Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ভারতীয় মঞ্চশিল্পী কেয়া চক্রবর্তী’র প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

কেয়া চক্রবর্তী ছিলেন একজন প্রতিভাময়ী অপেশাদার ভারতীয় মঞ্চ অভিনেতা।  কেয়া চক্রবর্তী ১৯৪২ সালের ৫ আগস্ট উত্তর কলকাতার একটি বনেদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  বাবার নাম অজিত চক্রবর্তী।  তবে ছোটবেলা থেকেই তিনি মায়ের কাছে মানুষ হন।  তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজের একজন ভালো ছাত্রী ছিলেন।  ইংরেজিতে এমএ পাস করার পর ওই কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। ‘আন্তিগোনে’ নাটকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে পশ্চিমবঙ্গ সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশনের ‘শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী’ র পুরস্কার পান।

 

অভিনয় জীবন———

 

অভিনয় করতে ভালোবাসতেন কেয়া।  স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্র থাকাকালীন, ইংরেজি ১৯৫৮, ১৯৫৯, ১৯৬০ সালে আন্তঃকলেজ নাটক প্রতিযোগিতায় সেরা অভিনয়ের জন্য পুরস্কার জিতেছিল। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় যুব উৎসবের জন্য দিল্লি এবং মহীশূরে আমন্ত্রিত হয়েছিল।  যাইহোক, তিনি নান্দীকার গ্রুপের প্রযোজিত নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা মঞ্চে একজন কিংবদন্তি অভিনেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।  ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ‘চার অধ্যায়’ নাটকে প্রথম অভিনয়।  এরপর ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে নিয়মিত অভিনয়।  ‘তিনের পয়সার পালা’ ছবিতে অভিনয়ের পর তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।  ব্রেখটের ‘ভালো মানুষ’ নাটকের বাংলা সংস্করণে তাঁর দ্বৈত-চরিত্রের অভিনয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

 

 

 

নান্দীকার এ অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত ও কেয়া চক্রবর্তী একসাথে অভিনয় একটা স্বর্ণযুগ ছিল । এর পর ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে কলেজের অধ্যাপনা ছেড়ে বিনা বেতনে নান্দীকারের সর্বক্ষণের কর্মী হন।  তার শেষ অভিনীত নাটক ‘ফুটবল’।

 

কেয়া চক্রবর্তী একজন ভালো অনুবাদক ছিলেন।  অভিনয়ের জন্য বার্নার্ড শ’র নাটক ‘সেন্ট জোয়ান’ অনুবাদ করেছেন।  মাঝে মাঝে টাকার জন্য সিনেমায় অভিনয় করলেও তার আসল ক্ষেত্র ছিল নাটক।  তিনি নাট্যভাবনা নিয়ে কিছু প্রবন্ধ লিখেছেন।

 

 

 

কেয়া চক্রবর্তীর মঞ্চাভিনয় (১৯৬১ – ১৯৭৭ )

নাটক /তাভিনয় সংখ্যা
অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায়:

নটি বিনােদিনী ,  আলাের বাইরে , মূদ্রারাক্ষস , বৃত্ত , বীতংস, অগ্নিবিষয়ক সতর্কতা ও গৌতম ,  হে সময়, উত্তাল সময়, শাহী বাদ ,   নাট্যকারের সন্ধানে দুটি চরিত্র , শের আফগান ,  মঞ্জরী আমের মঞ্জরী , তিন পয়সার পালা,  ভালােমানুষ , নীলিমা , চার অধ্যায় , রাত্রি প্রভৃতি।

রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তর পরিচালনায়—

আন্তিগােনে , ফুটবল,  টক ।

অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায়—- পূর্বরাগ।

শম্ভূ মিত্রের পরিচালনায় ——রক্তকরবী ।

শ্যামানন্দ জালানের পরিচালনায় —–তুঘলক।

 

মৃত্যু——–

 

তাঁর মৃতু ছিল মর্মান্তিক ।  সাঁকরাইলে গঙ্গার ওপর ‘জীবন যে রকম’ চলচ্চিত্রের বহিদৃর্শ্য গ্রহণের সময় (শুটিংয়ের সময়) অভিনয় করতে গিয়ে জলে ডুবে তার মৃত্যু ঘটে ১২ মার্চ,  ১৯৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

কিংবদন্তি গায়িকা – উৎপলা সেন এর জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি ।

উৎপলা সেন ১২ মার্চ, ১৯২৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দী বাংলা গানের একজন প্রধান জনপ্রিয় গায়িকা। বাংলা গানের স্বর্ণযুগে প্রেম ও বিরহের গানে তিনি আলাদা বিষণ্ণ সুর তুলে ধরেছেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, স্বামী সতীনাথ মুখোপাধ্যায় এবং অন্যান্য গায়কদের সাথে অনেক জনপ্রিয় দ্বৈত গানও গেয়েছেন।

 

তিনি প্রথমে মা হিরণবালা দেবীর কাছে প্রশিক্ষণ নেন, তারপর ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খানের কাছে।  তিনি ১৯৩৫ সালে ১৯১৩ বছর বয়সে ঢাকা বেতারে প্রথম জনসম্মুখে উপস্থিত হন।  প্রথম রেকর্ড ১৯৩৯ সালে। ১৯৪১ সালে, সুরকার সুধীরলাল চক্রবর্তীর সুর করা এক হাতে মোর পূজা থালি গানটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল।  মহিষাসুরবমর্দিনীর – শান্তি দিল ভরি গানে  আরও জনপ্রিয়তা পান, যা আজও শোনা যায়। এর পর তিনি
চল্লিশের দশকের গোড়ার দিকে কলকাতায় চলে আসেন এবং তখন থেকেই আকাশবাণীর সঙ্গে যুক্ত হন।  বাংলা চলচ্চিত্রেও গান গেয়েছেন আনেক। বেনু সেনের সাথে প্রথম বিয়ে হয় তাঁ। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি সঙ্গীত সহকর্মী সতীনাথ মুখোপাধ্যায় কে ১৯৬৮ সালে বিয়ে করেন।  একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।

 

তাঁর ৬০০০ এর বেশি সিনেমা এবং রেকর্ডের গানের অধিকাংশই আজ বিস্মৃতপ্রায়। ইদানীং কালে দুই বাঙলাতেই পুরানো দিনের গানের চর্চা বাড়ছে – কিছু গান ‘পুনঃনির্মাণ’ মাধ্যমে আবার শোনা যাচ্ছে – এবং উৎপলা সেনের নাম আবার জনসমক্ষে শোনা যাচ্ছে। তাঁর কিছু জনপ্রিয় গান হলো যেমন, এত মেঘ এত যে আলো, ময়ুরপঙ্ক্ষী ভেসে যায়, পাখি আজ কোন সুরে গায় বা ঝিকমিক জোনাকির দ্বীপ জ্বলে শিয়রে।

 

দীর্ঘ কয়েক বছর ক্যান্সারাক্রান্ত উৎপলা সেন ১৩ মে, ২০০৫ সালে মারা যান কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস – একটি বিশেষ পর্যালোচনা।

