Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ঘুরে আসুন  পাঞ্জাবের অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দির।

ঘুরতে কে না ভালোবাসে। বিশেষ করে বাঙালিরা সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে ভ্রমনের নেশায়। কেউ পাহাড়, কেউ সমুদ্র আবার কেউ প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান ভালোবাসে ভ্রমণ করতে। প্রকৃতি কত কিছুই না আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে। কতটুকুই বা আমরা দেখেছি। এ বিশাল পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছুই দেখিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় আজ গোটা পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়় এলেও প্রকৃতিকে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করা এ এক আলাদা রোমাঞ্চ, আলাদা অনুভূতি যার রেষ হৃদয়ের মনিকোঠায় থেকে যায় চিরকাল।।

তাইতো আজও মানুষ বেরিয়ে পড়়ে প্রকৃতির কে গায়ে মেখে রোমাঞ্চিত হওয়ার নেশায়। কেউ চায় বিদেশে ভ্রমণে, আবার কেউ চায় দেশের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণে। এমনি এক ভ্রমণ এর জায়গা হলো পাঞ্জাবের অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দির।

 

স্বর্ণ মন্দির, যা শ্রী হরমন্দির সাহেব নামেও পরিচিত, পাঞ্জাবের অমৃতসরে আধ্যাত্মিকতা এবং ঐক্যের আলোকবর্তিকা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এই শ্রদ্ধেয় স্থানটি, 16 শতকে চতুর্থ শিখ গুরু গুরু রাম দাস দ্বারা সূচিত এবং 1604 খ্রিস্টাব্দে গুরু অর্জন দেব দ্বারা সম্পন্ন করা হয়েছিল, এটি একটি সম্মানিত মুসলিম সাধক হযরত মিয়াঁ মীর কর্তৃক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সাথে অন্তর্ভুক্তির প্রতীক। মন্দিরটি কেবল বিভিন্ন কোণ থেকে অনুগামীদেরই আকর্ষণ করে না বরং এর স্থাপত্য, আচার-অনুষ্ঠান এবং ল্যাঙ্গার পরিষেবার মাধ্যমে শিখ ধর্মের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকেও প্রদর্শন করে।

সর্বোত্তম পরিদর্শন সময়কাল–

অক্টোবর এবং মার্চের মধ্যে আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনা করার পরামর্শ দেওয়া হয় যখন আবহাওয়া মনোরম হয়, 10°C থেকে 25°C পর্যন্ত। এই সময়টি নভেম্বরে গুরু নানক জয়ন্তী, এপ্রিলে বৈশাখী এবং অক্টোবর এবং নভেম্বরের মধ্যে দীপাবলির মতো উল্লেখযোগ্য উত্সবগুলির সাথেও মিলিত হয়, যা একটি অনন্য সাংস্কৃতিক নিমজ্জন প্রদান করে।

স্বর্ণ মন্দিরের অনন্য দিক–

অমৃত সরোবর দ্বারা বেষ্টিত, মন্দিরটি আধ্যাত্মিক শুদ্ধির জন্য একটি স্থান হিসাবে কাজ করে। এর ল্যাঙ্গার, একটি সম্প্রদায়ের রান্নাঘর, দর্শকদের বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করে, সমতা এবং নিঃস্বার্থতার নীতিগুলি তুলে ধরে। গোল্ডেন টেম্পল বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় বিনামূল্যের রান্নাঘরের একটি হিসেবে বিখ্যাত, শিখ ঐতিহ্যের নম্রতার ওপর জোর দেয়।

প্রস্তাবিত সেবাসমূহ—

দর্শনার্থীরা দর্শনের মাধ্যমে মন্দিরের সৌন্দর্য অনুভব করতে পারেন, লঙ্গরে অংশগ্রহণ করতে পারেন এবং অখন্ডপাঠের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারেন। কীর্তন সঙ্গীত আধ্যাত্মিক পরিবেশকে উন্নত করে, যখন প্রসাদ বিতরণ ঐশ্বরিক কৃপাকে চিহ্নিত করে। অতিরিক্ত সুবিধার মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা সহায়তা, হুইলচেয়ার সমর্থন, এবং বিনামূল্যে পানীয় জল, সকলের জন্য আরামদায়ক পরিদর্শন নিশ্চিত করা।

আরতি অনুষ্ঠান—

দরবার সাহেবের মধ্যে সকাল এবং সন্ধ্যায় দৈনিক আরতিতে যোগদান একটি নিমগ্ন অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এর জমকালো সাজসজ্জার সাথে, অনুষ্ঠানটি উপস্থিতদের ভক্তি ও শ্রদ্ধায় আচ্ছন্ন করে, একটি উল্লেখযোগ্য আধ্যাত্মিক ব্যস্ততা চিহ্নিত করে।

কাছাকাছি আকর্ষণ—-

অমৃতসর, স্বর্ণ মন্দিরের আবাসস্থল, জালিয়ানওয়ালা বাগ, পার্টিশন মিউজিয়াম, দুর্গিয়ানা মন্দির, মহারাজা রঞ্জিত সিং মিউজিয়াম, রাম বাগ গার্ডেন, খালসা কলেজ, গোবিন্দগড় ফোর্ট, অকাল তখত এবং মাতা লাল দেবী মন্দির সহ অন্বেষণ করার মতো বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পট রয়েছে। এই সাইটগুলি এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির একটি আভাস দেয়।

গোল্ডেন টেম্পল কেবল শিখ বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যের প্রতীক নয় বরং মানবতা, ঐক্য এবং নিঃস্বার্থতার চিরন্তন চেতনার প্রমাণ হিসেবেও দাঁড়িয়ে আছে। এর অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি এবং পরিষেবাগুলি দর্শনার্থীদের আধ্যাত্মিক এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য পূরণ করে, এটিকে ভারতে অবশ্যই একটি পবিত্র ল্যান্ডমার্কে পরিদর্শন করতে হবে৷

Share This
Categories
প্রবন্ধ

মহিষাদল রাজবাড়ি – প্রাসাদটি এখনও ঐতিহাসিক তাৎপর্যের আলোকবর্তিকা হিসাবে কাজ করে।

মহিষাদল রাজবাড়ি একটি স্থাপত্য বিস্ময় এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাথমিকভাবে জনার্দন উপাধ্যায়কে (গর্গ) থাকার জন্য তৈরি করা হয়েছিল, ব্যবসায়িক ব্যস্ততার জন্য এই এলাকায় ঘন ঘন দর্শনার্থী, এই প্রাসাদটি এখন ঐতিহাসিক তাৎপর্যের আলোকবর্তিকা হিসাবে কাজ করে। এর প্রাঙ্গনে রয়েছে শ্রদ্ধেয় কৃষ্ণ মন্দির, যা গোপালজী মন্দির নামে পরিচিত, রাজকীয় স্থাপত্যের মহিমার মধ্যে আধ্যাত্মিকতার একটি অভয়ারণ্য।

রানী জানকি দেবীর শাসনামলে নির্মিত, মন্দিরটি শুধুমাত্র ভগবান কৃষ্ণের পূজাই করে না বরং সেই সময়কার সমন্বিত ধর্মীয় ঐতিহ্যকে প্রদর্শন করে ভগবান শিবের মূর্তিও রয়েছে। প্রবেশদ্বারের পাশে আরও দুটি উল্লেখযোগ্য কাঠামো রয়েছে – জগন্নাথ মন্দির এবং নাটমন্দির, প্রতিটি কমপ্লেক্সের আধ্যাত্মিক পরিবেশে স্তর যুক্ত করে।

