Categories
প্রবন্ধ

মূল্যবান মনুষ্য জীবন ও প্রকৃত সাধু-সন্ন্যাসী : স্বামী আত্মভোলানন্দ (পরিব্রাজক)।

আমাদের সুন্দর মূল্যবান মনুষ্য জীবনে, পরম সৌভাগ্যবশত আধ্যাত্মিক দেশ ভারতবর্ষে আমরা জন্মেছি। প্রাচীন কাল হতে এই পবিত্রভূমি, পূণ্যভূমি ভারতবর্ষে শত শত মহাপুরুষ সাধু-মহাত্মার আবির্ভাব ঘটেছে। তাদের কঠোর তপস্যা ও সাধনার ফলে ভারতভূমি আজ সারা বিশ্বের দরবারে পুণ্যভূমি, পবিত্রভূমি, সাধনা ও তপস্যার কেন্দ্রবিন্দু। ভারতভূমি তার স্বমহিমায় উজ্জ্বল। তাই ভারত মাতার পদপ্রান্তে ঘুরে ঘুরে, ভারতমাতাকে দর্শন করতে করতে, সাধু-সন্ন্যাসী কি? একটু জানার চেষ্টা করা। যেমন:-

১) জটাজুট ধারণ করলেই সাধু হওয়া যায় না, মহাত্মা তৈলঙ্গস্বামীর জট ছিল না।
২) গলায় বা হাতে রুদ্রাক্ষ ধারণ করলেই সাধু হওয়া যায় না, রামকৃষ্ণদেবের গলায় বা হাতে রুদ্রাক্ষ ধারণ করা ছিল না।
৩) মঠ-মন্দির-মিশন থাকলেই সাধু হওয়া যায় না, বাবা বামদেবের কোন মঠ-মন্দির-মিশন ছিল না।
৪) গেরুয়া-লাল-কালো বস্ত্র পরলেই সাধু হওয়া যায় না, লোকনাথ বাবার পরনে লাল, গেরুয়া বা কালো বস্ত্র থাকতো না।
৫) সঙ্ঘ বা সংগঠন করলেই বা আশ্রমে যোগদান করলেই সাধু হওয়া যায় না। লাহিড়ী মহাশয়ের কোনও সঙ্ঘ বা সংগঠন ছিল না।
৬) বেনারসের কিনারাম বাবার গলায় ‘নাদি’ ছিল না, তবুও তিনি অঘোরী সাধকদের গুরু ছিলেন।

*সাধু হতে গেলে প্রকৃত অর্থে অন্তঃশৌচ ও বহিঃশৌচ করার দরকার হয়……মনটাকে সাধু করতে হয়।* বসনে-ভূষণে সাধু হয় না, বসনে-ভূষণে সাধু সাজা হয়।

*অখণ্ড ভারতবর্ষে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় অনেক স্বনামধন্য পরিবার থেকে বহু ভারত মাতার সুসন্তান এই সন্ন্যাসী লাইনে এসেছিলেন। তারা অনেক সন্ন্যাসী সংস্থাকে, আশ্রমকে মহিমাময় করে তুলেছেন। অনেক গৌরবময় ধার্মিক, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, অনেক মঠ, আশ্রম, জনহিতকর প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। মঠ, আশ্রমকে, সংঘকে, সাধু সমাজকে জনমানসে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন।*

আবার খন্ডিত ভারতে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক তরতাজা যুবক যেমন স্বেচ্ছায় সন্ন্যাসী হয়েছিলেন। তেমনি অনেক পূর্ব-পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) হতে পাকিস্তানি সেনাদের ভয়ে ভীত হয়ে আশ্রয় ও নিরাপত্তার স্বার্থে, অনেক আশ্রমে, সংঘে, মঠে, সংস্থায় আশ্রয় নিয়ে সন্ন্যাসী হয়ে গিয়েছিলেন। তারা নিজের জীবন জীবিকার জন্য ভয়ে সন্ন্যাসী হয়েছিলেন, ভক্তিতে নয়।

আবার লিখতে ও বলতে খুবই দুঃখ হয়, খারাপ লাগে। খুব দুঃখের বিষয় যে, আজকাল অনেক আশ্রমে, অনেক সংস্থায়, নুতন সাধু আশ্রমে প্রবেশের ন্যূনতম নিয়মকানুন না থাকাই, অনেক নিম্নমানের, নিম্ন রুচিসম্পন্ন লোক জীবন জীবিকার জন্য সন্ন্যাসী হয়ে যাচ্ছে। *(তারে কিটি ধা মেরে কেটে খা) তারা সন্ন্যাসী হওয়ার বদলে জীবন জীবিকার সন্ধানে এসেছে। তারা ভেকধারি, চিটিংবাজ, ধাপ্পাবাজ, সন্ন্যাসী তৈরি হচ্ছে।*

*আবার অনেক আশ্রমে আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডল না থাকায়, সাধু-সন্ন্যাসীগণ আত্মহত্যা করছে। খুনের আসামি, জেলখাটা আসামি, ধর্ষণ কেসের আসামীতে পরিণত হচ্ছে। তারা আবার আশ্রমের অধ্যক্ষ, আশ্রমের পদ অধিকার করে বসে আছে।*

আবার অনেক বিধর্মী ভারতে এসে নিজের নাম-ধর্ম-পরিচয় গোপন করে সাধু সাজছে, ইনারাই বড় বড় সন্ন্যাসী, সাধু হয়ে যাচ্ছে। অনেক সংস্থার আশ্রমের উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হচ্ছে। এইসব কারণের ফলে সাধু সমাজ, আশ্রমগুলি ও সত্য সনাতন ধর্মকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা হচ্ছে। এই বিষয়ে সত্য সনাতন ধর্মের রক্ষকদের ও প্রকৃত সাধু সন্ন্যাসীদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

আবার অনেক সুপ্রতিষ্ঠিত আশ্রমগুলিতে সুন্দর নিয়মমাফিক আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডল ও ভাবধারা বিরাজমান। সেখানে প্রকৃত সাধু সন্ন্যাসী হবার মনোভাব নিয়ে আশ্রমে এসেছে কিনা তা যাচাই করার পরই সন্ন্যাস লাইনে প্রবেশ-অধিকার দেয়া হয়। সেখানে ভারত মাতার সুসন্তান ও রুচিবোধ সম্পন্ন, শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন যুবকদের প্রবেশ অধিকার দেওয়া হয়। তাই সেই আশ্রমগুলি সারা বাংলা তথা ভারতবর্ষ ও বিশ্বব্যাপী ভারতীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতার গৌরবময় ধার্মিক পরিমন্ডল হয়ে উঠেছে।

পরিশেষে ভারত মাতার চরণে, সমস্ত প্রকৃত সাধু-মহাত্মাদের চরণে আমি ভক্তিপূর্ণ ভুমিষ্ঠ প্রণাম নিবেদন করি, ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করি। জগৎগুরু ভগবান স্বামী প্রণবানন্দজি মহারাজের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি প্রণাম নিবেদন করি।
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্।
স্বামী আত্মভোলানন্দ *পরিব্রাজক*
🙏🏻🙏🏻🙏🏻

*কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে মানসিক আঘাত দেওয়ার জন্য এ লেখা নয়। এটি চরম সত্য, তাই অনেক দুঃখের সাথে তুলে ধরলাম।*

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *