Categories
গল্প নারী কথা প্রবন্ধ

জানুন শতবর্ষ প্রাচীন নন্দিনী পুজোর ইতিহাস।।।।

দেবী নন্দিনী পূজোর কথা শুনেছেন! স্নান সেরে বসুন্ধরার মাটির ঢেলা মাথায় করে বয়ে নিয়ে এসে পুজো দেন ভক্তরা, বর্তমানে মাটির পাহাড় তৈরি হয়েছে সেখানে, অন্যদিকে মাটি নিতে নিতে একসময়ের ছাড়া গঙ্গা পুনরায় জলপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা। নদীয়ার শান্তিপুর ব্লকের পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সগুনা এলাকায় শতবর্ষ প্রাচীন নন্দিনী পুজো অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে বৈশাখী পূর্ণিমায় এলাকার মানুষের বিশ্বাস অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রামের সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি সন্তানহীনতা এবং ব্যথা সংক্রান্ত নানান রোগ ভালো হয়েছে এখানে পুজো দিয়ে।

সন্তানাদির জন্ম এবং তাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য মায়েরা এখানকার মাটি মেখে থাকেন।

এলাকার প্রবীনরা জানালেন, চাষ করতে আসা ট্রলার ট্রাক্টর জমিতে পুঁতে গেলে তা উদ্ধার হয় পুজোদিলে। আর এই সকল কারণে শুধুমাত্র এই গ্রাম নয় আশেপাশের বিভিন্ন গ্রাম সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও পর্যন্ত আজকের দিনে নন্দিনী দেবীর পুজোতে মাটি দিতে উপস্থিত হন ভক্তরা। শুধু হিন্দু ধর্মেই নয় পার্শ্ববর্তী মুসলমান সম্প্রদায়ের অনেকেই মানত করতে মাটি দিয়ে থাকেন।
তবে এলাকার প্রবীণরা আজও উদ্ধার করতে পারেননি প্রতিবছর এই দিনে প্রথম কে মাটি দেয়, যত ভোরেই পৌঁছাক না কেনো, যে প্রথম পৌঁছায় তিনিও গিয়ে দেখেন তার আগে কেউ একজন মাটি দিয়ে রেখেছে।
একসময় পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গা এখন পলি পড়েছে তবে সে সময় জল থাকতো, সেখান থেকে স্নান করে এবং চাষের জমি থেকে মাটি মাথায় নিয়ে, পাহাড়সম চুড়ায় নিম গাছের গোড়ায় পুজো দিয়ে থাকেন পূর্ণর্থীরা। তবে কোন মূর্তি নয়, জাগ্রত সুউচ্চ ঢিলা ভূমি এবং গাছের গোড়াই এখানে দেবতা।

মনস্কামনা পূর্ণ হওয়া ভক্তবৃন্দরা খিচুড়ি এবং বিভিন্ন তরকারি ভোগের প্রসাদ হিসেবে আগত হাজার হাজার ভক্ত বৃন্দকে বিতরণ করেন বিভিন্নজন। এই উপলক্ষে প্রত্যেক বাড়িতে আজ রান্না বন্ধ। মহিলারা সকলে এসে হাতে হাত লাগিয়ে রান্নার কাজ করে থাকেন। বর্তমানে এই পুজো ঐতিহ্য এবং পরম্পরায় পরিণত হয়েছে। তবে প্রত্যেকের মুখেই বিষাদের সুর। হাজার হাজার পুর্নার্থীদের স্নান করার জলের অভাব, মহিলাদের শৌচাগার এবং স্নানের পর ভিজে কাপড় জামা পরিবর্তনের ঘর, বিপদজনক উচ্চতায় উঠতে সিঁড়ি, উচ্চ বাতিস্তম্ভ , পানীয় জলের কল এ সবই প্রয়োজন। পঞ্চায়েত সদস্য হোক বা সমিতি কিংবা জেলা পরিষদ কেউ কখনোই খোঁজ নিয়ে , তৎপর হননি। তবে সামনে গতবার বিধায়ক ড : ব্রজকিশোর গোস্বামী এসে কথা দিয়েছিলেন সিঁড়ি করার, এ বছরের নির্বাচন পড়ার কারণে তা এখনো শুরু হয়নি তবে আগামীতে তা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বাকি কাজগুলির জন্য অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের প্রতীক্ষায় এলাকাবাসী।

উদ্যোক্তারা জানালেন পুজো আজ হলেও পাঁচ দিন যাবত চলে মেলা এবং বিভিন্ন ধর্মীয় ও সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
নানান অলৌকিক কথা শোনা গেল এই পুজো সম্পর্কে, ভক্তরা জানালেন উঁচু ওই মাটির ঢিবিতে কখনো বাজি পটকা ফাটেনা নিম গাছগুলিতে মাইক লাগালে তা কিছুক্ষণ পরে বন্ধ হয়ে যায়, চাষের জমিতে ট্রাক্টর কিংবা অন্যান্য গাড়ি ফেসে গেলে পুজো না দেওয়া পর্যন্ত কারোর সাধ্য নেই সেই গাড়ি তোলে. তবে এসব ই ভক্তবৃন্দদের বিশ্বাস।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

কাজী নজরুল ইসলাম ও দুই নারী : কামনা দেব।।।

কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনেও দুই নারী ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেছেন। ঠিক কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে যেমন দুইজন নারী অত্যন্ত গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন ।তেমনই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে ও কাজী নজরুল ইসলামের জীবনে দুই নারীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