প্রতি বছর ১২ মার্চ বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস পালন করা হয়।  দিনটি গ্লুকোমা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য নিবেদিত, চোখের রোগের একটি গ্রুপ যা অপটিক নার্ভকে ক্ষতিগ্রস্ত করে দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে।  এটি বিশ্বব্যাপী অন্ধত্বের একটি প্রধান কারণ, যা আনুমানিক চার মিলিয়নের মধ্যে তিনজনকে প্রভাবিত করে।
গ্লুকোমা সপ্তাহ প্রতি বছর উদযাপিত হয়, গ্লুকোমা দিবসের মাধ্যমে সপ্তাহের শেষ হয়।  আসুন জেনে নেই বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস ২০২৪ উদযাপনের ইতিহাস, তাৎপর্য, থিম এবং উপায় সম্পর্কে।

 

বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস ২০২৪: থিম—-

 

বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ পালিত হচ্ছে ‘গ্লুকোমামুক্ত বিশ্বের জন্য ঐক্যবদ্ধ’ ‘Uniting for a Glaucoma-Free World‘ প্রতিপাদ্যে।  এখন একটি অবস্থান নেওয়ার সময় এবং.  একটি বিশ্ব সম্প্রদায় হিসাবে ঐক্যবদ্ধ।

 

বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস ২০২৪: ইতিহাস—-

 

গ্লুকোমা হল এমন একটি অবস্থা যা চোখের সামনের স্বচ্ছ স্তর কর্নিয়া এবং কনজাংটিভাকে প্রভাবিত করে।  এটি ব্যথা, ঝাপসা দৃষ্টি, লাল চোখ এবং ফোলা চোখ সহ বিভিন্ন উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে।  কিছু ক্ষেত্রে, গ্লুকোমা সম্পূর্ণ অন্ধত্বও হতে পারে।
গ্লুকোমার কোনো একক কারণ না থাকলেও সবচেয়ে সাধারণ হল তরল জমা হওয়া যা অপটিক স্নায়ুর ওপর চাপ বাড়াতে পারে।  এর ফলে অপটিক নার্ভের ফাইবারগুলি মারা যেতে শুরু করতে পারে, যা সম্পূর্ণ, অপরিবর্তনীয় অন্ধত্বের দিকে পরিচালিত করে।  গ্লুকোমার অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে বয়স, লিঙ্গ এবং জাতিগততা।
গ্লুকোমার প্রাথমিক সনাক্তকরণ দৃষ্টিশক্তি হ্রাস রোধ করার মূল চাবিকাঠি।  এটি একজন চোখের ডাক্তার দ্বারা নিয়মিত চোখের পরীক্ষার মাধ্যমে অর্জন করা যেতে পারে।  যত আগে গ্লুকোমা শনাক্ত হয়, তত সহজে চিকিৎসা করা যায় এবং স্থায়ী অন্ধত্ব হওয়ার সম্ভাবনা তত কম।
আপনার যদি গ্লুকোমার উপসর্গগুলির মধ্যে কোনটি থাকে, তাহলে আরও দৃষ্টিশক্তি হ্রাস রোধ করতে চোখের ডাক্তারের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ।  প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং চিকিত্সা আপনার দৃষ্টি সংরক্ষণ করতে এবং অন্ধ হওয়ার ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারে।

 

বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস ২০২৪ : তাৎপর্য—-

 

বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস এই অবস্থা এবং এর ঝুঁকির কারণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে পালন করা হয়।  গ্লুকোমা শনাক্ত করার জন্য নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করাতে উৎসাহিত করাও এর লক্ষ্য।  প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং চিকিত্সা দৃষ্টি হ্রাস এবং অন্ধত্ব প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস তাৎপর্যপূর্ণ হওয়ার কয়েকটি কারণ এখানে রয়েছে:

গ্লুকোমা বিশ্বব্যাপী অন্ধত্বের একটি প্রধান কারণ।

এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা যা অপরিবর্তনীয় দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে।

প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং চিকিত্সা দৃষ্টি ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে।

প্রথম দিকে গ্লুকোমা সনাক্ত করার জন্য নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।

গ্লুকোমার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের, যেমন 40 বছরের বেশি বয়সী, তাদের নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করা উচিত।

 

বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস ২০২৪ : উদযাপনের উপায়—-

 

বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস উদযাপন এবং অবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার অনেক উপায় রয়েছে।  এখানে কয়েকটি ধারনা:

বিশ্ব গ্লুকোমা দিবসের জন্য আপনার সমর্থন দেখাতে নীল পরিধান করুন।

আপনার সম্প্রদায়ের একটি গ্লুকোমা সচেতনতা ইভেন্টে যোগ দিন।

একটি গ্লুকোমা গবেষণা সংস্থাকে দান করুন।

গ্লুকোমা এবং কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায় সে সম্পর্কে আরও জানুন।

আপনার গ্লুকোমার ঝুঁকি সম্পর্কে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন এবং নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করুন।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

মানুষের ব্যবহার –একটি বিশেষ পর্যালোচনা : দিলীপ  রায়।

 

কথিত আছে “মানুষের ব্যবহারই মানুষের পরিচয়” ।
রাস্তাঘাটে, ট্রেনে-বাসে, অলিতে-গলিতে, বাজার-হাটে, কান পাতলে শোনা যায় মানুষের ব্যবহারের দৈনন্দিন কড়চা । মুখরোচক বাহার । মানুষের হিতার্থে কিছু মানুষের নিঃস্বার্থ প্রয়াসের কাহিনীও দৈনন্দিন কড়চার প্রাসঙ্গিক অঙ্গ, যদিও সেটা সীমিত । সুতরাং মানুষের ব্যবহারের ব্যাখার ব্যাপ্তি, ব্যাপক । দৈনন্দিন জীবনে মানুষের ব্যবহারের ক্ষেত্রে বয়সের একটা প্রেক্ষাপট কাজ করে । বাচ্চা-হাল্কা-মধ্য  বয়স্ক মানুষদের ব্যবহারের বিন্যাসের পরিবর্তন  অহরহ । জনশ্রুতি, “হাল্কা বয়সের মানুষের কথা বলার মধ্যে প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে রাগান্বিত সুরের প্রাদুর্ভাব ঘটার সম্ভাবনা উজ্জ্বল । আবার বয়স্ক মানুষদের মধ্যে কথোপকথনে বা কথা বলার আদান-প্রদানে অনেক মার্জিত স্বভাবের পরিচয়, পরিলক্ষিত ।“ তাই  মানুষের ব্যবহারের প্রকাশ স্থান-কাল-পাত্র একটা অপরিহার্য প্রেক্ষিত । তাই বলা চলে, মানুষের ব্যবহারের প্রেক্ষাপট আলোচনার ক্ষেত্রে “নানা মুনির নানা মত” কথাটি ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক ।
ব্যবহারিক জীবনের সেকাল ও একালের দিকে তাকালে আগের দিনের মানুষের ব্যবহারের অনেক পরিবর্তন সহজেই অনুমেয় । যোগাযোগের প্রেক্ষাপটে আগের   মানুষের নিকট পোষ্ট অফিসের গুরুত্ব ছিলো অপরিসীম । পোষ্ট কার্ডে চিঠি লেখার ভিতর দিয়ে মানুষের ব্যবহারের অবয়ব ফুটে উঠতো । তদানীন্তনকালের চিঠি লেখাটা ছিলো শিল্পকলার অপরিহার্য অঙ্গ । বর্তমান দৈনন্দিন জীবনে চিঠি লেখার সুঅভ্যাস প্রকৃত অর্থে নিস্প্রভ । কালের  নিয়মে এসে গেছে ডিজিটাল যুগ । টেক-সেভির সুবিধার বিভিন্ন স্তর । ইন্টারনেটের  ব্যবহারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা । যার ফলে হোয়াটস্‌ অ্যাপের মাধ্যমে মানুষ দূরের মানুষের সঙ্গে এমনকি সুদূর আমেরিকা, লন্ডন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ইত্যাদি দেশের মানুষের সঙ্গে নিমেষের মধ্যে যোগাযোগ   । সুতরাং আজকের কম্পিউটারাইজেশনের যুগে মানুষের ব্যবহারিক জীবনও খানিকটা নয় অনেকটাই বদলে গেছে । একটা ঘটনার উল্লেখ এখানে প্রনিধানযোগ্য । রাস্তায় হাঁটা চলমান মানুষটিকে অন্য আর একজন বিশিষ্ট চলমান মানুষ তাঁর প্রয়োজনে জিজ্ঞাসা করলেন, “দাদা রেলওয়ে স্টেশনটি কোন্‌দিকে ?” কিন্তু রাস্তায় হাঁটা ঐ বিশিষ্টজন যাকে জিজ্ঞাসা করলেন সেই পথিকবর  শুনতেই পেলেন না ! কারণ তাঁর দুটি কানে হেড্‌ ফোনের তার গোঁজা । ঐ পথযাত্রী কানে হেড্‌ ফোন লাগিয়ে তাঁর প্রিয় গান শুনতেই তখন ব্যস্ত । এতেই স্পষ্ট, মানুষের ব্যবহারিক জীবনে টেক-সেভির প্রভাব অবর্ণনীয়  ।  অন্যদিকে  কম্পিউটারের ব্যবহারের দিকে তাকালে দেখা যায় আগে কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটা বড় টেবিলের প্রয়োজনীয়তা ছিলো অনস্বীকার্য । কিন্তু বর্তমানে টেবিল কম্পিউটারের জায়গায় ব্যবহার হচ্ছে ল্যাপটপ । যেটা সহজেই অল্প জায়গায় ব্যবহারযোগ্য । এতেই স্পষ্ট, ব্যবহারিক জীবনে মানুষ ডিজিটাল যুগের দিকে ধাবিত ।
( ২ )
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব । সমাজবদ্ধভাবে একত্রে বসবাস করাটা মানুষের পরম্পরা । সুতরাং সমাজের প্রতি মানুষের দায়বদ্ধতা অনস্বীকার্য । দায়বদ্ধতার নিরিখে মানুষের ভূমিকা অগ্রগণ্য । এজন্য মানুষের মধ্যে প্রচলিত “বাবহারই মানুষের নিজস্ব অবয়ব” । সমাজের গণ্যমান্য মানুষজন যেমন শ্রদ্ধার পাত্র, তেমনি সাধারণ মানুষের আচরণও শ্রদ্ধার ক্ষেত্রে সমভাবে উল্লেখযোগ্য । আবার অন্যদিকে ব্যবহারিক আচরণও ক্রমপরিবর্তনশীল । যেমন আগে গুরুজন বা মাস্টারমহাশয় দেখলেই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গড় হয়ে প্রণাম করার রেওয়াজ সর্বজনবিদিত । নিদেনপক্ষে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করাটা ছিলো অবধারিত । আজকের যুগে গুরুজনদের শ্রদ্ধা জানানোর আগের ব্যবহারিক রীতির দৃশ্য স্পষ্টতই দুর্ল্ভ । সুতরাং সমাজের গণ্যমান্য  মানুষের প্রতি ব্যবহারের ধরণ আগের চেয়ে বর্তমানে অনেক পরিবর্তন । সমাজের প্রতি কর্তব্যপরায়ণ, ব্যবহারের একটা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । তাই সঠিক ব্যবহার সমাজ উন্নয়নে আবশ্যক  ।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বেশভূষা ব্যবহারিক শ্রেণিবিন্যাসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকার দাবি রাখে । আমরা জানি পোষাক পরিচ্ছদ শরীর আবরণের বিশেষ মাধ্যম । কিন্তু দৈনন্দিন জীবনের প্রেক্ষাপটে বেশভুষারও পরিবর্তন লক্ষণীয় । সর্বকালেই ভাল পোষাকের গুণ সমাদৃত । পোষাক পরিধানেও মানুষের ব্যবহারিক রুচির বার্তা বহনের ধারক । আগে মানুষের মধ্যে ধুতি ও শাড়ি পরবার রেওয়াজ ছিলো সামাজিক রীতিনীতির অঙ্গ । এমনকি সামাজিকতার দিক থেকেও সর্বজনগ্রাহ্য ।  যার জন্য সামাজিক অনুষ্ঠানে এমনকি স্কুল-কলেজে, কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের ধুতির ব্যবহার ছিলো সাবলীল । অন্যদিকে মহিলাদের শাড়ি ছিলো অঙ্গের ভূষণ, সৌন্দর্য্যে উৎকৃষ্টের পরম্পরা । সুতরাং বলা চলে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে রুচিশীল পোষাকের ব্যবহার শালীনতাবোধের ধারক ও বাহক। ইদানীং পোষাকের পরিবর্তন ভীষণভাবে চোখে লাগে  । স্বল্প পোষাক পরিচ্ছদে মানুষ অভ্যস্ত । কলেজের-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এমনকি যুব সমাজের মধ্যে স্বল্প পোষাকের ব্যবহার অহরহ । বয়স্ক মানুষও হাফ্‌-প্যান্ট-গেঞ্জি গায়ে ইদানীং বাজারে বাজার করতে স্বচ্ছন্দ । সপিং মলগুলিতে ঢুকলে বোঝা যায়, যুব সমাজ কতোটা স্বল্প পোষাকমুখি । সন্তানের মায়েরা পর্যন্ত ফ্রকে অভ্যস্ত । সুতরাং ব্যবহারিক জীবনে আজকের দিনের মানুষ হাল্কা ও স্বল্প পোষাকের দিকে বেশীমাত্রায় ঝুঁকছে  ।
( ৩ )
চলমান জীবনে নেশার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ । অথচ নেশার প্রকারভেদ দিন-দিন  পাল্টাচ্ছে । আগে নেশা বলতে ঐ বই পড়া । বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার অভ্যাস মানুষের মধ্যে দেখা যেতো । ছেলেরা বিশেষ করে  ছাত্ররা ফুটবলের নেশায় মাঠে ছুটতো । চলমান জীবনে তখন ফুটবল খেলাটা ছিলো ভীষণ জনপ্রিয় । মেয়েদের মধ্যে অ্যাথলেটিক্স ছিলো অগ্রগ্ণ্য । তা ছাড়া খেলাধূলার সু্যোগ মেয়েদের ক্ষেত্রে খুব কম ছিলো । তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে ঐ রান-কিৎ কিৎ-ইত্যাদি খেলার নেশা উল্লেখের দাবী রাখে । আগে  রেডিও’র  গান শোনার কদর ছিলো চোখে পড়ার মতো । রেডিও ছিলো তদানীন্তনকালের আ্মোদপ্রমোদের উল্লেখযোগ্য  মাধ্যম । বিড়ি ও সিগারেট খাওয়ার নেশা মানুষের ব্যবহারিক জীবনে আগাগোড়াই কম । একালে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদি পড়ার ধৈর্য  হতাশাজনক । বরং কম্পিউটারের মাউস ঘুরিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বজয়ের আকাঙ্খা প্রবল । রেডিও’র পরিবর্তে টি ভি’র ব্যবহার ঘরে ঘরে । সিনেমা দেখার জন্য সিনেমা হলে গিয়ে  সিনেমা দেখার প্রবণতা এখন কম । সুতরাং বলা চলে,  মানুষের ব্যবহারিক জীবনে নেশার পরিবর্তন ব্যপকভাবে পরিলক্ষিত ।
আজকের দিনে মোবাইলের ব্যবহার ষোলোআনা । অথচ আগে কোনো একটা পরিবারের বিশেষ করে মৃত্যুর খবর দেওয়ার জন্য পোষ্ট অফিসে ছুটতে হতো টেলিগ্রাম করার জন্য । আজকের দিনে প্রায় মানুষের হাতে মোবাইল । মোবাইলে নেটের ব্যবহার সর্বত্র ।  আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সব ধরনের মানুষের মধ্যে রাস্তাঘাটে মোবাইলে নেট ব্যবহার করার দৃশ্য অনবরত । সুতরাং ব্যবহারিক জীবনে মোবাইলের কদর ছাত্র-ছাত্রী, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, বাবা-মা, সকলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান । এটা বাস্তব যে, মোবাইলের সঠিক ব্যবহার সমাজ জীবন উন্নয়নে অগ্রগণ্য  ।
( ৪ )
চুরি করার ধরণও পরিবর্তনশীল । ব্যবহারিক জীবনে মানুষ চোরের উপদ্রব বলতে আগে যেটা বুঝতেন, চোর-ডাকাত রাত্রিবেলায় গৃহস্তের বাড়ি ঢুকে সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দেওয়ার রেওয়াজ । আজকের দিনে চোর বা ডাকাত বিভিন্ন আধুনিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে ঘরে ঢুকে মূল্যমান সোনা-গয়নার অলংকার নিয়ে পালাতে অভ্যস্ত । চোর-ডাকাতদের  আর খাট্‌, রেফ্রিজারেটার, টি ভি, ইত্যাদিতে নজর নেই ।  সুতরাং চুরি-ডাকাতির ব্যবহারিক ধরণও ক্রমপরিবর্তনশীল । চুরি করার প্রক্রিয়াও আধুনিক ও  উন্নতমানের  ।
ব্যবহারিক ধরণ বা ব্যবহারের প্রয়োগের কাহিনী অনেক লম্বা । উপরের আলোচনার প্রেক্ষাপটে এটা সুস্পষ্ট যে,  কালের পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যবহারের পরিবর্তন ক্রমবর্ধমান । তবে গঠনমূলক ও স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবহার সমাজজীবনে উন্নয়নের হাতিয়ার । বাস্তবসম্মত ও রুচিসম্মত ব্যবহার অবশ্যই কাম্য । প্রকৃত ব্যবহার শিক্ষার যেমন অঙ্গ তেমনি মানুষের মধ্যে চেতনা বিকাশের নিশানা । সুতরাং সমাজ উন্নয়নে  সঠিক ব্যবহারের ভূমিকা অনস্বীকার্য ।
—–০——-

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

আশির দশক থেকেই সাড়া জাগানো জনপ্রিয় লেখিকা – বাণী বসু’র জন্মদিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি ।

বাণী বসু একজন সমসাময়িক ভারতীয় বাঙালি লেখিকা – উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা লেখেন, অনুবাদও করেন। বাণী বসু আশির দশক থেকে একাধিক সাহিত্য পুরস্কার ও সম্মানে সম্মানিত।  তিনি ১১ মার্চ, ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।  তিনি বিজয় কৃষ্ণ গার্লস কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন।  ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক  করার পর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ.  করেন।  শিক্ষার প্রথম স্থান ছিল লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ, কলকাতা এবং তারপরে স্কটিশ চার্চ কলেজ।

ছাত্রী জীবন থেকেই বাণী বসু নানা প্রবন্ধ, অনুবাদ গল্প ও কবিতা রচনায় পারদর্শিতার নজির রাখেন। ১৯৮১তে তার প্রথম গল্প আনন্দমেলা ও দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় । শারদীয়া আনন্দলোকে ১৯৮৭তে তাঁর  প্রথম উপন্যাস জন্মভূমি মাতৃভূমি প্রকাশিত হয় । কিন্তু তার আগেই তার অনেক অনুবাদ প্রকাশিত ও আদৃত হয়েছে। তাঁর উল্লেখ্য অনুবাদগুলি হলঃ শ্রী অরবিন্দের সনেটগুচ্ছ, সমারসেট মমের সেরা প্রেমের গল্প  ও এইচ ডি লরেন্সের সেরা গল্প।

রচিত উপন্যাস——–

তাঁর রচিত উপন্যাস গুলি হলো – উত্তরসাধক, পঞ্চম পুরুষ, বাইরে, অন্তর্ঘাত, কিনার থেকে কিনারে, মেয়েলি আড্ডার হালচাল, রাধানগর, দিদিমাসির জিন, জন্মভূমি মাতৃভূমি, মৈত্রেয় জাতক, অমৃতা, নূহর নৌকা, সুরূপা কুরূপা, অষ্টম গর্ভ, অষ্টম গর্ভ (দ্বিতীয়), খনামিহিরের ঢিপি, ক্ষত্তা, কালিন্দী, কৃষ্ণ, পাঞ্চাল কন্যা কৃষ্ণা, সুযোদন দূর্যোধন, কৃষ্ণ বাসুদেব, কাক জ্যোৎস্না, অল লেডিস ভ্রমণ, একুশে পা, ট্রেকার্স, অশ্বযোনি, ফেরো মন।

পুরস্কার ও সম্মাননা——–

তারাশঙ্কর পুরস্কার (১৯৯১);  আনন্দ পুরস্কার – (মৈত্রেয় জাতক): ১৯৯৭ ; বঙ্কিম পুরস্কার ( ১৯৯৯);  ভুবনমোহিনী দাসী স্বর্ণপদক (২০০৮), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার – (খনামিহিরের ঢিপি): ২০১০।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

মূল্যবান মনুষ্য জীবন ও আজকের সমাজ : স্বামী আত্মভোলানন্দ (পরিব্রাজক)।

আমরা ভারতীয়, আমাদের কর্মময় জীবন, এবং ধর্মময় মনপ্রাণ। কিন্তু, আমাদের সমাজে আজ পাল্টে গেছে মানুষের চিন্তাধারা। কিছু বছর আগেও মানুষে মানুষে প্রেম ও গভীর ভালোবাসা ছিল। বিশুদ্ধ বিশ্বাস ছিল, নির্ভরতা ছিল। একে অপরের প্রতি প্রচন্ড বিশ্বাস ছিল। প্রকাশ ছিল কম অনুভব ছিল বেশী। এখন প্রকাশ বেশী অনুভব কম। মনের ব্যাকুলতা, অফূরন্ত বিশ্বাস, ধৈর্য্য, ভালোবাসা  আর কিছু অবশিষ্ট নাই। আজ আমরা মোবাইল আর টাকার গোলাম হয়ে পড়েছি। আজ মোবাইলের কারণে পরিবারের মধ্যে একে অপরের সাথে ভালো সুসম্পর্ক নেই। সর্বদা মোবাইলে ব্যস্ত থাকায় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কুশল বিনিময় হয় না, কারো সাথে ভালোভাবে কথা বলার সময় নেই। ফলে সবার উপর থেকে সম্মান, স্নেহ,আদর্শ, ভালবাসা, গুরুত্ব সবই কমে যাচ্ছে। সবাই আজ মেশিন। আর তারপর আসে আমাদের সমাজে টাকার কথা। শিক্ষা,স্বাস্থ্য, আজ ব্যবসায় পরিণত। সর্ব ত্যাগী সন্ন্যাসীগনও টাকার গোলাম আজ, যেন তেন প্রকারেন টাকা চাই। সর্ব ত্যাগী সন্ন্যাসীগন ও টাকা টাকা করে ন্যায় অন্যায় এর পার্থক্য ভুল ভাবে করছে। এখন টাকা সবার  স্ট্যাটাস সিম্বলে পরিণত। সমাজে আমরা আজ আরও টাকা চাই, আরও টাকা চাই, মানুষ আজ টাকার দাস। সবাই আজ মোবাইল আর টাকার পাগল।

একটি গল্পের মাধ্যমে চরম বাস্তবটা অনুভব করার চেষ্টা করি। আমার এক সুপরিচিত বিশাল শিল্পপতি। ১২ টার উপর ফ্যাক্টরি, শত কোটি টাকার উপর ব্যাংক  ব্যালেন্স। এক মুহূর্তের জন্য শান্তি নেই। সারাদিন ব্যাস্ত টাকার দুনিয়ার পেছনে। একদিন তাঁর অফিসে বসে গল্প করছিলাম, এমন সময় তাঁর এক কর্মচারী  আসল। তার কোন কারণে কিছু টাকার দরকার। সে বলল, সে অত্যন্ত অভাবী ব্যক্তি, তাঁকে কিছু সাহায্য করার জন্য। শিল্পপতি হেসে বলল যদি অভাবের কথাই বলতে হয়, এই পুরো অফিসে আমার চেয়ে অভাবি আর কেউ নেই। আমরা একটু থতমত হয়ে গেলাম। বললাম আমাদের সবার মিলিয়ে যত সম্পদ আছে আপনার একারই তার অনেক বেশি সম্পদ আছে।

সে বলল আপনাদের একটা গল্প বলি। তাহলেই আমার অভাবের রহস্য বুঝবেন। এক বিশাল ব্যবসায়ি, তাঁর সবই আছে খালি শান্তি নেই। খালি হাহাকার আর টেনশান। চিন্তায় মাথার চুল নেই। সে একদিন দেখল তাঁর অফিসের এক অফিস কর্মী টেবিল মুছছে আর গুনগুন করে গান গাচ্ছে। সে কর্মীকে ডেকে বলল এই যে তুমি মনে মনে গান গাও, তোমার কি অনেক সুখ, তোমার মনে কি কোন দুঃখ নেই, কোন হতাশা নেই?  কর্মী বলে না, হতাশা কেন থাকবে স্যার, আপনি যা বেতন দেন তা দিয়ে  আমার ভালই চলে যায়। ভগবানের ইছায় আমার কোন অভাব নেই।

ব্যবসায়ী তো আরো টেনশানে পড়ে গেলেন। ওনার ম্যানেজারকে ডেকে বললেন, আমার সব আছে কিন্তু শান্তি নেই, আর ওই লোককে আমি সামান্য কয়টা টাকা বেতন দিই, সে আছে মহা সুখে, এর রহ্স্যটা কি? ম্যানেজার বলল, রহস্য বললে বুঝবেন না। সত্যই যদি বুঝতে চান তাহলে, ওই কর্মীকে প্রমোশান দিয়ে একটা বড় পোস্টে দিন। আর তাঁকে ১০/১২ লক্ষ টাকা দিয়ে দিন। এরপর দেখুন। ব্যবসায়ি তাই করল। এতোগুলো টাকা, আর এতবড় চাকরি পেয়ে কর্মী আনন্দে আত্মহারা। বাড়িতে ও সবাই খুশি। যেহেতু এখন অফিসার হয়ে গেছে, এখন তো আর টিনের ঘরে থাকা যায় না। সহকর্মীরা কি মনে করবে।

প্রথমেই  বাসস্থান পরিবর্তন করে আরেকটু অভিজাত এলাকায় এপার্টমেন্টে উঠলো। দেখল, বিল্ডিং এর সবাই সন্তানকে বড় স্কুলে পাঠায়, তাই বাচ্চার স্কুলও পরিবর্তন করতে হল। কিছুদিন পড় বউ ঘ্যনঘ্যন শুরু করলো সবার বাড়িতে কত দামি আসবাব, ফ্রিজ, টিভি, আর আমাদের বাড়িতে  কিচ্ছু নেই। ও গুলোও কিনতে হোল। এরপর শুরু হোল বাচ্চার প্রাইভেট টিউশান, নানা রকম দাবি দাবা। আগে পূজায় একজোড়া জুতা পেয়েই সবাই কত খুশি হত, আর এখন প্রতি মাসে একজোড়া দিলেও তৃপ্তি নেই। যেহেতু সে এখন বড় চাকরি করে , পরিবারের সবার তাঁর কাছে প্রত্যশাও অনেক। সাধ্যমত চেষ্টা করে, তাও সবার চাহিদা মেটাতে পারেনা। আত্মীয় স্বজন বন্ধুগন তাকে অহংকারি ভেবে দুরে সরে গেলো।

এদিকে অফিসের সবাই ফ্ল্যাট বুকিং দিচ্ছে। বৌ সারাদিন বাড়িতে খোটা দেয় , তোমাকে দিয়ে কিছুই হবে না। ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সে চাকরির ফাকে  অন্য আয় কিছু শুরু করলো। তাতেও কিছু হয় না। নানাবিধ টেনশান আর দুশ্চিন্তায় তারো মাথার চুল  কমতে লাগলো। ব্যবসায়ি লক্ষ করলেন ব্যপারটা। উনি বললেন কি ব্যপার , তোমাকে এতো বড় প্রমোশান দিলাম, এতো টাকা দিলাম, আর এখন দেখি তুমি আগের মত আর প্রাণবন্ত নেই। ঘটনা কি?

সে বলল স্যার , কিছু  সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু তাঁর সাথে যে এতো চাহিদা আর অভাব আসবে তাতো আর বুঝিনি। আগে আমার কিছুই ছিলনা, অভাবও ছিলনা। আর এখন যেদিকেই তাকাই , খালি নাই আর নাই। আগে আমার অভাব পড়লেও সেটা ছিল এক দুই হাজারের ব্যপার। কোন ভাবে মেটান যেত। আর এখন আমার অভাব লক্ষ কোটি টাকার। এটা কিভাবে মেটাবো সে চিন্তায় আমার এখন আর রাতে ঘুম আসেনা স্যার। ব্যবসায়ি বলল, এতদিনে বুঝলাম, আমার মুল অসুখ।  টাকার আর সম্পদের সাথে অভাব আসে। যতই টাকার দুনিয়ার পিছনে ছুটি, এই অভাব আর অন্য কিছু দিয়েই পূর্ণ হবেনা।

সন্ন্যাসী মানুষগনও শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা মাথায় তুলতে পারলে ভুলে যায়, তার আশেপাশের মানুষেরাই তাকে শ্রেষ্ঠ করে তুলেছিল। অহংকারের চূরায় অধিষ্ঠিত হয়ে নিজেকে চরম উচ্চস্থানে তুলে এই আমিত্ব। এখানেই মানুষের নৈতিক পরাজয় ঘটে। জাগতিক প্রাপ্তির অহংকারে গা না ভাসাতে শিখতে হয়। বোধটুকু কাজে লাগাতেই হয়। তবেই না মান+হুশ = মানুষ হওয়া যায়। তবে মানুষকে ভালোবাসতে শিখতে হয়, ভাল-তে বাস করতে শিখতে হয়। প্রেম বুঝতে হয়, প্রেম শিখতে হয়। সব সময় আরও টাকা চাই, আরও টাকা চাই নয়।

আমাদের সমাজে আজ আদর্শ শিক্ষক, আদর্শ ডাক্তার কোথায়? শিক্ষা,স্বাস্থ্য, আজ ব্যবসায় পরিণত। আজ নেট দুনিয়া আমাদের সমাজকে পরিচালনা করছে।আজ আমাদের সমাজে সাধু মহারাজ, সর্ব ত্যাগী সন্ন্যাসীগনও টাকা টাকা করে পাগল, কথাগুলি অপ্রিয় হলেও সত্যি। আজ সরকারি কাঠামো ভেঙে পড়ছে, কোথায় আজ বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ, সুভাষ এর আদর্শ?  স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল আজ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত। তাই আসুন আমরা সবাই সচেতন হই, মোবাইল আর টাকার  পিছনে ছোটাছুটি কম করি। আমাদের সমাজে সুসম্পর্ক চিন্তা, ভাবনা, কল্পনা, আনন্দ, অনুভূতি, মনের ব্যাকুলতা, অফূরন্ত বিশ্বাস, আর ভালোবাসা  প্রয়োজন।
তাই  বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন:-“মানুষ কি চায় — উন্নতি, না আনন্দ? উন্নতি করিয়া কি হইবে যদি তাহাতে আনন্দ না থাকে? আমি এমন কত লোকের কথা জানি, যাহারা জীবনে উন্নতি করিয়াছে বটে, কিন্তু আনন্দকে হারাইয়াছে।” আসুন পরিবর্তন করার চেষ্টা করি। বাস্তববাদী হওয়ার চেষ্টা করি।***
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ….!

 


স্বামী আত্মভোলানন্দ l

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ভারতীয় বাঙালি লেখক এবং বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ এর প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ভারতীয় বাঙালি লেখক এবং বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ এর  জন্ম ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯০৯ বিহারের হাজারীবাগে।  আদি নিবাস বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের বহর গ্রামে।  তিনি হাজারীবাগের সেন্ট কলম্বাস কলেজের ছাত্র ছিলেন।  প্রখ্যাত দার্শনিক ও গবেষক মহেশ ঘোষের গ্রন্থাগারে অধ্যয়ন করতেন।  প্রত্নতত্ত্ব, পুরাতত্ত্ব এমনকি সামরিক বিদ্যায় তার যথেষ্ট দক্ষতা ছিল।

তিনি বিহারের আদিবাসী এলাকায় বাস কন্ডাক্টর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।  এরপর তিনি তার জীবনের বেশিরভাগ সময় সার্কাস ক্লাউন, বোম্বে পৌরসভায় চতুর্থ শ্রেণীর চাকরি, চা ব্যবসা, বেকারি ব্যবসা, মালগুদামে স্টোর কিপার ইত্যাদিতে কাটিয়েছেন। তিরিশের দশকের শেষের দিকে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকার সাপ্তাহিক বিভাগে সহকারী হন।  সংবাদপত্র  16 আগস্ট, 1946 সালে, তিনি গান্ধীজির সাথে উত্তর দাঙ্গা-বিধ্বস্ত নোয়াখালীতে যান এবং দাঙ্গা এবং দাঙ্গা-পরবর্তী সময়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করেন।  অনামি সংঘ (বা চক্র) নামক তরুণ লেখকদের একটি সভায় বন্ধুদের অনুরোধে সুবোধ ঘোষ পরপর দুটি গল্প লিখেছিলেন,  অযান্ত্রিক এবং ফসিল, যা বাংলা সাহিত্যে এক অসাধারণ আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল।

তার লেখালেখির কালপর্ব ১৯৪০ থেকে ১৯৮০। বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে একটু বেশি বয়সে যোগদান করেও নিজস্ব মেধা মনন চিন্তা চেতনা আর লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে সুবোধ ঘোষ তার অসাধারণ রচনা সম্ভাবের মাধ্যমে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হন।  বিশেষ করে তার ‘অযান্ত্রিক’ এবং ‘ফসিল’-এর মত বাংলা সাহিত্যের যুগান্তকারী গল্প।

সাহিত্য কর্ম——

প্রথম গল্প ‘অযান্ত্রিক’, এরপর ‘ফসিল’। তার আর একটি বিখ্যাত গল্প ‘থির বিজুরি’। এছাড়াও, জতুগৃহ, ভারত প্রেমকথা (মহাভারতের গল্প অবলম্বনে রচিত),। সুবোধ ঘোষের প্রথম উপন্যাস হল তিলাঞ্জলি। গঙ্গোত্রী, ত্রিযামা, ভালোবাসার গল্প, শতকিয়া প্রমূখ।

চলচ্চিত্রায়ণ——–

অযান্ত্রিক (ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত, ১৯৫৮) জতুগৃহ (১৯৬৪)।

সম্মাননা—–

আনন্দ পুরস্কার , শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার হিসেবে সুজাতা চলচ্চিত্রের জন‍্য – ফিল্মফেয়ার পুরস্কার (১৯৫৯), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদক।

১০ মার্চ ১৯৮০ সালে তিনি প্রয়াত হন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুমদার এর জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সমরেশ মজুমদার একজন ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক। শহরকেন্দ্রিক জীবনের আলেখ্য বারবার উঠে এসেছে তার লেখায়। যে কারণে তাকে আপাদমস্তক ‘আরবান’ লেখক বলে অনেক সময় বর্ণনা করা হয়।

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা—–

সমরেশ মজুমদার ১৯৪২ সালের ১০ই মার্চ  পশ্চিমবঙ্গের গয়েরকাটায় জন্মগ্রহণ করেন।পিতা কৃষ্ণদাস মজুমদার ও মাতা শ্যামলী দেবী। তার শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের গয়েরকাটা চা বাগানে। ভবানী মাস্টারের পাঠশালায় তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়।  এরপর বিদ্যালয়ের পাঠ জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে । তিনি কলকাতায় আসেন ১৯৬০ সালে। বাংলায় স্নাতক সম্পন্ন করেন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

 

সাহিত্য চর্চা—–

 

