Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বিখ্যাত বিপ্লবী পুলিনবিহারী দাস।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম ও লড়াই, যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত সৃঙ্খল মুক্ত হতে পেরেছভাপেরেছিল। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে  পুলিনবিহারী দাস  ছিলেন একজন অন্যতম বীর ও নির্ভীক বিপ্লবী। পুলিনবিহারী দাস  ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।

পুলিনবিহারী দাস ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বিখ্যাত বিপ্লবী ছিলেন। তিনি ছিলেন ঢাকা অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা।

 

২৪জানুয়ারি, ১৮৭৭ সালে বর্তমান শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার লনসিং গ্রামের শিক্ষিত স্বছল মধ্যবিত্ত দাস পরিবারে নব কুমার দাসের পুত্ররূপে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন পুলিন বিহারী দাস। পারিবারিক বেশ কিছু জমি জমা থাকা সত্ত্বেও তাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যরা চাকুরীজীবী ছিলেন। তার পিতা ছিলেন মাদারিপুর মহকুমার সাব ডিভিসনাল কোর্টের উকিল এবং তার খুল্লতাতরা ছিলেন যথাক্রমে একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও মুন্সেফ। বাল্যকাল থেকেই পুলীনবিহারির শরীরচর্চার দিকে ছিল প্রবল ঝোঁক এবং বাস্তবিক তিনি একজন দক্ষ লাঠিয়ালও ছিলেন।

 

 

বিপিন চন্দ্র পাল এবং প্রমথ নাথ মিত্রের ১৯০৬ সালের সেপ্টেম্বরে দুটি নবনির্মিত রাজ্য, পূর্ববঙ্গ এবং আসামে সফর পুলিন বিহারীর ভাগ্যের জোয়ার ঘুরিয়ে দেয়।  বিদেশী শাসনের শৃঙ্খল থেকে ভারত মাতার মুক্তির জন্য প্রমথ নাথের উদ্দাম আহ্বানে সাড়া দিয়ে, পুলিনবিহারী দাস এগিয়ে আসেন এবং ঢাকায় অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পান।  অবশেষে, একই বছরের অক্টোবরে, তিনি বর্তমান ঢাকা, বাংলাদেশের ৮০ জন তরুণের সাথে একটি অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন।  তিনি খুব ভাল সংগঠক ছিলেন এবং তাই তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে সেই রাজ্যে অনুশীলন সমিতির পাঁচ শতাধিক শাখাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।  তারপর তিনি সেই ঢাকায় ‘ন্যাশনাল স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করলেও আসলে এটি ছিল সশস্ত্র বিপ্লবী দল তৈরির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।  এখানে ছাত্রদের প্রথমে লাঠি খেলা এবং কাঠের তলোয়ার চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।  তারপর তাদের সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করার জন্য খঞ্জর এবং অবশেষে পিস্তল এবং রিভলবার ব্যবহার করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

 

তিনি ঢাকার সাবেক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ব্যাসিল কোপলেস্টন অ্যালেনকে অপসারণের জন্য একটি জবরদস্তিমূলক পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন।  ২৩ ডিসেম্বর ১৯০৭-এ, অ্যালেন যখন ইংল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার জন্য গোল্যান্ড স্টেশনে পৌঁছান, তখন তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে অল্পের জন্য রক্ষা পান।  কয়েকদিন পর, যখন চার শতাধিক মুসলিম দাঙ্গা হিন্দু বিরোধী স্লোগান দিয়ে পুলিন বিহারীর বাড়িতে হামলা চালায়, তখন তিনি মাত্র কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে সাহসিকতার সাথে দাঙ্গাকারীদের মোকাবিলা করেন।
১৯০৮ সালের প্রথম দিকে, পুলিন বিহারী দাস বাহরা ডাকাত সংগঠিত করেন।  দিনের আলোয় তিনি একদল বিপ্লবীর সাথে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানাধীন বড় জমিদারের বাড়িতে রোমাঞ্চকর ডাকাতি করেন এবং লুট করা অর্থ অস্ত্র ও গোলাবারুদ কিনতে ব্যয় করেন।
একই বছর তিনি ভূপেশ চন্দ্র নাগ, শ্যাম সুন্দর চক্রবর্তী, কৃষ্ণ কুমার মিত্র, সুবোধ মল্লিক, অশ্বিনী দত্তের সাথে গ্রেফতার হন এবং মন্টগোমারি জেলে নিক্ষিপ্ত হন কিন্তু শত অত্যাচার, শত প্রহারও তার বিপ্লবী প্রকৃতিকে দমন করতে পারেনি।  1910 সালে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠ থেকে বেরিয়ে এসে তার বিপ্লবী কার্যক্রম আবার শুরু হয়।  এই সময়েই প্র্যাকটিস সোসাইটির ঢাকা দল কলকাতা শাখার পরিচালনা শুরু করে।  যদিও প্রমথনাথ মিত্রের মৃত্যুর পর এই দুই দল আলাদা হয়ে যায়।

 

১৯১০ সালের জুলাই মাসে ঢাকা ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ৪৬ জন বিপ্লবীসহ পুলিন বিহারী দাসকে গ্রেফতার করা হয়।  পরে আরও ৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়।  বিচারে পুলিনবাবুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং সেলুলার জেলে স্থানান্তরিত করা হয় যেখানে তিনি হেমচন্দ্র দাস, বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, বিনায়ক সাভারকরের মতো বিখ্যাত বিপ্লবীদের সান্নিধ্যে আসেন।  তিনি এবং ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী উভয়েই প্রাখ্য সমিতির প্রথম দিকের নেতা ছিলেন যারা সেলুলার জেলে বন্দী ছিলেন।
১৯১৮ সালে পুলিনের সাজা কমিয়ে দেওয়া হয় এবং তাকে গৃহবন্দী করা হয় এবং ১৯১৯ সালে তিনি সম্পূর্ণরূপে মুক্তি পান এবং মুক্তি পাওয়ার পর তিনি সমিতির কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার চেষ্টা করেন, কিন্তু সরকার তার সংগঠন এবং এর সদস্যদের এখানে-ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিষিদ্ধ করে।  .  তারপরে নাগপুর এবং পরে কলকাতায় কংগ্রেস অধিবেশনে অবশিষ্ট বিপ্লবীরা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অসহযোগ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন কিন্তু পুলিন বিহারী দাস কখনই মোহনদাসের আদর্শের সঙ্গে আপস করতে চাননি এবং তাঁকে তাঁর নেতা হিসেবে মেনে নিতে পারেননি।  .  সেই সময়ে তার সমিতি নিষিদ্ধ হওয়ায় তিনি ১৯২০ সালে ভারত সেবক সংঘ নামে আরেকটি দল গঠন করেন। এরপর তিনি ব্যারিস্টার এস.আর.দাসের পৃষ্ঠপোষকতায় দুটি সাময়িকী ‘হক কথা’ এবং ‘স্বরাজ’ প্রকাশ করেন এবং সেগুলিতে গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের সমালোচনা করেন।  গোপনে সমিতির কাজ চললেও পরে সমিতির সঙ্গে তার বিরোধ প্রকাশ্যে আসে।  এরপর তিনি সমিতির সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং ১৯২২ সালে ভারত সেবক সংঘ ভেঙে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন।  ১৯২৮ সালে, তিনি কলকাতার মেশুয়া বাজারে বাঙালি বায়হম সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন।  এটি ছিল শারীরিক প্রশিক্ষণের একটি কেন্দ্র এবং কার্যত একটি আখড়া যেখানে যুবকদের লাঠি চালানো, তলোয়ার চালানো এবং কুস্তি শেখানো হত।

তিনি বিবাহিত ছিলেন এবং তার তিন পুত্র এবং দুই কন্যা ছিল। পরবর্তীকালে এক যোগীর সংস্পর্শে আসেন এবং তার মধ্যে ত্যাগের বাসনা জাগ্রত হয়।