শুধুমাত্র তফাৎ ছিলো, এই দুই নারীর মধ্যে মৃণালিনী দেবী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী আর কাদম্বরী দেবী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের বৌদি। রবীন্দ্রনাথের বৌদি কাদম্বরী দেবী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ে দু’বছরের বড় ছিলেন এবং রবীন্দ্রনাথের কিশোরবেলার খেলার সাথীও ছিলেন। একসাথে বড় হতে হতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যের সকল শাখায় যেমন প্রতিভা প্রস্ফুটিত হতে থাকে, তেমনি কাদম্বরী দেবীও প্রচুর পড়াশুনা করে কবির রচনার প্রথম পাঠক ও প্রধান সমজদার পাঠক হতে পেরেছিলেন। অনেকক্ষেত্রেই কাদম্বরী দেবী কবির সৃষ্ট রচনাগুলোর পর্যালোচনা করে কিছু পরিমার্জন করে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতেও সাহায্য করেছেন। অন্যদিকে মৃণালিনী দেবীও অনেক পড়াশুনা করেছিলেন। কিন্তু অত অল্প সময়ের মধ্যে পাঁচ পাঁচটা সন্তান, তাদের লালন পালন ও সন্তানের অকাল মৃত্যু, বিরাট সংসারের রক্ষণাবেক্ষণ, অতগুলো লোকের রান্না বান্না – এসব নিয়ে তাঁকে সদাই ব্যস্ত থাকতে হতো বলে এদিকটা আর এতো এগুতে পারেন নাই।
অপরদিকে কাজী নজরুল ইসলামের জীবনে দুই নারীই তাঁর নিজের স্ত্রী ছিলেন বলে কেউ বলেন আবার কেউ বলেন নয় , তবে একজনের নাম ছিল সৈয়দা খাতুন আর কবি নজরুল নাম রেখেছিলেন নার্গিস। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কবির কখনো ঘর করা হয়ে ওঠেনি।
আরেক নারী আ আশালতা সেনগুপ্তা এবং ডাকনাম ছিল দুলী, কবি নাম রেখেছিলেন প্রমীলা। এই নারীর সাথে বিয়েটা হয় নার্গিসের সাথে বিয়ের দিন আসর থেকে চলে আসার প্রায় তিন বছর পরে। তবে লক্ষ্যনীয় ব্যপার হলো উভয় নারীই তখনকার বৃহত্তর ত্রিপুরা অর্থাৎ বর্তমানের কুমিল্লার ছিলেন। দুইজনেই বিয়ের পরে অনেক পড়াশুনা করেছিলেন।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বৌদি কাদম্বরী দেবী যেমন হঠাৎ আত্মহত্যা করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন থেকে বিদায় নেন, তেমনি নার্গিসও কেবলমাত্র বিয়ের রাতটুকু ছাড়া, কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গেও আর কোন সম্পর্কই ছিল না। আবার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী মৃণালিনী দেবী যেমন অসুস্থ হয়ে রবিঠাকুরের অনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন, তেমনি কবি নজরুলের স্ত্রী প্রমীলা দেবীও কবি নজরুলের আগেই অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছিলেন।
যেহেতু এখানে কাজী নজরুল ইসলাম প্রসঙ্গে লিখতে হচ্ছে , তাই কাজী কবি নজরুল ইসলামের বিষয়টির উপর অনুধাবন করতে হলে মনে হয় যতটা গোড়ার শুরু করতে পারা যায়, ততটাই কবির সম্পর্কে জানতে পারবো।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম বাংলা ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ, ইংরেজি ১৮৯৯ খৃষ্টাব্দের ২৫শে মে, মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে। মাত্র আট বছর বয়সেই কবি পিতা ফকির আহমদকে হারান। টাকা পয়সার অভাবে কবি লেখাপড়া পর্যন্ত করতে পারছিলেন না। এদিকে কবির ছিল প্রচণ্ড গান বাজনায় ঝোঁক । তাই কবি নজরুল নামমাত্র লেখাপড়া করে স্থানীয় *লেটো* গানের দলে যোগ দেন। এখানে কিছুদিন গান করার পর কবির মনে হল যে, এরকম গান তো তিনি নিজেই লিখতে বানাতে পারেন। তাই তিনি গান লেখা শুরু করে দিলেন। ঐ অত অল্পবয়সের লেখা গানের কথা ও ভঙ্গি তখন অনেকেরই নজর কেড়ে নিয়েছিল এবং বেশ কৌতূহলও সৃষ্টি হয়েছিল তাদের মধ্যে। কিন্তু এতে মুশকিল ছিল , সেখান থেকে তার তেমন কিছুই আয় হচ্ছিল না। ফলে ঐ বয়সেই কবি নজরুল গ্রামের হাজী পাহালওয়ান শাহের মসজিদে খাদেমগিরি শুরু করে দেন। ঐ কাজের মধ্যে পীর সাহেবের মাজারে সাঁঝের বাতি দেওয়ার কাজটাও কবিকে করতে হতো। কিন্তু সেই কাজেও কবি নজরুলের তেমন সুবিধে হচ্ছিল না দেখে তিনি মিলিটারিতে গিয়ে যোগ দেন ১৯১৭ সালে।
কবি নজরুল ইসলাম মিলিটারির যে কাজে যোগদান করেন, সেই ইউনিটটার নাম ছিল, – * ৪৯ নম্বর বাঙ্গালী পল্টন*।
মিলিটারিতে যোগদান করার পর কাজের জন্যই কবিকে করাচি চলে যেতে হয়। স্কুলের তেমন পড়াশুনার সুযোগ না হলেও, পড়াশুনা ও জ্ঞান আহরণের অদম্য ইচ্ছা ছিল কবি নজরুলের মধ্যে। তাই কবি কাজের ফাঁকে খোঁজা খুঁজি করে সেখানে একজন জ্ঞানী পাঞ্জাবী মৌলভী সাহেবের সন্ধান পান। সেই মৌলভীর কাছ থেকেই কবি কাজী নজরুল ইসলাম *দেওয়ান-ই-হাফিজ* ও ফার্সি ভাষার আরো নানা মূল্যবান কাব্যগন্থের সংস্পর্শে আসেন এবং সেই বিষয়গুলোর উপর শিক্ষালাভ করার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেন। এভাবেই একদিন কাজী নজরুল ইসলাম পৃথিবীর অন্যতম প্রথম সারীর মহৎ সাহিত্যের সংস্পর্শে চলে আসেন। কবির গভীর অনুসন্ধিৎসু মন, এবং গভীর কাব্য দর্শনের অতল গভীরে ডুব দেবার সুযোগ পান। কাজী নজরুল ইসলাম মানব মহাজীবনের সন্ধানে ঢোকার সিঁড়ি ধাপে ধাপে পেয়ে যান।
আরব সাগরের পাড়ে বর্তমানের পাকিস্তানের করাচী শহরে বসে তিনি ‘মুক্তি’, ‘কবিতা-সমাধি’, ‘রিক্তের বেদন’, ‘ব্যথার দান’, ‘হেনা’ নামের ব্যতিক্রমধর্মী, অসাধারণ বিস্ময়কর কবিতা ও গল্প রচনা করতে থাকেন। পাঠক সমাজ তখন বুঝতে পারছিলেন বাংলা সাহিত্যের আকাশে আর একটি প্রবল শক্তিময় আলোর দ্যুতি ছড়ানো সূর্যের আবির্ভাব হতে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে গুজব ওঠে যে, *বাঙ্গালী পল্টন* ভেঙ্গে দেওয়ার কথা । তা শুনেই কবি ভবিষ্যতে কি করবেন সেই চিন্তা করতে করতে দেশের বাড়ি চুরুলিয়ায় এসেছিলেন।
১৯২৯ সালে যখন সত্যিই *বাঙ্গালী পল্টন* ভেঙ্গে দেওয়া হল,তখন কবি বর্ধমান জেলার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট এর অধীনে সাব-রেজিস্ট্রার -এর পদের জন্য দরখাস্ত করেন। সেখানেও কিছু সুবিধা না হওয়ায় তিনি চাকরীর খোঁজে কলকাতাতে চলে যান। কলকাতায় পৌঁছেই তিনি প্রথমে সতীর্থ বন্ধু শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের মেসে উঠেন। এরপরে তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজের সামনে ৩২ নং কলেজ স্ট্রীটে অবস্থিত *বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি* এর কার্যালয়ে যান। সেখানে *বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা* -এর সম্পাদক, কমরেড মোজাফফর আহমেদ ও *মোসলেম ভারত* পত্রিকার কর্ণধার আফজালুল হক থাকতেন। এঁদের সঙ্গে কবির আলাপ হবার পর ঐ ঠিকানাতেই কাজী নজরুল ইসলামের থাকার ব্যবস্থা হয়। এর প্রায় পাঁচ ছয় মাস পরে, কবি নজরুল কাউকে কিছু না বলে হঠাৎই একদিন কুমিল্লা চলে যান। ব্যাপারটা আন্দাজ করতে না পেরে সবাই মিলে কাজী নজরুল ইসলামের অন্তরঙ্গ গায়ক বন্ধু, শ্রী নলিনীকান্ত সরকারের শরণাপন্ন হন। নলিনীবাবুর কথাটা ছিল মোটামুটি এইরকম যে, *নজরুলের প্রাত্যহিক গতিবিধি ও কার্য্যসূচীর সন্ধান আগে থেকেই আমার জানা থাকতো। একদিন সারা বিকেলটা নজরুলের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে পরদিন সকাল বেলায় গিয়ে দেখি, নজরুল ঘরে নেই। তাঁর একজন সহকক্ষবাসী বন্ধু মোসলেম-ভারতের কর্ণধার, আফজালুল হক হাসতে হাসতে বললেন, *সে তো কাল রাত্তিরে কুমিল্লা চলে গেছে*।
তিনি বললেন,- *কৈ, কাল তো কিছু বললো না*। সহকক্ষবাসী বন্ধু বললেন,- *বলবে কি করে? কাল সন্ধ্যার পর এক ভদ্রলোক এসে কি সব কথাবার্তা বলে কুমিল্লা যাবার প্রস্তাব করলেন। প্রস্তাব, অনুমোদন, সমর্থন সব মুহূর্তের মধ্যে – সঙ্গে সঙ্গে শিয়ালদহ ষ্টেশনে যাত্রা*। ঐ *এক ভদ্রলোক* -এর নাম ছিল আলী আকবর খান, কুমিল্লার দৌলতপুরের এক বিখ্যাত প্রকাশক। যিনি সম্পর্কে নার্গিসের মামা ছিলেন।
সেই দৌলতপুর যাবার পথেই আলী আকবর খান সাহেব কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে কয়েকদিন কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে শ্রী ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের বাড়িতে থেকে যান। ইন্দ্রকুমার বাবু কুমিল্লা বোর্ড অফ ওয়ার্ডস-এর ইন্সপেক্টর হিসেবে কাজ করতেন। ইন্দ্রকুমারের ছেলে বীরেন্দ্রকুমার, কুমিল্লা জেলা স্কুলে পড়াশুনা করতেন। সে সময় আলি আকবর খানও সেখানে পড়তেন। সে হিসাবে আলী আকবর খান ছিলেন বীরেন্দ্র কুমারের ক্লাসমেট । আর এই ক্লাসমেট থেকেই তাঁরা দুই বন্ধু হয়ে গেছিলেন এবং পরস্পর পরস্পরের বাড়ীতে যাতায়াত করতেন । বীরেন্দ্রকুমারের বাড়ীতে স্ত্রী, বোন, ছেলে ও বাবা মা ছাড়াও আরো থাকতেন বিধবা জেঠি গিরিবালা দেবী ও তাঁর একমাত্র কন্যা আশালতা সেনগুপ্তা ওরফে প্রমীলা দেবী।
প্রমীলার স্বর্গীয় পিতা, শ্রী বসন্তকুমার সেনগুপ্তের আদি নিবাস ছিল মানিকগঞ্জের তেহুতা গ্রামে। তিনি ত্রিপুরা সরকারের নায়েবের পদে চাকুরী করতেন। পিতার মৃত্যুর পর প্রমীলারা কুমিল্লায় কাকা ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তর অর্থাৎ বীরেন্দ্রকুমারদের বাড়ীতে এসেই বসবাস করছিলেন।
সেখানে কিছু দিন থাকার পর আলি আকবর খান সাহেব কাজী নজরুলকে সঙ্গে নিয়ে নিজের বাড়ি দৌলতপুরে চলে যান। আলী আকবর খান সাহেবের দু’জন বিধবা বোন ছিলো। এক বোন আলী আকবর খানের সংসারের সর্বময়ী কর্ত্রী ছিলেন। কাজী নজরুল ইসলামের চেহারা ও আচার আচরণ ব্যবহার দেখে বিধবা বোনের ভাল লাগে। তখন থেকে তিনি কাজী নজরুল ইসলামকে মায়ের মতো স্নেহ আদর যত্ন করতেন। কিন্তু অন্য বোনটি ঐ বাড়ীতে না থাকলেও কাছাকাছিই থাকতেন। সেই বোনের এক ছেলে ও এক মেয়ে ছিলো। মেয়েটি যুবতী ও বেশ সুন্দরীও ছিল। কাজী নজরুল এ বাড়ীতে আসার পর তাদের যাতায়াত বেশ বেড়ে যেতে থাকল। অনুমান , কবি নজরুলের বাঁশী ও মেয়েটির রূপ যৌবন পরস্পর পরস্পরকে আকৃষ্ট করেছিলো। ঐ মেয়েটির নাম সায়ীদা খাতুন ছিল ওরফে নার্গিস বেগম , এই নামটি কাজী নজরুল ইসলামই রেখেছিলেন সৈয়দা খাতুনের। এই ঘনিষ্ঠতা থেকেই কিছুদিনের মধ্যে কবি ও নার্গিসের বিয়ের কথা পাকাপাকি ও বিয়ের দিন ধার্য হয়ে যায়। কুমিল্লার সেই পল্লীগ্রাম থেকেই কাজী নজরুল ইসলাম ও আলী আকবর খান সাহেব মিলে নজরুলের বিয়ের খবর ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ পাঠান। মুস্কিল একটা হলো, একদিকে ব্যবসা সংক্রান্ত কারণে আলী আকবর খান সাহেবের উপর অনেকেই সন্তুষ্ট ছিলেন না। অন্যদিকে কবি নজরুলের তখন কিশোরকাল, বয়স কম, সাথে ভীষণ সেন্টিমেন্টাল এবং স্থিতিশীল কোন আয় তখন তাঁর ছিলোও না। এই অবস্থায় বিয়ে করার বিরাট দায়িত্ব কাজী নজরুল কেমন করে পালন করবে , সেটা নিয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু বান্ধব সহ হিতৈষীদের দারুণ উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। অথচ কেউ এর বিরোধিতা করার সাহসও পাচ্ছিলো না।
১৯২১ সালের ৫ জুন, তারিখে, কবি কাজী নজরুলের কুমিল্লা থেকে পাঠানো চিঠির জবাবে পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় লেখেন,
*ভাই নুরু, যখন তুই স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে তাকে বরণ করে নিয়েছিস, তখন অবশ্য আমার কোন দুঃখ নেই। তবে একটা কথা, তোর বয়স আমাদের চাইতে ঢের কম, অভিজ্ঞতাও তদনুরূপ feeling-এর দিকটা অসম্ভব রকম বেশী। কাজেই ভয় হয় যে, হয়তো বা দুইটা জীবনই না ব্যর্থ হয়। এ বিষয়ে তুই যদি concious, তাহলে অবশ্য কোন কথা নেই। যৌবনের চাঞ্চল্যে আপাতমধুর মনে হলেও ভবিষ্যতে না পস্তাতে হয়। তাই তুই নিজে যদি সব দিক ভেবে চিনতে বরণ করাই ঠিক করে থাকিস, তাহলে আমি সর্বান্তকরণে তোদের মঙ্গল কামনা করছি ।*
তুই লিখেছিস, *এক পল্লী বালিকার কাছে এত বিব্রত আর অসাবধান হয়ে পড়েছি, যা কোন নারীর কাছে কখনো হইনি*। জেনে খুশী হলাম যে, তাঁর বাইরের ঐশ্বর্যও যথেষ্টই আছে। তুই যে এরূপ আজগুবি একটা কাণ্ড বাধিয়ে বসবি, তা সকলে আমরা জানতুম*।
১৯২১ সালের ১৩ জুন কলকাতার *মোহাম্মদী* পত্রিকার অফিস থেকে সাহিত্যিক ওয়াজেদ আলী সাহেব লেখেন,-
*অভিন্ন হৃদয়েষু ভাই নজরুল, আপনার ৭ তারিখের স্নেহমাখা চিঠিখানি আজ বিকালে পেয়ে কয়েকবার পড়েছি, আর অশান্তির মধ্যেও খুব হেসেছি। পল্লীর যে কুটীরবাসিনী দৌলতপুরের দৌলতখানার শাহজাদী বলাই বোধ হয় ঠিক, তার সাথে আপনার মনের মিল ও জীবনের যোগ হয়ে গেছে তাঁকে আমার শ্রদ্ধা ও প্রীতিপূর্ণ আদাব জানাবেন। আমার বোধ হইতেছে যে, আপনার বন্ধুরা অসন্তুষ্ট হইয়াছেন একটা কারণে। আপনি *নারায়ণে* *দহনমালা* লিখে নারীর কাছে ক্ষমা চাইলেন, আর তার পরেই এত সত্বর প্রেমের ফাঁদে ধরা পড়লেন। যৌবনের জোয়ার বড় সাংঘাতিক। তাকে ঠেলে রাখা বড় দায়। এ আমি স্বীকার করছি*। এরপর আবার কদিন পরেই ১৬ জুন তারিখে আবার লেখেন, –
-*ভাই নজরুল, আপনার আগের চিঠির জবাব আগেই দিয়েছি। আজ এই কতক্ষণ হইল, রবিবারের চিঠিটাও পেলাম। আপনার বিয়ের খবরটা তাড়াতাড়ি এই সপ্তাহের কাগজে বের করে দিয়েছি। কিন্তু ভয় নেই, আপনার শ্রীমতীর কোন নামই কাগজে ছাপা হয় নাই*।
১৯২১ সালের ২৫ শে জুন কলকাতা থেকে মুজফফর আহমেদ সাহেব লেখেন,-
-*ভাই কাজী সাহেব। ওয়াজেদ মিয়ার চিঠিতে জানলাম যে, ৩রা আষাঢ় তারিখেই আপনাদের বিবাহ হচ্ছে। সময় খুব সংকীর্ণ কাজেই আমার আর যাওয়া হচ্ছে না। তবে ভালোয় ভালোয় সব মিটে যাক, এ প্রার্থনা খোদার দরগাহে*।
পরম প্রীতিভাজনেষু কাজী সাহেব, আপনার পত্রাদি যে আর মোটেই পাওয়া যাইতেছে না, তার কারণ কি? খান সাহেবের নিমন্ত্রণপত্র পাইয়াছিলাম। পত্রখানা আপনারই মুসাবিদা করা দেখিলাম। পত্রের ভাষা দু’এক জায়গায় বড় অসংযত হইয়াছে। একটু যেন কেমন দাম্ভিকতা প্রকাশ পাইয়াছে। আপনার হাত দিয়া অমন লেখা বাহির হওয়া কিছুতেই ঠিক হয় নাই। আমার ভয় হইতেছে যে, খান সাহেবের সংশ্রবে থাকিয়া আপনি না শেষে দাম্ভিক হইয়া পড়েন। অন্যে বড় বলিলে গৌরবের কথা হয়, আর নিজেকে নিজে বড় বলিলে অগৌরবের মাত্রাই বাড়িয়া যায়। *মোহাম্মদী* পত্রিকাকে বিবাহের কথা ছাপিতে অনুরোধ করাটা ঠিক হইয়াছে কি? তাঁরা তো নিজ হইতেই এ খবর ছাপিতে পারিতেন। বাস্তবিক আমার প্রাণে বড় লাগিয়াছে বলিয়া এত কথা বলিলাম। এই নিমন্ত্রণপত্র আবার *অপূর্ব নিমন্ত্রণপত্র* শিরোনামে *বাঙালী* পত্রিকাতে মুদ্রিত হইয়াছে দেখিলাম। *বাঙালী*-কে এই নিমন্ত্রণপত্র কে পাঠাইল? আপনার অঙ্ক লক্ষ্মীকে এই অপরিচিতের বিনয়-সম্ভাষণ জানাইবেন*।
মুদ্রিত ঐ নিমন্ত্রণ পত্রটিতে নজরুলের পিতা মরহুম কাজী ফকির আহমদ সাহেবের পরিচয় দেওয়া হয় চুরুলিয়ার *আয়মাদার* বলে। আর কাজী নজরুল ইসলামকে *মুসলিম রবীন্দ্রনাথ* বলা হয়। সম্ভবত: এই দুটি কথা মুজফফর সাহেবকে ব্যথিত করেছিল। মুজফ্ফর সাহেব ২১শে জুন আলী আকবর সাহেবকে লেখেন,-
*খান সাহেব, বিবাহের নিমন্ত্রণপত্র পাইয়াছি, অবশ্য হইয়া যাওয়ার পরে। আগে পাওয়া গেলেও বোধ হয় স্ট্রাইকের জন্য যাওয়া তেমন সুসাধ্য হইত না। যাহা হউক আশা করি ভালোয় ভালোয় শুভ কাজ শেষ হইয়া গিয়াছে*।
তিনি গোয়ালন্দ-চাঁদপুর স্টিমার ও আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্মচারীদের স্ট্রাইকের কথাই এখানে বোঝাইতে চাচ্ছিলেন।
যাই হোক, এতকিছু করে যে বিয়ে, সেটা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। দৌলতপুরে আলি আকবর খান সাহেবের কিছু কিছু ব্যবহার কাজী নজরুলকে মানসিক ভাবে আঘাত করে। হবু বধূর কিছু আচরণও তাঁর কাছে দুর্ব্যবহার বলে মনে হয় কবি নজরুল ইসলামের।আলি আকবর খান অবস্থা সুবিধের নয় দেখে ও নিজের দোষ কাটাবার অভিপ্রায়ে বিয়েটা ভেঙ্গে দেবার ফন্দি আটেন এবং হঠাৎ করেই একটা নতুন প্রস্তাব এনে বলেন, বিয়ের-পরে কাজী নজরুল ইসলামকে দৌলতপুরেই থেকে যেতে হবে । যেটা খান সাহেবও জানেন যে কবি নজরুলের পক্ষে কোনমতেই এই কথা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
বিয়েতে কাজী নজরুল ইসলামের বিশেষ আমন্ত্রণে বিরজাসুন্দরী দেবীও নৌকাযোগে দৌলতপুরের বিয়ে বাড়ীতে আসেন এবং সঙ্গে সেনগুপ্ত পরিবারের আরো দশ বারো জন সদস্যও এসেছিলেন। কাজী নজরুল ইসলাম যখন তাঁর ঐসব অপমানের কথা বিরজাসুন্দরীকে জানান, তখন তিনি এই বিয়ে না করার জন্য পরামর্শও দেন। কিন্তু এ বিয়ে উপলক্ষে অতো লোকজন উপস্থিত হয়ে গেছিল যে, তাই বিয়েটা ভেঙ্গে না দিয়ে যেভাবেই হোক কাজী নজরুল ইসলাম ঝামেলাটা চুকিয়ে ফেলার মনস্থ করেন এবং বিয়েটা শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন করেন, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়েটা হয়েছিল সত্য বলে কেউ কেউ লিখেগেছেন। তবে এই বিয়ে নিয়ে মতানৈক্য রয়ে গেছে। কিন্তু এই বিয়ে ইসলামী মতে হয়নি। অর্থাৎ তাঁদের দাম্পত্য মিলন সাধিত হয়নি। বিয়ের রাতেই প্রচণ্ড ঝড় ঝঞ্ঝার মধ্যেই কাজী নজরুল ইসলাম দৌলতপুর ত্যাগ করেন। মনে করা হয়েছে যে , কাজী নজরুল ইসলাম সেইদিন সেনগুপ্ত পরিবারের সঙ্গেই কান্দিরপাড়ে সেনগুপ্ত বাড়িতে এসে ওঠেন। সেই কান্দিরপাড় থেকেই কবি নজরুল দুইটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি লেখেন।
