সক্রিয় অংশগ্রহণকারী।

১৮৮৮ – জিম থর্প, আমেরিকান অ্যাথলেট।

১৯০৭ – বিপ্লবী, গণসঙ্গীত রচয়িতা, লেখক ও বাংলাদেশে উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা সত্যেন সেন।
১৯০৮ – ইয়ান ফ্লেমিং, একজন বিখ্যাত ব্রিটিশ লেখক, সাংবাদিক ও নৌ-গোয়েন্দা। তিনি ব্রিটিশ কাল্পনিক গোয়েন্দা চরিত্র জেমস বন্ড চরিত্র নিমার্ণে জন্য বিখ্যাত ছিলেন।

১৯১১ – বব ক্রিস্প, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার।
১৯১২ – প্যাট্রিক ভিক্টর হোয়াইট, ১৯৭৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অস্ট্রেলিয়ার ঔপন্যাসিক।
১৯১৫ – জোসেফ গ্রিনবার্গ, প্রভাবশালী ও বিতর্কিত মার্কিন ভাষাবিজ্ঞানী ও আফ্রিকান নৃতত্ত্ববিদ।
১৯২৩ – এন টি রামা রাও, ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক ও অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
১৯২৫ – বুলেন্ত এজেভিত, তুর্কি রাজনীতিবিদ, কবি, লেখক, পণ্ডিত, সাংবাদিক এবং ১৬তম প্রধানমন্ত্রী।
১৯৩০ – ফ্রাঙ্ক ড্রেক, মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী।
১৯৩১ – ক্যারল বেকার, আমেরিকান অভিনেত্রী।
১৯৪২ – স্টানলি বি প্রুসিনার, মার্কিন নিউরোলজিস্ট এবং প্রাণরসায়নবিদ।
১৯৪৬ – কে. সচ্চিদানন্দন, ভারতীয় কবি এবং সমালোচক।

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

১৭৪২ – লন্ডনে প্রথম ইনডোর সুইমিং পুল চালু।
১৭৫৭ – ব্রিটিশ কর্তৃক মীর জাফরকে বাংলার নবাব ঘোষণা।
১৮০৪ – নেপোলিয়ন বোনাপোর্ট নিজেকে ফ্রান্সের সম্রাট ঘোষণা।
১৮৭১ – প্যারি কমিউনের পতন ঘটে।
১৯১৮ – আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
১৯১৯ – ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে প্রথম মহাযুদ্ধ সমাপ্ত।
১৯৩৭ – প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট একটি সুইচ টিপে ক্যালিফোর্নিয়া সানফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন গেট ব্রিজ উদ্বোধন করেন।
১৯৪০ – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির কাছে বেলজিয়াম আত্মসমর্পণ করে।
১৯৫২ – গ্রিসের নারীদের ভোটাধিকার অর্জিত হয়।
১৯৬৪ – নয়াদিল্লীতে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং কংগ্রেস নেতা পণ্ডিত জওহারলাল নেহেরুর অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
১৯৬৪ – ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা বা পিএলও গঠিত হয়।
১৯৮৭ – ম্যাথু রাস্ট নামে ১৯ বছর বয়সী এক অ্যামেচার বিমান চালক ক্রেমলিনের রেড স্কোয়ারে ছোট একটি সেসনা বিমান অবতরণ করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো।
১৯৯১ – ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবাতে বিদ্রোহীদের ট্যাংকবহর প্রবেশ করতে থাকে এবং দেশটিতে ১৭ বছরের মার্ক্সবাদী শাসনের অবসান ঘটে।
১৯৯৫ – রাশিয়ার নেস্তেগস্কর শহরে প্রবল ভূমিকম্প। দুই হাজার লোকের প্রাণহানি।
১৯৯৬ – ভারতে বাজপেয়ী সরকারের পতন। দেবগৌড়া প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত।
১৯৯৮ – পাকিস্তান ৫টি পারমাণবিক বোমার সফল পরীক্ষা করেছে বলে ঘোষণা করে।
২০১০ জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়। যাতে প্রায় ১৪১জনের মৃত্যু হয়।
২০২৩ – নয়াদিল্লিতে বিস্তৃত পরিসরের নতুন ভারতীয় সংসদ ভবনের দ্বারোদ্ঘান হয়।

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

১৯৩৭ – অস্ট্রীয় মনোবিজ্ঞানী আলফ্রেড অ্যাডলার।
১৯৪২ – রমাপ্রসাদ চন্দ,ভারতীয় বাঙালি ইতিহাসবিদ ও পুরাতত্ত্ববিদ।
১৯৭৬ – জয়নুল আবেদিন , বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী।
১৯৯৪ – সাহিত্যিক ও রাজনীতিক আসহাব উদ্দীন।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

গ্রামোন্নয়নে কৃষির ভূমিকা -একটি সমীক্ষা : দিলীপ রায়।।।।

আমরা জানি, ভারত সরকার আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্যে গ্রামের মানুষের জীবিকার নিরাপত্তা ও আর্থিক ক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষপাতী । এই কথা মাথায় রেখে, সরকার গ্রামে সকলের অন্তর্ভুক্তিমূলক বিকাশের দিকে নজর দিয়ে কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ক্ষেত্রে রূপান্তর ত্বরান্বিত করার কৌশলগত পদক্ষেপ নিয়েছে বা নিচ্ছে ।