 

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ওনার সম্মানে পুলিন বিহারী দাস স্মৃতি পদক নামে একটি পদক প্রচলন করেছে।

 

১৭ আগস্ট, ১৯৪৯ সালে তিনি প্রয়াত হন।।

 

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা ও নেতাজি।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গড়ে ওঠার পেছনে নেতাজির কি কোনো ভূমিকা ছিল? তাই নিয়ে একটু ইতিহাস খোঁজার ক্ষুদ্র প্রয়াস…

 

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা ও নেতাজি—

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে মেদিনীপুর জেলার এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। সময়টা বিংশ শতাব্দীর চারের দশক। স্বাধীনতালাভের জন্য মরীয়া দেশবাসী। শুরু হয়েছে ভারত ছাড়ো আন্দোলন। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে আন্দোলনের ঢেউ। সেই ঢেউ আছড়ে পড়ে মেদিনীপুরেও। বিয়াল্লিশের স্বাধীনতা আন্দোলনে জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল স্বাধীন তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা। সেই সময় দেশের কয়েকটি জায়গায় এরকম স্বাধীন সরকার গড়ে উঠেছিল। কিন্তু স্থায়িত্ব এবং কর্ম পদ্ধতির নিরিখে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

এখন প্রশ্ন হল কেন এই তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল? প্রথমত বলার জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা হঠাৎ কোনো আবেগের বহিঃপ্রকাশ নয়। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় কর্মসূচির অঙ্গ ছিল এটি। তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার কারণ বা লক্ষ্য হিসেবে মূলত দুটি প্রেক্ষাপটের কথা বলা যেতে পারে। প্রথমত, জেলার সমসাময়িক পরিস্থিতি। দ্বিতীয়ত, সুদূরপ্রসারী ভাবনাচিন্তা। দুই ভাবনার একটাই সুর ছিল ব্রিটিশ দাসত্বমুক্ত স্বাধীন সরকার।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন চরম আকার ধারন করেছে। জার্মান, জাপান অপ্রতিহত গতিতে এগিয়ে চলেছে। মিত্রশক্তি বেশ চাপে। সেই সময় নানান দেশ থেকে ভারতকে স্বাধীনতা দেওয়ার চাপ আসছিল। ১৯৪২-এর ১১ মার্চ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ঘোষণা করা হয় যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ভারতকে সায়ত্ব শাসনের অধিকার দেওয়া হবে। এই ব্যাপারে আলোচনার জন্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসকে ভারতে পাঠানো হয়। কিন্তু ক্রিপসের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ভারতীয় নেতৃত্ববৃন্দ। কংগ্রেসের সাথে ব্রিটিশ সরকারের সম্পর্ক খুব খারাপ হয়। মহাত্মা গান্ধি বলেন, ‘ক্রিপস মিশন একটি দেউলিয়া ব্যাঙ্কের মেয়াদ উত্তীর্ণ চেক।’ ক্রিপস ব্যর্থ হয়ে দেশে ফিরে যান। একটা মিথ্যে বার্তা জোর করে প্রচার করে দেওয়া হয়, ভারতীয়রা সায়ত্ব শাসনের অনুপযুক্ত। এমন বক্তব্য জাতীয় নেতৃবর্গের মনে ক্ষাভের সঞ্চার করে। স্বাধীনতালাভের জন্য কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি ‘ভারত ছাড়ো’ প্রস্তাব গ্রহন করে।

প্রসঙ্গত বলার ‘ভারত ছাড়ো’ প্রস্তাব প্রথম দিয়েছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। ১৯৩৯-এ ত্রিপুরী কংগ্রেসে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ‘ভারত ছাড়ো’ প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু মূলত গান্ধিজির আপত্তিতে সেই প্রস্তাব গৃহীত হয়নি। আন্দোলনের ধারা ও কর্মপন্থা নিয়ে মতানৈক্যের কারণে গান্ধিজির সঙ্গে সুভাষের বিরোধ তখন চরমে।

সেই সময় সর্বভারতীয় নেতা হিসাবে যে দুজনের নাম উল্লেখযোগ্য তাঁরা হলেন মহাত্মা গান্ধি ও নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। তরুণ, তেজদীপ্ত, দুঃসাহসী সুভাষ দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ বিশেষ করে তরুণ যুব শক্তির কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। দিনে দিনে তাঁর সেই জনপ্রিয়তা বাড়ছিল। ১৯৩৮-এর হরিপুরা কংগ্রেসে তাঁর সভাপতি নির্বাচনে গান্ধিজির ভূমিকা ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে গান্ধিজির নীতি ও কার্যকলাপ নিয়ে তাঁর সঙ্গে মতানৈক্য শুরু হয়। তাঁদের মধ্যে বিরোধ বাড়তে থাকে। কিন্তু নেতাজি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন যে ১৯৩৯-এ ত্রিপুরী কংগ্রেসে গান্ধিজির তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও তাঁর মনোনীত প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে হারিয়ে সুভাষচন্দ্র সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু নানাবিধ বিরোধিতার কারণে সুভাষ বুঝতে পারেন কংগ্রেসের মধ্যে থেকে তাঁর পক্ষে লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বীতশ্রদ্ধ সুভাষ সভাপতির পদে পদত্যাগ করে এবং ওই বছরের ৩ মে ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করেন।

যাই হোক, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি যখন ‘ভারত ছাড়ো’ প্রস্তাব গ্রহন করে সুভাষ তখন বিদেশে। বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নেতাজি বুঝেছিলেন ইংরেজদের দেশ থেকে তাড়ানোর এটাই সুবর্ণ সুযোগ। তার জন্য চাই সশস্ত্র আন্দোলন। নেতাজি এটাও বুঝেছিলেন পরাধীন ভারতবর্ষের বুকে বসে সে কাজ করা সম্ভব নয়। সুভাষচন্দ্র তখন নজরবন্দী অবস্থায় আছেন। ১৯৪০-এর ১১ জানুয়ারি ব্রিটিশ পুলিশকে ধোঁকা দিয়ে তিনি বিদেশের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন। তাঁর সেই যাত্রা যে কোনো রোমহর্ষক কাহিনিকে হার মানায়। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল জার্মান এবং জাপানের সহযোগিতা নিয়ে সেনাবাহিনি গঠন করে ভারতবর্ষে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা। দেশ থেকে ছদ্মবেশে বেরিয়ে নানা পথ পেরিয়ে তিনি জার্মান যান। সেখান থেকে তিনি জাপানে যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান তখন অপ্রতিহত গতিতে এগোচ্ছে। ইতিমধ্যে সিঙ্গাপুর দখল করেছে তারা। রাসবিহারী বসু সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ বাহনি গঠন করেছেন। নিজে অসুস্থ থাকায় সেই সময় তিনি এমন একজন মানুষের খোঁজ করছিলেন যিনি সেই সেনাবাহিনির দায়িত্ব নিতে পারবে। তাঁর আমন্ত্রণে সুভাষ সিঙ্গাপুরে যান এবং রাসবিহারী বসু তাঁর হাতে আজাদ হিন্দ বাহিনির দায়িত্ব তুলে দেন। সুভাষ আপন দক্ষতায় এই বাহিনিকে মজবুত করে গড়ে তোলেন। শুধু তাই নয় পরবর্তী সময়ে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ অক্টোবর তিনি আজাদ হিন্দ সরকার গঠন করেন। তিনি ছিলেন এই স্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী। জার্মানি, ইতালি, জাপান সহ আরও ছয়টি দেশ এই স্বাধীন সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।