প্রথম চিঠিটি লিখেন , আলি আকবর খান সাহেবকে। সেখানে কাজী নজরুল ইসলাম *মামাশ্বশুর* না লিখে *বাবাশ্বশুর* বলে সম্বোধন করেন,-
*বাবা শ্বশুর, আপনাদের এই অসুর জামাই পশুর মতন ব্যবহার করে এসে যা কিছু কসুর করেছে, তা ক্ষমা করুন সকলে, অবশ্য যদি আমার ক্ষমা চাওয়ার অধিকার থাকে। এইটুকু মনে রাখবেন, আমার অন্তর-দেবতা নেহায়েত অসহ্য হয়ে না পড়লে, আমি কখনো কাউকে ব্যথা দিই না। অতএব আমিও আপনাদের মতোই মানুষ। আমার গণ্ডারের চামড়া নয়, কেবল সহ্যগুণটা কিছু বেশী। আমার মান অপমান সম্বন্ধে কাণ্ডজ্ঞান ছিল না বা *কেয়ার* করিনি বলে আমি কখনো এত বড় একটা অপমান সহ্য করিনি। যাতে আমার *ম্যানলিনেসে* বা পৌরুষে গিয়ে বাজে । যাতে আমাকে কেঊ কাপুরুষ, হীন ভাবতে পারে। আমি সাধ করে পথের ভিখারি সেজেছি বলে লোকের পদাঘাত সইবার মতন *ক্ষুদ্র আত্মা* -র অমানুষও হয়ে যাইনি। আপনজনের কাছ হতে পাওয়া অপ্রত্যাশিত এত হীন ঘৃণা, অবহেলা আমার বুক ভেঙ্গে দিয়েছে।
বাবা, আমি মানুষের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি। দোয়া করবেন আমার এ ভুল যেন দুদিনেই ভেঙে যায়। বাড়ির সকলকে দস্তুরমতো সালাম দোয়া জানাবেন। তাকেও ক্ষমা করতে বলবেন, যদি এ ক্ষমা চাওয়া ধৃষ্টতা না হয়।
আজ ইতি।
চীরসত্য স্নেহসিক্ত – নুরু*।
এরপর দ্বিতীয় চিঠিটা তিনি কলকাতায় মুজফ্ফর আহম্মেদকে লিখেন। সেই চিঠি পেয়ে মুজফ্ফর আহমেদ অনেক কষ্ট করে কুমিল্লা এসেছিলেন কারণ, তখন রেল ধর্মঘট চলছিল। তিনি এসেই কাজী নজরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়েই কলকাতায় ফেরত যান। এর অল্প কিছুদিন পরেই ৩/১ সি তালতলা লেনে মুজাফ্ফর আহমেদ সাহেবের বাড়ীতে থাকা অবস্থায় নজরুলের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর নজরুল প্রায় তিন বছর ধরে কয়েকবার কান্দিরপাড় গিয়েছিলেন। এরপর ১৯২৪ সালের ২৪শে এপ্রিল, কলকাতার ৬ নম্বর হাজি লেনে, আশালতা সেনগুপ্তা, ওরফে প্রমীলার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় অনেক ঝক্কি সামলে।
কাজী নজরুল ইসলামের স্ত্রী প্রমীলা দেবীর বয়স তখন ১৮ বছরের বেশ কম ছিল বলে অফিসিয়ালি হিন্দু মুসলমানের বিয়ে, অর্থাৎ সিভিল ম্যারেজ হতে পারেনি। অগত্যা ইসলামী মতেই বিয়েটি সম্পন্ন করতে হয়েছিল। এ জটিলতায় হিন্দু, মুসলনমান উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরাও চটে গিয়েছিলেন। আশালতা সেনগুপ্তার ওরফে দোলনার গায়ের রঙ চাঁপাকলির মতো ছিল বলে নজরুল তাঁর দ্বিতীয় কাব্যের নাম দিয়েছিলেন *দোলন চাঁপা*। দ্বিতীয় সন্তান জন্ম দেবার পর থেকে প্রমীলা দেবী পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হয়ে বহুদিন শয্যাশায়ী ছিলেন। কবি প্রায় তাঁর সর্বস্ব দিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে থাকেন। অল্পদিনের মধ্যে দারুণ অসুস্থ হয়ে কি নজরুলও নিজে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। দীর্ঘ ৩৮ বছর সংসার করার পর, ১৯৬২ সালের ৩০শে জুন, শনিবার মাত্র ৫২ বছর বয়সে প্রমীলা দেবী কলকাতার পাইকপাড়ার বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সেই সময় কলকাতার মির্জাপুর স্ট্রীটে নজরুল পাঠাগার ছিল। সেখানে বাৎসরিক নজরুল জয়ন্তী হতো। ফাংশান শেষে দলবল মিলে পাইক পাড়ায় গিয়ে কাজী সাহেবদের দেখে আসার একটা অলিখিত রেওয়াজ ছিল ঐ এলাকার লোকজনের। ১৯৬১ সালের নজরুল জয়ন্তীর পর , অর্থাৎ প্রমীলা দেবীর মৃত্যুর ঠিক আগের বছর, এলাকার লোকজন পাইকপাড়ার বাসায় নজরুল দম্পতীকে পাশাপাশি খাটে শোওয়া অবস্থায় দেখতে পান।
অসুস্থ স্ত্রী প্রমীলা দেবীর মৃত্যুর পর কাজী নজরুল ইসলামের অনেকদিনের অভিলাষ অনুযায়ী কবিপত্নীর মৃতদেহটি কলকাতা থেকে চুরুলিয়া নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেই হাজী পাহালোয়ানের দরগার পাশে কবরস্থ করা হয়। প্রমীলা দেবী বাল্যকাল থেকেই সাহিত্য ও সঙ্গীতের ভীষণ অনুরাগী ছিলেন। প্রমীলা দেবীর কিছু কবিতা মাসিক *সওগাত* ও দ্বিমাসিক *সাম্যবাসী* তে ছাপা হয়। যতদিন পেরেছেন, ঐ অচল অবস্থাতেও তিনি নিজ হাতে স্বামীকে খাইয়ে দিয়েছেন। কবির ভক্ত ও বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে তিনি একান্ত আপনজনের মতো ব্যবহার করতেন। সাংসারিক অসচ্ছলতার মধ্যেও তিনি কাউকে অভুক্ত অবস্থায় ফেরত দেননি। কখনও বিমর্ষ থাকতে দেখা যায় নাই এবং তাঁর কোন অভিযোগও তিনি কোন দিন করেন নাই।
নার্গিস খানের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁকে কখনও ভুলতে পারে নাই। এতো অল্প বয়েসে *শ্যাম রাখি না কূল রাখি* -এর মতো বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পড়ে, স্বামীর সঙ্গে ঔ রাত্রেই বাড়ী ছেড়ে চলে যাবেন, না পিতৃকুলের সম্মান রক্ষা করবেন, তা তিনি বুঝে উঠতে পারেন নাই। কিন্ত নার্গিস কখনো হাল ছাড়েন নাই। নিজেকে তৈরী করে নিতে ঢাকায় গিয়ে *কামরুন্নেছা গার্লস কলেজে* পড়াশুনা করেন নার্গিস।
নার্গিস *তাহমিনা*, *ধুমকেতু* ও *পথিক হাওয়া* নামে তিনটি উপন্যাস ও বেশ কটি টেক্সট বুক লিখেন। *তাহমিনা* *সোহরাব রুস্তম* উপন্যাসের অনুকরণে সেই লেখা হয়েছিল। তাহমিনাকে রেখে রুস্তম যেমন যুদ্ধক্ষেত্রে চলে যান। দেখানো হয়েছে ঠিক তেমনই নজরুল নার্গিসকে রেখে চলে গিয়েছিলেন। নার্গিসের জীবন যেন তাহমিনার অনন্ত দুঃখ দুর্দশা ও বঞ্চনার ইতিহাস। নার্গিসের সব কটা উপন্যাসই কাজী নজরুল ইসলামকে ঘিরে ছিলো।
১৯৩৭ সালের নভেম্বর মাসের চার তারিখ নার্গিস দীর্ঘ ১৬ বছর প্রতীক্ষার পর আলি আকবর খান অর্থাৎ মামার বন্ধু, ময়মনসিংহবাসী প্রফেসর হেলালুদ্দিন ও মামাতো ভাই নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতার শিয়ালদহ হোটেলে কাজী নজরুল ইসলামের সাথে শেষ সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে মিঃ ওয়াজেদ আলীও উপস্থিত ছিলেন। অতর্কিতে এঁদেরকে দেখে কাজী নজরুল ইসলাম ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলেন। প্রথমে দু’জনের কেউই কোন কথা বলতে পারেন নাই।একটু পরে ধাতস্থ হয়ে কাজী নজরুল ইসলাম নার্গিসকে বলেন, –
-*তুমি ঢাকা ফিরে যাও। আমি খুব সত্বর ঢাকায় আসছি, সেখানেই এর একটা সমাধান করবো*।
তিনি সাংসারিক অসচ্ছলতার নানান কথা সহ দুঃখ দুর্দশাময় ভবিষ্যতের কথাও বলেন। এও উল্লেখ করে বলেন যে,-
* প্রমীলা ও তার মা সংসারে নার্গিসকে কখনোই বরদাস্ত করবেন না। অবশ্য নার্গিসের ভাষায়, *সেই সত্বর আর কখনো আসেনি*।
পরবর্তীকালে নার্গিস, কাজী নজরুল ইসলামের ভক্ত ও ঘনিষ্ঠ কবি আজিজুল হাকিমকে বিয়ে করেছিলেন এবং ১৯৮৫ সালে, প্রায় ৮১ বছর বয়সে আমেরিকার এক ছোট্ট শহরে মারা যান। কবি নজরুলের সাথে আর কখনও নার্গিসের দেখা না হলেও কবি নজরুল ইসলাম, নার্গিসকে এক অবিস্মরণীয় পত্র লেখেন। এর কিছুটা অংশ নীচে তুলে দেওয়া হলো,-
*কল্যাণীয়েষু,
তোমার পত্র পেয়েছি সেদিন নববর্ষার নবঘন সিক্ত প্রভাতে। পনেরো বছর আগে এমনি এক আষাঢ়ের এমনি বারিধারার প্লাবন নেমেছিল, তা তুমিও হয়তো স্মরণ করতে পারো। এই আষাঢ় আমার কল্পনার স্বর্গলোক থেকে টেনে ভাসিয়ে দিয়েছে বেদনার অনন্ত স্রোতে। যাক, তোমার অনুযোগের অভিযোগের উত্তর দিই। তোমার উপর আমি কোন জিঘাংসা পোষণ করি না । এ আমি সকল অন্তর দিয়ে বলছি, আমার অন্তর্যামী জানেন, তোমার জন্য আমার হৃদয়ে কি গভীর ক্ষত, কি অসীম বেদনা। কিন্তু সে বেদনার আগুনে আমিই পুড়েছি । তা দিয়ে তোমাকে দগ্ধ করতে চাইনি। তুমি এই আগুনের পরশমাণিক না দিলে আমি অগ্নিবীণা বাজাতে পারতাম না। আমি ধূমকেতুর বিস্ময় নিয়ে উদিত হতে পারতাম না। তোমার যে কল্যাণরূপ আমি আমার কিশোর বয়সে প্রথমে দেখেছিলাম, যে রূপকে আমার জীবনের সর্বপ্রথম ভালবাসার অঞ্জলী দিয়েছিলাম, সে রূপ আজও স্বর্গের পারিজাত মন্দারের মতো চিরঅম্লান হয়েই আছে আমার বক্ষে। অন্তরের আগুন বাইরের সেই ফুলহারকে স্পর্শ করতে পারেনি। আজ চলেছি জীবনের অস্তমান দিনের শেষ রশ্মি ধরে ভাটার স্রোতে। তোমাকে লেখা এই আমার প্রথম ও শেষ চিঠি হোক। যেখানেই থাকি, বিশ্বাস করো, আমার অক্ষয় আশীর্বাদ কবচ তোমায় ঘিরে থাকবে। তুমি সুখী হও, শান্তি পাও, এই প্রার্থনা। আমায় যত মন্দ বলে বিশ্বাস কর, আমি তত মন্দ নই, এই আমার শেষ কৈফিয়ত।
ইতি-
নিত্যশুভার্থী,
নজরুল ইসলাম।* ******************************
সংগ্রহিত তথ্য নির্ভর

Share This
Categories
প্রবন্ধ

বীর বিপ্লবী রাসবিহারী বসু দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে অগ্রনী বিপ্লবীদের মধ্যে অন্যতম – একটি বিশেষ পর্যালোচনা।।।।

ভারতে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের একজন অগ্রগণ্য বিপ্লবী নেতা এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির অন্যতম সংগঠক ছিলেন রাসবিহারী বসু। রাসবিহারী বসু ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দের ২৫ শে মে অধুনা পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলায় অবস্থিত তার পৈতৃক গ্রাম সুবলদহে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা বিনোদবিহারী বসু এবং তার মায়ের নাম ভুবনেশ্বরী দেবী।

তিনকড়ি দাসী ছিলেন তার ধাত্রী মাতা। তার পিতামহ নাম ছিলেন কালীচরণ বসু। এই বসু পরিবারের আদিবাস ছিল অধুনা পূর্ব বর্ধমান জেলার সুবলদহেতে। তাঁদের পূর্বপুরুষ নিধিরাম বসুই সর্বপ্রথম সুবলদহে বসবাস শুরু করেন। রাসবিহারী বসুকে তার নামটি দিয়েছিলেন পিতামহ কালীচরণ বসু। গর্ভাবতী অবস্থায় তার মা ভুবনেশ্বরী দেবী কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
তাই সুবলদহ গ্রামের পশ্চিম পাড়াতে অবস্থিত বিষ্ণুমন্দির বা কৃষ্ণ মন্দিরে তার নামে প্রার্থনা(মানত) করা হয়েছিল যাতে তিনি(ভুবনেশ্বরীদেবী) সুস্থভাবে সন্তানের জন্ম দেন, তাই পরবর্তীকালে তার নাতির নাম রাখেন, কৃষ্ণের অপর নামে। রাসবিহারী হল কৃষ্ণের অপর নাম। রাসবিহারী বসু এবং তার ভগিনী সুশীলা সরকারের শৈশবের বেশির ভাগ সময় কেটেছিল সুবলদহ গ্রামে। তারা সুবলদহ গ্রামে বিধুমুখী দিদিমণির ঘরে বসবাস করতেন। বিধুমুখী ছিলেন একজন বাল্যবিধবা, তিনি ছিলেন কালিচরণ বসুর ভ্রাতৃবধূ। রাসবিহারী বসুর শৈশবের পড়াশোনা সুবলদহের গ্রাম্য পাঠশালায় (বর্তমানে সুবলদহ রাসবিহারী বসু প্রাথমিক বিদ্যালয়) ঠাকুরদার সহচর্যে সম্পন্ন হয়েছিল। রাসবিহারী বসু শৈশবে লাঠিখেলা শিখেছিলেন সুবলদহ গ্রামের শুরিপুকুর ডাঙায়। তিনি সুবলদহ গ্রামে তার ঠাকুরদা কালিচরণ বসু এবং তার শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী গল্প শুনে তার বিপ্লবী আন্দোলনের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন গ্রামবাসীদের নয়নের মণি। শোনা যায় যে, তিনি ইংরেজদের মূর্তি তৈরি করতেন এবং লাঠি খেলার কৌশলে সেই মূর্তিগুলোকে ভেঙে ফেলতেন। তিনি ডাংগুলি খেলতে খুব ভালোবাসতেন। তিনি শৈশবে সুবলদহ গ্রামে ১২ থেকে ১৪ বছর ছিলেন, এছাড়াও তিনি পরবর্তীকালে ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে প্রয়োজনে সুবলদহ গ্রামে এসে আত্মগোপন করতেন। পিতা বিনোদবিহারী বসুর কর্মক্ষেত্র ছিল হিমাচল প্রদেশের সিমলায়। তিনি সুবলদহ পাঠশালা, মর্টন স্কুল ও ডুপ্লে কলেজের ছাত্র ছিলেন। জীবনের প্রথম দিকে তিনি নানা বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং আলিপুর বোমা বিস্ফোরণ মামলায় ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে অভিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে তিনি দেরাদুনে যান এবং সেখানে বন্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে হেড ক্লার্ক হিসেবে কাজে যোগদান করেন। দেরাদুনে তিনি গোপনে বাংলা, উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন।বিপ্লবী হিসেবে তার অন্যতম কৃতিত্ব বড়লাট হার্ডিঞ্জের ওপর প্রাণঘাতী হামলা। বিপ্লবী কিশোর বসন্ত বিশ্বাস তার নির্দেশে ও পরিকল্পনায় দিল্লিতে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে বোমা ছোড়েন হার্ডিঞ্জকে লক্ষ্য করে। এই ঘটনায় পুলিশ তাকে কখনোই গ্রেপ্তার করতে পারেনি। সমগ্র ভারতব্যাপী সশস্ত্র সেনা ও গণ অভ্যুত্থান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন রাসবিহারী বসু। জনৈক বিশ্বাসঘাতকের জন্যে সেই কর্মকাণ্ড ফাঁস হয়ে যায়। বহু বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় তিনি ব্রিটিশ সরকারের সন্দেহভাজন হয়ে ওঠেন এবং শেষ পর্যন্ত দেশত্যাগে বাধ্য হন। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বন্যা বিধ্বস্ত সুবলদহ গ্রামে ফিরে আসেন এবং ত্রাণ বিলির উদ্যোগ নেন।[৯] ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ১২ মে কলকাতার খিদিরপুর বন্দর থেকে জাপানি জাহাজ ‘সানুকি-মারু’ সহযোগে তিনি ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন। তার আগে নিজেই পাসপোর্ট অফিস থেকে রবীন্দ্রনাথের আত্মীয়, রাজা প্রিয়নাথ ঠাকুর ছদ্মনামে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন।
তারই তৎপরতায় জাপানি কর্তৃপক্ষ ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের পাশে দাঁড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় সমর্থন যোগায়। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৮-২৯ মার্চ টোকিওতে তার ডাকে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ বা ভারতীয় স্বাধীনতা লীগ গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে তিনি সেই সম্মেলনে একটি সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তাব দেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২২ জুন ব্যাংককে তিনি লীগের দ্বিতীয় সম্মেলন আহ্বান করেন। সম্মেলনে সুভাষচন্দ্র বসু কে লীগে যোগদান ও এর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তাব গৃহীত হয়। যেসব ভারতীয় যুদ্ধবন্দি মালয় ও বার্মা ফ্রন্টে জাপানিদের হাতে আটক হয়েছিল তাদেরকে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগে ও লীগের সশস্ত্র শাখা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মিতে যোগদানে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে জাপানি সেনাকর্তৃপক্ষের একটি পদক্ষেপে তার প্রকৃত ক্ষমতায় উত্তরণ ও সাফল্য ব্যাহত হয়। তার সেনাপতি মোহন সিংকে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির নেতৃত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু তার সাংগঠনিক কাঠামোটি থেকে যায়। রাসবিহারী বসু ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (আজাদ হিন্দ ফৌজ নামেও পরিচিত) গঠন করেন। জাপানে সোমা নামে এক পরিবার তাকে আশ্রয় দেয়। ওই পরিবারেরই তোশিকা সোমাকে তিনি বিবাহ করেন। রাসবিহারী বসুকে জাপান সরকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘সেকেন্ড অর্ডার অব দি মেরিট অব দি রাইজিং সান’ খেতাবে ভূষিত করে। জানুয়ারি ২১, ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানে রাসবিহারী বসুর মৃত্যু হয়।

তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ ২৬ মে, ইতিহাসের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নেব ইতিহাসের এই দিনে বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু, দিনসহ ঘটে যাওয়া ঘটনা।।।।।

আজ ২৬ মে। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু দিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৭০৩ – স্যামুয়েল, ইংরেজ দিনলিপিকার ।
১৭৯৯ – আলেকজান্ডার পুশকিন, রাশিয়ার তথা রুশ সাহিত্যের অমর কবি ও ঔপন্যাসিক।
১৮৭৭ – খ্যাতনাম্নী মার্কিন নৃত্যশিল্পী ইসাডোরা ডানকান।
১৯০০ – চেক লেখক ভিতেস্লা ইসাডোরা ডানকান

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

১৭৩৯ – মোগল সম্রাট মহম্মদ শাহ ও ইরানের নাদির শাহের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের ফলে আফগানিস্তান ভারত থেকে পৃথক হয়ে যায়।
১৮০৫ – নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ইতালির রাজা হিসাবে রাজ্যাভিষিক্ত হন।
১৮৬৫ – আমেরিকার গৃহযুদ্ধের অবসান।
১৮৭০ – দিনেসিসিলির এটনা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত শুরু।
১৮৮১ – ফ্রান্স তিউনিসিয়াকে করায়ত্ত করে এবং নিজ নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে।
১৮৯৬ – রাশিয়ার শেষ জার দ্বিতীয় নিকোলাস অভিষিক্ত হন।
১৮৯৭ – আইরিশ লেখক ব্রাম স্টকারের বিখ্যাত উপন্যাস ‘ড্রাকুলা’ প্রকাশিত হয়।
১৯১৩ – এমিলি ডানকান ব্রিটেনের প্রথম মহিলা ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত।
১৯১৮ – জার্জিয়া ও আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণা।
১৯৪৮ – দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী জাতীয়তাবাদী সরকার ক্ষমতায় আসে।
১৯৬৯ – অ্যাপোলো-১০ নভোযানটি আট দিনের সফল ভ্রমণ শেষ করে পৃথিবীতে অবতরণ করে।
১৯৭২ – যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন অ্যান্টি ব্যালস্টিক মিসাইল চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
১৯৭২ – বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় হাইতি।
১৯৮১ – পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে।
১৯৮২ – ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করেছিল।
১৯৮৬ – বাংলাদেশের বরিশালে লঞ্চডুবিতে ২৩০ জনের মৃত্যু।
১৯৯১ – থাইল্যান্ডে অস্ট্রীয় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ২২৩ জনের মৃত্যু।
১৯৯৪ – নোবেল পুরস্কার জয়ী সাহিত্যিক আলেক্সান্ডার সোলজিনেৎসিন ২০ বছরের নির্বাসন কাটিয়ে নিজ মাতৃভূমি রাশিয়াতে প্রত্যাবর্তন।
১৯৯৪ – বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম দুটি অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর।
১৯৯৯ – কাশ্মীরের কারগিল সেক্টরে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ শুরু।
২০১৮ – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধি দেয় কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়।

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

৭৩৫ – বিড, ইংরেজ বেনেডিক্টিয়ান সন্ন্যাসী।

১৯০৮ – (ক)  বাঙালি কবি, সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নীলমণি ন্যায়ালঙ্কার।

(খ) মির্জা গোলাম আহমদ।

১৯৭১ – বিমল মুখোপাধ্যায়, মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাবের কিংবদন্তি ফুটবলার।
১৯৭২ – প্রখ্যাত বাঙালি অভিনেত্রী রাজলক্ষ্মী দেবী।

১৯৭৬ – মার্টিন হাইডেগার, জার্মান দার্শনিক।

১৯৯৯- শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালি কবি কথা-সাহিত্যিক ও নাট্যকার ।
২০০৪ – নিকলাই চের্নিখ, রুশ বংশোদ্ভূত সোভিয়েত জ্যোতির্বিজ্ঞানী।
২০২১ – প্রখ্যাত বাঙালি প্রযুক্তিবিদ ও বিজ্ঞানী, অভিনেতা বিকাশ রায়ের পুত্র সুমিত রায়।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ বিশ্ব তোয়ালে দিবস, জানুন দিনটি সম্পর্কে কিছু কথা।।।

তোয়ালে দিবস হল এমন একটি দিন যা The Hitchhiker’s Guide to the Galaxy লেখক ডগলাস অ্যাডামসকে উৎসর্গ করা হয়। প্রতি বছর ২৫ মে পালিত হয়, এটি ভক্তদের একত্রিত হয়ে শ্রদ্ধা জানানোর একটি সুযোগ।তবে কেন একটি তোয়ালে হিচহাইকারস গাইডের প্রতীকী এবং কেন ভক্তরা এই দিনে অ্যাডামসকে উদযাপন করেন?

ডগলাস অ্যাডামস কে ছিলেন?

ডগলাস অ্যাডামস ১১ মার্চ, ১৯৫২ সালে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন কমিক লেখক ছিলেন যিনি The Hitchhiker’s Guide to the Galaxy সিরিজের কমিক সাই-ফাই বই লেখার জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত, যেটি তার মূল রেডিও নাটকের উপর ভিত্তি করে তৈরি, তবে তিনি BBC এর জন্যও লিখেছেন, এবং মন্টি পাইথন এবং ডক্টর হু এর মতো আইকনিক সিরিজ।
লেখক একজন প্রখর পরিবেশবিদও ছিলেন।
তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় ১১ মে, ২০০১-এ 4৪৯9 বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।

তোয়ালে দিবস কখন?