এটা ঘটনা, কেন্দ্রিয় সরকার ঘোষিত কল্যাণ প্রকল্প ও কর্মসূচিগুলোর লক্ষ্য হচ্ছে গ্রামাঞ্চলকে লাভ, উৎপাদনশীলতা ও সমৃদ্ধির কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা । এই লক্ষ্য পূরণে বাজেট বরাদ্দ সেইভাবে বাড়ানো হচ্ছে । তৈল বীজ ও ডাল উৎপাদন বাড়াতে এবং রান্নার তেলে স্বনির্ভর হতে দেশকে সাহায্য করার জন্য আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী সমবায় সমিতিগুলোকে ডাক দিয়েছেন (০৩-০৭-২০২৩) । এখানে একটা ঘটনা জানিয়ে রাখি, খাদ্যশস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে ২০২২-২৩ সালে শস্য ও শাক, সবজি, ফুল ও ফলের ফলন রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে । গত বছরের চেয়ে শস্যের উৎপাদন বেড়েছে ৪ শতাংশের বেশি । আর অন্যদিকে শাক, সবজি, ফুল ও ফল ফলেছে ১শতাংশের বেশি । প্রধান খাদ্যশস্য ধান ও গমের ফলনের রেকর্ডও উল্লেখযোগ্য । ধান ও গম উৎপাদন (২০২২-২৩) যথাক্রমে ১৩ কোটি ৫০ লক্ষ টন এবং ১১ কোটি টন । (তথ্যসূত্রঃ যোজনা-১২/২৩) । সুতরাং খাদ্যশস্য উৎপাদনে আমাদের দেশ একটা আত্মসন্তুষ্টির জায়গায় রয়েছে ।
এই কথাগুলি তুলে ধরার একটাই উদ্দেশ্য, গ্রামীণ বিকাশে কৃষিজাত ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির সরকারি দৃষ্টির ইতিবাচক দিকগুলির উপর এবং বাস্তব অবস্থান সম্পর্কে একটা ধারণা । আর একটি পরিসংখ্যানে (নীচে উল্লেখ করা হলো) দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশে দারিদ্রতার হার কমছে ।
ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভের প্রকাশিত ফ্যাক্টশিট থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১১-১২’এর তুলনায় ২০২২-২৩ সালে ভারতীয় পরিবারগুলির মাথাপিছু মাসিক ব্যয় অনেক বেড়েছে । একই সঙ্গে দারিদ্রের হার নেমে গেছে ২২.৯% থেকে ৫শতাংশের কাছাকাছি । এখন জানা যাক, দরিদ্র কাদের বলা হচ্ছে ? যে পরিবারের দৈনিক মাথাপিছু খরচ ২.১৫ ডলার বা তার কম, বিশ্ব ব্যাঙ্ক তাকে দরিদ্র বলছে । অর্থাৎ কোনো পরিবারের মাসিক মাথাপিছু খরচ ১৪৭৬ টাকা বা তার কম হলে বিশ্ব ব্যাঙ্কের মাপকাঠি অনুযায়ী তাকে দরিদ্র বলা যায় । বিনামূল্যে পাওয়া ভোগ্যবস্তু বাদে তাদের ব্যয় মাসে ১৩৭৩ টাকা, বিনামূল্যের পণ্য ধরলে তা ১৪৪১ টাকা । অর্থাৎ ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভের নতুন তথ্য অনুযায়ী দারিদ্রের হার ৫%-এ নেমে এসেছে । (সূত্রঃআঃবঃপঃ২৪.০৫.২০২৪) । সুতরাং আমরা যদি গ্রামীণ এলাকার মানুষের দিকে চোখ রাখি তাহলে আমরা বুঝতে পারব, সত্যিই কী দারিদ্রের হার কমেছে !
( ২ )
আমাদের দেশ মূলত কৃষিপ্রধান দেশ । তাই অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, কর্মসংস্থান-ভিত্তিক বিকাশের ক্ষেত্রে কৃষি অগ্রগণ্য । তাই গ্রামোন্নয়নের মূল স্তম্ভ হচ্ছে কৃষি । বলা চলে গ্রামীণ অর্থনীতি প্রায় সম্পূর্ণভাবে কৃষিনির্ভর । কৃষিই গ্রামীণ মানুষের জীবিকার মূল অবলম্বন । অধিকাংশ মানুষ সরাসরি চাষবাস করে জীবিকা নির্বাহ করে । অনেকে আবার কৃষির সঙ্গে যুক্ত আনুসঙ্গিক কাজ কর্মে নিয়োজিত । তাই কৃষি গ্রামীণ অর্থনীতির মেরুদন্ড । বিভিন্ন সমীক্ষার রিপোর্টে জানা গেছে, কৃষি থেকে প্রায় ৬৯ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করে । এটাও ভাববার বিষয়, কম জমিতে বেশি ফলন কীভাবে করা যায় ? তাই কৃষি অঞ্চল যেমন বাড়াতে হবে তেমনি উৎপাদনশীলতার উপর জোর দিতে হবে । যেমন পাঞ্জাবে ধান ও গম ফসলের যখন আবর্তন শুরু হয়, তখন খড় পোড়ানো শুরু হয় । একটাই উদ্দেশ্য জমির উর্বরতা বাড়ানো । যেখানেই এই ধান ও গমের আবর্তন রয়েছে, সেখানেই প্রয়োজন একটি রাইস বয়ো পার্কের । রাইস বয়ো পার্ক মানে ধানের প্রতিটি অংশ যেমন গাছ, খড়, খোসা, তুষ, পাতা, সবকিছুকেই কাজে লাগানো । এখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন, খড় পোড়ানোর ব্যাপারটা আবার দক্ষিণ ভারতে নেই । চাষি পরিবারে এখনও খড় ছোট ছোট করে কেটে গরুকে খাওয়ানোর রেওয়াজ বর্তমান । সুতরাং আমরা বলতে পারি এগুলির অর্থনৈতিক মূল্য রয়েছে । অতএব গ্রামীণ উন্নয়নে ও আর্থিক দৃষ্টিভঙ্গীতে এই জাতীয় অর্থকরী ফসলের রক্ষণাবেক্ষণ খুব জরুরি । শুধু তাই নয়, জমিতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে যথাযথ ধ্যান দেওয়া আশুকর্তব্য । (তথ্যসূত্রঃ যোজনা-১১/২৩) ।
কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নের আরও ধাপ হিসাবে আমরা দেখতে পাই উচ্চ ফলনশীল বীজের ব্যবহার, সার ও ঔষধের প্রয়োগ । তা ছাড়া বহুফসলি চাষের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির উপর জোর দেওয়া । কিন্তু বাস্তবে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ব্যাপকতা সেভাবে বাড়েনি । যার জন্য কৃষি ব্যবস্থা এখনও অনুন্নত এবং সেকেলের । শীর্ণদেহি বলদের কাঁধে লাঙ্গল জোয়াল জুড়িয়ে চলছে কৃষিকাজ । তবে একটা কথা এখানে প্রাসঙ্গিক, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য খাদ্য শস্যের উৎপাদন যেমন ধান, গম , জোয়ার, বাজরা, ভুট্টা অনেকটাই বেড়ে গেছে । মহাজনি প্রথা বিলোপের জন্য কৃষি ঋন দেওয়ার ক্ষেত্রে সমবায় গঠনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে । কৃষি ঋনের সহজলভ্যতার জন্য রয়েছে “জাতীয় কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্ক” (NABARD) । শস্যবীমা ও শস্যের ন্যুনতম দাম বেঁধে দেওয়ার ফলে গরীব কৃষকেরা অনিশ্চয়তার হাত থেকে যদিও কিছুটা রক্ষা পাচ্ছে । কিছুটা হলেও বর্তমানে চিরাচরিত কৃষি প্রথার বদলে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষের উপর ঝোঁক দেখা যাচ্ছে । অন্যদিকে এটাও ঘটনা, কৃষিজাত দ্রব্যের দাম কিন্তু অন্যান্য দ্রব্যের দামের সঙ্গে সমানতালে বাড়ে না । অথচ যত দিন যাচ্ছে চাষিদের চাষের খরচ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে । চাষে নিযুক্ত কৃষি শ্রমিকের দাম যেমন বাড়ছে, তেমনি চাষের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অর্থাৎ রাসায়নিক সার, ফসলের পোকা-মাকড় মারবার ঔষধপত্রের দামও বাড়ছে । ফলে চাষ থেকে উঠে আসা লভ্যাংশ ক্রমহ্রাসমান । চাষীর চাষজাত ফসলের দামের উপর গ্রামীণ অর্থনীতি নির্ভরশীল । অর্থকরী ফসলের উৎপাদনের অবস্থা তথৈবচ । আমরা জানি, অর্থকরী ফসল বলতে বিশেষ করে বাংলায় পাট চাষ । পাটের বাজারের তীব্র মন্দার কারণে পাট চাষও তলানীতে । সুতরাং গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গার স্বার্থে কৃষির উপর যথাযথ গুরুত্ব আরোপ ভীষণ জরুরি ।
( ৩ )
এবার আসছি কৃষিকাজে সারের ব্যবহারে । নিয়মিত জমির মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা চাষযোগ্য জমিতে উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদে বাঞ্ছনীয় । মাটি পরীক্ষার পর সঠিক সার নির্ধারন চাষের পক্ষে উপোযোগী । যার জন্য মাটি পরীক্ষার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে । এই কারণেই ‘রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা’ চালু হয়েছে । মাটির স্বাস্থ্য কার্ড বিলি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে । আমরা জানি, কৃষিজমিতে জৈব সার ব্যবহার ফসলের ফলনকে বাড়াতে সাহায্য করে । এই প্রসঙ্গে একটা কথা খুব জরুরি, খাদ্যের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে গেলে খাদ্যের যোগান-বৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী । আবার কিছু কিছু ফসল আছে যেগুলো সরাসরি খাদ্যের ব্যবহারে আসে না, যেমন তুলো, ইত্যাদি । তবুও আমাদের দেশের কৃষক সমাজ লাভের কথা মাথায় রেখে প্রযুক্তির সাহায্যে তুলো চাষকে লাভযোগ্য ফসল হিসাবে চাষ করছে । এইভাবে চাষের উন্নয়ন গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে প্রভাব ফেলবে ।
এবার দেখা যাক কৃষিক্ষেত্রকে চাঙ্গা করার স্বার্থে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির ভূমিকা । কেন্দ্রিয় সরকারের তথ্য থেকে দেখা যায় মোট প্রদত্ত ঋনের মধ্যে কৃষিক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাঙ্কগুলির ঋনের পরিমান ২০১০-১১ সালে মাত্র ২১.৭৬ শতাংশ । পশ্চিম বঙ্গে ২০১২-১৩ সালে (এপ্রিল-ডিসেম্বর) তথ্যে প্রকাশ, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি কৃষিঋন প্রকল্পে নির্দ্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪৯ শতাংশ ঋন প্রদান করেছে । আঞ্চলিক ব্যাঙ্কগুলি লক্ষ্যমাত্রার ২৮ শতাংশ ও সমব্যয় ব্যাঙ্কগুলি ৫০ শতাংশ ঋনপ্রদানে সাফল্যে লাভ করেছে । এছাড়া সমব্যয় ব্যাঙ্কগুলি রাজ্যের প্রাথমিক কৃষিঋন সমব্যয় সমিতিগুলির (প্যাকস্‌) মাধ্যমে কৃষিঋন ও কৃষিকাজের অন্যান্য উপাদানের জন্যে ঋন প্রদান করে । নাবার্ড উৎপাদনের মাধ্যমে সম্পদ সৃষ্টি করার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক, জমি ভাড়া বা ইজারা নিয়ে চাষ করে এমন কৃষক ও ভাগচাষিদের ঋন পরিষেবা দেবার জন্য প্রকল্প গ্রহন করেছে । এতে কৃষি উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়বে । দেশের আর্থিক উন্নয়নের হার বৃদ্ধির সুবিধা হবে (তথ্যসূত্রঃ যোজনা -৬/১৪) ।