‘ভারত ছাড়ো’ প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর গান্ধিজি দেশবাসীকে নির্দেশ দেন এরপর থেকে তারা নিজেদের স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মনে করবে এবং সেইভাবে কাজ করবে। তিনি ডাক দেন ‘ডু অর ডাই’–হয় স্বাধীনতা নয় মৃত্যু। তাঁর এই আহ্বান উত্তাল তরঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। ব্রিটিশ সরকার গান্ধিজি সহ বেশকিছু নেতাকে গ্রেপ্তার করলে সারা দেশ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। সেই ক্ষোভের আগুন স্পর্শ করে মেদিনীপুরের বিপ্লবীদেরও। গান্ধিজির অহিংস নীতি মেনে জেলার বিপ্লবীরা এই আন্দোলনে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় জোরদার আন্দোলন। এমনকি ছাত্ররাও স্কুল ত্যাগ করে এই আন্দোলনে অংশগ্রহন করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।

এটা অনস্বীকার্য যে জেলার বিপ্লবীরা গান্ধিজির ডাকে সাড়া দিয়ে এই আন্দোলনে সর্বোতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তবে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহন ও গভীরভাবে এই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ার পেছনে নেতাজীরও পরোক্ষ অবদান ছিল বললেও ভুল হবে না। আগেই বলেছি, নেতাজি তখন দেশ বরেণ্য নেতা। যুবশক্তির আইকন। তাদের অনুপ্রেরণা। গান্ধিজির পাশাপাশি তিনিও দেশবাসীর মনে আলাদা একটা জায়গা করে নিয়েছেন। মেদনীপুরবাসীর মধ্যেও নেতাজীর গভার প্রভাব ছিল। সেটা আরও বৃদ্ধি পায় নেতাজির মেদিনীপুর আসার পর। ১৯৩৮-এর ১১ এপ্রিল তমলুকে সভা করতে আসেন সুভাষ। ব্রিটিশ সরকার নানাভাবে তাঁর সভা বানচাল করার চেষ্টা করেন। শেষপর্যন্ত তমলুক রাজবাড়ির বংশধর সুরেন্দ্র নারায়ণ রায়ের সহায়তায় রাজ পরিবারের আমবাগান-গোলাপবাগন সংলগ্ন খোষরঙের মাঠে এই সভা হয়। সুভাষচন্দ্র স্বরাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জেলার মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তাঁর ভাষণ মানুষের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। যা বিয়াল্লেশর আন্দালনে গান্ধিজির আহ্বানের পর বিপ্লবীদের মনে অনুঘটকের কাজ করেছিল।

ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে সুভাষের দুঃসাহিসক অভিযান এমনিতেই ভারতবাসীর মনে বিরাট প্রভাব ফেলেছিল। তাঁর জার্মানিতে পৌঁছোনো, আজাদ হিন্দ সংঘ গঠন, সেখান থেকে বেতারে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ অন্যান্য জায়গার মতো এই জেলার বিপ্লবীদেরও অনুপ্রাণিত করেছিল। এই সময় সুভাষচন্দ্রের ওপর গান্ধিজির মনোভাবেরও পরিবর্তন লক্ষিত হয়। তাঁর দেশপ্রেম, নিষ্ঠা, তেজ, দুঃসাহসিকতা গান্ধিজিকে মুগ্ধ করে। সুভাষচন্দ্রের বিদেশের কার্যকলাপ, দেশবাসীর প্রতি আহাবন জেলার কংগ্রেস কর্মীদের ব্যাপকভাবে নাড়া দেয় যা তাদের ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে প্রবলভাবে জড়িয়ে পড়তে উৎসাহিত করেছিল, একথা বললে বোধহয় ভুল বলা হবে না।

যাই হোক, ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার পর গান্ধিজির আহিংস নীতি মেনে জেলার কংগ্রেস কর্মীরা আন্দোলন শুরু করেন। সতীশচন্দ্র সামন্ত, অজয়কুমার মুখোপাধ্যায়, কুমারচন্দ্র জানা, সুশীলকুমার ধাড়া প্রমুখ যোগ্য নেতৃবর্গের দক্ষ নেতৃত্বে সেই আন্দোলন ক্রমশ জোরদার হতে থাকে। ইতিমধ্যে সুশীলকুমার ধাড়ার নেতৃত্বে গড়ে ওঠে বিদ্যুৎ বাহিনী। পরে মহিলাদের নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন ভগিনী সেনা। ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের অঙ্গ হিসেবে ১৯৪২-এর ২৯ সেপ্টেম্বর থানা ঘেরাও কর্মসূচি নেওয়া হয়। এই কর্মসূচিতে তমলুক, মহিষাদল, সুতাহাটা, নন্দীগ্রাম থানা মিলে মোট ৩৬ জন শহীদ হন। থানা ঘেরাও কর্মসূচি পুরোপুরি সফল না হলেও তা ব্রিটিশ শাসকদের নাড়িয়ে দেয়। ভয় পেয়ে যায় তারা। শুরু করে দমন পীড়ন নীতি। গ্রামের পর গ্রাম লুঠ করতে থাকে। পুরুষদের ওপর শুরু হয় অমানবিক অত্যাচার। বৃদ্ধ এবং শিশুরাও বাদ যান না। মহিলারা ধর্ষিতা হতে থারেন। মানুষের অবস্থা যখন বিপর্যস্ত তখন মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো নেমে আসে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ১৯৪২-এর ১৬ অক্টোবর ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে। সঙ্গে বন্যা। বহু মানুষ মারা যায়। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয় মানুষ। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে সরকার মানুষের পাশে দাঁড়ানো দূরে থাক, তাদের সঙ্গে অত্যন্ত বর্বর, অমানবিক চালিয়ে যেতে থাকে। আগের মতোই লুঠপাট, ঘরবাড়ি পুরোনো এসব চলতে থাকে। সেই সঙ্গে চলতে থাকে পুরুষদের ওপর অত্যাচার, মহিলাদের ধর্ষণ। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে তাদের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করতে থাকে।

শাষকের অত্যাচার আর বর্বরতা জেলাবাসীর মনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। ইংরেজদের ভয়ে বিপ্লবীরা পিছিয়ে যান না। শাষকের রক্তচক্ষুকে পরোয়া না করে, তাদের শাষনকে অস্বীকার করে এবং তাদের উচিত শিক্ষা দিতে তাঁরা এক বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪২-এর ১৭ ডিসেম্বর তমলুক, সুতাহাটা, মহিষাদল ও নন্দীগ্রাম–এই চারটি থানা নিয়ে গঠিত হয় স্বাধীন তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। সতীষচন্দ্র সামন্ত হন এই স্বাধীন সরকারের প্রথম সর্বাধিনায়ক। সুশীলকুমার ধাড়ার তৈরি ‘বিদ্যুৎ বাহিনি’ এই জাতীয় সরকারের জাতীয় সেনা বিহিনীর মর্যাদা পায়। তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের পাশাপাশি থানা জাতীয় সরকারও গড়ে ওঠে। ১৯৪৪-এর ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই স্বাধীন সরকার স্থায়ী ছিল।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার এই ছিল অন্যতম প্রেক্ষাপট। তবে এই সরকার প্রতিষ্ঠায় পরোক্ষভাবে জড়িয়ে ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। পূর্বেই বলেছি, তরুণ তেজদীপ্ত সুভাষ বিপ্লবীদের কাছে ছিলেন অনুপ্রেরণা। যে কথা শোনা যায় জাতীয় সরকারের অন্যতম সেনানী রাধাকৃষ্ণ বাড়ীর কথায়। তাঁর লেখা বই ‘তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার’-এর এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, “…প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠাকে প্রেরণা যুগিয়েছিল।” সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ বাহিনির দায়িত্ব নেওয়ার পর সুভাষচন্দ্র সেই বাহিনিকে দক্ষভাবে গড়ে তোলেন। তাঁর কার্যকলাপ ভারতে এসে পৌঁছোতে থাকে। এই জেলার বিপ্লবীরাও সেকথা জানতে পারেন। নিয়মিত তারা তাঁর কার্যকলাপের দিকে নজর রাখছিলেন। রেডিও মারফৎ দেশবাসীর প্রতি তাঁর বার্তা তারাও নিয়মিত শুনতে থাকেন। তাঁর কাজ, বক্তব্য জেলার বিপ্লবীদের উদ্বুদ্ধ করতে থাকে। তারা বুঝতে পারেন সুভাষচন্দ্র যে কোনো সময় সেনাবাহিনি নিয়ে ভারতবর্ষে ইংরেজদের আক্রমণ করবেন। তারা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন, নেতাজী যদি সেনাবাহিনি নিয়ে ভারতে পৌঁছোতে পারেন তাহলে দেশের স্বাধীনতাকে কেউ আটকাতে পারবে না।

নেতাজির সেনাবাহিনি নিয়ে ভারতবর্ষ আক্রমণের ব্যাপারটা জেলার বিপল্পবীদের নাড়িয়ে দেয়। সেই সময় এমনটা মনে করা হচ্ছিল যে নেতাজি জলপথে ভারতে প্রবেশ করবেন। এত বড় সেনাবাহিনি নিয়ে সেটাই তাঁর পক্ষে বেশি সুবিধাজনক। সেক্ষেত্রে মেদিনীপুর কিংবা উড়িস্যার সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা হল অবতরণের আদর্শ জায়গা। ইংরেজরাও তেমনটা আশঙ্কা করছিলেন। তাই মেদনীপুর ও উড়িস্যার উপকূলবর্তী এলাকায় তাঁরা এমন কিছু নীতি গ্রহন করে যাতে নেতাজি এই পথ দিয়ে ভারতে ঠিকঠাক পৌঁছোতে না পারেন কিংবা পৌঁছোতে পারলেও যাতে প্রচণ্ড বাধার সম্মুক্ষীন হন। এই ব্যাপারটাও জেলার বিপ্লবীদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। ইংরেজদের দেশ থেকে তাড়ানোর জন্য মরীয়া বিপ্লবীরা অপেক্ষা করছিলেন সেনাবাহিনী নিয়ে সুভাষের দেশে আসার। তারা বুঝতে পারেন দেশে প্রবেশ করার পর নেতাজী ও তাঁর সেনাবাহিনীর জন্য নিরাপদ জায়গা দরকার। নেতাজির জন্য মুক্তাঞ্চল তৈরি করার ভাবনা তাদের জাতীয় সরকার গঠনে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

এই সরকার গঠনের পেছনে আরও একটা কারণ ছিল। একটি জাতীয় সরকার গঠন মানে তার একটি উন্নত ও দক্ষ জাতীয় সেনা বাহিনি থাকবে। তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারেরও তা ছিল। জাতীয় সরকারের নেতাদের উদ্দেশ্য ছিল সেই সেনাবাহিনি দিয়ে নেতাজীকে সাহায্য করা। নেতাজির ‘দিল্লি চলো’ ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর বাহিনির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া। এই বক্তব্য আমরা পাই সুশীলকুার ধাড়ার আত্মজীবনী ‘প্রবাহ’ গ্রন্থে।

সময়টা ১৯৪৫। ততদিনে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের অবসান হয়েছে। আরও অনেক নেতার মতো গ্রেপ্তার হয়েছেন সুশীলকুমার ধাড়া। তখন তিনি বন্দী ছিলেন মেদিনীপুর জেলে। সেখানে এক বিচারাধীন বন্দীর সঙ্গে পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা হয় তাঁর। এই বিচারাধীন বন্দী ছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনি গুপ্তচর ড. প্রফুল্ল দত্ত। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনের এক জায়গায় সুশীলবাবু লিখেছেন—
“…আচ্ছা, আপনারা কি সমুদ্রপথে আসতে পারতেন না – কেন এই গহন পথে গেলন? আমরা কতদিন আশা করেছি – প্রতীক্ষা করেছি। আর সেই জন্য এই মুক্তাঞ্চল তৈরি করে রেখেছিলাম যে আপনাদের সকলকে একটু বিশ্রাম করতে দেব – দীর্ঘ ক্লান্তি দূর করার জন্য, আপনাদের পেছনে মার্চ করে দিল্লি যাব – ভাবতাম যে, বলব –
“আমি তোমার যাত্রী দলের রব পিছে
স্থান দিও হে আমায় তুমি সবার নীচে।”

সুশীলকুমার ধাড়ার এই বক্তব্য থেকে দুটি জিনিস পরিস্কার। প্রথমত, নেতাজির আদর্শ ও কর্মপদ্ধতির দ্বারা তাঁরা গভীর ভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং তাঁর দেখানো পথেই দেশের স্বাধীনতার লড়াই লড়তে চেয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, নেতাজির সেনাবাহিনির জন্য একটি মুক্তাঞ্চল তৈরি করে রাখা ছিল স্বাধীন তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্দেশ্য।

সবকিছু বিশ্লেষণ করলে এটা পরিস্কার হয় যে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গঠনের পেছনে অন্যতম কারণ ছিলেন নেতাজি। দেশমাতৃকার শৃঙ্ক্ষল মোচনের জন্য সুভাষ নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছুটে বেড়িয়েছেন, সেনাদল গঠন করেছেন, গঠন করেছেন আজাদ হিন্দ সরকার। তাঁর দেশপ্রেম, সাহস, বীরত্ব কর্মপদ্ধতি দেশের এক বিশাল অংশকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। তাই তিনি যখন সুদূর সিঙ্গাপুরে, মেদিনীপুরের বিপ্লবীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ পর্যন্তও নেই, তখনও কেবল তাঁর লড়াইয়ের পথ সুগম করতে জেলার বিপ্লবীরা স্বাধীন সরকার গঠন করেছিলেন।

এই প্রসঙ্গে একটি কথা বলার, জাতীয় সরকারের বিপ্লবীরা যে অহিংসার পথ ছেড়ে হিংসার পথ ধরেছে, সেই নিয়ে জেলার কংগ্রেস কর্মীরা গান্ধিজির কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। যে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গান্ধিজি সশরীরে জেলায় এসেছিলেন। বেশ কয়েকদিন ছিলেন মহিষাদলে। গান্ধিজির কাছে সতীশবাবুরা সত্যিটা স্বীকার করেছিলেন। কোন পরিস্থিতিতে তাঁরা হিংসার পথ ধরতে বাধ্য হয়েছিলেন সেটা ব্যাখ্যা করেছিলেন। তাদের ব্যাখ্যায় গান্ধিজি সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। তাদের বীরত্বের প্রশংসা করেছিলেন। আবার কোনো কোনো মতে গান্ধিজি কোনোভাবেই তাদের এই হিংসার পথ সমর্থন করেননি। গান্ধিজির মতামত যাই হোক না কেন, এটা পরিস্কার জাতীয় সরকারের বিপ্লবীরা গান্ধিজির অহিংস পথ থেকে সরে গিয়েছিলেন। তাহলে প্রশ্ন, কার দেখানো পথে তাঁরা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন? জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৪২-এর ১৭ ডিসেম্বর। তারও প্রায় সাড়ে তিনমাস আগে নেতাজি দায়িত্ব নিয়েছেন আজাদ হিন্দ বাহিনির। নিজেকে প্রস্তুত করেছেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার। নেতাজি বিশ্বাস করতেন সশস্ত্র আন্দোলন ছাড়া ইংরেজদের এই দেশ থেকে তাড়ানো সম্ভব নয়। ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব’, এমন আত্মবিশ্বাস ভরা সুরে দেশবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছেন সেই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে। জাতীয় সরকারের বিপ্লবীরাও সেই সশস্ত্র আন্দোলনের পথে এগিয়ে গিয়েছিলেন। তাই একথা বললে বোধহয় ভুল বলা হবে না, গান্ধিজির দেখানো পথে আন্দোলন শুরু করলেও তাঁরা শেষপর্যন্ত সেখান থেকে সরে গিয়ে সুভাষের নীতি, আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আন্দোলনের গতি এগিয়ে নিয়ে গেছে।

সব শেষে, একথাই বলা যেতে পারে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের সঙ্গে সরাসরি কোনোভাবে যুক্ত না থাকলেও এই সরকার প্রতিষ্ঠার পেছনে পরোক্ষে এবং অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন নেতাজি।

 

কলমে : সৌরভকুমার ভূঞ্যা—

Share This
Categories
প্রবন্ধ

কবি নবীনচন্দ্র সেন – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নবীনচন্দ্র সেন চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার অন্তর্গত পশ্চিম গুজরার (নোয়াপাড়া) সুপ্রসিদ্ধ প্রাচীন জমিদার পরিবারে ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৮৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। নবীনচন্দ্র সেন  বাংলা সাহিত্যের একজন উল্লেখযোগ্য কবি। তার পিতার নাম গোপীমোহন রায় এবং মাতার নাম রাজরাজেশ্বরী।

 

 

 

পাঁচ বছর বয়সে পড়াশুনা শুরু করেন।  ১৮৬৩ সালে, তিনি চট্টগ্রাম স্কুল (বর্তমানে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল) থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।  এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যান কলকাতায়।  ১৮৬৫ সালে, তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়), কলকাতা থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এফএ এবং ১৮৬৯ সালে জেনারেল অ্যাসেম্বলি ইনস্টিটিউশন (স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে বিএ পাস করেন।

 

 

 

মাত্র একুশ বছর বয়সে তিনি তার কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত হন।  প্রথমত, ১৮৬৮ সালের ১৭ জুলাই তিনি বেঙ্গল সেক্রেটারিয়েটে সহকারী হিসেবে যোগ দেন।  ১৮৬৯ সালের ২৪ জুলাই তিনি যশোরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর পদে নিযুক্ত হন।  কর্মজীবনে তিনি বাংলা, বিহার, ত্রিপুরার অনেক জায়গায় দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।  তিনি দুই দফায় মোট আট বছর ফেনীতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।  এই সময়ে, তিনি অনন্য দক্ষতায় একটি বনভূমিকে একটি সুন্দর শহরে পরিণত করেছিলেন।  ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ফেনী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।  যা বর্তমানে ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়।

 

 

 

মহাকাব্যের মধ্যে রয়েছে—-

 

কুরুক্ষেত্র, পলাশির যুদ্ধ, রৈবতক,  প্রভাস।

 

নবীনচন্দ্রের অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুই ভাগ—–

 

খ্রীস্ট, অমিতাভ, অমৃতাভ , ক্লিওপেট্রা, অমিতাভ, অমৃতাভ, রঙ্গমতী।

 

 

 

মৃত্যু—-‐

 

২৩ জানুয়ারি, ১৯০৯ সালে তিনি প্রয়াত হন।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

পরাক্রম দিবস ও নেতাজি জয়ন্তী – একটি বিশেষে পর্যালোচনা।

সূচনা——

 

 

২৩শে জানুয়ারী পালিত, পরাক্রম দিবস স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিনে স্মরণ করা হয়।  এই বার্ষিক উদযাপন একটি ঐতিহাসিক ঘটনার চেয়ে বেশি;  এটি এমন একজন নেতার চিরস্থায়ী উত্তরাধিকারের প্রমাণ যাঁর জীবন নির্ভীকতা এবং স্বাধীনতার অন্বেষণে অটল অঙ্গীকারকে মূর্ত করেছে।

 

 

সুভাষ চন্দ্র বসু জয়ন্তী ২০২৪ এর থিম—

সুভাষ চন্দ্র বসু জয়ন্তী ২০২৪-এর থিম হল “নেতাজি-দ্য ইন্সপিরেশন ফর এ নিউ ইন্ডিয়া”।  এই থিমটি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর উত্তরাধিকারকে সম্মান করে, জাতীয় বীর যিনি লক্ষ লক্ষ ভারতীয়কে তাদের দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।  স্বাধীনতার প্রতি তার দৃঢ় সংকল্প, সাহস এবং অটল প্রতিশ্রুতি প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে, স্ব-শাসন অর্জনের জন্য তাদের ত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

সুভাষ চন্দ্র বসু জয়ন্তীর তাৎপর্য—-

সুভাষ চন্দ্র বসু জয়ন্তী হল একটি ভারতীয় জাতীয় ছুটির দিন যা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মবার্ষিকী স্মরণ করে, একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, জাতীয়তাবাদী এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী যিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।  প্রতি বছর ২৩ জানুয়ারী, নেতাজি বসুর দেশপ্রেমের দৃঢ় চেতনা, মুক্তির প্রতি তাঁর অটল ভক্তি এবং তাঁর দৃঢ় চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পরাক্রম দিবস পালন করা হয়।

 

 

সুভাষ চন্দ্র বসু জয়ন্তীর ইতিহাস—

পরাক্রম দিবসের উৎসটি ২০২১ সালে চিহ্নিত করা যেতে পারে যখন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৪ তম জন্মদিনকে ভারত সরকার একটি জাতীয় ছুটি হিসাবে মনোনীত করেছিল।  ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বোসের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।  ২৪ জানুয়ারী, ২০২১ তারিখে, ভারতে প্রথম পরক্রম দিবস পালন করা হয়েছিল বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে।  বেশ কিছু পাবলিক কার্যক্রম এবং শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, ভারত সরকার আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

 

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

বীর বিপ্লবী রাসবিহারী বসু র – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ভারতে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের একজন অগ্রগণ্য বিপ্লবী নেতা এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির অন্যতম সংগঠক ছিলেন রাসবিহারী বসু। রাসবিহারী বসু ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দের ২৫ শে মে অধুনা পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলায় অবস্থিত তার পৈতৃক গ্রাম সুবলদহে জন্মগ্রহণ করেন৷ পিতা বিনোদবিহারী বসু এবং তার মায়ের নাম ভুবনেশ্বরী দেবী। তিনকড়ি দাসী ছিলেন তার ধাত্রী মাতা৷ তার পিতামহ নাম ছিলেন কালীচরণ বসু৷
এই বসু পরিবারের আদিবাস ছিল অধুনা পূর্ব বর্ধমান জেলার সুবলদহেতে৷ তাঁদের পূর্বপুরুষ নিধিরাম বসুই সর্বপ্রথম সুবলদহে বসবাস শুরু করেন৷
রাসবিহারী বসুকে তার নামটি দিয়েছিলেন পিতামহ কালীচরণ বসু। গর্ভাবতী অবস্থায় তার মা ভুবনেশ্বরী দেবী কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

 

 

