Categories
গল্প

মৃত্যঞ্জয় : ডঃ অশোকা রায়।

কফির আড্ডায় আজ সবাই আছে নেই মৃত্যুঞ্জয়।
অবসরের পর আমরা সবাই কলকাতায়, দেশ- বিদেশের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্ত থেকে।
কর্মজীবন আমাদের সাত বন্ধুর জোড়টা আলগা করেছিল। তবে চোখের দেখা না থাকলেও প্রাণের বাঁধন বজায় রেখেছিল ইন্টারনেট। সুতরাং বন্ধুত্বে ভাঁটা সেভাবে পড়ে নি। স্কাইপ বা ভিডিও কলে আমরা পরস্পরের মেদ-বাহুল্য ঘটার ঘটনা যেমন জানতে পারতাম, তা,অপরাধী বন্ধুর পক্ষ থেকে লোকানোর যতোই চেষ্টা করা হোক না কেন, আবার কারো ওজন দ্রুত কমলে সেটাও জানা থাকতো । জ্ঞান বরিষণের হাত থেকে রেহাই পেতে তার কাজের অজুহাতে ভিডিও ক্যামেরার সামনে থেকে পালানোর কথা বাকিদের কাছে অজানা থাকতো না। সকলের নাড়িনক্ষত্র আমাদের প্রত্যেকের কাছে খোলা খাতার মতোই ছিল। কথাটা যে কতটা ভুল ছিল তা’ বুঝেছি অবসরের পর। তবে সে বোঝা অলৌকিকভাবে।
অবসরের পর আমরা সবাই দেশের মাটিতে। মৃত্যঞ্জয় রয়েছে মেক্সিকোতে। ওর বিদেশিনী বৌয়ের চাকরি আর কয়েক মাস আছে। মৃত্যুঞ্জয় আর তার বৌ লিসা ঠিক করেছে ভারতে ফিরবে। আর তো কয়েক মাস। তারপর সপ্তরত্নের সভা সস্ত্রীক জমজমাট। বিক্রমাদিত্যের নবরত্ন সভা হার মেনে যাবে। আমাদের স্ত্রীরা যমের মুখে ছাই দিয়ে বহাল তবিয়তে বর্তমান। সুতরাং দুরন্ত মৃত্যুঞ্জয় ঘরে ফিরলে আমরা সাত দু-গুণে চোদ্দো। নবরত্ন সভাকে হাসিহুল্লোড়ের রেটিং এ পিছে রাখতেই পারি।
বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। আলিপুরের এক কফি-বারিস্তায় আমাদের নতুন আড্ডা। আগের আড্ডা কলেজ স্ট্রিটের কফিহাউস আমরা ছেলে-ছোকরা আর কিছু ইন্টেলেকচুয়াল লোকজন কে ছেড়ে দিয়েছি। অবশ্য কোনকালেই আমরা যথাযথ ইন্টেলেকচুয়াল ছিলাম না। তবে ইন্টেলেকচুয়ালের ভান করাটা প্যাশন এবং ফ্যাশন ছিল। তাই ব্রাত্য হওয়ার ভয়ে কফি হাউসের কাঠের সিঁড়ি ভাঙ্গতাম।
এখন সেই ফ্যাশনের মোহ নেই, প্যাশন উধাও। বয়স বেড়েছে। আমরা সবাই দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। এতোটা পথ উজিয়ে যাওয়ার এনথু একেবারে লেস।
তাই কফিহাউস ছেড়ে আলিপুরের কফি-বারিস্তায় আমাদের আড্ডা। রোজ নয়, সপ্তাহে দুদিন। আড্ডার অত সময় আমাদের মধ্যে তিনজনের নেই। আমার ছেলের চাকরি খোদ কলকাতার বুকে। একে নিজের বৌয়ের ফরমায়েশ, তার ওপর বৌমার চিকণ গলায় আবদারের সুরে বলা তার নিজস্ব জিনিসের ফর্দ। কায়দা করে জুড়ে দেয় প্রশংসা, ” বাবা তোমার বাজার করার ফরম্যাট টা সুন্দর। তোমার ছেলে কে কেন শেখাও নি? কিছু আনতে বললে আগেভাগে ফরমান জারি করে, ওসব কোথায় পাওয়া যায় জানি না। বাবা কে বলো। ” অগত্যা বাজারে দরকারী অ- দরকারী কাজে আমার কাটে পাক্কা দু ঘন্টা। তারপর কিছু অবসর। চারটে বাজতে না
বাজতেই দুটো ক্ষুদে দস্যির আগমন। পার্ক আর ইনডোর গেমস। কিন্তু সেটা আমার রিলাক্সেশন। আসলের চেয়ে সুদ বেশি। বাদবাকি দুজনের ঐ একই অবস্থা। একটু ঊনিশ-বিশ।
হ্যাঁ যে কথা বলছিলাম। সেদিন আড্ডা তুঙ্গে বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোবেল পাওয়া নিয়ে। চলে এসেছে অমর্ত্য সেনের প্রসঙ্গ। কফির পেয়ালায় আলোচনার তুফান। হঠাৎ আমাদের টেবিলের সামনে মৃত্যুঞ্জয়। সেই দীর্ঘ দেহ। ঠোঁটে মুচকি হাসি। আমরা ছ’ জন হতবাক। সায়ক বলে, “তোর তো ফিরতে কয়েক মাস বাকি! ” মৃত্যুঞ্জয় বলে,” আগে ফিরতে মন চাইছিল বড়ো। কেন তোরা খুশি হসনি? ” নবারুণ, উদয়, অমিত, কৌশিক সমস্বরে বলে, ” তুই ভাবলি কি করে এ কথা। আমরা বলে অপেক্ষা করে আছি, কবে আসবি তুই “? মৃত্যঞ্জয় এবার আমার দিকে চায়, ” কি করে প্রদীপ, এমন করে চেয়ে আছিস যে। এক কাপ কফি তো বল। আর কাজুবাদামও অর্ডার কর। ” আমরা ভালো করে জানি মৃত্যঞ্জয়ের পছন্দ। আগে বলতো, কফির সাথে কাজু হোয়াটস এ্যা ফ্যান্টাস্টিক কম্বিনেশন”! একটু পজ দিয়ে বলতো, “খেতে খেতে আমি ফ্যান্টাসির দুনিয়ায় চলে যাই। “
আমি কফি- কাজুর অর্ডার দিই।
ওগুলো আসার আগে মৃত্যুঞ্জয় বন্ধুদের সাথে মেক্সিকোর গল্পে মেতেছে। আমার মনে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল। সকালের ফোনটা কি ফেক ফোন? ঐরকম বদমাইশি কেউ কারও সাথে করে! ভেবছিলাম, বন্ধু দের একটু পরে জানাব, কেউ একজন মেক্সিকো থেকে জানিয়েছে, “মৃত্যঞ্জয় ভৌমিক ইজ নো মোর। ম্যাসিভ হার্ট এ্যাটাক”। আর এখন মৃত্যুঞ্জয় আমার সামনে বসে কলকাতার কফি-বারিস্তায় কাজু খাচ্ছে! ভাগ্যিস খবরটা বন্ধু দের আগে দিই নি। লেগপুলিং কে আমার বড়োই ভয়। ভেবেছিলাম বাড়ি ফেরার আগে দেব। আজ দুপুরে ভাত খাইনি ফোন রিসিভ করে মন খারাপ।
ভাবনার মধ্যে আমার ফোন টা বাজছে। ফোন বার করে দেখি, কলার লিসা। “হ্যালো”. ” প্রদীপ, মৃত্যুঞ্জয় চলে গেছে। ফিউরানাল শেষ হলো। ইন্ডিয়ায় ফেরার জন্য ফিউরিয়াস হয়ে যাচ্ছিল। আমি বুঝিনি। বোঝাতাম আর তো কয়েক মাস। মুখে কিছু বলত না। কিন্তু রেস্টলেস হয়ে গিয়েছিল বোধহয়।
আমার ইল- লাক। আমি চাকরি ছাড়ছি। সময়ের টি
কাজ সময়ে করা উচিত,এ শিক্ষা আমার ইগনোর করা উচিত ছিল। বড়োই লেটে বুঝলাম। মৃত্যঞ্জয়ের ইচ্ছামত বাদবাকি জীবন ইন্ডিয়ায় কাটাব। বাট মৃত্যুঞ্জয় থাকবে না, সাথে। তুমি আমার একটা এ্যাকোমোডেশন এ্যারেঞ্জ করে দিও প্লিজ। ” লিসা জানে, আমি মৃত্যঞ্জয়ের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। এটুকু সাহায্য সে চাইতেই পারে। আশ্চর্যজনক কিছু নয় সেটা। আমি ফোন টা ইদানীং কানে কম শুনি বলে সবসময় স্পিকারে দিই। বন্ধু রা আমার ফোনে লিসার প্রায় এক তরফা কথা শুনেছে। মৃত্যঞ্জয়ের চেয়ারের দিকে তাকিয়েছে। চেয়ার খালি। কফির কাপ শেষ।
কাজুবাদামের প্লেট খালি।
জীবন থেকে চলে গিয়েও মৃত্যুঞ্জয়ের ইচ্ছা হয়েছিল বন্ধুদের সাথে অন্ততঃ একবার আড্ডা মারার। মৃত্যু কে জয় করে মৃত্যুঞ্জয় তার ইচ্ছাপূরণ করেছে।
সর্বস্বত্ব লেখিকা কর্তৃক।সংরক্ষিত।
19/10/2019

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ

জাতিস্মর : ডঃ অশোকা রায়।

কি নিয়ে লিখব ভাবছিলাম বেশ কিছু ক্ষণ ধরে। কিছুই মাথায় আসছিল না।
মাথাটা একেবারে ব্ল্যাংক। হঠাৎ ঝেঁপে বৃষ্টি এলো। আমার ঘরের ঠিক জানলার নীচে একটা ঝোপ আছে, অনেক ক্ষণ ধরে সেখান থেকে ব্যাঙের ঘ্যানঘ্যানানি ডাক ভেসে আসছিল। বুঝতে পারছিলাম বৃষ্টি আসবে। অপেক্ষায় থাকলাম বৃষ্টির। বৃষ্টি আমার আশা পূরণ করলো। ঝমঝমানি শব্দ করে নামলো বৃষ্টি। প্রথমে জানলা বন্ধ করিনি, যদি বৃষ্টি দেখে মাথায় গল্পের প্লট আসে, তবে সুমনের পোর্টালে আজ একটা আবার গল্প দিতে পারবো, এই ধান্দা নিয়ে। জগতটাই তো ধান্ধাবাজিতে চলছে, তবে আমিই বা এব্যাপারে পেছিয়ে থাকি কেন? লোকে তো তখন আমার কপালে “ব্যাক ডেটেড” শব্দটা দেগে দেবে। কি একটা হিন্দি সিনেমায় দেখেছিলাম নায়কের হাতে উল্কি কেটে ” আমার বাবা চোর” লিখে দেয়া হয়েছিল। সে নিয়ে তো সিনেমাটা একেবারে ক্লাইমেক্সে পৌঁছে গিয়েছিল। বক্স অফিসও হিট। সিনেমার নামটা ভালোই মনে আছে। কিন্তু বলে তর্ক সৃষ্টি করতে চাই না। এত চিন্তামগ্ন ছিলাম যে, বৃষ্টির ছাঁট আমার পাঞ্জাবিটা ভিজিয়ে দিয়েছে কখন বুঝতেই পারিনি। সুতরাং জানলা বন্ধ করে দিতে যাই। আর তখনি আকাশের গায়ে জোর বিদ্যুৎ ঝলকানি। তা’ দেখে আমার মাথায় গল্পের প্লট এসে যায়। জানলা বন্ধ করে আমি টেবিলের সামনে চেয়ারে বসি। কলম তুলে নিই, লেখনী এগিয়ে চলে পাতার পর পাতা। কল্পনার গরু ‌আমার একবারে মগডালে।
সমীরণ খুব ভালো বন্ধু আমার সেই স্কুল জীবন থেকে। ওদের বাড়িতে আমি যেতাম প্রায়ই। খুব ছোট যখন লুডো বা ক্যারাম খেলতে। শৈশবে সমীরণ খুব বেশি না হলেও আমাদের বাড়িতে আসত‌। কিন্তু সে ইনডোর গেমেই ইন্টারেস্ট দ‌েখাতো, আউটডোর গেমে নয়। আমি সমীরণ দুজনেই বড়ো হয়েছি। সমীরণ ঘরের কোণে বই মুখে দিয়ে বসে থেকেছে। আমি গেলে বেশ বড়ো অবস্থাতেও আমার সাথে সাপলুডো খেলেছে। আমি ব্যঙ্গ করে বলেছি চল্ আমরা সাপলুডোই খেলি। বড়োদের বিজ্ঞাপন কিন্তু আমি যে এঁচ‌োড়ে পাকা। সরল সমীরণ আক্ষরিক অর্থেই কথাটা নিয়েছে। ইনার মিনিংটা বোঝে নি, বা বোঝার ক্ষমতা তার ছিল না। এই সময় আমাদের বয়েস চোদ্দ বছর। সমীরণকে কতবার মাঠে খেলার কথা বলেছি। মোটা চশমার কাঁচের আড়ালে ঢাকা সমীরণের চোখ দুটো এক লহমার মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। পরক্ষণেই ম্রিয়মাণ গলায় জবাব দিয়েছে “না রে, মা বাবা বকবে” রহস্যটা উদ্ধারের ইচ্ছে থাকলেও তখন এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় আমার নেই। আমি ফুটবল, ক্রিকেট সব খেলাতেই বেশ দড় ছিলাম। ফুটবলে সেন্টার ফরোয়ার্ড প্লেয়ার হিসেবে আমার তখন পাড়া, পাশাপাশি বেপাড়ায় বেশ সুনাম। তার থেকেও বড়ো কথা আমি তখন অনুর্দ্ধ ঊন্নিশ-এ সি. এ. বির টুর্নামেন্ট খেলছি। নামযশ কিছু কিছু ছড়িয়েছে। কাগজে আমার ক্যালিবারের প্রশংসা করে রিভিউ বেরোচ্ছে। তবু তার মধ্যেও সমীরণের বাড়ি যাই। দুজনের চরিত্রগত প্রকৃতির বিশাল ডিফারেন্স। তবুও সমীরণের আকর্ষণ আমার কাছে অপ্রতিরোধ্য। কারণটা তখন বুঝতে পারি নি। বুঝেছি অনেক পরে।
ইতি মধ্যে আরো কয়েকটা বছর কেটে গেছে। আমি বেঙ্গল ক্রিকেট দলের অপরিহার্য সদস্য। টেস্ট দলে আমার অন্তর্ভুক্তি আলোচনার স্তরে আছে। আমার এ্যাকাডেমিক কোয়ালিফিকেশন হায়ার সেকেন্ডারির স্তর পেরিয়ে থমকে গেছে। দরকার কি? এ. জি বেঙ্গলে ঢুকে গেছি। সমীরণের সংগে সম্পর্ক ত্যাগ করিনি। আমার চাকরি পাওয়া উপলক্ষ্যে “রেড চিলি” তে তাকে ডিনার খাইয়েছি। সমীরণ তখন এম. এ তে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে বি. এড পড়ছে আর চাকরি পাওয়ার জন্য জুতোর শুকতলা ক্ষয়িয়ে ফেলছে। আমি ভেবেছি ওর চাকরির জন্যে কোন মুরুব্বিকে ধরব‌ো। এখন আমার পরিচিতির সার্কেল হাইফাই। দরকার হয়নি , আমি তখন টেস্ট খেলছি ব্যাঙ্গালোরে। রাত আটটায় আমার মোবাইলে ফোন “অর্ক আমি একটা স্কুলে চাকরি পেয়ে গেছি। ভাগ্যিস বি. এড টা কমপ্লিট করেছিলাম।” আমি শ্রী অর্ক রায় সমীরণকে অভিনন্দন জানিয়েছি। রাতে ঘুম আসার আগে রবি ঠাকুরের গানটা মনে পড়েছে, “প্রান ভরিয়ে, তৃষা হরিয়ে ম‌োরে আরো আরো আরো দাও প্রান। তব ভুবনে, তব ভবনে মোরে আরো আরো আরো দাও স্হান। ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নয় অর্ক সমীরণকে এই গানটা ডেডিকেট করে। এ এক আশ্চর্য টান!
দুবছর বাদে সমীরণের সংগে আমার চাক্ষুষ সাক্ষাৎ। চুপিচুপি এসেছি ওর বাড়ি। তখন ক্রিকেটে আমার নাম দেশ-বিদেশের ক্রীড়ামোদীদের কাছে খুব আদরনীয় এক নাম। সিকিউরিটি নিইনি, ড্রাইভারও নয়। আজ এসেছি আমি সমীরণ‌ের মা-বাবার একসাথে মৃত্যুর খবর পেয়ে। পাড়ার লোকেদের সঙ্গে পুরী বেড়াতে গিয়েছিলেন। বাঙালির কাছে পুরী রথ দেখা কলা বেচার মতো… জগন্নাথ ও সমুদ্র দর্শন একত্রে। ফিরতি পথে বাস উল্টেছে। জখম অল্প বেশি সকলে। শুধু সমীরণ‌ের মা-বাবার নাম নিহতের তালিকায়। সমীরণ কে ফোন করে বডি আইডেন্টিফিকেশন করতে বলা হয়েছে কটক থানা থেকে। কটকেই দুর্ঘটনাটা ঘটেছে। সমীরণ থানায় গেছে। নিজে শিওর হয়েছে ও পুলিশ কে জানিয়েছে বডি তার মা-বাবার। কটকের শ্মশানে পাশাপাশি দুটো চুল্লিতে সমীরণের জীবনের দুই প্রিয় মানুষের নশ্বর দ‌েহ ভস্মীভূত হয়েছে সমীরণকে খুব একলা করে দিয়ে। সমীরণ বিয়ে করেনি সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায়। তার থেকে বলা ভালো মা-বাবার সংগে বৌয়ের অবনিবনা হবার ভয়ে। বিয়ে আমিও করিনি। বহু সেলিব্রিটি নায়িকা, ফ্যাশন জগতের মেয়েদের সংগে বা বড়ো বিজনেস ম্যানদের মেয়েদের সাথে ফস্টিনস্টি করেছি একটা সীমারেখা বজায় রেখে। তবু এ নিয়ে ইয়েলো জার্নালিজম হয়েছে। ক্রেডিটে আমার অনেক স্ক্যান্ডাল জমা পড়েছে। কেয়ার করিনি। সেলিব্রিটিদের কাছে এগুলো মুকুটে গোঁজা কৃতিত্বের অনুষঙ্গের এক, একটা পালক বিশেষ। সুতরাং বিয়েতে আমারও অনীহা।
বর্ষার বৃষ্টি অঝোরে পড়ছে সারাদিন ধরে। থামা-কমার নামগন্ধ নেই। এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে আমি আজ এসেছি সমীরণের বাড়িতে। মব এ্যারেস্টেড্ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সমীরণের অঙ্গে কাছা। খাপছাড়া ভাবে সে আমায় আজ কিছু কথা বলে, যা জুড়ে আমি সমীরণের বক্তব্য সম্পর্কে কিছু আভাস পাই । নিজের মতো সাজিয়ে নিয়ে সমীরণের বলতে চাওয়া কথা গুলো আমি আপনাদের বলছি। মা-বাবা দুজনকেই একসাথে হারানো সমীরণকে আপনারা দোষ দেবেন না। ওর মানসিক স্হিতি এ‌খন খুব নড়বড়ে। আমি সমীরণের বকলমে যা বলবো, তাতে অসংগতি বা অগোছালো ভাব থাকবে না। কারণ আমি সমীরণের বন্ধু মাত্র। তার মা-বাবা যাওয়াতে দুঃখ পেয়েছি খুবই কিন্তু সমীরণের মতো ভেঙ্গে পড়িনি। সমীরণের মা-বাবা আমার পাড়ার কাকু-কাকীমা, মা-বাবা তো নয়।
সমীরণ ফিরে গিয়েছিল আমাদের সেই ছেলেবেলায়। বলেছে, আমার মনে আছে কিনা, যে সে খেলতে যেত না মাঠে আমার হাজার পীড়াপীড়ি সত্ত্বেও। খুব মনে আছে আমার। ভীষণ রাগ লাগতো আমার মানে শ্রীমান অর্ক রায়ের, সে কথাটাও ভুলিনি। তা’ সত্ত্বেও সমীরণের প্রতি আমার দুর্নিবার আকর্ষণের কথা ভুলিনি। যেচে যেচে ওদের বাড়ি যেতাম। মনে পড়ে আমি গেলে সমীরণের মা কেমন ভাবে স্নেহ ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন আমার দিকে। থালা ভর্তি খাবার এনে এক থালা থেকে খাইয়ে দিতেন আমাদের দুজনকে। আমাদের তখন নিজের হাতে খাওয়ার সুযোগ কই? ততক্ষণে হয়তো সমীরণের পুট পড়লে আমার পাকা ঘুঁটি কেঁচে যাবে। নয়তো সমীরণের ছক্কা আর দুই পড়লে শেষ ঘুঁটি ঘরে উঠে যাবে। সমীরণ জিতে যাবে। দারুণ টেনশনের মুহূর্ত। আর তাছাড়া সমীরণের মায়ের হাতে খেতে আমার ভালো লাগতো। সমীরণ আর আমি গল্প করছি, নিজের হাতে খেতে কোন বাধা নেই। তবুও কাকীমার কাছে আবদার করেছি, খাইয়ে দেয়ার জন্যে। কাকীমার চোখে জল। মানে বুঝতে পারি নি কেন? কারণও জিজ্ঞেস করা হয় নি। ভেবেছি আনন্দাশ্রু। কাকীমা খুব নরম-সরম। আমার মায়ের মতো স্ট্রিক্ট ছিলেন না। সমীরণের বাবা সবসময় বাড়ি থাকতেন না। আমি যখন সমীরণদের বাড়ি যেতাম অফিস থেকে ফেরার সময় তখনও কাকুর হতো না। কিন্তু ছুটির দিন আমাদের দুজনকে পাশে বসিয়ে দেশ-বিদেশের নানা গল্প বলতেন। কি আকর্ষণীয় বলার ভঙ্গি! আমরা দুই বন্ধু গালে হাত দিয়ে শুনতাম। আমার বাবা মস্ত অফিসার। অফিসের পর মিটিং, ক্লাব – পার্টি। রবিবারও তিনি ব্যস্ত। নিজের ছেলেকে দেবার মতো সময় তার রবিবারের সিডিউলেও থাকতে নেই। তাই স্বাভাবিক ভাবেই সমীরণের বাড়ির আকর্ষণ আমার কাছে অপ্রতিরোধ্য। আজ সমীরণের কাছে জানতে পারলাম, সে জাতিস্মর। পূর্ব জন্মের কথা তার জ্ঞান হওয়া অবধি মনে আছে। আর এই কথা লোকজানাজানি যাতে নাহয়, তার জন্যেই কাকু-কাকীমা সমীরণকে বেরোতে দিতেন না। বিস্ময়কর বটে সমীরণের কথাটা। বিশ্বাস – অবিশ্বাসের দোলায় দুলি আমি। সমীরণ বুঝতে পারে আমি ওর গল্পটা ঠিক মতো হজম করতে পারছি না। জানলা দিয়ে বাইরে উঁকি মারে, ” বৃষ্টির তোড়টা একটু কমেছে। রাত অনেক। রাস্তাও শুনশান। তোকে ঘিরে ধরার লোকজন নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে আপাদমস্তক চাদর মুড়ি দিয়ে। যাবি নাকি আমার সংগে একটা জায়গায়?” সমীরণ ভুল বলেনি রাজি হয়ে যাই। সমীরণ ড্রয়ারে রাখা চাবির গোছা তুলে হাতে নেয়। কাছাধারীর পকেট কোথায়? আমি পকেট হাতড়িয়ে গাড়ির চাবি বার করে নিই।
নিশুতি রাত চিরে গাড়ি এগিয়ে চলে। চালক আমি, পথ নির্দেশক সমীরণ। পথটা মনে হয় আমাদের ডায়মন্ড হারবারের দিকে নিয়ে চলেছে। আবার বৃষ্টি় তোড়ে এসেছে। ওয়াইপার চলছে। তবু দৃশ্যমানতায় অসুবিধা হচ্ছে। আমরা চুপচাপ। তবুও আমি দু-একটা কথা বলতে গিয়েছিলাম। অদ্ভুত গলায় সমীরণ বলেছে চুপচাপ সাবধানে গাড়ি চালা, এ্যাক্সিডেন্ট হতে পারে। আমি সমীরণের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি, মুখের রেখা গুলো কেমন অচেনা। তবুও বলি, “ডেস্টিনেশনটা কিন্তু এখনো জানাস নি।” ছোট্ট উত্তর এসেছে, ” ডায়মন্ড হারবারের দেউলা স্টেশন। গ্রামের নাম দিশাগড়।” দিশেহারা আমি বলি, ” রাস্তা চিনি না।” সমীরণ বলে, “ডিরেকশন দেয়ার দায়িত্ব আমার।” আমি আর কিছু বলি না। চুপচাপ স্টিয়ারিং এর নিয়ন্ত্রণ করি।
সমীরণের নির্দেশক্রমে দেউলা স্টেশনে পৌঁছে গ্রামের পথ ধরেছি। রাস্তা একদম ভালো নয়. বৃষ্টি থেমেছে। তবে সারা রাস্তা কাদায়-কাদা। বৃষ্টি থামা আকাশে কাস্তে চাঁদের উঁকি ঝুঁকি। নাম না জানা বুনো ফুলের গন্ধ। অন্ধকারে জোনাকের আলোর মিটিমিটি ফোকাস , ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক.. আমার নেশা ধরায়। অথচ সমীরণের বাড়ি আসবো বলে দামী মদে অভ্যস্ত আমার পেটে আজ একফোঁটা এ্যালকোহল নেই। আমার নেশা চটকে দেয় সমীরণ… ” অর্ক গাড়ি থামা। এসে গেছি আমরা আমাদের বাড়িতে। যন্ত্র – গাড়ি যান্ত্রিক আওয়াজ করে থেমে যায়। গাড়ি থেকে নেমে দেখি জীর্ণ বাড়ি। রঙ-পলেস্তারা অনেকদিন পড়ে নি। তবুও একেবারে বসবাসের অযোগ্য নয়। সমীরণ কখন যে একটা চার ব্যাটারির টর্চ সংগে নিয়েছিল, খেয়াল করিনি। টর্চের জোরালো আলোয় অনেকটা পথ পেরিয়ে আমরা বাড়ির সদর-দরজার সামনে। আগে হয়ত এই পথের ধারে কেয়ারী করা বাগান ছিল, হয়তো ছিল না। নিছক আমার কল্পনা। তবে এখন যে এই জায়গায় আগাছা থরে থরে গজিয়ে রয়েছে, সেটা বাস্তব। সমীরণকে কিছু জিজ্ঞেস করবে, ইচ্ছে করছে না। সে যেন এখন একটা ভূতগ্রস্ত জীব। সমীরণ চাবির গোছা থেকে সঠিক চাবি বেছে নিয়ে ঢোকায় তালার গর্তে। তালা খুলে যায়। ওরা ভেতরে ঢোকে। বাড়ির মেঝে মার্বেলের ঝাঁট-মোছ না পড়ার দরুন ধূলিকণায় মলিন। নীচের সব ঘর বন্ধ. সমীরণ সেদিকে যায় না। বিশাল মার্বেলের সিঁড়ির ধাপ গুলো পেরোতে থাকে সে। পেছনে নিশি পাওয়া মানুষের মতো আমি তাকে অনুসরণ করি.
দোতলার ঘরের তালা খোলা হয়। আমি আর সমীরণ ঘরের মধ্যে। আমি দেখি জমিদার বা ভীষণ অবস্থাপন্ন দের বিশাল শয়ন- কক্ষ। মেহগিনী কাঠের পালঙ্ক। বার্মা টিকের নানা ফার্নিচার, বেলজিয়াম কাঁচের আয়না বসানো আলমারি। ঘরের মাঝে একটা গোল শ্বেত-শুভ্র টেবিল। চারপাশে লালটুকটুকে ভেলভেটের চেয়ার। একপাশের দেওয়াল আলমারিতে কাঁচের পুতুল, আরেকটা দিকের দেয়াল- আলমারিতে দেশ বিদেশের নানা বই। আমি যেন সাপুড়ের বীণ শোনা মন্ত্রমুগ্ধ এক সাপ। নিজের অজান্তেই মন আমার হেলছে দুলছে. দেয়ালে টাঙানো বিদেশী ছবি দেখতে দেখতে হঠাৎ আমার চোখ আটকায় একটা সাদা-কালো ছবিতে. একি, এ তো সমীরণের মা-বাবার ছবি। এতো বড়ো ছবি, তা’ও চোখে পড়েনি। ফোটোগ্রাফ থেকে গোড়ের ঝুঁইের মালা ঝুলছে। এই ঘরে ঢুকে আমি পুরোনো ভ্যাপসা ঘরের গন্ধ পাই নি। উল্টে একটা ভালো গন্ধ পাচ্ছিলাম। মনে মনে তখন আমি ধরে নিয়েছি, এটা সমীরণদের বাড়ি। সংগে সংগে প্রশ্ন জেগেছে মনে,যাদের এতো ভালো অবস্থা,.. কলকাতায় তারা কেন অতো সাধারণ ভাবে থাকতো? এখন আমরা বড়ো হয়ে গেছি। একথা ছোট বেলার জিগরি – দোস্তকেও জিজ্ঞেস করা যায় না। কিছু ভাবতে পারে। ছোটবেলায় অনেক কিছু বলা যায়, অনেক কিছু করা যায়। পরিনত বয়েসে সম্পর্কের সমীকরণ সরলপথে হাঁটে না। তাই শুধু জিজ্ঞেস করি সমীরণকে , ” কাকু-কাকীমার ফোটোগ্রাফে মালাটা কোথা থেকে এলো রে? ” সমীরণের উদাস উত্তর, “জানি না”। অবাক হই, সমীরণ কোন মালা যে আনেনি আমি শিওর। সমীরণ নিয়ে যায় পরবর্তী ঘরে। ঘরের ফার্নিচার গুলো বলে, এটা কোন বাচ্চার ঘর। সুন্দর খাটের বিছানায় দুজনের পাশাপাশি শোওয়ার সরন্জাম বলে, একজন নয়, দুজন বাচ্চার ঘর। বইপত্র, খেলনার সংগে ঘরের এককোণে দাঁড়ানো ক্রিকেট ব্যাট রয়েছে। একটা ফুটবল খাটের তলা থেকে বেরিয়ে আমার পায়ে ধাক্কা মারে। সমীরণ আমাকে দেখে যাচ্ছে। আমি ইতিমধ্যে দেখে ফেলেছি পড়ার টেবিলে রাখা আরো একটা ফটোগ্রাফ….. সমীরণ আর আমার। সমবয়সী দুটো ছেলের ছবি। জিজ্ঞাসু আমার চোখে এমন কিছু ছিল, যার উত্তর দিতে সমীরণ বাধ্য হয়েছিল।

সমীরণ জানিয়ে ছিল সমীরণ, কাকু, কাকীমা তিনজনেই পূর্ব স্মৃতি নিয়ে জন্মেছিল। বাদ ছিলাম খালি আমি। অথচ একই পাড়ায় আমার জন্ম। পূর্বজন্মের দুই যমজ ভাই এই জন্মে সমবয়সী দুই বন্ধু। আমি সমীরণের কথা বিশ্বাস করেছি। আমার মনে পড়েছে কাকীমার মাতৃ-স্নেহ, কাকুর পিতৃসুলভ আচরণ। ছেলের বন্ধু কে অনেকেই ছেলের মতো ভালোবাসে। কিন্তু কাকু-কাকীমার ভালোবাসায় অরিজিনাল কিছু ছিল, ছিল রক্তের টান। আর সমীরণের সংগে তো শুধু রক্তের সম্পর্ক নয়, আত্মার সম্পর্ক একই বৃন্তে ফোটা দুটি কুসুমের মতো। সমীরণকে বলি,” চল, এবার আমরা এগোই.”
আবার আমি চালক। পথ চিনে গেছি, সব কিছু জেনে গেছি। সমীরণের নির্দেশক বা কথকের ভূমিকা শেষ। সমীরণ চুপচাপ। আমার মনে দিশের গড়,… আমার পূর্ব জীবন, পূর্ব জীবনের বাড়ি তোলপাড় তুলেছে। আমি গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছি। গাড়ি উল্টেছে নয়ানজুলিতে। আশেপাশের লোকজন আমায় কষ্ট করে বার করেছে গাড়ি থেকে। আমার কিচ্ছু হয়নি। একটুও কাটেনি-ছড়েনি পর্যন্ত। আশ্চর্যের বিষয়, সমীরণ নেই। জমায়েত জনতা বলেছে আর কেউ ছিল না গাড়িতে। তাদের চোখের সামনেই তো ঘটনাটা ঘটেছে। হঠাৎ লক্ষ্য করি সমীরণ নয়ানজুলির ধারে দাঁড়িয়ে বলছে, ” অর্ক, আমিও আর বেঁচে নেই রে। দেড় বছর আগে ডেঙ্গি আমায় নিয়ে গেছে। শুধু তোকে প্রকৃত ঘটনা জানাব বলে প্রতীক্ষা করছিলাম তোর দেশে ফেরার। ফিরে যা অর্ক, তোর নিজস্ব জগতে। অতীতের মাঝে বাসের কষ্ট আমরা তিনজন জানি। তবে তোর আমাদের প্রতি আকর্ষনের কারণটা তোর জানা দরকার ছিল। চলি রে। সমীরণ মিলিয়ে যায়। আমি স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। অন্য কেউ সমীরণকে দেখে নি, আমাদের কথোপকথন শোনে নি। গাড়ি স্টার্ট করি। সেদিন নিরাপদে পৌঁছে যাই আমার এ জন্মের আস্তানায়।
আমি কাছাধারণ করেছি আমার এ জন্মের মা-বাবা জীবিত থাকা সত্ত্বেও। প্রশ্নের বাণ ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে এসেছে। আমার এ জন্মের মা কেঁদেছে। বাবা মুখ গম্ভীর করে ঘুরেছে। সমীরণের কাছ থেকে আমার পূর্বজন্মের পরিচয় পাওয়ার ঠিক দশদিনের মাথায় ঘটাপটা করে আমার পূর্বজন্মের তিন আত্মজনের শ্রাদ্ধাদি কার্য করেছি। নিমন্ত্রিতদের কৌতুহল সেদিন নিবারণ করেছি,… “আমার পূর্বজন্মের শেষ ঋণ চোকাচ্ছি।”
সমীরণ তোর শেষ কথা রাখতে পারিনি। ডুপ্লিকেট চাবি করিয়ে যখনই দেশে থাকি দিশেরগড়ের বাড়িতে যাই অতীতের সংগে কথা কই। জানি না তোরা শুনতে পাস কিনা, নাকি তোদের পুনর্জন্ম হয়ে গেছে?

Share This
Categories
গল্প

পরিবর্তন : দিলীপ রায়।

             তপা পরীক্ষার মার্কশীট নিয়ে বাড়ি ফিরল । অভিভাবকের স্বাক্ষর করিয়ে পরের দিন অবশ্যই জমা দিতে হবে । পরেরদিন মার্কশীট জমা দেওয়ার শেষ দিন । তপা মায়ের কাছে গিয়ে মার্কশীট দেখিয়ে বলল, কীভাবে বাবার স্বাক্ষর নেওয়া যায় ?  বাবা মার্কশীট দেখলে আমাকে ভীষণ বকাবকি করবে । 
      নম্বরের যা  বহর, তাতে তুই কোন্‌ মুখে  বাবার কাছে গিয়ে স্বাক্ষর চাইবি !            
     তপার বাবা পশুপতি খাঁ । পূর্বস্থলি স্টেশনের কাছে সোনাঝরা গ্রামে তাঁর মুদিখানার দোকান । দোকানে অনেক ধার-বাকী । খরিদ্দারের কাছ থেকে ধারের  টাকা আদায় হচ্ছে না । চাইতে গেলে সকলের মুখে এককথা, “মাঠের ধান উঠুক, ধারের সমস্ত টাকা শোধ করে দেবো ।“  পশুপতির আবার ধার দেওয়া নীতিবিরুদ্ধ । অথচ ধার না দিলে খরিদ্দার ধরে রাখা কষ্ট । সদলবলে গাজি মিয়ার মুদির দোকানে হত্যে দেবে । তাতে আখেরে তাঁর লোকসান । 
      তখন সন্ধ্যা আঁটটা ! খরিদ্দারের আনাগোনা নেই বললেই চলে । তাই ভাবল পশুপতি, এবার দোকান বন্ধ করা যাক । মন-মেজাজ তাঁর ভাল নেই । কিছুক্ষণ আগে খাতা খুলে পশুপতির মাথায় হাত ! প্রায় আঠারো হাজার টাকা  ধার  । এইটুকু দোকানে এতগুলি  টাকা ধার ! লোকে ধার খেয়ে শোধ করার নাম করছে না । অথচ অনেকগুলি টাকা । সংসারে অনেক খরচ । অভাব  অনটনের বহর বেড়েই চলেছে । তাঁর বৌটা তেমনি ! একটু রেখে ঢেকে খরচা বাঁচিয়ে সংসার চালাবে সেদিকে তাঁর নজর নেই । শুধু বায়নাক্কা । এটা কিনতে হবে, ওটা কিনতে হবে । দেখা যাবে  আজ গৃহের আসবাবপত্র কেনা, কাল দেখা যাবে ঘরের থালা বাসন কেনা ! আজকাল আবার অনলাইনে কেনাকাটা শিখেছে ।  কেনার শেষ নেই । তাঁর বৌয়ের খরচার হাত ষোলোআনা ।  এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বাড়ি এসে পৌঁছালো পশুপতি খাঁ ।
       গামছা হাতে  ধরিয়ে দিয়ে তাঁর বৌ বলল, “হাত মুখ ধুয়ে এসো চা বানিয়ে দিচ্ছি । ঐদিকে খাবার রেডি । যখন বলবে তখনই রাতের খাবার দিয়ে দেবো ।“  
       পশুপতি বৌয়ের  দিকে কট্মট করে  তাকিয়ে বৌকে ঝাঁঝালো সুরে বলল, “কষ্ট করে  আর  চা বানাতে হবে না । ক্ষিদে পেয়েছে, সুতরাং একটু পরে রাতের খাবার খেতে দিলেই চলবে । যতোসব আদিখ্যেতা  !”  
       পশুপতি হাত মুখ ধুতে যাবে এমন সময় তপা কাচুমাচু হয়ে বাবার সামনে এসে দাঁড়ালো । মেয়েকে দেখে মুখ ভেঙ্‌চি দিয়ে পশুপতি জিজ্ঞাসা করল, “সাঝ-সন্ধ্যাবেলায় তোমার আবার কী  দরকার ?” 
  “বাবা,  আমার স্কুলের  মার্কশীটে তোমার স্বাক্ষর চাই”, তপা আমতা আমতা করে বাবাকে  বলল ।
     মার্কশিট নিয়ে ঐরকম হতচ্ছাড়া মুখ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন ? নিশ্চয়ই পরীক্ষায়  ডাহা ফেল ! দেখি তো মার্কশীট, বলেই  পশুপতি মেয়ের হাত থেকে টান দিয়ে মার্কশীট  নিজের হাতে  নিলো ।
      এক ঝলক মার্কশীটের নম্বর দেখে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো পশুপতি । তারপর রাগে নিজেকে সামলাতে না পেরে কষে মেয়ের গালে এক চড়  । চড়ের আঘাত সামলাতে না পেরে তপা ঘরের মেঝেতে সটান্‌ পড়ে গেল  । যন্ত্রণায় তপা কাঁদছে । তপার মা মেয়েকে মেঝে থেকে তুলতে গেলে পশুপতি এক ধ্মকে বৌকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিলো । আর কট্মট করে বৌয়ের দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় বলল, “তোমার লায় পেয়ে মেয়েটা উচ্ছন্নে গেছে”  । 
   তপা কাঁদছে ।
   পশুপতি মার্কশীট ছুড়ে ফেলে দিয়ে মুখ হাত ধুয়ে ঘরে ঢুকলো ।
  “বাবা, মার্কশীট আগামীকাল স্কুলে জমা দিতে হবে”,  ভীত ও ত্রস্ত অবস্থায় তপা  বাবাকে বলল ।
   আগে নাচ বন্ধ করো তারপর স্বাক্ষর । নাচ বন্ধ না করলে আমি আর স্বাক্ষর করবো না । ধাই ধাই করে এখানে সেখানে নেচে বেড়ানো । যার জন্য ১০০ নম্বরের মধ্যে  অঙ্কে ২৫ নম্বর । ইংরেজিতে  ২২ নম্বর ।  আহারে ! নম্বরের কী ছিরি ! 
    তারপর আবার মেয়ের উপরে  রেগে গিয়ে ঘরে ঢুকে নাচের সরঞ্জাম দূরের জঙ্গলে ফেলে দিয়ে এসে মেয়েকে ধমকিয়ে বলল, “আবার কখনও নাচে তোকে দেখেছি, তাহলে তোকে আস্ত পুড়িয়ে মারবো । তোর মা এসেও বাচাঁতে পারবে না । বলেই ক্রোধে অগ্নিশর্মা  হয়ে গজরাতে গজরাতে খাওয়ার ঘরে ঢুকলো ।“ 
                                                  ( ২ ) 
    পরের দিন রাজ্যস্তরে নাচের প্রতিযোগিতা । কলকাতার নজরুল মঞ্চে । স্কুল ফাঁকি দিয়ে কলকাতা ছুটলো নাচের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে । এই ঘটনা একমাত্র তপার মা জানে । কেননা একমাত্র মা তপাকে নাচে ভীষণ উৎসাহ দেয় । সত্যি কথা বলতে, তপার পড়াশুনা ভাল লাগে না । পড়তে বসলেই পড়া থেকে উঠে নাচের অনুশীলন । নাচের অনুশীলনে তার পরিশ্রম নেই, বরং ভীষণ স্বচ্ছন্দ ।  কিন্তু তার বাবা উল্টো, পড়াশুনা ছাড়া আর কিচ্ছু বোঝে না । অথচ তপার নাচই জীবন । নাচটা তার রক্তে ।  মনপ্রাণ দিয়ে নাচ শেখে । লুকিয়ে লুকিয়ে  নাচের ক্লাস করে । নাচে ভীষণ দক্ষ ।  মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে  কলকাতার  নাচের অনুষ্ঠানে অংশ নিলো তপা । তার সঙ্গে রয়েছে সহপাঠী অনুপম । তপাকে নাচের ব্যাপারে সবরকম সহযোগিতা করে অনুপম ।
   বিশাল বড় হল । রাজ্য থেকে প্রচুর মানুষের সমাগম । প্রায় প্রতিটি জেলা থেকে একজন অথবা দুইজন প্রতিযোগী অংশ নিচ্ছে । টান টান উত্তেজনা ।  বিচারকের আসনে স্বনামধন্য  পাঁচজন । সকাল ১০টা থেকে অনুষ্ঠান শুরু । কিন্তু অনুষ্ঠান শুরু হল বেলা ১১টায়  ।  বিচারকেরা নাচের নিয়মাবলী আগেই বুঝিয়ে দিয়েছেন । বিচারকদের নির্দেশমতো প্রতিযোগীদের একটা মাত্র  নৃত্য পরিবেশন ।  শুরু হল নৃত্যানুষ্ঠান । 
      তপার পালা ঠিক বেলা দুটোর সময় । তাকে কত্থকের উপর নৃত্য পরিবেশনের জন্য বিচারকমণ্ডলী নির্দেশ দিলেন । তপার নৃত্যের তাল,ছন্দ ও লয় অতীব সুন্দর ।  তালে তালে এত সুন্দর নৃত্য পরিবেশন করলো তপা, যার জন্য হলের সমস্ত শ্রোতামণ্ডলী অভিভূতো । প্রচণ্ড হাততালি । বিচারকগণ পুনরায় তপাকে নির্দেশ দিলেন আধুনিক লোকগীতির সঙ্গে আরও একটি নৃত্য পরিবেশন করতে । তপাও তেমনি ! নৃত্যের তাল সম্পর্কে  তপার প্রচণ্ড দখল । এটা তার ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা  ।   মন খুলে মনের আনন্দে নৃত্য পরিবেশন করলো তপা । নৃত্যে তার অফুরন্ত  আনন্দ ।  অনুপম অবাক ! অনুপম লক্ষ করল, তপার নাচের পরিবেশনের সময় তার সাথে সাথে অর্ধেকের বেশি শ্রোতামণ্ডলী উঠে দাঁড়িয়ে নাচতে লাগলেন । অনুপম আরও লক্ষ করল, মাননীয় বিচারকেরা একে অপরের প্রতি হাসিমুখে তাকালেন ।
    তারপর দুজনে ছুটলো হাওড়া স্টেশন । ট্রেন ধরতে । পূর্বস্থলি স্টেশনে যখন পৌঁছালো, তখন সন্ধ্যা ৭টা । অনুপমের সঙ্গে তপা বাড়ি ফিরছে । তপা ভাবছে এই সময়ে বাড়িতে বাবা নেই, সুতরাং বাবার বকা বা তাঁর হাতে মার খাওয়া থেকে মুক্তি । কিন্তু গাঁয়ের ভাওয়াল মাস্টার মশাই অনুপমের সঙ্গে তপার বাড়ি ফেরা দেখে রাগে জ্বলে উঠলেন । সরাসরি  পশুপতির দোকানে গিয়ে নালিশ জানিয়ে বললেন, “ছ্যাঃ ! শেষে কিনা আপনার মেয়ে একটা আদিবাসী ছেলের সাথে মিশছে ? ভর সন্ধেবেলায় আপনার মেয়ে কিনা নীচু জাতের আদিবাসী ছেলেটার হাত ধরে  রাস্তা দিয়ে হাঁটছে ! স্কুলের ড্রেস পরা । পিঠে স্কুলের বইয়ের ব্যাগ । নির্ঘাত স্কুল থেকে আলো-আধারি রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছে ।“  কথাগুলি বলে ভাওয়াল মাস্টার অন্যত্র ছুটলেন ।                                        
      পশুপতি রাগে দিগ্‌বিদিক জ্ঞানশূন্য । দোকান খোলা রেখেই ছুটলো বাড়ির দিকে । বাড়ি পৌঁছেই  চিৎকার, “তপা কোথায় ?” 
   স্কুল থেকে ফিরে হাত মুখ  ধুতে বাথরুমে ঢুকেছে ।
    তপা বাথরুম থেকে বের হতেই হাতের বেতের লাঠি দিয়ে তপার পিঠে বেদম মার ! তপার মা থামাতে গেলে তাকেও ঐ বেতের লাঠি দিয়ে চপেটাঘাত । মেয়েকে শাসিয়ে  পশুপতি বলল, “নাচ বন্ধ । এখন থেকে শুধুমাত্র স্কুলে যাওয়া আর বাড়ি ফেরা । এর বাইরে কোথাও দেখতে পেলে তোর ঠ্যাং খোড়া করে দেবো । স্ত্রীর দিকে ক্রূদ্ধভাবে  শাসিয়ে বলল, “মেয়েকে না সামলাতে পারলে আমি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব  পাত্র দেখে মেয়ের বিয়ে  দেবো ।“  
   তারপর  হন্‌হন্‌ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে  গেলো পশুপতি । 
    মা ও মেয়ে দুইজনেই কাঁদছে । মায়ের কোলে মাথা রেখে তপা কেদেই যাচ্ছে । কিছুতেই তার কান্না থামানো যাচ্ছে না ! কলকাতায় ছোটাছুটিতে সারাদিনের ধকলের পর বাবার হাতের বেদম প্রহারে তপা যতো না কষ্ট পেয়েছে, তার চেয়ে বেশী কষ্ট পেয়েছে বাবার হাতে  মা  নিগৃহীত  হওয়ার জন্য !   
                                   ( ৩ ) 
    তারপর, নাচের প্রতিযোগিতার ফলাফল । সেটা ঘোষণা হবে কলকাতায় শনিবারদিন । বাড়ি থেকে কীভাবে বের হবে সেই চিন্তায় তপা অস্থির । 
 মা মেয়েকে বলল, কাল অর্থাৎ শনিবার  তুই ঠিক সময়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে ট্রেন ধরে কলকাতা যাবি । সঙ্গে অনুপম যাবে ।
  “তুমি যাবে না মা ? তুমি আমার সঙ্গে চলো মা”, বায়না ধরলো তপা ।
  যাওয়ার ইচ্ছা আমার ষোলোআনা, কিন্তু তোর বদরাগী বাবাকে নিয়ে ভয় ? 
    তপা  মনকে শক্ত করে মাকে বলল, “আমার নাচে  কোনো পুরস্কার পেলে আমি বাবাকে আর ছেড়ে কথা বলবো না । বাবার জন্য তোমার  যেমনি অশান্তি তেমনি আমার ভীতি । দরকার হলে থানায় নালিশ জানাবো । বাবার অভব্যতার একটা বিহীত হওয়া  দরকার, নতুবা বাবা আরও হিংস্র হয়ে উঠবে” । 
     মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মা শান্তভাবে তপাকে বলল, “বাবাকে নিয়ে ওসব আজেবাজে  কথা বলতে নেই মা । তোর নাচের স্বীকৃতি স্বরূপ কোনো পুরস্কার পেলে তোর বাবার লম্ফঝম্ফ বন্ধ হয়ে যাবে । তাঁর মনে পরিবর্তন আসতে বাধ্য । আমার কথাটা মিলিয়ে নিস ।“ 
     পরের দিন মা ও মেয়ে দুইজনেই পশুপতি  ঘুম থেকে ওঠার আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে  ট্রেন ধরলো । কলকাতায় রাজ ভবনের প্রেস কর্ণার হলে ফলাফল ঘোষণা । মাননীয় রাজ্যপাল বিজেতাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন । পুরো অনুষ্ঠান টিভিতে লাইফ দেখানো হবে । তপা ও মা এবং অনুপম রাজভবনে গিয়ে আসন নিয়ে বসে পড়লো । অনুপমকে রাজভবনে ঢোকার গেটে সিকিউরিটি ধরেছিল । কিন্তু তপা অনুপমকে তার জেঠতুতো দাদা বানিয়ে কোনোরকমে ম্যানেজ করল । যার ফলে অনুপম  ভিতরে ঢোকার অনুমতি পেলো । 
   এবার নাম ঘোষণার পালা । 
    তপা ভীষণ টেনশনে আনচান । কোনো  পুরস্কার না পেলে আজ তার বাবার কাছে রক্ষে নেই । বাড়ি থেকে মা ও মেয়েকে তাড়িয়ে দেবে । পুরস্কারের ব্যাপারে তপা যেটা বুঝেছে সেটা হচ্ছে,  প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ছাড়া আরও জেলা ভিত্তিক একটি করে পুরস্কার । জেলা ভিত্তিক দশ জনের পুরস্কার ।  পুরস্কারে নগদ ৫০,০০০/- টাকা এবং মানপত্র । প্রথম পুরস্কার ৫ লাখ, দ্বিতীয় পুরস্কার ৩ লাখ এবং তৃতীয় পুরস্কার ২ লাখ টাকা এবং সঙ্গে মানপত্র ।
     নাম ঘোষণার জন্য মঞ্চে উঠে এলেন মাননীয় ঘোষকঃ- 
       হলে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ । রাজ্যের মন্ত্রী ও উচ্চ পদাধীকারি আধিকারিকগণ  ।  নাম ঘোষণা করলেন ---- প্রথম,  পূর্বস্থলির তপতি বেরা । 
       তারপর হাততালি । প্রচুর হাততালি । ঘোষক মঞ্চে দাঁড়িয়ে বললেন, “তপতিকে মঞ্চে আসার জন্য অনুরোধ করছি ।“ 
    মঞ্চে তপতির ওঠবার পর ঘোষক তাঁর হাতের মাইকটি তপতির হাতে দিয়ে বললেন, “তুমি  শ্রোতাদের  উদ্দেশে কিছু বলো ।“ 
    এদিকে ভাওয়াল মাস্টার পশুপতিকে আবার খবর দিয়ে বলল, “টিভিতে তোমার মেয়েকে দেখাচ্ছে । এখন টিভি খুললেই তোমার মেয়েকে দেখতে পাবে ।“  
   সঙ্গে সঙ্গে পাশের দোকানে টিভির সম্মুখে এসে পশুপতি অবাক ! তাঁর মেয়ে প্রেস, মিডিয়া্‌ ও  অনেক শ্রোতামণ্ডলির সামনে নির্দ্বিধায় বলছে, “নৃত্য শিক্ষায় আমার অনুপ্রেরণা আমার মা ।  মায়ের প্রচ্ছন্ন মদতে আমার নৃত্য শিক্ষার বাস্তবায়ন ।“  
    পশুপতির চোখ ছলছল । সে আপন মনেই ফিসফিস করে বলে উঠলো,  ফিরে এলে মেয়েকে  আর বকবে না । মেয়ে যেটা চায় সেটাই করবে । মেয়ের ক্যারিয়ারে   কোনোদিন বাধা হয়ে দাঁড়াবে না । সে এখন পরিষ্কার বুঝেছে, “যার যেদিকে ঝোঁক তাকে সেদিকেই এগিয়ে দেওয়া বাঞ্ছনীয় ।“  রুমাল দিয়ে চোখ মুছলো পশুপতি । 
                                           ( ৪ ) 
     তারপর স্কুল, পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব, সকলে তপার নাচের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ।  নাচের প্রতিযোগিতায় তপা রাজ্যে প্রথম হওয়ায় সকলেই গর্বিত । 
   পশুপতি কাচুমাচু হয়ে মেয়ের কাছে নত হয়ে  ছলছল চোখে  বলল, “মা আমাকে ক্ষমা করিস্‌ ।“  
   তপা বাবাকে জড়িয়ে ধরলো । তারপর দুজনের চোখে আনন্দাশ্রু ।
             ---------০---------
Share This