Categories
প্রবন্ধ

রতন টাটা দেশের প্রিয় শিল্পপতিদের মধ্যে এমনই এক মুখ, যাকে সবাই চেনেন। তিনি একজন বিখ্যাত ভারতীয় শিল্পপতি এবং টাটা গ্রুপের অবসরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। রতন টাটা শুধু শিল্পপতিই নন , তিনি একজন সমাজসেবী , মানব দরদি ও দূরদর্শী মানুষ । তিনি ১৯৯১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ২৮ ডিসেম্বর ২০১২ -তে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন, কিন্তু টাটা গ্রুপের দাতব্য ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হিসেবে বহাল রয়েছেন।তার নেতৃত্বে, টাটা গ্রুপ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং গ্রুপের আয়ও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভারতের অন্যতম সফল শিল্পপতি স্যার রতন টাটা ১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর মুম্বইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি টাটা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জামশেদজি টাটার দত্তক পৌত্র এবং নেভাল টাটার পুত্র। তাঁর মায়ের নাম সুনি টাটা। রতন টাটার বাবা মা যখন পৃথক হয়ে যান যখন তাঁর দশ বছর বয়স ছিল।যদিও মা বাবার ডিভোর্স নিয়ে তাঁকে ও তাঁর দাদাকে অনেক টিটকারির সম্মুখীন হতে হয়েছিল।  রতন টাটা গুজরাটের অন্যতম ধনী পরিবারের ছেলে হলেও তার শৈশব খুব একটা ভালো কাটেনি। তার কারণ ছিল রতনের বাবা-মা, বিচ্ছেদের কারণে তাঁরা আলাদা থাকতেন। দাদির সঙ্গে বেড়ে ওঠার ফলে তাঁর দাদি তাঁকে জীবনের মূল্যবোধ শিখিয়েছিলেন।

রতন টাটা ছোট বেলা থেকেই বেশ মেধাবী ছিলেন।রতন টাটা কেম্পিয়ন স্কুলে (মুম্বাই) শিক্ষা জীবন শুরু করেন। পরে তিনি ক্যাথেড্রাল অ্যান্ড জন কনন স্কুল-এ তিনি স্কুল শিক্ষা শেষ করেন। স্কুল শিক্ষা শেষ করার পর তিনি ১৯৬২ সালে কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ারিং ও আর্কিটেচার বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়তে বাণিজ্য ও অ্যাডভেঞ্চেড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন।

বিশ্বের অন্যতম সফল ব্যবসায়ী রতন টাটার শুরুটা হয়েছিল ছোটখাট চাকরি দিয়ে। পড়াশুনা শেষ করে রতন টাটা (Ratan Tata) আমেরিকার জোনস এ্যান্ড ইমনস নামে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে কিছুদিন কাজ করেন। তারপর ১৯৬১ সালে তিনি টাটা গ্রুপে টাটা স্টিলের কর্মচারী হিসেবে রতন টাটার (Ratan Tata) ক্যারিয়ার শুরু করেন। যেখানে তাঁর প্রথম দায়িত্ব ছিল বিস্ফোরণ চুল্লি এবং চাউলের পাথর পরিচালনা করা। ১৯৯১ সালে জে আর ডি টাটা রতন টাটার মেধা পরিশ্রম ও মানসিকতার মূল্য দিতেই টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান পদে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৯১ সালে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান হয়ে তিনি টাটা গ্রুপের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনেছিলেন। ধীরে ধীরে কোম্পানীকে বিরাট এক আন্তর্জাতিক কোম্পানীতে পরিনত করেন। ২১ বছরের মিশনে পৃথিবীর ৬টি মহাদেশের ১০০ টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে দেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা। রতন টাটা আসলে মানবিক হৃদয় এবং ক্ষুরধার বৈষয়িক বুদ্ধির জীবন্ত প্রতীক। যে কারণে Tata Group-এর চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে অক্লান্তভাবে ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের পরিধি বাড়িয়েছেন। যার মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের একাধিক অধিগ্রহণ রয়েছে। যেমন Land Rover Jaguar-এর সঙ্গে Tata Motors, Tetly-র সঙ্গে Tata Tea এবং Corus-এর সঙ্গে Tata Steel। সবক’টি অধিগ্রহণই কোম্পানির মুনাফা কয়েকগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
রতন টাটাই এ দেশের একমাত্র শিল্পপতি যাঁর গ্যারাজে যেমন Ferrari California, Cadillac XLR, Land Rover Freelander, Chrysler Sebring, Honda Civic, Mercedes Benz S-Class, Maserati Quattroporte, Mercedes Benz 500 SL, Jaguar F-Type, Jaguar XF-R-সহ আরও অনেক বিলাসবহুল, আভিজাত্যে ভরা নিজস্ব গাড়ি রয়েছে, আবার যাবতীয় প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে যিনি ভারতকে উপহার দেন মাত্র এক লক্ষ টাকার ন্যানো।তিনি ২০০৭ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে F-16 Falcon-এর পাইলট হয়েছিলেন
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে, রতন টাটা মাত্র এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা গাড়ি “ন্যানো” চালু করেছিলেন। আসলে, রতন এই স্বপ্নটি দেখেছিলেন ১৯৯৭ সালে, যাতে একজন সাধারণ মানুষ মাত্র এক লক্ষ টাকায় একটি গাড়ি কেনার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন।

রতন টাটা শুধু শিল্পপতিই নন , তিনি একজন সমাজসেবী , মানব দরদি ও দূরদর্শী মানুষ । মানুষের পাশে থেকে মানব সমাজের কল্যাণের জন্য ব্যবসাকে প্রতিষ্ঠা করে এ যেন এক নতুন উদ্যম সৃষ্টি করেছেন , যা আগামীদিনে নতুন প্রজন্মকে পথ দেখতে পারবে। রতন টাটা (Ratan Tata) সারাজীবন ধরে প্রমান করেন দৃঢ় সংকল্প , জেদ আর মানুষের কল্যাণকামী মানসিকতা থাকলে বিশ্ব জয় করা সম্ভব।২০০৮ সালে মুম্বাই তাজ হোটেলে জঙ্গি হামলা হলে অনেক পরিবার স্বজন হারিয়ে , আহত হয়ে , কর্মচ্যুত বিপন্ন হয়ে পড়েছিলেন। উল্লেখযোগ্যভাবে রতন টাটা তখন সেই সব কর্মীদের পাশে থেকেছেন, আর্তের সহায় হয়েছেন। এমনকি কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজে উপিস্থিত থেকে সাহায্য করেছিলেন ।

রতন টাটা ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মভূষণ এবং পদ্মবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন।
এছাড়াও রতন টাটা (Ratan Tata) অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেয়েছেন।
।।তথ্য: সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট ।।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *