Categories
গল্প নারী কথা প্রবন্ধ

বরগাভীমা মন্দিরের ইতিহাস ও তাৎপর্য উন্মোচন।

বর্গাভীমা মন্দির, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তমলুক শহরে অবস্থিত, একটি ঐতিহাসিক হিন্দু মন্দির যা দেবী কালী দেবী বর্গাভীমাকে উত্সর্গীকৃত। মন্দিরটি এই অঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ল্যান্ডমার্ক, যা ভক্ত এবং পর্যটকদের একইভাবে আকর্ষণ করে।

ইতিহাস

বর্গাভীমা মন্দিরের 16 শতকের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। কিংবদন্তি অনুসারে, মন্দিরটি তমলুকের মহারাজা দ্বারা নির্মিত হয়েছিল, যিনি দেবী বর্গাভীমার একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। মন্দিরটি মুঘল এবং ইউরোপীয় প্রভাবের মিশ্রণে ঐতিহ্যবাহী বাংলা স্থাপত্য শৈলী ব্যবহার করে নির্মিত হয়েছিল।

স্থাপত্য

বর্গাভীমা মন্দিরটি তার অত্যাশ্চর্য স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত, যা এই অঞ্চলের অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে। মূল মন্দির ভবনটিতে জটিল পাথরের খোদাই, অলঙ্কৃত বারান্দা এবং সুন্দর নকশা করা উঠোন রয়েছে। মন্দিরটিতে শিব, গণেশ এবং কৃষ্ণ সহ অন্যান্য দেবতাদের নিবেদিত বেশ কয়েকটি ছোট মন্দির রয়েছে।

মন্দিরের স্থাপত্যটি বাংলা এবং মুঘল শৈলীর সংমিশ্রণ, একটি বড় গম্বুজ এবং চারটি ছোট গম্বুজ এর চারপাশে রয়েছে। মূল প্রবেশদ্বারটি জটিল খোদাই এবং ভাস্কর্য দ্বারা সজ্জিত এবং দেয়ালগুলি সুন্দর চিত্রকর্ম এবং ম্যুরাল দ্বারা সজ্জিত।

ধর্মীয় তাত্পর্য

বর্গাভীমা মন্দিরটি এই অঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় ল্যান্ডমার্ক, যা সারা দেশ থেকে ভক্তদের আকর্ষণ করে। মন্দিরটি দেবী বর্গাভীমাকে উৎসর্গ করা হয়েছে, যাকে দেবী কালীর রূপ বলে মনে করা হয়। কিংবদন্তি অনুসারে, তমলুকের মহারাজা দেবী বর্গাভীমাকে পূজা করতেন, যিনি বিশ্বাস করতেন যে তিনি তার রাজ্যকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করবেন।

মন্দিরটিকে একটি শক্তিপীঠ বলেও বিশ্বাস করা হয়, এটি একটি পবিত্র স্থান যেখানে দক্ষিণ ইয়াগের পৌরাণিক ঘটনার সময় দেবী সতীর দেহের অঙ্গগুলি পড়েছিল। মন্দিরটি ভারতের 51টি শক্তিপীঠের মধ্যে একটি, এবং হিন্দুদের জন্য একটি পবিত্র তীর্থস্থান হিসাবে বিবেচিত হয়।

সাংস্কৃতিক তাৎপর্য

বর্গাভীমা মন্দির শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় ল্যান্ডমার্ক নয়, এই অঞ্চলের একটি সাংস্কৃতিক আইকনও বটে। মন্দিরটি বাংলার সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, সারা দেশের পণ্ডিত, শিল্পী এবং সঙ্গীতজ্ঞদের আকর্ষণ করেছে।

মন্দির কমপ্লেক্সে একটি যাদুঘর এবং একটি গ্রন্থাগারও রয়েছে, যেখানে বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত দুর্লভ পাণ্ডুলিপি এবং নিদর্শন রয়েছে। মন্দিরটি সারা বছর ধরে বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং উত্সবের আয়োজন করে, যার মধ্যে বর্গাভীমা মন্দির উত্সব রয়েছে, যা বাংলা সঙ্গীত, নৃত্য এবং শিল্পকে উদযাপন করে।

উপসংহার

বর্গাভীমা মন্দিরটি পশ্চিমবঙ্গের একটি ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে উল্লেখযোগ্য ল্যান্ডমার্ক, যা ভক্ত ও পর্যটকদের একইভাবে আকর্ষণ করে। এর অত্যাশ্চর্য স্থাপত্য, সুন্দর উদ্যান, এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এটিকে বাংলার সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার অন্বেষণে আগ্রহী যেকোন ব্যক্তির জন্য একটি অবশ্যই দেখার গন্তব্য করে তোলে।

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ রিভিউ

গাজনের এক বিশেষ আকর্ষণ শিব পার্বতীর বিয়ে।।

পার্বতী শিবকে বিবাহ করার ইচ্ছা রাখতেন। পাশাপাশি সমস্ত দেবী-দেবতাও শিব-পার্বতীর বিবাহে ইচ্ছুক ছিলেন। পার্বতীর কাছ থেকে বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে দেবতারা কন্দর্পকে শিবের কাছে পাঠিয়েছিলেন। শিব সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ও তৃতীয় নেত্র দিয়ে তাঁকে ভস্ম করে দেন। কিন্তু শিবকে নিজের স্বামীরূপে মেনে নিয়েছিলেন পার্বতী। তাই শিবকে পাওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা শুরু করেছিলেন তিনি। তাঁর তপস্যার জোরে সমস্ত স্থানে হাহাকার শুরু হয়েছিল। বড় বড় পর্বতের ভিতও নড়ে গিয়েছিল। তখন শিব নিজের ধ্যান থেকে উঠেছিলেন এবং পার্বতীকে বলেছিলেন যে তিনি যেন কোনও যুবরাজের সঙ্গে বিয়ে করে নিয়েছিলেন। কারণ শিবের সঙ্গে বসবাস করা সহজ নয়।

কিন্তু হিমালয় কন্যা পার্বতী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি শিব ছাড়া কাউকে বিবাহ করবেন না। পার্বতীর ভালোবাসা দেখে মহাদেব তাঁকে বিবাহ করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। শিব যখন পার্বতীর সঙ্গে বিবাহ করতে যান, তখন তাঁর সঙ্গে ডাকিনি, ভূত-প্রেত, পেত্নী ছিল। ডাকিনি ও পেত্নীরা শিবকে ভস্ম দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছিলেন ও হাড়ের মালা পরিয়েছিলেন।

শিবের এই আশ্চর্যজনক বরযাত্রী পার্বতীর গৃহে পৌঁছালে সমস্ত দেবতা চমকে ও ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। এই বিচিত্র রূপে শিবকে মেনে নিতে পারেননি পার্বতীর মা। তখন তিনি শিবের সঙ্গে নিজের মেয়ের বিবাহ দিতে অসম্মত হয়েছিলেন। পরিস্থিতি খারাপ দিকে এগোতে দেখে পার্বতী শিবকে বিবাহের জন্য নিয়মনীতি অনুযায়ী তৈরি হয়ে আসতে প্রার্থনা করেছিলেন। শিব তাঁর প্রার্থনা স্বীকার করেছিলেন। সমস্ত দেবী-দেবতাকে সুন্দর ভাবে বরবেশে সাজিয়ে দিয়েছিলেন। ঐশ্বরিক জল দিয়ে মহাদেবকে স্নান করানো হয়, রেশমের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছিল। শিবের এই দিব্য রূপ দেখে পার্বতীর মা বিবাহে রাজি হয়েছিল। ব্রহ্মার উপস্থিতিতে এই বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল।

শান্তিপুর শহরের এক নম্বর ওয়ার্ডের উত্তম সরকার প্রায় ৩৬ বছর আগে, ওপার বাংলা থেকে আনা এই গাজন শুরু করেন। এ বছরেও ৪৫ জন সন্ন্যাস গ্রহণ করেছে। হর গৌরীর বিবাহ এখানকার প্রধান আকর্ষণ। মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে ছাদনা তলায় শুভদৃষ্টি মালা বদল আগুনে খই দেওয়া থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, যা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষায় থাকে আশেপাশের বিভিন্ন মানুষজন।
উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন নীল পুজো , কাটাভাঙ্গা আগুনের উপর দিয়ে হাটা এ ধরনের নানান সংযমী সন্ন্যাসী কর্মকাণ্ড। শিব পার্বতীর বিবাহ। এছাড়া জীব মুখ এবং পিঠে বর্ষি গেথানো অবস্থায় চরকে ঘোরানো। এ বিষয়ে তারা এতটাই পারদর্শী যে চাপরা থেকে তাদেরকে আহ্বান জানানো হয়েছে বড়শি গেথানোর কাজে। চড়কের দিন অর্থাৎ বাংলার শুভ নববর্ষে মৎস্য মুখ করে সন্ন্যাসীদের ব্রত ভঙ্গ করা হয়।

।।নদীয়া, নিজস্ব সংবাদদাতা।।

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ রিভিউ

হোলি উদযাপনের অনন্য উপায় ১০ টি ভারতীয় স্থানে৷

হোলি, রঙের উত্সব হিসাবে পরিচিত, ভারতে একটি প্রাণবন্ত এবং লালিত উপলক্ষ, যা সাংস্কৃতিক এবং পৌরাণিক তাত্পর্য দ্বারা চিহ্নিত। এটি মন্দের উপর ভালোর বিজয়ের গল্প উদযাপন করে। দেশ জুড়ে, বিভিন্ন অঞ্চল হোলির রঙিন উৎসব উপভোগ করার অনন্য উপায় অফার করে। এখানে এমন 10টি স্থানের একটি নির্দেশিকা রয়েছে যেখানে উদযাপনগুলি মিস করা উচিত নয়।

বৃন্দাবন, উত্তরপ্রদেশ

বৃন্দাবনে, ফুলন কি হোলি একটি অনন্য উদযাপন যেখানে রঙিন গুঁড়োর পরিবর্তে ফুলের পাপড়ি ব্যবহার করা হয়। এই আধ্যাত্মিক স্থান, যেখানে ভগবান কৃষ্ণ তার শৈশব কাটিয়েছেন, হোলির সময় একটি নির্মল অথচ উত্সব পরিবেশ প্রদান করে।

বারসানা, উত্তরপ্রদেশ

বারসানা লাঠমার হোলির আয়োজন করে, যা হিন্দু পুরাণে গভীরভাবে নিহিত এবং রাধার জন্মস্থানে উদযাপন করা হয়। রাধা এবং কৃষ্ণের মধ্যে উত্তেজনার একটি কৌতুকপূর্ণ পুনর্ব্যবহারে মহিলারা লাঠি দিয়ে পুরুষদের তাড়া করে এবং মারধর করে।