ডগলাস অ্যাডামস মারা যাওয়ার ঠিক দুই সপ্তাহ পর ২৫ মে, ২০০১ সাল থেকে তোয়ালে দিবস বার্ষিকভাবে পালিত হচ্ছে।

তোয়ালে দিবস কি?

তোয়ালে দিবস উদযাপন করে দ্য হিচহাইকারস গাইড টু দ্য গ্যালাক্সি লেখক ডগলাস অ্যাডামস।
ভক্তরা অ্যাডামসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একটি তোয়ালে বহন করা বেছে নিয়েছিলেন কারণ, দ্য হিচহাইকারস গাইড অনুসারে, এটি “একজন আন্তঃনাক্ষত্রিক হিচহাইকার বহন করতে পারে এমন সবচেয়ে ব্যাপকভাবে দরকারী জিনিস”।
শুধুমাত্র একটি তোয়ালে ব্যবহারিক নয় – “আপনি উষ্ণতার জন্য এটিকে আপনার চারপাশে জড়িয়ে রাখতে পারেন যেমন আপনি জগলান বিটার ঠান্ডা চাঁদ জুড়ে আবদ্ধ হন”, উদাহরণস্বরূপ – তবে এটির “অত্যন্ত মনস্তাত্ত্বিক মূল্য”ও রয়েছে।
গাইড বলেছেন যে একজন নন-হিচহাইকার ভাববেন যে “যে কোনও মানুষ যে গ্যালাক্সির দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থকে আটকাতে পারে, এটিকে রুক্ষ করতে পারে, এটিকে বস্তি করতে পারে, ভয়ানক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে, জয়লাভ করতে পারে এবং এখনও জানে যে তার গামছাটি কোথায় আছে, সে স্পষ্টতই একটি মানুষ হিসাবে গণ্য করা হবে”।

ভক্তরা কিভাবে গামছা দিবস উদযাপন করবেন?

The Hitchhiker’s Guide to the Galaxy-এর ভক্তরা আজ একটি তোয়ালে বহন করে উদযাপন করবে। তারা #TowelDay হ্যাশট্যাগ দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে তাদের তোয়ালে সহ নিজেদের ছবি শেয়ার করবে।
ভক্তরাও সোশ্যাল মিডিয়াতে তাদের প্রিয় উদ্ধৃতিগুলি ভাগ করতে পারেন, বা উপন্যাসগুলি পুনরায় পড়তে বা সিরিজ বা চলচ্চিত্রটি পুনরায় দেখার জন্য সময় ব্যয় করতে পারেন।

তোয়ালে দিবসের শ্রদ্ধাঞ্জলি—

২০১৮ সালে, স্টিফেন ফ্রাই টুইট করেছিলেন ” TowelDay world, galaxy and cosmos” এবং ২০১৯ সালে, তিনি বলেছিলেন: “#TowelDay one and all… আজ আমরা ডগলাস নোয়েল অ্যাডামস ১৯৫২-এর উপহারের জন্য মহাবিশ্বকে স্মরণ করি এবং ধন্যবাদ জানাই- ২০০১, একজন মহান বন্ধু, একজন মহান মানুষ।”
২০১৬ সালে, রয়্যাল ইনস্টিটিউশন আইএসএস-এ থাকা মহাকাশচারী টিম পিককে “আতঙ্কিত হবেন না” বাক্যাংশ সহ একটি তোয়ালে পাঠিয়েছিল, দ্য হিচহাইকারস গাইড টু দ্য গ্যালাক্সির প্রচ্ছদে শব্দগুলি উল্লেখ করে যে চরিত্রটি ফোর্ড প্রিফেক্ট তার সাথে বহন করে এবং এটিও। ডগলাস এবং সিরিজের একটি বইয়ের শিরোনাম।
স্টিফেন ম্যাঙ্গান ২০১৬ সালে বলেছিলেন: “প্রথম দিকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছিল। এটি অনেক লোককে খুব ক্ষুব্ধ করেছে এবং ব্যাপকভাবে একটি খারাপ পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। #টাওয়েলডে।”

Share This
Categories
প্রবন্ধ

আজ বিশ্ব থাইরয়েড দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয় এবং গুরুত্ব।।।।

বিশ্ব থাইরয়েড দিবস প্রতি বছর ২৫ মে থাইরয়েড গ্রন্থি এবং এটিকে প্রভাবিত করে এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে পালন করা হয়। থাইরয়েড গ্রন্থি হল একটি ছোট, প্রজাপতি আকৃতির গ্রন্থি যা ঘাড়ের গোড়ায় ঘাড়ের গোড়ার কাছে অবস্থিত। এটি দুটি হরমোন, থাইরক্সিন এবং ট্রাইওডোথাইরোনিন উৎপাদনের জন্য দায়ী, যা শরীরের স্বাভাবিক কার্য যেমন বিপাক, বৃদ্ধি ও বিকাশ এবং প্রজননের জন্য অপরিহার্য।

থাইরয়েডের ব্যাধি ঘটে যখন থাইরয়েড গ্রন্থি এই হরমোনগুলির পর্যাপ্ত বা খুব বেশি উত্পাদন করে না। হাইপোথাইরয়েডিজম হল এমন একটি অবস্থা যেখানে থাইরয়েড গ্রন্থি পর্যাপ্ত হরমোন তৈরি করে না যখন হাইপারথাইরয়েডিজম হল এমন একটি অবস্থা যেখানে থাইরয়েড গ্রন্থি এই হরমোনগুলির খুব বেশি উৎপাদন করে। বিশ্ব থাইরয়েড দিবস ২০২৪ এর থিম, ইতিহাস, তাৎপর্য, পর্যবেক্ষণের উপায় এবং উদ্ধৃতি জানুন।

বিশ্ব থাইরয়েড দিবস ২০২৫ : থিম—

বিশ্ব থাইরয়েড দিবস ২০২৫-এর প্রতিপাদ্য: প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার উপর জোর দিন

বিশ্ব থাইরয়েড দিবস ২০২৫-এর প্রতিপাদ্য বিষয় হল থাইরয়েড রোগের প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং সময়মত চিকিৎসার উপর জোর দেওয়া। এই প্রতিপাদ্য বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত কিনা তা জানেন না।

নিয়মিত চেক-আপকে উৎসাহিত করে এবং প্রাথমিক লক্ষণগুলি সনাক্ত করে, এই বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় জটিলতা দেখা দেওয়ার আগেই আপনার স্বাস্থ্যের নিয়ন্ত্রণ নিতে সাহায্য করে। এটি একটি আশ্বস্ত বার্তা: আরও ভাল সচেতনতা এবং যত্নের অ্যাক্সেসের মাধ্যমে, আপনি রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব এড়াতে পারেন এবং সঠিক সহায়তার মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারেন।

বিশ্ব থাইরয়েড দিবস ২০২৫ : ইতিহাস—

বিশ্ব থাইরয়েড দিবস 2007 সালে থাইরয়েড ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল (TFI) দ্বারা থাইরয়েড গ্রন্থির গুরুত্ব এবং এটিকে প্রভাবিত করে এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৬৫ সালে ইউরোপীয় থাইরয়েড অ্যাসোসিয়েশন (ETA) এর প্রতিষ্ঠার স্মরণে ২৫ মে বেছে নেওয়া হয়েছিল। ইটিএ প্রথম সংস্থা যা বিশ্ব থাইরয়েড দিবসকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়
TFI হল একটি অলাভজনক সংস্থা যা থাইরয়েড স্বাস্থ্য এবং গবেষণার প্রচারে কাজ করে। বিশ্বের ১০০ টিরও বেশি দেশ থেকে সংস্থাটির সদস্য রয়েছে। TFI-এর লক্ষ্য হল “থাইরয়েড রোগের প্রতিরোধ, নির্ণয় এবং চিকিত্সার প্রচার করা এবং থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।”

বিশ্ব থাইরয়েড দিবস ২০২৫ : তাৎপর্য——

বিশ্ব থাইরয়েড দিবস থাইরয়েড গ্রন্থি এবং এর সাথে সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি বোঝার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য উপলক্ষ হিসাবে কাজ করে। ঘাড়ের গোড়ার কাছাকাছি অবস্থিত, এই গ্রন্থিটি আকারে প্রজাপতির মতো। এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার মধ্যে থাইরক্সিন এবং ট্রায়োডোথাইরোনিন হরমোন উৎপাদন জড়িত, যা বিপাক, বৃদ্ধি, বিকাশ এবং প্রজননের মতো মৌলিক শারীরিক প্রক্রিয়াগুলির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
থাইরয়েড ব্যাধি সাধারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আনুমানিক ২০ মিলিয়ন মানুষকে প্রভাবিত করে। সবচেয়ে সাধারণ থাইরয়েড ডিসঅর্ডার হল হাইপোথাইরয়েডিজম, যা ঘটে যখন থাইরয়েড গ্রন্থি যথেষ্ট হরমোন তৈরি করে না। হাইপোথাইরয়েডিজম ক্লান্তি, ওজন বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বিষণ্নতা সহ বিভিন্ন উপসর্গের কারণ হতে পারে।
বিশ্ব থাইরয়েড দিবস হল থাইরয়েড গ্রন্থি এবং এটিকে প্রভাবিত করে এমন অবস্থা সম্পর্কে আরও জানার একটি সুযোগ। এটি থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সমর্থন দেখানোর এবং প্রাথমিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিত্সাকে উত্সাহিত করারও একটি সময়।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ব্রতচারী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা গুরুসদয় দত্তের প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি : দিলীপ রায়।

ব্রত শব্দের অর্থ তপস্যা ও সংযমের সংকল্প । বিশেষ ব্রত নিয়ে যারা চলে , তারাই ব্রতচারী । তাই ব্রতচারীদের ব্রত পালন করার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে — সত্যনিষ্ঠা, সংযম, অধ্যবসায় ও আত্মনির্ভরতা । মূল লক্ষ্য হচ্ছে ব্রতচারীদেরকে – জ্ঞান , শ্রম , সত্য , ঐক্য ও আনন্দের সাথে জীবনযাপন ।