প্রাসাদ কমপ্লেক্স দুটি প্রধান কাঠামোতে বিভক্ত: পুরানো প্রাসাদ এবং এর নতুন প্রতিরূপ। পরেরটি বর্তমানে রাজপরিবারের বংশধরদের দখলে রয়েছে, উত্তরাধিকারকে বাঁচিয়ে রেখেছে। প্রাসাদে দর্শনার্থীরা নিচতলার কক্ষগুলি অন্বেষণ করতে পারেন, যেখানে নিদর্শনগুলির একটি আকর্ষণীয় সংগ্রহ রয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে স্টাফড প্রাণী, সূক্ষ্ম পেইন্টিং এবং অ্যান্টিক আসবাবপত্র, যা অনুরোধের ভিত্তিতে দেখার জন্য উপলব্ধ, যা এর প্রাক্তন বাসিন্দাদের ঐশ্বর্যময় জীবনধারার একটি আভাস দেয়।

এই প্রাসাদের মধ্যে ঐশ্বরিক পবিত্রতা এবং রাজকীয় জীবনযাপনের সংমিশ্রণ উত্তর প্রদেশের ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক প্যানোরামার সারাংশকে ধারণ করে। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে অতীত এবং বর্তমান একত্রিত হয়, যারা এই অঞ্চলকে রূপ দিয়েছে এমন গল্প এবং ঐতিহ্যগুলিকে খুঁজে পেতে আমন্ত্রণ জানায়।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে, মোহিনী দেবী – ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিকন্যা।

সূচনা—
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে মোহিনী দেবী  প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু শহীদ ভগৎ সিং-এর মতই নয় বরং শক্তিশালী নারীদের দ্বারা প্রশস্ত হয়েছিল যারা তাদের মাটিতে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিল। মোহিনী দেবী  ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা ছিলেন তিনি।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক স্মরণীয় নাম
মোহিনী দেবী। তিনি ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা। এছাড়া তার পরিবার বাংলাদেশের প্রগতিমুলক শিক্ষা ও সংস্কৃতির সাথে জড়িত ছিল। ইতিহাসে তাঁর নাম আজও স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। জেনে নেবো তাঁর সংগ্রামী জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

জন্ম ও পরিবার—-

মোহিনী দেবী ১৮৬৩ সালে ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জে এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রামশঙ্কর সেন ও মাতার নাম উমাসুন্দরী দেবী। ১২ বছর বয়সে তারকচন্দ্ৰ দাশগুপ্তের সঙ্গে বিবাহ হয়। শ্রমিক আন্দোলনের নেত্রী প্রভাবতী দাশগুপ্ত।
শিক্ষাজীবন—-

মোহিনী দেবী ভিক্টোরিয়া স্কুলের প্রথম হিন্দু ছাত্রী, কলকাতার অভিজাত অ্যাংলিকান প্রতিষ্ঠান, মোহিনী দেবী (১৮৬৩ – ১৯৫৫) তার মূলে একজন জাতীয়তাবাদী ছিলেন।  ঢাকার বেউথার রামশঙ্কর সেনের কন্যা, বারো বছর বয়সে তারকচন্দ্র দাশগুপ্তের সাথে তার বিয়ে হয়।  তা সত্ত্বেও, তিনি পন্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী এবং রামতনু লাহিড়ীর অধীনে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছিলেন, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগের কলকাতার অধ্যবসায়ী।  তিনি ইউনাইটেড মিশনের একজন মহিলা শিক্ষকের কাছে ইংরেজি শিখেছিলেন।  এইভাবে তিনি ভারতের সমসাময়িক উন্নয়ন সম্পর্কে সচেতন হন এবং শুরু থেকেই বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হন।

রাজনৈতিক জীবন—-

১৯২১-২২ সালে তিনি গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে কারাবরণ করেন। ১৯৩০-৩১ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে নেতৃত দেন। এজন্য তাকে ছয় মাসের জেল খাটতে হয়েছিল। ‘নিখিল ভারত মহিলা সমিতির’ সভানেত্রী হিসেবে তার ভাষন উচ্চ প্রশংসিত হয়। ১৯৪৬ সালের দাঙ্গায় মুসলিম প্রধান অঞ্চল এন্টালি বাগানে নিজের বাড়িতে থেকে হিন্দু মুসলিম ঐক্যের প্রচার চালিয়েছিলেন। সে সময় তার বন্ধু-বান্ধব আত্নীয় পরিজন তাকে তিরস্কার করে কিন্তু তাতে তিনি সংকল্প হারান নি। মোহিনী দেবী একদিকে স্বাধীনতা আন্দোলন এর পক্ষে কাজ করেছিলেন অন্যদিকে নারী শিক্ষা, নারী স্বাধীনতা, সমাজসংস্কারমূলক কাজ।

স্বাধীনতা আন্দোলনে—

১৯২০-১৯২২ সালে, ব্রিটিশদের সাথে অসহযোগের জন্য গান্ধীর আহ্বানের উচ্চতায়, তিনি নিজেকে আন্দোলনে উত্সর্গ করেছিলেন।  ১৯৩০-১৯৩১ সালের আইন অমান্য আন্দোলনের সময়, তিনি আইন ও পুলিশি বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে এবং পথে কারাভোগ করে একজন উল্লেখযোগ্য নেতা আন্দোলন হিসাবে আবির্ভূত হন।  গান্ধীবাদী আদর্শে তার সম্পূর্ণ সাবস্ক্রিপশন এবং তার আন্দোলন কৌশলের প্রতি অটল জমা দেওয়ার কারণে, তিনি দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভাপতি হন;  তার বাকপটু বক্তৃতা গান্ধী সহ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।  নিজের এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা উপেক্ষা করে, তিনি কলকাতার রাস্তায় নেমে আসেন এবং ১৯৪৬ সালের ভয়াবহ কলকাতা দাঙ্গার অন্ধকার দিনগুলিতে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।
গান্ধীজীর আদর্শে অবিচলিত নিষ্ঠা ছিল। ১৯৪৬ খ্রী. কলিকাতায় দাঙ্গার সময় দাঙ্গা-আধুষিত মুসলমান-প্রধান অঞ্চল এন্টনিবাগানে নিজের বাড়িতে থেকে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যের বাণী প্রচার করেন। ‘দি স্কাভেঞ্জার্স ইউনিয়ন অব বেঙ্গল’ এবং ‘জুটি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নে’র প্রেসিডেন্ট তাঁর কন্যা প্ৰভাবতী দাশগুপ্ত ১৯২৭-২৮ থেকে ১৯৩০ – ৩১ খ্রী. পর্যন্ত শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।

মৃত্যু—-

মহান এই  সংগ্রামী মোহিনী দেবী ২৫ মার্চ ১৯৫৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ রিভিউ

হোলি উদযাপনের অনন্য উপায় ১০ টি ভারতীয় স্থানে৷

হোলি, রঙের উত্সব হিসাবে পরিচিত, ভারতে একটি প্রাণবন্ত এবং লালিত উপলক্ষ, যা সাংস্কৃতিক এবং পৌরাণিক তাত্পর্য দ্বারা চিহ্নিত। এটি মন্দের উপর ভালোর বিজয়ের গল্প উদযাপন করে। দেশ জুড়ে, বিভিন্ন অঞ্চল হোলির রঙিন উৎসব উপভোগ করার অনন্য উপায় অফার করে। এখানে এমন 10টি স্থানের একটি নির্দেশিকা রয়েছে যেখানে উদযাপনগুলি মিস করা উচিত নয়।

বৃন্দাবন, উত্তরপ্রদেশ

বৃন্দাবনে, ফুলন কি হোলি একটি অনন্য উদযাপন যেখানে রঙিন গুঁড়োর পরিবর্তে ফুলের পাপড়ি ব্যবহার করা হয়। এই আধ্যাত্মিক স্থান, যেখানে ভগবান কৃষ্ণ তার শৈশব কাটিয়েছেন, হোলির সময় একটি নির্মল অথচ উত্সব পরিবেশ প্রদান করে।

বারসানা, উত্তরপ্রদেশ

বারসানা লাঠমার হোলির আয়োজন করে, যা হিন্দু পুরাণে গভীরভাবে নিহিত এবং রাধার জন্মস্থানে উদযাপন করা হয়। রাধা এবং কৃষ্ণের মধ্যে উত্তেজনার একটি কৌতুকপূর্ণ পুনর্ব্যবহারে মহিলারা লাঠি দিয়ে পুরুষদের তাড়া করে এবং মারধর করে।

জয়পুর, রাজস্থান

জয়পুরের এলিফ্যান্ট ফেস্টিভ্যাল হোলি উদযাপনে প্রাণবন্ততার একটি অতিরিক্ত স্তর যোগ করে। হাতি, রঙিন পোশাকে সজ্জিত, একটি বিশাল মিছিলের নেতৃত্ব দেয় এবং সেরা-সজ্জিত হাতির জন্য একটি বিশেষ সম্মান রয়েছে।

শান্তিনিকেতন, পশ্চিমবঙ্গ

শান্তিনিকেতনে, হোলি বসন্ত উৎসব বা বসন্ত উত্সব হিসাবে উদযাপিত হয়, এটি একটি ঐতিহ্য যা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুরু করেছিলেন। শিক্ষার্থীরা আনন্দের রঙ নিক্ষেপে জড়িত হওয়ার আগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।

উদয়পুর, রাজস্থান

উদয়পুরের রাজপরিবার শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরে একটি জমকালো উদযাপনের আয়োজন করে। উত্সবগুলির মধ্যে একটি রাজকীয় শোভাযাত্রা, স্থানীয় পারফরম্যান্স এবং একটি জমকালো ভোজ অন্তর্ভুক্ত।

হাম্পি, কর্ণাটক

ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে, হাম্পি বনফায়ার, সঙ্গীত, নৃত্য এবং আনন্দময় সমাবেশের সাথে প্রাণবন্ত হোলি উদযাপনের প্রস্তাব দেয়, যা মন্দের উপর ভালোর বিজয়ের প্রতীক।

দেরাদুন ও গোয়া

গোয়া এবং দেরাদুন উভয় স্থানেই উদযাপিত হোলি মু উৎসব, আধুনিক সঙ্গীত, শিল্প এবং সংস্কৃতির সাথে ঐতিহ্যবাহী মজার মিশ্রণ ঘটায়। এটি একটি নিরাপদ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ইভেন্ট যেখানে পরিবেশ-বান্ধব রঙ, পারফরম্যান্স এবং রাস্তার খাবার রয়েছে।

আনন্দপুর সাহেব, পাঞ্জাব

হোলা মহল্লা, শিখ সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্সব, হোলি অনুসরণ করে। এতে মার্শাল আর্ট প্রদর্শনী রয়েছে যা স্ব-শৃঙ্খলা এবং সমতার উপর জোর দেয়।

কোচিন, কেরালা

কোচিনে, মঞ্জুল কুলি উৎসব কোঙ্কনি মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে রঙের জায়গায় হলুদ ব্যবহার করা হয়। উৎসবটি ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত, নৃত্য এবং ভোজ দিয়ে সমৃদ্ধ।

মণিপুর

মণিপুরের মেইতেই সম্প্রদায়ের দ্বারা উদযাপন করা ইয়োসাং উৎসবের মধ্যে রয়েছে নাচ, গান, গেমস এবং থাবাল চোংবা নাচ, যেখানে ছেলেরা এবং মেয়েরা রঙের উৎসবকে চিহ্নিত করে একটি বনফায়ারের চারপাশে নাচ করে।

ভারত জুড়ে এই 10টি স্থান একটি দর্শনীয় হোলির অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যা দর্শকদের দেশের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং উত্সবের চেতনায় ডুব দিতে দেয়। প্রতিটি অবস্থান স্থানীয় ঐতিহ্য এবং উদযাপনের একটি অনন্য আভাস প্রদান করে, হোলি উৎসবকে একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা করে তোলে।

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ রিভিউ

কর্তাভজা সম্প্রদায় ও কল্যাণীর সতীমার দোল মেলা।।।

যতদূর জানা যায়, আনুমানিক দুশো বছর আগে আউলিয়া সম্প্রদায়ের সতীমা অর্থাৎ সরস্বতী দেবী এই মেলার প্রবর্তন করেন । এপার বাংলা ও বাংলাদেশে যথেষ্ট জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ঘোষপাড়ার সতীমার দোল মেলা । খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি বাংলার অন্ত্যজ সম্প্রদায়ের মানুষদয়ের নিয়ে গড়ে ওঠে আউলচাঁদ সম্প্রদায় । এই সম্প্রদায়ের আদিগুরু ছিলেন আউলচাঁদ । তাঁর মৃত্যুর পর আউলচাঁদ সম্প্রদায়ের কর্তাপদ লাভ করেন রামশরণ পাল । তাঁরই স্ত্রী ছিলেন সরস্বতী দেবী যিনি পরবর্তীকালে সতী মা নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন ।
বাউল, কীর্তন, লোকগীতি, পল্লীগীতির সুরে প্রতি বছর মেলা জমে ওঠে । আখড়ায় আখড়ায় সারা রাত ধরে গানের আসর । শ্রোতারা অধিকাংশই গ্রাম ও মফঃস্বলের । বিভিন্ন জায়গায় তৈরী হয় লালন মঞ্চ । গানের পাশাপাশি বিশাল উনুন জ্বালিয়ে ক্ষুন্নিবৃত্তির ব্যবস্থা হয় ঐ আখড়াগুলিতে । দূরদূরান্ত থেকে মেলায় আগত মানুষদের আশ্রয়স্থল এই আখড়াগুলি ।
এবার আসছি কর্তাভজা সম্প্রদায় প্রসঙ্গে ।
কর্তাভজা সম্প্রদায় আঠারো শতকে বৈষ্ণববাদ ও সুফিবাদ থেকে বিকশিত একটি ক্ষুদ্র ধর্মীয় সম্প্রদায় । এই সম্প্রদায়ের মূল গুরু আউল চাঁদ ।
প্রথমেই বলি, আউলচাঁদ হলেন একজন বাঙালি ধর্ম প্রচারক ও কর্তাভজা সম্প্রদায়ের আদিগুরু । কিংবদন্তি বা লোকবিশ্বাস যে, গোরাচাঁদ অর্থাৎ শ্রীচৈতন্যদেব আউলচাঁদ রূপে পুনরায় আবির্ভূত হয়েছেন । গৃহী মানুষকে বৈরাগ্য ধর্ম শেখাতে শ্রীচৈতন্য আবির্ভূত হন আউল চাঁদ ফকির হয়ে । এখানে তাই কোনো জাতিভেদ নেই ।
আউলচাঁদের জন্ম-খ্রিষ্টাব্দ নিয়ে অনেক মতভেদ । শোনা যায়, তিনি হিন্দু না মুসলমান সেটা স্পষ্টভাবে জানা যায়নি । তবে প্রচলিত লোক কাহিনী অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার উলা গ্রামের (অনেকের মতে, নদীয়া জেলার প্রাচীন জনপদ উলা-বীরনগর) পান ক্ষেত থেকে একটি নবজাতক শিশুকে পাওয়া যায় । ক্ষেতের মালিক মহাদের বারুই ভগবানের আশীর্বাদ ভেবে তাঁকে লালন-পালন শুরু করেন । আউলচাঁদের পুরানো নাম পূর্ণচন্দ্র । সংস্কৃত ভাষা শেখানোর জন্য তাঁকে পাঠানো হয় সে-সময়কার বিখ্যাত বৈষ্ণবাচার্য হরিহরের কাছে । বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণচন্দ্র নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ান এবং নানাভাবে শিক্ষালাভ করেন । শেষ পর্যন্ত তিনি সিদ্ধিলাভ করেন । তাঁর নতুন নাম হয় ফকিরচাঁদ বা আউলচাঁদ । বড় হয়ে আউলচাঁদ গৃহত্যাগ করেন । বহু দেশ ঘোরার পর নদীয়া জেলার ঘোষপাড়ায় রামশরণ পাল নামে এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি তাঁকে আশ্রয় দেন । আউল চাঁদের ২২জন শিষ্যের মধ্যে অন্যতম শিষ্য রামশরণ পাল । ২২জনের মধ্যে রামশরণ পাল আউলচাঁদের মৃত্যর পর গুরুপদ প্রাপ্ত হন । যারজন্য তাঁর নেতৃত্বে পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলার ঘোষপাড়ায় প্রতিষ্ঠা করেন কর্তাভজা ধর্মের অন্যতম পীঠস্থান, যা পরবর্তী সময়ে সতী মায়ের মন্দির নামে সবার কাছে পরিচিত । রামশরণ পালের স্ত্রীর নাম সরস্বতী, যার নামেই এই মন্দির—-সতী মায়ের মন্দির । কথিত আছে, সরস্বতী’র প্রথম অক্ষর “স” আর শেষ অক্ষর “তী” অনুসারে সতী । আউলচাঁদের শিষ্য রামশরণ পাল গুরুর ভাবাদর্শকে ভিত্তি করে কর্তাভজা সম্প্রদায় গড়ে তোলেন । এইজন্য ভক্তের নিকট তিনি “কর্তা” এবং তাঁর স্ত্রী সরস্বতী দেবী “কর্তামা” নামে অভিহিত । রামশরণ পালের পর সরস্বতী দেবী এই সম্প্রদায়কে নেতৃত্ব দেন । রামশরণ পালের স্ত্রী কর্তাভজা সম্প্রদায়কে দিশা দেখান । রামশরণের স্ত্রী সরস্বতী দেবী ছিলেন অতীব ধর্মপরায়ণা । শোনা যায়, আউলচাঁদ হিম সাগরের জল ও ডালিম গাছের তলার মাটির সাহায্যে সরস্বতী দেবীকে অলৌকিক উপায়ে মৃত্যের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন । আরও শোনা যায়, আউলচাঁদ নাকি রামশরণ পাল ও সরস্বতী দেবীর সন্তান হয়ে পরবর্তীতে জন্ম নেন “দুলাল চাঁদ” নামে । দুলাল চাঁদ (১৭৭৬-১৮৩৩) কর্তাভজা সম্প্রদায়কে সাংগঠনিক রূপ দেন । তিনি বহু পদ রচনা করে কর্তাভজা ধর্মমতকে একটা তাত্ত্বিক কাঠামোর উপর প্রতিষ্ঠিত করেন । পদগুলি ভাব-গীত-রূপে ভক্তদের নিকট সমাদৃত । কর্তাভজারা কোনো জাতিভেদ মানেন না । তাঁরা লোভ-মোহ-কাম-ক্রোধকে নৈতিক পাপ বলে মনে করেন । সৎ পথে থেকে এবং মিথ্যা কথা পরিহার করে নৈতিকভাবে ধর্মকর্ম করা তাঁদের প্রধান লক্ষ্য । তাঁর সময়ে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের খ্যাতি বহুদূর পর্যন্ত গড়ায় । মাত্র ৪৮ বছর বয়সে দুলাল চাঁদের মৃত্যু হয় । এরপর তাঁর মা অর্থাৎ সরস্বতী দেবী কর্তা মা বা সতীমা নামে খ্যাতিলাভ করেন ।
নদীয়া জেলার ঘোষপাড়ার রামশরণ পালের আদি ভিটেটুকু ভক্তদের কাছে অতি পবিত্র । ভিটের পাশেই ডালিম গাছ । এই গাছের নীচে যেহেতু সতীমা সিদ্ধিলাভ করেছিলেন সেইজন্য ভক্তরা ডালিম গাছের ডালে ঢিল বেঁধে মানত করেন । মনস্কামনা পূরণ হওয়ার আশায় । বাতাসা, কদমা, চিড়ে, মুড়কি দিয়ে নৈবেদ্য সাজিয়ে ভক্তদের সতীমাকে পুজো দেওয়ার রীতি । আজও সেই ট্রাডিশন অব্যাহত ।
জনশ্রুতি, শেষ বয়সে সরস্বতী দেবী সন্তানহারা হলে দোলপূর্ণিমার দিন গুরু পুজার আয়োজন করেন । সেই থেকে দোল পূর্ণিমার সূচনা । হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাউলেরা আসেন । তাই স্থানীয়ভাবে সতী মায়ের মেলাটা আউল-বাউলের মেলা বা আখড়া নামে পরিচিত ।
কর্তাভজা সম্প্রদায় মূর্তিপুজা এবং সকল প্রকার আনুষ্ঠানিক যাগযজ্ঞের বিরোধী । কর্তাভজা প্রচারক দুলাল চাঁদ রচিত ভাবের গীতে বলা হয়েছে—– “মানুষ ভজ, মানুষ চিন্ত, মানুষ কর সার, সকলি মানুষের খেলা মানুষ বই নাই আর ।“ কর্তাভজা সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য দিক হলো এখানে হিন্দু গুরুর মুসলমান শিষ্য যেমন আছেন, তেমনি আছেন মুসলমান গুরুর হিন্দু শিষ্য । এই সম্প্রদায়ে নারী পুরুষ নেতৃত্ব নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলা হয় না । এই কারণে গুরুদেবের ভূমিকায় নারী পুরুষ উভয়কেই দেখা যায় । একই ভাবে তাঁরা বাউল সম্প্রদায়ের মতো জাতিভেদ প্রথা মানেন না । দুলাল চাঁদের ভাবের গীতে তাই বলা হচ্ছে—- “ভেদ নাই মানুষে মানুষে, খেদ কেন ভাই এদেশে ।”
সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় কর্তাভজা সম্প্রদায়ে । এ-বিষয়ে কবি নবীন চন্দ্র সেনের বক্তব্য অত্যন্ত প্রনিধানযোগ্য । তাঁর মতে, “কর্তাভজা সম্প্রদায়ে কোনো জাতিভেদ নেই । সকলেই এক রন্ধনশালার পাক গ্রহণ করেন । ছোঁয়াছুয়ির দোষ এদের কাছে মুখ্য নয় । মানুষ সেবা তাঁদের মুখ্য বিবেচ্য বিষয় ।“
কর্তাভজাদের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো গুরুদেবের পুত্র অযোগ্য হলে তাঁরা তাকে গুরু নির্বাচন করতে চান না । তাঁদের নিয়মাবলী নামক ভাবের গীতে এই প্রসঙ্গে অভিমত ব্যক্ত করে বলা হয়েছে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের সাধন ভজন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন এমন ব্যক্তিই গুরুদেব হবার অধিকারী । এই জায়গায় কর্তাভজা সম্প্রদায় বর্ণবাদ এবং ব্রাহ্মণ্যবাদের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে সমর্থ হয়েছেন ।
আজও কর্তাভজা সম্প্রদায়ের মধ্যে সতীমায়ের কৃপা পাওয়ার নিরিখে যথেষ্ট উন্মাদনা । তাঁদের মধ্যে সরল বিশ্বাস ও ভক্তি আজও উজ্জীবিত । যার জন্য দোল পূর্ণিমার দিন সতী মায়ের মেলায় হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে । এদেশ ছাড়া বাংলাদেশ থেকেও মেলাপ্রাঙ্গনে অনেক মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো । বাউলদের সমারোহ আলাদা মাধুর্যে ভরপুর থাকে কল্যাণীর সতী মায়ের মেলা । (তথ্যসূত্র: সংগৃহীত) ।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস – একটি বিশেষ পর্যালোচনা।

প্রতি বছর ২৪ মার্চ যক্ষ্মা  দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৮৮২ সালের ২৪ মার্চ ডা. রবার্ট কক, যক্ষ্মা রোগের জীবাণু মাইক্রোব্যাটেরিয়াম টিউবারকিউলসিস আবিষ্কার করেন। যক্ষ্মা রোগের জীবাণু আবিষ্কারের ১০০ বছর পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ, জীবাণু আবিষ্কারের দিনটিকে স্মরণীয় করা ও যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হচ্ছে।

 

যক্ষ্মা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির জন্য একটি দিন উৎসর্গ করা গুরুত্বপূর্ণ । কারণ এটি একটি পুরানো রোগ বলে মনে হলেও, বিশ্বের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ এখনও এটিতে ভুগছে।

২০১৬ সালে, প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ টিবিতে সংক্রমিত হয়েছিল, সারা বিশ্বে ২ বিলিয়ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল এবং ১.৭ মিলিয়নের টিবি-জনিত রোগে মৃত্যু হয়েছিল। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে সারা বিশ্বের যক্ষ্মা সংক্রান্ত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাফল্য পেয়েছে ভারত।বিশ্বব্যাপী যক্ষ্মার প্রকোপ দূর করতে যক্ষ্মা দিবস  সচেতনতা সৃষ্টির সুযোগ আনে। এ দিবস  যক্ষ্মা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিশ্রুতিকে আরও দৃঢ় করে। সাম্প্রতিক সময়ে যক্ষ্মার সংক্রমণ ও যক্ষ্মারোগে মৃত্যুর ঘটনা প্রশংসনীয় হারে কমে এসেছে। ১৯৯০ সালের পর যক্ষ্মা রোগে নিহতের সংখ্যা ৪০ ভাগ কমে এসেছে। এখনও কমছে। দ্রুত যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় ও উপযুক্ত চিকিৎসার কারণে যক্ষ্মার প্রকোপ কমে আসছে। তবে এখনও যক্ষ্মা সারা বিশ্বের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

 

যক্ষ্মা বা যক্ষা (টিউবার্‌কিউলোসিস্‌ বা টিবি) একটি সংক্রামক রোগ যার কারণ মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস  নামের জীবাণু। “যক্ষ্মা” শব্দটা এসেছে “রাজক্ষয়” থেকে। ক্ষয় বলার কারণ এতে রোগীরা খুব শীর্ণ (রোগা) হয়ে পড়েন । যক্ষ্মা প্রায় যেকোনও অঙ্গে হতে পারে (ব্যতিক্রম কেবল হৃৎপিণ্ড, অগ্ন্যাশয়, ঐচ্ছিক পেশী ও থাইরয়েড গ্রন্থি)। যক্ষ্মা সবচেয়ে বেশী দেখা যায় ফুসফুসে। গরুর দুধ পাস্তুরায়ণ প্রচলনের আগে অন্ত্রেও অনেক বেশি হত।

একটি আশঙ্কাজনক তথ্য হচ্ছে, বিশ্বের ৪ ভাগের ১ ভাগ মানুষের শরীরে যক্ষ্মা রোগের জীবানু সুপ্ত থাকে। তার মানে হল ওই মানুষগুলো জীবানুতে আক্রান্ত। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা অসুস্থ হননি। এই আক্রান্তদের ৫-১৫ % শতাংশ  সারা জীবন ধরেই রোগের শিকার হবার আশঙ্কা থেকে যায়।

 

 

কারণ—

ডায়াবেটিসের রোগীদের মধ্যে যক্ষ্মা হওয়ার আশঙ্কা থাকে; ক্যান্সারও যক্ষ্মার অন্যতম কারণ; শরীরের কোনও অংশ ট্রান্সপ্লান্টের পর যে সমস্ত ওষুধ খাওয়া হয়, তার কারণেও যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়; পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব এই রোগের অন্যতম কারণ; যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে এই রোগ হতে পারে; অধিক ধূমপান ও মাদকাসক্তিও যক্ষ্মার আর একটি কারণ।

 

লক্ষণ—

ফুসফুসে যক্ষ্মা হলে হাল্কা জ্বর ও কাশি হতে পারে। কাশির সঙ্গে গলার ভিতর থেকে থুতুতে রক্তও বেরোতে পারে। মুখ না ঢেকে কাশলে যক্ষ্মা সংক্রমণিত থুতুর ফোঁটা বাতাসে ছড়ায়। আলো-বাতাসহীন অস্বাস্থ্যকর বদ্ধ পরিবেশে মাইকোব্যাক্টেরিয়াম অনেকক্ষণ বেঁচে থাকে।
সাধারনত তিন সপ্তাহের বেশি কাশি, জ্বর, কাশির সাথে কফ এবং মাঝে মাঝে রক্ত বের হওয়া, ওজন কমে যাওয়া, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা ও ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি ফুসফুসের যক্ষার প্রধান উপসর্গ। যারা এইচ আইভি আক্রান্ত, অপুষ্টিতে ভোগে, ডায়বেটিস রয়েছে, অথবা যক্ষ্মা রোগীর সংস্পর্শে আসলে,তাদের অসুস্থ হবার সম্ভাবনা রয়েছে বেশি। থুতু নমুনা অণুবীক্ষণ যন্ত্র  দ্বারা যক্ষ্মার জীবানু রয়েছে কিনা, পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া এক্সরে দ্বারা, জিন এক্সপার্ট মেশিন দিয়েও পরীক্ষা করা হয়।

নিরাময়ের কিছু ঘরোয়া উপচার—

কয়েকটি বিষয়ের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখলে এই রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তার জন্য প্রয়োজন সঠিক সময় সঠিক পদক্ষেপ করা। চিকিৎসা না-করিয়ে ফেলে রাখলে এই রোগ উত্তোরত্তোর বৃদ্ধি পায়। সে ক্ষেত্রে কিছু ঘরোয়া উপায় আছে, যা যক্ষ্মা ধরা পড়ার প্রথম দিকে মেনে চললে, লাভ পাওয়া যেতে পারে।

রোজ সকালে দু-তিন কোয়া রসুন চিবিয়ে খান। এমন করলে যক্ষ্মার লক্ষণ কমে, মধু ও মাখন শরীরের ক্ষয় আটকায়; ১০০ গ্রাম মাখনে ২৫ গ্রাম মধু মিশিয়ে রোজ খান; খাবার খাওয়ার পর লবঙ্গের গুড়োয় মধু মিশিয়ে খেলে সুফল পেতে পারেন; ২৫০ গ্রাম দুধে অশ্বত্থ পাতা দিয়ে ফোটান; সকাল-সন্ধে সেই দুধ পান করুন;কলা যক্ষ্মা রোগীদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে; রসুনের রসের সঙ্গে আধ চামচ মধু মিশিয়ে খান,  রসুনের রস ফুসফুসকে মজবুত করে; যক্ষ্মা রুগীরা প্রতিদিন ১০০ বা ২০০ গ্রাম আঙুর খান।

 

 

যক্ষ্মা সম্পর্কে কিছু তথ্য—

 

অনেকেই জানেন না যে, যক্ষ্মা একটি নিরাময়যোগ্য রোগ। যা বছরের পর বছর ধরে সনাক্ত করা যায় না অনেক সময়। যা রোগীর জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ২০১১ সালে সারা পৃথিবীতে প্রায় ৮৭ লাখ মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে মারা গেছে ১৪ লাখ। ৯৫ ভাগ মৃত্যু ঘটেছে গরিব ‍ও মধ্যআয়ের দেশসমূহে। গরিব শ্রেণির লোকেরা যক্ষ্মায় বেশি আক্রান্ত হয়েছে। তবে বায়ুবাহিত এ রোগ সব শ্রেণির মানুষের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ।

১৫-৪৪ বছর বয়সি নারীদের মৃত্যুর প্রধান তিনটি কারণের একটি যক্ষ্মা। ২০১১ সালে প্রায় পাঁচ লাখ শিশু যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মারা গেছে ৬৪ হাজার।

চাই যক্ষ্মামুক্ত জীবন ২০১২-১৩ সাল ছিল যক্ষ্মাবিরোধী দ্বিবার্ষিক ক্যাম্পেন চালানো হয়েছিল গোটা পৃথিবীতে। ওই দু’ বছর দিবসটি পালনের জন্য ‘যক্ষ্মা মুক্ত জীবন চাই’কে স্লোগান হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।

 

তাই প্রতি বছর যক্ষ্মা রোগের ক্ষতিকর দিক বিশেষ করে স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এই রোগটি নির্মূলে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও বিভিন্ন ওয়েবপেজ।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে বিশিষ্ট বাঙালি কবি – নিশিকান্ত রায় চৌধুরী।

নিশিকান্ত রায়চৌধুরী ছিলেন একজন বাঙালি কবি।  কবি ১৯০৯ সালের ২৪ মার্চ বর্তমান বাংলাদেশের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বরিশাল জেলার উজিরপুর গ্রামে তাঁর মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।  বাবা বিজয়শঙ্কর রায়চৌধুরী ছিলেন একজন আইনজীবী এবং মা সৌদামিনী দেবী।  তাদের পৈতৃক নিবাস ছিল বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার শিবটি গ্রামে।  নিশিকান্তের জীবনের প্রথম পর্ব কেটেছে শান্তিনিকেতনে, দ্বিতীয় পর্যায় পন্ডিচেরিতে শ্রী অরবিন্দের আশ্রমে।  কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্যে সিউড়ির বেণীমাধব ইনস্টিটিউশন এবং শান্তিনিকেতনের কলাভবনে কবি প্রথম শিক্ষা লাভ করেন।  রবীন্দ্রনাথ তাঁকে ‘চাঁদকবি’ বলে ডাকেন।  তাঁর পিতামহ কবি সুধাকান্ত রায় চৌধুরী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সচিব।  অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নন্দলাল বসুর কাছ থেকে শিল্প শিক্ষা লাভ করেন।  অবনীন্দ্রনাথ তাঁকে ডাকতেন ‘ মাই আর্টিস্ট’।  অকৃতদার নিশিকান্ত ১৯৩৪ সালে পন্ডিচেরির শ্রী অরবিন্দ আশ্রমে চলে আসেন এবং সেখানে বসবাস করতেন।

তিনি শ্রী অরবিন্দের আশ্রমে আধ্যাত্মিক সাধনার পাশাপাশি কাব্যচর্চা করতেন।  ঋষি অরবিন্দ নিশিকান্ত ও তাঁর কবিতার প্রতি খুব পছন্দ করতেন।  অরবিন্দের দৃষ্টিতে, নিশিকান্ত ছিলেন তাঁর “প্রেরণার ব্রাহ্মণ পুত্র”।  ১৯৩৯ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অলকানন্দা’ প্রকাশিত হয়।  সংস্কৃত শব্দের ব্যবহার, বর্ণাঢ্যতা ও চিত্রকল্প তাঁর কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য।

 

 

তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল –

ভোরের পাখি, দিনের সূর্য, বৈজয়ন্তী, বন্দে মাতরম, নবদীপন, দিগন্ত, পঁচিশ প্রদীপ। তার কবিতা ইংরাজীতে অনূদিত হয়ে “ড্রিম ক্যাডেন্স” নামে প্রকাশিত হয়। তাঁর কয়েকটি কবিতা ইংরাজীতে অনুবাদ করেন শ্রীঅরবিন্দ নিজেও।

 

কবি ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২০ শে মে মৃত্যুবরণ করেন।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ঘুরে আসুন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর উত্তর সিকিমের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি অদ্ভুত গ্রাম – লাচুং।

লাচুং, ভারতের উত্তর সিকিমের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি অদ্ভুত গ্রাম, ৯৬০০ ফুট উচ্চতায় গর্বিতভাবে দাঁড়িয়ে আছে, যা পর্যটকদের প্রকৃতির কোলে নির্মল পালানোর প্রস্তাব দেয়। শ্বাসরুদ্ধকর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের বৈশিষ্ট্যযুক্ত এই গ্রামটি সিকিমের রুক্ষ ভূখণ্ডের মধ্যে একটি বিস্ময়। গ্যাংটক থেকে লাচুং পর্যন্ত যাত্রাটি নিজেই একটি দুঃসাহসিক কাজ, যেখানে প্রতিটি মোড়ে প্রকৃতির মহিমা ফুটে ওঠে, যা এর দর্শকদের কাছে একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতার প্রতিশ্রুতি দেয়।

একটি দর্শনীয় যাত্রা শুরু—

লাচুং যাওয়ার রাস্তাটি প্রকৃতির প্রাণবন্ত রঙে আঁকা একটি ক্যানভাস। ভ্রমণকারীরা যখন ঘূর্ণায়মান পথ দিয়ে হেঁটে বেড়ায়, তারা আকাশে চুম্বন করার জন্য ছুঁয়ে আসা সুউচ্চ পাইন, ফার এবং বিভিন্ন ধরণের রডোডেনড্রনের বিস্ময়কর দৃশ্য দ্বারা স্বাগত জানায়। তিস্তা নদী, তার উপনদী লাচুং এবং লাচেন সহ, যাত্রায় একটি সুরেলা ছন্দ যোগ করে, এই পাহাড়ি গ্রামের শান্ত পরিবেশকে বাড়িয়ে তোলে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আচ্ছন্ন একটি গ্রাম—

লাচুং, এর কম জনসংখ্যা এবং ঘন বন, প্রকৃতির গ্যালারিতে একটি মাস্টারপিস সেট বলে মনে হয়। এই মনোরম গ্রামটি কেবল শান্তির সন্ধানকারীদের জন্য নয় বরং এর লুকানো ধন অন্বেষণ করতে আগ্রহী অভিযাত্রীদের জন্যও একটি আশ্রয়স্থল। স্থানীয় গালিচা বুনন কেন্দ্র এবং রহস্যময় গুহাগুলি আবিষ্কৃত হওয়ার অপেক্ষায় থাকা সাংস্কৃতিক রত্নগুলির মধ্যে মাত্র কয়েকটি, যা গ্রামের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের আভাস দেয়।

ইউমথাং উপত্যকার প্রবেশদ্বার—

লাচুং-এ একটি বিশ্রামের রাতের পর, যাত্রা শুধুমাত্র ২৩ কিমি দূরে মনোমুগ্ধকর ইয়ুমথাং উপত্যকার দিকে চলতে থাকে। ১১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত, ইয়ুমথাং উপত্যকা ঋতুর সাথে রূপান্তরিত হয়, শীতকালে একটি মুগ্ধকারী সাদা তুষারস্কেপ থেকে উষ্ণ মাসগুলিতে প্রবাহিত নীল নদীর দ্বারা বিছিয়ে সবুজের একটি সবুজ কার্পেটে। উপত্যকার প্রবেশদ্বারে একটি উষ্ণ প্রস্রবণের উপস্থিতি দর্শনার্থীদের জন্য একটি প্রাকৃতিক ট্রিট।