জয়পুর, রাজস্থান

জয়পুরের এলিফ্যান্ট ফেস্টিভ্যাল হোলি উদযাপনে প্রাণবন্ততার একটি অতিরিক্ত স্তর যোগ করে। হাতি, রঙিন পোশাকে সজ্জিত, একটি বিশাল মিছিলের নেতৃত্ব দেয় এবং সেরা-সজ্জিত হাতির জন্য একটি বিশেষ সম্মান রয়েছে।

শান্তিনিকেতন, পশ্চিমবঙ্গ

শান্তিনিকেতনে, হোলি বসন্ত উৎসব বা বসন্ত উত্সব হিসাবে উদযাপিত হয়, এটি একটি ঐতিহ্য যা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুরু করেছিলেন। শিক্ষার্থীরা আনন্দের রঙ নিক্ষেপে জড়িত হওয়ার আগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।

উদয়পুর, রাজস্থান

উদয়পুরের রাজপরিবার শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরে একটি জমকালো উদযাপনের আয়োজন করে। উত্সবগুলির মধ্যে একটি রাজকীয় শোভাযাত্রা, স্থানীয় পারফরম্যান্স এবং একটি জমকালো ভোজ অন্তর্ভুক্ত।

হাম্পি, কর্ণাটক

ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে, হাম্পি বনফায়ার, সঙ্গীত, নৃত্য এবং আনন্দময় সমাবেশের সাথে প্রাণবন্ত হোলি উদযাপনের প্রস্তাব দেয়, যা মন্দের উপর ভালোর বিজয়ের প্রতীক।

দেরাদুন ও গোয়া

গোয়া এবং দেরাদুন উভয় স্থানেই উদযাপিত হোলি মু উৎসব, আধুনিক সঙ্গীত, শিল্প এবং সংস্কৃতির সাথে ঐতিহ্যবাহী মজার মিশ্রণ ঘটায়। এটি একটি নিরাপদ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ইভেন্ট যেখানে পরিবেশ-বান্ধব রঙ, পারফরম্যান্স এবং রাস্তার খাবার রয়েছে।

আনন্দপুর সাহেব, পাঞ্জাব

হোলা মহল্লা, শিখ সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্সব, হোলি অনুসরণ করে। এতে মার্শাল আর্ট প্রদর্শনী রয়েছে যা স্ব-শৃঙ্খলা এবং সমতার উপর জোর দেয়।

কোচিন, কেরালা

কোচিনে, মঞ্জুল কুলি উৎসব কোঙ্কনি মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে রঙের জায়গায় হলুদ ব্যবহার করা হয়। উৎসবটি ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত, নৃত্য এবং ভোজ দিয়ে সমৃদ্ধ।

মণিপুর

মণিপুরের মেইতেই সম্প্রদায়ের দ্বারা উদযাপন করা ইয়োসাং উৎসবের মধ্যে রয়েছে নাচ, গান, গেমস এবং থাবাল চোংবা নাচ, যেখানে ছেলেরা এবং মেয়েরা রঙের উৎসবকে চিহ্নিত করে একটি বনফায়ারের চারপাশে নাচ করে।

ভারত জুড়ে এই 10টি স্থান একটি দর্শনীয় হোলির অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যা দর্শকদের দেশের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং উত্সবের চেতনায় ডুব দিতে দেয়। প্রতিটি অবস্থান স্থানীয় ঐতিহ্য এবং উদযাপনের একটি অনন্য আভাস প্রদান করে, হোলি উৎসবকে একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা করে তোলে।

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ রিভিউ

কর্তাভজা সম্প্রদায় ও কল্যাণীর সতীমার দোল মেলা।।।

যতদূর জানা যায়, আনুমানিক দুশো বছর আগে আউলিয়া সম্প্রদায়ের সতীমা অর্থাৎ সরস্বতী দেবী এই মেলার প্রবর্তন করেন । এপার বাংলা ও বাংলাদেশে যথেষ্ট জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ঘোষপাড়ার সতীমার দোল মেলা । খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি বাংলার অন্ত্যজ সম্প্রদায়ের মানুষদয়ের নিয়ে গড়ে ওঠে আউলচাঁদ সম্প্রদায় । এই সম্প্রদায়ের আদিগুরু ছিলেন আউলচাঁদ । তাঁর মৃত্যুর পর আউলচাঁদ সম্প্রদায়ের কর্তাপদ লাভ করেন রামশরণ পাল । তাঁরই স্ত্রী ছিলেন সরস্বতী দেবী যিনি পরবর্তীকালে সতী মা নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন ।
বাউল, কীর্তন, লোকগীতি, পল্লীগীতির সুরে প্রতি বছর মেলা জমে ওঠে । আখড়ায় আখড়ায় সারা রাত ধরে গানের আসর । শ্রোতারা অধিকাংশই গ্রাম ও মফঃস্বলের । বিভিন্ন জায়গায় তৈরী হয় লালন মঞ্চ । গানের পাশাপাশি বিশাল উনুন জ্বালিয়ে ক্ষুন্নিবৃত্তির ব্যবস্থা হয় ঐ আখড়াগুলিতে । দূরদূরান্ত থেকে মেলায় আগত মানুষদের আশ্রয়স্থল এই আখড়াগুলি ।
এবার আসছি কর্তাভজা সম্প্রদায় প্রসঙ্গে ।
কর্তাভজা সম্প্রদায় আঠারো শতকে বৈষ্ণববাদ ও সুফিবাদ থেকে বিকশিত একটি ক্ষুদ্র ধর্মীয় সম্প্রদায় । এই সম্প্রদায়ের মূল গুরু আউল চাঁদ ।
প্রথমেই বলি, আউলচাঁদ হলেন একজন বাঙালি ধর্ম প্রচারক ও কর্তাভজা সম্প্রদায়ের আদিগুরু । কিংবদন্তি বা লোকবিশ্বাস যে, গোরাচাঁদ অর্থাৎ শ্রীচৈতন্যদেব আউলচাঁদ রূপে পুনরায় আবির্ভূত হয়েছেন । গৃহী মানুষকে বৈরাগ্য ধর্ম শেখাতে শ্রীচৈতন্য আবির্ভূত হন আউল চাঁদ ফকির হয়ে । এখানে তাই কোনো জাতিভেদ নেই ।
আউলচাঁদের জন্ম-খ্রিষ্টাব্দ নিয়ে অনেক মতভেদ । শোনা যায়, তিনি হিন্দু না মুসলমান সেটা স্পষ্টভাবে জানা যায়নি । তবে প্রচলিত লোক কাহিনী অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার উলা গ্রামের (অনেকের মতে, নদীয়া জেলার প্রাচীন জনপদ উলা-বীরনগর) পান ক্ষেত থেকে একটি নবজাতক শিশুকে পাওয়া যায় । ক্ষেতের মালিক মহাদের বারুই ভগবানের আশীর্বাদ ভেবে তাঁকে লালন-পালন শুরু করেন । আউলচাঁদের পুরানো নাম পূর্ণচন্দ্র । সংস্কৃত ভাষা শেখানোর জন্য তাঁকে পাঠানো হয় সে-সময়কার বিখ্যাত বৈষ্ণবাচার্য হরিহরের কাছে । বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণচন্দ্র নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ান এবং নানাভাবে শিক্ষালাভ করেন । শেষ পর্যন্ত তিনি সিদ্ধিলাভ করেন । তাঁর নতুন নাম হয় ফকিরচাঁদ বা আউলচাঁদ । বড় হয়ে আউলচাঁদ গৃহত্যাগ করেন । বহু দেশ ঘোরার পর নদীয়া জেলার ঘোষপাড়ায় রামশরণ পাল নামে এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি তাঁকে আশ্রয় দেন । আউল চাঁদের ২২জন শিষ্যের মধ্যে অন্যতম শিষ্য রামশরণ পাল । ২২জনের মধ্যে রামশরণ পাল আউলচাঁদের মৃত্যর পর গুরুপদ প্রাপ্ত হন । যারজন্য তাঁর নেতৃত্বে পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলার ঘোষপাড়ায় প্রতিষ্ঠা করেন কর্তাভজা ধর্মের অন্যতম পীঠস্থান, যা পরবর্তী সময়ে সতী মায়ের মন্দির নামে সবার কাছে পরিচিত । রামশরণ পালের স্ত্রীর নাম সরস্বতী, যার নামেই এই মন্দির—-সতী মায়ের মন্দির । কথিত আছে, সরস্বতী’র প্রথম অক্ষর “স” আর শেষ অক্ষর “তী” অনুসারে সতী । আউলচাঁদের শিষ্য রামশরণ পাল গুরুর ভাবাদর্শকে ভিত্তি করে কর্তাভজা সম্প্রদায় গড়ে তোলেন । এইজন্য ভক্তের নিকট তিনি “কর্তা” এবং তাঁর স্ত্রী সরস্বতী দেবী “কর্তামা” নামে অভিহিত । রামশরণ পালের পর সরস্বতী দেবী এই সম্প্রদায়কে নেতৃত্ব দেন । রামশরণ পালের স্ত্রী কর্তাভজা সম্প্রদায়কে দিশা দেখান । রামশরণের স্ত্রী সরস্বতী দেবী ছিলেন অতীব ধর্মপরায়ণা । শোনা যায়, আউলচাঁদ হিম সাগরের জল ও ডালিম গাছের তলার মাটির সাহায্যে সরস্বতী দেবীকে অলৌকিক উপায়ে মৃত্যের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন । আরও শোনা যায়, আউলচাঁদ নাকি রামশরণ পাল ও সরস্বতী দেবীর সন্তান হয়ে পরবর্তীতে জন্ম নেন “দুলাল চাঁদ” নামে । দুলাল চাঁদ (১৭৭৬-১৮৩৩) কর্তাভজা সম্প্রদায়কে সাংগঠনিক রূপ দেন । তিনি বহু পদ রচনা করে কর্তাভজা ধর্মমতকে একটা তাত্ত্বিক কাঠামোর উপর প্রতিষ্ঠিত করেন । পদগুলি ভাব-গীত-রূপে ভক্তদের নিকট সমাদৃত । কর্তাভজারা কোনো জাতিভেদ মানেন না । তাঁরা লোভ-মোহ-কাম-ক্রোধকে নৈতিক পাপ বলে মনে করেন । সৎ পথে থেকে এবং মিথ্যা কথা পরিহার করে নৈতিকভাবে ধর্মকর্ম করা তাঁদের প্রধান লক্ষ্য । তাঁর সময়ে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের খ্যাতি বহুদূর পর্যন্ত গড়ায় । মাত্র ৪৮ বছর বয়সে দুলাল চাঁদের মৃত্যু হয় । এরপর তাঁর মা অর্থাৎ সরস্বতী দেবী কর্তা মা বা সতীমা নামে খ্যাতিলাভ করেন ।
নদীয়া জেলার ঘোষপাড়ার রামশরণ পালের আদি ভিটেটুকু ভক্তদের কাছে অতি পবিত্র । ভিটের পাশেই ডালিম গাছ । এই গাছের নীচে যেহেতু সতীমা সিদ্ধিলাভ করেছিলেন সেইজন্য ভক্তরা ডালিম গাছের ডালে ঢিল বেঁধে মানত করেন । মনস্কামনা পূরণ হওয়ার আশায় । বাতাসা, কদমা, চিড়ে, মুড়কি দিয়ে নৈবেদ্য সাজিয়ে ভক্তদের সতীমাকে পুজো দেওয়ার রীতি । আজও সেই ট্রাডিশন অব্যাহত ।
জনশ্রুতি, শেষ বয়সে সরস্বতী দেবী সন্তানহারা হলে দোলপূর্ণিমার দিন গুরু পুজার আয়োজন করেন । সেই থেকে দোল পূর্ণিমার সূচনা । হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাউলেরা আসেন । তাই স্থানীয়ভাবে সতী মায়ের মেলাটা আউল-বাউলের মেলা বা আখড়া নামে পরিচিত ।
কর্তাভজা সম্প্রদায় মূর্তিপুজা এবং সকল প্রকার আনুষ্ঠানিক যাগযজ্ঞের বিরোধী । কর্তাভজা প্রচারক দুলাল চাঁদ রচিত ভাবের গীতে বলা হয়েছে—– “মানুষ ভজ, মানুষ চিন্ত, মানুষ কর সার, সকলি মানুষের খেলা মানুষ বই নাই আর ।“ কর্তাভজা সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য দিক হলো এখানে হিন্দু গুরুর মুসলমান শিষ্য যেমন আছেন, তেমনি আছেন মুসলমান গুরুর হিন্দু শিষ্য । এই সম্প্রদায়ে নারী পুরুষ নেতৃত্ব নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলা হয় না । এই কারণে গুরুদেবের ভূমিকায় নারী পুরুষ উভয়কেই দেখা যায় । একই ভাবে তাঁরা বাউল সম্প্রদায়ের মতো জাতিভেদ প্রথা মানেন না । দুলাল চাঁদের ভাবের গীতে তাই বলা হচ্ছে—- “ভেদ নাই মানুষে মানুষে, খেদ কেন ভাই এদেশে ।”
সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় কর্তাভজা সম্প্রদায়ে । এ-বিষয়ে কবি নবীন চন্দ্র সেনের বক্তব্য অত্যন্ত প্রনিধানযোগ্য । তাঁর মতে, “কর্তাভজা সম্প্রদায়ে কোনো জাতিভেদ নেই । সকলেই এক রন্ধনশালার পাক গ্রহণ করেন । ছোঁয়াছুয়ির দোষ এদের কাছে মুখ্য নয় । মানুষ সেবা তাঁদের মুখ্য বিবেচ্য বিষয় ।“
কর্তাভজাদের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো গুরুদেবের পুত্র অযোগ্য হলে তাঁরা তাকে গুরু নির্বাচন করতে চান না । তাঁদের নিয়মাবলী নামক ভাবের গীতে এই প্রসঙ্গে অভিমত ব্যক্ত করে বলা হয়েছে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের সাধন ভজন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন এমন ব্যক্তিই গুরুদেব হবার অধিকারী । এই জায়গায় কর্তাভজা সম্প্রদায় বর্ণবাদ এবং ব্রাহ্মণ্যবাদের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে সমর্থ হয়েছেন ।
আজও কর্তাভজা সম্প্রদায়ের মধ্যে সতীমায়ের কৃপা পাওয়ার নিরিখে যথেষ্ট উন্মাদনা । তাঁদের মধ্যে সরল বিশ্বাস ও ভক্তি আজও উজ্জীবিত । যার জন্য দোল পূর্ণিমার দিন সতী মায়ের মেলায় হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে । এদেশ ছাড়া বাংলাদেশ থেকেও মেলাপ্রাঙ্গনে অনেক মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো । বাউলদের সমারোহ আলাদা মাধুর্যে ভরপুর থাকে কল্যাণীর সতী মায়ের মেলা । (তথ্যসূত্র: সংগৃহীত) ।

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ রিভিউ

বিশ্ব পুতুলনাট্য দিবস নিয়ে কিছু কথা।

বিশ্ব পুতুল দিবস 2024—–

বিশ্ব পাপেট্রি দিবস প্রতি বছর 21 মার্চ পালিত হয়। এ বছর আমরা বৃহস্পতিবার দিবসটি পালন করব।
এই দিনটি পুতুলশিল্পের জন্য উত্সর্গীকৃত এবং এটি সারা বিশ্বে বসবাসকারী পুতুলদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোরও একটি সুযোগ। বিশ্ব পুতুল দিবস প্রথম 2003 সালে ইউনিয়ন ইন্টারন্যাশনাল দে লা ম্যারিওনেট (UNIMA) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

বিশ্ব পুতুল দিবস 2024: ইতিহাস——

পুতুলের ইতিহাস 2500 খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতায় ফিরে পাওয়া যায়। প্রত্নতাত্ত্বিকদের দ্বারা বিচ্ছিন্ন মাথা সহ একটি পোড়ামাটির পুতুল পাওয়া গেছে। এই পুতুলটি একটি স্ট্রিং দ্বারা চালিত হতে সক্ষম ছিল এবং এটি একটি খুব জনপ্রিয় বিনোদন যা সাধারণ মানুষের জন্য সঞ্চালিত হয়েছিল।

মিশরে পুতুলের প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণও পাওয়া গিয়েছিল 2000 খ্রিস্টপূর্বাব্দে। এই পুতুলগুলি কাঠের তৈরি এবং তারা স্ট্রিং দ্বারা পরিচালিত হত।
16 শতকে, ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ “পাঞ্চ এবং জুডি” পুতুলের উদ্ভব হয়েছিল ইতালীয় কমিডিয়া ডেল’আর্ট থেকে। পুতুলের এই রূপটি সাধারণ মানুষের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং 19 শতকের মধ্যে এটি বিকশিত হতে থাকে।

 

বিশ্ব পুতুল দিবস 2024: তাৎপর্য——-

বিশ্ব পুতুলশিল্প দিবস হল একটি বৈশ্বিক সম্প্রদায় হিসাবে পাপেট্রি শিল্পকে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং বিশ্বজুড়ে পুতুলশিল্পের চর্চার বৈচিত্র্য উদযাপন করার একটি সুযোগ। এটি পুতুলের ঐতিহ্যবাহী ঐতিহ্য বজায় রাখার এবং রক্ষা করার গুরুত্বের প্রতি প্রতিফলিত করার একটি দিন।

এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে পুতুলশিল্প সমস্ত ধরণের সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত বাধা অতিক্রম করে। এটি মানুষকে খুশি করে এবং তাদের দৈনন্দিন চাপ থেকে বিভ্রান্ত করে।

বিশ্ব পুতুল দিবস আমাদের শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে যায় যেখানে আমরা পুতুল এবং জড় বস্তুর সাথে খেলতাম এবং তাদের নাম দিয়েছিলাম। আমাদের মধ্যে থাকা শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখতে এই দিনটি পালন করা উচিত।

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ রিভিউ

ভ্রমণ শব্দটির উৎস ও ইতিহাস – একটি বিশেষ পর্যালোচনা।

ভ্রমণ শব্দটির উৎস ইতিহাসের কালে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে । ভ্রমণ বা ট্রাভেল শব্দটার উৎপত্তি হয়েছে আদি ফরাসি শব্দ travail থেকে । ফরাসি শব্দ travail  অর্থ শ্রম, পরিশ্রম, (labor, toil, ) ইত্যাদি । আবার travailler অর্থ হচ্ছে কাজ, পরিশ্রম, শ্রম, যন্ত্রণা, কষ্ট,  (Work, labor, toil, suffering from painful efforts, troubles, ) ইত্যাদি । অনেকের মতে প্রাচীনকালে ভ্রমণ ছিল ভীষণ কষ্টকর । তাই travailler  শব্দটা কষ্টকর জ্ঞাতার্থে ব্যবহৃত হতে পারে ।  তবে বর্তমান ডিজিটাল যুগের কষ্টকর  ভ্রমণ নির্ভর করছে  গন্তব্যস্থলের উপর । যেমন মাউন্ট এভারেস্টে ভ্রমণ ঝুঁকির ও কষ্টের ।
এবার আসছি, ভ্রমণ বলতে আমরা কী বুঝি ?  ভ্রমণের ব্যবহারিক অর্থ নানানরকম । যেমন প্রাতকালীন ভ্রমণ, বৈকালিন ভ্রমণ, নদীর পারে ভ্রমণ, জ্যেৎস্নার আলোয় ভ্রমণ, ট্রেনে-বাসে-উড়োজাহাজে-জলযানে ভ্রমণ, ইত্যাদি । যদি ভ্রমণের মাধ্যম ধরি তাহলে ভ্রমণ হতে পারে হাঁটা, কিংবা সাইক্লিং’এর মাধ্যমে  অথবা গাড়িতে যেমন পাবলিক পরিবহন, প্রাইভেট গাড়ি, রেল এবং বিমান ।   আক্ষরিক অর্থে আমরা যেটা বুঝি ভ্রমণ অর্থ বেড়ানো, ঘোরাঘুরি, এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যাওয়া, অর্থাৎ পর্যটন করা । অন্য অর্থে দেশ ভ্রমণ । এছাড়া ভ্রমণ অর্থ যেটা বুঝি, সেটা হচ্ছে চিত্তবিনোদন, পর্যটন ও অবকাশ যাপন ।  ভ্রমণ মানুষের জীবনে আনে বৃহত্তের আহ্বান । আনে অজানা সৌন্দর্যের সংবাদ । অচেনার সান্নিধ্য মানুষ পায় বিষ্ময়ের শিহরণ । তাই ভ্রমণ শুধুমাত্র দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বিদেশ ভ্রমণও সমানভাবে উল্লেখযোগ্য । তবে এটাও ঘটনা, মানুষের মধ্যে ভ্রমণের আবশ্যিক দিক নিজের দেশকে জানবার, বোঝবার, দেখার । কিছু মানুষ তথ্য জোগাড়ের জন্য গবেষণা ভ্রমণও করেন । নিজের জন্মস্থানের গাঁ-গঞ্জ-শহর-নগর থেকে বেরিয়ে দেশের ও বিদেশের দ্রষ্টব্য স্থানের ভৌগলিক অবস্থান, তার ইতিহাস, রাজনীতি বা তার নৃতত্ত্ব  জানাটা ভ্রমণের মুখ্য উদ্দেশ্য ।  তা ছাড়া দিনের পর দিন একই পরিবেশের জীবন যাপন থেকে ক্ষণিকের মুক্তি । একটু বৈচিত্র্যের আস্বাদনের উপলব্ধি, যে বৈচিত্র্য আমাদের দেয় অপরিসীম আনন্দ ।
যদি নিজের দেশ ভারতবর্ষকেই ধরা যায় তাহলে দেখা যাবে, একই দেশে বাস করা সত্ত্বেও বিভিন্ন প্রদেশের মানুষের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারভেদ । নানান ধর্ম, নানান জাতির মানুষের বসবাস । বিভিন্ন ভাষার বিভিন্ন বর্ণের মানুষ । প্রত্যেকের জাতিসত্বা, ভাষার প্রয়োগ, ধর্মের আচরণ, এমনকি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা আলাদা । যার জন্য ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের ভ্রমণের মাধ্যমে দেশকে চেনার, দেশের মানুষদের জানবার আকাঙ্খা প্রবল । দেশের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে নানাবিধ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় ও নতুন-নতুন জ্ঞান আহরণ সম্ভব । বিচিত্র আমাদের দেশ এবং বিচিত্র তার অধিবাসী । আরও বিচিত্র তাদের সাংস্কৃতিক জীবন যাপন এবং সামাজিক রীতিনীতি । আমদের দেশে কতো অরণ্য, সমুদ্র, পাহাড়, পর্বত । নিসর্গ প্রকৃতির কতো অফুরান বৈভব, কতো  পশু-পাখী, জীবজন্তু । ভ্রমণের মাধ্যমে সেগুলির পূর্ণভাবে উপলব্ধি ঘটে । এখানে বলা যেতে পারে, ভ্রমণ অন্য কথায় শিক্ষার একটি অঙ্গ ।
ভ্রমণের পরিধি নির্ধারণে অবশ্যই আর্থিক সঙ্গতির প্রসঙ্গ উল্লেখযোগ্য । ভারতবর্ষ আমাদের উন্নয়নশীল দেশ । এখানে মাথাপিছু আয় প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম । ফলে মানুষের যতোটুকু আয় প্রায় ততোটুকুই সংসার নির্বাহের জন্য নিঃশেষিত হয়ে যায় । যার জন্য সংসার বাঁচিয়ে উদবৃত্তের পরিমাণ ভীষণ স্বল্প । তবুও ভ্রমণ পিপাসু মানুষ সংসারের  খরচা বাঁচিয়ে  ঐ নগণ্য আয় থেকে ভ্রমণের জন্য জমিয়ে রাখে । অভিজ্ঞতার নিরিখে এটা পরিস্কার, চাকুরিজীবিদের মধ্যে ভ্রমণের নেশা তুলনামূলকভাবে বেশী । ভ্রমণের প্রতি তাঁরা বেশী সংবেদনশীল । দেখা গেছে চাকুরিজীবি মানুষ একনাগাড়ে ছয় মাস অফিস করলে হাঁফিয়ে ওঠেন । তখন তাঁদের শরীর-মন ক্ষণিকের জন্য একঘেয়েমি জীবনের অবসান ঘটানোর নিরিখে কোনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে  ভরা স্থানে নিরিবিলিতে সময় কাটাতে চান । সামর্থ অনুযায়ী তখন ব্যস্ততম কর্মজীবন থেকে ক্ষণিকের জন্য নিবৃত্তি । মুক্তির আস্বাদনের তাগিদে তাঁদের ভ্রমণ ।
ভ্রমণের  ক্ষেত্রে শারীরিক সুস্থতা ভীষণ জরুরি । আবার অনেকে ডাক্তারী পরামর্শ মতো হাওয়া বদলের জন্য ছোটেন । খুব স্বল্প সংখ্যক মানুষ বিশ্রাম নিতে বেড়ানোর দ্রষ্টব্যস্থানে বেড়াতে যান ।  কিছু ভ্রমণ পিপাসু মানুষের ধারণা, ভ্রমণের মাধ্যমে তাঁদের শরীরে তাজা অক্সিজেন ঢোকে । এইজন্য ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, রাজনীতিবিদ, বরিষ্ঠ নাগরিক, ইত্যাদি পেশার মানুষ সাময়িক বিশ্রামের তাগিদে বিভিন্ন দ্রষ্টব্যস্থানে ভ্রমণ করেন । সুতরাং ভ্রমণের প্রেক্ষাপট চিন্তা করলে দেখা যায়, ভ্রমণ শুধুমাত্র চিত্ত বিনোদনের জন্য নয় । ভ্রমণ মানুষের মধ্যে সংঘটিত হয় বিভিন্ন প্রয়োজনে । এছাড়াও শিক্ষামূলক ভ্রমণ, ব্যবসা-বাণিজ্যিক ভ্রমণ, রোগ চিকিৎসার জন্য ভ্রমণ, ধর্মীয়-ভ্রমণ,  সর্বজনবিদিত ।
ভ্রমণের স্থান, কাল, ইত্যাদির ব্যাপারে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের নিজস্ব চিন্তাভাবনাটা অগ্রগণ্য । কিছু মানুষের হিল  স্টেশনে ভ্রমণের প্রতি দুর্বলতা । তাই তাঁরা বিভিন্ন হিল এলাকা ভ্রমণের জন্য বেছে নেন । যেমন দার্জিলিং, সিমলা, উটি, কাশ্মীরের পহেল গাঁও-সোনমার্গ-গুলমার্গ, লে-লাদাখ,  মাউন্ট আবু,  কোহিমা, ইত্যাদি । শোনা যায়, হিল স্টেশনে বেড়ানোর আর একটা মজা সেটা হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য । সমতলভূমি থেকে পাহাড়ে উঠবার সময় রাস্তার দুধারে প্রকৃতির অকৃত্রিম সবুজের ভাণ্ডার । বিভিন্ন ধরনের গাছ গাছালির অফুরন্ত সমারোহ । যা দেখলে চোখ সরানো দায় ! তার উপর এক পশলা বৃষ্টি হলে রাস্তার দুইধারে বৃষ্টি স্নাত গাছ-গাছালির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মনোমুগ্ধকর । পাহাড়ী এলাকাতে প্রাকৃতিক সমারোহের প্রাচুর্য এত থাকলে কী হবে, সেখানকার মানুষের দৈণ্যদশা প্রকট । তাঁদের  অর্থনৈতিক অবস্থা তথৈ-ব-চ । শোচনীয় তাঁদের দৈনন্দিন জীবন যাপন । ক্ষেতি জমিতে ফসল উৎপাদনের হালহকিকৎ দুঃখজনক । যার জন্য তাঁরা পর্যটকের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল । প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ মানুষ পর্যটন ব্যবসার উপর নির্ভরশীল । কিছু কিছু পাহাড়ী এলাকায় পর্যটকের সংখ্যা খুবই কম ।   উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ী এলাকা যেমন কোহিমা, ইম্ফল, আইজল, ইত্যাদি । অথচ এইসব হিল স্টেশনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কোনো অংশে কম নয় । ভ্রমণ পিপাসু মানুষের সংখ্যা ঐ সমস্ত এলাকায় বেশী মাত্রায় ভিড় করলে এলাকার জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য বাড়তো । সুতরাং ভ্রমণের  ক্ষেত্রে দ্রষ্টব্যস্থান বাছাটাও  গুরুত্বপূর্ণ ।
সমুদ্র তীরবর্তী শহরে অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষের চেয়ে বাঙালীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো । অনেক বাঙালী সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল হিসাবে প্রথমেই পুরী’কে  বাছেন । পুরীর সমুদ্রের উদ্দেশে ভ্রমণের আরও একটি কারণ পুরীর জগন্নাথ মন্দির দর্শন । আবার পুরীতে রয়েছে ঐতিহাসিক কোনারক যেখানে প্রচুর মানুষ ভিড় করেন । ইদানীংকালে দীঘার  সমুদ্র সৈকতে মানুষের ভিড়  নজরকাড়া । কেননা দীঘার সমুদ্রের পার আধুনিক সজ্জায় সুসজ্জিত । সরকারি দৃষ্টির সৌজন্যে  দীঘার সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণ এখন ভীষণ জনপ্রিয় । ভ্রমণ পিপাসু মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হচ্ছে  সমুদ্রের বীচ । সমুদ্রের বীচের বালিতে পর্যটকদের হেঁটে অফুরন্ত  আনন্দ  । যার জন্য চেন্নাইয়ে ম্যারিনা বীচ, গোয়ার ক্যারাঙ্ঘুটে বীচ, মুম্বাইয়ের জুহু বীচ, কন্যাকুমারীর তিনটি সমুদ্রের সঙ্গমস্থলের বীচ, ভ্রমণ পিপাসু মানুষের কাছে আজও আকর্ষণীয় । তা ছাড়া সমুদ্রের সন্নিহিত অঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্যের বাড়-বাড়ন্ত চোখে পড়ার মতো ।
মন্দির, মসজিদ, গীর্জা, দর্শন ভ্রমণের অন্যতম উদ্দেশ্য । অনেক ভ্রমণার্থী  মন্দির দর্শনের পাশাপাশি মন্দিরের দেবতার পুজো দিতে উৎসাহী । ধর্মের প্রতি অনুরাগ মানুষের মধ্যে কমবেশী বিরাজিত  । সেই আকাঙ্খা থেকেই ধর্মীয় স্থানে ভ্রমণের ঈপ্সা । তা ছাড়া জানারও আকাঙ্খা প্রবল । যেমন দক্ষিণ ভারতে তিরুমালায়  মন্দির (বেঙ্কটেশ্বর), অসমে কাম্রুপ কামাক্ষার মন্দির, আজমীরে মসজিদ, কোহিমায় ক্যাথিড্রাল চার্চ, পুরীতে জগন্নাথ মন্দির, মুম্বাইতে মাতা লক্ষ্মী মন্দির, জম্মুতে কাটরায় বৈষ্ণদেবী মন্দির, ইত্যাদিতে ভ্রমণের আকাঙ্ক্ষা প্রবল ।
ভ্যালী এলাকায় ভ্রমণ পিপাসু মানুষ ছুটছেন । শিমলা থেকে কিন্নর ভ্যালী, লাদাখে নুব্রা ভ্যালী,  মানুষের কাছে আজও আকর্ষণীয় । বড় দ্বীপ বলতে মাজুলি দ্বীপ । শোনা যায় মাজলি দ্বীপ এশিয়ায় বিখ্যাত । অসমের যোরহাট থেকে মাজুলি যাওয়া সহজ । বিশাল ব্রহ্মপুত্র নদের (ব্রহ্মপুত্র হচ্ছে পুরুষ নদী) মধ্যেখানে মাজুলি দ্বীপ । অনেকেই ছুটছেন মাজুলি দ্বীপ ভ্রমণে । এছাড়া আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে অনেকগুলি দেখার মতো দ্বীপ রয়েছে । হ্যাভলক দ্বীপ তার মধ্যে অন্যতম ।  উত্তর-পূর্ব রাজ্যে চা-বাগান উল্লেখযোগ্য । যেমন ডিব্রুগড়  জেলা  জুড়ে চা-বাগান । তা ছাড়া দার্জিলিঙের চা-বাগান বিশ্বখ্যাত । এইসব চা বাগানে মনে হয় প্রকৃতি সবুজ গালিচা পেতে রেখেছে । দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে জঙ্গলের সমারোহ ।  পশ্চিম বঙ্গের জলদাপাড়ার জঙ্গল, অসমের কাজিরাঙ্গার জঙ্গল উল্লেখযোগ্য ।  কাজিরাঙ্গার জঙ্গলের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে । পশু, পাখী, জীব-জন্তুতে ভরা । কাজিরাঙ্গা জঙ্গলে গন্ডারের বিচরণ অন্যতম ।
জানার ও দেখার স্পৃহার শেষ নেই । সেটা রাঁচীর পাগলা গারদ হোক বা কারগিলের যুদ্ধস্থান হোক বা অমৃতস্বরের স্বর্ণমন্দির হোক । ভ্রমণ পিপাসু মানুষ সতত ছুটছেন তাঁদের একটানা দম-বদ্ধ জীবন থেকে সাময়িক মুক্তির খোঁজে ।
মানুষের মধ্যে ভ্রমণের সময় নির্ধারণ করা বড্ড কঠিন । পরীক্ষা বা পড়াশুনার ব্যস্ত সময়ে ভ্রমণের ইচ্ছা প্রসমিত থাকে  । তেমনি চাষীদের চাষের মরশুম, ব্যবসায়ীদের ব্যবসার ধামাকার সময় যেমন দুর্গা  পুজা, ইত্যাদির সময়, চাকুরিজীবিদের চাকরিস্থলে ছুটি গ্রান্ট না হলে, ভ্রমণের ইচ্ছা নৈব-নৈব-চ । এত কিছুর মধ্যও ভ্রমণ পিপাসু মানুষ ভ্রমণের তাগিদে দেশ বিদেশ ছুটছেন । কেননা ভ্রমণ মানুষকে সতেজ  ও  প্রফুল্ল রাখে  ।

 

।।কলমে : দিলীপ রয়।।

 

(তথ্যসূত্রঃ সংগৃহীত)

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ

মহাদেবের স্বপ্নাদেশেই ১০৮ টি শিব মন্দির তৈরি করেছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র, রইল শিবনিবাসের অজানা তথ্য।

শিবনিবাস বাংলার ইতিহাস খ্যাত ও পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ এক প্রাচীন স্থান। পশ্চিম বাংলার নদীয়া জেলার শিবনিবাসকে বাংলার কাশী বলা হয়। দেবাদিদেব শিব মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের স্বপ্নে হাজির হয়েছিলেন। হিন্দু ধর্মে মহা শিবরাত্রির মাহাত্ম্য অনেক। পুণ্যার্থীরা শিবের জন্যে ব্রত পালন করেন। দিনভর চলে নানা ধর্মীয় রীতি পালন। এমনকি অনেক জায়গায় শিবরাত্রি উপলক্ষে নানা মেলাও হয়। মন্দিরে তো বটেই, বাড়িতে বাড়িতেও পুজো হয় মহাদেবের। ‘হড় হড় মহাদেব’ উচ্চারণ করে তারকেশ্বর দেশের ভিন্ন প্রান্তে বাবার মাথায় জল ঢালতে ভক্তদের সমাগম হয়। প্রায় এক মাস আগে থেকে চলে প্রস্তুতি। শিবরাত্রির আগে, রইল পশ্চিমবঙ্গে নদীয়া জেলায় অবস্থিত ‘শিবনিবাস’ এর অজানা নানা কথা।শিবনিবাস বাংলার ইতিহাস খ্যাত ও পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ এক প্রাচীন স্থান। পশ্চিম বাংলার নদীয়া জেলার শিবনিবাসকে বাংলার কাশী বলা হয়। যদি এক্ষেত্রে কাশীর মতো গঙ্গা নদী বয়ে যায়নি। তবে এখানে এই মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে চুর্ণী নদী। জনশ্রুতি আছে যে, দেবাদিদেব শিব মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের স্বপ্নে হাজির হয়েছিলেন। তাঁকে বলেছিলেন যে, তিনি কাশি থেকে তাঁর রাজধানী স্থানান্তরিত করছেন। তাই মহাদেবকে সন্তুষ্ট করতে মহারাজা শিবনিবাসে তাঁর নতুন রাজধানী স্থাপন করেছিলেন এবং তাঁর সম্মানে ১০৮ টি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।

তবে ইতিহাসবিদরা আরও কিছু যুক্তি দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেন, আঠারো শতকের মাঝামাঝি মহারাজা আক্রমণকারী মারাঠাদের হাত থেকে তাঁর রাজধানী কৃষ্ণনগরকে বাঁচানোর জন্য এটিকে শিবনিবাসে স্থানান্তরিত করেন, যা চূর্ণী নদীর তীরে ঘিরে ছিল। ফলে আক্রমণকারীদের কাছ থেকে তিনি কিছুটা সুরক্ষিত থাকতেন। তাঁর রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ার পরে মহারাজা সম্ভবত এই জায়গাটির নাম ‘শিবনিবাস’-এ নামকরণ করেন। লোকেদের বিশ্বাস, এটি মহাদেব নিজেই করেছেন। আবার অনেকে বলেন, এই নামটি তাঁর পুত্র শিবচন্দ্রের নামে রাখা হয়েছিল।মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজত্বকালে (১৭২৮-১৭৮২) বাংলায় সাংস্কৃতিক বিপ্লব হয়েছিল। তাঁর জ্ঞান, শিক্ষা ও সংস্কৃতি তাঁকে বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসে একটি অনন্য স্থান দিয়েছে। তাঁর নবরত্ন (নয়টি রত্ন) সভা এখনও বাংলার সাংস্কৃতিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই মন্দিরের ছাদ ধালু এবং গম্বুজ রয়েছে।তিহ্যবাহী বাঙালি কাঠামো অনুসরণ করে না।

এই মন্দিরে যেমন আছে পোড়ামাটি কাজ, তেমন ইসলামিক ও গথিক কাজও দৃশ্যমান। এখানের সবচেয়ে বড় শিব মন্দিরটি বুড়ো শিব নামে পরিচিত। চূড়া সমেত মন্দিরের উচ্চতা ১২০ ফুট। মন্দিরের ভেতরের শিবলিঙ্গের পূর্ব ভারতের সবচেয়ে উচ্চতম শিবলিঙ্গটি রয়েছে। শিবনিবাসের এখন যেই মন্দিরগুলো রয়েছে তার রয়েছে বিভিন্ন নাম। যেমন – রাজ রাজেশ্বর মন্দির, রগনিশ্বর মন্দির, রাম-সীতা মন্দির, বুড়ো শিব মন্দির।

যদিও দুর্ভাগ্যক্রমে বর্তমানে এখানে ১০৮ টির মধ্যে মাত্র তিনটি মন্দির রয়েছে। যার মধ্যে একটিতে পূর্ব ভারতের বৃহত্তম শিব লিঙ্গ রয়েছে। তাছাড়া এখানের রাম সীতা মন্দিরের সঙ্গে রয়েছে আরও দুটি শিব মন্দির এবং কৃষ্ণচন্দ্রের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ শিবনিবাসের গৌরবময় অতীতের অবশিষ্টাংশ।

।। নদীয়া।।

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ

হারিয়ে যাওয়া নব্বইয়ের শৈশব ও ডিসেম্বরের দিনগুলো : বব চৌধুরী।

শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলো আমাদের জীবনের সবচেয়ে মধুর সময়। শৈশবকালে মাথায় চেপে বসে থাকে না কোনো চিন্তাভাবনা; শুধু খুশি, আনন্দ আর হুল্লোড়ের মধ্য দিয়ে সমগ্র ছোটবেলা কখন অতিবাহিত হয়ে কৈশোর পেরিয়ে আমরা যৌবনে প্রবেশ করি, তা বুঝতে পারি না। বুঝতে যখন পারি, তখন সেই সারল্যমাখা দিনগুলো হারিয়ে গেছে মহাকালের গভীরে।
শৈশবের একেকটা দিন আমাদের জীবনে একেকটা জাদুঘর হয়ে থাকে যে জাদুঘরে জমে থাকে হাজারো স্মৃতি।
সন্ধ্যা হতেই ঘরে ফিরে পড়তে বসা, হারিকেনের আলোতে অথবা কুপি জ্বালিয়ে রাতে একসঙ্গে মেঝে বসে খাবার খাওয়া। শৈশবের সেই নানুবাড়ির দিনগুলো; সেই ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সা, এক টাকা ও দুই টাকার গল্প; সেই শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে খেজুরের রস খাওয়া সেই লুকোচুরি খেলা।🧡 দরজার পেছনে লুকিয়ে থাকতাম কেউ এলে চমকে দেব বলে। সে আসতে দেরি করছে বলে অধৈর্য হয়ে বেরিয়ে আসতাম পূর্ণিমার রাতে চাঁদের সঙ্গে হাঁটতাম আর বলতাম, চাঁদও আমাদের সঙ্গে হাঁটছে। স্কুলে যাওয়ার সময় সবাই একসঙ্গে দৌড়ে যেতাম। ক্লাসে কলম–কলম খেলা, খাতায় ক্রিকেট খেলা, চোর-ডাকাত-বাবু-পুলিশ খেলা। এক টাকার রঙিন বা নারকেলি আইসক্রিম, চার পিস চকলেট, হাওয়াই মিঠাই খেতে না পারলে মন খারাপ হয়ে যেত। হঠাৎ আকাশপথে হেলিকপ্টার গেলে সবাই ঘর থেকে বের হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। শুক্রবার সন্ধ্যার পর আলিফ লায়লা, সিন্দবাদ, রবিনহুড ও ম্যাকগাইভার দেখার জন্য পুরো সপ্তাহ অপেক্ষা করা। ফলের বিচি খেয়ে ফেললে দুশ্চিন্তা করতাম, পেটের ভেতর গাছ হবে কি না; মাথায় মাথায় ধাক্কা লাগলে শিং গজানোর ভয়ে আবার নিজের ইচ্ছায় ধাক্কা দিতাম; আমাদের কারও দাঁত পড়লে ইঁদুরের গর্তে দাঁতটা দিয়ে আসতাম, নাহলে আমাদের দাঁত গজাবে না। কেউ বসে থাকলে তার মাথার ওপর দিয়ে ঝাঁপ দিতাম, যাতে সে আর লম্বা হতে না পারে। বিকেলে কুতকুত, কানামাছি ও গোল্লাছুট না খেললে বিকেলটা যেন মাটি হয়ে যেত।মারবেল, লুডু না খেললে কি হয়!রাতে ঘরের কোণে বাঁশবাগানে অথবা আমগাছের ডালে বসে থাকা হুতোম প্যাঁচার ডাক যেন এখনো কানে ভেসে ওঠে। আহা, ডাক শুনে ভয়ে কতই–না মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে যেতাম॥ কি করে ভুলে যাই সেই ডিসেম্বর মাসের কথা॥ এ ছাড়া সঙ্গে ছিল আমাদের কালার ফুল ডিসেম্বর যে ডিসেম্বর পাওয়ার আশায় আমাদের অপেক্ষা করতে হতো দীর্ঘ ১১ মাস। বার্ষিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হতো আমাদের ডিসেম্বর। বার্ষিক পরীক্ষার শেষ দিন আমরা ছিলাম পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ ছিল না কোনো জীবনের চাওয়া, না পাওয়ার হিসাব ছিল না কোনো পিছুটান। দুরন্তপনায় ছুটতাম ডিসেম্বরের শেষের দিনগুলো; হিসাব ছিল শুধু একটাই, বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট আর জানুয়ারির ১ তারিখে নতুন বইয়ের ছোঁয়া পাওয়ার।
পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরতেই দৌড় দিতাম খেলার মাঠে; কোদাল, পিঁড়ি, কাঠি নিয়ে উইকেট বানাতাম। সবার কাছ থেকে টাকা তুলে বল আর স্কচটেপ কিনতাম। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যা, খেলার মধ্যেই ডুবে থাকতাম। কখনো ভাত খেতে দুপুরে বাড়িতে যাওয়া হতো, কখনো যাওয়া হতো না।সন্ধ্যার পর আবার আমরা বেরিয়ে পড়তাম। তীব্র শীতে রাত জেগে আগুনের পাশে বসে মা-চাচিদের ধান সেদ্ধ করা দেখা এক অন্যরকম অনুভূতি। চারদিকে খড়ের স্তূপ আর তার মধ্যে লুকোচুরি খেলা ছিল অন্যতম। কখনো কখনো কম্বলের নিচে লুকিয়ে গল্পের বই পড়া হতো। আবার কখনো খড় জ্বালিয়ে আগুন পোহাতাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যাডমিন্টন, গোল্লাছুট, বউচি খেলে ঘরে ফিরতে হতো। একটু দেরি হলে বকা শুনতাম।আমাদের সেই ডিসেম্বরের দিনগুলো এখন হারিয়ে গেছে। এখন ডিসেম্বরেও ক্লাস থাকে, পরীক্ষা থাকে, থাকে অ্যাসাইনমেন্ট ও প্রেজেন্টেশনের ডেডলাইন, থাকে অফিস। জীবনের প্রয়োজনে ব্যস্ত হয়েছে সবাই। এখন আমাদের ডিসেম্বরের সকালগুলো কাটে ঘুমে, ক্লাসে অথবা অফিসে। এখন আর ঘুম থেকে উঠে আমরা আম্মুর হাতের শীতকালীন পিঠা খেতে পারি না এমনকি এখন সকালে উঠে আম্মুকে দেখি না। বিকেলগুলোতে আমরা আগের মতো মাঠে যেতে পারি না, যেতে হয় প্রাইভেটে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত আমরা চার দেয়ালে কাটিয়ে দিই। সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা, ছুটছি তো ছুটছি।
সময়ের পরিক্রমায় পার হয়ে গেছে আমাদের শৈশব। ব্যস্ততা বেড়েছে গ্রাম এখন নগরায়ণ হয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে হারিয়ে গেছে সেই আলোবিহীন শৈশব, হারিয়ে গেছে সেই ডিসেম্বরের দিনগুলো! এখনকার প্রজন্মের কাছে নব্বইয়ের শৈশব হয়তো রূপকথার গল্প মনে হবে। সেই দিনগুলি আমাদের পাড়ার বন্ধু গুলো এক সঙ্গে অনেক সবাই কাটিয়েছে কিন্তু এখন আর সেই সুযোগ নেই তাদের সাথে কোন যোগাযোগ নেই কোথায় কে হারিয়ে গেছে কেউ জানে না॥ হয়তো কেউ কোনো একদিন কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে ডিসেম্বরের কোনো এক বিকেলে অফিসের বারান্দায় বসে কফির চুমুতে লেখাটি পড়তে পড়তে হারিয়ে যাবে তার সেই ছেলেবেলায়, সেই হারিয়ে যাওয়া।শৈশবে সে মুহূর্তে নস্টালজিক হয়ে হয়তো দীর্ঘশ্বাস ফেলে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের দুটি লাইন আক্ষেপে বলে উঠব দিন গুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি। আমরা প্রায় সকলেই একমত যে ছাত্রজীবন বা স্কুল লাইফ হল জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। সাংসারিক জটিলতাও জীবনের বাস্তবিক খুঁটিনাটি থেকে চিন্তামুক্ত চিত্ত এই ছাত্রজীবন । স্নিগ্ধ বাতাসের মতোই নির্মল এই ছাত্রর জীবন।স্কুল লাইফ বা ছাত্রজীবনে কাটানো সময়গুলো তাই প্রায় অধিকাংশ মানুষের কাছেই সবথেকে আনন্দঘন মুহূর্ত সময় সাথে সাথেচাস্ত ভাই মামাতো ফুপাতো ভাই সবাই যার যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সবাইকে যার যার নিজ নিজ সাংসারিক জীবন নিয়ে অনেক ব্যস্ত হয়ে তবে এখনকার জীবনটা অনেক ভিন্ন রকম কিছু স্কুলের বন্ধু এখনো বন্ধুত্ব বজায় রেখেছে তার মধ্যে দুজনের নাম স্মরণ করতে পারি একজন হল আবুল হোসেন এর জন্য শহিদুল ইসলাম এখনো আমার সাথে তাদের যোগাযোগ আছে প্রতিনিয়ত কথা হয় আবুলের সাথে বছর কয়েকের মধ্যে কয়েকবার দেখা হয়েছে কিন্তু ছোট শহিদুল ইসলামের সাথে দেখা হয়নি। লেখাটি শেষ করব হেমন্ত দার গানের দুটো লাইন দিয়ে ভাবছিলাম শুধু ভাবছিলাম ভাবনার হাতে ভর দিয়ে ভাবনা গুলো কাছে নিয়ে আমি ভাবছিলাম শুধু ভাবছিলাম॥

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ

সন্ন্যাসী সেইন্ট নিকোলাসের বড়দিনের সান্টা হয়ে ওঠার গল্প : সৌগত রাণা কবিয়াল।।।

চোখের সামনে একটি রক্তাক্ত ক্রুশবিদ্ধ মানুষের নিথর শরীর এড়িয়ে এক পবিত্রময় আলোর প্রশান্তি, সেই দুঃখী মানুষটির মুখ জুড়ে! শান্ত স্থীর মোমবাতির আলোয় সমস্বরে প্রার্থনা সুর, অদ্ভুত এক মায়াজালের মতো সুখ ছড়াতো মনে!
চারিদিকে ঝকঝকে ব্যস্ত পথ- পথের মানুষ.. সব ঠেলেঠুলে পাড়ার স্কুল গীর্জায় চুপচাপ ঢুকে যেতাম প্রার্থনা গৃহে!
পুরোনো শহরের ৪৭ নম্বর বাড়িটিতে যখন আমার ছেলেবেলা, বলতে গেলে ষোলআনা বাঙালি পরিবারে বেড়ে  আমার উৎসুক শিশু চোখে তখন ‘বড়দিন’ মানে একটি বিশাল প্রশ্ন চিহ্ন! আমাদের পাশাপাশি কিছু খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী পরিবারের উৎসব উৎযাপনটা তখন আমার শিশুমনে বেশ আকর্ষণীয় ও লোভনীয় মনে হতো!  সারাবছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম, সকাল হলেই স্কুল ছুটির দিনে মজার মজার বাহারী কেক-মিষ্টি-চকলেট-কমলা লেবুর জন্য। মা বলতেন, “আজ থেকে বছরে দিন বড় আর রাত ছোট হতে শুরু হলো, বুঝলি”।
দিনের এই ছোট বড় হওয়া নিয়ে তখন আমার তেমন কোন মাথা ব্যথা ছিলো না, যতোটা ছিলো সন্ধ্যে হলে এক ঝাঁক তরুণ-তরুণীর সমস্বরে প্রার্থনা গান নিয়ে। বিশাল বাড়িটাতে আমরা সব শিশুরা মিলে বারান্দার গ্রিল ধরে ভিড় করে নিচের পাকা দূয়ারে মুগ্ধ হয়ে গান শুনতাম। সব মিলিয়ে “বড়দিন” ব্যাপারটাই ছিলো অসাধারণ এক আনন্দের। আমার কাছে কোথায় যেন “বড়দিন” কে মনে হতো পৃথিবীর সব মানুষের মন ভালোর দিন।

প্রায় দুহাজার বছর আগে রোমীয় সম্রাটের আদেশে নাসরত শহর থেকে পরিপূর্ণ বেথলেহেম শহরে গিয়ে আশ্রয়হীন হলেন এক দম্পতি, কাঠুরে যোসেফ আর তার স্ত্রী মেরি । যাত্রার মাঝপথেই এক গোয়ালঘরে মাতা মেরীর প্রথম সন্তান হিসেবে জন্ম নিলেন বিশ্বে শান্তির বাণী ছড়িয়ে দিতে
খ্রিষ্ট ধর্মের প্রবর্তক, ইতিহাসে ‘ঈশ্বরের পুত্র’ নামে খ্যাত ভগবান ‘যিশু খ্রিষ্ট’!
যাকে জন্মক্ষণে পান্থশালায় স্থান না পেয়ে যাবপাত্রে শুইয়ে রেখেছিলেন তার মাতা মেরি! ভগবান যিশুর জন্ম-সংক্রান্ত প্রথম দিকের চিত্রগুলিতে গবাদি পশু ও যাবপাত্র পরিবৃত একটি গুহায় যিশুর জন্মদৃশ্য বহুল প্রচলিত।
ধারণা অনুযায়ী, এটি বেথলেহেমের চার্চ অফ দ্য নেটিভিটির অভ্যন্তরে। কথিত যে এক স্বর্গদূত বেথলেহেমের চারিপার্শ্বস্থ মাঠের মেষপালকদের যিশুর জন্ম সম্বন্ধে অবহিত করেন, এই কারণে তাঁরাই সেই দিব্য শিশুকে প্রথম দর্শন করার সৌভাগ্য অর্জন করেন!
মথিলিখিত সুসমাচার অনুসারে,
‘বেথলেহেমের তারা’ নামে পরিচিত একটি রহস্যময় তারা কয়েকজন ম্যাজাইকে (জ্যোতিষী) পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেন শিশু যিশুর কাছে, যারা স্বর্ণ, গন্ধতৈল ও ধূপ নিয়ে ঈশ্বরের পুত্রকে দর্শন করতে যান।

ক্রিসমাস অলঙ্কারে ক্রিসমাস ট্রি (পাইন গাছ) বড়দিনের ঘর সাজানো বড়দিনের উৎসবকে পূর্ণতাএনে দেয়। পাশাপাশি
আলোর মোমবাতি যা কিনা মানুষের কাছে প্রেম, প্রার্থনা, আবেগের প্রতীক! বড়দিনের দিন খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীদের কাছে মোমবাতি  ‘খ্রীষ্টের আলো’ হিসাবে পবিত্র । আগের রাতে নানান রংচঙয়ে ছোট ছড়া বাতি দিয়ে সাজানো ক্রিস্টমাস ট্রি, ছোট ছোট ক্রিসমাস বেল দিয়ে সাজানো হয়,  এই ঘণ্টাটি আভাস দেয় “বড়দিন” এসে গেছে।
বড়দিনে সান্টার লাল টুপি আজকের শিশুদের খুব মন-প্রিয়।
আজকের আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বেও ‘বড়দিন’ প্রকৃতিগতভাবে একটি খ্রিষ্টীয় ধর্মানুষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও, একাধিক অ-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ও মহাসমারোহে উৎসবটি পালন করে থাকে! উপহার প্রদান, সংগীত, বড়দিনের কার্ড বিনিময়, গির্জায় ধর্মোপাসনা, ভোজ, এবং বড়দিনের বৃক্ষ, আলোকসজ্জা, মালা, মিসলটো, যিশুর জন্মদৃশ্য, এবং হলি সমন্বিত এক বিশেষ ধরনের সাজসজ্জার প্রদর্শনী আধুনিককালে আমাদের শহরে বড়দিন উৎসব উৎযাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশ যা কিনা বিগত কয়েকটি শতাব্দীতে বিশ্বে বিভিন্ন অঞ্চলে বড়দিনের অর্থনৈতিক প্রভাবটিকে ধীরে ধীরে প্রসারিত করেছে ।

ইতিহাস বিখ্যাত চিত্রশিল্পে যিশুর জন্মদৃশ্যটিতে মেরি, জোসেফ, শিশু যিশু, স্বর্গদূত, মেষপালক এবং যিশুর জন্মের পর বেথলেহেমের তারার সাহায্যে পথ চিনে তাঁকে দর্শন করতে আসা বালথাজার, মেলকোয়ার ও ক্যাসপার নামক তিন জ্ঞানী ব্যক্তির চরিত্র দেখা যায়।

পৃথিবীতে এসে মানুষের প্রতি এক অদ্ভুত ভালোবাসার দ্যুতি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই ভগবান যিশুর আগমন হয়েছিল !

আর বড়দিন বলতে ঈশ্বরের পুত্র ভগবান যিশুর পাশাপাশি আজকের পৃথিবীতে আরেকটি বহুল জনপ্রিয়  চরিত্র “সান্টা দাদু”!

ছোটোদের বড়দিন মানেই  সান্টাক্লজ(সান্টা দাদু), যার কাঁধে থাকে ঝোলা ভর্তি ব্যাগ, পরনে লাল রঙের পোশাকের পাশাপাশি মাথায় লাল টুপি, চোখে চশমা ও এক গাল সাদা দাঁড়ি । যিনি ছিলেন  তুরস্কের পাতারা নামক অঞ্চলে জন্ম নেয়া সেইন্ট নিকোলাস নামের একজন সন্ন্যাসী, শিশুদের প্রতি পবিত্রতা ও উদারতার জন্য তিনি খুবই জনপ্রিয় ছিলেন ।
২৪ শে ডিসেম্বর গভীর রাতে থলে ভর্তি করে উপহার নিয়ে ঘুরে বেড়ানো সান্টার দাদুর কাছ থেকে চকলেট ও উপহার যেন বাচ্চাদের জন্য দারুণ আনন্দের দিন…! আগের দিন রাতে বিছানায় ঘুমোতে যাওয়ার আগে দাদু সান্টার কাছে কি কি চাইবার চেয়ে টুপ করে ঘুমিয়ে পরে সকালে সেই গিফটের জন্য অপেক্ষা করা!
খ্রিষ্টীয় ধর্মের অন্তর্গত না হলেও সান্টা নামটি খুব গুরুত্বপূর্ণ “বড়দিন” এর উৎসবের সাথে!
২৪ শে ডিসেম্বর গভীর রাতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে নানা ধরনের উপহার দেওয়ার জন্য তিনি বিখ্যাত ছিলেন ।
সান্টাকে নিয়ে বাচ্চাদের মনে মাতামাতির শেষ নেই । সান্টার বসবাস বরফে ঢাকা উত্তর মেরুতে!
১৮৮১ সালে থামস নামে একজন আমেরিকান কার্টুনিস্টের আঁকা ছবিতে ক্রিসমাসের সন্ধ্যাবেলায় নর্থ পোল থেকে আটটি বলগা  হরিণ টানা স্লেজ গাড়িতে আকাশে চড়ে বাচ্চাদের বাড়ির চিমনি দিয়ে ঢুকে উপহার রেখে যেতেন সান্টা দাদু..!

পৃথিবীতে ভালোবাসার কথা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ইতিহাসের পাতায় কোন চরিত্রে সংখ্যার সীমাবদ্ধতা নেই।
একজন যীশু, যিনি তার যন্ত্রণাময় মৃত্যুতেও তার হত্যাকারীদের মানবিক ভালোবাসার কথা অকপটে বলে গেছেন রক্তাক্ত আহত ঠোঁটে…!
আরেকজন সাধারণ মানুষ সন্ন্যাসী
সেইন্ট নিকোলাস (সান্টা দাদু), মানুষের মাঝে পারস্পরিক ভালোবাসা ও শিশুদের পবিত্রতায় মানুষকে ভেদাভেদহীন ভালোবাসার বাঁধনের কথা রেখে গেছেন ইতিহাসের পাতায়।

আসলে সেইন্ট নিকোলাস (সান্টা দাদু) – কিংবা ঈশ্বর পুত্র যিশু…..

সব মিলিয়ে “বড়দিন” শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বীর উৎসব নয়, এটি একটি ভালোবাসার দিনের গল্প..একটি সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন দেখার গল্প।

সবাইকে বড়দিনে শুভেচ্ছা। ভালোবাসাই হোক পৃথিবীর একমাত্র অনুশাসন।

সৌগত রাণা কবিয়াল
(কবি সাহিত্যিক ও কলামিস্ট)

Share This
Categories
উপন্যাস গল্প

দামাল মেয়ে কুহেলি (ধারাবাহিক উপন্যাস, অষ্টাদশ পর্ব) : দিলীপ রায় (৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

সেই আলাপ ঘনীভূত হলো । সম্পর্কের স্থায়ীকরণে বাদ সাধলো প্রদীপ্তের পরিবার । প্রদীপ্তের বাবার একটাই কথা, “তিনি কোনো অ-ব্রাহ্মণ মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দেবেন না ।“ পুবালী পড়ে গেলো মহা ফাঁপড়ে । বিয়ের ব্যাপারে প্রদীপ্তের বাড়ির গড়িমসি অবলোকন করে, পুবালীর বাবা তাকে অন্যত্র বিয়ে দিতে উঠে পড়ে লাগলেন । পুবালীও নাছোড়বান্দা, “নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসবে না ।“ মন ভেঙ্গে গেলো পুবালীর । কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের ন্যায় দিশাহারা । পুবালী বাড়িতে অথচ সব সময় দুশ্চিন্তায় মনমরা । পুবালীর দিনগুলি খুব হতাশায় কাটছিল । পারিবারিক মতবিরোধের কারণে তাদের পবিত্র দুটি জীবন ছন্নছাড়া ! দুজন একে অপরের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেলো ।
অন্যদিকে প্রদীপ্তের মানসিক স্থিতি তথৈবচ ! পুবালীকে কাছে না পাওয়ার যন্ত্রণায় পুবালীর মতো সেও দিশেহারা । অমানসিক বিড়ম্বনায় মুষড়ে পড়লো প্রদীপ্ত । পুলিশের চাকরির আবেদন করলো না । বাড়িতে থেকে স্বাভাবিক জীবন যাপনের কথা বেমালিম ভুলে গেলো । বাবার পরিষ্কার নির্দেশ, “পুবালীকে বিয়ে করলে বাড়ির মায়া তাকে ত্যাগ করতে হবে ।“ কয়েকদিন ভাত জল খাওয়া বন্ধ । মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লো । বেশ কিছুদিন পর ফন্দি আঁটতে লাগল, “অতঃপর কী করা যায় ?” তারপর গোপন সূত্রে খবর পায়, কোচবিহারের এই আশ্রমে সব সময়ের জন্য শিক্ষিত লোক দরকার । খবর পেয়ে মনে মনে প্রদীপ্ত সিদ্ধান্ত নিলো, বাকী জীবন সে আশ্রমেই কাটিয়ে দেবে । আর তা ছাড়া তাকে বিরক্ত করতে কেউ খুঁজে পাবে না । খবরটি জানার পর কাউকে খবরটি শেয়ার করেনি । এমনকি পুবালীকেও জানায়নি । প্রদীপ্তের ধারণা, খবরটি পাঁচ-কান হলে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বানচাল হয়ে যেতে পারে ! তাই ইচ্ছাকৃত কাউকে জানায়নি ।
একদিন খুব ভোরে সকলের অগোচরে প্রদীপ্ত বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা কোচবিহার ।
************************************************
তারপর কোচবিহারের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত এই আশ্রমের মহারাজ । আশ্রমের নিয়ম অনুযায়ী, প্রদীপ্ত জীবনে কোনোদিন স্থায়ীভাবে জীবন সঙ্গিনী নিয়ে ঘর সংসার বাঁধতে পারবে না বা আশ্রমে জীবন সঙ্গিনী নিয়ে বাকী জীবন কাটাতে পারবে না । তাঁকে ঘর সংসারের চৌকাঠ মাড়ানো যাবে না । সাংসারিক জীবনের চৌহদ্দির অনেক দূরে থাকতে হবে । আশ্রমে এই রকম একটি ধরাবাঁধা জীবনের মধ্যে দিব্যি ছিল প্রদীপ্ত ! দিনগুলি ভালই কাটছিল । কিন্তু হঠাৎ পুবালীকে দেখে প্রদীপ্ত রীতিমতো অবাক ! অবাক দৃষ্টিতে অনেকক্ষণ পুবালীর দিকে তাকিয়ে রইলো । মুখের ভাষা বন্ধ । কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না ! মনের ভিতর তোলপাড় ! পুবালীকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন প্রদীপ্তের মনে আবার চাগাড় দিলো । এখন কী করবে ? পুবালীকে নিয়ে ঘরবাঁধার স্বপ্ন মন থেকে একেবারেই উড়িয়ে দিতে পারছে না । অথচ পুবালীকে আপন মানুষের মতো কাছে টেনে নিতেও দ্বিধা-দ্বন্দ ! খুব অসহায়ের মধ্যে প্রদীপ্তের মানসিক অবস্থা !
কুহেলি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে দুজনের মাঝখানে ঢুকে পুবালীর দিকে তাকিয়ে বলল, “তাড়াতাড়ি টিফিন খেয়ে নে । আবার বেরোতে হবে ।“
“এবার কোথায় যেতে হবে ?” জিজ্ঞাসা করে জানতে চাইলো পুবালী ।
“দেখা যাক । তুই তাড়াতাড়ি টিফিন খেয়ে বাইরে বেরিয়ে আয় ।“ পুবালীকে কথাটা বলে কুহেলি বাইরে বেরিয়ে যাবে এমন সময় প্রদীপ্ত বলল, “আজ আপনাদের অন্য কোথাও না গেলে বরং ভাল হয় ।“
কেন ? আশ্রমে আমাদের কোনো কাজ আছে কী ? কাজ থাকলে জানাবেন । সেই ক্ষেত্রে আমরা আর বাইরে বের হবো না ।
দরকার নেই । তবে অনেকদিন পর পুবালীর সঙ্গে দেখা হলো, তাই তার সাথে দুদণ্ড বসে কথা বলতে চাই ।
বেশ তো ! সেক্ষেত্রে পুবালী আশ্রমে থাক । আমরা বরং অন্য কাজ সেরে আসি । এখন বের না হলে খাওয়ার আগে ফিরতে পারব না ।
এই কথা শুনে পুবালী একবার প্রদীপ্তের দিকে আর একবার কুহেলির দিকে তাকিয়ে বলল, “না, তা হয় না । আমিও তোমাদের সাথে যাবো ।“
পুবালীর কথা না শোনার ভান করে কুহেলি ঘর থেকে বের হয়ে সোজা রাস্তায় । তারপর ভাবছে অতঃপর তার কী করণীয় ! ভেবেছিল বাজারের দিকে গিয়ে এলাকা সম্বন্ধে খোঁজ খবর নেবে । কুহেলির পক্ষে একা একা সেটা আর হবে না । তাই নিছক পায়ে হেঁটে আশেপাশের মানুষজনের খোঁজ খবর নিতে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করলো । কিছুটা হাঁটার পর কুহেলির চোখে পড়লো রাস্তার পাশে একটা প্রকাণ্ড বট গাছ ! তার মনে হচ্ছে গাছটির বয়স দুই শতাধিক হবে ! বট গাছের ডাল থেকে শিকড় মাটিতে ঝুলে পড়েছে । গ্রামের বাচ্চা ছেলেমেয়েরা সেই শিকড় ধরে ঝুলছে । বট গাছটার নীচে অনেক ছেলেমেয়ের আনাগোনা । বট গাছটার গোড়ায় বাঁশ দিয়ে বসার জায়গা । সেখানে গ্রামের কয়েকজন বয়স্ক মানুষ বসে রয়েছেন । তাঁরা একে অপরের সাথে আলাপচারিতায় ব্যস্ত । জায়গাটার পরিবেশ দেখে কুহেলির খুব ভাল লাগলো । বট গাছ ঘিরে গ্রামের মানুষের অবসর বিনোদনের সুন্দর একটি পরিবেশ । দূরে বিশাল জলাশয় । আশপাশে চাষের জমি । বটগাছের উল্টোদিকে একটা টিউবওয়েল । সেখানে জল নিতে গ্রামের বধূদের ভিড় । কল পাড়ে দাঁড়িয়ে তাঁদের নিজেদের মধ্যে গোপন কথার আদান প্রদান । সংসারের কিছু কথা ব্যক্ত করার জন্য বধূরা মুখিয়ে রয়েছেন । কতক্ষণে তাঁদের কথা ব্যক্ত করবেন, তার একটা টানাপোড়েন নিজেদের মধ্যে চলে । কাখের কলসীতে জল ভড়ে গেলে নিজ নিজ গন্তব্যে তাঁরা আবার ফিরে যাচ্ছেন । দৃশ্য দেখে কুহেলির খুব ভাল লাগল । মনটায় একটা অভূতপূর্ব আনন্দ !
হঠাৎ ! হঠাৎ পেছন থেকে উস্কোখুস্কো চুল ও নোংরা ড্রেসের বয়স্ক একজন মানুষ এসে কুহেলিকে বললেন, “আপনি কী এখানে নতুন ?”
ঐরকম অদ্ভূত ধরনের মানুষ দেখে কুহেলি প্রথমে ভয় পেয়ে গেলো । তাই কালবিলম্ব না করে হনহন করে হেঁটে সোজা আশ্রমের দিকে । দ্রুত পায়ে হাঁটার সময় বারংবার পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখছে, পাগল মানুষটা তাকে অনুসরণ করছে কিনা ? একরকম হাঁপাতে হাঁপাতে গেট দিয়ে আশ্রমে প্রবেশ করলো ।
কুহেলিকে হাঁপাতে দেখে মাসি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলো, “তুমি এ্যাতো হাঁপাচ্ছো কেন বাছা ?”
“গাঁয়ে হাঁটতে বের হয়েছিলাম । বটগাছ তলা যেতেই একটি পাগল মানুষ আমার দিকে বিশ্রিভাবে তাকাচ্ছিল । পাগল মানুষটাকে দেখে রীতিমতো ভয় পেয়ে আমি সোজা আশ্রমে ফেরার রাস্তায় এসে উঠলাম । তারপর একরকম ছুটতে ছুটতে আশ্রমে ফিরে এলাম ।“ কথাগুলি বলে কুহেলি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো ।
মাসি কুহেলিকে ঘরে নিয়ে বসালো । চা বানিয়ে কুহেলির দিকে ধরে বললেন, “চা খেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করো । আমি পাগল সম্বন্ধে তোমাকে সব জানাচ্ছি । পাগলের জীবনের মর্মান্তিক কথাগুলি শুনলে তাঁর উপর তোমার হৃদয়ের মমতা জাগ্রত হতে বাধ্য ।“
চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিয়ে নড়েচড়ে বসলো কুহেলি ।
মাসি জানালেন, “পাগল মানুষটি আসলে পাগল নয় । দীর্ঘদিন নাওয়া-খাওয়া না হওয়ার দরুন চেহারায় তার প্রভাব পড়েছে । কিন্তু তিনি একজন সজ্জন মানুষ । শোনা যায়, বাড়িতে নিজের স্ত্রী তাঁকে ঠকিয়ে তাঁর সমস্ত সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়ে বাড়ি থেকে লোক দিয়ে তাড়িয়ে দেয় । এই মহিলার প্রেমে পাগল হয়ে নাকি ভদ্রলোক আগের স্ত্রী-সন্তানদের ত্যাগ করে কোচবিহারে পালিয়ে আসেন এবং এই মহিলার সাথে ঘর বাঁধেন । এই স্ত্রীর বোন কোচবিহার
এলাকার ডানপিটে মহিলা । তার প্ররোচনায় ভদ্রলোকের বর্তমান বৌ দিনরাত তাঁকে জ্বালাতন করতো । মানসিক যন্ত্রণা দিতো । বৌয়ের অত্যাচারে অতীষ্ট হয়ে একসঙ্গে বাঁচার আশা নিরাশায় পরিণত হয় । তাই লজ্জায় বাড়ি ফিরে না গিয়ে, এই গাঁয়ের বটগাছ তলায় আশ্রয় নেয় । গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে কাজকর্ম করে । খড়ের ঘরের ছাউনী বাঁধে । কারও জমিতে কাজ করে । তবে তাঁর সততা দেখে গ্রামের মানুষেরা ভদ্রলোককে গ্রামের শেষ মাথায় এক ফালি বসত বাড়ির জমি ঠিক করে দিয়েছে । ঘর বানিয়ে তিনি এই গ্রামে পাকাপাকিভাবে বাস করতে চান । যতদিন ঘর বানানো সম্ভব হচ্ছে, ততদিন এই বটগাছ তলায় কাটিয়ে দিতে চান ।
ভদ্রলোকের বর্তমান স্থিতির কথা শুনে কুহেলির চোখে জল । ঠিক সেই মুহূর্তে পুবালী এসে বলল, “তুমি কোথায় বের হবে, বলছিলে ?”
এইমাত্র গ্রাম থেকে ঘুরে এলাম । একটু পরে আবার বের হওয়া যাবে । আশ্রমের আশেপাশের লোকজনদের দেখা এবং এলাকা সম্বন্ধে অবগত হওয়া !
ঠিক আছে । তবে পরেই বের হওয়া যাবে ।
তারপর দুপুরের খাওয়া সেরে কুহেলি ভাবলো, পাগল লোকটাকে একবার দেখে আসা যাক । যেই ভাবনা, সেই আশ্রম থেকে বের হয়ে সোজা রাস্তায় । আশ্রমের মহারাজ কুহেলিকে রাস্তায় দেখতে পেয়ে তার কাছে এলো এবং বলল, “এভাবে যখন খুশি আশ্রম থেকে বেরিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না । আপনাদের পেছনে কিন্তু অজানা আগন্তুকেরা ঘোরাফেরা করতে পারে । সেক্ষেত্রে বিপদের আশঙ্কা ! সুতরাং যখন কোথাও বের হবেন, একা একা যাবেন না প্লিজ । সঙ্গে কাউকে নিয়ে যাবেন । কাউকে না পেলে, আপনার বান্ধবীকে অন্তত সঙ্গে রাখবেন । তাহলেও অনেকটা নিরাপদ অনুভব করতে পারবেন ।“ বলেই মহারাজ আশ্রমে ঢুকে গেলেন ।
তবুও পাগল মানুষটাকে নিয়ে কুহেলির অহেতুক কৌতুহল থামছে না । অথচ মহারাজের কথাটা ভাববার বিষয় !
( ক্রমশ )

Share This