Categories
নারী কথা রিভিউ

হস্তচালিত তাঁতের কাপড়ে নতুন দিশা দেখাচ্ছেন রানাঘাটের মেয়ে শান্তিপুরের গৃহবধূ মান্ডবী চক্রবর্তী।

পুজোয় এই বার নতুন চমক  হস্তচালিত তাঁতের কাপড় চাহিদা ভালই ।সামনেই বাঙালির শ্রেষ্ট উৎসব দুর্গাপুজো। এই বছর একটু বেশি উৎসাহ বিগত দুই বছর করোনা পরিস্থিতিতে সেই ভাবে আনন্দে সামিল হতে পারিনি তাই এই বছর একটু বেশি উৎসাহিত দুর্গাপুজো উপলক্ষে। নদীয়ার  হস্ত চালিত তাঁতের অবস্থা সঙ্গীন। সেই হস্তচালিত কারখানা প্রায় বন্ধের মুখে । অল্প দামে হাতের নাগালে তাঁত শাড়ির বিপুল চাহিদা অন্যদিকে  শ্রমিকের সংখ্যা কমিয়ে লভ্যাংশ ঘরে তোলা।  তাই  ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে সমগ্র হস্ত চালিত তাঁত শিল্প।
হস্তশিল্পের সুদক্ষ কারিগররা কাজ না হাওয়াতে দেশে-বিদেশে হোটেল রেস্তোরা, নির্মাণ কর্মীর কাজ বেছে নিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক হতে বাধ্য হয়েছেন অভাবের সংসার সামলাতে। হাতের সেই বুননের আবেগ, নিখুঁত বুটি সেসব এখন ইতিহাস। তবে দরিদ্র এবং নিম্ন মধ্যবিত্তের কাছে সস্তার শাড়ি উৎপাদন প্রয়োজনীয় হলেও। কিছু বিত্তবান এবং শিল্পের মর্যাদা দেওয়া মানুষজন আজও আছেন দেশে-বিদেশে। যেখানে তারা উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিয়ে   আন্তরিকতার বুনন।রানাঘাটের মেয়ে মান্ডবী চক্রবর্তী, পুঁথি বিদ্যায় গোল্ড মেডেলিস্ট, রবীন্দ্রভারতীতে সংস্কৃতে পিএইচডি পাঠরতা ।

 

 

ছবি আঁকা ফেব্রিক ক্র্যাফ্টের ওপর বিভিন্ন কাজকর্ম করতেন শখে। 2017 সালে বিবাহ সূত্রে  শশুরবাড়ী নদিয়ার শান্তিপুরের সুত্রাগর।  স্বামী অভিক দত্তের বাড়িতে।  বাপের বাড়ি হোক কিংবা শশুর বাড়ি এমনকি কোন নিকট আত্মীয়র বাড়িতেও তাঁতের কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে শিল্পের পৃষ্ঠপোষক হওয়ার জন্য এবং বাড়ির কাছে বিখ্যাত তাঁতের হাট হওয়ার সুবাদে মাঝেমধ্যেই সেখানে গিয়ে নিত্যনতুন ডিজাইন, তাঁতিদের সুবিধা ও অসুবিধার কথা শুনতেন তিনি। স্বামী চাকরির সুবাদে সারাদিন থাকেন শান্তিপুরের বাইরে, ছোট্ট একরত্তি ছেলেকে নিয়েই, পৌঁছে যেতেন তাঁতিদের বাড়ি বাড়ি। নিজের আঁকা ছবি শাড়িতে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করতে থাকেন তাদের মধ্যে পারদর্শী দুই একজন তাঁত শিল্পীকে দিয়ে। ফেসবুক ,টুইটার সহ নানান সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করিয়ে শিল্পের পৃষ্ঠপোষক ক্রেতা র দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে শুরু করেন।

 

 

একের পর এক হস্ত চালিত তাঁত শ্রমিকের হাতের কাজের মেধা অন্বেষণ এর মধ্য দিয়ে আজ তার ২২ জন সুদক্ষ তাঁতি। এমনকি সারাদিনে ৫০০ থেকে হাজার টাকা উপার্জনের মধ্যে দিয়ে ,মজুরির দিক থেকে টেক্কা দিয়েছেন,  উন্নত মেশিনে যন্ত্র চালিত মেশিনে কাজ করা তাঁতিদের কেও। শুধু তাই নয় করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যখন, বড় বড় মহাজনরা কাজ দেওয়া বন্ধ করেছিলেন, মান্ডবী দেবী, তার তাঁতিদের মজুরি দিয়ে গেছেন একইভাবে। শান্তিপুর ছাড়িয়ে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালিত তাঁত শিল্পীরা বড় বড় মহাজন ছেড়ে নতুন দিশা দেখেছেন এই গৃহবধূর যোগাযোগে।  তাই এই বছর দুর্গাপূজো উপলক্ষে শাড়ির উপর বিভিন্ন ধরনের নকশা লতাপাতা ফুল এই চিন্তা ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে তিনি বিভিন্ন পোর্ট্রেট এর কাজ শুরু করেন। শারদীয়া আগমনের বিভিন্ন চিত্র, গুপী গাইন বাঘা বাইন, হীরক রাজার দেশের বেশ কিছু সিনেমার উদ্ধৃতি সহ অসাধারণ হাতের কাজ ফুটিয়ে তুলেছেনরবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন পর্যায়ের গান, বিখ্যাত গল্প উপন্যাসের বহুল প্রচলিত অংশ , সুকুমার রায়ের আবোল তাবোল, ভ্যানগর্গের স্টারি নাইট আরো কত কি। সুতোর সূক্ষ্ম বুননে, তবে হ্যাঁ প্রথমে তিনি নিজে আঁকেন ছবি, এরপর সুদক এখন শুধু শাড়িতেই সীমাবদ্ধ নেই, কুর্তি, ধুতি, ড্রেস মেটেরিয়ালস , স্কার্ফ,ওড়না, ঘর সাজানোয় ব্যবহৃত বিছানার চাদর পর্দার কাপড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সৌখিন ঢাকনায় পর্যন্ত বিস্তারিত হয়েছে। মটকা, রেশম, কটন ,তসর ,স্টান সিল্ক ,লিলেন এ ধরনের নানান উপকরণ পার্শ্ববর্তী ফুলিয়াতে পেলেও, গুণগত মান বজায় রাখতে মাঝেমধ্যে তা অন্যান্য রাজ্য থেকেও আনেন।

 

তবে তার উৎপাদিত পণ্যের কোনো আউটলেট বা দোকান নেই। বিভিন্ন ফ্যাশন ডিজাইনার নামি দামি কোম্পানি , হস্তশিল্পের গবেষক ছাত্রছাত্রী, এবং গুনমুগ্ধরা তা কিনে থাকেন।    শাড়ি বুনতে সাত দিন সময় লাগে কোনটা বা এক মাস এমনকি ৬ মাস পর্যন্ত বোনা চলে একটি শাড়িতেই, সবটাই কাজের উপর নির্ভর। তবে প্লেন থান একদিনই একটা বুনে ফেলা যায়, সেক্ষেত্রে ৩৫০ টাকার মার নেই, হাতের কাজ অনুযায়ী কেউ মজুরি পান প্রতিদিন হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে এসবই নির্ধারণ হয়, শাড়ির বুনন সমাপ্ত হলে, মাঝে প্রয়োজন ভিত্তিক আনুমানিক হিসেবে টাকা নিয়ে থাকেন তারা, হিসাব নিকাশ শেষ হয়, শাড়ি সমাপ্ত হওয়ার পর। তবে এই বার পুজোয় দমফেলার সময় নেই যেমন অর্ডার পেয়েছেন তেমনি চাহিদা আছে।
এই বার পুজোয় কলকাতা, মুম্বাই সহ বিভিন্ন জায়গায় তার কাপড়ের অর্ডার যেমন এসেছে পাশাপাশি দুর্গাপুজো উপলক্ষে বেশ কয়েকটা শাড়ি বিদেশে চলে গেছে। চরম ব্যাস্ততার মধ্যে চলছে কর্মকাণ্ড।

 

https://youtu.be/F9oN9SlRngU

Share This
Categories
গল্প নারী কথা প্রবন্ধ

জানুন , সেবা করার সময় মন অন্য দিকে যাওয়ায় ভক্ত কি শাস্তি দিলেন নিজেকে : রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক।

একদিন অভিরাম ঠাকুর পথ দিয়ে যাচ্ছেন। সেসময় কৃষ্ণদাস নামক এক ভক্ত এসে তাঁর চরণে পড়লেন। ইতিপূর্বে লোকমুখে অভিরামের গুণের কথা অনেক শুনেছেন কৃষ্ণদাস। অন্তরে বড় সাধ অভিরামের চরণেই আত্মনিবেদন করবেন, দীক্ষা নেবেন তাঁর থেকে। আর আজ যখন জানলেন , পথ দিয়ে সুদীর্ঘঅভিরাম ঠাকুর হেঁটে যাচ্ছেন, তখন আর এক মূহুর্তও বিলম্ব করতে রাজী নন কৃষ্ণদাস। পথের মধ্যেই তাই অভিরামের পদে পড়ে নিজের বাসনার কথা ব্যক্ত করলেন। অভিরামও প্রসন্ন হলেন আগুন্তুকের আগ্রহ দেখে।

নির্দিষ্ট দিনে কৃষ্ণদাসকে দীক্ষা দিলেন অভিরাম। কৃষ্ণদাসকে সকলে ‘বাঙ্গাল কৃষ্ণদাস’ বলে সম্বোধন করত। কারণ, তিনি বাঙ্গাল দেশবাসী   অর্থাৎ বঙ্গদেশবাসী  ছিলেন। কিন্তু, অভিরাম তাঁকে আদেশ দিলেন শ্বোঙালুতে গিয়ে গোপীনাথ বিগ্রহ স্থাপন করে সেবাকার্য শুরু করতে। হাওড়া-তারকেশ্বর রেলপথে তারকেশ্বর নেমে বাসে চৌতারা হয়ে শ্বোঙালু যাওয়া যায়।

শ্রীগুরুদেবের আজ্ঞা পেয়ে প্রফুল্লিত হলেন শিষ্য। তিনি বললেন, “বাবা, আপনিই কৃপা করে শ্বোঙালুতে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে দিন । সেই বিগ্রহ তখন আমি সেবা করবো।” শিষ্যের বিনয়বচনে অভিরাম প্রীত হলেন। রাজী হয়ে তিনি কৃষ্ণদাসকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে গেলেন। গ্রামবাসীরা সকল প্রয়োজন মেটালেন। মহামহোৎসবের মধ্য দিয়ে গোপীনাথ বিগ্রহ স্থাপন করে দিলেন ঠাকুর অভিরাম।

বৈষ্ণবের বেশভূষা ধারণ করে, দ্বাদশ অঙ্গে তিলকসেবা করে অপূর্ব দর্শন হয়ে কৃষ্ণদাস অনুরাগসহ নিষ্ঠাভরে গোপীনাথের সেবা করেন। সেবা ভিন্ন তিনি অপর কিছু জানেন না, জানতেও চান না। সদা সাত্ত্বিক মনোভাব তাঁর।

একদিন গোপীনাথের আরতি করছেন, এমন সময়ে এক নারী এসে আরতি দর্শন করতে তাঁর পাশে দাঁড়ালেন। সে নারীর প্রতি দৃষ্টি পড়লো কৃষ্ণদাসের। তিনি মনে মনে ভাবলেন, ‘এ কেমন বিচার আমার মনের। সেবা ছেড়ে আমার চোখ অন্যদিকে পড়লো ! রতির চাঞ্চল্য হল ! তবে তো আমার দেহ শুদ্ধ নয়, তাই জন্যেই রতিও শুদ্ধ নয়। একারণেই সেবা থেকে মন সরে নারীর প্রতি গেছে। সেবার থেকেও বড় করে মন কিছু চায় নিশ্চয়। বেশ এ চোখের ক্ষিদে আমি মেটাবো। দুষ্ট গোরুর থেকে শূন্য গোয়াল ভাল। তাই , ওই চোখের ব্যবস্থা আমি করছি !

আরতি শেষে নারী চলে গেলেন। কৃষ্ণদাসও তাঁর পিছু পিছু গেলেন। নারী যে গৃহে প্রবেশ করলেন, কৃষ্ণদাসও সে গৃহে ঢুকলেন। অন্যান্য যাঁরা ছিলেন সেই গৃহে তাঁরা অত্যন্ত আনন্দ পেলেন কৃষ্ণদাসকে দেখে। মহাসমাদর করে আসন পেতে বসতে দিলেন। কৃষ্ণদাস বললেন,  সেই নারীর সঙ্গে তাঁর কিছু প্রয়োজন আছে। তিনি নির্জনে তাই কথা বলতে চান। নির্জন গৃহে সেই নারীকে কৃষ্ণদাস বললেন, নগ্ন হয়ে দাঁড়াতে। নারী ভীতা হলেন। কৃষ্ণদাস বললেন, “ভয় পাওয়ার কারণ নেই। আমি কেবল দূর থেকে তোমায় দেখব। তোমার কোন ক্ষতি হবে না নিশ্চিন্তে থাকো।” পূজারী কৃষ্ণদাসের আশ্বস্ত বাক্যে নারী মনে বল পেলেন এবং বিবস্ত্র হয়ে দাঁড়ালেন। নারীকে নিরীক্ষণ করলেন কৃষ্ণদাস দূর থেকে। তারপর গৃহে ফিরে গেলেন আর করলেন এক অবিশ্বাস্য কাণ্ড।

গৃহে ফিরেই লৌহ শলাকা গেঁথে দিয়ে নিজের চোখ দুটি নষ্ট করে ফেললেন কৃষ্ণদাস। অন্ধ হয়ে গেলেন স্বেচ্ছায় বরাবরের মত। যে চোখ এমন দুষ্টতা করে তিনি তাকে চিরকালের মত শেষ করে দিলেন, যাতে আর কোনদিনও অনাচার না করতে পারে। গোপীনাথের সেবা ছেড়ে যে চোখ অন্য কিছু চায় তাকে এমনই শাস্তি দেওয়া উচিৎ ইচ্ছাপূরণ করানোর পর।
এদিকে ভক্ত দুঃখে সদা দুঃখী হন যিনি, সেই ভক্তবৎসল প্রভু গোপীনাথ তো আর স্থির থাকতে পারলেন না নিজ ভক্তের অমন করুণ অবস্থা দেখে। তিনি বাঙ্ময় হলেন। বললেন, “ওহে কৃষ্ণদাস, এ তুমি কী অঘটন ঘটালে আজ! কেন তুমি অন্ধ হতে গেলে? এমন দুর্দশাকে কেন আপন করলে? এখন এই অন্ধ অবস্থায় আমার পরিচর্যা কেমন ভাবে করবে! তোমার দেখাশোনা, তোমার সেবা করার জন্যই তো এখন লোকের দরকার হবে ! কী ছেলেমানুষি কাণ্ড করলে !”

স্বয়ং গোপীনাথ কথা বলেছেন ! গোপীনাথ তাঁর দুর্দশায় দুঃখী হয়েছেন—- এ কথা ভেবেই মহানন্দের প্রাবল্যে কৃষ্ণদাস মূর্ছিত হয়ে গেলেন। ওদিকে, অভিরাম জানতে পারলেন অনুভব করতে পারলেন নিজ শিষ্যের অঘটনের কথা। তিনি চলে এলেন শ্বোঙালুতে। তিনি কোলে তুলে নিলেন কৃষ্ণদাসের মাথা। গভীর স্নেহে বললেন, “কৃষ্ণদাস এমন কাণ্ড কেন ঘটালে?  নিজের হাতে নিজের নয়ন নষ্ট করে ফেললে !”

তখন কৃষ্ণদাস বললেন সব ঘটনা। কি ভাবে গোপীনাথের সেবা দেবেন এই চিন্তায় তখন সে দিশাহারা। অভিরাম বললেন, “চিন্তা করো না, আমি বলে রাখলাম সেবার সময় তুমি গোপীনাথকে দর্শন করতে পারবে। তোমার হাতে গোপীনাথের শৃঙ্গার তিলক সজ্জা সব সুচারু রূপেই হবে। তুমি তাঁর নবঘন শ্যাম বদন দেখতে পাবে মানসে। তুমি এমন সুনিপুণ হবে সেবায় যে, সকলে তোমার যশগান গাইবে। পিতা যেমন পুত্রের দোষ দেখে না, গোপীনাথও তেমন তোমার  কোন ত্রুটি নেবেন না, নিশ্চিন্তে থাকো।”

সত্যই গোপীনাথ প্রকট হতেন কৃষ্ণদাসের সামনে। আর অন্ধ হয়েও কৃষ্ণদাস সুচারু সেবা দিতেন। এরপর একদিন, নিজের অন্ধ ভক্তের কষ্ট দেখে অভিরাম তাঁকে বললেন, “শোনো কৃষ্ণদাস, তোমাকে আর বৈধীভক্তি পালন করতে হবে না। তুমি এবার থেকে পঞ্চভাব যুক্ত হয়ে রাগানুগা পথে প্রেমসেবা দেবে। এই আমার আদেশ। মানসে সেবা করবে, সাক্ষাৎ-এ নয়। বুঝেছো তো ! কৃষ্ণদাস নতমস্তকে আজ্ঞা মেনে নিলেন।

বিনম্র প্রণতি জানাই এমন সেবানিষ্ঠ, সেবাপ্রাণ ভক্ত বাঙ্গাল কৃষ্ণদাস কে।
————-ভক্তকৃপা ভিখারিণী
রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক
____________

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ রিভিউ

আজ কৌশিকী অমাবস্যা, জানুন কেন পালন করা হয় এই বিশেষ তিথি।

শাস্ত্র অনুযায়ী কৌশিকী অমাবস্যার গুরুত্ব অন্যান্য অমাবস্যার থেকে একটু আলাদা হয়। এই বিশেষ তিথিতে তারাপীঠ মন্দিরে পুজো করা হয় নিষ্ঠা ভরে। কৌশিকী অমাবস্যার অর্থ হল তারা নিশি। এই তিথি তন্ত্র সাধনার এক বিশেষ রাত। অমাবস্যার এই বিশেষ তিথিতে সাধক বামা ক্ষ্যাপা তারাপীঠের মহাশ্মশানের শিমূল গাছের তলায় মা তারার আরাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। মনে করা হয়, বিশেষ এই তিথিতে তারাপীঠে তারা মায়ের পুজো করলে সকল মনের ইচ্ছে পূরণ হয়। এই কারনেই কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠে হাজার হাজার পূণ্যার্থী আসেন মায়ের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য। এদিন তারাপীঠের শ্মশান এক অন্য রূপ নেয়।
আবার আজকের এই দিনে দশ মহাবিদ্যার অন্যতম দেবী তারা আজ বামদেবের সন্মুখে আবির্ভূত হন।

 

বামদেব পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে আজকের দিনেই সিদ্ধিলাভ করেন। পশ্চিমবঙ্গের বীরভুম জেলায় অবস্থিত তারাপীঠ এ আজ এই উপলক্ষ্যে বিশাল উৎসব  হয়, তারা দেবীকে বৌদ্ধ ধর্মের অন্তর্গত বজ্রযানে নীলসরস্বতীও বলা হয়। লোকে বিশ্বাস করে এই তিথিতে ভাত খেতে নেই।

 

কৌশিকী অমাবস্যা, অন্য সব অমাবস্যার থেকে একটু আলাদা, কারণ তন্ত্র মতে ও শাস্ত্র মতে ভাদ্র মাসের এই তিথিটি একটু বিশেষ। অনেক কঠিন ও গুপ্ত সাধনা এই দিনে করলে আশাতীত ফল মেলে। সাধক কুলকুণ্ডলিনী চক্রকে জয় করে। বৌদ্ধ ও হিন্দু তন্ত্রে এই দিনের এক বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। তন্ত্র মতে এই রাতকে ‘তারা রাত্রি’ও বলা হয়৷ এক বিশেষ মুহূর্তে স্বর্গ ও নরক দুইয়ের দরজা মুহূর্তের জন্য খোলে ও সাধক নিজের ইচ্ছা মতো ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক শক্তি সাধনার মধ্যে আত্মস্থ করেন ও সিদ্ধি লাভ করেন৷
শ্রীশ্রীচণ্ডীতে বর্ণিত মহা সরস্বতী দেবীর কাহিনীতে বলা আছে, পুরাকালে একবার শুম্ভ ও নিশুম্ভ কঠিন সাধনা করে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করলে চতুরানন তাঁদের বর দেন, কোনও পুরুষ তাঁদের বধ করতে পারবেন না৷ শুধু কোনও অ-যোনি সম্ভূত নারী তাঁদের বধ করতে পারবেন। অর্থাৎ এমন এক নারী, যিনি মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নেননি, তাঁর হাতেই এই দুই অসুর ভাই-এর মৃত্যু হবে। পৃথিবীতে এমন নারী কোথায়? আদ্যা শক্তি মহামায়াও মেনকা রানির গর্ভে জন্ম নিয়েছেন, তাই তিনিও ওঁদের নাশ করতে পারবেন না। তা হলে উপায়?
পূর্ব জন্মে পার্বতী যখন সতী রূপে দক্ষ যজ্ঞ স্থলে আত্মাহুতি দেন, তার কারণে এই জন্মে ওঁর গাত্র বর্ণ কালো মেঘের মতো। তাই ভোলানাথ তাঁকে কালিকা ডাকতেন। একদিন দানব ভাইদের দ্বারা পীড়িত ক্লান্ত দেবতারা যখন কৈলাশে আশ্রয় নিলেন, শিব সব দেবতাদের সামনেই পার্বতীকে বললেন, “কালিকা তুমি ওদের উদ্ধার করো।” সবার সামনে ‘কালী’ বলে ডাকায় পার্বতী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, অপমানিত ও ক্রোধিত মনে মানস সরোবরের ধারে কঠিন তপস্যা করলেন।তপস্যান্তে শীতল মানস সরোবরের জলে স্নান করে নিজের দেহের সব কালো পরিত্যাগ করলেন ও পূর্ণিমার চাঁদের মতো গাত্র বর্ণ ধারণ করলেন। ওই কালো কোশিকাগুলি থেকে এক অপূর্ব সুন্দর কৃষ্ণবর্ণ দেবীর সৃষ্টি হয়। ইনি দেবী কৌশিকী। আজ সেই তিথি, যে দিন এই দেবীর উৎপত্তি হয় এবং তিনি শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন। তাই এই অমাবস্যার নাম কৌশিকী অমাবস্যা। আবার আজকের এই দিনে দশ মহাবিদ্যার দ্বিতীয়া স্তরের অন্যতম দেবী তারা মর্ত ধামে আবির্ভূত হন। বীরভুম জেলায় অবস্থিত তারাপীঠে এই উপলক্ষে বিশাল উত্‍সব হয়।
বলা হয়, এই অমাবস্যা তিথিতে ক্ষণিকের জন্য খুলে যায় স্বর্গ এবং নরক এই দুইয়েরই দ্বার। আর আমাদের জন্য তার যে কোনও একটি নির্দিষ্ট হয় কর্মফলের উপরে ভিত্তি করে, বিশেষত এই অমাবস্যা তিথিতে আমরা কী করেছি, তার উপরে ভিত্তি করে। দেবী তারা অল্পতুষ্টা, কিন্তু মহাঋষি বশিষ্ঠকে রীতিমতো নিয়ম মেনে তাঁকে সাধনা করতে হয়েছিল তারাপীঠে, তবেই আবির্ভূতা হয়েছিলেন দেবী। তাই এই কৌশিকী অমাবস্যায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কী কী করা উচিত আর কী একেবারেই পরিহার করা উচিত, জেনে রাখা জরুরি।

শুচিতা

যে কোনও সাধনারই মূল কথা হল শুচিতা- শুধু নিজের নয়, একই সঙ্গে স্থানেরও। তাই এই দিন যেমন নিজেকে, তেমনই পরিষ্কার রাখতে হবে ঘরবাড়ি। সকালে উঠে ঘর ধুয়ে-মুছে স্নান করে নিতে পারলে ভাল, না হলে দিনের যে কোনও সময়েই তা করে নেওয়া যায়। এর পরেই শুরু হবে আরাধনা।

সিঁদুর, জবা

মহাতিথির পূজায় কিন্তু মহা আড়ম্বরের প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র সিঁদুর আর জবাফুল দেবীর পায়ে অর্পণ করলেই হল। চাইলে ওম তারে তুত্তারে তুরে স্বাহা বীজমন্ত্র জপ করা যায়।

আহারে সংযম

তন্ত্রের মূল ভিত্তি পঞ্চ ম-কার। সেই রীতি মেনে মায়ের ভোগে তারাপীঠে অবশ্যই দেওয়া হবে মৎস্যভোগ, নিবেদন করা হবে মদ। কিন্তু তন্ত্রে এর রয়েছে দার্শনিক গুরুত্ব। তাই দেবীকে দেওয়া হচ্ছে বলেই আমরা কিন্তু এদিন মাছ বা আমিষ, মদ কোনওটাই গ্রহণ করতে পারব না। উপবাসে থাকতে পারলে ভাল, না হলে নিরামিষ আহারে সংযম পালন করতে হবে।
কৌশিকী অমাবস্যায় ভুলেও আমিষ ভোজন করতে বারণ করা হয়। শাস্ত্র মতে, এই দিনে আমিষ ভোজন করলে শরীরে নেগেটিভ এনার্জি বেড়ে যায়। এ দিন আমিষ ভোজন করলে চর্মরোগ এবং পেট-পাকস্থলী সম্পর্কিত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে, এমনটাই শাস্ত্রে বর্ণিত রয়েছে।

শারীরিক সংযম

পঞ্চ ম-কারের অন্যতম হল মৈথুন। কিন্তু গৃহস্থ যেহেতু তন্ত্রমতে আরাধনা করেন না, তাই এই তিথিতে শারীরিক সংযমে নিজেকে বাঁধতে হবে। মৈথুনে লিপ্ত হওয়া যাবে না। দৈবাৎ লিপ্ত হলে তা জীবনে বিড়ম্বনা ডেকে আনবে, গর্ভে সন্তান এলে তার জীবনও হয়ে উঠবে অশুভ।

দূরে যাত্রা নয়—

গর্ভবতী মহিলাদের এদিন বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়। কারণ এই নেগেটিভ এনার্জির প্রভাব গর্ভস্থ সন্তানের উপর পড়তে পারে। গেলে সঙ্গে রাখতে হবে তুলসিপাতা।

দীপদান–

দীপাবলি অমাবস্যার মতো কৌশিকী অমাবস্যাতেও দীপদানের রীতি আছে। এক্ষেত্রে দুটি তিলের তেলের প্রদীপ সন্ধ্যায় রাখতে হয় বাড়ির দরজার দুই পাশে, তা অশুভ শক্তিকে গৃহে প্রবেশে বাধা দেয়।

গোপন আচার—

বলা হয়, একটি জলশূন্য নারকেল নিয়ে, তাতে একটি ফুটো করে, সেই ফুটোর মধ্যে দিয়ে নারকেলে চিনি ভরে, ফুটো উপরের দিকে রেখে নারকেলটা যদি বাড়ি থেকে কিছু দূরে পুঁতে দেওয়া যায়, তবে জীবন থেকে সব বাধা দূর হয়। অসুবিধা হল- এই আচার পালন করতে হবে গোপনে, কেউ দেখে ফেলে লাভ হবে না।

দুধদান—

দীপদানের মতোই কৌশিকী অমাবস্যায় যদি কোনও কুয়ো বা গর্তে এক চামচ দুধ নিবেদন করা যায়, তবে তা জীবনে মঙ্গল বয়ে আনে।

