Categories
অনুগল্প

গল্প : ছবিওয়ালা প্রেম।

ঋচি ফটোগ্রাফার। ক্যামেরা হলো তার প্রথম প্রেম।
একদিন নদীর ধারে ছবি তুলতে গিয়ে দেখল—একজন ছেলে দাঁড়িয়ে স্কেচ আঁকছে। নাম—অর্পণ।

ঋচি বলল—“তুমি আঁকো, আমি ছবি তুলি… দু’জনের কাছেই পৃথিবী ফ্রেমবন্দী।”

অর্পণ হেসে বলল—
“সবচেয়ে সুন্দর ফ্রেমটা আজ পেলাম—তুমি।”

দু’জনই হাসল।
ধীরে ধীরে দেখা বাড়ল।
একদিন অর্পণ তার স্কেচবুক খুলে দেখাল—
সেখানে ঋচির বিভিন্ন ভঙ্গির বহু স্কেচ—

“তুমি না জানলেও, আমি অনেকদিন ধরে তোমাকেই আঁকছি।”

ঋচির গলা কাঁপল—
“আমি তো তোমাকে ক্যামেরায় ধরতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি তো আমাকে আগে থেকেই ধরে রেখেছ।”

নদীর ধারে দাঁড়িয়ে দু’জনের হাত এক হলো—
ছবি আর স্কেচ এক হয়ে গলধঃকরণ হলো তাদের ভালোবাসার গল্পে।

Share This
Categories
অনুগল্প

গল্প : চশমাওয়ালা ছেলে।

ইরা সবসময়ই শান্ত, বইপড়া আর স্বপ্নময় মেয়ে।
ক্লাসে সবসময়ই প্রথম বেঞ্চে বসত।
একদিন নতুন ছাত্র আসে—সামান্য অগোছালো, কিন্তু মিষ্টি—নাম তন্ময়।
চশমা পরে, চুল এলোমেলো, আর সবসময় গিটার সঙ্গে নিয়ে আসে।

তন্ময় প্রথম দিনই বলল—
“আমি পড়ায় তেমন ভালো না, কিন্তু গান খুব ভালোবাসি। আমায় একটু নোটস দিয়ে দেবে?”

ইরা অবাক—এভাবে কেউ কখনো তার কাছে আসেনি।
ইরা নোটস দিল, তন্ময় গান শুনাল।
এভাবেই একদিন দেখা হল, আর দেখা থেকেই শুরু হল অনুভূতি।

একদিন বৃষ্টি। ক্লাস শেষে ইরা ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফিরছে। তন্ময় ছাতা নিয়ে এসে বলল—
“তোমার সাথে হাঁটলে বৃষ্টি এত খারাপ লাগে না।”

ইরা আস্তে বলল—
“তুমি কি জানো? তোমাকে প্রথম দেখেই আমার ভালো লেগেছিল।”

তন্ময় মৃদু হেসে বলল—
“আমি তো প্রথম দিনই বুঝেছিলাম—আমার গান যদি কেউ মন থেকে শুনে থাকে, সেটা তুমি।”

Share This
Categories
অনুগল্প গল্প

গল্প : হারিয়ে পাওয়া কণিকা।

অরূপ ট্রেনে বসে ছিল। তাকে বিপরীতে বসা মেয়েটির চোখ বারবার কিছু বলতে চাইছিল।
নাম—কণিকা।
দু’জনের কথাবার্তা মিলল, গল্প জমল, হাসি থামছিল না।

স্টেশন এলে কণিকা নেমে গেল। কিন্তু তার ব্যাগে ভুল করে অরূপের দেওয়া বইটা থেকে গেল।
বইয়ের ভিতরে অরূপের নম্বর।

দু’দিন পর অরূপের ফোনে একটি মিষ্টি কণ্ঠস্বর—
“আমি কণিকা… আপনার বইটা আছে আমার কাছে।”

এভাবেই শুরু তাদের নিয়মিত কথা…
একদিন কণিকা বলল—“এবার দেখা হবে?”

সেই দেখা-টাকেই তারা দু’জনই আজীবন মনে রাখল।
মনে হল—যেন একে অপরকে তারা আগেই চিনত… শুধু সময়ই তাদের মিলিয়ে দিল।

Share This
Categories
অনুগল্প গল্প

গল্প : ফুলওয়ালার প্রেম।

রাজীব শহরের একটি ফুলের দোকানে কাজ করত। প্রতিদিন সকালে সে ফুল সাজাতে ব্যস্ত থাকত।
একদিন দেখল—একটা মেয়ে প্রতিদিন একই সময় একটা গোলাপ কিনে নিয়ে যায়।
মেয়েটির নাম—মেঘলা।

রাজীবের মনে প্রশ্ন—কার জন্য এত গোলাপ?

একদিন সাহস করে জিজ্ঞেস করল—“আপনি কি কারো জন্য ফুল নেন?”
মেঘলা একটু দুঃখ নিয়ে বলল—“না। আমার মা গোলাপ খুব ভালোবাসতেন… তাই তাঁর স্মৃতিতে রাখি।”

রাজীব বুঝল—মেঘলার চোখের হাসির পিছনে লুকানো বিষাদ।
পরের দিন সে তাকে একটা সাদা গোলাপ উপহার দিল।
মেঘলা অবাক—“এর দাম?”
রাজীব বলল—“কখনো কখনো কিছু জিনিস দামের নয়—অনুভূতির।”

সেই দিন থেকে তাদের আলাপ বাড়ল, আর ধীরে ধীরে মেঘলার চোখের দুঃখটা একটু একটু করে কমতে থাকল।

Share This
Categories
অনুগল্প গল্প নারী কথা

গল্প : নীল শাড়ির মেয়ে।

অভি প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার পথে বাসস্ট্যান্ডে একই মেয়েটিকে দেখত—নীল শাড়ি, কপালে ছোট টিপ, আর শান্ত দু’টো চোখ।
মেয়েটির নাম ছিল—ঋদ্ধিমা।

অভি সাহস করে কোনও দিন কথা বলেনি, শুধু দূর থেকে দেখেই যেত।
একদিন কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অভি গান গাইছিল। গান শেষে কেউ একজন বলল—
“তুমি খুব সুন্দর গাও।”
অভি তাকিয়ে দেখল—ঋদ্ধিমা!

তারপর থেকেই দু’জনের মধ্যে ছোট ছোট কথা, হাসি…
একদিন ঋদ্ধিমা বাসে উঠতে গিয়ে হঠাৎ পড়ে যাচ্ছিল। অভি ধরল তাকে।
ঋদ্ধিমা হেসে বলল—“তুমি না থাকলে আজ হাড্ডি ভেঙে যেত।”

অভি সাহস সঞ্চয় করে বলল—“দূর থেকে দেখতাম… কিন্তু বলতে পারিনি—তোমাকে ভালো লাগে।”

ঋদ্ধিমা প্রথমে অবাক, তারপর মুখটা লজ্জায় লাল।
সে বলল—“আমি ভেবেছিলাম শুধু আমিই দেখি তোমাকে।”

সেইদিন প্রথমবার দু’জন একসঙ্গে হাঁটল—ফুটপাতের পাশে কাঁচের দোকানে নিজেদের প্রতিচ্ছবি দেখে দু’জনই হেসে ফেলল।

Share This
Categories
অনুগল্প গল্প

গল্প : বৃষ্টিভেজা দুপুরে।

মেঘভাঙা বৃষ্টির দুপুরে অফিস ছুটি হয়ে গিয়েছিল। ঝর্ণা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিল—ভিজে যাওয়ার ভয় নেই, কিন্তু একা থাকার ভয় ছিল। বৃষ্টি সবসময়ই তাকে অতীতের কোনো অদ্ভুত স্মৃতিতে ফিরিয়ে দিত।

হঠাৎ একটা ছাতা মাথার উপরে থামল।
তপন—ওদের অফিসের নতুন ছেলেটা।
সে হাসলো—“এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে তো পুরোপুরি ভিজে যাবে।”

ঝর্ণা একটু অপ্রস্তুত হলেও ছাতার নিচে দাঁড়াল। বৃষ্টির শব্দে কথাগুলো ভেঙে যাচ্ছিল, কিন্তু একটা অদ্ভুত শান্তি নেমে এলো দুই জনের মাঝে।

বাস এল না। রাস্তায় জল জমে গিয়েছে।
তপন বলল—“চলো, ওখানে চায়ের দোকান আছে। বৃষ্টি থামা পর্যন্ত বসি।”

চায়ের কাপে গরম ধোঁয়া। বাইরে মেঘের গর্জন।
ঝর্ণা আস্তে বলল—“বৃষ্টি আমার ভালো লাগে না।”
তপন জিজ্ঞেস করল—“তবে এতক্ষণ ভিজে দাঁড়িয়ে ছিলে?”
ঝর্ণা উত্তর দিল—“কারো জন্য অপেক্ষা করছিলাম… কিন্তু সে আর আসে না।”

তপন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল—
“কখনো কখনো যারা আসে না, তাদের জন্য অপেক্ষা করাটাই ভুল। বরং যারা পাশে দাঁড়ায়—তাদের চিনতে পারাটাই গুরুত্বপূর্ণ।”

ঝর্ণা তাকাল তপনের দিকে।
এ প্রথম অনুভব করল—কেউ তাকে বোঝার চেষ্টা করছে।

বৃষ্টি থামার পর দু’জন পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরল।
সেদিনের বৃষ্টিটা ঝর্ণার আর খারাপ লাগল না।

Share This
Categories
অনুগল্প গল্প

গল্প: “শেষ বিকেলের চিঠি”

সন্ধ্যার শেষে রং মাখা আকাশের নিচে রুদ্রর হাতে কাঁপছিল একটি পুরনো খাম। গ্রামের স্কুলের শেষ বেঞ্চে বসে পড়াশোনা করা দুই বন্ধু—রুদ্র আর মহুয়া। তাদের বন্ধুত্বটা ছিল খুব স্বাভাবিক, কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অদৃশ্য একটা অনুভূতি ভিড় জমিয়েছিল দু’জনের হৃদয়ে।

মহুয়া কলকাতায় নার্সিং পড়তে যাবে—এই খবরটা শোনার পর থেকেই রুদ্রর ভিতরটা ফাঁকা হয়ে গেল। বহুদিন ধরে বলতে চেয়েছিল, কিন্তু সাহস পাইনি। তাই লিখে ফেলেছিল একটা চিঠি—কিন্তু সেই চিঠি কখনোই দেওয়া হয়নি।

যেদিন বিদায় নেবে মহুয়া, সেদিন রুদ্র তাকে নিয়ে গেল তাদের প্রিয় নদীর ধারে। চারদিক নরম বাতাসে ভরে আছে। তার হাত কাঁপছিল, গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল। অবশেষে চিঠিটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল—
“তুই চলে যাওয়ার আগেই এটা তোকে দিতে চাই।”

মহুয়া চিঠি খুলে দেখল—মাত্র তিনটি শব্দ: “আমি তোকে ভালবাসি।”
নীরবতা তৈরি হল। বাতাসের শব্দও যেন থেমে গেল।

মহুয়া রুদ্রর দিকে তাকিয়ে চোখের জল আটকাতে পারল না।
“এতদিন বলতে পারলি না?”
রুদ্র মাথা নিচু করে বলল, “হারানোর ভয় ছিল।”
মহুয়া তার হাত ধরল—“তুই আমাকে হারাবি না, রুদ্র। আমি ফিরব। আমার পড়াশোনা শেষ হলে এ নদীর ধারে আবার দাঁড়াব—তোর পাশে।”

রুদ্র কিছু বলল না। কিন্তু সে জানল—এ অপেক্ষাই হবে তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর প্রতীক্ষা।

Share This
Categories
অনুগল্প গল্প

“শেষ বিকেলের আলো” — একটি প্রেমের গল্প।

শহরের ব্যস্ত রাস্তাটা প্রতিদিনের মতোই শব্দে ভরা। কিন্তু সেই দিনের শেষ বিকেলটা অদ্ভুত নরম ছিল। রোদটা যেন একটু বেশি কোমল, আর বাতাসে ছিল কেমন যেন অজানা এক টান।

নীলা কলেজ থেকে ফিরছিল। হাতে আঁকা খাতাটা বুকে জড়িয়ে হাঁটছিল ধীর পায়ে। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিল অয়ন—তার পুরোনো স্কুল বন্ধু। বহুদিন পর দেখা হওয়ায় তারা দু’জনেই একটু অবাক, একটু অস্বস্তি।

“এতদিন কোথায় ছিলে?” নীলা হেসে জিজ্ঞেস করল।

অয়নও হেসে বলল, “ছিলাম তো… এখানেই। তুমি-ই ব্যস্ত হয়ে পড়লে।”