বাঙালির দৈহিক-মানসিক গঠন এবং নৈতিক বোধ উন্নয়নের ভাবনা থেকে গ্রামাঞ্চলে প্রচলিত প্রাসঙ্গিক নৃত্য-গীত অবলম্বন করে গুরুসদয় দত্ত ১৯৩২ সালে ব্রতচারী আন্দোলনের সূত্রপাত করেন । ব্রতচারী আন্দোলন হচ্ছে একটি আধ্যাত্মিক ও সামাজিক উন্নয়নের আন্দোলন । আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ ভারতের নাগরিকদের মধ্যে দেশপ্রেম, জাতীয়চেতনা ও নাগরিকত্ববোধ । গুরুসদয় দত্তের ব্রতচারণের শিক্ষা পূর্ণাঙ্গ মানুষ হবার শিক্ষা ।১০ই মে, ব্রতচারী দিবস পালিত হয় । ব্রতচারী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা গুরুসদয় দত্তের জন্মদিনকে স্মরণে-সম্মানে দিনটি ব্রতচারী দিবস হিসাবে পালিত হয় ।
এবার আমরা গুরুসদয় দত্ত সম্বন্ধে কিছু জানার চেষ্টা করি । ব্রতচারী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা গুরুসদয় দত্ত ১৮৮২ সালের ১০ মে সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । গুরুসদয় দত্ত সাত বছরে পিতৃহারা, চোদ্দ বছরে মাতৃহারা হয়ে জেঠুর কাছে মানুষ হন । বালক বয়স থেকে গুরুসদয় দত্ত ছিলেন দুরন্ত , নির্ভীক আর একই সঙ্গে হৃদয়বান । ছোট বেলা থেকেই তিনি সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । প্রয়োজনে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বন্যাত্রাণে, অগ্নি নির্বাপনের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তেন । গ্রামের মাইনর স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু । তারপর সিলেট শহরের ইংরাজি মাধ্যম স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন এবং মেধানুসারে তিনি অসম প্রদেশে প্রথম স্থান অধিকার করেন । কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফ.এ পাশ করে তিনি বিলেত যান । ১৯০৪ সালে তিনি আই.সি.এস. পাশ করেন এবং মেধা তালিকার সপ্তম স্থান অধিকার করেন । তিনি ছিলেন সরকারি কর্মচারি । জেলাশাসক, কালেক্টর, কৃষি ও শিল্প বিভাগের সচিব হিসাবে কাজ করেছেন । সরোজ নলিনী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় । ১৯৪০ সালে কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন ।
১৯৩২ সালে তিনি ব্রতচারী প্রতিষ্ঠা করেন । ১৯৩৪ সালে ব্রতচারী সমিতি এবং ১৯৪১ সালে কলকাতার জোকায় ব্রতচারী গ্রাম স্থাপন করেন । ব্রতচারী আন্দোলনে কেউ সামিল হতে চাইলে তিনটি উক্তি স্বীকার করে নিতে হতঃ-
১। আমি বাংলাকে ভালবাসি
২। আমি বাংলার সেবা করব
৩। আমি বাংলার ব্রতচারী
গুরুসদয় দত্ত সারাজীবন লোকশিল্প আর সংস্কৃতির সন্ধানে প্রবৃত্ত ছিলেন । তিনি রায়বেঁশে (রায়বেঁশে হচ্ছে পুরুষদের দ্বারা লোকযুদ্ধ নৃত্যের একটি ঘরানা), কাঠি, ধামাল, ঝুমুর, ব্রত, ঢালিনৃত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন । ব্রতচারীদের মধ্যে তিনি “প্রবর্তক জী” নামে খ্যাত ছিলেন । ব্রতচারীদের অভিবাদন-ভঙ্গি, মাতৃভাষা প্রীতি, স্বাস্থ্যজ্ঞান, সত্যনিষ্ঠা, সংযম, প্রফুল্লভাব, অধ্যবসায়, আত্মনির্ভরতা খুব জনপ্রিয়তা লাভ করে । রবীন্দ্রনাথ সহ তৎকালীন সময়ের বহু বিখ্যাত ব্যক্তি গুরুসদয় দত্ত প্রতিষ্ঠিত ব্রতচারী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন । তিনি অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছিলেন যেগুলো বর্তমানে দুর্লভ । গ্রাম পুনর্গঠন , সমবায় প্রথায় চাষ, লোকশিল্প সংগ্রহ, ম্যাগাজিন প্রকাশ সহ তিনি নানান কাজের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন । লোকসাহিত্য গবেষক, লেখক, স্বদেশপ্রেমী গুরুসদয় দত্ত ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৪১ সালের ২৫ জুন পরলোক গমন করেন । এখনও তাঁর লোক ঐতিহ্যের সন্ধান বাঙালি জাতিকে আত্ম-আবিষ্কারের পথে চালিত করে । তাঁর জন্মদিনে শতকোটি প্রণাম । (তথ্যসূত্র: সংগৃহীত)
——০——–

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ ২৫ মে, ইতিহাসের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নেব ইতিহাসের এই দিনে বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু, দিনসহ ঘটে যাওয়া ঘটনা।।।।

আজ ২৫ মে। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু দিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।

দিবস—–

(ক)  ২০০১ – তোয়ালে দিবস, লেখক ডগলাস অ্যাডামসের স্মরণে, লেখকের ভক্তরা, প্রথম পালন শুরু করেন।
(খ) বিশ্ব থাইরয়েড দিবস৷

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৭৫১ – ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হালেদ, বাংলায় মুদ্রিত প্রথম ব্যাকরণ গ্রন্থের রচয়িতা।

১৮০৩ – যুক্তরাষ্ট্রে খ্যাতনামা কবি এবং লেখক রালফ ওয়ালডো এমারসন।

১৮৬৫ – পিটার জেমান, নেদারল্যান্ডের বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী।
১৮৮৬ – রাসবিহারী বসু, ভারতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন বিপ্লবী নেতা এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির সংগঠক।
১৭৫১ – ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হালেদ, বাংলায় মুদ্রিত প্রথম ব্যাকরণ গ্রন্থের রচয়িতা।
১৮০৩ – যুক্তরাষ্ট্রে খ্যাতনামা কবি এবং লেখক রালফ ওয়ালডো এমারসন।

১৮৬৫ – পিটার জেমান, নেদারল্যান্ডের বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী।
১৮৮৬ – রাসবিহারী বসু, ভারতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন বিপ্লবী নেতা এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির সংগঠক।
১৮৮৯ – হেলিকপ্টারের উদ্ভাবক রুশ-মার্কিন বিজ্ঞানী ইগর সিকোরস্কি।
১৮৯৯ – (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ)কাজী নজরুল ইসলাম, বিদ্রোহী কবি, সাহিত্যিক, সম্পাদক, ও বাংলাদেশের জাতীয় কবি।
১৯০২ – অধ্যাপক, গবেষক ও সাহিত্যিক অমূল্যধন মুখোপাধ্যায়।
১৯০৬ – রামকিঙ্কর বেইজ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ,বাঁকুড়া জেলা, বিখ্যাত ভাস্কর।
১৯৬৩ – মাইক মায়ার্স্‌, মার্কিন কৌতুকাভিনেতা।
১৯৬৯ – আমেরিকান প্রযোজক ও অভিনেত্রী অ্যানি হেচে।
১৯৭৫ – আমেরিকান মিউজিশিয়ান, গায়িকা ও অভিনেত্রী লরেন হিল।

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

১৭৬৮ – ক্যাপটেন কুক তার বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে প্রথম অভিযান শুরু করেন।
১৯১১ – মেক্সিকোতে বিদ্রোহের মুখে প্রেসিডেন্ট পোরদিরিও দিয়াজ উৎখাত।
১৯২৩ – আমীর আবদুল্লাহর নেতৃত্বে ট্রান্স জর্দানের স্বাধীনতা ঘোষণা।
১৯৩৬ – নিগ্রো ক্রীড়াবিদ জেসি ওয়েন বার্লিন অলিম্পিকে ৫টি বিশ্বরেকর্ড ভঙ্গ করে।
১৯৪৪ – জার্মানি যুগোশ্লাভিয়ার কম্যুনিষ্ট নেতা জোসেপ ব্রজ টিটোকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালিয়েছিলো।
১৯৪৫ – হিটলারের নাৎসী বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা গেস্টোপোর প্রধান হেনরিখ হিমলার আত্মহত্যা করেছিলেন।
১৯৬৩ – ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা বা ওএইউ গঠিত হয়।
১৯৬৯ – সুদানে সেনা অভ্যুত্থানে সরকার উৎখাত।
১৯৭১ – মুজিবনগর থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু।
১৯৭২ – বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় আর্জেন্টিনা।
১৯৭৯ – শিকাগোতে আমেরিকায় ডিসি-১০ বিধ্বস্ত হয়ে ২৭২ যাত্রীর সবাই নিহত।
১৯৮৯ – গর্বাচেভ সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম প্রশাসনিক ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
১৯৯৪ – দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
১৯৯৭ – সিয়েরালিওনে বিদ্রোহীদের সহিংস অভ্যুত্থানে সরকার উৎখাত।
২০০০ – বাংলাদেশের সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে প্রথম মহিলা বিচারপতি (নাজমুন আরা সুলতানা) নিয়োগ।
২০১৮ – শান্তি নিকেতনে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

১৮৪৫ – স্কট চিত্রশিল্পী টমাস ডানকানের মৃত্যু।
১৯৮৩ – মুহাম্মদ ইদ্রিস আল-সেনুস, লিবিয়ার বাদশাহ।
১৯২৪ – আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, শিক্ষাবিদ, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘ সময়ের ভাইস-চ্যান্সেলর।
১৯৪১ – গুরুসদয় দত্ত, ব্রতচারী আন্দোলনের পথিকৃৎ ও সমাজকর্মী।
২০০১ – আলবের্তো কোর্দা,কিউবান আলোকচিত্র শিল্পী।
২০২১ – কল্পবিজ্ঞানের বাঙালি লেখিকা এণাক্ষী চট্টোপাধ্যায়।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ ২৪ মে, ইতিহাসের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নেব ইতিহাসের এই দিনে বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু, দিনসহ ঘটে যাওয়া ঘটনা।।।।

আজ ২৪ মে। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু দিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।

দিবস—–

(ক) ভারতীয় কমনওয়েলথ দিবস: 24 মে।
আজ যাদের জন্মদিন—-

১৫৪৪ – উইলিয়াম গিলবার্ট, ইংরেজ চিকিৎসক।  .
১৬৮৬ – ড্যানিয়েল গ্যাব্রিয়েল ফারেনহাইট, পদার্থবিজ্ঞানী।  .

১৮১৩ – কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, ঊনবিংশ শতকের অন্যতম বাঙালি শিক্ষাবিদ, ভাষাতত্ত্ববিদ ও খ্রিষ্টধর্মপ্রচারক।  .