কর্মজীবনে তিনি আনন্দবাজার পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সাথে যুক্ত ছিলেন।  গ্রুপ থিয়েটারের প্রতি তার ছিল প্রবল অনুরাগ।  তাঁর প্রথম গল্প “অন্যমাত্র” একটি মঞ্চ নাটক হিসাবে রচিত হয়েছিল এবং সেখান থেকেই লেখক হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল।  তাঁর লেখার আরেকটি সংস্করণ 1967 সালে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। সমরেশ মজুমদারের প্রথম উপন্যাস “দৌড়” 1975 সালে দেশে প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি তাঁর লেখা গল্প বা উপন্যাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি;  ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী থেকে শুরু করে গোয়েন্দা গল্প পর্যন্ত, তিনি কিশোর উপন্যাস লেখায় প্রবল।  তার প্রতিটি উপন্যাসের বিষয়বস্তু ভিন্ন, লেখার গতি ও গল্প বলার ধরন পাঠকদের নাড়া দেয়।  চা বাগানের মাদেশিয়া সমাজ থেকে কলকাতার নিম্নবিত্ত মানুষ রক্তমাংসে তার কলমে এসেছে।

 

গ্রন্থ তালিকা——

সমরেশ মজুমদারের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলির মধ্যে  ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, অনুরাগ, সাতকাহন, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান, গঙ্গা,ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তার ট্রিলজি ‘উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ’ বাংলা সাহিত্য জগতে তাকে বিশেষ খ্যাতির অধিকারী করেছে।

জলছবির সিংহ, মেয়েরা যেমন হয়, একশো পঞ্চাশ (গল্প সংকলন), ভালবাসা থেকে যায়, নিকট কথা, ডানায় রোদের গন্ধ, উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ, সত্যমেব জয়তে,  আকাশ না পাতাল, তেরো পার্বণ, সওয়ার, টাকাপয়সা, তীর্থযাত্রী, কলিকাল, স্বপ্নের বাজার, কলকাতা, অনুরাগ, তিনসঙ্গী, ভিক্টোরিয়ার বাগান, সহজপুর কতদূর, অনি, সিনেমাওয়ালা, গর্ভধারিণী, হৃদয় আছে যার, সর্বনাশের নেশায়, ছায়া পূর্বগামিনী, এখনও সময় আছে, স্বনামধন্য, আমাকে চাই, উজান গঙ্গা, কষ্ট কষ্ট সুখ, কুলকুণ্ডলিনী, কেউ কেউ একা, জনযাজক, সূর্য ঢলে গেলে, আশ্চর্যকথা হয়ে গেছে, অগ্নিরথ, অনেকই একা, আট কুঠুরি নয় দরজা, আত্মীয়স্বজন, আবাস, জলের নিচে প্রথম প্রেম, জ্যোৎস্নায় বর্ষার মেঘ, দায়বন্ধন, দিন যায় রাত যায়, দৌড়, বড় পাপ হে (গল্প), বিনিসুতোয়, মনের মতো মন, মেঘ ছিল বৃষ্টিও, শরণাগত, শ্রদ্ধাঞ্জলি, সাতকাহন, সুধারানী ও নবীন সন্ন্যাসী, হরিণবাড়ি, কইতে কথা বাধে, মধ্যরাতের রাখাল, আকাশে হেলান দিয়ে, কালোচিতার ফটোগ্রাফ, আকাশকুসুম, অহংকার, শয়তানের চোখ, হৃদয়বতী, স্বরভঙ্গ, ঐশ্বর্য, আকাশের আড়ালে আকাশ, কালাপাহাড়, সন্ধেবেলার মানুষ, বুনোহাঁসের পালক, জালবন্দী, মোহিনী, সিংহবাহিনী, বন্দীনিবাস, মৌষলকাল, মানুষের মা, গঙ্গা, বাসভূমি, লক্ষ্মীর পাঁচালি, শেষের খুব কাছে, জীবন যৌবন, আহরণ, বাসভূমি, এত রক্ত কেন, এই আমি রেণু, উনিশ বিশ।

পুরস্কার ও সম্মাননা——

আনন্দ পুরস্কার -১৯৮২; বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার, দিশারী ও চলচিত্র প্রসার সমিতি – শ্রেষ্ঠ স্ক্রিপ্ট রাইটার – ১৯৮২; সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, ১৯৮৪; বঙ্কিম পুরস্কার – ২০০৯; বঙ্গবিভূষণ – ২০১৮, পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত। চিত্রনাট্য লেখক হিসাবে জয় করেছেন বিএফজেএ, দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির এওয়ার্ড। সমরেশ কলকাতা ও বাংলাদেশএর সর্বকালের অন্যতম সেরা লেখক হিসাবে পাঠকমন জয় করেছেন।

মৃত্যু—–

২০২৩ সালের ২৫ই এপ্রিল মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ জনিত সমস্যার কারণে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানেই ৮ই মে তিনি প্রয়াত হন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ

মহাদেবের স্বপ্নাদেশেই ১০৮ টি শিব মন্দির তৈরি করেছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র, রইল শিবনিবাসের অজানা তথ্য।

শিবনিবাস বাংলার ইতিহাস খ্যাত ও পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ এক প্রাচীন স্থান। পশ্চিম বাংলার নদীয়া জেলার শিবনিবাসকে বাংলার কাশী বলা হয়। দেবাদিদেব শিব মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের স্বপ্নে হাজির হয়েছিলেন। হিন্দু ধর্মে মহা শিবরাত্রির মাহাত্ম্য অনেক। পুণ্যার্থীরা শিবের জন্যে ব্রত পালন করেন। দিনভর চলে নানা ধর্মীয় রীতি পালন। এমনকি অনেক জায়গায় শিবরাত্রি উপলক্ষে নানা মেলাও হয়। মন্দিরে তো বটেই, বাড়িতে বাড়িতেও পুজো হয় মহাদেবের। ‘হড় হড় মহাদেব’ উচ্চারণ করে তারকেশ্বর দেশের ভিন্ন প্রান্তে বাবার মাথায় জল ঢালতে ভক্তদের সমাগম হয়। প্রায় এক মাস আগে থেকে চলে প্রস্তুতি। শিবরাত্রির আগে, রইল পশ্চিমবঙ্গে নদীয়া জেলায় অবস্থিত ‘শিবনিবাস’ এর অজানা নানা কথা।শিবনিবাস বাংলার ইতিহাস খ্যাত ও পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ এক প্রাচীন স্থান। পশ্চিম বাংলার নদীয়া জেলার শিবনিবাসকে বাংলার কাশী বলা হয়। যদি এক্ষেত্রে কাশীর মতো গঙ্গা নদী বয়ে যায়নি। তবে এখানে এই মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে চুর্ণী নদী। জনশ্রুতি আছে যে, দেবাদিদেব শিব মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের স্বপ্নে হাজির হয়েছিলেন। তাঁকে বলেছিলেন যে, তিনি কাশি থেকে তাঁর রাজধানী স্থানান্তরিত করছেন। তাই মহাদেবকে সন্তুষ্ট করতে মহারাজা শিবনিবাসে তাঁর নতুন রাজধানী স্থাপন করেছিলেন এবং তাঁর সম্মানে ১০৮ টি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।