তন্ত্র শাস্ত্রের ব্যাখা অনুযায়ী, এই তিথিতে মা তারার পুজো দিয়ে দ্বারকা নদীতে স্নান করলে শত জন্মের পুন্যলাভ হয়। আর এই কারণেই তারাপীঠে এই তিথিতে আয়োজন করা হয় বিশেষ পুজোর।

 

এই কৌশিকী অমাবস্যার দিন তান্ত্রিকরা তন্ত্র সাধনার জন্য বেছে নেন। এই সাধনা চলে গোটা রাত জুড়ে। তবে অনেকেই বলেন কৌশিকী অমাবস্যা নাকি ভীষণ জাগ্রত। এই দিনেই নাকি কিছুক্ষণের জন্য খুলে যায় স্বর্গের দরজা। এই নিয়েও রয়েছে অনেক কাহিনি।তন্ত্রের মাধ্যমেই সিদ্ধিলাভের আসায়  সারা রাত ধরে শ্মশানে তন্ত্র সাধনাতে মগ্ন হন সাধকরা। সারা রাত ধরে শ্মশানে চলা সাধনা ফলদায়ী হয়।  অনেকে বলেন শ্মশানের মধ্যে একটি হল মণিকর্ণিকা ঘাট। বিভিন্ন কারণের জন্যই কৌশিকী অমাবস্যার দিনটি আলাদা বলে ধরা হয়। এবং তারাপীঠের এই শ্মশানকেই বলা হয় মহাশ্মশান।

।। তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

জানুন, ভগবান যখন ভক্তের সেবা করলো তখন কি হলো : রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক।

শ্রীকৃষ্ণদাস সোণার নামক এক কৃষ্ণভক্ত ছিলেন । তিনি অত্যন্ত সেবাপরায়ণ ছিলেন।  সারা দিনের সমস্ত কর্ম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে নিবেদিত ছিল তাঁর। সকল কাজের মধ্যেই তিনি এমন মনোভাব রাখতেন যে, এই কর্ম তো শ্রীকৃষ্ণের জন্য করা ! এ কাজ করলে আমার শ্রীকৃষ্ণের এ জাতীয় সেবা হবে। আর তাতে আমার প্রাণগোবিন্দ অত্যন্ত প্রীত হবেন, সুখী হবেন ।—–  ঠিক যেমন ব্রজগোপিনীদের কথা আমরা জানি , তেমন । একটা উদাহরণ দেই। যেমন,  —গোপিনীরা নিজেদেরকে খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে রাখতেন সবসময়।  তাঁরা ভাবতেন আমি যদি সুন্দর করে সেজে থাকি আর আমাকে সুন্দর লাগে দেখতে তবে শ্রীকৃষ্ণ আমায় দেখে খুব আনন্দ পাবেন। অর্থাৎ নিজেদের আনন্দের জন্য নয়। বা নিজে সুন্দরী হব এই ভাব তাদের থাকতোই না । বরং শ্রীকৃষ্ণকে সুখ দেবার জন্য ব্রজগোপিনীরা পরিপাটী করে সেজে থাকতেন। তাঁদের প্রতিটি কাজেই এ জাতীয় বোধ কাজ করতো । আবার যেমন বলা যায়,  রামায়ণের সেই বৃদ্ধা শবরী মায়ের কথা । দক্ষিণ ভারতের সেই বৃদ্ধাকে তাঁর গুরুদেব মাতঙ্গ বলেছিলেন , একদিন ভগবান শ্রীরামচন্দ্র রূপে তোমার কাছে সাক্ষাৎ দর্শন দিতে তোমার কুটীরে আসবেন। শবরী এতটাই ভালোবাসতেন রামচন্দ্রকে যে, রামচন্দ্র যাতে কুল খেয়ে আনন্দ পান তাই তিনি বনের কুলগাছ থেকে রামচন্দ্রের জন্য সংগ্রহ করা প্রতিটি কুল নিজে আগে একটু খেয়ে দেখতেন । মিষ্টি হলে তবেই তা তাঁর প্রভু রামচন্দ্রের সেবার জন্য রাখতেন। এভাবে তিনি বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করেছেন রামচন্দ্রের আগমনের জন্য । গুরুর কথা সত্য হয়েছিল । বাস্তবিক একদিন রামচন্দ্র হাজির হয়েছিলেন বনের মধ্যে বৃদ্ধা শবরী মায়ের কুটীরে । অতএব , নিজে খেয়ে দেখব বলে বা নিজের জিহ্বাকে আস্বাদন-আনন্দ দিতে , শবরী মে কুলগুলো খেয়ে রাখতেন তা নয় । রামচন্দ্রকে আনন্দ দেবেন বলে বাছাই করে কুল নিজে খেয়ে আগে দেখে নিতেন।  কৃষ্ণদাস সোণারও এমনই ছিলেন । তিনি যে অর্থ উপার্জন করতেন , ভাবতেন তা সব গোবিন্দের। আমার তো কিছু নয় । অর্থ দ্বারা গোবিন্দের সেবা করবো। এ সংসার তো তাঁর । এভাবে গঙ্গার স্রোত যেমন অবিচ্ছিন্নভাবে নিরবধি বয়ে যায় তেমন করে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কৃষ্ণদাস প্রতিটি কাজ কৃষ্ণকে স্মরণ করে , কৃষ্ণের প্রীত্যর্থে করতেন।
একদিনের ঘটনা ।  কৃষ্ণদাস ভাবে বিভোর হয়ে মুখে গীত গাইছেন আর নৃত্য করছেন তাঁর ইষ্ট কৃষ্ণবিগ্রহের সামনে। মনের ভাবখানা এমন যে—- আমার নৃত্য দেখে, সংগীত শুনে আমার প্রাণনাথ, প্রাণারাম শ্রীশ্যামসুন্দর অত্যন্ত আনন্দ পাচ্ছেন তো ! আর তাই আরও দরদ ভরে গীত গাইছেন ,  আরও সুন্দর করে নৃত্যটি করার চেষ্টা করছেন তিনি ।‌ এমন সময় হলো কি চরণের নূপুরখানি খুলে পড়ে গেল তালঠোকার সময় ভুমিতে। কৃষ্ণদাস ভাবলেন , “ইস্ , নৃত্যরসের ব্যাঘাত ঘটলো !” অর্থাৎ,  যেভাবে নৃত্যটি হচ্ছিল সেই পর্যায় থেকে চ্যূত হল নৃত্যটি।  আর তাই তিনি নৃত্যের বিরাম দিয়ে তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে পড়লেন পুনরায় নূপুরটি চরণে পড়ে নেবেন বলে । হঠাৎ এক বালক  বলে বসলো,  “দাঁড়াও , দাঁড়াও। তোমায় কষ্ট করতে হবে না। আমি পড়িয়ে দিচ্ছি। তুমি যে ভঙ্গীমায় ছিলে সেই ভঙ্গীমাতেই স্থির হয়ে দাঁড়াও।” বলতে বলতেই অপূর্ব দর্শন  বালকটি নূপুরটি চোখের নিমেষে কুড়িয়ে নিয়ে কৃষ্ণদাসের চরণে পড়িয়ে দিল। বালকের তৎপরতা দেখে কৃষ্ণদাসের ভারী ভালো লাগলো ;  বলে বসলেন, “কে গো বাছা ? কে তুমি? নাম কি তোমার ? দেখিনি তো আগে । এখানে কোথায় থাকো?” কিন্তু জিজ্ঞাসাই সার হলো। প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই বালকটি চোখের নিমেষে উধাও হয়ে গেল।  মিলিয়ে গেল  জলছবির বা মরীচিকার মতন বাতাসে। বালক নেই , অথচ চরণে নূপুর তো রয়ে গেছে। অর্থাৎ এ তো চোখের বা মনের ভ্রম নয় । বালকটি যে সত্যই এসেছিল তার প্রমাণ খুলে যাওয়া , ছিটকে পড়া নূপুরের পুনরায় চরণে উঠে আসা। তবে কে সে বালক ? কে প্রভু ? এ প্রশ্নের উত্তর পেতে শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহের দিকে তাকাতেই যেন সব উত্তর ঠোঁটে নিয়ে হাসির মধ্য দিয়ে জানিয়ে দিলেন শ্রীকৃষ্ণ— তিনিই তো সে-ই । কৃষ্ণদাস যখন বুঝলেন বালকবেশে এসে আসলে শ্রীকৃষ্ণই তাঁকে চরণের নূপুরটি পরিয়ে দিয়ে গেছেন,   তখন চোখের জল  যেন আর তাঁর বাঁধ মানে না । বক্ষ ভেসে গেল আনন্দে আবেগে। “আমার জীবন ধন্য আজ তোমার দর্শন পেয়ে প্রভু । আমি ধন্য সত্যই। আমি এ আনন্দ কাকে বোঝাবো !”— এসব বলে কৃষ্ণদাস আবেগে আপ্লুত হচ্ছেন।
কিন্তু পরক্ষণেই কৃষ্ণদাস সোণারের বড় রাগ হলো শ্রীকৃষ্ণের উপর। “এলে তো এলে,  শেষে আমার পায়ে হাত দিলে ! ছিঃ, ছিঃ।  ধিক্ আমায় ! কেন তুমি আমার পায়ে হাত দিতে গেলে বলতো, প্রভু ? কে বলেছিল, তোমায় নূপুরটা পরিয়ে দিতে ?  আমি কি নূপুরটা নিজে নিয়ে পড়তে পারতাম না ! আমার পায়ে হাত দিয়ে এভাবে আমাকে অপরাধী করলে ! দোষী বানালে ! এখন তো আমার ইচ্ছে করছে এই পা-টাকেই কেটে বাদ দিয়ে দেই।……..” —এভাবে কত না অনুযোগ করলেন সাধু কৃষ্ণদাস স্নেহাবেশে তাঁর শ্রীকৃষ্ণকে । কত না  প্রণয়কলহ চললো। কত না  ধিক্কার দিলেন । “ভৃত্যের চরণে নুপুর পড়াতে গেলে  প্রভু হয়ে ? ছিঃ, ছিঃ !  তোমার কি লজ্জাও করলো না একবারের জন্য !……” ইত্যাদি , ইত্যাদি বলেই চলেছেন কৃষ্ণদাস।
আজ শ্রীকৃষ্ণ সত্যিই বড় আনন্দ পেয়েছেন। একে তো  নিজের প্রিয় ভক্তের চরণে নূপুর পরিয়ে দিয়ে সেবা করেছেন ভক্তের।  আর তার উপর রোজ আদর খান,  আজ এত তিরস্কার পাচ্ছেন সেই ভক্তের থেকে ‌ । ভক্তের প্রণয়ভরা তিরস্কার যে তাঁর কাছে বেদ-স্তুতি মন্ত্রের চেয়েও অনেক বেশি প্রিয় ! অনেক বেশি আনন্দদায়ক ! তাঁর ঠোঁটের কোণের হাসি তাই থামছেই না যেন আজ….।

—-ভক্তকৃপাভিখারিণী
রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ রিভিউ

আজ আন্তর্জাতিক সিডও দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয় এবং গুরুত্ব।

 

আজ আন্তর্জাতিক সিডও দিবস। শতাব্দীব্যাপী নারী আন্দোলনের অভিযাত্রা ও বিংশ শতাব্দীর মানবাধিকার আন্দোলনের অনুকূল পরিবেশে জাতিসংঘ নারী আন্দোলনের অগ্রগতির নানা উদ্যোগের ফসল ‘সিডও সনদ’। এই সনদ প্রণয়ন বা কার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ওয়ার্কিং গ্রুপ নারী জাতির মর্যাদাবিষয়ক কমিশন ও সাধারণ পরিষদের মধ্যে পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন সময় আলোচনা ও পর্যালোচনার পর গৃহীত হয় ‘সিডও সনদ’। বিভিন্ন রাষ্ট্র সনদে স্বাক্ষর শুরু করে ১৯৮০ সালে।

নারীর বিরুদ্ধে সকল প্রকার বৈষম্য দূর করার কনভেনশন (CEDAW) হল একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি যা 1979 সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়।  নারীর অধিকারের একটি আন্তর্জাতিক বিল হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, এটি 3 সেপ্টেম্বর 1981 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং 189টি রাজ্য এটি অনুমোদন করেছে।  কনভেনশনটি অনুসমর্থনকারী পঞ্চাশটিরও বেশি দেশ কিছু ঘোষণা, সংরক্ষণ এবং আপত্তির সাপেক্ষে তা করেছে, যার মধ্যে 38টি দেশ রয়েছে যারা প্রয়োগকারী নিবন্ধ 29 প্রত্যাখ্যান করেছে, যা কনভেনশনের ব্যাখ্যা বা প্রয়োগ সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তির উপায়গুলিকে সম্বোধন করে।  অস্ট্রেলিয়ার ঘোষণায় তার ফেডারেল সাংবিধানিক ব্যবস্থার ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করা হয়েছে।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পালাও স্বাক্ষর করেছে, কিন্তু চুক্তিটি অনুমোদন করেনি।  হলি সি, ইরান, সোমালিয়া, সুদান এবং টোঙ্গা CEDAW-তে স্বাক্ষরকারী নয়।

 

জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রতিবছর ‘সিডও’ দিবস পালিত হয়। নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ Convention on the Elimination of All forms of Discrimination(CEDAW)।নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়  Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination against Women, সংক্ষেপে যা  CEDAW হিসেবে পরিচিত। বাংলায় এটিকে চিহ্নিত করা হয় ‘নারীর প্রতি সব বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও)’। ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক সনদটি গৃহীত হলেও ১৯৮১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে তা কার্যকর করা শুরু হয়।

 

মহিলাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত কমিটি, সাধারণত ‘CEDAW কমিটি’ হিসাবে সংক্ষেপে, জাতিসংঘের (UN) চুক্তি সংস্থা যা নারীর বিরুদ্ধে সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণের কনভেনশন (CEDAW) তত্ত্বাবধান করে।  এই কমিটির গঠনটি CEDAW-এর 17 অনুচ্ছেদে রূপরেখা দেওয়া হয়েছিল, যা কমিটির নিয়ম, উদ্দেশ্য এবং পরিচালনা পদ্ধতিও প্রতিষ্ঠা করে।  CEDAW-তে বর্ণিত নিয়মগুলি অনুসরণ করা হচ্ছে তা নিশ্চিত করতে কমিটি তার কার্যকালের পুরো বছর ধরে একাধিক সেশন করেছে।  সময়ের সাথে সাথে কমিটির অনুশীলনগুলি নারীর অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলির উপর বর্ধিত ফোকাসের কারণে বিকশিত হয়েছে।

 

CEDAW কার্যকর হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় 20টি অনুমোদন পাওয়ার পর 3 সেপ্টেম্বর 1981-এ মহিলাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল৷  CEDAW-এর 17 অনুচ্ছেদ কমিটি গঠন করেছে যাতে CEDAW-এর বিধানগুলি যে দেশগুলি স্বাক্ষর করেছে এবং এর দ্বারা আবদ্ধ হতে সম্মত হয়েছে তাদের দ্বারা অনুসরণ করা হয়েছে।  কমিটির প্রথম নিয়মিত অধিবেশন 18 থেকে 22 অক্টোবর 1982 পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনে কমিটির প্রথম কর্মকর্তারা সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দ্বারা নির্বাচিত হন, মঙ্গোলিয়ার মিসেস এল. ইদার চেয়ারপারসন হন।  নির্বাচিত অন্য কর্মকর্তারা হলেন তিনজন ভাইস-চেয়ারপারসন: কানাডার এম. ক্যারন, যুগোস্লাভিয়ার জেড ইলিক এবং রুয়ান্ডার এল. মুকাইরাঙ্গা।  কমিটির প্রতিনিধি হিসেবে গিয়ানার ডি.পি. বার্নার্ড নির্বাচিত চূড়ান্ত কর্মকর্তা ছিলেন।  এই অধিবেশন চলাকালীন, কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে তার প্রক্রিয়ার নিয়মগুলি গ্রহণ করার জন্য অনুমোদন করেছে৷

 

এর মূল বিষয় হচ্ছে, নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ বা দূরীকরণ। যেখানে রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক সব ক্ষেত্রে নারীর মানবাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। এটি আইনগত ভিত্তি নিয়ে একটি কনভেনশন আকারে রূপ লাভ করেছে। এ সনদটি মূলত তিনটি প্রেক্ষিত থেকে সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেয়। ক. নারীর নাগরিক অধিকার ও আইনি সমতা নিশ্চিতকরণ, যার মাধ্যমে নারী গণজীবনে ও সমাজে পুরুষের সমপর্যায়ে সব সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। খ. নারীর প্রজনন ভূমিকাকে সামাজিক ভূমিকা হিসেবে গণ্য করা, যাতে প্রজননের কারণে নারীকে কোণঠাসা না করে এ ক্ষেত্রে নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া। গ. আচার-প্রথা, সংস্কার ও বিধি যা নারীর জেন্ডার ভূমিকা নির্ধারণ করে, তা বাতিল করা। পরিবার ও সমাজে শুধু ‘মানুষ’ হিসেবে নারীকে গণ্য করা এবং পুরুষের ক্ষমতাভিত্তিতে তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সিডও একমাত্র আন্তর্জাতিক চুক্তি বা সনদ, যা শুধু নারী সংক্রান্ত।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ রিভিউ

নারী সমতা দিবস, জানুন তার ইতিহাস এবং কেন পালিত হয়ে আসছে এই দিনটি।

আজকের যুগে নারীরা অনেক এগিয়ে। সমগ্র বিশ্ব দেখেছে নারীরা সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছাতে সক্ষম। কোনও কাজেই আজ নারীরা পুরুষদের থেকে পিছিয়ে নেই। এখন বিশ্বব্যাপী এখন অনেক সংস্থা গড়ে উঠেছে, যারা নারীদের প্রতি নিপীড়ন ও সহিংসতার বিরুদ্ধে, সমাজে বিদ্যমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে। শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে নারীদের সমান সুযোগ প্রদান করে চলেছে। পুরুষের সঙ্গে সমান তালে পা মিলিয়ে এগিয়ে ছলছে নারীরা। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের অগ্রগতি অনস্বীকার্য। প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা তাদের যোগ্যতার ছাপ ফেলে যাচ্ছে। খেলা ধুলা, শিক্ষা দীক্ষা থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা সর্বক্ষেত্রে তারা নিজেদের যোগ্যতার সাক্ষর রেখে যাচ্ছে। পুরুষের থেকে তারাও যে কোনো অংশে কম নয় তা বুঝিয়ে দিচ্ছে তাদের সাফল্য দিয়ে। ফলস্ববরূপ তাদের এই জয়। সেদিনের আধিকার লড়াই এর সাফল্য।

 

আমেরিকান কংগ্রেস এবং আমেরিকার ৩৭তম রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭৩ সালের  ২৬ অগস্ট দিনটিকে ‘নারী সমতা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আমেরিকায় এই দিবস উদযাপন শুরু হয়। এর পর থেকে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে নারী সমতা দিবস পালিত হয়ে আসছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে ১৯২০ সালের ঊনবিংশ সংশোধনী (সংশোধন XIX) গৃহীত হওয়ার স্মরণে ২৬শে আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীর সমতা দিবস উদযাপন করা হয়, যা যুক্তরাষ্ট্র এবং ফেডারেল সরকারকে নাগরিকদের ভোটের অধিকার অস্বীকার করা থেকে নিষিদ্ধ করে।  লিঙ্গ ভিত্তিতে রাষ্ট্র.  এটি প্রথম ১৯৭১ সালে পালিত হয়েছিল, ১৯৭৩ সালে কংগ্রেস দ্বারা মনোনীত হয়েছিল, এবং প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি দ্বারা ঘোষণা করা হয়।মহিলাদের অধিকার নিয়ে ৭২ বছরের কঠোর পরিশ্রম ও প্রচারের পর ১৯২০ সালে সফলতা পায় মহিলারা ৷

 

ইতিহাস—

 

যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধের আগেই শুরু হয়েছিল নারীদের ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ রাজ্যে কেবল ধনী শ্বেতাঙ্গ পুরুষদেরই ভোটের অধিকার ছিল ১৮৩০-এর দশকের দিকে । প্রথমবার নারী সমতা বা নারী সমানাধিকার নিয়ে প্রতিবাদ হয়েছিল ১৮৪৮ সালে নিউইয়র্কে Women’s Rights Convention-এ ।  পরবর্তী সময়ে এলিজাবেথ ক্যাডি স্ট্যানটন এর নেতৃত্বে ১৮৯০-এর দশকে, ন্যাশনাল আমেরিকান ওমেন স্যাফারেজ অ্যাসোসিয়েশন শুরু হয়। এই দশক শেষ হওয়ার আগে, আইডাহো এবং ইউটা মহিলাদের ভোট দেওয়ার অধিকার মিলেছিল। ১৯১০ সালে অন্যান্য পশ্চিমী রাজ্যগুলি মহিলাদের ভোট দেওয়ার অধিকার দিতে শুরু করে। তবে তখনো বেশ কয়েকটি পূর্ব এবং দক্ষিণী রাজ্যে মহিলাদের ভোটারাধিকারে স্বীকৃতি মেলেনি। এর পর, ১৯২০ সালের ২৬ অগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে ১৯তম সংশোধনী গৃহীত হয়, যেখানে মহিলাদের ভোট দেওয়ার অধিকার পান।

তারিখটি ১৯২০ সালে সেই দিনটিকে স্মরণ করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল যখন সেক্রেটারি অফ স্টেট বেইনব্রিজ কোলবি আমেরিকান মহিলাদের ভোট দেওয়ার সাংবিধানিক অধিকার দেওয়ার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন।  ১৯৭১ সালে, ১৯৭০ সালের দেশব্যাপী নারীদের সমতার জন্য ধর্মঘট এবং আবার ১৯৭৩ সালে, সমান অধিকার সংশোধনী নিয়ে লড়াই চলতে থাকলে, নিউইয়র্কের কংগ্রেসওম্যান বেলা আবজুগ ২৬শে আগস্টকে নারীর সমতা দিবস হিসেবে মনোনীত করার জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

 

১৯৭২ সালে, রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন ২৬ আগস্ট, ১৯৭২কে “নারী অধিকার দিবস” হিসাবে মনোনীত করেছিল এবং এটি ছিল নারীর সমতা দিবসের প্রথম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।  ১৯৭৩ সালে আমেরিকান কংগ্রেস এবং আমেরিকার ৩৭তম রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন আনুষ্ঠানিকভাবে ২৬ অগস্ট দিনটিকে ‘নারী সমতা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।  আমেরিকার মহিলাদের প্রথম ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছিল।  একই দিনে, রাষ্ট্রপতি নিক্সন নারী সমতা দিবসের জন্য ঘোষণা ৪২৩৬ জারি করেছিলেন, যা শুরু হয়েছিল, অংশে: “মহিলাদের ভোটাধিকারের সংগ্রাম, যাইহোক, আমাদের জাতির জীবনে মহিলাদের পূর্ণ এবং সমান অংশগ্রহণের দিকে প্রথম পদক্ষেপ মাত্র। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে,  আমরা আমাদের আইনের মাধ্যমে লিঙ্গ বৈষম্যকে আক্রমণ করে এবং মহিলাদের জন্য সমান অর্থনৈতিক সুযোগের জন্য নতুন পথ প্রশস্ত করার মাধ্যমে অন্যান্য বিশাল অগ্রগতি করেছি৷ আজ, আমাদের সমাজের কার্যত প্রতিটি ক্ষেত্রে, মহিলারা আমেরিকান জীবনের গুণমানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে৷ এবং এখনও,  এখনও অনেক কিছু করা বাকি আছে।”
২০২১ সাল পর্যন্ত, রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে প্রতিটি রাষ্ট্রপতি প্রতি বছর ২৬ আগস্টকে নারী সমতা দিবস হিসাবে মনোনীত করে একটি ঘোষণা জারি করেছেন। তাই এই দিনটি মহিলাদের সমান অধিকার দিবস হিসেবে পালন করা হয়।আমেরিকায় এই দিবস উদযাপন শুরু হয়। এর পর থেকে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে নারী সমতা দিবস পালিত হয়ে আসছে।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ব্রিটিশ কারাগারে কারারুদ্ধ প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী নারী, বাসন্তী দেব।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে বাসন্তী দেবী  প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু শহীদ ভগৎ সিং-এর মতই নয় বরং শক্তিশালী নারীদের দ্বারা প্রশস্ত হয়েছিল যারা তাদের মাটিতে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিল। বাসন্তী দেবী  ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা ছিলেন বাসন্তী দেবী। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ কারাগারে কারারুদ্ধ প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী নারী।

 

জন্ম পরিবার শিক্ষা—-

 

বাসন্তী দেবী  ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনাকালে ২৩ মার্চ ১৮৮০ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বরদানাথ হালদার ও মাতার নাম হরিসুন্দরী দেবী। তার পিতা ছিলেন আসামের বিজনি ও অভয়াপুরী এস্টেটের দেওয়ান। দশ বছর বয়েসে তিনি দার্জিলিংয়ের লরেটে কনভেন্টে শিক্ষার জন্যে ভর্তি হন। ১৮৯৬ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সাথে বিবাহ হয়। বাসন্তী কলকাতার লরেটো হাউসে পড়াশোনা করেন, যেখানে তিনি সতেরো বছর বয়সে চিত্তরঞ্জন দাসের সাথে দেখা এবং বিয়ে করেন। ১৮৯৮ থেকে ১৯০১ সালের মধ্যে দুজনের তিনটি সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল।

 

রাজ নৈতিক জীবন এর শুরু—

 

১৯২০ সালে চিত্তরঞ্জন দাশের সাথে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি ১৯২১ সালে নারীদের অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯২১ সালে চিত্তরঞ্জন দাশ যখন গ্রেপ্তার হন তখন তিনি আইন অমান্য ও হরতালের ঘোষণা দেন। এর পরে তিনিও গ্রেপ্তার হন বড়বাজার এলাকায় হরতাল করার সময়। তাদের গ্রেপ্তারে সারা বাংলা জুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু তাকে ‘মা’ সম্বোধন করতেন। তিনি ও চিত্তরঞ্জন দাশ মিলে সম্পাদনা করতেন বাঙলার কথা পত্রিকা। ১৯২২ সালে এপ্রিল মাসে চট্টগ্রামে যে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় সেখানে তিনি সভানেতৃত্ব করেন এবং দেশবন্ধুর নতুন কর্মপন্থা ইঙ্গিত করেন। দেশবন্ধু তখনও জেলে ছিলেন। তিনি দেশবন্ধুর সাথে সংগঠন গড়ে তোলা ও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন জন্য কাজ করেছেন। ১৯২২ সালে চট্টগ্রামে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনে সভানেত্রী ছিলেন।

 

বৈপ্লবিক জীবন—

 

তার স্বামীর অনুসরণে, বাসন্তী দেবী আইন অমান্য আন্দোলন এবং খিলাফত আন্দোলনের মতো বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন এবং ১৯২০ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনেও অংশ নিয়েছিলেন। পরের বছর, তিনি দাসের বোন ঊর্মিলা দেবী এবং সুনিতা দেবীর সাথে যোগ দেন।  নারী কর্মীদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র “নারী কর্ম মন্দির” প্রতিষ্ঠা করুন।  ১৯২০-১৯২১ সালে, তিনি জলপাইগুড়ি থেকে তিলক স্বরাজ ফান্ডে স্বর্ণের অলঙ্কার এবং ২০০০ টি স্বর্ণমুদ্রা সংগ্রহ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময়, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ধর্মঘট এবং বিদেশী পণ্য নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানায়।  কলকাতায়, পাঁচজন স্বেচ্ছাসেবকের ছোট দলকে কলকাতার রাস্তায় খাদি, হাতে কাটা কাপড় বিক্রি করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল।  দাস, যিনি স্থানীয় আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন তার স্ত্রী বাসন্তী দেবীকে এমন একটি দলের নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।  সুভাষ চন্দ্র বসুর সতর্কতা সত্ত্বেও দেবী রাস্তায় নেমেছিলেন যে এটি তাকে গ্রেফতার করতে ব্রিটিশদের উস্কে দেবে।  যদিও তাকে মধ্যরাতে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তার গ্রেপ্তার ব্যাপক আন্দোলনের প্রেরণা জুগিয়েছিল।  কলকাতার দুটি কারাগার বিপ্লবী স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা পূর্ণ ছিল এবং আরও সন্দেহভাজনদের আটক করার জন্য দ্রুত আটক শিবির তৈরি করা হয়েছিল।  ১৯২১ সালের ১০ ডিসেম্বর পুলিশ দাস ও বসুকে গ্রেপ্তার করে।
দাসের গ্রেপ্তারের পর, বাসন্তী দেবী তার সাপ্তাহিক প্রকাশনা বাঙ্গালার কথা (বাংলার গল্প) এর দায়িত্ব নেন।  তিনি ১৯২১-১৯২২ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন।  ১৯২২ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রাম সম্মেলনে তার বক্তৃতার মাধ্যমে তিনি তৃণমূল আন্দোলনকে উৎসাহিত করেন।  ভারতের চারপাশে ভ্রমণ, তিনি ঔপনিবেশিকতার বিরোধিতা করার জন্য শিল্পের সাংস্কৃতিক বিকাশকে সমর্থন করেছিলেন।
দাস যেহেতু সুভাষ চন্দ্র বসুর রাজনৈতিক পরামর্শদাতা ছিলেন, বসন্তী দেবীর প্রতি বসন্তের খুব শ্রদ্ধা ছিল।  ১৯২৫ সালে দাসের মৃত্যুর পর, বসু দেবীর সাথে তার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সন্দেহ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন বলে জানা যায়।  সুভাষ চন্দ্র বসুর ভ্রাতৃপ্রতিম ভাতিজি কৃষ্ণ বোস বাসন্তী দেবীকে তাঁর “দত্তক মা” এবং তাঁর জীবনের চারটি গুরুত্বপূর্ণ মহিলার একজন হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন, বাকি তিনজন হলেন তাঁর মা প্রভাবতী, তাঁর ভগ্নিপতি বিভাবতী (শেরতের স্ত্রী)  চন্দ্র বসু) এবং তার স্ত্রী এমিলি শেঙ্কল।
তার স্বামীর মতো, বাসন্তী দেবীও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী কর্মীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন।  ১৯২৮ সালে, ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী লালা লাজপত রায় তার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলের বিরুদ্ধে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হওয়ার কয়েকদিন পর মারা যান।  এর পর বাসন্তী দেবী লাজপত রায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ভারতীয় যুবকদের উদ্বুদ্ধ করেন।

 

রাজনৈতিক জীবন থেকে অবসর—

 

দেশবন্ধু ও তার তিন সন্তান- দুই কন্যা, অপর্ণা ও কল্যাণী ও একপুত্র চিররঞ্জন। ১৯২৬ সালে একমাত্র পুত্র চিররঞ্জনের মৃত্যুর পর রাজনৈতিক জীবন থেকে অবসর নেন। এর পরেও তাকে অনেক পারিবারিক বিপর্যয় ও ব্যক্তিগত শোক সহ্য করতে হয়েছিল। প্রথমে স্বামী, পুত্র, এরপর নাবালিকা পৌত্রী, পুত্রবধু, জামাতা এবং জ্যেষ্ঠা কন্যার মৃত্যু হয় তার জীবদ্দশায়। তার দৌহিত্র সিদ্ধার্থ শংকর রায় পশ্চিমবঙ্গের ভূতপূর্ব মুখ্যমন্ত্রী ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। এক দৌহিত্রী মঞ্জুলা বসু প্রথম মহিলা অ্যাডভোকেট জেনারেল।

 

সম্মাননা—-

১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর, বাসন্তী দেবী সামাজিক কাজ চালিয়ে যান।  বাসন্তী দেবী কলেজ, কলকাতার প্রথম মহিলা কলেজ যা সরকারের অর্থায়নে ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং তার নামে নামকরণ করা হয়েছিল।  ১৯৭৩ সালে, তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণে সম্মানিত হন।

মৃত্যু—

বাসন্তী দেবী ৭ মে ১৯৭৪ মৃত্যুবরণ করেন। কলকাতা কেওড়াতলা মহাশ্মশান প্রাঙ্গণে তার স্মৃতি সমাধি মন্দির বর্তমান।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় এর প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বাংলা গানের কণ্ঠশিল্পী জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। বৃটিশ ভারতের কলকাতার টালিগঞ্জে তার মাতুলালয়ে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২১ শে ডিসেম্বর প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম। আদি নিবাস ছিল অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা বিক্রমপুরের বাহেরক গ্রামে। সেখানকার চট্টোপাধ্যায় পরিবার বরাবরই সঙ্গীতে অনুরক্ত ছিল। পিতা মণিভূষণ চট্টোপাধ্যায় চাকুরিসূত্রে সপরিবারে কলকাতার ভবানীপুরে থাকতেন। তিনি গজল,ঠুমরি দাদরায় ছিলেন দক্ষ। প্রতিমা এক বৎসর বয়সেই পিতৃহারা হলে মাতা কমলাদেবীর প্রবল ইচ্ছায় সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন। আর্থিক অভাবের মধ্যেও পয়সা জমিয়ে হারমোনিয়াম কিনে ছিলেন এবং প্রথম প্রথম গান শিখতে লাগলেন মায়ের কাছেই।পরে ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের শিষ্য বিশিষ্ট সংগীত শিক্ষক প্রকাশকালী ঘোষালের কাছে।

 

শৈশবে সাত-আট বছর বয়সে ছুটিতে এক বার ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে এসে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে। সেই শৈশবে ছুটিতে এক বার ঢাকায় আত্মীয়বাড়ি গিয়েছেন, আশপাশের লোকজন তাঁর গান শুনে তাজ্জব। এক গুণগ্রাহী ঢাকা রেডিয়োয় যোগাযোগ করিয়ে দিলেন। সেখানে শিশুবিভাগে গাইবার পরপরই ডাক এল কলকাতা বেতার থেকে। মাত্র এগারো বছর বয়সে ১৯৪৫-এ সেনোলা থেকে প্রথম রেকর্ড বেরিয়ে গেল ‘কুমারী প্রতিমা চ্যাটার্জী’ নামে। সুকৃতি সেনের কথা ও সুরে বেসিক গানের রেকর্ড। ‘প্রিয় খুলে রেখো বাতায়ন’, ‘মালাখানি দিয়ে আমারে ভোলাতে চাও’ গানগুলি বেশ জনপ্রিয় হল। জলসায় গান শুনেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলেন সঙ্গীতপ্রেমিক অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্ভ্রান্ত পরিবারের সুদর্শন যুবক। কমলাদেবীকে প্রতিশ্রুতি দিলেন, গানের জগতে প্রতিমাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে যথাসাধ্য করবেন। তেরো পেরোতে না পেরোতেই স্বামীঘর করতে নবপরিণীতা প্রতিমা চলে এলেন টালিগঞ্জের সাহানগরে। সেখানেই তাঁর সন্তানদের জন্ম। এক মেয়ে, তার পরে ছেলে।

 

দক্ষিণ কলকাতার ‘মিলনচক্র’ ক্লাবে প্রতিমার গান শুনে যশস্বী শিল্পী-সুরকার সুধীরলাল চক্রবর্তী চমৎকৃত হন। তিনি ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে তার ‘সুনন্দার বিয়ে’ ছায়াছবিতে প্রতিমাকে দিয়ে ‘উছল তটিনী আমি সুদূরের চাঁদ’ গানটি গাওয়ান। আর সেই সাথে নেপথ্যগায়িকা হিসাবে আত্মপ্রকাশ। তারপর ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে’যদুভট্ট’ছায়াছবিতে কুন্দন লাল সায়গলের গাওয়া ‘বাবুল মোরা নইহার ছুট হি যায়ে’ বিখ্যাত গানটি তিনি গেয়েছিলেন। তবে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত পিনাকী মুখোপাধ্যায়ের “ঢুলি” চলচ্চিত্রে ( বৃন্দাবনী সারং রাগে) রাগাশ্রিত ‘নিঙাড়িয়া নীল শাড়ি শ্রীমতী চলে’ গানটি প্রতিমাকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ও অভিভূত হয়েছিলেন। তাই এক সাংবাদিক যখন তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, গায়িকাদের মধ্যে কার গলাটি তাঁর সবচেয়ে সুরেলা লাগে, তিনি এক ঝটকায় বলে দিলেন, ‘‘প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’

পরে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে হেমন্তর সুরে ‘শাপমোচন’ছায়াছবিতে চিন্ময় লাহিড়ীর সঙ্গে ‘পটদীপ’ রাগে দ্বৈতকণ্ঠে গাইলেন ‘ ত্রিবেণী তীর্থপথে কে গাহিল গান’। স্বকীয় গায়কির গুণে কঠিন গানেরও সূক্ষ্ম কারুকাজে অনায়াসে বিচরণ করতে থাকলেন তিনি। বলা যায় কয়েক দশক জুড়ে ‘যদুভট্ট, ‘ঢুলি’, ‘শাপমোচন’, ‘ছুটি’, ‘চৌরঙ্গী’, ‘পরিণীতা’, ‘দাদাঠাকুর’ ইত্যাদি অজস্র ছায়াছবি ভরে আছে প্রতিমার গানে। অন্যদিকে আধুনিক গানের মধ্যেও তার গাওয়া ‘বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই’,’একটা গান লিখো আমার জন্য’ ইত্যাদি অজস্র অবিস্মরণীয় গান তার কণ্ঠে কালজয়ী আখ্যা পেয়েছে। ছায়াছবি, আধুনিক গানের পাশাপাশি রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, ভজন, ভক্তিগীতি, কীর্তন, কাব্যগীতি, অতুলপ্রসাদের গানেও প্রতিমা সমান উজ্জ্বল ছিলেন। কলকাতার আকাশবাণীতে রম্যগীতিও গেয়েছেন।

 

অসংখ্য গানের মধ্যে তাঁর গাওয়া জনপ্রিয় কিছু গান : ‘আজি মুরলী বাজে প্রেম বৃন্দাবনে’,  ‘আন্ধার আমার ভালো লাগে’,  ‘আবীরে রাঙ্গালো কে আমায়’, ‘আমার যেমন বেণী তেমনি রবে'(১৯৬০), ‘আমার বকুল ফুল কই’, ‘একা মোর গানের তরী’, ‘একটা গান লিখো আমার জন্য’, ‘কই গো কই গো কই’,  ‘খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো’, ‘ছলকে পড়ে কল্কে ফুলে’,  ‘প্রিয় খুলে রেখো বাতায়ন’,  ‘বাঁশ বাগানের মাথার ওপর’, ‘সাতরঙ্গা এক পাখি’ প্রভৃতি।

তিনি নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসাবে ‘ছুটি’ ‘চৌরঙ্গী’ ও ‘পরিণীতা’ ছায়াছবিতে গানের জন্য পরপর তিন বৎসর বি.এফ.জে.এ. পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে জুলাই  কলকাতায় তিনি প্রয়াত হন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবপেজ।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

আজাদ আজাদ হিন্দ ফৌজের রানী ঝাঁসি রেজিমেন্টের সৈনিক ও প্রথম গুপ্তচর : নীরা আর্য।

ভূমিকা:-

 

তিনি ছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রথম মহিলা গুপ্তচর, আজাদ হিন্দ ফৌজের ঝাঁসি রেজিমেন্টের নেতৃত্বে ছিলেন লক্ষী সেহেগল। দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভুত মহিলা স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে ১৯৪৩ সালে গড়ে উঠেছিল এই রেজিমেন্ট। ট্রেনিং ক্যাম্প ছিল ব্যাংকক, রেঙ্গুন ও সিঙ্গাপুর।

 

 নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন বাঁচাতে নিজের স্বামীকে হত্যা —

 

নীরা আর্য আজাদ হিন্দ ফৌজের রানি ঝাঁসি রেজিমেন্টের সৈনিক ছিলেন। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন বাঁচাতে তিনি নিজের স্বামীকে হত্যা করেন। নেতাজী তাঁকে নীরা নাগিনী বলে অভিহিত করলে তিনি নীরা নাগিনী নামে পরিচিতি লাভ করেন। বৃটিশ সরকার তাঁকে একজন গুপ্তচর হিসাবে গণ্য করেছিল। তার ভাই বসন্ত কুমারও আজাদ হিন্দ ফৌজে ছিলেন।

 

প্রখর বুদ্ধিমত্তা, সাহসী ও আত্মসম্মান বোধ–

 

অনেক লোকশিল্পী নীরা নাগিন ও তার ভাই বসন্ত কুমারের জীবন নিয়ে কবিতা ও ভজন রচনা করেছেন। নীরা নাগিনী নামে তার জীবনের একটি মহাকাব্যও রয়েছে। তার জীবন নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তিনি ছিলেন এক দুর্দান্ত দেশপ্রেমিক, সাহসী ও আত্মসম্মান বোধে গর্বিত মহিলা। তার শেষ জীবন কাটে হায়দ্রাবাদে। সেখানকার মহিলারা তাকে গর্বের সাথে ‘পদ্মমা’ বলে সম্বোধন করতেন।

 

জন্ম ও শিক্ষাজীবন—-

 

নীরা আর্য ১৯০২ সালের ৫ মার্চ ভারতের তৎকালীন যুক্তপ্রদেশের অধুনা উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বাগপত জেলার খেকড়া শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা শেঠ ছজুমল ছিলেন সে সময়ের এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তার ব্যবসা-বাণিজ্য সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। তার পিতার ব্যবসায়ের মূল কেন্দ্র ছিল কলকাতা। তাই কলকাতাতে তার পড়াশোনা শুরু হয়েছিল। নীরা আর্য হিন্দি, ইংরেজি, বাংলার পাশাপাশি আরও অনেক ভাষায় দক্ষ ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ ভারতের সিআইডি ইন্সপেক্টর শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাসকে বিবাহ করেন। শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাস ছিলেন ইংরেজপ্রভু ভক্ত অফিসার। মূলতঃ শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাসকে গুপ্তচরবৃত্তি করে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে হত্যা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

 

স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ—–

 

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন বাঁচাতে তিনি ইংরেজ সেনাবাহিনীর পদস্থ অফিসার শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাসকে হত্যা করেছিলেন। একসময় সুযোগ পেয়ে শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাস নেতাজিকে হত্যার জন্য গুলি চালিয়েছিলেন, কিন্তু সেই গুলি নেতাজির গাড়ীর চালককে বিদ্ধ করে । কিন্তু এরই মধ্যে নীরা আর্য শ্রীকান্ত জয়রঞ্জনের পেটে বেয়নেট চালিয়ে হত্যা করে। শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাস নীরা আর্যের স্বামী ছিলেন, তাই স্বামী হত্যার কারণে নেতাজি তাঁকে নাগিনী বলে অভিহিত করেছিলেন। আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণের পরে, সমস্ত বন্দী সৈন্যকে দিল্লির লাল কেল্লায় বিচারে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু নীরাকে স্বামী হত্যার কারণে দ্বীপান্তরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। জেলে বন্দীদশায় সেখানে তাঁকে কঠোর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল।

 

আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রথম গুপ্তচর—–

নীরা আর্য আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রথম গুপ্তচর হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। পবিত্র মোহন রায় আজাদ ভারতীয় সেনাবাহিনীর মহিলা এবং পুরুষ উভয় গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ছিলেন।   নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু নিজেই নীরাকে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তার সঙ্গী মনবতী আর্য, সরস্বতী রাজামণি এবং দুর্গা মল্লা গোর্খা এবং যুবক ড্যানিয়েল কালে তার সামরিক গোয়েন্দা শাখার সাথে যুক্ত ছিল। তারা নেতাজির জন্য গুপ্তচরবৃত্তির কাজ করত। তারা বিভিন্ন কাজের অছিলায় ব্রিটিশ অফিসারদের বাড়ি ও সেনাশিবিরে প্রবেশ করতেন তথ্য সংগ্রহের জন্য, তারপর তা নেতাজীর কাছে পাঠাতেন। এই কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়লে প্রথমে নথিগুলি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া ও পরে পিস্তল চালিয়ে আত্মহত্যা করতে হবে, এই নিয়ম তারা কঠোর ভাবে মেনে চলতেন।

 

 রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে নীরাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড–

 

দক্ষিণ এশিয়ার অক্ষশক্তির পরাজয়ের পর ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছিল আজাদ হিন্দ ফৌজ। ধরা পড়েছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের হাজার হাজার সেনানী। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে লালকেল্লায় তাদের বিচার শুরু হয়, বেশির ভাগ সেনানী ছাড়া পেলেও নীরাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়, জাহাজে করে পাঠানো হয় আন্দামানের সেলুলার জেলে। সেখানে তার ওপর যে অমানুষিক অত্যাচার হয়েছিল তা সত্যিই ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
আন্দামানে নীরাকে রাখা হয়েছিল একটি ছোট কুঠরিতে, সেখানে বাকি বন্দিরা ছিল মুক্ত, কিন্তু নীরাকে বন্য জন্তুর মত প্রথমদিন বেঁধে রাখা হয়েছিল। গলায় বাঁধা ছিল চেন ও হাতে-পায়ে ছিল শেকল লাগানো বেড়ি। নীরাকে কিছু খেতে দেওয়া হয়নি প্রথম দিন। শোয়ার জন্য মাদুর কিংবা কম্বল কিছুই দেওয়া হয়নি প্রথমে। কুঠরির কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে ছিলেন পরিশ্রান্ত নীরা। মাঝরাতে এক প্রহরী কুঠরিতে ঢুকে গায়ের ওপর ছুঁড়ে দিয়েছিল দুটো কম্বল। সকাল বেলায় প্রথম জুটেছিল খাবার, খেতে দেওয়া হয়েছিল ফুটন্ত খিচুড়ি।

এরপরেও আরও অনেক পাশবিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে নীরাকে। সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। তবুও মনে মনে স্বপ্ন দেখতেন স্বাধীন ভারতে সূর্যোদয় দেখবেন। এই মহান ত্যাগের সম্মান দেয়নি দেশ। নীরা আন্দামানে আসার একবছর পর স্বাধীন হয়েছিল দেশ। মুক্তি পেয়েছিলেন নীরা। এই আত্মত্যাগের সম্মান দেয়নি দেশ। অভিমানে সাধারণের ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন অসাধারণ নীরা।

 

স্বাধীনতা পরবর্তী জীবন–

 

স্বাধীনতার পরে, তিনি ফুল বিক্রি করে জীবনযাপন করেছিলেন, তবে কোনও সরকারী সহায়তা বা পেনশন গ্রহণ করেননি। তার ভাই বসন্ত কুমারও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি স্বাধীনতার পর সন্ন্যাসী হয়েছিলেন। নীরা স্বাধীনতা সংগ্রামে তার ভূমিকা নিয়ে আত্মজীবনীও লিখেছেন। উর্দু লেখক ফারহানা তাজ’কে তিনি তার জীবনের অনেক ঘটনা শুনিয়েছিলেন। তিনি তার জীবন নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিতে একটি উপন্যাসও রচনা করেন।

 

সম্মাননা—

 

নীরা আর্য নামে একটি জাতীয় পুরষ্কারও চালু করা হয়েছে। ছত্তিশগড়ের অভিনেতা অখিলেশ পান্ডে প্রথম নীরা আর্য পুরষ্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবং তাঁকে নীরা আর্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।

 

জীবনাবসান—

 

শেষ জীবনে তিনি  তিনি দরিদ্র, অসহায়, নিঃস্ব হয়ে পরেছিলেন।  হায়দরাবাদের ফালকনুমার একটি কুঁড়ে ঘরে বাস করতেন। নীরা আর্য জীবনের শেষ দিনগুলিতে ফুল বিক্রি করে কাটিয়েছেন এবং সরকারি জমিতে থাকার কারণে তার কুঁড়েঘরটিও শেষ মুহুর্তে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। সকলের অলক্ষ্যে ১৯৯৮ সালের ২৬শে জুলাই উসমানিয়া হাসপাতালে প্রয়াত হয়েছিলেন ৯৬ বছরের বীরাঙ্গনা এক অগ্নিকন্যা নীরা আর্য্য।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

অরোভিলের জননী – মীরা আলফাসা ::: সৌরভকুমার ভূঞ্যা।।।।

অরোভিল কিংবা ‘ভোরের শহর’। তামিলনাড়ুর ভিল্লুপুরম জেলায় অবস্থিত ছোট্ট সুন্দর শহর অরোভিল। যার কিছুটা অংশ রয়েছে পণ্ডেচেরিতেও। যে পণ্ডেচেরি শহরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুজন বিখ্যাত মানুষের নাম, ঋষি অরবিন্দ এবং তাঁর শিষ্যা ও সহযোগী মীরা আলফাসা। গুরুদেব অরবিন্দের আদর্শ মাথায় নিয়ে পরীক্ষামূলক এই শহরটি স্থাপন করেছিলেন মীরা আলফাসা। অরোভিল একটি ফরাসী শব্দ। ফরাসীতে ‘auro’ শব্দের অর্থ ভোর আর ‘ville’ শব্দের অর্থ শহর। এককথায় ভোরের শহর। তবে অনেকের মতে মিরা আলফাসা গুরুদেব অরবিন্দের নামে এই শহরের নামকরণ করেছিলেন। নামকরণের নেপথ্য কাহিনি যাই থাক, মীরার এই শহর পত্তনের উদ্দেশ্য ছিল অরবিন্দের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করা। তার আদর্শ ও ভাবনাচিন্তাকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
ভারতবর্ষের শিক্ষা, সংস্কৃতি, দর্শন, আধ্যাত্মিকতা প্রভৃতির টানে যুগের পর যুগ ধরে বহু মানুষ সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে এদেশে ছুটে এসেছেন, এখনও আসেন। তাদের অনেকে এই দেশকে ভালোবেসে এখানেই পাকাপাকিভাবে থেকে গেছেন। এখানকার সভ্যতা, সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছেন। এরকম অনেক মানুষ আছেন যাদের কথা আমরা জানতে পারি না। আবার এমন কেউ কেউ আছেন যারা তাদের কাজের মধ্য দিয়ে আমাদের ইতিহাসের পাতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছেন। ইতিহাস ঘাঁটলে এরকম অনেক খ্যাতনামা মানুষের কথা আমরা জানতে পারি। তেমনই একজন মহিলা হলেন মীরা আলফাসা। আধ্যাত্মিকতার টানে সুদূর ফ্রান্স থেকে তিনি ভারতবর্ষে ছুটে এসেছিলেন এবং আমৃত্যু এখানেই কাটিয়েছেন।
* * * * *
মীরা আলফাসার পুরো নাম ব্লাঞ্চে রেচেল মীরা আলফাসা। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি প্যারিসে জন্ম হয় তার। বাবা মরিস আলফাসা ও মা মাথিলদে ইসমালুন। ছোটোবেলা থেকে মীরা ছিলেন আলাদা প্রকৃতির। যখন তাঁর বয়স চার বছর তখন থেকেই তিনি ধ্যান করতেন। নিজের মধ্যে একাত্ম হয়ে যেতেন। ঘরে তার জন্য থাকা একটি ছোট্ট চেয়ারের ওপর বসে তিনি ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে যেতেন। তিনি বুঝতে পারতেন তার মনের মধ্যে আলাদা কিছু ঘটে চলেছে। তাঁর কথায়, ‘চার বছর বয়স থেকে আমি যোগা বা ধ্যান করতে শুরু করেছিলাম। আমার জন্য একটা ছোট্ট চেয়ার ছিল। আমি তার ওপর চুপ করে বসতাম আর ধ্যানে মগ্ন হয়ে যেতাম। একটা উজ্জ্বল আলো আমার মাথার ওপর নেমে আসত এবং আমার মাথায় তুমুল আলোড়ন সৃষ্ট করত। আমি কিছু বুঝতে পারতাম না। কেননা বয়সটা বোঝার মতো ছিল না। তবে ধীরে ধীরে আমি অনুভব করতে পারি আমি হয়তো এমন কোনো মহান কাজ করার জন্য এসেছি যার কথা কেউ জানে না।’ সেই ছোট্টবেলা থেকেই তিনি জগতের দূর্দশা, মানুষের দুঃখ কষ্টের কথা বুঝতে পারতেন। যখন তাঁর বয়স এগারো বারো বছর, তখন থেকে তিনি প্যারিসের কাছাকাছি একটি বনে একাকী ঘুরে বেড়াতেন। বনটি বেশ পুরোনো। এখানে এমনকি দুহাজার বছরের পুরোনো গাছ ছিল। সেখানে কোনো গাছের নীচে বসে তিনি গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে যেতেন। বনের গাছপালা, পশু পাখিদের সঙ্গে তিনি অদ্ভুত একাত্মতা অনুভব করতে পারতেন। সেই বয়স থেকে তার মধ্যে গুপ্তবিদ্যার প্রতি আগ্রহ জন্মতে শুরু করে। নানারকম মানসিক ও আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে থাকেন। তিনি স্পষ্টই অনুভব করেন ঈশ্বর আছেন এবং মানুষ চেষ্টা করলে সেই ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্ম হতে পারে। তাঁর ঘুমন্ত সত্ত্বায় কেউ যেন এসে তাঁকে এই শিক্ষা দিয়ে যেত। যে সত্ত্বাকে তিনি ঈশ্বর বলে মানতেন, যাকে পরবর্তীকালে তিনি কৃষ্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। তার মনে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল একদিন না একদিন তিনি সেই ঈশ্বরের সাক্ষাৎ পাবেন।
এরকম এক ঐশ্বরিক কিংবা স্বর্গীয় ঘটনার কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। রাত্রে শুতে যাওয়ার পর মাঝে মাঝে অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হত তার। কোনো কোনোদিন শুয়ে পড়ার পর অনুভব করতে পারতেন তার মধ্যেকার সত্ত্বা শরীর ছেড়ে বেরিয়ে গেছে। তারপর তা ক্রমশ উপরে উঠত থাকে। দেখতেন তার সেই শরীরে একটা সোনালী পোশাক। নারী পুরুষ, শিশু বৃদ্ধ, অসুস্থ দুর্ভাগ্যপীড়িত মানুষ তার পোশাকের নীচে হাজির হয়েছে। তারা নিজেদের দুঃখ দূর্দশার কথা তার কাছে ব্যক্ত করছে। তার কাছে সাহায্যের আবেদন করছে। যেইমাত্র না তারা তার সোনালী পোশাক স্পর্শ করত সঙ্গে সঙ্গে তাদের সমস্ত দুঃখ, কষ্ট, দূর্দশা চলে যেত। এই ব্যাপারটা তাঁকে নাড়িয়ে দিত। তার মনে হত সাধারণের মতো জীবন তার নয়। আলাদা কিছু কাজের জন্য তার এই পৃথিবীতে আসা।
সেই ছোটোবেলা থেকে নানান অদ্ভুত, অতিপ্রাকৃত ঘটনা তাঁর জীবনে ঘটত। মীরার মায়ের চোখেও মেয়ের ব্যতিক্রমী স্বভাব ও আচরণ নজর এড়ায় না। তিনি মনে করতেন মেয়ের মানসিক সমস্যা রয়েছে।
নয় বছর বয়সে তাঁর পড়াশোনা শুরু হয়। স্কুলজীবন শেষ করে পনের বছর বয়সে তিনি আর্ট সেন্টারে আকাদেমি জুলিয়ানে ভর্তি হয়েছিলেন চিত্রকলা শেখার জন্য। এখানে তিনি চার বছর পড়াশোনা করেন। তার চিত্রকলার বেশ কয়েকটি প্রদর্শনীও হয়। যাই হোক, এখানে পড়াশোনা করার সময় তার পরিচয় হয় হেনরি মারসেটের সঙ্গে। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১৩ অক্টোবর তাদের বিয়ে হয়। পরের বছর তাঁদের একমাত্র সন্তান আন্দ্রের জন্ম হয়।
১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে মীরা একটি ছোটো দল গঠন করেন। নাম দেন আইডিয়া। প্রত্যেক বুধবার সন্ধ্যায় দলের সদস্যেদর নিয়ে নিজের বাড়িতে বসতেন। আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে তাদের আলোচনা হত। পাশাপাশি গুপ্তবিদ্যা নিয়েও তাঁরা আলোচনা করতেন। তিনি মনে করতেন গুপ্তবিদ্যার জ্ঞান থাকার পাশাপাশি আধ্যাত্মিক জ্ঞান থাকাও দরকার। যার মধ্যে এই দুটি বিদ্যা থাকবে তিনি অসীম ক্ষমতার অধিকারী হতে পারবেন। আধ্যাত্মকি জ্ঞান না থাকলে গুপ্তবিদ্যার খারাপ প্রয়োগ হতে পারে। এই বিষয়ে তিনি অতিমাত্রায় সচেতন ছিলেন। তাই নিজেকে নিমগ্ন করেছিলেন আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনে।
এই সময় প্যারিসে তাঁর পরিচয় হয় ম্যাক্স থিওনের সঙ্গে। গুপ্তবিদ্যা বিষয়ে তাঁর ছিল অগাধ জ্ঞান। দক্ষিণ আলজেরিয়ার টেলিমেসন-এ তাঁর বাড়ি। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই মীরা একাকী আলজেরিয়া যান। ম্যাক্স থিওন ও তাঁর স্ত্রী আলমা থিওনের সঙ্গে দেখা করেন। ম্যাক্স থিওনের কাছ থেকে গুপ্তবিদ্যার বিষয়ে শিক্ষা নেন। শুধু সেই বছর নয়, পরের বছরও তিনি আলজেরিয়া যান। দুবছর টেলিমেশনে নিজের শিক্ষা শেষ করেন তিনি।
ম্যাক্স থিওন এই সময় ইউরোপ ভ্রমণে বের হন। তিনি মীরাকে তাঁর সঙ্গে নিয়ে যান। মীরা এই সময়ের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন যা ভয়ংকর সুন্দর। সমুদ্রপথে ইউরোপ ভ্রমণে যাওয়ার সময় তাঁদের জাহাজ ভূমধ্যসাগরে ভয়ংকর সামুদ্রিক ঝড়ের শিকার হয়। সবাই বুঝতে পারেন বড়ো বিপর্যয় ঘটতে চলেছে। এই সময় ম্যাক্স থিওন মীরাকে আদেশ দেন তাঁর অর্জিত গুপ্তবিদ্যা কাজে লাগিয়ে এই বিপর্যয় মোকাবিলা করার। গুরুর আদেশ পেয়ে মীরা নিজের দেহ থেকে বেরিয়ে মাঝ সমুদ্রে যান। খোলা সমুদ্রে কিছু ছোটো ছোটো সজীব প্রাণসত্ত্বা দেখেন যা এই সমস্যা সৃষ্টির কারণ। তিনি তাদের সঙ্গে আধ ঘন্টা কথা বলেন। তাদের বোঝান এবং এই জায়গা থেকে ছেড়ে যেতে বলেন। তারা তার কথা মেনে সেই জায়গা ছেড়ে চলে যায়। যখন তিনি জাহাজে নিজের শরীরে ফিরে আসেন দেখেন ঝড় থেমে গেছে।
এদিকে স্বামীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে হেনরির সঙ্গে তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বিচ্ছেদের পর তিনি রু দ্য লেভিসে একটি ছোট্ট ঘরে একাকী থাকতে শুরু করেন। তিন বছর পর, ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিয়ে করেন পল রিচার্ডকে। পল ছিলেন একজন খ্যাতনামা দার্শনিক। পাশাপাশি প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যের আধ্যাত্মিকতা, যোগা প্রভৃতি বিষয়ে তিনি আগ্রহী ছিলেন।
পল রাজনীতিতেও আগ্রহী ছিলেন। ভারতবর্ষের পণ্ডেচেরি তখন ফ্রান্সের অধিকারে ছিল। পলের উদ্দেশ্য ছিল এখান থেকে ফ্রান্স সিনেটে জয়লাভ করা। সেই কারণে তিনি পণ্ডেচেরি আসেন।
* * * * *
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন অরবিন্দ ঘোষ। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট কলকাতায় জন্ম হয় অরবিন্দের। তাঁর বাবা কৃষ্ণধন ঘোষ ছিলেন তৎকালীন বাংলার রংপুর জেলার জেলা সার্জেন। মা স্বর্ণলতাদেবী ছিলেন রাজ নারায়ন বসুর কন্যা।
অরবিন্দের যখন সাত বছর বয়স তখন তার বাবা কৃষ্ণধন বসু তাকে ইউরোপে পাঠান পড়াশোনা করার জন্য। এখানে চোদ্দ বছর ছিলেন তিনি। পড়াশোনায় তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। আইসিএস পরীক্ষায় তিনি সফল হয়েছিলেন। কিশোর বয়স থেকে তিনি স্বপ্ন দেখতেন ভারতবর্ষকে পরীধনতার অক্টোপাশ থেকে মুক্ত করার। দেশের স্বাধীনতার কাজে নিজেকে উৎসর্গ করার। তিনি স্থির করেন ইংরেজদের অধীনে কাজ করবেন না। তাই আইসিএস-এর ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতায় তিনি অংশগ্রহন করেন না। ফলে ডিসকোয়ালিফায়েড হয়ে যান।
১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি দেশে ফিরে আসেন। রেভিনিউ ডিপার্টমেন্টে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। পরে বরোদা কলেজের প্রফেসর হন। পরবর্তীকালে এখানকার ভাইস প্রিন্সিপ্যাল হয়েছিলেন। পেশাগত জীবনের পাশাপাশি তিনি দেশের কাজে জড়িয়ে পড়েছিলেন। বরোদায় থাকার সময় তার পরিচয় হয় মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী নেতা ঠাকুর সাহেবের সঙ্গে। তার কাছ থেকে তিনি বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষা নেন। তরুণ সমাজকে বিপ্লবী মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ কাজ করে যাচ্ছিলেন। তার ভাই বারীন্দ্রকুমার ঘোষকেও তিনি বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত করেছিলেন।
অরবিন্দ ঘোষ তখন বরোদা কলেজের অধ্যক্ষ। এই সময় ভগিনী নিবেদিতার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। নিবেদিতা তখন ভারতের স্বাধীনতা আন্দালনে নিজিকে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে ফেলেছিলেন। তিনি বুঝতে পারলেন দেশের স্বাধীনতা আন্দালনে অরবিন্দের মতো মানুষকে দরকার। তিনি তাঁকে কলকাতায় এসে কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। কলকাতায় তখন জাতীয় মহাবিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। অরবিন্দকে সেই মহাবিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। বরোদা কলেজের লোভনীয় পদের চাকুরি ছেড়ে দিয়ে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় আসেন অরবিন্দ। ১৯০৬ ক্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতার জাতীয় মহাবিদ্যালয় যা বর্তমানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে খ্যাত, তাতে যোগ দেন। শুরু হয় তার বিপ্লবী জীবনের আর এক অধ্যায়। তিনি ছিলেন চরমপন্থী আন্দোলনে বিশ্বাসী। দেশের যুব সমাজকে তিনি বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত করেছিলেন। যুগান্তর নামে গুপ্ত বিপ্লবী সমিতির সঙ্গে তিনি জড়িয়ে ছিলেন।
১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিপিন চন্দ্র পালের ‘বন্দেমাতরম’ পত্রিকার সম্পাদক হন। এই পত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তিনি দেশের বিপ্লবী ও তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতেন দেশের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। পত্রিকায় ব্রিটিশ বিরোধী লেখার জন্য ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সরকার বিপিনচন্দ্র পাল ও তাকে গ্রেপ্তার করে। বিপিন চন্দ্র পালের ছয় মাস জেল হয়। অরবিন্দ পত্রিকায় সরাসরি নিজের নামে লিখতেন না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় ইংরেজরা। ফলে সরকার তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পারেন অরবিন্দকে এভাবে ছেড়ে রাখা তাদের পক্ষে বিপজ্জনক। তারা সুযোগ খুঁজছিলেন কোনো অজুহাতে তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য। সেই সুযোগও তাঁরা পেয়ে যান। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০ এপ্রিল অত্যাচারী মেজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যা করার জন্য ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী মুজফফরপুরে তার গাড়ির ওপর বোমা ছোঁড়েন। সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান কিন্তু দুজন ইউরোপীয় মহিলা মারা যান। তারপর পর সারা দেশ জুড়ে ইংরেজ সরকার বোমার সন্ধানে তল্লাশি অভিযান শুরু করে। মানিকতলার মুরারী পুকুর বাগানবাড়িতে বোমের কারখানা খুঁজে পায় তারা। মোট সাঁইত্রিশ জন বিপ্লবীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন অরবিন্দ ঘোষ। শুরু হয় আলিপুর বোমা ষড়যন্ত্র মামলা। তার হয়ে মামলা লড়েন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। আদালতে তিনি নির্দোষ প্রমাণতি হন। ফলে বেকসুর খালাস পান।
জেলে থাকাকালীন সময়ে অরবিন্দের মধ্যে আধ্যাত্মিক চেতনার উন্মেষ ঘটে। এক অন্য জীবনের সন্ধান পান তিনি। জেল থেকে মুক্ত পাওয়ার পর সমস্তরকম রাজনৈতিক কার্যকলাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। বৃটিশ সরকার যাতে তার কাজে কোনো ঝমেলা করতে না পারে তার জন্য প্রথমে যান ফরাসী অধিকৃত চন্দননগের। সেখান থেকে চলে যান পণ্ডেচেরি যেটিও ছিল ফরাসী অধিকৃত। পণ্ডেচেরি আসার পর এক নতুন জীবন শুরু হয় তার। নিজেকে তিনি আধ্যাত্মিক সাধনায় ডুবিয়ে দেন। বিপ্লবী অরবিন্দ থেকে ক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন ঋষি অরবিন্দ।