( ৪ )
এবার একঝলক ভারতীয় অর্থনীতির চিত্রটা দেখে নেওয়া যাক । ভারতের অর্থনীতি বৈচিত্র্যময় । কৃষিকাজ, হস্তশিল্প, বস্ত্রশিল্প, উৎপাদন এবং বিভিন্ন সেবা ভারতের অর্থনীতির অংশ । ভারতের খেটে খাওয়া মানুষের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে কিংবা পরোক্ষভাবে কৃষিজমি থেকে জীবিকা নির্বাহ করে । এখনও ভারতের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো ৬৯ শতাংশ কৃষির উপর নির্ভরশীল । তবে সেবাখাত ক্রমশ প্রসারলাভ করছে, ফলে ভারতীয় অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে । ডিজিটাল যুগের আর্বিভাবের পর শিক্ষিত লোকের সহজলভ্যতাকে কাজে লাগিয়ে ভারত আউটসোর্সিং ও কারিগরি সহায়তাদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসাবে পরিণত হয়েছে বা হচ্ছে । এটা ঘটনা, ভারত সফটওয়্যার ও আর্থিক সেবার ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে অতি দক্ষ শ্রমিক সরবরাহ করে থাকে । এছাড়া ঔষধ শিল্প, জীবপ্রযুক্তি, ন্যানোপ্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ, জাহাজ নির্মাণ, পর্যটন শিল্পগুলিতে জোড়ালো প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ।
এবার আসছি আমাদের রাজ্যের দৃষ্টিভঙ্গিতে কৃষিব্যবস্থা । রাজ্যে কোনো অর্থকরী ফসলের জন্য সংশ্লিষ্ট কৃষককে আর বিমার প্রিমিয়াম দিতে হবে না । রাজ্য সরকার (পঃবঃ) এই সংক্রান্ত খরচ বহন করবে । বিধানসভায় কৃষি মন্ত্রী একথা জানিয়ে আরও বলেছেন, আগামী অর্থবর্ষের শুরুতে আলুসহ সমস্ত অর্থকরী ফসলের চাষীরা এই সুবিধা পাবেন । তিনি আরও বলেছেন, ২০২৩ সালের খারিফ মরশুমে প্রায় ৬০ লক্ষ কৃষক বাংলার শস্য বীমা যোজনা প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্ত করেছেন । আরও জানা যায়, ২০১৯ সালে এই প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে এপর্যন্ত ৯৮ লক্ষ কৃষককে এই প্রকল্পের আওতায় ফসলের ক্ষতি বাবদ ২৮৩৮ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে । (তথ্যসূত্রঃ যোজনা-৩/২৪) ।
কোনো একটা সূত্র থেকে জানা গেছে কেন্দ্রের সরকার কৃষকদের সব ধরনের সমস্যা দূর করতে উদ্যোগী হয়েছে । পিএম কিষাণ সম্মাননিধির আওতায় প্রত্যেক কৃষককে নগদ মূল্য দিয়ে সহযোগিতা করার উদ্যোগ নিয়েছে । কৃষিপণ্যের গুদামজাত করার সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উন্নতিতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে । আরও জানা গেছে বর্তমানে কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত অড়হর ডাল বিক্রির ক্ষেত্রে অন লাইনে সরাসরি সরকারকে বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছে । এতে কৃষকরা ভাল দাম পাচ্ছেন । (তথ্যসূত্রঃ যোজনা-২/২৪) ।
এই মুহূর্তে যেটা দরকার, কৃষিজাত ফসলের সঠিক দাম । ফসলের ন্যায্য দাম নিয়েই কৃষকদের মধ্যে যতো অশান্তি । ফসলের ন্যায্য দামের জন্য চাই ‘কৃষি বাজার’ । আমাদের দেশের চাষিরা উপযুক্ত বাজারের অভাবে তাঁদের বহু কষ্টার্জিত ফসলের দাম ঠিকমতো পায় না । ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা যাতে না ঠকে, তার জন্য চাই সুসংহত কৃষি বিপননের পরিকাঠামো । প্রয়োজনে কৃষি-বাণিজ্য নীতির খোলনলচে পাল্টানো । যাতে কৃষকের কৃষি-পণ্যের জন্য সরকার কর্তৃক উপযূক্ত “লাভজনক দাম” বা সংগ্রহ মূল্যের নির্ধারন ও নিশ্চয়তা প্রদান সম্ভব হয় । সবশেষে যেটা জরুরি, সেটা হচ্ছে কৃষি বীমার সম্প্রসারণ । কৃষি কাজ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ । কৃষি ক্ষেত্রে অনেক অর্থ ও শ্রম বিনিয়োগ করে আশানুরূপ ফল না পেলে কৃষকের দুর্দশা বাড়ে । এজন্য শস্য বীমা, কৃষি বীমা, ইত্যাদি বীমার আরও জোরদার করা সময়োপযোগী । বীমার আওতায় যাতে সমস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি আসে সেদিকে সরকারি সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গি আশুকর্তব্য ।
পরিশেষে কৃষি ব্যবস্থাকে চাঙ্গা করতে পারলে গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে । কৃষি ব্যবস্থা চাঙ্গা হলে গ্রামোন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে । অন্যদিকে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হলে গ্রামীণ মানুষদের মধ্যে স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়বে । তাঁদের মুখে হাসি ফুটবে।