ইয়ুমথাং এর বাইরে অন্বেষণ—-

দু: সাহসিক কাজ Yumthang উপত্যকায় শেষ হয় না; ভ্রমণকারীরা ইউমেসামডং বা জিরো পয়েন্টে যেতে পারেন, ২৩ কিমি দূরে একটি শ্বাসরুদ্ধকর লোকেল। চীনা সীমান্তের নিকটবর্তীতা প্রবেশাধিকারকে সীমিত করে, তবে এই ১৫০০০ ফুট উচ্চতায় ভ্রমণটি অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পুরস্কৃত হয়। লাচুং থেকে আরেকটি পথ ২৪ কিমি দূরে একটি বরফের রাজ্য কাতাওতে নিয়ে যায়, স্থানীয় ড্রাইভার এবং ট্যুর এজেন্টদের দ্বারা সাজানো বিশেষ পারমিটের মাধ্যমে অ্যাক্সেসযোগ্য।

মৌসুমি জাঁকজমক এবং অ্যাক্সেসযোগ্যতা—-

ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লাচুং এর তুষারময় ল্যান্ডস্কেপ এবং আবার এপ্রিল-মে মাসে যখন ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ারস’ ইয়ুমথাং উপত্যকায় রডোডেনড্রন, প্রাইমুলা এবং অন্যান্য ফুলে ফুল ফোটে। সবুজ উপত্যকা এবং নীল নদী, তুষার-ঢাকা পাহাড়ের বিপরীতে স্থাপন করা, সারা বছর দর্শকদের কাছে টানতে থাকে। গ্যাংটক থেকে লাচুং পর্যন্ত ভ্রমণ বিভিন্ন প্যাকেজ ট্যুরের মাধ্যমে উপভোগ করা যেতে পারে, যা একটি নির্বিঘ্ন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

গ্যাংটক থেকে যাত্রা—

ভ্রমণকারীরা ২ রাত এবং ৩ দিন বা ৩ রাত এবং ৪ দিন স্থায়ী প্যাকেজ ট্যুরের মাধ্যমে গ্যাংটক থেকে লাচুং তাদের যাত্রা শুরু করতে পারে। এই প্যাকেজগুলি, ইউমথাং উপত্যকায় পরিদর্শনকে সামঞ্জস্যপূর্ণ, একটি সর্ব-সমেত অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে, মূল্য যথেষ্ট। যাত্রাটি সাধারণত লাচুং জিপ স্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়, এমজি মার্গ থেকে নামমাত্র ভাড়া দিয়ে, সমস্ত অভিযাত্রীদের জন্য অ্যাক্সেসযোগ্যতা নিশ্চিত করে।

লাচুং-এ থাকার ব্যবস্থা—-

লাচুং-এ থাকার ব্যবস্থা ট্যুর প্যাকেজের মধ্যেই দেওয়া হয়, আরামদায়ক থাকার জন্য হোটেলের বিকল্পগুলির একটি পরিসর দেওয়া হয়। লাচুং-এর নির্মল রাত শুধুমাত্র বিশ্রামেরই প্রতিশ্রুতি দেয় না বরং তারার আলোর নিচে গ্রামের শান্ত পরিবেশে এক নিমগ্ন অভিজ্ঞতার প্রতিশ্রুতি দেয়।

উত্তর সিকিম অভিযাত্রীদের জন্য ভ্রমণ টিপস—-

লাচুং সহ উত্তর সিকিমে ভ্রমণকারী যাত্রীদের গ্যাংটক থেকে পারমিট সুরক্ষিত করতে হবে, যা যথাযথ ডকুমেন্টেশন সহ সহজেই পাওয়া যেতে পারে। উপযুক্ত ওষুধ দিয়ে উচ্চতার জন্য প্রস্তুত হওয়া এবং ঝামেলা-মুক্ত পারমিট প্রক্রিয়ার জন্য স্থানীয় ট্রাভেল এজেন্টদের সাথে জড়িত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই সতর্কতা সিকিমের উত্তরের ভান্ডারের একটি মসৃণ এবং উপভোগ্য অন্বেষণ নিশ্চিত করে।

উপসংহারে, লাচুং এর প্রাকৃতিক দৃশ্য, সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি এবং ইয়ুমথাং উপত্যকা এবং তার বাইরের দুঃসাহসিক পথ সহ প্রকৃতির আলিঙ্গনে একটি পালানোর প্রস্তাব দেয়। এই গ্রামটি, তার আশেপাশের বিস্ময় সহ, সিকিমের রুক্ষ ভূখণ্ডে লুকিয়ে থাকা সৌন্দর্যের প্রমাণ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে, যা বিশ্বজুড়ে ভ্রমণকারীদের ইঙ্গিত করে। প্রশান্তি বা দুঃসাহসিকতার সন্ধান করা হোক না কেন, লাচুং এবং এর পরিবেশগুলি এমন অভিজ্ঞতার প্রতিশ্রুতি দেয় যা শ্বাসরুদ্ধকর হিসাবে স্মরণীয়।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

প্রেম এবং স্থাপত্যের মহিমার সূক্ষ্মতার প্রতীক তাজমহল – অজও পৃথিবীর মানুষের কাছে বিস্ময়কর 

তাজমহল, আগ্রায় অবস্থিত, ১৭ শতকের স্মারক প্রেম এবং স্থাপত্যের মহিমার সূক্ষ্মতার প্রতীক। মুঘল সার্বভৌমত্বের যুগে কল্পনা করা এই প্রতীকী কাঠামোটি মুঘল স্থাপত্যের ঐশ্বর্য এবং নান্দনিক আবেদনের একটি প্রমাণ হিসাবে দাঁড়িয়েছে। শাহজাহানের তত্ত্বাবধানে নির্মিত, স্মৃতিস্তম্ভটি তার লালিত সহধর্মিণী মমতাজ মহলের জন্য একটি সমাধি হিসেবে কাজ করে, যা তার স্থাপত্য অনুগ্রহের মাধ্যমে তার সৌন্দর্য এবং শাহজাহানের স্নেহের গভীরতাকে মূর্ত করে। বিশ্বের সাতটি আশ্চর্যের মধ্যে একটি হিসাবে স্বীকৃত, তাজমহল তার সাদা মার্বেল নির্মাণ, চারপাশের সবুজ পরিবেশ এবং ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে এর মর্যাদার জন্য পালিত হয়।

ভালোবাসার জন্য একটি স্থাপত্য

তাজমহল নামটি, ফার্সি থেকে উদ্ভূত, “প্রাসাদের মুকুট”-এ অনুবাদ করা হয়েছে, যা এই স্থাপত্য বিস্ময়ের জন্য উপযুক্ত উপাখ্যান। আনুমানিক 22,000 কারিগরদের দ্বারা নির্মিত, সমাধিটি পূর্ব, পশ্চিম এবং দক্ষিণে তিনটি মহিমান্বিত দরজা দিয়ে প্রবেশযোগ্য। বিল্ডিং প্রক্রিয়াটি প্রায় 17 বছর ধরে বিস্তৃত ছিল, বার্ষিক প্রচুর দর্শকদের আমন্ত্রণ জানায়। ফেব্রুয়ারি মাসটি তাজ মহোৎসবের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, একটি শিল্প ও সংস্কৃতি উৎসব, যা 18 থেকে 27 তারিখ পর্যন্ত ভারতীয় ঐতিহ্যের উদযাপনের সাথে স্মৃতিস্তম্ভের আবেদনকে বাড়িয়ে তোলে। যমুনা নদীর ধারে অবস্থিত, স্মৃতিস্তম্ভের অবস্থানটি এর নির্মলতা এবং লোভকে আরও প্রশস্ত করে, এটি যেকোন ব্যক্তির জন্য অবশ্যই একটি দর্শনীয় গন্তব্য করে তোলে।

