অধ্যায় ১: প্রথম দেখা
কলকাতার গরমে হাঁপিয়ে ওঠা এক দুপুর। কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায় ভিড় জমজমাট।
অরণ্য দাঁড়িয়ে পুরনো বই ঘাঁটছে। হঠাৎ করেই পাশ থেকে এক মেয়ে এসে ধাক্কা দিল।
“সরি!” – মেয়েটি লজ্জায় বলল।
অরণ্য তাকিয়ে দেখল, সাদামাটা সালোয়ার-কামিজ পরা এক মেয়ে, চুল এলোমেলো।
“কিছু হয়নি,” অরণ্য মৃদু হাসল।
এটাই তাদের প্রথম পরিচয়। মেয়েটির নাম ছিল মেঘলা।
অধ্যায় ২: বন্ধুত্বের শুরু
পরিচয় বাড়ল। অরণ্য জানল মেঘলা সাহিত্য নিয়ে পড়ছে।
দুজনের বইয়ের রুচি এক। রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব, সেলিঞ্জার—সবই তাদের আলোচনার বিষয়।
ধীরে ধীরে তারা নিয়মিত দেখা করতে শুরু করল।
কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসে একসাথে কফি খাওয়া, গঙ্গার ধারে হাঁটা, বইয়ের দোকানে একসাথে ঘুরে বেড়ানো—সবই নতুন স্বাদ এনে দিল অরণ্যের জীবনে।
অধ্যায় ৩: প্রেমের জন্ম
একদিন গঙ্গার ধারে বসে মেঘলা হঠাৎ বলল—
“তুমি জানো অরণ্য, আমি কখনও কাউকে এতটা বিশ্বাস করিনি।”
অরণ্য অবাক হয়ে তাকাল।
সেদিন হাওয়ার ঝাপটায় মেঘলার চুল মুখে এসে পড়ল।
অরণ্য ধীরে হাত বাড়িয়ে সেটা সরিয়ে দিল।
তাদের চোখে চোখ পড়তেই অরণ্যের বুক ধড়ফড় করে উঠল।
সেই দিন থেকেই তাদের প্রেমের গল্প শুরু হল।
অধ্যায় ৪: ভবিষ্যতের স্বপ্ন
অরণ্য সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। মেঘলা স্বপ্ন দেখত বিদেশে উচ্চশিক্ষার।
তারা প্রায়ই ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলত।
“যদি আমি বাইরে চলে যাই?” – মেঘলা একদিন জিজ্ঞেস করল।
অরণ্য বলল—
“তাহলেও আমি থাকব। তুমি পড়াশোনা শেষ করে ফিরবে, তারপর আমরা সংসার গড়ব।”
অধ্যায় ৫: দূরত্বের শুরু
মেঘলা বিদেশে পড়তে চলে গেল।
প্রথম কয়েক মাস তারা নিয়মিত ফোনে কথা বলত, ভিডিও কল করত।
কিন্তু ধীরে ধীরে যোগাযোগ কমে এল।
টাইম জোনের পার্থক্য, ব্যস্ততা, নতুন জীবন—সব মিলে মেঘলা কম সময় দিতে লাগল।
অরণ্য কষ্ট পেত, কিন্তু কিছু বলত না।
অধ্যায় ৬: ভুল বোঝাবুঝি
একদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় অরণ্য দেখল মেঘলা তার এক সহপাঠীর সাথে ছবি দিয়েছে।
ছবিতে তারা হাসছে।
অরণ্যের বুকের ভেতর রাগ জমল।
সে মেঘলাকে মেসেজ করল—
“তুমি কি আমাকে ভুলে গেছ?”
মেঘলা উত্তর দিল না।
কয়েকদিনের নীরবতার পর সে লিখল—
“অরণ্য, আমাদের মধ্যে দূরত্ব এত বেড়ে গেছে যে আমি আর টিকিয়ে রাখতে পারছি না।”
অধ্যায় ৭: ভাঙনের রাত
অরণ্য সেই রাতে ঘুমোতে পারেনি।
মেঘলার শেষ মেসেজটা বারবার পড়তে পড়তে চোখে জল এসে গেল।
সকালে উঠে সে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিল।
ফোন, মেসেঞ্জার, মেইল—সব জায়গা থেকে মেঘলাকে ব্লক করল।
অধ্যায় ৮: সময়ের নির্মমতা
বছর গড়িয়ে গেল।
অরণ্য চাকরি পেল, জীবনে কিছুটা স্থিরতা এল।
কিন্তু মেঘলার স্মৃতি তাকে ছাড়ল না।
রাতের বেলা একা বসে গান শুনলে মনে হত মেঘলা ঠিক পাশেই বসে আছে।
অধ্যায় ৯: অপ্রত্যাশিত সাক্ষাৎ
একদিন এক সাহিত্য সভায় অরণ্য মেঘলাকে হঠাৎ দেখল।
সে দেশে ফিরেছে। চুলে সামান্য সাদা, মুখে পরিণত ভাব।
তাদের চোখে চোখ পড়ল।
দুজনেই এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল।
অধ্যায় ১০: মুখোমুখি
অরণ্য ধীরে মেঘলার কাছে গেল।
“কেমন আছো?”—তার গলায় কাঁপন।
মেঘলা হেসে বলল—
“ভালো। অনেক কিছু শিখেছি। তোমাকে না পেয়ে শিখেছি, কীভাবে একা বাঁচতে হয়।”
অরণ্য বলল—
“আমি এখনও ভুলতে পারিনি।”
মেঘলা চুপ করে রইল। তারপর বলল—
“কিন্তু অরণ্য, আমরা দুজনেই বদলে গেছি। সেই দিনগুলো ফিরে আসবে না।”
অধ্যায় ১১: শেষ সিদ্ধান্ত
অরণ্য বাড়ি ফিরে সারারাত জানালার পাশে বসে রইল।
ভোরের আলোয় মনে হল—
মেঘলাকে ছেড়ে দেওয়াটাই হয়তো ভালো।
সে ডায়েরিতে লিখল—
“প্রেম শেষ হয়নি, শুধু রূপ বদলেছে। মেঘলা থাকবে, কিন্তু স্মৃতির মতো।”
অধ্যায় ১২: মুক্তি
অরণ্য মেঘলাকে একটি শেষ মেসেজ পাঠাল—
“ধন্যবাদ আমার জীবনে এসে আমাকে ভালোবাসার মানে শেখানোর জন্য। তোমার সুখী হওয়া ছাড়া আমার আর কিছু চাই না।”
মেঘলা উত্তর দিল না।
কিন্তু অরণ্যের মনে হল, বুকের ভার হালকা হয়ে গেছে।
সমাপ্তি
অরণ্য জানল—প্রেম মানেই সবসময় একসাথে থাকা নয়।
কখনও কখনও ছেড়ে দেওয়াই সত্যিকারের ভালোবাসা।
সে হেসে উঠল।
বছরের পর বছর যে যন্ত্রণা তাকে তাড়িয়ে বেড়াত, আজ যেন মুক্তির স্বাদ দিল।