১৮১৯ – রাণী ভিক্টোরিয়া, যুক্তরাজ্য ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাণী।  .
১৮৫৮ – সারদারঞ্জন রায়, বাংলার যুবসমাজে ক্রিকেট খেলার প্রচলক।

১৮৯৯ – (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) কাজী নজরুল ইসলাম- বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী কবি। বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে তাঁর জন্ম হয়।
১৯০৫ – মিখাইল শলোখভ, নোবেলজয়ী সোভিয়েত ঔপন্যাসিক।

১৯২০ – সোমেন চন্দ, মার্ক্সবাদী বাঙালি সাহিত্যিক।
১৯৪০ (ক)  জোসেফ ব্রডস্কি, বিখ্যাত রুশ কবি ও প্রাবন্ধিক।
(খ) মওদুদ আহমেদ, বাংলাদেশের সাবেক উপরাষ্ট্রপতি, অষ্টম প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

১৯৪১ – বব ডিলান, মার্কিন গায়ক, গীতিকার, লেখক, সঙ্গীতজ্ঞ ও কবি।

১৯৪২ – আলী বাখের, দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।
১৯৪৯ – জিম ব্রডবেন্ট, ইংরেজ অভিনেতা।
১৯৫১ – মুনতাসীর মামুন, বাংলাদেশী অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক।

১৯৫৫ – রাজেশ রোশন, ভারতীয় সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক।
১৯৬৬ – এরিক কাঁতোয়াঁ, সাবেক ফরাসি ফুটবলার।
১৯৬৯ – মার্টিন ম্যাককেগ, আইরিশ বংশোদ্ভূত সাবেক পেশাদার ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।
১৯৭৭ – জিৎ গাঙ্গুলী, ভারতীয় সংগীত পরিচালক এবং গায়ক।
১৯৯১ – সাফিয়ান শরীফ, স্কটিশ ক্রিকেটার।

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

১৮২২ – ইকুয়েডর স্বাধীনতা অর্জন করে।
১৮৪৪ – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের সংসদভবন থেকে মার্কিন আবিষ্কারক মোর্স (মোরিস) ৪০ মাইল দূরের বাল্টিমোর শহরে বিশ্বের প্রথম দূরপাল্লার টেলিগ্রাম পাঠান।
১৮৬২ – টমস নদীর ওপর ওয়েস্ট মিনিস্টার সেতু উন্মুক্ত করা হয়।
১৮৭৫ – স্যার সৈয়দ আহমদ খান আলিগড়ে মোহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল স্কুল স্থাপন করেন। এটিই পরে (১৯২০) আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়।
১৯০২ – ব্রিটেনে প্রথম ‘এম্পায়ার ডে’ পালিত হয়।
১৯৬৪ – রিও ডি জেনিরোর জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফুটবল ম্যাচকে কেন্দ্র করে সংঘটিত দাঙ্গায় ৩২৮ জন নিহত ও পাঁচ শতাধিক আহত হন।
১৯৭২ – কবি কাজী নজরুল ইসলাম কে ভারত থেকে ঢাকায় আগমন। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে জাতীয় কবির স্বীকৃতি দান।
১৯৮৫ – বাংলাদেশের উড়িরচরে জলোচ্ছ্বাসে ১১ হাজার লোকের প্রাণহানি।
১৯৯১ – বর্ণবাদী ইসরাইল সরকার, দ্বিতীয় বারের মতো ১৪ হাজার চার’শ ইহুদিকে ইথিউপিয়া থেকে অধিকৃত ফিলিস্তিনে নিয়ে আসে।
১৯৯৩ – উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইরিত্রিয়া,ইথিউপিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৯৪ – মক্কায় পদদলিত হয়ে ২৭০ হাজীর মৃত্যু।
২০০০ – ইসরাইলী বাহিনী দক্ষিণ লেবানন থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়।

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

১৫৪৩ – নিকলাস কপারনিকাস, জ্যোতির্বিজ্ঞানী।

১৮৯৪- বিহারীলাল চক্রবর্তী, বাংলার গীতিকবি।
১৯০৩ – হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, উনিশ শতকের বাঙালি কবি।
১৯৩২ – কার্ল বেন্ডা, জার্মান অণুজীববিজ্ঞানী।

১৯৪০ – অমিতা সেন, ১৯৩০-এর দশকের খ্যাতনামা রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী।
১৯৫৯ – জন ফস্টার দুললেস, মার্কিন কূটনীতিক।
১৯৭১ – জাকির হোসাইন, পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর।
১৯৮৯ – তৃপ্তি মিত্র, বাঙালি মঞ্চ অভিনেত্রী।

১৯৯২ – শৈলজারঞ্জন মজুমদার, ভারতীয় বাঙালি সঙ্গীতজ্ঞ ও রবীন্দ্র সংগীত প্রশিক্ষক।
১৯৯৫ – হ্যারল্ড উইলসন, যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।

২০১০ – তপেন চট্টোপাধ্যায়, “গুপী গায়েন” খ্যাত বাঙালি অভিনেতা।
২০১০ – বেবী ইসলাম, বাংলাদেশি চিত্রগ্রাহক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা।

২০১৪ – ডেভিড অ্যালেন, ইংরেজ ক্রিকেটার।
২০১৬ – খালেদা একরাম, বাংলাদেশি শিক্ষাবিদ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য।
২০২০ – মকবুল হোসেন, বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ ও ঢাকা-৯ আসনের সাবেক এমপি, কোভিড-১৯।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

“গুপী গায়েন” খ্যাত বাঙালি অভিনেতা তপেন চ্যাটার্জী গুপি গাইনের চরিত্রের মধ্যে আজও অমর হয়ে রয়েছেন।।।।

তপেন চ্যাটার্জী ছিলেন ভারতের একজন বাঙালি কিংবদন্তি অভিনেতা যিনি সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রে বেশ কয়েকটি ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, বিশেষ করে গুপি গাইনে বাঘা বাইন (১৯৬৮) এবং এর সিক্যুয়েল ১৯৬৮-এ গুপি গাইনের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সফল ছবি সত্যজিৎ রায়ের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’।।

১৯৬৯-এ মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবির নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তপেন চট্টোপাধ্যায় ও রবি ঘোষ। অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন সন্তোষ দত্ত, জহর রায় ও হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। সেই সময় বাংলায় সবথেকে ব্যয়বহুল ছবি ছিল ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’।

জন্ম ও পরিবার-

তপেন চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর, কালীঘাটের মাইশোর রোডের বাড়িতে। নলিনীরঞ্জন ও শোভনাদেবীর পাঁচ সন্তানের মধ্যে তপেন ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁরা তিন ভাই ও দুই বোন। অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক তপেন চট্টোপাধ্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষা রাজেন্দ্র বিদ্যাভবনে।
অভিনয়ের দিকে ঝোঁক-
ছোট থেকেই অভিনয়ের দিকে ঝোঁক ছিল। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তপেন প্রথম মঞ্চে পা দিলেন, নাটকের নাম ‘অচলায়তন’। ছোট্ট চরিত্র হলেও দর্শকের মনে দাগ কেটে গিয়েছিল তাঁর অভিনয়। শীতকালে বা পুজোর সময় সেই নাটকের জন্যই ডাক পড়ত তপেনের। পরে শেখর চট্টোপাধ্যায়ের গ্রুপ থিয়েটারে যোগ দিয়েছিলেন।

কর্ম জীবন–

অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার তপেন চট্টোপাধ্যায় খুব কম বয়সে এক সময়ে রাজস্থানের বিকানেরে চাকরি করতেন। সেখানকার জিপসাম মাইনস-এ রোজ দু’ টাকা দু’ আনা পারিশ্রমিক মিলত। বছর দুই চাকরি করার পর অতঃপর কলকাতায় ফিরলেন তিনি। তখনও কি জানতেন, এই রাজস্থানে এসেই তিনি জীবনের শ্রেষ্ঠ চরিত্রের জন্য শুটিং করবেন, তা-ও সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায়! কলকাতায় ফিরে এসে যোগ দিলেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটকের দলে।

অভিনয় জীবন–

তবে প্রথমে তিনি একজন যোগ্য প্রকৌশলী হিসেবে, চ্যাটার্জির রাজস্থানে চাকরি ছিল, এরপর তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন এবং সত্যজিৎ রায়ের পুনরুজ্জীবিত বাংলা পত্রিকা সন্দেশে যোগ দেন। ছোটদের পত্রিকা সন্দেশের বিজ্ঞাপন বিভাগে কর্মজীবন শুরু করেন। সত্যজিৎ তাকে মহানগরে একটি ক্যামিও চরিত্রে অভিনয় করেন এবং তারপরে গুপি গাইন বাঘা বাইন-এ গায়ক গুপি গাইন হিসেবে বিখ্যাত হন। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাশে গানটি তার উপর গুপি এবং রবি ঘোষের বাঘা বাইন চরিত্রে নির্মিত গানটি এখনও বাঙালি চলচ্চিত্রপ্রেমীদের স্মৃতিতে নাড়া দেয়।
জানা যায় গুপীর চরিত্রে তপেন’ই পরিচালকের প্রথম পছন্দ ছিলেন না। ষাটের দশকের শুরুতে, সত্যজিৎ যখন এই ছবি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন, তখন বহুরূপী নাট্যগোষ্ঠীর অভিনেতা অরুণ মুখোপাধ্যায়কে গুপীর চরিত্রের জন্য ভেবেছিলেন। শুন্ডি ও হাল্লা রাজার চরিত্রে ছবি বিশ্বাস, এবং মন্ত্রীর ভূমিকায় তুলসী চক্রবর্তীর কথা ভেবেছিলেন। এরপর একমসয় গুপীর চরিত্রে গায়ক-অভিনেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ের নামও শোনা যায়।ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় যে বাঘার চরিত্রে অভিনয় করবেন রবি ও গুপীর ভূমিকায় দেখা যাবে নবাগত জীবনলাল বন্দ্যোপাধ্যায়কে যিনি সত্যযুগ পত্রিকার সহসম্পাদক ছিলেন।
শেষমেশ তিন-তিনবার অভিনেতা পাল্টে গুপীর জন্য তপেনকে নির্বাচিত করেন সত্যজিৎ। এর আগে তপেন সত্যজিতের ‘মহানগর’-এ একটি ছোট চরিত্রে কাজ করেছিলেন। ১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হীরক রাজার দেশে ছবিতেও গুপী ও বাঘার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তপেন ও রবি।

চলচ্চিত্র সমূহ-

১৯৬৩-মহানগর, ১৯৬৯-গুপী গাইন বাঘা বাইন, ১৯৭০- রূপসী, ১৯৭১-ধন্যি মেয়ে, ১৯৭৩- শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, ১৯৭৩- ননিগোপালের বিয়ে, ১৯৭৪- সঙ্গিনী, ১৯৭৪- বিকালে ভোরের ফুল, ১৯৭৪- ঠগিনী, ১৯৭৭-ভোলা ময়রা, ১৯৭৭- হাতে রইল তিন, ১৯৭৯গণদেবতা (তারা নাপিত) , ১৯৮০আঁচল (প্রযোজনা), ১৯৮০-হীরক রাজার দেশে(গুপী গাইন), ১৯৯১-গুপী বাঘা ফিরে এলো(গুপী), ১৯৯৬-রবিবার, ১৯৯৭- শ্রীমান ভূতনাথ, ২০০৮- নরক গুলজার(সর্বশেষ চলচ্চিত্র)

প্রয়াণ–

তপেন চ্যাটার্জি ২৪ মে ২০১০ তারিখে ৭২ বছর বয়সে মারা যান। তিনি ফুসফুসের রোগে ভুগছিলেন।

।।তথ্য সূত্র: উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবপেজ ।।

Share This