তাই সুবলদহ গ্রামের পশ্চিম পাড়াতে অবস্থিত বিষ্ণুমন্দির বা কৃষ্ণ মন্দিরে তার নামে প্রার্থনা(মানত) করা হয়েছিল যাতে তিনি(ভুবনেশ্বরীদেবী) সুস্থভাবে সন্তানের জন্ম দেন, তাই পরবর্তীকালে তার নাতির নাম রাখেন, কৃষ্ণের অপর নামে। রাসবিহারী হল কৃষ্ণের অপর নাম। রাসবিহারী বসু এবং তার ভগিনী সুশীলা সরকারের শৈশবের বেশির ভাগ সময় কেটেছিল সুবলদহ গ্রামে। তারা সুবলদহ গ্রামে বিধুমুখী দিদিমণির ঘরে বসবাস করতেন। বিধুমুখী ছিলেন একজন বাল্যবিধবা, তিনি ছিলেন কালিচরণ বসুর ভ্রাতৃবধূ। রাসবিহারী বসুর শৈশবের পড়াশোনা সুবলদহের গ্রাম্য পাঠশালায় (বর্তমানে সুবলদহ রাসবিহারী বসু প্রাথমিক বিদ্যালয়) ঠাকুরদার সহচর্যে সম্পন্ন হয়েছিল। রাসবিহারী বসু শৈশবে লাঠিখেলা শিখেছিলেন সুবলদহ গ্রামের শুরিপুকুর ডাঙায়। তিনি সুবলদহ গ্রামে তার ঠাকুরদা কালিচরণ বসু এবং তার শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী গল্প শুনে তার বিপ্লবী আন্দোলনের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন গ্রামবাসীদের নয়নের মণি। শোনা যায় যে, তিনি ইংরেজদের মূর্তি তৈরি করতেন এবং লাঠি খেলার কৌশলে সেই মূর্তিগুলোকে ভেঙে ফেলতেন। তিনি ডাংগুলি খেলতে খুব ভালোবাসতেন। তিনি শৈশবে সুবলদহ গ্রামে ১২ থেকে ১৪ বছর ছিলেন, এছাড়াও তিনি পরবর্তীকালে ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে প্রয়োজনে সুবলদহ গ্রামে এসে আত্মগোপন করতেন। পিতা বিনোদবিহারী বসুর কর্মক্ষেত্র ছিল হিমাচল প্রদেশের সিমলায়। তিনি সুবলদহ পাঠশালা, মর্টন স্কুল ও ডুপ্লে কলেজের ছাত্র ছিলেন। জীবনের প্রথম দিকে তিনি নানা বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং আলিপুর বোমা বিস্ফোরণ মামলায় ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে অভিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে তিনি দেরাদুনে যান এবং সেখানে বন্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে হেড ক্লার্ক হিসেবে কাজে যোগদান করেন। দেরাদুনে তিনি গোপনে বাংলা, উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন।বিপ্লবী হিসেবে তার অন্যতম কৃতিত্ব বড়লাট হার্ডিঞ্জের ওপর প্রাণঘাতী হামলা। বিপ্লবী কিশোর বসন্ত বিশ্বাস তার নির্দেশে ও পরিকল্পনায় দিল্লিতে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে বোমা ছোড়েন হার্ডিঞ্জকে লক্ষ্য করে। এই ঘটনায় পুলিশ তাকে কখনোই গ্রেপ্তার করতে পারেনি। সমগ্র ভারতব্যাপী সশস্ত্র সেনা ও গণ অভ্যুত্থান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন রাসবিহারী বসু। জনৈক বিশ্বাসঘাতকের জন্যে সেই কর্মকাণ্ড ফাঁস হয়ে যায়। বহু বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় তিনি ব্রিটিশ সরকারের সন্দেহভাজন হয়ে ওঠেন এবং শেষ পর্যন্ত দেশত্যাগে বাধ্য হন। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বন্যা বিধ্বস্ত সুবলদহ গ্রামে ফিরে আসেন এবং ত্রাণ বিলির উদ্যোগ নেন।[৯] ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ১২ মে কলকাতার খিদিরপুর বন্দর থেকে জাপানি জাহাজ ‘সানুকি-মারু’ সহযোগে তিনি ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন। তার আগে নিজেই পাসপোর্ট অফিস থেকে রবীন্দ্রনাথের আত্মীয়, রাজা প্রিয়নাথ ঠাকুর ছদ্মনামে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন।
তারই তৎপরতায় জাপানি কর্তৃপক্ষ ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের পাশে দাঁড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় সমর্থন যোগায়। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৮-২৯ মার্চ টোকিওতে তার ডাকে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ বা ভারতীয় স্বাধীনতা লীগ গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে তিনি সেই সম্মেলনে একটি সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তাব দেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২২ জুন ব্যাংককে তিনি লীগের দ্বিতীয় সম্মেলন আহ্বান করেন। সম্মেলনে সুভাষচন্দ্র বসু কে লীগে যোগদান ও এর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তাব গৃহীত হয়। যেসব ভারতীয় যুদ্ধবন্দি মালয় ও বার্মা ফ্রন্টে জাপানিদের হাতে আটক হয়েছিল তাদেরকে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগে ও লীগের সশস্ত্র শাখা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মিতে যোগদানে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে জাপানি সেনাকর্তৃপক্ষের একটি পদক্ষেপে তার প্রকৃত ক্ষমতায় উত্তরণ ও সাফল্য ব্যাহত হয়। তার সেনাপতি মোহন সিংকে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির নেতৃত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু তার সাংগঠনিক কাঠামোটি থেকে যায়। রাসবিহারী বসু ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (আজাদ হিন্দ ফৌজ নামেও পরিচিত) গঠন করেন। জাপানে সোমা নামে এক পরিবার তাকে আশ্রয় দেয়। ওই পরিবারেরই তোশিকা সোমাকে তিনি বিবাহ করেন। রাসবিহারী বসুকে জাপান সরকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘সেকেন্ড অর্ডার অব দি মেরিট অব দি রাইজিং সান’ খেতাবে ভূষিত করে। জানুয়ারি ২১, ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানে রাসবিহারী বসুর মৃত্যু হয়।
তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

জীবনতারা হালদার : ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম বিপ্লবী,অনুশীলন সমিতির সদস্য – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম ও লড়াই, যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত সৃঙ্খল মুক্ত হতে পেরেছভাপেরেছিল। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে  জীবনতারা হালদার ছিলেন একজন অন্যতম বীর ও নির্ভীক বিপ্লবী। জীবনতারা হালদার ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।   জীবনতারা হালদার ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম বিপ্লবী, অনুশীলন সমিতির সদস্য, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। তিনি অনুশীলন সমিতির ইতিহাস নামে একটি গ্রন্থের রচনা করেন।ভারতের দশমিকরণ আন্দোলনের প্রধানতম উদ্যোক্তা ফণীন্দ্রনাথ শেঠ ছিলেন তার মাতুল।

জন্ম ও শিক্ষা জীবন—

 

জীবনতারা ১৮ জুলাই, ১৮৯৩ সালে কলকাতার জেলেপাড়া, ব্রিটিশ ভারতের জন্মগ্রহণ করেন।  বাবার নাম রতনলাল হালদার।  ১৯০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ক্ষুদিরাম বোস পরিচালিত সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুলে অধ্যয়ন করেন।  ১৯০৯ সালে হিন্দু স্কুল থেকে প্রবেশ, ১৯১৪ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে B.Sc এবং ১৯১৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশুদ্ধ গণিতে M.Sc পাশ করেন।

 

 

স্বাধীনতা সংগ্রামে ভূমিকা—

বিদ্যালয়ে শিক্ষালাভের সময়ই তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বারো বৎসর বয়সে সহপাঠী বন্ধু সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সঙ্গে একযোগে অনুশীলন সমিতির সভ্য হন। এই সময়ে বিপ্লবী মানবেন্দ্রনাথ রায় সহ বিভিন্ন স্বাধীনতা সংগ্রামীর সান্নিধ্যে আসেন। ১৯১২ – ১৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চার বছর ‘আখড়া’ নামে এক শরীরচর্চার কেন্দ্র পরিচালনা করেন। অনুশীলন সমিতিতে লাঠি শিক্ষক ছিলেন শৈলেন্দ্রনাথ মিত্র (১৮৮১-১৯৭৪)। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে এম.এসসি পাশের পর ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি কারারুদ্ধ  ও অন্তরীণ থাকেন।

 

 