তাদের কথাবার্তা ধীরে ধীরে নরম হতে লাগল। পুরোনো দিনের স্মৃতি, ছোটখাটো দুষ্টুমি, ক্লাস ফাঁকি—সব ফিরে আসতে লাগল। অয়ন বুঝতে পারছিল, এত বছর পরও নীলার চোখের সেই কোমল হাসিটা তাকে ঠিক একইভাবে নাড়া দেয়।

কথা বলতে বলতে তারা হাঁটতে লাগল। হঠাৎ করে নীলা থেমে গেল।

“ওই রোদের আলোটা দেখো না… কত সুন্দর, তাই না?”
অয়ন তাকাল। রোদের আলো নীলার চুলে পড়ে যেন সোনালি হয়ে উঠেছে।

তার বুকের ভেতর অদ্ভুত একটা অনুভূতি জমতে লাগল।
কথা না ভেবে বলে ফেলল—
“নীলা, তুমি জানো… তুমি হাসলে মনে হয় পুরো দিনটাই সুন্দর হয়ে গেল।”

নীলা অবাক হয়ে তাকাল। চোখে একফোঁটা লাজুক ঝিলিক।

“এতদিন পর আজ এটা বললে?”
“হ্যাঁ… কারণ আজ বুঝলাম, কথা না বললে বোধহয় ভুল হয়ে যাবে।”

নীলা ধীরে ধীরে মাথা নিচু করল।
তারপর খুব নরম স্বরে বলল—
“তুমি দেরি করেছ, অয়ন… কিন্তু তবুও… আমি অপেক্ষা করছিলাম।”

শেষ বিকেলে দু’জনের ছায়া লম্বা হয়ে একসাথে মিশে গেল।
রাস্তা একই রইল, শহরও একই। কিন্তু তাদের জন্য পৃথিবীটা ঠিক তখনই একটু বদলে গেল।

Share This
Categories
অনুগল্প

অনু গল্প : শেষ দেখা।

ট্রেনের হুইসেল বাজলেই যেন চমকে উঠল রিয়া। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে সে দেখল, ভিড়ের ভেতর দিয়ে দ্রুত এগিয়ে আসছে অর্ণব।
“রিয়া!” – হাঁপাতে হাঁপাতে বলল সে।
রিয়া তাকিয়ে রইল – তার চোখে জল।

“তুমি যাচ্ছ?”
রিয়া চুপ। শুধু মাথা নেড়ে সায় দিল।

অর্ণবের চোখে হাজার কথা জমে ছিল, কিন্তু সময়ের অভাব ছিল আরও বড়। ট্রেন তখন ধীরে ধীরে গড়িয়ে চলেছে।
হঠাৎ অর্ণব রিয়ার হাত ধরে বলল,
“যদি কখনো ফিরে আসো… আমি এখানেই থাকব।”

ট্রেন চলে গেল।
রিয়া জানালায় দাঁড়িয়ে দেখল অর্ণব ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে।
তার ঠোঁট নড়ে উঠল –
“হয়তো একদিন…”

Share This
Categories
অনুগল্প

গল্পের নাম: “চিঠি ফেরত”।

সাত বছর পর ডাকবাক্সে একটা হলুদ খাম দেখে থমকে দাঁড়াল অনিকেত। প্রেরকের নাম – মেঘলা!

হাত কাঁপছিল… খুলতেই পড়ল চিঠির প্রথম লাইন:
“আমি জানি তুমি আর পড়বে না। কিন্তু আমি লিখেছি, কারণ মনে হয়েছিল—একটা শেষ হাওয়া ছুঁয়ে যাক তোমাকে…”

মেঘলা লিখেছিল—সে এখন পাহাড়ে থাকে, মোবাইল ছাড়াই। জীবনের সব শব্দ থেকে দূরে। ওরা যেদিন আলাদা হয়েছিল, সেদিনের পর থেকেই নাকি সে আর কারও দিকে তাকায়নি ভালোবাসা নিয়ে।

চিঠির শেষে একটা লাইন:
“এই চিঠি ফেরত দিলে বুঝে নেব, তুমি বেঁচে আছো। রেখে দিলে বুঝব, তুমিও হারিয়ে গেছো আমার মতো।”

অনিকেত চিঠিটা আবার ভাঁজ করল।
তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল বাড়ির পাশের পুরনো গাছে ঝোলানো সেই ছোট্ট ডাকবাক্সটার দিকে।
চিঠিটা ফেরত দিল না।

Share This