তবে ইতিহাসবিদরা আরও কিছু যুক্তি দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেন, আঠারো শতকের মাঝামাঝি মহারাজা আক্রমণকারী মারাঠাদের হাত থেকে তাঁর রাজধানী কৃষ্ণনগরকে বাঁচানোর জন্য এটিকে শিবনিবাসে স্থানান্তরিত করেন, যা চূর্ণী নদীর তীরে ঘিরে ছিল। ফলে আক্রমণকারীদের কাছ থেকে তিনি কিছুটা সুরক্ষিত থাকতেন। তাঁর রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ার পরে মহারাজা সম্ভবত এই জায়গাটির নাম ‘শিবনিবাস’-এ নামকরণ করেন। লোকেদের বিশ্বাস, এটি মহাদেব নিজেই করেছেন। আবার অনেকে বলেন, এই নামটি তাঁর পুত্র শিবচন্দ্রের নামে রাখা হয়েছিল।মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজত্বকালে (১৭২৮-১৭৮২) বাংলায় সাংস্কৃতিক বিপ্লব হয়েছিল। তাঁর জ্ঞান, শিক্ষা ও সংস্কৃতি তাঁকে বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসে একটি অনন্য স্থান দিয়েছে। তাঁর নবরত্ন (নয়টি রত্ন) সভা এখনও বাংলার সাংস্কৃতিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই মন্দিরের ছাদ ধালু এবং গম্বুজ রয়েছে।তিহ্যবাহী বাঙালি কাঠামো অনুসরণ করে না।

এই মন্দিরে যেমন আছে পোড়ামাটি কাজ, তেমন ইসলামিক ও গথিক কাজও দৃশ্যমান। এখানের সবচেয়ে বড় শিব মন্দিরটি বুড়ো শিব নামে পরিচিত। চূড়া সমেত মন্দিরের উচ্চতা ১২০ ফুট। মন্দিরের ভেতরের শিবলিঙ্গের পূর্ব ভারতের সবচেয়ে উচ্চতম শিবলিঙ্গটি রয়েছে। শিবনিবাসের এখন যেই মন্দিরগুলো রয়েছে তার রয়েছে বিভিন্ন নাম। যেমন – রাজ রাজেশ্বর মন্দির, রগনিশ্বর মন্দির, রাম-সীতা মন্দির, বুড়ো শিব মন্দির।

যদিও দুর্ভাগ্যক্রমে বর্তমানে এখানে ১০৮ টির মধ্যে মাত্র তিনটি মন্দির রয়েছে। যার মধ্যে একটিতে পূর্ব ভারতের বৃহত্তম শিব লিঙ্গ রয়েছে। তাছাড়া এখানের রাম সীতা মন্দিরের সঙ্গে রয়েছে আরও দুটি শিব মন্দির এবং কৃষ্ণচন্দ্রের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ শিবনিবাসের গৌরবময় অতীতের অবশিষ্টাংশ।

।। নদীয়া।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

৫০০ বছরের প্রাচীন পঁচেটেগড় রাজবাড়ীর পঞ্চেশ্বর শিব মন্দির নিয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস ও অলৌকিক ঘটনা।

“মাটির ঢিপির ওপর গরুর বাঁট থেকে ঝরে পড়তো দুধ সেই ঢিপি খনন করতেই উঠে আসে শিবলিঙ্গ, ৫০০ বছরের প্রাচীন পঁচেটেগড় রাজবাড়ীর পঞ্চেশ্বর শিব মন্দির নিয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস ও অলৌকিক ঘটনা”


পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুর ২ নং ব্লকের পঁচেটগড় রাজবাড়ি প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ওড়িষ্যার আটঘর এলাকার বাসিন্দা আদি পুরুষ কালামুরারি দাস মহাপাত্র। তিনি ওড়িশার জগন্নাথ দেবের সামনে নিত্য দিন সঙ্গীত পরিবেশন করতেন তিনি। সেই সঙ্গীতেই মুগ্ধ হয়ে রাজা তাকে মন্দির পরিচালনা র দায়িত্ব দিয়েছিলেন। মন্দিরের পাশে পেয়েছিলেন জমি সেই জমিতে জগন্নাথ দেবের নিত্য সেবার জন্য তুলশি চাষ করতেন। পরবর্তী সময় জাহাঙ্গীর এর নজরে পড়ে যান। তাকে বাংলা, বিহার ও তাম্রলিপ্ত বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব দেন মোঘল সম্রাট। কাজটি তিনি সূচারু ভাবে করতে প্রথমে পটাশপুর এলাকার খাঁড় কল‍্যানপুরে বসবাস করতেন তিনি। সেই সময় রাজা কালু মুরারির মোহন তার রাজ কর্ম চারিদের থেকে জানতে পারেন ওই এলাকার কোনো এক গভীর জঙ্গলের নির্যন এক যায়গায় উচু এক মাটির ঢিপির ওপর প্রতিদিন কিছু গরু গিয়ে দাড়ায় তারপর গরু গুলির বাট থেকে দুধ ঝরে পড়ে মাটির ঢিপির ওপর অলৌকিক এই ঘটনা শুনে রাজা কালুমুরারি নির্দেশ দেন ওই জঙ্গল কেটে পরিস্কার করতে।

তারপর রাজা নিজে দাড়িয়ে থেকে ওই মাটির ঢিপি খনন করেন খনন করার সময় মাটির নিচে পরবর্তী সময়ে উদ্ধার হয় শিবলিঙ্গ। খনন কার্যের সময় আঘাত লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিবলিঙ্গটি আঘাত লেগে ভেঙ্গে যায় এই ঘটনায় চিন্তায় পড়েন রাজা মহাশয়। ডাক পড়ে রাজ পুরোহিতের। রাজ পুরোহিতের নির্দেশে শিবলিঙ্গের চার পাশে বেনারস থেকে এনে আরো চারটি শিবলিঙ্গ বসানো হয়। ঐ শিবলিঙ্গ দিয়েই কালামুরারি দাস মহাপাত্র তৈরি করেন পঞ্চেশ্বর মন্দির। ধিরে ধিরে পঞ্চেশ্বর নামটি প্রচার হতে থাকে পঞ্চেশ্বর থেকেই আজ পঁচেট গ্রামের নাম করন হয় পঁচেট। এখানেই তিনি তৈরি করেন পঁচেটগড় রাজ বাড়ি। রাজ‌ বাড়ীর রাজারা শৈবে পরিনত হন শক্তি আরাধনায় শিবের পুজো করতেন। পরবর্তি কালে শ্রী চৈতন্যদেব যখন পটাশপুর হয়ে পুরী গিয়ে ছিলেন তখন জমিদার বাড়ির সদস্যরা শৈব থেকে বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা নেন।

পরে জমিদার বাড়ির কুলদেবতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন কিশোররাই জিউ। যাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর কার্ত্তিক পূর্নিমা থেকে শুরু হয় রাস উৎসব।‌ এছাড়াও রাজ বাড়ীতে রয়েছে নারায়ন জিউ মন্দির ও শিতলা মন্দির। পঁচেট গড় রাজবাড়ীর এই শিব মন্দিরে শিব চর্তুরদশিতে জল ঢালতে আশে এলাকার অসংখ্য মানুষ। কথিত আছে এই এলাকায় অনাবৃষ্টি দেখা দিলে বৃষ্টি না হলে এই শিব মন্দিরে ১০৮ টি বেলপাতা সহকারে পুজো দিয়ে ১০৮ কশলি জল ঢালা হয় যার ফলে তৎকালীন বৃষ্টি নেমে আসে। এই মন্দির ঘিরে বসছে এবছর ১০ দিনের মেলা মেলা দেখতে ভিড় জমাবেন এলাকার মানুষ।

।। পটাশপুর-পূর্ব মেদিনীপুর।।

Share This