কর্মজীবন—

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পর্কিত মাসিক পত্রিকা ‘শিল্প’-এ প্রথমে প্রুফ রিডার এবং পরে সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।  এ সময় তিনি বিভিন্ন ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।  সেই সময়ে একমাত্র ভারতীয় হিসেবে লন্ডনের ‘দ্য এমপ্রেস’ পত্রিকায় তাঁর একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল।  তিনি ‘পাঞ্চ’ পত্রিকায়ও লিখতেন।  ১৯২২ সালে তিনি যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে দেখা করেন, যিনি একজন ভারতীয় জাতীয়তাবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামী যিনি নিরালাম্বা স্বামী নামে পরিচিত এবং বাংলায় সশস্ত্র সংগ্রামের অন্যতম প্রবর্তক ছিলেন এবং তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।  সেই ভিত্তিতে, তিনি তিব্বতি পিতার কাছাকাছি আসার জন্য যথেষ্ট ভাগ্যবান ছিলেন এবং তিনি তাঁর কাছ থেকে সমস্ত কঠিন অন্ত্রের রোগের একটি সাধারণ ওষুধ পান, যা ‘তিব্বতিন’ নামে পরিচিত ছিল।  কিছুদিন তিনি এর ব্যবসাও করেন।  ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, তিনি কলকাতায় এর সদর দফতরে সুরজমাল-নাগরমল্ডের ব্যবসায় একটি সিনিয়র পদে কাজ করেন।  ইংরেজি অমৃতবাজার পত্রিকার ‘কৃষি-শিল্প-বাণিজ্য’ পাতায় ধারাবাহিকভাবে লিখতেন।  ‘সায়েন্টিফিক ইন্ডিয়ান’ এবং ‘ইন্ডিয়ান ট্রেড রিভিউ’ তার প্রকাশিত জার্নাল।  তিনি ‘ইলাস্ট্রেটেড ইন্ডিয়া’ এবং মারোয়ারি চেম্বার অফ কমার্সের সহকারী সম্পাদক ছিলেন।

 

লেখা লেখি—–

 

স্বাধীনতা সংগ্রামে বিপ্লবী  অনুশীলন সমিতির সভ্য হিসাবে থাকার সুবাদে তিনি  “অনুশীলন সমিতির ইতিহাস” বইটিতে অগ্নিযুগের বাংলার বিপ্লবী সংগঠনটির বিস্তৃত ইতিহাস বর্ণনা করেছেন। স্বদেশী নানা ধরনের মিষ্টি কীভাবে তৈরি করতে হয় তা বিদেশীদের শেখানোর জন্য ইংরাজীতে লেখেন ‘বেঙ্গল সুইটস’। দেশের বেকার ছেলেদের অর্থাগমের পথনির্দেশ করেছেন তার ‘এভিনিউস্ অফ এমপ্লয়মেন্ট ফর আওয়ার ইয়ং মেন’ গ্রন্থে। তার অপর গ্রন্থ গুলি হল— অজীর্ণ চিকিৎসা, ছড়া কাটা ১ম ও ২য় খণ্ড , ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুশীলন সমিতির ভূমিকা।

 

 

সম্মাননা——-

১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারত সরকারের স্বতন্ত্রতা সৈনিক সম্মান পেনশন পান। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতি হন। তার জীবৎকালেই সাহিত্যিক তরুণ রায় জীবনতারার জীবন অবলম্বনে ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ’ নামে এক প্রহসন  নাটক লেখেন এবং এটি বহুবার মঞ্চস্থ হয়।

 

 

জীবনাবসান——-

জীবনতারা হালদার ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ শে জানুয়ারি প্রয়াত হন।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক বিপ্লবী ও সমাজসেবী মেজর সত্য গুপ্ত।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম ও লড়াই, যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত সৃঙ্খল মুক্ত হতে পেরেছভাপেরেছিল। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে  মেজর সত্য গুপ্ত ছিলেন একজন অন্যতম বীর ও নির্ভীক বিপ্লবী।মেজর সত্য গুপ্ত  ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।  মেজর সত্য গুপ্ত ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং সুভাষচন্দ্র বসুর বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্সের মেজর।

সংক্ষিপ্ত জীবনী—

সত্য গুপ্তর জন্ম ১৯০২ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ই জুলাই বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা জেলার তেজগাঁও। পিতা প্যারীমোহন গুপ্ত। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। কিন্তু অশ্বিনীকুমার দত্তের নির্দেশে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি আই.এ পরীক্ষা দেন নি। আগে থেকেই তিনি বিশিষ্ট বিপ্লবী ও মুক্তি সংঘের প্রতিষ্ঠাতা হেমচন্দ্র ঘোষের গুপ্ত সমিতির সভ্য ছিলেন। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পাশ করেন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে গুপ্ত বিপ্লবী দলের নির্দেশে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। এখানে সুভাষচন্দ্র বসু ও শরৎচন্দ্র বসুর সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে স্বাধীনতাকামী তরুণদের নিয়ে গঠিত হল বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স বা B.V.। সামগ্রিক নেতৃত্বে থাকলেন সত্য গুপ্ত ‘মেজর’ হিসাবে। সর্বাধিনায়ক (GOC – General Officer commanding ) সুভাষচন্দ্র বসু স্বয়ং। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্টে লোম্যান হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে পরে মুক্তি পান। কিন্তু ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৮ ই ডিসেম্বর বিনয় বসু বাদল গুপ্ত এবং দীনেশ গুপ্ত কর্তৃক রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণের ঘটনায় রাজবন্দি হন। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্টেট প্রিজনাররূপে আলিপুর, বক্সার, মিনওয়ালি (পাঞ্জাব), যারবেদা (পুনা) জেলে অতিবাহিত করেন। পরে হিজলি জেল থেকে মুক্তির পর নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর একনিষ্ঠ সহকারীরূপে সমস্ত কাজের সঙ্গী হন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জানুয়ারি সুভাষচন্দ্রের মহানিস্ক্রমন হয়। আর তখন হতেই ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি রাজবন্দিই থাকেন। মুক্তির পর বর্তমানে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বাগু গ্রামে সমাজ সেবার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। বাগু সপ্তগ্রামের পল্লী নিকেতনের সভাপতি ছিলেন তিনি। প্রসঙ্গত, এই পল্লী নিকেতনের সম্পাদকও ছিলেন আর এক বিপ্লবী – তিনি হলেন নিকুঞ্জ সেন।

মেজর সত্য গুপ্ত ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে র ১৯ শে জানুয়ারি প্রয়াত হন।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

অজ কোকবোরোক দিবস (ত্রিপুরি ভাষা দিবস), জানুন এর ইতিহাস, তাৎপর্য।

কোকবোরোক দিবস হল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ১৯ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত একটি বার্ষিক পালন। এটি রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়ের দ্বারা কথ্য কোকবোরোক ভাষা উদযাপন করে এবং ১৯৭৯ সালে ত্রিপুরার একটি সরকারী ভাষা হিসাবে এর স্বীকৃতিকে স্মরণ করে।
ভারত একটি বহুভাষিক দেশ যেখানে বিভিন্ন ভাষা পরিবারের ভাষা বলা হয়।  আনুমানিক ৭৮% ভারতীয়রা ইন্দো-আর্য ভাষায় কথা বলে এবং বাকি জনগোষ্ঠীর দ্বারা কথিত ভাষাগুলি দ্রাবিড়, অস্ট্রোএশিয়াটিক, চীন-তিব্বতি, ক্রা-দাই এবং অন্যান্য ভাষা পরিবারের অন্তর্গত।  কোকবোরোক চীন-তিব্বতীয় পরিবারের অন্তর্গত;  এর “নিকটতম আত্মীয়” হল আসাম, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম এবং মেঘালয়ে বোডো, ডিমাসা এবং কাছারি ভাষা।
কোকবোরোক ভাষার নামের অর্থ “বোরোক জনগণের ভাষা”।  বোরোক জনগণ, ত্রিপুরী জনগণ নামেও পরিচিত, হল টুইপ্রা রাজ্যের আদি বাসিন্দা যা উত্তর-পূর্ব ভারত এবং বাংলাদেশের অংশে অবস্থিত ছিল।  ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার পর, টুইপ্রা ব্রিটিশ ভারতের একটি রাজকীয় রাজ্যে পরিণত হয়।  ১৯৪৯ সালে, এটি ত্রিপুরা রাজ্য হিসাবে ভারতের ইউনিয়নে যোগদান করে।