কলমেঃ দিলীপ রায় (+৯১ ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)
(তথ্যসুত্রঃ সংগৃহীত ও উল্লেখিত যোজনা) ।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

বাঙালি জাতীয়তাবাদী নজরুল :: অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায়।।।

‘পরোয়া করি না, বাঁচি বা না-বাঁচি যুগের হুজুগ কেটে গেলে,মাথায় উপরে জ্বলিছেন রবি, রয়েছে সোনার শত ছেলে।

প্রার্থনা ক’রো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস,
যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ!’
নজরুল তাঁর লেখা নিছক কাব্য করতে হবে বলেই লেখেন নি। এমন কি কালোত্তীর্ণ হবার কোনও বাসনাও তাঁর ছিল না।

ছিল সমাজের প্রতি, জাতির প্রতি একটা দায়বদ্ধতা। সারা জীবন খুব একটা সুখে কাটেনি তাঁর। সোনার চামচ মুখে নিয়ে তো জন্মান নি। উপরন্তু আশৈশব লড়াই করে গেছেন। মাত্র আট বছর বয়সে পিতৃ বিয়োগ। তারপর কখনো রুটির দোকানে চাকরি, কখনো মসজিদের মুয়াজ্জিন আবার কখনো লেটো দলে কাজ। সাহিত্যের জগতে পা রাখা বোধহয় এই লেটো দলের বিভিন্ন নাটকের জন্য গান ও কবিতা লেখার মধ্য দিয়েই। তারপর ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান। সেখান থেকে ফিরে সাংবাদিকতা। এমন বর্ণময় অথচ মাটির কাছাকাছি থেকে নিরন্তর সংগ্রাম তাঁকে সমাজের প্রতি এতোখানি দায়বদ্ধ করে তুলেছিল।
নজরুল ইসলামের বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহিদা খাতুন। বাবা ফকির আহমদ ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং মাযারের খাদেম। দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করা নজরুলের প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মভিত্তিক। অথচ, তাঁর সমগ্র জীবনকে চর্চা করলে দেখতে পাওয়া যাবে তিনি যতখানি মুসলমান, ঠিক ততখানিই হিন্দু। আবার সমগ্র ধর্মীয় গোঁড়ামির উর্ধে তিনিই দৃপ্তকন্ঠে বলতে পারেন, ‘এই হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোনও মন্দির-কাবা নেই’। বাংলার নবজাগরণের যে ঐতিহ্যের সূত্রপাত বাঙালির রাম রাজা রামমোহনের হাত ধরে, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ হয়ে সেই মশাল বহন করে নিয়ে গেছেন নজরুল।
আজীবন রাজনৈতিক ভাবে সচেতন এক ব্যক্তি নজরুল। সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনায় বিশ্বাস রাখতেন তিনি। নজরুলের এক হাতে ‘বাঁকা বাঁশের বাঁশরী/ আর হাতে রণ-তূর্য।’ অজস্র রাজনৈতিক মতাদর্শের সাথে ঘনিষ্ঠতা থাকলেও নজরুলের জীবন আদ্যোপান্ত বিশ্লেষণ করলে বুঝতে বাকি থাকে না বাঙালি জাতীয়তাবাদ তাঁর হাত ধরেই বাঙালির মননে প্রবেশ করেছে। দ্বিজাতি তত্ত্বের শরাঘাতে বিভক্ত যে জাতি, তাকে কেবলমাত্র বাঙালির পরিচয়ে একত্রিত করার গান গেয়ে এসেছেন আজীবন। জাতীয়তা বনাম সম্প্রদায়বাদী চেতনাই যে দেশীয় রাজনীতির প্রধান দ্বন্দ্ব্ব সেটা বুঝতে তাঁর বাকি ছিল না। তাই তাঁর সাধনা ‘সেক্যুলার বাঙালি জাতীয়তা’র সাধনা। এই সাধনা তাঁর কাব্য সৃষ্টি ও রাজনৈতিক কর্মে উদ্ভাসিত। মত ও পথ বদলেছে, কিন্তু বদলায় নি গন্তব্য। তিনি কখনও গান্ধীবাদী, কখনও স্বরাজ্যপন্থি, কখনও বিপ্লববাদী, কিন্তু বরাবরই সেক্যুলার বাঙালি জাতীয়তাবাদী, এমনকি সাম্যবাদী হয়েও ওই একই নিশানা তার।
‘বাঙালি যেদিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলতে পারবে- ‘বাঙালির বাংলা’ সেদিন তারা অসাধ্য সাধন করবে। বাঙালির মতো জ্ঞান-শক্তি ও প্রেম-শক্তি (ব্রেন সেন্টার ও হার্ট সেন্টার) এশিয়ায় কেন, বুঝি পৃথিবীতে কোনো জাতির নেই। কিন্তু কর্ম-শক্তি একেবারে নেই বলেই তাদের এই দিব্যশক্তি তমসাচ্ছন্ন হয়ে আছে। তাদের কর্ম-বিমুখতা, জড়ত্ব, মৃত্যুভয়, আলস্য, তন্দ্রা, নিদ্রা, ব্যবসা-বাণিজ্যে অনিচ্ছার কারণ। তারা তামসিকতায় আচ্ছন্ন হয়ে চেতনা-শক্তিকে হারিয়ে ফেলেছে’। বাঙালির বাংলা প্রবন্ধে এই উক্তি নজরুলের নিজের। আবার একই প্রবন্ধে আরেক জায়গায় তিনি বলছেন, ‘বাংলা সর্ব ঐশীশক্তির পীঠস্থান। হেথায় লক্ষ লক্ষ যোগী মুনি ঋষি তপস্বীর পীঠস্থান, সমাধি; সহস্র ফকির-দরবেশ অলি-গাজির দর্গা পরম পবিত্র। হেথায় গ্রামে হয় আজানের সাথে শঙ্খঘণ্টার ধ্বনি। এখানে যে শাসনকর্তা হয়ে এসেছে সেই স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। বাংলার আবহাওয়ায় আছে স্বাধীনতা-মন্ত্রের সঞ্জীবনী শক্তি। আমাদের বাংলা নিত্য মহিমাময়ী, নিত্য সুন্দর, নিত্য পবিত্র’। এই লাইনগুলো পড়েও কাজী নজরুল ইসলামের মূল রাজনৈতিক আদর্শ যে ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদ ছিল, এটা বুঝতে বাকি থাকে না। বাঙালিকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান কাজী নজরুল ইসলামই দান করেন। এই কবিতায় তিনিই লিখলেন,
‘জয় বাংলার পূর্ণচন্দ্র, জয় জয় আদি-অন্তরীণ!
জয় যুগে-যুগে-আসা-সেনাপতি, জয় প্রাণ আদি-অন্তহীন!’
এই কবিতার ছত্রে ছত্রে বাংলা ও বাঙালিয়ানার জয়গান গাওয়া হয়েছে। এই জয়গানই পূর্ব পাকিস্তানের শেখ মুজিবর রহমানকে প্রেরণা জোগালো বাঙালি জাতিয়তাবাদে নেতৃত্ব দিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে ওঠার। বর্তমান পশ্চিম বর্ধমান জেলার ছোট্ট গ্রামে জন্মানো সেদিনের সেই ছোট্ট দুখু মিঞা আজ দুই বাংলার অগণিত বাঙালি জাতীয়তাবাদের মুল প্রেরণা।
(প্রাবন্ধিক অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় ডাঃ বি.সি. রায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সহকারী অধ্যাপক। অধ্যাপনার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চার নেশা। প্রবন্ধ ছাড়াও গল্প এবং কবিতার জগতও তাঁর বিচরণ ক্ষেত্র। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘সলতে’, ‘আমাদের পঞ্চম’কার সাধন’, ‘পিওনি ফুলের বিপরীতে’। সুরজিত ও বন্ধুরা কবিতা ক্লাব থেকে পেয়েছেন ‘কলমকার’ সম্মাননা। রাজ্য যুব ও ক্রীড়া দফতর থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন ছোটগল্পকার হিসেবে।)