মিশ্রন স্থাপত্য ঐতিহ্য

তাজমহলের নকশাটি পারস্য, ইসলামিক এবং ভারতীয় স্থাপত্য উপাদানগুলির একটি সুরেলা সংমিশ্রণ, যার চারপাশে তিন দিকে সুরক্ষিত প্রাচীর রয়েছে এবং চতুর্থ দিকে যমুনা নদী রয়েছে। রাজস্থান থেকে প্রাপ্ত সেরা সাদা মার্বেল থেকে তৈরি, কাঠামোটি এক হাজারেরও বেশি রত্নপাথর দিয়ে জটিলভাবে সজ্জিত। এর বর্গাকার আকৃতির উঁচু প্লিন্থ, স্বতন্ত্র মিনার, খিলানযুক্ত প্রবেশপথ এবং বিশাল গম্বুজ স্থাপত্যের দক্ষতা এবং নান্দনিক সূক্ষ্মতার মিশ্রণকে প্রতিফলিত করে। মমতাজ মহল এবং শাহজাহানের সমাধিগুলি প্রাথমিক সমাধির নীচে একটি নির্জন কক্ষে বিশ্রাম করে, যা স্মৃতিস্তম্ভে অন্তরঙ্গ গাম্ভীর্যের একটি স্তর যুক্ত করে।

আইকনিক মনুমেন্ট পরিদর্শন

তাজমহল পরিদর্শনের জন্য সর্বোত্তম সময়কাল নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিস্তৃত, যা আশেপাশের সবুজ বাগানগুলি অন্বেষণ করার জন্য অনুকূল আবহাওয়া সরবরাহ করে। এই মাসগুলির বাইরে পরিদর্শন তাপ এবং আর্দ্রতার কারণে চ্যালেঞ্জগুলি উপস্থাপন করতে পারে। নয়া দিল্লি থেকে প্রায় 200 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, স্মৃতিস্তম্ভটি যমুনা এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে এবং রেলপথে আগ্রা রেলওয়ে স্টেশনের নিকটতম স্টপ হিসাবে কাজ করে সহজেই পৌঁছানো যায়। সেখান থেকে, ক্যাব এবং ট্যাক্সিগুলি তাজমহলে সুবিধাজনক স্থানান্তর অফার করে, এটিকে সকলের জন্য একটি অ্যাক্সেসযোগ্য যাত্রা করে তোলে।

আপনার পরিদর্শন সর্বাধিক করা

তাজমহলে আপনার অভিজ্ঞতা বাড়াতে, নিম্নলিখিত টিপসগুলি বিবেচনা করুন: ছোট সারিগুলির জন্য পূর্ব গেট দিয়ে প্রবেশ করুন, সেরা জলবায়ুর জন্য নভেম্বর এবং ফেব্রুয়ারির মধ্যে যান এবং আপনার টিকিটে অন্তর্ভুক্ত বিনামূল্যের জলের বোতল এবং জুতার কভারগুলি ব্যবহার করুন৷ উপরন্তু, 30 মিনিটের বিনামূল্যের ওয়াই-ফাই ব্যবহার করুন, সহজে নেভিগেশনের জন্য গল্ফ কার্ট এবং ব্যাটারি বাস, চার্জ ছাড়াই লাগেজ রাখার জন্য ক্লোকরুম এবং নামমাত্র ফি দিয়ে একটি অডিও গাইডবুক কেনার বিকল্প। এই সুযোগ-সুবিধাগুলি বিশ্বের সবচেয়ে প্রশংসিত স্মৃতিস্তম্ভগুলির একটিতে আরামদায়ক এবং সমৃদ্ধ দর্শন নিশ্চিত করে৷

সান্নিধ্য আবিষ্কার

যদিও তাজমহল নিজেই বিশাল ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্যের একটি স্থান, আশেপাশে অন্বেষণ করার মতো আরও কয়েকটি আকর্ষণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আগ্রা দুর্গ, জামা মসজিদ, জাহাঙ্গীরের প্রাসাদ, মানকামেশ্বর মন্দির, চিনি-কা-রৌজা, ইতমাদ-উদ-দৌলার সমাধি এবং মেহতাব বাগ। এই সাইটগুলির প্রত্যেকটিই আগ্রার ঐতিহ্যের সমৃদ্ধ ট্যাপেস্ট্রিতে অবদান রাখে, যা এই শহরটিকে ইতিহাস উত্সাহীদের এবং সংস্কৃতি সন্ধানকারীদের জন্য একইভাবে একটি ভান্ডার করে তোলে৷

উপসংহারে, তাজমহল শুধুমাত্র ভালবাসা এবং ক্ষতির একটি স্মৃতিস্তম্ভ হিসাবে নয় বরং স্থাপত্যের উজ্জ্বলতা এবং ঐতিহাসিক গভীরতার আলোকবর্তিকা হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। এর লোভনীয়তা সারা বিশ্ব থেকে দর্শকদের আকর্ষণ করে, এটিকে ভারতের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি প্রধান প্রতীক করে তোলে। এটি স্থাপত্যের সূক্ষ্মতা, ঐতিহাসিক তাত্পর্য, বা স্মৃতিস্তম্ভ এবং এর আশেপাশের নিছক সৌন্দর্যই হোক না কেন, তাজমহল অনুপ্রেরণা এবং শ্রদ্ধার উত্স হয়ে চলেছে। আগ্রার অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থানগুলির অন্বেষণের সাথে মিলিত এই মহিমান্বিত সমাধির একটি পরিদর্শন, ভারতের বহুতল অতীতের হৃদয়ে একটি অবিস্মরণীয় যাত্রার প্রতিশ্রুতি দেয়।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত – বাংলা ভাষায় প্রথম বিয়োগান্তক বা ট্র্যাডেজি নাটক রচয়িতা।

যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত একজন লেখক ও গবেষক।  তিনি বাংলা ভাষায় প্রথম ট্র্যাজেডি  নাটক কীর্তিবিলাস রচনা করেন।  শিশুভারতী নামে বিখ্যাত সংকলনের সম্পাদনা তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি।  তিনি কৈইশোরক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।  তাঁর রচিত বাংলার ডাকাত বইখানি উল্লেখযোগ্য।  ইতিহাস ও সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর গবেষণামূলক অবদান চিরস্মরণীয়।

 

জন্ম ও শৈশব——–

 

যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত ২২ মার্চ ১৮৮৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকার মূলচরের নিবাসী ছিলেন তিনি। মাতা মোক্ষদাসুন্দরী।

 

রচিত গ্রন্থ——

 

অল্পবয়সেই যোগেন্দ্রনাথ সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ইতিহাস ও সাহিত্যের বিভিন্ন বিভাগে তার গবেষণামূলক অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয়। তিনি বিশ্বের ইতিহাস ২১ খণ্ডে রচনা করেছিলেন।  ১০০টিরও বেশি বই লেখেন।  তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –

 

ধ্রুব, প্রহ্লাদ, ভীমসেন, বঙ্গের মহিলা কবি, বাংলার ডাকাত, বিক্রমপুরের ইতিহাস, কেদার রায়, কল্পকথা (ছোটগল্প), তসবীর (নাটক), হিমালয় অভিযান, কবিতা মঞ্জরী, সাহিত্যিক।

 

মৃত্যু—

 

মে, ১৯৬৫ সালে তিনি প্রয়াত হন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This