যদিও ককবোরোক রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার মাতৃভাষা, তবে তিন দশক ধরে বাংলাই ত্রিপুরার একমাত্র সরকারী ভাষা ছিল।  ১৯৪৯ সালের ১৯ জানুয়ারি পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়, যখন শেষ পর্যন্ত বাংলার পাশাপাশি কোকবোরোককে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।  এই অনুষ্ঠানের বার্ষিকী এখন ত্রিপুরায় কোকবোরোক দিবস হিসেবে পালিত হয়।  এটি রাজ্য সরকার কর্তৃক আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য কার্যক্রমের সাথে উদযাপিত হয়।
মূলত, কোকবোরোক একটি একক ভাষা নয় বরং বেশ কয়েকটি ভাষা এবং উপভাষার জন্য একটি ছাতা পরিভাষা, যার মধ্যে কিছু এমনকি পারস্পরিকভাবে বোধগম্য নয় (একইভাবে, চীনা ভাষা বৈচিত্র্যের একটি গ্রুপ)।  দেববর্মা হল কোকবোরোকের একটি মর্যাদাপূর্ণ উপভাষা যা সকলের দ্বারা বোঝা যায় এবং সকল স্তরে সাহিত্য ও শিক্ষার মান হিসাবে বিবেচিত হয়।
ইউনেস্কোর অ্যাটলাস অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস ল্যাঙ্গুয়েজ ইন ডেঞ্জার অনুসারে, কোকবোরোক একটি অরক্ষিত ভাষা, যার অর্থ হল বেশিরভাগ শিশু এটি কথা বলে, তবে এর ব্যবহার নির্দিষ্ট ডোমেনে সীমাবদ্ধ।  ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে বক্তার সংখ্যা ৬৯৫০০০ অনুমান করা হয়েছে।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা মীরা দত্তগুপ্ত ।

ভূমিকা—-

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে মীরা দত্তগুপ্ত প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু শহীদ ভগৎ সিং-এর মতই নয় বরং শক্তিশালী নারীদের দ্বারা প্রশস্ত হয়েছিল যারা তাদের মাটিতে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিল। মীরা দত্তগুপ্ত  ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা ছিলেন  মীরা দত্তগুপ্ত ।

 

 জন্ম ও পরিবার——

 

মীরা দত্তগুপ্ত ১৯০৬ সালে ঢাকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু পৈতৃক জমি ছিল বিক্রমপুরের জৈনসার গ্রামে।  তাঁর পিতার নাম শরৎকুমার দত্তগুপ্ত।  পিতার আদর্শে প্রভাবিত হয়ে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন।  তার পিতামাতার মনোভাব ছিল দেশপ্রেম।

 

শিক্ষাজীবন—

 

মীরা দত্তগুপ্ত বেথুন কলেজের মেধাবী ছাত্রী।  ১৯৩১ সালে পাটিগণিতের এমএ পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় হন।  এরপর বিদ্যাসাগর কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন।

 

 রাজনৈতিক জীবন—–

 

পড়াশোনার সময় তিনি বিপ্লবী পার্টিতে যোগ দেন।  বেনু পত্রিকার মহিলা বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন।  কিছুদিন ‘সাউথ ক্যালকাটা গার্লস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  নারী আন্দোলন গড়ে তুলতে কাজ করেছেন।  ১৯৩৩ সালে তার গতিবিধি পুলিশের নজরে আসে।  ১৯৩৭ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তিনি দুইবার আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন।  ১৯৪২ সালে আন্দোলনের সময় তিনি অর্থ সংগ্রহ করে বিপ্লবীদের দিয়েছিলেন।  ১৯৪৬ সালে তিনি জেল থেকে বেরিয়ে ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ গঠন করেন।

 

মৃত্যু—-

 

মীরা দত্তগুপ্ত ১৭ জানুয়ারি ১৯৮৩ সালে মারা যান।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

যতীন্দ্রমোহন রায়, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম ও লড়াই, যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত সৃঙ্খল মুক্ত হতে পেরেছভাপেরেছিল। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে যতীন্দ্রমোহন রায় ছিলেন একজন অন্যতম বীর ও নির্ভীক বিপ্লবী। যতীন্দ্রমোহন রায় ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।

জন্ম——

 

যতীন্দ্রমোহন রায়ের জন্ম রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ উপজেলায় ১৮৮৩ সালে। তার পিতার নাম হরিমোহন রায়।

 

শিক্ষা ও রাজনীতি——–

 

রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য রাজশাহী কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন। পরে ঐ কলেজ থেকে ১৯০৭ সালে বি.এ. পাস করেন। বগুড়ায় শিক্ষকতা করার সময় ‘গণমঙ্গল সমিতি’ নামে সংগঠনের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শিক্ষার সম্প্রসারণে আত্মনিয়োগ করেন। বগুড়ায় দুটি হাই স্কুলও স্থাপন করেছিলেন।

 

বিপ্লবী কর্মকাণ্ড————-

 

যতীন্দ্রমোহন রায় ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব।  তিনি বাঘা যতীনের সংস্পর্শে আসেন এবং বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যোগ দেন।  বালেশ্বর যুদ্ধের পর তিনি বন্দী হন।  তিনি অসহযোগ আন্দোলন ও লবণ সত্যাগ্রহের জন্য দেড় বছর এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলনের জন্য দুই বছর কারাভোগ করেন।  পরে তিনি দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য দান করার ব্রত নেন।  তিনি বেঙ্গল ইয়ুথ কনফারেন্স এবং বিষ্ণুপুর বেঙ্গল প্রাদেশিক সম্মেলনের সভাপতি ছিলেন।  ফরিদপুর প্রাদেশিক কংগ্রেসেও তার গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ ছিল।  তিনি আদি অভয়ম সমিতির সদস্য ছিলেন, পরে তাঁর দল উত্তরবঙ্গে যতীনদার দল নামে পরিচিতি লাভ করে।  যতীন্দ্রমোহন রায় ১০ বছর ব্রিটিশ কারাগারে ছিলেন।

 

গণমঙ্গল সমিতির সদস্যবৃন্দ———-

 

গণমঙ্গল সমিতির কর্মীদের মধ্যে  উমানাথ চক্রবর্তী, ক্ষিতীশ সরকার, যতীন হুই, পাবনার প্রভাস লাহিড়ী, মানসগোবিন্দ সেন, গোবিন্দ ব্যানার্জি, সুরেন রায়, ধীরেন্দ্রমোহন ঘটক, সত্যপ্রিয় ব্যানার্জি, অবিনাশ রায়, শশধর কর, অক্ষয় গুহ, মহেন্দ্র সেন, মোহিনী সিংহ, যোগেন দে সরকার, খগেন দাসগুপ্ত,  শরদিন্দু চক্রবর্তী, আশুতোষ লাহিড়ী, গপেন্দ্রলাল রায়, কালিপদ বাগচী প্রধান ছিলেন। তাদের সকলেই বহু বছর জেলে বন্দী ছিলেন।  তাদের মধ্যে খগেন দাশগুপ্ত ১৪ বছর জেলে ছিলেন।

 

মৃত্যু——-

 

যতীন্দ্রমোহন রায় ১৮ জানুয়ারি ১৯৫১ সালে প্রয়াত হন।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This