Share This
Categories
রিভিউ

জীবণ বদলে দেওয়া ২৫ টি বিখ্যাত উক্তি।।।

জীবণ সম্পর্কে জানতে হলে এবং জীবনে এগিয়ে যেতে হলে আমাদের বিখ্যত মানুষদের জীবনী ও তাদের উক্তি গুলি অধ্যায়ন করা দরকার। নীচে এমন কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিদের উক্তি তুলে ধরা হলো যা আমাদের চলার পথকে সুগম করবে।
১. ‘The way to get started is to quit talking and begin doing.’ – Walt Disney ‘শুরু করার উপায় হলো কথা বন্ধ করা এবং কাজ শুরু করা।’ – ওয়াল্ট ডিজনি
২. ‘If life were predictable it would cease to be life, and be without flavor.’ – Eleanor Roosevelt
‘জীবন যদি ভবিষ্যদ্বাণীমূলক হতো তাহলে এটি জীবন থাকতো না, এবং স্বাদ ছাড়াই হয়ে যেত।’ – এলিয়েনার রুজভেল্ট
৩. ‘It is during our darkest moments that we must focus to see the light.’ – Aristotle
‘আমাদের সব চেয়ে অন্ধকার সময়ে আমাদের আলো দেখার জন্য মনোনিবেশ করা উচিত।’ – আরিস্টটল
৪. ‘Whoever is happy will make others happy too.’ – Anne Frank
‘যে সুখী সে অন্যকেও সুখী করবে’ – অ্যান ফ্র্যাঙ্ক
৫. ‘Do not go where the path may lead, go instead where there is no path and leave a trail.’ – Ralph Waldo Emerson
‘সেখানে যেও না যেইখানে পথ নিয়ে যায়, পরিবর্তে সেখানে যাও যেখানে কোনো পথ নেই এবং একটি পথচিহ্ন ছেড়ে দাও।’ – রালফ ওয়াল্ডো এমারসন
৬. ‘You will face many defeats in life, but never let yourself be defeated.’ – Maya Angelou
‘আপনি জীবনে অনেক পরাজয়ের মুখোমুখি হবেন, কিন্তু নিজেকে কখনও পরাজিত হতে দেবেন না।’ – মায়া অ্যাঞ্জেলু
৭. ‘I never dreamed about success, I worked for it.’ – Estee Lauder
‘আমি কখনও সাফল্যের স্বপ্ন দেখিনি, আমি এর জন্য কাজ করেছি।’ – এস্টি লাউডের
৮. ‘It is better to fail in originality than to succeed in imitation.’ – Herman Melville
‘অনুকরণে সফল হওয়ার চেয়ে মৌলিকতায় ব্যর্থ হওয়া ভাল।’ – হার্মান মেলভিল
৯. ‘There is nothing permanent except change.’ – Heraclitus
‘পরিবর্তন ছাড়া স্থায়ী কিছুই নেই।’ – হেরাক্লিটাস
১০. ‘Believe you can and you’re halfway there.’ – Theodore Roosevelt
‘বিশ্বাস করুন আপনি পারবেন এবং আপনি সেখানে অর্ধেক।’ – থিওডোর রোজভেল্ট
১১. ‘You become what you believe.’ – Oprah Winfrey
‘আপনি যা বিশ্বাস করেন তাই হয়ে যান।’ – অপরাহ উইনফ্রে
১২. ‘The greatest glory in living lies not in never falling, but in rising every time we fall.’ – Nelson Mandela
‘জীবনযাপনের সর্বাধিক গৌরব কখনই পড়ে যাওয়াতে নয়, বরং প্রতিবারই আমরা পড়ে যাওয়ার পরে উঠে দাঁড়ানো তে রয়েছে।’ – নেলসন ম্যান্ডেলা
১৩. ‘The only true wisdom is in knowing you know nothing.’ – Socrates
‘একমাত্র সত্য জ্ঞান আপনি কিছুই জানেন না তা জানার মধ্যে রয়েছে।’ – সক্রেটিস
১৪. ‘Everything has beauty, but not everyone sees it.’ – Confucius
‘সব কিছুরই সৌন্দর্য আছে তবে সবাই তা দেখে না।’ – কনফুসিয়াস
১৫. ‘If you live to be a hundred, I want to live to be a hundred minus one day so I never have to live without you.’ – A. A. Milne
‘তুমি যদি একশো বাঁচো, তবে আমি একশো বিয়োগ একদিন বেঁচে থাকতে চাই যাতে আমায় তোমাকে ছাড়া কখনো না থাকতে হয়।’ – এ. এ. মিলনে
১৬. ‘Life isn’t about finding yourself. Life is about creating yourself.’ – George Bernard Shaw
‘জীবন নিজেকে সন্ধান করার ব্যাপারে নয়। জীবন নিজেকে সৃষ্টির ব্যাপারে।’ – জর্জ বার্নার্ড শ
১৭. ‘Love isn’t something you find. Love is something that finds you.’ – Loretta Young
‘ভালবাসা এমন কিছু নয় যা আপনি খুঁজে পান। ভালবাসা এমন একটি বিষয় যা আপনাকে খুঁজে পায়।’ – লরেট্টা ইয়ং
১৮. ‘Where there is love there is life.’ – Mahatma Gandhi
‘যেখানে প্রেম আছে সেখানে জীবন আছে।’ – মহাত্মা গান্ধী
১৯. ‘Do not dwell in the past, do not dream of the future, concentrate the mind on the present moment.’ – Buddha
‘অতীতে বাস করবেন না, ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখবেন না, বর্তমান মুহুর্তে মনকে একাগ্র করুন।’ – বুদ্ধ
২০. ‘Education is the most powerful weapon which you can use to change the world.’ – Nelson Mandela
‘শিক্ষা হল সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র যা আপনি বিশ্বকে পরিবর্তন করতে ব্যবহার করতে পারেন।’ – নেলসন ম্যান্ডেলা
২১. ‘Before anything else, preparation is the key to success.’ – Alexander Graham Bell
‘অন্য যে কোনও কিছুর আগে প্রস্তুতিই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।’ – আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল
২২. ‘Try to be a rainbow in someone’s cloud.’ – Maya Angelou
‘কারও মেঘে রংধনু হওয়ার চেষ্টা করুন।’ – মায়া অ্যাঞ্জেলু
২৩. ‘The beginning is the most important part of the work.’ – Plato
‘শুরুটি কাজটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’ – প্লেটো
২৪. ‘Problems are not stop signs, they are guidelines.’ – Robert H. Schuller
বাংলা অর্থ: ‘সমস্যাগুলি থামার লক্ষণ নয়, তারা নির্দেশিকা।’ – রবার্ট এইচ. শুলার
২৫. ‘Whatever the mind of man can conceive and believe, it can achieve.’ – Napoleon Hill
‘মানুষের মন যা ধারণা ও বিশ্বাস করতে পারে তা অর্জন করতে পারে।’ – নেপোলিয়ন হিল