* * * * *
নির্বাচনী কাজে পণ্ডেচেরিতে বেশ কিছুদিন ছিলেন পল রিচার্ড। এখানে থাকার সময় তিনি জানতে পারেন অরবিন্দের কথা, তার আধ্যাত্মিক সাধনার কথা। পল নিজেও আধ্যাত্মিক ব্যাপারে খুব আগ্রহী ছিলেন। তাই বেশ কয়েকবার তিনি অরবিন্দের সঙ্গে দেখা করেন। অরবিন্দের জীবন দর্শন, ভাবধারায় মুগ্ধ হন তিনি। প্যারিসে ফিরে মীরাকে তিনি অরবিন্দের কথা বলেন। অরবিন্দের কথা শুনে মীরা উৎসাহী হয়ে পড়েন। তার যেন মনে হয় এই সেই মানুষ যাঁকে তিনি স্বপ্নে দেখেন। তাঁর মধ্যে আগ্রহ বাড়ে ভারতবর্ষে আসার জন্য।
১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মার্চ পল রিচার্ড দ্বিতীয়বার ভারতে আসেন। এবার মীরাও তার সঙ্গে আসেন। যেদিন তারা এই দেশের মাটিতে পা দেন, সেদিনই তারা সাক্ষাৎ করেন অরবিন্দের সঙ্গে। অরবিন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ মীরার মনে আলোড়ন তোলে। মুগ্ধ হন তিনি। তার মনে হয় এই সেই মানুষ যাকে তিনি খুঁজে চলেছেন এতদিন। যাকে তিনি স্বপ্নে দেখেছেন বারবার। ইনিই সেই ‘ঈশ্বর পুরুষ’ যাকে তিনি কৃষ্ণ বলে মনে করতেন। প্রথম সাক্ষাতে মীরা অনুভব করেন এই ভারতবর্ষ তার কর্মক্ষেত্র। অরবিন্দের সাক্ষাতে আসার পর তিনি নিজের মধ্যে অদ্ভুত এক পরিবর্তন উপলব্ধি করেন। সেই সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, ‘আমার মনে হল, যেন নতুন জন্ম হল আমার। অতীতের সব রীতি, অভ্যাস মনে হল অপ্রয়োজনীয়। আর মনে হল, একসময় যাকে আমি ফল বলে মনে করতাম, এখন মনে হল তা আসলে প্রস্তুতি মাত্র … আমার হৃদয়ের মধ্যে থেকে গভীর কৃতজ্ঞতা জাগরিত হল। আমার মনে হল এতদিন ধরে আমি যা খুঁজছি অবশেষে তার দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁচেছি।’
স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে নিয়মিত অরবিন্দের কাছে যেতেন। তার কথা শুনতেন। অরবিন্দের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদের। পল আর মীরা স্থির করেন ‘আর্য’ নামে একটি ফিলজফিক্যাল জার্নাল প্রকাশ করার। অরবিন্দ তাদের এই ব্যাপারে সহযোগিতা করেন। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট অরবিন্দের জন্মদিনে ‘আর্য’র প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়।
ইতিমধ্যে দেশ থেকে ডাক আসে পলের। তাকে ফ্রেঞ্চ রিজার্ভ আর্মিতে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ফলে তিনি বাধ্য হন ভারতবর্য ত্যাগ করতে। মীরার একদমই ইচ্ছে ছিল না ভারতবর্ষ ত্যাগ করে যাওয়ার। কিন্তু থাকতে পারেন না তিনি। প্রথমত স্বামী ফিরে যাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত অরবিন্দও তাকে থাকার জন্য বলেন না। এই নিয়ে মীরার অভিযোগ এবং অভিমানও ছিল। যা তিনি নিজের লেখায় প্রকাশ করেছেন। আসলে অরবিন্দ মনে করেছিলেন মীরার এখনই এখানে থাকার সময় হয়ে ওঠেনি। সেই কারণে স্বামীর সঙ্গে ফিরে যেতে বাধ্য হন মীরা। ১৯১৫-এর ২২ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরার পথ ধরেন তিনি। পণ্ডেচেরি ত্যাগ করে যাওয়াটা মীরার মনে গভীর আঘাত দিয়েছিল। এর জন্য তিনি অসুস্থও হয়ে পড়েছিলেন। ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার যন্ত্রণা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, “He (Sri Aurobindo) did not keep me, what could I do? I had to go. But I left my psychic being with him, and in France I was once on the point of death: the doctors had given me Up.”
ফ্রান্সে এক বছর থাকেন পল। এক বছর পর তাকে সেনাবাহিনী থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি জাপান যান। মীরাও তার সঙ্গে যান। এখানে চার বছর কাটান তারা। ১৯১৯-এ জাপানে এক মহামারী রোগ ছড়িয়ে পড়ে। একসময় মীরাও সেই রোগে আক্রান্ত হন তিনি। কিন্তু তিনি কোনো ডাক্তার দেখান না, ঔষধও খান না। তিনি বোঝার চেষ্টা করেন এই মহামারী ছড়িয়ে পড়ার কারণ কী। অসুস্থ অবস্থায় একদিন যখন শুয়েছিলেন তখন তিনি মানস চোখে দেখতে পান সৈনিকের পোশাক পরা একজন যার মাথা নেই। সেই মুণ্ডুহীন শরীর এগিয়ে এসে তার বুকের ওপর চেপে বসে। তার শরীরের শক্তি যেন শুশে নিতে থাকে। অবস্থা এমন হয় যে মীরার মনে হয় তিনি বোধহয় আর বাঁচবেন না। সহসা তিনি তার গুপ্তবিদ্যা কাজে লাগান এবং সেই মুণ্ডুহীন সত্ত্বাকে পরাজিত করতে সক্ষম হন। তারপর তিনি সেরে উঠেছিলেন। মীরা বুঝতে পারেন এই মহামারী রোগ ছড়িয়ে পড়ার কারণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অসংখ্য তরুন সৈন্যের অকাল মৃত্যু হয়েছিল। তারাই চেষ্টা করছিল অন্যের শরীরে প্রবেশ করে নিজেদের ফিরে পাওয়ার। আর সেটাই এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার কারণ।
১৯২০-এর এপ্রিল মাসে মীরা স্বামীর সঙ্গে পণ্ডেচেরি আসেন। মিস ডরোথি হজসন নামে এক ইংরেজ মহিলাও তাদের সঙ্গে আসেন। এরপর তিনি আর ভারতবর্ষ ত্যাগ করে যাননি। ঋষি অরবিন্দের সংস্পর্শে এসে তিনি আধ্যাত্মিক সাধনায় ডুবিয়ে দেন। স্ত্রীর এই ব্যাপারটা পছন্দ হয় না পলের। মীরাকে তিনি অরবিন্দের কাছ থেকে নিয়ে চলে যেতে চান। কিন্তু মীরা ততদিনে নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। স্বামীর কথায় রাজি হন না তিনি। ফলে তাদের সম্পর্কের মধ্যে চিড় ধরে। শেষমেষ মীরাকে ছাড়া তিনি পণ্ডেচেরি ত্যাগ করেন।
মীরা ও হজসন বেয়ন্ড হাউসে থাকতেন। ১৯২০-এর ২৪ নভেম্বরের এক ভয়ংকর ঝড়ে তাদের বাড়িটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একথা জানতে পেরে অরবিন্দ তাদের নিজের বাড়িতে থাকার আমন্ত্রণ জানান। তারপর থেকে মীরা ও হজসন অরবিন্দের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন।
অরবিন্দের সংস্পর্শে আসার পর মীরা আরও বেশি করে সাধনায় ডুবে যান। অরবিন্দের বাড়িতে তারা দুজন ছাড়া আরও কয়েকজন থাকতেন। আগামীর কথা ভেবে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে মীরা একটি আশ্রম স্থাপন করেন। প্রথমে আশ্রমটি পরিকল্পিত ছিল না। একটু একটু করে আশ্রমে শিষ্যের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তথাকথিত আশ্রম বলতে আমাদের চোখের সামনে যে ছবি ফুটে ওঠে, এই আশ্রম তেমন ছিল না। ১৯২৬-এ আশ্রমে শিষ্য সংখ্যা ছিল মাত্র ২৪ জন। মাত্র তিন বছরে সংখ্যাটি একশোতে পৌঁছে যায়। অরবিন্দ একটু একটু করে বাইরের জগৎ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিচ্ছিলেন নিজের সাধনার আরও বেশি করে ডুবে যাওয়ার জন্য। আশ্রম প্রতিষ্ঠার পর অরবিন্দ মীরার হাতে আশ্রমের সমস্ত দায়িত্ব তুলে দিয়ে নিজেকে পুরোপুরি বাইরের জগৎ থেকে সরিয়ে নেন। এই সময় থেকে অরবিন্দ মীরাকে ‘The Mother’ (শ্রীমা) নামে ডাকতে শুরু করেন।
সময় এগিয়ে চলে। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হন অরবিন্দ। প্রথমটা সমস্যা তেমন গুরুতর ছিল না। সবাই আশা করেছিল তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু অসুস্থতা ক্রমশ বাড়তে থাকে। অবশেষে ৫ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। অরবিন্দের মৃত্যু মায়ের কাছে ছিল বড়ো আঘাত। তাঁর মৃত্যু নিয়ে পরের দিন ড. সান্যালকে তিনি বলেছিলেন, “People do not know what a tremendous sacrifice He has made for the world.”
অরবিন্দের মৃত্যুর পর আশ্রমের সমস্ত কাজের ভার নেন শ্রীমা। প্রসঙ্গত বলার, ১৯৪৩ সাল থেকে ছোটোদের জন্য আশ্রমের মধ্যে ছোটো আকারে একটি স্কুল শুরু হয়। শ্রীমা নিজে ক্লাস নিতেন ছোটোদের। অরবিন্দের মৃত্যুর পরের বছর থেকে তিনি ছোটোদের জন্য বিশেষ ক্লাস নিতে শুরু করেন। ওই বছর তিনি একটি ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনিভার্সিটি সেন্টার স্থাপন করার কথা ঘোষণা করেন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ৬ জানুয়ারি এর উদবোধন হয়। নাম দেওয়া হয় শ্রী অরবিন্দ ইন্যারন্যাশন্যাল ইউনিভার্সিটি সেন্টার। ১৯৫৯-এ এর নাম বদলে রাখা হয় শ্রী অরবিন্দ ইন্টারন্যাশন্যাল সেন্টার অব এডুকেশন। এরকম একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাবনা ছিল অরবিন্দের।
শ্রীমায়ের জীবনের অন্যতম কীর্তি হল অরোভিল স্থাপন। শ্রীমা স্থির করেন পরীক্ষামূলকভাবে একটি শহর স্থাপন করার। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি ভারতের সংবিধান কার্যকর হয়। স্থির হয় হিন্দি হবে ভারতের সরকারি ভাষা। প্রথম পনেরো বছর ইংরেজির পাশাপাশি সেটি সহযোগী ভাষা হিসেবে থাকবে। ১৯৬৫ এর ২৬ জানুয়ারি থেকে ইংরেজির বদলে হিন্দি হবে সরকারি ভাষা। কিন্তু অনেক অ-হিন্দিভাষী রাজ্য এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট ছিল না। এই নিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছিল। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে তামিলনাড়ুতে হিন্দি-বিরোধী আন্দোলন প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়ে। গোটা মাদ্রাজ জুড়ে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা লুঠপাঠ চালায়। আশ্রমগুলিতেও তারা আক্রমণ চালায়। সেই দাঙ্গার হাত থেকে রক্ষা পায় না মায়ের আশ্রমও। এই ব্যাপারটা শ্রীমা-এর মনকে নাড়া দেয়। অনেক দিন মনের মধ্যে লালিত করা একটি স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার ভাবনা জেগে ওঠে। তিনি চান এমন একটি জায়গা তৈরি করতে যেখানে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষ সত্যের সাধনায় প্রগতিশীল জীবন কাটাতে পারবে। সেখান থেকে তার মাথায় আসে একটি শহর তৈরির পরিকল্পনা। সেই শহর হল অরোভিল।
১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীমা শ্রীঅরবিন্দ সোসাইটি স্থাপন করেছিলেন। ১৯৬৪-তে এই সোসাইটির বিশ্ব সম্মেলনে অরোভিল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পাশ হয়। এটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে শ্রীমা বলেছেন, “Auroville wants to be a universal town where men and women of all countries are able to live in peace and progressive harmony above all creeds, all policies and all nationalities.” মানুষের মধ্যে একতা ও একাত্মতা গড়ে তোলাই ছিল এই শহর প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য
১৯৬৮-এর ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে দশটায় এর উদবোধন হয়। এটির নক্সা করেন স্থাপতি রোজার অ্যাঙ্গার। পঞ্চাশ হাজার লোকের থাকার মতো এই শহর। উদবোধন অনুষ্ঠানে ১২৪ টি দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। ভারতবর্ষের ২৩ টি রাজ্যের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিল। প্রায় সকল দেশের শিশু প্রতিনিধিরা এখানে রাখা একটি পাত্রে একমুঠো করে নিজের নিজের দেশের মাটি প্রদান করে।
অরোভিলে কারা থাকতে পারবে সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শ্রীমা বলেন, “Auroville belongs to nobody in particular. Auroville belongs to humanity as a whole. But to live in Auroville one must be the willing servitor of the divine Consciousness.” পনেরো বর্গকিলোমিটার জুড়ে এই শহর। শহরের চারটি বিভাগ – আবাসিক, শিল্প, সংস্কৃতি ও আন্তর্জাতিক।
শহরের ঠিক মাঝখানে রয়েছে মাতৃমন্দির। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে এর ভিত্তিপ্রস্তর দেওয়া হয়। এটি দেখতে একটি সোনালী গোলকের মতো। চারটি স্তম্ভের ওপর এই গোলকটি রয়েছে। এই চারটি স্তম্বকে মায়ের চারটি শক্তির রূপক হিসেবে ধরা হয়। যে শক্তির কথা ঋষি অরবিন্দ উল্লেখ করেছিলেন তাঁর বইতে। অরবিন্দ তার ‘The Mother’ বইতে মীরার চারটি দিকের কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলি হল জ্ঞান, শক্তি, সম্প্রীতি ও পরিপূর্ণতা। এই চারটি সত্ত্বার মধ্য দিয়ে মায়ের চারটি রূপ তুলে ধরেছেন তিনি – মহেশ্বরী, মহাকালী, মহালক্ষ্মী ও মহাসরস্বতী। যাই হোক, মাতৃ মন্দিরের মধ্যে রয়েছে ধ্যান কক্ষ। এর ভেতরের পরিবেশ একেবারে শান্ত। মন্দিরের চারদিকে সুন্দর বাগান। এর মধ্যে সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে। যখন আকাশে সূর্য থাকে না তখন এই সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে আলো গোলকের ওপর পড়ে প্রতিফলিত হয়। শুরুর দুই দশকে এখানে কুড়িটি দেশের প্রায় চারশ জন বাস করতেন। ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে, অরোভিলের রজতজয়ন্তী বর্ষে এখানকার লোকসংখ্যা ছিল ৫৪ টি দেশের ২৮১৪ জন। এর মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ ভারতীয়।
এই শহরটির তৈরি করার পেছনে শ্রীমায়ের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সর্বজনীন ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ জাতি ধর্ম বর্ণ দেশ নির্বিশেষে সকল মানুষের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করা। এর থেকে মহান উদ্দেশ্য আর কী হতে পারে? মীরা আলফাসা ছিলেন অরবিন্দ আশ্রমের জননী। অরবিন্দও তাকে ‘The Mother’ সম্বোধেন সম্বোধন করতেন। আর বিশ্ব ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ নিয়ে এমন একটি মডেল শহরের জন্ম দেওয়া মহিলাকে তার জননী বললে বোধহয় খুব একটা ভুল বলা হবে না।
১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন শ্রীমা। মানুষের সঙ্গে দেক্ষাসাক্ষাৎ, ভক্তদের দর্শন দেওয়া প্রভৃতি বন্ধ করে দেন। কেবল ১৫ আগস্ট, গুরুদেব অরবিন্দের জন্মদিনের দিন শেষবার তাঁর ভক্তদের দর্শন দেন তিনি। ওই বছরের ১৭ নভেম্বর মারা যান তিনি। আশ্রম ভবনের সামনের চত্ত্বরে অরবিন্দের সমাধির পাশে তাকে সমাধিস্ত করা হয়।

সৌরভকুমার ভূঞ্যা
তেরপেখ্যা, মহিষাদল
পূর্ব মেদিনীপুর, ৭২১৬২৮
৯৪৭৬৩৩০৫৩৩, ৭৪৩১৯৮৫৪৮৫

Share This