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ ২৭ মে, ইতিহাসের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নেব ইতিহাসের এই দিনে বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু, দিনসহ ঘটে যাওয়া ঘটনা।।।

আজ ২৭ মে। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু দিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৩৩২ – ইবনে খালদুন, আরব মুসলিম পণ্ডিত।

আধুনিক সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস ও অর্থনীতির জনকদের মধ্যে তিনি অন্যতম বিবেচিত হন।
১৮৫২ – বিলি বার্নস, পেশাদার ইংরেজ ক্রিকেটার।
১৮৬৩ – আর্থার মোল্ড, ইংরেজ ক্রিকেট খেলোয়াড়।
১৮৯০ – যতীন্দ্রপ্রসাদ ভট্টাচার্য, একজন বাঙালি কবি ।
১৯০৩ – যোগেশচন্দ্র বাগল প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সম্পাদক ।
১৯৯৫ – সাবিলা নূর বাংলাদেশী মডেল ও অভিনেত্রী

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

১৭০৩ – পিটার দি গ্রেট কর্তৃক সেন্ট পিটার্সবুর্গ (লেনিনগ্রাদ) শহরের পত্তন হয় ।
১৭৬৭ – কলকাতায় প্রথম প্রটেস্টান্ট গির্জা নির্মিত।
১৮৩৭ – আলজেরিয়ার স্বাধীনতাকামী নেতা আবদুল ক্বাদেরের সাথে ফ্রান্স সরকারের একটি শান্তিচূক্তি হয়।

১৮৮৩ – তৃতীয় আলেকজান্ডার রাশিয়ার রাজা হন।
১৯১৯ – জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করে বড়লাট লর্ড চেমস ফোর্ডকে চিঠি দেন।
১৯১৯ – এনসি-৪ এয়ারক্রাফট অবতরণ করে লিসবনে, প্রথম উড্ডয়ন শেষ করে।
১৯২৬ – মরোক্কোর রিফ এলাকায় ফরাসী ও স্পেনীয় উপনিবেশবাদীদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের ঐতিহাসিক গণপ্রতিরোধ বা বিদ্রোহ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
১৯২৭ – বৈমানিক চার্লস লিন্ডবার্গ একাকী বিমান চালিয়ে বিশ্বে প্রথম আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার জন্য যাত্রা শুরু করেন।
১৯৩০ – নিউইয়র্কে ১০৪৬ ফুট বিল্ডিংটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়, যেটি সে সময় মানুষের তৈরি দীর্ঘতম ভবন।
১৯৩২ – খ্যাতনামা সাহিত্যিক ও মানবতাবাদী রমাঁ রল্যাঁ ও অঁরি বারব্যুস যৌথভাবে আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিরোধী সমাবেশ আহবানে করেন।
১৯৫২ – ইউরোপীয় প্রতীরক্ষা গোষ্ঠী গঠিত হয়।
১৯৭২ – যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সল্ট-১ চুক্তি স্বাক্ষর।
১৯৮৯ – বার্মার সামরিক শাসকগোষ্ঠী দেশের নাম পরিবর্তন করে দ্য ইউনিয়ন অব মায়ানমার রাখে এবং রেঙ্গুনের নাম পালটে রাখে ইয়াঙ্গুন।
২০০৬ – ‘জাভা’ ভূমিকম্প ভোর ৫টা ৫৩ মিনিটের সময় তীব্র আঘাত করে ইওগাকার্তায়। প্রায় ৬ হাজার ৬০০ লোকের প্রাণহানি ঘটে।

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

১৯১০ – রবার্ট কখ, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জার্মান জীব বিজ্ঞানী।

১৯৩০- স্পেনীয় কথাসাহিত্যিক গাব্রিয়েল মিরো।

১৯৬৪ – জহরলাল নেহরু, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী।

১৯৭৫ – নৃপতি চট্টোপাধ্যায়, বাঙালি অভিনেতা।

১৯৮৬ – অজয় মুখোপাধ্যায়, পশ্চিম বাংলার চতুর্থ ও ষষ্ঠ মুখ্যমন্ত্রী।
১৯৯৫ – শ্যামাদাস চট্টোপাধ্যায় – আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি পরমাণুবিজ্ঞানী।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This